রিয়াদ থেকে প্রকাশিত সৌদি আরবের জনপ্ৰিয় ইংরেজি সংবাদপত্র ‘আরব নিউজ’-এ সম্প্রতি বাংলাদেশের সামগ্রিক অগ্রগতি এবং শেখ হাসিনার পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া নিয়ে একটি বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিস্ময়কর বলে অভিহিত করা হয়েছে।
নিবন্ধের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো- গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতাসীন নারী সরকারপ্রধান হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে টানা চার মেয়াদসহ মোট পাঁচবার ক্ষমতায় এসেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে দেশটির রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যদিও এর চার বছর পর সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যের সঙ্গে তিনিও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তবে দেশের বাইরে থাকায় এ হামলা থেকে কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা বেঁচে যান।
এরপর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে বাংলাদেশ এক অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন লাভ করে, যাকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা কেবল ‘মিরাকল’ বলে উল্লেখ করেন। এ উন্নয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের ভূমিকা রয়েছে। বিষয়টি দেশটির কৌশলগত জোট ভারত, অর্থনৈতিক মিত্র চীন এবং আরব বিশ্ব দ্বারাও প্রমাণিত। দেশটি তৈরি পোশাকশিল্পে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অবস্থান দখল করেছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান বাজার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে।
একদিকে যুক্তরাষ্ট্র যখন দক্ষিণ চীন সাগর ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজের জোট সদস্যদের নিয়ে চীনের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক একই সময়ে জাপানের অর্থায়নে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তুলতে যাচ্ছে। যা কেবল বাংলাদেশের সামুদ্রিক সক্ষমতা বাড়াবে না, এটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার সংযোগ স্থাপনকারী দেশ হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করবে। ফলে আঞ্চলিক সংযোগ ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একক অবস্থানের ভিত্তি গড়ে তুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে যুক্তরাষ্ট্রকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি মাথায় রাখার অনুরোধ করেছে পশ্চিমারা। কারণ এই অঞ্চলে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ এবং এটা এমন এক সময় যখন তাইওয়ান প্রণালি এবং দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের উত্তেজনা চলছে।
এ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকরা যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রয়োজনীয় এবং পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেননা দেশটির জন্য এ নির্বাচন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যেখানে বিরোধী দলগুলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে যাচ্ছিল এবং দেশটিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিজেদের অবস্থানকে তুলে ধরার চেষ্টা করছিল।
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই। এ জন্য তারা নির্বাচন বয়কট করেছে এবং কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে দলটির বয়কট সত্ত্বেও এ নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে। এই নির্বাচনটি আরব পার্লামেন্ট, ওআইসিসহ ৪০ দেশের পর্যবেক্ষকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনও স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার আয়োজন করেছিল।
এ নির্বাচনে জয়লাভের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাৎক্ষণিক অভিনন্দন জানিয়েছে চীন ও ভারত। মূলত এ দেশ দুটি বাংলাদেশের অনেক মেগা প্রজেক্টের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক জোগানদাতা।
নির্বাচনের পর ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার প্রতিকৃতি তুলে দিয়েছেন এবং ভারতের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সঙ্গে আরও গভীরভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের স্থায়ী ও জনকেন্দ্রিক অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এরপর রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীও শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দেশটি বাংলাদেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থনৈতিক জোগানদাতা। এতসব পরিস্থিতির মধ্যেও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নয় বলে উল্লেখ করেছে। এ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ হয়নি বলেও মত দিয়েছে তারা।
বাংলাদেশের অনেক নীতি-নির্ধারকের বিশ্বাস, ওয়াশিংটন বাংলাদেশের ওপর অনৈতিক চাপ দিয়ে আসছে। যেখানে কোনো বড় ধরনের হস্তক্ষেপ বা গুরুতর বিশৃঙ্খলা ছাড়া নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এমনকি ঢাকায় পর্যবেক্ষণে আসা মার্কিন পর্যবেক্ষক আলেকজান্ডার গ্রে বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা ভোটারদের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কথা বলেছি, এতে কোথাও কোনো ধরনের বাধা দেখতে পাইনি; কোথাও কোনো প্রার্থী, দল বা কারোর ওপর চাপ প্রয়োগের বিষয়টিও লক্ষ্য করিনি। ঢাকার বাইরেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে।
এমনকি গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৭ মার্কিন-বাংলাদেশি কর্মকর্তা, মানবাধিকার, সামাজিকসহ বিশিষ্টজনরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থান পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে বলা হয়, আমরা বাংলাদেশের সহিংসতামুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আপনার অবস্থান পরিবর্তনের জন্য অনুরোধ করছি। বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠনগুলোর দ্বারা সংঘটিত ব্যাপক জঙ্গি তৎপরতাকে মার্কিন নীতি বিবেচনা করতেও বলা হয়।
এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এক র্যালিতে শেখ হাসিনা বিএনপিকে সন্ত্রাসী ও জামায়াতে ইসলামীকে যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে উল্লেখ করেন। এমনকি নির্বাচনের পর রাশিয়া মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বাংলাদেশকে নিয়ে সমালোচনার জবাব দিয়েছে এবং প্রকাশ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। যা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে বেশ বড়োসড়ো কভারেজও পেয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে উঠেছে। দেশটির মাথাপিছু আয় ২৮০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০০৫ সালে ৫০০ ডলারের নিচে ছিল। এর মাধ্যমে দেশটি মার্কিন কর্তৃক ঘোষিত স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হয়েছে।
অর্থনৈতিক তথানুসারে, বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবে। অথচ একটা সময় দেশটিকে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উল্লেখ করেছিলেন। অথচ এর ১৫ বছরের মধ্যে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যকার একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশাল অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু করেছে, যা বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা কীভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে টেকসইভাবে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে পারে তার একটি মডেল হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরে শেখ হাসিনা সরকারের ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক পরিবর্তনকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের ভিশন নিয়েছেন, যা ২০৪১ সালে বাস্তবায়ন হবে।
দেশটির এ উন্নয়ন এমনিতে অর্জিত হয়নি। এরইমধ্যে শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া উগ্রবাদী আদর্শকে দমন করতে গিয়ে তার সরকারকে বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী হামলার মুখে পড়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে খুব সতর্কতার সঙ্গে বাংলাদেশে প্রধান এবং উদীয়মান শক্তিগুলোর সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক সমুদ্রসীমা পরিচালনা করছে এবং ভারতের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে আসিয়ান রাষ্ট্রগুলো বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার পরিধিও বাড়ছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্রনীতি হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, কারোর সঙ্গে বিদ্বেষ নয়। বিষয়টি বৈশ্বিক কূটনীতিতেও প্রতিফলিত হয়েছে। কেননা একদিকে দেশটির সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ক্রমেই গভীর হচ্ছে আর অন্যদিকে সমান্তরালভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও কানাডাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মোড়ল গোষ্ঠীর সঙ্গেও সম্পর্ক তাল মিলিয়ে চলছে।
২০১৬ সালে ঢাকার একটি ক্যাফেতে জামায়াত ইসলামী দ্বারা সর্বশেষ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন বিদেশিকে জিম্মি করে হত্যা করেছিল। গত বছরের ২৮ অক্টোবরও এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত একটি গ্রুপ হামলা চালিয়ে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। এ ছাড়া এই গোষ্ঠীটি প্রায় ২০০টি গাড়ি, বাস এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় বাংলাদেশি নাগরিকরা আহত হয়েছেন আবার কেউ কেউ ভয়ানকভাবে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। ২০ বছর আগে প্রায় প্রতিদিনের ভিত্তিতে যে ধরনের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল এই হামলাগুলো সেসব ঘটনাকেই মনে করিয়ে দেয়। সেই ভয়াবহ দিনগুলো যেন আর ফিরে না আসে জনসাধারণের কাছে সেটি নিশ্চিত করাই হচ্ছে শেখ হাসিনার আবেদনের মূল ভিত্তি।
নির্বাচনের সমালোচনা এবং সরকারের বৈধতা নিয়ে তোলা প্রশ্নে ওয়াশিংটনকে এখন নিজেকেই প্রশ্ন করতে হবে যে তারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা এবং দক্ষিণ এশিয়ার সম্প্রসারণে সমর্থন করে কি না।
নভেম্বরে হাসিনা যখন ব্রাসেলস সফরে গিয়েছিলেন, তখন তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে ইউরোপ ও চীনের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় তার দেশ কোনো পক্ষ নেবে না। একটি বৈদেশিক নীতি এবং কৌশলগত ভারসাম্যের ভিত্তিতে পশ্চিমের মূল রপ্তানি বাজার, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ৪৩টি বিনিয়োগ বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করেছে। এ ছাড়া চীনা নির্মাণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টানদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান সমুন্নত রাখার পাশাপাশি তাদের অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্যও রীতিমতো লড়াই করছে প্রধানমন্ত্রী ও তার প্রশাসন।
এ ছাড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার জীবনমান উন্নয়নেও বাংলাদেশ প্রচুর ব্যয় করে থাকে, যাদের দেশটি অতিথি হিসেবে গ্রহণ করেছে। সাম্প্রতিক বছরে ভাসানচরে ১০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে যেখানে তারা পরিচ্ছন্ন বাসস্থানের পাাশাপাশি বিনামূল্যে চাকরির জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণ, বাচ্চাদের শিক্ষার সুযোগ এবং স্বাস্থ্যের মতো জরুরি সেবা পাচ্ছে।
এই বিশাল মানবিক উদ্যোগ এমন এক সময়ে বাংলাদেশ চালিয়ে যখন প্রতিবেশী মিয়ানমার ধীরে ধীরে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশটির জান্তার প্রতিযোগী সামরিক শক্তিগুলো উপমহাদেশের জন্য গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করছে। এদিকে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করা নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, তারা ভবিষ্যতে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির চেয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যে আরও মনোযোগী হতে আগ্রহী।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বেশ কিছু সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং পরবর্তীতে এই উন্নয়নের ধারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ভারতের অস্থিতিশীল নর্থইস্ট ফরেন্টিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত রাখবে এবং শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতায় থাকলে দুই দেশের মধ্যকার প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি প্রতিহিংসা পরায়ণ না, স্বাধীন ও মুক্তচিন্তার অধিকারী। বরং এটা ভালো যে আমি তাদের সমালোচনা থেকে শুনতে ও শিখতে পারি।
পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে শত্রুতা নয়। এমনকি তিনি মজা করে বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ভারতে জি-২০ সামিটের সাইডলাইনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে সেলফি তুলেছিলেন।
ফলে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা স্থায়ী নাও হতে পারে। তবে চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সেটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যপন্থি রাষ্ট্রগুলোকে শক্তিশালী করা এবং এই অঞ্চলে চরমপন্থারোধে একটি অপ্রয়োজনীয় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
লেখক: ওবাই সাবানদার, পেন্টাগনের সাবেক বিশ্লেষক ও অ্যাডেলে নাজারিয়ান, সাংবাদিক ও পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক
সাংবাদিক মুন্নি সাহা ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ৩৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। অ্যাকাউন্টগুলোতে মোট ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকা আছে। গতকাল শনিবার সিআইডি থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন সাংবাদিকতা পেশাকে ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূতভাবে প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেন। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ নিজ এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করে আসছে বলে সিআইডির কাছে অভিযোগ আসে। অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি, ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ মোতাবেক সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান শুরু করে।
'প্রাথমিক অনুসন্ধানে মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য পর্যালোচনা দেখা যায়, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৪৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে ৩৫টি চালু আছে। এসব অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনকভাবে মোট ১৮৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার আট টাকা লেনদেন করা হয়েছে এবং বর্তমানে ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকা আছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ওই ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন সন্দেহজনক মনে হলে সেগুলো অবরুদ্ধ করার আবেদন করা হয়।'
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মুন্নি সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন এবং তাদের স্বার্থ সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকাসহ ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন। তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করেছেন এক বিচারক। এই আদেশ হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর জন্য সাময়িক স্বস্তি এনেছে, যাদের এই নীতির আওতায় অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ার মুখে পড়তে হয়েছিল।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতিকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও অন্যান্য ফেডারেল আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষমতা বাতিল করে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এক্স-এ লেখেন, আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসন স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রামের অধীনে হার্ভার্ডের সার্টিফিকেশন বাতিল করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুসারে, গত শিক্ষাবর্ষে ৬ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল। সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত ৬ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান বাতিল করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ ও জাতিগতবৈষম্য মোকাবিলায় ব্যর্থ বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ফেডারেল অনুদান এবং চুক্তি জব্দ বা বাতিল করেছে।
রোহিঙ্গারা সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিচ্ছে বলে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের আরও বেশি করে বিপজ্জনক নৌযাত্রায় ঝুঁকি নিতে বাধ্য করছে। এতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যায়। এতে আনুমানিক ৪২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে, মানবিক সহায়তার তহবিল কমে যাওয়ায় এই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর দুর্দশা আরও গভীর হয়েছে।
ইউএনএইচসিআর জানায়, গত ৯ ও ১০ মে দুটি নৌকা ডুবে যায়। এতে প্রায় ৫১৪ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এ ঘটনায় মাত্র ৮৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। যদি ৪২৭ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হয়, তবে এটি এই বছরের রোহিঙ্গাদের জন্য সমুদ্রপথে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হবে।
সংস্থাটি আরও জানায়, এ সব রোহিঙ্গারা বর্ষা মৌসুমের মধ্যেই সমুদ্রপথে যাত্রা বেছে নেয়। যা তাদের চরম হতাশা ও নিরুপায়তার ইঙ্গিত।
ইউএনএইচসিআর-এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক হাই কিউং জুন বলেন, মানবিক পরিস্থিতির অবনতি এবং তহবিল কাটছাঁট রোহিঙ্গাদের জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। তারা এখন নিজেদের ও পরিবারের জন্য নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনের সন্ধানে বিপজ্জনক পথ বেছে নিচ্ছে।
সংস্থাটি বাংলাদেশসহ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয়দানকারী দেশগুলো ও মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জীবনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আরও আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৫ সালের জন্য ইউএনএইচসিআর-এর চাওয়া ৩৮৩ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ তহবিল জোগাড় হয়েছে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইউএনএইচসিআরকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছে, যা সংস্থাটির মোট অনুদানের ৪০ শতাংশ। মার্চ মাসে সংস্থাটি ব্যয়ের সীমাবদ্ধতার কারণে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পরিকল্পিত কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তার ডাক নাম দুখু মিয়া। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন।
শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যের জীবনের পরতে পরতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। ১৯১৭ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও।
কাজী নজরুল ইসলাম চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’। অনুষ্ঠানসমূহ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আজ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত কুমিল্লায় এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করবেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী এবং কবি পৌত্রী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান খিলখিল কাজী।
স্মারক বক্তৃতা করবেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এবং স্বাগত বক্তৃতা করবেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার।
অনুষ্ঠানে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৩ ও ২০২৪’-এর জন্য মনোনীত গুণীজনদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
আলোচনা শেষে একাডেমির বিশেষ নিবেদন ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এছাড়া আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। সভাপতিত্ব করবেন শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। এতে স্বাগত বক্তৃতা করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান।
এ ছাড়া একাডেমির নবীন কণ্ঠশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীরা পরিবেশন করবেন সমবেত সংগীত এবং সমবেত নৃত্য। সবশেষে পরিবেশিত হবে নাটক ‘সেতুবন্ধ’, পরিবেশনায় থাকবে বাঁশরি রেপার্টরি থিয়েটার।
এদিকে, যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা আজ সকাল সোয়া ছয়টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হবেন। সেখান থেকে তারা সকাল সাড়ে ছয়টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে গমন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জনসংযোগ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম গতকাল এ কথা জানান।
১৯৭২ সালে কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই মহাবিদ্রোহী ও প্রেমিক পুরুষ। কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল শনিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস এক কথার মানুষ। তিনি একটি সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। তিনি সেই সময়সীমার বাইরে যাবেন না। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে’।
তিনি বলেন, সব দলই জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে তাদের আস্থা আছে। তার অধীনেই সবাই নির্বাচন চেয়েছে এবং ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন ড. ইউনূস।
প্রেস সচিব বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে জোর দিয়েছে এনসিপি। আওয়ামী লীগের আমলের সব নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা চেয়েছে তারা। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ নয়, তাকে সমর্থন জানিয়েছে।
এখন থেকে একজন গ্রাহক সর্বাধিক ১০টি মোবাইল ফোন সিম ব্যবহার করতে পারবেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল শনিবার বিটিআরসির এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আগে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করতে পারতেন। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে সর্বোচ্চ ১০টি সিমই নিবন্ধন করা যাবে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অনুশীলন এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ বিবেচনা করে একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ নিবন্ধনযোগ্য সিম সংখ্যা ১৫ থেকে দশে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি আরও জানায়, সর্বোচ্চ ১০টি ব্যক্তিগত সিম নিবন্ধনের সীমা নির্ধারণ করা হলে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের মোট ৬৭ লাখ সিম বন্ধ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আজ শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের এক অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর অর্পিত তিনটি প্রধান দায়িত্ব (নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার) বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ এক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগর এলাকায় পরিকল্পনা কমিশনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবি দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে।
শত বাধার মাঝেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার ওপর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সকল কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে। কিন্তু সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ঈদের আগেই বাজারে ১ হাজার, ৫০ ও ২০ টাকার নতুন নোট আসছে। তবে টাকায় কোনো ব্যক্তির ছবি থাকবে না।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্মী-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অডিটোরিয়ামে ক্রেডিট এনহেন্সমেন্ট স্কিমের (সিইএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফ’র চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ‘আমাদের টাকা ছাপানো শুরু হয়ে গেছে। তিনটা নোট আসছে শিগগিরই। সেটা হচ্ছে ১ হাজার টাকার নোট, ৫০ টাকা ও ২০ টাকা। এই নতুন নোট ঈদের আগেই আমরা পাবো। এখানে কোন ব্যক্তির ছবি থাকবে না। নতুন নোটে থাকবে দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা।’
এসময় বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ায় তা ফেরত পাঠাতে চাপ তৈরি হয়েছে। এর ফলেই দেখলাম ব্রিটিশ ক্রাইম এজেন্সি কিছু সম্পদ ফ্রিজ করেছে। পাচার করা অর্থ ফ্রিজ করায় অর্থ ফেরত আনার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। পাচারের টাকা ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, মাইক্রোএন্টারপ্রাইজ ফাইন্যান্সিং অ্যান্ড ক্রেডিট এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এই স্কিমের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া সহজ হবে, যা এতদিন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের (এমএফআই) পক্ষে সংগ্রহ করা কঠিন ছিল।
গভর্নর বলেন, ‘স্কিমের আওতায় পিকেএসএফ অংশীদার এমএফআইগুলোকে ২৪০ কোটি টাকার রিজার্ভ তহবিল ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ গ্যারান্টি দেবে। ঋণের গ্যারান্টি অনুযায়ী এককালীন শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমিশন আদায় করা হবে। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া সহজ হবে।
সরকার ও এডিবির সহায়তায় এই পাইলট প্রোগ্রামে আজ পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক ও একটি নন ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে জানান তিনি। আর্থিক সাক্ষরতা বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে প্রতিটি স্কুলের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।
তিনি বলেন, মাইক্রো ফাইন্যান্স সেক্টর যদি অটোমেটেড হয়ে যায়, ইফিশিয়েন্টলি কাজ করে তাহলে পরিচালন ব্যয় অনেক কমে যায়। যারা দক্ষ হবে তারাই টিকে থাকবে এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে। আমরা রেগুলেটরি ইন্টারভেনশন করবো না।
‘বাংলাদেশি’ ট্যাগ দিয়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে শিশু, নারী-পুরুষদের ঠেলে দিচ্ছে (পুশ-ইন) ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এ নিয়ে প্রতিবেশী এই দুই দেশের অভিন্ন সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে।
বিএসএফের পুশ-ইন করা মানুষের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক, রোহিঙ্গা শরণার্থী ও পরিচয় না জানাও অনেকে রয়েছেন। বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য ও জনসম্পৃক্ততায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানানো হলেও সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সূত্র জানায়, শুধু বৃহস্পতিবারই (২২ মে) একশর বেশি মানুষ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাঠানো হয়েছে। পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, মৌলভীবাজার, ফেনী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ির সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের আটক করে বিজিবি।
সরকারি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৪ থেকে ১৫ মের মধ্যে ভারতে থেকে অন্তত তিন শতাধিক মানুষকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে।
বিজিবি ও সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মতে, ভারতের দিক থেকে ‘পুশ-ইন’ কিংবা ‘পুশ-ইনের চেষ্টা’ ক্রমেই বাড়ছে। এ ছাড়া সীমান্তে চলাচলের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএসএফ, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে বলে জানা যায়।
অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত ও বাংলাদেশ আইনি কাঠামোর পাশাপাশি চুক্তি করলেও সেসব উপেক্ষা করেই পুশ-ইন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন এবং দুই দেশের বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পরিপন্থী।
বিএসএফের পুশ-ইনের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, কিছু বাংলা ভাষাভাষী ব্যক্তিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠানোর পর আটক করেছে বিজিবি। তারা কোনো পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট দেখাতে পারেননি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দাবি করছেন যে তারা এর আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিলেন।
আইজিপি জানান, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা তাদের পরিচয় যাচাইয়ের পর পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আটকদের মধ্যে অনেকে অভিযোগ করেছেন, তাদের চোখ বেঁধে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে এনে নির্জন সীমান্ত এলাকায় ফেলে যাওয়া হয়েছে।
বিজিবি তাদের আটক করে পরিচয় জানতে ও যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
গত বুধবার (২১ মে) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং নির্ধারিত পদ্ধতির বাইরে যাতে কিছু না ঘটে, তার জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে।
নির্ধারিত কার্যপ্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তারা (ভারত) তাদের অবস্থান কিছুটা জানিয়েছে, আমরাও আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি যে এটা সঠিক নয়।’
উপদেষ্টা জানান, ভারত একটি তালিকা দিয়েছে, যা বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাচাই করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হলো, প্রত্যেকটি ঘটনা পৃথকভাবে খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রকৃত বাংলাদেশি হিসেবে প্রমাণ থাকলেই কেবল তাদের গ্রহণ করা হবে।
সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, যেকোনো প্রত্যাবাসনই কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিনের ছুটি নিশ্চিত করতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আজ শনিবারও সরকারি অফিস খোলা রয়েছে।
সরকারি অফিসের পাশাপাশি দেশের সকল ব্যাংকও খোলা আছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে ৬ মে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ঈদে ১১ ও ১২ জুন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করার কারণে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সরকারি চাকরিজীবীরা ঈদের ছুটি উপভোগ করবেন। এই টানা ছুটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই মূলত ১৭ ও ২৪ মে—এই দুই শনিবার অফিস চালু রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সাধারণত সপ্তাহের এই দিনগুলোতে সরকারি অফিস বন্ধ থাকে, তবে এবার তা পরিবর্তন করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ছুটিকালীন সময়ে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে ১৭ ও ২৪ মে—এই দুই শনিবার সব অফিস যথারীতি চালু থাকবে। এছাড়া, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেবাগুলো যেমন: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, বন্দর, পরিচ্ছন্নতা, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা, ডাক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট যানবাহন ও কর্মীরা ছুটির আওতার বাইরে থাকবে।
একইভাবে, চিকিৎসা সেবা, হাসপাতাল এবং ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহনে নিয়োজিত কর্মী ও যানবাহনও এই ছুটির বাইরে থাকবে। সরকারি দপ্তরের ব্যতিক্রমধর্মী এ উদ্যোগের ফলে টানা ছুটির সুবিধা যেমন মিলবে, তেমনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোর কার্যক্রমও নির্বিঘ্নে চলবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সমসাময়িক বিষয়ে আলোচনা করতে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (২৪ মে) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউএনবিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘একনেক সভার পরই প্রধান উপদেষ্টা উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন।’ তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভিন্ন জল্পনার মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল তার সরকারি বাসভবন যমুনায় বৈঠকে অংশ নেবে।
বৈঠকে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নিজেদের পর্যবেক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন এবং দ্রুত সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়ার আহ্বান জানাবেন
দেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও নানা গুঞ্জনের মধ্যে আজ (শনিবার) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য শুক্রবার (২৩ মে) দিবাগত রাতে ইউএনবিকে জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দেশের উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।
রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনের অংশ হিসেবেই বিএনপি এই বৈঠকে অংশ নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করুক বিএনপি তা চায় না। কারণ তা নতুন করে দেশে রাজনৈতিক সংকট ডেকে আনবে বলে মনে করেন তিনি।
তবে এই বৈঠকে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নিজেদের পর্যবেক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন এবং দ্রুত সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়ার আহ্বান জানাবেন বলে জানান ওই নেতা।
এর আগে, গতকাল (শুক্রবার) বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা সোমবার (১৯ মে) থেকেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সময় চেয়ে আসছি, কিন্তু এখনও তা নির্ধারণ করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ আমরা চাইনি; আমরা শুধু কয়েকজন বিতর্কিত উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছি।
‘ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ চেয়েছি। তিনি রোডম্যাপ না দিয়ে পদত্যাগ করতে চাইলে সেটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হতে পারে, কিন্তু আমরা সেটি চাইনি।’
এর আগের দিন (বৃহস্পতিবার) বিএনপি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হতে পারে তারা।
সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে নিরপেক্ষতা ও সুনামের স্বার্থে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে যেসব উপদেষ্টা ‘বিতর্কিত’, তাদের অবিলম্বে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন এবং বুধবার সেনাপ্রধানের একটি অফিসার সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে সরকারের কার্যক্রম ও নির্বাচনের বিষয়ে করা মন্তব্যে হতাশ হয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন।
জ্যৈষ্ঠ মাসের দশ দিন চলছে। এই সময়ে প্রকৃতিতে তাপমাত্রা যেমন থাকে তেমনি থাকে বৃষ্টিপাতও। বাংলা এই মাসের শুরুতেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে প্রকৃতিতে তাপমাত্রা কমেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা গণমাধ্যমকে বলেন, বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। আর এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে আগামী আরও দশ দিন। বাংলাদেশ সংলগ্ন এলাকায় জড়ো হওয়া গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার জন্য এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু মিয়ানমারের আকিয়াব উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। এটি আরও অগ্রসর হওয়ার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। আগামী ২৭ মে পশ্চিমমধ্য এবং তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শেষ দিকে সাগরে একটি নিম্নচাপ হতে পারে। এ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ও সৃষ্টি হতে পারে।
কাজী জেবুন্নেছা বলেন, ২৫ থেকে ২৬ মে সাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। সেটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেবে কী না, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে নিশ্চিত করে এখনও কিছু বলার সময় আসেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মে মাস সাধারণত ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস হিসেবে পরিচিত। গত বছরের মে মাসেই ঘূর্ণিঝড় রিমাল সৃষ্টি হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল। গত বছরের ২৬ মে এ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশের উপকূলে। এবারও নিম্নচাপ ও সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের সময় কাছাকাছি। এর আগেও একাধিক বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় এ মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে। তাই আবহাওয়াবিদরা এ সময় সতর্ক থাকতে বলছেন।
কাজী জেবুন্নেছা আরও বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার উপযোগী রয়েছে। তবে নিম্নচাপ তৈরি হলে সেটি কোথায় যাবে, কীভাবে শক্তি সঞ্চয় করবে, এসব বিষয় আরও কিছুদিন পর জানা যাবে।’এবার যদি ঘূর্ণিঝড় হয়, তবে এর নাম হবে ‘শক্তি’। নামটি শ্রীলঙ্কার দেওয়া।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।