বর্তমান সংসদ কতটুকু জাতির প্রতিনিধিত্ব করবে তাতে শঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। মঙ্গলবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনে স্পিকার নির্বাচনের পর নতুন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘যদি সরকারি দলকে লাল বলি তাহলে এ সংসদ সম্পূর্ণ লালময়। সবুজটা শুধু ছিটাফোঁটা। এ সংসদে সম্পূর্ণ জাতিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। বর্তমান সংসদ জাতিকে কতটুকু প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হবে তা আশঙ্কার বিষয়। ভালোভাবে বললে বলতে হবে বিতর্কের বিষয়। দুই অংশের কর্মকাণ্ডের ব্যবধান কমাতে পারলে- অর্থাৎ সরকার ও বিরোধীদের সংসদ কর্মকাণ্ডের ব্যবধান কমাতে পারলে যতটা কমবে ততটুক সংসদ কার্যকর হিসাবে গণ্য হবে।’
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, জাতীয় সংসদ দলমত সবার মিলনস্থল। সেখানে সরকারি দল এক পক্ষ, সরকারের বিপরীত দল আরেক পক্ষ।
সংসদের আসন বণ্টন সম্পর্কে ‘সম্পূর্ণভাবে সুন্দর বলা যাবে না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন পরবর্তী আসন সংখ্যায় শতকরা ৭৫ ভাগই সরকার দলের। ২১ ভাগ স্বতন্ত্র। তারাও প্রায় সরকার দলীয়। ৩-৪ ভাগ শুধু বিরোধী দলীয় সদস্য। এখানে আসন বণ্টনে ভারসাম্যে সিমিট্রিক্যালের অভাব হয়েছে। তাই এটাকে সম্পূর্ণভাবে সুন্দর বলা যাবে না।
স্পিকারের ডান দিকে সরকার দলের আসন এবং বাম পাশে বিরোধী দলের আসন উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল দুপক্ষই সামান হবে। একটা হলো সরকারি দল, আরেকটা হলো বিপক্ষ। তারা সংখ্যাও কাছাকাছি থাকবে। তাহলে তাদের মধ্যে সমানে সমানে লড়াই হবে। নিজেদের মতামতকে প্রধান্য দিয়ে তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়াঝাটি হবে। সংসদে জনগণের পক্ষে সিদ্ধান্ত হবে। এটাই ছিল সংসদ তৈরি করার উদ্দেশ্য।’
জিএম কাদের ১৯৯৬ সাল থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। আগের কয়েকজন স্পিকারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তারা দলীয় আনুগত্যে স্পিকার হলেও বাহ্যিকভাবে চেষ্টা করতেন নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করার। আমি আপনার কাছে প্রত্যাশা করছি আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন।’
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় উপজেলায় আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের আগেই শতাধিক দোকানপাট নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নিয়েছে দখলকারীরা।
আজ বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান টিম উপজেলার জিরো পয়েন্ট পশ্চিমপাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে এমন চিত্র দেখতে পান।
হোটেল ব্যবসায়ী নাসির শেখ বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে এখানে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছি। এই উচ্ছেদে নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
মিস্টির দোকানঘরের মলিক দেলোয়ার শেখ বলেন, প্রতি মাসে ১৪ হাজার টাকা পেতেন দোকান ঘর ভাড়া থেকে। আজ নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এই দোকান ভাড়া ছিল আমার আয়ের একমাত্র উৎস। তারপরও সরকরি নির্দেশনা মেনে নিজেই দোকনঘর সরিয়ে নিয়েছি।
গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সামিউল কাদের খান বলেন, পশ্চিমপাড়া এলাকায় সড়কের সাথে জায়গা দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত শতাধিক স্থাপনা (ব্যবসা প্রতিষ্ঠান) সরিয়ে নেওয়ার জন্য গত ২৬ জুলাই মৌখিকভাবে জানানো হয়। পূর্ব নির্ধারিত সময়নুযায়ী আজ উচ্ছেদ অভিযানে এসে দেখতে পাই বেশিরভাগ স্থাপনাগুলো নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নিয়েছে। বাকিগুলো সরানোর কাজ চলছে।
তিনি আরো বলেন, সড়কের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে সড়কের আশপাশে যেকোনো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চলবে। আমরা সকলকে অনুরোধ করছি, মহাসড়কের জায়গা দখল করে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করবেন না।”
উচ্ছেদ অভিযানে নের্তৃত্ব দেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আমীরুল মোস্তফা। এ সময় গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সার্ভেয়ার শামীম আহমেদ ও কোটালীপাড়া থানা পুলিশের সদস্যেরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৯ জুলাই থেকে আগামী ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। গত সোমবার দেশের বিভিন্ন পুলিশের ইউনিটে বিশেষ সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচি পালনকালে ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। গত সোমবার এসবির এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পুলিশের সব বিভাগকে পাঠিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে এসবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সময়কাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির কর্মসূচিতে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষায় পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে এসবি।
নির্দেশনাগুলো হলো ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। ৮ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত সন্দেহজনক ব্যক্তিসহ মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহন তল্লাশি করা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল অভিযান পরিচালনা করা। মোবাইল প্যাট্রোল জোরদার করা। গুজব রোধে সাইবার পেট্রোলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা।
এছাড়া কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে এসবিকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে।
দীর্ঘ ৩৭ বছর পর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশের দুই সাঁতারু নাজমুল হক হিমেল ও মাহফিজুর রহমান সাগর। গতকাল মঙ্গলবার ১৬ ঘণ্টা সাঁতরিয়ে তারা ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে দুই সাঁতারু লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহিন জানিয়েছিলেন, দুজনই এক ফ্লাইটে লন্ডন যাচ্ছেন।
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে যুক্তরাজ্য গিয়ে অন্তত ১০ দিন অনুশীলন করবেন এই দুই সাঁতারু।
এর আগে বাংলাদেশের তিনজন সাঁতারু ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমকারী প্রথম এশীয় সাঁতারু ব্রজেন দাস। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে মোট ছয়বার চ্যানেলটি অতিক্রম করেন তিনি।
তখন এই চ্যানেল সবচেয়ে কম সময়ে সাঁতরে পার হওয়ার রেকর্ডও গড়েছিলেন তিনি।
এরপর ১৯৬৫ সালে আবদুল মালেক ও ১৯৮৭ সালে মোশাররফ হোসেন ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন। ইংলিশ চ্যানেলের পানির তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৯ ডিগ্রির মতো থাকে। সেখানে সাঁতরানো যেকোনো সাঁতারুর জন্যই চ্যালেঞ্জিং।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ১১ আগষ্ট।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের এডিশনাল রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) কৃষিবিদ ড. ফারুক আহম্মদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া বাকৃবির নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য কেন্দ্রীয় ওরিয়েন্টেশন আগামী ৯ আগষ্ট সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১০ আগষ্ট নবাগত শিক্ষার্থীদের অনুষদভিত্তিক এবং হলভিত্তিক ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে ১১ আগষ্ট থেকে ক্লাস শুরু হবে।
ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপকে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার অংশ হিসেবে দেখছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাল্টা শুল্কের’ ক্ষতিপূরণে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে চীন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিকাব টক অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন। ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়ে জানতে চাইলে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন এ ধরনের পাল্টা শুল্কের বিপক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ককে দেশটির আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার অংশ বলে মনে করে চীন। এ শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ব্যবস্থাকে অবমাননা করা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য সহায়ক নয়। এটি অযৌক্তিক, অন্যায্য ও অন্যায়।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ডব্লিউটিওর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাল্টা শুল্কের’ ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেবে চীন। পাশাপাশি বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারের সম্প্রসারণ ও রপ্তানির দক্ষতা বাড়ানোর ওপরও জোর দেন তিনি।
ইয়াও ওয়েন জানান, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্য ২০২৮ সাল পর্যন্ত শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখবে চীন।
ডিকাব সভাপতি এ কে এম মঈনউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘চীন চাইছে বাংলাদেশে একটি সুশৃঙ্খল, সফল ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল বাংলাদেশের জনগণের, বাইরের কোনো দেশের নয়।’
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাবেক ডিক্যাব সভাপতি শামিম আহমেদের মৃত্যুতে এবং সম্প্রতি উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিশু ও অন্যান্য নিরীহ মানুষের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত ইয়াও জানান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি লক্ষ্য করেই চীন এই উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘চীনের বহু ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ রয়েছে। এ উদ্যোগটি সর্বশেষ সংযোজন মাত্র।’
গত কয়েক মাসে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সব রাজনৈতিক দলকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশে এখন সুযোগ রয়েছে তাই চীন সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত।
এর আগে বিএনপি ও জামায়তসহ কিছু দলের সঙ্গে এ ধরনের যোগাযোগে বাধা ছিল। এ নিয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আপনারা তো জানেনই!’
এ সময় চীন বাংলাদেশের এক বিশ্বস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী, প্রতিবেশী ও অংশীদার হিসেবে সবসময় পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও।
বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা করতে চীন অভিজ্ঞতা বিনিময়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, দুর্যোগ প্রতিরোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদারের প্রস্তুতি রেখেছে বলে তিনি জানান।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে চীন বাংলাদেশের পাশাপাশি এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও একত্রে আধুনিকতা অর্জন এবং এশিয়ার উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনে অবদান রাখতে চায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত জানান, সম্প্রতি কুনমিংয়ে চীন-বাংলাদেশ-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে বাস্তব অগ্রগতি অর্জনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশকে বৈশ্বিক দক্ষিণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের মূল অংশীদার হিসেবে চিহ্নিত করে ইয়াও বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময়ই চীনের প্রতিবেশি কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। আমরা বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় এবং বাইরের হস্তক্ষেপ প্রতিরোধে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে আসছি।’
এ সময় ‘এক চীন’ নীতির প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার ও চীনের মৌলিক স্বার্থ ও প্রধান উদ্বেগে দৃঢ় সমর্থনেরও প্রশংসা করেন তিনি।
ত্রিপক্ষীয় এই উদ্যোগে কেন শুধু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, বাকি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোকে নয়- এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশকেও এ উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত করেছে। তবে তারা কেমন সাড়া দিয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয়টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতির কথা বললেও তা নিয়ে আলোচনা না করেই হঠাৎ করে জুলাই সনদের খসড়া প্রকাশ করেছে বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এটি সঠিক কাজ বলে মনে করছে না দলটি।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেছেন, ‘আমরা এটির তীব্র বিরোধিতা করছি। আলোচনার পদ্ধতি নিয়েই আলোচনা হয়নি, অথচ তারা খসড়া প্রকাশ করেছে। এটা আমরা গ্রহণ করতে পারি না।’
গতকাল মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের সংলাপের বিরতিতে এ কথা বলেন জাবেদ রাসিন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, নির্বাচনের আগেই সেগুলোর আইনগত ভিত্তি পেতে হবে এবং সেই ভিত্তিতেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রশ্নে আলোচনায় ‘র্যাঙ্ক চয়েস’ পদ্ধতি নিয়ে কয়েক দিন ধরে আলোচনা চলছিল বলে জানান জাবেদ রাসিন। তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতি অনুযায়ী আজ বিচার বিভাগ থেকে আরও দুই সদস্যকে যুক্ত করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে, যাঁরা ভোট দেবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই প্রস্তাবে একমত হয়েছি। আমাদের সঙ্গে প্রায় সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, কেবল বিএনপি ও কিছু সহযোগী দল ছাড়া।’
এনসিপির এই নেতা জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেসব মৌলিক সংস্কার ছাড়া ‘ফ্যাসিবাদী কাঠামো দূর করা সম্ভব নয়’, সেগুলোর যদি বাস্তবায়ন না হয়, তবে জুলাই সনদে সই করা হবে কি না, তা দলের ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ১০ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে ২১ আগস্ট পর্যন্ত দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করে আগামী ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব নাসির উদ্দিন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকারী সচিব বলেন, ভোটার তালিকা আইন সংশোধন দেরিতে হওয়ার কারণে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, একটি সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে প্রথমে। কিন্তু তা প্রকাশের আগেই আইন সংশোধন হয়ে আসায় এখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই একটি পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রকাশের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, নতুন তালিকায় প্রায় ৪৫ লাখের বেশি নতুন ভোটার যুক্ত হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া তালিকা থেকে বাদ যাবে ২১ লাখ মৃত ভোটার।
এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছিলেন, খসড়া ভোটার তালিকায় যে ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন দ্রুতই এ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
সবশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুরোদমে প্রস্তুতির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও জোরেশোরে এগোচ্ছে নির্বাচনের পথে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করতে পারেন বলে জানা গেছে।
হংকংভিত্তিক টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান হানডা ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি বাংলাদেশে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে হানডা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান হান চুন এই বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
হানডা শুরুতে বাংলাদেশের বস্ত্রখাতে ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করে এবং এ লক্ষ্যে গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলনে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে।
পরে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার জোরালো সহযোগিতার কারণে হানডা তার বিনিয়োগ পরিকল্পনা ২৫০ মিলিয়ন ডলারে উন্নতি করেছে।
কোম্পানিটি এখন বাংলাদেশে তিনটি কারখানা স্থাপন করবে—দুটি গার্মেন্টস প্রসেসিং এবং একটি নিটিং ও ডায়িং ইউনিট—যার মাধ্যমে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হান চুন বলেন, ‘বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, যেমন বিডা (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ), বেজা (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) এবং বেপজা (বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ)-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা আত্মবিশ্বাস পেয়েছি এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্পে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আসতে চাই।’
বিডা, বেজা ও বেপজা কর্মকর্তারা বলেন, এটি বাংলাদেশের বস্ত্রখাতে অন্যতম বৃহৎ একক চীনা বিনিয়োগ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস হানডা ইন্ডাস্ট্রিজের বিনিয়োগ পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতে আপনি চীনা বিনিয়োগের নেতৃত্ব নিন এবং অন্য চীনা বিনিয়োগকারীদেরও এখানে আসার জন্য উৎসাহিত করুন।’
বাংলাদেশি ডিজাইনারদের প্রশিক্ষণ প্রদানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যাতে তারা ক্রেতাদের পছন্দ-রুচি বুঝে কাজ করতে পারেন।
হান চুন প্রধান উপদেষ্টার কাছে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিতব্য কারখানার একটি নকশা উপস্থাপন করেন।
প্রধান উপদেষ্টা নকশাটি দেখে বলেন, ‘এটি আমার কাছে একটি চমৎকার চিত্রকলার মতো লাগছে।’
প্রথম ধাপে ৮০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে মিরসরাইয়ে গার্মেন্টস কারখানার জমি ইজারার চুক্তি বুধবার স্বাক্ষরিত হবে।
দ্বিতীয় ধাপের জমি ও অন্যান্য সুবিধাদি চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান, যা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সাক্ষাৎকালে অন্যান্যের মধ্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান এবং হানডা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট হেং জেলি।
ঢাকার মাঠ ও পার্কসমূহের ব্যবস্থাপনায় ক্লাবভিত্তিক মডেল থেকে সরে এসে কমিউনিটিভিত্তিক ব্যবস্থাপনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
মঙ্গলবার গুলশানের নগর ভবনে অনুষ্ঠিত ডিএনসিসির অষ্টম কর্পোরেশন সভায় এ তথ্য জানান প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ঢাকার মাঠ ও পার্কসমূহের ব্যবস্থাপনায় ক্লাবভিত্তিক মডেল থেকে বেরিয়ে কমিউনিটিভিত্তিক মডেলের দিকে এগোচ্ছে ডিএনসিসি।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ঢাকার পাবলিক পার্কগুলোতে সর্বসাধারণের প্রবেশ একটি অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ক্লাবভিত্তিক মডেল থেকে সরে এসে কমিউনিটিভিত্তিকভাবে পার্কগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। আমরা নতুন করে আর কোনো ক্লাবকে মাঠের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিচ্ছি না।
পর্যায়ক্রমে ঢাকার সকল মাঠ ও পার্ক ডিএনসিসির উদ্যোগে এলাকাবাসীর সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্ট কমিটিকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হবে। এর ফলে মাঠ ও পার্কগুলোতে নাগরিক মালিকানার ধারণা তৈরি করা যাবে।
এরই অংশ হিসেবে আজকের কর্পোরেশন সভায় গুলশানের বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ পার্ক এবং ডা. ফজলে রাব্বি পার্কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গুলশান সোসাইটিকে দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসক আরও বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্যই হলো মাঠ এবং পার্কগুলো সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। আমরা ক্লাবভিত্তিক মাঠ ব্যবস্থাপনা থেকে বেরিয়ে কমিউনিটিভিত্তিক ব্যবস্থাপনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রশাসক জানান, আমরা কোনো মাঠ বা পার্ক ইজারা দেব না। এগুলো কমিউনিটির মাধ্যমে কমিটি করে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হবে, যেন মাঠ ও পার্কগুলো সবসময় সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা যায়।
উল্লেখ্য, গুলশানের শহিদ তাজউদ্দীন আহমেদ স্মৃতি পার্কসহ যেসব মাঠ ও পার্ক পূর্বে সম্পন্ন চুক্তির ভিত্তিতে ক্লাবের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে, সেগুলোর কার্যক্রম মনিটরের জন্য আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে স্থানীয় জনগনের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটির মাধ্যমে পার্ক ও খেলার মাঠ কেন্দ্রিক জনগনের অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া যথাযথ নিয়মে পার্ক ও মাঠ পরিচালিত হচ্ছে কিনা সেটি এ কমিটি সার্বক্ষণিক মনিটর করবে।
চলমান চুক্তির মেয়াদ শেষে, পরবর্তীতে ক্লাবভিত্তিক মডেলে আর পার্ক ও মাঠ ব্যবস্থাপনা করা হবে না।
মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচার নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কারের পাশাপাশি জুলাইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, ন্যায়বিচার মানে কেবল শাস্তি নয়—ন্যায়বিচার মানে এমন একটি রাষ্ট্র গঠন, যেখানে রাষ্ট্রক্ষমতা আর কখনও জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় একটি হোটেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের উপর জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জাতির ত্যাগ, সাহস এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আন্তরিক সহায়তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আজ আমরা একত্র হয়েছি একটি গভীর তাৎপর্যময় ঘটনার—জুলাই বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকী—স্মরণে। এটি ছিল এমন এক মুহূর্ত, যখন হাজার হাজার বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ—যাদের অধিকাংশই তরুণ—অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধার করেছিল। তাদের সাহস শুধু আমাদের জাতির জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির পক্ষেই উচ্চারিত হয়েছিল।’
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের কথা স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক দিনে, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষত জাতিসংঘের অবিচল সমর্থনের কথাও স্মরণ করতে চাই, যারা সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে—১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট এবং গত বছরের জুলাই ও আগস্টের অন্ধকার দিনগুলোতেও।’
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ সকল মানুষের—জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে—অবিচ্ছেদ্য অধিকার সংজ্ঞায়িত ও রক্ষার লক্ষ্য নিয়েছিল। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা পৃথিবীর একটি নৈতিক দিকনির্দেশক হয়ে ওঠে, এবং তার মূলনীতি বাংলাদেশের সংবিধানেও সুপ্রতিষ্ঠিত। তবুও গত ১৬ বছরে, বাংলাদেশের নাগরিকদের এই অধিকার বারবার খর্ব করা হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করা হয়েছে, স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে এবং সহিংসতা হয়ে উঠেছিল শাসনের মূল হাতিয়ার।
তবে গতবছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশের মানুষ স্পষ্টতা, সংকল্প এবং অসাধারণ সাহসিকতার সাথে নিজেদের অধিকার পুনরুদ্ধার করেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গতবছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তরকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই কয়েক সপ্তাহে প্রায় ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারায়। এই সহিংসতা ছিল পরিকল্পিত, সংগঠিত এবং পূর্ববর্তী সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে পরিচালিত। এই সহিংসতা শুধু নিন্দনীয় নয়, বরং তা মানবতা বিরোধী অপরাধ সম্পর্কেও গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য সত্য উন্মোচন শুধু ন্যায়বিচারের জন্য নয়, নিজেদের শোধরানোর জন্যও অপরিহার্য।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই অনুসন্ধানকে আরও সমর্থন করেছে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, যার মধ্যে বিবিসি এবং আল জাজিরার রিপোর্টও রয়েছে। জাতিসংঘের হাইকমিশনারের দপ্তরের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ, তারা শুধু এই নিপীড়নের প্রামাণ্য নথি প্রস্তুত করেনি, বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে, তার জন্য একটি বিস্তৃত সুপারিশমালাও প্রদান করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমান সরকার মানবাধিকার সুরক্ষায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে—যেমন দণ্ডবিধির সংশোধন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা বিষয়ে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগদান এবং জাতিসংঘের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। এই চুক্তির আওতায় ঢাকায় একটি সহায়তাকারী মিশন গঠিত হচ্ছে, যা সরকার ও সুশীল সমাজকে কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেবে।
তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার টার্কসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবিচল সহায়তা এবং একাত্মতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শুরু থেকেই জাতিসংঘ আমাদের রূপান্তর প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ও সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য কাজ করছি—যার লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যেখানে সবাই শান্তি, স্বাধীনতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, গত বছরের ঘটনাগুলো আমরা স্মরণ করছি, যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এই স্বপ্নের জন্য। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। তারা একটি নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন—এই আশায় যেখানে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণ দৃঢ়ভাবে থাকবে।
২০২৬ সালের একুশে পদক প্রদানের জন্য মনোনয়ন প্রস্তাব আহ্বান করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে এ বছর ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর/সংস্থা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা প্রশাসক এবং স্বাধীনতা ও একুশে পদকে ভূষিত সুধীজনকে মনোনয়ন প্রস্তাব সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ভাষা আন্দোলন, শিল্পকলা (সংগীত, নৃত্য, অভিনয়, চারুকলাসহ সকল ক্ষেত্র) মুক্তিযুদ্ধ, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি, সমাজসেবা, রাজনীতি, ভাষা ও সাহিত্য এবং সরকার নির্ধারিত অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ও গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তি (জীবিত বা মৃত), গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাকে এ পদক প্রদান করা হবে।
এ সংক্রান্ত সকল তথ্য ও নীতিমালা এবং মনোনয়ন প্রস্তাবের ফরম সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (www.moca.gov.bd) এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (www.moi.gov.bd) পাওয়া যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক আব্দুস সবুরের মুত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও সচিব মাহবুবুর রহমান।
তিনি মঙ্গলবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্তেকাল করেন।
পৃথক শোকবার্তায় বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বাণিজ্য সচিব মরহুমের বিদেহ আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।