মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলাদেশের একজন বর্ষীয়ান বাম রাজনীতিক। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনাপ্রবাহ খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহাত মিনহাজের সঙ্গে।
রাহাত মিনহাজ: ১৯৭৫ সালের আগস্টে আপনার রাজনৈতিক পরিচয় কী ছিল?
মুজাহিদুল সেলিম: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমি আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর ভিপি ছিলাম। তবে আমার ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পর আমি তখন সরাসরি কমিউনিস্ট পার্টির কাজে যুক্ত ছিলাম। কমিটির সদস্য হিসেবে পাড়া-মহল্লাগুলোতে পার্টির সংগঠন গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করেছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে যখন বাকশাল গঠিত হয়, সব রাজনৈতিক দল বাতিল করে দিয়ে একটা জাতীয় রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক- সব একটা একটা করে সংগঠন তৈরি হলো। তখন জাতীয় ছাত্রলীগ নামের একটা সংগঠন গড়ে তোলা হয়। সেই জাতীয় ছাত্রলীগের যে কমিটি গঠন করা হয় সেই কমিটিতেও আমাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই ১৫ আগস্ট চলে আসে। যার ফলে তখন এ কথা বলা যায় যে জাতীয় ছাত্রলীগ গঠিত হয়েছে। আবার এ কথাও সমানভাবে সত্য যে ছাত্র ইউনিয়নের কাঠামোটা তখনো ভেঙে যায়নি। পুরাতন ছাত্রলীগের কাঠামোটাও ঠিক ছিল। সবার রাজনৈতিক যোগাযোগও অটুট ছিল।
রাহাত মিনহাজ: ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল। এ নিয়ে নিশ্চয়ই আপনাদের ব্যস্ততা ছিল?
মুজাহিদুল সেলিম: আমি ডাকসুর ভিপি। বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটা বড় রকমের আয়োজন ছিল। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বঙ্গবন্ধুকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বহিষ্কারের এত বছর পর, তাঁকে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবর্ধনা দেয়া, এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। সুতরাং খুব জাঁকজমকের সঙ্গেই এই অনুষ্ঠানটা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নানা অংশ আছে, তার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হলো ছাত্রসমাজ। ছাত্রসমাজের যে নির্বাচিত সংস্থা, তার ভিপি হিসেবে সেখানে আমাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাই আমাদের ব্যস্ততা ছিল অনেক বেশি।
রাহাত মিনহাজ: ১৫ আগস্টের আগে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি কেমন ছিল। আমরা যতদূর জানি কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল?
মুজাহিদুল সেলিম: বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে আমরা বিরাট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আয়োজনের নানা মাত্রা ছিল। ১৩ আগস্টে আমার কাছে খবর আসে পাকিস্তান দিবস (১৪ আগস্ট) উপলক্ষে পাকিস্তানের গুণগান গেয়ে একটা হ্যান্ডবিল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিলি করা হয়েছে। তবে তা খুব সংখ্যায় অল্প। আমরা একটু বিচলিত হই এই ভেবে যে পাকিস্তানপন্থিরা এই পরিস্থিতিতে আবার তৎপর।
রাহাত মিনহাজ: ক্যাম্পাসে হাত বোমা বা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা কখন ঘটে?
মুজাহিদুল সেলিম: এটা ১৪ আগস্টের ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই-তিনটা গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, আরেকটা সায়েন্স ভবনের ম্যাথমেটিক্স ডিপার্টমেন্টের দোতলায় বাথরুমের ভেতর। আমি নিজে ম্যাথমেটিক্সের বাথরুমে গিয়ে বিস্ফোরিত গ্রেনেডের স্প্লিন্টারগুলো দেখতে পাই। তাড়াতাড়ি সরকারি সংস্থাগুলোকে খবর দেয়ার চেষ্টা করি। আমি নিজে মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। দেখে বুঝলাম যে স্প্লিন্টারগুলো বেশ শক্তিশালী। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
রাহাত মিনহাজ: তারপর আপনারা কী করলেন?
মুজাহিদুল সেলিম: মোটরসাইকেল দিয়ে ভলান্টিয়াররা নিরাপত্তার ব্যাপারটা দেখাশোনা করছিল। আমি তদারকি করছিলাম। সন্ধ্যার দিকে দেখি মিলিটারি ইনটেলিজেন্সের লোকেরা টিএসসির সামনে। তাদের প্রধানের সঙ্গে আমার দেখা হলো। তিনি বললেন, ‘কোনো চিন্তা করবেন না, আমরা সব সিকিউরিটি চেক করেছি। এবং মেটাল ডিটেক্টর ডিভাইস দিয়ে আমরা সব এলাকা পরীক্ষা করে আন্ডার কন্ট্রোলে রেখেছি।’ পরবর্তী সময় হিসাব মিলিয়ে নানা রকম অ্যানালাইসিস করে আমি দেখেছি যে, এইটাও ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার একটা অংশ। কারণ মিলিটারি ইনটেলিজেন্স টিএসসি, ইউনিভার্সিটি এরিয়ায় ব্যবহার করে, আক্রমণের আসল জায়গায় যেতে যাতে গোয়েন্দা নজরদারি দুর্বল থাকে, সেটার জন্য হয়তো এটা করা হয়েছিল।
রাহাত মিনহাজ: ১৪ আগস্ট ক্যাম্পাসে বোমা কারা ফাটাল। তাদের লক্ষ্য কী ছিল?
মুজাহিদুল সেলিম: এটা ছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কাজ। তৎকালীন জাসদের নেতা, এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন একাধিক জায়গায় বলেছেন ওই গ্রেনেড দুইটা তাদের কর্মীরা ফাটিয়েছিল। তারা এই বোমার নাম দিয়েছিল নিখিল। নিখিল নামে তাদের এক কর্মী ছিল। যে বোমা বানাতে গিয়ে নিহত হয়। তাই তারা এই বোমার নাম দিয়েছিল নিখিল।
রাহাত মিনহাজ: সেই সময়ে নিখিল হামলা কি নিতান্তই নিছক কোনো প্রতিবাদ ছিল। নাকি এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য ছিল?
মুজাহিদুল সেলিম: আমি এখনো এইটার যোগসূত্রটা বুঝতে পারি না। এখানে একটা রহস্য আছে। এটা কি জাসদ বিচ্ছিন্নভাবেই করেছিল নাকি কেউ তাদের দ্বারা করিয়েছিল। তাদের ডাইভারসন ট্যাকটিসের অংশ হিসেবে। এই প্রশ্নের পরিপূর্ণ জবাব আমি আজও পাইনি। ভেতরে ভেতরে অনেক কিছু থাকতে পারে।
রাহাত মিনহাজ: যতদূর জানি বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল ওই রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিলেন?
মুজাহিদুল সেলিম: শেখ কামাল ক্যাম্পাসেই ছিল। একটু গভীর রাত, সম্ভবত রাত দেড়টা-দুইটার দিকে শেখ কামাল আমার কাছে আসে। ও বলে ‘সেলিম ভাই, আপনারা তো আছেনই। আমি বাসায় যাই।’ কামাল তখন সদ্য বিবাহিত। আমার মনটা নরম হয়ে গেল। তাকে বললাম তুমি যেতে পার। কিন্তু কাল প্রেসিডেন্টের মোটরকেডে করে তুমি ক্যাম্পাসে আসতে পারবে না। তোমাকে আগেই ক্যাম্পাসে এসে ডিউটিতে জয়েন করতে হবে। এই শর্তে তাকে আমি যেতে দিলাম। ওটাই ছিল কামালের সঙ্গে আমার শেষ দেখা। এখন মনে হয় আমি যদি তাকে যেতে না দিতাম! মনটা শক্ত করে তাকে যদি বলতাম তুমি কি লাটসাহেব! আমরা জেগে আছি আর তুমি বাসায় যাবে। যদি তাকে রেখে দিতাম হয়তো তার জীবনটা রক্ষা পেত!
রাহাত মিনহাজ: এরপর কী ঘটল। আমি জানতে চাচ্ছি খুনিদের অভিযান বা হত্যা মিশন সম্পর্কে আপনারা কখন জানতে পারলেন?
মুজাহিদুল সেলিম: কামাল চলে যাওয়ার পরও আমরা ক্যাম্পাসে তৎপর ছিলাম। ক্যাম্পাসের এখানে-সেখানে ঘুরে ঘুরে তখন প্রায় ভোর হচ্ছিল। ভোর হয় হয় ভাব। আমি বসেছিলাম কলা ভবনের সামনে। তখন অনেকগুলো মোটরসাইকেল এল। যারা ক্যাম্পাস পাহারা দিচ্ছিল। ওখানে বসে আমরা কথাবার্তা বলছি। হঠাৎ দূরে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ শুনলাম। মনে হলো শব্দগুলো ধানমন্ডির দিক থেকে আসছে। বেশ দুশ্চিন্তা হলো। দুজন কর্মীকে পাঠালাম কী হচ্ছে দেখতে। ওরা একটু পরেই ফেরত এল। বলল ওই দিকে তো যাওয়া যাচ্ছে না। কলাবাগানের ওই সাইড থেকে গুলির আওয়াজ আসছে। ওরা আসতে আসতেই ইউনিভার্সিটির এক স্টাফ (কর্মচারী) দৌড়ে এসে বলল (তার রেডিও চালু ছিল), রেডিওতে তো এ রকম অ্যানাউন্সমেন্ট হচ্ছে। তখন ডালিমের ঘোষণা মাত্র সম্প্রচার শুরু হয়েছে…।
রাহাত মিনহাজ: এরপর আপনারা কী করলেন?
মুজাহিদুল সেলিম: আমি আবার আরেকটা দল পাঠালাম। ওরাও একই রিপোর্ট নিয়ে এল ধানমন্ডির দিকে যাওয়ার উপায় নাই। আমরা যারা কলাভবনের সামনে দাঁড়িয়েই ছিলাম আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এর একটা প্রতিবাদ করতে হবে। ওরা ইউনিভার্সিটিতেও তো অ্যাটাক করতে পারে। আমরা কোনো একটা নিরাপদ জায়গায় যাই। হাতিরপুলের একটা বাসায় আমরা ৫-৬ জন অবস্থান নিলাম। ওই বাসায় টেলিফোন ছিল। আমরা বিভিন্ন জায়গায় টেলিফোন করলাম। প্রতিবাদ মিছিলের জন্য সবাইকে রেডি থাকতে বললাম।
রাহাত মিনহাজ: এরপর কী ঘটছিল?
মুজাহিদুল সেলিম: ওই বাড়িতে আমরা রেডিও খোলা রাখলাম। ডালিমের অ্যানাউন্সমেন্ট আসছে দ্বৈতকণ্ঠে। আর একটু পরপর নতুন নতুন খবর আসছে। একে একে দেখা গেল যে তিন বাহিনীর প্রধান আনুগত্য ঘোষণা করলেন। খন্দকার মোশতাক তো আগেই শপথ নিয়ে নিয়েছে। তার কেবিনেটের মেম্বারদের নাম অ্যানাউন্স করা হলো এবং তারাও শপথ নেয়া শুরু করল। এভাবে বেলা দেড়টা-দুইটা বাজতে বোঝা গেল যে পাওয়ার কনসলিউডেড (ক্ষমতা সুসংহতকরণ) করা হয়েছে। সারা দেশে কারফিউ। ভয়ংকর পরিস্থিতি, রাস্তায় ট্যাংক ঘুরছে, রেডিওতে জঙ্গি সব গান-বাজনা চলছে। রাস্তাঘাট জনশূন্য। আমরা তখন ঠিক করলাম যে আজকে প্রতিবাদ করতে যাওয়াটা ঠিক হবে না। আমরা ঠিক করলাম আরেকটু প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে। সে জন্য ইউনিভার্সিটি খোলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
রাহাত মিনহাজ: এরপর তো অনেক কিছুই বদলে গেল রাতারাতি। আপনারা প্রতিবাদের জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি নিলেন?
মুজাহিদুল সেলিম: আগস্ট থেকে অক্টোবর-নভেম্বর ১৯৭৫ এই সময়টা আমরা নিষ্ক্রিয় ছিলাম। তবে তারপরও আমরা কর্মীদের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে সংযোগ গড়ে তুলছি। তখন যা ছিল বেশ বিপজ্জনক। ওই বাস্তবতায় আমরা সরাসরি নির্দেশ দিতে পারতাম না। সাংকেতিক চিঠি লেখা পাঠাতাম। যেমন- ‘প্রিয় আবদুল, তোমার বাবার মৃত্যু সংবাদে আমরা মর্মাহত। কিন্তু তুমি বড় ভাই। সংসারকে দেখে রাখতে হবে। মন যাতে ভেঙে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভাই-বোনের খবরাখবর রাখবে।’ এইটা দিয়ে সিগন্যাল বোঝা যেত যে বঙ্গবন্ধু মারা গেছে। সংসার ভেঙে গেছে যার অর্থ সংগঠন ভেঙে গেছে। ভাই-বোন অর্থ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। পোস্টকার্ডে এই ধরনের চিঠি লিখে সব জেলায় পাঠাতাম। তারপর আরেকটা ঘটনা ঘটেছিল।
রাহাত মিনহাজ: কী সেই ঘটনা?
মুজাহিদুল সেলিম: খন্দকার মোশতাক আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বৈঠক মিটিং ডাকে। মিটিং ডেকে তিনি সেখানে সবাইকে তার পক্ষে আনার জন্য চেষ্টা করেন। আমরা তখন সাইক্লো স্টাইল করে কড়া ভাষায় হুমকিমূলক একটা চিঠি সব এমপির কাছে পৌঁছে দিই। ‘খবরদার, আপনারা গেলে কিন্তু আপনাদের বিপদ হবে’- এই ধরনের শক্ত ভাষায় চিঠি পাঠাই। এতে কাজ হয়। খন্দকার মোশতাক যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবে সফল হলেন না। এটা শুধু আমাদের প্রচেষ্টা না, অন্যদেরও প্রচেষ্টা ছিল। এর মধ্যে বোধহয় ১৮ অক্টোবর ক্যাম্পাস খুলেছিল। সাধারণ ছুটি, পূজা, সঙ্গে ক্যাম্পাসে যাতে কোনো অঘটন না ঘটে তা মিলিয়ে ক্যাম্পাস অনেক দিন ছুটি ছিল। ১৫ আগস্ট থেকে টানা চলছিল ছুটিটা। অক্টোবর মাসের শুরুর দিকেই আমরা ঠিক করলাম কবে ইউনিভার্সিটি খুলবে এবং খোলার পরপরই আমরা মিছিল করব। এটা হলো এক নম্বর সিদ্ধান্ত। দুই নম্বর সিদ্ধান্ত হলো ২৮ অক্টোবর আমরা একটা খালি পায়ে বটতলা থেকে নীরব মিছিল করে ৩২ নম্বরে যাব। এইটার জন্য একটা লিফলেট ছাপা হবে- ‘কাঁদো, দেশবাসী কাঁদো’। ওই লিফলেট ছাপা হয়েছিল দুই লাখ। সেগুলো বিভিন্ন প্রেসে ছাপানো হয়েছে, ডিস্ট্রিবিউটও হয়েছে। ছাপানো এবং ডিস্ট্রিবিউট করতে গিয়ে পাঁচ-ছয়জন কর্মী গ্রেপ্তারও হয়েছে। অনেকে আহতও হয়েছে। আমাদের কাজ কিন্তু চলছিল। লিফলেটটা ছাপাতে একটু দেরি হয়ে গেল। সেই কারণে আমরা তারিখটাকে পরিবর্তন করে ৪ নভেম্বর করলাম। বিশ্ববিদ্যালয় খুলল ১৮ অক্টোবর।
রাহাত মিনহাজ: তারপর আপনারা কী করলেন?
মুজাহিদুল সেলিম: তখন আমি ক্যাম্পাসে যেতে পারতাম না। কারণ আমি ওয়ানটেড ছিলাম। থাকতাম কাঁটাবনের একটা বাসায়। ২০ অক্টোবর ছাত্র ইউনিয়নের নেতা কাজী আকরাম মধুর ক্যানটিনে দলবল নিয়ে ঢুকে টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে ১ মিনিটের একটা জ্বালাময়ী ঘোষণা দিয়ে সব কর্মী নিয়ে করিডরের ভেতর দিয়ে ঝটিকা মিছিল করে। এই হলো প্রথম ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রথম প্রতিবাদ। ‘এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে’, ‘মুজিব হত্যার বিচার চাই’ স্লোগান চলল। সবাই হকচকিত। তারপর জাসদ এখন যারা মন্ত্রী, তারা পাল্টা মিছিল করল। তাদের স্লোগান ‘রুশ ভারতের দালালরা হুঁশিয়ার’, ‘দালাল সেলিমের কল্লা চাই’। আমাদের কর্মীদের ওপর আবাসিক হলে হলে আক্রমণ করা শুরু হলো। আমরা আবার এক দিন গ্যাপ দিলাম। তত দিনে আমাদের ডেট শিফট হয়ে ৪ নভেম্বর হয়ে গেছে। আমরা তখন টিচারদের পারমিশন নিয়ে প্রত্যেকটা ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে ক্যাম্পেইন করা শুরু করলাম। ক্লাস ক্যাম্পেইন যেটাকে বলে। আমি নিজে একটু গোপনে সব বুদ্ধিজীবীর বাসায় গেলাম। কবি জসীমউদ্দীন, বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী জয়নাল আবেদীন তাদের সঙ্গে কথা হলো। তাদের বললাম আমরা মিছিল করতেছি, আপনারা থাকবেন। তারা বললেন ‘তোমরা কর, আছি আমরা।’ তবে অনেকের শারীরিক অসুস্থতা ছিল। তাই যুক্ত হতে পারেননি। পরিকল্পিতভাবে আমরা মিছিলটার সব অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছিলাম।
রাহাত মিনহাজ: ক্যাম্পাসের অন্য ছাত্ররাজনীতি করা দল ছাত্রলীগ বা জাসদ ছাত্রলীগ কি তখন এতটা শক্তিশালী ছিল?
মুজাহিদুল সেলিম: আগে থেকেই তারা পাওয়ারফুল ছিল। তাদের সংগঠনের ভিত্তি ছিল। কর্মী ও ক্যাডার ছিল। এর আগে ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট ছিনতাই হয়েছিল। ওই ভোটে ব্যালট যদি ঠিকমতো কাউন্ট হতো, তাহলে জাসদের প্রার্থীরা জিতে যেত। আওয়ামী লীগের ভুলটা ছিল ছাত্র সংগঠনটাকে নিয়ে অতিরিক্ত রাজনীতি করা হয়েছিল। ক্ষমতাসীনরা বুঝতে চায়নি ডাকসুতে হেরে গেলে তাদের দেশের ক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে যায় না। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যা হয়েছিল তা ঠিক হয়নি। যার কারণে জাসদ ছাত্রলীগ আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
রাহাত মিনহাজ: এর মধ্যেই তো আবার অন্য ঘটনা ঘটে গেল?
মুজাহিদুল সেলিম: এসব প্রস্তুতির মধ্যেই ২ নভেম্বর রাতে ক্যু হয়ে গেল। ৩ তারিখ ভোরে জেল হত্যাকাণ্ড ঘটে। আকাশে প্লেন (জেট) উড়ছে, কিন্তু কী হচ্ছে কিছুই জানা যাচ্ছে না। রেডিওতে কোনো ধরনের ঘোষণা নেই। পুরো ৩ তারিখ জুড়ে নানা গুজব। মানুষ একেবারেই কিছুই জানতে পারছিল না। উত্তেজনাপূর্ণ, গুমোট একটা অবস্থা। আর আমরা এদিকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা হওয়ার হবে। আমরা আমাদের প্রোগ্রাম অব্যাহত রাখব। আমাকে একটু গোপনে থাকতে হচ্ছিল। কারণ পরের দিন আমাকে ক্যাম্পাসে আসতে হবে। সেদিন রাত্রে আমি চামেলীবাগে মঞ্জুরুল আহসান খানের বাসায় ছিলাম। ওই বাসা আমরা ব্যবহার করতাম লিফলেট ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য। যে বাসা থেকে মঞ্জুরুল আহসান খান কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা রাশেদ মোশাররফকে (খালেদ মোশাররফের ভাই ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য) ফোন করেছিলাম।
রাহাত মিনহাজ: কী কথা হলো তার সঙ্গে?
মুজাহিদুল সেলিম: মঞ্জুরুল আহসান খান ও রাশেদ মোশাররফ ছিলেন একই এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ ছিল। রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিবর্তনসহ নানা বিষয় জানতে মঞ্জুরুল আহসান খান মূলত তাকে ফোনটি করেন। ওই সময় রাশেদ মোশাররফ জানান তার ভাই (খালেদ মোশাররফ) এখানেই (রাশেদ মোশাররফের বাড়িতে) আছেন। তখন মঞ্জুরুল আহসান খানের সঙ্গে খালেদ মোশাররফের কথা হয়। খালেদ মোশাররফ ও মঞ্জুরুল আহসান খানের কথার মধ্যেই একপর্যায়ে খালেদের সঙ্গে কথা হয় আমার। আমি তখন খালেদকে ৪ নভেম্বরের পূর্বনির্ধারিত শোক র্যালির কথা জানাই। এবং তিনি জানান ‘আমার ছেলেরা তোমাদের বাধা দেবে না’। আমি তাঁকে (খালেদ মোশাররফ) এই মিছিলে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাই। খালেদ হেসে জানান, তিনি পারবেন না। তবে তার মা মিছিলে থাকবেন।
রাহাত মিনহাজ: এদিকে তখন তো অনেক খবর বাতাসে ভাসছিল। ছিল নানা গুজব। আপনি কী ধরনের তথ্য পাচ্ছিলেন?
মুজাহিদুল সেলিম: ওই সময় গুজব দুই রকমের ছিল। একটা হলো অনেকেই বলছিল, সবাই তৈরি হও। জাতীয় চার নেতাকে আনা হচ্ছে। ওনারা শপথ নেবেন। মোশতাকের সরকার সরে গেছে। হত্যাকাণ্ডের যে রাজনৈতির পরিবর্তন সেইটাকে আবার কারেক্ট করা হইছে। আরেকটা গুজব ছিল, আগের তথ্য ঠিক না। চার নেতা আসছেন না। কিছু একটা ঘটেছে। কী ঘটছে, চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, এই কথাগুলো আমি শুনিনি। কিন্তু সামথিং সিরিয়াস ঘটে গেছে। ৩ তারিখ সারা রাত এমন শোনা গেল। ৪ তারিখ সকালের দিকে গুজবটা আরও মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। ‘ওনাদের কেন বের করা হচ্ছে না, কেন শপথ পাঠ করানো হচ্ছে না, জেলখানায় তো সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটে গেছে’ এমন কিছু একটা। ৪ তারিখ সকালে আমি বিশ্ববিদ্যালয় গেলাম। নানা গুজব। আমি ভাবলাম গুজবে কান দিয়ে লাভ নেই। খোঁজ নিই। আমি দুজনকে পাঠালাম জেলখানায় খোঁজ আনতে।
রাহাত মিনহাজ: তারা কী খোঁজ আনল, আপনি পরে কী করলেন?
মুজাহিদুল সেলিম: তারা সবচেয়ে খারাপ খবরটাই আনল। ঘটনা ঠিক। মিছিলের আগে আমি বললাম কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। আমরা ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসি। ৩২ নম্বরে গেলাম। শোক মিছিলের আগে বঙ্গবন্ধুর বড় ছবি। সেখানে যাওয়ার পর বন্ধ দরজার সামনে ছবি রেখে ফুল দেয়া হলো। এক মাওলানা দোয়া পড়লেন। শেষে কলাবাগানে আমি রাস্তায় রিকশার ওপর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলাম জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হয়েছে। পরদিন ৫ নভেম্বর অর্ধদিবস হরতালের ঘোষণা দিলাম।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রণ এবং ন্যায়পাল নিয়োগ প্রক্রিয়ার আলোচনায় অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বিএনপি।
সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২০তম দিনের আলোচনার শুরুতে ওয়াকআউটের সিদ্ধান্ত জানায় দলটি।
বেলা সাড়ে ১১টার পরে বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ জানান, তাদের দল এ আলোচনায় অংশ নেবে না।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা উপস্থিত থাকবেন কিন্তু আলোচনায় অংশ নেবেন না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে পুরো সংলাপ বন্ধ করা সম্ভব নয়।
অবশ্য কিছু সময় পর বিএনপি আবার আলোচনায় যোগ দেয়।
তবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, একটি বড় দল আলোচনায় অংশ না নিলে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। আলোচনায় অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়।
কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভায় মাদকবিরোধী অভিযানে ১০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ সৈয়দ নূর (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
অভিযানে ১টি ওয়ান শুটার গান, ১টি এলজি, ১ রাউন্ড তাজা গুলি ও ১টি গুলির খালি খোসা উদ্ধার করা হয়।
সোমবার বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে আরো বলা হয়, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) জানতে পারে, একটি অপরাধীচক্র সমুদ্রপথে মাদক এনে টেকনাফ ও আশপাশের এলাকায় বেচাকেনা করছে। এরপর লে. কর্নেল আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিজিবির একাধিক দল টেকনাফ শহরের বিভিন্ন স্থানে একযোগে অভিযান চালায়।
একপর্যায়ে টেকনাফ পৌরসভার খানকারপাড়া এলাকা ঘিরে ফেলে বিজিবি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় রোববার দুপুরে সৈয়দ নূরকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মাদক সরবরাহকারী মো. হারুন অর রশিদ বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে মাদকের একটি প্যাকেট নূরের কাছে রেখে আরেকটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে নূরের বাড়ি তল্লাশি করে বিপুল পরিমান মাদক, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়।
আটক নূর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পাশেই সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠা আধুনিক শোধনাগার। প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হওয়া এ শোধনাগারই এরই মধ্যে চালুও হয়েছে। তবে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় নাচোল পৌরসভার ট্রাকে করে নিয়ে আসা শহরের সব ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে আগের মতই রাস্তার পাশে। এতে করে এত টাকা খরচে নির্মিত হওয়া আধুনিক শোধনাগারটি খুব একটা কাজে আসছে না, উল্টো বর্জ্য শোধনাগারের সামনে থাকা ময়লা-আবর্জনার স্তুপে ছড়াচ্ছে দূর্গন্ধ, পথচারী, ওই এলাকার বাসিন্দা সবাই পড়েছেন ভোগান্তিতে।
নাচোল উপজেলার দরবেশপুর এলাকায় সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে নির্মিত এ শোধনাগারের কার্যক্রম গত ৭ জুলাই উদ্বোধন করেন সাবেক পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা সরকার। এরপর থেকেই কয়েকজন শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। তবে তাদের কেউই কোন ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার করছেন না, নেই কোন নির্ধারিত মাস্ক ও পোষাক। যা তাদের বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুকিতে ফেলে দিচ্ছে।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, রাস্তার পাশেই ময়লা এনে জমা করে রাখার কারনে এলাকায় টেকায় যাচ্ছে না, দূগন্ধে বসবাস করায় কঠিন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আতাউর রহমান বর্জ্য শোধনাগারের জন্য আনা ময়না আবর্জনা রাস্তায় পাশেই স্তুপ করে রাখা হচ্ছে এতে ছড়াচ্ছে দূগন্ধ, এলাকাবাসীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।
এ প্রকল্পের সংস্লিষ্ট কর্মকর্তা তাহসিনা সিরাজ জানান, ময়লা আবর্জনা পৌরসভার, তারা আমাদের এখানে পৌচ্ছে দিবে। আমাদের শোধনাগারের মধ্যেই তাদের ট্রাক নিয়ে আসবে। তাহলে শোধনাগারের সামনে সড়কের পাশেই কেন ময়লার স্তুপ। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন আমি বিষয়টি দেখছি।
শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার বিষষে উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম জানান, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হবে, আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলব।
নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, আমি নতুন এসেছি, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিব।
হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্য অর্জনে আজ পালন করা হবে ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’। বিশ্বের অনান্য দেশের মত বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও আজ ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘আসুন এটি ভেঙে ফেলা যাক’।
তিনি আরো বলেন, লিভার রোগ সম্পর্কে অজ্ঞতা, সময়মত চিকিৎসা না করা এবং নানা কুসংস্কারের কারণে দেশে লিভার রোগের প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪.৪ শতাংশ হেপাটাইটিস-বি এবং ০.৬ শতাংশ হেপাটাইটিস-সি ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতিবছর বহু মানুষ হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার ও লিভার ফেইলিওরে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান।
সচেতনতা ও সময়মতো সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এসব রোগ প্রতিরোধ এবং সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব। স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর বলেও আশা প্রকাশ করেন।
২০০৮ সালের ২৮ জুলাই প্রথমবার বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্যোগ নেয় ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স’। ২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে প্রতিবছর এই দিনে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস হল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত ১১টি আনুষ্ঠানিক বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য প্রচারের একটি। নোবেল বিজয়ী বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আবিষ্কার করেন। তার জন্মদিন ২৮ জুলাইকেই ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
বিশ্বজুড়ে আজ বিনামূল্যে স্ক্রিনিং, টক শো, প্রচারণা, কনসার্ট এবং টিকাদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালিত হচ্ছে। প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
২০২৪ সালের ২৯ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে তা ব্যাপক ভাবে প্রচারের কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে নতুন কর্মসূচির কথা জানান।
এতে বলা হয়, হত্যা ও নির্যাতনের বিচার না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে নির্মম উপহাস করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে ৩০ জুলাই মঙ্গলবার মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে তা ব্যাপক প্রচারের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির বিষয়টিও তিনি খুদে বার্তায় উল্লেখ করেন। নতুন কর্মসূচির কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার করা হয়।
কর্মসূচি ঘোষণার পর সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে এ কর্মসূচি পালন করতে শুরু করে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এই কর্মসূচি ঘোষণার পর অনেক তারকাও ফেসবুক প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করেন।
এদিকে সোমবার দুপুরে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীর সভার বৈঠকে কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনকে ঘিরে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বলা হয়, শোক পালনের অংশ হিসেবে কালো ব্যাজ ধারণ করা হবে। আর নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
এদিকে সোমবার কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘জিম্মি’ করে বিবৃতি আদায়ের প্রতিবাদ, গুম-গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ছাত্র-জনতার হত্যার বিচারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এইদিন শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যেও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, যশোর, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালীসহ কয়েক জেলার কিছু স্থানে বিক্ষোভ করেন তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এদিনও কর্মসূচিস্থল থেকে শিক্ষার্থীদের আটক করে।
সোমাবার রাজধানীর পল্টন, সেগুনবাগিচা, সায়েন্সল্যাব, ইসিবি চত্বর, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরসহ কয়েকটি এলাকায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়া ও লাঠিচার্জে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। শুধু ঢাকায় জমায়েত হওয়ার স্থান থেকে কমপক্ষে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
২৯ জুলাই অফিস-আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার পরিবেশ প্রায় স্বাভাবিক ছিল। অধিকাংশ সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
দশম দিনের মতো দেশে কারফিউ অব্যাহত থাকে, যদিও দিনের বেলার কারফিউ শিথিল থাকার সময় সীমা বাড়ানো হয়।
সোমবার সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)’কে তাদের হেলিকপ্টার ব্যবহার করে টহল দিতে দেখা যায়। সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা যায়।
এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বসানো হয় চেকপোস্ট। পুলিশ মাইকিং করে কাউকে এক জায়গায় জড়ো না হতে হুঁশিয়ারিও দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের খাওয়ানোর ছবি প্রকাশ করাকে জাতির সঙ্গে মশকরা বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি ও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে রিটের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে হাইকোর্ট এ কথা বলেন।
এদিকে রাতে গণভবনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে ১৪ দলের নেতারা একমত হন।
বৈঠকে শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলের নেতারা মনে করেন, ‘বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল ও শিবির তাদের দোসর জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই ১৪ দলের নেতারা সর্বসম্মতিক্রমে জামায়াত ও শিবিরকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধে একমত হয়েছেন।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে মৃত্যু, গুলিবর্ষণ, গ্রেপ্তারসহ নির্যাতনের নানা ঘটনার সত্য উদঘাটনে ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়। সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ‘গণহত্যার বিচার চাই; গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন বন্ধ করো’ শীর্ষক আইনজীবীদের এক মানববন্ধন থেকে এই কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার কর্তৃক প্রকাশিত চলমান কোটা আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে নিহতের এ সংখ্যা অনেক বেশি।
এদিকে আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ড ও সামগ্রিক ঘটনা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ তদন্তসহ ছয় দফা দাবি জানায় গণতন্ত্র মঞ্চ। দাবিগুলোর মধ্যে ছিল, দ্রুত কারফিউ প্রত্যাহার, সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবিসহ বিশেষ বাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু, আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়নকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, গ্রেপ্তারকৃত বিরোধী নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গোয়েন্দা বাহিনীর তুলে নেওয়া আন্দোলনকারী নেতাদের মুক্তি, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু ও ব্লক রেইড বন্ধ করা।
চলমান ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে জুলাই মাস জুড়ে সংঘটিত মৃত্যুর ঘটনাকে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’ বলে আখ্যা দেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া সারা দেশে হত্যা-গুম-গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক-হয়রানি বন্ধ এবং আটককৃতদের মুক্তির দাবি জানান বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত শতাধিক শিক্ষক।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রেখে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পাঠে বাধ্য করাকে ‘অনৈতিক’ ও ‘গর্হিত অপরাধ’ বলে উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি জানায়, ডিবি জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। নিরাপত্তা হেফাজতের কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেন বিক্ষুব্ধ ৭৪ বিশিষ্ট নাগরিক। ২৯ জুলাই প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের বেশিরভাগই কম বয়সী ও শিক্ষার্থী।
সরকারি আদেশে (জিও) পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ না থাকায় সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীরা কোন পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তাই বিদেশ ভ্রমণের আদেশে পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করার জন্য চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গতকাল রোববার সব মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব/সচিবদের কাছে এ চিঠি পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন সময় কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের সরকারি আদেশ জারি করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের বিদেশ ভ্রমণের সরকারি আদেশে (জিও) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীর পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করা হচ্ছে না। সরকারি আদেশে পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ না থাকায় কর্মকর্তা/কর্মচারীরা কোন পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
এমতাবস্থায়, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের সরকারি আদেশে (জিও) পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করার জন্য অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় ৭১ জন নির্বাচন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ইসি সচিবালয়ের সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বদলির আদেশ জারি করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, ‘বদলিকৃত কর্মকর্তাগণ আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হবেন, অন্যথায় আগামী ৪ আগস্ট তারিখে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত মর্মে গণ্য হবেন।’
বদলিকৃত ৭১ নির্বাচন কর্মকর্তার বেশিরভাগই উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা।
এছাড়া নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঢাকার সহকারী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেনকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহকারী সচিব পদে পদায়ন করা হয়েছে।
অপর দিকে, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দা সাদিকা সুলতানাকে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঢাকার সহকারী পরিচালক করা হয়েছে।
আইকনিক মসজিদ নির্মাণে ২৪৪ কোটি টাকা দেবে সৌদি সরকার। আটটি আইকনিক মসজিদ নির্মাণে সৌদি সরকারের রাজকীয় অনুদান থেকে এ অর্থ দেওয়া হবে।
আজ সচিবালয়ে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ড. আব্দুল্লাহ জাফর এইচ বিন আবিয়াহ এ কথা জানান।
ধর্ম উপদেষ্টা জানান, সৌদি অর্থায়নে আইকনিক মসজিদ নির্মাণের কাজ যথা দ্রুত সম্ভব শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিভাগ থেকে এ মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে জমির প্রস্তাব পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও বন্ধুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এদেশের প্রায় ৩২ লাখ লোক সৌদি প্রবাসী। তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখছেন। ঠিক একইভাবে সৌদি সরকারের ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নে সেদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
আগামীতে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে বলে উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ বছর অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল হজ ব্যবস্থাপনার জন্য ধর্ম উপদেষ্টা সৌদি সরকার ও সেদেশের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান।
একইসঙ্গে তিনি আগামী বছরের হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয়ে সৌদি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায় ওয়াশরুমের সংখ্যা বৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং মিনার তাঁবুতে বিছানার সাইজ বাড়ানোর বিষয়ে উপদেষ্টা সৌদি রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান।
রাষ্ট্রদূত এ সকল প্রস্তাবের বিষয়ে তাঁর দেশের সরকার এবং হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার আশ্বাস দেন।
এছাড়া, তিনি বাংলাদেশ উন্নয়নে সৌদি সরকারের সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।
সাক্ষাৎকালে তাঁরা দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্ক আগামীতে আরো মজবুত ও সুসংহত করার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়া হজযাত্রীদের লাগেজ পরিবহনে আরএফআইডি ট্যাগ সংযোজন, ঢাকায় অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট স্থাপনসহ দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
এসময় ধর্ম সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামানিক ও হজ অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মো. মঞ্জুরুল হক উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এর সদস্যপদ পেতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় সমর্থন জানাতে মালয়েশিয়ার প্রতি পুনরায় আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ রোববার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মালয়েশিয়ার পিপলস জাস্টিস পার্টির সহ-সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের কন্যা নুরুল ইজ্জাহ আনোয়ার।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আসিয়ানের অংশ হতে চাই এবং আপনাদের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ ২০২০ সালে আসিয়ানের খাতভিত্তিক সংলাপ অংশীদার হওয়ার জন্য আবেদন করে।
প্রধান উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আসিয়ানের বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে থাকা মালয়েশিয়া বাংলাদেশের আবেদন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে, যাতে বাংলাদেশ প্রথমে খাতভিত্তিক সংলাপের অংশীদার এবং পরবর্তীতে এই আঞ্চলিক সংস্থার পূর্ণ সদস্যপদ পেতে পারে।’
সাক্ষাৎকালে নুরুল ইজ্জাহ ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সম্প্রতি সংঘটিত বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি আমাদের দেশের জন্য একটি দুঃখজনক ও মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি।’
প্রধান উপদেষ্টা নুরুল ইজ্জাহকে মালয়েশিয়ার পিপলস জাস্টিস পার্টির সহ-সভাপতি হওয়ায় অভিনন্দন জানান।
প্রধান উপদেষ্টা নুরুল ইজ্জাহর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ছাত্ররা বুকে গুলি খেয়ে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছে। এটি তরুণদের নেতৃত্বাধীন একটি আন্দোলন ছিল, কিন্তু সব শ্রেণির মানুষ এতে অংশ নিয়েছে। ছাত্ররা দেয়াল ও রাস্তা রাঙিয়ে তুলেছে জুলাই বিদ্রোহের চেতনায়।’
অধ্যাপক ইউনূস মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘এশিয়া দ্রুত বার্ধক্যের দিকে এগোচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশে বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে। আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেকের বয়স ২৭ বছরের নিচে। এখানে শিল্প গড়ে তুলুন এবং বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করুন। এতে আমাদের দুই দেশের অর্থনীতির উপকার হবে।’
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারাদেশের সব কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত।
আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর শাহবাগে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ডাকা এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রিফাত বলেন, অর্গানোগ্রামের জরুরি মিটিংয়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সারাদেশের সব কমিটি আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হলো। সংগঠনটির আগামী কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, তা পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে জানানো হবে।
গত ২৫ জুন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত এ কমিটিতে রশিদুল ইসলাম (রিফাত রশীদ) সভাপতি ও মো. ইনামুল হাসান সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মুঈনুল ইসলাম ও মুখপাত্র পদে সিনথিয়া জাহীন আয়েশা নির্বাচিত হন।
ওইদিন রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় ফল ঘোষণা করা হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, বাংলাদেশে আর কখনো যেন ভয় ও নিপীড়নের শাসন ফিরে না আসে। একটি দমন-পীড়নমূলক শাসন ব্যবস্থার পতনের পর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে জুলাই বিপ্লব নিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের দমনমূলক শাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করা হয়। গুম ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। হাজারো রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, ছাত্রনেতা ও সাংবাদিককে অপহরণ, নির্যাতন বা স্থায়ীভাবে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বহু পরিবার আজও জানে না, তাদের সন্তান জীবিত নাকি অচেনা কোন কবরে শায়িত আছে।
উপদেষ্টা আরো বলেন, নির্বাচন, গণমাধ্যম ও ছাত্র আন্দোলনের কণ্ঠ রোধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা অপকৌশল ব্যবহৃত হয়েছিল। কারাগারগুলো অপরাধীদের নয়, দেশপ্রেমিকদের দিয়ে ভরে গিয়েছিল। ফেসবুক পোস্টই ডেকে আনত মাঝরাতের পুলিশি অভিযান। শুধু মত প্রকাশের দায়ে একটি ভালো বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা ছাত্রকে পিটিয়ে আহত কিংবা শহীদ করা হয়েছে।
সম্মেলনে মূলবক্তা ছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কূটনীতিক জন এফ. ড্যানিলোভিচ।
সম্মেলনের শুরুতে শহীদ জাহিদুজ্জামান তানভীনের বাবা ও মা তাদের বক্তৃতায় দ্রুত জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও অপরাধীদের শাস্তির দাবি জানান। ছাত্রনেতা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে এ সম্মেলনে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, কূটনীতিক ও মানবাধিকার কর্মীরা বক্তৃতা দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড থট (আরআইটি), ইউনিভার্সিটি অব রেজিনা (কানাডা), নানইয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটি (সিঙ্গাপুর), কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি (যুক্তরাষ্ট্র), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ (সিপিএসআর), ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি, সোচ্চার এবং ইনসাফ যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সম্মেলনের আহ্বায়ক হলেন অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ।