অবশেষে ফুরালো প্রতীক্ষার প্রহর। দ্বিতীয় দফার চেষ্টায় সম্ভব হল গভীর সাগর থেকে পাইপলাইনে ডিজেল পরিবহন। গত নভেম্বরে ক্রুড অয়েল কমিশনিং সফল হওয়ার পর এবার ডিজেল কমিশনিং সফলভাবে সম্পন্ন হওয়াকে বিশেষ অর্জন হিসেবে দাবি করছেন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে তিনটায় গভীর সাগরে অপেক্ষমাণ মাদার ভেসেল এমটি জেগ অপর্ণা থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারির মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংকে ডিজেল পাম্প করা শুরু হয়।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ লোকমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, জাহাজটি থেকে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল পাম্প করা হবে। ডিজেলবাহী এই মাদার ভেসেল থেকে দুই দিনের মধ্যেই তেল খালাস শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগে গত জুলাইয়ে ‘এমটি হরে’ নামের একটি তেলবাহী জাহাজ থেকে প্রথমবারের মতো এসপিএম দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানি তেল সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পাইপলাইনে ত্রুটি ধরা পড়ায় প্রথম দফার সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
ওই ত্রুটি সারিয়ে দ্বিতীয় দফায় জ্বালানি তেল সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করা হয় যার সফলতা এল গতকাল।
পাইপলাইনে এভাবে জ্বালানি তেল সরবরাহকে পাইপলাইনের কমিশনিং বলছেন ইআরএল কর্মকর্তারা।
তবে এবার জাহাজ থেকে মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংকে তেল নিতে কোনো ত্রুটি ধরা পড়েনি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গত ৩০ নভেম্বর ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইনের’ একটি পাইপ দিয়ে প্রায় ৮২ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত (ক্রুড) তেল পাম্পিং শুরু হয়। এই দুটি পাইপলাইন দিয়ে জ্বালানি তেল পরিবহনের মাধ্যমে এসপিএম প্রকল্পটির কমিশনিং হলো।
ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান বলেন, ‘গত ৩০ নভেম্বরে ক্রুড অয়েলের পাইপলাইন কমিশনিং হয়েছে। আর আজকে (গতকাল) ডিজেলের পাইপলাইনের কমিশনিং হলো।’
ইস্টার্ন রিফাইনারির কর্মকর্তারা জানান, সাগরে ভাসমান এই মুরিং থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংক টার্মিনালে মঙ্গলবার দুপুর থেকে ডিজেল পরিবহন শুরু হয়েছে। কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপকূল থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার গভীর সাগরে স্থাপন করা হয়েছে এসপিএম।
কর্মকর্তারা আরও জানান, পরবর্তীতে মহেশখালীর স্টোরেজ ট্যাংক টার্মিনাল থেকে পাম্প করে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পাঠানো হবে ডিজেল। এই অংশটিতে স্থাপন করা হয়েছে ৯৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুটি পাইপলাইন। এই পাইপলাইনগুলোর ব্যাস ১৮ ইঞ্চি।
মূলত পরিশোধিত ডিজেল এবং ক্রুড অয়েল পরিবহন করা হবে এই পাইপলাইন দিয়ে।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ লোকমান বলেন, 'বিভিন্ন টেকনিক্যাল পরীক্ষা শেষে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ক্রুড অয়েল পৌঁছাতে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ সময় লাগতে পারে।’
দেশের জ্বালানি তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য এই পাইপলাইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটি প্রায় ১১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের (দুটি পাইপলাইন)। এর মধ্যে ৭৪ কিলোমিটার লম্বা দুটি পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে সাগরের তলদেশে।
এই প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে বিপিসি, বাংলাদেশ সরকার ও চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক।
প্রকল্পের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হলে বঙ্গোপসাগরের বহির্নোঙর থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত লাইটার জাহাজের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহন কমে যাবে। এতে করে প্রতিবছর সাশ্রয় হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
মুসলিম বিশ্বকে সহায়তা করতে আরও বেশি সামাজিক ব্যবসায় এগিয়ে আসতে ইসলামিক এনজিওগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার (৬ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন এনজিও নেতাদের একটি দলের সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের বিশ্বে আমরা নারীদের গুরুত্ব দিই, স্বাস্থ্যসেবার ওপরও জোর দিই। আপনি যদি দরিদ্র হন, তাহলে আপনার স্বাস্থ্যসেবা সমস্যা থাকবে। আমরা স্বাস্থ্যসেবাকে দরিদ্রদের সহায়তার একটি মাধ্যম হিসেবে দেখেছি।’
তিনি বলেন, এই সহায়তা কার্যকরভাবে চালিয়ে নেওয়ার একটি ভালো উপায় হচ্ছে সামাজিক ব্যবসা।
এ সময়ে বিশ্বের তরুণদের সামাজিক ব্যবসা গ্রহণ করে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, সভায় উপস্থিত এনজিও নেতারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ড. ইউনূস যে সামাজিক ব্যবসার প্রচার চালিয়েছেন, তা তাদের নিজ নিজ দেশে একই ধরনের উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করেছে।
সভায় বিদেশি প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, তুরস্কের দ্য ইউনিয়ন অব এনজিওস অব দ্য ইসলামিক ওয়ার্ল্ডের (ইউএনআইডব্লিউ) সেক্রেটারি জেনারেল আইয়ুপ আকবাল, অ্যাসেম্বলি অব টার্কিশ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন্সের (এটিএএ) প্রতিনিধি মুহাম্মদ হুসেইন আক্তা, মালয়েশিয়ার ওয়াদাহ ও ইউএনআইডব্লিউয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ফাওয়াজ বিন হাসবুল্লাহ, পাকিস্তানের আল-খিদমত ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএনআইডব্লিউয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুস শাকুর এবং ইন্দোনেশিয়ার ইউএনআইডব্লিউ অডিটিং বোর্ডের সদস্য ড. সালামুন বশরি।
এছাড়া অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিআইআইটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর মাহবুব আহমেদ, এসএসডব্লিউএবির চেয়ারম্যান ও ইউএনআইডব্লিউর হাই অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য এস এম রাশেদুজ্জামান, কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইউএনআইডব্লিউ কাউন্সিল মেম্বর ড. আলী আফজাল এবং বিআইআইটির মহাপরিচালক ও আইআইআইটির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. এম আবদুল আজিজ উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচির কারণে স্থবির হয়ে পড়ে ঢাকা শহর।
এদিন রাজধানী ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা, খুলনা, রংপুর, সাভার, সিলেট, দিনাপজুর গাজীপুরসহ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাগুলো উত্তাল হয়ে উঠে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে সারা দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরের দিন সোমবার (৮ জুলাই) এ কর্মসূচি চলবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
৭ জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আগামীকাল বেলা সাড়ে তিনটা থেকে ব্লকেড শুরু হবে। এর আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে জমায়েত হবেন। কোনো আবাসিক হলে বাধা দেওয়া হলে আমাদের জানাবেন। আমরা সম্মিলিতভাবে সেই হল ঘেরাও করব।’
৮ জুলাই থেকে এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হবে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, সব গ্রেডে অযৌক্তিক কোটা বাতিল করে ন্যূনতম কোটা রাখতে হবে। পাশাপাশি সংসদে আইন পাস করে কোটা সমন্নয় করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা নাতিপুতি-পৌষ্য কোটাকে অযৌক্তিক কোটা মনে করছি। দাবি মেনে নিলে আজকেই আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাব।
আগামীকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়ে নাহিদ বলেন, দবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে এবং ফার্মগেট পর্যন্ত অবরোধ করা হবে।
এদিন সন্ধ্যায় আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে আলোচনা করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আলোচনা শেষে ফিরে এসে হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর একদল প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করতে তাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।’
পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি অনুযায়ী রোববার (৭ জুন) রাজধানী ঢাকার আটটি স্থানে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয়ভাবে শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়। এছাড়া সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, চানখাঁরপুল ও আগারগাঁওয়েও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির অংশ নিতে বেলা আড়াইটার পর বিভিন্ন আবাসিক হল ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন। বেলা সোয়া তিনটার মধ্যে গ্রন্থাগারের সামনে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শুরু হয় মিছিল-স্লোগান। পরে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিকেল চারটার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ সময় শাহবাগ মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে বোরহান উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থীরা বিকেলে রাজধানীর চানখাঁরপুল মোড় অবরোধ করেন। বেলা পৌনে দুইটার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন ঢাকা কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন। এছাড়া আগারগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ করেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
৭ জুলাই কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সোয়া চার ঘণ্টা রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন। রাত আটটার দিকে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ শুরু করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চার দফা দাবিতে বাংলা ব¬কেড কর্মসূচি পালন করেন। বিকেল চারটায় নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে মিছিলের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির শুরু হয়। তবে পুলিশের বাধার মুখে মিছিলের গন্তব্য পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীরা নগরীর মুরাদপুর হয়ে বহদ্দারহাটের উড়ালসড়ক পর্যন্ত যেতে চাইলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেন।
কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে পথনাটক, কবিতা, গান পরিবেশন করে ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ জানায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সোমবার (৮ জুলাই) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ও বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
এদিন বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন এবং জাতীয় পতাকা নিয়ে জড়ো হন শতাধিক শিক্ষার্থী। পরে তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক হয়ে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এদিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। বৃষ্টির মধ্যে দুপুর ১২টা থেকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
৭ জুলাই বিকেল চারটায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ি অংশে অবস্থান নেন। ৪৫ মিনিট ধরে অবরোধের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০ টা থেকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে জড়ো হতে থাকেন। পরে বেলা ১১টায় দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। আধা ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কয়েকটি সড়কে তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এছাড়াও বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পৌনে সাতটা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাথালিয়ায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে যানবাহন আটকা পড়ে।
দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মা জানিয়ে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা রাজধানীর আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন। সোয়া ৬টার দিকে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এ কর্মসূচির কারণে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে যায়। পরে এক দফা দাবি ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নেন তারা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো তিনজন বাংলাদেশি জঙ্গি নয়, বরং তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল।
রবিবার (৬ জুলাই) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। মালয়েশিয়া থেকে যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের সঙ্গেও জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধানের বিবৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিদের জঙ্গি বলেছে কিনা সে ব্যাপারে আমার জানা নেই। মালয়েশিয়া থেকে অফিশিয়ালি আমাদের কিছু জানানো হয়নি। ইতোমধ্যে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে।’
গত ১০ মাসে দেশে জঙ্গিবাদের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ দূর করা গেছে বলে জানান তিনি।
এর বাইরে বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গো ভিলেজ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরের নানা ঝামেলার কারণে এ কয়দিন রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে যারা বিদেশে কৃষিপণ্য রপ্তানি করে তারা বিপাকে পড়েছেন।
নতুন টার্মিনালে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে হিমাগার সুবিধা রাখা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শাক-সবজির মতো কৃষিপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে এবং পণ্য লোডিংয়ের আগে হিমাগার সুবিধা বিস্তৃত করতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।
এ সময় এক পণ্যের ওপর নির্ভর না করে রপ্তানি বাণিজ্য বিস্তৃত করার ওপর জোর দেন উপদেষ্টা।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাসনিক, আইনি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে গণমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলেও অন্তর্বর্তী সরকার এসব বিষয়ে ন্যূনতম হস্তক্ষেপ করেনি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে ‘গণমাধ্যম সংস্কার প্রতিবেদন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের সাংবাদিকতা আগে অনেক বেশি সরকার নিয়ন্ত্রিত ছিল। আমরা সেই জায়গা থেকে বের হতে চাচ্ছি। যেন সবাই ইথিক্যাল গ্রাউন্ড থেকে সাংবাদিকতা করতে পারে, সব করতে পারছি তেমন না, তবে অনেক কিছুই করা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টটা আমাদের মাথার ওপর একদম একটা খড়্গ হিসেবে ছিল। যেটা ব্যবহার করে একটা হিসাবে এসেছে—সাত হাজারের বেশি কেস করা হয়েছে। মেইন টার্গেট ছিল বাক্স্বাধীনতাকে ব্যাহত করা। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আমলে মানুষ মেইন স্ট্রিম মিডিয়ায় কথা বলতে পারত না অনেক ক্ষেত্রেই। ফেসবুক বা ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়াকে সবার কণ্ঠস্বরকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা যন্ত্র বা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে। সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আসে। আমরা প্রথম যে কাজটা করেছি, এই পুরো আইনটাকে বাদ দিয়েছি।’
নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, ‘নতুন আইন করার ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যেকটা গ্রুপের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই মতামত দিয়েছেন। আমরা মনে করি না, কেউ বলতে পারবে—এটার মাধ্যমে কারও বাক্স্বাধীনতায় আমরা আক্রমণ করেছি। শুধু এই আইন না, আরও অনেকভাবেই বাংলাদেশে মানুষের মুখ বন্ধ করা হয়েছে।’
আগে ডিজিএফআইসহ গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছিল মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, ‘আগে যেটা ছিল গোপন কোনো সংস্থাকে দিয়ে একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে আপনার মুখটাকে বন্ধ করা। আমরা এটা বন্ধ করতে পেরেছি। আমাদের তরফ থেকে বারবার বলা হয়েছে, কোনো ধরনের কোনো সিক্রেট এজেন্সি, কোনো ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি যেন কোনো সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিককে একটা যেন ফোন না করে।’
গণমাধ্যমকর্মীদের এ নিয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ ভুল তথ্য দেয়, অপতথ্য দেয়, সরকারের একটা মেকানিজম আছে; সরকার সেটা দেখবে। আমরা বলব, যে এই নিউজটা ভুল আছে। আপনি এই জিনিসটা ঠিকমতো দিচ্ছেন না।’
আওয়ামী লীগ সরকারে আমলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আগে পিএম অফিসের একজন ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মিনিস্টার ছিলেন। তার জন্য এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। আমরা তো সে জায়গায় যেতে চাই না। আমরা চাই বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাক। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ, লিগ্যাল এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে চাপ দেওয়া এই তিনটি জায়গায় এই সরকার ন্যূনতম কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।’
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, কমিশনের কাজে অসম্পূর্ণতা থাকতে পারে—সেগুলো আলোচনা হবে, পর্যালোচনা হবে। তারপর বাস্তবায়নের চেষ্টা হবে। আগে গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই জায়গায় যেতে যতটুকু করা প্রয়োজন তার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) সভাপতি রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, ‘গত সরকারের আমলে সরকারের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা, দলবাজির কারণে সাংবাদিকতার বর্তমান হাল তৈরি হয়েছে। কমিশনের রিপোর্টের সঙ্গে শতভাগ একমত না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে একমত। সাংবাদিকদের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে যথাযথ সাংবাদিকতা আশা করা যায় না।’
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস যোগাবে।
তিনি পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে আজ এ কথা বলেন।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পবিত্র আশুরা’র শোকাবহ এই দিনে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদতবরণকারী সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
তিনি বলেন, ইসলাম সত্য, ন্যায় এবং শান্তির ধর্ম। ইসলামের এই সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তাঁর পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচরবৃন্দ বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অত্যাচারীর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইসলামের বীর সৈনিকদের এই আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনা ছাড়াও পবিত্র আশুরা ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ একটি দিন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমগ্র পৃথিবী সৃষ্টিসহ নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এদিনে সংঘটিত হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দুটি রোজা রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
এই মহিমান্বিত দিনটির তাৎপর্য ধারণ করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে সকলের প্রতি বেশি বেশি নেক আমল করার আহবান জানান। তিনি সমাজে সাম্য, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পবিত্র আশুরার এই দিনে তিনি মুসলিম উম্মার ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।
সাম্প্রতিক নিরাপত্তা অভিযানে ‘চরমপন্থি উগ্রবাদী’ আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার (৫ জুলাই) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমওএফএ) বলেছে, ‘সন্ত্রাস-সংক্রান্ত তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুরে তাৎক্ষণিকভাবে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পরিচয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য চেয়েছে।’
বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গ্রেপ্তার বা আটককৃতদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনার হালনাগাদ তথ্যে বাংলাদেশ জানিয়েছে, বাকি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে বা তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর (ডিপোর্টেশন) প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ সরকার ঘটনাপ্রবাহ ‘ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছে এবং কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন কাজ করে যাবে।
মালয়েশিয়ার সরকার শুক্রবার জানায়, মালয়েশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি যে বাংলাদেশি চরমপন্থি গোষ্ঠী (জিএমআরবি) ভেঙে দিয়েছে, তা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জন্য তহবিল সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগে লিপ্ত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৬ জন সন্দেহভাজনের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ধারা ৬এ অনুযায়ী অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৬ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০১২ (এসওএসএমএ)-এর আওতায় তদন্ত ও বিচারের জন্য আটক রাখা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া ৩৬ বাংলাদেশির বিষয়ে দেশটি ইতোমধ্যে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বলে জানিয়ে বাংলাদেশ বলেছে, তারা এখন মালয়েশিয়ার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার ৩৬ জন বাংলাদেশির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছি এবং এখন তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাই করবে, তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
‘যদি তারা জড়িত থাকে, তাহলে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে,’ বলেন উপদেষ্টা হোসেন। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এখনো কিছুটা ‘ফ্লুইড’ বা অস্থির।
এই ঘটনা ভবিষ্যতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মালয়েশিয়ান ভিসা ইস্যুতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কিনা, প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, যেকোনো নেতিবাচক ঘটনা ভিসা ইস্যুতে প্রভাব ফেলতে পারে, এবং তারা একথা বলতে পারেন না যে এর কোনো প্রভাবই পড়বে না।
তবে তিনি বলেন, যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে প্রভাব কমানো সম্ভব।
মালয়েশিয়ার পুলিশ মহাপরিদর্শক তান শ্রী মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল বলেন, এই গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছ থেকে বার্ষিক সদস্যপদ ফি হিসেবে জনপ্রতি ৫০০ রিংগিত এবং আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী অন্যান্য স্বেচ্ছা অনুদান গ্রহণ করে তহবিল সংগ্রহ করত।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ছিল ১০০ থেকে ১৫০ জন, যারা সবাই মালয়েশিয়ায় কারখানা, নির্মাণকাজ ও পেট্রোল পাম্পে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক।
তিনি বলেন, সংগৃহীত অর্থ ই-ওয়ালেট অ্যাপ এবং আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সেবার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হতো। গোষ্ঠীটি নতুন সদস্য নিয়োগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করত।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, পুলিশ এখনো তদন্ত করছে ঠিক কত টাকা আইএস নেটওয়ার্কে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, গোষ্ঠীটি সোশ্যাল মিডিয়া ও মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে আইএস-এর প্রচারণা ছড়াত, ‘বাইআহ’ (আনুগত্যের শপথ) সম্পন্ন করত এবং গোপন ধর্মীয় ক্লাস ও সদস্য সভার মতো কার্যক্রম আয়োজন করত।
তিনি বলেন, ‘যারা অনলাইনে আনুগত্যের শপথ করত, তাদেরকে সেল নেতা বানানো হতো, যাতে তারা গোষ্ঠীর প্রভাব আরও বাড়াতে পারে। নতুন সদস্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল ধাপে ধাপে—স্ক্রিনিং থেকে শুরু করে অভিজাত দলের গঠন পর্যন্ত।’
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই গোষ্ঠীতে কোনো মালয়েশিয়ান নাগরিকের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে এই গোষ্ঠী মালয়েশিয়ায় প্রায় এক বছর ধরে সক্রিয় ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও গোষ্ঠীটি মালয়েশিয়ায় কোনো হামলার পরিকল্পনা করছিল না, তবে তারা দেশটিকে তহবিল সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল। তদন্তে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ও ইন্টারপোল সহায়তা করছে।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, মালয়েশিয়ান আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে আইএস মতাদর্শ ছড়াতে থাকা বাংলাদেশিদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথমে গোষ্ঠীটির কার্যক্রম শনাক্ত করা হয়।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের শুরুতে কয়েকদিন ধরেই কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়।
৬ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ওই দিন অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সারা বাংলাদেশ অবরোধ করার পরিকল্পনা থেকেই সেদিন এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। একই দাবিতে এইদিন সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
২০২৪ সালের ৬ জুলাই আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় এক ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন। পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সেখান থেকে সরে যান তারা। এরপর শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়।
৬ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি ছিল শুধুমাত্র বিক্ষোভ মিছিল। ৪ জুলাই কোটা সংক্রান্ত হাইকোর্টের শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়। এ রায়ের ক্ষেত্রে আদালতের দীর্ঘসূত্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছিল। আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে তা অবজ্ঞার চোখে দেখা হচ্ছিল। এছাড়াও শাহবাগে অবরোধ চলাকালে গাড়িগুলো পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। তাতে আন্দোলনের প্রভাব প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ হচ্ছিল না। তখন আন্দোলনকারীরা চিন্তা করেন আরেকটু বড় পরিসরে কিছু করতে হবে। এমন চিন্তা থেকে ‘বাংলা ব¬কেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যুক্ত হয়ে যান।
অবরোধ তুলে নিয়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আগামীকাল বিকাল তিনটা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, শাহবাগ ও ঢাকা শহরের সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘সরকার মনে করছে আমরা দুই-তিনদিন রাস্তা অবরোধ করে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে যাব। সরকারের এই ধারণা যে ভুল সেটি আমাদের প্রমাণ করে দিতে হবে।
আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি প্রয়োজনে আমরা হরতাল দিতে বাধ্য হব। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী যেখানে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, কোটা থাকবে না, সেই কোটা এখন কেন ফিরে আসল এর জবাব আমরা চাই। শুধু প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতেই নয় তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও কোটার বৈষম্য দূর করতে হবে।’
ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।’
‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণার আগের রাতে কার্জন হলের হোয়াইট হাউসের সিঁড়িতে বসে আন্দোলনের সংগঠকরা বৈঠক করে ‘বাংলা ব্লকেড’ নাম চূড়ান্ত করেন। এই কর্মসূচি কীভাবে সফল করা যায়, কোন কোন পয়েন্টে কোন কোন প্রতিষ্ঠান থাকবে, কোন পয়েন্টে কোন হল থাকবে, তা নিয়েও সেখানে আলোচনা হয়। বৈঠক থেকে প্রতিটি হলের প্রতিনিধিদের দায়িত্বও ভাগ করা হয়।
ঢাকা ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত-সায়েন্সল্যাবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টে এবং বোরহানুদ্দীন কলেজের শিক্ষর্থীরা চানখাঁরপুলে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবে। এদিকে আন্দোলনকারীরা চিন্তা করেন যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে তাদের সবাইকে শাহবাগে নিয়ে আসার প্রয়োজন নেই।
ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমাগমও যথেষ্ট বড় হচ্ছিল।
ওইদিন বিকাল সোয়া তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের শ্যাডো ও মল চত্বর প্রদক্ষিণ করে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনে দিয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর, টিএসসি ও বকশী বাজার হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে পলাশী ও আজিমপুর এলাকা ঘুরে ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে বিক্ষোভ করেন।
এর আগেই আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে মূল মিছিল আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মূল মিছিলটি চারুকলা অনুষদের সামনে আসতেই জাদুঘরের সামনে অপেক্ষমান শিক্ষার্থীরা ৪টা ৩৭ মিনিটে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এরপর তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ৫০ মিনিট এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এর পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর, কুষ্টিয়া ও চট্টগ্রামে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করেন।
২০২৪ সালের ৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মোশাররফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
ওইদিন রাজধানীর তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুই ঘণ্টা পর বিকেল পাঁচটায় শিক্ষার্থীরা তাঁতিবাজার মোড় ত্যাগ করে মিছিল নিয়ে জবি ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’—এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন।
এইদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন উপেক্ষা করে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। বিক্ষোভ চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
এদিকে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী তারা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
৬ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। অবরোধ চলাকালে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে অবরোধ চালিয়ে যান। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনসংলগ্ন বটতলা থেকে পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো নগরীর সড়ক অবরোধ করেন। এইদিন বিকাল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনে এসে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে অবস্থান নেন। এর সাথে যুক্ত হন চট্টগ্রামের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টায় রংপুরের মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। দেড় ঘণ্টা অবরোধ শেষে দুপুর পৌনে ২টার দিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, আগামী সপ্তাহে ‘গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে’। তিনি ‘গাজা চুক্তি নিয়ে আশাবাদী বলে মন্তব্য করেছেন। যদিও পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
মরিস্টউন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
এয়ার ফোর্স ওয়ানে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ব্যাপারে তিনি কতটা আশাবাদী- সাংবাদিকরা একথা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, আমি খুবই আশাবাদী।
তবে তিনি এও বলেন, ‘এটি প্রতিদিন বা দিনে দিনে পরিবর্তিত হতে পারে।’
প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাস ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে- সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি ভালো। তারা আমাকে এ বিষয়ে ব্রিফ বা অবহিত করেনি। আমাদের এটি শেষ করতে হবে। গাজা সম্পর্কে আমাদের কিছু করতে হবে।’
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা মারা গেছেন। শনিবার (০৫ জুলাই) সকাল ৯টায় রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা রেখে গেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তার মরদেহ ওই হাসপাতালে রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মেয়ে দেশে ফিরলে জানাজার সময় নির্ধারণ করা হবে।
এ টি এম শামসুল হুদা সিইসি হিসেবে ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করেন। এর আগে তিনি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। পরে দেশ স্বাধীন হলে তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ২০০০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন।
চাকরি জীবনে তিনি বাগেরহাটে মহকুমা প্রশাসক (সাব ডিভিশনাল অফিসার), পানি সম্পদ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সাথে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং এটি উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
গতকাল (শুক্রবার) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যৌথভাবে রংপুর, ডিমলা ও সিলেটে ৩৪ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে টাঙ্গাইলে ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উল্লেখ্য, আজ ভোর ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সাতক্ষীরায় ১২৯ মিলিমিটার বা মিমি।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।
ঢাকায় বাতাসের গতি দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে।
ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ১৬ মিনিটে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে চালু হয়েছে নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘এ-চালান’। এর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্ট শুল্ক ও কর রিয়েল-টাইমে সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া যাবে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) এনবিআর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগ ও এনবিআরের যৌথ উদ্যোগে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই চালু হওয়া এ ব্যবস্থায় আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও তাদের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) এজেন্টরা এ-চালানের মাধ্যমে অনলাইনে সরাসরি শুল্ক-কর পরিশোধ করতে পারবেন।
এই সিস্টেমের মাধ্যমে এনবিআরের কাস্টমস সিস্টেম অ্যাসিকুডা ওয়ার্ল্ড এবং অর্থ বিভাগের আইবিএএস++ প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সফল প্রযুক্তিগত সংযুক্তি (ইন্টিগ্রেশন) সম্পন্ন হয়েছে। ফলে অফলাইন বা অনলাইন উভয় উপায়ে করদাতারা নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি সরকারি কোষাগারে অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন। এই অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি তহবিলে জমা হবে এবং রাজস্ব খাতে সরকারের তাৎক্ষণিক ব্যয় সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
আগে আটিজিএস পদ্ধতির মাধ্যমে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে শুল্ক-কর জমা দিলেও তা কোষাগারে পৌঁছাতে কয়েকদিন সময় লাগত, যার ফলে সরকারের আর্থিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হতো। নতুন ব্যবস্থায় সেই বিলম্ব দূর হয়ে ২৪ ঘণ্টা, সাত দিন যেকোনো স্থান থেকে অনলাইনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কর পরিশোধ ও পণ্য খালাস সম্ভব হবে।
এ-চালান সিস্টেমে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, নগদ, উপায়, রকেট, এমক্যাশ, ট্রাস্টপে ইত্যাদি মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট করা যাবে। পাশাপাশি, দেশের ৬১টি ব্যাংকের ১১ হাজার ৭০০ শাখা থেকে চেক ক্লিয়ারিং বা অ্যাকাউন্ট ডেবিটের মাধ্যমেও শুল্ক-কর জমা দেওয়া যাবে। পরিশোধ শেষে সিস্টেম জেনারেট করা রসিদ নম্বর দিয়েই বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাস করা যাবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ১ ও ২ জুলাই প্রশিক্ষণের পর ৩ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতিতে শুল্ক-কর আদায় শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী দিনে ৭৫টি বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে ১৩ কোটির বেশি টাকার রাজস্ব সরাসরি কোষাগারে জমা হয়।
এর আগে গত ২৩ এপ্রিল কমলাপুর আইসিডিতে এবং পরবর্তীতে পানগাঁও কাস্টম হাউসে এ পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানিয়েছে, আগামী ৭ জুলাই থেকে ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টমস স্টেশনেই এ-চালান সিস্টেম চালু হবে।
এনবিআর মনে করে, এই উদ্যোগ রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, পণ্য খালাসের গতি বাড়াবে এবং সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা নিয়ে আসবে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সড়কপথে মোট ১৭ হাজার ৯৫৭টি দুর্ঘটনায় ১৭ হাজার ৮২৬ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৭৭৮ জন। শুক্রবার রাজধানীর বিজয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা।
তিনি জানান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিসহ থ্রি হুইলার ধরনের বাহনে ৮ হাজার ৮১২টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৮১৫ এবং নিহত হয়েছেন ৭৯৫ জন। একই সঙ্গে ৩ হাজার ৭১৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৬২৩ জন আহত এবং ৬৭৩ জন নিহত হন। ৩ হাজার ৪০৪টি বাস দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৩১৮ জন আহত এবং ৮২৫ জন নিহত হয়েছেন এবং ২ হাজার ২৭টি ট্রাক-পিকআপ-লড়ি দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৭০ জন আহত এবং ৪৮৫ জন নিহত হয়েছেন।
সেভ দ্য রোড-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, মহাসচিব শান্তা ফারজানাসহ সংশ্লিষ্ট গবেষণা সেল সদস্যদের তত্ত্বাবধানে ১৭টি জাতীয় দৈনিক, ২২টি নিউজ পোর্টাল এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া তথ্য অনুসারে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী বলেন, সেভ দ্য রোড-এর দাবি অনুযায়ী প্রতি ৩ কিলোমিটারে পুলিশ বুথ বা ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন না করা ও হাইওয়ে পুলিশসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে সড়কপথে ৬ মাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ১১৮টি।
এতে ডাকাতদের হামলায় আহত হয়েছেন ১০৪ জন। এছাড়াও নারী শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটেছে ৬১৪টি। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২টি। যার অধিকাংশই থানা-পুলিশের শরণাপন্ন হয়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবীদের তথ্যে উঠে এসেছে।
নৌপথে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের দায়িত্ব অবহেলার সুযোগে অন্যান্য বছরের তুলনায় ডাকাতি বেড়েছে। রেলপথে মহাখালীতে দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া ইট-পাটকেল ও ছিনতাইকারীদের হামলায় ৪১ জনসহ মোট ৫৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত নৌপথে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬১৫টি। এতে আহত হয়েছেন ৪৫১ জন এবং নিহত হয়েছেন ১৪ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত রেলপথে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫২৬টি। এতে আহত হয়েছেন ১৮৪ জন এবং নিহত হয়েছেন ১৪ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুনের মধ্যে আকাশপথে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে অসুস্থ হয়েছেন ৩১৬ জন।
কোরবানির ঈদের পর থেকে বেড়েই চলেছে চালের দাম। পাশাপাশি সবজির দামও গত দুই সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী। তবে মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমতির দিকে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে ইলিশের ভরা মৌসুম এখন। তবুও ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে না সাধারণ ক্রেতারা। ঢাকার বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ কিনতে গুনতে হবে ২৬শ থেকে ২৮শ টাকা, যা প্রায় চার কেজি গরুর মাংসের সমান। তাই মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে ইলিশ। অন্যান্য মাছের দামও কিছুটা বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভরা মৌসুম হলেও এবার ইলিশের সরবরাহ কম। সাগরে বা নদীতে খুব বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে না। তাই ইলিশের দাম বাড়তি।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মোকামগুলোতেই চালের দাম বেড়েছে। চালকল মালিকরা ঈদের পর চালের দাম বাড়িয়েছেন। প্রতি বস্তা চালের দাম ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রতি কেজি চাল মানভেদে ২ থেকে ৮ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৮০ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৬ টাকা কেজিতে।
মোহাম্মদপুর বাজারের একজন চাল ব্যবসায়ী বলেন, নাজিরশাইল ছাড়া পাইজাম, বিআর-২৮, মিনিকেটের দাম কেজিপ্রতি ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে ৬৮ টাকা কেজি দরে পাইকারিতে যে মিনিকেট চাল কিনতাম, গতকাল শুক্রবার কিনেছি ৭৬ টাকা কেজি দরে।
এদিকে ছোট বাজারে ও পাড়ার মুদি দোকানে দাম আরেকটু বেশি। রামপুরা বাজারের চাল বিক্রেতা জুবায়ের বলেন, ঈদের পর থেকে দোকান খুলে যে চালই অর্ডার দিচ্ছি, তারই দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। দিনাজপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া সব মোকামে চালের দাম বাড়ছে।
বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধন্দুল ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাঁজর ১৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা এবং আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে যাওয়া বেসরকারি চাকরিজীবী বায়জিদ বলেন, বাজারে সবজির দাম কয়েকদিন ধরে বেড়েছে। আজও বাড়তি দামে সবজি কিনলাম। কিছুদিন আগেও সবজির দাম কম ছিল, কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে বলতে গেলে সবজি দাম বাড়তি যাচ্ছে।
সবজির দাম বৃদ্ধি বিষয়ে মিরপুর ৬ নাম্বার বাজারের সবজি বিক্রেতা জসিম বলেন, বেশ কিছু সবজির মৌসুম এখন প্রায় শেষ। যেসব সবজির মৌসুম শেষ হয়েছে সেগুলোর দাম বেড়েছে। মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে এসব সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। ফলে সবজি গুলোর দাম বেড়েছে। নতুন মৌসুমের সবজি উঠার আগ পর্যন্ত কিছুটা বাড়তি থাকবে।
রাজধানীর বাজারে ঈদের পর থেকে নিম্নমুখী ছিল মুরগির দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে প্রতি ডজন ডিমের দাম নেমেছে ১২০ টাকায়। বড় বড় বাজারে কিনলে ১১৫ টাকায়ও কেনা যাচ্ছে। তবে এ দাম ডিম উৎপাদনকারীর জন্য লোকসানের বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। বিপুল হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, অন্তত ১৪০ টাকা ডজন ডিমের দাম হলে খামারিদের কিছু লাভ হয়, এবার দাম খুব কমে তাদের লোকসান হচ্ছে।
এদিকে মুদি পণ্যগুলো দাম তেমন হেরফের হয়নি। তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি আগের দামে কেনা যাচ্ছে। কম দামে কেনা যাচ্ছে পেঁয়াজ, আলু, আদা, রসুনসহ অন্য নিত্যপণ্যও।