টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে দেশের অন্তত ৯টি জেলা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কও। গতকাল মঙ্গলবার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাতকানিয়া এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। টানা চার দিনের বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম মহানগরী তলিয়েছে। একদিকে মহানগর, অন্যদিকে তিন পার্বত্য জেলাতেও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ঝালকাঠি জেলার ৫০ গ্রাম, ফেনীর দুই উপজেলার ৪০ গ্রাম, চট্টগ্রামের আনোয়ার ও বাঁশখালী উপজেলার ৪০টির বেশি গ্রাম ও বরগুনার ৩০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বগুড়ার কয়েকটি এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্লাবিত, বন্ধ যান চলাচল
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের কিছু অংশ তলিয়ে গেছে। এতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কক্সবাজারে আটকা পড়া দূরপাল্লার যানবাহনগুলো চকরিয়া, পেকুয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ঢুকছে।
বৃষ্টিতে সাঙ্গু নদীর ও ডলু খালের পানি সাতকানিয়ার কেরানীরহাট, চন্দনাইশ ও দোহাজারী এলাকার মহাসড়ক প্লাবিত করেছে। মানুষ নৌকা নিয়ে নিরাপদ স্থানে ছুটছেন। ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আনুমানিক চার-পাঁচ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন আরাফাত জানান, টানা বর্ষণে সাতকানিয়ায় মহাসড়কসহ পুরো এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যান চলাচল বন্ধ থাকায় পুরো এলাকার মানুষ কার্যত জলাবদ্ধ।
আনোয়ারা-বাঁশখালীর ৪০-এর অধিক গ্রামে জলাবদ্ধ
চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৪০টির বেশি গ্রামে জলাবদ্ধতা হয়েছে। পাহাড়ি পানির ঢল বাঁশখালীর সাধনপুর, বৈলছড়ি, বাহারছড়া, কাথরিয়াসহ খানখানাবাদ ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা পানির নিচে তলিয়েছে।
এদিকে আনোয়ারা উপজেলা নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বৃষ্টির পানি নামতে না পেরে পরৈকোড়া ইউনিয়ন পুরোটায় প্লাবিত হয়েছে।
বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কে এম সালাহউদ্দিন কামাল বলেন, পাহাড়ি ঢলে গত শনিবার দেয়াল চাপা পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের ডুমুরিয়া, রূদুরা, কেঁয়াগড়, সিংহরা ও বারখাইন ইউনিয়নের পূর্ব বারখাইন গ্রামেও জলাবদ্ধতা দেখা গেছে।
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, ‘জলকদর খালের শাখা সোনাইছড়ি খালের তিনটি স্লুইস গেটের দুটির দুই পাশে মাটি ভরাট হয়ে পানি চলাচলে বিঘ্নিত হওয়ার কারণে আমার ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট কোমর পানির নিচে। জলমগ্ন হয়ে আছে ২০ থেকে ৩০ পরিবার।’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, ১৫ টন চাল, শুকনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধসামগ্রী উপজেলার ১১ ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে আরও বরাদ্দ দেয়া হবে।
এদিকে বাঁশখালীর ইউএনও সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, উপজেলার পুকুরিয়া, শেখেরখীল, সাধনপুর, চাম্বল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ১৫ টন চাল ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
পুরো সাতকানিয়া ডুবেছে
পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা। পানিবন্দি রয়েছে তিন উপজেলার লক্ষাধিক বাসিন্দা। সাতকানিয়া উপজেলা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্কও।
সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন এলাকার বহুতল স্কুল ভবন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তুলনামূলক উঁচু এলাকা উপজেলা পরিষদ ও কেরানীহাটে কোমরপানি হওয়ায় পুরো সাতকানিয়া পানিতে ডুবে গেছে বলে ধারণা করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘গতকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। তাই সমন্বয় করা যাচ্ছে না।’
সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় উপজেলার বাইরে যোগাযোগ করতে পারছেন না সাতকানিয়ার বাসিন্দারা। সাতকানিয়া পৌরসভার ভোয়ালিয়া পাড়ার ফজিলাতুন্নেছা চৌধুরী বলেন, ‘গতকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই, বাড়িতে পানি ঢুকেছে। বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না।’
সাতকানিয়ার পার্শ্ববর্তী দুই উপজেলা চন্দনাইশ ও লোহাগাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কে ছোট ও মাঝারি যান চলতে পারছে না। পাঠানিপুল এলাকায় পানি বেশি, কিছু গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। একটা একটা গাড়ি পার হচ্ছে। এলাকার নিচু অঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।’
বান্দরবান বিচ্ছিন্ন, নিহত ২
টানা ছয় দিনে ভারী বর্ষণে জেলা সদরে ৬০ শতাংশ ও লামা উপজেলায় শতভাগ বন্যাকবলিত হয়েছে। বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়ার এই সময়ে এক বিদেশি নাগরিকসহ দুজন নিহত হয়েছেন ও আহত শতাধিক বলে জানা গেছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সড়ক, বসতবাড়িসহ পাহাড় ধসে পড়েছে। জেলার ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করছে।
বৃষ্টির এই সময়ে বান্দরবানের খাদ্যসামগ্রীর দাম দ্বিগুণ বেড়েছে- এই বিষয়ে বান্দরবান বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বিমল কান্তি দাশ জানিয়েছেন, খাদ্যদ্রব্যের সংকট না থাকলেও বাজারে ডিম ও মোমবাতির সংকট দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, পাহাড়ধসে আলীকদম উপজেলায় একজন ও নাইক্ষ্যংছড়িতে একজন মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে একজন বিদেশি নাগরিক। তবে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেননি জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সদরের চেয়েও লামা উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ ও খাদ্যগুদাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ৮৫ মেট্রিক টন চাল, ত্রাণ ও অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অতিদ্রুত ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঝালকাঠির ৫০ গ্রাম প্লাবিত
ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া প্লাবিত হয়েছে নলছিটি ও রাজাপুর উপজেলার ১৮ গ্রাম। এ ছাড়া সদর উপজেলার অন্তত ১৭টি গ্রাম পানির নিচে। গত সোমবার পর্যন্ত পুরো জেলায় ৫০টি গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। কাঁঠালিয়া উপজেলার প্রায় সাত হাজার বাসিন্দা পানিবন্দি।
গত তিন দিনের বৃষ্টিতে কাঁঠালিয়া উপজেলার ডালি খালের মাটির বাঁধ ভেঙে গেছে। বিষখালী নদীর কাঁঠালিয়া অংশে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের দেড় যুগ ধরে।
ভারী বৃষ্টি, পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে এবারও ডুবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁঠালিয়া সদর, শৌলজালিয়া, আওরাবুনিয়া ও আমুয়া ইউনিয়ন।
বীনাপানি গ্রামের মাদ্রাসাশিক্ষক এনায়েত মোল্লা বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে ত্রাণ চাই না, এই বাঁধটির টেকসই উন্নয়ন চাই, যাতে বন্যার সময় আমাদের দুশ্চিন্তায় পড়তে না হয়।’
পাউবোর ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, ‘বিষখালীর তীরে কাঁঠালিয়া অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই ডিজাইন ডেটা পাঠানো হবে।’
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘পানিবন্দিদের সব প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কাঁঠালিয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কথা বলব।’
ফেনীর ৩০ গ্রাম জলাবদ্ধ
চার দিনের ভারী বৃষ্টিতে ফেনীর আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৩০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বিভিন্ন এলাকার শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। বৃষ্টি দীর্ঘায়িত হলে পুকুর, ঘেরসহ আমনের বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকরা। কৃষকের আমনের বীজতলাও রয়েছে দেড় থেকে দুই ফুট পানির নিচে।
আমতলী সদর ইউনিয়নের সেকান্দারখালী গ্রামের ঘেরের মালিক সবুজ জানান, ভারী বৃষ্টিতে বাড়ির ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি আরও বাড়লে মাছ ভেসে যাবে।
আমতলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রাসেল জানান, উপজেলায় ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা রয়েছে। অধিকাংশ বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। বীজ পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বরগুনার আমতলী-তালতলীর ৩০ গ্রাম জলাবদ্ধ
চার দিনের ভারী বৃষ্টিতে বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৩০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকার শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। বৃষ্টি দীর্ঘয়িত হলে পুকুর, ঘেরসহ আমনের বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকরা।
গত শনিবার থেকে মুষলধারে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে আমতলী ও তালতলী উপজেলার অধিকাংশ নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। অনেক জায়গায় খাল-বিল উপচে বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে চাষিদের। কৃষকের আমনের বীজতলাও রয়েছে দেড় থেকে দুই ফুট পানির নিচে।
আমতলী সদর ইউনিয়নের সেকান্দারখালী গ্রামের ঘেরের মালিক সবুজ জানান, তিন দিনের বৃষ্টিতে বাড়ির ঘের ও পুকুর তলিয়েছে। বৃষ্টি আরও বাড়লে মাছ ভেসে যাবে।
আমতলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রাসেল জানান, আমতলী উপজেলায় ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা আছে। অধিকাংশ বীজতলা পানিতে তলিয়েছে। বীজ পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৩০ কাঠা সরকারি জমি বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে করা দুদকের পৃথক তিন মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
এসব মামলায় শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ৪৭ জন চার্জশিটভুক্ত আসামি।
আজ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে পৃথক তিন মামলার বাদী সাক্ষ্য দেন।এরপর আদালত পৃথক তিন মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৬ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
সাক্ষীরা হলেন-দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া ও এস এম রাশেদুল হাসান। এরা তিনজনই পৃথক তিন মামলার বাদী।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। গত ১০ মার্চ মামলার তদন্তে প্রাপ্ত আরো চারজনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
শেখ হাসিনা ছাড়াও এ মামলার অপর ১১ আসামি হলেন- জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য শফিউল হক,খুরশীদ আলম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি সজিব ওয়াজেদ জয় ও তার মা শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। গত ১০ মার্চ মামলার তদন্তে প্রাপ্ত আরো দুইজনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান।
শেখ হাসিনা ও জয় ছাড়াও এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত অপর ১৫ আসামি হলেন-জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন,সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক কামরুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সদস্য মো. নুরুল ইসলাম, তদন্ত প্রাপ্তে আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
রাজধানীর পূর্বাচলে দশ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। গত ১০ মার্চ মামলার তদন্তে প্রাপ্ত আরো দুই আসামিসহ শেখ হাসিনা ও পুতুলকে নিয়ে ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
শেখ হাসিনা ও পুতুল ছাড়াও মামলার অপর ১৬ আসামি হলেন- জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এই তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
ঢাকা মহানগরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও জননিরাপত্তা বিধানসহ উত্তম কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণকে পুরস্কৃত করেছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মোঃ সাজ্জাত আলী এনডিসি।
সোমবার (১১ আগস্ট ২০২৫) সকালে রাজারবাগস্থ বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে জুলাই মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় উত্তম কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ডিএমপি কমিশনার।
জুলাই-২০২৫ মাসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছে উত্তরা বিভাগ। শ্রেষ্ঠ থানা হয়েছে উত্তরা পশ্চিম থানা। সহকারী পুলিশ কমিশনারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন মিরপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ মিজানুর রহমান। শ্রেষ্ঠ এসআই যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আদাবর থানার এসআই আলমগীর হোসেন ও মিরপুর মডেল থানার এসআই আল আমীন তালুকদার। এএসআইদের মধ্যে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার এএসআই রকিবুল হাসান ও যাত্রাবাড়ী থানার এএসআই মোঃ আক্তারুজ্জামান মন্ডল পলাশ।
গোয়েন্দা বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছে ডিবি-ওয়ারী বিভাগ। শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন ডিবি-ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ ফজলুল করিম ।
ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছে ট্রাফিক-মিরপুর বিভাগ। শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন পল্লবী ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট মোঃ জাকির হোসেন ও এয়ারপোর্ট ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট মোঃ আব্দুল্লাহ আল নোমান।
যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোঃ ফারুক হোসেনের সঞ্চালনায় ডিএমপির জুলাই মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মোঃ নজরুল ইসলাম, পিপিএম-সেবা; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মোঃ শওকত আলী; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মাসুদ করিম; যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ, ডিএমপির সকল থানার অফিসার ইনচার্জগণ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ২৩৯৫টি মামলা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩২৯টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১১৩টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
রবিবার (১০ আগস্ট ২০২৫) ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এসব মামলা করা হয়।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়ায় তিনদিনের সরকারি সফরের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন ।
প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি আজ সোমবার দুপুর ২টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে প্রফেসর ইউনূস এই সফর করছেন।
সফরকালে তিনি মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি একাধিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হবেন।
এই সফরে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও হালাল খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর এবং তিনটি নোট বিনিময়ের কথা রয়েছে।
দীর্ঘ দেড় বছরের বেশী সময় পর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমার অভ্যন্তর থেকে মধ্যরাতে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ ভেসে এসেছে। আর সীমান্ত আকস্মিক গোলাগুলির শব্দে আতংক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।
তবে বিজিবির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা বিদ্রোহী গোষ্টি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরাকান আর্মির সাথে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্টি আরসা বা আরএসও এর মধ্যে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটেছে। তবে সীমান্তে বিজিবি কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
রোববার মধ্যরাত ১০টার পর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে বলে জানান, বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম।
ঘটনায় এপারে ( বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ) কোন গুলি না আসলেও তাৎক্ষণিক বিজিবির টহলদলের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
লে. কর্নেল খায়রুল বলেন, মধ্যরাতে ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু এলাকার সীমান্ত পিলার ৩৪ ও ৩৫ এর মাঝামাঝি এলাকায় শূণ্যরেখা থেকে আনুমানিক ৩০০ থেকে ৩৫০ মিটার দূরে মিয়ানমার অভ্যন্তরে আকস্মিক ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। টানা ৭ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত গোলাগুলি ঘটে। এতে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে সীমান্তের এপারে কোন গুলি আসার ঘটনা ঘটেনি।
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্টি আরাকান আর্মির সাথে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসা ও আরএসও এর গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আরসা নাকি আরএসও এর সাথে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে- তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
বিজিবির এ কর্মকর্তা বলেন, তবে বাংলাদেশের এপারে কোন গুলি আসেনি। এটি মিয়ানমার অভ্যন্তরে ঘটেছে।
ঘটনার পরপর রাতেই বিজিবি টহলদলের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি কঠোর অবস্থান নেয় বলে জানান, লে. কর্নেল খায়রুল আলম।
ওপারের তুমব্রুর নারিকেল বাগিচা এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির দুটি ক্যাম্প থাকায় স্থানীয়দের ধারণা সেখানে হঠাৎ করে বড় কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর মোহাম্মদ ভূট্টো বলেন, দীর্ঘ দেড় বছরের বেশী সময় পর সীমান্তে গুলির শব্দ শোনা গেছে। অনেকক্ষণ যাবত অনবরত গুলির শব্দ পেয়েছি, সেখানে কী হচ্ছে তা বুঝা মুশকিল। ঘটনায় সীমান্তের বাসিন্দারা আতংকে রয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে সীমান্তে বিজিবি কঠোর সতর্ক অবস্থানে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন, লে. কর্নেল এস এম খায়রুল আলম।
গত ২০২৩ সালের অক্টোবরে মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে প্রতিরোধ শুরুর এক বছরেরও বেশি পরে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার রাখাইন অংশের পুরো ২৭১ কিলোমিটার নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি।
জেলার কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জালে ধরা পড়েছে সম্রাট অ্যাঞ্জেলফিশ নামের এক বিরল প্রজাতির মাছ। গতকাল রোববার সকালে মহিপুরে বন্দরে নিয়ে আসলে মাছটি দেখে বন্দরে হইচই শুরু হয়ে যায়। এটি অনেকের কাছে এ্যাকুরিয়াম ফিশ নামেও পরিচিত। আনোয়ার মাঝির জালে মাছটি ধরা পরে।
মাছটি দেখতে রঙিন ও দৃষ্টিনন্দন। জানা গেছে, মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম পোমাক্যান্থাস ইম্পেরেটর। মাছটির আকার ১৬ ইঞ্চির মতো। গায়ের গাঢ় নীল পটভূমিতে হলুদ অনুভূমিক দাগ, মুখে নীল-কালো মাস্ক প্যাটার্ন।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী সোবহান শিকদার বলেন, এমন মাছ জীবনে দেখিনি। মাছটি দেখতে অবিকল একুরিয়ামে থাকা মাছের মতো। বাসার সবাইকে দেখানোর জন্য মাছটির কয়েকটি ছবি তুলে নিয়েছি।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী ছগির আকন বলেন, প্রথম দেখে মাছটিকে আমি বাসায় নিয়ে এসেছি। তবে এ জাতীয় মাছ এই প্রথম দেখলাম। মাছটি খাওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে জানা নেই।
ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশ এর গবেষণা সহকারী মো. বখতিয়ার রহমান জানান, মাছটির বাংলা নাম অ্যাঙ্গেলফিশ।
রঙিন একটি সামুদ্রিক মাছ। এর প্রাকৃতিক আবাসস্থল ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের প্রবাল প্রধান অঞ্চলে।
তিনি আরো বলেন, মাছটি সাধারণত প্রবাল প্রধান, লবণাক্ত, উষ্ণ সমুদ্র অঞ্চলে থাকে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এমন মাছ সচরাচর ধরা পড়ে না। কারণ আমাদের উপকূলীয় অংশ মূলত কাদামাটি ও বালুময়। প্রবাল প্রাচীর তেমন নেই।
তবে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে আন্দামান সাগরসংলগ্ন, মিয়ানমার উপকূলের কাছাকাছি কিছু প্রবাল প্রধান এলাকা আছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বখতিয়ার রহমান আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন ও স্রোতের ধরন বদলের কারণে কিছু সামুদ্রিক প্রজাতি তাদের আবাসক্ষেত্র প্রসারিত করছে। এর কারণে হয়তো এই প্রজাতিটি বাংলাদেশের জেলেদের জালে ধরা পরেছে।
মাছটি প্রসঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, মাছটির নাম অ্যাঞ্জেলফিশ। এটি বিরল প্রজাতির মাছ। মাছটি উপকূলে সচরাচর দেখা যায় না।
তিনি বলেন, মাছটি গভীর সমুদ্রের। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সঙ্গে এটি জালে উঠে এসেছে। এসব মাছ যত বেশি ধরা পড়বে জেলেরা অর্থনৈতিকভাবে তত লাভবান হবেন।
সূত্র: বাসস
চট্টগ্রাম বন্দরে দ্বিতীয়বারের মতো ধাতব স্ক্র্যাপের একটি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত হয়েছে। ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ওই কনটেইনারের ছাড়পত্র স্থগিত করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বুধবার (৬ আগস্ট) বন্দরের ৪ নম্বর গেট দিয়ে ছাড় করানোর সময় মেগাপোর্টস ইনিশিয়েটিভ রেডিয়েশন ডিটেকশন সিস্টেম কনটেইনারটিতে রেডিয়েশন শনাক্ত করে।
কাস্টমস নথি অনুযায়ী, ঢাকাভিত্তিক আল আকসা স্টিল মিলস লিমিটেড এই চালানটি আমদানি করেছে। এটি গত ৩ আগস্ট এমভি মাউন্ট ক্যামেরন জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। চালানে মোট ১৩৫ টন স্ক্র্যাপের পাঁচটি কনটেইনার ছিল, যা কোম্পানিটির ডেমরা কারখানার জন্য আনা হয়।
প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের স্ক্রিনিংয়ে (পরীক্ষায়) কনটেইনারের ভেতরে থোরিয়াম-২৩২, রেডিয়াম-২২৬ এবং ইরিডিয়াম-১৯২ আইসোটোপ শনাক্ত হয়। প্রাথমিকভাবে এক মাইক্রোসিভার্ট মাত্রা রেকর্ড হলেও কাস্টমস কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, স্ক্র্যাপ ও কনটেইনারের দেয়ালের কারণে প্রকৃত মাত্রা আরও বেশি হতে পারে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার মো. সাইদুল ইসলাম জানান, ব্রাজিলের উত্তরের শহর মানাউস থেকে কনটেইনারটিতে স্ক্র্যাপ বা পুরোনো লোহার টুকরা বোঝাই করা হয়। গত ৩০ মার্চ দেশটির মানাউস বন্দরে এমএসসির একটি জাহাজে তুলে দেওয়া হয় কনটেইনারটি। এরপর ১৮ এপ্রিল পানামার ক্রিস্টোবাল বন্দরে নামিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে ৩ মে আরেকটি জাহাজে তুলে নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম বন্দরে নেওয়া হয়। রটারড্যাম থেকে ২ জুন আরেকটি জাহাজে তুলে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে নেওয়া হয়। কলম্বো বন্দরে জাহাজ থেকে কনটেইনারটি নামানো হয় ১৫ জুলাই। সর্বশেষ ২৮ জুলাই কলম্বোর সাউথ এশিয়া গেটওয়ে টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামমুখী জাহাজ মাউন্ট ক্যামরনে তুলে দেওয়া হয়। এটি ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে আসে।
যুগ্ম কমিশনার আরও বলেন, সতর্কসংকেত পাওয়ার পর কনটেইনারটি খালাস করে পরমাণু শক্তি কমিশনকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখান থেকে বিজ্ঞানীরা এসে সরেজমিন তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করবেন।’
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক পরীক্ষায় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পাওয়া গেছে এক মাইক্রোসিয়েভার্টস (তেজস্ক্রিয়তা থেকে যে বিকিরণ হয় তার একক)। এটি উচ্চ মাত্রার নয়, তারপরও কন্টেইনারটি আলাদা করে রাখা হয়েছে। চিকিৎসা, শিল্পকারখানা, গবেষণাসহ নানা কাজে তেজস্ক্রিয় উৎস ব্যবহার হয়। তবে এসব তেজস্ক্রিয় উৎস ব্যবহারের সময় বায়ুরোধী বিশেষ পাত্রে এমনভাবে আবদ্ধ রাখা হয়, যাতে তেজস্ক্রিয় দূষণ না হয়। ব্যবহার শেষে এসব তেজস্ক্রিয় উৎস সংগ্রহ করে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য হিসেবে ব্যবস্থাপনা করতে হয়। তবে নানা কারণে এই উৎস মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রথমবার তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। তখন ভারতের উদ্দেশ্যে পাঠানো স্টেইনলেস স্টিলের স্ক্র্যাপ শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে আটকানো হয়েছিল। পরে কনটেইনারটি চট্টগ্রামে ফিরিয়ে এনে চার দেশের বিশেষজ্ঞ দল এর ভেতর থেকে রেডিয়াম-বেরিলিয়াম উৎস অপসারণ করেন।
বগুড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ১৭৯তম গণশুনানি চলাকালে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
আজ রাতে কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ১৭৯তম গণশুনানি আজ বগুড়ায় অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানি সংক্রান্ত একটি সংবাদ কমিশনের নজরে এসেছে, সংবাদে পরিবেশিত তথ্য বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। গণশুনানি চলাকালে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।’
সংবাদে বলা হয়েছে, কমিশন জনৈক সাকোয়াত হোসেনের ব্যক্তিগত মৎস্য খামারের মাছ লুট হওয়ার অভিযোগ আমলে নেয়নি। এ প্রসঙ্গে দুদক স্পষ্ট করেছে, উক্ত অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর তফসিলভুক্ত অপরাধের অন্তর্ভুক্ত নয়। ফলে তফশিল বহির্ভূত অপরাধ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ গণশুনানিতে উপস্থাপনের সুযোগ নেই।
কমিশনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সকলকে বস্তুনিষ্ঠ ও যাচাই-বাছাই করা সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের চ্যালেঞ্জ ও অর্জন তুলে ধরে বলেন, জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এ বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা অকল্পনীয়। এক মাসে ছাত্র-জনতা যেভাবে জীবন দিয়েছে, তা অবর্ণনীয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছরে আমরা একটি কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি, যাতে নির্বাচিত সরকার এসে কাজ করতে পারে। উন্নয়ন শুধু মেট্রোরেল বা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ নয়। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ না করলে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।"
আজ রবিবার বনানীর লেকশোর হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত "অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন" শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিক অসন্তোষের উদাহরণ টেনে উপদেষ্টা বলেন, "৩৮ হাজার শ্রমিকের আন্দোলন অন্য ফ্যাক্টরির কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। অন্তরবর্তী সরকার কর্তৃক উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করা হয়েছে। গার্মেন্টস খাতে দুর্বৃত্তায়ন রোধে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, কিছু প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় ঋণের সুবিধা নিয়ে ব্যাংকিং খাতকে দুর্বল করেছে, যা অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক 'কর্মসংস্থান অধিদপ্তর' প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে এবং পলাতক মালিকদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্মাণ শ্রমিকদের শ্রম আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবে, আমরা উদ্দ্যোগ নিয়েছি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিগুলোকে লভ্যাংশের একটি অংশ শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে জমা দিতে হবে, নতুবা সরকারি প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এছাড়াও শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন ও কমিশনের সুপারিশ শ্রম আইনে ২০০৬ এ অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে কী-নোট স্পিকার ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সংলাপে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, বিটিএমইএ ও বিজিএমইয়ের নেতৃবৃন্দ, শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন থানা-পুলিশ ছিল না। ঢাকায় শিক্ষার্থীদের ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একদিনে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তবে বহুগুণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হয়েছে, অর্থনীতিও ভালো হয়েছে। আমরা আশা করি একটি সুন্দর নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে করতে পারব। এভাবে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৈরি আছে, আমাদেরও আন্তরিকতার অভাব নেই। তিনি
আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের পশ্চিম মেড্ডা এলাকার জামিয়া দারুল আরকাম মাদরাসায় আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় ও সংবর্ধনা গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, নতুন বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে আলেম-ওলামাদের অবদান সোনার অক্ষরে লেখার মতো। বাংলাদেশে যখনই বিপদ-দুর্যোগ এসেছে, আলেম-ওলামারা জনগণের সঙ্গে মিলে ময়দানে থেকেছেন এবং তারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, আহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের সময়েও শত শত মাদরাসাছাত্র আহত হয়েছে, শাহাদাৎ বরণ করেছে। আগামী দিনেও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আলেম-ওলামা, মাদরাসাছাত্র-শিক্ষক প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছেন।
এ সময় ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, জেলা হেফাজতে ইসলামের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বোরহান উদ্দিন কাসেমী ও সাধারণ সম্পাদক আলী আজম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, বাংলাদেশের নারীদের ক্ষমতায়ন ও সুযোগ সম্প্রসারণে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি বলেন, রাজনীতির ময়দান থেকে নির্বাচনী মাঠে নারীর জন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো কমাতে হবে। তিনি ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত নারী প্রার্থীদের জন্য সরকারি তহবিল বিষয়ক ঐতিহাসিক পলিসি ডায়ালগের খসড়া অর্ডিন্যান্সটি স্বাগত জানান এবং সংলাপে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মতামতের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই সংলাপ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা নারীর ক্ষমতায়ন ও জাতীয় নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার সংস্কারে সব রাজনৈতিক দলের একসাথে এগিয়ে আসার অঙ্গীকার বহিঃপ্রকাশ।
উপদেষ্টা রোববার (১০ আগষ্ট) ঢাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই), ইউকেএইড এর অর্থায়নে B-SPACE প্রকল্পের আওতায় Election Campaign Funding (Woman Candidates) Ordinance' বিষয়ে পলিসি ডায়লগ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। এতে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচন কমিশন, নারী সংস্কার কমিশনের সদস্য, কেন্দ্রীয় জামায়াতে ইসলামীর সদস্য, জুলাই কন্যা , মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
সংলাপে প্রস্তাবিত Election Campaign Funding
(Women Candidates) Ordinance বিষয়ে আলোচনা করা হয় একই সঙ্গে নারী প্রার্থীদের জন্য লিঙ্গ সংবেদনশীল সরকারি তহবিল কাঠামো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সহজ আবেদন প্রক্রিয়া এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থারও প্রস্তাব করা হয়। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এর মূখ্য পরিচালক ড. মোঃ আব্দুল আলীম খসড়া অর্ডিন্যান্স উপস্থাপনা এবং এর প্রত্যাশিত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন।
বক্তারা সবাই একমত পোষণ করেন যে, এই উদ্যোগ অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থাপনাটি সমর্থন জানিয়ে এর বিষয়বস্তু পরিমার্জন ও পাশের পর দ্রুত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেন। নির্বাচন কমিশনও নিশ্চিত করেন যে এটি গৃহীত হলে তা বাস্তবায়নের জন্য তারা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অফ পার্টি (COP) ক্যাথরিন সিসিল বলেন, আন্তর্জাতিক গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, সরকারি তহবিল নারীদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। বর্তমানে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপট পুনর্গঠনের একটি যুগান্তকারী সুযোগ রয়েছে। সুতরাং সরকারি তহবিল নারীদের সুযোগের সমতা নিশ্চিত করবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হারানো আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য শিগগীরই পুরস্কার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হারানো অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে আমরা একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হারানো অস্ত্রের সন্ধান দিতে পারবে, তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। দ্রুত এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হবে যা পরবর্তীসময়ে মিডিয়ায় জানিয়ে দেয়া হবে।
তিনি এ সময় জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আনুমানিক ৭শ’ অস্ত্র উদ্ধার এখনো বাকি রয়েছে।
গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। জাতি হিসেবে আমরা খুব অসহিষ্ণু হয়ে গেছি।৷ আগে সমাজে কোন খারাপ কাজ ঘটলে লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়তো সেটা প্রতিহত করার জন্য৷ কিন্তু আজকাল সেটা খুব কমে গেছে।৷ অপরাধ প্রতিহত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
তিনি আরো বলেন, সবসময় সবজায়গায় তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকেন না৷ সে সময় উপস্থিত জনতারই প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রতিরোধ বা প্রতিহত করা উচিত। উপদেষ্টা এসময় গাজীপুরের ঘটনায় জড়িতদের বেশিরভাগকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান।
নিউমার্কেট থেকে ১১শ’ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, এসব অস্ত্র যারা তৈরি করেন, তাদেরকে আরো সর্তক হতে হবে। তারা জানে- কারা এসব ব্যবহার করছে। যারা এগুলো করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতা হবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দায়িত্ব শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নয়। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সর্বোপরি জনগণ। আশা করি, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবো।
উপদেষ্টা এসময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রসহ একজন বাড়তি আনসার সদস্য (গানম্যান) নিয়োজিত থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
ব্রিফিংকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মোঃ খোদা বখস চৌধুরী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দেশের যেকোনো মাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় হামলা চালালে বা ধ্বংসের চেষ্টা করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
আজ (রোববার, ১০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ পরিদর্শন শেষে একথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘মাজারে কিছু হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার রিপোর্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে রয়েছে। আমি আন্তঃমন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। এসব বিষয় প্রতিমাসে আলোচনায় আসে। প্রতিটি মাজার ও মসজিদ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি, সিসি ক্যামেরা বসান।
এতে হামলাকারী চিহ্নিত করা সহজ হবে। সামাজিক সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি মাজারে পুলিশ মোতায়েন সম্ভব নয়, তাই সর্বস্তরের মানুষকে এসব ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তায় অংশ নিতে হবে।’
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এরইমধ্যে বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং কিছু ব্যক্তি গ্রেপ্তারও হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্দিষ্ট মামলার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে।’
পাগলা মসজিদের ফাণ্ডে ৯০ কোটি টাকারও বেশি রয়েছে জানিয়ে ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, খুব শিগগিরই দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদের ১০ তলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হবে। আধুনিক তুরস্কে বসফরাস প্রণালীর পাশে যে মসজিদগুলো আছে, দৃষ্টিনন্দন, মাল্টিপারপাস সেটির আদলে পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে। ১০ তলা বিশিষ্ট এই ভবনে বহুমুখী কাজ সম্পন্ন করা হবে। অনাথ-এতিমদের জন্য লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হবে। ধর্মীয় শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা, একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, আইটি সেকশন থাকবে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদের মধ্যেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘পাগলা মসজিদের ৯০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ১৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এফডিআর হিসেবে রাখা আছে, যা থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ গরিব, অসহায়, অনাথ ও অসুস্থদের জন্য ব্যয় করা হয়। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আজ আমি প্রস্তাব করেছি—স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দরিদ্র শিক্ষার্থীদেরও এই তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হোক। এতে শিক্ষার সুযোগ বাড়বে।’
পাগলা মসজিদ পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইমরানুল ইসলাম, আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদসহ মসজিদ কমিটির সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া এলাকায় জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পরিদর্শন করেন ধর্ম উপদেষ্টা। পরে পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্স ঘুরে দেখে মোতাওয়াল্লীদের সাথে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
দুপুরে তিনি আল জামিয়াতুল এমদাদিয়া কর্তৃক আয়োজিত “ইসলামী অর্থনীতির গুরুত্ব” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে সেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে।