বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রার্থী বেশি,প্রতিদ্বন্দ্বী কম

ফাইল ছবি
আপডেটেড
২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:১৪
তানজিমুল নয়ন
প্রকাশিত
তানজিমুল নয়ন
প্রকাশিত : ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩২টি দল। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ৭৪৭ জন। সে হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যয়নপত্র নিয়ে নির্বাচনে উপস্থিত ১৯৬৬ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্রদের মধ্যে অন্তত ৪০০ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন। তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, নির্বাচনে আসা বড় দল আওয়ামী লীগের মূল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাইরে অন্যদলগুলোর বেশির ভাগ প্রার্থীই আসনগুলোর মানুষের কাছে অচেনা। প্রায় প্রতিটি আসনেই নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন এমন অনেক অচেনা মুখ যাদের প্রার্থিতা পেতে সমস্যা না হলেও নির্বাচনী লড়াইয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে পরিচিত হতেই পার হয়ে যাবে প্রচারণার বেশির ভাগ সময়। ফলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচনে প্রার্থী আছে অনেক বেশি, কিন্তু, প্রতিদ্বন্দ্বী কম।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৩০০ আসনের বিপরীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের (নৌকা) ৩০৩ জন, জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) ৩০৪ জন, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১৮ জন, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) ১৫১ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি (আম) ১৪২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) ১১৬ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (মশাল) ৯১ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) ৪৭ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১৩ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৮ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ১৩ জন, গণফ্রন্ট (মাছ) ২৫ জন, গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) ৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) ৪৫ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) ২০ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩৪ জন, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১২ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ৩৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা) ১৪ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) ৮২ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম (নোঙর) ৪৯ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট- বিএনএফ (টেলিভিশন) ৫৫ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৭৪ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ- বিএমএল (হাত-পাঞ্জা) ৫ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ (কুঁড়েঘর) ৬ জন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মই) একজন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (রিকশা) একজন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (খেজুর গাছ) একজন এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন) দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

এদিকে মনোনয়ন জমার শেষ দিনেই ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের সময়সীমা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে বিএনপিসহ যে দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে তাদের আর মত পাল্টে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসার দৃশ্যমান কোনো সুযোগ নেই। আন্দোলনরত দলগুলোও অবশ্য আগেই এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে।

ফলে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে যেসব প্রার্থী টিকে যাবেন তারাই থাকবেন নির্বাচনী দৌড়ে। তবে প্রতিটি আসনে ভোটের লড়াইয়ে যারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগেরই দলের নাম সাধারণ মানুষ জানে না। আর দল অচেনা বলে প্রার্থীরাও অচেনা। ফলে তাদের ধারণা নির্বাচনী লড়াইয়ে আসলে টিকে থাকবেন বড় দলের পরিচিত মুখগুলো। এর মধ্যে শাসক দলের মার্কা নিয়ে লড়াই করা প্রার্থীরা যেমন আলোচনায় থাকবেন, তেমনই অনেক আসনেই তাদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমাতে পারেন নির্বাচনে আসা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কেননা, দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশির ভাগই স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এবং তাদের মোটামুটি ভোট ব্যাংক অথবা এলাকাবাসীকে প্রভাবিত করার সক্ষমতা রয়েছে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ৪০০ জনই আওয়ামী লীগের।
যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত কয়েক দিনের মতো গতকালও বলেছেন, দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঢালাওভাবে নির্বাচন করতে পারবেন না। এ ছাড়া ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সম্ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন জোটের এমন প্রার্থীরাই কেবল থাকবেন বিবেচনায়। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এর ফলে এটা স্পষ্ট যে, জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ যাদের মনোনয়ন দিয়েছে তাদেরও রণে ভঙ্গ দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে।

তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে এবার দলীয় মার্কার বাইরে দলীয় প্রার্থীদের স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়ায় নির্বাচনে আসা প্রার্থীদের কতজন আবার দল চাইলে নির্দেশ মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন সেটাও আছে দেখার বিষয়।

তবে এই আলোচনার বাইরে থেকে যাচ্ছে বেশির ভাগ প্রার্থী যারা বিভিন্ন দল থেকে নির্বাচনে এলেও জনগণের কাছে নিজের দল, দলীয় প্রতীক এবং নিজের পরিচয় প্রকাশ করার সুযোগ পাবেন। তবে প্রতিটি আসনে স্থানীয় ভোটারদের কাছে তারা এখনো অচেনা এবং নতুন মুখ হিসেবে বিবেচিত।

যেমন দল হিসেবে এবারই প্রথম নির্বাচন করছে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। এসব দলের বেশির ভাগ প্রার্থী নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের কাছে নতুন পরিচয়ে উপস্থিত হবেন। অনেকে আবার খুব বেশি পরিচিত নন। একইভাবে তাদের নির্বাচনী প্রতীক যথাক্রমে সোনালী আঁশ, নোঙর ও একতারা চেনাতেও এবার তাদের বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হবে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনএমের প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ৬ জন এবং তৃণমূলের প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ৫ জন।

এদিকে, গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদের বলেছেন, বিএনপির ১৫ কেন্দ্রীয় নেতাসহ সাবেক ৩০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে কাদের সিদ্দিকী, লতিফ সিদ্দিকী, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো নেতাও আছেন। আবার আগে বিএনপিতে প্রভাব ছিল দলটির এমন সাবেক নেতারাও আছেন নির্বাচনে। এদের মধ্যে তৈমূর আলম, সমশের মবিন চৌধুরীর নাম উল্লেখযোগ্য।

তবে এদের বাইরে নির্বাচনের মাঠে থাকা বেশির ভাগ প্রার্থীই অচেনা। এ বিষয়ে গাজীপুর-৪ আসনের একজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার দল এলাকায় তেমন পরিচিত নয়। দলের প্রচার চালাতে ও এলাকার মানুষের কাছে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে এবার ভোট করতে আসা। আমিও জানি নির্বাচনে জয়লাভ করার অবস্থান এখনো আমার বা আমার দলের তৈরি হয়নি। তবে এক দিনে তো কিছুই হয় না। আমাদের দলের আদর্শ ও কর্মসূচি দেশের মানুষ ও এলাকার মানুষকে জানাতে আমরা নির্বাচনে এসেছি।’

অন্যদিকে লালমনিরহাট-৩ আসনে মনোনয়ন জমা দেয়া প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সদর আসনে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদ্য পদত্যাগকারী সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন বক্কর, জাতীয় পার্টি থেকে জাহিদ হাসান, তৃণমূল বিএনপি থেকে শামীম আহম্মেদ চৌধুরী, জাকের পার্টি থেকে সকিউজ্জামান মিয়া, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল থেকে আশরাফুল আলম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে আবু তৈয়ব মো. আজমুল হক পাটোয়ারী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) থেকে শ্রী হরিশ চন্দ্র রায় মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তবে এবার তিনি এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ফলে এ আসনে নির্বাচনে অংশ নেয়া সব প্রার্থীই নতুন এবং নতুন একজন সংসদ সদস্য পাবে লালমনিরহাট সদরবাসী। তবে নতুন হলেও জেলা ও শহরের রাজনীতিতে পুরনো মুখ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান। ছাত্ররাজনীতি করায় জাবেদ হোসেন বক্করও সেখানে পরিচিত মুখ। জাকের পার্টি ও জাসদের প্রার্থীকেও অনেকে চেনেন। তবে সাম্যবাদী দল, এনপিপির প্রার্থীর মতো জাতীয় পার্টির প্রার্থীও এলাকার সবার চেনা মুখ নন। ফলে যে আসন থেকে জাতীয় পার্টি বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে সেখানে নতুন মুখ দেয়ায় মাঠের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন এলাকার অনেক বাসিন্দা।

বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসন বিশ্লেষণ করলে। দৈনিক বাংলার খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনার এই ৬টি আসনের জন্য সেখানে ৫৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাদের অধিকাংশেরই রাজনীতিতে তেমন কোনো পরিচিতি নেই। হঠাৎ করেই তারা কেন সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী হলেন, এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তরও দেননি অধিকাংশ প্রার্থী।

খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনীত ৬ জন প্রার্থী, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ২ জন এবং জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। বাকি ৪৪ জন প্রার্থী কখনো রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় ছিলেন না।

খুলনা প্রতিনিধির বিশ্লেষণ অনুযায়ী খুলনা-১ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৬ জন। তারা হলেন, জাকের পার্টির মো. আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল, জাতীয় পার্টির কাজী হাসানুর রশিদ, তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় ও আবেদ আলী শেখ।

এদের মধ্যে ননী গোপাল মণ্ডল ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। রাজনীতিতে তার পরিচিতি রয়েছে। তবে বাকি চারজন রাজনীতিতে একেবারেই অপরিচিত। তারা প্রত্যেকেই এবার প্রথম সংসদ নির্বাচন করছেন। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সাবেক সচিব।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করছি। আমাকে ডামি প্রার্থীও বলা যাবে। এটা দলীয় নির্দেশেই হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল বলেন, ‘দল আমাকে আবারও সুযোগ দিয়েছে। আমি দলের সম্মান রাখব বলে আশাবাদী।’

তবে বাকি চার প্রার্থীর তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। জাতীয় পার্টীর কাজী হাসানুর রশিদ ও তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিকের কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেও কোনো উত্তর মেলেনি।

আর জাকের পার্টি মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলেছে, তাই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি।’

অন্যদিকে খুলনা-২ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, গণতন্ত্র পার্টির মো. মতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার, জাকের পার্টির ফরিদা পারভিন, ইসলামী ঐক্যজোটের হিদায়েতুল্লাহ, জাতীয় পার্টির মো. গাউসুল আজম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বাবু কুমার রায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমান।

এদের মধ্যে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর রাজনৈতিকভাবে পরিচিতি রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তবে বাকিদের আগে কখনো রাজনৈতিক মাঠে দেখা যায়নি।

কেন প্রার্থী হয়েছেন- এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার বলেন, ‘অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন জমা দেয়া হচ্ছে, তাই আমরাও দিচ্ছি।’

খুলনা-৩ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের এস এম কামাল হোসেন, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইজার আহমেদ ও ফাতেমা জামান সাথী।

এদের মধ্যেও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। তিনি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তিন বারের সংসদ সদস্য ও দুই বারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে সরিয়ে তাকেই আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। তবে ওই আসনেরও বাকি চারজনের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই।

খুলনা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন ১৪ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী, জাকের পার্টির শেখ আনছার আলী, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এস এম আজমল হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. ফরহাদ আহমেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মোস্তাফিজুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা, ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দীন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জুয়েল রানা, এম ডি এহসানুল হক, মো. রেজভী আলম, এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা, আতিকুর রহমান ও এইচ এম রওশান জমির।

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী বর্তমান সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি জয়ী হয়েছিলেন।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। তিনি ওই আসনের তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার আপন ভাই।

তিনি বলেন, এলাকার মানুষের দোয়া নিয়ে মাঠে নেমেছি। জয়-পরাজয় এলাকার মানুষই নির্ধারণ করবেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই আসনে আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এলাকার ভোটাররা বলছেন, বাকি ১২ জন প্রার্থীদের নাম খুব একটা শোনেননি তারা। কেউ কেউ একেবারেই অপরিচিত।

খুলনা-৫ আসনের জন্য মনোনয় জমা দিয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির মো. শহীদ আলম, জাকের পার্টির সামাদ সেখ, আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ সেলিম আকতার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের এস এম এ জলিল, ইসলামী ঐক্যজোটের তরিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন।

এদের মধ্যে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ একাধিক বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী। এ ছাড়া আকরাম হোসেন ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই আসনেও আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা। বাকি যারা প্রার্থী হয়েছেন এলাকার রাজনীতিতে তাদের তেমন কোনো পরিচিতি নেই বলে জানা গেছে।

খুলনা-৬ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১২ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মো. রশীদুজ্জামান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আবু সুফিয়ান, জাকের পার্টির শেখ মর্তুজা আল মামুন, জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মির্জা গোলাম আজম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এস এম নেওয়াজ মোরশেদ, তৃণমূল বিএনপির গাজী নাদীর উদ্দীন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম রাজু, গাজী মোস্তফা কামাল, জি এম মাহবুবুল আলম, মো. মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর ও মো. অহিদুজ্জামান মোড়ল।

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. রশীদুজ্জামানের কোনো দলীয় পদ নেই। তিনি একসময় পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছিলেন। তবে তাকেই মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে ক্ষমতাসীন দল। ওই আসনে রাজনৈতিকভাবে পরিচিত রয়েছে জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধুর। তিনি আগেও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বাকি প্রার্থীদের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। এলাকার সবার কাছে পরিচিত মুখও নন অনেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ আসনেই ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের স্থানীয়রা তেমন একটা চেনেন না। তবে বিরোধীদের এক অংশ নির্বাচন বর্জন করায় রাজনীতির নতুন সমীকরণ মেলাতে ছোট দলগুলোই নির্বাচনে হতে যাচ্ছে বড় দলগুলোর সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনীযুদ্ধ পার হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।

জাসদের মাঠপর্যায়ের এক রাজনীতিবিদ জসিম মণ্ডল বলেন, ‘নির্বাচন একটা বড় খেলা। এখানে সবাই নামে নিজ নিজ সমীকরণ মেলানোর জন্য। রাজনৈতিক দলগুলোর সমীকরণ হয় এক ধরনের, আবার প্রার্থীর সমীকরণ হয় আরেক ধরনের। সবাই নির্বাচনে জয়ী হতে যেমন অংশ নেয় না তেমনই কেউ কেউ নির্বাচনে যায় অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করতে। আবার অনেকের কাছে ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণই বড় কথা।’ জয়-পরাজয়ের চেয়েও বড় বিষয় এ সময় পোস্টারিং করে নিজের ছবি ও পরিচিতি পুরো এলাকার মানুষকে দেখানো যায়। এটাও বা কম কিসে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরই আছে নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার। তাই কটা টাকা খরচ করে অনেকেই পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ নেয়। এর ফল তো অসীম-সারাজীবন নানাভাবে এর সুফল মেলে। যারা রাজনীতিতে আছেন, কেবল তারাই বোঝেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারার গুরুত্ব।


শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য রাখেন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শিক্ষার্থীদের নতুন এক বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত নতুন কিছু গড়ার সক্ষমতা রাখি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়।

সমাবর্তন ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা চাইলে আমাদের মতো করে এক নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি।’ তবে, তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই স্বপ্ন থাকা দরকার- কেমন পরিবেশ ও সমাজ তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেই সম্পর্কে।

গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পটভূমি স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে যে সভ্যতা চলছে তা একটি ধ্বংসাত্মক অর্থনীতির সভ্যতা।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে অর্থনীতি তৈরি করেছি তা মানুষের জন্য নয়, বরং ব্যবসার জন্য।’ তিনি উল্লেখ করেন, ব্যবসাকেন্দ্রিক এই সভ্যতা আত্মঘাতী এবং তা টিকবে না।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দীর্ঘদিন পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আনন্দিত। তিনি স্মরণ করেন, ১৯৭২ সালে চবিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।

তিনি ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ এবং কীভাবে গ্রামীণ ব্যাংক চট্টগ্রামে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের সহায়তা করতে গঠিত হয়েছিল তা তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল চবির অর্থনীতি বিভাগে।

অনুষ্ঠানে, চবি কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ইউনূসকে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্য সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার (ডি লিট) উপাধিতে ভূষিত করে।

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার অধ্যাপক ইউনূসের হাতে ডি লিট সনদ তুলে দেন।

সমাবর্তনে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফয়েজসহ অন্যান্যরাও বক্তব্য রাখেন।

চবি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

চবি আজ দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সমাবর্তনের আয়োজন করে, যেখানে ২২,৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে সনদ প্রদান করা হয়।


দাবি আদায় না-হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান করছেন জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

দাবি আদায় না-হওয়া পর্যন্ত রাজপথে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে কাকরাইল মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান করছেন।

বুধবার (১৪ মে) বিকাল সাড়ে তিনটার সময় এই ঘোষণা দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বলেন, আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো ঘাতক পুলিশের বিচার করতে হবে।

এসময় জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, ‘সরকারের এই কর্মকাণ্ডে আমরা মর্মাহত। আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর চালানো হামলায় শতাধিক আহত হয়েছেন। পুলিশের এই হামলার বিচার করতে হবে।’

অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা, ‘জেগেছে রে জেগেছে, জবিয়ান জেগেছে’; ‘আমার ভাই অনাহারে যমুনা কি করে’; ‘এসেছি যমুনায় যাবো না খালি হাতে’; ‘আমার ভাই আহত কেন ইন্টেরিম জবাব চাই’ এসব স্লোগান দেন।

এদিন বিকাল ৩টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শেদ উপস্থিন হন।

এদিন, বেলা ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চ শুরু করেন জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এতে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এই ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।

লং মার্চটি মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের ক্রসিং মোড়ে গেলে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, গরম পানি নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন, সহকারী প্রক্টর নাইম সিদ্দিকি, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমন প্রমুখ।

পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসে গুরুতর আহত হয়ে অন্তত ৩০ জন জবি শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘আমার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমার সহকারী প্রক্টরের ওপরও পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচারণ করেছে। এর বিচার না-হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।’

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসিতে যান। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।

আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হলো—জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।


চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও সিএমপিতে চালু হচ্ছে অনলাইন জিডি সেবা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

চট্টগ্রাম রেঞ্জের সকল জেলার সকল থানা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সকল থানায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে চালু হচ্ছে অনলাইন জিডি সেবা।

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার আলোকে পুলিশি সেবা সহজীকরণের অংশ হিসেবে থানায় না এসে ঘরে বসেই সকল ধরনের জিডি অনলাইনে করার সুবিধা চালু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে গত ১৫ এপ্রিল ২০২৫ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল থানা এবং চাঁদপুর জেলা পুলিশের সকল থানায় অনলাইন জিডি সেবা চালু হয়েছে।

ইতোপূর্বে অনলাইনে শুধুমাত্র হারানো এবং প্রাপ্তি সংক্রান্ত জিডি করা যেত। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রেঞ্জ ও মেট্রোতেও অনলাইন জিডি সেবা চালু হবে।

অনলাইন জিডি সেবা পেতে গুগল প্লে স্টোর থেকে 'অনলাইন জিডি' অ্যাপ ডাউনলোডের পর রেজিস্ট্রেশন করে এ সেবা পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে একাধিকবার রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। রেজিস্ট্রেশন অথবা অনলাইন জিডি করতে কোনো ধরনের অসুবিধা হলে ০১৩২০০০১৪২৮ হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। হটলাইন নম্বরটি ২৪ ঘণ্টা চালু আছে।

বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা দ্রুততম সময়ে ও সহজে পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।


দুদকের মামলায় জামিন পেলেন জোবাইদা রহমান

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা ওই মামলায় ৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ থেকে খালাস চেয়ে করা আপিল আবেদনও শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত।

বুধবার (১৪ মে) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জোবাইদা রহমানের আইনজীবী কায়সার কামাল। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জোবাইদা রহমানকে জামিন দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এর আগে, গতকাল (মঙ্গলবার) এই আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে ৫৮৭ দিনের বিলম্ব মার্জনা চেয়ে জোবাইদা রহমানের করা আবেদন মঞ্জুর করেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। একইসঙ্গে আপিল দায়েরের অনুমতি দেওয়া হয়। পরে গতকালই এই মামলায় খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করা হয়। এই আপিলের সঙ্গে জামিনের আবেদনও করেন জোবাইদা রহমান।

আদালতে জোবাইদা রহমানের পক্ষে আজ (বুধবার) শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহাজান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে আইনজীবী আসিফ হাসান শুনানি করেন।

পরে আইনজীবী কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। এ মামলার আপিল শুনানির জন্য যাবতীয় নথিও তলব করা হয়েছে।’

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। পরের বছর তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

পরে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট করা এই মামলার রায় দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান। ওই রায়ে তারেক রহমানকে ৯ বছর কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

পরে এই মামলায় জোবাইদা রহমানের সাজা স্থগিত করে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে সাজা স্থগিত চেয়ে জুবাইদা রহমানের করা আবেদন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলায় তাকে দেওয়া দণ্ডাদেশ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন জুবাইদা রহমান। এরপর থেকে লন্ডনেই ছিলেন তিনি।

সেখান থেকে ৬ মে শাশুড়ি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৭ বছর পর দেশে ফেরেন জুবাইদা রহমান।

দেশে ফিরে আপিল করার জন্য ৫৮৭ দিন বিলম্ব মার্জনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। আবেদনটি মঙ্গলবার কার্যতালিকায় উঠলে সেটি মঞ্জুর করেন আদালত।


প্রধান উপদেষ্টাকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বুধবার সম্মানসূচক ডক্টরেট অফ লিটারেচার (ডি.লিট) ডিগ্রি প্রদান করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদানের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করেছে।

আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাঁকে এই ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে চবি উপাচার্য ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার অধ্যাপক ইউনূসের হাতে ডি লিট ডিগ্রির সনদ তুলে দেন।

এ সময় চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।


ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চললেও কূটনৈতিক উত্তেজনা এখনো থামেনি। এবার পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় এক কূটনীতিককে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করেছে ইসলামাবাদ। কূটনীতির ভাষায় ‘পারসোনা নন গ্রাটা’র অর্থ হচ্ছে ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’। ওই কূটনীতিককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসলামাবাদ থেকে এএফপি এই খবর জানায়।

এদিকে বুধবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এক প্রতিবেদনে ওই কূটনীতিকের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিধিবহির্ভূত কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের এক কর্মীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত জানাতে গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল।

এর আগে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ওই কর্মকর্তা ভারতে তাঁর সরকারি অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন। তাই তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চার দিনের সামরিক সংঘাতের পর চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই দুই প্রতিবেশী দেশ আবারও পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিল।


জবি শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

আবাসন ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে যাত্রার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এবং জল-কামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।

বুধবার (১৪ মে) দুপুর পৌঁনে ১২টার দিকে পূর্বঘোষিত ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি অনুযায়ী সেগুনবাগিচার কাকরাইল মোড়ে পৌঁছালে শিক্ষার্থী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে।

কাঁদানে গ্যাসে আহত শিক্ষার্থী সামিউল রহমান বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক দাবির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। আমার উপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে।’

এর আগে, আজ (বুধবার) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে যমুনা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন জবি শিক্ষার্থীরা। সোয়া ১২টার দিকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট মোড়ে পৌঁছালে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। তবে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সামনে এগিয়ে যান।

তার আগে, গতকাল (মঙ্গলবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে জবির বাজেট বৃদ্ধি ও আবাসন সংকট নিরসন বিষয়ে আলোচনা হলেও দাবি মানা হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা।

এরপর ‘জবি ঐক্য’ নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নতুন এক প্লাটফর্ম থেকে তিন দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা অভিমুখে লং মার্চের ঘোষণা দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো—আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, জবির ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে করা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।

আন্দোলনে উপস্থিত রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোশাররাফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলাল হুসাইন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল, সদস্যসচিব সামসুল আরেফিন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আসাদুল ইসলাম, সেক্রেটারি মো. রিয়াজুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সভাপতি আব্দুল ওয়াহিদ, সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আকাশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি একে এম রাকিব সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।


চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম সফরের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বন্দরের সক্ষমতা সম্পর্কে ব্রিফিং করেন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বন্দরে উন্নীত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বের খ্যাতিসম্পন্ন বন্দর ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

প্রধান উপদেষ্টার চট্টগ্রাম সফরের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বন্দরের সক্ষমতা সম্পর্কে তাঁর কাছে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ।’

তিনি বলেন, ‘যদি সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলাতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরই আমাদের আশা। এটি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’

চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। কিন্তু যদি হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়, কোনো ডাক্তারই তা আর ভালো করতে পারে না। তাই একে বিশ্বমানের করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বন্দর ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বৈশ্বিক পর্যায়ের শীর্ষ সংস্থাগুলোকে আগেও ডাকা হয়েছিল, কিন্তু কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই হৃৎপিণ্ডকে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এজন্য আমি নেপাল ও ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) কথা বলেছি। যদি তারা এতে যুক্ত হয়, তারা উপকৃত হবে, আমরাও হবো। যারা যুক্ত হবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে।’

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নিজের শৈশবস্মৃতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সফরের জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম। চট্টগ্রাম বন্দর আমার জন্য নতুন কিছু নয়। আমি শৈশব থেকেই এর সঙ্গে পরিচিত। এটি অনেক বদলেছে, তবে দুঃখের বিষয় হলো পরিবর্তন ধীর গতির। আমি যখন সুযোগ পেলাম, তখন থেকেই ভেবেছি কী করা যায়।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে, আর আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। কেউ গুরুত্ব দেয় না। এজন্য আমি পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছি। আমি বলেছি বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব বিশ্বের শীর্ষ অপারেটরদের হাতে তুলে দিতে। আশা করি সবাই একদিন বুঝবে।’

নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রধান উপদেষ্টার বন্দর উন্নয়নের আগ্রহের প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আশেপাশে একাধিক টার্মিনাল নির্মাণ কনটেইনার জট কমাতে সাহায্য করবে। ‘আমি আশা করি আগামী ছয় মাসের মধ্যেই আপনি পরিবর্তন দেখতে পাবেন,’ বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বন্দর আধুনিকায়ন করার বিকল্প নেই।’

তিনি জানান, বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য এবং তার ৯৮ শতাংশ নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দিয়ে সম্পন্ন হয়।

মনিরুজ্জামান বলেন, প্রাকৃতিক কারণে ২০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। এ কারণে বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।


চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ সকালে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ সকালে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছেন।

এর আগে তিনি আজ সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম পৌঁছান। চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনের পাশাপাশি তিনি আজ সারাদিন বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।


ঢাবি ছাত্র সাম্য হত্যার ঘটনায় আটক ৩

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।

বুধবার (১৪ মে) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ মনসুর ইউএনবিকে জানান, ঘটনার পরপরই শাহবাগ থানার বেশ কয়েকটি টিম দুর্বৃত্তদের আটকের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। পরে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ওই তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে ওই তিনজন সাম্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তবে তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করেননি ওসি। এ ছাড়া, পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

গতকাল (মঙ্গলবার) দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন সাম্য।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঢাবি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এ সময় অন্য একটি বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি শাহরিয়ারকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান।

পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


আ. লীগ নিষিদ্ধ: মুক্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্র অবগত বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র থমাস টমি পিগোট। সব দেশে মুক্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত আইনি প্রক্রিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৩ মে) ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতামত জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।

পিগোট বলেন, ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনালে নেতাকর্মী ও দলের বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এ বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি।’

বাংলাদেশে কোনো একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করেনা বলেও জানান তিনি।

পিগোট আরও বলেন, বাংলাদেশসহ সব দেশকে আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানাই।

ভিন্ন আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের অংশীদারত্বকে গুরুত্ব দেই। এই অংশীদারত্ব আরও গভীর করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এদিকে, মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ নিষেধাজ্ঞা অপরিহার্য।

তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি কীভাবে আওয়ামী লীগ বিগত ১৫ বছরে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে, রাজনৈতিক পরিসরকে সংকুচিত করেছে এবং দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।’

আওয়ামী লীগের সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সৃষ্ট ক্ষত এখনো তাজা বলে মন্তব্য করেছেন শফিকুল আলম।


প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন

প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মত আজ সকালে নিজ জেলা চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মত আজ সকালে নিজ জেলা চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি আজ সকাল ৯টা ২২ মিনিটে শাহ্ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

প্রধান উপদেষ্টা আজ সারাদিন বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে জানান, প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পঞ্চম সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগদান করবেন। পাশাপাশি তার পৈতৃক বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামও পরিদর্শন করবেন।

এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা বন্দর পরিদর্শন করবেন এবং বন্দরের অভ্যন্তরে এনসিটি-৫ প্রাঙ্গণে একটি সভায় অংশ নেবেন। এরপর তিনি বন্দর ও জাহাজ চলাচল খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বাণিজ্য সংস্থার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সেখান থেকে যাবেন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে। সেখানে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করবেন। যা চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একটি অংশসহ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের বিশাল জনগোষ্ঠীর বহুল প্রতীক্ষিত সেতু।

আজাদ মজুমদার আরো জানান, প্রধান উপদেষ্টাকে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা এবং নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে হাটহাজারী সড়কের যানজট পরিস্থিতির বিষয়ে বিফ্র করবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের জমির কাগজপত্র কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করবেন।


জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভেঙে কেন দুই ভাগ করা হচ্ছে, ব্যাখ্যা দিলো সরকার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজস্ব খাতে বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কার ঘোষণা করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে এর পরিবর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি স্বতন্ত্র সংস্থা গঠন করা হচ্ছে—রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো রাজস্ব নীতি নির্ধারণ এবং প্রশাসনের কাজ পৃথক করা, যাতে দক্ষতা বাড়ানো যায়, স্বার্থের সংঘাত কমানো যায় এবং দেশের করভিত্তি সম্প্রসারিত করা যায়।

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

ব্যাখ্যায় বলা হয়, প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। তুলনামূলকভাবে, বৈশ্বিক গড় ১৬.৬ শতাংশ এবং মালয়েশিয়ায় এটি ১১.৬ শতাংশ। জনগণের উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হলে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত অন্তত ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে হবে।

এই লক্ষ্য অর্জনে এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমবর্ধমানভাবে এ বিষয়ে ঐক্যমত গড়ে উঠেছে যে একটি প্রতিষ্ঠানকে কর নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উভয় দায়িত্ব দেওয়া উচিত নয়—এ ধরনের ব্যবস্থা স্বার্থের সংঘাত তৈরি করে এবং অদক্ষতা বাড়ায়। বহু বছর ধরে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন যে, রাজস্ব আদায়কে অগ্রাধিকার দিয়ে নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে ন্যায্যতা, প্রবৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা উপেক্ষিত হয়েছে।

এনবিআরের দীর্ঘদিনের কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে:

স্বার্থের সংঘাত:
একই প্রতিষ্ঠান নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ফলে কর নীতিতে দুর্বলতা ও ব্যাপক অনিয়ম দেখা দিয়েছে। বর্তমানে কর সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জবাবদিহির কোনো কাঠামো নেই এবং তারা প্রায়ই কর ফাঁকিবাজদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে জনস্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে কর আদায়কারীরা ফাঁকিবাজদের সহায়তা করেন ব্যক্তিগত স্বার্থে।

কর আহরণকারীর কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য কোনো নিরপেক্ষ পদ্ধতি নেই এবং তাদের পদোন্নতি নির্ভর করে না নির্দিষ্ট কর্মক্ষমতা নির্দেশকের ওপর।

অদক্ষ রাজস্ব সংগ্রহ:
দ্বৈত দায়িত্ব পালনের কারণে নীতিনির্ধারণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গঠনে মনোযোগ বিভক্ত হয়েছে। এর ফলে করের আওতা সংকুচিত থেকেছে এবং রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভাবনার তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে।

দুর্বল শাসনব্যবস্থা:
এনবিআরে আইন প্রয়োগে অসঙ্গতি, বিনিয়োগ সহায়তায় দুর্বলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বল শাসনের ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে এবং আইনের শাসন দুর্বল হয়েছে।

প্রশাসনে দ্বৈততা:
বর্তমান কাঠামোতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব একইসঙ্গে এনবিআরেরও প্রধান হওয়ায় বিভ্রান্তি ও অদক্ষতা দেখা দিয়েছে, যা কার্যকর কর নীতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করেছে।

কর্মীদের হতাশা ও অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা:
এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ কর ও শুল্ক কর্মকর্তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হয়েছে, কারণ অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে তারা উপেক্ষিত হতে পারেন।

সংস্কার কীভাবে সহায়ক হবে:
নতুন কাঠামো এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে আরও স্পষ্ট ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো গড়ে তুলবে।

দায়িত্বের স্পষ্ট বিভাজন:
রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রণয়ন, করহার নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কর চুক্তি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ বাস্তবায়ন, অডিট ও পরিচালন তদারকি করবে। এই বিভাজন নিশ্চিত করবে যে, কর নির্ধারণকারী কর্মকর্তারা আর কর সংগ্রহের দায়িত্বে নেই, ফলে অপব্যবহারের সুযোগ কমবে।

দক্ষতা ও শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন:
প্রতিটি বিভাগ তার নিজস্ব কার্যক্রমে মনোযোগ দিতে পারবে, বিশেষায়িত জ্ঞান বাড়বে, স্বার্থের সংঘাত কমবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সততা উন্নত হবে।

করভিত্তি সম্প্রসারণ ও প্রত্যক্ষ কর জোরদার:
এই সংস্কার করের আওতা বাড়াবে, পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমাবে এবং উপযুক্ত পদে দক্ষ পেশাজীবীদের নিয়োগের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহকে আরও শক্তিশালী করবে।

উন্নয়নমুখী নীতিমালা:
একটি স্বতন্ত্র নীতিনির্ধারণ ইউনিট তথ্য-নির্ভর, ভবিষ্যতমুখী কৌশল প্রণয়ন করতে পারবে, যা শুধু স্বল্পমেয়াদি রাজস্ব লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে নয়।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি:
স্বচ্ছ, পূর্বানুমেয় নীতি এবং পেশাদার কর প্রশাসন বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হবে এবং বেসরকারি খাতের অভিযোগ হ্রাস পাবে।

এই কাঠামোগত সংস্কার কেবল একটি প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস নয়—এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ, যা একটি ন্যায্য, দক্ষ ও সক্ষম কর ব্যবস্থা গঠনের দিকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যা শক্তিশালী নীতিনির্ধারণ ও দুর্নীতিমুক্ত কর প্রশাসন বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা পূরণ এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে অপরিহার্য।


banner close