শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫
১ ভাদ্র ১৪৩২

অবসরে যাওয়া লক্ষাধিক পুলিশ সদস্য রেশন-চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত

বাংলাদেশ পুলিশ
এস এম নূরুজ্জামান
প্রকাশিত
এস এম নূরুজ্জামান
প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০৭

পুলিশবাহিনীতে অবসরে যাওয়া সদস্যদের রেশন ও চিকিৎসা সেবা দেয়া নিয়ে দ্বৈতনীতির কারণে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। ৯৯ ভাগ অবসরপ্রাপ্ত সদস্যই রেশন সুবিধার বাইরে থাকায় এক শতাংশের রেশন প্রাপ্তিতে তাদের দাবি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি বলে মনে করছেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের দুটি সংগঠনের নেতারা। তাই অবসরপ্রাপ্ত শতভাগ সদস্যকে রেশন বরাদ্দের দাবি তুলেছেন তারা।

তিন বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের জন্য রেশন বরাদ্দ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অবসরে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের এই সুবিধা দেয়া হয়। এর ফলে যারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দাবি তুলেছিলেন তারাই এই সুবিধার বাইরে রয়েছেন, সংখ্যার বিচারে যারা ৯৯ ভাগ। তাদের দাবি, এই রেশন সুবিধা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত শতভাগ সদস্যের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে।

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের দুটি সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি ও অনূর্ধ্ব সাব-ইন্সপেক্টর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশন। এই দুই সংগঠনের নেতাদের দাবি, স্বাধীনতার পর থেকে ২০২০ সালের আগ পর্যন্ত গত ৪৮ বছরে অবসরে যাওয়া লক্ষাধিক পুলিশ সদস্য অবসরকালীন রেশন সুবিধা ও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই বিষয়টি আবারও বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানিয়েছে এই দুটি সংগঠন। এই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির কাছে লিখিত অনুরোধ করেছেন উভয় সংগঠনের নেতারা।

অবসরে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা দৈনিক বাংলাকে জানান, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য আজীবন রেশন প্রদানের বিষয়টিও আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। আমরা সেটারও ব্যবস্থা করে দেব।’ তবে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর সাড়ে তিন বছর পার হয়ে গেলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে পুলিশ সপ্তাহ চলাকালে বিষয়টি নিয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সে সময় অবসরপ্রাপ্তদের রেশন ও চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য তিনি আবারও নির্দেশ দেন।

সাবেক পুলিশ সদস্যরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর অর্থ মন্ত্রণালয় তড়িঘড়ি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুলিশ সদর দপ্তরে সম্ভাব্য খরচের পরিমাণ জানতে চেয়ে চিঠি দেয়। পুলিশ সদর দপ্তর দেশের সব পুলিশ সুপারের মাধ্যমে সম্ভাব্য খরচসংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান চালায়। পুলিশ সদর দপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অবসরকালীন পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা ও খরচের হিসাব পাঠায়।

কর্মকর্তারা আরও জানান, ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের রেশন দেয়ার নির্দেশ দেয়; কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন দেখে সারা দেশের কর্তব্যরত ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা হতাশ হয়ে পড়েন। জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয় যে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে যেসব পুলিশ সদস্যরা অবসরে গিয়েছেন, কেবল তাদের প্রত্যেক পরিবারের দুজন সদস্য রেশন সুবিধা পাবেন। এ ক্ষেত্রে দুজনের জন্য ২০ কেজি চাল, ২০ কেজি আটা, দুই কেজি চিনি, সাড়ে চার লিটার তেল ও দুই কেজি ডাল বরাদ্দ ঘোষণা করা হয়। এই আদেশ কার্যকর হওয়ার পর তা সংশোধন করে আরেক আদেশ জারি করা হয়। সেখানে চিনি ও ডালের পরিমাণ কমিয়ে দুই কেজির পরিবর্তে ১ কেজি নির্ধারণ করা হয়।

ফলে, আদেশে গত সাড়ে তিন বছরে অবসর যাওয়া পুলিশ সদস্যরাই কিছুটা উপকারভোগী হলেও এর আগে অবসরে যাওয়া লক্ষাধিক সদস্যের ভাগ্যে কিছু্ই জোটেনি।

২০২০ সালের আগে অবসরে যাওয়া একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, একই পুলিশ বিভাগে এমন দ্বৈত নিয়ম চালু করায় ২০২০ সালের আগে ও পরে অবসরে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বৈষম্য ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বৈষম্যের কারণে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যগণ বিশেষ করে কনস্টেবল ও এসআই পদর্মযাদার পুলিশ সদস্যরা একদিকে যেমন রেশনসুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে পুলিশ হাসপাতালে সার্বজনীন চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

অনুর্ধ্ব সাব- ইন্সপেক্টর অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. আনিচুর রহমান হাওলাদার দৈনিক বাংলাকে বলেন, পুলিশ বাহিনীতে আমরা কম বেতনে চাকরি করছি। কম দামের রেশন পেয়েছি। পেনশনও কম পেয়েছি। এজন্য আমরাই সুযোগ সুবিধার দাবি করছি দীর্ঘদিন ধরে। অথচ আমাদেরকেই বঞ্চিত করে অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে লক্ষাধিক সদস্য মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

তিনি আরও বলেন, একই বাহিনীতে এমন দ্বৈত নিয়ম বাতিল করে সুবিধাবঞ্চিত সকল অবরসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের অবসরকালীন পারিবারিক পেনশনের দাবিতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছি।

পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা জানান, ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা প্রায় এক লাখ। এদের মধ্যে ৯০ হাজার সদস্যই হলেন কনস্টেবল থেকে এসআই পদ মর্যাদার সদস্যরা। যারা কর্মজীবনে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও পরবর্তী যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন, দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, জঙ্গি কার্যক্রম ও অবৈধ মাদক নির্মূল ক্ষেত্রে অকুতোভয় দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে সর্বপ্রথম পুলিশই পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে এদেরই অনেক সদস্য নিহত হন।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের একটি অংশের রেশন চালু করায় একই বিভাগে দ্বৈতনীতির সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অবসরে যাওয়া সিংহভাগ সদস্যই রেশন পাচ্ছেন না, সংখ্যার বিচারে যারা ৯৯ ভাগ। অন্যদিকে মাত্র ১ ভাগ অবসরপ্রাপ্ত সদস্য রেশন সুবিধা পাচ্ছেন।

বিষয়:

চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেল ১২ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছবে

বছরে সাশ্রয় হবে ২৫০ কোটি টাকা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দেশের জ্বালানি পরিবহন খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে। এই প্রথম চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় সরাসরি পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পাঠানোর প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে তেল সরবরাহকালে জিরো সিস্টেম লস অর্জিত হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।

সফল প্রাক-কমিশনিংয়ের পর আজ শনিবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গার গুপ্তাখালে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডেসপাস টার্মিনালে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেল পরিবহণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বার্ষিক খরচ হয় প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা। একই পরিমাণ তেল পাইপলাইনে সরবরাহ করতে খরচ হবে কেবল ৯০ কোটি টাকা। এই হিসাবে বছরে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া সিস্টেম লস এবং চুরি ঠেকানোর মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তবে কর্মকর্তা বলছেন বছরে সাশ্রয়ের পরিমাণ বেড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে।

বিপিসির বাস্তবায়নে এবং সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের নির্মাণে ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন চট্টগ্রাম থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। পাইপলাইনটি ২২টি নদী ও খাল অতিক্রম করেছে এবং এর সঙ্গে নয়টি স্টেশন ও আধুনিক ডিপো নির্মিত হয়েছে।

সূত্র জানায়, আজ শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকে এই পাইপলাইন ব্যবহার করে তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার বরুড়া হয়ে জ্বালানি তেল যাবে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল এবং ঢাকার ফতুল্লায়।

কুমিল্লার বরুড়ায় স্থাপন করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ অটোমেটেড ডিপো। এই ডিপো থেকে চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সন্নিহিত অঞ্চলের প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে। যা এখন নৌপথে চাঁদপুরে পাঠানো হয়ে থাকে।

এই ডিপোতে জ্বালানি তেল গ্রহণ এবং সরবরাহ সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে। তেলের ওজন, তাপমাত্রা, সরবরাহ সবই পরিচালিত হবে কম্পিউটারাইজড প্রযুক্তিতে।

২০১৮ সালে ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকায় অনুমোদিত এ প্রকল্প করোনা পরিস্থিতিতে বিলম্বিত হয়ে চলতি বছরের মার্চে শেষ হয়েছে, বাড়তি খরচ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, দেশের চাহিদার ৭০ লাখ টন জ্বালানির অন্তত ৩০ লাখ টন ব্যবহৃত হয় ঢাকা ও কুমিল্লা অঞ্চলে। এসব জ্বালানির বেশির ভাগ বেসরকারি অয়েল ট্যাংকারের মাধ্যমে নৌপথে পরিবাহিত হয়। এতে কোটি কোটি টাকার তেল চুরিসহ নানা ধরনের অনিয়ম ঘটে। ট্যাংকারে জ্বালানি তেল পরিবহণের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ সিস্টেম লস বিপিসি মেনে নেয়। বছর শেষে এটা বিশাল অঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়। সিস্টেম লস কিংবা তেল চুরির এই লোকসান থেকে জ্বালানি তেল সেক্টরকে বাঁচাতেই মূলত চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়।

পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ মেট্রিকটন এবং বছরে সর্বোচ্চ ৫ মিলিয়ন মেট্রিকটন তেল পরিবহন সম্ভব হবে। আগে নৌপথে ট্যাংকারে নিতে লাগতো ৪৮ ঘণ্টা, এখন লাগবে মাত্র ১২ ঘণ্টা। ফলে বিপিসির বার্ষিক পরিবহণ খরচ ৩২৬ কোটি টাকা থেকে নেমে আসবে মাত্র ৯০ কোটি টাকায়—সাশ্রয় হবে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা। পাশাপাশি সিস্টেম লস ও চুরি প্রায় শূন্যে নেমে আসবে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, যেখান থেকে পুরো পরিবহণ প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং হবে।

প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক ইউএনবিকে জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলকভাবে ইতোমধ্যে পাঁচ কোটি লিটার ডিজেল কোনো ক্ষতি ছাড়াই পরিবহণ সফল হয়েছে। তিনি বলেন, এখন রিজার্ভার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডিপোতে দ্রুত ও নিরাপদে তেল পৌঁছে দেওয়া যাবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ হাসান উজ-জামান।

সূত্র: ইউএনবি


অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির বন্ধনকে অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর: প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেয়া বাণীতে বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রীতির এই বন্ধনকে অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, সমাজে বিদ্যমান শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কেউ যেন নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে।

শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এ সব কথা বলেছেন। তিনি এ সময় ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ উপলক্ষ্যে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধর্মাবতার শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ‘শুভ জন্মাষ্টমী’ হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণ আজীবন ন্যায়, মানবপ্রেম ও শান্তির বাণী প্রচার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যেখানেই অন্যায়-অবিচার দেখেছেন, সেখানেই অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন।

তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্য। আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে উল্লেখ করে তিনি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে ভরপুর বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান।


খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১৫ আগস্ট, ২০২৫ ১৯:১১
বাসস

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আজ গণতন্ত্রের মা, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন। তিনি এ দিনটি উদযাপন করেন না, তবে দল থেকে সারাদেশে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আজ বিকেলে ম্যাডামের (বেগম জিয়া) জন্য ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন। তাঁর কর্মকর্তারা এটি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনে পৌঁছে দেন।

বিকেল প্রায় ৪টায় প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় গিয়ে তাঁর একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারের হাতে ফুলের তোড়াটি হস্তান্তর করেন।

এ সময় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলায়েত হোসেন, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এবং চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত উইংয়ের কর্মকর্তা মাসুদ রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে চীনের রাষ্ট্রদূতের কার্যালয় থেকেও বিএনপি চেয়ারপার্সনের জন্য জন্মদিনের ফুলের তোড়া পাঠানো হয়।

বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। এ বছর তিনি ৮১ বছরে পা রেখেছেন।


নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে: সালাহউদ্দিন

* যারা বয়কটের চেষ্টা করবে তারা রাজনীতি থেকে মাইনাস হয়ে যাবে * গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় কোনো উপদেষ্টা জড়িত কিনা, স্পষ্ট করা দরকার
আপডেটেড ১৫ আগস্ট, ২০২৫ ০১:২২
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে, যারা বয়কটের চেষ্টা করবে তারা রাজনীতি থেকে মাইনাস হয়ে যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। যারা বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছে যে, দাবি পূরণ না হলে, সংস্কার পূর্ণাঙ্গ না হলে, বিচার পূর্ণাঙ্গ না হলে নির্বাচন হবে না, এগুলো মাঠের বক্তব্য।’

তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করে তার ভাষণে বলেছেন যেসব সংস্কার প্রস্তাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলো পরবর্তী নির্বাচিত জাতীয় সংসদে বাস্তবায়নের সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই প্রতিশ্রুতি আমরাও দিয়েছি যে, আমরা জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করব।’

‘এখন প্রশ্ন কারা নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চায়, অথবা বিলম্ব হোক বা অনিশ্চিত হোক সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। অথবা নির্বাচন না হোক সেটা চায়। জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে, এটা বলা যায়,’ বলেন সালাহউদ্দিন।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘তাদের মধ্যে যেন এই রিয়ালাইজেশন আসে যে একটা গণতান্ত্রিকভাবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ এবং বিশ্বাসযোগ্য একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়া এই জাতির সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।’

‘রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে অনেকেই হয়তো সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে তারা এসব বক্তব্য দিচ্ছে কিনা, এ প্রশ্নও বাজারে আছে। কিন্তু আমি মনে করি সেটা চাপের কোনো বিষয় নয়,’ যোগ করেন তিনি।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে আমাদের নির্বাচনী কৌশল ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছি। আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের সঙ্গেই জোট করব যাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, যারা আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে চাই, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি যেটা হয়েছে সেটাকে ধরে রাখতে চাই। তবে এখানে আমরা বলেছি যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আমাদের নির্বাচনে জোট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।'

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমি নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় দেখি না। যারা আগামী নির্বাচনকে বয়কট করার চেষ্টা করবে ডাইরেক্টলি বা ইনডাইরেক্টলি, তারা জাতীয় রাজনীতি থেকে মাইনাস হয়ে যাবে।’

‘বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, তার মধ্যে এক নম্বর অধিকার ছিল ভোটের অধিকার ফিরে পায়। এখন সেই পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে। সেই ভোটের অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেসব রাজনৈতিক দল নিরুৎসাহিত করবে, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত,’ বলেন তিনি।

সালাহউদ্দিন আরো বলেন, গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় উপদেষ্টাদের কেউ জড়িত কি না, তা জনগণের সামনে তুলে ধরা দরকার। তদন্ত না হলে তাদের বিষয়ে আরও প্রশ্ন উঠবে। তিনি এই ঘটনার বিস্তারিত ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানান।


খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ

সারাদেশে বিএনপির দোয়া মাহফিল, কেক কাটা নিষেধ
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ। বাবা এস্কান্দর মজুমদার ও মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। পৈতৃক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও খালেদা জিয়ার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে, বাবার কর্মস্থলে।

চেয়ারপারসনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয় ও মসজিদে দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে নেতাকর্মীদের কেক কাটতে নিষেধ করা হয়েছে।

ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিএনপি এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সবপর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিলাদ ও দোওয়া মাহফিলগুলোতে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

১৯৮১ সালের ৩০ মে স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে নাম লেখান খালেদা জিয়া। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে তিন দফা বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া।


আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের রোডম্যাপ: ইসি সচিব

আপডেটেড ১৫ আগস্ট, ২০২৫ ০২:০৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী সপ্তাহে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহে নির্বাচনী রোডম্যাপ দিতে পারব। এতে আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাবেন।’

আগামী সপ্তাহে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গেও নির্বাচন কমিশন আলোচনা করবে উল্লেখ করে ইসি সচিব জানান, পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য ৩১৮টি আবেদন পাওয়া গেছে, যা বর্তমানে পর্যালোচনাধীন।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ২২টি রাজনৈতিক দলের আবেদন প্রাথমিকভাবে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হবে প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাইয়ের জন্য। পাশাপাশি আরও কিছু বিষয় রয়েছে যা নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা ও আলোচনা করা হচ্ছে এবং এসব বিষয়ে ধাপে ধাপে গণমাধ্যমকে অবহিত করা হবে। প্রবাসী ভোটারদের ভোট দেওয়ার পদ্ধতি নিয়েও গতকাল বৃহস্পতিবার আলোচনা হয়েছে বলে জানান ইসি সচিব। এ বিষয়ে কোথায়, কোন পদ্ধতিতে এবং কত দিনের মধ্যে কার্যক্রম শেষ করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনার পর ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।

প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক দিন বা দুদিন গণমাধ্যমের সঙ্গে তিনি এবং নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অব.) কথা বলবেন বলে সচিব জানান।

নির্বাচনী রোডম্যাপে কী কী থাকবে-এমন প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, রোডম্যাপ প্রকাশের সময়ই তা জানানো হবে এবং এতে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপ, আইন-বিধি সংশোধনসহ যাবতীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

উল্লেখ্য, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এর অংশ হিসেবে গত ৬ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠিয়ে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির রমজানের আগেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বলেছে। এ চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সরকারের অনুরোধের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে।


তামাকমুক্ত রেল পরিষেবায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় ২২ কর্মচারী পুরস্কৃত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ধূমপান ও তামাকমুক্ত রেল পরিষেবা গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ২২ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে পুরস্কৃত করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
বৃহষ্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর রেল ভবনে “বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ” শীর্ষক প্রকল্পের উদ্যোগে এক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে ধূমপান ও তামাকমুক্ত রেল পরিষেবা গড়ে তুলতে রেল স্টেশনে তামাক সচেতনতা ও প্রতিরোধ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য আরএনবি ও জিআরপি (পুলিশ) এবং রেলওয়ের ২২ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে সম্মাননা পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে রেলওয়ে কর্মীদের উৎসাহিত করে দেশের সকল স্টেশন ও ট্রেনকে ধূমপান ও তামাকমুক্ত করার প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আয়োজকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন-
মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার, উপসচিব (বাজেট অধিশাখা), রেলপথ মন্ত্রণালয়; মোঃ জাকির হোসেন, পরিচালক ট্রাফিক (পরিবহণ), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোঃ আনসার আলী, উপ-পরিচালক (টিসি), বাংলাদেশ রেলওয়ে; গৌতম কুমার কুণ্ডু, বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (লালমনিরহাট), বাংলাদেশ রেলওয়ে; ফারহান মাহমুদ, এডিসিও (চট্টগ্রাম), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোহাম্মদ আমিনুল হক, এসিও-১ (ঢাকা), বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে “বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ” শীর্ষক প্রকল্পের বেজলাইন ও এন্ডলাইন সার্ভের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন ও এর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্ক এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আফজাল হোসেন। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা/কর্মচারীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার যাত্রীসেবার মানের ওপর যেসব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে অনুষ্ঠানে তার বিস্তারিত আলোচনা করেন তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের অপব্যবহার রোধে ভূমিকা পালনকারী সাবেক ও বর্তমান সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তারা। তাঁরা রেলওয়ের প্রতিটি স্টেশন, প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর নজরদারি এবং আইন প্রয়োগের পাশাপাশি যাত্রী ও কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক আচরণ গড়ে তোলার ওপর তাঁরা গুরুত্বারোপ করেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, “রেলপথ জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চায়। তাই ধূমপানমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে আমরা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখাবো না।”
অনুষ্ঠানে সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ধূমপান ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।


হাওর অঞ্চলে বালাইনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক


হাওর অঞ্চলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ রক্ষায় কৃষিখাতে বালাইনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ সীমিতকরণে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় কমিটি'র সভা আজ বিকালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা হাওরের পরিবেশগত ভারসাম্য, মাছের প্রজননক্ষেত্র ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং বিকল্প কৃষি চর্চা প্রসারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বক্তারা বলেন, কৃষি ও পশুপালনে ব্যবহৃত বালাইনাশক মাছসহ জলজ বাস্তুতন্ত্র, প্রাণিসম্পদ ও মানবস্বাস্থ্যে বহুমাত্রিক ঝুঁকি তৈরি করছে।
বৃষ্টি ও বাতাসের মাধ্যমে বালাইনাশক নদী, খাল ও পুকুরে প্রবেশ করে মাছ মেরে ফেলছে, প্রজনন হ্রাস, খাদ্যশৃঙ্খল ব্যাহত ও পুষ্টিমান কমিয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশে মাছ, দুধ, ডিম ও মাংসে এ ধরনের রাসায়নিকের অবশিষ্টাংশ শনাক্ত হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

সভায় কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রদান, স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে বালাইনাশক ব্যবহারের পর্যবেক্ষণ জোরদারকরণের গুরুত্বারোপ করা হয়। বক্তারা এসময় শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি এবং এর প্রতিকার নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

হাওর অঞ্চলে বালাইনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে স্বল্পতম সময়ে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরিপূর্বক সমন্বিতভাবে তা বাস্তবায়নের জন্য সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো তোফাজ্জেল হোসেন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড.ফাহমিদা খানম, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দা নওয়ারা জাহান, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো রেজা- উন- নবী, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মো মোখতার আহমেদ, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো জিয়াউদ্দীন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শাহীনা ফেরদৌসী, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো আবদুর রউফ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অনুরাধা ভদ্র, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান পানি ব্যবস্হাপক মো মাসুদ করিম, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক মো রোকন- উল- হাসান, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক রাজিনারা বেগম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী রফিকুল ইসলাম, কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সাংগঠনিক সম্পাদক প্রফেসর ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান,বারসিকের সমন্বয়ক মো জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যান্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।


উপদেষ্টা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

উপদেষ্টা পরিষদের সভা আজ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করেন।


প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাদের কোটা বাতিল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকারের গত ১ বছরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে এসেছে বড় পরিবর্তন। বৈষম্যমূলক প্লট-ফ্ল্যাট কোটাব্যবস্থা বাতিল, দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত, শহীদ পরিবার ও নিম্ন আয়ের সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্রকল্পসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

গতকাল বুধবার এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এ তথ্য জানায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

প্রেস রিলিজ অনুযায়ী, রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ বিধিমালা সংশোধন করে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর জন্য নির্ধারিত কোটা বাতিল করা হয়েছে। একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে প্লট বা ফ্ল্যাট দেওয়ার সুযোগও বন্ধ হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ মেয়াদে রাজউকের বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে হাইকোর্টের নির্দেশে তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত করছে। ধানমন্ডিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে পাওয়া ১২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের বরাদ্দ বাতিল করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে শেরেবাংলা নগরের ১৭ দশমিক ৪৭ একর জমি জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরের জন্য হস্তান্তর করছে মন্ত্রণালয়। শাহবাগে একটি ও জেলাপর্যায়ে আটটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শেষ, অন্য ৫৫ জেলায় কাজ চলছে। শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের জন্য মিরপুরে ২ হাজার ৩৮০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায়। মন্ত্রণালয় কর্তৃক আজিমপুরে নিম্ন আয়ের সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৮৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জনস্বার্থবিরোধী পাঁচটি প্রকল্প বাতিল করে ৪২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে মন্ত্রণালয়।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষ অডিটে ২০০৯ থেকে ২০২৪ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৮২টি অনিয়ম চিহ্নত করা হয়েছে। অনিয়মে জড়িত ১১ কর্মকর্তা বরখাস্ত ও রূপপুর গ্রিন সিটি প্রকল্পে অভিযুক্ত ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। এছাড়া বিগত ১ বছরে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত আরও কর্মক্রম সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে প্রেস রিলিজে।


‘পুলিশের পোশাক পরা লোকদের হিন্দিতে কথা বলতে শুনি’

আপডেটেড ১৪ আগস্ট, ২০২৫ ১১:০৬
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় চানখাঁরপুলে ৬জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এক সাক্ষী দাবি করেছেন, পুলিশের পোশাক পরা লোকদের ‘হিন্দি ভাষায়’ কথা বলতে শুনেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় নাজিমুদ্দিন রোডের শহীদ আহম্মেদ এ দাবি করেন।

গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনালে দুটি ঘটনায় মোট ৩জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এর মধ্যে গত বছরের ৫ অগাস্ট চানখাঁরপুলে মো. ইয়াকুব (৩৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় সাক্ষ্য দেন তার মা রহিমা আক্তার ও শহীদ।

ইয়াকুব ছিলেন নিউমার্কেটের একটি প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারি ম্যান। তিনি নাজিমুদ্দিন রোডের শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজের পাশে মিলি গলির বাসিন্দা।

এ ছাড়া ওইদিন সেখানে নিহত ইসমামুল হকের (১৭) ভাই মো. মহিবুল হক ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন।

এদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন বি এম সুলতান মাহমুদ, মিজানুল ইসলামসহ কয়েকজন প্রসিকিউটর।

ইয়াকুব নিহত হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার মা রহিমা বলেন, ‘আমার ছেলে ৫ অগাস্ট চানখাঁরপুল নাজিমুদ্দিন রোডে আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলি লাগার বিষয়ে শুনে আমি চিৎকার করে বাসা থেকে বের হয়ে গলিতে যাই। মহল্লার লোকজন আমাকে যেতে দেয়নি। আমাকে জানায় আমার ছেলে সুস্থ আছে। তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেসময় আমার ছেলের বয়স ছিল ৩৫ বছর। প্রতিবেশীরা কান্নাকাটি শুরু করলে আমার সন্দেহ হয় আমার ছেলের কিছু হয়েছে।

‘বেলা আনুমানিক ২টার দিকে দেখি আমার ছেলের লাশ খাটিয়ায় করে গলির ভিতর নিয়ে আসে। শহীদসহ (প্রতিবেশী) অনেকেই ছিল। ছেলের শরীর থেকে তখনও খাটিয়া বেয়ে অনেক রক্ত পড়ছিল। তারপর কাপড় সরিয়ে দেখি পেটে গুলি লেগে পছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে, রক্ত পড়া থামছে না।’

তিনি বলেন, তিনি পরবর্তীতে টিভি নিউজ, ভিডিও এবং বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেন যারা গুলি করেছে তারা ছাপা কাপড়ের পোশাক পরিহিত ছিল। পুলিশের গুলিতে তার ছেলে পড়ে যান। প্রতিবেশী শহীদ এই দৃশ্য তার মোবাইলে ধারণ করেন।

রহিমা তার ছেলের হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং নির্দেশদাতা সবার বিচার চান। সেসময় তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম বলেন নির্দেশদাতা হিসেবে।

তার পরে সাক্ষ্য দেন তাদের প্রতিবেশী শহীদ আহম্মেদ (৪০)।

তিনি বলেন, ‘আমি, আমার ভাতিজা ইয়াকুব, আমার ছেলে সালমান, এলাকার রাসেল, সুমন, সোহেলসহ আরও অনেকে বেলা আনুমানিক ১১টা থেকে ১১.৩০টার মধ্যে গণভবনের উদ্দেশে রওনা দিই। আনুমানিক ১১.৩০টার সময় আমরা চানখাঁরপুল এলাকায় পৌঁছলে, সেখানে হাজার হাজার লোক চারদিক থেকে জড়ো হচ্ছিল।

‘তখন দেখলাম চানখাঁরপুল মোড়ের উল্টা পাশে অনেক পুলিশ, ছাপা পোশাকধারী পুলিশ ছিল। পুলিশের পোশাক পরিহিত লোকদের হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুনি।’

তিনি বলেন, পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং তাদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি করে। ওই সময় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। আবার তারা সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি করে।

‘আমার পাশের একজনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে আমি সরাচ্ছিলাম। তখন আমাকে একজন বলে আপনার ভাতিজা ইয়াকুবের গায়ে গুলি লেগেছে। আমি ওই ছেলেকে আরেকজনের কাছে রেখে আমার ভাতিজার কাছে যাই। আরও দুইজনসহ ভাতিজাকে অটোরিকশায় করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন যে ইয়াকুব মারা গেছে।’

শহীদ বলেন, পরে জেনেছেন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। ডিএমপির মো. ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদের উপস্থিতিতে কনস্টেবল সুজন, নাসিরুল, ইমাজ গুলি করেছিল। আরো অনেকেই ছিল।

এরপর সাক্ষ্য দেন মো. মহিবুল হক (২১), তার বাড়ি চট্টগ্রামে।

তিনি বলেন, ‘আমি সেদিন বাড়িতে ছিলাম। আমার ভাই ইসমামুল হক ঢাকা চানখাঁরপুলে শহীদ হয়েছে। দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে আমার ভাই শহীদ ইসমামুলের মোবাইল থেকে জনৈক ব্যক্তি আমাকে কল করে জানায় যে আমার ভাই পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি আছে।’

ইসমামুল চকবাজার গফুর সওদাগরের দোকানে কাজ করতেন জানিয়ে মুহিবুল বলেন, ‘আমি তাকে ফোন করলে তিনি হাসপাতালে গিয়ে ইসমামুলের খোঁজ খবর নেন। যান চলাচল বন্ধ থাকায় আমরা সেদিন ঢাকায় আসতে পারিনি। পরের দিন সকাল বেলা আমি, আমার আম্মা দুই আত্মীয়কে নিয়ে ঢাকায় আসি। ঢাকায় এসে জানতে পারি, আমার ভাইকে মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।’

‘আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমরা গফুর সওদাগরকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের সামান্য কথাবার্তা হয়। সে সিসিইউতে ছিল। তার অবস্থার অবনতি হলে রাত ১০টার দিকে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। ৭ তারিখ সকালে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেদিন বিকেল ৪টার দিকে সে ইন্তেকাল করে।’

চিকিৎসকরা তার ভাইয়ের ময়নাতদন্ত করেননি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে ইসমামুলের লাশ নিয়ে চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে যাই। ঢাকা থেকে সন্ধ্যা ৬টায় রওনা দিয়ে রাত ২টায় চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে পৌঁছি।’

পরদিন জানাজা শেষে ইসমামুলের মরদেহ নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে মহিবুল ট্রাইব্যুনালকে জানান।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, এডিসি আক্তারুল ইসলাম, ইমরুল এবং আরশাদ এর নির্দেশে সুজন হোসেন, নাসিরুল ইসলাম, ইমাজ হাসান ইমনসহ আরও অনেকে গুলি করেছেন বলে তিনি তার সাক্ষ্যে বলেন।

ভাইয়ের হত্যাকারী এবং নির্দেশদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন মহিবুল।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ অগাস্ট চাঁনখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থী শহীদ আনাসসহ ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গত ১১ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেয়। নথিপত্র পর্যালোচনা করে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ২৫ মে ফরমাল চার্জ আকারে তা দাখিল করেন।

অভিযোগ আমলে নিয়ে সেদিন ট্রাইব্যুনাল হাবিবুর রহমানসহ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিরা নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর ‘প্রাণঘাতী’ অস্ত্র ব্যবহার করে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে।

তদন্ত সংস্থা এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ট্রাইব্যুনালে তদন্ত সংস্থার দেওয়া এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার। তদন্ত করতে সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন।

তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১টি রিপোর্ট, ২টি অডিও, বই ও রিপোর্ট ১১টি এবং ৬টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ মামলায় গত সোমবার সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম চানখাঁরপুলের ঘটনাকে পদ্ধতিগত অপরাধ হিসেবে তুলে ধরেন। সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। গত মঙ্গলবার দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।


সাদাপাথরে লুটপাট, পরিদর্শনে দুদক টিম

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে লুট হওয়া পাথর লুটের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১৩ আগস্ট) ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরে পরিদর্শনে যায় সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয় দুদকের উপপরিচালক নাজমুস সাদাত রাফির নেতৃত্বাধীন টিম। দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধুদের যোগসাজশে সাদাপাথর এলাকার পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। ওই পর্যটন এলাকায় দুদকের সিলেট জেলা সমন্বিত কার্যালয় অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযান শেষে এ নিয়ে বিস্তারিত জানানোর আশ্বাস দেন তিনি।

প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ধলাই নদের উৎসমুখে ভেসে আসা পাথরের বিশাল স্তুপের কারণে প্রায় পাঁচ একর জায়গা জুড়ে সিলেটের ভোলাগঞ্জ পর্যটনের স্থান হিসেবে গত কয়েক বছরে বেশ সাড়া ফেলেছিল। তবে গত এক বছরে সে জায়গাটি থেকে অবাধে পাথর লুটের ঘটনায় মনোরম সৌন্দর্যের এই স্থানটি বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরের ৭৫ শতাংশই গায়েব। আছে মাত্র ২৫ শতাংশ। একসময় প্রচুর পরিমাণে সাদা পাথর দেখা যেত বলে জায়গাটার নামই হয়ে যায় ‘সাদাপাথর’। কিন্তু বর্তমানে পর্যটনকেন্দ্রটি অস্তিত্ব সংকটে।

এর আগে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাদাপাথর নামক ওই স্থান থেকে পাথর লুট হওয়ার সংবাদ প্রকাশ হলে তা সারা দেশে আলোচিত হয়। দেশের বিভিন্ন মহল থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধংস করার প্রতিবাদ জানানো হয়।


৩৩ প্রকার ওষুধের দাম কমল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

৩৩ প্রকার অত্যাবশ্যকীয় ওষুদের দাম কমিয়েছে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে (ইডিসিএল)। গতকাল বুধবার কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামাদ মৃধা। তিনি জানান, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য কমানো হয়েছে।

সামাদ মৃধা বলেন, সিন্ডিকেট ভেঙে র-ম্যাটেরিয়াল যৌক্তিক মূল্যে কেনার ব্যবস্থা করায় ব্যয় কমেছে। ফলে ৩৩টি ওষুধের দাম ১০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো গেছে।

দাম কমেছে অ্যান্টিবায়োটিক, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর, উচ্চরক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক আলসার, কৃমিনাশক, ব্যথানাশক, হাঁপানি ও ভিটামিন সংক্রান্ত ওষুধের, দাম কমিয়েছে বলে জানান তিনি।

ইডিসিএল জানায়, ওমিপ্রাজল ক্যাপসুল, কেটোরোলাক ইনজেকশন, অনডানসেট্রন ইনজেকশন, সেফট্রিয়াক্সোন ও সেফটাজিডিম ইনজেকশনের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে। মেরোপেন ওমিপ্রাজল ইনজেকশনের দামও হ্রাস পেয়েছে।

এছাড়া মনটিলুকাস্ট ট্যাবলেটের দাম ১০ টাকা ৬৭ পয়সা থেকে পাঁচ টাকা করা হয়েছে।

গ্রামীণ ক্লিনিকে তালিকাভুক্ত ৩২টি ওষুধের মধ্যে ২২টির দামও কমানো হয়েছে। গ্যাস্ট্রিকের অ্যান্টাসিড, প্যারাসিটামল, সালবিউটামল, অ্যালবেনডাজল, ক্লোরামফেনিকল আই ড্রপ, মেটফর্মিনসহ বিভিন্ন ওষুধের দাম কমানো হয়েছে।

কর্মী ছাঁটাই প্রসঙ্গে সামাদ মৃধা বলেন, ‘ইডিসিএলের উৎপাদনক্ষমতা অনুযায়ী দুই হাজারের বেশি অতিরিক্ত জনবল ছিল।

তারা সবাই অদক্ষ কর্মী, অনেকের জাল সনদ পাওয়া গেছে। তারা কোনো কাজ করত না। এই অদক্ষ জনবলের মধ্যে ৭২২ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বার্থে আরও ১ হাজারের বেশি জনবল ছাঁটাই করতে হবে। যাদের ছাঁটাই করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।


banner close