বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫
২৯ শ্রাবণ ১৪৩২

ছাত্রনেতা থেকে হাসপাতালের দালালচক্রের নেতা!

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড
২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০২
মনিরুল ইসলাম
প্রকাশিত
মনিরুল ইসলাম
প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০২

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দালালচক্রের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রোগী ভাগিয়ে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানোর গল্প মোটামুটি সবারই জানা।

সম্প্রতি দৈনিক বাংলার অনুসন্ধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) থেকে এভাবে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার পাঁচটি দালাল চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনটি চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক চার ছাত্রনেতা।

জানা গেছে ঢামেক থেকে বেসরকারি হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি করাতে পারলে প্রতি রোগীর বিপরীতে পাওয়া যায় একটা পার্সেন্টেজ। সেই রোগীর কত বিল হয় সেটির ওপর নির্ভর করে পার্সেন্টেজের পরিমাণ। ক্ষেত্রবিশেষে এই পার্সেন্টেজের পরিমাণ ২০ থেকে ৪০ শতাংশ। কোথাও কোথাও রোগী যতদিন ভর্তি থাকবে সে হিসাবে দিনপ্রতিও কমিশন নেওয়ার সুযোগ আছে। দালালচক্রের সদস্যের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কখনো কখনো রোগী যেতে রাজি না হলে তাদেরকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি তাদের মারধরও করা হয়ে থাকে।

অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আনসারের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মো. উজ্জ্বল বেপারী এবং ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া চক্রগুলোকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিনিময়েও মাসোহারা পান। তবে তারা উভয়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা যেসব রোগীর এনআইসিউ বা আইসিউ প্রয়োজন হয় সেসব রোগীকে টার্গেট করেই এই পাঁচটি চক্র কাজ করে। এ ছাড়া মাঝেমাঝে সাধারণ রোগীরাও তাদের টার্গেটের শিকার হয়।

হাসপাতালের ভিতর বিভিন্ন দেয়ালে ‘দালাল দেখলে ধরিয়ে দিন’ শীর্ষক যেসব স্টিলের প্লেট লাগানো হয়েছে সেখানে থাকা যোগাযোগের নম্বরগুলোও কালো কালি দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে। এতে এসব চক্রের সদস্যরা অনেকটা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে।

পাঁচ চক্রের নেতৃত্বে যারা

জানা গেছে, পাঁচটি চক্রের মধ্যে তিনটি চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা, তারা একসময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় শেখ স্বাধীন সাবিত এবং ইয়ামিন রহমান শুভ। এর মধ্যে শেখ স্বাধীন সাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেয় হেদায়েত উল্লাহ সরকার এবং কাজী রাশেদ। এর মধ্যে হেদায়েত শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। আর রাশেদ একই হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-সম্পাদক। অন্য এক গ্রুপের নেতা ইমরান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি।

বাকি দুই গ্রুপের নেতৃত্বে যারা আছে, তারা হলো হান্নান এবং কাশেম। এর মধ্যে কাশেম ট্যাক্সি কাশেম নামে হাসপাতাল এলাকায় পরিচিত।

এদের মধ্যে কোন গ্রুপ কোথায় কাজ করবে তা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছে। সাবিত-শুভ এবং হেদায়েত-রাশেদ গ্রুপটি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হাসপাতালের ২১১ এবং ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে। এই দুটি এনআইসিউ এবং গাইনি ওয়ার্ড। সার্বক্ষণিকই এই দুই ওয়ার্ডের সামনে চক্রের সদস্যদের অবস্থান থাকে। এই দুই ওয়ার্ডে বাকি তিন গ্রুপের কেউ কাজ করতে পারে না। এই দুটি গ্রুপসহ বাকি তিন গ্রুপ কাজ করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে। তারা সবাই কাজ করে সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। দিনের বেলা তাদের কাজ বন্ধ থাকে।

যে গ্রুপ যেসব হাসপাতালে রোগী পাঠায়

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ স্বাধীন সাবিত এবং ইয়ামিন রহমান শুভর নেতৃত্বে থাকা গ্রুপটি মেডিফেয়ার জেনারেল হাসপাতাল, ইউনিহেলথ, আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, প্রাইম এবং ঢাকা হেলথ কেয়ার হাসপাতালে রোগী পাঠায়। এই গ্রুপের ছয় সদস্যের নাম জানা গেছে। তারা হলেন জুয়েল, নিপু, মেহেদী, টুটুল, আল আমিন এবং এস এম খলীল। এই সদস্যরা মাসিক ১৫-২০ হাজার টাকা বেতনে সাবিত-শুভর হয়ে কাজ করে থাকে।

হেদায়েত এবং রাশেদ একটি গ্রুপ মেডিফেয়ার, সুপার স্পেশালিস্ট, প্রাইম এবং ঢাকা হেলথ কেয়ার হাসপাতালে রোগী পাঠায়। এই দুই গ্রুপের হয়ে কাজ করে আলমগীর, রিপন, নাদিম, মিরাজ এবং হানিফ।

ইমরান খানের গ্রুপটি হসপিটাল টোয়েন্টি সেভেন এবং বাংলাদেশ ক্রিটিক্যাল কেয়ারে রোগী পাঠায়। এই গ্রুপের সদস্যরা হলেন ইব্রাহিম, নয়ন, নাফিস। তবে ইমরান তাদের মাসিক ভিত্তিতে বেতন দেয় না। রোগী ভিত্তিক টাকা দেয়। আর মাস শেষে প্রত্যেকের টাকার পরিমাণ ২০-২২ হাজারে পৌঁছায়।

ট্যাক্সি কাশেমের গ্রুপটি আমার বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ক্রিটিক্যাল কেয়ার, প্রাইম এবং ক্রিসেন্ট হাসপাতালে রোগী পাঠায়। আর এই গ্রুপের অধীনে কাজ করে এরকম দুইজনের তথ্য পাওয়া গেছে। এরা হলো মনির এবং বিল্লাল।

হান্নানের গ্রুপটি বিএনকে, এ ওয়ান, প্রাইম এবং হেলথ কেয়ারে রোগী পাঠায়। এই গ্রুপে কাজ করা সদস্যরা হলেন শরিফ, ইসমাইল, তুষার এবং অপু।

অনুসন্ধানে জানা যায়, হান্নানের গ্রুপটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ তুনানের নাম ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। অভিযোগ রয়েছে, এসব হাসপাতালে তুনানও রোগী পাঠায়। সেসব রোগীর বিলের একটা পার্সেন্টেজ তুনানের পকেটে যায়।

চক্রের সদস্যদের হাসপাতালগুলোর মধ্যে মেডিফেয়ার অবস্থিত মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে, ইউনিহেলথ পান্থপথ সিগন্যালে, আহমেদ স্পেশালাইজড চানখাঁরপুলে, প্রাইম এবং ঢাকা হেলথ কেয়ার অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বিপরীত পাশের মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের দুই এবং তিন তলায়। সুপার স্পেশালিস্ট, হসপিটাল টুয়েন্টি সেভেন এবং বাংলাদেশে ক্রিটিক্যাল কেয়ার অবস্থিত ধানমন্ডি ২৭-এ। বিএনকে হাসপাতাল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পাশে। আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল অবস্থিত শ্যামলী বাসস্ট্যান্ডের পাশে।

এই প্রতিনিধি ছদ্মবেশে দালালচক্রের সদস্য সেজে হাসপাতালগুলোর সঙ্গে কথা বললে তারাও জানায়, চক্রের নেতাদের নামে তাদের হাসপাতালে কোড আছে। এসব কোডের অধীনে তারা সেখানে রোগী পাঠায় এবং রোগীভেদে তারা প্যাকেজ বা রোগী হাসপাতালে যতদিন থাকবে এর প্রতিদিন হিসাবে টাকা পায়।

দালালের ছদ্মবেশে এওয়ান হাসপাতালের পরিচালক সাইয়েদ ইসলাম সাইফের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, কোনো আইসিইউ রোগী এনে দিতে পারলে রোগী ভর্তি হওয়ার পরপরই আপনি ১৮ হাজার টাকা পেয়ে যাবেন। এটা হলো প্যাকেজ সিস্টেম। আর পার ডে হিসাবে নিলে দৈনিক পাবেন ৫ হাজার টাকা।

পরিচয় গোপন রেখে চক্রের কয়েকজন নেতাকে ফোন দিলে তারাও এই প্রতিবেদককে রোগী যতদিন ভর্তি থাকবে সে হিসাবে দিনপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

দালাল চক্রের সদস্যরা যেভাবে কাজ করে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চক্রের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে যখনই কোনো রোগী আসে, চক্রের সদস্যরা তাদের অনুসরণ করে রোগীর স্বজন, হাসপাতালের ট্রলিম্যান বা যে অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে আনা হয়েছে সেই অ্যাম্বুলেন্সের চালকের সঙ্গে কথা বলে রোগীর রোগের ধরন জানার চেষ্টা করে। কথা বলে রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন হতে পারে এরকম কোনো সম্ভাবনা বুঝতে পারলে তারা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে থেকে তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর তারা রোগীর সঙ্গে ডাক্তারের রুম পর্যন্ত যায়। ডাক্তার যদি বলে রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন তখন থেকেই তাদের বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। এটিকে তাদের ভাষায় বলা হয় মার্কেটিং। তবে রোগীর অবস্থা যদি গুরুতর হয়, তখন ডাক্তারের রুম পর্যন্ত তারা রোগীকে নিতে দিতে চায় না। এর আগেই তারা রোগীর অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক কথা বলে তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে দেয়। যখনই কোনো রোগী তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে সম্মত হয়, তখনই চক্রের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ফোন দিয়ে রোগীর নাম এবং রোগীর পিতা বা মায়ের নাম জানিয়ে সেই রোগীকে তাদের চক্র প্রধানের নামে থাকা কোডে বুকিং দিতে বলা হয়। অনেক সময় এক রোগীর জন্য কয়েকটি চক্রের সদস্যরা একসঙ্গে ফোন দেয়। তখন যে চক্রের সদস্যরা আগে ফোন দেয় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয় ‘কল ক্লিয়ার’ আর যারা পরে ফোন দেয় তাদের বলা হয় ‘কল বুকড’।

আর যে দুটি চক্র মেডিকেলের ২১১ এবং ২১২ নম্বর ওয়ার্ডে কাজ করে তাদের সদস্যরা এসব ওয়ার্ডের সামনে প্রায় সময় অবস্থান করে। সেখানে থেকে তারা ফলো করে কোন রোগীর এনআইসিউ বা আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। আইসিইউ বা এনআইসিইউ প্রয়োজন রোগীদের টার্গেট করে। অনেক সময় তারা যেসব রোগীর এসবের প্রয়োজন নেই, তাদেরও টার্গেট করে। তাদের বাচ্চার জন্য এনআইসিউ প্রয়োজন বা এনআইসিউতে না নিলে তাদের বাচ্চার সমস্যা হয়ে যাবে, এমন সব কথা বলে তাদের মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলে। এবং বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

চক্রের সদস্যরা রোগীদের তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বিভিন্ন প্রতারণা বিশেষ করে কম খরচে রোগীর চিকিৎসা করানো হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। আর চিকিৎসা শেষে বিলের কাগজ দেখে কপালে হাত দিতে হয় রোগীর স্বজনদের।

প্রতিবাদ করলে রোগীর স্বজনদেরও করা হয় মারধর

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিট নেই এবং রোগীর জরুরি ভিত্তিতে এনআইসিউ প্রয়োজন দাবি করে দালাল চক্রের সদস্যরা এক রোগীকে বাইরে নিয়ে যেতে চাইলে এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় সেই রোগীর স্বজনদেরও মারধর করে সাবিত-শুভরা।

ঘটনার ভুক্তভোগী মোহাম্মদ রাসেল শান্ত বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে আমার ভাতিজার জন্ম হয়। কিছুক্ষণ পর এক লোক এসে নিজেকে হাসপাতালের লোক দাবি করে বলেন, ‘আমাদের এখানে সিট নেই। আপনারা এখানে ভর্তি হতে পারবেন না। বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে চাইলে এখান থেকে দ্রুত নিয়ে যান। পাশেই মেডিফেয়ার নামে একটা হাসপাতাল আছে। সেখানে সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জিজ্ঞেস করি, মেডিফেয়ারে নেওয়ার বিষয়টা ডাক্তার বলেছে কি না। তখন তিনি বলেন, হ্যাঁ। এরপর আমরা তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চাইলে সে ডাক্তারের কাছে যেতে গড়িমসি করছিল। তখন আমরা বুঝতে পারি সে দালাল। এরপর ওই লোকটাকে আমরা ঢাকা মেডিকেলের পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসি। এ সময় সেখানে সাবিত ভাইও (স্বাধীন সাবিত) হাজির হয়। ছাত্রলীগ করার কারণে আমি উনাকে চিনি। এরপর ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু ভাই বিষয়টা ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলে সমাধান করে দিয়েছে। সমাধান করার পর যখন আমরা ফাঁড়ি থেকে বের হই, তখন সাবিত ভাই তার লোকজনকে নিয়ে এসে আমাকে মারতে শুরু করে।

সেখানে তখন শাহবাগ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক খালেকও উপস্থিত ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী যদি এই ঘটনায় মামলা করে, তাহলে আমরা অবশ্যই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করব।’

দালাল চক্রের খপ্পরে পড়া ভুক্তভোগীদের ভাষ্য

গত ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত আড়াইটার সময় দেখা যায়, একজন যুবক এক বাচ্চাকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে ছিল সাবিত-শুভ গ্রুপের সদস্য টুটুল। তাদের পিছু পিছু যাওয়ার পর দেখা যায়, তারা জরুরি বিভাগের গেট থেকে একটি অটোরিকশা নিয়ে সেই বাচ্চাকে চানখাঁরপুলের আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরে জানা যায়, সেই যুবকটির নাম হৃদয়। তিনি বাচ্চাটির বাবা। গত ১৫ জানুয়ারি তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঐ হাসপাতালে একদিন থাকার পর আমি বুঝেছি আমি দালালের খপ্পরে পড়েছি।’

২৬ ডিসেম্বর মধ্যরাতেই আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতালেই দেখা মেলে আরেক রোগীর স্বজনের। সে সময় তিনি নেবুলাইজার লাগানো তার ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আহমেদ স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে বের করে হেঁটে ঢাকা মেডিকেলের দিকে যাচ্ছেন। এ সময় তার গতিরোধ করে তার সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় সাবিত-শুভ চক্রের সদস্য টুটুলকে।

এই রোগীর বাবা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘টুটুল নামের এই লোকটি এই হাসপাতলে ভালো ব্যবস্থা আছে বলে আমাদেরকে এখানে নিয়ে আসে। তার কথায় প্রভাবিত হয়ে আমরা চলে আসি। কিন্তু এসে দেখি, হাসপাতালের পর্যায়েও পড়ে না এটা। তাই আবার ঢাকা মেডিকেলেই চলে যাচ্ছি।’

যা বলছেন অভিযুক্তরা

সাবিত-শুভ গ্রুপের সদস্য টুটুলকে ফোন করলে তিনি সাবিতের সাথে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে ফোন কেটে দেন।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে শেখ স্বাধীন সাবিত বলেন, ‘আমরা কোনো হাসপাতালের মার্কেটিং (দালালি) করি না। আমি মেডিফেয়ার হাসপাতালের মালিক। আমার এখানে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগী আসে। আর ঢাকা মেডিকেলে আমরা যাই না। সেখানে আমাদের হয়ে কাজ করে এরকম কোন সদস্যও নেই।’

রোগীর স্বজন এবং অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে মারধরের ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনার কাছে তথ্য থাকলে আপনি যা ইচ্ছা করেন। এটা নিয়ে আমার অত বেশি মাথাব্যথা নেই।’

এই গ্রুপের আরেক সদস্য ইয়ামিন শুভও অভিযোগ অস্বীকার করেন।

অন্য গ্রুপের নেতা হেদায়েত সরকার বলেন, প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে আমাদের প্রতিনিধি আছে। তারা বেতনভুক্ত। তারা সেসব হাসপাতালে আমাদের হয়ে মার্কেটিং করবে। তবে হাসপাতালের কোনো কর্মচারী বা অন্য কেউ রোগী পাঠালে তাদেরকে আমরা কমিশন দেই না। এসব কাজ করে মেডিফেয়ার বা আহমেদ স্পেশালাইজডের মতো হাসপাতালগুলো।

তবে এই গ্রুপের অন্য নেতা কাজী রাশেদ বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় বা অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদের সাথে যোগাযোগ রাখি এটা সত্য। এদের মাধ্যমে যদি আমাদের হাসপাতালে কোনো রোগী আসে তাদেরকে আমরা পার-ডে ভিত্তিতে বা এককালীন একটা পার্সেন্টেজ দেই। এই টাকাটা পপুলার বা ল্যাবএইডের মতো হাসপাতালও দেয়। এখন এদের যদি আমরা টাকা না দেই তারা ত আমাদের রোগী দিবে না। তাই এই টাকাটা দিতে হয়। তবে আমরা নিজেদের কোন লোক হাসপাতালের ভিতরে রাখি না।’

তাহলে এই গ্রুপের সদস্য হানিফ, মিরাজ বা আলমগীর এরা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরা আমাদের হাসপাতালের কর্মচারী। তাহলে তারা ঢাকা মেডিকেলে কী করে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’

আরেকটি গ্রুপের নেতা ইমরান খান বলেন, ‘এই অভিযোগগুলো হাস্যকর। তবে এসব বিষয়ে সরাসরি কথা বলাই ভালো।’

অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে মারধর বা রোগীদের কনভিন্স করতে তাদের অ্যাম্বুলেন্সের সামনে উঠার চেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো কোনো কিছুই হয় না।

অন্য গ্রুপের নেতা হান্নান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এমনিতেই রোগী আসে। মার্কেটিংয়ের জন্য কেউ নেই। আর রোগী নিয়ে আসলে কাউকে টাকা দেওয়া হয় না।’

এই গ্রুপের শেখ তুনান রোগী পাঠিয়ে রোগীপ্রতি পার্সেন্টেজ পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিএনকে ছাড়া বাকি হাসপাতালগুলোর নামও আমি শুনিনি। আমার পেটে কোন হারাম টাকা নেই। আমার অনুরোধ আরেকটু ক্রচ-চেক করবেন।’

এরপর ছদ্মবেশে বিএনকে, প্রাইম এবং এ ওয়ান হাসপাতালে কথা বললে তারাও জানিয়েছেন, শেখ তুনানের নামে এখানে রোগী আসে এবং কোডও আছে। বিল নেওয়ার জন্য তিনি মাঝেমধ্যে সেসব হাসপাতালে যান। প্রাইম হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা ছবি দেখে তুনানকে শনাক্তও করেছেন।

অন্য গ্রুপের অভিযুক্ত নেতা ট্যাক্সি কাশেমের ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে না পারায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘দালালচক্রের ব্যাপারে আমরা অবহিত। আমরা তাদের উৎখাত করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে তাদের দুইজন সদস্যকে আমরা গ্রেপ্তারও করেছি। এই চক্রের নেতারা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সেটাও আমরা অবহিত। এটি নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রক্টর মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করার চিন্তা করছি। স্যারদের আমরা অবহিত করেই এরপর এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী এসব কাজে জড়িত থাকা লজ্জার বিষয়।’

তিনি বলেন, হাসপাতালের আনসার, পুলিশ এবং ওয়ার্ড মাস্টারদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, বিভিন্ন ল্যাবরেটরি বা বেসরকারি হাসপাতালের কোনো লোক যদি আমাদের হাসপাতালে আসে তাদের ধরে যেন পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।

পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এবং আনসার প্লাটুনের কমান্ডারের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়ে ঢামেকের এই পরিচালক বলেন, ‘এই বিষয়টাও শুনেছি।’ যেহেতু তারা সরকারি কর্মকর্তা তাই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কিছুটা কঠিন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো ‘দালাল দেখলে ধরিয়ে দিন’ শীর্ষক প্লেটে থাকা নম্বর মুছে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সবেমাত্র দুই সপ্তাহ হয়েছে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। তাই বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত নই। আমি দেখব এটি।’


ইউকেএম থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন প্রফেসর ইউনূস 

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে মালয়েশিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউকেএম)।

আজ বুধবার কুয়ালালামপুরে ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক আনন্দঘন পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের কাছ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ নেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রফেসর ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা প্রসারে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়ামের ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রফেসর ইউনূস।

আজ সকালে প্রফেসর ইউনূস অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তাঁকে স্বাগত জানান।

এসময় লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয় শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদকে।

অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,নীতি-নির্ধারক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ থেকে আগত প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীগণ উপস্থিত ছিলেন।


সচিবালয়ের নিরাপত্তা জোরদারে সাত জরুরি নির্দেশনা

সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ, সন্ধ্যা ৬টার পর অবস্থান করতে লাগবে অনুমতি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সচিবালয়ের নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এবার সচিবালয়ের ভেতরে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি সন্ধ্যা ৬টার পর সচিবালয়ে অবস্থান করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার বিধান করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এতে সাতটি জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশ সচিবালয়ের অভ্যন্তরে প্রতিটি ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সচিবালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত প্রতিটি ভবন/প্রাঙ্গণের সার্বক্ষণিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্তগুলো হলো— সচিবালয়ের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের মিছিল, সমাবেশ বা গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা, সচিবালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অননুমোদিত কোনো সভা বা সমাবেশ অথবা কোনো পেশাগত সংগঠন, সমিতির সভা, সম্মেলন, বৈঠক করা যাবে না।

এছাড়া সন্ধ্যা ৬টার পর সচিবালয়ের ভেতরে জরুরি দাপ্তরিক প্রয়োজনে অবস্থান করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে, সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা অন্য কোনো ছুটির দিনে সচিবালয়ের ভেতরে দাপ্তরিক প্রয়োজনে অবস্থান করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি নিতে হবে, সচিবালয়ের ভেতরে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সচিবালয়ে প্রবেশ পাস দৃশ্যমান রাখতে হবে, সচিবালয়ের অভ্যন্তরের কোনো ভবন বা প্রাঙ্গণে কোনোরূপ লিফলেট বিতরণ, ব্যানার বা ফেস্টুন ঝোলানো বা স্থাপন করা যাবে না এবং সচিবালয়ে প্রবেশকালীন গাড়ি বা ব্যক্তির নিরাপত্তা তল্লাশি দায়িত্বরত নিরাপত্তা বাহিনী নিশ্চিত করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে সবাইকে নির্দেশনাগুলো আবশ্যিকভাবে পালন করতে বলা হয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ১৫ শতাংশে নামানোর চেষ্টা চলছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সংক্রান্ত সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ২০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে শুল্ক কমানোর জন্য সরকারের সব মহল থেকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এখনো চলছে এবং চূড়ান্ত চুক্তির আগে শুল্ক কমানো হতে পারে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কারণে শুল্ক কমতে পারে, তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় কারণ শুল্ক আরোপকারী পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের উপর বিষয়টি নির্ভর করে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির নির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনও পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ ঘোষণার পরও এখনো কোনো চুক্তি হয়নি। এ মাসের শেষে চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) চুক্তির খসড়া তৈরি করছে।

বাজারে পেয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে আমদানি করা হবে কিনা এবং ভারত থেকে আমদানি হবে কিনা—এসব প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে এবার পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। শুধুমাত্র ভারত থেকেই নয়, ব্যবসায়ীরা যেখান থেকে আমদানি করতে চান সেখান থেকেই অনুমতি দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য পেঁয়াজের দাম কমানো ও সরবরাহ বৃদ্ধি করা। এজন্য যেখান থেকে কম দামে পাওয়া যাবে সেখান থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

এ সময় বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খান, অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) আব্দুর রহিম খান, অতিরিক্ত সচিব (ডাব্লিউটিও) ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী এবং বিকেএমই এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম উপস্থিত ছিলেন।


দেশে কিছু ভুয়া সমন্বয়ক সৃষ্টি হয়েছে: দুদক চেয়ারম্যান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেছেন, দেশে সম্প্রতি কিছু ভুয়া সমন্বয়ক সৃষ্টি হয়েছে, যা এক ধরনের অনাচার। তিনি বলেন, অফিস-আদালতে এসব ভুয়া অনাচারকারীর প্রতিরোধে প্রশাসনকে আরো উদ্যোগী হতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার রংপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘একাত্তর-পরবর্তী সময়ে যেমন সনদধারী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টি হয়েছিল, ঠিক তেমনি ২০২৪-পরবর্তী সময়েও ভুয়া কিছু সমন্বয়ক সৃষ্টি হয়েছে।

যা একটি মহান আন্দোলনের প্রকৃত সমন্বয়কারীদের অসম্মানের শামিল। তাই এদের প্রতিরোধ করে প্রকৃত সমন্বয়কারীদের সম্মান ফেরাতে হবে।’

তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দায়িত্ব পালনের সময় দুর্নীতি ঢাকতে উৎকোচ গ্রহণ নয়, বরং কর্মক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রেখে রাষ্ট্রের অর্থ সাশ্রয় করুন। একই সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ করে দাপ্তরিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করুন।’

রংপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে রংপুর নগরীর স্টেশন রোডের আলমনগর এলাকায় ছয় তলাবিশিষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের জেলা ও আঞ্চলিক সমন্বয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন দুদক চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি ভবনের বিভিন্ন কাজ পরিদর্শন ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

দুদক চেয়ারম্যান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বলেন, শুধু শাস্তি দিয়ে দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে পারস্পরিক আন্তরিকতা ও সুসম্পর্কই পারে দুর্নীতি অনেকাংশে লাঘব করতে। দুদক সেবাদাতা ও গ্রহীতাদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে দুদকের কার্যক্রম এই অঞ্চলে আরও বিস্তৃত হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দুর্নীতির বিপক্ষের মানুষ। তার উপদেষ্টা পরিষদের কেউ যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হন, সেক্ষেত্রেও তিনি তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নন। অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের বিদ্যমান আইনানুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


পৃথিবীর কোথাও এভাবে ব্যাংকের অর্থ লুট হয়নি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে ব্যাংক খাত থেকে যেভাবে অর্থ লুট হয়েছে, পৃথিবীর কোথাও এভাবে লুট করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, আর্থিক খাতের বিশাল বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায় বা আইসিইউতে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের অর্থনীতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন।।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মতে অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি সন্তোষজনক। আর্থিক খাতের বিশাল বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব ছিল। এমনিতেই আমাদের আর্থিক সক্ষমতা কম, তার মধ্যে এগুলো। সে জন্য আমি খাদের কিনারা-ই বলি, আইসিইউতে ছিল বলি। সেখান থেকে আমরা একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছি।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে ব্যাংক খাতের লুটপাট করা হয়নি। একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আমি জানতে চাইলাম। বলল ৯৫ শতাংশই খেলাপি। পৃথিবীর কোনো দেশে ব্যাংকের টাকা এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সেটা কিন্তু আপনার-আমার টাকা।

অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা একেবারে খারাপ অবস্থায় নেই। মূল্যস্ফীতি কমে ৮ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। খারাপ খারাপ বললে তো খারাপই হয়ে যাব। গ্রোথ হচ্ছে না, কর্মংস্থান হচ্ছে না, কিছুই হচ্ছে না, এভাবে বললে তো হবে না। গ্রোথ (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) তো নেগেটিভ নয়। আনুমানিক একটা তথ্য গ্রোথ ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, আমরা আশা করছি বছর শেষে ৫ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হবে।

তিনি বলেন, হয়তো আপনারা যেভাবে প্রত্যাশা করেন, সেভাবে হয়নি। তবে অনেক কিছুই হয়েছে। আর একটু দ্রুত গতিতে হলে হয় তো ভালো হতো। আমরা আশা করছি, সামনে অর্থনীতি আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে।

কয়টি ব্যাংক একীভূত করা হবে এবং কবে নাগাদ করা হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ নিয়ে বাংলাদেশ কাজ করছে। কয়টা ব্যাংক হবে, তা আমি বলতে চাই না। তবে হবে।

যদি ব্যাংকের একীভূত করার বিষয়টি নির্বাচিত সরকারের অধীনে চলে যায় এবং তারা যদি না করে, সে বিষয়ে আপনার কিছু বলার আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে মোটামুটি আলোচনা হয়েছে। এখনো পুরোপুরি উল্টে গেলে তো কিছু করার নেই।

দেশ নিয়ে নিজের আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে একটা কল্যাণমুখী ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই। সেটা হয়তো পুরোপুরি করা সম্ভব হবে না। আমরা কিছু সংস্কার করে যাব, কিছু সংস্কার নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে যাবে। আমাদের ভালো কাজগুলো যেন বাদ দিয়ে দেওয়া না হয়।’

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।


ফারাক্কায় বিপৎসীমার ওপর পানি, বন্যার আশঙ্কা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে বিপৎসীমার ওপরে বইছে ফারাক্কা ব্যারাজের পানি। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সংলগ্ন এলাকাগুলোতে। এ কারণে ব্যারাজ থেকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় পানি ছাড়া শুরু হয়েছে।

কয়েকদিন ধরে ঝাড়খণ্ড এবং বিহারে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গঙ্গা নদীতে পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা ব্যারাজ এলাকায় গঙ্গার পানির বিপৎসীমা ২২ দশমিক ২৫ মিটার। কিন্তু আপ স্ট্রিমে পানির স্তর পৌঁছে গেছে ২৭ দশমিক ১০ মিটারে। আর ডাউন স্ট্রিমে গঙ্গার পানির স্তর ২৪ দশমিক ০১ মিটার উচ্চতায় বইছে।

গঙ্গার পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় হু হু করে পানি ঢুকছে নিচু এলাকায়। ফলে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ, জলঙ্গি, সুতিসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ফারাক্কায় যে পরিমাণ পানি জমা আছে, অতিরিক্ত পানি প্রবাহ অব্যাহত থাকলে আরও পানি ছাড়তে বাধ্য হবেন তারা।

ফারাক্কা ব্যারাজ থেকে অতিরিক্ত পানি ছাড়া হলে এর প্রভাব পড়তে পারে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশেও। ফারাক্কার ব্যারাজের পানি সুতি, সামশেরগঞ্জ হয়ে পদ্মা নদীর যে শাখায় বাংলাদেশের প্রবেশ করেছে, সেখানেও পানিস্তর ব্যাপকভাবে পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফারাক্কা ব্যারাজ সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে এরই মধ্যে অবহিত করা হয়েছে।

গঙ্গা নদীতে অতিরিক্ত পানি বাড়ার ফলে আতঙ্কে ঘুম উড়েছে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দাদের। ফারাক্কা ব্লকের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন জঙ্গিপুর মহকুমা শাসকসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৌম্যজিৎ বড়ুয়া, ফারাক্কা ব্লকের ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার জুনায়েদ আহমেদ, ফারাক্কা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নীলোৎপল মিশ্র এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা।


গোপনে ২২শ কোটি টাকার নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছিল আ.লীগ সরকার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

টেকনো গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২,২৪০ কোটি টাকা) ব্যয় করে ১৬০টিরও বেশি নজরদারি প্রযুক্তি এবং স্পাইওয়্যার আমদানি ও ব্যবহার করেছে।

তবে এই সাইবার নজরদারি বিরোধী রাজনীতিক, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এবং গণবিক্ষোভের সময়। অনুসন্ধানী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, এসব প্রযুক্তি প্রায়শই অস্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়া এবং তৃতীয় দেশের মধ্যস্থতায় আনা হয়েছে।

এক বছর ধরে চলা গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি ৭০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলা এবং ২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে এই নজরদারির বিস্তার ঘটে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দশকে বাংলাদেশের নজরদারি ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশিং ঐতিহ্য থেকে আধুনিক সাইবারভিত্তিক নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত হয়েছে।

বাংলাদেশ যে ধরনের প্রযুক্তি আমদানি করেছে তার মধ্যে রয়েছে আইএমএসআই ক্যাচার, ওয়াই-ফাই ইন্টারসেপ্টর অ্যান্ড সেলিব্রাইট, ফিনফিশার, প্রিডেটর-এর মতো উন্নত স্পাইওয়্যার। এসব প্রযুক্তি বিস্তৃত এবং প্রায়শই পরোয়ানা ছাড়া নজরদারি চালানোর সুযোগ করে দেয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই ১৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে ইসরায়েলি-উৎস থেকে আসা প্রযুক্তিগুলোর জন্য। এই প্রযুক্তিগুলোর বেশিরভাগই বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বৈরাচারী শাসকরাও ব্যবহার করছেন।

র‍্যাব ও পুলিশ ওয়াই-ফাই ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ইন্টারসেপশন, সিগন্যাল জ্যামিং এবং বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করেছে।

এছাড়া তৎকালীন সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রাথমিকভাবে সেল নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ, ট্যাপ করা এবং সিগন্যাল জ্যামিংয়ের জন্য অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছে। ২০১৫ সালে তারা সিটিজেন ল্যাব থেকে ফিনফিশার নামের একটি কম্পিউটার স্পাইওয়্যার কিনেছিল, যা ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে ডেটা চুরি করতে পারে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের কাছে নজরদারি প্রযুক্তি বিক্রি করেছে। সবচেয়ে সমালোচিত বিষয় হলো, ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও সেলেব্রাইট (Cellebrite), এনএসএ গ্রুপ (পেগাসাস), ইনটেলেক্সা, কোরালকো টেক এবং ইউটিএক্স টেকনোলজিস-এর মতো ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর তৈরি প্রযুক্তি সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর ও হাঙ্গেরির মতো তৃতীয় দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। এছাড়াও তুরস্কের স্পাইওয়্যার ফার্ম বিলগি টেকনোলজি টাসারিম (Bilgi Teknoloji Tasarim-BTT)-ও বাংলাদেশের কাছে নজরদারি সরঞ্জাম বিক্রি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নজরদারি ব্যবস্থার এই বিস্তারের পেছনে রয়েছে আইনি দুর্বলতা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১, টেলিগ্রাফ আইন, ১৮৮৫ এবং ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি আইন, ১৯৩৩-এর মতো পুরোনো আইনগুলোকে এমনভাবে ব্যবহার করা হয়, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ব্যাপক নজরদারির ক্ষমতা দেয়।

এই নজরদারি কার্যক্রমে কোনও সংসদীয় তদারকি, বিচারিক সম্পৃক্ততা বা জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই। ফলে, রাষ্ট্রীয় নজরদারি ব্যবস্থা জনগণের সুরক্ষার পরিবর্তে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং ভিন্নমত দমনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে নজরদারি প্রযুক্তির ক্রয় নাটকীয়ভাবে বেড়েছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে, এই প্রযুক্তিগুলো রাজনৈতিক ও নাগরিক আন্দোলন দমনে ব্যবহৃত হয়েছে।

এই পদ্ধতিগত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রতিবেদনে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। যদি এই ধরনের সংস্কার না করা হয়, তবে দেশটিতে ডিজিটাল স্বৈরাচারী শাসনের মডেল আরও শক্তিশালী হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যেখানে নজরদারি জনগণের স্বার্থ বা নিরাপত্তার বদলে রাজনৈতিক ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।


পামঅয়েলের দাম লিটারে ১৯ টাকা কমালো সরকার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পাম অয়েলের দাম প্রতি লিটারে ১৯ টাকা কমালো সরকার। এতে করে এখন থেকে প্রতিলিটার পামঅয়েল বিক্রি হবে ১৫০ ঢাকায়, যা আগে ছিল ১৬৯ টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় স্থানীয় বাজারেও এই দাম সমন্বয় করা হয়।

আজ মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পামঅয়েলের নতুন দাম ঘোষণা করেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট‍্যারিফ কমিশন ভোজ‍্যতেলের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারের সরবরাহ ও চাহিদা পর্যবেক্ষণ করে থাকে।সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে পামঅয়েলের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় কমিশনের সুপারিশে প্রতি লিটার খোলা পামঅয়েলের দাম ১৬৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভোক্তারা লিটারে ১৯ টাকা কমে পামওয়েল কিনতে পারবেন। তবে সয়াবিনতেল পূর্বের মতো লিটার ১৮৯ টাকা (বোতল) অপরিবর্তিত থাকবে।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের ভোজ্য তেলের বাজারে ৬০ ভাগ দখল হচ্ছে পাম অয়েলের। আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম কমায় এই দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সয়াবিনের মূল্য অপরিবর্তিত থাকায় স্থানীয় বাজারে দাম আগের মতই রয়েছে।

সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয়।


শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টার সাথে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সচিবালয় প্রতিবেদক

শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সাথে আজ মঙ্গলবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত এইচ.ই. মি. সাইদা শিনিচি সাক্ষাৎ করেছেন।

সাক্ষাৎকালে শ্রম খাতের সংস্কার, শিশুশ্রম ও জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধ, জাহাজ ভাঙা শিল্পের উন্নয়ন ও পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

উপদেষ্টা বলেন, শ্রম আইন সংশোধনে আইএলওর পরামর্শ ও ইউরোপীয় অ্যাকশন প্ল্যান অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। শিশুশ্রম বন্ধে ILO কনভেনশন ১৩৮ ও ১৮২ অনুস্বাক্ষর করা হয়েছে। পেশাগত নিরাপত্তার জন্য কনভেনশন ১৫৫, ১৮৭ ও ১৯০ অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধ করতে সংশোধিত আইনে কঠোর বিধান রাখা হচ্ছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত বলেন, সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপভুক্ত (এএসপিএজি) দেশগুলোর শ্রমমন্ত্রীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ নতুন করে এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপভুক্ত (এএসপিএজি) দেশগুলোর নতুন সমন্বয়কারী দেশ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে। জাপান থেকে এ দায়িত্ব পাওয়াকে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে উপদেষ্টা এ বছরের মধ্যে এএসপিএজি শ্রমমন্ত্রীদের আঞ্চলিক সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দেন। এছাড়া, রাজশাহীর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে জাপানের সহায়তা কামনা করা হয়।

জাহাজ ভাঙা শিল্প ও আইএমও প্রার্থিতা বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, "হংকং কনভেনশন" মেনে বেশ কিছু শিপইয়ার্ড "গ্রিন সার্টিফিকেট" পেয়েছে। অবশিষ্ট ইয়ার্ডগুলোকেও আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে আসতে সরকার সহায়তা করবে। এছাড়া, ২০২৬-২৭ মেয়াদের জন্য IMO কাউন্সিলের ক্যাটাগরি ‘সি’তে বাংলাদেশের প্রার্থিতায় জাপানের সমর্থন কামনা করা হয়।

সাক্ষাৎকালে জাপানের রাষ্ট্রদূত শ্রম আইন সংশোধনে ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লান, জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধে ব্যবস্থা, মাতারবাড়িতে ডকইয়ার্ড নির্মান, চট্টগ্রাম বন্দরে ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্রাটেজি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। জাপানের সাবেক শ্রমমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এর নেতৃত্বে একটি দল শীঘ্রই বাংলাদেশ সফর করবে মর্মে জাপানের রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। উক্ত দলটি শ্রমিক অধিকার, শোভন কর্মপরিবেশ ও সরকারি উদ্যোগ পরিদর্শন করবেন। পারস্পরিক আস্থা ও জাপান সরকারের সহযোগিতা সবসময় অব্যাহত থাকবে বলে রাষ্ট্রদূত জানান।

সাক্ষাৎকালে জাপান দূতাবাসের দুই সচিব এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।


খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে সমুদ্রসম্পদ বড় অবদান রাখতে পারে – মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমুদ্রসম্পদ একটি বড় অবদান রাখতে পারে। দেশের হাওর-বাওড়, খাল-বিল ও নদী থেকে প্রয়োজনীয় মাছের প্রায় ৫০ শতাংশ আহরণ করা হলেও সমুদ্র থেকে আহরণ হয় মাত্র ৩০ শতাংশ, যা সমুদ্রে বিপুল সম্ভাবনার তুলনায় অনেক কম। অথচ সমুদ্রের বিপুল সম্পদ এখনো অনাবিষ্কৃত, যা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বড় ধরনের অবদান রাখা সম্ভব।

উপদেষ্টা আজ লেকশোর হোটেলে জাতিসংঘ গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের উদ্যোগে “ওশান সেন্টারস, বাংলাদেশ”-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অগ্রগতি এবং রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের বিশাল সমুদ্রাঞ্চলে বিপুল পরিমাণ অনাবিষ্কৃত সম্পদ রয়েছে, যা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ ও গতিশীল করা সম্ভব।

তিনি বলেন, পুষ্টি পূরণে সামুদ্রিক মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে প্রচার-প্রচারণার অভাব, সহজলভ্যতার সীমাবদ্ধতা এবং অভ্যাসগত কারণে এর প্রতি মানুষের আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম। সামুদ্রিক শুঁটকির প্রতি যেমন আগ্রহ দেখা যায়, তাজা সামুদ্রিক মাছের ক্ষেত্রে তা ততটা নয়। ইলিশ মাছের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের ব্যবহার এখনো তেমন জনপ্রিয় হয়নি।

গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাহামিন এস. জামানের সভাপতিত্বে আরো বক্তৃতা করেন লয়েডস রেজিস্টার ফাউন্ডেশনের হেরিটেজ ও এডুকেশন সেন্টারের পরিচালক অ্যালেক্স স্টিট, ওশান সেন্টারস বাংলাদেশের কান্ট্রি লিড কমোডর (অব.) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এবং জাতিসংঘ গ্লোবাল কমপ্যাক্টের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমির প্রবৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ খুরশেদ আলম। প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ মৎস্যশিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিয়ার অ্যাডমিরাল ড. খন্দকার আখতার হোসেন এবং বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনাম চৌধুরী।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণ, ব্লু ইকোনমি উন্নয়ন, টেকসই মৎস্যশিল্প এবং সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের নতুন দিগন্ত নিয়ে মতবিনিময় করেন। তাদের মতে, সমুদ্রসম্পদের সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়, বরং পরিবেশ সুরক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


আগামী ১৮ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের মৎস্যসম্পদের সম্প্রসারণ, সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং টেকসই ব্যবহারে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আগামী ১৮ থেকে ২৪ আগস্ট জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ দেশব্যাপী উদ্‌যাপিত হতে যাচ্ছে।

জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ১৮ আগস্ট সকাল ১০টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে সভাপতিত্ব করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মৎস্যখাতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৬ জন ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৫ প্রদান করা হবে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জের পদক বিতরণ করা হবে।

আর ২০২৫ সালের মৎস্য সপ্তাহের কর্মসূচিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী র‌্যালি, সেমিনার, প্রযুক্তি প্রদর্শন, আলোচনা সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, মতবিনিময় সভা, সমাপনী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১৮ আগস্ট সকাল ১০টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের আনু্ষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন ও মৎস্য পদক বিতরণ অনুষ্ঠান। ১৯ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮ টায় মানিক মিয়া এভিনিউ-এ সড়ক র‌্যালি, সকাল ১০টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রযুক্তি প্রদর্শন ও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা। ২০ আগস্ট সকাল ১০টায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)-এ মৎস্য অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ক সেমিনার। ২১ আগস্ট সকাল ১০টায় কারওয়ান বাজার মৎস্য আড়তে মৎস্য বিষয়ক আলোচনা সভা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। ২২ আগস্ট সকাল ১০টায় চট্টগ্রামে মৎস্য ও মৎস্যপন্য রপ্তানি বৃদ্ধিতে সম্ভাবনা ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা। ২৩ আগস্ট সকাল ১০টায় মৎস্যভবনে মৎস্যজীবী, মৎস্যচাষী, জেলে এবং আড়ৎদারদের সাথে মতবিনিময় সভা ও ভ্রাম্যমাণ প্রচার প্রচারণা। ২৪ আগস্ট বিকাল ৪টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)-এ জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর মূল্যায়ন, সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর সমাপ্তি হবে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মসূচি হিসেবে থাকছে: প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় র‌্যালি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সফল মৎস্য উদ্যোক্তাদের পুরস্কার প্রদান, পোনা অবমুক্তকরণ, মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, নিরাপদ মাছ চাষ ক্যাম্পেইন, তরুণদের অংশগ্রহণে কর্মশালা, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং মৎস্যজীবীদের নিয়ে ক্রীড়া আয়োজনসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সপ্তাহের শেষ দিনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর মূল্যায়ন, সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর সমাপ্তি হবে।

জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ সফলভাবে উদ্‌যাপনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন, মৎস্যজীবী, উদ্যোক্তা ও জনগণের সহযোগিতা কামনা করছে।

উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে সংঘটিত মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার কারণে ২২ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় নিহতদের প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছে।


মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

মঙ্গলবার অধ্যাপক ইউনূস কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সুযোগ নিয়ে আয়োজিত ব্যবসায়িক ফোরামে বক্তব্য দেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে ব্যবসাবান্ধব করতে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অতীতে বাংলাদেশে ব্যবসা আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোয়নি। তবে নতুন বাংলাদেশে অনেক কিছুই নতুনভাবে গড়ে উঠছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্যবসার সম্ভাবনা।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্ভাব্য সব উপায়ে ব্যবসাবান্ধব হতে চেষ্টা করছে। আমি পরিবর্তিত বাংলাদেশে অসীম সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছি।’

অধ্যাপক ইউনূস আজ মঙ্গলবার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সুযোগ নিয়ে আয়োজিত এক ব্যবসায়িক ফোরামে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে রয়েছে তরুণ ও সৃষ্টিশীল জনগোষ্ঠী। তিনি বিনিয়োগকারীদের বিশ্বজুড়ে বসবাসরত তরুণ বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

বিদেশে থাকা তরুণ বাংলাদেশিদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের মধ্যে সবসময় বাংলাদেশের জন্য কিছু করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য প্রদান করেন। এতে তিনি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এবং শুল্ক ও অশুল্ক বাধা অপসারণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

সেলুলার অপারেটর রবি’র প্রধান শেয়ারহোল্ডার, আজিয়াটা গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিবেক সুদও বক্তব্য দেন। এতে তিনি বাংলাদেশে আজিয়াটার ২৮ বছরে ব্যবসা সম্প্রসারণ, অংশীদারিত্ব ও যৌথ সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।

এ সময় পেট্রোলিয়াম ন্যাশনাল বেরহাদ (পেট্রোনাস)-এর প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ সিইও তেংকু মুহাম্মদ তৌফিক, সার্বভৌম সম্পদ তহবিল খাজানাহ ন্যাশনাল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ফেইসাল ওয়ান জাহির, পাম অয়েল কোম্পানি সাইম ডার্বি প্লান্টেশনস, কুয়ালালামপুর কেপং বেরহাদ (কেএলকে), আইওআই কর্পোরেশন এবং ফেলদা গ্লোবাল ভেঞ্চারস (এফজেভি)-এর শীর্ষ কর্মকর্তা, প্রোটন হোল্ডিংস বেরহাদের (প্রোটন) চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়সাল আলবার এবং গ্লোভ প্রস্তুতকারক টপ গ্লাভ কর্পোরেশনের নির্বাহী চেয়ারম্যান লিম উই চাই প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।

ব্যবসায়িক এই সমাবেশের আগে মঙ্গলবার পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি -এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।


মালয়েশিয়ায় আরো বাংলাদেশী কাজ করার সুযোগ পাবেন : আশা প্রধান উপদেষ্টার 

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আরও অধিকসংখ্যক বাংলাদেশী কাজ করার সুযোগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মালয়েশিয়া সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি আজ কুয়ালালামপুরে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এবং দুই দেশের মধ্যে ৫টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি সহযোগিতামূলক নোট বিনিময় স্বাক্ষরের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ আশা প্রকাশ করেন।

কুয়ালালামপুরের পুত্রজায়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী কর্মী মালয়েশিয়ায় কাজ করছে। তারা উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠান, যা তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপন, সন্তানের লেখাপড়া এবং ভালো শিক্ষা গ্রহণে সহায়তা করছে। আমরা আশা করি বাংলাদেশের জন্য এই দরজা খোলা থাকবে এবং আমাদের দেশের আরও অধিকসংখ্যক তরুণ-তরুণী এখানে কাজ করার সুযোগ পাবেন।’

বাংলাদেশের কর্মীদের মালয়েশিয়ায় কাজ করার সুযোগ দেওয়ায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়ার জনগণ তাদের সঙ্গে পরিবারের একজন সদস্য এবং বন্ধুর মত আচরণ করে। এতে তারা খুব খুশি। তারা অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি এখান থেকে অনেক কিছু শেখে, যা দেশে ফিরে যাওয়ার পর নিজের ব্যবসা দাঁড় করাতে সহায়ক হয়।’

মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে একটা উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন এবং প্রযুক্তি নিয়ে আসুন। আমাদের মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে আপনারা পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারেন।’

একটা টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গত বছর ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমেছিল। আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক বিদায় নিয়েছে। এরপর নতুন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে আমরা সহযোগিতা খুঁজছিলাম, আর তখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বন্ধুর মত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি আমাদের শক্তি জুগিয়েছিলেন।

বাংলাদেশে সঠিক পথ নিশ্চিত করতে দৃঢ় সংকল্পের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা দেশে শৃঙ্খলা ফেরাতে পেরেছি। অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করেছি।

ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবারও কার্যকর করা গেছে। যে কারণে এক বছরের মাথায় এসে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারছি।’

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট নিরসন এবং আসিয়ানের সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য মালয়েশিয়ার জোরালো সমর্থন চান।

সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আশা প্রকাশ করে বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্ক উভয় দেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে সহায়ক হবে।


banner close