বিএনপির সমাবেশ চলাকালীন ডিউটিরত অবস্থায় আহত আনসার সদস্য হোসাইনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন আনসার ব্যাটেলিয়ানের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আমিনুল ইসলাম।
রোববার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সশরীরে তার খোঁজখবর নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান তিনি।
এ সময় আনসার সদস্য হোসাইনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং তার পরিবারের সাথে কথা বলেন। আহত ওই আনসার সদস্যের সমস্ত চিকিৎসার ব্যয় ভার বহন করবেন বলেও জানান তিনি।
এসময় আনসার ব্যাটেলিয়ান মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক ও আনসার ব্যাটেলিয়ানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রোববার বিএনপির হামলায় আনসার সদস্য হোসাইন আহত হন। পরে আহত তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসক নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করান।
কোন নির্ধারিত হাটের উদ্দেশে যাচ্ছে, এমন গাড়ি মাঝপথে থামানো হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (১৯ মে) পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, প্রতি বছরের মতো ঈদের আগে আমরা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা করলাম। এখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সেক্টরের অনেকেই ছিলেন।
‘আপনারা জানেন যে আমাদের গরুর হাটগুলো শৃঙ্খলার মধ্যে থাকে না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব গরুর গাড়ি আসবে, সেসবের সামনে সুনির্দিষ্ট হাটের তথ্য থাকতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যেখানে-সেখানে গরু নামাতে পারবে না। রাস্তায় গরু না নামিয়ে নির্ধারিত স্থানে নামাতে হবে। প্রতিটি হাটেই আনসার রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু হাটে ৭৫ জন করে আবার কিছু হাটে কম-বেশি হতে পারে। নিরাপত্তার পাশাপাশি গরুর চিকিৎসক থাকতে হবে। কোনভাবেই যেন অসুস্থ গরু বিক্রি না হয় ‘
‘অনেক সময় গরুর আঘাতে মানুষ আহত হন, এজন্য ফাস্টএইডেরও ব্যবস্থা রাখতে হবে। এবছর শতকরা ৫ টাকা হাসিল নিলেও আগামীবছর ১০০ টাকায় ৪ টাকা নিতে হবে।’
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘টেন্ডার হয়ে যাওয়ায় এ বছরই এটা করতে পারলাম না। এ নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। আর ঈদের ৫ দিন আগে থেকে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। ঈদের পর ৩ দিন চলাচল বন্ধ থাকবে। এটা কোনো অবস্থায় রাতে চলতে পারবে না।’
গত ২০২৩ সালের তুলনায় দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার। বেকার জনগোষ্ঠীর হার বাড়ার ক্ষেত্রে মহিলাদের কোনো অবদান নেই। অর্থাৎ এক লাখ ৬০ হাজার বেকার পুরুষের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
গতকাল রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৪ এর চতুর্থ কোয়ার্টারের গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর সাময়িক ফলাফল প্রকাশ করেছে।
বিবিএস জানায়, দেশে বর্তমানে ২৬ লাখ ২০ হাজার বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে। যা ২০২৩ সালে ছিল ২৪ লাখ ৬০ হাজার। বর্তমানে পুরুষ বেকার রয়েছে ১৮ লাখ, যা ২০২৩ সালে ছিল ১৬ লাখ ৪০ হাজার। এ ছাড়া বর্তমানে মহিলা বেকারের সংখ্যা ৮ লাখ ২০ হাজার, যা ২০২৩ সালেও ছিল ৮ লাখ ২০ হাজার। অর্থাৎ মহিলা বেকারের সংখ্যা না বাড়লেও বেড়েছে পুরুষ বেকারের সংখ্যা।
বিবিএস জানায়, যারা বিগত ৭ দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টাও কোনো কাজ করেননি কিন্তু কাজ করার জন্য গত ৭ দিন ও আগামী দুই সপ্তাহের জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন/মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজ খুঁজেছেন, তাদেরকেই বেকার জনগোষ্ঠী হিসেবে ধরা হয়েছে।
সাধারণত যারা শুধুমাত্র নিজেদের ভোগের জন্য কাজ করেন তাদের আইএলওর ১৩তম গাইডলাইন হিসেবে কর্মে নিয়োজিত ধরা হয়, আর যারা মজুরি বা মুনাফার জন্য কাজ করেন তাদের আইএলওর ১৯তম গাইডলাইন হিসেবে কর্মে নিয়োজিত ধরা হয়।
দেশে কর্মে নিয়োজিত বা শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ফলে বেড়েছে বেকার মানুষের সংখ্যা। বছরের শুরুতে বেকার মানুষের সংখ্যা কম থাকলেও বছর শেষে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এতে বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার। এই সময়ে কৃষি, সেবা এবং শিল্প, সবখাতেই কমেছে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী। নারীর চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে বেশি।
কমেছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা
দেশে বর্তমানে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমেছে ৭ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার, অন্যদিকে ২০২৩ সালে যা ছিল ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। ফলে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমেছে ১৭ লাখ ২০ হাজার জন। পুরুষ ও নারী শ্রম শক্তি কমেছে। দেশে সব থেকে বেশি মানুষ কাজ করে কৃষি খাতে। এরপরই রয়েছে সেবা ও শিল্পখাত। দেশে যুব শ্রম শক্তি ২ কোটি ২৬ লাখ, ২০২৩ সালে যা ছিল ২ কোটি ৬৭ লাখ। ফলে এক বছরে দেশে যুব শ্রম শক্তিও কমেছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়ম অনুসারে, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই যারা গত সাত দিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পাননি এবং গত এক মাস ধরে কাজ খুঁজেছেন, কিন্তু মজুরির বিনিময়ে কোনো কাজ পাননি। তারা বেকার হিসেবে গণ্য হবেন। বিবিএস এই নিয়ম অনুসারেই বেকারের হিসাব দিয়ে থাকে। তবে বিবিএস এবার দুইভাবে শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে বিবিএস জানিয়েছে, শ্রমশক্তির তৃতীয় প্রান্তিকের ফলাফলটি ১৩তম এবং ১৯তম আইসিএলএস অনুযায়ী তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। আইএলও প্রণীত ১৩তম এবং ১৯তম আইসিএলএসে কর্মে নিয়োজিত প্রাক্কলনে পার্থক্য রয়েছে।
বিবিএস জানায়, শ্রমশক্তি জরিপে ১৫ বছর ও তদুর্ধ্ব বয়সি পুরুষ-নারী এবং শহর-পল্লী অঞ্চল অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে শ্রমবাজারের সূচকসমূহ ত্রৈমাসিকভিত্তিতে প্রাক্কলন করা হয়। দেশব্যাপী ১ হাজার ২৮৪টি নির্বাচিত নমুনা এলাকায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২৪টি করে সর্বমোট ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা (একত্রিতভাবে বসবাসরত গোষ্ঠী বা পরিবার) থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেশের ৬৪টি জেলায় ১০৭ জন (নারী ৫৭ এবং পুরুষ ৫০) প্রশিক্ষিত তথ্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য হতে শ্রমশক্তি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সূচকসমূহের অগ্রগতি, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অগ্রগতি নির্ণয়ক সূচক এবং সর্বোপরি জাতীয় শ্রমশক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার ও কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব নিরসনে পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব হবে। এ জরিপের মাধ্যমে লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থান, বেকারত্ব, শ্রম অভিবাসন ব্যয়, খাত এবং পেশাভেদে শ্রমশক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং অ-প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান, কর্মঘণ্টা এবং মজুরি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা হয়। এ জরিপের মাধ্যমে শ্রমবাজারের মৌসুমভিত্তিক তারতম্য সংশ্লিষ্ট তথ্যাদিও পাওয়া যায়।
ভারত সরকারের আমদানি নিষেধাজ্ঞার পর যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে তৈরি পোশাকের ৩৬টি ট্রাক আটকা পড়েছে। পেট্রাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ‘গেইট পাস’ অনুমতি না পাওয়ায় পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো ভারতে যেতে পারেনি বলে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান।
ভারত সরকারের আমদানি নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জানতে চাইলে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ‘এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি আমরা পাইনি। পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। বেনাপোল বন্দর দিয়ে শনিবার পর্যন্ত সব পণ্য রপ্তানি হয়েছে।’
‘তবে রোববার সকাল থেকে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হলেও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাক জাতীয় কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক পণ্য এখানে আটকে আছে।’
বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাকসহ প্রায় সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক মাসের মাথায় ভারতের এই পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এল, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করার কথা বলেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গত বছর (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। এদিকে বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। যেসব পণ্যের এলসি/টিটি এরই মধ্যে হয়ে গেছে সেসব পণ্য যাতে আমদানি করা যায় তার জন্য কাস্টমসে আলোচনা চলছে।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি করে, গত অর্থবছরে তা প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করেছে ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে রপ্তানি হয়েছে ১১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকার পণ্য। যেসব দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে, তার মধ্যে ভারত একটি, যেখানে প্রতিবছর প্রায় ৭০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৯৩ শতাংশের মত পোশাক পণ্য স্থলপথেই রপ্তানি হয়। ফলে ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা এ খাতের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দেবে বলে ব্যবসায়ীদের শঙ্কা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান আরও বলেন, ‘স্থলপথে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে কার্যত ভারতের সঙ্গে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। আমদানিকারকরা বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে থাকে কলকাতায়। সেটা বন্ধ হয়ে গেল। নৌপথে পণ্য পরিবহন করা এসব রপ্তানিকারকদের পক্ষে সম্ভব না। এতে খরচের পাশাপাশি সময়ের কারণে সেটা তারা পারবেন না।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ভারত সরকার স্থলবন্দর দিয়ে গার্মেন্টস সামগ্রী আমদানি নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে খরচ অনেক কম হতো কিন্তু সমুদ্র ও বিমান পথে পণ্য রপ্তানিতে খরচ অনেক বেশি হবে।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, বছরে ১০ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশিরভাগ আমদানিকারকেরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। এ পথে রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পাট, পাটের তৈরি পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কেমিকেল, বসুন্ধারা টিসু, মেলামাইন, মাছ উল্লেখ্যযোগ্য।
ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যসহ সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে দাবি করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
এ বাস্তবতা তুলে ধরে বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এমন মন্তব্য করেন।
‘আমরা নিশ্চয় এই অবস্থানগুলোকে তুলে ধরবো এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারবো। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এই পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভৌগলিকভাবে সংযুক্ত দুটি দেশ আমরা। এটা বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার একটা প্রক্রিয়া। উভয়পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে এটার একটা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত আনতে পারবো। আমাদের আরও কিছু বন্দর এখনও খোলা আছে,’ বলেন শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি জানান, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। স্থানীয় স্থলবন্দরে বিশেষ করে আখাউড়া ও ডাউকি সীমান্তভিত্তিক কিছু সিদ্ধান্তের কথা শুনেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে জানার পর সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। এখন বিষয়টি বিশ্লেষণ করবো।’
তবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যকে স্বাভাবিক বাণিজ্য প্রবাহ বলে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা যেটা আমাদের থেকে নেয়, সেটা সুলভ মূল্যের কারণেই নেয়। আমরাও একই কারণে তাদের পণ্য কিনি। সুতরাং এখানে স্বাভাবিক বাণিজ্য প্রবাহের বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরবো।’
‘আমরা আমাদের বৈচিত্রকরণ ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধি ঘটাবো,’ যোগ করেন শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি যে আসবাব যায়, তা না। পোশাকপণ্য যায়, আমরা প্রতিযোগিতা সক্ষমতার মাধ্যমেই এগুলো পাঠিয়ে থাকি। দুপক্ষের জন্যই লাভজনক বিধায় এগুলো যায়। আশা করি, উভয় দেশের ভোক্তা ও উৎপাদনের স্বার্থে এটা চলমান থাকবে।’
এর আগে ট্রান্সশিফমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় কী ধরনের প্রবাহ পড়েছে, জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা দাবি করেন, ‘ট্রান্সশিফমেন্টের কোনো প্রভাব আমাদের ওপর নেই। নিজস্ব সক্ষমতা ব্যবহার করে নিজস্বভাবেই এই সমস্যা সমাধান করেছি।’
সূত্র: বিডিনিউজ, ইউএনবি
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনএসি) আজ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রেখে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন এনইসি চেয়ারপার্সন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার এডিপির মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং প্রকল্প ঋণ ও অনুদান হিসেবে আসবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে ৮ হাজার ৫৯৯ দশমিক ৭১ কোটি টাকা যুক্ত করলে, আগামী অর্থবছরের জন্য মোট এডিপির আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯৯ দশমিক ৭১ কোটি টাকা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অনুমোদিত এডিপি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নতুন বাজেটের অংশ, যা ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা করবেন।
ড. মাহমুদ বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল কৌশল হলো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা, মুল্যস্ফীতি হ্রাস করা, বাজেট ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং বাজেটকে টেকসই করা।
তিনি আরো বলেন, ‘একই সঙ্গে দেশি বা বিদেশি ঋণের ফাঁদে না পড়ে ঋণ পরিশোধে বা উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় মেটাতে যেন অতিরিক্ত চাপ না হয় তা নিশ্চিত করাই হবে আমাদের লক্ষ্য। আমরা অতিতে যে দুষ্টচক্রে পড়েছিলাম সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করব।’
রাতারাতি রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব নয় উল্লেখ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, তা সত্ত্বেও সরকার বাজেট ঘাটতি জিডিপির চার শতাংশের মধ্যে রেখে ব্যয় সমান রাখার চেষ্টা করবে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির প্রবণতা বিবেচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হঠাৎ করে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমাতে পারবে না।
ড. মাহমুদ বলেন, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ছাড়াও এই বাজেট ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বাজেট হবে না যেখানে স্বল্পমেয়াদে সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য এমন কোনও ব্যয় করা হবে না যা পরবর্তীতে দায় বাড়িয়ে দিতে পারে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, জাপানের অর্থায়নে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প ছাড়া নতুন কোনো মেগা প্রকল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নতুন এডিপিতে নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, কিছু অসুবিধা সত্ত্বেও সরকার উন্নয়ন অংশীদার এবং বিদেশি পক্ষগুলোর কাছে বছরের পর বছর ধরে বকেয়া পাওনা ধীরে ধীরে পরিশোধ করছে।
সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বছর এটি কম হবে কারণ ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে অনেক প্রকল্প যাচাই-বাছাই করেছে, বরাদ্দ কমিয়েছে, তহবিলের অপব্যবহার রোধ করেছে যার ফলে বাস্তবায়নের ধারা কিছুটা ধীর হয়ে গেছে।
পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী টানেল এবং বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) এর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে প্রকৃত ফলাফল বিবেচনা না করেই পূর্ববর্তী সরকারের আমলে এই প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছিল।
আগামী অর্থবছরের জন্য নতুন এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।
নতুন এডিপি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে প্রণীত হয়েছে।
এছাড়াও, কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইসিটি, পরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের মতো খাতগুলোকে নতুন এডিপিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
নতুন এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত ৫৮ হাজার ৯৭৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩২ হাজার ৩৯২ দশমিক ২৬ কোটি টাকা (১৪ দশমিক ৮ শতাংশ), শিক্ষা খাত ২৮ হাজার ৫৫৭ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা (১২ দশমিক ৪২ শতাংশ), গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাত ২২ হাজার ৭৭৬ দশমিক ৪০ কোটি টাকা (৯ দশমিক ৯০ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্য খাত ১৮ হাজার ১৪৮ দশমিক ১৪ কোটি টাকা (৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ) বরাদ্দ পেয়েছে।
এই পাঁচটি খাতে মোট বরাদ্দের প্রায় ৭০ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে।
শীর্ষ ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে, এরপর রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৩২ হাজার ৩২৯ দশমিক ৫৭ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগ ২০ হাজার ২৮৩ দশমিক ৬২ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১৩ হাজার ৬২৫ দশমিক ৩ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ১৫৪ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১১ হাজার ৬১৭ দশমিক ১৭ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ৩৯৮ দশমিক ১৬ কোটি টাকা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৩৮৭ দশমিক ৬২ কোটি টাকা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় ৭ হাজার ৭১৪ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।
নতুন এডিপিতে মোট ১ হাজার ১৭১টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯৯৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ১৯টি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প, ৯৯টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং ৬০টি সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প রয়েছে।
প্রস্তাবিত এডিপিতে ৭৯টি প্রকল্প পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য রাখা হয়েছিল এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় বাস্তবায়নের জন্য ২২৮টি প্রকল্প রাখা হয়েছিল।
এছাড়া, নতুন এডিপিতে ২৫৮টি প্রকল্প আবশ্যিকভাবে সমাপ্ত করার লক্ষ্যে রাখা হয়েছিল। যার মধ্যে ২১২টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ১১টি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প, ১৮টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং ১৭টি সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প।
সংশ্লিষ্ট সচিববৃন্দ এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগের আশীর্বাদপুষ্ঠ পলাতক সাবেক প্রদানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাবাজন কাজী আলমগীরকে পর্যায়ক্রমে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিযুক্ত করেন।
পরবর্তীতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এর সাবেক চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার পিএস ১ জনাব এন আই খান বিগত জানুয়ারি ১১,২০২৪ ইং তারিখে শেখ হাসিনার নির্দেশে, আস্তাবাজন কাজী আলমগীরকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এ কমিশন বানিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। তথ্য গোপন করে বড় অংকের সুদ মওকুপ এবং নিয়ম বহির্ভূত আমানত নগদায়ন সহ যাবতীয় অনিয়মে তিনি অভিযুক্ত।
ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫ তারিখের অভ্যন্তরীন তদন্তে প্রতিবেদনে এন আই খানের অপকর্মের দোষী সহযোগিদের বরখাস্ত না করে বেতন বৃদ্ধি সহ পদোন্নতি প্রদান করে নৈতিক অবক্ষয়ের পরিচয় দিয়েছেন।
মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান জসিম উদ্দিন খান, সিএফও আবু বকর সিদ্দিক, কোম্পানী সচিব আসাদুজ্জামান, চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এডভোকেট শিহাবুর রহমান এবং লায়াব্যালিটি অপারেশন বিভাগের প্রধান সাহানা আক্তার সীমা সহ এন আই খানের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের অনিয়ম স্বত্তেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি বরং মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক নব নিযুক্ত পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে অনিয়মকারীদের বহাল তবিয়্যতে রেখেছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব কাজী আলমগীরের এহেন কার্যক্রম ফাইন্যান্স কোম্পানী আইন ২০২৩ এর ১৯ ধারার লঙ্ঘন। এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মকর্তা হাসান মোহাম্মদ তারেক বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর অফিসের সামনে কাজী আলমগীরের অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিবের দায়িত্বে থাকা শফিকুল আলমকে তার স্ত্রী সতর্ক করেছেন, বর্তমান পদ ছাড়ার পর তিনি একা হয়ে যাবেন। নিকটাত্মীয় এবং বন্ধু-বান্ধবরা তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না।
গতকাল শনিবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে স্ত্রীর সতর্কবার্তাটি সবার সঙ্গে শেয়ার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই প্রেস কর্মকর্তা।
শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘স্বৈরশাসনের সময় আমি প্রায়ই বিরোধী নেতাদের বিষয়ে লিখতাম, যারা ওই শাসনবিরোধী ছিলেন এবং যারা জাতির আশার আলো হিসেবে কাজ করছিলেন। তাদের আত্মীয়স্বজনরা প্রায়ই আমার সেই পোস্টগুলো শেয়ার দিতেন। মাঝেমধ্যে আমার লেখা এবং সাংবাদিকতার প্রশংসা করে তারা আমাকে বার্তাও পাঠাতেন।’
প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘এখন আমি যখন অন্তর্বর্তী সরকারের একটি সংবেদনশীল পদে দায়িত্ব পালন করছি, দেখলাম ওই ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে আনফ্রেন্ড করেছেন। আমি আর আগের আমি নেই। কারও কারও কাছে আমি অহংকারী হয়ে উঠেছি। কারও কাছে ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণু একজন প্রেস কর্মকর্তা।’
তিনি লিখেছেন, ‘এই মুহূর্তে এসে আমার সাংবাদিকতার পুরো সময়টুকুতে তৈরি হওয়া অনেক ফেসবুক বন্ধুকে হারানোর ভয় জাগছে। আমার কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে ইতোমধ্যে আমার অনেক আত্মীয় সম্পর্ক খারাপ করেছে। আমার স্ত্রী সতর্ক করেছে, এই পদ ছাড়ার পর আমি একা হয়ে যাব।’
প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘কিন্তু এতে আমার কিছু যায় আসে না। আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে সহিংস কিছু ঘটনা নথিভুক্ত করার সময়ও আমি একা ছিলাম। বিহারীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার সময়, তাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায় তুলে ধরার সময়ও আমি একাই ছিলাম। আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ন্যায্যতা এবং ন্যায়বিচারের সঙ্গে আমি কাজ করছি কি না তা নিশ্চিত করা। আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমি কি সঠিকভাবে পালন করছি? এবং দ্বিতীয়ত, আমি কি এটা করতে গিয়ে কারও ক্ষতি করছি?’
নিজের চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘ক্ষমতা এমনভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করে, যা কেউ কল্পনাও করতে পারে না বা উপলব্ধি করতে পারে না। আব্বাসীয় আমলে সুফিরা সরকারি পদ এড়িয়ে চলতেন। ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তারা অন্যদের ক্ষতি করবেন না, সেটা নিশ্চিত করা।’
সবশেষ তিনি লেখেন, ‘এখন পর্যন্ত, এটাই আমার প্রতিজ্ঞা। আশা করি আমার লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি ভেবে ভবিষ্যতে গর্ব করতে পারব।’
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালানোর পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব হিসেবে গত ১৩ আগস্ট নিয়োগ পান শফিকুল আলম।
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (১৭ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আবারও আহ্বান জানিয়ে বলবো পরিস্থিতি অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন।’
এ সময় জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে তাদের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। অন্যথায় পতিত স্বৈরাচারকে মোকাবিলা করা সহজ হবে না বলেও সতর্ক করেন বিএনপি নেতা।
তিনি আরও বলেন, ‘ আশা করি, সরকার খুব শিগগিরই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে এবং লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করবে।’
দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক রীতিনীতি ও ব্যবস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি বলে মত দেন তারেক রহমান। একারণে তিনি ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, ‘এখনই সময় গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার, যাতে ভবিষ্যতে কোনো একনায়ক বা ফ্যাসিস্ট জনগণের অধিকার হরণ করতে না পারে।’
তবে এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা ও সক্ষমতার ঘাটতি ইতোমধ্যে জনমনে হতাশা সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তারেক।
তার ভাষ্যে, ‘একটি সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার আশায় জনবান্ধব রাজনৈতিক দলগুলো এখনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।’
তারেক রহমান বলেন, বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোই অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য তাদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে একটি রোড ম্যাপ ঘোষণা আহ্বান জানিয়েছে আসছে। সব কিছু বিবেচনা করলে আমরা দেখতে পাই, সরকার সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি। বরং তারা নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণাকে ছোট-বড় সংস্কারের নতুন শর্তের ফাঁদে ফেলছে।’
জনগণের কাছে সরকারের পরিকল্পনা ও মনোভাব পরিষ্কার না হওয়ায় দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন দেখছি কোনো না কোনো দাবি নিয়ে মানুষ রাস্তায় নামছে। মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কিন্তু এক ধরনের অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।’
‘জনআকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে। আমরা মনে করি অস্থিরতা এভাবে বাড়তে থাকলে সরকারের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার কোনো অভিজাত ক্লাব বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান নয়; এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যার সঙ্গে প্রতিটি নাগরিকের সরাসরি সম্পর্ক থাকা উচিত।’
তারেক রহমান বলেন, ‘যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ব্যবস্থাগুলো উপেক্ষিত হয় এবং ডিপলিটিকাইজেশনকে (অরাজনীতিকরণ) উৎসাহিত করা হয়, তাহলে সাময়িকভাবে কিছু ব্যক্তি উপকৃত হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রপন্থী জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এ সময় রোহিঙ্গা সংকটে রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ খোলার পরিকল্পনা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, করিডোর কিংবা বন্দর দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ নয়। এই সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ বা জনগণের সরকার। বর্তমান সরকারের আইনগত ও রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে হয়ত প্রশ্ন নেই। তবে এই সরকার কোনোভাবেই জনগণের কাছে জবাবদিহি মূলক সরকার নয়।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যের ওপর ভিত্তি করে এবং জুলাই আন্দোলনে হাজারো মানুষের প্রাণের বিনিময়ে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক বৈধতার ভিত্তি রচিত হয়েছে। অথচ জুলাই আগস্টের আন্দোলনে কতজন শহীদ হয়েছে কতজন আহত হয়েছেন, দশ মাসেও কিন্তু সরকার শহীদদের তালিকা ও সংখ্যা চূড়ান্ত করতে পারেনি।
দুঃখ প্রকাশ করে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, এখন যদি জুলাই আগস্টের শহীদদের হতাহতদের তথ্য কেউ জানতে চান তাহলে কী নির্দিষ্ট সেই তথ্য পাওয়া যাবে? এ ব্যাপারে কিন্তু বিরাট সন্দেহ বা প্রশ্ন রয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে গণঅভ্যুত্থানের সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে দশ মাসেও যদি জুলাই আগস্টের শহীদদের তালিকা চূড়ান্ত না করতে পারে, তাহলে সেটা সরকারের সক্ষমতা বহন করে কিনা এই প্রশ্নটি রেখে যাচ্ছি।
এখানে আরেকটি প্রশ্ন এসে যায় সরকার কী হতাহতদের ব্যাপারে উদাসীন নাকি ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন? এটিই এখন দেশের বহু মানুষের বড় জিজ্ঞাসা।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি চলছে। রবিবার (১৮ মে) সকাল ৯টা থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে নগর ভবনের সামনে আসেন তার সমর্থকরা।
তারা নগর ভবনের ফটকগুলোয় অবস্থান নিয়েছেন, ভেতরের বিভিন্ন ফটকে ঝুলিয়েছেন তালা। এতে নগর সংস্থার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এ সময়ে নিজেদের দাবি তুলে ধরতে বিভিন্ন স্লোগান দিতেও দেখা গেছে ইশরাক সমর্থকদের।
এর মধ্যে রয়েছে- ‘শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘শপথ নিয়ে তালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘অবিলম্বে ইশরাক হোসেনের শপথ চাই, দিতে হবে’, ‘জনতার মেয়র ইশরাক ভাই, অন্য কোনো মেয়র নাই’ প্রভৃতি। এ সময়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন তারা।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা শফিউর রহমান নামের এক বিএনপিকর্মী বলেন, ‘ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে টালবাহানা করা হচ্ছে। আর এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
সূত্রাপুর থেকে আসা জেহাদ হোসেন বলেন, ‘জনগণের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ইশরাক। মেয়র হিসেবে দ্রুত দায়িত্বে আমরা তাকে দেখতে চাই।’
‘সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন, কেন তাকে এখনো শপথ গ্রহণ করানো হচ্ছে না? শপথ যত দিন পড়ানো হবে না, ততো দিন আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। যদি এটা নিয়ে কোনো টালবাহানা হয়, আমরা আরও বড় কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো,’ বলেন তিনি।
এরআগে শনিবার ইশরাককে মেয়র পদে শপথ পড়াতে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা হয়েছে। পরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ইশরাকের সমর্থকরা। ডিসেম্বরে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক কাজ চলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি ভবনে।
নিজেকে ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শনিবার স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠিও দেন ইশরাক হোসেন। এরপর সন্ধ্যায় ডাকেন সংবাদ সম্মেলন।
এক সাংবাদিক ইশরাকের কাছে জানতে চান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সঙ্গে তার কোনো বিরোধ আছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বা অন্য কোনো উপদেষ্টার সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধও নাই, ব্যক্তিগত সম্পর্কও নাই।’
তবে এই কর্মসূচির কারণে দাপ্তরিক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন নগর সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অফিসে ঢুকতে পারছি না। এ কারণে আমরা সাইটগুলো পরিদর্শন করছি, উন্নয়নমূলক কাজগুলো সরেজমিনে দেখছি।’
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে ইশরাকের শপথ অনুষ্ঠান এখনও হয়নি।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে আটক করা হয়েছে।
রবিবার (১৮ মে) বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। তাকে রাজধানী ভাটারা থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।
তার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলায় রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে।
ভাটারা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘নুসরাত ফারিয়াকে ইমিগ্রেশন থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে আমার থানায় মামলা রয়েছে। তাকে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত হস্তান্তর করা হয়নি।’
‘যতটুকু জানতে পেরেছি, তাকে ডিবি অফিসে নেওয়া হচ্ছে। তবে তাকে কোন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে, সেটা নিশ্চিত নই,’ বলেন তিনি।
২০২৩ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগালের ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এছাড়া, বান্দরবান জেলাসহ খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
গতকাল (শনিবার) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ ভোর ৬ টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাঙামাটিতে ১২১ মিলিমিটার। এছাড়া সিলেটে ৯৪, কুতুবদিয়ায় ৭৫, কক্সবাজারে ৭৩ এবং গোপালগঞ্জ ও সৈয়দপুরে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯১ শতাংশ। ঢাকায় বাতাসের গতি দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে।
ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে।
রাজধানীর পূর্বাচলে দশ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৫ মে দিন ধার্য করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালতে আসামিদের গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। আজ পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিল না করায় বিচারক নতুন এদিন ধার্য করে আদেশ দেয়।
এর আগে ১০ এপ্রিল আদালত মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আজ দিন ধার্য ছিল।
শেখ হাসিনা-পুতুল ছাড়াও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া অপর ১৬ আসামি হলেন- জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান, তদন্ত প্রাপ্তে আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
রাজধানীর পূর্বাচলে দশ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় গত চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ আরো দুই আসামিসহ শেখ হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। চার্জশিটে সাক্ষী করা হয়েছে ১৬ জনকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় নিজের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও সেটি গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে মা শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গণকর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনসম্মত পারিশ্রমিক না হওয়া সত্ত্বেও, আইনমতে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের ২০৩নং রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রি মূলে প্লট গ্রহণ করেন।
প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক দেওয়া ও নেওয়া এবং অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ ও বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে দণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার যে অধিকার রয়েছে তা পূর্ণাঙ্গরূপে ভোগ করতে প্রস্তুত রয়েছি।
সম্প্রতি বিএনপির এক শীর্ষস্থানীয় নেতা খলিলুর রহমানকে বিদেশি নাগরিক বলে অভিযোগ করার পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিএনপি নেতার অভিযোগের জবাবে ড. খলিলুর রহমান আজ বাসসকে বলেন, ‘এই অভিযোগ প্রমাণের দায়ভার অভিযোগকারীর ওপর বর্তায় এবং প্রয়োজনে তা আদালতে প্রমাণ করতে হবে।’
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমি একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমার পূর্ণাঙ্গ অধিকার ভোগ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’
সম্প্রতি বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান একজন বিদেশি নাগরিক।
গেজেট হলেও মেয়র হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে এখনও শপথ না পড়ানোয় নগর ভবন হিসেবে পরিচিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয়ের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে গতকাল শনিবার তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন ও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গতকাল তারা ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয়ের সব গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা ৬৫টি তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে নগর ভবনের দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ পড়াতে এখনও উদ্যোগ না নেওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় নগর ভবনের সামনে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। পরে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগর ভবন থেকে সচিবালয় এবং প্রেসক্লাব হয়ে পুনরায় নগর ভবনে সামনে এসে শেষ হয়।
ডিএসসিসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকেই নগর ভবনের কার্যক্রম মূলত বন্ধ। এ ভবনে থাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও ভবনে ঢুকতে পারছেন না। তাদের আনা-নেওয়ার জন্য গাড়িও করপোরেশন থেকে বের হতে পারছে না। এই দুই দিন ভবনের ফটক থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে। শুধু আঞ্চলিক অফিসের কার্যক্রম আর নগর ভবনের বাইরের কার্যক্রম চলছে।’
পরে নগর ভবনের সামনে এক সমাবেশে বিক্ষুব্ধ ঢাকাবাসীর পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাবেক সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান। তিনি জানান, রোববারও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন ঢাকাবাসী।
বিক্ষোভ থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি তাদের যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ২য় দিনের মতো একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নগরের বাসিন্দারা। সেদিন নগরভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি চলে। সেই কর্মসূচিতে নগরবাসীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নগরভবনের সামনে অবস্থানকারী বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, এখন পর্যন্ত ইশরাকের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই তারা ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে এই বিক্ষোভ করেছেন।
শান্তিপূর্ণ এই অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নগরের বাসিন্দারা বলছেন, আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুযায়ী ইশরাক হোসেন বৈধ মেয়র। এরপরও কেন তাকে এখনো শপথ করানো হয়নি, তার ব্যাখ্যা চাচ্ছেন তারা। তাদের দাবি, একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, মশামুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত ঢাকা গড়তে ইশরাকের মতো জনবান্ধব মেয়র প্রয়োজন।
তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যতদিন ইশরাক হোসেনকে শপথ করানো না হবে, ততদিন তারা নগর ভবনের সামনে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেবেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।
এ সময় ইশরাক অভিযোগ করে বলেন,নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের ২০ দিন পার হলেও সরকার মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তিনি তাকে ঢাকা ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে শপথ পাঠ করাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান।
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘গেজেট প্রকাশ হওয়ার পরও স্থানীয় সরকার বিভাগ আমাকে শপথ পড়ানোর জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। আমি চাই দ্রুত সময়ে শপথ পড়িয়ে আদালতের রায় রাস্তবায়ন করুন।’
সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে, ধানের শীষের প্রার্থীর প্রতি বৈষ্যম করা হচ্ছে। এই মামলাটি ছিল নৌকার প্রার্থীর শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে…তাদের পক্ষ হয়ে এখন কারা এই মামলায় বাধাদান করতে পারে? তাহলে তারা সেই দোসরদেরই লোক হয়ে গেলো… তাই না। আমি দোষ দেবো ওই দোসরদেরকে, আমি অন্য কাউকে দোষ দেবো না। আমি সকল পক্ষ যারা এখানে রেসপনসেবল পার্টি রয়েছেন সবাইকে বলব, যত দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপনারা আদালতের রায় কার্যকর করুন, রায়টি বাস্তবায়ন করুন..।’
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়াকে নগর ভবনে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি এই আন্দোলনের ঘোষণা দেই নাই, আদেশ-নির্দেশনা কিছুই দেই নাই। সেক্ষেত্রে আমি তাদেরকে (আন্দোলনকারীদের) অবশ্যই আমি বলব, তারা যাতে এমন কিছু না করে যেটাতে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি আমি তাদের আন্দোলন করার অধিকারকে আমি না বলতে পারি না। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কেউ যদি আন্দোলন করে আমি তাদেরকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অধিকার রাখি না।’
শপথ গ্রহণের বিলম্বে কোনো রাজনৈতিক দলকে দোষী করছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে ইশরাক বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো এক ব্যক্তি বা সরকারকে দোষারোপ করছি না। আমরা এটা সমাধান চাচ্ছি...এটাই। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বা অন্য কোনো উপদেষ্টার আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধও নাই, ব্যক্তিগত সম্পর্কও নাই। তাদের (উপদেষ্টাদের) ৯৯ শতাংশের সাথে আমরা কোনোদিনই দেখাও হয়নি, পরিচয়ও নাই। সেজন্য এই প্রশ্নটি একেবারেই অবান্তর।’
আদালতের রায়ের বিস্তারিত তুলে ধরে ইশরাক বলেন, ‘গেজেট প্রকাশের ২০ দিন হয়ে গিয়েছে এখন পর্যন্ত আমাকে শপথ গ্রহণ করানোর জন্য কোন ধরনের পদক্ষেপ বর্তমান সরকার নেয় নাই যেটি কিনা এখতিয়ারে পড়ে.. বর্তমান সরকার বলতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে বোঝানো হচ্ছে যেখানে নির্বাচন কমিশন থেকে এই নির্দেশনাটি গেজেটসহ স্থানীয় সরকার বিভাগে অর্থাৎ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো হয়। পাঠানোর পর তারা আরেকটি যে কাজ করে সেটিকে আইনের দৃষ্টিতে অনেকেই বলেছে এটি বেআইনি সেটি হলো তারা পাল্টা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে লিখে সেখানে একাধিক একটা রেফার দিয়ে বলার চেষ্টা করে যে এখানে আপিল করবে কিনা। অথচ নির্বাচন কমিশন কিন্তু তার যে আইনজীবী প্যানেল রয়েছে তার যে বিজ্ঞ আইনজীবীরা রয়েছেন এবং তার যে প্রক্রিয়া রয়েছে সেটি সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ কমিশন মিলেই কিন্তু সিদ্ধান্ত দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে ফেলেছে। অতএব এখানে একটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কি নির্বাচন কমিশনকে অলমোস্ট নির্দেশনা দিতে পারে কিনা সেই বিষয়টি এখন প্রশ্ন হিসেবে চলে এসেছে। সো এখানে আমরা দেখছি যে নির্বাচন কমিশনের উপর ইতোমধ্যেই এই সরকার এক ধরনের হস্তক্ষেপ শুরু করেছে।’
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কথা উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপরে এরকম হস্তক্ষেপ হলে সেটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে সেটা নিয়ে জনগণ এখন সংকিত হয়ে পড়েছে। এদের এই বর্তমান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে এই উপদেষ্টা পরিষদের অধীনে একটি সঠিক সুস্থ নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে কিনা সেটা নিয়ে জনমনে এখন শুধু সন্দেহ না, তারা এখন স্পষ্টতই দেখতে পারছে এটি সম্ভব নয়।’
শপথ পাঠ নিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘এই ব্যাপারেও নির্বাচন কমিশনও পাল্টা উত্তর দিয়েছে যে তারা সম্পূর্ণ আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে কোন কোন গ্রাউন্ডে কিভাবে তারা এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে এবং গ্যাজেটটি প্রকাশ করেছে। সেটি পাওয়ার পরে আইন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তারা এখন কালক্ষেপণ করার জন্য আবারো চিঠি দিয়েছে। এখন কোথায় দিয়েছে সেটা বলতে পারছি না। কেউ বলছে, আইন মন্ত্রণালয় দিয়েছে… কেউ বলছে সলিসিটর অফিসে দিয়েছে। নানা ধরনের কালক্ষেপনের আশ্রয় তারা নিয়েছে। এটির মধ্যে দিয়ে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে একটি সরকারের ভেতরে একটি সরকার রয়েছে যারা এখন দলীয় আচরণ করছে। তারা একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য তাদের পলিসি অনুযায়ী তারা কাজ করে চলেছে। কারণ এর মাঝে আরেকটি ঘটনা আপনারা দেখতে পাবেন। যে এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) থেকে তারা বিবৃতি দেয় সেখানে বলা হয় যে এরকম এই রায়ের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয় এমনকি যে বিচারক তার ব্যাপারেও বিষোদগার করা হয় যেটি কিনা অত্যন্ত দুঃখজনক সেটা আমরা আওয়ামী লীগ আমলে দেখতে পেয়েছি যে, তাদের পক্ষে কোন রায় না গেলে সেটা বিচারকদের উপরে তারা টার্গেট করতো বিচারকদের বিষয়ে প্রথমে তারা হুমকি-ধামকি দিত। পরবর্তীতে অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলত।’
আমি ইশরাক কি ফ্যাসিস্টদের পক্ষে ছিলাম এমন প্রশ্ন তুলে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে এনসিপি যদি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার বা গণঅভ্যুত্থানের ফসলের সরকার হয়ে থাকে। আমি ইশরাক হোসেন, আমি কি শেখ হাসিনার পক্ষের কেউ ছিলাম? নাকি শেখ হাসিনার বিপক্ষে আন্দোলনটাও কম করেছি? নাকি শেখ হাসিনার মধু খেয়ে আমি রাজনীতি করেছি? সেটার জবাব জনগণ জানে কিভাবে দিতে হয় এই সরকারকে প্রয়োজন সম্মত দিয়ে দিবে তো আমার বিপক্ষে কেন তার কারণ হচ্ছে জাস্ট বিকজ আমি বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী এবং তারা চাচ্ছে যে তাদের নিজস্ব দলীয় ব্যক্তিদেরকে প্রশাসক হিসেবে বসাবে এবং আগামী নির্বাচনের সময় একটা ফায়দা লুটবে এবং বর্তমানে যে অর্থনৈতিক লুটপাট চলছে নগরভবন কেন্দ্রিক এবং বিভিন্ন ঠিকাদারি বিভিন্ন বিল সবকিছুতে সেগুলা চলমান রাখার জন্য তারা এখন আমাকে বাধা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এই আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হচ্ছে উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, ‘‘আমরা আইনি বিষয়ে জোরালোভাবে জোর দিচ্ছি। অন্য কোন কিছু আমরা করছি না। আমরা কোন আন্দোলনের দলীয় ঘোষণাও দেই নাই, কিছুই করি নাই। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা প্রতিবাদ করছে। এটা জনগণের অধিকার। তারা প্রতিবাদ করতেই পারে এবং করেই যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব মশিউর রহমান ও ইশরাকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট তহেরুল ইসলাম ত্রৌহিত ও অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।