বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫
২২ শ্রাবণ ১৪৩২

জটের নগরে আশার আলো

তৌফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত
তৌফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:১৮

দুই কোটিরও বেশি মানুষের শহর রাজধানীতে মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গাড়ি, কিন্তু রাস্তা বাড়ানোর সুযোগ না থাকায় নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী যানজট। রাজধানীর যানজট এড়ানোর বিকল্প হতে যাচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। কোনো সিগন্যাল বা বাধা ছাড়াই উড়ালসড়ক দিয়ে বিমানবন্দর থেকে আসা যাবে ফার্মগেট। উড়ালসড়ক খুলে দিলে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যাওয়া-আসা করতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট। সরকারের আশা, পুরো প্রকল্পটি চালু হলে রাজধানীর যানজট অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি কমবে ভ্রমণ খরচ, বাঁচবে সময়।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এই উড়ালসড়ক দিয়ে তেজগাঁও হয়ে হলি ক্রসের পাশ দিয়ে খামারবাড়িতে নামবে। ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর যাওয়া-আসা যারা করেন, তারা কিন্তু বেনিফিটেড হতে পারেন। একই সঙ্গে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটা যদি হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু ঢাকাকে বাইপাস করার জন্য এটি একটি চমৎকার ব্যাকবোন হতে পারত।’

বাধাহীন যাত্রার নতুন এই পথ পেতে যাচ্ছেন রাজধানীবাসী। দেশের প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ কাল (শনিবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন যান চলাচলের জন্য।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। উড়ালসড়কে ওঠানামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র‍্যাম্প রয়েছে। র‍্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। তবে আপাতত বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার খুলে দেয়া হচ্ছে। এই অংশে ওঠানামার র‍্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ২২ কিলোমিটার। এই সাড়ে ১১ কিলোমিটার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরের দিনই যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।

সেতু বিভাগ জানিয়েছে, শনিবার বেলা সাড়ে ৩টা নাগাদ প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দর অংশে একটা ফলক উন্মোচন করবেন। এরপর টোল দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট হয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আসবেন। সেখানে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বক্তব্য রাখবেন তিনি।

সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘উড়ালসড়কে কোনো ট্রাফিক কিংবা সিগন্যাল থাকবে না, শুধু রোড সাইন দেখে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। ফলে যানজট ছাড়াই নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ থাকবে। যেহেতু রাজধানীতে ১১ কিলোমিটার নতুন পথ তৈরি হলো, এতে একটানে বিমানবন্দর থেকে গাড়িগুলো ফার্মগেটে নেমে যাবে, ফলে ফার্মগেট একটু যানজট হতে পারে। তবে সবাই আইন মেনে চললে এবং এনফোর্সমেন্টে যথাযথ হলে সেটিও এড়ানো সম্ভব হবে। তা ছাড়া প্রতিটি এন্ট্রি পয়েন্টে টোলবুথ থাকবে। উড়ালসড়ক দিয়ে উঠে যেখানেই নামুক না কেন, গাড়িভেদে টোল ৮০ থেকে ৪০০ টাকা দিতে হবে।’

উদ্বোধন হতে যাওয়া বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশের অংশে ওঠানামার জন্য মোট ১৫টি র‍্যাম্প (এয়ারপোর্ট-২, কুড়িল-৩, বনানী-৪, মহাখালী-৩, বিজয় সরণি-২ ও ফার্মগেট-১) রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি র‍্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। বনানী-১১ নম্বর এবং মহাখালী এই দুটি র‍্যাম্প কিছুদিন পরে চালু হবে।

সুধী সমাবেশে ৫ হাজার জন দাওয়াত পেয়েছেন

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দুটি ভাগে বিভক্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার অতিথিকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতুসচিব। এর বাইরেও পুরাতন বাণিজ্য মেলার খোলা মাঠে জনসমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আসবেন।

এর আগে আগারগাঁওয়ে জনসভার প্রস্তুতি উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘২ সেপ্টেম্বর রাজধানী মহাসমুদ্র দেখবে, জনতার মহাসমুদ্র। সেই মহাসমুদ্র দেখার অপেক্ষায় আছি।’

উড়ালসড়কে উঠবে যেসব যানবাহন

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যানবাহনের গতি সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে শনিবার উদ্বোধনের পর উড়ালসড়কে যানবাহন সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ। পুরোপুরি চালু হওয়ার পরই সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি চলতে পারবে।

সেতু বিভাগ জানিয়েছে, উড়ালসড়কটিতে সব ধরনের যানবাহন চলবে না। দুর্ঘটনার ঝুঁকি শূন্যে নিয়ে আসতে উচ্চগতির যানবাহনের জন্য নির্ধারিত এই পথে স্বল্পগতির বাহন যেকোনো থ্রি-হুইলারের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মোটরসাইকেল, মোটরবাইক ও বাইসাইকেলের মতো বাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। উড়ালসড়কে পথচারীও চলাচল করতে পারবেন না।

২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে, দিতে হবে টোল

দেশের এই উড়ালসড়কে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা যান চলাচলে খোলা থাকবে। তবে যান চলাচলে দিতে হবে সরকার নির্ধারিত টোল। ইতোমধ্যে টোলও নির্ধারণ হয়ে গেছে। ফলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করা যানবাহন থেকে চার ক্যাটাগরিতে টোল আদায় করা হবে। এর মধ্যে ক্যাটাগরি-১-এ থাকছে কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) ও হালকা ট্রাক (তিন টনের কম), এ ক্ষেত্রে টোল দিতে হবে ৮০ টাকা। ক্যাটাগরি-২-এ থাকছে মাঝারি ট্রাক (ছয় চাকা পর্যন্ত), এ ক্ষেত্রে টোল দিতে হবে ৩২০ টাকা। ক্যাটাগরি-৩-এ থাকা ট্রাকের (ছয় চাকার বেশি) জন্য দিতে হবে ৪০০ টাকা। ক্যাটাগরি-৪-এ সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা তার বেশি) জন্য ১৬০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের কাজ এখনো বাকি

প্রথম ধাপে বিমানবন্দরের দক্ষিণ কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত, দ্বিতীয় ধাপে বনানী রেলস্টেশন থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত কাজ হয়েছে। আর তৃতীয় ধাপে মগবাজার লেভেল ক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মাণকাজ এখনো চলছে। তৃতীয় ধাপের বেশির ভাগ কাজই এখনো বাকি। প্রকল্প এলাকায় কিছু জায়গায় কেবল পিলার বসানোর কাজ চলছে। প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ।

এদিকে মগবাজার লেভেল ক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মাণকাজ আগামী ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্য সংশ্লিষ্টদের। সে সময় পুরো পথে একসঙ্গে যানবাহন চলতে পারবে।

৩ বছরের কাজ ১৩ বছরেও হলো না

ঢাকা শহরের উত্তর থেকে দক্ষিনে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ২০১১ সালের জুনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়েছিল। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) আওতায় প্রকল্পটির ২০১৬ সালে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু উড়ালসড়কের নকশা বদল, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, অর্থের সংস্থানসহ নানা জটিলতায় নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা পাঁচবার পিছিয়েছে। প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ শেষ করার প্রথম সময়সীমা ছিল ২০১৭ সাল। সেটি পিছিয়ে হয় ২০১৮। তারপর আবার পিছিয়ে হয়েছে ২০২২ সাল। এই সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় চতুর্থবার সে সময়সীমা পিছিয়ে দাঁড়ায় ২০২৩ সালের জুনে। তবে সর্বশেষ পুরো প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে শুরুতে উড়ালসড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকায়। এরপর কাজের ধীরগতির সঙ্গে বাড়তে থাকে প্রকল্পের মেয়াদ।

২৫ বছর পর মালিকানা পাবে সরকার

ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড হচ্ছে বিনিয়োগকারী কোম্পানি। এতে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১ শতাংশ, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

প্রকল্প সূত্র বলছে, প্রকল্পটি পিপিপির আওতায় বিনিয়োগকারীর সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছে ২৫ বছরের। সাড়ে তিন বছর নির্মাণকাজ শেষে বাকি সাড়ে ২১ বছর টোল আদায় করবে বিনিয়োগকারী অংশীদার প্রতিষ্ঠান। তারপর এর মালিকানা পুরোপুরি বুঝে পাবে সরকার।


ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে সরকারের চিঠি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এ চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর এই চিঠি দেওয়া হয় বলে বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

প্রেস উইং জানিয়েছে, ইসিতে দেওয়া চিঠিতে উল্লিখিত সময়ে প্রত্যাশিত মানের অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

এর আগে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া তার ভাষণে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়ার কথা বলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ এই চিঠি দিলো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণের উল্লেখ করে পত্রে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে অবিলম্বে এক্ষেত্রে সকল প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন শুরুর কথা বলেছেন। বিগত পনের বছরে নাগরিকদের ভোট দিতে না পারার প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন যেন মহা-আনন্দের ভোট উৎসবের দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়, তেমন আয়োজনের উপর প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে নির্বাচন আনন্দ-উৎসবে, শান্তি-শৃঙ্খলায়, ভোটার উপস্থিতিতে, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতায় অবিস্মরণীয় হয়ে ওঠার যে প্রত্যাশা করেছেন—তা উল্লেখ করা হয়। নির্বাচন আয়োজনে যথোপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্বারোপের পাশাপাশি একটি প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রত্যয়ের কথাও নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়।

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার ভিত্তিতে উল্লেখিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব।


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে আমাদের মনে চিরস্থায়ী করে রাখতে হবে: আইন উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সচিবালয় প্রতিবেদক

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে আমাদের মনে চিরস্থায়ী করে রাখতে হবে। আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো যারা জুলাই আন্দোলনে শহিদ হয়েছে, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদেরকে যেন আমরা ভুলে না যাই।

আজ বুধবার(৬ আগষ্ট) বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের কারাবন্দীদের নিয়ে একটি স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সকলে একসাথে দাঁড়িয়েছি। মানুষের ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, রাজনৈতিক আদর্শের পরিচয় সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আমরা নিজেদেরকে কেবল মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং সফল হয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমাদের মধ্যে বিভাজন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও গণ-অভ্যুত্থানের পূর্বে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল।

আসিফ নজরুল বলেন, তাঁকে আজকের এই অনুষ্ঠান আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছিলেন এনসিপির সদস্য-সচিব আখতার হোসেন ।

'আমি তাকে বলেছিলাম, আরও কিছু দিন পরে এই অনুষ্ঠান করতে। কিন্তু সে বলল এখনই করতে হবে। আজ আমি বুঝতে পেরেছি, কেন সে এমনটা করেছে। জুলাই কারাবন্দীদের যে দুঃখ-কষ্ট, সেটা আজ এখানে না এলে শুনতে পারতাম না।’

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ দেশকেই কারাগারে পরিণত করেছিল। কারাগারগুলোকে আয়নাঘরে পরিণত করেছিল।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহাসচিব অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য-সচিব আকতার হোসেন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, গণ অধিকার পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক নূর প্রমুখ ।


নির্বাচনের আগে এসপি-ওসিদের বদলি হবে লটারির মাধ্যমে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

নির্বাচনের আগে সব জেলার এসপি ও ওসিদের লটারির মাধ্যমে বদলি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অব জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।

বুধবার (৬ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে আয়োজিত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'লটারি অনুযায়ী নির্বাচনের আগে বিশেষভাবে এসপি ও ওসিদের পোস্টিং দেওয়া হবে। এখন তো সব কর্মকর্তা যেখানেই থাকুন না কেন, নির্বাচনের আগে তাঁদের লটারির মাধ্যমে বদলি করা হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'গতকাল প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আলোচনা করেছি।'

উপদেষ্টা বলেন, 'এই মিটিংয়ে নির্বাচনের সময় যেসব লজিস্টিক সহায়তা প্রয়োজন হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন, ডিসি, এসপি, ইউএনও ও ওসি—নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নির্বাচনের সময় দেখা যায়, প্রার্থীরা তাঁদের আসনে পছন্দের ডিসি, এসপি কিংবা ওসিকে চান। কিন্তু এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গণমাধ্যমকে ডেকে সবার সামনে লটারি করব।'


জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পত্র

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে পত্র পাঠানো হয়েছে। এ পত্রের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো।

আজ নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো পত্রে উল্লিখিত সময়ে প্রত্যাশিত মানের অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।

গত ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর ভাষণে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়ার কথা বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ এই চিঠি পাঠায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

পত্রে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে অবিলম্বে এক্ষেত্রে সকল প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন শুরুর কথা বলেছেন। বিগত পনেরো বছরে নাগরিকদের ভোট দিতে না পারার প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন যেন মহা-আনন্দের ভোট উৎসবের দিন হিসেবে স্মরণীয় হয় তেমন আয়োজনের উপর প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে নির্বাচন আনন্দ-উৎসবে, শান্তি-শৃঙ্খলায়, ভোটার উপস্থিতিতে, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতায় অবিস্মরণীয় হয়ে ওঠার যে প্রত্যাশা করেছেন তা উল্লেখ করা হয়। নির্বাচন আয়োজনে যথোপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্বারোপের পাশাপাশি একটি প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রত্যয়ের কথাও নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়।

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার ভিত্তিতে উল্লেখিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব।


প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ডাচ রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের মিশনপ্রধান আন্দ্রে কার্সটেন্স।

আজ বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

সাক্ষাৎকালে তিনি ‘জেনারেশন জেড’-এর নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর প্রশংসায় নিজে গাওয়া একটি গানের কথা ও ভিডিও প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ কথা জানান।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম প্রয়াণ দিবস আজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

আজ ২২শে শ্রাবণ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর পৈতৃকনিবাস ঠাকুরবাড়িতে তার জীবনপ্রদীপ নিভেছিল। বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছে বাঙালি জাতি।

১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ ছিল ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট। ৮০ বছর বয়সে সেদিন পরলোকগমন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

দিনটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন আলোচনা সভা, সংগীতানুষ্ঠান, আবৃত্তি ও রবীন্দ্রজীবন ও সাহিত্য নিয়ে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

বুধবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এক সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ (বিটিভি) সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তার জীবন, কর্ম ও প্রভাব নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।

১৮৬১ সালের ৭ মে (বাংলা ২৫ বৈশাখ, ১২৬৮) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা দেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ। ১৩ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।

বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। সংগীত, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, কবিতা কিংবা প্রবন্ধ— সাহিত্যের প্রায় সব অঙ্গনেই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃপ্ত পদচারণা।

তিনি প্রায় দুই হাজারের বেশি গান রচনা করেছেন, যা রবীন্দ্রসঙ্গীত নামে স্বতন্ত্র ঘরানায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে আটটি উপন্যাস, ৮৪টি ছোটগল্প, অসংখ্য কবিতা, নাটক ও প্রবন্ধ। প্রায় সাত দশকজুড়ে এসব সৃষ্টি করেছেন তিনি।

শিক্ষার প্রসারের জন্য কাজ করেছেন নোবেলজয়ী এই সাহিত্যিক। ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রথম বাঙালি হিসেবে এই সম্মাননা অর্জন করেছিলেন তিনি।

দুটি দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা তিনি। বাংলাদেশে ‘আমার সোনার বাংলা’ এবং ভারতে ‘জন গণ মন’ জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও কবির গান সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে। সব মিলিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বাঙালির হৃদয়ে আজও অম্লান হয়ে আছেন অনন্ত বাসনার রবি।


নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি গোষ্ঠী উন্মুখ: প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তারা যেন নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলার কোনো রকমের সুযোগ না পায়, আমাদের অবশ্যই সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনারা প্রত্যেকেই অবগত আছেন, একটা গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে দেশের বাহিরে বসে এবং ভেতরে থেকে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’

‘আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলার কোনো রকমের সুযোগ না পায়। মাথায় রাখবেন, পরাজিত শক্তি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে। কিন্তু একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করা গেলে অপশক্তির পরাজয় চূড়ান্ত হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত যতগুলো বড় সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে— তার সবগুলোর নেপথ্যে কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কোনও দল যদি গায়ের জোরে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে, তার চূড়ান্ত পরিণতি কী— তা জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা ইতিহাসের কলঙ্কিত কোনো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি আর করতে চাই না।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিনিয়ত পরামর্শ নেওয়ার জন্য আমরা প্রযুক্তির সাহায্য নেব। এজন্য একটি অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছি। দ্রুত এই অ্যাপটি চালু হবে। আপনারা আপনাদের সকল পরামর্শ, সকল মতামত, সকল আশঙ্কা এবং উদ্যোগের কথা এই অ্যাপের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাবেন। আমরা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেব, সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেব।’

এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে, প্রতিশ্রুতি-প্রতিজ্ঞা-পরিকল্পনায় কোনোকিছুতেই যেন তরুণরা বাদ না পড়ে। নারীরা বাদ না পড়ে। মনে রাখবেন, যে তরুণ-তরুণীরা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে তারা বিশ্বকেও বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আপনার দল থেকে তাদের সে সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিন।’

আসন্ন নির্বাচনে প্রত্যেক নাগরিক যেন নিরাপদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সবাই নিরাপদে যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে, এটা নিয়ে কারো কোনো আপত্তির সুযোগ রাখা যাবে না। আমরা সবাই সবার পছন্দের প্রতি সম্মান দেখাব—এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’

‘নির্বাচন আসছে। যদি আপনি আপনার নির্বাচনি এলাকা থেকে দূরে বসবাস করেন, তবে এখন থেকে নিয়মিত নির্বাচনি এলাকা পরিদর্শন করুন। যাতে সেরা ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে আপনি প্রস্তুত হতে পারেন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের এই অতি মূল্যবান অধিকার ফিরে পেলাম, ভোটটা দেবার আগ মুহূর্তে যেন তাদের চেহারা আমাদের চোখে ভেসে ওঠে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি বেশি দূরে নয়। নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি নিতে নিতেই ভোটের দিন এসে পড়বে। বহু বছর আমরা কেউ ভোট দিতে পারিনি। এবার আমরা সবাই ভোট দেবো। কেউ বাদ যাবে না। সবাই যেন বলতে পারি, নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশকে রওনা করার জন্য আমি আমার ভোটটা দিয়েছিলাম। আমার ভোটেই দেশটা সেপথে রওনা হতে পেরেছিল।’

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে সব নাগরিকের কাছে আমার আহ্বান, আসুন, ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রথম বড় পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হই।’


ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে চিঠি দেব: প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনকে সরকার চিঠি দেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে দেওয়া জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

জাতির উদ্দেশে দেওয়ার ভাষণের শুরুতে ২৪’র গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। শহীদ ও আহতদের অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি। এছাড়া মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে বিমান বিধ্বস্তের প্রাণ হারানো শিশু-শিক্ষকদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। পাশাপাশি তিনি দেশ-বিদেশের চিকিৎসক, যারা চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা অনেক দূর পথ অতিক্রম করে এসেছি। আমাদের জাতীয় জীবনে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, অর্থনীতিতে গতিশীলতা এসেছে, সংকট দূর হয়েছে।


জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘৩৬ জুলাই উদ্‌যাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মঞ্চে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জুলাই ঘোষণাপত্র হলো ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি দলিল, যার মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

জুলাই ঘোষণাপত্র নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-

১। যেহেতু উপনিবেশ বিরোধী লড়াইয়ের সুদীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় এই ভূখণ্ডের মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল;

এবং

২। যেহেতু, বাংলাদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে;

এবং

৩। যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করেছিল;

এবং

৪। যেহেতু স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়,

এবং

৫। যেহেতু আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর ছাত্র-জনতার অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ১৯৯১ইং সনে পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।

এবং

৬। যেহেতু দেশি-বিদেশি চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ১/১১ -এর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা হয়;

এবং

৭। যেহেতু গত দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়;

এবং

৮। যেহেতু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করে;

এবং

৯। যেহেতু, হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক, ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে;

এবং

১০। যেহেতু, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে;

এবং

১১। যেহেতু শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় ষোল বছর যাবৎ নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়;

এবং

১২। যেহেতু বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারিত্বের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বহিঃশক্তির তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে;

এবং

১৩। যেহেতু অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এদেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে;

এবং

১৪। যেহেতু, আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারি চাকুরিতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকুরি প্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম হয়;

এবং

১৫। যেহেতু বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর চরম নিপীড়নের ফলে দীর্ঘদিন ধরে জনরোষের সৃষ্টি হয় এবং জনগণ সকল বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যায়;

এবং

১৬। যেহেতু, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, যার ফলে সারা দেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়;

এবং

১৭। যেহেতু ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ যোগদান করে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, অগণিত মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করে এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন প্রদান করে;

এবং

১৮। যেহেতু, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সকল শ্রেণি, পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়;

এবং

১৯। যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলায় গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত;

এবং

২০। যেহেতু জনগণের দাবি অনুযায়ী এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়;

এবং

২১। যেহেতু, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়;

এবং

২২। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;

এবং

২৩। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ষোল বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম কালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালীন সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;

এবং

২৪। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

এবং

২৫। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসংগত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

এবং

২৬। সেহেতু বাংলাদেশের জনগণ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে যে একটি পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত হবে।

এবং

২৭। বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।

এবং

২৮। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো।


স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত প্রধান উপদেষ্টার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেছেন।

তিনি আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেন।

এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবদুন নাসের খান উপস্থিত ছিলেন।


আজ রাত ৮টা ২০ মিনিটে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার রাত ৮ টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতার ভাষণটি একযোগে সম্প্রচার করবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।


সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আজ উপস্থাপন করা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

জুলাই ঘোষণাপত্র আজ বিকেল ৫টায় উপস্থাপন করা হবে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এক গণসমাবেশে গণঅভ্যুত্থানের সকল পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, বাংলাদেশ টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

এদিকে রবিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই ঘোষণা পত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। আগামী মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৫টায় জাতির সামনে এটি উপস্থাপন করা হবে।’


অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ২১ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে বাংলাদেশে এ মুহুর্তে চাল ও গম মিলে মোট ২১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। সরকারের বর্ষপুর্তি উপলক্ষ্যে গণমাধ্যমকে দেয়া তথ্যে এ মজুদের কথা জানা গেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে সরকারীভাবে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার টন চাল এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার টন গম মজুদ আছে। এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মজুদের এই লক্ষ্যমাত্রায় আরো ৫ লাখ টন চাল ও চার লাখ টন গম আমদানীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

খাদ্যপণ্যের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এ বাজার ব্যবস্থায় চালের দাম ডিসেম্বর ২০২৪ এর তুলনায় জুন ২০২৫ পর্যন্ত পাইকারী ও খুচরা বাজারে যথাক্রমে ১.২২ টাকা ও ১.০৪ টাকা কমেছে বলে সরকারী তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।

সরকারীভাবে এ বছর ৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিকটন ধান ও ১৯ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। গতবছরের তুলনায় চলতি বছর ধান ও চাল মিলে মোট ৪ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য বেশি সংগ্রহ করেছে সরকার।

সরকারের কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, জুন ২০২৪ মাসের তুলনায় জুন ২০২৫ মাসে মোটা চালের কেজি প্রতি জাতীয় পাইকারী গড় মুল্য প্রায় ১.৭৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং খোলা আটার কেজি প্রতি পাইকারী গড় মুল্য ০.৬৩ টাকা হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে মোটা চালের কেজি প্রতি খুচরা মুল্য ২.১৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আটা খোলা এর খুচরা মুল্য ০.৮৮ টাকা হ্রাস পেয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে মধুপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জে ৪টি আধুনিক সাইলো নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার ফলে সরকারী খাদ্যশস্য মজুদ ধারন ক্ষমতা ২৩ লাখ ৮৮ হ্জাার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।

এই মুহূর্তে সরকারি গুদামে খাদ্যপণ্য মজুদ আছে ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৪০৮ টন। এর মধ্যে চাল সাড়ে সাত লাখ টন এবং গম চার লাখ ২৮ হাজার ৩৩৫ টন। বাকি খাদ্যপণ্যের মধ্যে ধান মজুদ রয়েছে। গত বছর এই সময়ে খাদ্যপণ্য মজুদ ছিল ১৪ লাখ চার হাজার টন। এর মধ্যে চাল ছিল ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৪ টন এবং গম ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ২৩৫ টন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা বলেন, এই মজুদকে সন্তোষজনক বলা যাবে না, আবার ঝুঁকিপুর্ণ বলাও ঠিক হবে না। মজুদ আরও বাড়ানো দরকার। এ ব্যাপারে আমাদের বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ টন চাল-গম কেনার চুক্তি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল কেনার টার্গেট আছে। তা পূরণ হবে বলে আশা করছি। পাশাপাশি আমদানি করা যেসব চাল-গম পাইপলাইনে আছে সেগুলো শিগগিরই আমরা পেয়ে যাব। এ ছাড়া সম্প্রতি বন্যায় ফসলের যে ধরনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা হয়তো হবে না। এদিক দিয়েও বলা যায় এ বছর দেশের খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ভাল

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরো জানান, দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় প্রায় ১৮ কোটি মানুষের জন্য খাবার নিশ্চিত করা সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের মজুদ বাড়াতে হচ্ছে। এখন ২২ লাখ টন খাদ্য মজুদের সক্ষমতা আছে। এটাকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়া হবে। খাদ্য মজুদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি খুব বেশি প্রয়োজন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে সাতটি সাইলো গুদাম নির্মাণাধীন রয়েছে। এগুলোর প্রতিটিতে প্রায় ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য রাখা যাবে। এর মধ্যে দু-একটি সাইলো গুদাম এমন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে, এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। আগের সরকারের একজন মন্ত্রীর ইচ্ছায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে মালপত্র আনা-নেওয়ার খরচ অনেক বেশি হবে। দাতাগোষ্ঠী ও সরকারি কর্মকর্তারাও রাজি ছিলেন না। সাধারণত এসব সাইলো নির্মাণ করা হয় নদীর পাড়ে বা যেখানে ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু টাঙ্গাইলের পশ্চিমে যমুনা নদী থাকলেও সাইলোটি এমন জায়গায় করা হয়েছে, সেখানে ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো বাহনে মালপত্র পরিবহন করা যাবে না। ময়মনসিংহেও প্রায় একই অবস্থা। ময়মনসিংহ সাইলোতে পরে রেলপথ টানা হয়েছে। এগুলো ব্যবহারযোগ্য হলে মজুদ বাড়ানোর সুযোগ হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সরকারী খাতে গম আমদানীর উৎস বহুমুখিকরনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০২৪/২৫ অর্থ বছরে যুক্তরাষ্ট্রসহ আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানী করা হয়েছে। চলতি ২০২৫ সালে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারী খাতে গম আমদানীর কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে।

দেশে খাদ্যশস্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারী ও বেসরকারী খাতে আমদানী বৃদ্ধি করা হয়েছে।

চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুদের লক্ষ্যমাত্র ২৬ লাখ টনেরও বেশি রাখা হয়েছে।


banner close