আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩২টি দল। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ৭৪৭ জন। সে হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যয়নপত্র নিয়ে নির্বাচনে উপস্থিত ১৯৬৬ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্রদের মধ্যে অন্তত ৪০০ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন। তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, নির্বাচনে আসা বড় দল আওয়ামী লীগের মূল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাইরে অন্যদলগুলোর বেশির ভাগ প্রার্থীই আসনগুলোর মানুষের কাছে অচেনা। প্রায় প্রতিটি আসনেই নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন এমন অনেক অচেনা মুখ যাদের প্রার্থিতা পেতে সমস্যা না হলেও নির্বাচনী লড়াইয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে পরিচিত হতেই পার হয়ে যাবে প্রচারণার বেশির ভাগ সময়। ফলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচনে প্রার্থী আছে অনেক বেশি, কিন্তু, প্রতিদ্বন্দ্বী কম।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৩০০ আসনের বিপরীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের (নৌকা) ৩০৩ জন, জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) ৩০৪ জন, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১৮ জন, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) ১৫১ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি (আম) ১৪২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) ১১৬ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (মশাল) ৯১ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) ৪৭ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১৩ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৮ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ১৩ জন, গণফ্রন্ট (মাছ) ২৫ জন, গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) ৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) ৪৫ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) ২০ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩৪ জন, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১২ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ৩৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা) ১৪ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) ৮২ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম (নোঙর) ৪৯ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট- বিএনএফ (টেলিভিশন) ৫৫ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৭৪ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ- বিএমএল (হাত-পাঞ্জা) ৫ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ (কুঁড়েঘর) ৬ জন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মই) একজন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (রিকশা) একজন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (খেজুর গাছ) একজন এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন) দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এদিকে মনোনয়ন জমার শেষ দিনেই ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের সময়সীমা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে বিএনপিসহ যে দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে তাদের আর মত পাল্টে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসার দৃশ্যমান কোনো সুযোগ নেই। আন্দোলনরত দলগুলোও অবশ্য আগেই এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে।
ফলে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে যেসব প্রার্থী টিকে যাবেন তারাই থাকবেন নির্বাচনী দৌড়ে। তবে প্রতিটি আসনে ভোটের লড়াইয়ে যারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগেরই দলের নাম সাধারণ মানুষ জানে না। আর দল অচেনা বলে প্রার্থীরাও অচেনা। ফলে তাদের ধারণা নির্বাচনী লড়াইয়ে আসলে টিকে থাকবেন বড় দলের পরিচিত মুখগুলো। এর মধ্যে শাসক দলের মার্কা নিয়ে লড়াই করা প্রার্থীরা যেমন আলোচনায় থাকবেন, তেমনই অনেক আসনেই তাদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমাতে পারেন নির্বাচনে আসা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কেননা, দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশির ভাগই স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এবং তাদের মোটামুটি ভোট ব্যাংক অথবা এলাকাবাসীকে প্রভাবিত করার সক্ষমতা রয়েছে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ৪০০ জনই আওয়ামী লীগের।
যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত কয়েক দিনের মতো গতকালও বলেছেন, দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঢালাওভাবে নির্বাচন করতে পারবেন না। এ ছাড়া ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সম্ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন জোটের এমন প্রার্থীরাই কেবল থাকবেন বিবেচনায়। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এর ফলে এটা স্পষ্ট যে, জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ যাদের মনোনয়ন দিয়েছে তাদেরও রণে ভঙ্গ দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে এবার দলীয় মার্কার বাইরে দলীয় প্রার্থীদের স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়ায় নির্বাচনে আসা প্রার্থীদের কতজন আবার দল চাইলে নির্দেশ মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন সেটাও আছে দেখার বিষয়।
তবে এই আলোচনার বাইরে থেকে যাচ্ছে বেশির ভাগ প্রার্থী যারা বিভিন্ন দল থেকে নির্বাচনে এলেও জনগণের কাছে নিজের দল, দলীয় প্রতীক এবং নিজের পরিচয় প্রকাশ করার সুযোগ পাবেন। তবে প্রতিটি আসনে স্থানীয় ভোটারদের কাছে তারা এখনো অচেনা এবং নতুন মুখ হিসেবে বিবেচিত।
যেমন দল হিসেবে এবারই প্রথম নির্বাচন করছে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। এসব দলের বেশির ভাগ প্রার্থী নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের কাছে নতুন পরিচয়ে উপস্থিত হবেন। অনেকে আবার খুব বেশি পরিচিত নন। একইভাবে তাদের নির্বাচনী প্রতীক যথাক্রমে সোনালী আঁশ, নোঙর ও একতারা চেনাতেও এবার তাদের বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হবে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনএমের প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ৬ জন এবং তৃণমূলের প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ৫ জন।
এদিকে, গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদের বলেছেন, বিএনপির ১৫ কেন্দ্রীয় নেতাসহ সাবেক ৩০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে কাদের সিদ্দিকী, লতিফ সিদ্দিকী, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো নেতাও আছেন। আবার আগে বিএনপিতে প্রভাব ছিল দলটির এমন সাবেক নেতারাও আছেন নির্বাচনে। এদের মধ্যে তৈমূর আলম, সমশের মবিন চৌধুরীর নাম উল্লেখযোগ্য।
তবে এদের বাইরে নির্বাচনের মাঠে থাকা বেশির ভাগ প্রার্থীই অচেনা। এ বিষয়ে গাজীপুর-৪ আসনের একজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার দল এলাকায় তেমন পরিচিত নয়। দলের প্রচার চালাতে ও এলাকার মানুষের কাছে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে এবার ভোট করতে আসা। আমিও জানি নির্বাচনে জয়লাভ করার অবস্থান এখনো আমার বা আমার দলের তৈরি হয়নি। তবে এক দিনে তো কিছুই হয় না। আমাদের দলের আদর্শ ও কর্মসূচি দেশের মানুষ ও এলাকার মানুষকে জানাতে আমরা নির্বাচনে এসেছি।’
অন্যদিকে লালমনিরহাট-৩ আসনে মনোনয়ন জমা দেয়া প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সদর আসনে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদ্য পদত্যাগকারী সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন বক্কর, জাতীয় পার্টি থেকে জাহিদ হাসান, তৃণমূল বিএনপি থেকে শামীম আহম্মেদ চৌধুরী, জাকের পার্টি থেকে সকিউজ্জামান মিয়া, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল থেকে আশরাফুল আলম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে আবু তৈয়ব মো. আজমুল হক পাটোয়ারী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) থেকে শ্রী হরিশ চন্দ্র রায় মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তবে এবার তিনি এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ফলে এ আসনে নির্বাচনে অংশ নেয়া সব প্রার্থীই নতুন এবং নতুন একজন সংসদ সদস্য পাবে লালমনিরহাট সদরবাসী। তবে নতুন হলেও জেলা ও শহরের রাজনীতিতে পুরনো মুখ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান। ছাত্ররাজনীতি করায় জাবেদ হোসেন বক্করও সেখানে পরিচিত মুখ। জাকের পার্টি ও জাসদের প্রার্থীকেও অনেকে চেনেন। তবে সাম্যবাদী দল, এনপিপির প্রার্থীর মতো জাতীয় পার্টির প্রার্থীও এলাকার সবার চেনা মুখ নন। ফলে যে আসন থেকে জাতীয় পার্টি বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে সেখানে নতুন মুখ দেয়ায় মাঠের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন এলাকার অনেক বাসিন্দা।
বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসন বিশ্লেষণ করলে। দৈনিক বাংলার খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনার এই ৬টি আসনের জন্য সেখানে ৫৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাদের অধিকাংশেরই রাজনীতিতে তেমন কোনো পরিচিতি নেই। হঠাৎ করেই তারা কেন সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী হলেন, এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তরও দেননি অধিকাংশ প্রার্থী।
খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনীত ৬ জন প্রার্থী, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ২ জন এবং জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। বাকি ৪৪ জন প্রার্থী কখনো রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় ছিলেন না।
খুলনা প্রতিনিধির বিশ্লেষণ অনুযায়ী খুলনা-১ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৬ জন। তারা হলেন, জাকের পার্টির মো. আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল, জাতীয় পার্টির কাজী হাসানুর রশিদ, তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় ও আবেদ আলী শেখ।
এদের মধ্যে ননী গোপাল মণ্ডল ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। রাজনীতিতে তার পরিচিতি রয়েছে। তবে বাকি চারজন রাজনীতিতে একেবারেই অপরিচিত। তারা প্রত্যেকেই এবার প্রথম সংসদ নির্বাচন করছেন। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সাবেক সচিব।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করছি। আমাকে ডামি প্রার্থীও বলা যাবে। এটা দলীয় নির্দেশেই হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল বলেন, ‘দল আমাকে আবারও সুযোগ দিয়েছে। আমি দলের সম্মান রাখব বলে আশাবাদী।’
তবে বাকি চার প্রার্থীর তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। জাতীয় পার্টীর কাজী হাসানুর রশিদ ও তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিকের কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
আর জাকের পার্টি মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলেছে, তাই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি।’
অন্যদিকে খুলনা-২ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, গণতন্ত্র পার্টির মো. মতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার, জাকের পার্টির ফরিদা পারভিন, ইসলামী ঐক্যজোটের হিদায়েতুল্লাহ, জাতীয় পার্টির মো. গাউসুল আজম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বাবু কুমার রায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমান।
এদের মধ্যে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর রাজনৈতিকভাবে পরিচিতি রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তবে বাকিদের আগে কখনো রাজনৈতিক মাঠে দেখা যায়নি।
কেন প্রার্থী হয়েছেন- এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার বলেন, ‘অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন জমা দেয়া হচ্ছে, তাই আমরাও দিচ্ছি।’
খুলনা-৩ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের এস এম কামাল হোসেন, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইজার আহমেদ ও ফাতেমা জামান সাথী।
এদের মধ্যেও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। তিনি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তিন বারের সংসদ সদস্য ও দুই বারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে সরিয়ে তাকেই আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। তবে ওই আসনেরও বাকি চারজনের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই।
খুলনা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন ১৪ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী, জাকের পার্টির শেখ আনছার আলী, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এস এম আজমল হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. ফরহাদ আহমেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মোস্তাফিজুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা, ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দীন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জুয়েল রানা, এম ডি এহসানুল হক, মো. রেজভী আলম, এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা, আতিকুর রহমান ও এইচ এম রওশান জমির।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী বর্তমান সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি জয়ী হয়েছিলেন।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। তিনি ওই আসনের তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার আপন ভাই।
তিনি বলেন, এলাকার মানুষের দোয়া নিয়ে মাঠে নেমেছি। জয়-পরাজয় এলাকার মানুষই নির্ধারণ করবেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই আসনে আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এলাকার ভোটাররা বলছেন, বাকি ১২ জন প্রার্থীদের নাম খুব একটা শোনেননি তারা। কেউ কেউ একেবারেই অপরিচিত।
খুলনা-৫ আসনের জন্য মনোনয় জমা দিয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির মো. শহীদ আলম, জাকের পার্টির সামাদ সেখ, আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ সেলিম আকতার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের এস এম এ জলিল, ইসলামী ঐক্যজোটের তরিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন।
এদের মধ্যে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ একাধিক বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী। এ ছাড়া আকরাম হোসেন ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই আসনেও আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা। বাকি যারা প্রার্থী হয়েছেন এলাকার রাজনীতিতে তাদের তেমন কোনো পরিচিতি নেই বলে জানা গেছে।
খুলনা-৬ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১২ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মো. রশীদুজ্জামান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আবু সুফিয়ান, জাকের পার্টির শেখ মর্তুজা আল মামুন, জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মির্জা গোলাম আজম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এস এম নেওয়াজ মোরশেদ, তৃণমূল বিএনপির গাজী নাদীর উদ্দীন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম রাজু, গাজী মোস্তফা কামাল, জি এম মাহবুবুল আলম, মো. মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর ও মো. অহিদুজ্জামান মোড়ল।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. রশীদুজ্জামানের কোনো দলীয় পদ নেই। তিনি একসময় পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছিলেন। তবে তাকেই মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে ক্ষমতাসীন দল। ওই আসনে রাজনৈতিকভাবে পরিচিত রয়েছে জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধুর। তিনি আগেও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বাকি প্রার্থীদের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। এলাকার সবার কাছে পরিচিত মুখও নন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ আসনেই ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের স্থানীয়রা তেমন একটা চেনেন না। তবে বিরোধীদের এক অংশ নির্বাচন বর্জন করায় রাজনীতির নতুন সমীকরণ মেলাতে ছোট দলগুলোই নির্বাচনে হতে যাচ্ছে বড় দলগুলোর সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনীযুদ্ধ পার হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।
জাসদের মাঠপর্যায়ের এক রাজনীতিবিদ জসিম মণ্ডল বলেন, ‘নির্বাচন একটা বড় খেলা। এখানে সবাই নামে নিজ নিজ সমীকরণ মেলানোর জন্য। রাজনৈতিক দলগুলোর সমীকরণ হয় এক ধরনের, আবার প্রার্থীর সমীকরণ হয় আরেক ধরনের। সবাই নির্বাচনে জয়ী হতে যেমন অংশ নেয় না তেমনই কেউ কেউ নির্বাচনে যায় অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করতে। আবার অনেকের কাছে ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণই বড় কথা।’ জয়-পরাজয়ের চেয়েও বড় বিষয় এ সময় পোস্টারিং করে নিজের ছবি ও পরিচিতি পুরো এলাকার মানুষকে দেখানো যায়। এটাও বা কম কিসে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরই আছে নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার। তাই কটা টাকা খরচ করে অনেকেই পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ নেয়। এর ফল তো অসীম-সারাজীবন নানাভাবে এর সুফল মেলে। যারা রাজনীতিতে আছেন, কেবল তারাই বোঝেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারার গুরুত্ব।
অর্থ আত্মসাৎ মামলা তদন্তের স্বার্থে জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও পতিত সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাকিব আল হাসানসহ মোট ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, পরস্পর যোগসাজশে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ ধারা) পরিকল্পিতভাবে লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ আত্মসাতের মামলার তদন্তের স্বার্থে এজাহারনামীয় সাকিব আল হাসানসহ মোট ১৫ আসামিকে আগামী ২৫ ও ২৬ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় এজাহারনামীয় ২ নম্বর আসামি সাকিব আল হাসানকে ২৬ নভেম্বর সকাল ১০টায় দুদকের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে মামলা সংশ্লিষ্ট বক্তব্য দিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
গত ১৭ মে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে শেয়ার বাজারে অর্থ লোপাটের মামলাটি দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয়েছে সাকিবের মা শিরিন আক্তার, সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক আবুল খায়ের ওরফে হিরু, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজী ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, জাভেদ এ মতিন, জাহেদ কামাল, হুমায়ূন কবির ও তানভীর নিজামকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসৎ অভিপ্রায়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনপূর্বক নিজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিও অ্যাকাউন্টসমূহে অসাধু, অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে ফটকা ব্যবসার মতো ধারাবাহিক লেনদেন, প্রতারণামূলক সক্রিয় বাণিজ্য, জুয়ামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাজার কারসাজি করতেন। এভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তাদের বিনিয়োগকৃত ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন এবং অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ শেয়ার বাজার হতে সংঘবদ্ধভাবে উত্তোলন করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসামি আবুল খায়ের ওরফে হিরুর ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার টাকার অস্বাভাবিক, অযৌক্তিক এবং সন্দেহজনক প্রকৃতির লেনদেন দেখা গেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১২০বি/১০৯ ধারায় মামলাটি রুজু হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার স্বামী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক শফিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৪১ হাজার ৬০ টাকার সম্পদের অভিযোগে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মামলার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। জানা গেছে, দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া শিগগিরই মামলাটি দায়ের করবেন।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ড. শফিক আহমেদের নামে ১৫ কোটি ৩২ লাখ ৮৮ হাজার ২৯০ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় দুই কোটি ৬৫ লাখ ৩ হাজার ৩৫২ টাকা। সবমিলিয়ে তার অর্জিত ও ব্যয়ের হিসাব দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৯৭ লাখ ৯১ হাজার ৬৪২ টাকা। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ে তার বৈধ আয় পাওয়া যায় ৯ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৫৮২ টাকা। ফলে, ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৪১ হাজার ৬০ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে বলে অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
দুদক আরও জানায়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকার সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে এই সম্পদ অর্জন করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আইন উপদেষ্টা বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের প্রত্যর্পণের জন্য (ভারতের কাছে) চিঠি দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু তারা এখন সাজাপ্রাপ্ত, কাজেই সরকার মনে করে ভারতের এখন বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে তাদের ফেরত দেওয়ার জন্য। বাংলাদেশের মানুষের বিচারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য ভারত যেন প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তার দায়িত্ব পালন করে, সেটি স্মরণ করিয়ে ভারতকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে এই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কোনো রকম অ্যাপ্রোচ করতে পারেন কি না, সেটা বিচার-বিবেচনা করার জন্য অচিরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গণভোটে আইন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ: সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক রায় হয়েছে। দীর্ঘদিন সংগ্রাম করার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাওয়া গিয়েছিল। এটি ভোটের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কয়েকটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখা গিয়েছিল। ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হতো। এটা স্বাভাবিক মনে হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাবেক একজন বিচারপতির নেতৃত্বে রায় দিয়ে এটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, এ মুহূর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। কিন্তু এটা কার্যকর হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে। কারণ, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়। এখন সংসদের অস্তিত্ব নেই। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আগামীতে যে সংসদ গঠিত হবে, সেই সংসদ যখন ভেঙে যাবে, তারপর ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে।
গণভোট করার জন্য আইন করার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, গণভোটের বিষয়ে অধ্যাদেশ সরকার দ্রুত করতে যাচ্ছে। আগামী তিন-চার কার্যদিবসের মধ্যে এটি হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
দেশের গণতন্ত্রের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার সহায়ক ব্যবস্থা বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালে দেশ গণতন্ত্রের মহাসড়কে হাঁটবে। এখন থেকে আর দিনের ভোট রাতে হবে না কিংবা মৃত মানুষ এসে ভোট দিয়ে যাবে না। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাব দেন অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রায়ের বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দেশের বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট রায় দেয় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তিনি সেটি মনে করেন না। কোন রায় রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট, আর কোন রায় আইনি ব্যাখ্যায় দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে, গণতন্ত্র রক্ষা করবে, মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করবে, আইনের শাসন রক্ষা করবে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্বহাল করবে, তা জাতি বিবেচনা করবে।
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আজকের (বৃহস্পতিবার) রায়ে আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হলো। এটা কার্যকর হবে পরবর্তী সংসদ ভাঙার পরের ১৫ দিনের মধ্যে।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের পর জানা যাবে, পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন। জানা যাবে, পূর্বের ব্যবস্থা অনুযায়ী হবে নাকি জুলাই সনদ অনুসারে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরেছে। তবে এর গঠন কী হবে, তা ঠিক করবে পরবর্তী সংসদ।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা হয়েছিল। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না বলে তা সাংবিধানিক হিসেবেই রায়ে ঘোষিত হলো। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি সহায়ক ব্যবস্থা হিসেবে ফুল জাজমেন্টে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
জুলাই সনদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার যে রূপরেখা আছে, তার পরিবর্তন সম্ভব হবে কি না, জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পার্লামেন্টের কিছু ডিসকাশন থাকবে। ২০ বছর পরে জনগণ যদি মনে করে এই ব্যবস্থা পচে গলে গেছে, এর থেকেও ভালো কোনো ব্যবস্থা গণতন্ত্র সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন, তাহলে অবশ্যই পার্লামেন্টের ডিসকাশন থাকবে।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার ভাই ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাড়ে ৪ কোটিরও বেশি শেয়ার অবরুদ্ধ করেছে সিআইডি।
জাবেদ ও তার ভাই ইউসিবি ব্যাংক পিএলসির সাবেক পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি এবং রনির স্ত্রী মেঘনা ব্যাংক পিএলসির সাবেক পরিচালক ইমরানা জামান চৌধুরীর নামে এসব শেয়ারের মালিকানা ছিল।
গতকাল বুধবার সিআইডির পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অভিযুক্তরা অবৈধ অর্থ দিয়ে এসব শেয়ার কিনেছিলেন।
এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত ১৮ নভেম্বর সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন।
এছাড়া ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটও এই অনুসন্ধান পরিচালনা করছে। অপরাধের বিস্তারিত তথ্য উদঘাটন, অজ্ঞাত অপর সদস্যদের শনাক্তকরণ ও অন্যান্য আইনানুগ প্রক্রিয়ার জন্য সিআইডির অনুসন্ধান এখনো অব্যাহত রয়েছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অভিযুক্তদের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যক্তিগত হিসাব ও তাদের কাগজে প্রতিষ্ঠানের নামে মোট ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ২০০ শেয়ার ক্রয় করা হয়েছিল। এর তৎকালীন বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। পরে স্টক ডিভিডেন্ড যোগ হয়ে শেয়ার সংখ্যা বেড়ে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫৫-এ উন্নীত হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, জালিয়াতি ও সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ অর্জন করেছেন।
অবৈধ অর্থের একটি অংশ বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল এবং তা পুনরায় দেশে এনে বৈধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, সিঙ্গাপুর ও দুবাই থেকে মোট ২ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৪৪৪ মার্কিন ডলার দেশে আনা হয়। এই টাকা অভিযুক্তদের সহযোগী আবুল কাসেমের মাধ্যমে ইউসিবি ব্যাংক ও এনআরবিআইসি ব্যাংকের এফসি অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছিল।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসকে ঘিরে কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মহান বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নকল্পে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ঘিরে দেশে কোনো অস্থিরতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে কোনো রকম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়নি। বিজয় দিবসকে ঘিরেও কোনো অস্থিরতার সম্ভাবনা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন নেই। আগে যেভাবে সব কর্মসূচি হয়েছে, এবারও সেভাবে হবে। বরং আরও বেশি হবে। তবে গতবারের ন্যায় এবারও প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে না।’
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ডিবি পরিচয়ে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে পরে ফেরত দেওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়টা আমি প্রথম শুনলাম। অনুসন্ধান করার পর হয়তো আমি বিষয়টা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।’
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের ‘জন্মস্থান’ খ্যাত পুরান ঢাকার হৃষিকেশ দাস রোডের রোজ গার্ডেন কেনার নামে রাষ্ট্রের ৩৩২ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই কমিশন ব্যবস্থা নেবে।’
দুদক জানায়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ‘রোজ গার্ডেন’ বাড়িটি কেনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ৩৩২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ পাওয়ার পর দুদক বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে অভিযান চালায়। অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য ও নথির ভিত্তিতে কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে।
২০১৮ সালে ব্যক্তি মালিকানাধীন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত ‘রোজ গার্ডেন’ ভবনটি কিনে নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এজন্য ব্যয় হয় ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ ২ হাজার ৯০০ টাকা।
ওই বছরের ৮ আগাস্ট সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগের জন্মস্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইতিহাসের স্বাক্ষী রোজ গার্ডেন ভবনটি অধিগ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সরকার ওই ব্যক্তিমালিকানাধীন পুরাকীর্তিটি কিনে নেয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, হৃষিকেশ দাস নামে এক ব্যবসায়ী ১৯৩১ সালে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর ওই বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ির চারপাশ তিনি সাজিয়ে তোলেন বিভিন্ন দেশ থেকে আনা দুর্লভ প্রজাতির গোলাপের বাগানে। তখন থেকে এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন’। ১৯৩৬ সালে ঢাকার বই ব্যবসায়ী খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছে ওই সম্পত্তি বিক্রি করে দেন হৃষিকেশ দাস। কাজী আবদুর রশীদ সেখানে প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরি গড়ে তোলেন।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই রোজ গার্ডেনেই গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে এ দলের নতুন নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।
২০১৮ ব্যক্তি মালিকাধীন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত ওই বাড়ি কিনে নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এতে সরকারের ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ দুই হাজার ৯০০ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা জানায় সরকার।
গত বছরের ৫ আগস্ট ওসি সায়েদের নির্দেশেই আশুলিয়া থানার সামনে সরাসরি গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে পুলিশ সদস্যরা। পরে ওসির নির্দেশেই পেট্রোল ঢেলে ৬ মরদেহ পুড়িয়ে দেয় তারা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ গতকাল বুধবার ৬ লাশ পোড়ানোর মামলায় এ লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন রাজসাক্ষী এসআই আফজালুল হক।
সাক্ষ্যে শহীদদের জন্য কিছু করতে না পারার কথা জানিয়ে, শহীদ পরিবার ও ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
এসআই আফজালুল বলেন, আশুলিয়া থানার সামনে এএসআই বিশ্বজিৎসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাত্র-জনতার মিছিল লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি করে।
এ সময় কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। তখন ওসি সায়েদ তার ঊর্ধ্বতন কারও সাথে ফোনে কথা বলছিলেন বলে দেখেন রাজসাক্ষী আফজালুল।
পরে ওসি সায়েদের নির্দেশ মরদেহগুলো প্রথমে একটি ভ্যানে এবং পরে পিকআপে উঠায়। এরপর এ বিষয়ে ওসি সায়েদ এসআই মালেক ও এএসআই বিশ্বজিতের সাথে পরামর্শ করেন। তখন তা দেখে আফজালুল নিজে তার পিস্তল সাথে নিয়ে থানা ত্যাগ করেন। এর ১০ দিন পর ১৫ আগস্ট থানায় এসে তিনি অস্ত্র জমা দেওয়ার সময় জানতে পারেন, মরদেহগুলো ওসি সায়েদ ও বিশ্বজিৎসহ অন্যরা পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে যথাযথভাবে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সেমিনার কক্ষে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। তখন সভাপতির বক্তব্যে এই তিনি আহবান জানান।
সিইসি বলেন, ‘ভোট গ্রহণের প্রতিটি পদক্ষেপে আপনাদের সকলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অতীতে কেয়ারটেকার আমলে দুই-তিনটা নির্বাচন দেখেছি, নির্বাচনী আচরণবিধি পালনের ব্যাপারে দলগুলো ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাইতেও প্রতিটা রাজনৈতিক দল এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে আমরা আশা করব আপনারা আমাদের ও দেশের জনগণের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করবেন।’
তিনি বলেন, শুধু নির্বাচন কমিশন একা নয়, একটা সুন্দর আর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য আপনারাও জাতির কাছে অঙ্গিকারবদ্ধ। এতদিনের সংলাপে ‘আমরা একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই না’ এমন বক্তব্য কোনো রাজনৈতিক দল দেয়নি। সবাই একটা সুন্দর, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতির কাছে ওয়াদা করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটাই স্বাভাবিক, কারণ আপনারা তো দেশের জন্য রাজনীতি করেন, দেশের কথা ভাবেন, মঙ্গল কামনা করেন- এই বিশ্বাস আমাদের আছে, তাই আমরাও জাতির কাছে কথা দিয়েছি এবং প্রধান উপদেষ্টাও অঙ্গিকার করেছেন এই নির্বাচনকে ঘিরে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা হবে।’
সিইসি জানান, আচরণবিধির খসড়ায় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অনেকগুলো সুপারিশ এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এরপর এটি ওয়েবসাইটে দিয়ে জনগণের মতামত চেয়েছিলাম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল লিখিতভাবে তাদের মতামত দিয়েছে, বিভিন্ন অন্যান্য সংস্থাও লিখিতভাবে মতামত দিয়েছে। সবার মতামত পর্যালোচনা করে এটা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তবে, আচরণবিধি প্রস্তুত করাটা বড় কাজ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা সুন্দর নির্বাচনের জন্য আচরণবিধি পরিপালনটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা যে রাজনৈতিক দলগুলো এই আচরণবিধি পরিপালনে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি যে দেশের ভোটাররা একটু ভোট বিমুখ হয়ে গিয়েছিল গত ১০-১৫ বছরে, তারা ভোটবিমুখ, কেন্দ্রবিমুখ হয়ে ভোট দিতে আসতে চায়নি। জাতীয় নেতারা, যাদের সাথে সরাসরি তৃণমূলের সম্পর্ক রাখেন, তৃণমূলের মানুষ আপনাদের বক্তব্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভোট দেওয়ার জন্য আপনারা জনগণকে একটু উদ্বুদ্ধ করবেন। আমরা চাই সবাইকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে, এবং আপনারা সেটি করতে সক্ষম।’
চলমান এ সংলাপে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো সানাউল্লাহ, আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমেদ, মো আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল বুধবার সংলাপে সকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো ছিল- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব, বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
এছাড়া এদিন দুপুর ২টা থেকে বিএনপি, বিজেপি, গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-মার্কসবাদী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর ও আনন্দময় পরিবেশে আয়োজন করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। গতকাল বুধবার মিরপুর সেনানিবাসে ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) কোর্স–২০২৫-এর গ্র্যাজুয়েশন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৪টি দেশের তরুণ সামরিক কর্মকর্তাদের হাতে সনদ তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। এ বছর চীন, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের ৩১১ জন অফিসার প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘দেশবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত এই নির্বাচনকে সত্যিকার অর্থে একটি শান্তিপূর্ণ উৎসব এবং আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত করতে আমাদের সেনাবাহিনীর সহায়তা একান্তভাবে কামনা করছি।’
তিনি জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানেও সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন। তার ভাষায়, ‘সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং এই কারণে আমি তাদের ভূমিকায় ভূয়সী প্রশংসা করি।’
কোর্সে অংশগ্রহণকারী অফিসাররা অনুষ্ঠানে অর্জিত জ্ঞান ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত ও পেশাগত ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তাদের মতে, জাতীয় যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে এই প্রশিক্ষণ কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে।
এক বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারী বলেন, ‘ডিএসসিএসসিতে এই কোর্সে আমরা যে নেতৃত্ব, কৌশল এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছি, তা আমাদের দেশের এবং এর বাইরে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করবে। বিশেষ করে যেকোনো জাতীয় সংকটে আমরা আমাদের অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করতে প্রস্তুত।’
চীন থেকে অংশ নেওয়া এক অফিসার বলেন, ‘বাংলাদেশের এই সামরিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে চলেছে। ২৩টি দেশের সহকর্মীদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পাওয়ায় আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া আরও শক্তিশালী হয়েছে। আমরা আশা করি, এই জ্ঞান ভবিষ্যতে আমাদের নিজ নিজ দেশকে নিরাপত্তা দিতে কাজে লাগবে।’
বাংলাদেশি আরেক অফিসার প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যে কথাগুলো বলেছেন, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমরা আশা করি, আমরা যারা এই কোর্স সম্পন্ন করলাম, তারা দেশ রক্ষায় এবং প্রয়োজনে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে, যেমন: একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ায়, আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত থাকব।’
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্র্যাজুয়েশন সনদ বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী কর্মকর্তাদের হাতে সনদ তুলে দেন।
ডিএসসিএসসি কোর্স-২০২৫-এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭০ জন, নৌবাহিনীর ৪৫ জন এবং বিমান বাহিনীর ৩৬ জন কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তা এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জর্ডান, কেনিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, নেপাল, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সিয়েরা লিওন, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, তুরস্ক ও উগান্ডা থেকে আগত ৫৮ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। সব মিলিয়ে এ বছর মোট ৩১১ জন প্রশিক্ষণার্থী গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। এতে বাংলাদেশ পুলিশের একজনসহ মোট ১৪ জন নারী কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেন, যা নারীর অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধানরা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা (চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপকরা এবং বিভিন্ন দেশের মিলিটারি বা ডিফেন্স অ্যাটাচি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবিধানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসায় এখন আর দিনের ভোট রাতে হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) আপিল বিভাগের রায়ের পর নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা দেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি সহায়ক ব্যবস্থা হিসেবে ফুল জাজমেন্টে আসবে। আজ থেকে বাংলাদেশের মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে। দিনের ভোট রাতে হবে না, মৃত মানুষ এসে ভোট দিয়ে যাবে না।
তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছিল। হাইকোর্ট এটাকে অসাংবিধানিক বলেছেন এবং এই সংশোধনী অসৎ উদ্দেশ্য আনা হয়েছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফরমেশন হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না। এটা রিস্টোরড হয়েছে, অর্থাৎ পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনো কোরান বা বাইবেল নয়। এই রায়ের মাধ্যমে এমন কিছু আসবে না, যা কোরান বা বাইবেলিক হয়ে যাবে। ২০ বছর পর যদি মানুষ মনে করে এই ব্যবস্থা পঁচে গলে গেছে, গণতন্ত্র রক্ষায় এর থেকে ভালো কোনো ব্যবস্থা রয়েছে, তখন পার্লামেন্ট সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
আপিল বিভাগ তার পূর্বের রায়কে কলঙ্কিত বলে মন্তব্য করেছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কলঙ্কিত বলেই সে রায়টা বাতিল করা হয়েছে। অনেকগুলো কারণ আমরা দেখিয়েছি। তার একটা কারণ হিসেবে আমরা বলেছিলাম, এই রায় লেখার ক্ষেত্রে খায়রুল হক ও তার সহযোগীরা দণ্ডবিধি ২১৯ ধারায় অপরাধ করেছেন। মুখ দিয়ে রায় বলে ফেললে সেটা রায়, ওটা পরিবর্তনের আইনি পদ্ধতি রয়েছে। হয় নিজেরা রিভিউ নাম্বার ফেলে পরিবর্তন করতে পারতেন। অথবা অন্য কেউ রিভিউ করে তা পরিবর্তন করতে পারতেন। অথচ মুখের রায়কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, ফিফটিনথ অ্যামেডমেন্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের যে সংশোধনী, যে অংশটুকু বাতিল হয়েছে, আপিল বিভাগে তো সেটাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।
রাজনৈতিক অবস্থার ওপর রায় নির্ভর করে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি তা মনে করি না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করে যে নির্বাচন হয়েছিল…এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল হওয়ার পর দেশ গণতন্ত্রের পথে হাঁটবে, কোনটা সবচাইতে বেশি গ্রহণযোগ্য, সেটা আপনারাই বিবেচনা করবেন। গণতান্ত্রিক নয়, এটা হলো এক আইনি রায়।
পুলিশ অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী।
তিনি বলেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি অনুরোধ করব- আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে সাজ্জাত আলী বলেন, পুলিশ যখন একটি অরাজকতা ঠেকানোর প্রতিহতের চেষ্টা করছিল তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে কি ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে? অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে আপনারা খারাপ ব্যবহার করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যে কাজটি করতে চাচ্ছিলেন সেটি করলে সমাজে, ঢাকা শহরে, দেশে একটা অরাজকতাপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, একটি গণঅভ্যুত্থান হয়ে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এজন্যই আমাদের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাদের প্রতি এমন আচরণ আমরা কোনো শিক্ষিত, সচেতন মানুষের কাছ থেকে আশা করি না।
পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় কমিশনার ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে আমার সদস্যদের মনোবল ভেঙে যায় এবং এই পরিস্থিতির ক্ষতি সবাইকেই ভোগ করতে হয়। যদি আমার অফিসারদের মনোবল ঠিক না থাকে ৫ আগস্ট এর পরে যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধ লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছে ঠিক সেভাবে আবার পাহারা দিতে হবে।
তিনি বলেন, যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছেন, তাদের কাছে অনুরোধ- এই কাজটি করবেন না।
গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, এটা পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়; এটা দেশের আইন। আইন আমি বানাই না- পার্লামেন্ট বানায়। আপনারা আইনটা দেখেন। পুলিশের কাজে আইনেই যা বলা আছে, আমি শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। নতুন সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে থাকবে আধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ইমেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকরা সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাবেন। আমাদের লক্ষ্য- প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করা।
শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বেলিং- এসব অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে গভীরভাবে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়াচ্ছে
নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানে বিশেষ উদ্যোগ থাকবে। হয়রানির শিকার হলে যাতে দ্রুত সহায়তা পাওয়া যায়- এটাই আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাইবার নিরাপত্তাকে শুধু পুলিশের দায়িত্ব না উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়তে সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) গ্রাহকের সেবা অনলাইনে দেওয়ার লক্ষ্যে ই-সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে। এখন থেকে বিএসটিআইয়ের সব সেবা পাওয়া যাবে অনলাইনে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিএসটিআই প্রধান কার্যালয়ে সেবাগ্রহীতাদের সেবা দেওয়ার সহজীকরণের জন্য এ সফটওয়্যারের উদ্বোধন করা হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম সফটওয়্যারের কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে উদ্বোধন করেন। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব (অ. দা.) নুরুজ্জামান, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিএসটিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (বিটিএফ) প্রকল্পের আর্থিক ও অরেঞ্জ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের কারিগরি সহায়তায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
এখন থেকে সিএম ম্যান্ডেটরি প্রোডাক্ট লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে গ্রাহক eservice.bsti.gov.bd লিংক এ গিয়ে আবেদন করতে পারবেন। বিএসটিআই কর্তৃক আবেদন গ্রহণের পর যাচাই-বাছাই, পরিদর্শন, সিম্পেল কালেকশন, টেস্ট ফি প্রদান এবং সবশেষ লাইসেন্স প্রদান সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
এ ছাড়া বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে গ্রাহক ec.eservice.bsti.gov.bd লিংকে গিয়ে BDS ক্রয় করতে পারবেন।
পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠানটির মেট্রোলজি লাইসেন্স, এমএসসি লাইসেন্স, কেমিক্যাল ল্যাব টেস্ট, ফিজিক্যাল ল্যাব টেস্ট এবং এডমিন উইংয়ের সেবাসমূহ সফটওয়্যারে যুক্ত করা হবে।