 
        				রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে এক মা ও তার ছেলেসহ চার যাত্রী মারা গেছেন।
মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ট্রেনটিতে আগুন দেয় দুর্বত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই দগ্ধ হয়ে চারজন মারা যান। এদের মধ্যে দুজন হলেন— নাদিয়া আক্তার পপি (৩৫) ও তার শিশুসন্তান ইয়াসিন (৩)। অন্য দুজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার পরিদর্শক মো. ফেরদৌস বলেন, তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ঘটনাস্থলেই চারজন মারা গেছেন। তাদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিহতদের মধ্যে নাদিয়া ও তার শিশুসন্তান ছাড়া অন্য দুজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। নাদিয়ার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়। তার বাবার নাম ফজলুর রহমান। তেজগাঁও তেজকুনিপাড়ায় স্বামী মিজানুর রহমানের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
 
                        দেশ এক ‘বিরাট সংকটে’ পড়েছে, যা থেকে উদ্ধারের ক্ষমতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই বলে মনে করছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি এও মনে করেন, এই সংকট থেকে উদ্ধারে এখন বিএনপিকেই ভূমিকা নিতে হবে।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘আমি বাস্তবতায় মনে করি, দেশ এক বিরাট সংকটের মধ্যে পড়েছে। এখন নির্ভর করবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাইয়েরা কী করেন।
এই সংকট থেকে যদি মনে করেন, এই সরকার জাতিকে উদ্ধার করবে… এই সরকারের সেই ক্ষমতাই নাই।’
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশমালা মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে দিয়েছে তা নিয়ে বিএনপি প্রবল আপত্তি তুলেছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সুপারিশমালাকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করেছে। সেখানে যে সকল বিষয়ে ভিন্নমত বা নোট ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনা আসেনি, তা অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সকল সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমরা একমত হতে পারছি না।’
সুপারিশমলায় সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, ওই আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। তবে কখন সেই ভোট হবে তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রবল মতবিরোধ রয়েছে।
জামায়াতসহ আটটি দল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেছে। তারা কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়ে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট দাবি করেছে।
এমন পরিস্থিতির কারণে দেশে সংকট তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘আমি বলি, আজ সমস্ত দায়িত্ব বিএনপির ওপরে। আমি বিএনপি করি না, বিএনপির সব প্রস্তাব মানিও না, বিএনপি সবচাইতে ভালো দল আমি তাও বলি না…এর চাইতেও ভালো হতে পারে।’
‘কিন্তু বর্তমান সময়ের জন্য এখন ‘রিলে রেইসের’ কাঠি বিএনপির হাতে। তাদের সেই ভূমিকা পালন করতে পারতে হবে।’
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ৫৩তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন মান্না।
দলটির প্রতিষ্ঠাতা আ স ম আবদুর রব অসুস্থ থাকার জন্য অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। তবে তার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সভায় অতিথির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের নেতা মান্না বলেন, ‘অনেকে জিজ্ঞাসা করেন আমাকে, ওরা (জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন) এরকম কাজ করল কেন?’
তিনি ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালায় ভিন্নমত বা নোট ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি, তা অন্তর্ভুক্ত করার বিষটিকে বোকামি, নিবুর্দ্ধিতা ও মুর্খতা মনে করেন।
‘যদি বুঝতেন তাহলে এটা বদলাবার আগে বিএনপির সাথে কথা বলতেন, আমাদের সাথে কথা বলতেন। কারো সাথে তো কথা বলেন নাই। নিজের নিজের মতো করতে গেছেন…এটা এখন হজম করতে পারবেন। যদি তারা মনে করেন একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন করলেই বিএনপি খুশি হয়ে যাবে তা আমার মনে হয় না। সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রধানত বিএনপির।’
মান্না বলেন, ‘আমরা চেয়েছি, সিদ্ধান্তগুলো, দ্বিমতগুলো জনগণের কাছে যাক। সরকার যে ‘থু থু ফেলেছে, সেই থু থু চাটবে’ আবার…আমি জানি না। কিন্তু তাদের তো ‘চাটতে’ হবে। না হলে ওনারা এভাবেই যদি করতে চান, বিএনপি যদি না মানে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ‘জামায়াতের মতো আন্দোলন না করার যে কথা মির্জা ফখরুল বলেছেন’, তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জামায়াত তো আবার আন্দোলন আন্দোলনে খেলে। কর্মসূচির নামে সভা করে, বড় কর্মসূচি দেয় না। তারা জানে যে, এই কর্মসূচি মানুষ খাবে না। পিআর লোক বুঝে? বুঝে না। আর সেগুলো নিয়ে কথা বলে বুঝে? বুঝে না।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব। তিনি বলেন, ‘আমরা সব দলগুলো এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে কী হলো? প্রতিদিন আমরা প্রতারিত হচ্ছি।’
জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পরে এখন নানা ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে, যে কারণে ঠিক কাজ করেছেন কি না তা ভাবতে হচ্ছে, বলেন তানিয়া রব।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিকে ‘মাথা ঠাণ্ডা’ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা দেশের ভালোটা বুঝো, বুঝার চেষ্টা করো। আমাদের সাথে কথা বলে অভিজ্ঞতা নাও এবং সেইভাবে তোমরা পথ তৈরি কর। তোমরা নেহায়েত শিশু। আমি মনে করি, তোমাদের বীরত্বের জন্য আমি কৃতিত্ব দিতে চাই। কিন্তু তোমরা এখন যেটা করছো, এই মুহূর্তে যেটা করছো, সেটা ঠিক রাষ্ট্রকে যে কোথায় নিয়ে পৌঁছাবে তা কিন্তু একটা অজানা আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
সূত্র: বিডিনিউজ
 
                        বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। 
জুলাই জাতীয় সনদ ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা সভায় কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, দেখা গেল, যখন এটা (সুপারিশ) তারা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) উপস্থাপন করল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে, তখন সেটায় অনেক পার্থক্য। বিশেষ করে তারা যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলো যেন সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, তেমনটা বলেছিলেন। এ ব্যাপারে তারা আস্থা-বিশ্বাস রেখেছিলেন। কিন্তু সেই আস্থা, বিশ্বাসের সঙ্গে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যেটা তারা তাদের কাছ থেকে আশা করেননি।
বিএনপি সংস্কারের পক্ষের দল বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, মতভেদ থাকলেও তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। যেসব প্রস্তাব নিয়ে ভিন্নমত ছিল, সেখানে তারা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে তারা সেগুলো বাস্তবায়ন করবেন। জনগণ ভোট না দিলে বাস্তবায়ন করবেন না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের মতভেদ থাকলেও মূল যে সনদ, সেই সনদে আমরা স্বাক্ষর করেছিলাম। এটাই নিয়ম যে, আমরা যদি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় যাই, মানুষ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে আমরা সেই বিষয়গুলো আবার সামনে নিয়ে আসব। সেটাকে আমরা পার্লামেন্টে পাস করে দেশের যে পরিবর্তন, সেই পরিবর্তনটা নিয়ে আসব।’
বিএনপিকে সংস্কারের বিপক্ষের দল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছে সংস্কারের মধ্যে দিয়ে। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে বহুদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতে চাই। আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই ঘোষণার সঙ্গে একমত হয়ে আমরা নির্বাচন চাই।’
‘সেই নির্বাচনকে আজকে বানচাল করার জন্য, সেই নির্বাচনকে বিলম্বিত করবার জন্য একটা মহল উঠে পড়ে লেগেছে। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, গণভোট নির্বাচনের আগে করার কোনো সুযোগ এখন আর নাই। নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে সে কথা আমরা পরিষ্কার করে বলেছি।’
জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে এক দিনে গণভোট আয়োজনের বিষয়টি স্পষ্ট করে তিনি বলেন, সেখানে দুটি কারণে ভোট হবে, একটি গণভোটের জন্য, আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। ‘সুতরাং এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত কারো থাকবে বলে আমি অন্তত মনে করি না।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করার ‘কোনো সুযোগ নেই’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যারা এ নিয়ে রাস্তায় নেমে গোলমাল করছেন, তাদের অনুরোধ করব, জনগণকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। এক সময় আপনারা পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। আজ জনগণ যে নির্বাচন চায়, তার বিরোধিতা করবেন না। এই দেশের মানুষ দেশ বিক্রির রাজনীতিকে ক্ষমা করে না।’
ফখরুলের অভিযোগ, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) যে কমিশন তৈরি করেছেন, সেই কমিশন ঐকমত্যের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। সংস্কার ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রে একমত হয়েছিলাম। কয়েকটি বিষয়ে মতভেদ থাকায় আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেই। অর্থাৎ আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও মূল বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম, এটাই নিয়ম।’
সভায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশ যখন একদলীয় শাসনব্যবস্থার জাঁতাকলে, তখন আ স ম আব্দুর রবের মতো রাজনীতিবিদেরা দেশকে উদ্ধার করেছিল। তিনি আ স ম আব্দুর রবের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। আগামীতে নির্বাচিত হলে বিএনপির ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব।
বর্তমানে দেশ গভীর সংকটে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ভবিষ্যতে যে সরকার নির্বাচন আয়োজন করবে, সেই সরকার যদি প্রতারক হয়, তাহলে আর কী করার আছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের মতো পরিস্থিতি বর্তমানে দেশে নেই। দেশের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো, দ্রুত সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বারবার আমরা স্বৈরাচারকে সরাই, আবার আমাদের মধ্যে থেকেই স্বৈরাচার জন্ম হয়। তাই ঐতিহাসিকভাবে আমাদের প্রতিনিয়ত লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের দেশে নতুন রাজনীতির উত্থান হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, চব্বিশ-পরবর্তী দেশের রাজনীতি বিএনপি ও জামায়াতের দ্বিদলীয় রাজনীতিতে আবদ্ধ করার চেষ্টা করছে।’
গণভোটকে অনেকে সংসদের আসন নির্ধারণের ‘টুল’ হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আজকে যে গণভোটের দাবিটা তোলা হচ্ছে, ডিসেম্বরে যদি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল হয়, সময় আছে এক মাস, এই সময়ে কি আরেকটা নির্বাচন সম্ভব?
 
                        গণভোট ইস্যুতে সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন আগামী জাতীয় নির্বাচন ১৫ ফেব্রুয়ারির আগেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, কোনো শক্তি এটাকে ঠেকাতে পারবে না।
শুক্রবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ‘জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিয়েছে। আমরা এটাকে হুমকি হিসেবে দেখছি না। যেটা সবচেয়ে উত্তম সেটাই করবেন প্রধান উপদেষ্টা। আগামী ১৩ নভেম্বর আদালত শেখ হাসিনার বিচারের দিন জানাবেন। সবকিছুই নিয়মতান্ত্রিকভাবেই চলবে।
গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বৈরাচার পতন ও গণঅভ্যুত্থানে পুরুষ ও নারীরা একসঙ্গে রাজপথে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। এখন আর নারীরা পিছিয়ে নেই। সব ক্ষেত্রেই তারা প্রতিনিধিত্ব করছেন। আমরাও চাই নারীরা এগিয়ে যাক।
এর আগে নোবিপ্রবি কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে তরুণদের জ্ঞান ও মেধার বিকাশকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘মাইন্ডব্রিজ ও নলেজ কম্পিটিশন ২০২৫’ এর আয়োজন করা হয়।
এতে জুলাই কন্যা ফাউন্ডেশনের সভাপতি জান্নাতুল নাঈম প্রমির সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইসমাইল, নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইসমাঈল হোসেন প্রমুখ।
 
                        ধর্ম উপদেষ্টা আল্লামা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকালে ১৫ মাসে আমার যথেষ্ট সফলতা আছে। আর যেগুলো আমি করতে পারিনি সেগুলো আমার ব্যর্থতা। এতে আমার করার কিছু ছিল না। কারণ ১৫ বছরের জঞ্জাল ১৫ মাসে পরিষ্কার করা যায় না।
শুক্রবার পঞ্চগড় জেলা শহরের রৌশনাবাগ এলাকার দারুল উলুম মদিনাতুল ইসলাম মাদরাসা মাঠে পঞ্চগড় জেলার সকল তৌহিদী জনতার উদ্যোগে আজিমুশ্বান শানে রিসালাত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সরকারের বয়স ১৫ মাস। আমরা বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছি। হজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনেছি। মডেল মসজিদগুলো, যেগুলো নির্মাণে দুর্নীতি অথবা অনিয়ম আছে, এগুলোর জন্য আমরা পাওয়ার ফুল কমিটি গঠন করেছি। তারা অতিসত্বর আমাদের কাছে রিপোর্ট দেবেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বেশ কিছু অনিয়ম ছিল। আমরা একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। কালকে আমাকে রিপোর্ট দিয়েছেন এবং উনার তদন্ত অনুযায়ী আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরও বলেন, হজের টাকা ফেরত দিয়েছি ৩৯ কোটি। যেগুলো এজেন্সির টাকা সৌদি আরবে ছিল। আমার মন্ত্রণালয়ে আমার জানামতে দুর্নীতির কোনো স্কোপ নেই। আমি নিজেও দুর্নীতির সাথে যুক্ত নই। আমার অফিসাররাও যাতে দুর্নীতিমুক্ত থাকে, আমি যথেষ্ট সোচ্চার আছি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি এবং একটি ট্রান্সপারেন্ট গভর্নমেন্ট প্রশাসন স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি।
অনুষ্ঠানে সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুল হান্নানের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল আলম, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ইকবাল হোসাইন, নায়েবে আমির মাওলানা মফিজ উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুল হাই, সহ-সভাপতি ক্বারী মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সুলতান মাহমুদ, খেলাফত মজলিসের সভাপতি হাফেজ মীর মোর্শেদ তুহিন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনকে ক্রেস্ট ও ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। পরে পঞ্চগড় তৌহিদী জনতার পক্ষ থেকে ১২টি দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তুলে দেন ওলামায়ে কেরামগণ।
 
                        প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে একটি আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমবায় খাতকে আধুনিক ও গতিশীল করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, কৃষি, মৎস্য, পশুপালন, সঞ্চয় ও ঋণদান এবং কুটিরশিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে একটি আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।’
আগামীকাল ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১ নভেম্বর, ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস’ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি সকল সমবায়ী ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশ ও জনগণের উন্নয়নে গৃহীত যেকোনো কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নে সামাজিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত অপরিহার্য। সমবায়ের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ কাজ আমরা অনায়াসে করতে পারি। সমবায় সমিতিগুলো শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানই নয় বরং সমাজের নানাবিধ সমস্যা দূর করতে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সমবায় আন্দোলনের বিকল্প নেই। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যেতে চায়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সমবায়ের ভূমিকা অপরিসীম।
তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, সমবায়ের চেতনাকে ধারণ করে সাম্য ও সমতায় আমরা সকলে মিলে গড়ে তুলি নতুন বাংলাদেশ।’
প্রধান উপদেষ্টা ‘৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস, ২০২৫’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। সূত্র: বাসস
 
                        শাপলা প্রতীকের দাবিতে অনড় অবস্থান জানিয়ে আসছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে ইসির প্রতীক তালিকায় না থাকায় এই প্রতীক দেওয়া যাবে না বলে এত দিন বলে আসছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার ইসির নতুন যে প্রতীক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য প্রতীকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে শাপলা কলিসহ বেশ কিছু প্রতীক সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়েছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণ করে সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেখানে শাপলা কলি ছিল না।
গত বছর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র–তরুণদের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কয়েক মাস আগে ইসির পর্যালোচনায় নিবন্ধনযোগ্য দল বিবেচিত হয়। এর পর থেকে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছিলেন দলটির নেতারা।
এ বিষয়ে অপরাগতা জানিয়ে আসছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনসহ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। সর্বশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এনসিপি শাপলা প্রতীক পাচ্ছে না, কারণ হচ্ছে যে আমাদের ১১৫টার যে শিডিউলটা করা হয়েছে, সেখানে শাপলা প্রতীক নেই।’
তবে গত সোমবার এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই মন্তব্য করে দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছিলেন, ‘যেহেতু আইনগত বাধা নেই, আমরা আমাদের জায়গা থেকে শাপলা আদায় করে নেব।’
গতকাল প্রকাশিত ইসির নতুন প্রতীকের তালিকায় ‘শাপলা কলি’ প্রতীক যুক্ত করা হলো।
 
                        ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোর ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বড় ধরনের খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে। আর চরম অপুষ্টির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে ১৬ লাখ শিশু। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ দেশের ৩৬ জেলার ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি অবস্থা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট (এফপিএমইউ) ও জাতিসংঘের তিন সংস্থা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় বছরের শেষ আট মাসে খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সার্বিকভাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা কমেছে।
গত বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন–মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) যৌথভাবে ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) (সমন্বিত খাদ্যনিরাপত্তা ধাপের শ্রেণিবিন্যাস) প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
খাদ্যঘাটতি, অপুষ্টি ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে মূল্যায়ন করা হয়েছে পাঁচটি ফেজ বা ধাপে। ধাপ ১: সর্বনিম্ন বা স্বাভাবিক, ধাপ ২: চাপে থাকা, ধাপ ৩: সংকটে থাকা, ধাপ ৪: জরুরি অবস্থা এবং ধাপ ৫: দুর্ভিক্ষ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘আইপিসি প্রতিবেদনের সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি না। সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা কমানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্লেষণ করা জেলার ১৭ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে থাকতে পারে। যে প্রাথমিক কারণগুলো এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা, জলবায়ু বিপর্যয়, তহবিলের অভাব, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং খাদ্যবৈচিত্র্যের অভাব।
প্রতিবেদনে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা ও খাদ্যনিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, পুষ্টিসেবা ও নজরদারি বাড়ানো, কৃষি ও মৎস্য খাতে সহায়তা বাড়ানো এবং পরিস্থিতি সব সময় পর্যবেক্ষণে রাখার সুপারিশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে আইপিসি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এফএও এবং ডব্লিউএফপির ফুড সিকিউরিটি ক্লাস্টার বাংলাদেশের সমন্বয়কারী মো. মঈনুল হোসেন রনি এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের নিউট্রিশন ক্লাস্টার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রুহুল আমিন। আইপিসির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের পরিচালক (মানবকল্যাণ) মোস্তাক হোসেন।
‘আইপিসি অ্যানালাইসিস রিপোর্ট অন দ্য অ্যাকিউট ফুড ইনসিকিউরিটি সিচুয়েশন, বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতাবিষয়ক বিশ্লেষণ প্রতিবেদন) শিরোনামে গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৬ জেলায় বসবাসরত ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ বছর কোনো জেলায় ধাপ–৫ অর্থাৎ দুর্ভিক্ষ দেখা যায়নি, দেখা যাওয়ার আশঙ্কাও নেই।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ধাপ–৪ বা জরুরি অবস্থাতেও ছিল না কোনো জেলার জনগোষ্ঠী। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় জরুরি অবস্থা দেখা দিতে পারে। এ সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজারের বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এবং মে থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির তথ্য আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে ৩৬টি জেলার মধ্যে ১৬টি জেলার (রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ) ১ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ খাদ্যসংকট বা ধাপ ৩–এ ছিল। আর মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১৩টি জেলার ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ খাদ্যসংকট বা ধাপ–৩ এর সম্মুখীন হচ্ছে। জেলাগুলো হচ্ছে বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বান্দরবান, রাঙামাটি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজার।
কক্সবাজারের যে অংশে রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে ও যে অংশে শিবির নেই—দুই এলাকার স্থানীয় লোকজনও খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে। জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে কক্সবাজারের মানুষ, বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফের জনসাধারণ। এই জেলার ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্যসংকটের সম্মুখীন। কক্সবাজার ও ভাসানচর মিলিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্যসংকট ও জরুরি অবস্থায় পড়তে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত খাদ্যসংকটে থাকা নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা কিছুটা কমেছে। এ চার জেলা ধাপ–২ এ উন্নীত হয়েছে। অপর দিকে ধাপ ২–এ থাকা বাগেরহাট এবার খাদ্যসংকটের তালিকা অর্থাৎ ধাপ ৩–এ ঢুকেছে।
২০২৪ সালের আইপিসি প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ২৪ শতাংশ খাদ্যসংকট ও ২ শতাংশ জরুরি অবস্থা ছিল।
বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙনসহ দুর্যোগের কারণে ওই সব জেলায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
আইপিসি প্রতিবেদনে অপুষ্টির বিষয়ে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১৮টি দুর্যোগপ্রবণ জেলার ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সি ১৬ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টির সম্মুখীন হচ্ছে। একই সময়ে ১ লাখ ১৭ হাজার অন্তঃসত্তা ও শিশুকে বুকের দুধ পান করানো মা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে যাচ্ছে। কক্সবাজার ও ভাসানচরের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৮১ হাজারের বেশি শিশু ও ৫ হাজার মা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে পারে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, মন্ত্রণালয় জলবায়ু-সহনশীল ও পরিবেশবান্ধব প্রাণিসম্পদ ও জলজ চাষব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করছে, যাতে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখা যায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিতভাবে খাদ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। স্থল ও জল—দুই উৎস থেকে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে, যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে।’
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, খাদ্যসংকটের যে তথ্য উঠে এসেছে, তা কারও জন্যই স্বস্তিকর নয়। অপুষ্টিতে আক্রান্ত একটি শিশু স্কুলে যেতে পারবে না, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারবে না। শিশুদের পুষ্টিতে নজর না দিলে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে পারবে না। এখন শুধু কর্মপরিকল্পনা নিলে হবে না, প্রত্যেককে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব নিতে হবে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা ও অপুষ্টি কমাতে।
এফএও বাংলাদেশের উপপ্রতিনিধি ডিয়া সানৌ বলেন, যে সংখ্যক মানুষ খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে, সেটা সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মোকাবিলা করা কঠিন নয়। ওই সব জেলার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মূল কারণ বের করে সমস্যা সমাধান করতে হবে।
ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সিমোন পার্চমেন্ট বলেন, ৩৬টি দুর্যোগপ্রবণ এলাকার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে দুর্যোগ মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া দরকার।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর (এদেশীয় পরিচালক) তালহা জামাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের (এফপিএমইউ) মহাপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান।
 
                        গণভোট কবে হবে, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা দ্রুতই সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। গণভোট নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে একথা বললেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
গণভোট কবে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ‘সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আমরা থাকব। আমরা সহায়তা করার জন্য থাকব। সিদ্ধান্ত এটা কোনো পার্টিকুলার কেউ নেবেন না, এটা আপনারা নিশ্চিত থাকেন। এই সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টা নেবেন।…দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায়–সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দিয়েছে। তাতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন গণভোট করার কথা বলা হয়েছে সেখানে।
তবে জামায়াতে ইসলামী দাবি করেছে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে এবং তার আলোকে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। অপরদিকে বিএনপি বলছে, নির্বাচনের দিনই গণভোট করতে হবে। এর বাইরে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, যে জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছিল, তার বাইরে অনেক বিষয় এখানে যুক্ত করা হয়েছে।
জুলাই সনদের বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর এই পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয় কথা বলেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক। দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি এ রকম ভূমিকা নেন, সরকার কী করবে, আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। এত দিন আলোচনার পর যদি ঐকমত্য না আসে, তো আমরা আসলে কীভাবে কী করব, সত্যি আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘২৭০ দিন আলাপ–আলোচনা করার পর রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যের মধ্যে যে অনৈক্যের সুর দেখা যাচ্ছে, তা হতাশাব্যঞ্জক। এই তীব্র বিরোধের মধ্যে সমঝোতা দলিল পাস করা সরকারের সামনে একটা চ্যালেঞ্জ এনে দিয়েছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, দলগুলোকে এতো আলোচনার সময় দেওয়া হয়েছে। এরপরও তারা যেই অনৈক্য দেখাচ্ছে তাতে জুলাইয়ের স্পিরিটকে (চেতনা) তারা কোথায় নিয়ে গেছে, এটা তাদের বিবেচনা করা উচিত। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি এককভাবে তাদের অবস্থান নেওয়ার জন্য সরকারকে জোর করে, তার মানে হচ্ছে তাদের মধ্যে ঐকমত্য নাই। তারা চাচ্ছে, সরকার যেন তাদের দলীয় অবস্থান নেয়।
জুলাই সনদ নিয়ে অনৈক্যের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘যে যেটা বলুক, আমরা ফেব্রুয়ারি প্রথমার্থে জাতীয় নির্বাচন করব।…ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আসিফ নজরুল আরও বলেন, নির্বাচিত সংসদের সংস্কার করার কোনো দায়–দায়িত্ব থাকবে না, সব অন্তর্বর্তী সরকারকে করে যেতে হবে এতো কোনো বেদবাক্য নয়। সরকার যতটুকু পারে করবে। সম্ভব হলে সবই করবে। তবে তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য লাগবে।
 
                        জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত দলটির স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথাগুলো বলেন।
গত বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গতকাল এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংশোধন-সংক্রান্ত বিষয়গুলো কার্যকর করার উদ্দেশে সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ শিরোনামে একটি আদেশ জারি করবে। এরূপ প্রস্তাবিত আদেশের একটি খসড়া সংযুক্তি-২ ও সংযুক্তি-৩-এ সংযোজিত করা হয়েছে। সরকারের এ রকম আদেশ জারি করার এখতিয়ার নেই। সংবিধানের ১৫২ নম্বর অনুচ্ছেদের সংজ্ঞা অনুসারে ‘আদেশ’ আইনের মর্যাদাপ্রাপ্ত। অতএব তা জারি করা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।
জুলাই সনদের সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, ভিন্নমত, নোট অব ডিসেন্ট উল্লেখ করা হয়নি বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশ একপেশে। জবরদস্তিমূলকভাবে তা জাতির ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাহলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে দীর্ঘ প্রায় এক বছরব্যাপী সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক আলোচনা ছিল অর্থহীন। অর্থ ও সময়ের অপচয়, প্রহসনমূলক ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সে কারণে সংলাপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ভিন্নমত পোষণে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকারকে আমলেই নেয়নি। এই বাস্তবায়ন আদেশে (সুপারিশ) বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পাশাপাশি একই সঙ্গে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। তারা আলাদাভাবে সংসদ সদস্য ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। অর্থাৎ নির্বাচিত জাতীয় সংসদ একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে অভিহিত হবে। প্রশ্ন হলো, নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল না। আলোচনার জন্য উপস্থাপিত হয়নি। সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হওয়ার অবকাশও ছিল না। এ–জাতীয় কোনো সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করতে হলে তা–ও পরবর্তী জাতীয় সংসদে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বলা হয়েছে, ওই বাস্তবায়ন আদেশ অনুসারে অনুষ্ঠিত গণভোটে যদি ইতিবাচক সম্মতি পাওয়া যায়, তাহলে সংবিধান সংস্কার বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার দায়িত্ব পালনে সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠান হওয়ার আগে এ ধরনের আগাম পদক্ষেপ আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
গণভোট প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে প্রস্তাবিত গণভোট অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। সময় স্বল্পতা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল অঙ্কের ব্যয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগসহ একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো বিশাল আয়োজন বিবেচনায় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত। একই আয়োজনে ও একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ উল্লেখিত যেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আইন, বিধিবিধান পরিবর্তন বা সংশোধন দরকার, সরকার তা অধ্যাদেশ জারি ও বিধিবিধান/সংশোধন করে বাস্তবায়ন করতে পারে। যেসব সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো অবিলম্বে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করতে পারে। এই প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করেছে। এ ছাড়া জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য তারা গণভোটে সম্মত হয়েছেন। যেসব বিষয়ে ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে এবং দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি, তা অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সব সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বিধায় তারা একমত হতে পারছেন না।
লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্ট সহকারে ঐকমত্য হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ যেভাবে প্রণীত হয়েছে, তাতে নোট অব ডিসেন্টের অংশে এই বক্তব্য স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্ট প্রদানকারী কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তা উল্লেখ করে যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সে মতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এক ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তারা কেবল আলোচনার মাধ্যমে প্রণীত সনদের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু সেদিন জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত কপি তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। পরবর্তী সময় মুদ্রিত পুস্তক হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদের কপি তারা হাতে পাওয়ার পর দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত কয়েকটি দফা তাদের অগোচরে আবার সংশোধন করা হয়েছে। যেমন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে টাঙানো-সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করার বিষয়টি সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদিও প্রায় সব রাজনৈতিক দল এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ (পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম তফসিল) পুরোপুরি বিলুপ্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল সম্মতি প্রকাশ করেছে। কিন্তু অগোচরে সেটা চূড়ান্ত সনদে সংশোধনী আনা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ ২৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে। পেশ করা চিঠিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টাও একজন দস্তখতকারী। এতে ঐকমত্য কমিশন ও সরকার একই অঙ্গ হিসেবে প্রতীয়মান হয়। এই পত্রে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত বিষয়গুলো দুটি বিকল্প পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের ও আইনগত ভিত্তি প্রদানের জন্য সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি যে এই সব সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য সৃষ্টি করবে। মনগড়া যেকোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে।’
দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ ২০২৪ সালের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে জাতির প্রত্যাশা পূরণে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা সবার কাম্য বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য হবে, একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। এর মাধ্যমে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে প্রকৃত অর্থে জাতীয় জীবনের সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত করা।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে নজরুল ইসলাম খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিম রহমান ও সালাউদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
 
                        আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন সরগরম হয়ে উঠেছে। অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে।
রাজধানী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত নির্বাচনযন্ত্র সচল রাখতে যে বিশাল প্রশাসনিক কাঠামো প্রয়োজন, তা এখন শেষ পর্যায়ে। কমিশনের ভাষায়-‘ভোটের সব আয়োজন সম্পন্ন, এখন শুধু জনগণের অংশগ্রহণের অপেক্ষা।’
ইসির সূত্রে জানা গেছে, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের প্রাথমিক সময়সূচি নির্ধারিত রয়েছে। ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, আসন সীমানা পুনর্বিন্যাস, নির্র্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, নির্বাচনী বিধান সংশোধনসহ প্রায় সব প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আজ জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, ‘আমরা একটি উৎসবমুখর, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এজন্য যেকোনো প্রশাসনিক, প্রযুক্তিগত বা আইনগত প্রস্তুতির ঘাটতি যেন না থাকে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করছি।’
তিনি জানান, ভোটার তালিকা ও কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার হালনাগাদের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর প্রায় ২৫ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ভোটার ৫২ শতাংশ।
কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫০৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪১ লাখ ৪৫৫ জন, নারী ভোটার ৬ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩০ জন। সারাদেশে ভোট গ্রহণের জন্য ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র এবং ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি ভোটকক্ষ রাখা হয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ শেষ। রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চূড়ান্ত হলেই শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।’
তিনি জানান, কমিশনের কাজ সময়মতো শেষ করতে ১৮টি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টাস্কফোর্স নির্দিষ্ট দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। যেমন- কোনোটি লজিস্টিক, কোনোটি আইটি বা নিরাপত্তা বিষয়ক।
প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আচরণবিধি সংশোধন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) হালনাগাদ, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনাও প্রায় সম্পন্ন। সংশোধিত আরপিও-২০২৫ অনুযায়ী, এবার ‘না ভোট’ পুনর্বহাল করা হয়েছে, ইভিএম ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা বাতিল হয়েছে এবং প্রার্থীর সম্পদ, আয় ও কর সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া অনুদানে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার বাধ্যতামূলক, পলাতক আসামিদের প্রার্থিতা নিষিদ্ধ এবং নির্বাচনী জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন বলছে, এই সংস্কারগুলো নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াবে।
ইসি সচিব বলেন, ‘ভোট শুধু সংখ্যার হিসাব নয়, এটি আস্থার বিষয়। সেই আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।’
নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায়ও জোর দিয়েছে কমিশন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একাধিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভোটের আগে তিন দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পর চার দিনসহ মোট আট দিন মাঠে থাকবে বাহিনী। এতে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ, এক লাখ সেনাসদস্য এবং আনসার-ভিডিপির সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
ইসি জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও আচরণবিধি তৈরি করা হয়েছে যাতে তারা ভোটের সময় নিরপেক্ষ ও পেশাদার ভূমিকা রাখতে পারেন।
এছাড়া নির্বাচনকালীন ডিজিটাল নিরাপত্তা রক্ষায় প্রথমবারের মতো ‘মিসইনফরমেশন মনিটরিং সেল’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে কমিশন। এই সেল ভুয়া তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর বিভ্রান্তিকর প্রচারণা এবং অনলাইন গুজব পর্যবেক্ষণ করবে। এ বিষয়ে এনটিএমসি, বিটিআরসি, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় একটি সমন্বিত ড্যাশবোর্ড তৈরি হচ্ছে।
প্রবাসী ভোটারদের জন্যও এবার বড় উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত ভোটাররা ডাকে ভোট দিতে পারবেন।
কমিশন জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১১টি দেশে ইতোমধ্যে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন শুরু হয়েছে। আগামী বছর আরও আটটি দেশে এই সুযোগ সম্প্রসারিত হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখতে এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহিতুল হক বলেন, ‘নির্বাচনের আগে কমিশনের স্বচ্ছতা ও দৃঢ় মনোভাবই জনগণের আস্থা ফেরানোর প্রথম ধাপ। যদি নির্বাচন কমিশন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে, তাহলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব।’
ভোটের প্রযুক্তিগত দিকেও নতুনত্ব আনছে ইসি। ভোটার ডেটাবেইস ও কেন্দ্রীয় সার্ভারে নিরাপত্তা বাড়াতে সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আপগ্রেড করা হয়েছে। এবার প্রথমবারের মতো ভোটের দিন জেলা পর্যায়ের কন্ট্রোল রুম থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে রিয়েল-টাইম আপডেট মনিটর করা হবে ।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘এবার আমরা একেবারে প্রক্রিয়াগত ব্যর্থতা শূন্যে নামিয়ে আনতে চাই। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের ডিজিটালি হিসাব থাকবে, যা সরাসরি কমিশনে রিপোর্ট হবে।’
নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলো। শীর্ষ তিনটি দল প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইসি বলছে, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, প্রতীক বরাদ্দের কাজ নভেম্বরেই শেষ হবে। প্রার্থীদের হলফনামা যাচাইয়ের জন্য একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে, যা এনবিআর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের তথ্য যাচাই করবে।
ইসি বলছে, নির্বাচন শুধু প্রশাসনিক আয়োজন নয়, এটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের উৎসব।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘জনগণ যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারেন, তবেই নির্বাচনের সাফল্য সেখানেই। আমরা চাই, প্রতিটি ভোটার যেন নিরাপদে ও আনন্দের সঙ্গে ভোট দিতে পারেন।’
জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গ্রামীণ পর্যায়ে গণসচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু হয়েছে। রেডিও, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে পোস্টার, ব্যানার ও শর্ট ভিডিওর মাধ্যমে ভোটারদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য ও প্রচার বিভাগ জানায়, এবার ভোটার সচেতনতা কর্মসূচিতে বিশেষভাবে নারী ও তরুণ ভোটারদের টার্গেট করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা চাই, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের সক্রিয় ভোটার হিসেবে দেখতে। তাদের অংশগ্রহণ বাড়লেই নির্বাচনে প্রাণ ফিরে আসবে।’
সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন, প্রশাসন ও সাধারণ জনগণের চোখ এখন এক জায়গায়- কেমন হয় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। ইসি বলছে, তাদের প্রস্তুতি শতভাগ, আর বাকিটা দেশের জনগণের হাতে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের ভাষায়, ‘এই নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের আরেকটি মাইলফলক হবে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণই এবার প্রকৃত বিজয়ী হবে।’ সূত্র: বাসস
 
                        ‘মথ’ নামের এক ধরনের ডালে ক্ষতিকর রঙ মিশিয়ে তা ‘মুগ’ ডাল হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে— এমন তথ্যের ভিত্তিতে সতর্ক করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বিএফএসএ জানায়, ’মথ’ ডাল নামক ডালের সঙ্গে হলুদ রঙ মিশিয়ে মুগ ডাল নামে বাজারে বিক্রির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এই রঙ খাদ্যে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত নয় এবং এটি মানবদেহের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।”
সংস্থাটি জানায়, গত অর্থবছরে দেশে মুগ ডালের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ মথ ডাল আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে ‘মথ ডাল’ নামে কোনো পণ্য দেখা যায়নি। বরং স্থানীয় বাজার থেকে সংগৃহীত ‘মুগ ডাল’-এর নমুনার অর্ধেকের বেশি রঙ মিশ্রিত পাওয়া গেছে।
বিএফএসএ আরও জানায়, অননুমোদিতভাবে কোনো রঙ খাদ্যে ব্যবহার, সংযোজন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ বা বিক্রয় করা নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩-এর ২৭ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের রঙযুক্ত ডাল আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ ও বিক্রি থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে সাধারণ ক্রেতাদেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মুগ ডাল কেনার সময় এর বিশুদ্ধতা যাচাই করতে এবং সন্দেহজনকভাবে উজ্জ্বল রঙ বা অস্বাভাবিক আভাযুক্ত ডাল না কেনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
 
                        ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। দীর্ঘদিনের অবরোধে বিপর্যস্ত এখানকার জীবনযাপন। ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন হামলা ও গুলি এড়িয়ে বেঁচে থাকাই যেখানে বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে পুষ্টিকর খাবারের দেখা পাওয়া যেন এক স্বপ্নের মতো।
ইসরায়েল যুদ্ধ চলাকালীন মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশে বাধা দেয়। এমনকি ফিলিস্তিনি জেলেদের সাগরে মাছ ধরাও নিষিদ্ধ ছিল। ফলে সাধারণ মানুষ চরম খাদ্যসংকটে পড়েছিল।
গত ১০ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর কিছুটা স্বস্তি ফেরে গাজায়। খুলতে শুরু করে হাটবাজার, শিশুরা দীর্ঘদিন পর মুখ দেখে পুষ্টিকর খাবারের।
এমন এক সময়ে এক ফিলিস্তিনি বাবা দীর্ঘ এক বছর পর সন্তানদের জন্য মুরগির মাংস কিনে আনেন। মুরগি দেখে ঘরে থাকা একটি শিশু আনন্দে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের মাঝে বসে থাকা তিন শিশুর উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে ছোট্ট ঘরটি।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। আলজাজিরা জানায়, শিশুরা মুরগি দেখে “আল্লাহু আকবর” বলে চিৎকার করে এবং বলে, “আল্লাহ মহান, সত্যিই মুরগি!”
অন্য এক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি শিশুকে আপেলের নাম জিজ্ঞেস করলে সে ভুল করে “তরমুজ” বলে—যুদ্ধের ভয়াবহতায় যেখানে ফলের নামও ভুলে গেছে শিশুরা।
গাজায় চলমান দুই বছরের যুদ্ধের কারণে লাখ লাখ মানুষ ভয়াবহ খাদ্যসংকটে ভুগছে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে শত শত শিশু মারা গেছে। কেউ কেউ বেঁচে থাকার জন্য ঘাস ও লতা-পাতা খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা বলছে, ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজা এখন এক নিঃস্ব ভূমি—স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল, বাজার, এমনকি শরণার্থী শিবিরও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পুষ্টিকর খাবার আজ ফিলিস্তিনিদের কাছে বিলাসিতা।
 
                        আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে আর কাজ করবে না অবৈধ বা আনঅফিসিয়াল পথে আসা কোনো মোবাইল হ্যান্ডসেট। সেদিন থেকেই চালু হতে যাচ্ছে জাতীয় পর্যায়ের ‘ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর)’ সিস্টেম, যার মাধ্যমে দেশের সব বৈধ মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর যুক্ত হবে একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেইজে।
এই সিস্টেম চালু হলে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া আমদানি করা কিংবা বিদেশ থেকে আনা ও উপহার পাওয়া মোবাইল সেট বাংলাদেশে নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে না। বৈধভাবে ব্যবহার করতে হলে সেসব ফোনের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, ১৬ ডিসেম্বরের পর নতুন যেসব হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে, সেগুলো প্রথমে অস্থায়ীভাবে সক্রিয় থাকবে। এরপর এনইআইআর সিস্টেমের মাধ্যমে বৈধতা যাচাই করা হবে। ফোন বৈধ হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত থাকবে, আর অবৈধ ফোন এক মাস পর নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
তবে বর্তমানে নেটওয়ার্কে সচল সব বৈধ বা অবৈধ হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে।
বিটিআরসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে চোরাই ও আনঅফিসিয়াল পথে আমদানিকৃত মোবাইল সেট ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে গেছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, পাশাপাশি অপরাধীরাও এসব ফোন ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে যাচ্ছে।
এই সমস্যা মোকাবিলায় এবং নেটওয়ার্ককে নিরাপদ রাখতে এনইআইআর সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক বলেন, “এই সিস্টেমের মাধ্যমে অবৈধ ও চোরাই হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বন্ধ হবে। পাশাপাশি স্থানীয় মোবাইল শিল্প সুরক্ষা পাবে এবং সরকারের রাজস্ব ক্ষতি বন্ধ হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এনইআইআর কার্যকর হলে ফোন ক্লোনিং ও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে বড় অগ্রগতি হবে। এতে টেলিযোগাযোগ সেবার মানও উন্নত হবে।”
গ্রাহকের ফোন বৈধ কিনা— জানবেন তিন ধাপে
১. *১৬১৬১# নম্বরে ডায়াল করুন।
২. ফোনের ১৫ ডিজিটের IMEI নম্বর লিখে পাঠান।
৩. ফিরতি এসএমএসে জানানো হবে সেটটির নিবন্ধন অবস্থা।
এছাড়া neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটেও হ্যান্ডসেটের বৈধতা যাচাই করা যাবে।
বিদেশ থেকে আনা ফোন নিবন্ধনের নিয়ম
বিদেশ থেকে কেনা বা উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে সচল রাখতে ৩০ দিনের মধ্যে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য গ্রাহককে neir.btrc.gov.bd পোর্টালে গিয়ে ‘Special Registration’ সেকশনে IMEI নম্বর, পাসপোর্ট, ভিসা, ক্রয় রশিদ বা কাস্টমস কাগজপত্র আপলোড করতে হবে।
নতুন ফোন কেনার আগে করণীয়
১৬ ডিসেম্বরের পর নতুন ফোন কেনার আগে গ্রাহকরা ফোনের বৈধতা যাচাই করতে পারবেন। এজন্য মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখতে হবে—
KYD <space> 15 digit IMEI,
এবং পাঠাতে হবে ১৬০০২ নম্বরে। ফিরতি মেসেজে জানানো হবে ফোনটি বৈধ কিনা।
বৈধ ফোন হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনইআইআর সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।
চুরি বা হারানো ফোন সহজে ব্লক ও আনলক
নতুন সিস্টেমে গ্রাহকের ফোন চুরি হলে বা হারালে সহজে সেটটি ব্লক করা যাবে। এজন্য neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ, অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার বা *USSD চ্যানেল (১৬১৬১#) ব্যবহার করা যাবে।
ইন্টারনেট না থাকলেও অপারেটরের ১২১ নম্বরে কল করে সেবা নেওয়া সম্ভব হবে।
৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি রোধ হবে
বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর বিটিআরসি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “অবৈধ হ্যান্ডসেটের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এনইআইআর চালুর মাধ্যমে এই ক্ষতি রোধ করা যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “২০২৪ সালে দেশের ৭৩ শতাংশ ডিজিটাল জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে অবৈধ ডিভাইস ও সিম ব্যবহার করে। নতুন সিস্টেম চালু হলে প্রতারণা ও সাইবার অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে।”
স্থানীয় শিল্পে গতি ও প্রতিযোগিতা বাড়বে
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী বলেন, “এনইআইআর চালু হলে দেশীয় ১৮টি হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে।”
তিনি জানান, দেশে এখনও ৩৮ শতাংশ ফিচার ফোন ব্যবহার হচ্ছে, তাই স্মার্টফোন ব্যবহারের হার বাড়াতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সরকার ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনইআইআর চালু হলে টেলিযোগাযোগ খাতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। এর মাধ্যমে অবৈধ ফোনের ব্যবহার বন্ধ হয়ে রাজস্ব বাড়বে, নিরাপত্তা জোরদার হবে এবং দেশীয় মোবাইল শিল্প পাবে নতুন গতি।