প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামকে শান্তি, সৌহার্দ্য ও মানবতার ধর্ম আখ্যায়িত করে ইমামদের প্রতি তৃণমূলে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ আমাদের দেশে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা বা নির্যাতন না করার জন্য আপনাদের (ইমাম-মুয়াজ্জিন,আলেম, ওলামা) সহযোগিতা চাই। আপনাদেরকে তৃণমূলে শান্তি বজায় রাখার জন্য কাজ করতে হবে যাতে আমরা দেশের আরও উন্নয়ন করতে পারি।’
শেখ হাসিনা সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতীয় ইমাম সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ-২০২৩’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে সারাদেশে ষষ্ঠ দফায় নবনির্মিত আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
নিজেদের ধর্ম পালনের পাশাপাশি দেশে বসবাসকারি অন্য ধর্মাবলম্বী যারা রয়েছেন তারা যেন সঠিকভাবে নিজ নিজ ধর্ম কর্ম করতে পারেন তা নিশ্চিত করারও আহবান জানান সরকার প্রধান।
সরকার প্রধান কোরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে বলেন, ‘যার যার ধর্ম সে পালন করবে এই বিষয়টা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। অন্যের ওপর কোন অন্যায়-অবিচার বা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ যেন সৃষ্টি না হতে পারে। কারণ, ইসলাম শান্তি সম্প্রীতি ও মানবতার ধর্ম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির ধর্ম ইসলামের মর্মবাণী একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, আমাদের সকল মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং ওলামায়ে কেরামদের অনুরোধ করবো-ইসলাম শান্তির ধর্ম, সহনশীলতার ধর্ম। যা আমাদের নবী করিম হযরত মুহাম্মদ (সা:) শিখিয়েছেন। তাঁর যে বিদায় হজের বাণী সেই বাণীই আমরা অনুসরণ করি।
সরকার প্রধান বলেন, কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের দেশের কোন ছেলে-মেয়ে যেন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে না পারে সেজন্য আপনারা যথাযথ শিক্ষা দেবেন এবং সঠিক ব্যবস্থা নেবেন। মুষ্টিমেয় লোকের জন্য আমাদের প্রকৃত যে ধর্ম, শান্তির ধর্ম, বিশে^র সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্যই আপনাদের সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই আমাদের মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক। এদেশকে আমরা আরো সমৃদ্ধ ও উন্নত করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ ইমাম এবং আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
মসজিদ-ই-নববীর ইমাম শেখ ড.আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-বুয়াইজান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি’র বক্তৃতা করেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তরিকত ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, মাওলানা ড. মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন সরকার সালেহী ও মাওলানা এহসানুল হক আল মোজাদ্দেদী।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ধর্ম সচিব মো. এ হামিদ জমাদ্দার।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলা মডেল মসজিদ এবং কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম-মুসল্লি ও বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।
কভিড-১৯ দেখা দেওয়ার পর তাঁর সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারাদেশে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করে দেয় উলেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সারাদেশের দরিদ্র মানুষসহ সমস্ত শ্রেনী পেশার জনগণকে আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনা দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সৌদি বদশাহ’র সহযোগিতায় হজ ব্যবস্থার উন্নয়নে হজ ক্যাম্প স্থাপন ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়মমূলক পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া তাঁর সরকার দেশে একটি আরবি ইসলামিক বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে সৌদি বাদশাহ’র অনুদানে আরবি ভাষা শিক্ষারও একটি ইনষ্টিটিউট গড়ে উঠবে। কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসকে মাষ্টার্স ডিগ্রির সমমর্যাদা প্রদান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সংস্কার ও আধুনিকায়ন, ৩৫ হাজার মসজিদ ভিত্তিক পাঠাগার নির্মাণ, অর্থ ও বাংলা তরজমাসহ পবিত্র কোরআন শরিফের ডিজিটাল ভার্ষণ তৈরি, জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ প্রণয়ন, সীড মানি দিয়ে ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছে। বিত্তবানরাও এখানে সহায়তা দিতে পারেন।
দেশের ভূমিহীন গৃহহীন প্রত্যেক বিনা পয়সায় ঘর দেওয়া এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা তাঁর সরকার করে দিচ্ছে উল্লেখ করে বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে একজন এতিম হিসেবে নিজের ও পরিবার এবং দেশকে সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সকলের দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের আবারো নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইসরায়েল কতৃর্ক আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের ওপর যে আক্রমণ এবং নির্বিচারে ছোট্ট শিশু ও নারী হত্যা করা হচ্ছে আমরা এটা কখনো চাইনা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাধ্যমত ফিলিস্তিনের নারী-শিশু ও সাধারণ জনগণের জন্য ওষুধ ও শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও মানবতার ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমরা চাই সকলে শান্তিতে বসবাস করুক। তাঁর সাম্প্রতিক বেলজিয়াম সফরেও তিনি বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের কাছে যুদ্ধ থামানোর আহবান জানিয়েছেন বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগানোর মাধ্যমে দেশের সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোয় তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, যার যেটুকু জমি আছে তাতে ফসল ফলাতে হবে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ, আমরা কারো কাছে হাত পেতে চলবো না। জাতির পিতা যে বলেছিলেন ‘তাঁর মাটি আছে, মানুষ আছে, তা দিয়েই তিনি দেশকে গড়ে তুলবেন,’ সেভাবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলবো। কোনভাবেই আমাদের দেশের মানুষ যেন খাদ্যের জন্য কষ্ট না পায়। তাঁর সরকারের এক কোটি মানুষকে বিশেষ খাদ্য সহায়তা কার্ড প্রদানেরও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকার প্রধান আবারো সকলের দোয়া চেয়ে বলেন, আপনারা দোয়া করবেন যেন দেশের মানুষের সেবা করে যেতে পারি। আর বাংলাদেশ আজ যে উন্নযনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে সেই উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে। ভবিষ্যতে এই বাংলাদেশকে যেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
বাংলাদেশের সবুজ প্রযুক্তি, পাট, বস্ত্র ও ওষুধশিল্পে বড় ধরনের বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীনা বিনিয়োগকারীরা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত উৎপাদন খাতের রূপান্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এ আগ্রহ এসেছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠককালে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়নার (এক্সিম ব্যাংক) ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং দোংনিং এ আগ্রহের কথা জানান।
সেসময় তার সঙ্গে ছিলেন চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির প্রেসিডেন্ট ড. মা জুন।
ইয়াং দোংনিং বলেন, বাংলাদেশে চীনের দীর্ঘদিনের অবকাঠামো বিনিয়োগের পাশাপাশি এখন তারা উৎপাদন খাতে মনোযোগ দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে রুফটপ সোলার প্যানেল এবং দেশের ‘সোনালি আঁশ’ পাটকে কেন্দ্র করে জ্বালানি, বায়োসার ও প্লাস্টিকের বিকল্প তৈরির বড় প্রকল্প।
তিনি জানান, এসব সরাসরি উৎপাদন বিনিয়োগে এক্সিম ব্যাংকও অর্থায়নে আগ্রহী।
ড. মা জুন বলেন, ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্প চীনা বিনিয়োগকারীদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। তারা স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায়।
তিনি জানান, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজ জ্বালানি, সার ও প্লাস্টিকের বিকল্প তৈরির জন্য বছরে ১০ লাখ টন পর্যন্ত পাট ব্যবহার করতে প্রস্তুত।
ড. মা আরও জানান, চীনা অর্থায়নে পাটভিত্তিক যৌথ উদ্যোগের বড় সুযোগ রয়েছে।
চীনের এই আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চীনা বিনিয়োগকারীরা চাইলে বাংলাদেশকে উৎপাদনশীল পণ্য রপ্তানির একটি হাবে রূপান্তর করা সম্ভব—যা উন্নত দেশসহ চীনে রপ্তানির সুযোগ বাড়াবে। তিনি ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবাকে চীনা বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ড. ইউনূস আরও বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌরশক্তি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে চীন রুফটপ সোলারসহ সবুজ জ্বালানি খাতে বাংলাদেশকে সহায়তায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে উৎপাদন কারখানা স্থানান্তরে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, দেশের বিপুল তরুণ কর্মশক্তি ও বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো যৌথ উদ্যোগে ব্যবহারের বড় সুযোগ তৈরি করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। আমরা চাই এগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে যাক।’
ইয়াং দোংনিং জানান, এআই ও ই-কমার্স খাতেও বিনিয়োগের সুযোগও চীন বিবেচনা করছে—যে দু’টি ক্ষেত্রে চীন ইতিমধ্যে বৈশ্বিক নেতৃত্বে রয়েছে।
জবাবে প্রধান উপদেষ্টা চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কারখানা স্থাপনের আমন্ত্রণ জানান।
তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর এবং মিয়ানমার-থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারের কৌশলগত নিকটতা বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই অঞ্চলের সমুদ্রুপ্রবেশাধিকারে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। চীনা শিল্প কারখানাগুলো এখানে স্থানান্তর করলে উৎপাদিত পণ্য উন্নত দেশসহ চীনেও রপ্তানি করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ চীনের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে আঞ্চলিক সংযোগ বাড়বে এবং স্থানান্তরিত কারখানার পণ্য রপ্তানি আরও সহজ হবে।
বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা হংকংয়ের একটি আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর সমবেদনা জানান।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং ঢাকায় নিয়োজিত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন উপস্থিত ছিলেন।সূত্র : বাসস
বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করা বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার পাঠানো ধন্যবাদ বার্তায় জাতিসংঘ জানায়, ‘বাংলাদেশ থেকে ৫ হাজার ৬০০ জনের বেশি সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তা বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘের সাতটি শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তির জন্য কাজ করছেন, যারা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের সুরক্ষার জন্য তাদের নিজ পরিবারকে পেছনে ফেলে যাচ্ছেন। আমরা এই সাহসী নারী ও পুরুষদের তাদের সেবা ও ত্যাগের জন্য ধন্যবাদ জানাই।’
জাতিসংঘ বলছে, ‘১৯৪৮ সাল থেকে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বিশ্বজুড়ে হটস্পটগুলোতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসাবে কাজ করেছে, যার মধ্যে আজ ৬৫ হাজারেরও বেশি দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।’
‘তারা যুদ্ধ-ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নত ভবিষ্যতের আশা প্রদান করে এবং তারা প্রায়শই অত্যন্ত ব্যক্তিগত ঝুঁকিতে এবং খুব কঠোর পরিস্থিতিতে এটি করে, তাদের পরিবারকে তাদের মাতৃভূমি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে রেখে যায়। জাতিসংঘের পতাকার নিচে কাজ করে ৪ হাজার ৪০০ জনেও বেশি শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন।’
জাতিসংঘ আরও জানায়, ‘জাতিসংঘের নিজস্ব কোনও পুলিশ বা সামরিক বাহিনী নেই। এটি তার শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অবদানের রাখার জন্য জাতিসংঘের পৃথক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা ১০০টিরও বেশি সৈন্য এবং পুলিশ প্রেরণকারী দেশ থেকে এসেছে। তবে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের সুরক্ষা এবং স্থিতিশীলতা প্রদানে সহায়তা করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ। সম্মিলিতভাবে তারা প্রতিদিন সাহস এবং সহানুভূতির কাজ করেন।’
আন্তর্জাতিক এই সংস্থা আরও বলছে, ‘তাদের নিয়মিত বাধ্যতামূলক কার্যক্রমের বাইরেও যেমন- বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করা এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে সমর্থন করা— শান্তিরক্ষীরা প্রায়শই বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং পশুদের চিকিৎসা ও যত্ন করছে। পানি সরবরাহের মতো মানবিক প্রচেষ্টা পরিচালনা করে, স্কুল এবং এতিমখানাগুলোকে সহায়তা করা, রাস্তা এবং সেতু এবং অন্যান্য মূল অবকাঠামো তৈরি করা— যা সম্প্রদায়কে উপকৃত করে এবং মানুষকে একত্রিত করে।’
‘জাতিসংঘ সব শান্তিরক্ষীদের সেবা ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানায় এবং সামরিক ও পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে আমাদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সরবরাহকারী সমস্ত দেশের অবদানের প্রশংসা করে। তাদের সেবা ও ত্যাগের পাশাপাশি সাহস ও করুণার কাহিনি শোনার মতো।’
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে নিয়মানুযায়ী প্লট বরাদ্দের কোনো আবেদন না করলেও প্লটের দখল বুঝে পেতে ঠিকই আবেদন করেছিলেন। এতে বোঝা যায়, সম্পদের প্রতি লোভ ছিল তার। শেখ হাসিনা ও তার দুই সন্তানের বিরুদ্ধে পূর্বাচলের প্লট দুর্নীতির মামলায় রায় ঘোষণার সময় এ কথা বলেছেন ঢাকার বিশেষ জজ-৫ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। বৃহস্পতিবার তিনি এ রায় দেন।
বিচারক বলেন, শেখ হাসিনা নিজে প্লট নেওয়ার পর তার ছেলে ও মেয়ের নামেও বরাদ্দ নেন। এরপর তার বোন শেখ রেহানা, বোনের মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নামেও বরাদ্দ নিয়েছেন। জনগণের সম্পত্তির প্রতি ওনার লোভাতুর দৃষ্টি পড়েছে। উনি চারবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এরপরও জনগণের সম্পদ থেকে লোভ সামলাতে পারেননি।
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির পৃথক ৩ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ বছর করে ২১ বছর কারাদণ্ডাদেশ হয়েছে। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে দেওয়া হয়েছে ৫ বছর করে কারাদণ্ড। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তার তিন সন্তানকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার হয়েছে।
রায়ে শাস্তি ঘোষণার আগে বিচারক এ মামলার পটভূমি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘প্লট দুর্নীতির বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমেই উঠে আসে। মিডিয়া যে চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে, আমরা এ মামলার মাধ্যমে দেখলাম। আপনাদের রিপোর্ট না থাকলে দুদক কখনোই এ মামলা করত না। পত্রিকা রিপোর্টের আলোকেই দুদক পদক্ষেপ নিয়েছে।’
বিচারক প্রথমে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় দেন। তিনি বলেন, রাজউকের ক্ষেত্রে দুই ধরনের ক্যাটাগরিতে প্লট দেওয়া হয়। একটা জেনারেল, আরেকটা স্পেশাল। এ মামলার বিষয়টি স্পেশাল ক্যাটাগরি।
দুদক আইনের পঞ্চম ধারার কথা উল্লেখ করে বিচারক বলেন, যদি কেউ আবেদন না করে, তাহলে সে প্লট পাবেই না। কিন্তু আমরা দেখেছি, এ প্লটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে কোনো ধরনের আবেদন ছাড়াই।
বিচারক বলেন, ২০২২ সালের ১৮ জুলাই তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ উদ্দিন আহমেদ আইনটি না মেনে শেখ হাসিনার প্লট বরাদ্দ দেওয়ার অনুমোদন দেন। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার, ওয়াছি উদ্দিনসহ অন্যরাও প্লট দেওয়ার জন্য রাজউককে সুপারিশ করেন। ওই বছরের ১৯ জুলাই রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশপত্র পাঠানোর পর তা রাজউকের বোর্ড সভায় নিয়ম না মেনেই অনুমোদন হয়।
রায়ের সময় বলা হয়, ২০২২ সালের ১৮ জুলাই তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ উদ্দিন আহমেদ আইনটি না মেনে শেখ হাসিনার প্লট বরাদ্দ দেওয়ার অনুমোদন দেন। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যরাও প্লট দেওয়ার জন্য রাজউককে সুপারিশ করেন। রাজউকের বোর্ড সভায় নিয়ম না মেনেই অনুমোদন হয়।
বিচারক বলেন, বোর্ড সভায় রাজউকের চেয়ারম্যানসহ সদস্যরা থাকেন। তাদের একজন খুরশীদ আলম (আসামি) আজ আমাদের মাঝে আছেন। সেখানে তারা দেখেছেন, কোনো আবেদন নেই। কিন্তু তারা আইনের তোয়াক্কা না করে অনুমোদন করেন, প্রধানমন্ত্রীকে প্লট দেওয়া হোক। ২৭ জুলাই রাজউক থেকে পত্র ইস্যু করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, প্লটের জন্য আপনাকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
দেশের কৃষিকে দীর্ঘমেয়াদে আধুনিক ও টেকসই রূপ দিতে সরকার ২৫ বছরের একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে। ভবিষ্যতের ঝুঁকি, প্রযুক্তির অগ্রগতি- সবকিছু মিলিয়ে এ সমন্বিত কাঠামো তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ডিসেম্বরেই এর চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হয়ে যাবে।
আজ বৃহস্পতিবার ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব তথ্য জানান কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের (বিএজেএফ) আয়োজনে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্মেলনটি হচ্ছে। প্রথম দিনের বিষয়বস্তু ছিল- ‘কৃষির রূপান্তর: দেশীয় উপযোগী কৃষিযন্ত্র ও কৃষিপণ্য রপ্তানির চ্যালেঞ্জ’।
সচিব জানান, ১৩টি মূল খাত এবং এর অধীন অসংখ্য উপখাতকে সামনে রেখে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৭টি সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্যও আলাদা ২৫ বছর মেয়াদি রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদে কয়েকটি পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পও নেওয়া হবে। তবে প্রতিটি প্রকল্পই বিশদ গবেষণা ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নেওয়া হবে।
সারের খরচ সাশ্রয়
অনুষ্ঠানে সার ব্যবস্থাপনা সংস্কার নিয়ে সচিব বলেন, ‘আমরা এমন একটি নীতি প্রণয়ন করছি যাতে প্রতি বছর দুই-তিন হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। চলতি বছর সাশ্রয় হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের ৬০০ কোটি টাকা ফেরত গেছে সরকারের কোষাগারে। ২০ কোটি দিয়ে পুরো প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবজির দাম কেজি ১০০ টাকা হলে কেউ কথা বলেন না, কিন্তু পেঁয়াজের দাম ১০০ হলেই আলোচনার ঝড় ওঠে। কৃষক কি ন্যায্য দাম পাবেন না?’ আগামী তিন বছরের মধ্যে আদা ও পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যও তুলে ধরেন তিনি। একই সঙ্গে আলুর দাম না পেয়ে কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় তীব্র আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
কৃষিযন্ত্রে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) যান্ত্রিক ধান চাষাবাদ প্রকল্পের পরিচালক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয়ভাবে কৃষিযন্ত্র তৈরির পূর্ণাঙ্গ ইকোসিস্টেম তৈরি করছে ব্রি। শ্রীলঙ্কা, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এখন দেশেই মানসম্পন্ন কৃষিযন্ত্র তৈরি হচ্ছে। যা সময়, ব্যয়, শ্রম-সংকট- সব ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
তিনি জানান, মাঠপর্যায়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টি, মেকানিক প্রশিক্ষণ, সার্ভিস হাব, খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ- সব মিলিয়ে একটি সমন্বিত কাঠামো তৈরিতে কাজ করছে ব্রি।
যে কারণে থেমে আধুনিক কৃষিযন্ত্র উৎপাদন
দেশে আধুনিক কৃষিযন্ত্র উৎপাদনের বড় বাধাগুলোর দিকে আঙুল তোলেন ব্রি–এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দুরুল হুদা। তার ভাষায়, হালকা প্রকৌশল খাতের অদক্ষতা, সিএনসি-ভিত্তিক প্রযুক্তির অভাব, দক্ষ জনবল সংকট- সব মিলিয়ে স্থানীয় উদ্যোক্তারা আন্তর্জাতিক মানের কম্বাইন হারভেস্টার বা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার তৈরি করতে পারছেন না।
তিনি দুঃখ করে বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও দেশে ইঞ্জিন তৈরির মতো রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে পারেনি। পুরোনো শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিল্পভিত্তিও দুর্বল হয়েছে।
কৃষিকে লাভজনক পেশায় রূপান্তর
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, কৃষিকে কেবল উৎপাদনের খাত হিসেবে দেখলে হবে না, একে লাভজনক, সম্মানজনক ও শিক্ষিত পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি জানান, পিকেএসএফের সহযোগী সংস্থাগুলো মাঠপর্যায়ে বছরে এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করে, যার ৪০ শতাংশই কৃষি খাতে যায়। দেশের কৃষি অর্থায়নের প্রায় ৮৫ শতাংশই এমএফআই (ক্ষুদ্র ঋণ) খাতের মাধ্যমে হচ্ছে।
ধান উৎপাদনে বিপ্লব
ব্রি মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার পর খাদ্যনিরাপত্তাই ছিল প্রধান লক্ষ্য। তখন প্রতি হেক্টরে দেড়–দুই টন উৎপাদন হতো। এখন অনেক জায়গায় তা আট থেকে ১০ টন ছাড়িয়ে গেছে। হাইব্রিড জাতের উন্নয়ন ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে ভবিষ্যতে গড় ফলন ১০ টনের ওপরে যাবে।
রপ্তানিতে বড় সম্ভাবনা
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাতে বিশ্ব বাজার চার ট্রিলিয়ন ডলারের। আমাদের দেশে বাজার মাত্র এক বিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। প্রক্রিয়াকরণ খাতে বৈচিত্র্যের অভাব আছে। খাতেও কিছু দুর্বলতা রয়েছে। ৪০০ প্রতিষ্ঠান থাকলেও সবাই উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করতে পারে না।’
তিনি জানান, কৃষি পণ্য রপ্তানিতে ১৮টি দপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হয়। এটি খরচ ও সময় সাপেক্ষ। এজন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করতে হবে। কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে থাকা দূতাবাসকে কাজে লাগাতে হবে। বাণিজ্যিক কূটনীতিতে অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের আরও বেশি কাজ করতে হবে।
কামরুজ্জামান কামাল আরও বলেন, ‘কৃষি পণ্য রপ্তানিতে মান নিয়ন্ত্রণ সেভাবে গড়ে ওঠেনি। আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগারের স্বল্পতা রয়েছে। অনেক পণ্য ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনতে হয়। বিএসটিআইয়ের মান বিশ্বের অনেক দেশ গ্রহণ করে না। এক্ষেত্রে মান প্রণয়নে আমাদের আরও উন্নতি ঘটানো উচিত। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে গ্রাম পর্যায় থেকেই আমাদের কাজ করতে হবে।’
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, শুধু একজন মন্ত্রী বা উপদেষ্টা দিয়ে দেশের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় কাঠামো পরিবর্তন বা উন্নয়ন করতে হলে পার্লামেন্টে আদর্শিক, তাকওয়াবান ও সৎ নেতৃত্ব পাঠানো জরুরি। বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশালের চরমোনাই দরবারে তিন দিনব্যাপী মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে উলামা-শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবী সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমান বিধি বা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হলে পার্লামেন্টে এমন প্রতিনিধিদের প্রয়োজন, যাদের অন্তরে তাকওয়া, আদর্শ ও সততা রয়েছে।
আ ফ ম খালিদ হোসেন আরও বলেন, আলেম ওলামারা জনগণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তারা সমাজের শক্তির প্রতীক। এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আমরা অন্ধকার থেকে আলোর পথে এগোচ্ছি। আগামী দিনে নতুন দিকনির্দেশনা পাব এবং কখনোই অন্ধকারে ফিরে যাব না।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যা করে জনগণের সেন্টিমেন্ট উসকে দেওয়ার অধিকার কারও নেই। ইসলাম নিয়ে মন্তব্য করতে হলে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে ঐকমত্য হতে হবে, না হলে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে।
এ সময় চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন,
এককভাবে ফ্যাসিস্টদের আবার ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে। সম্মেলনে অন্যান্য অতিথি, আলেম ও শিক্ষাবিদরাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার আজ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুমোদন করেছে। নতুন অধ্যাদেশে কমিশনকে দেশের বিভিন্ন আটককেন্দ্র ও জেলাখানা পরিদর্শন করে নির্যাতন প্রতিরোধে ‘ন্যাশনাল প্রিভেন্টিভ মেকানিজম’ হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে অধ্যাদেশটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকের পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এখন দেশের বিভিন্ন আটককেন্দ্র ও জেলাখানা পরিদর্শন করে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ প্রতিরোধে কাজ করবে। এটি আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে দায়িত্বপূর্ণ রাখার অংশ।’
তিনি আরও জানান, কমিশন স্বাধীনভাবে পরিদর্শন ও প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।
এর আগে, গত ৩০ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদ নীতিগতভাবে অধ্যাদেশটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল। সূত্র: বাসস
অন্তর্বর্তী সরকার আজ উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে রাজধনী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের সব ভবন ও নির্মাণ কাজের অনুমোদনের জন্য একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের নির্দেশ দেন।
বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করা যায়, যা দেশের সব স্থাপনা ও নির্মাণ কাজের অনুমোদন দেবে। বর্তমানে রাজউক শুধুমাত্র নিজস্ব এলাকায় অনুমোদন দিতে পারে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নিরাপদ নির্মাণ বিধি মানা হচ্ছে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রেস সচিব বলেন, গ্রামাঞ্চলসহ দেশজুড়ে চার থেকে পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে, তবে প্রশ্ন হলো এগুলো জাতীয় ভবন নির্মাণ কোড মেনে তৈরি হচ্ছে কিনা। এছাড়া ভূমিকম্প ও অগ্নি ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নতুন রাজউক অধ্যাদেশে পুনর্বিকাশ, জমি পুনর্বিন্যাস, খেলার মাঠ, জলাশয় ও প্রাকৃতিক জলাধারের সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শফিকুল আলম বলেন, ‘জমির মালিক ৬০ শতাংশের সম্মতিতে পুনর্বিকাশ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে।’
প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, নতুন অধ্যাদেশে নির্মাণ, জলাশয় খনন, নিচু জমি ভরাট, প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ বাধা, খেলার মাঠ ও উদ্যানের শ্রেণী পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া অনুমোদিত নকশা ব্যতীত নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যত্যয়ী স্থাপনা অপসারণের শাস্তি এবং রাজউকের চেয়ারম্যান, সদস্য বা কর্মচারীদের রাজউকের সঙ্গে সংযুক্ত কোনো চুক্তি বা শেয়ারে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সূত্র: বাসস
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও তার স্ত্রী মোনালিসা ইসলামের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বুধবার এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
তিনি জানান, তাদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এক কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার ২৫২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। এছাড়া তিনি ১২টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। অপরদিকে ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী মোনালিসা ইসলামের নামে ৯৪ লাখ ৫ হাজার ৯৩২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর দুই ধাপে ১৩৬ জন পুলিশ পরিদর্শককে বদলি করেছে। পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে তাদেরকে বদলি করা হয়।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট শাখার অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল্লাহ আল জহির স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে তাদের বদলি করা হয়।
এর মধ্যে একটি প্রজ্ঞাপনে ৭৩ জনকে ও অন্য একটি প্রজ্ঞাপনে ৬৩ জন পুলিশ পরিদর্শককে বদলি করা হয়।
প্রজ্ঞাপন বলা হয়, আগামী শনিবারের (২৯ নভেম্বর) মধ্যে বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের বদলি করা কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ যদি আগে কোনো বদলি আদেশ পেয়ে থাকেন তাহলে সেটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আবার বৈঠকে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের নিরাপত্তা কৌশল পর্যালোচনা ও চূড়ান্ত করতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সকাল সাড়ে ১০টায় এই বৈঠক শুরু হয়েছে। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র সচিব, ইসি সচিবসহ বাহিনী ও সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা অংশ নিয়েছেন।
জানা গেছে, আজকের বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা পর্যালোচনা করে ইসির পক্ষ থেকে একটি সমন্বিত কর্মকৌশল নির্ধারণের নির্দেশনা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে, ভোটের আগে ও পরে কতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে মোতায়েন থাকবে এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কতজন সদস্য নিয়োজিত থাকবে, সে বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এর আগে, গত ২০ অক্টোবর প্রথম দফা প্রাক-প্রস্তুতিমূলক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় ভোটের আগে ও পরে মোট আট দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের একটি প্রস্তাব আসে। সবমিলিয়ে, এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৩ থেকে ১৮ জন সদস্য থাকার বিষয়েও আলোচনা হয়।
ইসি জানায়, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বাহিনীর মোতায়েন সংখ্যা ও সময়কাল আজকের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত করা হবে।
অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারের দুইটি লকার থেকে মোট ৮৩২.৫ ভরি বা ৯ কেজি ৭১৬ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।
গত মঙ্গলবার একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকের বুলিয়ন শাখার স্বর্ণ বিশেষজ্ঞ, এনবিআরের কর গোয়েন্দা ও সিআইসির দুই কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে লকার খোলা হয়।
২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে শেখ হাসিনা পূবালী ব্যাংকের ১টি এবং অগ্রণী ব্যাংকের ২টি লকারের ঘোষণা দেন। সেই বিবরণী পুনঃযাচাইয়ের অংশ হিসেবে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান লকার খোলার জন্য আদালতে আবেদন করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে লকার খোলা হয়েছে।
বুধবার পূবালী ব্যাংক মতিঝিল কর্পোরেট শাখা এবং অগ্রণী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখায় লকার তিনটি খোলা হয় বলে দুদক থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়।
লকারগুলোর মধ্যে- পূবালী ব্যাংক লকার নং-১২৮ এর গ্রাহক শেখ হাসিনা। যেখানে একটি খালি ছোট পাটের ব্যাগ পাওয়া গেছে। অগ্রণী ব্যাংক লকার-নং ৭৫১/বড়/১৯৬ শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে। যেখানে পাওয়া যায় ৪ হাজার ৯২৩.৬০ গ্রাম স্বর্ণালংকার।
অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংক লকার নং ৭৫৩/বড়/২০০ এর গ্রাহক শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সিদ্দিক। যেখানে পাওয়া যায় ৪ হাজার ৭৮৩.৫৬ গ্রাম স্বর্ণালংকার। সব লকারের মালামাল ইনভেন্টরি তৈরি করে শাখার ব্যবস্থাপকের জিম্মায় রাখা হয়েছে।
লকারে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা সিদ্দিক, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সজীব ওয়াজেদ জয় ও ববি ওয়াজেদের হতে পারে বলে ধারণা দুদকের।
আর গত ১০ সেপ্টেম্বর ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিলের পূবালী ব্যাংক সেনা কল্যাণ ভবন শাখায় শেখ হাসিনার একটি লকার (নম্বর ১২৮) জব্দ করে সিআইসি।
গত ১৭ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনা ও তার দোসর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। সেদিনের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্যও আদালত নির্দেশনা দেয়।
ফেরারি দুই আসামির সমস্ত সম্পত্তি ক্রোক ও বাজেয়াপ্ত করার জন্য জব্দ হওয়া লকার খোলা হচ্ছে বলে এনবিআর জানায়।
গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনা ও তার পরিবার সদস্যদের কর ফাঁকি ও দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের লকার জব্দ করে সিআইসি।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এবং পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীরের স্ত্রী জীশান মির্জা এবং কন্যা তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের আয়কর নথি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুদকের পৃথক তিন আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকার কর অঞ্চল-২০ কে এ নির্দেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ সাব্বির ফয়েজ।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারি রিয়াজ হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন তিনজনের আয়কর নথি সরবরাহ চেয়ে আবেদন করেন।
ডিবি হারুনের আবেদনে বলা হয়, হারুন অর রশীদ সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৭ কোটি ৫১ হাজার ১৭ হাজার ৮০৬ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রেখে দুদক আইনে অপরাধ করেছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার আয়কর নথি জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
বেনজীরের স্ত্রী জীশানের আবেদনে বলা হয়, জীশান মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ১৬ কোটি ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৬ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে এবং ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৯ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারার এবং তার স্বামী বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাকে (জীশান) এ অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে দণ্ডবিধি’র ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার সব আয়কর রিটার্নসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র জব্দ করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
তাহসীন রাইসার আবেদনে বলা হয়, তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারার এবং বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশ ও র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জীশানকে এ অপরাধে প্রত্যক্ষ সহায়তা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার আয়কর নথি জব্দ করা প্রয়োজন।
অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের বড় সংখ্যায় পদোন্নতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সারাদেশে একসঙ্গে ৮২৬ বিচারককে পদায়ন ও বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বুধবার উপসচিব এ এফ এম গোলজার রহমান স্বাক্ষরিত বদলি ও পদোন্নতির পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পদোন্নতির পর তাদের নতুন কর্মস্থলে পদায়নও করা হয়েছে।
জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৬’-এর বেতন স্কেলের প্রথম গ্রেডে ৭০,৯২৫-৭৬,৩৫০ বেতনক্রমে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতি দিয়ে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নিয়োগ/বদলি করা হলো।
প্রজ্ঞাপনের তথ্যানুযায়ী, তিনটি পদে মোট পদোন্নতি ও পদায়ন হয়েছেন ৮২৬ জন। এর মধ্যে অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ ২৫০ জন, যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ ২৯৪ জন ও সিনিয়র সহকারী জজ থেকে যুগ্ম জেলা জজ ২৮২ জন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বদলি হওয়া বিচারকদের দপ্তরপ্রধান কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তার কাছে আগামী ২৭ (বৃহস্পতিবার) নভেম্বর বর্তমান পদের দায়িত্বভার অর্পণ করে আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
এছাড়া প্রশিক্ষণ, মাতৃত্বকালীন ছুটি, বহিঃবাংলাদেশ ছুটিতে থাকা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদান করে কার্যভার হস্তান্তর করে অবিলম্বে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।