রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
৬ পৌষ ১৪৩২

প্রার্থী বেশি,প্রতিদ্বন্দ্বী কম

ফাইল ছবি
আপডেটেড
২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:১৪
তানজিমুল নয়ন
প্রকাশিত
তানজিমুল নয়ন
প্রকাশিত : ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩২টি দল। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ৭৪৭ জন। সে হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যয়নপত্র নিয়ে নির্বাচনে উপস্থিত ১৯৬৬ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্রদের মধ্যে অন্তত ৪০০ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন। তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, নির্বাচনে আসা বড় দল আওয়ামী লীগের মূল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাইরে অন্যদলগুলোর বেশির ভাগ প্রার্থীই আসনগুলোর মানুষের কাছে অচেনা। প্রায় প্রতিটি আসনেই নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন এমন অনেক অচেনা মুখ যাদের প্রার্থিতা পেতে সমস্যা না হলেও নির্বাচনী লড়াইয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে পরিচিত হতেই পার হয়ে যাবে প্রচারণার বেশির ভাগ সময়। ফলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচনে প্রার্থী আছে অনেক বেশি, কিন্তু, প্রতিদ্বন্দ্বী কম।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৩০০ আসনের বিপরীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের (নৌকা) ৩০৩ জন, জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) ৩০৪ জন, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১৮ জন, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) ১৫১ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি (আম) ১৪২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) ১১৬ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (মশাল) ৯১ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) ৪৭ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১৩ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৮ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ১৩ জন, গণফ্রন্ট (মাছ) ২৫ জন, গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) ৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) ৪৫ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭ জন, জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) ২০ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩৪ জন, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১২ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ৩৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা) ১৪ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) ৮২ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম (নোঙর) ৪৯ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট- বিএনএফ (টেলিভিশন) ৫৫ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৭৪ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ- বিএমএল (হাত-পাঞ্জা) ৫ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ (কুঁড়েঘর) ৬ জন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মই) একজন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (রিকশা) একজন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (খেজুর গাছ) একজন এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন) দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

এদিকে মনোনয়ন জমার শেষ দিনেই ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের সময়সীমা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে বিএনপিসহ যে দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছে তাদের আর মত পাল্টে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসার দৃশ্যমান কোনো সুযোগ নেই। আন্দোলনরত দলগুলোও অবশ্য আগেই এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে।

ফলে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে যেসব প্রার্থী টিকে যাবেন তারাই থাকবেন নির্বাচনী দৌড়ে। তবে প্রতিটি আসনে ভোটের লড়াইয়ে যারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগেরই দলের নাম সাধারণ মানুষ জানে না। আর দল অচেনা বলে প্রার্থীরাও অচেনা। ফলে তাদের ধারণা নির্বাচনী লড়াইয়ে আসলে টিকে থাকবেন বড় দলের পরিচিত মুখগুলো। এর মধ্যে শাসক দলের মার্কা নিয়ে লড়াই করা প্রার্থীরা যেমন আলোচনায় থাকবেন, তেমনই অনেক আসনেই তাদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমাতে পারেন নির্বাচনে আসা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কেননা, দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশির ভাগই স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এবং তাদের মোটামুটি ভোট ব্যাংক অথবা এলাকাবাসীকে প্রভাবিত করার সক্ষমতা রয়েছে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ৪০০ জনই আওয়ামী লীগের।
যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত কয়েক দিনের মতো গতকালও বলেছেন, দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঢালাওভাবে নির্বাচন করতে পারবেন না। এ ছাড়া ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সম্ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন জোটের এমন প্রার্থীরাই কেবল থাকবেন বিবেচনায়। আর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এর ফলে এটা স্পষ্ট যে, জোটের সঙ্গে সমঝোতা হলে কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ যাদের মনোনয়ন দিয়েছে তাদেরও রণে ভঙ্গ দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে।

তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে এবার দলীয় মার্কার বাইরে দলীয় প্রার্থীদের স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়ায় নির্বাচনে আসা প্রার্থীদের কতজন আবার দল চাইলে নির্দেশ মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন সেটাও আছে দেখার বিষয়।

তবে এই আলোচনার বাইরে থেকে যাচ্ছে বেশির ভাগ প্রার্থী যারা বিভিন্ন দল থেকে নির্বাচনে এলেও জনগণের কাছে নিজের দল, দলীয় প্রতীক এবং নিজের পরিচয় প্রকাশ করার সুযোগ পাবেন। তবে প্রতিটি আসনে স্থানীয় ভোটারদের কাছে তারা এখনো অচেনা এবং নতুন মুখ হিসেবে বিবেচিত।

যেমন দল হিসেবে এবারই প্রথম নির্বাচন করছে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। এসব দলের বেশির ভাগ প্রার্থী নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের কাছে নতুন পরিচয়ে উপস্থিত হবেন। অনেকে আবার খুব বেশি পরিচিত নন। একইভাবে তাদের নির্বাচনী প্রতীক যথাক্রমে সোনালী আঁশ, নোঙর ও একতারা চেনাতেও এবার তাদের বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হবে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনএমের প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ৬ জন এবং তৃণমূলের প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ৫ জন।

এদিকে, গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদের বলেছেন, বিএনপির ১৫ কেন্দ্রীয় নেতাসহ সাবেক ৩০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে কাদের সিদ্দিকী, লতিফ সিদ্দিকী, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো নেতাও আছেন। আবার আগে বিএনপিতে প্রভাব ছিল দলটির এমন সাবেক নেতারাও আছেন নির্বাচনে। এদের মধ্যে তৈমূর আলম, সমশের মবিন চৌধুরীর নাম উল্লেখযোগ্য।

তবে এদের বাইরে নির্বাচনের মাঠে থাকা বেশির ভাগ প্রার্থীই অচেনা। এ বিষয়ে গাজীপুর-৪ আসনের একজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার দল এলাকায় তেমন পরিচিত নয়। দলের প্রচার চালাতে ও এলাকার মানুষের কাছে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে এবার ভোট করতে আসা। আমিও জানি নির্বাচনে জয়লাভ করার অবস্থান এখনো আমার বা আমার দলের তৈরি হয়নি। তবে এক দিনে তো কিছুই হয় না। আমাদের দলের আদর্শ ও কর্মসূচি দেশের মানুষ ও এলাকার মানুষকে জানাতে আমরা নির্বাচনে এসেছি।’

অন্যদিকে লালমনিরহাট-৩ আসনে মনোনয়ন জমা দেয়া প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সদর আসনে ৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদ্য পদত্যাগকারী সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন বক্কর, জাতীয় পার্টি থেকে জাহিদ হাসান, তৃণমূল বিএনপি থেকে শামীম আহম্মেদ চৌধুরী, জাকের পার্টি থেকে সকিউজ্জামান মিয়া, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল থেকে আশরাফুল আলম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে আবু তৈয়ব মো. আজমুল হক পাটোয়ারী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) থেকে শ্রী হরিশ চন্দ্র রায় মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তবে এবার তিনি এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। ফলে এ আসনে নির্বাচনে অংশ নেয়া সব প্রার্থীই নতুন এবং নতুন একজন সংসদ সদস্য পাবে লালমনিরহাট সদরবাসী। তবে নতুন হলেও জেলা ও শহরের রাজনীতিতে পুরনো মুখ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান। ছাত্ররাজনীতি করায় জাবেদ হোসেন বক্করও সেখানে পরিচিত মুখ। জাকের পার্টি ও জাসদের প্রার্থীকেও অনেকে চেনেন। তবে সাম্যবাদী দল, এনপিপির প্রার্থীর মতো জাতীয় পার্টির প্রার্থীও এলাকার সবার চেনা মুখ নন। ফলে যে আসন থেকে জাতীয় পার্টি বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে সেখানে নতুন মুখ দেয়ায় মাঠের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন এলাকার অনেক বাসিন্দা।

বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসন বিশ্লেষণ করলে। দৈনিক বাংলার খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনার এই ৬টি আসনের জন্য সেখানে ৫৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাদের অধিকাংশেরই রাজনীতিতে তেমন কোনো পরিচিতি নেই। হঠাৎ করেই তারা কেন সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী হলেন, এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তরও দেননি অধিকাংশ প্রার্থী।

খুলনা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনীত ৬ জন প্রার্থী, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ২ জন এবং জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। বাকি ৪৪ জন প্রার্থী কখনো রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় ছিলেন না।

খুলনা প্রতিনিধির বিশ্লেষণ অনুযায়ী খুলনা-১ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৬ জন। তারা হলেন, জাকের পার্টির মো. আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল, জাতীয় পার্টির কাজী হাসানুর রশিদ, তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় ও আবেদ আলী শেখ।

এদের মধ্যে ননী গোপাল মণ্ডল ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। রাজনীতিতে তার পরিচিতি রয়েছে। তবে বাকি চারজন রাজনীতিতে একেবারেই অপরিচিত। তারা প্রত্যেকেই এবার প্রথম সংসদ নির্বাচন করছেন। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রশান্ত কুমার রায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সাবেক সচিব।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করছি। আমাকে ডামি প্রার্থীও বলা যাবে। এটা দলীয় নির্দেশেই হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল বলেন, ‘দল আমাকে আবারও সুযোগ দিয়েছে। আমি দলের সম্মান রাখব বলে আশাবাদী।’

তবে বাকি চার প্রার্থীর তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। জাতীয় পার্টীর কাজী হাসানুর রশিদ ও তৃণমূল বিএনপির গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিকের কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেও কোনো উত্তর মেলেনি।

আর জাকের পার্টি মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলেছে, তাই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি।’

অন্যদিকে খুলনা-২ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, গণতন্ত্র পার্টির মো. মতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার, জাকের পার্টির ফরিদা পারভিন, ইসলামী ঐক্যজোটের হিদায়েতুল্লাহ, জাতীয় পার্টির মো. গাউসুল আজম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বাবু কুমার রায়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমান।

এদের মধ্যে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর রাজনৈতিকভাবে পরিচিতি রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তবে বাকিদের আগে কখনো রাজনৈতিক মাঠে দেখা যায়নি।

কেন প্রার্থী হয়েছেন- এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার বলেন, ‘অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন জমা দেয়া হচ্ছে, তাই আমরাও দিচ্ছি।’

খুলনা-৩ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের এস এম কামাল হোসেন, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাইজার আহমেদ ও ফাতেমা জামান সাথী।

এদের মধ্যেও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি রয়েছে। তিনি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তিন বারের সংসদ সদস্য ও দুই বারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে সরিয়ে তাকেই আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। তবে ওই আসনেরও বাকি চারজনের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই।

খুলনা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন ১৪ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী, জাকের পার্টির শেখ আনছার আলী, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এস এম আজমল হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. ফরহাদ আহমেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মোস্তাফিজুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনিরা সুলতানা, ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দীন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জুয়েল রানা, এম ডি এহসানুল হক, মো. রেজভী আলম, এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা, আতিকুর রহমান ও এইচ এম রওশান জমির।

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম মূর্শেদী বর্তমান সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি জয়ী হয়েছিলেন।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। তিনি ওই আসনের তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার আপন ভাই।

তিনি বলেন, এলাকার মানুষের দোয়া নিয়ে মাঠে নেমেছি। জয়-পরাজয় এলাকার মানুষই নির্ধারণ করবেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই আসনে আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এলাকার ভোটাররা বলছেন, বাকি ১২ জন প্রার্থীদের নাম খুব একটা শোনেননি তারা। কেউ কেউ একেবারেই অপরিচিত।

খুলনা-৫ আসনের জন্য মনোনয় জমা দিয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির মো. শহীদ আলম, জাকের পার্টির সামাদ সেখ, আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ সেলিম আকতার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের এস এম এ জলিল, ইসলামী ঐক্যজোটের তরিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন।

এদের মধ্যে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ একাধিক বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী। এ ছাড়া আকরাম হোসেন ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই আসনেও আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা। বাকি যারা প্রার্থী হয়েছেন এলাকার রাজনীতিতে তাদের তেমন কোনো পরিচিতি নেই বলে জানা গেছে।

খুলনা-৬ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ১২ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মো. রশীদুজ্জামান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আবু সুফিয়ান, জাকের পার্টির শেখ মর্তুজা আল মামুন, জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধু, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মির্জা গোলাম আজম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এস এম নেওয়াজ মোরশেদ, তৃণমূল বিএনপির গাজী নাদীর উদ্দীন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম রাজু, গাজী মোস্তফা কামাল, জি এম মাহবুবুল আলম, মো. মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর ও মো. অহিদুজ্জামান মোড়ল।

এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. রশীদুজ্জামানের কোনো দলীয় পদ নেই। তিনি একসময় পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছিলেন। তবে তাকেই মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছে ক্ষমতাসীন দল। ওই আসনে রাজনৈতিকভাবে পরিচিত রয়েছে জাতীয় পার্টির মো. শফিকুল ইসলাম মধুর। তিনি আগেও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। বাকি প্রার্থীদের তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি নেই। এলাকার সবার কাছে পরিচিত মুখও নন অনেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ আসনেই ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের স্থানীয়রা তেমন একটা চেনেন না। তবে বিরোধীদের এক অংশ নির্বাচন বর্জন করায় রাজনীতির নতুন সমীকরণ মেলাতে ছোট দলগুলোই নির্বাচনে হতে যাচ্ছে বড় দলগুলোর সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনীযুদ্ধ পার হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।

জাসদের মাঠপর্যায়ের এক রাজনীতিবিদ জসিম মণ্ডল বলেন, ‘নির্বাচন একটা বড় খেলা। এখানে সবাই নামে নিজ নিজ সমীকরণ মেলানোর জন্য। রাজনৈতিক দলগুলোর সমীকরণ হয় এক ধরনের, আবার প্রার্থীর সমীকরণ হয় আরেক ধরনের। সবাই নির্বাচনে জয়ী হতে যেমন অংশ নেয় না তেমনই কেউ কেউ নির্বাচনে যায় অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করতে। আবার অনেকের কাছে ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণই বড় কথা।’ জয়-পরাজয়ের চেয়েও বড় বিষয় এ সময় পোস্টারিং করে নিজের ছবি ও পরিচিতি পুরো এলাকার মানুষকে দেখানো যায়। এটাও বা কম কিসে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরই আছে নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার। তাই কটা টাকা খরচ করে অনেকেই পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ নেয়। এর ফল তো অসীম-সারাজীবন নানাভাবে এর সুফল মেলে। যারা রাজনীতিতে আছেন, কেবল তারাই বোঝেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারার গুরুত্ব।


নয়াদিল্লির প্রেস নোট প্রত্যাখ্যান করল বাংলাদেশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নয়াদিল্লি থেকে পাঠানো প্রেস নোটকে ‘সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান’ করেছে বাংলাদেশ। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এই কঠোর অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, ভারতের দাবি অনুযায়ী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাসের হত্যার প্রতিবাদে ২০-২৫ জন যুবক সেখানে গিয়ে স্লোগান দিয়েছে মাত্র। এই ঘটনাকে ভারত যেভাবে উপস্থাপন করেছে, তা বাংলাদেশ পুরোপুরি গ্রহণ করছে না।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রশ্ন তোলেন যে, কড়া নিরাপত্তা বেষ্টিত একটি কূটনৈতিক এলাকায় একটি ক্ষুদ্র দল এত গভীরে প্রবেশ করতে পারল কীভাবে? তিনি এটিকে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেন। এছাড়া একজন বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনাকে কেন ভারতের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, সেটিকে অপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। তৌহিদ হোসেন জানান, ময়মনসিংহের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে।

দূতাবাসের ভেতরে থাকা কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঘটনার সময় কর্মকর্তারা প্রচণ্ড নিরাপত্তা শঙ্কা অনুভব করেছেন এবং সেখানে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় এবং কর্মকর্তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হয়, তবে বাংলাদেশ সরকার নয়াদিল্লিতে দূতাবাসের কার্যক্রম বা জনবল সীমিত করার কথা বিবেচনা করতে পারে।

উল্লেখ্য, এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল যে, বিক্ষোভ শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে এবং ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী বিদেশি দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের এই দাবি ও ব্যাখ্যাকে অগ্রহণযোগ্য বলে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।


শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭ জনের দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭ জন উচ্চপদস্থ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন। দুদকের সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান এই আবেদনটি আদালতে জমা দেন।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার এই তালিকায় আরও রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আনিসুল হক, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এবং সরকারের সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিকসহ বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত সচিব ও প্রকৌশলী। এছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিএনএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী ও দুইজন পরিচালকের বিদেশ গমনেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

দুদকের মামলার এজাহার ও আবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেডকে (সিএনএস) কোনো প্রকার বৈধ টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই একক উৎসভিত্তিক চুক্তির মাধ্যমে টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটিকে মোট আদায়কৃত টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দেওয়ার চুক্তি করা হয়, যার ফলে তারা ৪৮৯ কোটি টাকারও বেশি বিল গ্রহণ করে। অথচ এর আগে ২০১০ থেকে ২০১৫ মেয়াদে একই কাজে ব্যয় হয়েছিল মাত্র ১৫ কোটি টাকার কিছু বেশি। এ ঘটনায় ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগে গত ১২ অক্টোবর দুদক শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

আদালতে দেওয়া আবেদনে বলা হয়, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে যে মামলার আসামিরা দেশত্যাগ করার পরিকল্পনা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে মামলার তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আলামত বিনষ্ট হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের বিদেশ যাত্রা রহিত করা জরুরি বলে মনে করেন আদালত। এই আদেশের ফলে আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের কেউই দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।


এ কে খন্দকারের জানাজায় প্রধান উপদেষ্টার অংশগ্রহণ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম রূপকার, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আবদুল করিম খন্দকারের (এ কে খন্দকার) জানাজা ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান আজ রবিবার (২১ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে। রাজধানীর বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারে আয়োজিত এই জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অংশ নেন। জানাজার পূর্বে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে একটি সুসজ্জিত ফিউনারেল প্যারেড অনুষ্ঠিত হয় এবং জানাজা শেষে বিমান বাহিনীর একটি ফ্লাই পাস্টের মাধ্যমে তাঁর প্রতি বিশেষ সামরিক সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। একে একে শ্রদ্ধা জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। এ সময় সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টা এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এই বীর সেনানীর শেষ বিদায়ে উপস্থিত ছিলেন। জানাজার আগে এ কে খন্দকারের ছেলে জাফরুল করিম খন্দকার তাঁর বাবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, বীর-উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা এ কে খন্দকার বার্ধক্যজনিত কারণে গতকাল শনিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, রণকৌশল এবং সাহসিকতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে এক অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিল। ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তিনি মুক্তিবাহিনীর সাংগঠনিক ভিত্তি সুসংহত করতে এবং যুদ্ধজয়ে অনন্য অবদান রাখেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ এক বীর সেনানী এবং জাতির ইতিহাসের এক জীবন্ত কিংবদন্তিকে হারাল।

সুত্রঃ বাসস


সীমান্তে অনুপ্রবেশ: লালমনিরহাটে বিএসএফ সদস্যকে আটক করল বিজিবি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এক সদস্যকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে আঙ্গরপোতা বিওপির আওতাধীন ডাঙ্গাপাড়া এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক বিএসএফ সদস্যের নাম বেদ প্রকাশ (বডি নম্বর ২১৩৬০০১৭৮)। তিনি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার-১৭৪ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অর্জুন ক্যাম্পে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোররাতে সীমান্ত পিলার ডিএএমপি ১/৭ এস-এর নিকটবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু পাচারকারীদের ধাওয়া করছিল বিএসএফের একটি টহল দল। ধাওয়া করার একপর্যায়ে কনস্টেবল বেদ প্রকাশ জিরো লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের প্রায় ২০০ গজ ভেতরে ঢুকে পড়েন। সে সময় ওই এলাকায় দায়িত্বরত বিজিবির টহল দল তাকে দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে। তল্লাশি চালিয়ে তার কাছ থেকে একটি শর্টগান, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ওয়্যারলেস সেট এবং একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

রংপুর-৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল সেলিম আল দীন এবং দহগ্রাম ফাঁড়ির ইনচার্জ তাজিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ঘন কুয়াশার কারণে পথ ভুল করে ওই বিএসএফ সদস্য অনিচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছিলেন। বিষয়টি জানার পরপরই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম ও বিদ্যমান প্রটোকল অনুসরণ করে তিনবিঘা করিডোর এলাকায় একটি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তে সাময়িক উত্তেজনা দেখা দিলেও বর্তমানে পরিস্থিতি বিজিবির নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাভাবিক রয়েছে।


তারেক রহমানের ফেরার ফ্লাইট থেকে দুই কেবিন ক্রুকে অব্যাহতি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

লন্ডনে দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে তাঁর ঢাকা ফেরার নির্ধারিত ফ্লাইটের দায়িত্ব থেকে দুইজন কেবিন ক্রুকে সরিয়ে নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। মূলত গোয়েন্দা সংস্থার নেতিবাচক প্রতিবেদন এবং ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিমান সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া ওই দুই কেবিন ক্রুর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। তাঁদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাঁদের পরিবর্তে নতুন দুজনকে ওই ফ্লাইটে দায়িত্ব দিয়েছে। এর আগেও গত মে মাসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একটি ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও একই ধরনের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ক্রু পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছিল।

আগামী ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে। এই বিশেষ ফ্লাইটে তারেক রহমানের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাও সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন। তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রস্তুতির মাঝেই নিরাপত্তাজনিত এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করল বিমান কর্তৃপক্ষ।


জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে ইসির বৈঠক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটকে কেন্দ্র করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি শুরু হয়। ভোটের তফসিল ঘোষণার পর তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে এটিই নির্বাচন কমিশনের প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ।

বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান উপস্থিত রয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সিইসির পাশাপাশি চারজন নির্বাচন কমিশনার এবং ইসির সিনিয়র সচিবও এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। তিন বাহিনী প্রধান নির্বাচন ভবনে পৌঁছালে ইসি সচিব তাঁদের আলাদাভাবে অভ্যর্থনা জানান। মূলত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এই বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে।

এদিকে, দুপুর ১২টার এই বৈঠকের পর আজ দুপুর আড়াইটায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত আরেকটি বড় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সিইসির সভাপতিত্বে ওই সভায় প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং এনএসআই, ডিজিএফআই, বিজিবি, র‍্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসারসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সেখানে নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধ এবং প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নির্ধারিত আচরণ বিধিমালা ২০২৫-এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আজকের এই ধারাবাহিক সভাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনের একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখা। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এই বিশেষ সভা শেষে আজ বিকেলেই গণমাধ্যমকে ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সভার সিদ্ধান্ত ও গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত এই তৎপরতা রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।


নিরাপত্তা শঙ্কায় চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থগিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে উদ্ভূত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে বন্দরনগরীতে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভ্যাক) কার্যক্রম আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থিত আইভ্যাক তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের এই কেন্দ্রে ভিসার আবেদন গ্রহণসহ অন্যান্য সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

আইভ্যাক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি সন্তোষজনক মনে হলে পুনরায় কার্যক্রম চালুর বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। এর আগে গত বুধবার একই ধরনের নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রের কার্যক্রম দুপুর থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। যদিও পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকার সেই কেন্দ্রটি পুনরায় সচল হয়। মূলত সাম্প্রতিক নানা কর্মসূচি ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েই চট্টগ্রামে এই নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এই স্থগিতাদেশের ফলে চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ভিসা প্রত্যাশীদের পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।


ছায়ানটে হামলা ও অগ্নিসংযোগ: ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত বাংলা সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ছায়ানটের প্রধান ব্যবস্থাপক দুলাল ঘোষ বাদী হয়ে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে ধানমন্ডি মডেল থানায় এই মামলাটি করেন। ধানমন্ডি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম আজ রোববার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহার ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে একদল দুর্বৃত্ত ছায়ানট ভবনে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। তারা ভবনের সিসি ক্যামেরা ও আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি সংগীতচর্চায় ব্যবহৃত মূল্যবান বাদ্যযন্ত্র যেমন—তবলা, হারমোনিয়াম ও বেহালা ভেঙে ফেলে এবং বিভিন্ন কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ন্যাক্কারজনক হামলায় প্রতিষ্ঠানের অপূরণীয় ক্ষতি হলেও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক আর্থিক পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী ক্ষতিগ্রস্ত ছায়ানট ভবন পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তিনি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন। উল্লেখ্য, শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর একই রাতে ঢাকার তেজগাঁও ও কারওয়ান বাজার এলাকায় ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’ ও ‘প্রথম আলো’ কার্যালয়েও হামলার ঘটনা ঘটেছিল। ছায়ানট কর্তৃপক্ষ এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।


ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড: তদন্তের অগ্রগতি জানাতে যৌথ সংবাদ সম্মেলন আজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনার তদন্তে পাওয়া তথ্য ও গ্রেফতারদের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) একটি সমন্বিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজধানী এই সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলো এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে কতটুকু এগিয়েছে এবং মূল অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা এই সম্মেলনে তুলে ধরা হবে।

এদিকে, ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলির ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলাটিকে গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) আদালত পূর্ণাঙ্গ হত্যা মামলা হিসেবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে রিকশায় থাকাকালীন সন্ত্রাসীরা তাকে মাথায় গুলি করে। এর ছয় দিন পর গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিহতের ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা শেষে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে দাফন করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে র‍্যাব ৮ জনকে এবং পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। র‍্যাবের হাতে গ্রেফতারদের মধ্যে প্রধান সন্দেহভাজন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা, মা, স্ত্রী, শ্যালক ও সহযোগীরা রয়েছেন। অন্যদিকে, পুলিশ গ্রেফতার করেছে সীমান্ত দিয়ে ফয়সালকে অবৈধভাবে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা মানবপাচারকারী ও অন্য এক সহযোগীকে। র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশের সব প্রধান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা সম্মিলিতভাবে তদন্তের সার্বিক চিত্র এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করবে।

উল্লেখ্য, শরীফ ওসমান বিন হাদি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণার পাশাপাশি ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ এবং ‘ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন এক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তার এই মর্মান্তিক মৃত্যু দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে গভীর শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে এই স্পর্শকাতর মামলার পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ ও পলাতক আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।


সুদানে নিহত ৬ শান্তিরক্ষীর জানাজা সম্পন্ন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্যের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় সেনা মসজিদ প্রাঙ্গণে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা এবং তিন বাহিনীর প্রধানদের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

মর্যাদাপূর্ণ এই জানাজায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও অশ্রুসিক্ত নয়নে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিশেষ বিমানে করে শহীদ শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দেশে আনা হয়। গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর একটি ড্রোন হামলায় তারা শাহাদতবরণ করেন। মর্মান্তিক এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন নাটোরের করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মন্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।

একই হামলায় আরও নয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী আহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান ও নারী সদস্যসহ আরও বেশ কয়েকজন রয়েছেন। বর্তমানে তারা সবাই শঙ্কামুক্ত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেশের মান রক্ষায় ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশি এই সেনাদের এমন আত্মত্যাগ দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি ও গভীর গর্বের বিষয় হিসেবে গণ্য হচ্ছে।


সহিংসতা-হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে হবে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ড এবং এর পরের সহিংসতার ঘটনায় দ্রুত, পূর্ণাঙ্গ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দেওয়া এক পোস্টে এ আহ্বান জানায় লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক অফিস।

পোস্টে উল্লেখ করা হয়, সহিংসতার অংশ হিসেবে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও ছায়ানটের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয় এবং নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করা হয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এসব ঘটনায় মানুষ আহত হয়েছেন, সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে, এমনকি প্রাণহানিও ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিয়ে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এ ছাড়া ধর্ম অবমাননার অভিযোগের পর হিন্দু পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এসব ঘটনায় মানুষ আহত হয়েছেন, সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে, এমনকি প্রাণহানিও ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিয়ে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে হবে।


শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ওসমান হাদির বিদায়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সহকর্মীসহ লাখো ছাত্র-জনতার ভালোবাসায় চির বিদায় নিলেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।

এর আগে এদিন বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা ও লাখো মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

জানাজা শেষে কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পর্যন্ত আসেন তার অনুসারীরা।

এ সময় তার সহকর্মীরা অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। শপথ নেন হাদির স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই অব্যাহত রাখবেন। তারা বলেন, লাখো মানুষের ভালোবাসা প্রমাণ করে জীবিত হাদির চেয়ে শহীদ হাদি অনেক বেশি শক্তিশালী।

আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আজকে আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাদির জানাজা পড়েছি। আমাকে আজকে প্রধান উপদেষ্টা ডেকেছেন, আমি যাইনি। আল্লাহ হাদিকে শাহাদাতের জজবা হিসেবে কবুল করে নিয়েছেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত তৃতীয় শহীদ হিসেবে আল্লাহ কবুল করেছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। দেশের জন্য তার যে ত্যাগ আল্লাহ তা কবুল করুক।’

তিনি বলেন, ‘তার পরিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত পরিবারের অংশ। আমরা তার চূড়ান্তভাবে সম্মান জানাতে আমাদের এ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে কবরস্থ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সন্তানকে বুকে নিয়েছে। মা তার ছেলেকে বা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে গ্রহণ করেছে।’

বক্তব্য শেষে দোয়া পরিচালনা করেন হাদির বড় ভাই। এ সময়, হাদীর পরিবারের লোকজন এবং আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও অন্যান্য নেতারা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, ডাকসু নেতারা, এবং ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

পরদিন ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ‌৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শহীদ হাদির মরদেহবাহী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাদির মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি অবতরণ করে। পরে এয়ারপোর্ট থেকে হাদির মরদেহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমাঘারে রাখা হয়। সেখান থেকে গতকাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শনিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়। এ উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দেন।


মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক এ কে খন্দকারের জানাজা রবিবার, দেওয়া হবে গার্ড অব অনার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার, বীর উত্তমের জানাজা আগামীকাল রবিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে। এদিন দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের প্যারেড গ্রাউন্ডে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।

এর আগে শনিবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন এ কে খন্দকার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তিনি এক কন্যা, দুই পুত্র এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

এ কে খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি। বাবার কর্মসূত্রে রংপুরে জন্ম হলেও তার পৈতৃক নিবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। তার বাবা খন্দকার আব্দুল লতিফ ছিলেন ব্রিটিশ আমলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং মা আরেফা খাতুন ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে এ কে খন্দকার ছিলেন তৃতীয়। বাবার চাকরির সুবাদে বগুড়া করোনেশন স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।

বর্ণাঢ্য সামরিক জীবনের অধিকারী এ কে খন্দকার ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে (পিএএফ) পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। কর্মজীবনে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ফাইটার পাইলট হিসেবে এবং পরবর্তীতে ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর, ফ্লাইট কমান্ডার ও স্কোয়াড্রন কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি পিএএফ প্ল্যানিং বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং একই বছর ঢাকায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী ঘাঁটির সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে নিয়োগ পান।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এ কে খন্দকার উইং কমান্ডার হিসেবেই মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন এবং ডেপুটি চিফ অব স্টাফ বা উপ-সর্বাধিনায়কের গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তৎকালীন প্রবাসী সরকার তাকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে পদোন্নতি দেয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ব্যক্তিগত উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবে রণাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুসংগঠিত করতে তার অসামান্য অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।


banner close