আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিঞা মিলনায়তনে ‘৭১’র চেতনায় লিভার বিশেষজ্ঞ ক’জনা’ প্রযোজিত নির্বাচনী প্রচার সঙ্গীত ‘ভোট দিব সবাই’-এর আনুষ্ঠানিক সম্প্রচার শুরু উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সভাপতিত্বে এতে আলোচনায় অংশ নেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহবায়ক পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি ঝুনা চৌধুরী, মিউজিক ভিডিওটির নির্মাতা সাইফ আহম্মেদ এবং গীতিকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ মোহাম্মদ নূর-ই-আলম ডিউ।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিভার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রোকসানা বেগম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. ফয়সাল আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটিতে ‘ভোট দিব সবাই’ গানটির আনুষ্ঠানিকভাবে সম্প্রচার আরম্ভ হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানটিতে গানটির পোষ্টারটিও আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়।
নিজের অভিব্যাক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে ডা. ডিউ জানান,আগুন সন্ত্রাসী ও মানুষের ভোট দেয়ার গনতান্ত্রিক অধিকার হরণ করার চক্রান্তে যারা লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে এই গানটি। এর মাধ্যমে তিনি আগামী নির্বাচনে উৎসাহ-উদ্দিপনা নিয়ে ভোটদানে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে চান।
মিউজিক ডিভিওটির নির্মাতা জনাব সাইফ আহম্মেদ বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে এত বেশি উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে যে এর সবগুলো তিনি সাড়ে চার মিনিটের এই মিউজিক ভিডিওটির স্বল্প পরিসরে তুলে ধরতে পারেননি।
ঝুনা চৌধুরী তার বক্তব্যে জানান,লিভার বিশেষজ্ঞদের এই গানটি ভালো লেগেছে তার কাছে।
অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রের মত এদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নব নির্মিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রাপ্ত উন্নত চিকিৎসা সুবিধাগুলোর কথা তুলে ধরে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে ভবিষ্যতে এদেশ থেকে আর কেউ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন না।
শ্যামল দত্ত তার বক্তব্যে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনটিকে তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধের সাথে তুলনা করে প্রত্যাশা করেন,১৯৭১ সালে যেভাবে আমরা পাকিস্তানী হানাদারদের পরাজিত করেছিলাম এবং তারপর আবারো বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে পাকিস্তানী দোসরদের ক্ষমতা থেকে অপসারন করে দ্বিতীয়বারের মত মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছিলাম, তেমনি আগামী নির্বাচনে তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধেও আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী জনসভাগুলোর শুরুতে উদ্দীপনামূলক সঙ্গীত পরিবেশনের স্মৃতিচারন করে বলেন, ব্যতিক্রমী এই নির্বাচনী সঙ্গীতটি আগামী নির্বাচনে মানুষকে ভোট কেন্দ্রে যেয়ে ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করবে।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক গানটির কথা, সুর ও গায়কির উচ্ছসিত প্রশংসা করে একে হারানো দিনের আধুনিক বাংলা গানের সাথে তুলনা করেন। সঙ্গীতের প্রতি তার নিজের ভালোবাসার কথা জানিয়ে বিচারপতি মানিক গানটির ব্যাপক প্রচারের উপর জোড় দেন, যাতে মানুষ আরো বেশি বেশি করে ভোটদানে আগ্রহী হয়ে উঠে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. স্বপ্লীল জানান,বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি এদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের কৃতজ্ঞতা ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তারা এই গানটির প্রযোজনার উদ্যোগ নিয়েছেন।
তিনি এবং গানটির গীতিকার ডা. ডিউসহ এই গানটির সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেক লিভার বিশেষজ্ঞ জোট সরকারের সময় দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল জানান,তারা প্রত্যেকে তাদের ছাত্র রাজনীতির এই অতীত সম্পৃক্ততার জন্য গর্বিত এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা থেকেও তারা এই গানটি প্রযোজনা করেছেন।
তিনি আগামী নির্বাচনে ব্যাপকভাবে ভোট কেন্দ্রে যেয়ে ভোট প্রদানের মাধ্যমে জাতিকে তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত দ্বিতীয় বিপ্লব সফল করার আহবান জানান। কেক কাটার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়।
উল্লেখ্য,৭১’র চেতনায় লিভার বিশেষজ্ঞ ক’জনা প্রযোজিত এই নির্বাচনী প্রচারনায় সঙ্গীতটি দেখা নিচের লিংকে :
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদের পাশাপাশি তিনি নিজেও গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক পোস্ট করে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার ইতালির ওট্রান্টো থেকে ফ্লোটিলার বৃহত্তম জাহাজ ‘কনসায়েন্সে’ চড়ে যাত্রা শুরু করেন শহিদুল আলম।
গত শনিবার রাজধানী ঢাকার শুক্রাবাদে দৃকপাঠ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম ঘোষণা দেন, গাজা উপত্যকায় চলমান নৃশংসতার বিষয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের নীরবতা ভাঙতে আন্তর্জাতিক সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) উদ্যোগে পরিচালিত ‘মিডিয়া ফ্লোটিলা’ অভিযানে অংশ নিতে যাচ্ছেন তিনি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন গত রোববার ইতালির উদ্দেশে রওনা হন বাংলাদেশি এ মানবাধিকারকর্মী। এতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে শহিদুল আলমের বক্তব্য হচ্ছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে ফিলিস্তিনে, গাজায় মানুষ হত্যা করছে। তার সঙ্গে পাশ্চাত্যের অনেকগুলো দেশ যুক্ত, তারাও সহযোগিতা করছে এবং তারাও এতে অংশীদার। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক মানুষ, সারা পৃথিবীর মানুষ এর প্রতিবাদও করছে এবং এই প্রতিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখে তিনি মিডিয়া ফ্লোটিলায় যোগ দিয়েছেন।
নৌবহর সম্পর্কে শহিদুল আলম জানিয়েছিলেন, ‘এবার ৫০টির অধিক জাহাজ যাচ্ছে। আমরা যেই জাহাজে যাচ্ছি, সেটিতে প্রায় ১০০ জন থাকবে। যার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সাংবাদিক, এক-তৃতীয়াংশ চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত আর এক-তৃতীয়াংশ থাকবে, যারা এটি আয়োজন করেছে। তার সঙ্গে আরও ১০টি ছোট নৌযান থাকবে। ৪৪টি দেশ থেকে এই ফ্লোটিলাতে অংশ নিচ্ছেন।’
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার এই নৌবহর ইতোমধ্যে ইসরায়েল ঘোষিত তথাকথিত ‘বিপৎসীমায়’ প্রবেশ করেছে বলে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে জানান, শহিদুল আলম। পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এই নৌবহরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বাংলাদেশের খ্যাতিমান এ আলোচ্যচিত্রী ২০১৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনের পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন। পাশাপাশি প্রথম এশীয় হিসেবে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো জুরির চেয়ারম্যান হন শহিদুল আলম।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খসড়া ভোটকেন্দ্রের ওপর আসা দাবি-আপত্তি আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপর পর্যালোচনা শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২০ অক্টোবর।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। এরপর সে তালিকার ওপর আপত্তি জানানোর শেষ সময় দেওয়া হয়েছিল ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বর্তমানে সেগুলো নিষ্পত্তির কাজ করছেন মাঠ কর্মকর্তারা।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, খসড়া তালিকা অনুযায়ী সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৬১৮টি। বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬১ লাখ ৬১ হাজার ২০১ জন ধরে গড়ে প্রতি তিন হাজার ভোটারের জন্য একটি কেন্দ্র রাখা হয়েছে। এ হিসেবে ৪২ হাজার ৬১৮টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া, পুরুষদের জন্য প্রতি ৬০০ জনের জন্য একটি কক্ষ ধরে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৯টি ভোটকক্ষ, আর নারীদের জন্য প্রতি ৫০০ জনের জন্য একটি কক্ষ ধরে ১ লাখ ২৯ হাজার ১০৭টি কক্ষের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। মোট ভোটকক্ষ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি। তবে এই সংখ্যা কিছুটা এদিক-সেদিক হতে পারে।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দিতে চায় ইসি। এজন্য সকল কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল আসন্ন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। গতকাল বুধবার তিনি নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। শুধু তামিম নন, সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন আরও বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর সাংবাদিকদের তামিম বলেছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করার আগে নির্বাচনের ফিক্সিং বন্ধ করেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমিসহ প্রায় ১৪ থেকে ১৫ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি। প্রত্যাহারের কারণটা খুবই স্পষ্ট। আমার কাছে মনে হয় না বিস্তারিতভাবে আপনাদের কিছু বলার দরকার আছে। নির্বাচন কোন দিকে যাচ্ছে, এই জিনিসটা এখন পরিষ্কার। যখন যেমন মনে হচ্ছে, যখন যা মনে হচ্ছে, তখন তা করা হচ্ছে। এটা আসলেই নির্বাচন নয়, ক্রিকেটের সঙ্গে এই জিনিসটা কোনো দিক থেকেই মানায় না।’
তামিমের ভাষায়, ‘যারা নাম প্রত্যাহার করেছেন, তারা সবাই হেভিওয়েট, তাদের ভোটব্যাংকও শক্তিশালী। এটা একটা প্রতিবাদ। দিন শেষে এই নোংরামির অংশ হয়ে আমরা থাকতে পারব না। বাংলাদেশ ক্রিকেট এটা ডিজার্ভ করে না। যারা এভাবে নির্বাচন করতে চান, তারা করতে পারেন। তবে আজ ক্রিকেট শতভাগ হেরে গেছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আপনারা বড় গলায় বলেন বাংলাদেশে ফিক্সিং বন্ধ করা লাগবে, আগে নির্বাচনের ফিক্সিং বন্ধ করার চিন্তা করেন। পরে ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করার চিন্তা করেন। এই নির্বাচন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটা কালো দাগ হয়ে থাকল।’
তামিমের মতোই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এক্সিউম ক্রিকেটার্স থেকে পরিচালক পদে প্রার্থিতার মনোনয়ন প্রত্যাহার করা ইসরাফিল খসরু। নির্বাচনে সরকারের একটি গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘সরকারের একটি গোষ্ঠী এখানে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করছে। আপাতত এটুকুই বলতে পারি। আমাদের পুরো বক্তব্য শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে।’
মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়ে ইসরাফিল খসরু বলছেন, ‘এখানে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ দেখছি না। খুবই দুঃখজনক ব্যাপার যে, বিসিবির নির্বাচনে এই পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটাই ছিল অস্বচ্ছ।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেলা-বিভাগের কাউন্সিলরদের ফোন করে প্রভাব বিস্তার করা হয়েছে। এ রকম উদাহরণ আমরা বিভিন্নভাবে পেয়েছি। আবার ১৫টি ক্লাব নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা দেখছি। নতুন বাংলাদেশে আমরা এ রকম নির্বাচন দেখতে পারি না। নির্বাচন ম্যানুফেকচার করা হচ্ছে, এমনটা হতে পারে না। তাই নৈতিক জায়গা থেকে আমরা এই অবস্থান নিয়েছি।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ইন্দিরা রোড ক্লাবের হয়ে পরিচালক পদে নির্বাচন করতে চাওয়া রফিকুল ইসলাম। তিনি গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা শেষ পর্যন্ত কেন টিকেনি? রফিকুল বলেছেন, ‘আমরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চেয়েছিলাম। ২০০৫ সালে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখেছিলাম। আমরা তেমন একটা নির্বাচন চেয়েছিলাম। সমঝোতার কথাটা হাওয়ায় উড়ে বেরিয়েছে, কোনো সঠিক তথ্য ছিল না।’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিসিবি নির্বাচন থেকে ১১ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ক্যাটাগরি-১ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন মির হেলাল, ক্যাটাগরি-৩ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন সিরাজ উদ্দিন আলমগীর।
ক্যাটাগরি-২ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন তামিম ইকবাল, সাইদ ইবরাহিম (বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে), ইসরাফিল খসরু (বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে), রফিকুল ইসলাম বাবু, বোরহানুল পাপ্পু, মাসুদুজ্জামান, আসিফ রব্বানি, মির্জা ইয়াসির আব্বাস (বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ছেলে) ও সাব্বির আহমেদ রুবেল।
চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা গতকাল বুধবার দুপুর ২টায় ঘোষণা করার কথা নির্বাচন কমিশনের।
বিসিবি নির্বাচনে যাচাই-বাছাই ও শুনানি শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় নাম ছিল ৫০ জনের। গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন ১৬ জন। অর্থাৎ ৬ অক্টোবরের নির্বাচনে ২৫টি পরিচালক পদের জন্য ৩টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচনে অংশ নেবেন ৩৩ প্রার্থী।
মনোনয়ন প্রত্যাহার করা প্রার্থীরা ‘ব্যক্তিগত কারণে’ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. শেখ জোবায়েদ হোসেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে বিসিবি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট ১৬টি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। সেই মোতাবেক আমরা প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছি।’
ইতোমধ্যে জেলা-বিভাগের ক্যাটাগরিতে ১০ পরিচালকের ৬ জনই অবশ্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। খুলনা বিভাগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও সাবেক নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক এবং জুলফিকার আলী খান। বরিশাল থেকে শাখাওয়াত হোসেন এবং সিলেটের রাহাত সামসও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই নির্বাচিত হয়েছেন।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম ও রাজশাহী থেকে একটি করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হয়েছে। এতে করে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর ও আহসান ইকবাল চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাহিরের ইন্ধনে দুষ্কৃতকারীরা পূজাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল। তারা সফল হতে পারেনি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের ইছাপুরায় শ্রী শ্রী সার্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পূজার শুরুতে ধর্ষণের ঘটনা প্রচার করে পূজাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ কাজে বাহিরের ইন্ধন ছিল কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা সফল হতে পারেনি।
এবার বাংলাদেশের সব জায়গায় ভালোভাবে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পূজা সম্পন্ন হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, দুর্গাপূজা ও বৌদ্ধদের বিজু উৎসব যাতে ভালোভাবে হতে না পারে তার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশের সহযোগিতায় কিছু সন্ত্রাসী এ ধরনের কাজ করেছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিশেষ করে পূজা কমিটির সহযোগিতায় এ বছর শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হয়েছে। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা আক্তার, সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল ) মো. ইব্রাহিম, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাদর পাল। সূত্র : বাসস
আজ বুধবার (১ অক্টোবর) সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার চতুর্থ দিন। আজ মহানবমী, দেবীর বিদায়ক্ষণ শুরু। দশমীতে কৈলাশে (স্বামীর বাড়ি) ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা।
জানা গেছে, নবমীতে বিশেষ কোনো পর্ব না থাকলেও সকালে তর্পণে দুর্গার মহাস্নান হবে, ষোড়শ উপচারে পূজা করা হবে। নবমীর সন্ধ্যায় দেবীদুর্গার ‘মহাআরতি’ করা হয়। মহানবমীতে বলিদান ও নবমী হোমের রীতি রয়েছে। এদিন ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা হবে দেবীদুর্গার। পূজা শেষে যথারীতি থাকবে অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ।
নবমী তিথি শুরুই হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। সন্ধিপূজা হয় অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর সূচনার প্রথম ২৪ মিনিটজুড়ে। মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা হয় এই সময়ে। ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ১০৮টি পদ্মফুল নিবেদন করা হয় দেবীর চরণে। আর ঠিক এই কারণে পূজার মন্ত্রেও সেই বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে।
মহানবরাত্রিতে দেবীদুর্গার আরাধনার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যদিও সারা বছর ধরে যে উৎসবের জন্য অপেক্ষা করা হয়, তার বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেয় এই নবমী নিশি। তাই নবমী নিশিকে সবাই ধরে রাখতে আকুতি জানায়। বাজতে থাকে একটাই সুর ‘ওরে নবমী-নিশি, না হইও রে অবসান’।
পুরোহিতদের মতে, মহানবমীতে ভক্তদের দেওয়া ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা হবে দেবীদুর্গার। এছাড়া আজ নীলকণ্ঠ, নীল অপরাজিতা ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে মহানবমীর বিহিতপূজা হবে।
মহানবমীর দিনে যজ্ঞের মাধ্যমে দেবীদুর্গার কাছে আহুতি দেওয়া হবে। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবীদুর্গাকে বিদায় জানাবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা ৪ দিনের ছুটিতে গেলেন সরকারি কর্মচারীরা। আজ বুধবার (১ অক্টোবর) থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৪ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে। ছুটি শেষে আগামী রোববার থেকে কর্মস্থলে ফিরবেন তারা।
২০২৫ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ১ অক্টোবর (বুধবার) নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি। আর ২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সাধারণ ছুটি। পরের দুদিন ৩ ও ৪ অক্টোবর (শুক্র ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি। সবমিলিয়ে ১ থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৪ দিনের ছুটি পেয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা।
সাধারণত সরকারি কর্মচারীদের ঈদে তিন দিন করে ও দুর্গাপূজায় একদিন ছুটি থাকে। তবে কোনো কোনো বছর নির্বাহী আদেশে তা বাড়ানো হয়। ২০২৫ সালের দুই ঈদ মিলিয়ে মোট ১১ দিন ছুটি এবং শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি দুই দিন অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বছরের ১৭ অক্টোবর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী ছুটির তালিকা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এদিকে এই ছুটিতে খোলা থাকবে জরুরি সেবাগুলো। এর মধ্যে- বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত কর্মীরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন।
হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবেন। চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটি ভোগ করবেন না। একইসঙ্গে জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসগুলো এই ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নয় দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল) প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইট জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে আসে।
সফরকালে গত ২৬ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন।
এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। একই দিনে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এবং জাতিসংঘের অনুন্নত, স্থলবেষ্টিত ও ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা ইউনূসের সঙ্গে আলাদা সাক্ষাত করেন।
নিউইয়র্ক অবস্থানকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত এক সংবর্ধনায় যোগ দেন অধ্যাপক ইউনূস। সেখানে তিনি ট্রাম্পকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
এছাড়া নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, ভুটান ও কসোভোসহ কয়েকটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ নিয়ে প্রথম উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে এই প্রতিশ্রুতি আসে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে জানান, যুক্তরাষ্ট্র ৬০ মিলিয়ন এবং যুক্তরাজ্য ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান হল তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন। এ জন্য রাখাইনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপসহ সাত দফা প্রস্তাব দেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অর্থায়ন ক্রমেই কমে আসছে। এখন একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথ হল তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, প্রোপোর্শনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও ঝুলন্ত পার্লামেন্টের জন্ম দেয়। তিনি দাবি করেন, দেশের মানুষ এই পদ্ধতির বিপক্ষে। গতকাল মঙ্গলবার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা পিআর বলতে বুঝি পাবলিক রিলেশন, অর্থাৎ জনসংযোগ। এখন সবাই জনসংযোগে ব্যস্ত, সেই পিআরেই আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু যারা প্রোপোর্শনাল রিপ্রেজেন্টেশনের নামে দেশে ‘পার্মানেন্ট রেস্টলেসনেস’ বা স্থায়ী অস্থিরতা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা সফল হবে না।’
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতির বিভাজনে বিশ্বাস করে না। দলটি সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে একটি সমন্বিত রাজনৈতিক ধারায় বিশ্বাসী। বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চায়।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা দাবি করেন, দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাধা সৃষ্টি করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এখানে দেশি ও বিদেশি শক্তির ভূমিকা থাকতে পারে, এমনটি আমরা অনুমান করতে পারি। তবে দেশের জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ, তারা যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের মানুষ নির্বাচনমুখী, এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ইতোমধ্যে জনসংযোগ শুরু করেছেন। কেউ যদি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে, জনগণ তাদের রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত ও প্রত্যাখ্যান করবে বলে তিনি সতর্ক করেন।
এ সময় তিনি সব রাজনৈতিক দলকে বিভেদ ভুলে দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান
বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের একটি অংশ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদী অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মঙ্গলবার এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে এগোচ্ছে। এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়, একদিনে সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তারা সাধারণত খুব কৌশলী ও প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ হয়। ফলে ফেরত আনার কাজ দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল হয়ে পড়ে।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘অর্থ ফেরত আনা মানে সুইস ব্যাংকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে আসা নয়। আন্তর্জাতিক আইনি ও আর্থিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এটি করতে হয়। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কিছু অগ্রগতি হয়েছে এবং বেশ কিছু বিখ্যাত আইনি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিছু নির্দিষ্ট বিচার ব্যবস্থার সঙ্গেও আলোচনা এগোচ্ছে। আমরা আশা করি ফেব্রুয়ারির মধ্যে কিছু ফল পাওয়া যাবে।’
অর্থ উপদেষ্টা জানান, সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে ১১-১২ টি মানিলন্ডারিং মামলা চিহ্নিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট সম্পদের তদন্ত অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পদ জব্দ করেছে, বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছে এবং সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট ও বসবাসের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব মামলা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এগোচ্ছে।’
আগামী নির্বাচনের পর নতুন সরকার আপনাদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাধ্য হয়ে তাদের চালিয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা প্রক্রিয়াগুলো চালু করে গেলাম, সেটা অব্যাহত না থাকলে তো টাকা ফেরত আনতে পারবে না। তারা বসে থাকলে টাকা ফেরত আসবে না। আর যদি আনতে হয় এই প্রক্রিয়াগুলো মানতে হবে। এটা তো ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস। আমরা যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি তা বজায় রাখতে হবে।’
খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আতপ চালের একটি বাফার মজুত রাখি। অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে যাতে সংকট না হয় সে জন্য নীতিগতভাবে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, সার বিশেষ করে-ডিএপি ও ইউরিয়া আমদানিতে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সুখবর হচ্ছে-আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কিছুটা কমেছে। আমরা বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করছি, পাশাপাশি যথেষ্ট চাল ও সারের মজুদও রাখছি।
সাম্প্রতিক বিবিএস প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকার শিশু ও মাতৃকল্যাণ বিষয়ে সতর্ক। তাই ভিজিএফ কর্মসূচি এবং উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আসন্ন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি চাল দেওয়া হবে।’
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মজুত ভালো থাকায় চালের দাম সম্প্রতি কমেছে। তবে শাকসবজি ও অন্যান্য দ্রুত নষ্ট হওয়া পণ্যের দাম মৌসুমি কারণে ওঠানামা করে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর কারসাজি এখনো অব্যাহত রয়েছে। ‘ এ কারণেই আমরা এখনো পূর্ণ সাফল্য দাবি করতে পারছিনা,’ স্বীকার করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) এর প্রথম সভা আজ নগর ভবন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিএসসিসি প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া এঁর সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার বিভাগের "সিটি কর্পোরেশন নাগরিক সম্পৃক্ততকরণ নির্দেশিকা" এর আলোকে গঠিত সিএলসিসির ৭১ জন সদস্য উপর্যুক্ত সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (সিএলসিসি) সভায় আলোচনাপূর্বক উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মপরিকল্পনা সুপারিশ করতে পারে। এ সভায় সিটি কর্পোরেশনের বার্ষিক বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা, আর্থিক বিবরণীসহ বার্ষিক অর্জন সম্পর্কিত প্রতিবেদন, নাগরিক জরিপ, সামাজিক সমস্যাবলি সমাধানের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ, সিটি কর্পোরেশনের সেবাসমূহের মান উন্নয়ন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও নাগরিকদের যথাযথভাবে সেবা প্রদানে চ্যালেঞ্জসমূহ আলোচিত হতে পারে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, "জুলাই পরবর্তী নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে সিএলসিসি কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা তাদের মাধ্যমে সরাসরি নাগরিকদের মতামতের প্রতিফলন হয়।" এ সময় প্রশাসক ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসির গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে জনগণকে এ বিষয়ে আরও সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় সদস্যবৃন্দ ডিএসসিসির সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা ও সুপারিশ প্রদান করেন এবং সিটি কর্পোরেশন নাগরিক জরিপে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ জহিরুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সকল বিভাগীয় প্রধান এবং মিস নাউকু আনজাই, টিম লিডার, সিফরসি২ উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। মা ইলিশ রক্ষায় এসময় বিশেষ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা জানান, ইলিশের স্থায়ী উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে মৎস্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রধান প্রজনন মৌসুমে পরিপক্ক ইলিশের নিরাপদে ডিম দেওয়া নিশ্চিত করা এবং সারাদেশে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর ঘোষণা করেছে, চলতি বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর (১৯ আশ্বিন থেকে ৯ কার্তিক ১৪৩২) পর্যন্ত মা ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ফরিদা আখতার জানান, আশ্বিনী পূর্ণিমার আগের চার দিন এবং অমাবস্যার পরের তিন দিনসহ মোট ২২ দিন এ অভিযান চলবে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিএফআরই) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের মতামত অনুযায়ী এ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, প্রজনন মৌসুমে পূর্ণিমা ও অমাবস্যা উভয় সময়ই ডিম পাড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই দুটি পর্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করে সর্বোচ্চ প্রজনন নিশ্চিত করা হয়েছে। এবারের কর্মসূচি ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫’ নামে পরিচিত।
তিনি বলেন, ঘোষিত সময় নদীতে ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রি, মজুদ ও বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। অভিযান পরিচালনায় মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌ ও বিমান বাহিনীসহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশগ্রহণ করবে।
উপদেষ্টা জানান, মোট ৩৭টি জেলার ১৬৫টি উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪০ জেলে পরিবারকে ভিজিএফ (চাল) দেওয়া হবে। পরিবার প্রতি বরাদ্দ থাকবে ২৫ কেজি চাল। পুরো কার্যক্রমে মোট ১৫,৫০৩.৫০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে।
তিনি বলেন, অভিযানের সময় জলসীমার বাইরে মাছ ধরা ট্রলারের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নদীতে ড্রেজিং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হবে। একইসঙ্গে সমুদ্র উপকূল ও মোহনায় টানা ২২ দিন ইলিশ আহরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
উপদেষ্টা ফরিদা আরও বলেন, গত বছর ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনে মোট ২,১৬৯টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৯,৮১৩টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেসময় ৫৪.৮৬ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ, ৬১২.১১ লাখ মিটার জাল ধ্বংস এবং ৭৫.২৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মধ্যে বাল্যবিয়ে ও কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের প্রবণতা উদ্বেগজনক আকারে বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই শ্রমিকদের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি (৬৬ শতাংশ) ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়েছে। তাদের অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়সে প্রথমবারের মতো গর্ভধারণ করেছেন। একই সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের হারও এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তুলনামূলক বেশি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি মিলনায়তনে ‘তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণা বলছে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী শ্রমিক অন্তত একবার অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং প্রতি চারজনের একজন গর্ভপাত বা মেনস্ট্রুয়াল রেগুলেশন করেছেন।
জানা গেছে, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহায়তায় আইসিডিডিআরবি প্রায় ২৪ মাসব্যাপী এই গবেষণা পরিচালনা করে, যা বাংলাদেশে পরিচালিত প্রথম এমন কোনো গবেষণা। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণাটি কড়াইল ও মিরপুর বস্তি এবং গাজীপুরের টঙ্গী বস্তিতে আইসিডিডিআরবির আর্বান হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভেইলেন্সের আওতাধীন এলাকায় পরিচালিত হয়। ১৫-২৭ বছর বয়সি মোট ৭৭৮ জন বিবাহিত নারী গার্মেন্ট শ্রমিককে এই গবেষণাটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর এদের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়।
সেমিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে জানানো হয়, গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন ৪৯ শতাংশ শ্রমিক, যা দুই বছর শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে। জরুরি গর্ভনিরোধক বড়ি সম্পর্কে জ্ঞান ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ নারীর; গবেষণা শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ শতাংশে। একই সময়ে পরিবার পরিকল্পনায় লিঙ্গ সমতার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশে পৌঁছেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, নারী শ্রমিকরা ঘর ও কর্মস্থল দুই জায়গাতেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। গত ১২ মাসে স্বামীর সহিংসতার হার ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যৌন সহিংসতা ছাড়া অন্য সব ধরনের সহিংসতা গত দুই বছরে বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রেও সহিংসতার প্রবণতা উল্টোদিকে গেছে— গবেষণার শুরুতে যেখানে প্রায় ৪৮ শতাংশ শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে মানসিক সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন, গবেষণার শেষ দিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে।
তবে সহিংসতার শিকার হওয়ার পরও খুব কম সংখ্যক নারী আনুষ্ঠানিকভাবে সাহায্য চাইছেন। গবেষণার শুরুতে যেখানে ৩৫ শতাংশ নারী অনানুষ্ঠানিকভাবে (পরিবার বা বন্ধুদের কাছে) সাহায্য চাইতেন, গবেষণার শেষ দিকে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২১ শতাংশে। কর্মক্ষেত্রের সহিংসতার ঘটনাতেও মাত্র এক-পঞ্চমাংশ নারী কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, এবং দুই বছর পরেও এ হার অপরিবর্তিত থাকে।
তরুণ বয়সে গর্ভধারণের ঝুঁকি কমাতে কিছু নিয়ামকও চিহ্নিত হয়েছে গবেষণায়। দেখা গেছে, যারা সন্তান ধারণের আগেই গর্ভনিরোধক ব্যবহার শুরু করেছিলেন, তাদের কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ৪৭ শতাংশ কম। এছাড়া যারা প্রথম গর্ভধারণের আগে গার্মেন্ট খাতে কাজ শুরু করেছিলেন, তাদের ঝুঁকি আরও কম।
অন্যদিকে, স্বামী কর্তৃক সহিংসতার অভিজ্ঞতা থাকলে কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়ে যায় বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
গবেষণার উপাত্ত বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, নারীর ক্ষমতায়নের বিভিন্ন মাত্রা স্বামীর সহিংসতাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। যেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বেশি থাকলে মানসিক ও যৌন সহিংসতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। মতামত প্রকাশের ক্ষমতা থাকলে যৌন সহিংসতা কমে। আবার চলাচলে স্বাধীনতা থাকলে শারীরিক সহিংসতার ঝুঁকিও কমে যায়।
ঢাকার মহাখালীতে আইসিডিডিআরবি ক্যাম্পাসে আয়োজিত সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (পরিকল্পনা ও গবেষণা) সহকারী পরিচালক ডা. সেকেন্দার আলী মোল্লা, পপুলেশন কাউন্সিল বাংলাদেশের সাবেক পরিচালক ডা. উবাইদুর রব, বিকেএমইএর যুগ্ম সচিব ফারজানা শারমিন এবং মেরী স্টোপস বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও স্বতন্ত্র গবেষক ইয়াসমিন এইচ আহমেদ।
বিকেএমইএর যুগ্ম সচিব ফারজানা শারমিন বলেন, গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শমূলক সেবা বৃদ্ধির কাজ চলছে। তবে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
এই গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন আইসিডিডিআরবির ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. রুচিরা তাবাসসুম নভেদ। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেলে তারা শুধু পরিবারে নয়, কর্মক্ষেত্রেও সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত হতে পারেন। গার্মেন্ট শ্রমিক নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।