মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

এই মুহূর্তে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের ভাবনা নেই: ইসি আলমগীর

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। ফাইল ছবি
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ২০:১৯

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশন নতুন করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের চিন্তা করছে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর।

তিনি বলেছেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে রোডম্যাপ অনুযায়ী যখন যে প্রস্তুতি নেয়া দরকার, আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে এই মুহূর্তে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করার কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই।’

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

নির্বাচন নিয়ে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর সুধীজনদের সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি। ইসি আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যারা চিন্তা-ভাবনা করেন অথবা বিভিন্ন সময় নির্বাচন করেছেন, তাদের কাছ থেকে আমরা ফিডব্যাক নেব। আমরা যে কাজ করলাম, এতে তাদের মতামত কী। যদি তাদের কোনো গুড সাজেশন থাকে, ভালো নির্বাচনের জন্য আরও কী করা যেতে পারে, এগুলোই শুনব।’

অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি না এলে কী করবেন, এমন প্রশ্নে ইসির সাবেক এই সচিব বলেন, ‘এগুলো আমাদের বিষয় নয়। সংবিধানে যেভাবে বলা আছে, আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিষয়টা রাজনৈতিক, রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টা দেখবে, কিছু করার আছে কি না। সংবিধান তো ইসিকে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কোনো সুযোগ দেয়নি। সংবিধানের বাইরে তো কিছু করার এখতিয়ার নেই ইসির।’

সিসি ক্যামেরা না রাখলে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সিসি ক্যামেরা রাখতে হবে এমন কোনো বিধিবিধান নেই। নির্বাচনে অনিয়ম হয়, এমন অভিযোগ দেখার জন্য আমরা সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করেছি। অভিযোগ এলেই সঠিক কি না, তা দেখার জন্য। কিন্তু এটাতো কোনো ভোটের প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে না।’

জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এত সিসি ক্যামেরা কে দেবে? এত সিসি ক্যামেরা দেয়ার জন্য তো কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। কয়েকটা সংগঠন মিলেও এত সিসি ক্যামেরা দিতে পারবে না। প্রায় দুই, আড়াই লাখ সিসি ক্যামেরা কীভাবে দেবে? ইন্টারনেটের সংযোগ কীভাবে দেবে? কীভাবে এত ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করবেন? এটা তো সম্ভব নয়। ঝুঁকিপূর্ণ আসনেও সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কারণ, অনেক কেন্দ্র থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ঠিক হয় নির্বাচনের আগে, ওই সময় বাজেট আনা অসম্ভব।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের শাস্তি সিদ্ধান্ত অনেক বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে। কারও কারও শাস্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। যারা ক্ষমা করে দিয়েছেন, আমরা (তাদের) বলেছি, ক্ষমা করার কোনো বিধান নেই। শাস্তি কম হলেও দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালন করেন, তাদের প্রতি আস্থা না রাখার কোনো কারণ নেই। যত নির্বাচন করেছি, শাস্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে। কোথাও সামান্য ত্রুটি হলে আমরা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। দায়িত্ব পালনে আমাদের শতভাগ আন্তরিকতা ছিল এবং আমরা মনে করি, জনগণ সেটা ভালোভাবে নিয়েছেন।’


আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার রায়ের খবর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও সোমবার শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার খবরকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির শিরোনামে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত। বিবিসি শিরোনাম করেছে, বিক্ষোভ দমনে নৃশংসতার দায়ে বাংলাদেশের সাবেক নেত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।

আল জাজিরার শিরোনামে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হাসিনার মৃত্যুদণ্ড। সিএনএন শিরোনাম করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের শিরোনামে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মৃত্যুদণ্ড। ব্রিটিশভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান শিরোনাম করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ জন্য বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড। অপরদিকে পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডন শিরোনাম করেছে, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার এ মামলার রায়ের জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ঠিক করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। তাদের মধ্যে মামুন আসামি থেকে রাজসাক্ষী বনে যান এবং দায় স্বীকার করে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।

এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। সেগুলো হলো—গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’ দেওয়া; হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেওয়া; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দেওয়া।

মামলার তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক। দুজনই এখন ভারতে অবস্থান করছেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’বা রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।


ন্যায়বিচারের ইতিহাসে এ রায় স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক মাইলফলক: আইন উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আরেকটি বিজয়’ বলে উল্লেখ করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের ইতিহাসে এ রায় একটি স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক মাইলফলক।

সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আজকের রায় কোনো প্রকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং অকাট্য ও প্রত্যক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে প্রদত্ত ন্যায়বিচারের ফলাফল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে তাজা, জোরালো ও বিস্তৃত প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, তাতে পৃথিবীর যে কোনো আদালতেই তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতো।

তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সহিংসতা, গুলিবর্ষণ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও গণহত্যার ধারাবাহিকতার বিষয়গুলো বিচার প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়েছে। এসব ঘটনার নৃশংসতায় যে বিপুল প্রাণহানি ও স্থায়ী শারীরিক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তা দেশের গণতান্ত্রিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ আঘাত হেনেছিল।

ব্রিফিংয়ের সময় আবেগাপ্লুত হয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছেন-আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, ইয়ামিন, আনাস, রিয়াগোপসহ অসংখ্য শহীদের কথা আজ বিশেষভাবে স্মরণ করছি। তিনি বলেন, আজকের রায়ে হয়তো তাদের বিদেহী আত্মা সামান্য হলেও শান্তি পাবে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর জন্য এটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সান্ত্বনা এনে দেবে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে আবারও আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে। ভারত যদি মানবতা বিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিকে আশ্রয়দান অব্যাহত রাখে, তবে তা বাংলাদেশের প্রতি শত্রুতামূলক ও নিন্দনীয় আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর মধ্যেই সরকার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে এবং আইনি আনুষ্ঠানিকতা জোরদার করা হচ্ছে।

বিচারকার্য অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আইন উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার যতদিন দায়িত্বে আছে, বিচার পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে চলবে। তিনি আরও বলেন, আগামী সরকার যেই হোক, জাতির প্রত্যাশা-এই গুরুদায়িত্ব থেকে তারা যেন কোনো অবস্থাতেই পিছিয়ে না যায়।


শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞা পূরণ: চিফ প্রসিকিউটর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জাতির প্রতিজ্ঞা পূরণ হয়েছে। এতে প্রমাণ হয়েছে অপরাধী যতই ক্ষমতাশালী হোক, সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’

সোমবার ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।

এই রায়ে জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে যত বড় অপরাধী হোক, অপরাধের জন্য তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে। এটাও প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো জটিল অপরাধের বিচার করতে সক্ষম।’

তিনি বলেন, ‘এ রায়ের ফলে যে ১ হাজার ৪০০ তরতাজা তরুণ জীবন দিয়েছেন, তাদের পরিবারে কিছুটা স্বস্তিই প্রসিকিউশনের প্রাপ্তি। একটি বিচারিক প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করার মাধ্যমে এই জাতিকে বিচারহীনতার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার আমাদের যে ক্ষুদ্র প্রয়াস, সেটা যদি সফল হয় সেটাতেই আমাদের সাফল্য।’

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যে ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ এখানে দেখানো হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো আদালতের মানে এই সাক্ষ্য-প্রমাণ উৎরে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজ (সোমবার) যেসব আসামিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তারা একই শাস্তি পাবে।’


নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

*মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকেও *রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনের ৫ বছরের কারাদণ্ড *জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ঐতিহাসিক এ রায় ঘোষণা করেন। রায় প্রদানকারী এই ট্রাইব্যুনালে অপর দুই সদস্য বিচারক হলেন মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

বহুল আলোচিত এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছিলেন প্রসিকিউশন।

অন্যদিকে, আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। এছাড়া রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের খালাস চান তার আইনজীবী।

এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস. এইচ. তামিম শুনানি করেন। এছাড়া শুনানিতে প্রসিকিউটর বি. এম. সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্য প্রসিকিউটরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। আর রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বোমোট ৫৪ জন সাক্ষী এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

একপর্যায়ে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে (অ্যাপ্রুভার) রাজসাক্ষী হন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলার বৃত্তান্ত

চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দমনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত থেকে শুরু করে বিচার—সব পর্যায়ের বৃত্তান্ত এভাবে এগিয়েছে।

মামটির নম্বর আইসিটি বিডি কেস নম্বর ২/২০২৫। চিফ প্রসিকিউটর বনাম শেখ হাসিনা ও অন্যান্য শিরোনামে দায়ের হওয়া এই মামলায় আসামি করা হয়েছে ক্ষমতাচ্যূত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে।

অভিযোগ প্রাপ্তি ও তদন্ত শুরু

২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট এবং ২৯ অক্টোবর অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়। মিস কেস নং ০২/২০২৪ করা হয় ১৬ অক্টোবর। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় ১৬ অক্টোবর এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ১৭ অক্টোবর। গ্রেপ্তার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে গত ১৬ মার্চ গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন ও চার্জ

তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয় ১২ মে। ১ জুন দাখিল হয় ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ। এতে ১৪ খণ্ডে প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার দালিলিক সাক্ষ্য জমা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল পত্রুপত্রিকা, দেশি-বিদেশি অনুসন্ধান প্রতিবেদন, শহীদ ও আহতদের তালিকাসহ গেজেট, বই, স্মারকগ্রন্থ, ঘটনাভিত্তিক তালিকা, গ্রাফিতির বই, অভ্যুত্থানকালীন প্রকাশিত পত্রিকার প্রথমপাতার সংকলন, আহতদের চিকিৎসা সনদ, পোস্টমর্টেম ও সুরতহাল প্রতিবেদন, অস্ত্র ও বুলেট ব্যবহারের জিডি, হেলিকপ্টারের ফ্লাইট শিডিউলসহ নানান নথি। ৯৩টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে এসব দালিলিক সাক্ষ্য ও ৩২টি বস্তু প্রদর্শনীর মাধ্যমে বুলেট, পিলেট, রক্তমাখা কাপড়, ভিডিও, অডিও, ডিভিডি, পেনড্রাইভ ও বই ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।

মোট ৮৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি জমা পড়ে, যার মধ্যে ৫৪ জন সরাসরি সাক্ষ্য দেন। ১৭ জুন পলাতক আসামিদের জন্য দুই জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২৪ জুন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। ১ জুলাই চার্জ শুনানি শুরু হয় এবং ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়। এ সময় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করেন।

প্রসিকিউশনের ওপেনিং স্টেটমেন্ট উপস্থাপন করা হয় ৩ আগস্ট; একই দিন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী ছিলেন গুরুতর আহত খোকন চন্দ্র বর্মন। ৮ অক্টোবর শেষ সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। মোট ৫৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১২ অক্টোবর শুরু হয় যুক্তিতর্ক। ২৩ অক্টোবর এটর্নি জেনারেলের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয় এবং রায়ের তারিখ ঘোষণার জন্য অপেক্ষায় রাখা হয়। ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল ১৭ নভেম্বরকে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে।

প্রসিকিউশনের অভিযোগসমূহ

প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ ১: চব্বিশের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা রাজাকারের নাতিপুতি সম্মোধন করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। এরপর ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন নেতা একই ধরনের মন্তব্য করেন। এসব বক্তব্যের পর ছাত্ররা আন্দোলনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডাররা আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমণ করে ও নির্যাতন চালায়।

অভিযোগ ২: কাউন্ট-১, ১৪ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাকসুদ কামালকে ফোন দিয়ে আসামি শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকার ট্যাগ দিয়ে তাদের ফাঁসি অর্থাৎ হত্যার নির্দেশ দেন।

কাউন্ট-২, ১৮ জুলাই শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথোপকথনে লেথাল উইপন (মরণাস্ত্র) ব্যবহারের নির্দেশ, ড্রোন ব্যবহার করে অবস্থান শনাক্ত করা এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার নির্দেশসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পুড়িয়ে জনতার উপর দায় চাপানোর নির্দেশনা প্রদান করেন।

কাউন্ট-৩, হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনে ২ বার কথোপকথনে আন্দোলনকারীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে বোমা নিক্ষেপ, আটক-নির্যাতন এবং বিএনপি, জামায়াত ও জঙ্গি ট্যাগ দেওয়ার নির্দেশ দেন।

অভিযোগ ৩: ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ।

সাক্ষ্যপ্রমাণ:

শেখ হাসিনার ১৪ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও, ঢাবি ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ড, আবু সাঈদকে পুলিশের গুলির সময় এনটিভির লাইভ ভিডিও ও মূল কপি, আবু সাইদের পাঁচটি পোস্টমর্টেম রিপোর্ট যা পুলিশের নির্দেশে চারবার পরিবর্তন করা হয়, ওই ঘটনায় সাজানো মামলার নথি, আবু সাঈদের পরিবারের সদস্য, সাংবাদিক, ডাক্তার, ছাত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য।

অভিযোগ ৪: চব্বিশের ৫ আগস্ট ঢাকার চানখারপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ।

অভিযোগ ৫: চব্বিশের ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানা এলাকায় ছয়জনকে হত্যা করে তাদের লাশ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ।

জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রায় ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড একটি ঐতিহাসিক রায়। এই রায়ের গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করে সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানানো হয়।

সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এতে বলা হয়েছে, রায়-পরবর্তী সময়ে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা, উত্তেজনাপ্রসূত আচরণ, সহিংসতা বা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে বিশেষ অনুরোধ জানানো হচ্ছে। জনগণের, বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্বজনদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই রায়কে ঘিরে জনমনে স্বাভাবিকভাবেই আবেগ সৃষ্টি হতে পারে। তবে সেই আবেগের বশবর্তী হয়ে যেন কেউ জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়—সরকার এ বিষয়ে দৃঢ়ভাবে সবাইকে সতর্ক করছে।


এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে এনে রায় কার্যকর করতে হবে: নাহিদ ইসলাম

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যদণ্ডের রায় দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত এনে এই রায় কার্যকর করতে হবে।

নাহিদ বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম খুনি-রক্তপিপাসু ফ্যাসিস্ট হিসেবে শেখ হাসিনা পরিচিতি লাভ করেছে। ফলে শেখ হাসিনার বিচার শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে যত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট শাসক রয়েছেন, তার বিচার এর এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, আগামী এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত এনে এই রায় কার্যকর করতে হবে।’

সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। খুনি স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে তার দল স্বাগত জানাচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের হাজারো শহীদ এবং কয়েক হাজার আহত যোদ্ধার ওপর যে জুলুম করা হয়েছিল, সেই জুলুমের রায় আজকে হয়েছে।

এই রায় বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘তবে যেদিন এ রায় কার্যকর হবে, সেদিনই আমরা সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট হব। জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে, শহীদ পরিবার এবং আহত যোদ্ধারা শান্তি পাবে।’

রায় কার্যকরের জন্য অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, এর জন্য সরকারকে যথাযথ ভূমিকা ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শুনতে পেয়েছি, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারত সফর করছেন। আমরা দাবি জানাব, তিনি শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন।’

বিচার অব্যাহত থাকতে হবে

সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, শুধু শেখ হাসিনা নয়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ও কার্যকর করতে হবে। আওয়ামী লীগ, তাদের দোসর এবং অভিযুক্ত সব সরকারি কর্মকর্তার দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

নাহিদ বলেন, নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে যাতে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা বাধা না আসে এবং এই বিচার অব্যাহত থাকতে হবে। এই বিচারের দাবিতে এনসিপি সব সময় রাজপথে থাকবে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরবর্তী মামলাগুলোর রায়ও কার্যকর করতে হবে।

আজকের রায় আসার পেছনে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল এবং বিপ্লবী ছাত্র–জনতার অবদান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন এনসিপি নেতা নাহিদ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং বিচার কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

দল হিসেবে আ.লীগের বিচার দাবি

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে আওয়ামী লীগও দল হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। ট্রাইব্যুনালের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার শুরু করতে হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনও একই অপরাধে অভিযুক্ত ছিলেন বলে আমরা মনে করি। এই হাজারো হত্যাকাণ্ডের পেছনে তারও দায় রয়েছে। ফলে তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সাজায় আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা মনে করি, তিনি রাজসাক্ষী হলেও তার সাজা আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল এবং এটা পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগে যাওয়া উচিত এই সাজা পুনর্বিবেচনার জন্য।’

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল আমিন, মুশফিক উস সালেহীন ও মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান, উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।


লালদিয়া টার্মিনালে ডেনিশ এপিএম টার্মিনালসের বিনিয়োগ ‘নতুন যুগের সূচনা’—প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

সোমবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মায়ের্স্ক গ্রুপ ও ডেনিশ সরকারের একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ। ছবি : পিআইডি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, লালদিয়া টার্মিনালে ডেনমার্কের কোম্পানি এপিএম টার্মিনালসের বিনিয়োগ বাংলাদেশের বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) খাতে নতুন যুগের সূচনা করেছে। তিনি বলেন, “এটি দেশের জন্য একটি নতুন সূচনা। ডেনমার্ক ও ইউরোপ থেকে বৃহত্তর এবং বহুমুখী বিনিয়োগের নতুন দ্বার খুলে যাচ্ছে।”

সোমবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মায়ের্স্ক গ্রুপ ও ডেনিশ সরকারের একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

মায়ের্স্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান রবার্ট মায়ের্স্ক উগলা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেনমার্কের বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্দলোসে হ্যানসেন

উগলা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর টার্মিনালে তাদের বিনিয়োগ হবে বাংলাদেশে কোনো ইউরোপীয় কোম্পানির সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। তিনি জানান, ২০৩০ সালে লালদিয়া টার্মিনাল চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ আগমনের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে বড় গতি আসবে। এটি হবে একটি টেকসই ও আধুনিক বন্দর—যা আরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অন্যান্য ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীদেরও আকৃষ্ট করবে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিপিং লাইন মালিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মায়ের্স্ক বাংলাদেশের লজিস্টিকস ও সাপ্লাই চেইন খাতে আরও বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজবে বলেও জানান উগলা।

দাভোসে জানুয়ারির বৈঠকের পর দেওয়া বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য উগলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ডেনিশ কোম্পানির সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।”

তিনি এপিএম টার্মিনালসকে লালদিয়া টার্মিনালের নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশকে লাখ লাখ উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। লালদিয়া টার্মিনাল হবে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবেশদ্বার, এটি ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন করবে।”

চট্টগ্রাম উপকূলরেখার বন্দরগুলোকে বিশ্বমানের সুবিধায় রূপান্তর করা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্য সম্ভাবনার জন্য অত্যন্ত জরুরি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

দাভোসে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথোপকথনের স্মৃতিচারণা করে উগলা বলেন, মায়ের্স্ক গ্রুপ—যার মালিকানা একটি ফাউন্ডেশনের—অধ্যাপক ইউনূসের কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, এই বিনিয়োগ স্থানীয় সম্প্রদায়ে বড় প্রভাব ফেলবে এবং নারীদের সহায়তায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, এবং বাংলাদেশে ডেনিশ রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “এটি আমাদের জন্য একটি মাইলফলক। ডেনিশ বিনিয়োগ প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করছে।”

হ্যানসেন সম্প্রতি অনুমোদিত শ্রম আইন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই আইনি সংস্কার আরও বেশি ইউরোপীয় কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে।


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আরেকটি বিজয়ের দিন আজ: আইন উপদেষ্টা

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আরেকটি বিজয়’ বলে উল্লেখ করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের ইতিহাসে আজকের রায় একটি স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক মাইলফলক।

সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আজকের রায় কোনো প্রকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং অকাট্য ও প্রত্যক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে প্রদত্ত ন্যায়বিচারের ফলাফল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে তাজা, জোরালো ও বিস্তৃত প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, তাতে পৃথিবীর যে কোনো আদালতেই তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতো।

তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সহিংসতা, গুলিবর্ষণ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও গণহত্যার ধারাবাহিকতার বিষয়গুলো বিচার প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়েছে। এসব ঘটনার নৃশংসতায় যে বিপুল প্রাণহানি ও স্থায়ী শারীরিক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তা দেশের গণতান্ত্রিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ আঘাত হেনেছিল।

ব্রিফিংয়ের সময় আবেগাপ্লুত হয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছেন-আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, ইয়ামিন, আনাস, রিয়াগোপসহ অসংখ্য শহীদের কথা আজ বিশেষভাবে স্মরণ করছি। তিনি বলেন, আজকের রায়ে হয়তো তাদের বিদেহী আত্মা সামান্য হলেও শান্তি পাবে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর জন্য এটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সান্তনা এনে দেবে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে আবারও আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে। ভারত যদি মানবতা বিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিকে আশ্রয়দান অব্যাহত রাখে, তবে তা বাংলাদেশের প্রতি শত্রুতামূলক ও নিন্দনীয় আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর মধ্যেই সরকার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে এবং আইনি আনুষ্ঠানিকতা জোরদার করা হচ্ছে।

বিচারকার্য অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আইন উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার যতদিন দায়িত্বে আছে, বিচার পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে চলবে। তিনি আরও বলেন, আগামী সরকার যেই হোক, জাতির প্রত্যাশা-এই গুরুদায়িত্ব থেকে তারা যেন কোনো অবস্থাতেই পিছিয়ে না যায়।

চীফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউশন টিম, তদন্ত কর্মকর্তা এবং শত শত সাক্ষীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যারা ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে আদালতে সত্যের সপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা এই রায়ের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।


জুলাই গণহত্যায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

আপডেটেড ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১৫:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রথম অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও দ্বিতীয় অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল।

সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল-১-এর বিচারক বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

৬ ভাগে বিভক্ত ৪৫৩ পৃষ্ঠা রায়ের সার সংক্ষিপ্ত অংশ পড়েছেন বিচারক। দুপুর ১২টা ৩৪ মিনিটে রায় পড়া শুরু হয়। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে রায়ের সার সংক্ষিপ্ত অংশ পড়েন বিচারক।

গণহত্যার দায়ে সরকারের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম বিচারের রায়। হাসিনার মামলার রায় বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এছাড়া রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় বিচার কার্যক্রম দেখানো হয়।

হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পালিয়ে বর্তমানে ভারতের আশ্রয় রয়েছেন। মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন। তিনি অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী নামে পরিচিত) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন এবং নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছেন।

এদিকে হাসিনার গণহত্যার রায়কে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও।

এর পাশাপাশি মাঠে সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। ঢাকা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সেনা মোতায়েনের জন্য সেনা সদরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কথিত লকডাউন ও শাটডাউনের নামে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণসহ নাশকতা প্রতিরোধে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ জুলাইয়ের পক্ষের দলগুলোর নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

হাসিনাসহ এ মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রসিকিউশন ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করে। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের মূল অভিযোগ হচ্ছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে হাসিনা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত দমনপীড়ন চালানোর সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন যা গণহত্যা, খুন এবং ভয়াবহ নির্যাতনের শামিল। প্রতিবেদনে প্রধান যে অভিযোগ আনা হয় সেগুলো হলো সরাসরি আদেশ অর্থাৎ শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সব বাহিনী, তার দল আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো বিশেষ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরাসরি নির্দেশ দেন। গণহত্যা ও নির্যাতন হাসিনার নির্দেশের ফলে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি আহত, অঙ্গহানি এবং নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।


রূপগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রূপগঞ্জ  প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় তারেক মিয়া (২৬) নামে যুবলীগের এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। রবিবার দিবাগত রাতে উপজেলার পূর্বাচল উপশহর এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত তারেক মিয়া রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে।

রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারিকুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ডাকা টানা দুই দিনের লকডাউন সফল করতে রবিবার দিবাগত রাতে পূর্বাচল উপশহরের তিনশ’ ফিট এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তিনটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রাতেই অভিযান চালিয়ে যুবলীগ নেতা তারেক মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলছে।


যে কোনো সময় হাসিনার রায় পড়া শুরু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই অভ‍্যুত্থানে ক্ষমতাচ‍্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় রায় পড়া যে কোনো সময় শুরু হবে। ইতোমধ্যে এ মামলার আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিতি হয়েছেন।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল-১-এর বিচারক বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় শুরু হওয়ার কথা ছিলো।

এই ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এ মামলায় হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রসিকিউশন ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করে। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের মূল অভিযোগ হচ্ছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে হাসিনা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত দমনপীড়ন চালানোর সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন যা গণহত্যা, খুন এবং ভয়াবহ নির্যাতনের শামিল।

প্রতিবেদনে প্রধান যে অভিযোগ আনা হয় সেগুলো হলো- সরাসরি আদেশ অর্থাৎ শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সব বাহিনী, তার দল আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো বিশেষ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরাসরি নির্দেশ দেন। গণহত্যা ও নির্যাতন হাসিনার নির্দেশের ফলে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি আহত, অঙ্গহানি এবং নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

৫ আগস্ট এক দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে আসার সময় আশুলিয়ায় ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যার মাঝে একজন জীবন্তও ছিল। এ ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।


মওলানা ভাসানী জাতীয় ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

আপডেটেড ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১১:২১
নিজস্ব প্রতিবেদক

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নাম বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রোববার মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মওলানা ভাসানীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মওলানা ভাসানী আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নাম। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের প্রবাদ পুরুষ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে উপমহাদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে আপোষহীন ও সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছেন। মওলানা ভাসানী দেশমাতৃকার মুক্তির পথ প্রদর্শক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ছিলেন এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তার অবস্থান ছিল শোষণের বিরুদ্ধে এবং শোষিতের পক্ষে। অধিকার আদায়ে তিনি সর্বদা এদেশের মানুষকে সাহস যুগিয়েছেন তার নির্ভীক ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের দ্বারা। তার হুংকারে অত্যাচারী শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর মসনদ কেঁপে উঠত। জাতীর ভয়াবহ দুর্দিনগুলোতে তিনি জনস্বার্থের পক্ষে থাকতেন বলেই জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘অসহায় মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় মওলানা ভাসানী সবসময় আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তার অগাধ দেশপ্রেম, দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা এবং গণতন্ত্র ও মানবতার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে যুগ যুগ ধরে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। তার আদর্শকে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারলেই আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হব।’

অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই মুহূর্তে মওলানা ভাসানী প্রদর্শিত পথই আমাদের পাথেয়। যুগে যুগে তিনি শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র সুরক্ষায় মওলানা ভাসানী যুগ যুগ ধরে আমাদেরকে প্রেরণা জোগাবে, দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে।’ আজকে এই দিনে আমি মওলানা ভাসানীর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিবেদিত হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।


সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য করণীয় সবই করছে কমিশন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য করণীয় সব কিছুই করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

তিনি বলেন, একটি ভালো নির্বাচন করা ছাড়া আমাদের কাছে আর কোন বিকল্প নেই।

গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির দ্বিতীয় দিনের সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

ইসি আনোয়ারুল বলেন, ভালো একটি নির্বাচন করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার সহযোগিতায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন।

ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের প্রায় ৯ লাখের মত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকবে। থাকবে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মোবাইল কোর্ট, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, মনিটরিং টিম, অবজারভেশন টিমও মাঠে থাকবে। এগুলো সব নিয়ে আমরা মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছি।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ৪৩ হাজার প্রিজাইডিং অফিসারকে সারা বাংলাদেশ থেকে সিলেকশন করা হয়েছে। নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হচ্ছেন প্রধান। সেই প্রিজাইডিং অফিসার যাতে শক্ত হয়, নিরপেক্ষ হয়— সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি শেষে দুইটা অঙ্গীকারনামা রয়েছে। একটা হলো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অঙ্গীকারনামা আর আরেকটা হলো প্রার্থীর। দেখবেন, এখানে প্রার্থিতা বাতিলসহ অন্যান্য বিষয় কঠিনভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছি।

আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আরও বলেন, ‘আইন তো যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। এই আইন দিয়েই কিন্তু অতীতে ভালো নির্বাচন হয়েছে। এ ছাড়াও কিছু বিষয় রয়েছে যে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান। পুরো আসন বাতিলের বিধান। সেগুলো কিন্তু নিয়মে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।’

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আগে যে ভুলগুলো করেছে, এই ভুলের স্তূপের পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে, আপনাদের সহযোগিতায় এই ভুলগুলোকে এক পাশে রেখে একটা ভালো নির্বাচন করব আর এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই। সবার সহযোগিতায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।


শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় আজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় আজ সোমবার।

গত ১৩ নভেম্বর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণার এই দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারক মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

বহুল আলোচিত এই মামলায় পাঁচটি অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন প্রসিকিউশন। অন্যদিকে, আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়েছেন তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। এছাড়াও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের খালাস চেয়েছেন তার আইনজীবী।

এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস. এইচ. তামিম শুনানি করেন। এছাড়া প্রসিকিউটর বি. এম. সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। আর রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট ৫৪ জন সাক্ষী এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয়রা ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে-এ অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।

গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ হেভিওয়েট নেতাদের যেভাবে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, সেসব বর্ণনা ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনার এ মামলায় ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ৩ আগস্ট। প্রথম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বীভৎসতার চিত্র তুলে ধরেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। গত ৮ অক্টোবর মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরার মাধ্যমে শেষ হয় সাক্ষ্যগ্রহণের ধাপ। এরপর প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীর যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয় ২৩ অক্টোবর।

মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্য সূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

রায় দেখবে বিশ্ব, লাইভ করবে রয়টার্স-বিটিভি

এদিকে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রায় ঘিরে ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই রায় দেওয়া হবে। আজ সোমবার শেখ হাসিনার রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি ও রয়টার্স। যা দেখবে পুরো বিশ্ব। সেই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের ফেসবুকে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। শুধু তাই না, ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় স্ক্রিনে রায় ঘোষণা সম্প্রচার করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশে এর আগে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি। তবে এবারও কি নারী হিসেবে অনুকম্পা পাবেন শেখ হাসিনা, সেই প্রশ্ন থাকলেও এমন সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম।

শেখ হাসিনার রায়ের পর তার সাজা হলে পরোয়ানা ইন্টারপোলে পাঠানো হবে বলেও জানায় প্রসিকিউশন।


banner close