আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩২টি দল। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ৭৪৭ জন। সে হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যয়নপত্র নিয়ে নির্বাচনে উপস্থিত ১৯৬৬ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্রদের মধ্যে অন্তত ৪০০ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন। তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, নির্বাচনে আসা বড় দল আওয়ামী লীগের মূল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাইরে অন্যদলগুলোর বেশির ভাগ প্রার্থীই আসনগুলোর মানুষের কাছে অচেনা। প্রায় প্রতিটি আসনেই নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন এমন অনেক অচেনা মুখ যাদের প্রার্থিতা পেতে সমস্যা না হলেও নির্বাচনী লড়াইয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে পরিচিত হতেই পার হয়ে যাবে প্রচারণার বেশির ভাগ সময়। ফলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচনে প্রার্থী আছে অনেক বেশি, কিন্তু, প্রতিদ্বন্দ্বী কম।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৩০০ আসনের বিপরীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের (নৌকা) ৩০৩ জন, জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) ৩০৪ জন, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১৮ জন, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) ১৫১ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি (আম) ১৪২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) ১১৬ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (মশাল) ৯১ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) ৪৭ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১৩ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৮ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ১৩ জন, গণফ্রন্ট (মাছ) ২৫ জন, গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) ৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) ৪৫ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) ২০ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩৪ জন, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১২ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ৩৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা) ১৪ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) ৮২ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম (নোঙর) ৪৯ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট- বিএনএফ (টেলিভিশন) ৫৫ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৭৪ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ- বিএমএল (হাত-পাঞ্জা) ৫ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ (কুঁড়েঘর) ৬ জন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মই) একজন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (রিকশা) একজন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (খেজুর গাছ) একজন এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন) দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এদিকে মনোনয়ন জমার শেষ দিনেই ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের সময়সীমা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে বিএনপিসহ যে দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে তাদের আর মত পাল্টে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসার দৃশ্যমান কোনো সুযোগ নেই। আন্দোলনরত দলগুলোও অবশ্য আগেই এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে।
ফলে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে যেসব প্রার্থী টিকে যাবেন তারাই থাকবেন নির্বাচনী দৌড়ে। তবে প্রতিটি আসনে ভোটের লড়াইয়ে যারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগেরই দলের নাম সাধারণ মানুষ জানে না। আর দল অচেনা বলে প্রার্থীরাও অচেনা। ফলে তাদের ধারণা নির্বাচনী লড়াইয়ে আসলে টিকে থাকবেন বড় দলের পরিচিত মুখগুলো। এর মধ্যে শাসক দলের মার্কা নিয়ে লড়াই করা প্রার্থীরা যেমন আলোচনায় থাকবেন, তেমনই অনেক আসনেই তাদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমাতে পারেন নির্বাচনে আসা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কেননা, দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশির ভাগই স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এবং তাদের মোটামুটি ভোট ব্যাংক অথবা এলাকাবাসীকে প্রভাবিত করার সক্ষমতা রয়েছে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ৪০০ জনই আওয়ামী লীগের।
যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত কয়েক দিনের মতো গতকালও বলেছেন, দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঢালাওভাবে নির্বাচন করতে পারবেন না। এ ছাড়া ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সম্ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন জোটের এমন প্রার্থীরাই কেবল থাকবেন বিবেচনায়। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এর ফলে এটা স্পষ্ট যে, জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ যাদের মনোনয়ন দিয়েছে তাদেরও রণে ভঙ্গ দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে এবার দলীয় মার্কার বাইরে দলীয় প্রার্থীদের স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়ায় নির্বাচনে আসা প্রার্থীদের কতজন আবার দল চাইলে নির্দেশ মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন সেটাও আছে দেখার বিষয়।
তবে এই আলোচনার বাইরে থেকে যাচ্ছে বেশির ভাগ প্রার্থী যারা বিভিন্ন দল থেকে নির্বাচনে এলেও জনগণের কাছে নিজের দল, দলীয় প্রতীক এবং নিজের পরিচয় প্রকাশ করার সুযোগ পাবেন। তবে প্রতিটি আসনে স্থানীয় ভোটারদের কাছে তারা এখনো অচেনা এবং নতুন মুখ হিসেবে বিবেচিত।
যেমন দল হিসেবে এবারই প্রথম নির্বাচন করছে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। এসব দলের বেশির ভাগ প্রার্থী নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের কাছে নতুন পরিচয়ে উপস্থিত হবেন। অনেকে আবার খুব বেশি পরিচিত নন। একইভাবে তাদের নির্বাচনী প্রতীক যথাক্রমে সোনালী আঁশ, নোঙর ও একতারা চেনাতেও এবার তাদের বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হবে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনএমের প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ৬ জন এবং তৃণমূলের প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ৫ জন।
এদিকে, গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদের বলেছেন, বিএনপির ১৫ কেন্দ্রীয় নেতাসহ সাবেক ৩০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে কাদের সিদ্দিকী, লতিফ সিদ্দিকী, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো নেতাও আছেন। আবার আগে বিএনপিতে প্রভাব ছিল দলটির এমন সাবেক নেতারাও আছেন নির্বাচনে। এদের মধ্যে তৈমূর আলম, সমশের মবিন চৌধুরীর নাম উল্লেখযোগ্য।
তবে এদের বাইরে নির্বাচনের মাঠে থাকা বেশির ভাগ প্রার্থীই অচেনা। এ বিষয়ে গাজীপুর-৪ আসনের একজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার দল এলাকায় তেমন পরিচিত নয়। দলের প্রচার চালাতে ও এলাকার মানুষের কাছে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে এবার ভোট করতে আসা। আমিও জানি নির্বাচনে জয়লাভ করার অবস্থান এখনো আমার বা আমার দলের তৈরি হয়নি। তবে এক দিনে তো কিছুই হয় না। আমাদের দলের আদর্শ ও কর্মসূচি দেশের মানুষ ও এলাকার মানুষকে জানাতে আমরা নির্বাচনে এসেছি।’
অন্যদিকে লালমনিরহাট-৩ আসনে মনোনয়ন জমা দেয়া প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সদর আসনে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদ্য পদত্যাগকারী সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন বক্কর, জাতীয় পার্টি থেকে জাহিদ হাসান, তৃণমূল বিএনপি থেকে শামীম আহম্মেদ চৌধুরী, জাকের পার্টি থেকে সকিউজ্জামান মিয়া, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল থেকে আশরাফুল আলম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে আবু তৈয়ব মো. আজমুল হক পাটোয়ারী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) থেকে শ্রী হরিশ চন্দ্র রায় মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তবে এবার তিনি এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ফলে এ আসনে নির্বাচনে অংশ নেয়া সব প্রার্থীই নতুন এবং নতুন একজন সংসদ সদস্য পাবে লালমনিরহাট সদরবাসী। তবে নতুন হলেও জেলা ও শহরের রাজনীতিতে পুরনো মুখ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান। ছাত্ররাজনীতি করায় জাবেদ হোসেন বক্করও সেখানে পরিচিত মুখ। জাকের পার্টি ও জাসদের প্রার্থীকেও অনেকে চেনেন। তবে সাম্যবাদী দল, এনপিপির প্রার্থীর মতো জাতীয় পার্টির প্রার্থীও এলাকার সবার চেনা মুখ নন। ফলে যে আসন থেকে জাতীয় পার্টি বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে সেখানে নতুন মুখ দেয়ায় মাঠের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন এলাকার অনেক বাসিন্দা।
বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসন বিশ্লেষণ করলে। দৈনিক বাংলার খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনার এই ৬টি আসনের জন্য সেখানে ৫৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাদের অধিকাংশেরই রাজনীতিতে তেমন কোনো পরিচিতি নেই। হঠাৎ করেই তারা কেন সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী হলেন, এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তরও দেননি অধিকাংশ প্রার্থী।
খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনীত ৬ জন প্রার্থী, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ২ জন এবং জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। বাকি ৪৪ জন প্রার্থী কখনো রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় ছিলেন না।
খুলনা প্রতিনিধির বিশ্লেষণ অনুযায়ী খুলনা-১ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৬ জন। তারা হলেন, জাকের পার্টির মো. আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল, জাতীয় পার্টির কাজী হাসানুর রশিদ, তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় ও আবেদ আলী শেখ।
এদের মধ্যে ননী গোপাল মণ্ডল ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। রাজনীতিতে তার পরিচিতি রয়েছে। তবে বাকি চারজন রাজনীতিতে একেবারেই অপরিচিত। তারা প্রত্যেকেই এবার প্রথম সংসদ নির্বাচন করছেন। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সাবেক সচিব।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করছি। আমাকে ডামি প্রার্থীও বলা যাবে। এটা দলীয় নির্দেশেই হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল বলেন, ‘দল আমাকে আবারও সুযোগ দিয়েছে। আমি দলের সম্মান রাখব বলে আশাবাদী।’
তবে বাকি চার প্রার্থীর তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। জাতীয় পার্টীর কাজী হাসানুর রশিদ ও তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিকের কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
আর জাকের পার্টি মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলেছে, তাই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি।’
অন্যদিকে খুলনা-২ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, গণতন্ত্র পার্টির মো. মতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার, জাকের পার্টির ফরিদা পারভিন, ইসলামী ঐক্যজোটের হিদায়েতুল্লাহ, জাতীয় পার্টির মো. গাউসুল আজম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বাবু কুমার রায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমান।
এদের মধ্যে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর রাজনৈতিকভাবে পরিচিতি রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তবে বাকিদের আগে কখনো রাজনৈতিক মাঠে দেখা যায়নি।
কেন প্রার্থী হয়েছেন- এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার বলেন, ‘অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন জমা দেয়া হচ্ছে, তাই আমরাও দিচ্ছি।’
খুলনা-৩ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের এস এম কামাল হোসেন, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইজার আহমেদ ও ফাতেমা জামান সাথী।
এদের মধ্যেও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। তিনি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তিন বারের সংসদ সদস্য ও দুই বারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে সরিয়ে তাকেই আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। তবে ওই আসনেরও বাকি চারজনের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই।
খুলনা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন ১৪ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী, জাকের পার্টির শেখ আনছার আলী, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এস এম আজমল হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. ফরহাদ আহমেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মোস্তাফিজুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা, ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দীন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জুয়েল রানা, এম ডি এহসানুল হক, মো. রেজভী আলম, এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা, আতিকুর রহমান ও এইচ এম রওশান জমির।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী বর্তমান সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি জয়ী হয়েছিলেন।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। তিনি ওই আসনের তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার আপন ভাই।
তিনি বলেন, এলাকার মানুষের দোয়া নিয়ে মাঠে নেমেছি। জয়-পরাজয় এলাকার মানুষই নির্ধারণ করবেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই আসনে আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এলাকার ভোটাররা বলছেন, বাকি ১২ জন প্রার্থীদের নাম খুব একটা শোনেননি তারা। কেউ কেউ একেবারেই অপরিচিত।
খুলনা-৫ আসনের জন্য মনোনয় জমা দিয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির মো. শহীদ আলম, জাকের পার্টির সামাদ সেখ, আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ সেলিম আকতার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের এস এম এ জলিল, ইসলামী ঐক্যজোটের তরিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন।
এদের মধ্যে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ একাধিক বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী। এ ছাড়া আকরাম হোসেন ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই আসনেও আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা। বাকি যারা প্রার্থী হয়েছেন এলাকার রাজনীতিতে তাদের তেমন কোনো পরিচিতি নেই বলে জানা গেছে।
খুলনা-৬ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১২ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মো. রশীদুজ্জামান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আবু সুফিয়ান, জাকের পার্টির শেখ মর্তুজা আল মামুন, জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মির্জা গোলাম আজম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এস এম নেওয়াজ মোরশেদ, তৃণমূল বিএনপির গাজী নাদীর উদ্দীন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম রাজু, গাজী মোস্তফা কামাল, জি এম মাহবুবুল আলম, মো. মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর ও মো. অহিদুজ্জামান মোড়ল।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. রশীদুজ্জামানের কোনো দলীয় পদ নেই। তিনি একসময় পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছিলেন। তবে তাকেই মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে ক্ষমতাসীন দল। ওই আসনে রাজনৈতিকভাবে পরিচিত রয়েছে জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধুর। তিনি আগেও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বাকি প্রার্থীদের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। এলাকার সবার কাছে পরিচিত মুখও নন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ আসনেই ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের স্থানীয়রা তেমন একটা চেনেন না। তবে বিরোধীদের এক অংশ নির্বাচন বর্জন করায় রাজনীতির নতুন সমীকরণ মেলাতে ছোট দলগুলোই নির্বাচনে হতে যাচ্ছে বড় দলগুলোর সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনীযুদ্ধ পার হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।
জাসদের মাঠপর্যায়ের এক রাজনীতিবিদ জসিম মণ্ডল বলেন, ‘নির্বাচন একটা বড় খেলা। এখানে সবাই নামে নিজ নিজ সমীকরণ মেলানোর জন্য। রাজনৈতিক দলগুলোর সমীকরণ হয় এক ধরনের, আবার প্রার্থীর সমীকরণ হয় আরেক ধরনের। সবাই নির্বাচনে জয়ী হতে যেমন অংশ নেয় না তেমনই কেউ কেউ নির্বাচনে যায় অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করতে। আবার অনেকের কাছে ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণই বড় কথা।’ জয়-পরাজয়ের চেয়েও বড় বিষয় এ সময় পোস্টারিং করে নিজের ছবি ও পরিচিতি পুরো এলাকার মানুষকে দেখানো যায়। এটাও বা কম কিসে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরই আছে নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার। তাই কটা টাকা খরচ করে অনেকেই পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ নেয়। এর ফল তো অসীম-সারাজীবন নানাভাবে এর সুফল মেলে। যারা রাজনীতিতে আছেন, কেবল তারাই বোঝেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারার গুরুত্ব।
চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ঐতিহাসিক এ রায় ঘোষণা করেন। রায় প্রদানকারী এই ট্রাইব্যুনালে অপর দুই সদস্য বিচারক হলেন মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বহুল আলোচিত এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছিলেন প্রসিকিউশন।
অন্যদিকে, আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। এছাড়া রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের খালাস চান তার আইনজীবী।
এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস. এইচ. তামিম শুনানি করেন। এছাড়া শুনানিতে প্রসিকিউটর বি. এম. সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্য প্রসিকিউটরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। আর রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বোমোট ৫৪ জন সাক্ষী এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
একপর্যায়ে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে (অ্যাপ্রুভার) রাজসাক্ষী হন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলার বৃত্তান্ত
চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দমনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত থেকে শুরু করে বিচার—সব পর্যায়ের বৃত্তান্ত এভাবে এগিয়েছে।
মামটির নম্বর আইসিটি বিডি কেস নম্বর ২/২০২৫। চিফ প্রসিকিউটর বনাম শেখ হাসিনা ও অন্যান্য শিরোনামে দায়ের হওয়া এই মামলায় আসামি করা হয়েছে ক্ষমতাচ্যূত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে।
অভিযোগ প্রাপ্তি ও তদন্ত শুরু
২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট এবং ২৯ অক্টোবর অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়। মিস কেস নং ০২/২০২৪ করা হয় ১৬ অক্টোবর। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় ১৬ অক্টোবর এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ১৭ অক্টোবর। গ্রেপ্তার আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে গত ১৬ মার্চ গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন ও চার্জ
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয় ১২ মে। ১ জুন দাখিল হয় ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ। এতে ১৪ খণ্ডে প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার দালিলিক সাক্ষ্য জমা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল পত্রুপত্রিকা, দেশি-বিদেশি অনুসন্ধান প্রতিবেদন, শহীদ ও আহতদের তালিকাসহ গেজেট, বই, স্মারকগ্রন্থ, ঘটনাভিত্তিক তালিকা, গ্রাফিতির বই, অভ্যুত্থানকালীন প্রকাশিত পত্রিকার প্রথমপাতার সংকলন, আহতদের চিকিৎসা সনদ, পোস্টমর্টেম ও সুরতহাল প্রতিবেদন, অস্ত্র ও বুলেট ব্যবহারের জিডি, হেলিকপ্টারের ফ্লাইট শিডিউলসহ নানান নথি। ৯৩টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে এসব দালিলিক সাক্ষ্য ও ৩২টি বস্তু প্রদর্শনীর মাধ্যমে বুলেট, পিলেট, রক্তমাখা কাপড়, ভিডিও, অডিও, ডিভিডি, পেনড্রাইভ ও বই ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।
মোট ৮৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি জমা পড়ে, যার মধ্যে ৫৪ জন সরাসরি সাক্ষ্য দেন। ১৭ জুন পলাতক আসামিদের জন্য দুই জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২৪ জুন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। ১ জুলাই চার্জ শুনানি শুরু হয় এবং ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়। এ সময় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করেন।
প্রসিকিউশনের ওপেনিং স্টেটমেন্ট উপস্থাপন করা হয় ৩ আগস্ট; একই দিন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী ছিলেন গুরুতর আহত খোকন চন্দ্র বর্মন। ৮ অক্টোবর শেষ সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। মোট ৫৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১২ অক্টোবর শুরু হয় যুক্তিতর্ক। ২৩ অক্টোবর এটর্নি জেনারেলের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয় এবং রায়ের তারিখ ঘোষণার জন্য অপেক্ষায় রাখা হয়। ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল ১৭ নভেম্বরকে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে।
প্রসিকিউশনের অভিযোগসমূহ
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগ ১: চব্বিশের ১৪ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা রাজাকারের নাতিপুতি সম্মোধন করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। এরপর ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন নেতা একই ধরনের মন্তব্য করেন। এসব বক্তব্যের পর ছাত্ররা আন্দোলনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডাররা আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমণ করে ও নির্যাতন চালায়।
অভিযোগ ২: কাউন্ট-১, ১৪ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মাকসুদ কামালকে ফোন দিয়ে আসামি শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকার ট্যাগ দিয়ে তাদের ফাঁসি অর্থাৎ হত্যার নির্দেশ দেন।
কাউন্ট-২, ১৮ জুলাই শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথোপকথনে লেথাল উইপন (মরণাস্ত্র) ব্যবহারের নির্দেশ, ড্রোন ব্যবহার করে অবস্থান শনাক্ত করা এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার নির্দেশসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পুড়িয়ে জনতার উপর দায় চাপানোর নির্দেশনা প্রদান করেন।
কাউন্ট-৩, হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে ফোনে ২ বার কথোপকথনে আন্দোলনকারীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে বোমা নিক্ষেপ, আটক-নির্যাতন এবং বিএনপি, জামায়াত ও জঙ্গি ট্যাগ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
অভিযোগ ৩: ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ।
সাক্ষ্যপ্রমাণ:
শেখ হাসিনার ১৪ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও, ঢাবি ভিসি মাকসুদ কামালের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ড, আবু সাঈদকে পুলিশের গুলির সময় এনটিভির লাইভ ভিডিও ও মূল কপি, আবু সাইদের পাঁচটি পোস্টমর্টেম রিপোর্ট যা পুলিশের নির্দেশে চারবার পরিবর্তন করা হয়, ওই ঘটনায় সাজানো মামলার নথি, আবু সাঈদের পরিবারের সদস্য, সাংবাদিক, ডাক্তার, ছাত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য।
অভিযোগ ৪: চব্বিশের ৫ আগস্ট ঢাকার চানখারপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ।
অভিযোগ ৫: চব্বিশের ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানা এলাকায় ছয়জনকে হত্যা করে তাদের লাশ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ।
জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রায় ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ড একটি ঐতিহাসিক রায়। এই রায়ের গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করে সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানানো হয়।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এতে বলা হয়েছে, রায়-পরবর্তী সময়ে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা, উত্তেজনাপ্রসূত আচরণ, সহিংসতা বা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে বিশেষ অনুরোধ জানানো হচ্ছে। জনগণের, বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্বজনদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই রায়কে ঘিরে জনমনে স্বাভাবিকভাবেই আবেগ সৃষ্টি হতে পারে। তবে সেই আবেগের বশবর্তী হয়ে যেন কেউ জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে এমন কোনো পদক্ষেপ না নেয়—সরকার এ বিষয়ে দৃঢ়ভাবে সবাইকে সতর্ক করছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যদণ্ডের রায় দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত এনে এই রায় কার্যকর করতে হবে।
নাহিদ বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম খুনি-রক্তপিপাসু ফ্যাসিস্ট হিসেবে শেখ হাসিনা পরিচিতি লাভ করেছে। ফলে শেখ হাসিনার বিচার শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে যত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট শাসক রয়েছেন, তার বিচার এর এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, আগামী এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত এনে এই রায় কার্যকর করতে হবে।’
সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। খুনি স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে তার দল স্বাগত জানাচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের হাজারো শহীদ এবং কয়েক হাজার আহত যোদ্ধার ওপর যে জুলুম করা হয়েছিল, সেই জুলুমের রায় আজকে হয়েছে।
এই রায় বাংলাদেশের বিচারিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘তবে যেদিন এ রায় কার্যকর হবে, সেদিনই আমরা সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট হব। জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে, শহীদ পরিবার এবং আহত যোদ্ধারা শান্তি পাবে।’
রায় কার্যকরের জন্য অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, এর জন্য সরকারকে যথাযথ ভূমিকা ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শুনতে পেয়েছি, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারত সফর করছেন। আমরা দাবি জানাব, তিনি শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরবেন।’
বিচার অব্যাহত থাকতে হবে
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, শুধু শেখ হাসিনা নয়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ও কার্যকর করতে হবে। আওয়ামী লীগ, তাদের দোসর এবং অভিযুক্ত সব সরকারি কর্মকর্তার দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
নাহিদ বলেন, নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে যাতে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা বাধা না আসে এবং এই বিচার অব্যাহত থাকতে হবে। এই বিচারের দাবিতে এনসিপি সব সময় রাজপথে থাকবে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরবর্তী মামলাগুলোর রায়ও কার্যকর করতে হবে।
আজকের রায় আসার পেছনে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল এবং বিপ্লবী ছাত্র–জনতার অবদান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন এনসিপি নেতা নাহিদ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং বিচার কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
দল হিসেবে আ.লীগের বিচার দাবি
দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে আওয়ামী লীগও দল হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। ট্রাইব্যুনালের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার শুরু করতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনও একই অপরাধে অভিযুক্ত ছিলেন বলে আমরা মনে করি। এই হাজারো হত্যাকাণ্ডের পেছনে তারও দায় রয়েছে। ফলে তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সাজায় আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা মনে করি, তিনি রাজসাক্ষী হলেও তার সাজা আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল এবং এটা পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগে যাওয়া উচিত এই সাজা পুনর্বিবেচনার জন্য।’
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল আমিন, মুশফিক উস সালেহীন ও মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান, উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, লালদিয়া টার্মিনালে ডেনমার্কের কোম্পানি এপিএম টার্মিনালসের বিনিয়োগ বাংলাদেশের বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) খাতে নতুন যুগের সূচনা করেছে। তিনি বলেন, “এটি দেশের জন্য একটি নতুন সূচনা। ডেনমার্ক ও ইউরোপ থেকে বৃহত্তর এবং বহুমুখী বিনিয়োগের নতুন দ্বার খুলে যাচ্ছে।”
সোমবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মায়ের্স্ক গ্রুপ ও ডেনিশ সরকারের একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
মায়ের্স্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান রবার্ট মায়ের্স্ক উগলা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেনমার্কের বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্দলোসে হ্যানসেন।
উগলা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর টার্মিনালে তাদের বিনিয়োগ হবে বাংলাদেশে কোনো ইউরোপীয় কোম্পানির সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। তিনি জানান, ২০৩০ সালে লালদিয়া টার্মিনাল চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ আগমনের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে বড় গতি আসবে। এটি হবে একটি টেকসই ও আধুনিক বন্দর—যা আরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অন্যান্য ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীদেরও আকৃষ্ট করবে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিপিং লাইন মালিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মায়ের্স্ক বাংলাদেশের লজিস্টিকস ও সাপ্লাই চেইন খাতে আরও বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজবে বলেও জানান উগলা।
দাভোসে জানুয়ারির বৈঠকের পর দেওয়া বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য উগলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ডেনিশ কোম্পানির সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।”
তিনি এপিএম টার্মিনালসকে লালদিয়া টার্মিনালের নির্মাণ দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশকে লাখ লাখ উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। লালদিয়া টার্মিনাল হবে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবেশদ্বার, এটি ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন করবে।”
চট্টগ্রাম উপকূলরেখার বন্দরগুলোকে বিশ্বমানের সুবিধায় রূপান্তর করা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্য সম্ভাবনার জন্য অত্যন্ত জরুরি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দাভোসে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথোপকথনের স্মৃতিচারণা করে উগলা বলেন, মায়ের্স্ক গ্রুপ—যার মালিকানা একটি ফাউন্ডেশনের—অধ্যাপক ইউনূসের কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, এই বিনিয়োগ স্থানীয় সম্প্রদায়ে বড় প্রভাব ফেলবে এবং নারীদের সহায়তায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, এবং বাংলাদেশে ডেনিশ রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার।
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “এটি আমাদের জন্য একটি মাইলফলক। ডেনিশ বিনিয়োগ প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করছে।”
হ্যানসেন সম্প্রতি অনুমোদিত শ্রম আইন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই আইনি সংস্কার আরও বেশি ইউরোপীয় কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আরেকটি বিজয়’ বলে উল্লেখ করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের ইতিহাসে আজকের রায় একটি স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক মাইলফলক।
সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আজকের রায় কোনো প্রকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং অকাট্য ও প্রত্যক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে প্রদত্ত ন্যায়বিচারের ফলাফল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে তাজা, জোরালো ও বিস্তৃত প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, তাতে পৃথিবীর যে কোনো আদালতেই তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতো।
তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সহিংসতা, গুলিবর্ষণ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও গণহত্যার ধারাবাহিকতার বিষয়গুলো বিচার প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়েছে। এসব ঘটনার নৃশংসতায় যে বিপুল প্রাণহানি ও স্থায়ী শারীরিক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তা দেশের গণতান্ত্রিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ আঘাত হেনেছিল।
ব্রিফিংয়ের সময় আবেগাপ্লুত হয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছেন-আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, ইয়ামিন, আনাস, রিয়াগোপসহ অসংখ্য শহীদের কথা আজ বিশেষভাবে স্মরণ করছি। তিনি বলেন, আজকের রায়ে হয়তো তাদের বিদেহী আত্মা সামান্য হলেও শান্তি পাবে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর জন্য এটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সান্তনা এনে দেবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে আবারও আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে। ভারত যদি মানবতা বিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিকে আশ্রয়দান অব্যাহত রাখে, তবে তা বাংলাদেশের প্রতি শত্রুতামূলক ও নিন্দনীয় আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর মধ্যেই সরকার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে এবং আইনি আনুষ্ঠানিকতা জোরদার করা হচ্ছে।
বিচারকার্য অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আইন উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার যতদিন দায়িত্বে আছে, বিচার পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে চলবে। তিনি আরও বলেন, আগামী সরকার যেই হোক, জাতির প্রত্যাশা-এই গুরুদায়িত্ব থেকে তারা যেন কোনো অবস্থাতেই পিছিয়ে না যায়।
চীফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউশন টিম, তদন্ত কর্মকর্তা এবং শত শত সাক্ষীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যারা ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে আদালতে সত্যের সপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা এই রায়ের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রথম অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও দ্বিতীয় অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল।
সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল-১-এর বিচারক বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
৬ ভাগে বিভক্ত ৪৫৩ পৃষ্ঠা রায়ের সার সংক্ষিপ্ত অংশ পড়েছেন বিচারক। দুপুর ১২টা ৩৪ মিনিটে রায় পড়া শুরু হয়। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে রায়ের সার সংক্ষিপ্ত অংশ পড়েন বিচারক।
গণহত্যার দায়ে সরকারের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম বিচারের রায়। হাসিনার মামলার রায় বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এছাড়া রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় বিচার কার্যক্রম দেখানো হয়।
হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পালিয়ে বর্তমানে ভারতের আশ্রয় রয়েছেন। মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন। তিনি অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী নামে পরিচিত) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন এবং নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছেন।
এদিকে হাসিনার গণহত্যার রায়কে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও।
এর পাশাপাশি মাঠে সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। ঢাকা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সেনা মোতায়েনের জন্য সেনা সদরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কথিত লকডাউন ও শাটডাউনের নামে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণসহ নাশকতা প্রতিরোধে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ জুলাইয়ের পক্ষের দলগুলোর নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
হাসিনাসহ এ মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রসিকিউশন ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করে। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের মূল অভিযোগ হচ্ছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে হাসিনা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত দমনপীড়ন চালানোর সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন যা গণহত্যা, খুন এবং ভয়াবহ নির্যাতনের শামিল। প্রতিবেদনে প্রধান যে অভিযোগ আনা হয় সেগুলো হলো সরাসরি আদেশ অর্থাৎ শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সব বাহিনী, তার দল আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো বিশেষ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরাসরি নির্দেশ দেন। গণহত্যা ও নির্যাতন হাসিনার নির্দেশের ফলে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি আহত, অঙ্গহানি এবং নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় তারেক মিয়া (২৬) নামে যুবলীগের এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। রবিবার দিবাগত রাতে উপজেলার পূর্বাচল উপশহর এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত তারেক মিয়া রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারিকুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ডাকা টানা দুই দিনের লকডাউন সফল করতে রবিবার দিবাগত রাতে পূর্বাচল উপশহরের তিনশ’ ফিট এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তিনটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রাতেই অভিযান চালিয়ে যুবলীগ নেতা তারেক মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় রায় পড়া যে কোনো সময় শুরু হবে। ইতোমধ্যে এ মামলার আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিতি হয়েছেন।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল-১-এর বিচারক বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় শুরু হওয়ার কথা ছিলো।
এই ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এ মামলায় হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রসিকিউশন ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করে। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের মূল অভিযোগ হচ্ছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে হাসিনা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত দমনপীড়ন চালানোর সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন যা গণহত্যা, খুন এবং ভয়াবহ নির্যাতনের শামিল।
প্রতিবেদনে প্রধান যে অভিযোগ আনা হয় সেগুলো হলো- সরাসরি আদেশ অর্থাৎ শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সব বাহিনী, তার দল আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো বিশেষ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরাসরি নির্দেশ দেন। গণহত্যা ও নির্যাতন হাসিনার নির্দেশের ফলে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি আহত, অঙ্গহানি এবং নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
৫ আগস্ট এক দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে আসার সময় আশুলিয়ায় ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যার মাঝে একজন জীবন্তও ছিল। এ ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নাম বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রোববার মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মওলানা ভাসানীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মওলানা ভাসানী আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নাম। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের প্রবাদ পুরুষ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে উপমহাদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে আপোষহীন ও সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছেন। মওলানা ভাসানী দেশমাতৃকার মুক্তির পথ প্রদর্শক হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ছিলেন এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তার অবস্থান ছিল শোষণের বিরুদ্ধে এবং শোষিতের পক্ষে। অধিকার আদায়ে তিনি সর্বদা এদেশের মানুষকে সাহস যুগিয়েছেন তার নির্ভীক ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের দ্বারা। তার হুংকারে অত্যাচারী শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর মসনদ কেঁপে উঠত। জাতীর ভয়াবহ দুর্দিনগুলোতে তিনি জনস্বার্থের পক্ষে থাকতেন বলেই জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘অসহায় মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় মওলানা ভাসানী সবসময় আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তার অগাধ দেশপ্রেম, দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা এবং গণতন্ত্র ও মানবতার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে যুগ যুগ ধরে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। তার আদর্শকে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারলেই আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হব।’
অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই মুহূর্তে মওলানা ভাসানী প্রদর্শিত পথই আমাদের পাথেয়। যুগে যুগে তিনি শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র সুরক্ষায় মওলানা ভাসানী যুগ যুগ ধরে আমাদেরকে প্রেরণা জোগাবে, দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে।’ আজকে এই দিনে আমি মওলানা ভাসানীর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিবেদিত হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।
নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য করণীয় সব কিছুই করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তিনি বলেন, একটি ভালো নির্বাচন করা ছাড়া আমাদের কাছে আর কোন বিকল্প নেই।
গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির দ্বিতীয় দিনের সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসি আনোয়ারুল বলেন, ভালো একটি নির্বাচন করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার সহযোগিতায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন।
ইসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের প্রায় ৯ লাখের মত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকবে। থাকবে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মোবাইল কোর্ট, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, মনিটরিং টিম, অবজারভেশন টিমও মাঠে থাকবে। এগুলো সব নিয়ে আমরা মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছি।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ৪৩ হাজার প্রিজাইডিং অফিসারকে সারা বাংলাদেশ থেকে সিলেকশন করা হয়েছে। নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হচ্ছেন প্রধান। সেই প্রিজাইডিং অফিসার যাতে শক্ত হয়, নিরপেক্ষ হয়— সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি শেষে দুইটা অঙ্গীকারনামা রয়েছে। একটা হলো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অঙ্গীকারনামা আর আরেকটা হলো প্রার্থীর। দেখবেন, এখানে প্রার্থিতা বাতিলসহ অন্যান্য বিষয় কঠিনভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছি।
আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আরও বলেন, ‘আইন তো যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। এই আইন দিয়েই কিন্তু অতীতে ভালো নির্বাচন হয়েছে। এ ছাড়াও কিছু বিষয় রয়েছে যে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান। পুরো আসন বাতিলের বিধান। সেগুলো কিন্তু নিয়মে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।’
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আগে যে ভুলগুলো করেছে, এই ভুলের স্তূপের পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে, আপনাদের সহযোগিতায় এই ভুলগুলোকে এক পাশে রেখে একটা ভালো নির্বাচন করব আর এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই। সবার সহযোগিতায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।
গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় আজ সোমবার।
গত ১৩ নভেম্বর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণার এই দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারক মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বহুল আলোচিত এই মামলায় পাঁচটি অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন প্রসিকিউশন। অন্যদিকে, আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়েছেন তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। এছাড়াও রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের খালাস চেয়েছেন তার আইনজীবী।
এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস. এইচ. তামিম শুনানি করেন। এছাড়া প্রসিকিউটর বি. এম. সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। আর রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট ৫৪ জন সাক্ষী এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয়রা ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে-এ অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ হেভিওয়েট নেতাদের যেভাবে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, সেসব বর্ণনা ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনার এ মামলায় ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ৩ আগস্ট। প্রথম সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বীভৎসতার চিত্র তুলে ধরেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। গত ৮ অক্টোবর মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরার মাধ্যমে শেষ হয় সাক্ষ্যগ্রহণের ধাপ। এরপর প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীর যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয় ২৩ অক্টোবর।
মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্য সূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
রায় দেখবে বিশ্ব, লাইভ করবে রয়টার্স-বিটিভি
এদিকে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রায় ঘিরে ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই রায় দেওয়া হবে। আজ সোমবার শেখ হাসিনার রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি ও রয়টার্স। যা দেখবে পুরো বিশ্ব। সেই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের ফেসবুকে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। শুধু তাই না, ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় স্ক্রিনে রায় ঘোষণা সম্প্রচার করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশে এর আগে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি। তবে এবারও কি নারী হিসেবে অনুকম্পা পাবেন শেখ হাসিনা, সেই প্রশ্ন থাকলেও এমন সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম।
শেখ হাসিনার রায়ের পর তার সাজা হলে পরোয়ানা ইন্টারপোলে পাঠানো হবে বলেও জানায় প্রসিকিউশন।
আগামী ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল বাংলাদেশে আসবেন এবং ৭ ডিসেম্বর থেকে গণকবরের শহীদদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
রোববার রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের গণকবর জিয়ারত শেষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
তিনি জানান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে রায়েরবাজারে অস্থায়ী মর্গ ও ক্যাম্প স্থাপন করে শনাক্তকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এই পুরো প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সিআইডি দায়িত্ব পালন করবে।
পরে উপদেষ্টা জুলাই শহীদদের কবরের বাঁধাই কার্যক্রমও পরিদর্শন করেন
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমুখর করতে মাঠ প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে সব বাহিনীও সতর্ক ও প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
রোববার বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্স পরিদর্শন শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া শুধু আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে না; এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জনগণ যখন নির্বাচনমুখী হয়, তখন কাউকে কিছু দিয়ে থামিয়ে রাখা যায় না। বর্তমানে দেশ নির্বাচনমুখী—জানিয়ে সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।
বৈঠকে ডিআইজি মনজুর মোরশেদ আলম, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অতিরিক্ত পরিমাণে প্লাস্টিক ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের বঙ্গোপসাগর প্লাস্টিক দূষিত সমুদ্রের মধ্যে নবম স্থানে আছে। প্লাস্টিক শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয় বরং এটি অর্থনৈতিক সমস্যাও বটে। প্রথমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্লাস্টিকমুক্ত করার প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে প্লাস্টিকের ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে তারা ক্ষতিকর প্লাস্টিক ব্যবহার বাদ দিয়ে দেশকে স্থানীয় ও টেকসই প্লাস্টিকমুক্ত সমাধানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর পুরকৌশল বিভাগ ও এসসিআইপি প্লাস্টিকস প্রকল্পের উদ্যোগে নগরীর রেডিসন ব্লু হোটেলের মোহনা বলরুমে আয়োজিত ‘প্লাস্টিকমুক্ত টেকসই সামুদ্রিক পরিবেশ’ শীর্ষক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের সমাপনী অনুষ্ঠানে অনলাইনের মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূইয়া ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট)-এর ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুর ও পরিবেশ কৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আসিফুল হক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, পুরকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. রিয়াজ আকতার মল্লিক এবং আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মানজারে খোরশেদ আলম। অনুষ্ঠানে চীফ প্যাট্রন ছিলেন জার্মানির বাউহাউস ইউনিভার্সিটি ভাইমার এর এসসিআইপি প্লাস্টিক প্রজেক্টের লিডার প্রফেসর ড. ইকার্ড ক্রাফট। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসসিআইপি প্লাস্টিকস প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক পরিচালক ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারজানা রহমান জুথী। এতে সঞ্চালনা করেন গবেষণা সহকারী জুশান আব্দুল্লাহ ও পুরকৌশল বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজিয়াত বিনতে হারুন। উল্লেখ্য, এসসিআইপি প্লাস্টিক প্রকল্পটি জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর এনভায়রনমেন্ট, নেচার কনসারভেশনি অ্যান্ড নিউক্লিয়ার সেফটি (বিএমইউভি) এর অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে।