রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার ইউরেনিয়াম হস্তান্তরের এই অনুষ্ঠান (গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি) সম্পন্ন হয়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে এলিট ক্লাবে নাম লেখাল বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারকারী রাষ্ট্র হিসেবেও স্বীকৃতি পাচ্ছে বাংলাদেশ।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভের কাছ থেকে আরএনপিপি কর্তৃপক্ষের হয়ে এই তেজস্ক্রিয় জ্বালানি গ্রহণ করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এ সময় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় বলেন, বাংলাদেশ আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। এই পরামাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার আরেকটি পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে। আমরা নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করেছি।’
বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধুপ্রতিম দেশ রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় শেখ হাসিনা তাঁর সরকার, দেশবাসী এবং তাঁর ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে পুতিনকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশ-রাশিয়া বন্ধুত্ব অটুট থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুষ্ঠানস্থল থেকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানের সূচনা করেন।
অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ২০২৪ সালে প্রথম ইউনিটে ১,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৬ সালে চালু হবে। দুটি ইউনিটে মোট ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। বাংলাদেশ রাশিয়ার বন্ধু রাষ্ট্র। শুধু ১৯৭১-ই নয়, রাশিয়া সবসময়ই বাংলাদেশের বন্ধু থাকবে।
বাসস জানায়, প্রেসিডেন্ট পুতিনের বক্তৃতার উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এইমাত্র আমরা প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছ থেকে শুনেছি ২০২৬ সালে আমাদের দ্বিতীয় ইউনিট এবং ২০২৪ সালে প্রথম ইউনিট চালু হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। অচিরেই প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। আর এই বিদ্যুৎ হবে অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব।’
এর আগে তাঁর সরকার ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল বলেও জানান তিনি।
‘অচিরেই প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য আমরা পৃথক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছি। যেকোনো ধরনের দুর্যোগে আমাদের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকটা খেয়াল রেখে এই প্লান্টের ডিজাইন প্রণয়ন এবং নির্মাণকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। তা ছাড়া, ব্যবহৃত জ্বালানি (স্পেন্ট ফুয়েল) ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি সই করেছি। রাশিয়ান ফেডারেশন এসব স্পেন্ট ফুয়েল তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবে বলে আমাদের কথা দিয়েছে।
রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি, রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
শুরুতে আরএনপিপি-এর প্রথম ব্যাচের পারমাণবিক জ্বালানি তৈরি ও বিতরণের ওপর একটি অডিও-ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়, যেখানে আরএনপিপি প্রকল্প পরিচালক এবং এনপিসিবিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. শওকত আকবর আরএনপিপি-এর পরিচিতি তুলে ধরেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন। পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষ থেকে রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তরের জন্য জ্বালানি সরবরাহের সনদ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের হাতে জ্বালানি সরবরাহের একটি মডেল তুলে দেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু, জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক গণভবন প্রান্তের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে এই শক্তিকে শান্তির জন্য ব্যবহারের এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, পরমাণু শক্তি আমরা শান্তি রক্ষায় ব্যবহার করব। আমরা বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্রের সাধারণ ও সম্পূর্ণ নির্মূল এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তির বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছি। আমরা ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করেছি এবং একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি।
এই কর্তৃপক্ষ ‘আইএইএ’-এর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করি। ২০২০ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন স্টেটমেন্ট ও পলিসি স্টেটমেন্ট অন পাওয়ার সেক্টর রিফর্মস’ প্রণয়ন ও অনুমোদন করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা জ্বালানি নীতিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করি। ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করি। ‘বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার অ্যাকশন প্ল্যান-২০০০’ প্রণয়ন করি। ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা’ ‘আইএইএ’-এর সহযোগিতা চাই। ‘আইএইএ’-এর আন্তরিক সহায়তায় আমরা একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করি এবং একটি বিশেষ কমিটিও করে দেয়া হয়।
এরপর সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এ প্রকল্প আর আগায়নি এবং ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এই রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প আবারো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি। বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে। তা ছাড়া ‘আইএইএ’ শুরু থেকেই আমাদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। এ জন্য আমি রাশিয়ান ফেডারেশন সরকার, আইএইএ এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর রাশিয়া সফরে পুতিনের সঙ্গে মস্কোতে বৈঠক এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের ২ অক্টোবর প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছি। এখন পর্যন্ত আপনার সর্বাত্মক সহযোগিতায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।’
তিনি বন্ধুরাষ্ট্র ভারত এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও ধন্যবাদ জানান এই নির্মাণ কাজে সহযোগিতার জন্য।
তিনি ২০১৭ সালে ‘আইএইএ’-এর তৎকালীন মহাপরিচালক ইউকিও আমানোর আমন্ত্রণে ভিয়েনা সফরের সময় ‘আইএইএ’-এর সদর দপ্তরে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে সে সময় এ প্রকল্পে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তাদের সার্বিক সহায়তা ও মনিটরিং করার আহ্বানের উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সেই থেকে ‘আইএইএ’ আমাদের এ বিষয়ে সার্বিক সহায়তা প্রদান করছে। এরপর ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আমি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করি। ২০২১ ও ২০২২-এ এই কেন্দ্রের যথাক্রমে ইউনিট-১ ও ইউনিট-২-এর রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন করি। আজ এই কেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি সংযুক্ত হলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রেটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলকে রাশিয়ান ফেডারেশন যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। যেহেতু বন্ধুপ্রতিম ভারতেও একই রকম একটি প্রকল্প হচ্ছে-সে জন্য আমাদের কিছু জনবলকে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা ভারতেও পাঠিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে প্রস্তাবিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা। সে অনুযায়ী কিছু কাজও হয়েছিল। দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর এই মেগা প্রকল্পটিসহ সব জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড থেমে যায়।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার বিলাসপুর বটতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ধনবাড়ী থানার ডিউটি অফিসার ফরিদ শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- জামালপুর জেলার মেলানদহ উপজেলার চর গ্রামের আলামিন (৩০), চরপালিশা গ্রামের স্বপন মিয়া (৩৫) ও সদর উপজেলার হাসিল মানিকাবাড়ী গ্রামের জুয়েল রানা (৩২)।
আহত ব্যক্তির নাম মো. সানী (১৮)। তিনি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পাণ্ডা গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আজ সকালে জামালপুরগামী পিকআপ ভ্যান ধনবাড়ী উপজেলার বিলাশপুর বটতলা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পিকআপচালক ও মোটরসাইকেলের এক আরোহী নিহত হন। গুরুতর আহত দু’জনকে হাসপাতালে নিলে সেখানে আরও একজন মারা যান।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে একটি পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম। এটি চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষের স্থায়ী বসবাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার অংশ।
পলিটিকোর এক প্রতিবেদনের জানানো হয়েছে, নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান চীন ও রাশিয়ার একই ধরনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ওই দুদেশ সম্ভবত চাঁদে একটি কিপ-আউট জোন ঘোষণা করতে পারে।’
কিন্তু নাসার সাম্প্রতিক ও তীব্র বাজেট হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্য ও সময়সীমা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে এবং কিছু বিজ্ঞানী উদ্বিগ্ন যে পরিকল্পনাগুলো ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারত, জাপানসহ দেশগুলো চাঁদের পৃষ্ঠ অন্বেষণের জন্য তাড়াহুড়া করছে। কিছু দেশ স্থায়ী মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আস্থাভাজন হিসেবে নাসার সাময়িক প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হওয়া মার্কিন পরিবহন সচিব শন ডাফি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের চন্দ্র অর্থনীতি, মঙ্গল গ্রহে উচ্চ শক্তি উৎপাদন এবং মহাকাশে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে সংস্থাটির দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।’
তিনি বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোকে কমপক্ষে ১০০ কিলোওয়াট শক্তি উৎপাদনে সক্ষম চুল্লি বানানোর প্রস্তাব জমা দেওয়ার আহ্বান জানান।
এটি তুলনামূলকভাবে ছোট আকৃতির। একটি সাধারণ অফশোর উইন্ড টারবাইন ২-৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
চাঁদে শক্তির উৎস হিসেবে পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করার ধারণা নতুন নয়। ২০২২ সালে নাসা কোম্পানিগুলোকে ডিজাইনের জন্য তিনটি ৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি প্রদান করেছিল।
চলতি বছরের মে মাসে, চীন ও রাশিয়া ঘোষণা করেছিল, তারা ২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদে একটি স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করছে।
অনেকে বিজ্ঞানীর মতে, এটি চন্দ্র পৃষ্ঠে নিরবচ্ছিন্ন শক্তি সরবরাহের শ্রেষ্ঠ বা একমাত্র উপায় হতে পারে। একটি চন্দ্র দিন পৃথিবীতে চার সপ্তাহের সমান, যার মধ্যে দুই সপ্তাহ অবিরাম রৌদ্র ও দুই সপ্তাহ অন্ধকার থাকে। এটি সৌরশক্তির ওপর নির্ভরশীলতাকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং করে তোলে।
বিশ্ববিদ্যালয় অব সারের মহাকাশ প্রযুক্তি, অনুসন্ধান ও যন্ত্রপাতি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ড. সঙ্গউ লিম বলেন, ‘চাঁদে একটি ছোট আবাসস্থল তৈরি করতেও মেগাওয়াট-স্তরের শক্তি প্রয়োজন।
শুধু সৌর-প্যানেল ও ব্যাটারিতে তা নির্ভরযোগ্যভাবে পূরণ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে পারমাণবিক শক্তি কেবল কাম্য নয়, অপরিহার্য।’
ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবী ও গ্রহীয় বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক লিওনেল উইলসন মনে করেন, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ হলে ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে চুল্লি স্থাপন করা প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব এবং ইতোমধ্যে ছোট চুল্লির জন্য ডিজাইনও রয়েছে।
কিন্তু এ বিষয়ে নিরাপত্তাসংক্রান্ত কিছু প্রশ্নও রয়েছে। ওপেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ড. সিমিপন বারবের বলেন, ‘পরমাণু পদার্থ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মাধ্যমে উৎক্ষেপণে নিরাপত্তা উদ্বেগ রয়েছে। এর জন্য বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন হয়, তবে এটি অতিক্রমযোগ্য।’
২০২৬ সালে ট্রাম্প প্রশাসন নাসার বাজেটে ২৪ শতাংশ হ্রাসের ঘোষণা দেওয়ায় নাসায় সাম্প্রতিক অস্থিরতার পর ডাফির এ নির্দেশ অবাক করার মতো। এর মধ্যে গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীতে নমুনা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মার্স স্যাম্পল রিটার্নের মতো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিজ্ঞান কর্মসূচিতে কাটছাঁট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এই ঘোষণা ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য দ্বারা অনুপ্রাণিত কি না, সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন। বারবের বলেন, ‘এটি যেন পুরোনো মহাকাশ প্রতিযোগিতার দিনের মতো ফিরে আসছে, যা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুটা হতাশাজনক ও উদ্বেগজনক। প্রতিযোগিতা উদ্ভাবন এনে দিতে পারে, কিন্তু যদি জাতীয় স্বার্থে সীমাবদ্ধ হয়ে যায় এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে বৈশ্বিক পরিভ্রমণ ও সৌরজগৎ অন্বেষণের বৃহত্তর চিত্র থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।’
চাঁদে চীন ও রাশিয়ার একটি ‘কিপ-আউট জোন ঘোষণা’ করার সম্ভাবনা সম্পর্কে ডাফির মন্তব্য আর্টেমিস চুক্তি নামক একটি চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করে বলে মনে হচ্ছে। ২০২০ সালে সাতটি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এ চুক্তি নির্ধারণ করে, কীভাবে দেশগুলো চাঁদে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।
এ চুক্তি অনুযায়ী ‘সেফটি জোন’ স্থাপনের ধারা রয়েছে, যেখানে দেশগুলো তাদের সম্পদ ও কার্যক্রমের চারপাশে এক ধরনের নিরাপত্তা এলাকা নির্ধারণ করতে পারে।
বারবের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আপনি যদি চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি বা কোনো ধরনের ভিত্তি তৈরি করেন, তাহলে আপনি তার আশপাশে একটি সেফটি জোন দাবি করতে পারেন- কারণ সেখানে আপনার যন্ত্রপাতি থাকবে।’
বারবের উল্লেখ করেছেন, মানুষের ব্যবহারের জন্য চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের আগে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে।
নাসার আর্টেমিস ৩-এর লক্ষ্য ২০২৭ সালে চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষ পাঠানো, কিন্তু তহবিল নিয়ে এটি একাধিক বাধা ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছে।
বারবের আরও বলেন, ‘আপনার কাছে শক্তি থাকল, কিন্তু মানুষ ও সরঞ্জাম সেখানে নিয়ে যাওয়া যাবে না, তাহলে তাতে লাভ কী? বর্তমানে পরিকল্পনাগুলো খুব সংহত মনে হচ্ছে না।’
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) নিয়ে রিভিউয়ের রায় আজ ঘোষণা করা হবে। আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ শুনানি শেষে গত ৩০ জুলাই জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ রায়ের জন্য ৬ আগস্ট দিন ধার্য করেন। তবে গতকাল বুধবার সর্বোচ্চ আদালত রায়ের জন্য ৭ আগস্ট দিন ধার্য করে আদেশ দেন।
আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন দোলন। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের রিভিউ আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার নিহাদ কবির ও অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার এম. আবদুল কাইয়ূম। এছাড়া ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল)।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘রুলস অব বিজনেস’ অনুযায়ী ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে এটি সংশোধন করা হয়। তবে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ ও সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচে রাখা হয়েছে- এ অভিযোগ এনে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে হাইকোর্টে রিট করেন।
২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের (সংশোধিত) ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। সে আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সেই রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া আট দফা নির্দেশনার কিছুটা সংশোধন করে তিন দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেগুলো হলো- যেহেতু সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন, তাই বিরোধপূর্ণ প্রিসিডেন্সে সাংবিধানিক পদধারীরা অগ্রাধিকার পাবেন; জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে জেলা জজ ও সমপদমর্যাদাসম্পন্নরা সরকারের সচিবদের সঙ্গে ১৬ নম্বরে অবস্থান করবেন এবং জেলা জজদের পরেই অতিরিক্ত সচিবরা ১৭ নম্বর ক্রমিকে থাকবেন।
একপর্যায়ে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। পরবর্তীতে রিভিউ আবেদনে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরাও পক্ষভুক্ত হন।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনের জন্য যত টাকা লাগবে, তা দেওয়া হবে। এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচনের বাজেট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আজ অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও অর্থনৈতিক বিষয়- সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় জানান। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বেশি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরেকটু কমলে ভালো হতো বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ওরা (যুক্তরাষ্ট্র) যেটা করেছে মোটামুটি। স্বস্তির জায়গা বলব না। এমনিতেই বিশ্ব অনেক চ্যালেঞ্জে। তবে অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ খুব খারাপ অবস্থানে নেই।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যেটা হয়েছে, আমাদের পোশাক ও নিট পোশাক খাত তাড়াতাড়ি সমন্বয় করে ফেলতে পারবে। বস্ত্র খাতের বোনায় (উইভিং) একটু সমস্যার মধ্যে পড়তে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবার দর-কষাকষিতে যাওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘হ্যাঁ। ইউএস চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের মনোভাব খুবই ভালো। শেভরন ও মেটলাইফের অর্থ দিয়ে দেওয়ার কারণে বলেছে, তোমরা তো টাকা আটকে রাখো না।’
চুক্তি এখনো সই হয়নি জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হবে। কোন কোন জায়গায় আমাদের শুল্ক কমাতে হবে, কী কী আমদানি করতে হবে, তা দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, যখন উভয় পক্ষের নিবিড় (ওয়ান টু ওয়ান) দর-কষাকষি হয়, অনেক কথা বলা হয় না। এটা বহুপক্ষীয় দর-কষাকষি না। এটা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) নয়, জাতিসংঘ নয়, যে সবাই জানবেন। তা ছাড়া ভিয়েতনাম আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। আবার চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান সবাই আছে। কিছু জিনিস আছে বলা যায় না।’
এক বছরে খাদের কিনারা থেকে দেশের অর্থনীতি অনেকটাই ওপরে ওঠে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এটা দেখার জন্য দৃষ্টি ও অন্তর্দৃষ্টি লাগে। ভাসা-ভাসা দেখলাম, ভাসা-ভাসা বলে দিলাম, তা না। অনেক কিছুই হয়েছে।’
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, জ্বালানি, শুল্কসহ অনেক চ্যালেঞ্জ আছে সামনে। বড় চ্যালেঞ্জ ব্যবসায়ীদের আস্থা আনা এবং ধীরগতির ব্যবসা-বাণিজ্যে আরও গতি সঞ্চার করা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা একটু স্বস্তির জায়গায় আসছে। একটু সময় লাগবে। মূল্যস্ফীতি এমন না যে ঘোড়ার রাশ ধরে টেনে দিলাম।’
সংস্কারের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু জিনিস আমরা করে ফেলেছি। কতগুলো আছে মধ্যমেয়াদে ও দীর্ঘমেয়াদে করা হবে। যেমন ব্যাংক রেজল্যুশন। একটু সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংক একটা পথনকশা করছে। পুঁজিবাজার মোটামুটি চেষ্টা করছে। এনবিআরের অধ্যাদেশ কিছুটা সংশোধন করা হবে।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, এ বছর যারা চামড়া সংরক্ষণ করেছে, তারা পরবর্তিতে ভালো দাম পেয়েছেন। যে কারণে এবার যারা চামড়া সংরক্ষণ করেন নাই, আর যারা করেছেন, তাদের মধ্যে একটি সুনিদৃষ্ট পার্থক্য তৈরী হয়েছে। ফলে আমি মনে করি, এবারের মতো আগামি বছরও সরকার চামড়া সংরক্ষনে সহযোগিতা করলে মানুষ অনেক বেশি অংশগ্রহণ করবে।
আজ বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কোরবানি সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটির তৃতীয় সভায় এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। এছাড়াও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান সভায় উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু সুফিয়ান প্রমুখ বৈঠকে অংশনেন।
বৈঠকে জানানো হয়, গত ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগৃহীত হয়েছিল। এ বছর ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪ সংখ্যক পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে মাদ্রাসা, এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং এবং স্থানীয় ট্যানার্স কর্তৃক ৬০ লাখ ৪৫ হাজার ২২০টি চামড়া সংরক্ষণ হয়েছে।
এরমধ্যে মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংয়ে সরক্ষন হয়েছে ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৫১টি চামড়া। সবচেয়ে বেশি সংরক্ষন হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ১৫ লাখ ৪৮ হাজার পিস। এরপর ঢাকায় ১৪ লাখ ৯ হাজার, রাজশাহী ১৩ লাখ ৯০ হাজার চামড়া সংরক্ষন করা হয়েছিল।
এদিকে বৈঠকে এ বছর কোরবানির চামড়া ব্যবস্থাপনা কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো, কোরবানি পশুর হাট ব্যবস্থাপনা; অনুনমোদিত হাট অপসারণ এবং বিক্রিত পশুর হাসিল আদায়ের হার; কোরবানিদাতা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যায়ে চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ; এলাকাভিত্তিক পশু কোরবানির জন্য নিদিষ্ট স্থান/ অবকাঠামো অনুপস্থিতি; চামড়া সংরক্ষণের সাথে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের যথাযথ জ্ঞান না থাকা; কোরবানির বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা; বিদ্যমান ট্যানারিসমূহের সক্ষমতা ও কমপ্লায়েন্স ইস্যু; কোরবানির চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিষয়ক কোন বিদ্যমান নীতিমালা নেই এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ জেলায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের স্থায়ী অবকাঠামোর অভাব।
বৈঠকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামি কোরবানী ঈদের জন্য কিছু সুপারিশ করে কমিটি। সেগুলো হলো:
ক) কোরবানি পশুর হাট দক্ষভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ কোরবানি পশুর হাট ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে;
খ) কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জন্য একটি STANDARD OPERATING PROCEDURE (SOP) প্রণয়ন করা যেতে পারে এবং তা অনুসরণের জন্য সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে;
গ) কোরবানি পশুর চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে;
ঘ) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ এবং অন্যান্য যে কোন রোগবালাই দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো যেতে পারে;
৬) জেলা অনুযায়ী স্থায়ী ও মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী ও পশু জবাইকারীদের (কসাই) একটি ডাটাবেজ তৈরী করা যেতে পারে এবং তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে;
চ) সিইটিপি/ইটিপিসমূহকে কোরবানির সময় উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।
ছ) চামড়া সংরক্ষণকারী/ ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী ঢাকার অদুরে চামড়া সংরক্ষণের জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা যেতে পারে।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, সমাজকল্যাণমূলক প্রতিটি সেবা কার্যক্রম এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই সেই সেবার সুবিধা পায়। শহরের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি মানুষ যেন তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পান সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে।
তিনি আজ ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয় আয়োজিত সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন ময়মনসিংহ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাজু আহমেদ, ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা কার্যালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, সেবা প্রদানে জটিলতা বা বিলম্ব নয়, বরং মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়া আমাদের অঙ্গীকার। সেবা একটি পবিত্র কাজ, জনগণের জন্য কাজ করাকে যদি আমরা ইবাদতের অংশ হিসেবে দেখি, তাহলে আমাদের কাজের মান ও আন্তরিকতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
উপদেষ্টা আরো বলেন, আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে সমাজকল্যাণমূলক সেবা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে চাই। তাই ইউনিয়ন লেভেলে সমাজসেবা কার্যক্রম, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু সুরক্ষা ও কল্যাণমূলক কার্যক্রমকে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। সারাদেশের ন্যায় ময়মনসিংহের পশ্চাৎপদ অসচ্ছল মানুষ এবং নারীরাও যাতে সমান সুযোগ পায় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য থাকবে। তাই ময়মনসিংহ সমাজসেবা বিভাগ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার আহ্বান জানান তিনি।
সভা শেষে প্রধান অতিথি শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীন সমন্বয় পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আওতাধীন তৃণমূল পর্যায়ের অসহায় প্রশিক্ষণ গ্রহীতা নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন।
আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। এ চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর এই চিঠি দেওয়া হয় বলে বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
প্রেস উইং জানিয়েছে, ইসিতে দেওয়া চিঠিতে উল্লিখিত সময়ে প্রত্যাশিত মানের অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
এর আগে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া তার ভাষণে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়ার কথা বলেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ এই চিঠি দিলো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণের উল্লেখ করে পত্রে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে অবিলম্বে এক্ষেত্রে সকল প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন শুরুর কথা বলেছেন। বিগত পনের বছরে নাগরিকদের ভোট দিতে না পারার প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন যেন মহা-আনন্দের ভোট উৎসবের দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়, তেমন আয়োজনের উপর প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে নির্বাচন আনন্দ-উৎসবে, শান্তি-শৃঙ্খলায়, ভোটার উপস্থিতিতে, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতায় অবিস্মরণীয় হয়ে ওঠার যে প্রত্যাশা করেছেন—তা উল্লেখ করা হয়। নির্বাচন আয়োজনে যথোপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্বারোপের পাশাপাশি একটি প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রত্যয়ের কথাও নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার ভিত্তিতে উল্লেখিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে আমাদের মনে চিরস্থায়ী করে রাখতে হবে। আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো যারা জুলাই আন্দোলনে শহিদ হয়েছে, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদেরকে যেন আমরা ভুলে না যাই।
আজ বুধবার(৬ আগষ্ট) বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের কারাবন্দীদের নিয়ে একটি স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সকলে একসাথে দাঁড়িয়েছি। মানুষের ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, রাজনৈতিক আদর্শের পরিচয় সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আমরা নিজেদেরকে কেবল মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছি এবং সফল হয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমাদের মধ্যে বিভাজন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও গণ-অভ্যুত্থানের পূর্বে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল।
আসিফ নজরুল বলেন, তাঁকে আজকের এই অনুষ্ঠান আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছিলেন এনসিপির সদস্য-সচিব আখতার হোসেন ।
'আমি তাকে বলেছিলাম, আরও কিছু দিন পরে এই অনুষ্ঠান করতে। কিন্তু সে বলল এখনই করতে হবে। আজ আমি বুঝতে পেরেছি, কেন সে এমনটা করেছে। জুলাই কারাবন্দীদের যে দুঃখ-কষ্ট, সেটা আজ এখানে না এলে শুনতে পারতাম না।’
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ দেশকেই কারাগারে পরিণত করেছিল। কারাগারগুলোকে আয়নাঘরে পরিণত করেছিল।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহাসচিব অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য-সচিব আকতার হোসেন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, গণ অধিকার পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক নূর প্রমুখ ।
নির্বাচনের আগে সব জেলার এসপি ও ওসিদের লটারির মাধ্যমে বদলি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অব জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
বুধবার (৬ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে আয়োজিত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'লটারি অনুযায়ী নির্বাচনের আগে বিশেষভাবে এসপি ও ওসিদের পোস্টিং দেওয়া হবে। এখন তো সব কর্মকর্তা যেখানেই থাকুন না কেন, নির্বাচনের আগে তাঁদের লটারির মাধ্যমে বদলি করা হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'গতকাল প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আলোচনা করেছি।'
উপদেষ্টা বলেন, 'এই মিটিংয়ে নির্বাচনের সময় যেসব লজিস্টিক সহায়তা প্রয়োজন হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন, ডিসি, এসপি, ইউএনও ও ওসি—নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নির্বাচনের সময় দেখা যায়, প্রার্থীরা তাঁদের আসনে পছন্দের ডিসি, এসপি কিংবা ওসিকে চান। কিন্তু এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, গণমাধ্যমকে ডেকে সবার সামনে লটারি করব।'
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে পত্র পাঠানো হয়েছে। এ পত্রের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো।
আজ নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো পত্রে উল্লিখিত সময়ে প্রত্যাশিত মানের অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
গত ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর ভাষণে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা শুরুর আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়ার কথা বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ এই চিঠি পাঠায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
পত্রে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে অবিলম্বে এক্ষেত্রে সকল প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন শুরুর কথা বলেছেন। বিগত পনেরো বছরে নাগরিকদের ভোট দিতে না পারার প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন যেন মহা-আনন্দের ভোট উৎসবের দিন হিসেবে স্মরণীয় হয় তেমন আয়োজনের উপর প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে নির্বাচন আনন্দ-উৎসবে, শান্তি-শৃঙ্খলায়, ভোটার উপস্থিতিতে, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতায় অবিস্মরণীয় হয়ে ওঠার যে প্রত্যাশা করেছেন তা উল্লেখ করা হয়। নির্বাচন আয়োজনে যথোপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্বারোপের পাশাপাশি একটি প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, অবাধ, শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রত্যয়ের কথাও নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার ভিত্তিতে উল্লেখিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের মিশনপ্রধান আন্দ্রে কার্সটেন্স।
আজ বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাৎকালে তিনি ‘জেনারেশন জেড’-এর নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর প্রশংসায় নিজে গাওয়া একটি গানের কথা ও ভিডিও প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ কথা জানান।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
আজ ২২শে শ্রাবণ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর পৈতৃকনিবাস ঠাকুরবাড়িতে তার জীবনপ্রদীপ নিভেছিল। বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছে বাঙালি জাতি।
১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ ছিল ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট। ৮০ বছর বয়সে সেদিন পরলোকগমন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
দিনটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন আলোচনা সভা, সংগীতানুষ্ঠান, আবৃত্তি ও রবীন্দ্রজীবন ও সাহিত্য নিয়ে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
বুধবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এক সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ (বিটিভি) সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তার জীবন, কর্ম ও প্রভাব নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
১৮৬১ সালের ৭ মে (বাংলা ২৫ বৈশাখ, ১২৬৮) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা দেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ। ১৩ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। সংগীত, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, কবিতা কিংবা প্রবন্ধ— সাহিত্যের প্রায় সব অঙ্গনেই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃপ্ত পদচারণা।
তিনি প্রায় দুই হাজারের বেশি গান রচনা করেছেন, যা রবীন্দ্রসঙ্গীত নামে স্বতন্ত্র ঘরানায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে আটটি উপন্যাস, ৮৪টি ছোটগল্প, অসংখ্য কবিতা, নাটক ও প্রবন্ধ। প্রায় সাত দশকজুড়ে এসব সৃষ্টি করেছেন তিনি।
শিক্ষার প্রসারের জন্য কাজ করেছেন নোবেলজয়ী এই সাহিত্যিক। ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রথম বাঙালি হিসেবে এই সম্মাননা অর্জন করেছিলেন তিনি।
দুটি দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা তিনি। বাংলাদেশে ‘আমার সোনার বাংলা’ এবং ভারতে ‘জন গণ মন’ জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও কবির গান সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে। সব মিলিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বাঙালির হৃদয়ে আজও অম্লান হয়ে আছেন অনন্ত বাসনার রবি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তারা যেন নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলার কোনো রকমের সুযোগ না পায়, আমাদের অবশ্যই সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনারা প্রত্যেকেই অবগত আছেন, একটা গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে দেশের বাহিরে বসে এবং ভেতরে থেকে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’
‘আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলার কোনো রকমের সুযোগ না পায়। মাথায় রাখবেন, পরাজিত শক্তি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে। কিন্তু একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করা গেলে অপশক্তির পরাজয় চূড়ান্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত যতগুলো বড় সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে— তার সবগুলোর নেপথ্যে কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কোনও দল যদি গায়ের জোরে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে, তার চূড়ান্ত পরিণতি কী— তা জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা ইতিহাসের কলঙ্কিত কোনো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি আর করতে চাই না।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিনিয়ত পরামর্শ নেওয়ার জন্য আমরা প্রযুক্তির সাহায্য নেব। এজন্য একটি অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছি। দ্রুত এই অ্যাপটি চালু হবে। আপনারা আপনাদের সকল পরামর্শ, সকল মতামত, সকল আশঙ্কা এবং উদ্যোগের কথা এই অ্যাপের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাবেন। আমরা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেব, সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেব।’
এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে, প্রতিশ্রুতি-প্রতিজ্ঞা-পরিকল্পনায় কোনোকিছুতেই যেন তরুণরা বাদ না পড়ে। নারীরা বাদ না পড়ে। মনে রাখবেন, যে তরুণ-তরুণীরা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে তারা বিশ্বকেও বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আপনার দল থেকে তাদের সে সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিন।’
আসন্ন নির্বাচনে প্রত্যেক নাগরিক যেন নিরাপদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সবাই নিরাপদে যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে, এটা নিয়ে কারো কোনো আপত্তির সুযোগ রাখা যাবে না। আমরা সবাই সবার পছন্দের প্রতি সম্মান দেখাব—এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
‘নির্বাচন আসছে। যদি আপনি আপনার নির্বাচনি এলাকা থেকে দূরে বসবাস করেন, তবে এখন থেকে নিয়মিত নির্বাচনি এলাকা পরিদর্শন করুন। যাতে সেরা ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে আপনি প্রস্তুত হতে পারেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের এই অতি মূল্যবান অধিকার ফিরে পেলাম, ভোটটা দেবার আগ মুহূর্তে যেন তাদের চেহারা আমাদের চোখে ভেসে ওঠে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি বেশি দূরে নয়। নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি নিতে নিতেই ভোটের দিন এসে পড়বে। বহু বছর আমরা কেউ ভোট দিতে পারিনি। এবার আমরা সবাই ভোট দেবো। কেউ বাদ যাবে না। সবাই যেন বলতে পারি, নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশকে রওনা করার জন্য আমি আমার ভোটটা দিয়েছিলাম। আমার ভোটেই দেশটা সেপথে রওনা হতে পেরেছিল।’
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসে সব নাগরিকের কাছে আমার আহ্বান, আসুন, ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রথম বড় পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হই।’