ভাষা আন্দোলনের মাস ও চেতনার মাস ফেব্রুয়ারি আমাদের আত্মদর্শনের সুযোগ এনে দেয়। পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় বাঙালির প্রাণের ভাষার মাস। এ মাসেই আমরা অর্জন করেছিলাম প্রিয় বাংলা ভাষা। অমর একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের কাছে ব্যাপকভাবে একুশে বইমেলা নামেই পরিচিত হয়েছে সবার কাছে।
একুশে ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য সম্মানের। এ ধরনের স্বীকৃতির মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কথ্য ভাষা রক্ষায় আবারও মনোযোগ দিতে হবে। তাদের সন্তানরা যাতে তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করে এবং একই সঙ্গে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় যুক্ত হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। ভাষা আন্দোলন যেমন আমাদের গর্বিত করেছে, তেমনি কিছু কাজের জন্যও আমাদের দায়ী করেছে, যা এড়ানো যায় না। আমরা যদি শিক্ষা, সংস্কৃতিতে অগ্রসর হতে না পারি এবং উন্নত মানবসম্পদ হতে না পারি তাহলে আমরা আমাদের ভাষা ও দেশকে মহিমান্বিত করতে পারব না। দেশকে এগিয়ে নিতে পারব না। এক্ষেত্রে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে বৈষম্য দূরীকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। যা খুব জরুরি।
ভাষা আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট এ দেশে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। পাকিস্তান আমলে আমরা সাংস্কৃতিক বিভাজন প্রত্যাখ্যান করেছি এবং গণতান্ত্রিক চেতনাকে লালন করে এগিয়েছি, যা এড়ানো উচিত নয়। বিভক্তি নয় ঐক্যের পথে এগিয়ে যেতে হবে। প্রগতিশীলতার চর্চা করতে হবে। পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে, প্রতিটি দেশে এই পশ্চাৎপদ উপাদানগুলির মধ্যে আলাদাভাবে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। এই স্রোতে এগিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
বাঙালির প্রশ্নে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, সুবিধাবাদ ও আপস বরদাস্ত করা যায় না। এতে জাতীয় জীবনে বিরাট বিপর্যয় ঘটবে। এর ফলশ্রুতিতে একদিন হয়তো দেখা যাবে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারলেও আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এই লড়াইয়ের মূলে রয়েছে শিক্ষা। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে বিভক্তির পরিবর্তে ঐক্যের ভিত্তি মজবুত করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, এই অগ্রগতি সত্ত্বেও, রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন লিখিত এবং মুদ্রিত পাঠ্যপস্তকগুলি অপ্রত্যাশিত বিতর্কের সম্মুখীন হচ্ছে। তাতে বিভাজনের রেখা, ক্ষমতার বিবৃতি দিয়ে হাজির হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মেলার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের মতোই প্রাচীন। যতদূর জানা যায়, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার শুরু করেন। এই ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা বই।
আমরা মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করব বা সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন করব এই ছিল আমাদের অঙ্গীকার। তা সম্পন্ন করার জন্য যে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়েজিন তা আমরা কতটুকু নিতে পেরেছি? উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে বাংলা মানসম্পন্ন বই লেখা এমনকি অনুবাদেও কতটা অগ্রগতি হয়েছে? ভাষা আন্দোলনের অমর স্মারক মাসে বইমেলার আয়োজন করছে বাংলা একাডেমি।
সময়ের সাথে সাথে মেলার প্রসার ঘটেছে এবং এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে বহুদূরে। এ উপলক্ষে সাহিত্যসহ নানা ধরনের বইও প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু মানের দিকে লক্ষ্য করলে অনেক ক্ষেত্রেই হতাশ হবেন। ভাষার ব্যবহারেও চলছে নৈরাজ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাষার বিষয়ভিত্তিক ব্যবহারও এর জন্য দায়ী। তবে অনলাইনে বাংলায় লেখা অনেক বেড়েছে। তরুণদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। ইংরেজিসহ বহুল ব্যবহৃত ভাষায় লেখা, বাংলায় লেখা উচ্চমানের সাহিত্যের মানসম্মত অনুবাদ ও প্রচার প্রয়োজন। জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা ও মননের প্রতীক বাংলা একাডেমিকেও এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না যে বাংলা একাডেমি ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফসল।
১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি মহান একুশে মেলা উপলক্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ হ্রাসকৃত মূল্যে একাডেমি প্রকাশিত বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। এর পাশাপাশি মুক্তধারা, স্টান্ডার্ড পাবলিশার্স এবং এদের দেখাদেখি আরও কেউ কেউ বাংলা একাডেমীর মাঠে নিজেদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করে। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি তার নিজস্ব প্রকাশিত বই প্রদর্শন ও ম্যুরাল প্রদর্শনীর আয়োজন করে। বই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রফেসর আবু মহাম্মেদ হাবীবুল্লাহ। ঐ গণজমায়েতকে সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান একাডেমীর পূর্বদিকের দেয়াল বরাবর নিজেদের পছন্দমতো জায়গায় যে যার মতো কিছু স্টল নির্মাণ করে বই বিক্রির ব্যবস্থা করে।
১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণকে চারজন ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, বরকত ও শফিউরের নামে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়া নজরুল মঞ্চের সামনে শিশু কর্নারে থাকবে শিশু কিশোর বিষয়ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। প্রতিবারের মতো এবারেও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে নজরুল মঞ্চে। মেলার প্রচার কার্যক্রমের জন্যে তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে।
মেলায় থাকে মিডিয়া সেন্টার। যেখান থাকে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা। এছাড়া থাকে লেখক কর্নার এবং তথ্যকেন্দ্র। মেলা প্রাঙ্গণ রাখা হয় পলিথিন, ধূমপান এবং হকারমুক্ত। মেলায় বই বিক্রির উপর ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় থাকে। এছাড়া মেলায় নিরাপত্তাবাহিনীর পাশাপাশি রাখা হয় বিশেষ টাস্কফোর্স।
মেলা চলাকালীন প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠের আসর বসে। প্রতি সন্ধ্যায় থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া মেলার লেখককুঞ্জে লেখকেরা তাঁদের বইয়ের ব্যাপারে পাঠক ও দর্শকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের খবর, প্রতিদিন প্রকাশিত বইগুলোর নাম, লেখক ও প্রকাশকের নাম প্রকাশ করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল মেলার মিডিয়া স্পন্সর হয়ে মেলার তাৎক্ষণিক খবরাখবর দর্শক শ্রোতাদের অবহিত করে।
সময়ের ব্যাপ্তির দিক থেকে হোক কিংবা কলেবরের দিক থেকে, পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম বইমেলার একটি হলো অমর একুশে বইমেলা। সেখানে পুরোটাই মুদ্রিত বইয়ের উপস্থিতি। গত কয়েক বছর ধরে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইয়ের ডিজিটাল মাধ্যমগুলোর আলাদা স্টল থাকলেও, সেটি যে পাঠককে সিকিভাগ প্রভাবিতও করছে না, তা স্পষ্ট। একদিকে, প্রযুক্তি সচেতন মানুষরা বলছেন, মুদ্রিত বই থাকবে না, আবার অন্যদিকে সেখানেই হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম মুদ্রিত বইয়ের মেলা।
অমর একুশে বইমেলার কলেবর দিনে দিনে বেড়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই বইমেলাকে ঘিরে মানুষের আগ্রহেরই বহিঃপ্রকাশ। প্রথমদিকে বাংলা একাডেমির সামনে, তারপর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং এখন সেটির গন্ডি পেরিয়ে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছড়িয়ে পরেছে বইমেলার পরিসর। অথচ বইমেলা শুরুর ইতিহাস নিয়ে নেই তেমন কোনো কাজ।
বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশে বইমেলা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা থাকলেও রুচি, উৎকর্ষ আর পরিশীলনের দিক থেকে বইমেলা এক অনন্য ব্যাপার। বইমেলা হয়ে উঠেছে বাঙালি মনন ও উৎকর্ষের স্মারক। সামষ্টিক সৃজনের উর্বর জমিন। বইমেলার কথা ভাবলেই প্রাণে খুশির দোলা লাগে, উৎফুল্ল হয়ে উঠে মন। বইমেলা আনন্দ, মিলন আর ভাব আদান-প্রদানের এক গতিশীল লক্ষ্য।
বইমেলায় প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা হয়। পছন্দের লেখকদের সাথে কথা হয়। বইমেলা কেবল বইমেলা নয় কথামেলাও বটে। সামাজিক যোগাযোগ ও নেটওয়ার্কের এক অমিত সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয় বইমেলা। বইমেলাকে ঘিরে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পে এক অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। বলা যায় এ মেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে।
অমর একুশে বইমেলা দেখিয়ে দেয় বাঙালির চিন্তা-চেতনার সক্ষমতা। সৃষ্টিশীলতা ও মননের বিবেচনায় বইমেলা সমাজের খোলাজানালা। বই মেলায় পাশাপাশি সাজানো বইয়ের দিকে তাকালে বইমেলার আরেকটি বৈশিষ্ট্য সহজেই চোখে পড়ার কথা, তা হল সহিষ্ণুতা। একই বিষয়ে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী, প্রতিদ্বন্দ্বী বক্তব্যের বইয়েরা নির্বিবাদে সহাবস্থান করে, যেমন সমাজে থাকার কথা, রাষ্ট্রে থাকার কথা। একটি আধুনিক সমাজে পাঠক হলো সার্বভৌম সত্ত্বা। কোন বই তারা গ্রহণ করবে আর কোনটি প্রত্যাখ্যান করবে তা তাদের আওতার বিষয়। ভিন্নমত, ভিন্নযুক্তি, ভিন্ন ভাষা অপরাধ নয়। বরং অভিব্যক্তি প্রকাশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল মানদণ্ডে ভিন্ন মত গ্রহণযোগ্য বিষয়। সমাজে চিন্তার স্বাধীনতা রুদ্ধ হলে সেই সমাজ অন্ধকার নেমে আসতে বাধ্য।
একুশের বইমেলা এখন আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিবছরের ফেব্রুয়ারি মাস হলো বাঙালির ভাষার মাস। সেই ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকেই বাংলা একাডেমি চত্বরে মাসব্যাপী বইমেলা শুরু হয়। আর নিয়ম অনুযায়ী এ বইমেলা দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করে থাকেন।
বই হলো জ্ঞানার্জনের প্রধানতম মাধ্যম। আধুনিক এ ডিজিটাল যুগেও ছাপানো বইয়ের এতটুকু গুরুত্ব কমেনি; বরং দিন দিন মানসম্পন্ন বইয়ের কদর বেড়েই চলেছে। বাংলা ভাষা চর্চা, বাংলা ভাষায় সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা, শুদ্ধ বাংলা ব্যবহারের গুরুদায়িত্ব নিয়ে ১৯৫৫ সালে ঢাকায় তৎকালীন বর্ধমান হাউস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, বর্তমানে যা বাংলা একাডেমি হিসেবে বাঙালির হৃদয়-মনে স্থান পেয়ে এসেছে।
তারপর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালকে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তখন সে বছরই ডিসেম্বর মাসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলা অয়োজন করা হয়। সে থেকেই বাংলা একাডেমিতে বইমেলার সূচনা। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী বইয়ের মেলা হিসেবে স্বীকৃত হলো জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বইমেলা। সে বইমেলাটি নাকি এখন থেকে প্রায় পাঁচশ বছর আগে, অর্থাৎ পঞ্চদশ শতাব্দীতে শুরু হয়েছিল। কথিত আছে, জোহানেস গুটেনবার্গ ছাপাখানা আবিষ্কারের পরই ছাপার অক্ষরে বই ছাপানো শুরু হয়েছিল। আর সেই ছাপানো বই প্রদর্শন, প্রচার ও বিক্রির জন্য তখন থেকেই মেলার আয়োজন হয়ে আসছিল। মাত্র পাঁচ দিনের এই মেলায় তিন লক্ষাধিক দর্শনার্থী ও সাত সহস্রাধিক প্রকাশকের সমাগম ঘটে।
তার পরে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের বইমেলাটিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বইমেলা বলা হয়ে থাকে। সে বইমেলাকে অবশ্য বইমেলা না বলে বইয়ের বাণিজ্যমেলাও বলা হয়ে থাকে। কারণ, মেলায় এসে পাঠক শুধু বই কিনবে এমনটিই নয়। এ মেলার মূল উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বব্যাপী কীভাবে ভালো বই ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সেটা। সেখানে প্রতিবছর দেড় শতাধিক দেশের প্রায় ২৩ হাজার প্রকাশক, গ্রন্থ বিক্রেতা, লিটারারি এজেন্ট, গ্রন্থাগারিক, গণমাধ্যম ও শিল্প সরবরাহকারীরা মেলায় অংশগ্রহণ করেন।
তার পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ হিসেবে খ্যাত কলকাতায় অনুষ্ঠিত বইমেলা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এটিকে পৃথিবীর বাংলা বইয়ের সবচেয়ে বড় মেলা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে লন্ডন মেলার মতো এটি কোনো বাণিজ্যিক বইমেলা নয়। প্রকৃত অর্থেই তা বাঙালির সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে আয়োজিত হয়ে থাকে। ১৯৭৬ সালে শুরু হওয়া কলকাতা বইমেলা ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। সেখানে প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে সেই বইমেলার আয়োজন হয়।
বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া এ বইমেলাকে সামনে রেখে দেশের মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব ঘটে যায় এ ফেব্রুয়ারি মাসে। একুশের বইমেলাকে কেন্দ্র করে দেশের নামীদামি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসহ হাজারো প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মব্যস্ততা বাড়িয়ে দেয়।
বই প্রকাশনাকে একটি শিল্প হিসেবে ধরলে এ শিল্পে প্রচুর সৃজনশীল মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে। বইয়ের মতো সৃজনশীল কাজে সৃজনশীল মানুষই কাজ করেন। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় একসময় বাংলা একাডেমি চত্বরে শুরু হওয়া বইমেলার উপচেপড়া ভিড়ের অভিজ্ঞতায় এবার পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে মেলার স্থান হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
এই ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য সারাবছর বাংলাদেশের বইপ্রেমী পাঠক, লেখক এবং প্রকাশকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। পুরো বইমেলা প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে নতুন বইয়ের গন্ধে, হাজারও মানুষের মুখর পদচারণায় প্রাণ ফিরে পায় বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রূপ নেয় এক মহামিলন মেলায়।
তবে ইতিহাসের কথা বলতে গেলে যেটা বলতে হবে তা মূলত ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির বাংলা ভাষার জন্য মহান ভাষা শহীদদের আত্মোৎসর্গের অম্লান স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতেই এই বইমেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ এবং তা প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসেই পালিত হয় যা নিয়মিতভাবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, তবে ২০১৪ সাল থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাংলা একাডেমির মুখোমুখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হয়।
মেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রতিনিয়ত নতুন মোড়ক উন্মোচিত বইগুলোর নাম, লেখক ও প্রকাশকের নাম ঘোষণা করা হয় এবং দৈনিক প্রকাশিত বইয়ের সামগ্রিক তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়।
ফেব্রুয়ারি মাস ক্যালেন্ডারের একটি নির্দিষ্ট মাস শুধু নয়, এটি এখন বাঙালির আত্মমর্যাদা, প্রকাশের অহংকার ও নিজেকে উন্মোচনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের স্মরণ করা হয়। মাসজুড়ে চলে বইমেলা। প্রতিটি বাঙালি অপেক্ষা করে কখন আসবে ফেব্রুয়ারি আর কখনই বা শুরু হবে বইমেলা। লেখক, পাঠক, প্রকাশক অধীর আগ্রহ অপেক্ষা এই প্রহরের। বাঙালির আবেগ আর ভালোবাসায় থরে থরে কম্পমান বইমেলা। অজস্র বই প্রকাশিত হয়। বইয়ের নামে এসেছে পরিবর্তন। প্রচ্ছদ সাইজ রয়েছে আকর্ষণ। সুসজ্জিত বইমেলায় প্রকৃতি নানা সাজে রঞ্জিত।
ঝরাপাতা, বিচিত্র ফুল, পাখির ডাক ও নানা বয়সি পাঠকের কলরবে মুখরিত বইমেলা শুধু মিলনমেলা নয়, স্মৃতিভারে গ্রথিত একটি অনন্য কেন্দ্র। ভালোবাসার টানে, নতুন বইয়ের গন্ধে আমরা বইমেলায় আসি, আবার ঘরে ফিরে যাই। সঙ্গে নিয়ে যাই প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য স্মৃতি। বইয়ে পড়া কোনো চরিত্র অলক্ষ্যেই হয়ে যাই। আনন্দ-বেদনায় লীন হয়ে কখনো দুই চোখ ভিজে যায়। দীর্ঘশ্বাস বুক ফুড়ে বেরিয়ে আসে। অতীতের পাওয়া না পাওয়া নিয়ে যে দোলাচালে আমরা বন্দি থাকি তার সামান্যটুকুই আমরা ধারণ করতে পারি। অমর একুশের মেলা, আমাদের প্রাণের মেলা, আমাদের চেতনা জাগ্রত করার এক উৎসব।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ফলাফলের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর আলী রীয়াজ জুলাই মাসের মধ্যে একটি জাতীয় সনদ তুলে ধরার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
গতকাল বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দিনব্যাপী দ্বিতীয় দফার আলোচনার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আলোচনা অত্যন্ত ইতিবাচক। আমাদের প্রতিনিয়তই অগ্রগতি হচ্ছে এবং আমরা আশা করছি যে জুলাই মাসের মধ্যে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সনদে পৌঁছাতে পারব এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আমরা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’
আলোচ্য বিষয় নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম দফার আলোচনার পর সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কিছু বিষয়ে পুনর্বিবেচনার কথা রাজনৈতিক দলগুলো বলেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার আবার এ বিষয়ে আলোচনা করার পর আমরা এ বিষয়ে একমত হতে পেরেছি যে ৭০ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন করে অর্থবিল ও আস্থা ভোটের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বাধ্যবাধকতা থাকবে যেন তারা দলের পক্ষে ভোট দেন।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, গতদিনের আলোচনার তুলনায় একটি অগ্রগতি হয়েছে এবং আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে পারি যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ওই ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে চারটি কমিটি অর্থাৎ পাবলিক একাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, এস্টিমেশন কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটিসহ জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত কমিটিগুলোর সভাপতির পদ আসনের সংখ্যানুপাতিক হারে বিরোধী দলকে প্রদানের বিষয়ে সকলে একমত হয়েছেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরো বলেন, জাতীয় সংসদের নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয় দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়েছে। সকলেই জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ১০০টি আসন সংরক্ষিত করার জন্য সকলে একমত হয়েছেন। তবে এর পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে একমত হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে যেটি সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে আছে তার পাশাপাশি সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে আছে সেগুলো সংশোধনের ব্যাপারে এক ধরনের ঐক্যমত হয়েছে। কিন্তু আমরা এই বিষয়টি আগামী সপ্তাহে আবার আলোচনা করব যেন একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আমরা আসতে পারি। কিন্তু প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে কিন্তু তার সঙ্গে নীতিগতভাবে কিছু কিছু দল এর বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু এটা কম বেশি সকলে স্বীকার করেছেন যে এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনার দরকার আছে।
এ সময় কমিশনের একটি বড় স্টেকহোল্ডার হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর গতকালের আলোচনায় অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন , যে কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আমরা সার্বক্ষণিকভাবে সব দলের সাথে যোগাযোগ রাখি যেন তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, আমরা আশা করি গতকাল উপস্থিত না থাকতে পারলেও আজ তারা বা তাদের প্রতিনিধিরা এখানে উপস্থিত থাকবেন।
উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করা এবং বহুল আলোচিত ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুতের লক্ষ্যে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা।
বেলা এগারোটা চল্লিশ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
আলোচনায় কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আরো অংশ নেন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, আইয়ুব মিয়া, মো. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
এছাড়াও, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ,খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের পক্ষ থেকে ডা. মুশতাক হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
তবে, আমন্ত্রণ পেলেও বৈঠকে উপস্থিত হননি জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি।
এর আগে, এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানায়, ১৭, ১৮ ও ১৯ জুন এই তিনদিন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশাহকে গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টায় মোহাম্মদপুরের বসিলা সিটি ডেভেলপার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে, বাদশা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সাড়ে ৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা করেছে। প্রথম মামলায় বাদশার বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২০ লাখ ৭২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ৬টি ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর থানার ইনচার্জ (তদন্ত) হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুরের বসিলা সিটি ডেভেলপার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম সারোয়ার জাহান বাদশাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, সরওয়ার জাহান বাদশাহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ও কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
সরকার ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের উপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এই মুহূর্তে জ্বালানির দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যদি সংঘাত দীর্ঘায়িত হয়—তাহলে এটি আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে আপাতত, আমরা অপেক্ষা করব।’
মঙ্গলবার (১৭ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং পাবলিক ক্রয় সম্পর্কিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এই সংঘাত অভ্যন্তরীণ জ্বালানির দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে এরই মধ্যে দাম সামান্য বেড়েছে, তবে আমাদের আগের দেওয়া ক্রয়াদেশগুলোকে এটি প্রভাবিত করেনি।’
তিনি আরও বলেন, সরকার গ্যাস ও এলএনজির দামও পর্যবেক্ষণ করছে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি এলএনজির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে, তবে আমরা আমাদের পরিকল্পনায় এটি বিবেচনা করব। সৌভাগ্যবশত, আজ আমরা যে এলএনজি আমদানি প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছি তা পুরোনো দামেই। আমরা ভাগ্যবান যে এটি আগের হারে পাচ্ছি।’
বাণিজ্যের উপর বর্তমানে কোনো প্রভাব পড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, বর্তমানে বাণিজ্যের উপর কোনো প্রভাব পড়ছে না।’
ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিঘ্নের আশঙ্কায় সরকার কোনো বিশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ আমরা যে এলএনজি এবং সার আমদানি প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করেছি তা আগের দামেই রয়েছে। ভবিষ্যতে নতুন যেকোনো প্রস্তাব মূল্যে উপর প্রভাব পড়তে পারে।’
যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তাক্ষণিক পরিকল্পনা সম্পর্কে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিকল্পগুলো নিয়ে কাজ করছে। ‘আমরা এলএনজির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করি। এই সংঘাত কেবল জ্বালানি নয়, সার আমদানি এবং সামুদ্রিক পরিবহনকেও প্রভাবিত করতে পারে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে জাহাজ চলাচল করে যার প্রভাব পড়তে পারে। তবে আমি মনে করি না যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে।’
বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম ইতোমধ্যে বেড়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, অনেক দেশে দাম বেড়েছে, তবে আমরা এখনও কোনো পরিবর্তন করছি না। আমরা অপেক্ষা করব এবং দেখব।’
য়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের কেরানী বাড়ি মোড় এলাকায় ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাওয়া মাদক ব্যবসা ও সেবনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে এলাকাবাসী। “চলো যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে” স্লোগানকে সামনে রেখে (১৭ জুন) মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের কেরানী বাড়ি মোড়ে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে মাদকব্যবসায়ীর বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় কাউকে না পেয়ে মাদক কারবারীদের বাড়িঘর ভাঙচুরের চেষ্টা করে উত্তেজিত জনতা। পরে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এসময় বিক্ষোভকারীরা অভিযোগের পরও মাদককারবারী মিনা খাতুন ও তার ভাই মুক্তা মিয়া সহ আরও জনাদশেক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার না হওয়ায় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা অভিযোগ করেন যাদের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রির অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশ তাদেরকে না ধরে উল্টো অভিযোগকারীকে শাসিয়েছেন।
গত ১৫ দিন আগে স্থানীয় ইউএনও ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি এলাকাবাসী। এতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বিক্ষোভে পুলিশ উপস্থিত থাকা অবস্থায় ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “সমাজে ছড়িয়ে গেছে মাদক, আসক্ত হয়ে পড়েছে যুব সমাজ। মাদক বেচা-কেনা বন্ধ করতে হবে।” তারা অভিযোগ করেন, কেরানী বাড়ি মোড় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য কেনাবেচা ও সেবন চলছে। এতে করে এলাকার যুবসমাজ ধ্বংসের পথে যাচ্ছে, বাড়ছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এসময় বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, কিছু দালাল চক্রের ছত্রছায়ায় এই মাদক ব্যবসা বিস্তার লাভ করেছে। তারা প্রশ্ন তোলেন, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের পদক্ষেপ কোথায়?
মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে কেরানী বাড়ি মোড়সহ আশপাশের এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার দাবি জানানো হয়।
অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ ব্যাপারে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এই আন্দোলনের আয়োজন করে স্থানীয় ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সচেতন জনসাধারণ। সবশেষে মাদক বাবসায়ীদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার না করা হলে বুধবার বিকাল তিনটায় থানা ঘেরাওয়ের আল্টিমেটাম দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করা হয়।
ঈদুল আজহার আগে-পরে ১৫ দিনে সারা দেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত এবং ১১৮২ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
প্রতিবেদনে তিনি বলেন, একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৪১৫টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত এবং ১১৯৪ জন আহত হয়েছেন।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা ও যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতিল, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে বৃষ্টির কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পড়ে কিছু যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে হয়েছে। ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে লেগে দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিল। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের বাড়ি যেতে হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও সংলগ্ন এলাকায় আবারও একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। পাশাপাশি মৌসুমি বায়ু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয়, অন্যান্য অঞ্চলে মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণও হতে পারে।
এ ছাড়া আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবিরের সই করা পৃথক এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে বলেও নিয়মিত আবহাওয়া বুলেটিনে জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তাপমাত্রা কমার এই ধারা আগামীকালও অব্যাহত থাকতে পারে এবং তার পরের অন্তত তিন দিন প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, বৃষ্টিপাত নিয়ে আগামী তিন দিনের পূর্বাভাসে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবারও একই ধরনের আবহাওয়া থাকতে পারে। অর্থাৎ রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি দেশের কিছু স্থানে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে।
বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা শনিবার, এমনকি তার পরের পাঁচ দিনও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ সংক্রান্ত আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈঠকে কমিশন সদস্যগণ জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, ‘বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।’
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে। যেখানেই গেছি সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে।’
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে (Central African Republic) নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে (MINUSCA), Bangladesh Armed Military Utility Helicopter Unit-5 (BANAMUHU-5) কন্টিনজেন্ট এর মোট ১২৫ জন সদস্য প্রতিস্থাপন করতে যাচ্ছে। বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, বিবিপি, ওএসপি, জিইউপি, এনএসডব্লিউসি, পিএসসি সোমবার (১৬-৬-২০২৫) বিমান বাহিনী সদর দপ্তর-এ মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রগামী কন্টিনজেন্ট (BANAMUHU-6) এর সদস্যদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
এসময় তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সততা, পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তথা দেশের সুনাম বয়ে আনার জন্য কন্টিনজেন্ট সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। পরিশেষে তিনি মিশনের সাফল্য কামনায় আয়োজিত এক বিশেষ মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে বিমান বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারগণ, ঢাকাস্থ বিমান ঘাঁটি দ্বয়ের এয়ার অধিনায়ক এবং বিমান সদর ও ঘাঁটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সমরাস্ত্র ব্যবহারে সক্ষম এবং নাইটভিশন প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ০৩ টি এমআই-১৭১ হেলিকপ্টার ও বিভিন্ন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে MINUSCA জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিযুক্ত রয়েছে। BANAMUHU-6 কন্টিনজেন্টের নেতৃত্বে থাকবেন এয়ার কমডোর ইমরানুর রহমান, বিইউপি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, জিডি(পি)। আগামী ১৯ জুন ২০২৫ তারিখে কন্টিনজেন্ট এর সদস্যগণ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, ঢাকা হতে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চারটি গ্রামের পাঁচ যুবকের অপহরণের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো তাদের সন্ধান মেলেনি। অপহৃতদের কেউ বেঁচে আছেন কিনা, নাকি তাঁরা চিরতরে হারিয়ে গেছেন—সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি পরিবার, প্রশাসন কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও।
২০১৩ সালের ১৯ মে রাতে বড়াইগ্রামের গুরুমশৈল গ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অস্ত্রধারী ১০-১২ জনের একটি দল মাইক্রোবাসে এসে কৃষক কামাল হোসেনকে বাড়ির পাশ থেকে তুলে নেয়। একই রাতে একই কায়দায় অপহরণ করা হয় ওই গ্রামের দিনমজুর ইব্রাহিম তালুকদার এবং পার্শ্ববর্তী মহিষভাঙ্গা গ্রামের ভুটভুটি চালক তৈয়ব আলীকে।
অপহরণের সময় অস্ত্রধারীরা এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং অপহৃতদের মারধর করে তুলে নিয়ে যায়। এর ঠিক দুদিন আগে একই উপজেলার কালিকাপুর গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন বিজিবি সদস্য রাসেল গাজী ও তার বন্ধু কাটাশকুল গ্রামের সেন্টু হোসেন। ছুটিতে বাড়ি এসে রাসেল তার বন্ধুর ফোন পেয়ে বের হওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ হন দুজনই।
স্বজনরা জানান, অপহরণের পরপরই তারা থানায় জিডি ও মামলার পাশাপাশি প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যায়নি। গুরুমশৈল গ্রামের কামালের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এক যুগ হয়ে গেল, আমার ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদি। কে নিল, কেন নিল, কোনো উত্তর নেই।’
নিখোঁজ ইব্রাহিম তালুকদারের মা বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়ে আমরা পথে বসেছি। কোনো দিন কেউ খোঁজও নেয়নি।’ রাসেল গাজীর বাবা বলেন, ‘বিজিবির মতো চাকরিতে থেকেও যদি অপহৃত হয়, তবে সাধারণ মানুষের কী হবে?’
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, ‘এই ঘটনার বিষয়ে আমরা নতুন করে তদন্ত শুরু করেছি। ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও হাতে এসেছে। আশা করছি, দ্রুতই রহস্য উদঘাটন এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
অপহৃতদের স্বজনরা বলছেন, ‘বর্তমান সরকারের কাছে তারা আকুতি জানাচ্ছেন—তাদের প্রিয়জনেরা জীবিত না থাকলেও অন্তত কী ঘটেছে, কোথায় গেল তারা—সে রহস্য তো উন্মোচিত হোক।’
বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করেছে নেপাল। গত বছরের ৩ অক্টোবর নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে হওয়া ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী এই বিদ্যুৎ আসছে। গতকাল রোববার থেকে ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে নেপাল বাংলাদেশে এই বিদ্যুৎ রপ্তানি করছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। ভারতীয় ট্রান্সমিশন চার্জসহ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে প্রায় ৭ টাকা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ শীতকালে নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে। কারণ, শীতের সময় নেপালের নদীতে ভারী তুষারপাতের কারণে নেপালের জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়।
শীতকালে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবহার কমে যাওয়ায় নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বাংলাদেশ একই পরিমাণ বিদ্যুৎ নেপালে রপ্তানি করতে পারে। এতে দুই দেশের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ জ্বালানি বাণিজ্য গড়ে উঠবে।
ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা শীতকালে বাংলাদেশ থেকে নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির প্রস্তাব পাঠাব।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা নেপালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠাব, যাতে সম্ভাব্য বিদ্যুৎ রপ্তানি নিয়ে আলোচনা শুরু করা যায়।
এর আগে ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর নেপাল থেকে ভারত হয়ে বিদ্যুৎ আমদানি চূড়ান্ত করতে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি ও ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যবসা নিগম লিমিটেড একটি ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করে।
তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বাড়ল ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ সময় মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এ হিসাব চলতি বছরের ৩১ মার্চের।
তিন মাস আগে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। আর মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।
গতকাল রোববার এ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের পতন পরবর্তী নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, বিগত সরকার খেলাপি ঋণ নানাভাবে লুকিয়ে রেখেছিল। এসব খেলাপি ঋণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এটা বেড়ে ৩০ শতাংশ হতে পারে। সেই হিসেবে প্রতি তিন মাসে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির চিত্র তুলে আনার সময় এর পরিমাণ বাড়ছে।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
রবিবার (১৫ জুন) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আট দশমিক ৯৩ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তি একজন পুরুষ। তার বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। তার বাড়ি ঢাকা বিভাগে। তিনি একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮৩৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৪১০ জন। মারা গেছেন ২৯ হাজার ৫০৩ জন।
নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলা এই একটি উপজেলা নিয়ে গঠিত মহান জাতীয় সংসদীয় আসন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভৌগলিক অবস্থান পূর্বধলা উপজেলার উত্তর-পূর্বাংশে নেত্রকোণা জেলা শহর এবং এটি ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত। পূর্বধলা উপজেলা গঠিত হয়েছে ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে, যেগুলো স্থানীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
আয়তন ৩০৮.০৩ বর্গ কিঃমিঃ। মোট জনসংখ্যা-৩,১০,৮৩৪। পুরুষ-৪৯.২৭%, মহিলা-৫০.৭৩%। মুসলমান-৯৪.৮০%, হিন্দু-৪.৮১%, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান- ০.১৯% এবং অন্যান্য-০.২০%। এখানে গারো ও হদি নামক দু’টি আদিবাসী সম্প্রদায় আছে। তাদের পরিবারের সংখ্যা- ৪৪৫টি। মোট ভোটার-২,৭০,৬৯৯ জন ২০২৩ সালের ১১অক্টোবর পর্যন্ত। পুরুষ ভোটার: ১,৩৭,৯১৬জন ২০২৩ সালের ১১অক্টোবর পর্যন্ত। মহিলা ভোটার:১,৩২,৭৮২ জন ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রাপ্ত র্স্মাট জাতীয় পরিচয় পত্র সংখ্যা: ২,৩৬,১০৩। বিতরণকৃত র্স্মাট জাতীয় পরিচয় পত্রের সংখ্যা: ২,১০,৭৯১। অবিতরণকৃত র্স্মাট জাতীয় পরিচয় পত্রের সংখ্যা: ২৫,৩১২।
এবার পূর্বধলা সংসদীয় আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ খান। তিনি সাবেক সরকারি কর্মকর্তা বিসিএস (তথ্য ক্যাডার)। সাবেক বিসিএস জুডিশিয়ারী (সহকারী জজ) (কোয়ালিফায়েড ফর বিসিএস-২২)। সাবেক লেকচারার, আইন বিভাগ, কুইন'স ইউনিভার্সিটি।
সলিসিটর ফর ইংল্যান্ড, এন্ড ওয়েলস হাইকোর্ট। প্রিন্সিপাল সলিসিটার অফ মওদুদ ল'চেম্বার্স সলিসিটর্স, লন্ডন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী ছাত্রনেতা ও এ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
এছাড়াও তিনি বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি চেয়ারম্যান। বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আইন বিষয়ক সম্পাদক। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আগামী মহান জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ খান বলেন, ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠী নিয়ে সর্বস্তরের জনগণের মাঝে কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় পূর্বধলা উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামে প্রতিটি ঘরে বিএনপি'র একত্রিশ দফা বার্তা নিরচ্ছন্ন ভাবে পৌছানোর দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করা হয়েছে। পূর্বধলা উপজেলার প্রত্যেকটি বাড়ীতে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে একেকটি পরিবারের ও গ্রাম্য জীবন তথা উপজেলার সার্বিক জাতীয় সমস্যা, উন্নয়ন ভাবনা নিয়ে বিএনপির পাশাপাশি সার্বিকভাবে ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠী কাজ করে যাবে। আমাদের স্লোগান ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে যেই আগামীর নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে আসবে আমরা তার ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করবো। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, দুর্নীতিবাজ, চরিত্রিহীন, অসৎ লোক, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, ব্যাক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে এমন স্বার্থপর তথা জনগণের আস্থার পরীক্ষায় ফেল করা কোনো ব্যাক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশের মাটিতে আমাদের প্রাণের সংগঠন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র হাই কম্যান্ডসহ বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও চাইবেন না। ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠী চাই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পূর্বধলাসহ সারা বাংলাদেশে বিএনপি'র দলের হয়ে জনগণের সেবায় বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখুক। আগামীর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেক কঠিন ও কঠিনতর হবে। পেশিশক্তির দিন শেষ এবং দিন শেষে জনগণের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বিশ্বাস করি পূর্বধলার জনগণ জননেতা নির্বাচনে কোনোক্রমেই ভুল করবেনা। প্রাণের পূর্বধলার সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণের নিমিত্তে অবশ্যই একজন সৎ, যোগ্য, দুর্নীতি বিরোধী, দেশপ্রেমিক, নিঃস্বার্থ একজন যোগ্য ব্যক্তিকে খোঁজে নেবে পূর্বধলাবাসী। সে জন্য দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্বধলার মনোনয়ন বিএনপির হাইকমান্ড ভেবেচিন্তে নির্ধারণ করবে। সকল জাতীয়দাবাদী নেতৃবৃন্দ, কর্মী সমর্থক, শুভানুদ্ধায়ীদেরকে ধানের শীষের সমর্থনে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে পূর্বধলা ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠী দলীয় সংহতির ভিত্তিতে ইস্পাত কঠিন ঐক্যের দৃপ্ত আহবান জানাই। ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই, একতাই বল। পূর্বধলার সার্বিক উন্নয়নে আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জননেতা তারেক রহমানের একত্রিশ দফার মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র মেরামতে ঐতিহাসিক ভাবে জাতীয় মুক্তির ভূমিকা পালনে সবাই অংশগ্রহণ করি। পূর্বধলার সকল সম্মানিত নাগরিকের আস্থা, ভালোবাসা, কল্যাণ ও পছন্দের প্রতীক হউক ধানের শীষ।
তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একত্রিশ দফা বাস্তবায়ন করতে চাই। তাই শতভাগ আশাবাদী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড আমাকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দিবেন।