সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
৬ পৌষ ১৪৩২

আ.লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আজ, রাজধানীজুড়ে টানটান উত্তেজনা

আপডেটেড
২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০৯:৫৫
শেখ শফিকুল বারী
প্রকাশিত
শেখ শফিকুল বারী
প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০৯:৫৪

অবশেষে ২০ শর্তে নয়াপল্টনে বিএনপি এবং বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে জামায়াতে ইসলামীকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি।

গতকাল সন্ধ্যায় ডিএমপির পক্ষ থেকে দুই দলকেই তাদের নিজ নিজ পছন্দের স্থানেই সমাবেশের অনুমতির কথা জানানো হয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ ও নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। তবে সমাবেশ করার জন্য উভয় দলকেই ২০টি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে।

এদিকে আজ রাজধানী ঢাকা হতে যাচ্ছে সমাবেশের নগরী। দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে মহানগরে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মনে ভীতি ও আতঙ্ক কাজ করছে। কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা শহরজুড়ে টহল জোরদার করেছে। রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসেছে চেকপোস্ট (নিরাপত্তা চৌকি)।

ইতোপূর্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নয়াপল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ আহ্বান করেছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) জানিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমাবেশের অনুমতি পেলেও জামায়াতের সমাবেশ করার অনুমতি মেলেনি। সমাবেশ সফল করতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

এর আগে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, শনিবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মহাসমাবেশের অনুমতি পাবে। স্থান নির্ধারণ হয়নি। স্থানের বিষয়টিও খুব দ্রুতই তাদের জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে জামায়াতের সমাবেশের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা) অবস্থানে রয়েছে ডিএমপি। তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে না। এ বিষয়ে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন যদি না থাকে, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সমাবেশের কথা বললেই তাদেরকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।

এদিকে পুলিশের অনুমতি পাওয়ার আগেই বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে আওয়ামী লীগের মঞ্চ নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মঞ্চের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।

বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশের একই দিনে রাজধানী ঢাকায় আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। রাজপথ দখলের এই মহড়া শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার। সতর্ক অবস্থানে থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে সমাবেশের জন্য তৈরি হওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, শনিবার দুপুর দুইটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে শুরু হবে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ঢাকার দুই মহানগরের অন্তর্গত সব থানা ও ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেবেন। একই সঙ্গে গাজীপুর, কেরানীগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জসহ আশপাশের জেলা এবং উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা যোগ দেবেন এই সমাবেশে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সমাবেশের মঞ্চ প্রায় প্রস্তুত।

গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের বলেছেন, দলের ডাকা শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ শেষ হলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে মনে না করতে। তিনি বলেছেন, সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। এদের দুরভিসন্ধি আছে। সাম্প্রদায়িক আরও দু-একটি শক্তিকে নিয়ে তাদের অশুভ খেলার পরিকল্পনা রয়েছে। সার্বক্ষণিক সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। মিটিং শেষ, চলে গেলেই হবে না। কালকে একটু দেখেশুনে যাবেন। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, সবাই নিজে নিজে দায়িত্ব নেবেন, সবার দায়িত্ব আছে। এই যুদ্ধ আমাদের সবার। এটা বাংলাদেশের আরেক মুক্তিযুদ্ধ। এটা মনে করেই মাঠে থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে পারব, যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। এটা মাথায় রেখেই নৌকা বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাতে হবে।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বারবার অপশক্তিকে মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগ দেয়া উচিত না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গণতন্ত্র ব্যাহত হতে দেবে না, এটা তাদের প্রতিজ্ঞা।

এদিকে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো অভিযোগ করছে, সমাবেশ সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা উসকানিমূলক কথা বলছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে, শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের পতন ঘটাতে চাই।’ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এতকিছুর পরেও ইতোপূর্বে আমরা অনেক কর্মসূচি পালন করেছি। এর আগেও রেইড দিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে, মারপিট করেছে, মেরেও ফেলেছে গুলি করে। তারপরও আমরা আমাদের জায়গা থেকে সরিনি। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের পতন ঘটাতে চাই। তবে ক্ষমতাসীন দল কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি করলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।’

লগি-বৈঠা আওয়ামী লীগের কালচার মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আর লাঠির কথা বলছে‑ এগুলো উসকানিমূলক ৷ একদিকে তাদের প্রধান একরকম কথা বলছেন, আরেকদিকে তারা পুরো জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে- তাদের এই দমননীতি দিয়ে। আমরা কোনো উসকানি দিচ্ছি না।’

অপরদিকে গোয়েন্দা নজরদারির জন্য নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় ৬০টির বেশি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শুক্রবার বিকেলে থেকে এসব ক্যামেরা বসানো শুরু হয়েছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ ঘিরে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে ডিএমপি। ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্যামেরাগুলো থেকে পাওয়া ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হবে। সকাল থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও প্রবেশমুখ গাবতলী, আব্দুল্লাহপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে ঢাকায় আসা যাত্রী ও গাড়িতে তল্লাশি করা হচ্ছে।

সকালে ঢাকার প্রবেশপথ গাবতলী সেতুর মুখে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়েছে দারুস সালাম থানা পুলিশ। এ বিষয়ে দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জামাল হোসেন জানান, সকাল থেকেই নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে যানবাহন ও সন্দেহভাজনদের তল্লাশি করা হচ্ছে।

এদিকে, উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশির বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জ্যোতির্ময় সাহা জানান, পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে।

অপরদিকে পোস্তগোলা সেতুর মুখে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছে শ্যামপুর থানা পুলিশ। এ বিষয়ে শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, সমাবেশ সামনে রেখে নিরাপত্তার স্বার্থে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। দুষ্কৃতকারীরা যেন কোনো বোমা বা অস্ত্র নিয়ে ঢাকায় ঢুকতে না পারে, সে জন্যই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

সম্প্রতি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী কোনো মহল নাশকতার চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল বিকেলে র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, রাজধানীতে জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও যেকোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে দেড় হাজারের অধিক র‍্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। র‍্যাব সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট পরিচালনা, টহল কার্যক্রম, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি পরিচালনা করছে। র‍্যাব-১ রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, রামপুরা, পূর্বাচল ৩০০ ফিট ও আমতলীতে চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। র‍্যাব-২ রাজধানীর বসিলা, আগারগাঁও ও শিশুমেলার সামনে চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। র‍্যাব-৩ রাজধানীর কমলাপুর, সচিবালয় ও নটর ডেম কলেজের সামনে চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। র‍্যাব-৪ রাজধানীর কচুক্ষেত, টেকনিক্যাল, মিরপুর কাজীপাড়া, সাভার ও মানিকগঞ্জে চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে। র‍্যাব-১০ রাজধানীর ডেমরা, পোস্তগোলা ও সায়েদাবাদে চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, এটি মিথ্যা কথা। কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ ঘিরে ডিএমপি কাউকে গ্রেপ্তার করে না। আমাদের ক্রাইম ডিভিশনের প্রত্যেক থানার ওসি ও ডিসিকে বলা আছে, যারা ওয়ারেন্টের আসামি, সন্দেহজনক আসামি, মামলা বা তদন্তভুক্ত আসামি, নাশকতা হতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য বলা হয়েছে। এর বাইরে অন্য সাধারণকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করার সুযোগ নেই।

এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ দেশব্যাপী চলছে জল্পনা-কল্পনা। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। এ ছাড়া, গত কয়েকদিন ধরে রাজনৈতিকদলগুলোর পাল্টাপাল্টি আক্রমণাত্মক বক্তব্যে জনমনে বাড়ছে শঙ্কা।


এ কে খন্দকার বীর উত্তমের জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায়
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক   

মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আবদুল করিম খন্দকার (এ কে খন্দকার) বীর উত্তমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারে তার জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর প্রধানসহ উচ্চপদস্থ সামরিক–বেসামরিক কর্মকর্তারা। জানাজার আগে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকারের ফিউনারেল প্যারেড হয়।

জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব এ কে খন্দকারের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান একে একে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বিমানবাহিনীর একটি ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে এ কে খন্দকারের প্রতি সম্মান জানানো হয়।

জানাজার আগে এ কে খন্দকারের ছেলে জাফরুল করিম খন্দকার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী এ কে খন্দকার গত শনিবার সকালে বার্ধক্যের কারণে মারা যান। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমানবাহিনীর প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বগুণের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এ কে খন্দকার। মুক্তিযুদ্ধকালে তার কৌশলগত সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক দক্ষতা স্বাধীনতার সংগ্রামকে আরও সুসংহত করে।


সুদানে শহীদ ৬ শান্তিরক্ষীকে অশ্রুসজল বিদায়

আপডেটেড ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০০:০৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

ছেলের কফিনের পাশে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ আলমগীর। অর্ধেক জাতীয় পতাকা আর অর্ধেক জাতিসংঘের পতাকায় মোড়ানো কফিন। তার চোখে কেবলই শূন্যতা। নিহত শামীম রেজার বাবা আলমগীর বলেন, আমার ছেলে ছিল আমার বটগাছ। সেই গাছটা আর নেই। আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবিয়ে এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বেসে ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য। রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে তাদের জানাজা হয়।

নিহত ৬ শান্তিরক্ষী হলেন- নাটোরের বাসিন্দা করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের বাসিন্দা সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মন্ডল, রাজবাড়ীর বাসিন্দা সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার বাসিন্দা লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।

জানাজা শেষে শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর একে একে তিনবাহিনীর পক্ষ থেকে শহিদদের কফিনে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

জানাজায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অংশ নেন।

জানাজা শেষে শামীম রেজার বাবা বলেন, তার ছেলে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন। ছোট ভাইকে বলেছিলেন ভবিষ্যৎ গড়ে দেবেন, আর ছোট মেয়েকে কথা দিয়েছিলেন ফেরার সময় বিয়ের হার নিয়ে আসবেন।

করপোরাল মোহাম্মদ মাসুদ রানার ছোট ভাই সৈনিক রনি ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া ও ক্ষমা চান। তিনি বলেন, মাসুদ রানা ১৯ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছেন। তার আট বছরের একটি মেয়ে আছে।

সৈনিক মোহাম্মদ মমিনুল ইসলামের ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান জানান, মমিনুল স্ত্রী, দুই ও বারো বছরের দুই সন্তান, ছোট ভাই ও বোনকে রেখে গেছেন।

সৈনিক শান্ত মণ্ডলের চাচা আবু তাহের মণ্ডল বলেন, স্কুল শেষ করেই শান্ত সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। তার বাবা নুরুল ইসলাম মণ্ডলও সেনাবাহিনীতে ছিলেন। তিনি বলেন, জ নুরুল বেঁচে থাকলে গর্ববোধ করতেন যে তার ছেলে শহীদ হয়েছে, জীবন উৎসর্গ করেছে। তিনি আরও বলেন, শান্তর পরিবার অত্যন্ত গরিব। তার মা দুই ছেলের ওপর নির্ভর করেই সংসার চালাতেন। তিনি শান্তর প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দ্রুত পরিবারকে দেওয়ার অনুরোধ জানান।

মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের ভগ্নিপতি ওয়ালিউল্লাহ বলেন, জাহাঙ্গীর স্ত্রী ও তিন বছরের এক ছেলেকে রেখে গেছেন। সাত বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। তিনি জাহাঙ্গীরের ভুলত্রুটির জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান।

লন্ড্রি কর্মী মোহাম্মদ সবুজ মিয়ার চাচা আব্দুল হামিদ জানান, সবুজ সম্প্রতি বিয়ে করেছিলেন। তিনি স্ত্রী ও বৃদ্ধা মাকে রেখে গেছেন। তিনি সবার কাছে সবুজের জন্য দোয়া চান।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিসফার চিফ কমিউনিটি লিয়াজোঁ অফিসার বরিস-এফ্রেম চুমাভি বাংলাদেশ সরকার, সেনাবাহিনী ও নিহতদের পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি নিহতদের ‘শান্তির সৈনিক’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তারা অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েও পেশাদারত্ব, সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জানাজার আগে নিহত ছয় শান্তিরক্ষীর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করা হয় এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর সামরিক রীতি অনুযায়ী তাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়। পরে হেলিকপ্টারে করে মরদেহ নাটোর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রাজবাড়ী ও কিশোরগঞ্জে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

এর আগে শনিবার এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে তাদের মরদেহ দেশে আনা হয়। দেশে আনার আগে আবিয়েতে তাদের জানাজা ও সামরিক সম্মান জানানো হয়।

গত ১৩ ডিসেম্বরের ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং নয়জন আহত হন। আহতদের মধ্যে আটজন কেনিয়ার নাইরোবির আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা সবাই এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।


সামনে আসছে কঠিন সময়, সকলকে সজাগ থাকতে হবে : তারেক রহমান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বগুড়া প্রতিনিধি 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সামনের দিনগুলো খুব ভালো দিন নয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অরাজকতা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সামনে আসছে কঠিন সময়, সকলকে সজাগ থাকতে হবে। রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে বগুড়ার পৌর এডওয়ার্ড পার্কের শহীদ টিটু মিলনায়তনে জুলাই শহীদদের স্মরণে ডিজিটাল স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘শহীদ ওসমান হাদি গণতন্ত্রের পথেই ছিলেন। তিনি একজন প্রার্থী ছিলেন, গণতন্ত্র বা ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। যদি শহীদ হাদির প্রতি, জুলাই শহীদদের ও যোদ্ধাদের প্রতি, একাত্তরের শহীদ ও যোদ্ধাদের প্রতি সম্মান রাখতে হয়, তাহলে আমাদের একটাই লক্ষ্য হতে হবে, দেশের মানুষের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, দেশের জন্য কাজ করা, দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে একটাই—করব কাজ গড়ব দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ।’

অতীতে বিএনপির দুই নেতার রাষ্ট্র পরিচালনায় সফলতার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশকে ধ্বংসের কিনারা থেকে বের করে এনেছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করে ধীরে ধীরে ধ্বংসের কিনারা থেকে উন্নয়নের পথে নিয়েছিলেন। আমাদের হাতে আবারও সুযোগ এসেছে। দেশের প্রায় ২০ কোটি মানুষের জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। নারীদের পিছিয়ে থাকলে চলবে না, তাদের শিক্ষিত করাসহ তারা যাতে অর্থনৈতিক মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেন, সেদিকে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। দেশকে ধ্বংসের কিনারা থেকে বের করে আনতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘সামনে অনেক কাজ। যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে—আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সেটি আমরা বিএনপির নেতা–কর্মীরা হই বা অন্য দলের নেতা-কর্মী হই।’

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ কে এম মাহবুবর রহমান ও হেলালুজ্জামান তালুকদার, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বগুড়া-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী গোলাম মো. সিরাজ, বগুড়া-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোশারফ হোসেন প্রমুখ।


নয়াদিল্লির প্রেস নোট প্রত্যাখ্যান করল বাংলাদেশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নয়াদিল্লি থেকে পাঠানো প্রেস নোটকে ‘সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান’ করেছে বাংলাদেশ। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এই কঠোর অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, ভারতের দাবি অনুযায়ী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাসের হত্যার প্রতিবাদে ২০-২৫ জন যুবক সেখানে গিয়ে স্লোগান দিয়েছে মাত্র। এই ঘটনাকে ভারত যেভাবে উপস্থাপন করেছে, তা বাংলাদেশ পুরোপুরি গ্রহণ করছে না।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রশ্ন তোলেন যে, কড়া নিরাপত্তা বেষ্টিত একটি কূটনৈতিক এলাকায় একটি ক্ষুদ্র দল এত গভীরে প্রবেশ করতে পারল কীভাবে? তিনি এটিকে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেন। এছাড়া একজন বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনাকে কেন ভারতের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সেটিকে অপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। তৌহিদ হোসেন জানান, ময়মনসিংহের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে।

দূতাবাসের ভেতরে থাকা কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঘটনার সময় কর্মকর্তারা প্রচণ্ড নিরাপত্তা শঙ্কা অনুভব করেছেন এবং সেখানে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় এবং কর্মকর্তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হয়, তবে বাংলাদেশ সরকার নয়াদিল্লিতে দূতাবাসের কার্যক্রম বা জনবল সীমিত করার কথা বিবেচনা করতে পারে।

উল্লেখ্য, এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল যে, বিক্ষোভ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে এবং ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী বিদেশি দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের এই দাবি ও ব্যাখ্যাকে অগ্রহণযোগ্য বলে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।


শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭ জনের দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭ জন উচ্চপদস্থ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন। দুদকের সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান এই আবেদনটি আদালতে জমা দেন।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার এই তালিকায় আরও রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আনিসুল হক, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এবং সরকারের সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিকসহ বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব ও প্রকৌশলী। এছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিএনএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী ও দুইজন পরিচালকের বিদেশ গমনেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

দুদকের মামলার এজাহার ও আবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেডকে (সিএনএস) কোনো প্রকার বৈধ টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই একক উৎসভিত্তিক চুক্তির মাধ্যমে টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটিকে মোট আদায়কৃত টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দেওয়ার চুক্তি করা হয়, যার ফলে তারা ৪৮৯ কোটি টাকারও বেশি বিল গ্রহণ করে। অথচ এর আগে ২০১০ থেকে ২০১৫ মেয়াদে একই কাজে ব্যয় হয়েছিল মাত্র ১৫ কোটি টাকার কিছু বেশি। এ ঘটনায় ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগে গত ১২ অক্টোবর দুদক শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

আদালতে দেওয়া আবেদনে বলা হয়, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে যে মামলার আসামিরা দেশত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে মামলার তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আলামত বিনষ্ট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের বিদেশ যাত্রা রহিত করা জরুরি বলে মনে করেন আদালত। এই আদেশের ফলে আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের কেউই দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।


এ কে খন্দকারের জানাজায় প্রধান উপদেষ্টার অংশগ্রহণ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম রূপকার, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আবদুল করিম খন্দকারের (এ কে খন্দকার) জানাজা ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান আজ রবিবার (২১ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে। রাজধানীর বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারে আয়োজিত এই জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অংশ নেন। জানাজার পূর্বে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে একটি সুসজ্জিত ফিউনারেল প্যারেড অনুষ্ঠিত হয় এবং জানাজা শেষে বিমান বাহিনীর একটি ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে তাঁর প্রতি বিশেষ সামরিক সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। একে একে শ্রদ্ধা জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। এ সময় সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টা এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এই বীর সেনানীর শেষ বিদায়ে উপস্থিত ছিলেন। জানাজার আগে এ কে খন্দকারের ছেলে জাফরুল করিম খন্দকার তাঁর বাবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, বীর-উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকার বার্ধক্যজনিত কারণে গতকাল শনিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, রণকৌশল এবং সাহসিকতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে এক অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিল। ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তিনি মুক্তিবাহিনীর সাংগঠনিক ভিত্তি সুসংহত করতে এবং যুদ্ধজয়ে অনন্য অবদান রাখেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ এক বীর সেনানী এবং জাতির ইতিহাসের এক জীবন্ত কিংবদন্তিকে হারাল।

সুত্রঃ বাসস


সীমান্তে অনুপ্রবেশ: লালমনিরহাটে বিএসএফ সদস্যকে আটক করল বিজিবি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এক সদস্যকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে আঙ্গরপোতা বিওপির আওতাধীন ডাঙ্গাপাড়া এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক বিএসএফ সদস্যের নাম বেদ প্রকাশ (বডি নম্বর ২১৩৬০০১৭৮)। তিনি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার-১৭৪ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অর্জুন ক্যাম্পে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোররাতে সীমান্ত পিলার ডিএএমপি ১/৭ এস-এর নিকটবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু পাচারকারীদের ধাওয়া করছিল বিএসএফের একটি টহল দল। ধাওয়া করার একপর্যায়ে কনস্টেবল বেদ প্রকাশ জিরো লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের প্রায় ২০০ গজ ভেতরে ঢুকে পড়েন। সে সময় ওই এলাকায় দায়িত্বরত বিজিবির টহল দল তাকে দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে। তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে একটি শর্টগান, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ওয়্যারলেস সেট এবং একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

রংপুর-৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল সেলিম আল দীন এবং দহগ্রাম ফাঁড়ির ইনচার্জ তাজিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ঘন কুয়াশার কারণে পথ ভুল করে ওই বিএসএফ সদস্য অনিচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছিলেন। বিষয়টি জানার পরপরই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম ও বিদ্যমান প্রটোকল অনুসরণ করে তিনবিঘা করিডোর এলাকায় একটি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তে সাময়িক উত্তেজনা দেখা দিলেও বর্তমানে পরিস্থিতি বিজিবির নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাভাবিক রয়েছে।


তারেক রহমানের ফেরার ফ্লাইট থেকে দুই কেবিন ক্রুকে অব্যাহতি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

লন্ডনে দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে তাঁর ঢাকা ফেরার নির্ধারিত ফ্লাইটের দায়িত্ব থেকে দুইজন কেবিন ক্রুকে সরিয়ে নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। মূলত গোয়েন্দা সংস্থার নেতিবাচক প্রতিবেদন এবং ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিমান সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া ওই দুই কেবিন ক্রুর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তাঁদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাঁদের পরিবর্তে নতুন দুজনকে ওই ফ্লাইটে দায়িত্ব দিয়েছে। এর আগেও গত মে মাসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একটি ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও একই ধরনের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ক্রু পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছিল।

আগামী ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে। এই বিশেষ ফ্লাইটে তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাও সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন। তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রস্তুতির মাঝেই নিরাপত্তাজনিত এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করল বিমান কর্তৃপক্ষ।


জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে ইসির বৈঠক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটকে কেন্দ্র করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি শুরু হয়। ভোটের তফসিল ঘোষণার পর তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে এটিই নির্বাচন কমিশনের প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ।

বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান উপস্থিত রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সিইসির পাশাপাশি চারজন নির্বাচন কমিশনার এবং ইসির সিনিয়র সচিবও এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। তিন বাহিনী প্রধান নির্বাচন ভবনে পৌঁছালে ইসি সচিব তাঁদের আলাদাভাবে অভ্যর্থনা জানান। মূলত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে।

এদিকে, দুপুর ১২টার এই বৈঠকের পর আজ দুপুর আড়াইটায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত আরেকটি বড় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সিইসির সভাপতিত্বে ওই সভায় প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং এনএসআই, ডিজিএফআই, বিজিবি, র‍্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসারসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সেখানে নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধ এবং প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নির্ধারিত আচরণ বিধিমালা ২০২৫-এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আজকের এই ধারাবাহিক সভাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনের একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখা। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এই বিশেষ সভা শেষে আজ বিকেলেই গণমাধ্যমকে ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সভার সিদ্ধান্ত ও গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত এই তৎপরতা রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।


নিরাপত্তা শঙ্কায় চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থগিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে উদ্ভূত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে বন্দরনগরীতে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভ্যাক) কার্যক্রম আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থিত আইভ্যাক তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের এই কেন্দ্রে ভিসার আবেদন গ্রহণসহ অন্যান্য সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

আইভ্যাক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি সন্তোষজনক মনে হলে পুনরায় কার্যক্রম চালুর বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। এর আগে গত বুধবার একই ধরনের নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রের কার্যক্রম দুপুর থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। যদিও পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকার সেই কেন্দ্রটি পুনরায় সচল হয়। মূলত সাম্প্রতিক নানা কর্মসূচি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েই চট্টগ্রামে এই নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এই স্থগিতাদেশের ফলে চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ভিসা প্রত্যাশীদের পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।


ছায়ানটে হামলা ও অগ্নিসংযোগ: ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত বাংলা সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ছায়ানটের প্রধান ব্যবস্থাপক দুলাল ঘোষ বাদী হয়ে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে ধানমন্ডি মডেল থানায় এই মামলাটি করেন। ধানমন্ডি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম আজ রোববার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহার ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে একদল দুর্বৃত্ত ছায়ানট ভবনে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। তারা ভবনের সিসি ক্যামেরা ও আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি সংগীতচর্চায় ব্যবহৃত মূল্যবান বাদ্যযন্ত্র যেমন—তবলা, হারমোনিয়াম ও বেহালা ভেঙে ফেলে এবং বিভিন্ন কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ন্যাক্কারজনক হামলায় প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি হলেও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক আর্থিক পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী ক্ষতিগ্রস্ত ছায়ানট ভবন পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন। উল্লেখ্য, শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর একই রাতে ঢাকার তেজগাঁও ও কারওয়ান বাজার এলাকায় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’ ও ‘প্রথম আলো’ কার্যালয়েও হামলার ঘটনা ঘটেছিল। ছায়ানট কর্তৃপক্ষ এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।


ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড: তদন্তের অগ্রগতি জানাতে যৌথ সংবাদ সম্মেলন আজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনার তদন্তে পাওয়া তথ্য ও গ্রেফতারদের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) একটি সমন্বিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজধানী এই সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে কতটুকু এগিয়েছে এবং মূল অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা এই সম্মেলনে তুলে ধরা হবে।

এদিকে, ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলির ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলাটিকে গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) আদালত পূর্ণাঙ্গ হত্যা মামলা হিসেবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে রিকশায় থাকাকালীন সন্ত্রাসীরা তাকে মাথায় গুলি করে। এর ছয় দিন পর গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিহতের ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা শেষে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে দাফন করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে র‍্যাব ৮ জনকে এবং পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। র‍্যাবের হাতে গ্রেফতারদের মধ্যে প্রধান সন্দেহভাজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা, মা, স্ত্রী, শ্যালক ও সহযোগীরা রয়েছেন। অন্যদিকে, পুলিশ গ্রেফতার করেছে সীমান্ত দিয়ে ফয়সালকে অবৈধভাবে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা মানবপাচারকারী ও অন্য এক সহযোগীকে। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশের সব প্রধান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা সম্মিলিতভাবে তদন্তের সার্বিক চিত্র এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করবে।

উল্লেখ্য, শরীফ ওসমান বিন হাদি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণার পাশাপাশি ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ এবং ‘ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন এক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তার এই মর্মান্তিক মৃত্যু দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে গভীর শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে এই স্পর্শকাতর মামলার পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ ও পলাতক আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।


সুদানে নিহত ৬ শান্তিরক্ষীর জানাজা সম্পন্ন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্যের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় সেনা মসজিদ প্রাঙ্গণে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা এবং তিন বাহিনীর প্রধানদের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

মর্যাদাপূর্ণ এই জানাজায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও অশ্রুসিক্ত নয়নে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিশেষ বিমানে করে শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দেশে আনা হয়। গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর একটি ড্রোন হামলায় তারা শাহাদতবরণ করেন। মর্মান্তিক এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন নাটোরের করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মন্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।

একই হামলায় আরও নয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান ও নারী সদস্যসহ আরও বেশ কয়েকজন রয়েছেন। বর্তমানে তারা সবাই শঙ্কামুক্ত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেশের মান রক্ষায় ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশি এই সেনাদের এমন আত্মত্যাগ দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি ও গভীর গর্বের বিষয় হিসেবে গণ্য হচ্ছে।


banner close