যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে মানবজাতির কল্যাণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সকলকে একযোগে কাজ করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আজ আপনাদের সকলের কাছে, বিশ্ব নেতাদের কাছে আমার আবেদন, যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করুন এবং আমাদের জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থায়ী শান্তি, মানবজাতির কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করুন।’
শুক্রবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারি ও জলবায়ু সঙ্কটের প্রভাব এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য, অর্থায়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন-লক্ষ্যসমূহ অর্জনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বহুপাক্ষিক কূটনীতিকে জোরদারকরণ, জাতিসংঘের উপর অর্পিত দায়িত্বসমূহ পালন করার জন্য প্রচেষ্টা ও সাহসী বক্তব্য, এবং বৈশ্বিক সঙ্কট উত্তরণে সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবমূখী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সবসময় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসেকে সমর্থন জানায়।’
প্রধানমন্ত্রী ইউএনজিএ অধিবেশনে প্রদত্ত তাঁর ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য সংকট, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি), সন্ত্রাসবাদ এবং সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
গেল বারের মতো এবারসহ মোট ১৯তম বারের মতো শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রদত্ত ভাষণের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন।
এ বছরের ইউএনজিএ’র মূল প্রতিপাদ্য হলো— ‘আস্থা পুনর্গঠন ও বিশ্বব্যাপী সংহতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা: সকলের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্বের লক্ষ্যে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে ত্বরান্বিতকরণ পদক্ষেপ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায় তুলে ধরে বলেন, ‘আমি নিজে নিপীড়িত এবং যুদ্ধ ও হত্যার নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যুদ্ধ, হত্যা, অভ্যুত্থান ও সংঘাতের ভয়াবহতার কারণে মানুষ যে বেদনা ও যন্ত্রণা সহ্য করে তা অনুভব করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পিতা, জাতির পিতা ও বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন আমার মা, আমার তিন ছোট ভাই, দুই ভ্রাতৃবধূ, চাচাসহ পরিবারের মোট আঠার সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল।’
তিনি ও তাঁর ছোট বোন বিদেশে থাকায় সেই বর্বরতা থেকে বেঁচে যান বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ত্রিশ লাখ দেশবাসীকে হত্যা এবং দুই লাখ নারীকে নির্মম নির্যাতনের কথাও তিনি ভাষণে উল্লেখ করেন।
আসুন আমরা রোহিঙ্গাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করি
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কেননা ইতোমধ্যেই তাদের বাস্তুচ্যুতির ছয় বছর পেরিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আমরা অস্থায়ীভাবে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আমাদের জন্য সত্যিই অসহনীয় হয়ে উঠেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক হতাশার জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতি সম্ভাব্য মৌলবাদকে ইন্ধন দিতে পারে।’
‘এই অবস্থা চলমান থাকলে এটি আমাদের আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে’ বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সেখানে তারা শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে আগ্রহী। আসুন আমরা এই নিঃস্ব মানুষের জন্য তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করি।’
উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের ০.৪৭% এরও কম অবদান রাখলেও বাংলাদেশ জলবায়ুজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি। এর সমাধানের লক্ষ্যে জরুরি, সাহসী এবং উচ্চাভিলাষী সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলিকে উচ্চাভিলাষী এনডিসি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানাই। উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের উন্নয়ন চাহিদার কথা বিবেচনা করতে হবে। আমরা ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তহবিলের জরুরি বাস্তবায়ন চাই।’
সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা, লবণাক্ততা, নদী ক্ষয়, বন্যা ও খরা-জনিত কারণে জলবায়ু-অভিবাসীদের দায়িত্ব ভাগাভাগির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংহতির আহ্বানও জানান তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সংরক্ষণ এবং জলবায়ু-সহনশীল টেকসই উন্নয়নের পথ অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ সবুজ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বল্প-কার্বন নির্গমন কৌশল প্রণয়ন করছে।
শেখ হাসিনা এ সময় আওয়ামী লীগ সরকারের ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে এই তহবিলে এ পর্যন্ত ৪৮০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছি। জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনের লক্ষে সমুদ্র উপকূলে বাঁধ, সাইক্লোন শেল্টার, গ্রিন বেল্ট এবং বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ সরকার কক্সবাজারে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচ্যূত মানুষের জন্য বিশ্বের সবচেয় বড় আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেখানে ৪ হাজার ৪০৯টি উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার পরিবারের ৫০ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে ঘর দেয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, তাঁর সরকার ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়ন করছে। যার লক্ষ্য সমন্বিত ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি নিরাপদ, জলবায়ু সহনশীল এবং সমৃদ্ধ ডেল্টা অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকার ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ গ্রহণ করেছে বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে একটি জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে জলবায়ু সহনশীল দেশে পরিণত হতে কাজ করছি। বাংলাদেশের ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহার করছে। আমরা আরও টেকসই শক্তির মিশ্রণের জন্য কাজ করছি। আমরা আশা করি, ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের শক্তির ৪০% পুনঃনবায়নযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া যাবে।’
আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক স্থাপন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে ‘ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ’ অকার্যকর হয় পড়েছে এবং এ ব্যবস্থার দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়াও, আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে সারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া, উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের লক্ষ্যে হিমাগার নির্মাণের জন্য আমাদের বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমি জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য আঞ্চলিক ‘খাদ্য ব্যাংক’ চালু করার প্রস্তাব করছি। আমাদের অবশ্যই জলবায়ু-সহনশীল ফসলের গবেষণায় একে অপরকে সহযোগিতা করতে হবে।”
বিগত কয়েক বছরের আন্তঃসংযুক্ত সঙ্কটগুলো বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি এবং পণ্য মূল্য বৃদ্ধি করেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, ‘জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে আমাদের আমদানি বিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, আমরা প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করেছি। আমরা নিম্ন আয়ের ১ কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী দামে চাল ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করছি।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং দেশের সকল অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বানের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ গঠন এবং এর মাধ্যমে বৈশ্বিক খাদ্য, শক্তি এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে বিভিন্নমুখী সমাধান প্রদানের জন্য আমি জাতিসংঘ মহাসচিবকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।’
খাদ্যপণ্য রপ্তানি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বিদ্যমান সমস্যাসমূহের টেকসই সমাধান নিশ্চিত করার জন্য এই গ্রুপের অন্যতম চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তিনি সব সময় জোর দিয়েছেন বলেও জানান।
এসডিজি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো প্রয়োজন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় যে, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো লক্ষ্যগুলির সঙ্গে যেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তেমনি এটি সঙ্কটের সময় উন্নয়নশীল দেশগুলির আর্থিক চাহিদা মেটাতেও সক্ষম নয়।’
তিনি বলেন, ‘আজ এমন একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো আমাদের জরুরিভাবে প্রয়োজন যা উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বিশেষ ছাড়ে, কম খরচে, কম সুদে এবং ন্যূনতম শর্তে অর্থ সংগ্রহে সহায়তা করবে। তাছাড়া, জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগের সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলির ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। সমস্ত ঋণ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাবনার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা এই প্রস্তাবনার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করছি।’
তিনি বলেন, ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আমরা এসডিজি অর্জনে অবিচলিত অগ্রগতি সাধন করেছি। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও এক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। করোনাভাইরাস, বিভিন্ন মানবসৃষ্ট সঙ্কট এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় চ্যালেঞ্জগুলিকে বহুগুণে জটিল করেছে। সে কারণে, এ বছর জাতিসংঘ এসডিজি সম্মেলনের সফল আয়োজন এবং এতে গৃহীত রাজনৈতিক ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বাস করি, এই রাজনৈতিক ঘোষণা ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে।’
গণতন্ত্র, মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচারে বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ মানবাধিকার, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র রক্ষা ও প্রচারে পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘এই বছর আমরা সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ৭৫তম বার্ষিকী পালন করছি। এই মাহেন্দ্রক্ষণে বিশ্ব মানবতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে সকলের জন্য সমতা, ন্যায্যতা, স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি যাতে উন্নয়নশীল দেশের উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিতে ব্যবহৃত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’
‘বাংলাদেশের সংবিধান সকলের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। সকলকে আইনগত সুরক্ষা প্রদান ও সুবিচার নিশ্চিতকরণে গত এক দশকে বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থার তাৎপর্যপূর্ণ সংশোধন করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের আপামর জনগণের মানবাধিকার সংরক্ষণে অন্যান্য সদস্যগণের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আজ এই অধিবেশনে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করতে চাই যে, বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাবে।’
বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজি অর্জনে আমরা নারীর প্রতি বৈষম্যের অবসানকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গসমতা নিশ্চিতকরণ ও প্রত্যাশা পূরণে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা নারীশিক্ষাসহ সার্বিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক হতে উচ্চশিক্ষা পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ত্রিশ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি, বৃত্তি এবং এককালীন অনুদান দেয়া হচ্ছে। এদের অর্ধেকেরও বেশি নারী। আমাদের জাতীয় বাজেটের মোট ৩০ শতাংশ নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জানান, তাঁর সরকার সরকারের শীর্ষ থেকে সর্বনিম্ন সকল স্তরে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি খাতে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েছে।
তিনি বলেন, “এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা উপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও তা যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী পাচার এবং অন্যান্য অপরাধ নিরসনের জন্য কাজ করছি। আমরা নারীর অগ্রগতির জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ‘প্ল্যাটফর্ম ফর উইমেন লিডার’-এর মাধ্যমে সকল আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সমর্থন করছি।”
২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে অঙ্গীকারাবদ্ধ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভিশন ২০৪১-এর আওতায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আমার সরকার বিপুল বিনিয়োগ করেছে এবং এর মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে এমন একটি উচ্চ আয়ের, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত দেশে পরিণত করতে চাই, যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং নিত্য নতুন উদ্ভাবনের পথ উন্মুক্ত করবে। সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, লিঙ্গসমতা নিশ্চিতকরণ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতির আধুনিকীকরণ করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে আমরা মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভূক্তিমূলক ও আধুনিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছি। তাঁর দেখানো পথে বাস্তবমূখী নীতিগ্রহণ, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হতে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পেরেছি। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১.৫ থেকে ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি।’
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রযুক্তি স্থানান্তর
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের জন্য কিছু ন্যূনতম মানদণ্ড স্থাপনের ধারণার প্রশংসা করি। এসকল লক্ষ্য অর্জনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা যেমন পর্যাপ্ত অর্থায়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং উত্তম চর্চাসমূহ বিনিময় নিশ্চিত করতে হবে।’
‘বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছি। বাংলাদেশের এই সাফল্য এই সাধারণ পরিষদ দ্বারা স্বীকৃত এবং প্রশংসিত হয়েছে। অনুরূপ আর্থ-সামাজিক অবস্থার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশসমূহ আমাদের এই মডেল অনুকরণ করতে পারে।’
সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পর সুনীল অর্থনীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারকে কাজে লাগানোর জন্য সমুদ্রের আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশনের বিধানগুলির কার্যকর বাস্তবায়ন আবশ্যক।’
শেখ হাসিনা জানান, একদিন আগে তিনি জাতিসংঘের সাগর সম্পর্কিত আইন অনুযায়ী দেশসমূহের জাতীয় অধিকারভূক্ত এলাকার বাইরে সামুদ্রিক জৈব বৈচিত্রের সংরক্ষণ এবং টেকসই ব্যবহারের জন্য ‘বিবিএনজে’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। বাংলাদেশ সম্প্রতি তার ‘ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক’ প্রকাশ করেছে, যেখানে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সমুদ্রপথ এবং সামুদ্রিক সম্পদের ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণে বাংলাদেশের অঙ্গীকার অটুট
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সর্বজনীন ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পূর্ণাঙ্গ ও অবিচল। আমরা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ সকল আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্রের প্রসারণ বন্ধ বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আমরা অনতিবিলম্বে আন্তর্জাতিক নিরস্ত্রীকরণ এবং অস্ত্রের প্রসারণ বন্ধ বিষয়ক চুক্তিসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই।’
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের অবদান বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারেরই বহিঃপ্রকাশ। অদ্যাবধি ১ লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশী নারী ও পুরুষ ৪০টি দেশে ৫৫টি শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীগণ তাদের পেশাগত দক্ষতা এবং কাজের জন্য সমাদৃত।’
তিনি আরও বলেন, “আমরা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ এবং তৎসংশ্লিষ্ট হুমকি নিয়ে চিন্তিত; যা প্রতিনিয়ত তথ্যের অপব্যবহার এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুনভাবে আবির্ভূত হচ্ছে। আমার সরকার চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি গ্রহণ করেছে। আমরা কখনই সন্ত্রাসবাদ কার্যক্রম সংঘটনে বা অন্যের ক্ষতি সাধনে আমাদের ভূমি ব্যবহৃত হতে দেই না।”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকলের জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য অভিন্ন সঙ্কট মোকাবেলায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ জন্য, আমাদের অবশ্যই বিভাজন, সঙ্কীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার বিপরীতে একতা, সহমর্মিতা ও বহুপাক্ষিকতা বেছে নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শান্তি ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্যে আমাদের অবশ্যই সুবিচার, ন্যায় ও ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করতে হবে, যার ভিত্তি হবে জাতিসংঘ সনদ এবং ২০৩০ এজেন্ডা।’
উন্নয়নশীল দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতার আহ্বান
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, বর্তমান বৈশ্বিক সঙ্কটসমূহ আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তবুও, উন্নয়ন সহযোগী এবং উন্নত দেশসমূহকে আমাদের এ যাত্রায় তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। যা স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় আমাদের জন্য সহায়ক হবে। স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য প্রযোজ্য বিশেষ সুবিধাসমূহ আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যাপ্তিকাল মোতাবেক প্রদান করার জন্য আমি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এ বছরের মার্চ মাসে কাতারের দোহাতে অনুষ্ঠিত এলডিসি-৫ সম্মেলনে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য অপেক্ষমান দেশগুলোকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। আমি জাতিসংঘ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের দোহা কর্মসূচির সম্পূর্ণ ও কার্যকর বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশের সরকারি খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়ন অনুমোদন করেছে।
স্ট্রেংদেনিং ইনস্টিটিউশনস ফর ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিবিলিটি (এসআইটিএ) শীর্ষক এই প্রকল্প বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি খাতগুলোর আধুনিকায়ন, তথ্যের স্বচ্ছতা, রাজস্ব আহরণ, সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, সরকারি ক্রয় ও আর্থিক তদারকির ক্ষেত্রে চলমান সংস্কার কার্যক্রমকে সহায়তা করবে।
এই প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিকল্পনা বিভাগ, বাংলাদেশ সরকারী ক্রয় কর্তৃপক্ষ এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের শাসন কাঠামো ও সক্ষমতা শক্তিশালী করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশে ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, ‘ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলোর ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এই বিনিয়োগ স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে ও দুর্নীতি হ্রাসে সহায়তা করবে। এতে বাংলাদেশ এমন আধুনিক সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারবে, যা একটি উদীয়মান অর্থনীতির চাহিদা পূরণে সক্ষম।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্প সরকারি সেবার গুণগত মান ও প্রবেশগম্যতা বাড়াবে এবং এর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে।’
বিশ্বব্যাংক জানায়, এ প্রকল্পের পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে আরও একটি উন্নয়ন নীতিগত ঋণ নিয়ে আলোচনা চলছে, যা এই মাসের শেষ দিকে বোর্ড আলোচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে। এতে রাজস্ব আহরণ, ব্যাংক খাত, তথ্য সংরক্ষণ ও বিতরণ, সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সেবা প্রদান এবং নিরীক্ষা ও জবাবদিহিতার স্বচ্ছতা উন্নয়নের জন্য সহায়তা প্রদান করা হবে।
এসআইটিএ প্রকল্পটি এসব কার্যক্রমের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে এবং এসব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও প্রকল্পের টিম লিডার সুলেমানে কুলিবালি বলেন, ‘পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থাকে নিয়ে একটি সমন্বিত কৌশলে কাজ করার ফলে সরকারের কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যাবে, যা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্প ও প্রস্তাবিত উন্নয়ন ঋণ একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে এবং সরকারকে আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর সেবাপ্রদান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।’
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে তারা ৪৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান, সুদমুক্ত ও স্বল্পসুদের ঋণ প্রদান করেছে।
নির্বাচনকালীন প্রস্তুতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের জন্য যে তারিখই নির্ধারণ করুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব প্রস্তুতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আছে।
আজ শনিবার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হেডকোয়ার্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সময়ে ছোটখাটো ঘটনা ঘটবেই। তবে এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই এমন কথা বলা যাবে না।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আগের তুলনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। এবার কোরবানির ঈদে ছোটখাটো চুরি বা ছিনতাই ছাড়া বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ঈদ যাত্রা থেকে শুরু করে সামগ্রিক যানজট পরিস্থিতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি দেশে রাস্তা থাকার কথা ২০ শতাংশ, সেখানে রাস্তা আছে ৭ শতাংশ। তার ওপরে দিন দিন যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য যানজট নিরসন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এর আগে সকালে উত্তরায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হেডকোয়ার্টার পরিদর্শন শেষে পুলিশের হাতে মরণাস্ত্র না দেয়ার ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পুলিশের একেক অংশের হাতিয়ারের চাহিদা একেক রকমের। চাহিদা অনুযায়ী তা সরবরাহ করা হবে। আর্মড পুলিশের হাতিয়ারের সঙ্গে নৌ পুলিশের মিল নেই, আবার নৌ পুলিশের সঙ্গে শিল্প পুলিশের মিল নেই। সবদিক বিবেচনা করে প্রয়োজনমাফিক হাতিয়ার সরবরাহ করা হবে।
তবে পুলিশের হাতে ভারী অস্ত্র দেয়া থেকে সরকার বিরত থাকবে বলে জানিয়েছেন এ উপদেষ্টা।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১০ দিনের ছুটি শেষে রবিবার খুলছে দেশের সব সরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
গত ৭ জুন দেশে মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। ঈদুল আজহার আগে গত ৪ জুন ছিল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেষ কর্মদিবস।
সেই হিসেবে ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি কাটাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দূর-দূরান্তে ঈদ উদযাপন করতে গেছেন তারা শনিবারের মধ্যেই রাজধানীতে এসে পৌঁছাবেন। তবে রাজধানী এখনো তার পুরোনো রূপে ফেরেনি।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রথমে ৫ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ছয় দিন ছুটি দিয়েছিল সরকার। পরে ১১ ও ১২ জুন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) নির্বাহী আদেশের ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে এবার ঈদুল আজহায় ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি পেয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
উল্লেখ্য, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঈদের বর্ধিত ছুটি দিতে গত মে মাসের সাপ্তাহিক ছুটির দিনের দুই শনিবার (১৭ ও ২৪ মে) কর্মদিবস হিসেবে সরকারি অফিসসমূহ খোলা রেখেছিল সরকার।
পটুয়াখালীর দশমিনা ও গলাচিপায় বিএনপি এবং গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করায় ১৪৪ ধারার আদেশ অব্যাহত রয়েছে।
আগামীকাল রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত দশমিনা উপজেলার দশমিনা সদর ইউনিয়ন ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন এবং গলাচিপা পৌর শহর ও তার আশপাশের এলাকায় এ আদেশ বলবৎ থাকবে। গতকাল এ দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাগন এ আদেশ জারি করেন এবং মাইকিং এর মাধ্যমে তা জনসাধারণকে জানিয়ে দেয়া হয়। এ আদেশ চলাকালীন সময় সকল ধরনের সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য ও সকল প্রকার দেশীয় অস্ত্র বহন বন্ধ থাকবে। এছাড়া একসঙ্গে ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির অবস্থান কিংবা চলাচল সম্পূর্ন নিষেধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত দশটায় গলাচিপার পাতাবুনিয়া গ্রামে গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুরকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ এবং রাত আটটার দিকে চরবিশ্বাস বাজারে বিএনপি ও গন অধিকার পরিষদ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং বিএনপি কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
ঈদুল আজহার টানা দীর্ঘ ছুটি শেষ। ১০ দিনের ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। কাল রোববার থেকে খুলছে সরকারি-আধা সরকারিসহ বেসরকারি প্রায় সব অফিস। ব্যাংক পাড়াও খুলছে কাল। ফলে ছুটি শেষে কাল থেকে শহরের কর্মজীবন আবারও শুরু হচ্ছে।
তাই তো গতকাল শুক্রবার শহরের ট্রেন স্টেশন, লঞ্চ ঘাট ও বাস টার্মিনালে ফিরতি মানুষের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ঈদে ছুটি না পাওয়ায় অনেকেই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এখন ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে।
গতকাল শুক্রবার গাবতলী বাস টার্মিনাল ও আমিনবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীতে বাসে প্রবেশ ও প্রস্থান—দুই দিকেই যাত্রীর সংখ্যা প্রায় সমান। গতকাল ভোর ও রাতে কিছুটা চাপ থাকলেও সারাদিনে পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের তেমন ভিড় নেই। বেশির ভাগ বাসেই যাত্রী অর্ধেকের মতো। কাউন্টার মাস্টাররা বলছেন, অনেকে এখনও ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন, আবার ফিরেও আসছেন অনেকে।
গাবতলী বাস টার্মিনালে প্রবেশের শুরুতেই থাকা হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার থেকে জানানো হয়, এখনো প্রচুর পরিমাণে লোকজন ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। ভোরের দিকের বাসগুলোতে যাত্রীসংখ্যা একটু বেশি থাকে। এরপর সকাল দশটা থেকে মোটামুটি বিকাল পর্যন্ত যাত্রীর চাপ একটু কম থাকে। তবে বিকাল-সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্তর গাড়িগুলোতে ঈদের ছাড়া স্বাভাবিক দিনগুলোর মতোই যাত্রী আছে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে সড়ক থেকে নির্দিষ্ট সময় পর পর বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। ৪০/৪৫ সিটের বাসগুলোতে ১৫-২০ জন করে যাত্রী রয়েছেন।
এদিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলওয়ের তথ্যমতে শুক্রবার ফিরতি যাত্রার ছিল চতুর্থ দিন। এদিন সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনের যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
যাত্রীদের বেশিরভাগই পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামে গিয়েছিলেন। ঈদ উদযাপন শেষে তারা কর্মস্থলে ফিরছেন।
রেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ এসেছেন সপরিবারে, কেউ একা। সবার সঙ্গে ছিল ব্যাগ, স্যুটকেস ও শিশুরা। রংপুর থেকে আসা যাত্রী সালমা আক্তার বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়েছিলাম, এখন ফিরতে হচ্ছে চাকরির কারণে। ভিড় একটু বেশি, তবে নিরাপদে এসেছি।’
নীলফামারী থেকে আসা আরেক যাত্রী হাসান জামিল বলেন, ‘অফিস শুরু রোববার। কিন্তু ফিরতি টিকিট শুক্রবারেরটা পেয়েছিলাম। তাই আগেভাগেই আসতে হয়েছে।’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে ১০টা আন্তঃনগর ট্রেন কমলাপুরে ঢুকেছে। সব ট্রেন সঠিক সময়ে ও নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছেছে।’
অন্যদিকে সদরঘাট লঞ্চঘাটেও ঢাকায় ফিরতি যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। আবার অনেককেই এখন বাড়ি যেতেও দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, ঈদ উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি কাল ১৪ জুন পর্যন্ত হওয়ায় এখন পর্যন্ত রাজধানীমুখী যাত্রা রয়েছে স্বস্তিকর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ। মানুষজন আরও দুই তিন দিন আগে থেকেই রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন। কাল রোববার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্ম দিবস শুরু হবে।
যুক্তরাজ্যে চার দিনের সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার সকালে দেশে ফেরেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি আজ শনিবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টাকে বহনকারী ফ্লাইটটি শুক্রবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
অধ্যাপক ইউনূস গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া তিনি সফরকালে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গেও একান্ত বৈঠকে মিলিত হন।
এই সফরে অধ্যাপক ইউনূস 'কিং চার্লস তৃতীয় হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ সম্মাননা গ্রহণ করেন। মানুষের কল্যাণে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
চার দিনের সরকারি সফরে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমেন্সের স্পীকার ছাড়াও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এসব মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে ১৫ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ১৫ জন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ জনে। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫০২ জনে।
এতে আরও বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। মোট করোনা পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও তিনজন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৪০১ জনে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে তারেক রহমানের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।
আজ শুক্রবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে যৌথ বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘আজ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান লন্ডনে সফররত প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
এসময় তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।
এমন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বহুল আলোচিত বৈঠক শেষ হয়েছে।
লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে শুক্রবার (১৩ জুন) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় এই বৈঠক শুরু হয় এবং বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিট (বাংলাদেশ সময়) পর্যন্ত চলে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বহুল আলোচিত আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে হোটেলে পৌঁছালে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবিরকে নিয়ে দুপুর ১টার দিকে লন্ডনের বাসভবন থেকে সভাস্থলের উদ্দেশে রওনা হন তারেক রহমান।
সকালে দ্য ডরচেস্টারের সামনে জড়ো হওয়া বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার কয়েকশ নেতা-কর্মী তারেক রহমানকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
এদিকে, ড. খলিলুর রহমান ও বিএনপি নেতা আমীর খসরু দ্য ডরচেস্টার হোটেলে পৃথক বৈঠক করেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বলেন, আমীর খসরু প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করবেন।
উচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকটি এরই মধ্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।
সকলের দৃষ্টি এখন লন্ডনের দিকে, কারণ অনেকেই আসন্ন নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এটিকে একটি সম্ভাব্য মোড় হিসেবে দেখছেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের সময়সূচি, প্রস্তাবিত সংস্কার, জুলাই সনদ, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর, অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তের অনুমোদন, অন্তর্বর্তী প্রশাসনের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রস্থান কৌশল ও তারেক রহমানের বাংলাদেশে সম্ভাব্য ফিরে আসা সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
বিএনপি নেতারা এই বৈঠককে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে টানাপোড়েন নিরসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করেন। একই সঙ্গে তারা পরামর্শ দেন যে সময়সূচি সামঞ্জস্যপূর্ণ করা আলোচনার একটি প্রধান বিষয় হতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শুরু হয়েছে।
আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে এ বৈঠক শুরু হয়।
বিএনপির মিডিয়া সেলের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, দুপুর ২টায় ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠক শুরু হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার কিছু আগে হোটেল পৌঁছান তারেক রহমান। তাকে হোটেলে স্বাগত জানান অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ অন্যান্যরা।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় বাসা থেকে রওনা হন।
জানা গেছে, ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যকার এই বৈঠক ওয়ান টু ওয়ান হবে। সেখানে দুই পক্ষের আর কারও অংশ নেওয়ার সম্ভবনা নেই।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেলের উদ্বৃতি দিয়ে সেলের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির জানান, তারেক রহমান বাসা থেকে রওনা হওয়ার সময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপার্সন ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন ও দীর্ঘদিন ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করছে ঘরমুখো মানুষ। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে দিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পথেও বেড়েছে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ।
এনিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার টাঙ্গাইলের যমুনা সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ একদিনে ৩৮ হাজার ৫৩৯ টি যানবাহন পারাপার হয় এবং টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার ২০০ টাকা।
শুক্রবার (১৩ জুন) সকালে যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বুধবার (১১ জুন) রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ হাজার ৫৩৯টি যানবাহন পারাপার হয়।
এর মধ্যে সেতু পূর্ব অংশের উত্তরবঙ্গগামী লেনে ১৬ হাজার ৩৮০টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার ২৫০ টাকা।
অপরদিকে সিরাজগঞ্জের সেতু পশ্চিম অংশের ঢাকাগামী লেনে ২২ হাজার ১৫৯ টি যানবাহন পারাপার হয় এবং টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ৯৫০ টাকা। সেতু দিয়ে প্রতি মিনিটে ২৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছে।
অনেক প্রত্যাশাকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আজ শুক্রবার।
দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা (স্থানীয় সময়) পর্যন্ত লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে ঐতিহাসিক এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
২ ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকটি দেশের কোটি কোটি মানুষের মনে ও প্রাণে এক ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। আলোচনার বিষয়বস্তু ও ফলাফল জানার জন্য দেশে ও বিদেশে থাকা বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আগ্রহ ও উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রত্যাশা ‘দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেবে এই বৈঠক’।
বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ও আলোচিত দুই নেতার এই বৈঠকে আলোচনার এজেন্ডা কি হতে। পারে তা প্রকাশ করেনি কোনো পক্ষই। তবে স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারসহ রাজনীতিতে সাম্প্রতিক যুক্ত হওয়া অনেক বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।
বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আলোচনা হলে তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন- দলের পক্ষ থেকে তারেক রহমান জাতীয় নির্বাচনের তারিখ অন্তত ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নিয়ে আসা অন্যতম এজেন্ডা হিসাবে তুলে ধরবেন। এটি এক রকম নিশ্চিত। বিপরীতে সরকারের পক্ষ থেকে ড. ইউনূস চাইবেন এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের সময়সীমা ধরে রেখে সংস্কার ও বিচারের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে।
এছাড়াও তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রাসঙ্গিকতা, জুলাই সনদ, প্রশাসনসহ বিভিন্ন সেক্টরে স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারণ, নির্বাচন কমিশন, আদালতের রায়ের পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভবিষ্যৎ কাঠামো, রাখাইনে মানবিক করিডোর, বন্দর ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসবে।
বিএনপি’র যুক্তরাজ্য শাখার নেতারা জানান, বৈঠকের আলোচ্যসূচী নির্ধারণের জন্য লন্ডন সফররত প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধির সঙ্গে তারেক রহমানের প্রতিনিধি দলের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। গত বুধবার এই আলোচনা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবারও তারেক রহমানের একজন প্রতিনিধি সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেছেন বলে এক ভিডিও বার্তায় জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বৈঠক প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বার্তা সংস্থা বাসস’কে বলেছেন, ‘এই বৈঠক নিয়ে আমরা ভীষণ আশাবাদী। শুধু আমরা কেনো পুরো দেশের মানুষের দৃষ্টি এখন লন্ডনের দিকে। নিশ্চয়ই দুই নেতার মধ্যকার বৈঠকে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা যৌক্তিক সমাধান আসবে।
সমঝোতার পথ খুলবে। যার মধ্য দিয়ে জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পথ খুঁজে পাবে।’
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘গোটা জাতি প্রত্যাশা করে আছে এই বৈঠকের মধ্যে দিয়ে দেশের রাজনৈতিক সকল সঙ্কট কেটে যাবে। আমাদেরও বিশ্বাস, এটি হবে একটি ঐতিহাসিক বৈঠক। এই বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে। শীর্ষ পর্যায়ের এই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় ভিত্তিতে একটা গ্রহণযোগ্য ফয়সালা বা সিদ্ধান্ত হবে।’
যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এমএ মালেক জানিয়েছেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানিয়ে মঙ্গলবার রাতে প্রস্তুতি সভা করেছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। আজ শুক্রবার সকাল থেকে স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ডরচেস্টার হোটেলের সামনে সংহতি জানিয়ে অবস্থান নেবেন।
তারা পুরো বৈঠকের সময়ই সেখানে থাকবেন।
যুক্তরাজ্য সফররত বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আজ লন্ডনে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। সেখানে তাঁরা বাংলাদেশের চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সকাল ১১:২০ মিনিটে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের মধ্যে একান্ত বৈঠক হয়, যা ছিল একেবারে ব্যক্তিগত।’
বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে রাজা চার্লসকে অবহিত করেন।
তিনি আরও জানান, প্রায় ৩০ মিনিটের এ বৈঠক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। যেহেতু রাজা চার্লস বহুদিন ধরে প্রফেসর ইউনূসকে চেনেন, সেহেতু নানা বিষয় নিয়ে তাদের আলোচনা হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, ‘এই পুরো সফরের মধ্যে আমি বলব, এটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।’
একান্ত সাক্ষাতের পর, রাজা ও রাণীর স্বাক্ষরযুক্ত একটি ছবি উপহার হিসেবে প্রফেসর ইউনূসকে প্রদান করা হয়, যা প্রধান উপদেষ্টার জন্য একটি বড় সম্মানের ছিল বলে জানান প্রেস সচিব।
বাকিংহাম প্যালেসে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসকে ব্যক্তিগত সাক্ষাতের জন্য স্বাগত জানান রাজা চার্লস।
নিয়মিত কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সাক্ষাতের পাশাপাশি রাজা চার্লস এমন ব্যক্তিদের সাক্ষাৎ দেন, যারা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন- বিশেষ করে যারা রাজকীয় নিয়োগ পেয়ে থাকেন বা তাদের নামে প্রদত্ত পুরস্কার গ্রহণ করছেন।
ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে বা ‘অডিয়েন্স’ প্রদান করে রাজা চার্লস নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও তাদের কাজের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেন এবং তাঁদের সম্পর্কে আরও জানার পাশাপাশি রাজকীয় অভিজ্ঞতা উপভোগ করার সুযোগ করে দেন।
`অডিয়েন্স’ মানে হলো রাজা ও কাউকে একান্তভাবে সাক্ষাৎ প্রদান করা।