একাত্তর সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের খান আকরামসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় আগামী ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনাল।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের রেজিস্টার এমএলবি মেছবাহ উদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলামসহ তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন বলে তিনি জানান।
এ মামলায় ৭ আসামির মধ্যে খান আকরাম হোসেন (৬০), শেখ মোহম্মদ উকিল উদ্দিন (৬২), মো. মকবুল মোল্লা (৭৯) কারাবন্দি।
আর পলাতক রয়েছেন, খান আশরাফ আলী (৬৫), রুস্তম আলী মোল্লা (৭০), শেখ ইদ্রিস আলী (৬১) ও শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল (৬৪)।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত, তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন।
আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ২০১৭ সালের ৩১ মে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেয়া হয়। পরে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়।
রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে এমনটি প্রত্যাশা করে প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে আনা সবগুলো অভিযোগ আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি, আশা করি তাদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।’
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ উপস্থিত সকলের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে গতিতে এগোচ্ছে আরও গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। আমি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় সেবা দরিদ্র, দুঃস্থ, অসহায়, অসচ্ছল মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে সকলের সহযোগিতা চাই। এজন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো।
তিনি আজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
নতুন সচিব বলেন,
আমি এই মন্ত্রণালয়ের সুনাম কাজের মাধ্যমে, আইন কানুন মেনে মানুষের সেবা দ্রুত নিশ্চিত করতে আপনাদের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, সচিবের রুম আপনাদের জন্য সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে এবং ফাইল দ্রুত নিষ্পত্তি করে কাজের যথার্থতা নিশ্চিত করবেন। আপনারা নির্ভয়ে কাজ করবেন, আমার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আমিও আপনাদের থেকে শিখতে চাই এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের নয়টি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হচ্ছে জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫। জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর প্রতিপাদ্য "বাংলাদেশ ২.০: তারুণ্যের নেতৃত্বে আগামীর পথে " নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা ধারণাপত্র জমা দিয়ে শুরু করবে এবং নির্বাচিত দলসমূহ পূর্ণাঙ্গ নীতিপত্র প্রস্তুত ও উপস্থাপনা করবে। বিজয়ীরা পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি তাদের নীতি প্রস্তাবগুলো সরকারিভাবে পলিসি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
নীতি প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো হল-
১. রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ
২. জুলাই পরবর্তীতে সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: জাতীয় স্বার্থ ও বৈদেশিক সম্পর্কের পুনঃসংজ্ঞায়ন
৩. নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ: শিক্ষা ও দক্ষতার রূপান্তর
৪.দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সাংস্কৃতিক সংযোগ: জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশী তরুণদের ভূমিকা
৫. গুজব প্রতিরোধে বাংলাদেশের করণীয় ও বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি
৬. জুলাই গণভুত্থান ও সাংবিধানিক পুনর্গঠন: তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ
৭.বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ: সম্ভাবনার ব্যবহার ও নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা প্রস্তুতি
৮. সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের পথে: ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
৯. চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশের উদ্বোধনী সম্ভাবনা ও প্রয়োগের ক্ষেত্র
রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী বিষয়সহ রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ অপরিহার্য। আমাদের কাঙ্ক্ষিত দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নীতিগতভাবে অগ্রসর হওয়া। তরুণদের চিন্তাপ্রক্রিয়া, মননশীলতা এবং গবেষণাধর্মী সক্ষমতাকে সামনে রেখে এক নতুন পরিবর্তনের সূচনা করা সম্ভব আর সেটি হতে হবে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তারুণ্যের অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে।
এ সময় যুব ও ক্রীড়া সচিব বলেন, এই প্রতিযোগিতা কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয় এটি আগামী প্রজন্মের নেতৃত্বে বিনিয়োগ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তরুণদের বুদ্ধিবৃত্তিক অংশগ্রহণই আমাদের রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেবে এবং বাংলাদেশ ২.০-কে বাস্তবায়নের ভিত্তি গড়ে তুলবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ বুধবার ইসির উপ-সচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে, যা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ কমিশনে অনুমোদিত হয়েছে এবং তা ২৬ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৮ (১) ও (২) অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা সংরক্ষণ ও চূড়ান্তকরণের জন্য গেজেটে কমপক্ষে ২৫ দিন পূর্বে তা প্রকাশ করার বিধান রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এলাকা ভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, এই তালিকার ওপর দাবি/আপত্তি গ্রহণ এবং তা নিষ্পত্তির মাধ্যমে নীতিমালা অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী : খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি গ্রহণের শেষ তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর, দাবি/আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ তারিখ: ১২ অক্টোবর, সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ: ২০ অক্টোবর।
উল্লেখিত সময়সূচি অনুযায়ী এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা অনুসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত ছকের আলোকে খসড়া ও সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাগত তথ্য (সফটকপিসহ) আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সহায়তা-১ শাখায় পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সারাদেশ জলাশয়গুলো চিহ্নিত করে দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের নানান প্রজাতি রয়েছে। এসব জলাশয় চিহ্নিত করে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে হবে।
উপদেষ্টা বুধবার (২০ আগষ্ট) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে 'টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যত করণীয়' -শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, অভয়াশ্রম গড়ে তোলা ও রক্ষা করা মৎস্যসম্পদ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মুক্ত জলাশয়ের পরিমাণ দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে।
এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখানে আগে নীতি-নির্ধারণীতে হয়তোবা মনোযোগ কমছিল। তাই আমরা এখাতে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের মুক্ত জলাশয় গড়ে তুলতে যা করণীয় তা করতেই হবে।
জিনগত বিলুপ্তি রোধ করা দরকার উল্লেখ করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, মাছের প্রজাতিগুলো রক্ষা করা এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং আন্তর্জাতিক মৎস্যসম্পদের প্রয়োজনে করতে হবে। কারণ আমরা প্রাকৃতিকভাবে এমন স্থানে রয়েছি যেখানে মাছ না খেয়ে বাঁচার উপায় নেই।
৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, দেশে ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিএফআরআইর গবেষণার ফলে ৪১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহারকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ কত নিষ্ঠুর তারা মাছ শিকারে বিষ ও বিদ্যুতের ব্যবহার করছে। এটি হচ্ছে মানুষের লোভ ও তাৎক্ষণিক লাভের কারণে।
প্লাস্টিকদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৎস্যসম্পদ ধ্বংসের পেছনে পানি ও প্লাস্টিকদূষণ অন্যতম ক্ষতির কারণ। সম্প্রতি প্লাস্টিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি। প্লাস্টিক চুক্তি মানুষের পক্ষে ও প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় বাংলাদেশও স্বাক্ষর না করে চলে এসেছে।
বিএফআরআইর মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন, সম্মানিত অতিথি ছিলেন মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআইর ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান। এসময় বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, মৎস্যজীবী ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেকে সুস্থ রাখতে অসংক্রামক রোগের বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আজ ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বাড়াতে ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষরিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
যৌথ ঘোষণাপত্রে ৩৫টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ স্বাক্ষর করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবগণের হাতে যৌথ ঘোষণাপত্র তুলে দেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন। ঘোষণাপত্রে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ শুধু স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনের উন্নয়নের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। তাই এককভাবে নয়, বরং সকল মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এ সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভব।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরের মাধ্যমে জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা একসঙ্গে কাজ করতে নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলাম।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টজনিত অসুখসহ অসংক্রামক রোগ ইতোমধ্যে দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে যৌথ ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও একটি আন্তর্জাতিক মানের একটি নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ৪ মিলিয়ন ইউরোর একটি সহায়তা প্যাকেজ দেবে বলে ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার।
তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৪ মিলিয়ন ইউরোর বেশি একটি সহায়তা প্যাকেজ প্রদান করবে, যা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবে।’
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ছয় সদস্যের ইইউ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
মাইকেল মিলার বলেন, একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।
‘আমরা ২০২৬ সালের শুরুর একটি সময়সীমার দিকে এগোচ্ছি,’ তিনি যোগ করেন।
বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন আলোচনার বিষয় হলো আগামী কয়েক সপ্তাহ ও মাসে নির্বাচনগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে যে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে নেওয়া প্রয়োজন।
‘এবং এ কারণেই আমরা এখন আমাদের দক্ষতা কাজে লাগাচ্ছি। কারণ আমরা চাই আপনাদের নির্বাচনগুলো অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হোক, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হোক এবং অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হোক,’ তিনি বলেন।
মিলার আরও বলেন, তিনি শুধু ইইউ প্রতিনিধি দলের সহকর্মীদের সঙ্গেই আসেননি, বরং ইউরোপীয় পার্টনারশিপ ফর ডেমোক্রেসির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও এসেছেন। তারা বাস্তবায়নকারী অংশীদার ও নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ, যারা আসন্ন নির্বাচনে নাগরিক পর্যবেক্ষণে জোরালো মনোযোগ নিশ্চিত করতে এখানে থাকবেন।
তিনি উল্লেখ করেন, সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি সহায়তা দেওয়া হবে—যার মধ্যে অপারেশনাল পরিকল্পনা ও বিরোধ নিষ্পত্তির মতো ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের কাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য থাকবে এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।’
তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সম্ভাব্য ইইউ নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশনের জন্য অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ‘এটি এমন একটি বিষয় যা আমরা আগামী মাসগুলোতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব,’ তিনি উল্লেখ করেন।
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে মাইকেল মিলার বলেন, আগামী মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে আসবে এ বিষয়টি বিবেচনা করতে যে এখানে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর মতো প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে কিনা।
তিনি বলেন, ‘সুতরাং, আমরা সম্ভাব্যতা ও যৌক্তিকতা বিবেচনা করছি। তবে আমি আপনাদের যা বলতে পারি তা হলো রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে একটি অগ্রাধিকার, বিশেষ করে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশন মোতায়েনের ক্ষেত্রে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি মনে করেন বেশ কিছু বিষয় সমাধান করা প্রয়োজন, কারণ বাংলাদেশ এখন একটি গভীর রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অবশ্যই নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের অভিজ্ঞতা রাখে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেই নির্বাচনগুলো পরিচালনা ও ফলাফলের দিক থেকে অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শীর্ষ ১৭ কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬ (১) ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭-এর ১৭নং বিধির আলোকে নির্ধারিত ছক অনুযায়ী তাদের সম্পদ ও দায়-দেনার হিসাব বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
যে ১৭ কর্মকর্তার হিসাব চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা হলেন- কর কমিশনার (কর অঞ্চল-৩) এম এম ফজলুল হক, কর আপিল ট্রাইব্যুনালের কমিশনার লোকমান আহমেদ, আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত কর কমিশনার সাহেলা সিদ্দিক, অতিরিক্ত কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া, ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান তারিক রিকাবদার, যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা সাহরিন সুস্মিতা, কর একাডেমির যুগ্ম-কর কমিশনার মো. মোরশেদ উদ্দিন খান, কর অঞ্চল ৮-এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, কর অঞ্চল ১৬-এর উপকর কমিশনার মো. শিহাবুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল রশিদ মিয়া, রেলওয়ে কাস্টমসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট পূর্বাঞ্চলের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন, কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু, এনবিআরের যুগ্ম কমিশনার মো. তারিক হাছান, এনবিআরের সিআইসির সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন, এনবিআরের সদস্য মো. লুৎফুল আজিম ও সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলম।
এর আগে গত জুলাই মাসে এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল দুদক। ওই সময়ে দুদকে জমাকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কিছু অসাধু কর্মকর্তারা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে, প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘এখন নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে দেশ। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য সেনাবাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। দীর্ঘসময় ধরে সেনারা মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। আগে এত দীর্ঘসময় মাঠে থাকতে হয়নি। তাই সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। দূরত্ব থাকলে তা দূর করতে হবে।’
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা সেনানিবাসে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে সেনাসদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন সেনাপ্রধান। এতে পদস্থ কর্মকর্তারা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সব সেনা স্থাপনার কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
সেনাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন সেনাসদস্যদের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং বাহিনীর চেইন অব কমান্ড অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। সেনাবাহিনী একটি পেশাদার সংগঠন। মাঠে দায়িত্ব পালনের সময় পেশাদারত্ব দেখাতে হবে। প্রতিশোধমূলক কোনো কাজে জড়ানো যাবে না।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইস্যুতে নানা কটূক্তির জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এসব মন্তব্যে অখুশি হওয়ার কিছু নেই। যারা এসব করছে, তাদের বয়স কম। তারা আমাদের সন্তানের বয়সি। তারা বড় হলে নিজেদের ভুল বোঝতে পারবে। তখন নিজেরাই লজ্জিত হবে।’
নাম উল্লেখ না করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘একজন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ তদন্তাধীন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারবেন না। আরেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়েও তদন্ত চলছে। নৈতিক স্খলনের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে মিডিয়া ট্রায়ালের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেওয়া হবে না, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘একজন সেনা কর্মকর্তাকে গড়ে তুলতে রাষ্ট্র বিপুল অর্থ ব্যয় করে। তাই কেউ যাতে অপরাধে জড়াতে না পারে, সে বিষয়ে আগেভাগেই খেয়াল রাখতে হবে। অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলে সেটি রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মনোনয়ন নেওয়ার পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার। এ ঘটনায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি।
গত সোমবার মধ্যরাতে দেওয়া পোস্টে মাহিন লিখেছেন, ‘আমি তাদের একজন যার হাতে অভ্যুত্থানের ব্যানারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠিত হয়েছিল। অন্তত আমার কথাগুলো বলার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘মাহিন সরকারের তার অনাগত সন্তানের কাছে বলার মতো গল্প আছে। মাহিন সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে তার রক্ত দিয়ে রাঙিয়েছে। গান পয়েন্টে ৬ জন সমন্বয়কের কর্মসূচি প্রত্যাহারের পর মাহিন সরকার বলেছিল ‘মানি না’। মাহিন সরকারসহ চারজন সমন্বয়কই বাকি সমন্বয়কদের বৈধতা দিয়েছে। মাহিন সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায়বিচারে মাঠে নেমেছিল, কেউ আসেননি পাশে। আজকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই বহিষ্কার করে দিলেন।’
আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘গুরুতর আর্থিক অনিয়ম কিংবা চারিত্রিক সংখলনের মতো অভিযোগ থাকে, তার পরও সংগঠনগুলো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। আমি সে সুযোগও পাইনি, এটা সামগ্রিকভাবে নবগঠিত রাজনৈতিক দলের জন্য ক্ষতিকর হয়ে গেল।’
সবশেষে মাহিন বলেন, ‘আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি বিজয় আসমান থেকেই আসে, জমিনে তার প্রতিফলন হয় মাত্র।
গত সোমবার দিবাগত রাতে ‘গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে এনসিপি। এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাতের পাঠানো ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গুরুতর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকারকে নিজের পদ ও দায়িত্ব থেকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নির্দেশক্রমে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহিষ্কার করা হলো। এই বহিষ্কারাদেশ আজ (সোমবার) থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এর আগে গত সোমবার দুপুরে ‘ডিইউ ফার্স্ট’ নামে একটি স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের জিএস পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন মাহিন সরকার।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর সহযোগিতায় নরওয়ের গবেষণা জাহাজ “R.V. Dr. Fridtjof Nansen” আগামী ২১ আগস্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্যসম্পদ ও ইকোসিস্টেম জরিপ পরিচালনা করবে। প্রায় ৩২ দিনব্যাপী এ অভিযানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৩ জন বিজ্ঞানীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট ২৬ জন গবেষক অংশগ্রহণ করবেন।
উপদেষ্টা আজ দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে Norwegian সামুদ্রিক গবেষণা জাহাজ "R.V. Dr.Fridtjof Nansen" কতৃক বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য সম্পদ ও ইকোসিস্টেম জরিপ পরিচালনা সংক্রান্ত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত মৎস্যসম্পদ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে এ খাত জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, এ জরিপে ছোট পেলাজিক ও মেসোপেলাজিক মাছের প্রাচুর্য ও মজুদ নিরূপণ, তলদেশীয় মৎস্যসম্পদের প্রজাতিগত বৈচিত্র্য মূল্যায়ন এবং সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হবে। পাশাপাশি সমুদ্রের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, স্রোতের গতি, উৎপাদনশীলতা, গভীর সমুদ্র সঞ্চালন ব্যবস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। উপদেষ্টা বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক, সামুদ্রিক আবর্জনা, অক্সিজেন মিনিমাম জোন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও সমুদ্রপানির অম্লতা বিষয়েও গবেষণা পরিচালিত হবে, যা ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কার্যকর নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, “R.V. Dr. Fridtjof Nansen”-এর ২০২৫ সালের জরিপ বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, টেকসই আহরণ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন এবং সামুদ্রিক পরিবেশ সুরক্ষায় জাতীয় নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে। পাশাপাশি এটি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করবে।
রয়্যাল নরওয়েজিয়ান দূতাবাস, ঢাকা-এর চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মিসেস মারিয়ানে রাবে ক্নায়েভেলস্রুদ (Ms.Marianne Rabe Knaevelsrud) বলেছেন, নরওয়ে সবসময় বাংলাদেশের টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সামুদ্রিক গবেষণায় সহযোগিতা করে আসছে। তিনি আরো বলেন, "Dr. Fridtjof Nansen" গবেষণা জাহাজের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও জোরদার করবে এবং বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. জিয়াকুন শী (Mr. Jiaoqun Shi) বলেছেন, নরওয়ে সরকারের সহযোগিতায় FAO-এর EAF-Nansen Programme বাংলাদেশের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, যা জাতীয় ও বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।
এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো: তোফাজ্জেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মো: ইমাম উদ্দীন কবীর, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আবদুর রউফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরী, মাসুকা বেগম ও মাহফুজা খানম মানবতা ও সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে এ জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত তিন শিক্ষক পরিবারের সদস্যরা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল, দুই ছেলে আদিল রশিদ ও আয়ান রশিদ, বোন মেহেতাজ চৌধুরী, ভাই মুনাফ মজিব চৌধুরী ও নিকট আত্মীয় কাওসার হোসেন চৌধুরী; শিক্ষক মাসুকা বেগমের বোন পাপড়ি রহমান ও ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান এবং শিক্ষক মাহফুজা খাতুনের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা, বোন মুরশিদা খাতুন, ভাগ্নে মো. মাইদুল ইসলাম ও নিকট আত্মীয় হুমায়ূন কবির।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন পার হলেও এই স্মৃতি এখনো সবার মধ্যে দগদগে হয়ে আছে। আমি ঘটনা জানা মাত্রই আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনারা যে দুঃসময়ের মধ্যে ছিলেন, সেসময়ে দেখা করা সমীচীন হতো না। আমরা আপনাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করতে পারি, কিন্তু এই দুঃসহ স্মৃতি মুছে দেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, এ শোক আপনাদের একার নয়। জাতি হিসেবে আমরা এই শোককে ধারণ করি।’
এসময় তিন শিক্ষক পরিবারের কাছে তাঁদের স্মৃতিকথা শুনতে চান প্রধান উপদেষ্টা।
শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, “তাঁকে যখন হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল তখন ফোনে আমার সাথে কথা হয়। সেদিন বার্ন ইনস্টিটিউটে যে দৃশ্য দেখেছি, তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। জীবনে যেন কারো সেই অভিজ্ঞতা না হয়। আমি তাঁকে দেখলাম, একপাশ পুরোটা পুড়ে গেছে। সেখানে কয়েকজন সামান্য দগ্ধ বাচ্চা চিকিৎসা নিতে নিতে আমাকে বলল, ‘মিসই আমাদের টেনে টেনে বের করে আনল! মিস তো সুস্থ ছিল! এমন হলো কেন!’ আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি বের হয়ে এলে না কেন? তোমার নিজের দুই সন্তানের কথা একবারও ভাবলে না?’ সে আমাকে বলল, ‘ওরাও তো আমার সন্তান। ওদের একা রেখে আমি কী করে চলে আসি?’ পৃথিবীর সকল মানুষ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে তার জন্য দোয়া করেছে। সবার জন্যই সে নিবেদিত প্রাণ ছিল।”
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ২৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৪ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন শিক্ষক মাহফুজা খাতুন। মায়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা।
তিনি বলেন, ‘আমার মা অনেকখানি সুস্থ হয়ে উঠেছিল। আমি ভেবেছিলাম, মা’কে নিয়ে বাড়ি ফিরব। মাকে যেদিন হুইলচেয়ারে বসাই সেদিন মনে হলো আমি বিশ্বজয় করেছি। মা ছাড়া একেকটা দিন আমার স্বপ্নের মতো মনে হয়। আমার তো বাবা নেই, এখন মাও চলে গেল। আমি এতিম হয়ে গেলাম। এখন পর্যন্ত নিজের বাসায় ফিরতে পারিনি। মা ছাড়া সে বাসায় ফিরব কী করে?’
শিক্ষক মাসুকা বেগমের ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেক দিন ধরেই তাঁর বোন অসুস্থ। চোখে কিছুটা কম দেখেন। মাসুকা সবসময় তাঁর বাবা ও বোনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত, তাঁদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চটুকু দেয়ার চেষ্টা ছিল। বাবাকে নিয়মিত হাতখরচ পাঠাত। আমার ছেলে-মেয়েদের ও নিজের সন্তানের মতো মনে করত। প্রতিদিন তাঁদের সঙ্গে ওর কথা হতো। আমরা আর তার স্কুল—এই ছিল তাঁর জীবন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁদের কথা শুনতে কষ্ট লাগে। একইসঙ্গে গর্ববোধ হয় যে আমাদের দেশে এমন নাগরিক আছে যারা অন্যের জীবন বাঁচাতে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে। মানবতার এই দৃষ্টান্ত তারা প্রমাণ করে গেছে। আমরা ক্ষুদ্র মানব ছিলাম, তারা আমাদের বড় করেছে। সবার ভেতরে নাড়া দিয়েছে। সবাই এটা নিজের মধ্যে অনুভব করেছে যে, ‘আমি যদি সেই অবস্থানে থাকতাম, আমি কী করতাম? আমি কি জীবনের পরোয়া না করে এভাবে ছোট শিশুদের প্রাণ বাঁচাতে আত্মবিসর্জন দিতাম? এই প্রশ্ন সবার মনে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘এই শিক্ষকগণ আমাদের গর্ব, আমাদের আদর্শ। তাঁদের স্মৃতি আমাদের ধরে রাখতে হবে। এজন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, আমরা তা করব’।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান।
নির্বাচনের সময় নিয়ে দলগুলোর বক্তব্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ বলে মন্তব্য করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান কোনো দলের দায়িত্ব না এটা সরকারের দায়িত্ব। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, এখন রাজনৈতিক দল তো বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কথা বলে এবং ওইটা তো একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। আপনারা তো এটা সব সময় দেখেছেন। বাংলাদেশে ট্রেডিশনালি এসব রাজনৈতিক কথাবার্তা হতো, এখনো ঠিক ওরকমভাবেই কথাবার্তা হচ্ছে। কথাবার্তায় খুব বেশি গুণগত পরিবর্তন হয়নি। ফলে নির্বাচনের সময় নিয়ে কে কী বলবেন এটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই দেখবেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আছি। আমাদের স্যার (প্রধান উপদেষ্টা) সর্বজন স্বীকৃত একজন বিশ্বপর্যায়ে নন্দিত মানুষ। উনি নিজে ঘোষণা করেছেন, তার এ ঘোষণা থেকে আমাদের পিছিয়ে আসার বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই।’
ড. আসিফ নজরুল বলেন, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে অনেক সময় বেশি মূল্য ধরা হয়, এরপরে পিডিবির বিষয় নিয়ে অনেক কথা হয়। আপনারা জানেন বালিশ কাণ্ডে কি হয়েছিল। আমরা আরো এরকম বালিশ কাণ্ড চাই না। এজন্য দুদক সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে সেগুলো আমরা আইনের পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে একজন অভিজ্ঞ কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি আজ থেকে কাজ শুরু করবেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দুর্নীতি করা হয় এগুলো আসলে আমাদের বিষয় না এটার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় রয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের রয়েছে তারা এগুলো দেখবে।
আমরা সর্বোচ্চ দুর্নীতির বিষয়গুলো দেখতে পারবো। এজন্যই দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে।
গত জুলাই মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৪৩টি। এতে প্রাণ ঝরেছে ৪১৮ জনের এবং আহত হয়েছেন ৮৫৬ জন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি ১০৯ জন, যা মোট নিহতের ২৬.০৮ শতাংশ।
বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জুলাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে নারী ৭২ জন, যা মোট নিহতের ১৭.২২ শতাংশ এবং শিশু রয়েছে ৫৩টি, ১২.৬৭ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি ঘটেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। ১৩১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতও হয়েছেন সবচেয়ে বেশি মানুষ,১০৯ জন; যা মোট নিহতের ২৬.০৮ শতাংশ। আর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার মোট দুর্ঘটনায় ২৯.৫৭ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় অন্যান্যভাবে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৯২ জন পথচারী (২২ শতাংশ), যানবাহনের চালক ও সহকারী ৫৬ জন (১৩.৪০ শতাংশ), ৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৬ জন এবং ২১টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী মিলিয়ে নিহত হয়েছেন ১০৯ জন। এ ছাড়া বাসের যাত্রী ৪১ জন (৯.৮০ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপের আরোহী ৩০ জন (৭.১৭ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ২০ জন (৪.৭৮ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ১০৮ জন (২৫.৮৪ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র) ১২ জন (২.৮৭ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-রিকশা আরোহী ৬ জন (১.৪৪ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ, সকালে ২৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ, দুপুরে ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, বিকালে ১৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১১ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং রাতে ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
সবচেয়ে ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬ দশমিক ৪১ শতাংশ, আর সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ২২ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে ১১৭টি দুর্ঘটনায় ১০৫ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় ৪৭টি দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। রাজধানীতে ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ৩৮ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মতে, সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ হলো: ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ২. ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ৩. বেপরোয়া গতি ৪. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা ৫. বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা ৬. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল ৭. তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো ৮. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা ৯. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ১০. বিআরটিএ-র সক্ষমতার ঘাটতি এবং ১১. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সুপারিশ
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দুর্ঘটনা কমাতে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেছে। এগুলো হলো- ১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে ২. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে ৩. বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে ৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে ৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে ৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে ৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে ৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে ১০. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।