অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে সাধারণ মানুষের আবাসন নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বাগিয়ে নিচ্ছেন প্লট-ফ্ল্যাট। প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্য ও ঠিকাদারদের সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বেদখল হয়ে যাচ্ছে জমি ও সম্পদ। রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে দেখার যেন কেউ নেই! কারণ এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন চেয়ারম্যান। এই পদে ঘন ঘন পরিবর্তন করা হয়। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিন্ডিকেট ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বাংলাদেশ (সিএজি)-এর এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিরপুরের বিভিন্ন সেকশনে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মোট জমি ৩ হাজার ৬১৫ দশমিক ৬৫ একর, যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫৪ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ৪৭৪টি আবাসিক প্লটের তালিকা বা হিসাব দিয়েছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। বাকি প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৭৭১ কাঠা জমির কোনো ধরনের বরাদ্দ, বণ্টন ও বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়নি। এমনকি এগুলো কর্তৃপক্ষের দখলে থাকারও কোনো প্রমাণ পায়নি সিএজি। বছরের পর বছর এসব জমি বেদখল থাকলেও উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি বেদখল হওয়া জমি-সম্পর্কিত কোনো তথ্যও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এসব জমি ভোগ করছে প্রভাবশালীরা। এতে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সন্ধান পেয়েছে। ইতোমধ্যে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উচ্চমান সহকারী ও কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে দুদক। ওই কর্মচারীর নামে-বেনামে কয়েক শ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। সম্প্রতি তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু দেলোয়ারই নয়, নামে-বেনামে প্লট-ফ্ল্যাট দখলের মাধ্যমে এমন অসংখ্য কোটিপতি তৈরি হয়েছে। তারা নিজ নামে প্লট-ফ্ল্যাট নেয়ার পাশাপাশি স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের নামেও একাধিক বরাদ্দ নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্থাটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শক্তিশালী সিন্ডিকেট এসব কাজ করছে। সিএজির প্রতিবেদন অনুসারে এর নেতৃত্বে রয়েছেন গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও সমন্বয়) মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদ। তিনি খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) অধ্যয়নরত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। বর্তমান সরকারের আদর্শবিরোধী অবস্থানের কারণেই তিনি উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত করছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মবহির্ভূতভাবে এসব প্লট-ফ্ল্যাট নেন। অথচ মন্ত্রণালয়ের বিধিতেই বলা হয়েছে, একটির বেশি কেউ বরাদ্দ নিতে পারবে না। আবার চাকরির মেয়াদ দুই বছর না হলে বরাদ্দ নেয়া যাবে না। এদিকে অনেকে নিজ নামে প্লট-ফ্ল্যাট না নিয়ে কৌশলে তা নিয়েছেন স্বজনদের নামে। পাশাপাশি ঘুষ এবং তদবির বাণিজ্য থেকে আয় করেছেন বিপুল অর্থ। আবার অনেকে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের জমি বাজার মূল্যের থেকে কয়েকগুণ কমে বিক্রি করে লাভবান ক্রেতার কাছ থেকে বাগিয়ে নিচ্ছেন কমিশন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিরপুর-১৪ নম্বর সেকশনে ১১২ কাঠা জমি রয়েছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের। বাজারদর অনুযায়ী ওই এলাকায় কাঠাপ্রতি জমির দাম প্রায় কোটি টাকা। কিন্তু সেখানে পানির দরে জমি বিক্রি করেছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানকে সেই জমি কাঠাপ্রতি প্রায় ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রায় ১১২ কাঠা জমি ১৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬ হাজার ২৫০ টাকায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যথাযথ বিধান মেনে বাজারদর যাচাই করে এ জমি বিক্রি করলে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পাওয়া যেত। অথচ সেই জমি সস্তায় বরাদ্দ দিয়ে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ প্রায় ৮৬ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করলেও ঠিকাদারকে ১৭ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। আর বিল পরিশোধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আয়কর, ভ্যাট ও জামানত বাবদ ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা কর্তন দেখানো হলেও সংশ্লিষ্ট খাতে তা জমা না করে ব্যাংক থেকে উত্তোলনের মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণ কাজ সম্পাদন না করায় কাজ বাতিল করা হলেও চুক্তির শর্ত মোতাবেক অবশিষ্ট কাজের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় না করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে বাতিল করা কাজের জন্য আরোপ করা লিকুইডেটেড ড্যামেজেস ও অতিরিক্ত খরচের টাকা আদায় না করায় আরও ক্ষতি হয়েছে ২৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
অভিযোগ উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ অনুযায়ী জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ‘চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন নিয়েও। ২০১৮ সালে ১৬ দশমিক ১৯ একর জমিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পরে দুই একর বাদ দিয়ে ১৪ দশমিক ১৯ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি), আইএমইডি, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সার্ভে ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ছাড়পত্র গ্রহণ করে ১৩২ কেভি বৈদ্যুতিক লাইন ও উঁচু টিলার অংশ বাদ দিয়ে প্রকল্প এলাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০২১ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও কাজই শুরু হয়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি ৫ বছরেও বুঝিয়ে দিতে পারেনি।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও সমন্বয়) মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রকল্পের ধীরগতি চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ‘রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নে ছাড়পত্র দিয়েছে। এখন আবারও ছাড়পত্র চাওয়া হচ্ছে। এতে বিস্মিত হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কারণ একই প্রকল্পে দুবার ছাড়পত্র দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এ ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকল্পটি হাতে নেয়ার প্রথম থেকেই পাহাড়/নিচু টিলা না কেটে মোচনের পক্ষে মত দেন। কিন্তু প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের পাহাড় কাটার দিকেই ঝোঁক। দ্বিতীয়বার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র চাওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্টদের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া রাউজানে তিন ফসলি আবাদি কৃষি জমির ওপরই প্রকল্পটি করা হচ্ছে। এতে ধারণা করা হয়, সংশ্লিষ্টদের কৃষিজমির ওপরই প্রকল্প করার প্রবণতা বেশি। অথচ ফসলি জমি রক্ষার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু তা মানছে না গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ, জমি অধিগ্রহণসহ সামগ্রিক বিষয়ে তার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। অথচ মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে কর্মরত প্রবাসীরা এই প্রকল্পের দিকে তাকিয়ে আছে। শুধু ‘চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্পই নয়, মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদের অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতায় থমকে গেছে গৃহায়ণের আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোসলেহ উদ্দীন আহাম্মদ বলেন, ‘প্রকল্পের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করার এখতিয়ার আমার নেই। চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিষয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ আমার নেই। প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত চেয়ারম্যান জানেন।’
কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করেন, ‘এই প্রকল্পে কোনো ধরনের কালক্ষেপণ হচ্ছে না। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এখানে প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, এর কোনো কারণ আমার জানা নেই। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক ছাড়পত্র নিতে হয়।’
তবে, তাদের বক্তব্য সঠিক নয় বলে মনে করেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সাধারণ জনগণ। প্রকল্পের বিষয়ে খোঁজ নিতে ঢাকায় আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কার্যালয়ের সামনে। তারা দাবি করেন, বারবার মেয়াদ বাড়ানোর মাধ্যমে এই প্রকল্প থেকে সংশ্লিষ্টরা বাড়তি আর্থিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন। এ জন্য তারা প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। ফলে কাজে কোনো অগ্রগতি নেই।
অনুসন্ধানে যায়, চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ের সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প, মিরপুর-৯ নম্বর সেকশনে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ১৫টি ১৪ তলা আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (স্বপ্ননগর-২), হবিগঞ্জ সদর উপজেলার স্বল্প ও মধ্য আয়ের লোকদের জন্য সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প এবং মিরপুর-১৫ সেকশনের জয়নগর আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে। সব প্রকল্পেরই মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের হালিশহরে আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ, ঝালকাঠির সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস, ময়মনসিংহের স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসিক ফ্ল্যাট, ঝিনাইদহের সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস এবং মিরপুর-১৬ নম্বর সেকশনের আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পেও ধীরগতি চলছে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে কর্মরত কিছু কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দাবি করেছেন, বিভিন্ন প্রকল্পের ধীরগতি এবং মেয়াদ বৃদ্ধির পেছনে মূল কারিগর হিসেবে কাজ করছে মোসলেই উদ্দীন আহাম্মদের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ১টি মামলা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ১৯০টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১৩২টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
গতকাল বুধবার ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ অভিযান চালিয়ে এসব মামলা দায়ের করে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে আকাঙ্ক্ষার স্ফুরণ ঘটেছে তার একটি সুনির্দিষ্ট রূপ দিতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গে আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে আমরা একটি জাতীয় সনদে প্রতিফলিত করতে চাই। ভবিষ্যতে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল এই সনদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করবে৷
ঐকমত্য কমিশনের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশাকে ধারণ করে বলে মন্তব্য করেন আলী রীয়াজ। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বাংলাদেশের নতুন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা এদেশের মানুষ এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলোর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফল উল্লেখ করে আলোচনার সূচনায় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ যেমন প্রকাশ হয়েছে, তেমনি তাদের প্রত্যাশাকেও প্রকাশ করেছে। বার বার ফ্যাসিবাদের উত্থান হোক; তা দেশের মানুষ চায় না। আমরা এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে সবার সমানাধিকার থাকবে, নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত হবে এবং ভিন্নমতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকবে।
কমিশনের সহ-সভাপতি আরও বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে কমিশন। এ দায়িত্ব কেবল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নয় বরং রাজনৈতিক দলগুলোকেই মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে ভবিষ্যতের পথে অগ্রসর হতে হবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের নেতৃত্বে দলটির সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতনসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলের হয়ে আলোচনায় নিখিল দাশ, জনার্দন দত্ত নানটু, প্রকৌশলী শম্পা বসু, ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী, জুলফিকার আলী, আহসান হাবিব বুলবুল, খালেকুজ্জামান লিপন, আবু নাঈম খান বিপ্লব এবং রাহাত আহম্মেদ অংশ নেন।
দৈনিক অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে দেশে উক্ত রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন গড়ে ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করছেন, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার (৫ গ্রাম) চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে প্রতি বছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজাতী'র সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগগুপ্ত ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের লবণ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ডা. আহমাদ খাইনুল আবরার।
সভায় বলা হয়, উচ্চমাত্রায় লবণ গ্রহণের একটি বড় উৎস হলো প্রক্রিয়াজাত খাবার। এ ধরনের খাবারে লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই অতিরিক্ত লবণ নীরব ঘাতকের মতো দেশে হৃদরোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের মহামারি সৃষ্টি করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে অবিলম্বে একটি সমন্বিত জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল গ্রহণ করা এবং খাদ্যের মোড়কের সামনে ‘ফ্রন্ট অফ প্যাক লেবেলিং’ বাধ্যতামূলক প্রয়োজন। খাদ্য মোড়কের সামনে সহজবোধ্যভাবে দেওয়া ফ্রন্ট অফ প্যাক লেবেলের মাধ্যমে ভোক্তারা সহজেই লবণ, চিনি ও চর্বির মত স্বাস্থ্যহানিকর উপাদানের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যকর পণ্য বেছে নিতে সক্ষম হবেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, লবণ শুধু স্বাদের উপাদান নয়, অতিরিক্ত গ্রহণ করলে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগসহ অসংক্রামক রোগের বড় ঝুঁকি তৈরি করে। তিনি জাতীয় পাঠ্যক্রমে লবণের ক্ষতিকর প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান; যাতে শিশুদের মধ্যে শুরু থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মুস্তাক হাসান মো. ইফতেখার বলেন, অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে, কিন্তু বোধগম্য লেবেলিং না থাকার কারণে জনগণ তা বুঝে উঠতে পারে না। তিনি ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি মোড়কে পুষ্টি উপাদানসমূহের সঠিক কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সরকার বদ্ধ পরিকর। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত কার্য পরিকল্পনা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে চলছে। সম্প্রতি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি উদ্যোগে জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি দ্রুত এটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মোড়কিকরণ আইন অনুযায়ী মোড়কে লবণ, চিনি ও চর্বির পরিমাণ উল্লেখ বাধ্যতামূলক হলেও অনেক কোম্পানি তা করে না, অথবা এমনভাবে উল্লেখ করে যা ভোক্তারা পড়তে পারেন না। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি মোড়কিকরণ আইন সংশোধন করে সহজবোধ্য ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যভ্যাস পরিবর্তনের বিকল্প নেই। তিনি দেশের জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশ তৈরিতে সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও দেশের সুস্থ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য তিনি সরকারি বেসরকারি সকলের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিফায়ী বলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে লবণ গ্রহণ হ্রাসের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো লবণ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে আসছে। জনস্বার্থে সরকারিভাবে প্রক্রিয়াজাত খাবারে সর্বোচ্চ লবণের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। সেই জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো জরুরি।
উল্লেখ্য, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১২ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ’পালিত হয়। এই সচেতনতা সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘অতিরিক্ত লবণ বর্জন করি, সুস্থ জীবন পড়ি’।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইদুল আরেফিন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিটি বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. ফারজানা আক্তার পারভিন, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির অসংক্রামক রোগ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ডা. মো. মাবুল হক খান, জাতীয় পুষ্টিসেবার ডেপুটি প্রোগ্রাম প্রোগ্রাম ম্যানেজার আজমেরী শারমিনসহ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শিক্ষার্থীদের নতুন এক বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত নতুন কিছু গড়ার সক্ষমতা রাখি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়।
সমাবর্তন ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা চাইলে আমাদের মতো করে এক নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি।’ তবে, তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই স্বপ্ন থাকা দরকার- কেমন পরিবেশ ও সমাজ তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সেই সম্পর্কে।
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পটভূমি স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে যে সভ্যতা চলছে তা একটি ধ্বংসাত্মক অর্থনীতির সভ্যতা।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে অর্থনীতি তৈরি করেছি তা মানুষের জন্য নয়, বরং ব্যবসার জন্য।’ তিনি উল্লেখ করেন, ব্যবসাকেন্দ্রিক এই সভ্যতা আত্মঘাতী এবং তা টিকবে না।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দীর্ঘদিন পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আনন্দিত। তিনি স্মরণ করেন, ১৯৭২ সালে চবিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
তিনি ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ এবং কীভাবে গ্রামীণ ব্যাংক চট্টগ্রামে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের সহায়তা করতে গঠিত হয়েছিল তা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের জন্ম হয়েছিল চবির অর্থনীতি বিভাগে।
অনুষ্ঠানে, চবি কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ইউনূসকে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্য সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার (ডি লিট) উপাধিতে ভূষিত করে।
চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার অধ্যাপক ইউনূসের হাতে ডি লিট সনদ তুলে দেন।
সমাবর্তনে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফয়েজসহ অন্যান্যরাও বক্তব্য রাখেন।
চবি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
চবি আজ দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সমাবর্তনের আয়োজন করে, যেখানে ২২,৫৮৬ জন শিক্ষার্থীকে সনদ প্রদান করা হয়।
দাবি আদায় না-হওয়া পর্যন্ত রাজপথে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে কাকরাইল মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান করছেন।
বুধবার (১৪ মে) বিকাল সাড়ে তিনটার সময় এই ঘোষণা দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বলেন, আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো ঘাতক পুলিশের বিচার করতে হবে।
এসময় জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, ‘সরকারের এই কর্মকাণ্ডে আমরা মর্মাহত। আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর চালানো হামলায় শতাধিক আহত হয়েছেন। পুলিশের এই হামলার বিচার করতে হবে।’
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা, ‘জেগেছে রে জেগেছে, জবিয়ান জেগেছে’; ‘আমার ভাই অনাহারে যমুনা কি করে’; ‘এসেছি যমুনায় যাবো না খালি হাতে’; ‘আমার ভাই আহত কেন ইন্টেরিম জবাব চাই’ এসব স্লোগান দেন।
এদিন বিকাল ৩টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শেদ উপস্থিন হন।
এদিন, বেলা ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চ শুরু করেন জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এতে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এই ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।
লং মার্চটি মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের ক্রসিং মোড়ে গেলে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, গরম পানি নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন, সহকারী প্রক্টর নাইম সিদ্দিকি, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমন প্রমুখ।
পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসে গুরুতর আহত হয়ে অন্তত ৩০ জন জবি শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘আমার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমার সহকারী প্রক্টরের ওপরও পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচারণ করেছে। এর বিচার না-হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।’
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসিতে যান। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হলো—জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের সকল জেলার সকল থানা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সকল থানায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে চালু হচ্ছে অনলাইন জিডি সেবা।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার আলোকে পুলিশি সেবা সহজীকরণের অংশ হিসেবে থানায় না এসে ঘরে বসেই সকল ধরনের জিডি অনলাইনে করার সুবিধা চালু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে গত ১৫ এপ্রিল ২০২৫ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল থানা এবং চাঁদপুর জেলা পুলিশের সকল থানায় অনলাইন জিডি সেবা চালু হয়েছে।
ইতোপূর্বে অনলাইনে শুধুমাত্র হারানো এবং প্রাপ্তি সংক্রান্ত জিডি করা যেত। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রেঞ্জ ও মেট্রোতেও অনলাইন জিডি সেবা চালু হবে।
অনলাইন জিডি সেবা পেতে গুগল প্লে স্টোর থেকে 'অনলাইন জিডি' অ্যাপ ডাউনলোডের পর রেজিস্ট্রেশন করে এ সেবা পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে একাধিকবার রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। রেজিস্ট্রেশন অথবা অনলাইন জিডি করতে কোনো ধরনের অসুবিধা হলে ০১৩২০০০১৪২৮ হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। হটলাইন নম্বরটি ২৪ ঘণ্টা চালু আছে।
বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা দ্রুততম সময়ে ও সহজে পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা ওই মামলায় ৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ থেকে খালাস চেয়ে করা আপিল আবেদনও শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত।
বুধবার (১৪ মে) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জোবাইদা রহমানের আইনজীবী কায়সার কামাল। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জোবাইদা রহমানকে জামিন দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে, গতকাল (মঙ্গলবার) এই আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে ৫৮৭ দিনের বিলম্ব মার্জনা চেয়ে জোবাইদা রহমানের করা আবেদন মঞ্জুর করেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। একইসঙ্গে আপিল দায়েরের অনুমতি দেওয়া হয়। পরে গতকালই এই মামলায় খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করা হয়। এই আপিলের সঙ্গে জামিনের আবেদনও করেন জোবাইদা রহমান।
আদালতে জোবাইদা রহমানের পক্ষে আজ (বুধবার) শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহাজান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে আইনজীবী আসিফ হাসান শুনানি করেন।
পরে আইনজীবী কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। এ মামলার আপিল শুনানির জন্য যাবতীয় নথিও তলব করা হয়েছে।’
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। পরের বছর তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
পরে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট করা এই মামলার রায় দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান। ওই রায়ে তারেক রহমানকে ৯ বছর কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
পরে এই মামলায় জোবাইদা রহমানের সাজা স্থগিত করে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে সাজা স্থগিত চেয়ে জুবাইদা রহমানের করা আবেদন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলায় তাকে দেওয়া দণ্ডাদেশ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন জুবাইদা রহমান। এরপর থেকে লন্ডনেই ছিলেন তিনি।
সেখান থেকে ৬ মে শাশুড়ি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৭ বছর পর দেশে ফেরেন জুবাইদা রহমান।
দেশে ফিরে আপিল করার জন্য ৫৮৭ দিন বিলম্ব মার্জনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। আবেদনটি মঙ্গলবার কার্যতালিকায় উঠলে সেটি মঞ্জুর করেন আদালত।
ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদানের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করেছে।
আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাঁকে এই ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে চবি উপাচার্য ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার অধ্যাপক ইউনূসের হাতে ডি লিট ডিগ্রির সনদ তুলে দেন।
এ সময় চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চললেও কূটনৈতিক উত্তেজনা এখনো থামেনি। এবার পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় এক কূটনীতিককে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করেছে ইসলামাবাদ। কূটনীতির ভাষায় ‘পারসোনা নন গ্রাটা’র অর্থ হচ্ছে ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’। ওই কূটনীতিককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসলামাবাদ থেকে এএফপি এই খবর জানায়।
এদিকে বুধবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এক প্রতিবেদনে ওই কূটনীতিকের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিধিবহির্ভূত কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের এক কর্মীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত জানাতে গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল।
এর আগে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ওই কর্মকর্তা ভারতে তাঁর সরকারি অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন। তাই তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চার দিনের সামরিক সংঘাতের পর চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই দুই প্রতিবেশী দেশ আবারও পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিল।
আবাসন ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে যাত্রার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এবং জল-কামান নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৪ মে) দুপুর পৌঁনে ১২টার দিকে পূর্বঘোষিত ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি অনুযায়ী সেগুনবাগিচার কাকরাইল মোড়ে পৌঁছালে শিক্ষার্থী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে।
কাঁদানে গ্যাসে আহত শিক্ষার্থী সামিউল রহমান বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক দাবির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। আমার উপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে।’
এর আগে, আজ (বুধবার) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে যমুনা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন জবি শিক্ষার্থীরা। সোয়া ১২টার দিকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট মোড়ে পৌঁছালে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। তবে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সামনে এগিয়ে যান।
তার আগে, গতকাল (মঙ্গলবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে জবির বাজেট বৃদ্ধি ও আবাসন সংকট নিরসন বিষয়ে আলোচনা হলেও দাবি মানা হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর ‘জবি ঐক্য’ নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নতুন এক প্লাটফর্ম থেকে তিন দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা অভিমুখে লং মার্চের ঘোষণা দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো—আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, জবির ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে করা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।
আন্দোলনে উপস্থিত রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোশাররাফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলাল হুসাইন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল, সদস্যসচিব সামসুল আরেফিন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আসাদুল ইসলাম, সেক্রেটারি মো. রিয়াজুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সভাপতি আব্দুল ওয়াহিদ, সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আকাশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি একে এম রাকিব সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বন্দরে উন্নীত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বের খ্যাতিসম্পন্ন বন্দর ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার চট্টগ্রাম সফরের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বন্দরের সক্ষমতা সম্পর্কে তাঁর কাছে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ।’
তিনি বলেন, ‘যদি সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হয়, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলাতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরই আমাদের আশা। এটি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। কিন্তু যদি হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়, কোনো ডাক্তারই তা আর ভালো করতে পারে না। তাই একে বিশ্বমানের করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বন্দর ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বৈশ্বিক পর্যায়ের শীর্ষ সংস্থাগুলোকে আগেও ডাকা হয়েছিল, কিন্তু কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই হৃৎপিণ্ডকে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এজন্য আমি নেপাল ও ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) কথা বলেছি। যদি তারা এতে যুক্ত হয়, তারা উপকৃত হবে, আমরাও হবো। যারা যুক্ত হবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে।’
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নিজের শৈশবস্মৃতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সফরের জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম। চট্টগ্রাম বন্দর আমার জন্য নতুন কিছু নয়। আমি শৈশব থেকেই এর সঙ্গে পরিচিত। এটি অনেক বদলেছে, তবে দুঃখের বিষয় হলো পরিবর্তন ধীর গতির। আমি যখন সুযোগ পেলাম, তখন থেকেই ভেবেছি কী করা যায়।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে, আর আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। কেউ গুরুত্ব দেয় না। এজন্য আমি পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছি। আমি বলেছি বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব বিশ্বের শীর্ষ অপারেটরদের হাতে তুলে দিতে। আশা করি সবাই একদিন বুঝবে।’
নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রধান উপদেষ্টার বন্দর উন্নয়নের আগ্রহের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আশেপাশে একাধিক টার্মিনাল নির্মাণ কনটেইনার জট কমাতে সাহায্য করবে। ‘আমি আশা করি আগামী ছয় মাসের মধ্যেই আপনি পরিবর্তন দেখতে পাবেন,’ বলেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বন্দর আধুনিকায়ন করার বিকল্প নেই।’
তিনি জানান, বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য এবং তার ৯৮ শতাংশ নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দিয়ে সম্পন্ন হয়।
মনিরুজ্জামান বলেন, প্রাকৃতিক কারণে ২০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। এ কারণে বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ সকালে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেছেন।
এর আগে তিনি আজ সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম পৌঁছান। চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনের পাশাপাশি তিনি আজ সারাদিন বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ।
বুধবার (১৪ মে) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ মনসুর ইউএনবিকে জানান, ঘটনার পরপরই শাহবাগ থানার বেশ কয়েকটি টিম দুর্বৃত্তদের আটকের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। পরে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ওই তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে ওই তিনজন সাম্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তবে তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করেননি ওসি। এ ছাড়া, পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
গতকাল (মঙ্গলবার) দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন সাম্য।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঢাবি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এ সময় অন্য একটি বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি শাহরিয়ারকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।