শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
৪ পৌষ ১৪৩২

প্রার্থী বেশি,প্রতিদ্বন্দ্বী কম

ফাইল ছবি
আপডেটেড
২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:১৪
তানজিমুল নয়ন
প্রকাশিত
তানজিমুল নয়ন
প্রকাশিত : ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩২টি দল। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ৭৪৭ জন। সে হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যয়নপত্র নিয়ে নির্বাচনে উপস্থিত ১৯৬৬ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্রদের মধ্যে অন্তত ৪০০ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন। তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, নির্বাচনে আসা বড় দল আওয়ামী লীগের মূল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাইরে অন্যদলগুলোর বেশির ভাগ প্রার্থীই আসনগুলোর মানুষের কাছে অচেনা। প্রায় প্রতিটি আসনেই নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন এমন অনেক অচেনা মুখ যাদের প্রার্থিতা পেতে সমস্যা না হলেও নির্বাচনী লড়াইয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে পরিচিত হতেই পার হয়ে যাবে প্রচারণার বেশির ভাগ সময়। ফলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচনে প্রার্থী আছে অনেক বেশি, কিন্তু, প্রতিদ্বন্দ্বী কম।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৩০০ আসনের বিপরীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের (নৌকা) ৩০৩ জন, জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) ৩০৪ জন, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১৮ জন, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) ১৫১ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি (আম) ১৪২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) ১১৬ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (মশাল) ৯১ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) ৪৭ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১৩ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৮ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ১৩ জন, গণফ্রন্ট (মাছ) ২৫ জন, গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) ৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) ৪৫ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) ২০ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩৪ জন, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১২ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ৩৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা) ১৪ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) ৮২ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম (নোঙর) ৪৯ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট- বিএনএফ (টেলিভিশন) ৫৫ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৭৪ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ- বিএমএল (হাত-পাঞ্জা) ৫ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ (কুঁড়েঘর) ৬ জন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মই) একজন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (রিকশা) একজন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (খেজুর গাছ) একজন এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন) দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

এদিকে মনোনয়ন জমার শেষ দিনেই ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের সময়সীমা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে বিএনপিসহ যে দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে তাদের আর মত পাল্টে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসার দৃশ্যমান কোনো সুযোগ নেই। আন্দোলনরত দলগুলোও অবশ্য আগেই এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে।

ফলে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে যেসব প্রার্থী টিকে যাবেন তারাই থাকবেন নির্বাচনী দৌড়ে। তবে প্রতিটি আসনে ভোটের লড়াইয়ে যারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগেরই দলের নাম সাধারণ মানুষ জানে না। আর দল অচেনা বলে প্রার্থীরাও অচেনা। ফলে তাদের ধারণা নির্বাচনী লড়াইয়ে আসলে টিকে থাকবেন বড় দলের পরিচিত মুখগুলো। এর মধ্যে শাসক দলের মার্কা নিয়ে লড়াই করা প্রার্থীরা যেমন আলোচনায় থাকবেন, তেমনই অনেক আসনেই তাদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমাতে পারেন নির্বাচনে আসা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কেননা, দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশির ভাগই স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এবং তাদের মোটামুটি ভোট ব্যাংক অথবা এলাকাবাসীকে প্রভাবিত করার সক্ষমতা রয়েছে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ৪০০ জনই আওয়ামী লীগের।
যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত কয়েক দিনের মতো গতকালও বলেছেন, দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঢালাওভাবে নির্বাচন করতে পারবেন না। এ ছাড়া ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সম্ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন জোটের এমন প্রার্থীরাই কেবল থাকবেন বিবেচনায়। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এর ফলে এটা স্পষ্ট যে, জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ যাদের মনোনয়ন দিয়েছে তাদেরও রণে ভঙ্গ দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে।

তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে এবার দলীয় মার্কার বাইরে দলীয় প্রার্থীদের স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়ায় নির্বাচনে আসা প্রার্থীদের কতজন আবার দল চাইলে নির্দেশ মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন সেটাও আছে দেখার বিষয়।

তবে এই আলোচনার বাইরে থেকে যাচ্ছে বেশির ভাগ প্রার্থী যারা বিভিন্ন দল থেকে নির্বাচনে এলেও জনগণের কাছে নিজের দল, দলীয় প্রতীক এবং নিজের পরিচয় প্রকাশ করার সুযোগ পাবেন। তবে প্রতিটি আসনে স্থানীয় ভোটারদের কাছে তারা এখনো অচেনা এবং নতুন মুখ হিসেবে বিবেচিত।

যেমন দল হিসেবে এবারই প্রথম নির্বাচন করছে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। এসব দলের বেশির ভাগ প্রার্থী নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের কাছে নতুন পরিচয়ে উপস্থিত হবেন। অনেকে আবার খুব বেশি পরিচিত নন। একইভাবে তাদের নির্বাচনী প্রতীক যথাক্রমে সোনালী আঁশ, নোঙর ও একতারা চেনাতেও এবার তাদের বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হবে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনএমের প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ৬ জন এবং তৃণমূলের প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ৫ জন।

এদিকে, গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদের বলেছেন, বিএনপির ১৫ কেন্দ্রীয় নেতাসহ সাবেক ৩০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে কাদের সিদ্দিকী, লতিফ সিদ্দিকী, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো নেতাও আছেন। আবার আগে বিএনপিতে প্রভাব ছিল দলটির এমন সাবেক নেতারাও আছেন নির্বাচনে। এদের মধ্যে তৈমূর আলম, সমশের মবিন চৌধুরীর নাম উল্লেখযোগ্য।

তবে এদের বাইরে নির্বাচনের মাঠে থাকা বেশির ভাগ প্রার্থীই অচেনা। এ বিষয়ে গাজীপুর-৪ আসনের একজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার দল এলাকায় তেমন পরিচিত নয়। দলের প্রচার চালাতে ও এলাকার মানুষের কাছে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে এবার ভোট করতে আসা। আমিও জানি নির্বাচনে জয়লাভ করার অবস্থান এখনো আমার বা আমার দলের তৈরি হয়নি। তবে এক দিনে তো কিছুই হয় না। আমাদের দলের আদর্শ ও কর্মসূচি দেশের মানুষ ও এলাকার মানুষকে জানাতে আমরা নির্বাচনে এসেছি।’

অন্যদিকে লালমনিরহাট-৩ আসনে মনোনয়ন জমা দেয়া প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সদর আসনে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদ্য পদত্যাগকারী সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন বক্কর, জাতীয় পার্টি থেকে জাহিদ হাসান, তৃণমূল বিএনপি থেকে শামীম আহম্মেদ চৌধুরী, জাকের পার্টি থেকে সকিউজ্জামান মিয়া, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল থেকে আশরাফুল আলম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে আবু তৈয়ব মো. আজমুল হক পাটোয়ারী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) থেকে শ্রী হরিশ চন্দ্র রায় মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তবে এবার তিনি এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ফলে এ আসনে নির্বাচনে অংশ নেয়া সব প্রার্থীই নতুন এবং নতুন একজন সংসদ সদস্য পাবে লালমনিরহাট সদরবাসী। তবে নতুন হলেও জেলা ও শহরের রাজনীতিতে পুরনো মুখ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান। ছাত্ররাজনীতি করায় জাবেদ হোসেন বক্করও সেখানে পরিচিত মুখ। জাকের পার্টি ও জাসদের প্রার্থীকেও অনেকে চেনেন। তবে সাম্যবাদী দল, এনপিপির প্রার্থীর মতো জাতীয় পার্টির প্রার্থীও এলাকার সবার চেনা মুখ নন। ফলে যে আসন থেকে জাতীয় পার্টি বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে সেখানে নতুন মুখ দেয়ায় মাঠের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন এলাকার অনেক বাসিন্দা।

বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসন বিশ্লেষণ করলে। দৈনিক বাংলার খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনার এই ৬টি আসনের জন্য সেখানে ৫৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাদের অধিকাংশেরই রাজনীতিতে তেমন কোনো পরিচিতি নেই। হঠাৎ করেই তারা কেন সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী হলেন, এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তরও দেননি অধিকাংশ প্রার্থী।

খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনীত ৬ জন প্রার্থী, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ২ জন এবং জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। বাকি ৪৪ জন প্রার্থী কখনো রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় ছিলেন না।

খুলনা প্রতিনিধির বিশ্লেষণ অনুযায়ী খুলনা-১ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৬ জন। তারা হলেন, জাকের পার্টির মো. আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল, জাতীয় পার্টির কাজী হাসানুর রশিদ, তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় ও আবেদ আলী শেখ।

এদের মধ্যে ননী গোপাল মণ্ডল ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। রাজনীতিতে তার পরিচিতি রয়েছে। তবে বাকি চারজন রাজনীতিতে একেবারেই অপরিচিত। তারা প্রত্যেকেই এবার প্রথম সংসদ নির্বাচন করছেন। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সাবেক সচিব।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করছি। আমাকে ডামি প্রার্থীও বলা যাবে। এটা দলীয় নির্দেশেই হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল বলেন, ‘দল আমাকে আবারও সুযোগ দিয়েছে। আমি দলের সম্মান রাখব বলে আশাবাদী।’

তবে বাকি চার প্রার্থীর তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। জাতীয় পার্টীর কাজী হাসানুর রশিদ ও তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিকের কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেও কোনো উত্তর মেলেনি।

আর জাকের পার্টি মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলেছে, তাই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি।’

অন্যদিকে খুলনা-২ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, গণতন্ত্র পার্টির মো. মতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার, জাকের পার্টির ফরিদা পারভিন, ইসলামী ঐক্যজোটের হিদায়েতুল্লাহ, জাতীয় পার্টির মো. গাউসুল আজম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বাবু কুমার রায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমান।

এদের মধ্যে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর রাজনৈতিকভাবে পরিচিতি রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তবে বাকিদের আগে কখনো রাজনৈতিক মাঠে দেখা যায়নি।

কেন প্রার্থী হয়েছেন- এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার বলেন, ‘অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন জমা দেয়া হচ্ছে, তাই আমরাও দিচ্ছি।’

খুলনা-৩ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের এস এম কামাল হোসেন, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইজার আহমেদ ও ফাতেমা জামান সাথী।

এদের মধ্যেও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। তিনি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তিন বারের সংসদ সদস্য ও দুই বারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে সরিয়ে তাকেই আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। তবে ওই আসনেরও বাকি চারজনের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই।

খুলনা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন ১৪ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী, জাকের পার্টির শেখ আনছার আলী, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এস এম আজমল হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. ফরহাদ আহমেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মোস্তাফিজুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা, ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দীন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জুয়েল রানা, এম ডি এহসানুল হক, মো. রেজভী আলম, এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা, আতিকুর রহমান ও এইচ এম রওশান জমির।

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী বর্তমান সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি জয়ী হয়েছিলেন।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। তিনি ওই আসনের তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার আপন ভাই।

তিনি বলেন, এলাকার মানুষের দোয়া নিয়ে মাঠে নেমেছি। জয়-পরাজয় এলাকার মানুষই নির্ধারণ করবেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই আসনে আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এলাকার ভোটাররা বলছেন, বাকি ১২ জন প্রার্থীদের নাম খুব একটা শোনেননি তারা। কেউ কেউ একেবারেই অপরিচিত।

খুলনা-৫ আসনের জন্য মনোনয় জমা দিয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির মো. শহীদ আলম, জাকের পার্টির সামাদ সেখ, আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ সেলিম আকতার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের এস এম এ জলিল, ইসলামী ঐক্যজোটের তরিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন।

এদের মধ্যে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ একাধিক বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী। এ ছাড়া আকরাম হোসেন ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই আসনেও আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা। বাকি যারা প্রার্থী হয়েছেন এলাকার রাজনীতিতে তাদের তেমন কোনো পরিচিতি নেই বলে জানা গেছে।

খুলনা-৬ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১২ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মো. রশীদুজ্জামান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আবু সুফিয়ান, জাকের পার্টির শেখ মর্তুজা আল মামুন, জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মির্জা গোলাম আজম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এস এম নেওয়াজ মোরশেদ, তৃণমূল বিএনপির গাজী নাদীর উদ্দীন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম রাজু, গাজী মোস্তফা কামাল, জি এম মাহবুবুল আলম, মো. মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর ও মো. অহিদুজ্জামান মোড়ল।

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. রশীদুজ্জামানের কোনো দলীয় পদ নেই। তিনি একসময় পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছিলেন। তবে তাকেই মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে ক্ষমতাসীন দল। ওই আসনে রাজনৈতিকভাবে পরিচিত রয়েছে জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধুর। তিনি আগেও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বাকি প্রার্থীদের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। এলাকার সবার কাছে পরিচিত মুখও নন অনেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ আসনেই ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের স্থানীয়রা তেমন একটা চেনেন না। তবে বিরোধীদের এক অংশ নির্বাচন বর্জন করায় রাজনীতির নতুন সমীকরণ মেলাতে ছোট দলগুলোই নির্বাচনে হতে যাচ্ছে বড় দলগুলোর সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনীযুদ্ধ পার হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।

জাসদের মাঠপর্যায়ের এক রাজনীতিবিদ জসিম মণ্ডল বলেন, ‘নির্বাচন একটা বড় খেলা। এখানে সবাই নামে নিজ নিজ সমীকরণ মেলানোর জন্য। রাজনৈতিক দলগুলোর সমীকরণ হয় এক ধরনের, আবার প্রার্থীর সমীকরণ হয় আরেক ধরনের। সবাই নির্বাচনে জয়ী হতে যেমন অংশ নেয় না তেমনই কেউ কেউ নির্বাচনে যায় অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করতে। আবার অনেকের কাছে ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণই বড় কথা।’ জয়-পরাজয়ের চেয়েও বড় বিষয় এ সময় পোস্টারিং করে নিজের ছবি ও পরিচিতি পুরো এলাকার মানুষকে দেখানো যায়। এটাও বা কম কিসে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরই আছে নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার। তাই কটা টাকা খরচ করে অনেকেই পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ নেয়। এর ফল তো অসীম-সারাজীবন নানাভাবে এর সুফল মেলে। যারা রাজনীতিতে আছেন, কেবল তারাই বোঝেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারার গুরুত্ব।


শহিদ ওসমান হাদির জানাজা নামাজের সময় পরিবর্তন, স্থান মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজা নামাজের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার পরিবর্তে আধাঘন্টা এগিয়ে এনে দুপুর দুইটায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রেস উইং থেকে বলা হয়, ‘আগামীকাল (শনিবার, ২০ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

ওসমান হাদির জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে সরকার। যারা জানাজায় অংশগ্রহণ করবে তারা কোনো ধরনের ভারী ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এছাড়া, জানাজার সময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে সরকার।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌঁনে ছয়টায় ঢাকায় পৌঁছে ওসমান হাদির মরদেহ। বিমানবন্দর থেকে মরদেহ হিমাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।


খালেদা জিয়ার শরীরে ছোট একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে : ডা. জাহিদ হোসেন

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন |ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একটি চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

শুক্রবার বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেনি।

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘২৩ নভেম্বর থেকে টানা প্রায় এক মাস ধরে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে এবং দেশবাসীর দোয়ায় তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে গত এক মাসের তুলনায় স্থিতিশীল রয়েছে। শুক্রবার খালেদা জিয়ার শরীরে একটি ছোট চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি তা ভালোভাবে সহ্য করতে পেরেছেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, বর্তমানে খালেদা জিয়া ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। এখানে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। সাধারণভাবে বুঝতে চাইলে বলা যায়, তিনি আইসিইউ ব্যবস্থাসম্পন্ন একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন।

জাহিদ হোসেন জানান, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। এ চিকিৎসা প্রক্রিয়া যেন আল্লাহ অব্যাহত রাখেন, সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।

এসময় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেনি। আজ যে চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, সেটি সফলভাবে হওয়া প্রমাণ করে যে তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।’


শনিবার আড়াইটায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে ওসমান হাদির জানাজা

আপডেটেড ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২০:২৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজা শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, জানাজায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

একই সঙ্গে এসময় সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে বলে জানান উপ-প্রেস সচিব।

গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনি প্রচারণার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) নেওয়া হয়, যেখানে প্রাথমিক অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।

সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মরদেহ নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৩৮৫ শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।


খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে বেশ স্থিতিশীল: ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন

আপডেটেড ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৮:৫৫
 নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবস্থা গত এক মাসের মধ্যে এখন বেশ স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে বিএনপির চেয়ারপারসনের সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আপনারা জানেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আজকে এক মাস প্রায় হয়ে যাচ্ছে, গত ২৩ নভেম্বর আজ ১৯ ডিসেম্বর যাবৎ এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এবং আলহামদুলিল্লাহ, কালকে আপনাদেরকে আমি বলেছিলাম আপনাদের প্রশ্নের উত্তরে যে উনার শারীরিক অবস্থা আপনাদের দোয়ায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমতে উনার শারীরিক অবস্থা গত এক মাসের মধ্যে এখন বেশ স্থিতিশীল আছে। এবং আজকেও উনার একটা ছোট প্রসিডিউর করা হয়েছে ওটিতে নিয়ে এবং সেটিও উনি অত্যন্ত সফলভাবে গ্রহণ করতে পেরেছেন, অর্থাৎ প্রসিডিউরটা সুন্দরভাবে করা হয়েছে। এবং উনি এখন উনার সিসিইউতে যে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট ওখানে উনি আইসিইউ এর যে ব্যবস্থা, সে ব্যবস্থা সম্বলিত কেবিনে চিকিৎসাধীন আছেন।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী ডাক্তার জুবাইদা রহমানসহ পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে এবং দলের পক্ষ থেকে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে আমরা দোয়া চাই যেন একইভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের অধীনে যে চিকিৎসা, দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত যে মেডিকেল বোর্ড, সেই মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসা যেভাবে উনি নিতে পারছেন সেটি যেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উনাকে অব্যাহত রাখার তৌফিক দান করেন। এবং এখনকার যে অবস্থা আছে এ অবস্থা যাতে আরও সুস্থতার দিকে উনাকে নিয়ে যেতে পারে সেই দোয়া চাচ্ছি।

সামগ্রিকভাবে উনার শারীরিক অবস্থা কি উন্নতির দিকে বলা যায়? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, আমি তো আপনাদের বলেছি, আমি দুইটি শব্দ উচ্চারণ করেছি একটি বলেছি আলহামদুলিল্লাহ। দ্বিতীয়টি বলেছি, গতকালকেও আপনাদেরকে বলেছি সেই তুলনায় উনি আজকে উনার শরীরের ওপর একটা প্রসিডিউর করা হয়েছে সেটি উনি অত্যন্ত সফলভাবে গ্রহণ করতে পেরেছেন এবং উনি এখন এই মুহূর্তে উনার অবস্থা স্থিতিশীল আছে। অর্থাৎ উনার অবস্থা অবনতি ঘটে নাই।


দেশে পৌঁছেছে শহীদ ওসমান হাদির মরদেহ

আপডেটেড ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৮:৪০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় পৌঁছেছে জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীর শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তার মরদেহ বহনকারী বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-৩৮৫ ফ্লাইটটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এর আগে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ‌৩ মিনিটে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে জানানো হয়, শহীদ ওসমান হাদিকে বহনকারী বিমানটি সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

আমাদের জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীরকে নিতে সবাই এয়ারপোর্ট থেকে শাহবাগগামী রাস্তার দুপাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নেবো। সেখান থেকে শহীদ ওসমান হাদিকে সর্বসাধারণের সাক্ষাতের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আনা হবে।

গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনে নির্বাচনি প্রচারণার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) নেওয়া হয়, যেখানে প্রাথমিক অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।

সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।


সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করছে বিজিবি: প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের ভৌগলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান রোধ, মাদক ও নারী-শিশু পাচার রোধে বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যেকোন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানেও বিজিবি প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি সীমান্ত উত্তেজনা ও পুশইন রোধসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল (শনিবার) ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০২৫ উদযাপন’ উপলক্ষ্যে দেওয়া বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বিজিবি দিবস উপলক্ষ্যে বাহিনীর সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এই অঞ্চলের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও গৌরবময় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী।

তিনি আরও জানান, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দু’জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ১১৯ জনের খেতাবপ্রাপ্তি এবং ৮১৭ শহীদের আত্মত্যাগ বিজিবির ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছে।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশমাতৃকার বৃহত্তর কল্যাণে এ বাহিনীর যে সকল সদস্য বিভিন্ন সময়ে আত্মোৎসর্গ করেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন তিনি।

ড. ইউনূস বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

সূত্র : বাসস


সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকারের বিবৃতি

আপডেটেড ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২০:২৬
নিজেস্ব প্রতিবেদক

সম্প্রতি সংগঠিত অগ্নিসংযোগ এবং জনগণের জানমাল ধ্বংসের সব কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে সব প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সব নাগরিককে আহ্বান জানানো হচ্ছে-সংঘটিত সব প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে সতর্ক থাকুন। আমরা সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন, অগ্নিসংযোগ এবং জানমাল ধ্বংসের সব কর্মকাণ্ডকে দৃঢ়ভাবে ও দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানাই।

এতে আরো বলা হয়, দেশের ইতিহাসের এই সংকটময় সময়ে আমরা একটি ঐতিহাসিক গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। যারা বিশৃঙ্খলাকে পুঁজি হিসেবে নেয় এবং শান্তির পথকে উপেক্ষা করে-এমন অল্প কয়েকজনের কারণে এই অগ্রযাত্রা আমরা কোনোভাবেই ব্যাহত হতে দিতে পারি না এবং দেব না।

অন্তর্বর্তী সরকার আরো জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচন ও গণভোট কেবল রাজনৈতিক অনুশীলন নয়; এগুলো একটি গুরুতর জাতীয় অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে সেই স্বপ্নের সঙ্গে, যার জন্য শহীদ শরীফ ওসমান হাদি তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার আত্মত্যাগ ও স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে হলে সংযম, দায়িত্বশীলতা এবং ঘৃণা প্রত্যাখ্যানের প্রতি অবিচল অঙ্গীকার প্রয়োজন।

সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর হামলা মানেই সত্যের ওপর হামলা। আমরা আপনাদের পূর্ণ ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিচ্ছি।


শাহবাগে বিক্ষোভ : হাদি হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে ছাত্র-জনতার ঢল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজেস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই শাহবাগ এলাকায় মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুরের পরে ছাত্র-জনতার ঢল নামে সেখানে। এই বিক্ষোভ সমাবেশেই শাহবাগ মোড়ে জুমার নামাজ আদায় করা হয়। নামাজ শেষে মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ ঘোষণা করা হয়।

এসময় আন্দোলনের কারণে শাহবাগ মোড়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েমের ঘোষণায় শাহবাগে শুরু হয় আধিপত্যবাদবিরোধী সমাবেশ। মৎস্য ভবনমুখী সড়কে ডাকসু সদস্যরা একটি ট্রাকের ওপর অবস্থান নিয়ে নানা প্রতিবাদী স্লোগান দেন। পাশাপাশি জুলাই ভাস্কর্যের পাদদেশে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সদস্যদেরও বিশাল অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের ‘আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি লড়াই করে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছেন। তারা হাদি হত্যার বিচার এবং ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।

বিক্ষোভকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, ওসমান হাদির লাশ ঢাকায় পৌঁছানো পর্যন্ত তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

এসময় ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাই হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বো না। আমাদের এ অবরোধ কর্মসূচি চলমান থাকবে।’ তিনি হাদির হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন।

ডাকসু নেতা এবি জুবায়ের বলেন, শহীদ শরিফ ওসমান হাদি কোনো সহিংসতার পথে বিশ্বাসী ছিলেন না। মেধা, মনন ও জ্ঞানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলাই ছিল তার আদর্শ। জুবায়ের আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের উসকানি বা সহিংসতায় না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণ ও সংগঠিতভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

এর আগে জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে শাহবাগে এসে সমাবেশে যোগ দেন।

গত ১২ ডিসেম্বর রিকশা আরোহী হাদি মোটরসাইকেলে থাকা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওই দিন রাতেই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।


সন্ধ্যায় দেশে ফিরবে ওসমান হাদির মরদেহ, কড়া নিরাপত্তায় ঢাকা বিমানবন্দর

আপডেটেড ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৬:২৩
নিজেস্ব প্রতিবেদক

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা শরিফ ওসমান হাদি। তার মরদেহ আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছাবে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শহীদ ওসমান হাদিকে বহনকারী বিমানটি আজ সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার এই অকুতোভয় বীরকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে এবং গ্রহণ করতে এক বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে বিমানবন্দর থেকে শাহবাগগামী রাস্তার দুই পাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেখান থেকে শহীদ ওসমান হাদির মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে নিয়ে আসা হবে।

ফ্লাইট ট্র্যাকার সাইটে জানা যায়, হাদির কফিন বহনকারী উড়োজাহাজটি সিঙ্গাপুরের স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তিনি।

মোটরসাইকেলে এসে দুজন তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানা যায়, গুলি ওসমান হাদির মাথার ডান দিক থেকে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে।

এই অবস্থার মধ্যেই পরিবারের ইচ্ছায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সবশেষ ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয় ওসমান হাদিকে। সেখানে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।


হাদির মৃত্যু ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ : জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা: রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি হাদির মৃত্যুকে দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিসরের জন্য ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ বলে উল্লেখ করেন।

ভাষণের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি ‘অত্যন্ত হৃদয়বিদারক একটি সংবাদ’ নিয়ে দেশবাসীর সামনে হাজির হয়েছেন। তিনি জানান, সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান টেলিফোনে তাঁকে এই সংবাদটি জানিয়েছেন।

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের এই অমর সৈনিককে মহান রাব্বুল আলামিন শহিদ হিসেবে কবুল করুন—এই দোয়া করি।’ তিনি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত স্ত্রী, পরিবার, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে ঘোষণা দেন, শহিদ ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে। পাশাপাশি তাঁর অকাল মৃত্যুতে আগামী শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। ওই দিন দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

ভাষণে তিনি আরও বলেন, আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা দেশের প্রতিটি মসজিদে শহিদ ওসমান হাদির রূহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

সিঙ্গাপুর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তারা হাদির চিকিৎসায় ‘অত্যন্ত আন্তরিকতা ও পেশাদারিত’ দেখিয়েছে। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণানের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন তিনি, যিনি একই সঙ্গে একজন চিকিৎসক।

হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’ এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ভাষণে ওসমান হাদিকে ‘প্রতিবাদের অনন্য প্রতীক’ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি দেশপ্রেম, ধৈর্য ও দৃঢ়তার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। একই সঙ্গে তিনি দেশবাসীর প্রতি ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্ত পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ওসমান হাদি ছিলেন পরাজিত শক্তি ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের শত্রু।’ তাঁর কণ্ঠ স্তব্ধ করে ভয় দেখানোর অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর ভাষায়, ভয়, সন্ত্রাস কিংবা রক্তপাতের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।

গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, শহিদ হাদি ছিলেন এই প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখার ইচ্ছা তাঁর ছিল। তিনি বলেন, ‘তাঁর এই মহতী ইচ্ছা অপূর্ণ রয়ে গেল।’

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই শোকের মুহূর্তে আসুন, আমরা শহিদ শরিফ ওসমান হাদির আদর্শ ও ত্যাগকে শক্তিতে পরিণত করি। ধৈর্য ধারণ করি, অপপ্রচার ও গুজবে কান না দিই এবং যে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকি। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চান, তাদের ফাঁদে পা না দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে অবিচলভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এটাই হবে শহিদ হাদির প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।সূত্র : বাসস


জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কেউ আটকে রাখতে পারবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশের জনগণ যখন নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে তখন কেউ বাধা দিয়ে নির্বাচন আটকে রাখতে পারবে না। নির্বাচন ভালোভাবেই হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলার ৫টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন ও এবং ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে রাজদিয়া আব্দুল জব্বার পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

এ সময় তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যদি প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়ে সহাবস্থানে থাকে তাহলে দেশ ও জনগণের জন্য ভালো হবে।’

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গণমাধ্যম কর্মীদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানান।

এদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় ওই ঘটনার মূলহোতা গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘মূল আসামি গ্রেপ্তার হয়নি সত্যি। তবে তার সহযোগী যারা ছিল তারা গ্রেপ্তার হয়েছে।’

এর আগে তিনি সিরাজদীখান কুসুমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন, কুসুমপুর উচ্চবিদ্যালযের চার তলা একাডেমিক ভবন, ইছাপুরা সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের বিদ্যমান একাডেমিক ভবনের ওপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, বিক্রমপুর কুঞ্জবিহারী সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবন ও রাজদিয়া আব্দুল জাব্বার পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক সৈয়দা নুরমহল আশরাফী ও পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম উপস্থিত ছিলেন।


রাজধানীর হোস্টেলে ঝুলছিল এনসিপি নেত্রীর মরদেহ  

* হতাশা থেকে আত্মহত্যা, ধারণা স্বজনদের * আত্মহত্যা হিসেবে দেখতে রাজি নই। এটা খুন: এনসিপির নেতা রেজা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর জিগাতলার একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম জান্নাত আরা রুমি (৩০)। তিনি ধানমন্ডি থানা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলায়। তার বাবা জাকির হোসেন।

এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রেজা ফেসবুক পোস্টে জানান, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের হুমকি ও সাইবার বুলিংয়ের কারণে জান্নাত আরা রুমি আত্মহত্যা করেছেন। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, এটি আত্মহত্যা নয় খুন।

হাজারীবাগ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এনসিপির নেত্রী জান্নাত আরা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তিনি জিগাতলার ওই ছাত্রী হোস্টেলের একটি কক্ষে একা থাকতেন।’

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে খবর পেয়ে পুলিশ ওই হোস্টেলে যায়। ওসি বলেন, ‘পরিচারিকা ডাকাডাকির পর দরজায় ধাক্কাধাক্কি করেন। এ সময় হার্ডবোর্ডের দরজার ছিটকানি খুলে যায়। পরে পুলিশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় জান্নাত আরার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।’

একই থানার উপপরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান জানান, রুমীর বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর বাসস্ট্যান্ডে। বাবার জাকির হোসেন। রুমী ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নার্সিংয়ে পড়ালেখা শেষ করেছেন। এরপর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করছিলেন। তবে বর্তমানে কোথায় চাকরি করতেন, নাকি বেকার ছিলেন তা জানাতে পারেননি তিনি।

তবে রুমীর চাচাতো ভাই মেহেদী হাসান জানান, জিগাতলার ওই বাসার ছাত্রী হোস্টেলে থাকতেন রুমী। তার দুবার বিয়ে হয়েছিল। দুই সংসারই ভেঙে গেছে। দুই সংসারে দুটি সন্তানও রয়েছে রুমীর। দুই সন্তান বাবার কাছে থাকে।

তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি রুমীর রুমমেট বাড়িতে গিয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে একাই ছিলেন রুমী। তবে একই ফ্ল্যাটে পাশের রুমে অন্য রুমমেটরা ছিলেন। রাতে গৃহকর্মী পঞ্চম তলায় তাদের ফ্ল্যাটের সামনে গেলে দরজা খোলা দেখতে পান এবং ভেতরে আলো জ্বলতে দেখেন। এরপর উঁকি দিলে রুমীকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে তিনিই সবাইকে ডেকে তোলেন বলে শুনেছি।’

রুমীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তার স্বজনরা বলেন, ‘সাংসারিক বা পারিবারিক বিষয়ে হতাশা থেকে এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন রুমী। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিস্তারিত তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানান তারা।

এদিকে জান্নাত আরার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট দেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রেজা। সেখানে তিনি জানান, গত মাসে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়ের দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জিয়ার কবর খুঁড়তে চাওয়া রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একজনকে পিটিয়ে পুলিশের কাছে দিয়েছিলেন জান্নাত আরা। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ জান্নাত আরাকে সাইবার বুলিং, হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছিলেন বলে তারেক রেজা তার পোস্টে জানান। ওই পোস্টে তারেক রেজা আরও লেখেন, এ কারণে জান্নাত আরা রাতে আত্মহত্যা করেছে।

ফেসবুকে দেওয়া ওই পোস্টে তারেক রেজা আরও লিখেছেন, ‘এটাকে আমরা আত্মহত্যা হিসেবে দেখতে রাজি নই। এটা খুন। যারা আমার বোনের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে, তাদের জীবন আমরা শান্তিতে কাটাতে দেব না।’


স্ত্রী-সন্তানসহ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।

অভিযোগ অনুযায়ী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তার দায়িত্বকালীন সময়ে অসাধু উপায় ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ প্রায় ২২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেন ও দখলে রাখেন।

এছাড়া তদন্তে দেখা যায়, তিনি নিজের নামে পরিচালিত ৯টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে মোট ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৩ টাকা লেনদেন করেছেন।

এ সব অর্থকে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ উৎস গোপন ও রূপান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে শাফি মোদ্দাছির খান জ্যোতি এবং মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খানকেও আসামি করা হয়েছে।

তদন্ত অনুযায়ী, তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ নামে বাড়ি নির্মাণ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ অপরাধলব্ধ অর্থের অবৈধ উৎস গোপনে সহায়তা করেন।

দুদকের তদন্তে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মোট নীট সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ৫৪৮ টাকা, যার বিপরীতে বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া গেছে মাত্র ৫ কোটি ৫৮ লাখ ৮১ হাজার ৩৮৬ টাকা।

এ ঘটনায় আসাদুজ্জামান খান কামাল ও অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় চার্জশিট দাখিল করেছে কমিশন।


banner close