শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫
২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

ভোটের দিন মাঠে র‍্যাবের ৭০০ টহল দল

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড
৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ২২:৫০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ২২:৪৮

আগামীকাল রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারা দেশে র‍্যাবের ৭০০ টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন।

শনিবার বিভিন্ন নির্বাচন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে ঢাকার মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

র‍্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘র‍্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সবার সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা সারা দেশে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করেছি। আজ র‍্যাবের ৭০০ টহল দল কাজ করবে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমি কিছু ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখেছি, সব কিছুই প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জেলায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। তাতে একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে, সবার মধ্যে ভালো সমন্বয় রয়েছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করা যাবে বলে আশা করছি।’

এম খুরশীদ হোসেন আরও বলেন, ‘ডগ স্কোয়াড, বোম ডিসপোজাল ইউনিট এবং বিশেষ প্রয়োজনে র‍্যাবের হেলিকপ্টার থাকবে। এর বাইরে আমাদের একটি নতুন ডিভাইস আছে যার নাম ‘ওআইভিএস’। এই ডিভাইস দিয়ে এলাকার বাইরের কেউ এলে শনাক্ত করা হবে।’

গণমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে নাগরিক হিসেবে, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের সহযোগিতা করবেন। পাশাপাশি আপনাদের মাধ্যমে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’

বিষয়:

বাজারে স্বস্তি নেই, চাপে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা

বেড়েছে ডিম, মুরগি, পেঁয়াজসহ সব ধরনের সবজির দাম
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজি-কাঁচামরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশ চড়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। পাশাপাশি দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, ডিম ও মুরগির। সব মিলিয়ে নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্য ও স্বল্প আয়ের মানুষদের।

বাজারে পেঁয়াজ ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা পর্যায়ে ১৫–২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ। প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। তবে সরবরাহ বাড়ায় কিছুটা কমেছে ইলিশের দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আর ডিমের চাহিদা বেড়েছে, সে তুলনায় সরবরাহ বাড়েনি। এ কারণে পণ্য দুটির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। সরবরাহ ঠিক হলে দাম কমে আসবে।

রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে চার–পাঁচ দিন আগেও মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যেত ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে হঠাৎ কেজিতে ১৫–২০ টাকা বেড়েছে। তাতে গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর কৃষকের ঘরে মজুত থাকা অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এতে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ কমেছে। আবার বৃষ্টির কারণেও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। মূলত এই দুই কারণে পেঁয়াজের দাম এখন বাড়তি।

ক্রেতারা বলছেন, নিত্যপণ্যের বাজারদর তাদের ওপর একটা বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। কারণ এই মুহূর্তে বাজারে চাল, সবজিসহ ডিম থেকে শুরু করে মসলাজাতীয় পণ্য, সবকিছুর দামই চড়া। দামের চাপে অনেকে বাজারের পণ্যের তালিকা ছোট করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। সরবরাহ কম দেখিয়ে গত সপ্তাহের ১০০ টাকার গোল বেগুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ৭০ টাকার লম্বা বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১০০ টাকার দেশি শসা বর্তমানে ১২০, ৬০ টাকা হাইব্রিড শসা ৮০, ৬০ টাকার ঝিঙ্গা ৮০, ৫০ টাকার লাউ ৭০ থেকে ৮০, ৮০ টাকার করলা পৌঁছেছে ১০০-তে।

এদিকে পটোল ৬০, বরবটি ৮০, চিচিঙ্গা ৬০, কাঁকরোল ৮০, ঢ্যাঁড়স ৬০, চায়না গাজর ১২০ থেকে ১৪০, দেশি গাজর ৮০, পেঁপে ৩০, টমেটো ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কুমড়ো কেজি প্রতি ৪০, কচুরমুখী ৬০, লেবুর হালি ৩০, কচুর লতি ৮০, আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। কাঁচামরিচের দাম ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা কেজি।

গত এক মাসে বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। গত মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে, জুনে যা ছিল ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট সাইজের ইলিশ এতদিন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়।

মাঝারি সাইজের ইলিশের দাম এতদিন ছিল ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা যা কমে হয়েছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এক কেজি বা এক কেজির ওপরে ইলিশ কদিন আগেও ২৪০০ থেকে ২৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন দাম ২০০০ থেকে ২৩০০ টাকা।

ইলিশের দাম কমলেও অন্যান্য মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। রুই-কাতলা সাইজভেদে ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, শিং ও মাগুর ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, বোয়াল ও কোরাল ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং গলদা চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ আর বাগদা চিংড়ি ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়।

এক দিনে গরুর মাংসের দাম কিছুটা কমেছে। বেশিরভাগ বাজারে এতদিন ৮০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি হলেও আজ দাম নেমেছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। তবে খাসি বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই; কেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা।

চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগির মাংস। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। গত সপ্তাহের ১৬০ টাকা কেজির মুরগি স্থানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। দাম বাড়তি সোনালি মুরগির। ৩০০ টাকা কেজির পাকিস্তানি সোনালি মুরগি এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়।

চালের বাজারেও নেই স্বস্তি। চড়া চালের দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী। মাস দেড়েক ধরে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল। মোটা চালের দামই এখন ৬০ টাকার বেশি। মাঝারি মানের এক ধরনের কিছু মিনিকেট ও নাজির রয়েছে, যেটা শুধু ৬৫-৭০ টাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া বাকি সব চালের দাম সাধারণত ৭৫-৮৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর খুব ভালো মানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চালের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই করছে।

বাজারে আসা অনেক ক্রেতাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একদিকে আয় বাড়েনি, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দামে আগুন। বাজার করতে গেলে লিস্ট ছোট করতে হয়।’

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তারা বলছেন, সবজির সঙ্গে চাল, পেঁয়াজ, ডিম ও মাংসের দাম বাড়ায় তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।


ফেসবুক গ্রুপে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র

অ্যাডমিন মেজর সাদিকের স্ত্রী
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফেসবুকে ‘ওডিবি-এম-১৭০১ (অপারেশন ঢাকা ব্লকেড)’ নামে একটি গোপন গ্রুপ খুলে সেখানে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে ইউনিলিভার বাংলাদেশে কর্মরত সুমাইয়া তাহমিদ জাফরিনের বিরুদ্ধে। তিনি অবসরপ্রাপ্ত মেজর সাদিকুল হকের স্ত্রী। গ্রুপটির অন্যতম অ্যাডমিনও তিনি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের পাঠানো তথ্য গুগল শিটে এন্ট্রি দিতেন সুমাইয়া। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তথ্য সংগ্রহ, গোপন কোড তৈরি এবং অনলাইন মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে সদস্যদের সমন্বয়ের কাজ করতেন। এমনকি রাজধানীর পথে ঘুরে বেড়ানো টোকাইদেরও সংগ্রহ করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের পরিকল্পনা হয় ওই গ্রুপের মাধ্যমে।

রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টার ছাড়াও বিভিন্ন রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক ফ্ল্যাটে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন সুমাইয়া ও তার স্বামী। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত আরও বেশকিছু নাম উঠে এসেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অনুসন্ধানে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে মামলায় সুমাইয়াকে ৫ দিনের রিমান্ডের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ এ আদেশ দেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ৮ জুলাই রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০ থেকে ৪০০ জন অংশ নেন। তারা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।

বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারাদেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তারা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন।

এ ঘটনায় ১৩ জুলাই ভাটারা থানার এসআই জ্যোতির্ময় মণ্ডল সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। সুমাইয়াকে গত বুধবার গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সুমাইয়া ইউনিলিভার বাংলাদেশে টেরিটরি ম্যানেজার হিসাবে টঙ্গীর গাজীপুর শাখায় কর্মরত।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুমাইয়া ও তার স্বামী মেজর সাদেকুল হক পূর্বাচলে সি-সেল নামে রিসোর্টে, কাঁটাবনে রেস্টুরেন্টে এবং মিরপুর ডিওএইচএসে একাধিকবার রাষ্ট্রবিরোধী গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। এছাড়া উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিপরীতে প্রিয়াংকা সিটির দুই নম্বর গেটসংলগ্ন সুমাইয়ার একটি ফ্ল্যাটে একাধিকবার গোপন বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল—কীভাবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও সমর্থকদের উৎসাহিত করা যায় এবং দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা যায়। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বৈঠকগুলোতে বিস্তর আলোচনা হয়। প্রশিক্ষণের উদ্দেশেও কয়েকবার একত্রিত হয়েছিলেন তারা।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, সুমাইয়াকে বুধবার মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের ঘটনায় সুমাইয়ার কী ধরণের ভূমিকা ছিল, তার সঙ্গে আরও কারা ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, সুমাইয়ার বিষয়ে বিধিবিধান মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।

গত বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ সুমাইয়ার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন তাকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. জেহাদ হোসেন। সুমাইয়ার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজিজুল হক দিদার ও কাইয়ুম হোসেন নয়ন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তারা বলেন, বিদেশি সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে সরকারকে উৎখাতের জন্য ভাটারায় একটি কনভেনশন হলে একত্রিত হয় তারা।

সুমাইয়া জাফরিনের আইনজীবী মোর্শেদ আলম শাহীন বলেন, বাদী মামলায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন এ ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত। মামলার এজাহারে সুমাইয়ার নাম নেই। ১১ জুলাই মামলা হয়েছে আর তাকে সন্দিগ্ধ আসামি হিসাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬ আগস্ট। কোনো আসামি ১৬৪, ১৬১ ধারায় জবানবন্দিতে এ নাম বলেননি। এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন সুমাইয়া।

তিনি বলেন, কেবি কনভেনশন হলে এএসপি পরিচয়ে অন্য কেউ ঢুকেছে। কিন্তু আমার নামে দোষ চাপানো হচ্ছে। সেখানে আগে থেকে সব কিছু অ্যারেঞ্জ করা ছিল। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে ওখানে গিয়েছিলাম। ওখানে কী ধরনের কাজ হচ্ছিল সে সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। কিছু জানার থাকলে আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমাকে রিমান্ডে দিয়েন না স্যার (বিচারক)। আমি কোনো অন্যায় করিনি।


ভারত থেকে পোশাক কেনা স্থগিত করছে বড় বড় মার্কিন কোম্পানি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর ভারতের তৈরি পোশাকের অর্ডার স্থগিত করতে শুরু করেছে ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন, টার্গেট ও গ্যাপসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় বেশ কয়েকটি কোম্পানি। পাশাপাশি অনেক কোম্পানি ভারত থেকে পোশাক কারখানা অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবছেন। এতে দেশটির তৈরি পোশাক খাত বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে।

এনডিটিভির এক সংবাদে বলা হয়েছে, ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের পর মার্কিন প্রশাসন ‘রাশিয়ার জ্বালানি তেল কেনার অপরাধে’ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পণ্য রপ্তানিতে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসায়। তারপরও ভারতের তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারকেরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ স্থগিত রাখার ই–মেইল পেতে শুরু করেন। ই–মেইলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্রয়াদেশ স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।

সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ শুল্কের বোঝা ভাগ করতে রাজি নয়। তারা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের এই ব্যয় বহন করতে বলছে।

উচ্চ শুল্কের কারণে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৩০-৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ কারণে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়াদেশ ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। তাতে কয়েক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতির শঙ্কা করছেন ভারতের রপ্তানিকারকেরা।

ভারতের ওয়েলস্পান লিভিং, গোকলদাস এক্সপোর্টস, ইন্দো কাউন্ট ও ট্রাইডেন্টের মতো বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের মোট রপ্তানির ৪০-৭০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে করে থাকে। ভারতের তৈরি পোশাক ও বস্ত্রের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারত চতুর্থ শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। গত বছর ভারত ৪৬৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। এই বাজারে ভারতের মূল প্রতিযোগী দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। ফলে উচ্চ শুল্কের কারণে ভারত থেকে স্থানান্তরিত ক্রয়াদেশ এই দেশ দুটিতে যেতে পারে। তার কারণ, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ করে পাল্টা শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে ২৫ শতাংশ। বাকি ২৫ শতাংশ ২৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।

ভারতীয় বস্ত্র খাতের শীর্ষ সংগঠন দ্য কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি (সিআইটিআই) এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতের জন্য কার্যত ৫০ শতাংশ শুল্কহার গভীর উদ্বেগের বিষয়। সংগঠনটি বলেছে, ‘৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত শুল্ক ভারতের বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য বিশাল ধাক্কা। আগেই আমরা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে ছিলাম। এই নতুন শুল্কের কারণে তা আরও জটিল হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতার শক্তি কমে যাবে।’ সরকারের প্রতি তারা আহ্বান জানিয়েছে, এই কঠিন সময়ে খাতটিকে দ্রুত সহায়তা দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

শুধু তৈরি পোশাক ও বস্ত্র নয়, বাড়তি ৫০ শতাংশ শুল্কে ভারতের চামড়া, রাসায়নিক, জুতা, রত্ন ও গয়না ও চিংড়ি রপ্তানি খাত সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন দেশটির শিল্প বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতীয় পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক নিয়ে বিরোধ মেটার আগে তাদের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য আলোচনা হবে না। তার প্রশাসন সম্প্রতি ভারতীয় আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এ মন্তব্য করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ওভাল অফিসে দিল্লিভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, নতুন করে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর ভারতের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা আছে কি না।

ট্রাম্প জবাব দেন, ‘না, যতক্ষণ না আমরা বিষয়টি মেটাতে পারছি।’

হোয়াইট হাউস গত বুধবার এক নির্বাহী আদেশ জারি করে ভারতীয় পণ্যের ওপর জরিমানা হিসেবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে আগের ২৫ শতাংশ পাল্টাসহ মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশেষ করে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির কারণে এই ২৫ শতাংশ জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।

ট্রাম্পের জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, এই আমদানি—সরাসরি হোক বা তৃতীয় দেশের মাধ্যমে হোক, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা ‘অস্বাভাবিক ও গুরুতর হুমকি’ এবং এর ফলে জরুরি অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া ন্যায্য।

মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, প্রাথমিক ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। জরিমানা হিসেবে আরোপ করা অতিরিক্ত শুল্ক ২১ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে। মার্কিন বন্দরে প্রবেশ করা সব ভারতীয় পণ্যের ওপর এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে। তবে ইতোমধ্যে যাত্রাপথে থাকা পণ্য এবং কিছু ছাড়প্রাপ্ত ক্যাটাগরি বাদ থাকবে।

আদেশে পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্টকে এ পদক্ষেপ পরিবর্তনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যেমন ভূরাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলে অথবা ভারত বা অন্য কোনো দেশ পাল্টা ব্যবস্থা নিলে।

অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এম এস স্বামীনাথন শতবর্ষ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তার বক্তব্যে বলেন, অর্থনৈতিক চাপে ভারত পিছু হটবে না।

মোদি দাবি করেন, ‘আমাদের কাছে কৃষকের স্বার্থই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভারত কখনো কৃষক, জেলে ও দুগ্ধশিল্পের স্বার্থ নিয়ে আপস করবে না। আমি জানি, এর জন্য বড় মূল্য দিতে হবে, আর আমি প্রস্তুত। ভারত প্রস্তুত।’

ভারত বরাবরই কৃষি ও দুগ্ধশিল্পের মতো সংবেদনশীল খাত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য উন্মুক্ত করতে আপত্তি জানিয়ে আসছে। কারণ, এতে গ্রামীণ জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

এ অচলাবস্থা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা তীব্রতর করেছে, যেখানে উভয় পক্ষই নিজেদের অর্থনৈতিক নীতি ও জাতীয় স্বার্থে অনড় অবস্থান নিয়েছে।


কলকাতায় ‘পার্টি অফিস’ খুলে চলছে আ.লীগের কার্যক্রম

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

কলকাতা লাগোয়া উপনগরীটাতে শয়ে শয়ে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স, রাতদিন লাখো মানুষের ভিড় সেখানে। ব্যস্ত এই এলাকায় একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে এমন কয়েকজন যাতায়াত করছেন, যাদের কয়েক মাস আগেও সেখানে দেখা যেত না। ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করেন, এমন বেশির ভাগই চেনেন না এই নবাগত ব্যক্তিদের। চেনার কথাও নয়।

তবে তাদের অনেকেই মাত্র এক বছর আগেও বাংলাদেশের সব থেকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তারা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ ও মধ্যম স্তরের নেতা।

তারা যে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সটিতে যাতায়াত করছেন কয়েক মাস ধরে, সেখানেই ‘দলীয় দপ্তর’ খুলেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই ‘পার্টি অফিসটি নতুন।

এর আগে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পরের কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যারা ভারতে অবস্থান করছেন, তারা নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বৈঠক বা দলীয় দপ্তরের কাজকর্ম চালাতেন নিজেদের বাসাবাড়িতেই। বড় বৈঠকগুলো অবশ্য করতে হতো কোনো রেস্তোরাঁ বা ব্যাংকুয়েট হল ভাড়া করে। সে কারণেই একটা নির্দিষ্ট ‘পার্টি অফিস’-এর দরকার ছিল বলে জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

কী রকম সেই ‘পার্টি অফিস’

বাণিজ্যিক পরিসরটির পেছনের দিকের ভবনটির আট তলায় লিফট দিয়ে উঠে বাঁ দিকে গেলেই সার দিয়ে বাণিজ্যিক সংস্থার দপ্তর। করিডরের দুই দিকে হালকা বাদামি রঙের একের পর এক দরজা। তার মধ্যেই একটিতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস।

শুধু বাইরে কেন, ৫০০ বা ৬০০ স্কয়ার ফুটের ঘরটিতে উঁকি মারলেও কেউ বুঝতে পারবেন না যে এই ঘরের সঙ্গে কোনোভাবে আওয়ামী লীগ জড়িত আছে। কোনো সাইনবোর্ড, শেখ হাসিনা অথবা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ছবি কোথাও নেই ঘরটির বাইরে বা ভেতরে।

আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীর কোনো ছবি, সাইনবোর্ড কোনো কিছুই আমরা রাখিনি খুবই সচেতনভাবে। আমরা চাইনি যে এই ঘরটার পরিচিতি প্রকাশ করতে। এমনকি একটা দলীয় দপ্তরে যেসব ফাইল ইত্যাদি থাকে, সেসবও এখানে রাখা হয় না। নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এটা পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি, কিন্তু আদতে এটা একটা বাণিজ্যিক অফিস। আগে যে সংস্থা কাজ করত এখানে, তাদেরই ছেড়ে যাওয়া চেয়ার, টেবিল এসবই আমরা ব্যবহার করি।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা জানান, ৩০ থেকে ৩৫ জনের বৈঠক এই দপ্তরেই হয়ে যায়। কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতাদের বাসাবাড়িতে এখনো হয়। তবে বড় বৈঠকগুলো, যেখানে শ দুয়েক নেতাকর্মী হাজির হওয়ার কথা, সে রকম বৈঠকের জন্য কোনো ব্যাংকুয়েট হল বা কোনো রেস্তোরাঁর একটি অংশ ভাড়া নিয়ে নেওয়া হয়।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক শীর্ষ নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী কলকাতা বা তার আশপাশের অঞ্চলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন।

এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি কর্মচারী, পুলিশ কর্মকর্তা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাও চলে এসেছেন ভারতে। মাস ছয়েক আগে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছিল যে অন্তত ৭০ জন সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক মেয়রসহ শীর্ষ নেতৃত্বের প্রায় ২০০ জন কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে থাকছেন।

তাদের কেউ সপরিবার থাকেন। আবার কোথাও একসঙ্গে কয়েকজন মিলেও একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। কারও পরিবার মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ থেকে এসেও কিছুদিন কাটিয়ে যায়।

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলছিলেন, এখন যে সংখ্যাটা খুব বেশি বেড়েছে, তা নয়। দ্বাদশ সংসদের ৮০ জনের মতো সংসদ সদস্য এবং তারও আগে সংসদ সদস্য ছিলেন, এমন ১০ থেকে ১২ জন নেতা আছেন এখানে। আবার এমনও কয়েকজন এসেছেন, যারা কলকাতায় এসে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা অন্য দেশে চলে গেছেন। সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও থাকেন কলকাতার আশপাশেই।

কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের যে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বাস করছেন, তাদের প্রায় সবাই ‘পার্টি অফিসে’ যাতায়াত করে থাকেন।

আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলছিলেন, তবে অফিস খোলার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যে রকম প্রয়োজন, সে রকমই আসেন নেতারা। আবার রোজই যে সবাই আসেন, তা–ও নয়। আসলে প্রয়োজনীয়তা ছিল একটা নির্দিষ্ট জায়গা গড়ে তোলা, সে জন্যই এই পার্টি অফিস।

আওয়ামী লীগের এই নতুন পার্টি দপ্তরের ব্যাপারে ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষ যে কিছু জানবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।

দলের কোন স্তরের নেতাকর্মীরা এই দপ্তরের ব্যাপারে জানেন, সেটা জানা যায়নি।

কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে ভারতীয় গোয়েন্দারা এই দপ্তরের ব্যাপারে জানেন এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্তরের অনুমোদন ছাড়া এই দলীয় দপ্তর থেকে আওয়ামী লীগের কাজকর্ম চলতে পারত না।

যেভাবে দল চলছে এক বছর ধরে

গত এক বছরের কিছুটা কম সময় ধরে ভারত থেকেই আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। দলটির নেত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির কাছাকাছি কোথাও থাকেন আর বড় অংশ থাকে কলকাতাসংলগ্ন অঞ্চলে।

তবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলছিলেন, এই ধারণা ঠিক নয় যে ভারত থেকে দল চলছে। মূল দল বা সহযোগী সংগঠনগুলোর কতজন নেতাই–বা ভারত অথবা অন্যান্য দেশে রয়েছেন? বেশির ভাগ তো এখনো বাংলাদেশেই আছেন।

কিন্তু দলের নেত্রী শেখ হাসিনা ও শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ ভারতে আছেন বলে সেখান থেকেই যে রাজনৈতিক দিশা-নির্দেশ দেওয়া বা দলীয় অবস্থান চূড়ান্ত হবে, সেটাই স্বাভাবিক।

তবুও দুই সপ্তাহ আগপর্যন্তও শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি দলনেত্রীর। গত ৩১ জুলাই শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েকজনকে দিল্লিতে এক বৈঠকে ডেকেছিলেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ওই বৈঠকের বিষয়টি বিবিসি বাংলার কাছে নিশ্চিত করেছিলেন। তবে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কোথায় বৈঠক হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি ওই নেতারা।

দলের নেত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকটি ছাড়া এবং নিজেদের মধ্যে সশরীর দেখা-সাক্ষাৎ ও বৈঠক ছাড়া দলটির বাকি সব কাজই চলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে।

বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের জন্য আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপ ইত্যাদি গড়া হয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিতই লাইভ অনুষ্ঠান করে থাকে দলটি। এ রকম লাইভ অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যেই যোগ দেন শেখ হাসিনা নিজেও।

সেসব আলোচনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা যেমন হয়, তেমনই আবার মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মী, যারা বাংলাদেশ থেকে গেছেন, তাদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়ে থাকে।

সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলছিলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের ফলে আমরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারছি। তাদের মতামত জানতে পারছি। কী করণীয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে পারছি।’

পঙ্কজ দেবনাথ আরও বলছিলেন, ‘এই ভার্চ্যুয়ালমাধ্যমে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের। কোনো একটা ব্যবস্থা বদলানোতে এই তরুণ প্রজন্মের বড় ভূমিকা থাকে। আমরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে তাদের কাছেই পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।’

কর্মীরা দেশে মার খাচ্ছেন, নেতারা কেন ভারতে

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মাঝেমধ্যেই এই প্রশ্ন ওঠে যে আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা যখন দেশে মার খাচ্ছেন, গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যাচ্ছেন, তখন শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ কেন ভারতে পালিয়ে আছেন।

সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলছিলেন, ‘এই প্রশ্ন ওঠা যে খুব অযৌক্তিক, তা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ১৯৭১-এ যদি তখনকার নেতৃত্ব ভারতে চলে এসে প্রবাসী সরকার গঠন না করতেন, তাহলে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব হতো? আমি ’৭১-এর সঙ্গে তুলনা করছি না বর্তমান সময়ের, কিন্তু এ রকম উদাহরণ আমাদের দেশেও রয়েছে। অন্যান্য দেশেও আছে যে বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করে শক্তি সঞ্চয় করে দেশে ফিরে ক্ষমতা দখল করেছেন নেতারা। পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফ বা বেনজির ভুট্টো বলুন বা আমাদের দেশের তারেক রহমান। সবাই তো বিদেশ থেকেই দল পরিচালনা করেছেন বা এখনো করছেন।’

পঙ্কজ দেবনাথের প্রশ্ন, ‘দেশে থাকলে হয় জেলে থাকতে হতো, মেরেও ফেলতে পারত। কিন্তু তাহলে আমাদের যে রাজনৈতিক কাজকর্ম—বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা, দলকে আবারও সংগঠিত করা—সেগুলো কি আমরা করতে পারতাম?’

নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা

ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতারা দলের নেত্রীর সঙ্গে আলোচনাক্রমেই দলের রাজনৈতিক অবস্থান ঠিক করেন।

যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার প্রথম বর্ষপূর্তি পালন করছে, সেই সময়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের ‘ব্যর্থতা’গুলোকেই তুলে ধরার অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন প্রচার করেছিল এই সরকার, তাতে তারা গত এক বছরে সব দিক থেকেই ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতি ফেল করেছে, বিচারব্যবস্থা প্রহসনে দাঁড়িয়েছে। আর সব ক্ষেত্রেই তাদের ব্যর্থতার জন্য তারা শেখ হাসিনা আর ভারতের ওপর দায় চাপাতে ব্যস্ত। একটা যেন ইন্ডিয়া ফোবিয়া, হাসিনা ফোবিয়া হয়ে গেছে তাদের।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলছিলেন, ‘এক বছর পর তাদের নিয়ে সেই উন্মাদনা কিন্তু আর নেই। তাদের মুখের কথায় মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারছে না, বিভ্রান্তও হচ্ছে না। সবাই বাস্তবতার নিরিখে মূল্যায়ন করছে সরকারের। তাদের এই ব্যর্থতার জন্য বহু মানুষ বলছেন, শেখ হাসিনার সময়ই ভালো ছিলাম।’

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ভারতে অবস্থান করছেন গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এক বছর ধরে ক্যাম্পাসটা খুব মিস করি। দেশে থাকলেও যে গত এক বছরে ক্যাম্পাসে যেতে পারতাম, তা নয়।’

সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘হাজার হাজার ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থক তারা তো দেশে থেকেও ক্যাম্পাসে যেতে পারছেন না এক বছর ধরে। তাদের ক্লাস করতে দেওয়া হয় না, তারা পরীক্ষা দিতে পারেন না, পাস করলেও সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে না। তাদের সবার শিক্ষাক্রমটাই শেষ করে দেওয়া হয়েছে।’

সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, ‘এটা যে শুধু ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে করা হচ্ছে, তা নয়। আওয়ামী লীগ করেন বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, এমন পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেও এই একই ঘটনা হচ্ছে। শুধু যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে, তা–ও নয়। এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি বহু ছাত্রছাত্রী—শুধুমাত্র তারা আওয়ামী লীগ ঘরানার পরিবারের সন্তান বলে।’

অর্থায়ন কীভাবে হচ্ছে

ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলীয় প্রচার-প্রচারণার জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না ঠিকই, কিন্তু খরচ তো আছে।

আবার যেসব নেতাকর্মীরা ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের ব্যক্তিগত খরচও চালাতে হয়। কীভাবে সেসবের জন্য অর্থের সংস্থান হচ্ছে?

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বিবিসিকে বলেন, দেশে-বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীরাই তাদের খরচ চালাচ্ছেন।

দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায়, ‘সাংগঠনিকভাবে আগস্টের পর যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, সেই অন্ধকার অতিক্রম করা কঠিন কাজ। যেসব নেতাকর্মী দেশে বা বিদেশে আছেন, তারাই এই দুঃসময়ে এগিয়ে আসছেন, অর্থ সাহায্য করছেন। কর্মীরা এখানে কষ্ট করেই আছেন, তবে মনোবলই আমাদের সম্বল।’

আরেক নেতা নাম উল্লেখ না করার শর্তে বলছিলেন, দেশ থেকে তার পরিবার-পরিজন ও সহকর্মীরা প্রয়োজনমতো অর্থ পাঠিয়ে দেন।

পঙ্কজ দেবনাথ বলছিলেন, ‘তবে এই এক বছরে আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে।’

পঙ্কজ দেবনাথের কথায়, ‘আমরা যে এখানে মানবেতর জীবনযাপন করছি, বা ’৭১-এর যুদ্ধের সময়ের মতো শরণার্থীশিবিরে থাকছি, তা নয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে যাদের মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত জীবনযাত্রা ছিল, সেসব পরিবর্তন করতে হয়েছে। যারা ঢাকায় হয়তো গাড়ি ছাড়া চলতেন না, তাদের এখন কলকাতার গণপরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে।’

পঙ্কজ দেবনাথ বলছিলেন, ‘যেমন আমি একটি ফ্ল্যাটে আরও তিনজনের সঙ্গে থাকি। বাসে, ট্রেনে বা মেট্রোরেলে যাতায়াত করি। আবার সহকর্মীদের মোটরসাইকেল বা বাইকেও চেপে ঘোরাঘুরি করি। যদি কয়েকজন মিলে একসঙ্গে কোথাও যেতে হয়, তখন হয়তো ট্যাক্সিতে উঠলাম। ভাড়াটা ভাগাভাগি করে নিলে গায়ে লাগে না। আসলে সঞ্চিত অর্থে যতটা স্বল্প খরচে চলা যায়।’

কিন্তু কত দিন থাকবেন তারা দেশ ছেড়ে?

ওবায়দুল কাদের বলছেন, ‘দিনক্ষণ ঠিক করে ওভাবে তো রাজনৈতিক লড়াই হয় না, আবার লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।’


বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য নিয়ে এক বছর পূর্ণ করল অন্তর্বর্তী সরকার

আপডেটেড ৯ আগস্ট, ২০২৫ ০০:৪৫
বাসস

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের আজ এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে।

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের দমন-পীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে দেশে রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এতে দেশব্যাপী বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নিহত ও আহত হন।

টালমাটাল এক পরিস্থিতিতে নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ বিভিন্ন খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে কৃতিত্ব অর্জন করেছে।

৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে অন্তর্বর্তী সরকার জাতির সামনে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন করেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার পর ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়নের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন,‘অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি পাঠাব, যাতে নির্বাচন কমিশন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, পরবর্তী রমজানের আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে।’

পরের দিন ৬ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সরকারের অনুরোধ প্রক্রিয়াগতভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে একটি বৈঠক করে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ঘোষণা করা হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, বিচারব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমনুসংক্রান্ত সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিশন ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।

এসব কমিশন তাদের সুপারিশমালা জমা দিয়েছে। সরকার অনেক ক্ষেত্রেই সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এ বছরের জুন মাসে দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমেছে, যা গত ৩৫ মাসে সর্বনিম্ন।

গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ছিল তাঁর অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় কৃষি উৎপাদন বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা ছিল। তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ, বাজার মনিটরিং ও মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণের কারণে তা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে এবারের পবিত্র রমজান মাস থেকে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের গভীর আস্থার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে বলে জানান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেকর্ড ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা রপ্তানি আয়কে প্রায় ৯ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে টাকার মান শক্তিশালী হয়েছে। বহু বছর পর টাকার মূল্য ডলারের বিপরীতে বাড়ছে।

তিনি বলেন, গত ১১ মাসে বৈদেশিক ঋণদাতাদের কাছে ৪ বিলিয়ন ডলার সুদ ও মূলধন পরিশোধ করা হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।

১২ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যসমূহ-

শান্তি ও স্থিতিশীলতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, যা বিশৃঙ্খলা ও প্রতিশোধ চক্র রোধ করেছে। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্ব জাতিকে সহিংসতার বদলে পুনর্মিলন ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের পথে এগিয়ে নিতে স্থিতিশীলতার শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন

ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে: খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে, সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে (৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন), রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, রপ্তানি ৯ শতাংশ বেড়েছে এবং বহু বছর পর প্রথমবারের মতো টাকার মূল্য ডলারের বিপরীতে বেড়েছে।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগে অগ্রগতি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে সফল আলোচনা শেষে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) নিশ্চিত করেছে (যার মধ্যে টেক্সটাইল খাতে হান্ডা গ্রুপের ২৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে, যা ২৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে) এবং পূর্ববর্তী সরকারের সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ এফডিআই প্রবাহ অর্জিত হয়েছে। চীনা বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে ব্যাপক হারে আসছে।

গণতান্ত্রিক সংস্কার ও জুলাই সনদ

সরকার বিভিন্ন খাতে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলেছে এবং ঐতিহাসিক জুলাই সনদ চূড়ান্ত করেছে, যা প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি ও ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রোধে সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। জুলাই সনদ দেশের ক্ষমতার কাঠামোতে উন্নত চেক অ্যান্ড ব্যালান্স ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে এক নতুন গণতান্ত্রিক যুগের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার

গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধের স্বচ্ছ বিচার কাজ চলছে, অপরাধীদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হচ্ছে এবং আইনের শাসনকে সুদৃঢ় করা হচ্ছে। চারটি বড় মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারও শুরু হয়েছে।

নির্বাচন রোডম্যাপ ও সংস্কার

সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছে। সেখানে প্রবাসী ভোটার, প্রথমবারের ভোটার এবং নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হবে।

নাগরিকদের মতামত গ্রহণে ডিজিটাল পরামর্শ প্ল্যাটফর্ম চালু করা হচ্ছে, যাতে নির্বাচনকে জাতীয় গণতন্ত্র উৎসবে রূপান্তর করা যায়। শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রায় ৮ লাখ পুলিশ, অনিয়মিত আনসার এবং সেনা সদস্য মোতায়েন করা হবে।

প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত সংস্কার

সংস্কার-নির্ভর নিয়োগের মাধ্যমে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে।

পুলিশ সংস্কার: মানবাধিকার সেল, বডিক্যাম, স্বচ্ছ জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ এবং জাতিসংঘ-মানের প্রটেস্ট প্রটোকল চালু হয়েছে।

আইনগত সংস্কার: দেওয়ানি কার্যবিধি (সিপিসি) ও ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি)-তে ব্যাপক পরিবর্তন, নতুন অধ্যাদেশে গ্রেফতারের পর সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে অবহিতকরণ, আইনজীবীর প্রবেশাধিকার, চিকিৎসা সুরক্ষা এবং অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ইন্টারনেট অধিকার

অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের দমনমূলক সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল করেছে, সাংবাদিকদের সব মামলা প্রত্যাহার করেছে, সমালোচনার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে এবং দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি একক কোনো দেশের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে সরিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ বহুমুখী পথে নিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, চিকিৎসা সহায়তা ও সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা সম্প্রসারণ করেছে। ফলে বাংলাদেশ একটি সক্রিয় ও আঞ্চলিক প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) পুনরুজ্জীবন ও আসিয়ান-এর সদস্যপদ অর্জনে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রবাসী ও শ্রমিক অধিকার

বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা পুনঃচালু এবং মালয়েশিয়ার একাধিকবার প্রবেশ ভিসা চালুর সুবিধা নিশ্চিত করেছে, পাশাপাশি উপসাগরীয় দেশগুলোতে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করেছে। সরকার এক লাখ যুবককে জাপানে পাঠানো এবং ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও সার্বিয়ায় আরও শ্রমিক প্রেরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যাতে প্রবাসীদের সুযোগ বিস্তৃত হয়।

শহীদ ও আহত বিপ্লবীদের সহায়তা

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব শহীদ ও আহতের বিস্তারিত তালিকা প্রণয়ন করেছে এবং ৭৭৫ জন শহীদের পরিবারকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও ভাতা প্রদান করেছে। এছাড়া ১৩ হাজার ৮০০ জন আহত বিপ্লবীকে ১৫৩ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছে। গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে।

সমুদ্র ও অবকাঠামো উন্নয়ন

সরকার বঙ্গোপসাগরকে ‘পানিভিত্তিক অর্থনীতি’র মূল জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি (প্রতিদিন অতিরিক্ত ২২৫ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং) করা হয়েছে, উপকূলীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের সহযোগিতায় গভীর সমুদ্রের মৎস্য ও শিল্প প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

জুলাই স্মৃতি জাদুঘর

সরকার গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ এ রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে। গত ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস গণভবনে জাদুঘরের নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, জাদুঘরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছবি, বিভিন্ন স্মারক, শহীদদের পোশাক, চিঠিপত্র, গুরুত্বপূর্ণ নথি, সেই সময়ের পত্রিকার কাটিং, অডিও-ভিডিও এবং অন্যান্য উপকরণ সংরক্ষণ করা হবে।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন

সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেছে। ফাউন্ডেশনটি আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তা, ভুক্তভোগী পরিবারকে স্বল্পমেয়াদি আর্থিক সহায়তা, জীবন উৎসর্গকারীদের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিশ্চিত করবে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তহবিল সংগ্রহে মনোনিবেশ করছে।


গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নোয়াবের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের পর্যবেক্ষণকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার।

আজ শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা নোয়াবের সাম্প্রতিক বিবৃতি পর্যালোচনা করেছি, যেখানে তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তি নিয়ে মন্তব্য করেছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী- ‘অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গত এক বছরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বতন্ত্রতাকে ক্ষুণ্ন করেছে’। আমরা দৃঢ় ও স্পষ্টভাবে এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি।’

নিচে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত বিবৃতিটি দেওয়া হলো:

দেশের গণমাধ্যম পরিচালনায় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয়, প্রশাসনিক বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেনি। বরং ইচ্ছাকৃত অপপ্রচার ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্প্রচারের মুখেও সরকার অসাধারণ সংযম দেখিয়েছে।

টেলিভিশনের টকশো ও কলামে প্রায়ই সরকারের বিরুদ্ধে অসত্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে, কিন্তু সরকার তা সেন্সর করেনি কিংবা প্রতিশোধ নেয়নি।

প্রচণ্ড প্ররোচনার মুখেও সরকার কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি, লাইসেন্স বাতিল করেনি, বরং পূর্ববর্তী সরকারের জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমকে পুনরায় প্রকাশ বা সম্প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছে-যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সরকারের সঙ্গে গণমাধ্যমের যোগাযোগ উন্মুক্ত

সীমিত যোগাযোগের অভিযোগের বিপরীতে সাংবাদিকরা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের সঙ্গে সরাসরি ও উন্মুক্তভাবে যোগাযোগের সুযোগ পেয়েছেন। কোনো সাংবাদিককে তার গণমাধ্যম বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার বা ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত করা হয়নি।
আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি, এবং আমাদের আচরণ সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন।

সচিবালয় অ্যাক্রেডিটেশন প্রক্রিয়ায় সংস্কার

অ্যাক্রেডিটেশন ব্যবস্থার সংস্কারের প্রতি নোয়াবের সমালোচনা শুধু ভুলই নয়, বরং ভ্রান্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। আগের ব্যবস্থা ছিল মারাত্মকভাবে আপসকৃত, যেখানে অ্যাক্রেডিটেশন এমন অনেক ব্যক্তির হাতে পৌঁছেছিল যাদের বৈধ সাংবাদিকতায় কোনো ভূমিকা ছিল না; তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন রাজনীতিবিদ, কেউ তদবিরবাজ, আর কেউ সুযোগসন্ধানী, যারা বিশেষ প্রাধিকার ব্যবহার করে অন্যায্যভাবে নীতিনির্ধারণ প্রভাবিত করত।

‘আমরা সেই কাঠামো ভেঙে দিয়েছি এবং একটি অস্থায়ী পাস ব্যবস্থা চালু করেছি, যাতে প্রকৃত সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। এই সংস্কার প্রবেশাধিকার সীমিত করার জন্য নয়, বরং একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ার সততা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য।’

পূর্বের অ্যাক্রেডিটেশন নীতিতে সাংবাদিকদের সরকারপন্থী হতে বাধ্য করার মতো কিছু অপমানজনক ধারা ছিল, যা তাদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার সেই ধারাগুলো সংশোধন করেছে।

দীর্ঘমেয়াদী নবায়ন সময়সীমাসহ নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যুর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

কর্মসংস্থান সুরক্ষা

যেসব সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন, তা কোনো সরকারি নির্দেশে নয়; বরং গণমাধ্যম মালিকদের সম্পাদকীয় বা ব্যবসায়িক পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্তের ফল। এগুলো মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশ, সরকারের কোনো চাপ নয়।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা: যৌথ দায়িত্ব

সরকার দেশের সব নাগরিকের মতো সাংবাদিকদের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা অগ্রাধিকার, তবে এই দায়িত্ব মিডিয়া প্রতিষ্ঠান, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে যৌথভাবে ভাগাভাগি হওয়া উচিত।

নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে, এ বছরের শুরুর দিকে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের অধীন মিডিয়া সংস্কার কমিশন একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ প্রস্তাব করেছে, যা আইনগত সুরক্ষা বৃদ্ধি করবে এবং সরকারি বা নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ে সৃষ্ট আত্মনিয়ন্ত্রণ কমাবে। সরকার প্রস্তাবিত আইন প্রণয়নের কথা বিবেচনা করছে।

শিল্পের অভ্যন্তরীণ আত্মসমালোচনার আহ্বান

গঠনমূলক সমালোচনার প্রতি উন্মুক্ত থাকা সত্ত্বেও সরকারের পরামর্শ হচ্ছে দায়ারোপ করার আগে নোয়াবের উচিত নিজ সংগঠনের ভেতরে নজর দেওয়া। বিশেষ করে সাংবাদিকদের মজুরি বঞ্চনা, শ্রম অধিকার থেকে বঞ্চিতকরণ, পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়া প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করানো এবং অসহিষ্ণু কর্মপরিবেশের অভিযোগের ক্ষেত্রে নোয়াবের উচিত তাদের নিজস্ব সদস্যদের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা ও তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা।

একটি সংবেদনশীল উত্তরণকালে পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তক্ষেপহীন নীতি বজায় রেখেছে, যাতে গণমাধ্যম ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি ‘স্লোগান’ নয়; এটি আমাদের জীবনাচরণের নীতি।

নোয়াবের উদ্বেগগুলো যদি বাস্তব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং সঠিক পক্ষকে লক্ষ্য করে করা হতো, তাহলে সেগুলো আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হতো। ঘটনাবলির ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে সামগ্রিক অভিযোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয় না; বরং বাংলাদেশের গণমাধ্যম অঙ্গনের প্রকৃত চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।

আমরা স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, এবং এই মৌলিক মূল্যবোধগুলো রক্ষা ও উন্নয়নে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।


অন্তর্বর্তী সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

গত বছর থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দায়ী—এমন ইঙ্গিতকে তারা ‘দৃঢ় ও দ্ব্যর্থহীনভাবে’ প্রত্যাখান করে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, তারা (সরকার) স্বচ্ছতা, সুরক্ষা ও স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে এই মৌলিক মূল্যবোধ সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির জন্য সকল অংশীজনদের একসঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রণ জানান তারা।

তবে তিনি বলেন, তারা সংবাদপত্র মালিক সমিতির (নোয়াব) সাম্প্রতিক বিবৃতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং তথ্যের সুবিধাপ্রাপ্তির অবস্থা সম্পর্কে উত্থাপিত উদ্বেগকে স্বীকার করেন।

আলম বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো গণমাধ্যম সংস্থার সম্পাদকীয়, পরিচালনাগত বা ব্যবসায়িক দিকগুলোতে হস্তক্ষেপ করেনি।

তিনি নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘রেসপন্স টু নোয়াব: সেটিং দ্য রেকর্ড স্ট্রেইট' শিরোনামে দেওয়া একটি পোস্টে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, আমরা ভুল তথ্য এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্প্রচারের মুখেও ব্যতিক্রমী সংযম ব্যবহার করেছি।’

প্রেস সচিব বলেন, টেলিভিশন টক শো এবং কলামগুলোতে প্রায়শই এই সরকার সম্পর্কে মিথ্যা এবং উসকানিমূলক দাবি প্রকাশিত হয়েছে।

আলম বলেন, ‘তবুও, আমরা সেন্সর করিনি বা প্রতিশোধও নেইনি। আমরা অভিযোগ করিনি, এমনকি উসকানি দেওয়ার পরেও লাইসেন্স স্থগিত করিনি, বরং অতীতের শাসনামলে জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমের পুনঃপ্রকাশ বা সম্প্রচারে ফিরে আসার পথ প্রশস্ত করেছি।’ আলম বলেন, এটি স্পষ্টতই বাকস্বাধীনতা এবং মুক্ত সংবাদমাধ্যমের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে।

সরকারে প্রবেশাধিকার অবাধ রয়েছে

সীমিত প্রবেশাধিকারের অভিযোগের উত্তরে আলম বলেন, সাংবাদিকদের আমাদের উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের কাছে উন্মুক্ত ও সরাসরি পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, কোনো সাংবাদিককে তাদের আউটলেট বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার বা ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। ‘আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং আমাদের আচরণ তা প্রতিফলিত করে।’

সচিবালয় প্রবেশ প্রক্রিয়ার সংস্কার

সংশোধিত প্রবেশাধিকার ব্যবস্থার সমালোচনা কেবল ভুলভাবে উপস্থাপন করা নয় বরং ভুল তথ্যও, প্রেস সচিব বলেন।

তিনি বলেন, আগের ব্যবস্থাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যার ফলে প্রবেশাধিকারপত্রগুলো এমন ব্যক্তিদের হাতে চলে যায়, যাদের কোনো বৈধ সাংবাদিকতার কাজ নেই। তাদের মধ্যে কিছু রাজনীতিবিদ, লবিস্ট এবং সুবিধাবাদী ছিলেন—যারা বিশেষভাবে প্রাপ্ত প্রবেশাধিকার ব্যবহার করে নীতিকে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করেছিলেন।

আলম বলেন, ‘আমরা সেই ভাঙ্গুর কাঠামো ভেঙে দিয়েছি এবং এটিকে একটি অস্থায়ী পাস ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছি, যা প্রতিটি প্রকৃত সাংবাদিকের সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার অব্যাহত থাকা নিশ্চিত করবে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এই সংস্কার প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার জন্য নয়, বরং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ার স্থলে সততা স্থাপন করার জন্য ছিল।’

প্রেস সচিব বলেন, আগের প্রবেশাধিকার নীতিতে স্বীকৃত সাংবাদিকদের সরকারের সুরে গান গাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আগের নীতিমালায় সাংবাদিকদের সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু অপমানজনক ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা অন্তর্বর্তী সরকার সংশোধন করেছে।

‘বর্ধিত নবায়ন সময়সীমার সঙ্গে নতুন স্বীকৃতিপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে,’ উল্লেখ করেন আলম।

চাকরির নিরাপত্তা

আলম বলেন, ‘এটি স্পষ্টভাবে বলা উচিত, যেসব সাংবাদিককে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তারা সরকারি নির্দেশে নয়। বরং গণমাধ্যম মালিকদের নেওয়া সম্পাদকীয় এবং কৌশলগত করপোরেট পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্তের ফলে তা করেছেন।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘এগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো নির্দেশ বা চাপ নয়, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশের প্রতিফলন ঘটায়।’

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা: একটি পারস্পরিক দায়িত্ব

আলম বলেন, তারা সাংবাদিকসহ সকল নাগরিকের শারীরিক নিরাপত্তা এবং মর্যাদার প্রতি সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা একটি অগ্রাধিকার। তবে এই দায়িত্ব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং সরকার ও এর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে ভাগ করা হয়েছে।

নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশের প্রতি তাদের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আলম বলেন, এই বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ সহ সংস্কারের প্রস্তাব করেছে, যাতে আইনি সুরক্ষা বৃদ্ধি করা যায় এবং সরকার বা নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ের কারণে সৃষ্ট স্ব-সেন্সরশিপ কমানো যায়।

প্রেস সচিব বলেন, ‘সরকার প্রস্তাবিত আইনটি জারি করার কথা বিবেচনা করছে।’

শিল্পের মধ্যে প্রতিফলনের আহ্বান

আলম বলেন, ‘যদিও আমরা গঠনমূলক সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত, তবে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি নোয়াব দোষারোপ করার আগে নিজেরাই দেখুক।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘তাদের অবশ্যই তার নিজস্ব সদস্যদের কর্মকাণ্ড যাচাই করতে হবে এবং সাংবাদিকদের উপর নির্যাতনের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। বিশেষ করে যখন মজুরি শোষণ, শ্রম অধিকার অস্বীকার, পর্যাপ্ত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়া প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করা এবং অসহনীয় কর্মপরিবেশের অভিযোগের ক্ষেত্রে।’

আলম বলেন, একটি সূক্ষ্ম সংকটকালীন সময় তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে তারা গণমাধ্যম যাতে ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে পারে—তা নিশ্চিত করার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ানো বজায় রেখেছে।

প্রেস সচিব বলেন, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি স্লোগান নয়; এটি এমন একটি নীতি, যা আমরা মেনে চলি।’

তিনি বলেন, নোয়াবের উদ্বেগগুলো যদি তথ্যের উপর ভিত্তি করে সঠিক পক্ষগুলোকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়, তাহলে তা আরও বেশি গুরুত্ব পাবে।

আলম বলেন, ‘ঘটনার ত্রুটিপূর্ণ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে করা অভিযোগগুলো সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয় না, তারা কেবল বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।’


পরিবেশ, বন ও বন্যপ্রাণী  সুরক্ষায় মন্ত্রণালয়ের এক বছরের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে গত এক বছরে বন, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গৃহীত হয়েছে একের পর এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

বনের জমিতে সরকারি প্রকল্প স্থাপনের পুরোনো সিদ্ধান্ত বাতিলের ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের ৭০০ একর জমি এবং বাফুফের জন্য নির্ধারিত ২০ একর সংরক্ষিত বনভূমি ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সোনাদিয়ার ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি ও জাফর আলম ক্যাডেট কলেজের নামে বন্দোবস্ত ১৫৫ দশমিক ৭০ একর জমিও পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। আগস্ট ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত ৫ হাজার ০৯৩ একর বনভূমি উদ্ধার করে সেখানে পুনরায় বনায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।

চুনতি বন পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় ৩৭ হাজার ১৮২ একর জমি থেকে আকাশমনি গাছ সরিয়ে প্রাকৃতিক বন ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। মধুপুর ও শেরপুরেও আকাশমনি গাছ সরিয়ে বনকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে হাতির করিডোর পুনরায় কার্যকর হয়।

বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি ময়ূর ফিরিয়ে আনাসহ সাম্বার, কালোমুখ প্যারা পাখি, উল্লুক ও হাতির সুরক্ষায় নেওয়া হয়েছে সফল উদ্যোগ। মানুষের সাথে হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর দ্বন্দ্ব নিরসনে ১৫৯টি ইআরটি টিম গঠন ও জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিল এবং ক্যাপটিভ হাতি সংরক্ষণের অভয়ারণ্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রাজশাহীর বিল জোয়ানা ও বিল ভেলাসহ কয়েকটি জলাভূমিকে অভয়ারণ্য ঘোষণা এবং অন্যান্য এলাকায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। বন্যপ্রাণী আইন সংশোধন ও ট্রাস্ট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট ২৯৩টি অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ৬৮৪টি প্রাণি উদ্ধার করেছে। সাফারি পার্ক থেকে চুরি হওয়া লেমুরও উদ্ধার করা হয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বন্যপ্রাণী ও বৃক্ষ নিধনের অপরাধে কারাদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্যালিপটাস ও একাশিয়া গাছের চারা উৎপাদন, বিপণন, রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং নার্সারির এসব গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে 'গাছ থেকে পেরেক তুলে ফেলা' কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং দেশে প্রথমবারের মতো নেচার লার্নিং সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করে বন, বন্যপ্রাণী ও শব্দদূষণ রোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় উদ্যান, ইকোপার্ক ও উদ্ভিদ উদ্যানে প্লাস্টিক ও বনভোজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পূর্বাচলের ১৪৪ একরকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।

পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণে নেওয়া উদ্যোগসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ঢাকার শপিংমলসমূহে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা এবং কাঁচাবাজারে অভিযান জোরদার করা। বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ সহজলভ্য করতে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান’ প্রণয়ন ও ৮৩০টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ১৮টি অবৈধ সীসা কারখানা বন্ধ এবং ঢাকার সাভার-আশুলিয়াকে ডিগ্রেডেড এয়ারশেড হিসেবে ঘোষণা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিআরটিএ’র সহায়তায় পুরনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

শব্দদূষণ রোধে তরুণদের সম্পৃক্ত করে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়েছে। গাজীপুরে গাছা খাল দূষণের অভিযোগে ৯টি কোম্পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও সকল পলিথিন কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য BEST প্রকল্পের আওতায় নতুন কার্যক্রম অনুমোদনসহ ৩৭টি ভবন নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১৬টি জেলা থেকে পাহাড়ের দাগ-খতিয়ান সংগ্রহ করে অনলাইনে তালিকাভুক্ত করার কাজ চলছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ৩৫১ কোটি টাকার ৪১টি প্রকল্প অনুমোদন এবং ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরিবেশ ও বন রক্ষায় ৮টি আইন, বিধিমালা ও নির্দেশিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলমান রয়েছে।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং জলবায়ু অভিযোজন প্রক্রিয়ায় চলমান অগ্রযাত্রায় সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।


আইজিপির সঙ্গে জাতিসংঘের বাংলাদেশ বিষয়ক নিরাপত্তা উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ বাহারুল আলম, বিপিএম এর সঙ্গে জাতিসংঘের বাংলাদেশ বিষয়ক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মিজ. টেস বি. ব্রেসনান (Ms.Tess B. Bresnan) সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) সকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাতকালে মিজ. ব্রেসনান বাংলাদেশে অবস্থানরত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারত্ব ও সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

সাক্ষাতকালে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারকরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

এ সময় আইজিপি বলেন, বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘ ও অন্যান্য বিদেশি সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পুলিশ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (অপারেশনস) মোঃ রেজাউল করিমসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া: প্রেস সচিব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া। এর মধ্যে সংস্কার এবং বিচারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এজন্য প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

প্রেস সচিব আরো বলেন, গত ৫ আগস্ট এর পরে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে। এই দ্বিতীয় অধ্যায়ের আজ ছিল উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভা। প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সভায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে ট্যারিফ কমানোর জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং গত এক মাস জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর বিভিন্ন কর্মসূচি সুচারুরূপে বাস্তবায়নের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গতকাল নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিক পত্র দেয়ার মাধ্যমে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হল। এখন নির্বাচন কমিশন দিনক্ষণ ঠিক করবে। একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে তারা তাদের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশের পাশাপাশি আনসার বিডিআর এবং আর্মিকে কিভাবে আরো বেশি করে সংযুক্ত করা যায় সেটাও সরকার আন্তরিকভাবে বিবেচনা করছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনকালে গত বছর আমাদের খাদ্যের মজুদ ছিল ১৮ লাখ টন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এই মজুদ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ টনে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক ছিল গত এক বছরে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার সাতটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। সেই কমিশনের প্রস্তাব মতে ১২১ টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৬ টি ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। ৮৫টি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আছে। বাকি ১০ টি আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কি না সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

প্রেস সচিব বলেন, গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন নিয়ে একটি দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। আজকের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে গাজীপুর ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ আগের চেয়ে অনেক একটিভ হয়েছে এবং যেহেতু একটি অন্তর্বর্তী সরকার চলছে সেজন্য আর্মিকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। চার বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে, ফরেন রিজার্ভ বেড়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চাই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতেই তার বিচার কাজ সম্পন্ন হোক। আমাদের বৈদেশিক উপদেষ্টাও বলেছেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বিবিসি এবং আলজাজিরার অনুসন্ধানী রিপোর্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্রটেষ্টরদের (আন্দোলনকারীদের) গুলি করে মারার বিষয় কিভাবে নির্দেশ দিয়েছে আপনারা সেই রিপোর্টগুলোতে দেখেছেন। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই শেখ হাসিনার বিচার করা হবে।

প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কার এবং বিচারও সরকারের অগ্রাধিকার কাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে রয়েছে। তিনি বলেন, আগের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে আমরা দেখেছি ৮ লাখের মতো ফোর্স মোতায়েন ছিল। এবার জাতীয় নির্বাচনে আরও ৪০ থেকে ৫০ হাজার বেশি ফোর্স মোতায়েন করা যায় কি না এবং আর্মি আরও ৬০ হাজার মোতায়েন করা যায় কি না তা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।

তিনি আরো বলেন, ২০২৪ সালের ৮ই আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ৩১৫ টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ২৪৭ টির বাস্তবায়ন হয়েছে। যা শতকরা প্রায় ৭৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। এবং এটি গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। স্বাধীনতার পরের কোন সরকারের জন্য এটি রেকর্ড।

জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি এবং জামায়াতে ইসলামীর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিষয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে কারো কোন অভিযোগ থাকবে না।


বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. কলিমুল্লাহ গ্রেপ্তার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট ) ভোরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

চলতি বছরের ১৮ জুন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জানা গেছে, সাবেক ভিসি নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহকে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।


টাঙ্গাইলে পিকআপ-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ৩

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার বিলাসপুর বটতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ধনবাড়ী থানার ডিউটি অফিসার ফরিদ শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহতরা হলেন- জামালপুর জেলার মেলানদহ উপজেলার চর গ্রামের আলামিন (৩০), চরপালিশা গ্রামের স্বপন মিয়া (৩৫) ও সদর উপজেলার হাসিল মানিকাবাড়ী গ্রামের জুয়েল রানা (৩২)।

আহত ব্যক্তির নাম মো. সানী (১৮)। তিনি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পাণ্ডা গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আজ সকালে জামালপুরগামী পিকআপ ভ্যান ধনবাড়ী উপজেলার বিলাশপুর বটতলা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পিকআপচালক ও মোটরসাইকেলের এক আরোহী নিহত হন। গুরুতর আহত দু’জনকে হাসপাতালে নিলে সেখানে আরও একজন মারা যান।


চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন করবে নাসা 

নাসার ফিশন সারফেস পাওয়ার প্রজেক্টের একটি ধারণা চিত্র। ছবি: নাসা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে একটি পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম। এটি চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষের স্থায়ী বসবাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার অংশ।

পলিটিকোর এক প্রতিবেদনের জানানো হয়েছে, নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান চীন ও রাশিয়ার একই ধরনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ওই দুদেশ সম্ভবত চাঁদে একটি কিপ-আউট জোন ঘোষণা করতে পারে।’

কিন্তু নাসার সাম্প্রতিক ও তীব্র বাজেট হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্য ও সময়সীমা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে এবং কিছু বিজ্ঞানী উদ্বিগ্ন যে পরিকল্পনাগুলো ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারত, জাপানসহ দেশগুলো চাঁদের পৃষ্ঠ অন্বেষণের জন্য তাড়াহুড়া করছে। কিছু দেশ স্থায়ী মানব বসতি স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আস্থাভাজন হিসেবে নাসার সাময়িক প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হওয়া মার্কিন পরিবহন সচিব শন ডাফি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের চন্দ্র অর্থনীতি, মঙ্গল গ্রহে উচ্চ শক্তি উৎপাদন এবং মহাকাশে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এ গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে সংস্থাটির দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।’

তিনি বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোকে কমপক্ষে ১০০ কিলোওয়াট শক্তি উৎপাদনে সক্ষম চুল্লি বানানোর প্রস্তাব জমা দেওয়ার আহ্বান জানান।

এটি তুলনামূলকভাবে ছোট আকৃতির। একটি সাধারণ অফশোর উইন্ড টারবাইন ২-৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

চাঁদে শক্তির উৎস হিসেবে পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করার ধারণা নতুন নয়। ২০২২ সালে নাসা কোম্পানিগুলোকে ডিজাইনের জন্য তিনটি ৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি প্রদান করেছিল।

চলতি বছরের মে মাসে, চীন ও রাশিয়া ঘোষণা করেছিল, তারা ২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদে একটি স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করছে।

অনেকে বিজ্ঞানীর মতে, এটি চন্দ্র পৃষ্ঠে নিরবচ্ছিন্ন শক্তি সরবরাহের শ্রেষ্ঠ বা একমাত্র উপায় হতে পারে। একটি চন্দ্র দিন পৃথিবীতে চার সপ্তাহের সমান, যার মধ্যে দুই সপ্তাহ অবিরাম রৌদ্র ও দুই সপ্তাহ অন্ধকার থাকে। এটি সৌরশক্তির ওপর নির্ভরশীলতাকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং করে তোলে।

বিশ্ববিদ্যালয় অব সারের মহাকাশ প্রযুক্তি, অনুসন্ধান ও যন্ত্রপাতি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ড. সঙ্গউ লিম বলেন, ‘চাঁদে একটি ছোট আবাসস্থল তৈরি করতেও মেগাওয়াট-স্তরের শক্তি প্রয়োজন।

শুধু সৌর-প্যানেল ও ব্যাটারিতে তা নির্ভরযোগ্যভাবে পূরণ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে পারমাণবিক শক্তি কেবল কাম্য নয়, অপরিহার্য।’

ল্যাংকাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবী ও গ্রহীয় বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক লিওনেল উইলসন মনে করেন, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ হলে ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে চুল্লি স্থাপন করা প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব এবং ইতোমধ্যে ছোট চুল্লির জন্য ডিজাইনও রয়েছে।

কিন্তু এ বিষয়ে নিরাপত্তাসংক্রান্ত কিছু প্রশ্নও রয়েছে। ওপেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ড. সিমিপন বারবের বলেন, ‘পরমাণু পদার্থ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মাধ্যমে উৎক্ষেপণে নিরাপত্তা উদ্বেগ রয়েছে। এর জন্য বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন হয়, তবে এটি অতিক্রমযোগ্য।’

২০২৬ সালে ট্রাম্প প্রশাসন নাসার বাজেটে ২৪ শতাংশ হ্রাসের ঘোষণা দেওয়ায় নাসায় সাম্প্রতিক অস্থিরতার পর ডাফির এ নির্দেশ অবাক করার মতো। এর মধ্যে গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীতে নমুনা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মার্স স্যাম্পল রিটার্নের মতো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিজ্ঞান কর্মসূচিতে কাটছাঁট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা এই ঘোষণা ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য দ্বারা অনুপ্রাণিত কি না, সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন। বারবের বলেন, ‘এটি যেন পুরোনো মহাকাশ প্রতিযোগিতার দিনের মতো ফিরে আসছে, যা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছুটা হতাশাজনক ও উদ্বেগজনক। প্রতিযোগিতা উদ্ভাবন এনে দিতে পারে, কিন্তু যদি জাতীয় স্বার্থে সীমাবদ্ধ হয়ে যায় এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে বৈশ্বিক পরিভ্রমণ ও সৌরজগৎ অন্বেষণের বৃহত্তর চিত্র থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।’

চাঁদে চীন ও রাশিয়ার একটি ‘কিপ-আউট জোন ঘোষণা’ করার সম্ভাবনা সম্পর্কে ডাফির মন্তব্য আর্টেমিস চুক্তি নামক একটি চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করে বলে মনে হচ্ছে। ২০২০ সালে সাতটি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এ চুক্তি নির্ধারণ করে, কীভাবে দেশগুলো চাঁদে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।

এ চুক্তি অনুযায়ী ‘সেফটি জোন’ স্থাপনের ধারা রয়েছে, যেখানে দেশগুলো তাদের সম্পদ ও কার্যক্রমের চারপাশে এক ধরনের নিরাপত্তা এলাকা নির্ধারণ করতে পারে।

বারবের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আপনি যদি চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি বা কোনো ধরনের ভিত্তি তৈরি করেন, তাহলে আপনি তার আশপাশে একটি সেফটি জোন দাবি করতে পারেন- কারণ সেখানে আপনার যন্ত্রপাতি থাকবে।’

বারবের উল্লেখ করেছেন, মানুষের ব্যবহারের জন্য চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের আগে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে।

নাসার আর্টেমিস ৩-এর লক্ষ্য ২০২৭ সালে চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষ পাঠানো, কিন্তু তহবিল নিয়ে এটি একাধিক বাধা ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছে।

বারবের আরও বলেন, ‘আপনার কাছে শক্তি থাকল, কিন্তু মানুষ ও সরঞ্জাম সেখানে নিয়ে যাওয়া যাবে না, তাহলে তাতে লাভ কী? বর্তমানে পরিকল্পনাগুলো খুব সংহত মনে হচ্ছে না।’


banner close