প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামকে শান্তি, সৌহার্দ্য ও মানবতার ধর্ম আখ্যায়িত করে ইমামদের প্রতি তৃণমূলে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ আমাদের দেশে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা বা নির্যাতন না করার জন্য আপনাদের (ইমাম-মুয়াজ্জিন,আলেম, ওলামা) সহযোগিতা চাই। আপনাদেরকে তৃণমূলে শান্তি বজায় রাখার জন্য কাজ করতে হবে যাতে আমরা দেশের আরও উন্নয়ন করতে পারি।’
শেখ হাসিনা সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতীয় ইমাম সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ-২০২৩’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে সারাদেশে ষষ্ঠ দফায় নবনির্মিত আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
নিজেদের ধর্ম পালনের পাশাপাশি দেশে বসবাসকারি অন্য ধর্মাবলম্বী যারা রয়েছেন তারা যেন সঠিকভাবে নিজ নিজ ধর্ম কর্ম করতে পারেন তা নিশ্চিত করারও আহবান জানান সরকার প্রধান।
সরকার প্রধান কোরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে বলেন, ‘যার যার ধর্ম সে পালন করবে এই বিষয়টা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। অন্যের ওপর কোন অন্যায়-অবিচার বা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ যেন সৃষ্টি না হতে পারে। কারণ, ইসলাম শান্তি সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির ধর্ম ইসলামের মর্মবাণী একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, আমাদের সকল মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং ওলামায়ে কেরামদের অনুরোধ করবো-ইসলাম শান্তির ধর্ম, সহনশীলতার ধর্ম। যা আমাদের নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সা:) শিখিয়েছেন। তাঁর যে বিদায় হজের বাণী সেই বাণীই আমরা অনুসরণ করি।
সরকার প্রধান বলেন, কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের দেশের কোন ছেলে-মেয়ে যেন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে না পারে সেজন্য আপনারা যথাযথ শিক্ষা দেবেন এবং সঠিক ব্যবস্থা নেবেন। মুষ্টিমেয় লোকের জন্য আমাদের প্রকৃত যে ধর্ম, শান্তির ধর্ম, বিশে^র সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্যই আপনাদের সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই আমাদের মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক। এদেশকে আমরা আরো সমৃদ্ধ ও উন্নত করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ ইমাম এবং আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
মসজিদ-ই-নববীর ইমাম শেখ ড.আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-বুয়াইজান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি’র বক্তৃতা করেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তরিকত ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, মাওলানা ড. মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন সরকার সালেহী ও মাওলানা এহসানুল হক আল মোজাদ্দেদী।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ধর্ম সচিব মো. এ হামিদ জমাদ্দার।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলা মডেল মসজিদ এবং কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম-মুসল্লি ও বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।
কভিড-১৯ দেখা দেওয়ার পর তাঁর সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারাদেশে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করে দেয় উলেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সারাদেশের দরিদ্র মানুষসহ সমস্ত শ্রেনী পেশার জনগণকে আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনা দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সৌদি বদশাহ’র সহযোগিতায় হজ ব্যবস্থার উন্নয়নে হজ ক্যাম্প স্থাপন ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়মমূলক পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া তাঁর সরকার দেশে একটি আরবি ইসলামিক বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে সৌদি বাদশাহ’র অনুদানে আরবি ভাষা শিক্ষারও একটি ইনষ্টিটিউট গড়ে উঠবে। কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসকে মাষ্টার্স ডিগ্রির সমমর্যাদা প্রদান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সংস্কার ও আধুনিকায়ন, ৩৫ হাজার মসজিদ ভিত্তিক পাঠাগার নির্মাণ, অর্থ ও বাংলা তরজমাসহ পবিত্র কোরআন শরিফের ডিজিটাল ভার্ষণ তৈরি, জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ প্রণয়ন, সীড মানি দিয়ে ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছে। বিত্তবানরাও এখানে সহায়তা দিতে পারেন।
দেশের ভূমিহীন গৃহহীন প্রত্যেক বিনা পয়সায় ঘর দেওয়া এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা তাঁর সরকার করে দিচ্ছে উল্লেখ করে বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে একজন এতিম হিসেবে নিজের ও পরিবার এবং দেশকে সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সকলের দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের আবারো নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইসরায়েল কতৃর্ক আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের ওপর যে আক্রমণ এবং নির্বিচারে ছোট্ট শিশু ও নারী হত্যা করা হচ্ছে আমরা এটা কখনো চাইনা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাধ্যমত ফিলিস্তিনের নারী-শিশু ও সাধারণ জনগণের জন্য ওষুধ ও শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও মানবতার ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমরা চাই সকলে শান্তিতে বসবাস করুক। তাঁর সাম্প্রতিক বেলজিয়াম সফরেও তিনি বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের কাছে যুদ্ধ থামানোর আহবান জানিয়েছেন বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগানোর মাধ্যমে দেশের সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোয় তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, যার যেটুকু জমি আছে তাতে ফসল ফলাতে হবে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ, আমরা কারো কাছে হাত পেতে চলবো না। জাতির পিতা যে বলেছিলেন ‘তাঁর মাটি আছে, মানুষ আছে, তা দিয়েই তিনি দেশকে গড়ে তুলবেন,’ সেভাবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলবো। কোনভাবেই আমাদের দেশের মানুষ যেন খাদ্যের জন্য কষ্ট না পায়। তাঁর সরকারের এক কোটি মানুষকে বিশেষ খাদ্য সহায়তা কার্ড প্রদানেরও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকার প্রধান আবারো সকলের দোয়া চেয়ে বলেন, আপনারা দোয়া করবেন যেন দেশের মানুষের সেবা করে যেতে পারি। আর বাংলাদেশ আজ যে উন্নযনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে সেই উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে। ভবিষ্যতে এই বাংলাদেশকে যেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড মেনে এই ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) নিউইয়র্কে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক মহাসচিবের এই বার্তা গণমাধ্যমে তুলে ধরেন। তিনি জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে সহিংসতা থেকে বিরত থেকে উত্তেজনা প্রশমন এবং দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
এদিকে, হাদি হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। গত ১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাদির মৃত্যুর ঘটনায় তিনি জেনেভা থেকে এক বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেন, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসা কেবল সমাজের বিভাজনকেই আরও গভীর করবে এবং সবার অধিকার ক্ষুণ্ন করবে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। দাফন শেষে বিকেল ৪টার দিকে কবরের পাশে সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মরহুমের বড় ভাই ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।
এর আগে বেলা ৩টার দিকে হাদির মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে পৌঁছায়। সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
শনিবার দুপুর আড়াইটার পর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন তার বড় ভাই। জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও এর আশপাশের এলাকায় মানুষের ঢল নামে। ‘আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো’, ‘হাদি ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’—এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। জানাজা উপলক্ষে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
জানাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার আগে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব জাবের ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
জানাজার আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, প্রিয় ওসমান হাদি, তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসিনি। তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছো এবং বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন তুমি সব বাংলাদেশির বুকে থাকবে। হাদির নির্বাচনী আকাঙ্ক্ষার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ওসমান হাদি নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিল এবং দেখিয়ে দিয়ে গেছে কীভাবে বিনয়ের সঙ্গে মানুষের কাছে গিয়ে প্রচারণা চালাতে হয়। তার সেই শিক্ষা আমরা গ্রহণ করলাম। তিনি আরও বলেন, হাদি কোথাও হারিয়ে যাবে না। তাকে আমরা আল্লাহর কাছে আমানত রাখলাম এবং তার আদর্শ ধারণ করে জাতির অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাব।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিয়ে আবেগঘন শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, হাদি কখনো হারিয়ে যাবে না, তাকে কেউ ভুলতে পারবে না। সে যুগ যুগ ধরে আমাদের সঙ্গেই থাকবে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত জানাজায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিদায়ী এই বীর যোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রিয় হাদি, তোমাকে আজ বিদায় দিতে আসিনি। তুমি আমাদের বুকের ভেতর আছো এবং বাংলাদেশ যতদিন আছে, ততদিন তুমি সকল বাংলাদেশির হৃদয়ে থাকবে। হাদির ‘বল বীর- চির উন্নত মম শির’ মন্ত্রকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, হাদি আমাদের কানে এমন এক মন্ত্র দিয়ে গেছে যা কেউ কখনো ভুলতে পারবে না। আমরা দুনিয়ার সামনে মাথা উঁচু করে চলবো, কারও কাছে মাথা নত করবো না।
শরিফ ওসমান হাদির নির্বাচনী প্রচারণার ধরণ ও বিনয়ের প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, হাদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে গেছে কীভাবে বিনীতভাবে মানুষের কাছে যেতে হয় এবং প্রচারণা চালাতে হয়। তার এই শিক্ষা ও আদর্শ জাতীয় রাজনীতিতে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি। তিনি হাদির বিদেহী আত্মাকে আল্লাহর কাছে আমানত হিসেবে সঁপে দিয়ে বলেন, আমরা সবসময় তোমার কথা স্মরণ রেখে জাতির অগ্রগতির পথে চলতে থাকবো।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকার পুরানা পল্টনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধের পাশেই শহীদ শরীফ ওসমান হাদির দাফনের জন্য কবর প্রস্তুত করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে কবর খোঁড়ার কাজ সম্পন্ন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, জাতীয় কবির কবরের দক্ষিণ দিকে ওসমান হাদিকে সমাহিত করা হবে। মসজিদের দেয়াল ঘেঁষে দ্বিতীয় স্লটের পূর্ব পাশে তার কবরের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
কবর প্রস্তুত কার্যক্রম পরিদর্শন ও তদারকির সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদির জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের বড় ভাই ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক।
এই জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এছাড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এবং সর্বস্তরের জনগণ জানাজায় শরিক হন। জানাজাকে কেন্দ্র করে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় মানুষের ঢল নামে। খামারবাড়ি থেকে আসাদ গেট পর্যন্ত পুরো এলাকাটি কার্যত জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয় এবং পরে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ওসমান হাদির মৃত্যুতে শনিবার দেশজুড়ে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। শোক পালনের অংশ হিসেবে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ দেশে পৌঁছেছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে নিহতদের মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম রাগিব সামাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী বর্বরোচিত ড্রোন হামলা চালায়। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্য নিহত হন এবং আহত হন আরও ৯ জন।
নিহত বীর শান্তিরক্ষীরা হলেন– নাটোরের করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মন্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।
হামলায় আহত শান্তিরক্ষীদের বর্তমানে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন এবং বাকিরাও শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে তিনজন নারী সদস্যও রয়েছেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। সুদানের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের পেশাদারিত্ব, সাহস ও এই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ কে খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় সৈনিক। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বগুণ দিয়ে তিনি দেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তার কৌশলগত সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক দক্ষতা স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও সুসংহত করেছিল। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং দেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে এই বাহিনীকে একটি সুসংগঠিত ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে অসামান্য অবদান রাখেন।
এ কে খন্দকারের সততা ও সাহসিকতার প্রশংসা করে ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তবে পতিত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সেই গ্রন্থের কারণে তিনি ব্যাপক রোষানলে পড়েন। প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরাই ছিল সেই শাসনের দৃষ্টিতে তার অপরাধ।
প্রধান উপদেষ্টা এ কে খন্দকারকে একজন দৃঢ়চেতা মুক্তিযোদ্ধা ও আদর্শনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তার কর্ম ও চিন্তা নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। এই বীর সন্তানের মৃত্যুতে দেশ তার এক শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো। শোকবার্তায় তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জুলাই যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির দাফনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের কবরস্থান এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য এই স্থানে নিয়ে আসার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে কবরস্থানের ভেতরে ও বাইরের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দাফনের জন্য কবর খোঁড়াসহ আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেকোনো ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কবরস্থানের মূল ফটক এবং আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদেরও সারিবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সশরীরে উপস্থিত থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, জানাজা ও দাফন ঘিরে প্রচুর জনসমাগমের সম্ভাবনা থাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে। তার জানাজায় অংশ নিতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালে স্থানান্তর করা হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ (উপ-সর্বাধিনায়ক) এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এ কে খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি। বাবার তৎকালীন কর্মস্থলের সুবাদে রংপুরে তার জন্ম হলেও তার পৈত্রিক নিবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। তার বাবা খন্দকার আব্দুল লতিফ ব্রিটিশ আমলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন এবং মা আরেফা খাতুন ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে এ কে খন্দকার ছিলেন তৃতীয়। বাবার চাকরির সুবাদে বগুড়া করোনেশন স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী এ কে খন্দকার ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে (পিএএফ) পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি ফাইটার পাইলট হিসেবে কাজ করেন এবং পরবর্তীতে ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ফ্লাইট কমান্ডার, জেট ফাইটার কনভারশন স্কোয়াড্রনের স্কোয়াড্রন কমান্ডার এবং পিএএফ একাডেমির ট্রেনিং উইং-এর অফিসার কমান্ডিং হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী ঘাঁটির সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং ডেপুটি চিফ অফ স্টাফের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তৎকালীন অন্তর্বতীকালীন সরকার তাকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দেয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যক্তিগত ডেপুটি ইন চার্জ বা উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধের ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জড়ো হতে শুরু করেছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। ছোটবড় মিছিল নিয়ে শত শত মানুষ সংসদ ভবন এলাকায় আসছেন।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ‘হাদি মরল কেন’, ‘ইউনূস সরকার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই, আমার ভাই-হাদি ভাই, হাদি ভাই’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’, ‘হাদি ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই’, ‘বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে সেখানে জড়ো হচ্ছে জনতা।
কুমিল্লা থেকে হাদির জানাজায় অংশ নিতে এসেছেন মশিউর রহমান নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ চাই যেখানে কোনো অন্যায় বরদাশত করা হবে না। হাদির জানাজায় অংশ নেওয়া আমার জীবনের বেদনাদায়ক ঘটনাগুলোর একটি। তিনি মারা গেলেও বিপ্লবী কণ্ঠস্বরের মধ্য দিয়ে বিপ্লবী তরুণদের হৃদয়ে যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন।
দুপুরে ২টায় ওসমান হাদির জানাজা পড়াবেন তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। এরপর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তার দাফন হবে।
হাদির জানাজা ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবনসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং আশেপাশে এলাকাজুড়ে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এক হাজার বডি-ওর্ন ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে ডিএমপি।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদ ভবন ও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বডি-ওর্ন ক্যামেরা ও রায়োট কন্ট্রোল গিয়ারসহ ২০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ছাড়া জানাজায় যারা অংশগ্রহণ করবেন, তাদের কোনো ধরনের ব্যাগ বা ভারি বস্তু বহন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। পাশাপাশি জানাজা চলাকালে সংসদ ভবন এলাকায় ও আশপাশে ড্রোন ওড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চ এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছে, পরিবারের দাবির ভিত্তিতে তাদের সংগঠনের আহ্বায়ককে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হাদির মৃত্যুর ঘটনায় আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে।
গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় করে যাওয়ার সময় ওসমান হাদির উপর আক্রমণ হয়। ওই সময় মোটরসাইকেলে করে এসে দুজন তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে পরিবারের ইচ্ছায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলে।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল; সেখানেই বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।সূত্র : ইউএনবি
আজ বেলা দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে এসময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্র ও সর্বস্তরের জনতা।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই শাহবাগ এলাকায় মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে সেখানে ছাত্র-জনতার ঢল নামে।
বিক্ষোভের মধ্যেই মুসল্লিদের শাহবাগ মোড়ে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। নামাজ শেষে মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনের কারণে শাহবাগ মোড়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে।
এদিন বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েমের ঘোষণায় শাহবাগে শুরু হয় আধিপত্যবাদবিরোধী সমাবেশ। মৎস্য ভবনমুখী সড়কে ডাকসু সদস্যরা একটি ট্রাকের ওপর অবস্থান নিয়ে নানা প্রতিবাদী স্লোগান দেন। পাশাপাশি জুলাই ভাস্কর্যের পাদদেশে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সদস্যদেরও বিশাল অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের ‘আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি লড়াই করে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছেন। তারা হাদি হত্যার বিচার এবং ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।
বিক্ষোভকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, ওসমান হাদির লাশ ঢাকায় পৌঁছানো পর্যন্ত তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
এর আগে জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে শাহবাগে এসে সমাবেশে যোগ দেন।
গত ১২ ডিসেম্বর রিকশা আরোহী হাদি মোটরসাইকেলে থাকা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওই দিন রাতেই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার পর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজা নামাজের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার পরিবর্তে আধাঘন্টা এগিয়ে এনে দুপুর দুইটায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস উইং থেকে বলা হয়, ‘আগামীকাল (শনিবার, ২০ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
ওসমান হাদির জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে সরকার। যারা জানাজায় অংশগ্রহণ করবে তারা কোনো ধরনের ভারী ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া, জানাজার সময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে সরকার।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌঁনে ছয়টায় ঢাকায় পৌঁছে ওসমান হাদির মরদেহ। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ হিমাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।