ইতিহাসের বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাটি বিচারের প্রথম ধাপ পেরিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে হাইকোর্ট বিভাগে ঝুলে আছে। ঘটনার ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলাটি। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে চলতি বছরেই হাইকোর্ট থেকে মামলাটির সমাপ্তি ঘটবে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ বলছে যেভাবে থেমে থেমে শুনানি হচ্ছে তাতে এ বছরেও শেষ হবে না।
২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার ডেথ রেফারেন্সসহ আসামিদের করা আপিল শুনানি গত বছরের ৫ ডিসেম্বর বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুরু হয়। এরপর মুলতবি করে করে মামলাটিতে এখনো পেপারবুক পড়াও শেষ হয়নি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার দাবি, চলতি বছরের মধ্যেই হাইকোর্টে মামলাটি শেষ হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘এ মামলায় পেপারবুক পড়া প্রায় শেষ। অল্প কিছু পৃষ্ঠা বাকি আছে। বিচারাধীন মামলার জ্যেষ্ঠ বিচারক কিছু দিন অসুস্থ থাকায় বেঞ্চটি বসছে না। তিনি সুস্থ হয়ে এলে বন্ধের পরে কোর্ট বসলে আশা করি অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। বন্ধের (অবকাশ) পরে যখন কোর্ট শুরু হবে তখন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক পেশ করার সুযোগ পাবেন। তাদের বক্তব্য শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমাদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ পাব। এরপর হয়তো ১০ থেকে ১২ কার্য দিবসেই শেষ হয়ে যাবে।
হাইকোর্টের রায়েও বিচারিক আদালতের রায় বহাল থাকবে এমনটি প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য থাকবে, বিচারিক আদালত অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণভাবে আইনগতভাবে রায় দিয়েছেন। এই রায় যাতে বহাল থাকে সেই প্রার্থনা করব আমরা। আশা করছি চলতি বছরের মধ্যেই মামলা শেষ হবে।’
এ মামলায় আসামিপক্ষে রয়েছেন একাধিক আইনজীবী। তাদের মধ্যে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘২১ আগস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায় হয়েছে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর। এ মামলায় হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শেষ হলে আসামিপক্ষ থেকে আমরা শুনানি করব, তার জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সামনে হাইকোর্টের দেড় মাসের একটা ভ্যাকেশন (অবকাশ) রয়েছে। এরপর কোর্ট শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষ শেষ করবে। তারপর আসামিপক্ষে আমাদের সময় দিতে হবে। যেহেতু আসামিপক্ষে অনেক আইনজীবী রয়েছেন প্রত্যেককে সময় দিতে হবে। সবার বক্তব্য শেষ হলে তবেই মামলাটি রায়ের জন্য যাবে। তাতে মনে হচ্ছে না এ বছরই মামলাটি শেষ হবে।’
এ মামলার অন্যতম আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘মামলাটিকে বলা হয়, জজ মিয়া নাটক। আসলে সব থেকে বড় নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে মুফতি হান্নানের মাধ্যমে। এ মামলায় একসময় ৬০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি হয়ে গিয়েছিল। সেই চার্জশিটে কোথাও তারেক রহমান, বাবরের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের আজ্ঞাসহ তদন্তকারী কর্মকর্তা দিয়ে নতুন করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। যেখানে মুফতি হান্নানকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি করা হয়। পরে কিন্তু হান্নান অস্বীকার করেছেন- তিনি এমন জবানবন্দি দেননি। এটা দিয়ে প্রমাণ হয়, এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তির হয়রানি করার জন্যই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আসামি করা হয়েছে। আশা করি উচ্চ আদালতে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।’
আরেক আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এ মামলায় পেপারবুক পড়া শুরু হয়েছে। তবে জ্যেষ্ঠ বিচারক অসুস্থ থাকায় কোর্ট বসছে না। সব পক্ষ শুনে মামলাটি শেষ করতে আরও দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হবে’ বলেও মনে করেন তিনি।
বর্বরোচিত এ ঘটনার ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় এবং ১১ জন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। এরপর ওই বছরের ২৭ নভেম্বর দুই মামলার রায়সহ প্রায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়। পরে ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি মামলায় আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য গ্রহণ করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। সে সময়ে দ্রুত পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন। পরে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক তৈরি হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত হয়ে বিজি প্রেস থেকে হাইকোর্টে আসে। এরপর সেটা যাচাই-বাছাই করে প্রস্তুত করা হয় পেপারবুক। পরে প্রধান বিচারপতি মামলাটি শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন।
ঘটনার বিবরণ
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের ৩ শতাধিক নেতা-কর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন।
তদন্ত শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১১ জুন দেয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। তখন জানা যায়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে হামলার ছক করা হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে এসেছিল হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড।
এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর আরও ৩০ জনকে আসামি করে ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর ফলে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২।
বিচার শেষে মামলার রায়
দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মামলার ঐতিহাসিক রায় প্রদান করা হয়। রায়ে ৪৯ জনকে সাজা দেয়া হয়।
চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।
পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।
আর এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
তাদের দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এ ছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে ভিন্ন মামলায় মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর পলাতক রয়েছেন তারেক রহমানসহ ১৬ আসামি।
সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের যত মামলা
২১ আগস্ট মামলা ছাড়াও এক সময়ের প্রভাবশালী মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে রয়েছে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার সাজা। এ মামলাটিতেও তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়েছে। মামলাটি এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন।
এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের এক মামলায় ৮ বছরের কারাদণ্ডের সাজা হয় তার বিরুদ্ধে। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই থেকে কারাগারে আছেন বাবর।
গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আগামী সোমবার (১২ মে) তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট আগামী সোমবার চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে দাখিল করবে আশা করছি। তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ, অর্থাৎ ‘ফরমাল চার্জ’ দাখিলের মাধ্যমে হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের দায়ে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে আনুষ্ঠানিক বিচারের জন্য ফরমাল চার্জ চলতি সপ্তাহেই দাখিল করা হবে এবং এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এই আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরপর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ চাইলে বা বিচারিক আদালত এ সম্পর্কে কোনো পর্যবেক্ষণ বা রায় এলে অবশ্যই আইনানুগভাবে দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে।’
শুক্রবার তার ভেরিফাইড ফেসবুকে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ জঘন্য মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছে। আমি আপনাদের সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই খুনের মামলার আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনে বাধা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ ও গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর। যা কোনোভাবেই আমার আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছেন নিম্নআদালতের বিচারকরা। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আদালতের বিচারকদের দায়িত্ব বিমানবন্দর পাহারা দেওয়া না বা কারো চলাচলে বাধা দেওয়া না।’
ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের সুযোগ রাখার লক্ষ্যে আইসিটি আইনে সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিধান আইন মন্ত্রণালয়ের খসড়ায় ছিল। আইন উপদেষ্টা হিসেবে আমি নিজে এটা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন করেছি। আমার উত্থাপিত খসড়ার আমিই বিরোধিতা করব এটা কিভাবে সম্ভব? উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কোন উপদেষ্টা কী ভূমিকা রেখেছেন এনিয়ে আমাকে, ছাত্র উপদেষ্টাদের বা অন্য কাউকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন।’
তিনি বলেন, সেখানে যা সিদ্ধান্ত হয় তার দায় দায়িত্ব আমাদের প্রতিটি উপদেষ্টার। আমাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশ্নে কোনো দ্বিমত নেই। তবে পদ্ধতি নিয়ে সবার নিজস্ব মত থাকতেই পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, আইসিটি আইন চাইলেই আমরা কয়েকদিনের মধ্যে সংশোধন করতে পারবো। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য সন্ত্রাস দমন আইনসহ অন্য আইনগুলোও আছে। কাজেই আইন কোনো সমস্যা না।’ আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ চাইলে বা বিচারিক আদালত এ সম্পর্কে কোনো পর্যবেক্ষণ বা রায় আসলে অবশ্যই আইনানুগভাবে দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে। আমরা সেই প্রত্যাশায় আছি। ইনশাল্লাহ।’
রোমান ক্যাথলিক গির্জার নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন আমেরিকান কার্ডিনাল রবার্ট প্রভোস্ট। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ মে) সন্ধ্যায় ভ্যাটিকানের কনক্লেভে কার্ডিনালদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েছেন তিনি।
নিজের ক্যারিয়ারে পেরুতে ধর্মপ্রচার করে বেড়িয়েছেন রবার্ট প্রভোস্ট। এছাড়া ভ্যাটিকানের প্রভাবশালী বিশপস অফিসেরও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ক্যাথলিক গির্জার দুই হাজার বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মার্কিন নাগরিক পোপ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
৬৯ বছর বয়সী এই পোপ নতুন নাম নিয়েছেন লিও চতুর্দশ।
এরআগে ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলের চিমন দিয়ে সাদা ধোঁয়া বের হওয়ায় সবাই জেনেছেন যে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন পোপকে স্বাগত জানাতে ভ্যাটিকান সিটিতে বিপুল মানুষের ভিড় জমেছে।
পোপ হওয়ার যোগ্য ১৩৩ কার্ডিনালকে নিয়ে গঠিত কলেজ অব কার্ডিনালস। কোনো ধরনের মনোযোগ নষ্ট হওয়া ছাড়াই যাতে প্রার্থনা ও ধ্যান করতে পারেন, পাশাপাশি পোপ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, সে কারণে ভ্যাটিকানের ভেতরে কার্ডিনালদের আলাদা করে রাখা হয়েছে।
নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হয়। ভোট হওয়ার পর একটি বিশেষ স্টোভে ব্যালট পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কালো ধোঁয়া বের হওয়ার অর্থ হচ্ছে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, অর্থা পোপ নির্বাচিত হননি। আর সাদা ধোঁয়া বের হলে বুঝতে হবে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।
পোপ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রার্থী নেই। তবে বেশ কয়েকজন কার্ডিনাল আছেন, যারা পোপ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
আধুনিক সময়ে প্রথম দিনেই পোপ নির্বাচিত হওয়ার নজির নেই। তবে দ্বিতীয় দিনে নির্বাচনের সম্ভাবনা থাকে বেশি। ২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস এবং ২০০৫ সালে পোপ বেনেডিক্ট দ্বিতীয় দিনেই নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নির্বাচনে এবার অংশ নিয়েছেন ৭০ দেশের ১৩৩ জন কার্ডিনাল, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এটি পোপ ফ্রান্সিসের অধীনে গির্জার বৈশ্বিক বিস্তারের ইঙ্গিত বহন করে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা বিভিন্ন প্লাটফর্মের নেতাকর্মীরা।
আজ শুক্রবার পৌনে পাঁচটায় শুরু হওয়া এই অবরোধ এখনো চলছে। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়েছে শাহবাগ এরিয়া। সবার মুখে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি।
এই অবরোধে যোগ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াত ইসলাম, ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, সদ্য আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ, জুলাই ঐক্যসহ বিভিন্ন সংগঠন।
তবে এর মধ্যেও কিছুটা শূন্যতা অনুভব করছে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
সেই শূন্যতা বিএনপির। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম বলেন, বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠন ব্যতীত সকল রাজনৈতিক দল এখন শাহবাগে।
তিনি লিখেন, বিএনপি আসলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়। আজকের এই শাহবাগ ইতিহাসের অংশ এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির মানদণ্ড।
এর আগে গতকাল রাত দশটায় আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান শুরু করে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তার সাথে সংহতি জানিয়ে সেখানে বিএনপি এবং বামপন্থী সংগঠন ছাড়া সেখানে প্রায় সব দল ও সংগঠন উপস্থিত হয়ে সংহতি জানায়।
এরপর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে মিন্টু রোড়ের ফোয়ারার সামনে মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হলে বেলা বারোটার দিকে যমুনার সামনে থেকে সবাই মঞ্চের সামনে চলে আসেন। জুমার নামাজের পর সেখানেই জমায়েত শুরু হয়। মঞ্চে উপস্থিত হয়ে ইসলাম ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনেতিক দল বক্তব্য প্রদান করেন। সাড়ে চারটার দিকে সর্বশেষ বক্তব্য দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন শেখ হাসিনা মোদির বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছে। দেশের হিস্যা জনগণের হাতে তুলে দিতে চাই আমরা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি ভাইরাস নিয়ে আমরা এক মিনিটও বেঁচে থাকতে চাই না। আমাদের একজনেরও যদি শেষ রক্তবিন্দু থাকে তারপরও আমরা এটির জন্য লড়াই চালিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে যদি এক বছরও লাগে আমরা এই স্থান ছাড়বো না। বাংলাদেশ উইথ আউট আওয়ামী লীগ যেদিন হবে সেদিনই বাংলাদেশের সম্মৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা শুরু হবে।
এরপর তিনি শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন। বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কর্ণকুহরে আমাদের দাবি পৌঁছছে না। আমরা এখন শাহবাগ অবরোধ করবো। এরপর সেখানেই চূড়ান্ত ফয়সালা হবে।
হাসনাতের এই ঘোষণার পর মিন্টু রোড়ের সামনে থেকে শাহবাগের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বেলা পৌনে পাঁচটায় শুরু হওয়া এই অবরোধ ছয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা অবস্থায় চলছে। এতে আশেপাশের সড়কে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে পুলিশ ভিন্ন রাস্তায় এসব যানকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাকিস্তানের আকাশসীমা পরিহার করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এমতাবস্থায় বিমানের টরেন্টো, রোম এবং লন্ডনগামী ফ্লাইট সমূহের সময়সূচিতে পরিবর্তন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার থেকে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর টরেন্টো, লন্ডন এবং রোম ফ্লাইট সমূহের ফ্লাইটের পরিবর্তিত সময়সূচি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-টরেন্টো ফ্লাইট বিজি ৩০৫ বা ৩০৬ ঢাকা থেকে প্রস্থান ৩ টা ৪৫ মিনিটের পরিবর্তে ৩ টা (৪৫ মিনিট অগ্রগামী করা হয়েছে)। তবে টরেন্টো থেকে প্রস্থান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
ঢাকা লন্ডন ফ্লাইট বিজি ২০১ বা ২০২ ঢাকা থেকে প্রস্থান ৭ টা ৪০ মিনিটের পরিবর্তে ৭ টা (৪০ মিনিট অগ্রগামী করা হয়েছে) এবং লন্ডন থেকে প্রস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।
শুধু বৃহস্পতিবারের জন্য ঢাকা-লন্ডন, ঢাকা থেকে প্রস্থান ৮ টা ৫০ মিনিটের পরিবর্তে ৮ টা ১০ মিনিটে (৪০ মিনিট অগ্রগামী করা হয়েছে)।
এদিকে ঢাকা-রোম ফ্লাইট বিজি ৩৫৫ বা ৩৫৬ ঢাকা থেকে প্রস্থান ১১ টা ৩০ মিনিটের পরিবর্তে ১০ টা ৪৫ মিনিট এবং রোম থেকে প্রস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।
যাত্রীদের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত সময় অনুসারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর চেক-ইন কাউন্টারে রিপোর্ট করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যাত্রীদের এই সাময়িক অসুবিধার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব সমপদমর্যাদার কমিশন্ড প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (কোস্টগার্ড ও বিজিবি-তে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ) বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আরও দুই মাস বাড়িয়েছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষন-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রু স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ মে থেকে পরবর্তী ৬০ দিন পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
সমগ্র বাংলাদেশে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ধারা ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫ (২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অধীন অপরাধগুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উদ্ভূত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাহিনীকে (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। এর পর থেকে এই মেয়াদ দুই মাস করে বাড়াচ্ছে সরকার।
ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারি, রাজারহাট, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরিশাল এবং পটুয়াখালী জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এছাড়া সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানায়।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রংপুর বিভাগের ডিমলায়, ২২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ ভোর ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৭৮ শতাংশ।
ঢাকায় বাতাসের গতি পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে।
ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ১৯ মিনিটে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, এই প্রজন্মই দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ।
তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুকে ‘কয়েকটি কথা’ শিরোনামে আজ একটি পোস্টে এই কথা বলেছেন।
তিনি সেখানে লিখেছেন, ‘একটি দলের এক্টিভিস্টরা বারবার লীগ নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ছাত্ররা রাজি ছিল না, এটা বলে বেড়াচ্ছেন। মিথ্যা কথা। ক্যাবিনেটে প্রথম মিটিং ছিল আমার। আমি স্পষ্টভাবে এই আইনের অনেকগুলো ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। নাহিদ-আসিফও আমার পক্ষে ছিল স্বভাবতই। দল হিসেবে বিচারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হলে একজন উপদেষ্টার জবাব ছিল ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মত পশ্চাৎপদ উদাহরণ আমরা আমলে নিতে পারি কি-না। এই যুক্তি যিনি দিয়েছিলেন, একটি দলের এক্টিভিস্টরা আজ সমানে তার পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রদের কুপোকাত করতে। অথচ, উনার সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। মিছে বিরোধ লাগানোর অপচেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।
বলে রাখা ভালো, দু’জন আইন ব্যাকগ্রাউন্ডের উপদেষ্টা (একজন ইতোমধ্যে মারা গিয়েছেন) ও আমাদের বক্তব্যের পক্ষে ছিলেন। সংস্কৃতি উপদেষ্টাও পক্ষে ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে কথা হয়েছে। দল হিসেবে লীগের বিচারের প্রভিশন অচিরেই যুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন উক্ত উপদেষ্টা। উনাকে ধন্যবাদ।
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন। ঘোষণাপত্র নিয়ে আপনাদের দুই মাস টালবাহানা নিয়ে আমরা বলব। ছাত্রদের দল ঘোষণার প্রাক্কালে আপনারা দলীয় বয়ানের একটি ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন। সমস্যা নেই, আমরাও চাই সবাই স্বীকৃত হোক। কিন্তু, এখন সেটাও হতে দিবেন না। দোষ আমাদেরও কম না। আমরা আপনাদের দলীয় প্রধানের আশ্বাসে আস্থা রেখেছিলাম।
পুনশ্চ: আমরা নির্বাচন পেছাতে চাইনা। ডিসেম্বর টু জুনের মধ্যে নির্বাচন হবেই।
আপনারা যদি মনে করেন, ছাত্ররা নিজেদের আদর্শ ও পরিকল্পনা নিতে পারে না বরং এখান থেকে ওখান থেকে অহি আসলে আমরা কিছু করি। তাহলে আপনারা হয় ছাত্রদের খাটো করে দেখছেন, নয়তো ছাত্রদের ডিলেজিটিমাইজ করার পরিকল্পনায় আছেন। সেই আগস্ট থেকেই আমরা জাতির জন্য যা ভালো মনে করেছি, সবার পরামর্শ নিয়েই করেছি। বরং, উক্ত দলকেই আমরা বেশি ভরসা করেছি। সবার আগে উনাদের সাথেই পরামর্শ করেছি। ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব। সব দোষ এখন ছাত্র উপদেষ্টা নন্দঘোষ!
আমরা উক্ত দলকে বিশ্বাস করতে চাই। উক্ত দলের প্রধানকে বিশ্বাস করতে চাই। উনি আমাদের বিশ্বাসের মূল্য দিয়ে লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে ও ঘোষণাপত্র প্রকাশে দেশপ্রেমিক ও প্রাগমাটিক ভূমিকা রাখবেন বলেই আস্থা রাখি। উক্ত দলকে নিয়ে কে কি বলবে জানি না কিন্তু আমরা চাই উক্ত দল ছাত্রদের সাথে নিয়ে দেশের পক্ষে, অভ্যুত্থানের শত্রুদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐকমত্যের নেতৃত্ব দিক। দেশপ্রেমিক ও সার্বভৌমত্বের পক্ষের শক্তি হিসাবে নেতৃত্ব দিলে ছাত্ররা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় উনাদের সাথে চলবেন।
ঐক্যবদ্ধ হোন। নেতৃত্ব দিন। এই প্রজন্মকে হতাশ করবেন না।‘এই প্রজন্ম দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ।’
মাহফুজ আলম ২০২৪ এর জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির একজন সমন্বয়ক ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মাহফুজ আলম।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
আজ শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
সকলকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে। সে পর্যন্ত সকলকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সরকার জনদাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রচলিত আইনের অধীনে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারের পক্ষে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের বিষয়ে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমন সম্পর্কে জনমনে ক্ষোভের বিষয়ে সরকার অবগত। এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর রয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে (প্রশাসন) প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) এই কমিটি গঠন করা হয় বলে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল হোসেন।
হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এছাড়া এই ঘটনায় ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে মো. আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সদর থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আজহারুল ইসলাম ও এসবির এটিএসআই মো. সোলায়মাকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে সকালেই খবর ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুইবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা আবদুল হামিদ বুধবার শেষ রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ছেড়েছেন। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে গেছেন বলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ সদর থানার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আব্দুল হামিদকেও আসামি করা হয়েছে।
লালদিয়ার চরে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনালে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বার্ষিক এফডিআই ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি নয়। একটি প্রকল্প থেকেই যদি ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আসে, তবে তা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বিডা’র পক্ষ থেকে আমরা এই প্রকল্পের অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চর ও বে টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে তিনি একথা বলেন।
এরপর তিনি চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা রাজনৈতিক রাজধানী আর চট্টগ্রাম হবে আমাদের বাণিজ্যিক রাজধানী। বাংলাদেশের যে সম্পূর্ণ উন্নয়ন লক্ষ্যের দিকে আমরা এগুচ্ছি, তার মূল অংশ চট্টগ্রাম। অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য চট্টগ্রাম একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।’
তিনি আরো বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- দেশের মানুষের জন্য, বিশেষ করে চট্টগ্রামের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সব সরকারের প্রথম এজেন্ডা দেওয়া উচিত আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এসব টার্মিনালকে আমরা যত বেশি বিশ্বমানের করতে পারব, তত বেশি ব্যবসার জন্য কন্ট্রিবিউশন করা যাবে।
লালদিয়ার চরে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসবে এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখানে কোনো বিনিয়োগ করা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস তৈরির সুযোগ আছে। বাংলাদেশকে ম্যানুফেকচারিং হাব করা সরকারের লক্ষ্য। লালদিয়া গ্রিন পোর্ট হবে। ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। বিষয়টি আমরা খুবই সিরিয়াসলি ট্র্যাক করার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। পোর্ট ক্যাপাসিটি এখন লিমিটেড। ছয় গুণ করার পরও আমরা ভিয়েতনামের ধারে কাছেও যাব না। তাই এক্সপার্ট প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে হবে, যাতে কম জায়গায় বেশি অপারেশন করা যায়। বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বন্দরসমূহের উন্নয়ন জরুরি। এজন্য বিশ্বসেরা বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে।’
বিডা চেয়ারম্যান জানান, দেশে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সম্ভাব্য স্থান হিসেবে আনোয়ারা পরিদর্শন করা হয়েছে।
২০২৪ সালে লালদিয়া টার্মিনালে কার্যক্রম শুরু করে এপিএম টার্মিনালস। শুরুতে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা থাকলেও আজ বেজা চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়ে ৮০০ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে।
এপি মোলার মায়ের্স্ক-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ও সরকার-থেকে-সরকার ভিত্তিতে বিওটি (বিল্ড-অপারেট-ট্রান্সফার) পদ্ধতিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর পুলিশ সুপারদের (এসপি) সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান ১ নম্বর সেকশনে বাংলাদেশ পুলিশের বার্ষিক শ্যুটিং প্রতিযোগিতা এবং আইজিপি কাপ ২০২৪-এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আইজিপি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়, কোনো জঙ্গি বা সন্ত্রাসী যেন আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্ত জেলাগুলোর পুলিশ সুপারদের সতর্ক করা হয়েছে।
আইজিপি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলা ৩০টি এবং মিয়ানমারের সঙ্গে তিনটি। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয় সেজন্য সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপারদের আগেই সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব যেন এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বাংলাদেশ পুলিশ বার্ষিক শ্যুটিং প্রতিযোগিতা এবং আইজিপি কাপ-২০২৪ এর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। রানার্স আপ হয়েছে স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)।
প্রতিযোগিতায় পয়েন্ট ১৭৭ এয়ার রাইফেল ওপেন সাইট ১০ মিটার (পুরুষ) ইভেন্টে প্রথম হয়েছেন এসবিতে সংযুক্ত নায়েক তানজীব হোসেন খন্দকার, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন এসবির এএসআই (নিরস্ত্র) মো. মনিরুল ইসলাম ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন ফেনী জেলার এএসআই (নিরস্ত্র) এবিএসএম হাসান।
একই ইভেন্টে নারীদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন এসবির নারী কনস্টেবল তানিয়া আক্তার, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন এসবির নারী কনস্টেবল নীলা খাতুন ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন এসবির নারী কনস্টেবল নীলা আক্তার।
পয়েন্ট ২২ বোর রাইফেল ওপেন সাইট ৫০ মিটার (পুরুষ) ইভেন্টে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাসিদ ফরহাদ, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন এসবির কনস্টেবল শাকিল আহমেদ ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন এসবিতে সংযুক্ত নায়েক তানজীব হোসেন খন্দকার। একই ইভেন্টে নারীদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন এসবির এএসআই (নিরস্ত্র) ইসমত আরা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন এসবির নারী কনস্টেবল আমেনা আক্তার ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন এসবির এএসআই (নিরস্ত্র) নীলিমা আক্তার।
পয়েন্ট ২২ বোর পিস্তল/রিভলভার ২৫ মিটার (পুরুষ) ইভেন্টে প্রথম হয়েছেন সারদা, রাজশাহীর পুলিশ সুপার শেখ মো. আব্দুল্লাহ বিন কালাম, দ্বিতীয় হয়েছেন র্যাবের সার্জেন্ট জুবায়ের ও তৃতীয় হয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শাহেদ আহমেদ। একই ইভেন্টে নারীদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন এসবির নারী কনস্টেবল রুনা আক্তার, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন একই ইউনিটের নারী কনস্টেবল নীলা খাতুন এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন এসবির এএসআই (নিরস্ত্র) ইসমত আরা।
প্রতিযোগিতায় ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট (পুরুষ) হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন এসবিতে সংযুক্ত নায়েক তানজীব হোসেন খন্দকার এবং ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট (নারী) হওয়ার গৌরব অর্জন করেন এসবির নারী কনস্টেবল রুনা আক্তার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবের সভাপতি ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত আইজিপি ও বাংলাদেশ পুলিশ শুটিং ক্লাবের সভাপতি মো. মোস্তফা কামালসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময়ে বিভিন্ন খাতে দেশটির বিনিয়োগ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (৭ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠক করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহনশীলতা ও সহাবস্থানবিষয়ক মন্ত্রী শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ানের নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।
এ সময়ে নাহিয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। নাহিয়ান বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্টের নির্দেশে আমি এখানে এসেছি বাংলাদেশের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে এবং আমাদের বন্ধুত্বকে আরও জোরদার করতে।’
‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দুই সরকার যে বর্ধিত সংলাপের আয়োজন করেছে, তার আমরা প্রশংসা করি। আমরা বিনিয়োগ থেকে শুরু করে ভিসা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিশ্চিত করতে চাই,’ বলেন তিনি।
এই পদক্ষেপের প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সম্পৃক্ততা এবং সমর্থনকে স্বাগত জানাই, আমরা বিভিন্ন শিল্পে বিনিয়োগকেও স্বাগত জানাই।’
ভিসা ব্যবস্থা শিথিল করার কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এখনও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া বাকি আছে, আশা করি, আমরা সম্পৃক্ত থাকব এবং এই সমস্যাগুলি সমাধান করব।’
সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০টি ভিজিট ভিসা দেওয়া শুরু করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের জন্য বাল্ক ভিসাও ত্বরান্বিত করা হয়েছে। এছাড়াও, দক্ষ কর্মসংস্থান ভিসার অনলাইন ব্যবস্থা পুনরায় সক্রিয় করা হয়েছে।