প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিথ্যা কথা বলা বিএনপি নেতাদের অভ্যাস। তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না- দেশবাসীর কাছে এটা আমাদের আহ্বান।
যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান এবং যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে শুক্রবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানের শুরুতে তার সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
এ সময় আন্দোলনের নামে বিরোধীরা নির্বাচনটাকে বানচাল করে দিতে চাইছে, এমন অভিযোগ করেও আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন হঠাৎ অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাতামাতি কেন? এখন একটা দেশ এত দ্রুত উন্নতি করেছে, সেটাই মানুষের মাথাব্যথা হয়ে গেল কি না। সেটাকে এখন কীভাবে নষ্ট করা যায়, এ সন্দেহটা আমারও আছে।’
‘প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র থেকে খালি হাতে ফিরেছেন’ বিএনপি মহাসচিবের এমন এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কী মনে করেন জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির এই অভিযোগের কোনো উত্তর দিতে চাই না। আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই, বিএনপির নেতারা একটি মাইক হাতে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে সেটা সবাই জেনে নেন। মিথ্যা বলাটা তাদের অভ্যাস। আর সব কিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টা, এ বিষয়ে যেন দেশবাসী সচেতন থাকে। তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না- দেশবাসীর কাছে এটা আমাদের আহ্বান।’
বিএনপি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে। আর টিকে আছে মিথ্যার ওপর। তাদের শেকড় তো নেই। তারা মিথ্যার ওপর নির্ভর করে। এটাই করবে। এটা তাদের অভ্যাস।’
দিল্লিতে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেলফি এবং পরে ওয়াশিংটনে তার সঙ্গে আবারও সাক্ষাতে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান, এবারের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের কথায় তিনি আর কোনো বার্তা পেয়েছেন কি না। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের কিছু মানুষ নির্বাচন নিয়ে ‘একটু বেশি কথা’ বলে। সে কারণে বিদেশিরাও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার সুযোগ পায়। দুর্ভাগ্য হলো সেটাই, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে, জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করেছে, সেই সময় নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে তাদের (বিদেশিদের) উদ্বেগ দেখিনি …।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমেরিকা হঠাৎ এবং অন্যান্য দেশও আমাদের দেশের নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ কি না প্রশ্ন তোলে। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, যখন মিলিটারি ডিকটেটর ছিল, যখন আমরা সংগ্রাম করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। আমরা সংগ্রাম করেছি ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য। আমরা স্লোগান দিয়েছি- ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর জনগণের ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়া, এটা তো আওয়ামী লীগই করেছে। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ জোট, তারা এক হয়ে আন্দোলন করে, এ জন্য আমাদের বহু রক্ত দিতে হয়েছে। আমি সে কথাটা বলেছি তাদের (যুক্তরাষ্ট্রে)।”
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বারবার একই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তারা বাস্তব অবস্থাটা বোঝে কি না আমি জানি না; কিন্তু তাদের একই কথা, মানে ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে। সেটা আমি স্পষ্ট বলে আসছি। কেন, ভোটের জন্য তো আমরা সংগ্রাম করলাম, রক্ত দিলাম, আমার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার অর্জন করে দিয়েছি। আমাকে ভোট শেখাতে হবে না।’
সফরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে কেউই আলোচনা করেননি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সংশ্লিষ্ট এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি। আমার মনে পড়ে না, এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। কেউ জিজ্ঞেসও করেননি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে অভিজ্ঞতা, এরপর এটা কেউ চায়?’
‘বিএনপি আন্দোলন করছে এটা খুব ভালো’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে করে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হচ্ছে। আমি তো খবর রাখি কোন এমপি কতবার এলাকায় যায়। আগে যারা এলাকায় যেত না কিংবা একটু পিছিয়ে ছিল তারা এখন সক্রিয় হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা জানে নির্বাচন করে জনগণের ভোট পাবে না, তারাই সব জায়গায় ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থেকে এত বেশি টাকা মানি লন্ডারিং, এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে, তারা অবাধে সেই টাকা খরচ করে যাচ্ছে এবং সব জায়গায় একটা প্রচার। এটা একদিক থেকে ভালো। বিএনপি আন্দোলন করলে দেশের সাধারণ মানুষের পকেটে কিছু টাকা আসা। যেই টাকা তারা লুটপাট করে মানিলন্ডারিং করে নিয়ে গিয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে অগ্নিসংযোগ, মানুষ হত্যাসহ এমন কিছু নেই তারা করেনি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে এসে ৭০০ আসনে মনোনয়ন দিয়ে বাণিজ্য করে শেষমেষ তারা সরে গেল।’
তিনি বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বলেন, ‘তারা তো বারবার তারিখ দিয়েই যাচ্ছে। এই তারিখে ফেলে দেবে, ওই তারিখে ফেলে দেবে। তারা আন্দোলন করুক। কিন্তু জনগণের জানমালের কোনো ক্ষতি যদি করা হয়, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজের সমালোচনা করে বলেন, ‘কিছু স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকে বললেন, মেগা প্রজেক্ট আমরা করেছি; কিন্তু দরিদ্রদের জন্য আমরা নাকি কিছু করিনি। এ রকম বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা বাংলাদেশটাকে দেখেনি। তারা ঘরের ভেতরেই আছেন। আর শুধু টেলিভিশনটাই দেখেন। দিন-দুনিয়া তাকিয়ে দেখে না।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দারিদ্র্য বিমোচনসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন সেসব কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকব। ভোটে আসলে আবার করব। দেখি কে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়! সব রেডি করে দিয়েছি, এখন বসে বসে বড় বড় কথা বলে। আমি বাবা-মা সব হারিয়েছি। আমার হারানোর কিছু নেই। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। কত বছর হয়েছে রাজনীতির? একটা স্বপ্ন ছিল- জাতির পিতার, সেটা করেছি, এখন তো কেউ না খেয়ে থাকে না।’
রিজার্ভ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেসব আঁতেল, জ্ঞানীগুণী কথা বলেন। তারা কি জানেন, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি, তখন রিজার্ভ কত ছিল? বাংলাদেশ কোথায় ছিল, কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছি? যতটুকু রিজার্ভ প্রয়োজন, আমাদের আছে। আমাদের ভালো থাকা জরুরি, নাকি রিজার্ভটা দরকার বেশি? যদি বলে, তাহলে রিজার্ভ আগের জায়গায় এনে দিই? বিদ্যুৎকেন্দ্রটেন্দ্র বন্ধ করে দিই।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলেছি, প্রতিদিন একটু করে লোডশেডিং দিতে, যাতে বিদ্যুৎ থাকার গুরুত্বটা বোঝে। আর বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে সবাই। সুবিধাটা নিচ্ছে অর্থশালীরা। এ জন্য নির্দেশনা দিয়েছি, যারা বেশি ব্যবহার করবে, তারা বেশি টাকা দেবে, সেভাবে মূল্য নির্ধারণ করতে।’
সংসদের বাইরের কোনো দলকে বিদেশে বিরোধী দল হিসেবে মনে করা হয় না বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘যাদের নির্বাচন করার মতো সাহস নেই, যারা নির্বাচন করে সংসদে আসতে পারে না, তারা আবার বিরোধী দল কিসের? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হিসেবে বিরোধী দলে যাদের আসন তারাই বিরোধী দল। আর রাস্তায় কে ঘেউ ঘেউ করে বেড়াল, সেটাতে কিন্তু বিদেশে কখনো বিরোধী দল হিসেবে ধরে না। এটা সবার মনে রাখা উচিত।’
বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হবে। বিরোধী দল থাকতে হবে; কিন্তু বিরোধী কে? যাদের সংসদে একটি সিটও নেই তাদের বিরোধী দল হিসাব করে তো রাখা যায় না। বলা যায় না। আমরা তো ওদের খুলে দিয়েছি, তোমাদের যা খুশি কর। কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয় অর্জন করে আস।’
তিনি বলেন, ‘এত টেলিভিশন খুলে দিয়েছি। টকশোতে যে যা পারছেন, টক কথা, মিষ্টি কথা বলে যাচ্ছেন। খুব বলেন, কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সারা দিন কথা বলার পর যদি বলেন আমাদের কথা বলতে দেয় না আর বিএনপির তো মাইক একটা লাগানো থাকে। আর বলেন আমাদের মিটিং-মিছিল করতে দেয়া হয় না। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, আমাদের সঙ্গে কী আচরণ করত? আমরা যদি তার একটা কণাও করতাম তাহলে তো ওদের অস্তিত্বই থাকত না, থাকবে অস্তিত্ব? থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ায় যুদ্ধ, প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। পরিবহন খরচ বেড়ে গেল। আমরা তো তাও খেয়ে-পরে বেঁচে আছি। যান না, আমেরিকায় যান, ইংল্যান্ডে যান। বিভিন্ন দেশে যান সেখানকার মানুষের কী অবস্থা! ওই একটা টমেটো কয়েকশ’ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। একটা রুটি কত দিয়ে কিনতে হয়। সেখানে নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। বেশি জিনিস কিনতে পারবে না।’
সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত খাদ্যমন্দা। এটা কেউ বলবে, কেউ বলবে না। আমি নিজেই তো কয়েকটা দেশ দেখলাম। সেখানে যে কী অবস্থা আমরা জানি। ওয়াশিংটনে তো বাজার-টাজার করে আমরা রান্না করে খেয়ে আসছি। এক পিস মাছ কিনতে বা দুই টুকরা মুরগি কিনতে কত শত টাকা খরচ হয় সেটা তো আমরা নিজে দেখে আসছি; কিন্তু আমরা মানুষের পাশে আছি। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়।’
পাঙ্গাশ মাছ খাওয়া নিয়ে কোনো একজনের বক্তব্যের উদ্বৃতি টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন বলে দিলেন পাঙ্গাশ মাছ খেতে পারেন না। আমি যদি জিজ্ঞাসা করি ২০০৯ বা ১৯৯৬ সালের আগে কে কত পাঙ্গাশ মাছ খেয়েছেন। মানুষ যেখানে আগে নুনভাত খেতে পারত না, এখন অন্তত পাঙ্গাশ মাছের কথা চিন্তা করে। এই মাছ আগে বরিশাল আর যমুনা নদীতে পাওয়া যেত। সারা দেশে পাওয়া যেত না। গবেষণার মাধ্যমে এটি চাষ হয় এবং সারা দেশে পাওয়া যায়। যেখানে মানুষ নুনভাতের জন্য হাহাকার করত। ফেন চাইতো, নুনভাত চাইতো, সেখানে মানুষ মাছ-মাংস-ডিম খাওয়ার জন্য চিন্তা করতে পারে। এইটুকু মানুষের জন্য করতে পারছি, আমি ওইভাবে দেখি। আমাদের যতটুকু সাধ্য ছিল সেটা করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আগে বিদেশে বাংলাদেশ শুনলে সবাই নাক শিটকাতো। এখন আর শিটকায়? বাংলাদেশের নাম শুনলে এখন আলাদা মর্যাদা নিয়ে তাকায়। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। এটা বাসাতে হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দেশের উন্নতি করি।’
এবার জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপ্রার্থীদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করা হচ্ছে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি, তারাই এমপি নমিনেশন পাবে। জনগণের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি এবং তারা কতটুকু জনগণের জন্য কাজ করেছে এবং তাদের আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে, আমরা সেটাই বিবেচনায় নিই। আর নিই বলেই আমরা নির্বাচনে জয়ীও হই এবং মানুষের জন্য কাজও করতে পারি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে সেটাই আমরা বিবেচনা করব এবং আমি প্রতি ছয় মাস পরপর সার্ভে করি। কারও পজিশন খারাপ হলে সরাসরি মুখের ওপর বলে দিই, আপনার পরিস্থিতি খারাপ, এখানে কাজ করুন। এভাবে সচেতন বলে আমরা জনগণের আস্থা পাই। জয়ী হয়ে আজকে পরপর তিন বার ১৫ বছর আমরা সরকার গঠন করতে পেরেছি।’
এ সময় ওয়েজবোর্ড সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে গণমাধ্যম মালিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের জন্য সার্ভিস দেন। তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও তো দেখতে হবে। আমরা তো ওয়েজবোর্ড দিয়েছি। বেসরকারি টেলিভিশনের মালিকদের দায়িত্ব ওয়েজবোর্ড কার্যকর করা। বেসরকারি টেলিভিশনের মালিকদের বলব, খালি টাকা কামালে হবে না। যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের সার্ভিস দেন, তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও দেখতে হবে।’
এর আগে লিখিত বক্তব্যে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষণ, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে সফর এবং যুক্তরাজ্য সফরের বিষয়ে কথা বলেন প্রধামন্ত্রী। এ সময় জাতিসংঘ অধিবেশনে দেয়া ভাষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছি তা হলো- বিশ্ব শান্তি ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জন এবং অভিন্ন সংকট মোকাবিলায় বিভাজন, সংকীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে একতা, সহমর্মিতা ও বহুপাক্ষিকতার ওপর গুরুত্বারোপ। জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের ফলে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো এসডিজি বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছে। এ অবস্থায়, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের পরও প্রয়োজনীয় সময় পর্যন্ত ওই ক্যাটাগরির জন্য প্রযোজ্য বিশেষ সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাসহ অনেকে।
সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে লেখক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন পেন ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ শাখা। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক সামসাদ মোর্তুজা এবং সাধারণ সম্পাদক কবি জাহানারা পারভীন এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৪ ডিসেম্বর কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই আনিস আলমগীরকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয় এবং পরে তাকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়। পেন বাংলাদেশ মনে করে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া একজন সাংবাদিককে এভাবে আটক ও গ্রেপ্তার দেখানো আইনের শাসনের পরিপন্থী এবং অগ্রহণযোগ্য। সংগঠনটি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, অস্পষ্ট ও কঠোর আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে, যা সাংবাদিক মহলে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে এবং জনগুরুত্বপূর্ণ গঠনমূলক বিতর্ক বাধাগ্রস্ত করছে।
আনিস আলমগীরের দীর্ঘদিনের পেশাগত সুনাম ও বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন মতামত প্রদান সাংবাদিকতার অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে সুরক্ষিত। অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমকে দমনে নিরাপত্তা সংস্থা ও আইনের অপব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মুক্ত গণমাধ্যমের কোনো বিকল্প নেই।
লাগেজ না খুলেই ভেতরে থাকা বোমা কিংবা বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্ত করতে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন ‘এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেকশন’ (ইটিডি) মেশিন বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। প্রাথমিক পর্যায়ে ২৫টি অত্যাধুনিক ইটিডি মেশিন কেনা হচ্ছে, যা রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের ৮টি বিমানবন্দরে পর্যায়ক্রমে স্থাপন করা হবে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ইটিডি মূলত বিস্ফোরক উপাদানের অণু শনাক্তে সক্ষম একটি আধুনিক যন্ত্র। এই প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তাকর্মীরা একটি বিশেষ সোয়াব বা কাগজের মাধ্যমে যাত্রীর হাত, কাপড়, জুতা, ব্যাগ কিংবা ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নমুনা সংগ্রহ করে মেশিনে প্রবেশ করান। রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই যন্ত্রটি টিএনটি, আরডিএক্স, পিইটিএন, নাইট্রেট ও পারঅক্সাইডভিত্তিক বিভিন্ন সামরিক ও বাণিজ্যিক বিস্ফোরকের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে। বিস্ফোরকের অস্তিত্ব পাওয়া গেলে মেশিনের স্ক্রিনে তাৎক্ষণিক ‘অ্যালার্ম’ বেজে ওঠে।
বেবিচকের সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান জানান, বিমানবন্দরগুলোর চাহিদা অনুযায়ী এই মেশিনগুলো কেনা হচ্ছে। অতীতে কিছু বিমানবন্দরে এমন মেশিন থাকলেও বর্তমানে সেগুলো অকার্যকর, তাই নতুন করে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণ এক্স-রে স্ক্যানার বা মেটাল ডিটেক্টরে অনেক সময় ক্ষুদ্রতম বিস্ফোরক কণা ধরা পড়ে না, যা ইটিডি সহজেই শনাক্ত করতে সক্ষম।
কর্মকর্তারা আরও জানান, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজার বিমানবন্দরে যাত্রী ও ফ্লাইটের চাপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে যাত্রীদের যাতে ভোগান্তি না হয়, সেজন্য কেবল সন্দেহভাজন ক্ষেত্রেই এই পরীক্ষা চালানো হবে। এতে একদিকে যেমন অপ্রয়োজনীয় তল্লাশি কমবে, অন্যদিকে যাত্রীদের সময় সাশ্রয় হবে। যন্ত্রটি পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মীদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর গুলশান-২ থেকে প্রগতি সরণি পর্যন্ত সড়কটি ‘ফেলানী অ্যাভিনিউ’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২০১১ সালে নিহত কিশোরী ফেলানী খাতুনের স্মরণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এই সড়কের নামফলক উন্মোচন করে।
এই নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ সীমান্ত হত্যা বন্ধ চায়। আমাদের বোন ফেলানী কাঁটাতারে ঝুলন্ত অবস্থায় প্রাণ দিয়েছিল। তার ওপর সংঘটিত নিষ্ঠুরতা প্রতিদিন আমাদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই সড়কের নামকরণ। একইসঙ্গে আমরা বিশ্বের বিবেকের কাছে তুলে ধরতে চাই, সীমান্ত হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ এখনও বাংলাদেশের সীমান্তে ঘটছে। এই কারণেই বর্তমান সরকার সব ধরনের সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে বিজয় দিবসে ফেলানীর নামে এই সড়কের উদ্বোধন করেছে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে নিজেদের সম্মান বজায় রাখার প্রতীক ও প্রতিবাদ হিসেবেই ফেলানীর নামে এই সড়কের (গুলশান-২ থেকে প্রগতি সরণি পর্যন্ত সড়ক) নামকরণ করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের যেকোনও দেশের সঙ্গে কথা বলার সময় আমরা আমাদের মানবিক মর্যাদা ও সম্মান বজায় রেখেই কথা বলবো। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সেই মানবিক মর্যাদার শিক্ষাই দেয়।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম, রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রি. জে. মঈন উদ্দীন, ডিএনসিসি সচিব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এস এম শফিকুর রহমানসহ ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া-মোনাজাতসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে বিএমইউ প্রশাসন। এছাড়া জাতীয় এই দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিএমইউ হাসপাতালের রোগীদের মাঝে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
এছাড়াও বিজয় দিবসকে সামনে রেখে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিএমইউ ক্যাম্পাসে স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও বৃক্ষরোপন কর্মসূচী পালন করা হয়। ওই দিন বিএমইউর বি ব্লকের শহীদ ডা. মিলন হলের সম্মুখ প্রাঙ্গণে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী পালন করা হয় এবং পরিচালক (হাসপাতাল) অফিসের উদ্যোগে বিএমইউ এর টিএসসিতে নিম, লেবু, কাঁঠালসহ ফলজ, বনজ ও ওষুধি বৃক্ষরোপণ করা হয়।
বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহাসিক শ্রেষ্ঠ এই বিজয়ের দিনে আজ ১৬ ডিসেম্বর সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মাননীয় ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ডিনবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানগণ, শিক্ষক, অফিস প্রধানগণ, চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও কর্মচারীবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
সেখানে মাননীয় ভারপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজদ, বিজয় দিবসকে জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মহান বিজয় দিবসের অঙ্গীকার হলো একটি শোষণমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। আমার বৃটিশ শাসন ও শোষণ থেকে, পাকিস্তানী শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত হয়েছি কিন্তু স্বাধীনতা অর্জন এবং বিজয়ের ৫৪ বছর বছরেও আমরা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশ আজো গড়ে তুলতে পারিনি। তাই আমাদের শপথ নিতে হবে একটি শোষণমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার।
জাতীয় এসকল কর্মসূচীতে বিএমইউ এর মাননীয় ভারপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মোঃ আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোঃ নজরুল ইসলাম, প্রক্টর ডা. শেখ ফরহাদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ ইরতেকা রহমান, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) খন্দকার শফিকুল হাসান রতন, পরিচালক (মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ) মোঃ মাসুদ রানা, মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়ের একান্ত সচিব-১ নিউরোসার্জন বিশেষজ্ঞ ডা. মোঃ রুহুল কুদ্দুস বিপ্লব, অতিরিক্ত পরিচালক (সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল) ডা. মোঃ শাহিদুল হাসান বাবুল, উপ-রেজিস্ট্রার (আইন, অতিরিক্ত দায়িত্ব) দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবু হেনা হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ডা. মোঃ আকবর হোসেন, উপ-রেজিস্ট্রার সাবিনা ইয়াসমিন, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়ের একান্ত সচিব ২ মোঃ লুৎফর রহমান, উপ-রেজিস্ট্রার মোঃ ইয়াহিয়া খাঁন, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ হুমায়ুন কবীর, সহকারী পরিচালক মাহামুদুল হাসান, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবু নাজির, কর্মকর্তা শামীম আহম্মদ, মোঃ ইলিয়াস খাঁন, তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন লিটন, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২৫ উদযাপন করেছে। এ উপলক্ষ্যে ঢাকার পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরসহ বাহিনীর সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটসমূহে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: শরীফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়
দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবির সকল স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রত্যুষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী (Major General Mohammad Ashrafuzzaman Siddiqui) অংশগ্রহণ করেন। সকাল ০৭:৪৫ ঘটিকায় বিজিবি মহাপরিচালক মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পিলখানাস্থ ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় বিজিবি’র একটি সুসজ্জিত চৌকষ দল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে পিলখানাসহ সারাদেশে বিজিবি’র সকল ইউনিটে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। পিলখানায় আয়োজিত কেন্দ্রীয় প্রীতিভোজে বিজিবি মহাপরিচালক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ সকল ইউনিটের মসজিদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য, জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং বাহিনীর উত্তরোত্তর অগ্রগতি ও একাত্মতা কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গ এবং বিজিবি’র স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বিজিবি সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের জাদুঘর ও চিড়িয়াখানা বিনা টিকেটে প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। বিজিবি পরিচালিত স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ক্রীড়া অনুষ্ঠান যেমন-টি টুয়েন্টি ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি ও হা-ডুডু টুর্নামেন্ট এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া সকাল ১১.০০ টা থেকে বিকেল ০৪.০০ টা পর্যন্ত হাতিরঝিলে অ্যাস্ফিথিয়েটারে বিজিবি অর্কেষ্টা এবং ব্যান্ডদল কর্তৃক সংগীত ও বাদ্য পরিবেশন করা হয়।
দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরসহ সারাদেশে বিজিবি’র বিভিন্ন স্থাপনায় বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয় এবং সকল ইউনিটের গেইট ও গেইট সংলগ্ন সড়কের আশেপাশের এলাকা ও স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা, বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হয়।
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) মহান বিজয় দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। ডিএসসিসির মাননীয় প্রশাসক জনাব মোঃ মাহমুদুল হাসান, এনডিসি এঁর নেতৃত্বে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ এবং সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নগর ভবনে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবস অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয়।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ রাসেল রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজয় দিবসের সকালে নগর ভবনে আলোচনা, সাংস্কৃতিক, চিত্রাঙ্কন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ডিএসসিসি পরিচালিত সংগীত ও নৃত্য শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে উপর্যুক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ডিএসসিসি প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রশাসক একাত্তর ও চব্বিশের বীর শহিদগণের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, "বাঙালি জাতি মুক্তিকামী-বীরের জাতি, যখনই অন্যায় হয়েছে, বৈষম্য হয়েছে, জুলুম হয়েছে, তখনই বিপ্লব হয়েছে, বিজয় অর্জিত হয়েছে।" অতীতে বার বার বিজয় অর্জিত হলেও বিজয়ের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল সম্পূর্ণভাবে ভোগ করা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বৈষম্যহীন ও বাসযোগ্য নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে একাত্তর ও চব্বিশের ফল ঘরে তুলতে প্রত্যেককে নাগরিক দায়িত্ব পালনের শপথ নিতে হবে।"
এছাড়া, শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে ডিএসসিসি পরিচালিত ৬ টি মসজিদ ও মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি, ডিএসসিসি পরিচালিত মহানগর জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের দুপুরে প্রীতিভোজ পরিবেশন করা হয়েছে। এছাড়া, নগর ভবন জাদুঘর ও কলাবাগান শিশুপার্ক জনসাধারণের জন্য দিনব্যাপী বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়৷
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির ওরফে ‘দাঁতভাঙা কবির’কে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামানের আদালত এই আদেশ দেন।
এর আগে কবিরকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই মামলায় এর আগে মূল অভিযুক্ত ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু ও বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকেও ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে রাজধানীর পল্টন মডেল থানার বক্স কালভার্ট এলাকায় হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দেশে প্রাথমিক চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। মামলার বাদী ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের অভিযোগ করেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করা এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের ষড়যন্ত্র ও নির্দেশনার অংশ হিসেবেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটলেও বর্তমানে তা স্থিতিশীল রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর তার কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপর তার অবস্থার কিছুটা অবনতি হলেও দুপুর ৩টার দিকে তার ভাইয়ের বরাতে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, বর্তমানে তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার সুস্থতার জন্য আরও একটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন, তবে তার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি এখনো সেই অস্ত্রোপচারের জন্য অনুকূল হয়ে ওঠেনি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে এবং সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা এঁকে তা পদদলিত করার কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে রাজাকারদের প্রতীকী ছবিতে জুতা নিক্ষেপ করে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মহান বিজয় দিবসে পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে তারা ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও একদল শিক্ষার্থী তাতে বাধা প্রদান করে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ হোসেন ও ইসলামি ইতিহাস বিভাগের সাদ আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় লাখো মানুষকে হত্যাকারী পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হওয়াটা দুঃখজনক। তারা প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনে বাধার সম্মুখীন হতে হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে ক্যাম্পাসে পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে বাধা দেওয়ার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। রাতভর উপাচার্যের গাড়ি আটকে রাখার পর ভোর পাঁচটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হলে উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বিটিভি নিউজ এবং বাংলাদেশ বেতারে তার এই ভাষণ একযোগে সম্প্রচার করা হবে।
এর আগে দিনের শুরুতে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা। ভোর ৬টা ৫৬ মিনিটে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তাকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং পরে দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মহান বিজয় দিবসে এক অনন্য বিশ্ব রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর উদ্যোগে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার একসঙ্গে জাতীয় পতাকা হাতে স্কাই ডাইভিং করে এই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর সংলগ্ন প্যারেড গ্রাউন্ডে এই ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। এটিই বর্তমানে বিশ্বের বুকে সর্বাধিক পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করার রেকর্ড।
‘টিম বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে ৫৪ জন সাহসী প্যারাট্রুপার এই প্রদর্শনীতে অংশ নেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি সশরীরে প্রত্যক্ষ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রেকর্ড গড়ার এই আয়োজনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে এক মনোমুগ্ধকর ফ্লাইপাস্ট মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিমানবাহিনীর বিভিন্ন বিমান ও হেলিকপ্টার আকাশে কসরত প্রদর্শন করে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই ‘এয়ার শো’ ও বিশ্ব রেকর্ড গড়ার দৃশ্য দেখতে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই আগারগাঁও সংলগ্ন বিমানবন্দরের ফটকে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে উৎসুক জনতা এই বর্ণাঢ্য আয়োজন উপভোগ করেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বিপিএম। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তারা এই শ্রদ্ধা জানান।
প্রথমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী। এরপর পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আইজিপি বাহারুল আলম এবং পরবর্তীতে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জত আলী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) নেতৃবৃন্দও ফুল দিয়ে বীর শহীদদের স্মরণ করেন।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যশোরের শার্শার কাশিপুর বিওপি সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিস্থলে বিজিবি মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই কর্মসূচিতে গার্ড অব অনার প্রদান ছাড়াও বীর শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় ফাতেহা পাঠ, বিশেষ মোনাজাত এবং উপস্থিত সকলের মাঝে তবারক বিতরণ করা হয়।
এ সময় যশোর ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর নূর উদ্দিন আহমাদসহ বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। যশোর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ্ সিদ্দিকী জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের আত্মত্যাগ ও অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় করে রাখতেই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিজিবির পক্ষ থেকে এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।