প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিথ্যা কথা বলা বিএনপি নেতাদের অভ্যাস। তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না- দেশবাসীর কাছে এটা আমাদের আহ্বান।
যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান এবং যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানের শুরুতে তার সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
এ সময় আন্দোলনের নামে বিরোধীরা নির্বাচনটাকে বানচাল করে দিতে চাইছে, এমন অভিযোগ করেও আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন হঠাৎ অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাতামাতি কেন? এখন একটা দেশ এত দ্রুত উন্নতি করেছে, সেটাই মানুষের মাথাব্যথা হয়ে গেল কি না। সেটাকে এখন কীভাবে নষ্ট করা যায়, এ সন্দেহটা আমারও আছে।’
‘প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র থেকে খালি হাতে ফিরেছেন’ বিএনপি মহাসচিবের এমন এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কী মনে করেন জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির এই অভিযোগের কোনো উত্তর দিতে চাই না। আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই, বিএনপির নেতারা একটি মাইক হাতে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে সেটা সবাই জেনে নেন। মিথ্যা বলাটা তাদের অভ্যাস। আর সব কিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টা, এ বিষয়ে যেন দেশবাসী সচেতন থাকে। তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না- দেশবাসীর কাছে এটা আমাদের আহ্বান।’
বিএনপি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে। আর টিকে আছে মিথ্যার ওপর। তাদের শেকড় তো নেই। তারা মিথ্যার ওপর নির্ভর করে। এটাই করবে। এটা তাদের অভ্যাস।’
দিল্লিতে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেলফি এবং পরে ওয়াশিংটনে তার সঙ্গে আবারও সাক্ষাতে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান, এবারের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের কথায় তিনি আর কোনো বার্তা পেয়েছেন কি না। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের কিছু মানুষ নির্বাচন নিয়ে ‘একটু বেশি কথা’ বলে। সে কারণে বিদেশিরাও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার সুযোগ পায়। দুর্ভাগ্য হলো সেটাই, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে, জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করেছে, সেই সময় নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে তাদের (বিদেশিদের) উদ্বেগ দেখিনি …।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমেরিকা হঠাৎ এবং অন্যান্য দেশও আমাদের দেশের নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ কি না প্রশ্ন তোলে। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, যখন মিলিটারি ডিকটেটর ছিল, যখন আমরা সংগ্রাম করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। আমরা সংগ্রাম করেছি ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য। আমরা স্লোগান দিয়েছি- ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর জনগণের ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়া, এটা তো আওয়ামী লীগই করেছে। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ জোট, তারা এক হয়ে আন্দোলন করে, এ জন্য আমাদের বহু রক্ত দিতে হয়েছে। আমি সে কথাটা বলেছি তাদের (যুক্তরাষ্ট্রে)।”
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বারবার একই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তারা বাস্তব অবস্থাটা বোঝে কি না আমি জানি না; কিন্তু তাদের একই কথা, মানে ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে। সেটা আমি স্পষ্ট বলে আসছি। কেন, ভোটের জন্য তো আমরা সংগ্রাম করলাম, রক্ত দিলাম, আমার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার অর্জন করে দিয়েছি। আমাকে ভোট শেখাতে হবে না।’
সফরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে কেউই আলোচনা করেননি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সংশ্লিষ্ট এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি। আমার মনে পড়ে না, এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। কেউ জিজ্ঞেসও করেননি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে অভিজ্ঞতা, এরপর এটা কেউ চায়?’
‘বিএনপি আন্দোলন করছে এটা খুব ভালো’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে করে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হচ্ছে। আমি তো খবর রাখি কোন এমপি কতবার এলাকায় যায়। আগে যারা এলাকায় যেত না কিংবা একটু পিছিয়ে ছিল তারা এখন সক্রিয় হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা জানে নির্বাচন করে জনগণের ভোট পাবে না, তারাই সব জায়গায় ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থেকে এত বেশি টাকা মানি লন্ডারিং, এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে, তারা অবাধে সেই টাকা খরচ করে যাচ্ছে এবং সব জায়গায় একটা প্রচার। এটা একদিক থেকে ভালো। বিএনপি আন্দোলন করলে দেশের সাধারণ মানুষের পকেটে কিছু টাকা আসা। যেই টাকা তারা লুটপাট করে মানিলন্ডারিং করে নিয়ে গিয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে অগ্নিসংযোগ, মানুষ হত্যাসহ এমন কিছু নেই তারা করেনি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে এসে ৭০০ আসনে মনোনয়ন দিয়ে বাণিজ্য করে শেষমেষ তারা সরে গেল।’
তিনি বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বলেন, ‘তারা তো বারবার তারিখ দিয়েই যাচ্ছে। এই তারিখে ফেলে দেবে, ওই তারিখে ফেলে দেবে। তারা আন্দোলন করুক। কিন্তু জনগণের জানমালের কোনো ক্ষতি যদি করা হয়, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজের সমালোচনা করে বলেন, ‘কিছু স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকে বললেন, মেগা প্রজেক্ট আমরা করেছি; কিন্তু দরিদ্রদের জন্য আমরা নাকি কিছু করিনি। এ রকম বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা বাংলাদেশটাকে দেখেনি। তারা ঘরের ভেতরেই আছেন। আর শুধু টেলিভিশনটাই দেখেন। দিন-দুনিয়া তাকিয়ে দেখে না।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দারিদ্র্য বিমোচনসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন সেসব কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকব। ভোটে আসলে আবার করব। দেখি কে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়! সব রেডি করে দিয়েছি, এখন বসে বসে বড় বড় কথা বলে। আমি বাবা-মা সব হারিয়েছি। আমার হারানোর কিছু নেই। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। কত বছর হয়েছে রাজনীতির? একটা স্বপ্ন ছিল- জাতির পিতার, সেটা করেছি, এখন তো কেউ না খেয়ে থাকে না।’
রিজার্ভ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেসব আঁতেল, জ্ঞানীগুণী কথা বলেন। তারা কি জানেন, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি, তখন রিজার্ভ কত ছিল? বাংলাদেশ কোথায় ছিল, কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছি? যতটুকু রিজার্ভ প্রয়োজন, আমাদের আছে। আমাদের ভালো থাকা জরুরি, নাকি রিজার্ভটা দরকার বেশি? যদি বলে, তাহলে রিজার্ভ আগের জায়গায় এনে দিই? বিদ্যুৎকেন্দ্রটেন্দ্র বন্ধ করে দিই।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলেছি, প্রতিদিন একটু করে লোডশেডিং দিতে, যাতে বিদ্যুৎ থাকার গুরুত্বটা বোঝে। আর বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে সবাই। সুবিধাটা নিচ্ছে অর্থশালীরা। এ জন্য নির্দেশনা দিয়েছি, যারা বেশি ব্যবহার করবে, তারা বেশি টাকা দেবে, সেভাবে মূল্য নির্ধারণ করতে।’
সংসদের বাইরের কোনো দলকে বিদেশে বিরোধী দল হিসেবে মনে করা হয় না বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘যাদের নির্বাচন করার মতো সাহস নেই, যারা নির্বাচন করে সংসদে আসতে পারে না, তারা আবার বিরোধী দল কিসের? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হিসেবে বিরোধী দলে যাদের আসন তারাই বিরোধী দল। আর রাস্তায় কে ঘেউ ঘেউ করে বেড়াল, সেটাতে কিন্তু বিদেশে কখনো বিরোধী দল হিসেবে ধরে না। এটা সবার মনে রাখা উচিত।’
বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হবে। বিরোধী দল থাকতে হবে; কিন্তু বিরোধী কে? যাদের সংসদে একটি সিটও নেই তাদের বিরোধী দল হিসাব করে তো রাখা যায় না। বলা যায় না। আমরা তো ওদের খুলে দিয়েছি, তোমাদের যা খুশি কর। কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয় অর্জন করে আস।’
তিনি বলেন, ‘এত টেলিভিশন খুলে দিয়েছি। টকশোতে যে যা পারছেন, টক কথা, মিষ্টি কথা বলে যাচ্ছেন। খুব বলেন, কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সারা দিন কথা বলার পর যদি বলেন আমাদের কথা বলতে দেয় না আর বিএনপির তো মাইক একটা লাগানো থাকে। আর বলেন আমাদের মিটিং-মিছিল করতে দেয়া হয় না। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, আমাদের সঙ্গে কী আচরণ করত? আমরা যদি তার একটা কণাও করতাম তাহলে তো ওদের অস্তিত্বই থাকত না, থাকবে অস্তিত্ব? থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ায় যুদ্ধ, প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। পরিবহন খরচ বেড়ে গেল। আমরা তো তাও খেয়ে-পরে বেঁচে আছি। যান না, আমেরিকায় যান, ইংল্যান্ডে যান। বিভিন্ন দেশে যান সেখানকার মানুষের কী অবস্থা! ওই একটা টমেটো কয়েকশ’ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। একটা রুটি কত দিয়ে কিনতে হয়। সেখানে নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। বেশি জিনিস কিনতে পারবে না।’
সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত খাদ্যমন্দা। এটা কেউ বলবে, কেউ বলবে না। আমি নিজেই তো কয়েকটা দেশ দেখলাম। সেখানে যে কী অবস্থা আমরা জানি। ওয়াশিংটনে তো বাজার-টাজার করে আমরা রান্না করে খেয়ে আসছি। এক পিস মাছ কিনতে বা দুই টুকরা মুরগি কিনতে কত শত টাকা খরচ হয় সেটা তো আমরা নিজে দেখে আসছি; কিন্তু আমরা মানুষের পাশে আছি। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়।’
পাঙ্গাশ মাছ খাওয়া নিয়ে কোনো একজনের বক্তব্যের উদ্বৃতি টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন বলে দিলেন পাঙ্গাশ মাছ খেতে পারেন না। আমি যদি জিজ্ঞাসা করি ২০০৯ বা ১৯৯৬ সালের আগে কে কত পাঙ্গাশ মাছ খেয়েছেন। মানুষ যেখানে আগে নুনভাত খেতে পারত না, এখন অন্তত পাঙ্গাশ মাছের কথা চিন্তা করে। এই মাছ আগে বরিশাল আর যমুনা নদীতে পাওয়া যেত। সারা দেশে পাওয়া যেত না। গবেষণার মাধ্যমে এটি চাষ হয় এবং সারা দেশে পাওয়া যায়। যেখানে মানুষ নুনভাতের জন্য হাহাকার করত। ফেন চাইতো, নুনভাত চাইতো, সেখানে মানুষ মাছ-মাংস-ডিম খাওয়ার জন্য চিন্তা করতে পারে। এইটুকু মানুষের জন্য করতে পারছি, আমি ওইভাবে দেখি। আমাদের যতটুকু সাধ্য ছিল সেটা করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আগে বিদেশে বাংলাদেশ শুনলে সবাই নাক শিটকাতো। এখন আর শিটকায়? বাংলাদেশের নাম শুনলে এখন আলাদা মর্যাদা নিয়ে তাকায়। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। এটা বাসাতে হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দেশের উন্নতি করি।’
এবার জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপ্রার্থীদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা হচ্ছে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি, তারাই এমপি নমিনেশন পাবে। জনগণের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি এবং তারা কতটুকু জনগণের জন্য কাজ করেছে এবং তাদের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে, আমরা সেটাই বিবেচনায় নিই। আর নিই বলেই আমরা নির্বাচনে জয়ীও হই এবং মানুষের জন্য কাজও করতে পারি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে সেটাই আমরা বিবেচনা করব এবং আমি প্রতি ছয় মাস পরপর সার্ভে করি। কারও পজিশন খারাপ হলে সরাসরি মুখের ওপর বলে দিই, আপনার পরিস্থিতি খারাপ, এখানে কাজ করুন। এভাবে সচেতন বলে আমরা জনগণের আস্থা পাই। জয়ী হয়ে আজকে পরপর তিন বার ১৫ বছর আমরা সরকার গঠন করতে পেরেছি।’
এ সময় ওয়েজবোর্ড সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে গণমাধ্যম মালিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের জন্য সার্ভিস দেন। তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও তো দেখতে হবে। আমরা তো ওয়েজবোর্ড দিয়েছি। বেসরকারি টেলিভিশনের মালিকদের দায়িত্ব ওয়েজবোর্ড কার্যকর করা। বেসরকারি টেলিভিশনের মালিকদের বলব, খালি টাকা কামালে হবে না। যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের সার্ভিস দেন, তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও দেখতে হবে।’
এর আগে লিখিত বক্তব্যে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষণ, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে সফর এবং যুক্তরাজ্য সফরের বিষয়ে কথা বলেন প্রধামন্ত্রী। এ সময় জাতিসংঘ অধিবেশনে দেয়া ভাষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছি তা হলো- বিশ্ব শান্তি ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জন এবং অভিন্ন সংকট মোকাবিলায় বিভাজন, সংকীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে একতা, সহমর্মিতা ও বহুপাক্ষিকতার ওপর গুরুত্বারোপ। জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের ফলে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো এসডিজি বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছে। এ অবস্থায়, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের পরও প্রয়োজনীয় সময় পর্যন্ত ওই ক্যাটাগরির জন্য প্রযোজ্য বিশেষ সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাসহ অনেকে।
দীর্ঘ ৩ মাস পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছে পেঁয়াজের এ চালান।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা দুটার টার দিকে মেসার্স এইচকেএ এন্টারপ্রাইজ, সাতক্ষীরা ও মেসার্স সাবাহ এন্টারপ্রাইজ, যশোরের পেঁয়াজ আমদানির এ চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর থেকে আমদানি পেঁয়াজ ছাড় করা প্রতিষ্ঠান রয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল।
তিনি জানান, আপাতত এ চালানে ৩টি ট্রাকে ৯০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৬০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।
সরেজমিনে সোমবার সকালে বেনাপোল কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি মুড়ি কাটা পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৫ টাকা কমে ১০৫ টাকা এবং দেশি শুকনো মানের পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১০ টাকা কমে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভারত থেকে আমদানির খবরে মোকামে দাম কমে যাওয়ার কারণে খুচরা বাজারেও কমেছে দাম বলছেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার নাথ বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এটি অল্প পরিসরে। প্রতিদিন ২০০ জন আমদানিকারক আইপি পাবেন এবং একজন আমদানিকারক ৩০-৬০ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন। সরকারের কাছে অনুরোধ পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। তাহলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমে আসবে।এদিকে আমদানির খবরে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে বলে সাধারণ ক্রেতারা মনে করছেন। বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন জানান আজ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে তিনটি ট্রাকে ৯০ মেট্রিক টন পেয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আরো কিছু পেঁয়াজের গাড়ি ওপারের পেট্রোপো বন্দরে আছে। সেগুলো পর্যায়ক্রমেয বাংলাদেশে ঢুকবে। বন্দর থেকে পেঁয়াজের চালান দ্রুত খালাসের জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকুট ইউনিয়নের ডালপা মৌজার বারেশ্বর বিলে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এতে উর্বর তিন ফসলি কৃষিজমি ধ্বংসের মুখে পড়ছে, সরে যাচ্ছে মাটির উপরের স্তর এবং ক্ষতির শিকার হচ্ছেন আশপাশের জমির মালিক ও স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বারেশ্বর বিলে বর্তমানে দুটি ড্রেজার গর্ত সক্রিয় রয়েছে, যেগুলো প্রায় ২০০ গজ অন্তরে অবস্থিত। প্রতিটি গর্ত প্রায় ৩০০ শতক জমি নিয়ে খনন করা হয়েছে। এর ফলে মোট প্রায় ৬০০ শতক জমির স্বাভাবিক গঠন সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। একই সঙ্গে বিলের পানি ধারণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থায় মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে পাশের কৃষিজমিতেও।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ড্রেজার ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন ও নাসির সরকার দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে এ বিলে ড্রেজার চালিয়ে মাটি উত্তোলন করে আসছেন। প্রশাসনের কার্যকর নজরদারি না থাকায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জুনায়দ আহম্মদ বলেন, ‘বাঙ্গরা বাজার থানা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও ড্রেজারের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দ্রুত এসব ড্রেজার স্থায়ীভাবে বন্ধ না করা হলে আমাদের পূর্বপুরুষের জমিগুলো ড্রেজারের গর্তে বিলীন হয়ে যাবে।’
স্থানীয় কৃষকরাও আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, এভাবে অবৈধ ড্রেজার চলতে থাকলে খুব শিগগিরই বারেশ্বর বিলে চাষাবাদ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে কৃষকদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে এবং এলাকার কৃষিনির্ভর অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ড্রেজার ব্যবসায়ী নাসির সরকার বলেন, ‘তিনি প্রায় ১০ বছর আগে ড্রেজার চালাতেন, বর্তমানে আর ড্রেজার পরিচালনা করছেন না।’ ওই স্থানে তিনি একটি ফিসারিজ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও দাবি করেন। ড্রেজার পুনরায় স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আশপাশের জমির মালিকদের আপত্তি ও অভিযোগ থাকায় আপাতত সেখানে আর ড্রেজার বসানো হবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর কোরবানপুর এলাকায় ইতোমধ্যে ২৫-৩০ বার অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযানে যাই। ড্রেজারগুলো বিলের মাঝখানে থাকায় অপরাধীদের পাওয়া কঠিন হয়, তাই আমরা ড্রেজার অপসারণ করি। ড্রেজারে মাটি উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে জমির মালিকদের নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জাতীয় গণভোটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে অবস্থানরত নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, সমগ্র বাংলাদেশেই মার্কিন নাগরিকদের এই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং একটি জাতীয় গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, নির্বাচনের তারিখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক সমাবেশ এবং বিক্ষোভের মাত্রা ও তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভগুলোও যেকোনো সময় সংঘাতপূর্ণ ও সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় মার্কিন নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস। নির্দেশনায় নাগরিকদের বড় কোনো ভিড় বা বিক্ষোভ সমাবেশ এড়িয়ে চলতে, নিজের আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সজাগ থাকতে এবং পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্যের জন্য স্থানীয় গণমাধ্যমের ওপর নজর রাখতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে পাশে দাঁড় করিয়েই তার পদত্যাগ চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এই দাবি জানান। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, দাবি পূরণ ও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শুধু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নন, ব্যর্থতার দায় নিয়ে আইন উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকেও পদত্যাগ করতে হবে।
ব্রিফিংয়ে সাদিক কায়েম সাম্প্রতিক সময়ে শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার বিচার ও নিরাপত্তার বিষয়ে কঠোর বার্তা দেন। তিনি দাবি করেন, এই হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষ হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী ও সহায়তাকারী সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি খতিয়ে দেখে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা এই হামলাকে সমর্থন দিয়েছে এবং ‘জুলাই বিপ্লবীদের’ হত্যার পথ তৈরি করেছে, সেই ‘কালচারাল ফ্যাসিস্টদের’ সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে ডাকসু ভিপি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় কার্যকর করার দাবি জানান। এছাড়া ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার কথাও বলেন তিনি। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘নিষিদ্ধ লীগের’ বিরুদ্ধে এলাকাভিত্তিক চিরুনি অভিযান শুরু করতে হবে এবং তাদের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের আর কোনো অবহেলা সহ্য করা হবে না বলে তিনি সতর্ক করেন।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সাদিক কায়েম বলেন, এসব দাবি অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন না হলে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি না ঘটলে তিন উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে। এ সময় পাশে থাকা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে ‘সম্পূর্ণ যৌক্তিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং ‘ছোট ভাই’ সম্বোধন করে দাবি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
সাংবাদিক আনিস আলমগীর ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা অভিযোগটি মামলায় রূপান্তর করা হয়েছে। এই মামলায় বর্তমানে ডিবি হেফাজতে থাকা সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডিবি প্রধান জানান, উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়েরকৃত এই মামলায় আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। থানা থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসার পর তার মাধ্যমেই গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিককে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এর আগে রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ধানমন্ডি এলাকার একটি ব্যায়ামাগার থেকে বের হওয়ার সময় আনিস আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতি নিষিদ্ধ দলটির পক্ষে বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোতে অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই সমালোচিত ছিলেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, এখন থেকে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম ডিবি মতিঝিল বিভাগ পরিচালনা করবে।
এর আগে রবিবার রাতে পল্টন মডেল থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এই মামলাটি (মামলা নং-১৯) দায়ের করা হয়। মামলার প্রাথমিক তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পল্টন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইয়াসিন মিয়া জানিয়েছেন, দায়েরকৃত মামলার এজাহারে একজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের ফলে এখন তারাই পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ ও তদন্ত এগিয়ে নেবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গৃহীত পদক্ষেপ ও সার্বিক প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি মনে করেন, কমিশন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব, বিশেষ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং সময়মতো তফসিল ঘোষণার কাজ অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশে নির্বাচনের জন্য একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে। এর বড় প্রমাণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিলকে মেনে নিয়েছে এবং কোনো দলই নির্বাচনের তারিখ বা সময়সূচি নিয়ে কোনো ধরনের আপত্তি তোলেনি। দলগুলোর এই ইতিবাচক মনোভাব এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহই প্রমাণ করে যে, প্রস্তুতি সঠিক পথেই এগোচ্ছে এবং এখন মূল চ্যালেঞ্জ হলো ঘোষিত তফসিলের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন।
এবারের নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজনের বিষয়টি যুক্ত থাকায় স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত বাড়তি কোনো অর্থের আনুষ্ঠানিক চাহিদাপত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে লজিস্টিক সাপোর্ট, বিপুল সংখ্যক জনবল ও আনুষঙ্গিক যা কিছু প্রয়োজন, তার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কমিশন যখনই চাহিদাপত্র পাঠাবে, তা যাচাই-বাছাই করে দ্রুততার সঙ্গে অর্থ ছাড় করা হবে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ধরনের কার্পণ্য বা সীমাবদ্ধতা থাকবে না। গণভোটের জন্য ব্যয় ২০ শতাংশ বাড়তে পারে—এমন গুঞ্জন শোনা গেলেও উপদেষ্টা জানান, কোনো নির্দিষ্ট অংক নিয়ে এখনো প্রস্তাব আসেনি।
নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ততটাই বাড়ানো হবে। ভোটের আগে ও পরে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও কঠোর থেকে কঠোরতর করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সরকার নির্বাচন কমিশনকে একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রশাসনিক ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করবে বলে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিশেষ এই অ্যাম্বুলেন্সটি উড্ডয়ন করে। হাদির সঙ্গে তার দুই ভাইও সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন। এর আগে তাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি বেলা ১১টা ২২ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করে।
গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা হাদির মাথায় গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন। হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়সাল করিম নামের এক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে, যিনি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং সম্প্রতি হাদির নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন।
এই ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, সীমান্ত দিয়ে মানুষ পাচারকারী চক্রের সদস্য এবং মূল অভিযুক্ত ফয়সালের আত্মীয়রা। হামলাকারীরা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে গুঞ্জন থাকলেও পুলিশ জানিয়েছে, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে হাদি জানিয়েছিলেন যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নম্বর থেকে তাকে ও তার পরিবারকে হত্যাসহ নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে পল্টন থানার ডিউটি অফিসার উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) রকিবুল হাসান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে পল্টন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইয়াসিন মিয়াকে।
এদিকে, এই হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, সীমান্ত দিয়ে মানুষ পাচারকারী চক্রের দুজন সদস্য এবং অভিযুক্ত ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও অন্য এক নারী।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এবং তার অবস্থা সংকটাপন্ন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ সোমবার দুপুরেই তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হচ্ছে।
গুলিবিদ্ধ ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। তাকে বহন করতে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অবতরণ করেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে অসপ্রে এভিয়েশনের এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ দুপুরেই হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। সেখানে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাক্সিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি করা হবে।
হাদির চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত দুই দিন ধরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার একাধিক হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বর্তমানে হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় রিকশায় যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন শরিফ ওসমান হাদি। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা তার দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি অভিযোগে দেওয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আজ আপিল বিভাগে আবেদন করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শেখ হাসিনার আমৃত্যু কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আজই আপিল দায়ের করা হবে এবং এরপর ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
এর আগে, গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন। একইসঙ্গে দেশে থাকা তাদের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, তারা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পর্যালোচনা করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজাটিকে মৃত্যুদণ্ডে উন্নীত করার জন্য আপিল করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আইন অনুযায়ী রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যেই এই আপিল দায়েরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে কথোপকথনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এছাড়া আসামিরা অপরাধ দমনে অধীনস্থদের বাধা দেননি, যার পরিপ্রেক্ষিতে রংপুরে আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এসব অপরাধে শেখ হাসিনা ও কামালকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যার বিরুদ্ধেই আজ আপিল করছে প্রসিকিউশন।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় অভিযোগে শেখ হাসিনা ও কামালকে আগেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা ড্রোন, হেলিকপ্টার ও মারণাস্ত্র ব্যবহার করে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর ফলে ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছয়জন এবং সাভারের আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে ফেলার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, এই মামলায় রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে উভয় অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাজেয়াপ্তকৃত সম্পদ জুলাই আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
সাংবাদিক আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মারিয়া কিশপট্ট এবং ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ—এই চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় জুলাই রেভ্যুলশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ বাদী হয়ে এই অভিযোগটি দায়ের করেন। এদিকে একই রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোহাম্মদ রফিক আহমেদ অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং এটি মূলত ‘সাইবার রিলেটেড ইস্যু’। তাই প্রাথমিক সত্যতা যাচাই ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনার সাপেক্ষে এটিকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে দেশে অবস্থান করে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। অভিযোগকারীর দাবি, গত ৫ আগস্টের পর থেকে অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে অংশ নিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচারণা চালাচ্ছেন, যার মূল উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, তাদের এসব বক্তব্য ও অনলাইন কার্যক্রমের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা উসকানি পাচ্ছে এবং রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, সহিংসতা ও অবকাঠামো ধ্বংসের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে।
অন্যদিকে, অভিযোগ দায়েরের রাতেই ধানমন্ডি এলাকার একটি জিম থেকে ব্যায়াম শেষে বের হওয়ার সময় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। ডিবির প্রধান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে এবং এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে দেওয়া বক্তব্যের কারণে সাংবাদিক আনিস আলমগীর বেশ আলোচনায় ছিলেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর একটি সেলফি তুলেছেন, যা সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
জুলকারনাইন সায়েরের পোস্ট অনুযায়ী, হামলাকারী ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এবং তার সহযোগী মোটরসাইকেল চালক আলমগীর হোসেন গত ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর তাদের জাহাঙ্গীর কবির নানকের পিএস মো. মাসুদুর রহমান বিপ্লব এই ভারতীয় মোবাইল নম্বরটি (+৯১৬০০১৩৯৪০**) ফয়সাল করিম মাসুদকে জোগাড় করে দেন বলে বিশেষ গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি জানান।
ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান এই ভারতীয় নম্বর ব্যবহার করে গত রাতে কয়েকটি নম্বরে নিজেদের সেলফি পাঠান, যার মধ্যে একটি ইন্টারসেপ্ট করে ছবিটি পাওয়া যায়। ছবিটি ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে তোলা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে করে এসে চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করা হয়। এই হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তাঁর পরিবার মামলা দায়ের করেছে। এই হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, মানবপাচার চক্রের দুজন সহযোগী, সন্দেহভাজন শুটার ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক এবং বান্ধবী।