শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মেলায় জনপ্রিয় লেখকদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে

ছবি: দৈনিক বাংলা
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
প্রকাশিত
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২২:৫৭

অমর একুশে বইমেলার দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে ততই এর আকর্ষণ বেড়ে চলেছে। এবার নানাবিধ কারণে প্রাণের মেলা ভিন্নরূপ পেয়েছে। বিশেষ করে নগরে স্বস্তির যান মেট্রোরেলের কারণে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। মেলায় প্রতিদিন শতাধিক নতুন বই আসার পাশাপাশি বেড়েছে দর্শনার্থীর সংখ্যা, সঙ্গে বাড়ছে বিক্রিও। দিন যত যাচ্ছে মেলার প্রাণ আরও বাড়ছে। আগামীকাল বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে বইমেলা যেন অন্যরকম আমেজ নিয়ে আসবে। বাংলা একাডেমির বহেড়াতলা বটগাছে কোকিলের সুর বলে দিচ্ছে প্রকৃতিতে ফাগুন চলে এসেছে। ঠিক যেমনিভাবে ফাগুনের এই আগুন বইমেলায়ও চলে আসতে শুরু করেছে। সব সময় মেলা ফাগুনের দিনগুলো থেকেই মূলত জমে ওঠে। এবার আরও নবজাগরণে প্রাণের মেলা জমেছে। কেননা গত দুই বছরের ঢিমেতালে চলা বইমেলা এবার পেয়েছে পুরোপুরি জমে ওঠার চিত্র। মেলায় প্রতিবারের মতো এবারও পাঠকদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে উপন্যাস। এ ছাড়াও ঘুরেফিরে জনপ্রিয় লেখকদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, পাঠকরা স্টলে স্টলে গিয়ে উপন্যাসের বই খুঁজে বেড়াচ্ছেন। প্রিয় লেখকের প্রকাশিত বই পেলেই তা সংগ্রহ করে নিজেদের ব্যাগে গুঁজে নিচ্ছেন বইপ্রেমীরা। এদিকে পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো এবারও হ‍ুমায়ূন আহমেদ, হাসান আজিজুল হক, আনিসুল হক, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমদাদুল হক মিলন, সেলিনা হোসেন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আসিফ নজরুল, মুনতাসীর মামুন, মোশতাক আহমেদ, শাহাদুজ্জামান, হরিশংকর জলদাসসহ বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় লেখকের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে মেলায় হ‍ুমায়ূন আহমেদের বই-ই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে প্রকাশনা সূত্রে জানা যায়। জনপ্রিয় এই লেখকের পুরাতন বইগুলো পাঠকরা এখনো কিনছেন। মেলায় প্রতিদিন হ‍ুমায়ূনপ্রেমীরা খুঁজতে খুঁজতে চলে যাচ্ছেন অন্যপ্রকাশে। এই প্রকাশনীতে কিংবদন্তি এই কথাসাহিত্যিকের লেখা উপন্যাস দেয়াল, মাতাল হাওয়া, নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, মধ্যাহ্ন অখণ্ড বেশি কিনছেন বলে অন্যপ্রকাশ সূত্রে জানা যায়।

সরেজমিন ঘুরে এবং বিভিন্ন স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারও মেলায় বেশি জনপ্রিয় লেখকদের গল্প-উপন্যাস বিক্রি হচ্ছে। নতুন বইয়ের সঙ্গে পুরাতন কালজয়ী বইও বিক্রিতে রয়েছে শীর্ষে।

তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ মুনালিসা জানান, এ বছর ৪৫টি নতুন বই প্রকাশ করেছে প্রকাশনীটি। নতুন বইয়ের সঙ্গে পুরাতন বইও বেশ বিক্রি হচ্ছে। তার মধ্যে হ‍ুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ হিমু, শ্রেষ্ঠ মিছির আলি ও কিশোর সমগ্র বই বিক্রিতে ওপরে রয়েছে।

কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী হুমায়ন কবীর জানান, রকিব হাসানের গোয়েন্দা সিরিজ ও সায়েন্স ফিকশন চলছে বেশি। আর হ‍ুমায়ূন আহমেদের ভক্তরা তার বই সমগ্র তো সংগ্রহ করছেই।

অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আসিফ মাহমুদ বলেন, ইমদাদুল হক মিলনের চোর এসে গল্প করেছিল, অন্ধকারে নামতে পারেনি বই দুটোর বিক্রি তুলনামূলকভাবে বেশি। এ ছাড়াও তৌহিদুর রহমানের নিতু বলছি বইটির তৃতীয় মুদ্রণ চলছে। মুনতাসীর মামুনের ঢাকা সমগ্র বইটিও পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়াও মুনতাসীর মামুনের বঙ্গবন্ধুর জীবন ও লিবারেশন ওয়্যার বই দুটি এ বছর প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো বিক্রিও হচ্ছে বেশ।

অন্বেষা প্রকাশনের বিক্রয়কর্মী রাফিজা নওশীন জানান, সুজন দেবনাথের হেমলকের নিয়ন্ত্রণ ও জাহিদ হাসানের দেশভাগ ১৯৪৭ বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া হ‍ুমায়ূন আহমেদের তিন বিচিত্র, চন্দ্রসখা, মিসির আলীর ভুবন, তোমাদের জন্য ভালোবাসা, নীল হাতি, সবাই গেছে বনে উপন্যাসগুলো একটি আরেকটির চেয়ে কম বিক্রি হচ্ছে না। এ ছাড়াও সাদাত হোসেনের আগুনডানা মেয়ে বইটিও বেশ বিক্রি হচ্ছে।

অন্যপ্রকাশের স্টল ইনচার্জ তৌহিদুল ইসলাম জানান, উপন্যাস আর হ‍ুমায়ন আহমেদের বইয়ে পাঠকদের চাহিদা- দুই ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়াও রউফুল আলমের দেশ, সফল মন্ত্র, আহমদ ছফার যদ্যপি আমার গুরু, অর্ধেক নারী অর্ধেক ইশ্বরী বইগুলো বেশ চলছে। তবে ক্রেতাদের চাহিদা উপন্যাস।

বইমেলায় ঘুরতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শরমিলা জান্নাত বইগুলো ঘাটতে ঘাটতে বলেন, ‘হ‍ুমায়ূন আহমেদ দেশের সাহিত্য অঙ্গনে যে জায়গা সৃষ্টি করে গেছেন, তা এখনও কেউ পূরণ করতে পারেননি। পুরোনোরা তো বটেই, নতুন প্রজন্মের পাঠকও এসে এখনো হ‍ুমায়ূন আহমেদের বই খোঁজ করেন।’

মেলায় এখনো কালজয়ী সব সাহিত্যিকের লেখা বই কিনছেন বইপ্রেমীরা। এর মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শওকত আলী, বেগম রোকেয়া, মীর মশাররফ হোসেন, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, জীবনানন্দ দাশ, স্বর্ণকুমারী দেবী, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জসীম উদ্দীন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আবু ইসহাক, আহমেদ ছফাসহ হুমায়ুন আজাদের লেখা সব বই। গুণী এই সাহিত্যিকদের লেখা বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস ও সমগ্র সংগ্রহে রাখতে মেলায় এসে বই কিনছেন বইপ্রেমীরা।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, এখনো পাঠকরা যেসব কালজয়ী বই মেলায় কিনছেন, তার মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতা, গোড়া, শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবি, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর লালসালু, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, সৈয়দ শামসুল হকের খেলারাম খেলে যা ও নিষিদ্ধ লোবান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম আলো, সেই সময় এবং পূর্ব-পশ্চিম, হ‍ুমায়ূন আহমেদের নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার এবং জোৎস্না ও জননীর গল্প, হুমায়ুন আজাদের নারী ও ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল, আবু ইসহাকের সূর্য দীঘল বাড়ি, হাসান আজিজুল হকের আগুনপাখি, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি ও পুতুল নাচের ইতিকথা, ইমদাদুল হক মিলনের নূরজাহান, সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশ বিদেশে, শওকত ওসমানের কৃতদাসের হাসি, আনিসুল হকের চার কিশোর গোয়েন্দা, শহীদুল্লাহ কায়সারের সারেং বৌ, সংশপ্তক, জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের আদর্শ হিন্দু হোটেল, মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা ফেরা, আহমদ ছফার যদ্যপি আমার গুরু ও শাহাদুজ্জামানের ক্রাচের কর্নেলসহ আরও কিছু বই। এই বইগুলো প্রকৃত বইপ্রেমীরা দেখলেই তা সংগ্রহে রাখার জন্য হলেও কিনে নিচ্ছেন বলে জানান মেলার বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীরা।

এখনো জমেনি লিটলম্যাগ চত্বর

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে অবস্থিত লিটল ম্যাগ চত্বর ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় নেই মেলার এ অংশে। যদিও বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলছেন, মেলার অন্য অংশ থেকে বরাবরই এ অংশে ভিড় কম থাকে। সেখানকার স্টলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোকজন এ চত্বরে কম যায়। তেমন বিক্রিও হয় না। বইমেলায় একসময় অন্যতম আকর্ষণ ছিল তারুণ্যের এ ‘লিটল ম্যাগ চত্বর’। মেলার এই অংশে নবীন লেখকদের প্রকাশিত বিভিন্ন ম্যাগাজিন পাঠক-দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরেন লেখক, প্রকাশক। কিন্তু সময়ের আবর্তে একসময়কার তুমুল জনপ্রিয় এই চত্বরে এখন কেবলই হাহাকার। বারবার এর স্থান পরিবর্তন হলেও হারানো গৌরবের দেখা পাচ্ছে না এই চত্বর।

জনপ্রিয় সব লেখক, প্রকাশনী ও পত্রিকার ভিড়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে সত্তরের দশকের গণজাগরণের চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত লিটল ম্যাগাজিনগুলো। বিপ্লবী ধারার এসব ম্যাগাজিনের স্থান দখল করে নিয়েছে পত্রিকাগুলো। কিন্তু এতসব বাধা বিপত্তির মাঝেও এখনো টিকে আছে কিছু ম্যাগাজিন। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বাংলা একাডেমির বহেড়াতলায় স্থান পাওয়া বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ ‘লিটল ম্যাগ চত্বর’ কখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝখানে, কখনো উত্তর পাশে আবার কখনো কালি মন্দিরের পাশে স্থান বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তবে এ বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের উত্তরাংশের অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় স্থান হয়েছে লিটল ম্যাগের। ফলে বিগত দিনের ধারাবাহিক খরা তাতে লেগেই আছে।

আজকের বইমেলা :

আজকের মেলা বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ৯টায়। ১২তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৫টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : হেনা দাস শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জোবাইদা নাসরীন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঝর্না রহমান এবং ফওজিয়া মোসলেম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার।

‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সালমা বাণী, কবি ফারহানা রহমান, গবেষক মিলটন কুমার দেব এবং কথাসাহিত্যিক ইকবাল খন্দকার।

আগামীকালের বইমেলা :

আগামীকাল ১৩তম দিন মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ শীর্ষক আলাচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপনা করবেন আহমদ মোস্তফা কামাল। আলাচনায় অংশগ্রহণ করবন হরিশংকর জলদাস এবং ফারজানা সিদ্দিকা। অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।


দেশের রিজার্ভ বেড়ে ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার   

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে এখন ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার বা এক হাজার ৯২০ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার হয়েছে। এ রিজার্ভ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি (বিপিএম৬) অনুসারে করা।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য প্রকাশ করে।

তথ্যমতে, এখন বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৪৭৫ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

গত ১১ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মাধ্যমে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আমদানি পণ্যের বিল বাবদ ১.৫০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ১৮.৪৫ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম৬)। গত এক মাসে বিদেশি মুদ্রার এ সঞ্চয় বাড়তে বাড়তে আবার ১৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

রিজার্ভের তিনটি হিসাব সংরক্ষণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমটি হলো বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বিভিন্ন তহবিলসহ মোট রিজার্ভ। মোট রিজার্ভের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সহজ শর্তের ঋণ, বিমান কেনায় সোনালী ব্যাংককে দেওয়া ঋণসহ বেশ কয়েকটি তহবিল। দ্বিতীয়টি হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবায়ন পদ্ধতি, অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত তহবিল বা ঋণের অর্থ বাদ দিয়ে একটি তহবিল।

এর বাইরে রয়েছে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ। বর্তমানে যা ১৪ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা ওপরে রয়েছে।

দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে।

সে সময় বৈদেশিক ঋণ ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার ক্রয়ের মাধ্যমে আবার রিজার্ভ বাড়ায়। বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সোর্স থেকে ডলার যোগ হচ্ছে প্রতিদিনই। এর ধারাবাহিকতায় ক্রমেই বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।


২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু ১০ এপ্রিল

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের ২০২৫ সালের পরীক্ষা ১০ এপ্রিল শুরু হয়ে শেষ হবে ৮ মে পর্যন্ত। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পূর্ণমান এবং পূর্ণ সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। ১০ এপ্রিল থেকে বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার মাধ্যমে এই পরীক্ষা শুরু হবে। তত্ত্বীয় পরীক্ষা হবে নির্ধারিত তারিখে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও আন্ত:শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহবায়ক প্রফেসর মো. আবুল বাশার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সব বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা ১০ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখিত তারিখের মধ্যে সব ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষার্থীদের তাদের নিজ-নিজ প্রবেশপত্র প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে কমপক্ষে তিনদিন আগে সংগ্রহ করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে। প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত সময় অনুসারে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রথমে বহুনির্বাচনি ও পরে সৃজনশীল/রচনামূলক (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং উভয় পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না। শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধূলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়সমূহ এনসিটিবি’র নির্দেশনা অনুসারে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রকে সরবরাহ করবে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র ব্যাবহারিক পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে ধারাবাহিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বর বোর্ডের ওয়েবসাইটে অনলাইনে পাঠানো হবে। পরীক্ষা পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া কেন্দ্রসচিব ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না।


বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৮৫তম বাফা কোর্স, ডিরেক্ট এন্ট্রি-২০২৪ বি এবং এসপিএসএসসি-২০২৪ বি কোর্স এর কমিশন প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (শীতকালীন)-২০২৪ আজ বৃহস্পতিবার যশোরস্থ বিমান বাহিনী একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। তিনি গ্র্যাজুয়েটিং অফিসারদের মাঝে পদক এবং ফ্লাইং ব্যাজ বিতরণ করেন।

অফিসার ক্যাডেট জান্নাতুল ফেরদৌস মোহনা ৮৫তম বাফা কোর্সের প্রশিক্ষণে সার্বিক কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’, অফিসার ক্যাডেট মো. রহমত উল্লাহ শিশির উড্ডয়ন প্রশিক্ষণে সেরা কৃতিত্বের জন্য ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ট্রফি’ এবং অফিসার ক্যাডেট মো. ফাহিম মোর্শেদ রাতুল জেনারেল সার্ভিস প্রশিক্ষণে কৃতিত্বের জন্য ‘কমান্ড্যান্টস্ ট্রফি’লাভ করেন।

এছাড়াও ৮৫তম বাফা কোর্স (গ্রাউন্ড ব্রাঞ্চ) এ সেরা কৃতিত্বের জন্য অফিসার ক্যাডেট মো. ফাহিম মোর্শেদ রাতুল ‘বিমান বাহিনী প্রধানের ট্রফি’ লাভ করেন।

উল্লেখ্য, এই শীতকালীন সেমিস্টারে বীর উত্তম বদরুল আলম স্কোয়াড্রন চ্যাম্পিয়ন বিবেচিত হয়ে একাডেমি পতাকা লাভ করে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিমান বাহিনী প্রধান বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সেই সাথে দুঃসাহসিক আকাশ যুদ্ধ পরিচালনাকারী কিলো ফ্লাইটের সদস্যদের স্মরণ করেন, যাদের দৃপ্ত প্রত্যয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, বিভিন্ন জটিল সমস্যা মোকাবেলা করে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের গতি সচল রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে।

বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিমান বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যরা দেশের আপামর জনগণের স্বার্থে যে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে তা অবিস্মরণীয়। বিশেষ করে গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বিমানসেনারা যেভাবে পেশাদারিত্ব ও মানবিকতার সাথে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে তা নির্ভেজাল দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে; বাহিনীতে সংযোজিত হচ্ছে নতুন নতুন সব সর্বাধুনিক বিমান, র‌্যাডার, সিমুলেটর এবং সরঞ্জামাদি।

এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেন, বিশ্ব শান্তিরক্ষাসহ দেশের অভ্যন্তরে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা, দূর্যোগ মোকাবেলা এবং অন্যান্য দেশে মানবিক সাহায্য প্রেরণ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে।

তিনি বিমান বাহিনী একাডেমির প্রশিক্ষণকে বিশ্বমানের বলে অভিহিত করেন, যার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশের অফিসার ক্যাডেটরা এ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। তিনি সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাফল্য কামনা করেন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির সকল সদস্যদেরকে ধন্যবাদ জানান।

এ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ১২ জন মহিলা অফিসার ক্যাডেটসহ মোট ৭৪ জন অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। অফিসার ক্যাডেট একাডেমি সিনিয়র আন্ডার অফিসার আসিফ মাহমুদ আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব দেন। কুচকাওয়াজ শেষে বিমান বাহিনী একাডেমির বিভিন্ন প্রকার বিমানের মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট, আকর্ষণীয় এ্যারোবেটিক ডিসপ্লে এবং বিমান বাহিনীর চৌকশ প্যারাট্রুপারদের হেলিকপ্টার থেকে দৃষ্টিনন্দন প্যারা জাম্পিং অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে সামরিক ও অসামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছাড়াও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


পুনাকের উদ‍্যোগে সাড়া দিয়ে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) উদ্যোগে সাড়া দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে আহতদের মধ্যে ৫০০ জনের প্রত‍্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে চিকিৎসা অনুদান দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।

পুনাক সভানেত্রী আফরোজা হেলেন গতকাল বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ আশ্বাস দেন।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, সাক্ষাৎকালে পুনাক সভানেত্রী আহতদের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক সমস্যা এবং বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে তাদের চিকিৎসার বাস্তব অবস্থা উপদেষ্টার কাছে বর্ণনা করেন। উপদেষ্টা গুরুত্বসহ পুনাক সভানেত্রীর কথা শোনেন। তিনি একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে আহতদের পুনর্বাসন ও দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা অনুদান প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন। এ সময় পুনাক সভানেত্রীর সঙ্গে জুলাই আন্দোলনের কয়েকজন বিপ্লবী বীর উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষাতের সময় সমাজকল্যাণ সচিব ড. মো. মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ কর্মকর্তা তুহিন ফারাবী, পুনাকের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা তৌহিদা নূপুরসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ।


গুম-খুনের অভিযোগে ক্ষমা চেয়ে আয়নাঘরের কথা স্বীকার করলেন র‍্যাব ডিজি

রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করেন ডিজি অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, র‍্যাবের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আছে গুম ও খুনের। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ সেসব বিষয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাইছি। পাশাপাশি তিনি স্বীকার করেছেন র‍্যাবে আয়নাঘর ছিল, আছে।

যদিও তিনি গত ৭ অক্টোবর দাবি করেছিলেন, র‍্যাবে আয়নাঘর বলে কিছু নেই।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান র‌্যাব ডিজি।

র‍্যাবের গোপন বন্দিশালা বা আয়নাঘরের বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, র‍্যাবে আয়নাঘর ছিল, আছে। সেটা সেভাবেই রাখা হয়েছে। গুম, খুন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে আয়নাঘরসহ যা যে অবস্থায় আছে সেভাবেই রাখার জন্য। আমরা কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন করিনি। যা যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায় রাখা হয়েছে।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, র‌্যাব সৃষ্টির পর থেকে যারা র‌্যাব সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিত, অত্যাচারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের কাছে এবং নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ যারা র‌্যাবের দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছে আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আমি যত দিন দায়িত্ব পালন করব এবং আমার এই কর্মকর্তারা যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা কখনো কারও নির্দেশে গুম, খুনের মতো ফৌজদারি অপরাধে জড়িত হবে না। র‌্যাব সদস্যদের দ্বারা নির্যাতন ও অত্যাচারের মতো ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যেন বিচার হয়, সেটা আমরা প্রত্যাশা করি।

বিচারের মাধ্যমে দায়মুক্তি চেয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই ধরনের অপরাধ আমলে নিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে র‌্যাবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে, সেগুলোর বিচার হবে বলে জানান তিনি। এভাবেই র‌্যাবের দায়মুক্তি সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সম্প্রতি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল (বিএনপি) র‍্যাব বিলুপ্তির বিষয়ে দাবি তুলেছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই মেনে নেওয়া হবে। সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আমরা থাকলাম।

বর্তমানে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে, তবে প্রত্যাশিত জায়গায় এখনও পৌঁছায়নি উল্লেখ করে র‍্যাব ডিজি বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র‍্যাব তার দায়িত্ব আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে।

র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পরে র‍্যাবের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করে। এ কাজ করতে গিয়ে র‍্যাবের ১৬ জন সদস্য বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র‍্যাবের ৫৮ জন কর্মকর্তা ও ৪ হাজার ২৪৬ সদস্যকে বিভিন্ন অপরাধে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। আনসার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিদ্রোহ, গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিতিশীলতা, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে র‍্যাব।

র‍্যাবের পোশাক পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, র‍্যাবের পোশাক পরিবর্তনের ব্যাপারে দাবি উঠেছে। আমরা চিন্তা ভাবনা করছি। আর র‍্যাবের নিজস্ব কোনো আইন নাই। পুলিশ আইনে র‍্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। র‍্যাবের জন্য আমরা আলাদা একটি আইন করার চিন্তা ভাবনা করছি। এছাড়া আর কোন কোন বিষয় সংস্কার করা যায় সেজন্য গণমাধ্যম ও জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, মামলাটি হাইকোর্টের আদেশে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই কমিটিতে র‌্যাবের প্রতিনিধিও রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে র‌্যাবের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।


অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে হাসিনার সমালোচনায় সমর্থন দিচ্ছে না ভারত: মিসরি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনার পক্ষে অবস্থান নেয়নি ভারত। এটিকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য ছোটখাটো ধাক্কা হিসেবেই দেখছেন তারা।

গতকাল বুধবার কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের সভাপতিত্বে পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মিসরি নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকারের সঙ্গে জোটবদ্ধ না হয়ে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে ভারতের মনোভাবের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

মিসরি বলেন, শেখ হাসিনা তার মতামত প্রকাশের জন্য 'বেসরকারি যোগাযোগের চ্যানেল' ব্যবহার করছেন। ভারত তাকে তার মাটি থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য কোনো প্ল্যাটফর্ম বা সুবিধা দেয়নি।

অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে ভারতের দীর্ঘদিনের নীতির কথা তুলে ধরেন তিনি।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনার ভিডিও বার্তা প্রচারে পরই এই ব্রিফিং করা হয়।

মিসরি কমিটিকে জানান, এ সপ্তাহের শুরুতে ঢাকা সফরের সময় তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ‘কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল’ বা নির্দিষ্ট সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারত সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয় এবং বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকবে।

পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফরেন অফিস কনসালটেশনসহ বেশ কয়েকটি বৈঠক করতে সোমবার ঢাকায় আসেন বিক্রম মিসরি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিনের সঙ্গে পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈঠক এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে 'ইতিবাচক, গঠনমূলক ও পারস্পরিক লাভজনক' হিসেবে দেখতে চান বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থে এই পারস্পরিক লাভজনক সম্পর্ক অব্যাহত না রাখার কোনো কারণ নেই।

এসব বৈঠকে মিসরি একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থনের কথা তুলে ধরেন।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জোর দিয়ে বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মূল অংশীদার হলো জনগণ।

তিনি বলেন, ভারতের উন্নয়ন সহযোগিতা এবং সংযোগ, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বাংলাদেশের সঙ্গে বহুমুখী সম্পৃক্ততা সবই বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণের জন্য।


প্রধার উপদেষ্টার সঙ্গে এসএফওর প্রতিনিধি দলের বৈঠক

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন অনকোলজির (এসএফও) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হন তিনি। এ সময় তিনি সার্ক ফেডারেশন অব অনকোলজিস্টসের (এসএফও) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. এবিএমএফ করিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন।

এ সময় নিজের ছোটভাই বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক, সমালোচক ও খ্যাতনামা টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে স্মরণ করেন অধ্যাপক ইউনূস। ভাইয়ের ক্যান্সার শনাক্ত ও চিকিৎসার সময় তাঁর পুরো পরিবারকে কী ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল সেসব অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি। সেসময় ডা. করিম কীভাবে তাঁর চিকিৎসায় সাহায্য করেছিলেন সে কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘ক্যানসার চিকিৎসায় যে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন, তা এখনো আমরা পাচ্ছি না। সার্ক যে ক্যান্সার চিকিৎসাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে এটা অত্যন্ত জরুরি ও অনুপ্রেরণামূলক।’

দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলো সার্ককে সক্রিয় করে তোলার মধ্য দিয়ে লাভবান হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সার্ক আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পরপরই সার্ককে সক্রিয় করার বিষয়ে বলেছি। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার কিছু ইস্যুর জন্য সার্ক সক্রিয় হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, আমি মনে করি, দুটি দেশের মধ্যেকার সমস্যা অন্য দেশগুলোকে প্রভাবিত করা উচিত না। প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা যদি সাক্ষাৎ করেন, একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন তাহলে গোটা বিশ্বের কাছে বার্তা যায় যে আমরা একসঙ্গে আছি। এটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে বিশ্বের কাছে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করবে এবং এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’

অধ্যাপক ইউনূস আজকের কনফারেন্সের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে সার্ক সক্রিয় করতে আবারও আহ্বান জানান।


স্ত্রী-সন্তানসহ সাবেক ৫ এমপির বিদেশযাত্রায় দুদকের নিষেধাজ্ঞা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

স্ত্রী-সন্তানসহ সাবেক ৫ সংসদ সদস্যের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের নতুন কমিশনের প্রথম দিনেই সাবেক ৫ সংসদ সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিদেশ যাত্রার এ নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত হয়।

সাবেক এসব এমপি হলেন- ফেনী-১ আসনের আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, ভোলা-৩ আসনের নূর নবী চৌধুরী শাওন, হবিগঞ্জ -৩ আসনের আবু জাহির, নোয়াখালী -১ আসনের এইচ এম ইব্রাহিম এবং লক্ষ্মীপুর-২ আসনের নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন।

এর আগে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় সদ্য পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে। কমিশনার হিসেবে তার সঙ্গী রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ।

গতকাল বুধবার বিকালে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান জানান, আগামী সাতদিনের মধ্যে নতুন কমিশনের স্থাবর-অস্থাবর এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা হবে।


সংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার আর নেই

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

বাংলাদেশের কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।

তার স্বামী সারোয়ার আলম গণমাধ্যমকে জানান, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

তিন বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে চলা একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সংগীতশিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গতকাল বুধবার তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

মৃত্যুকালে তিনি স্বামী ও দুই মেয়ে জারা সারোয়ার ও জিশা সরওয়ার পাপিয়াকে রেখে গেছেন।

বরিশালের এক সংগীতপ্রেমী পরিবারে জন্ম নেওয়া পাপিয়া সরওয়ার ভারত সরকারের বৃত্তির মাধ্যমে ১৯৭৩ সালে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রসংগীত শেখেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনিই প্রথম এই বৃত্তি লাভ করেন।

এর আগে তিনি ১৯৬৬ সালে ছায়ানটে প্রখ্যাত গুরু আতিকুল ইসলাম, ওয়াহিদুল হক, সন্জীদা খাতুন এবং জাহিদুর রহিমের কাছ থেকে তার প্রাথমিক সংগীত প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। পরে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসে (বাফা) নিয়মিত ছিলেন।

পাপিয়া সারোয়ার তার বর্ণাঢ্য সংগীত জীবনে রবীন্দ্রসংগীতে দক্ষতার জন্য ব্যাপক প্রশংসা এবং অসংখ্য স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।

১৯৯৬ সালে, তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিক্ষার্থীদের মাঝে তার জ্ঞান বিতরণের জন্য গীতোসুধা নামে একটি সংগীত দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তার গাওয়া আধুনিক গান 'নাই টেলিফোন নে রে পিঁও নেই রে টেলিগ্রাম' বাংলা সংগীতপ্রেমীদের মাঝে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

এছাড়া নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে টেলিভিশন জগতে সুপরিচিত ও প্রিয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন তিনি।

দেশের সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য পাপিয়া সারোয়ার ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে রবীন্দ্র পুরস্কার, ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ এবং ২০২১ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।


বাদ পড়ছে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ প্রকল্প

বড় ধরনের সংকোচনের সম্ভাবনা
আপডেটেড ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০০:৩০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাদ দেওয়ায় সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে বড় ধরনের সংকোচনের সম্ভাবনা রয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক উন্নয়ন প্রকল্পকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে তা ছেঁটে ছোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, একনেকের সভায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে নেওয়া অনেক উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয় অনুযায়ী ভালো ফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না।

একনেক সভা শেষে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর তুলনায় উন্নয়ন বাজেট ছোট হবে।’

চলতি অর্থবছরের চার মাসে রেকর্ড সর্বনিম্ন ৮ শতাংশ উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে। এই নিম্ন বাস্তবায়ন বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রেও হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তাদের ক্ষেত্রে এ হার ১২-১৩ শতাংশ।

সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের গতি ধীর রয়েছে। যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সর্বনিম্ন বাস্তবায়নের হার।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ, যা বিগত বছরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।

সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত বছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বিশেষ করে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম একনেক সভায় উন্নয়ন বাজেট কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।

ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, গৃহীত অনেক প্রকল্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ব্যয়ের তুলনায় ভালো ফল বয়ে আনবে না।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়নি এগুলো কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে। তাই আমরা সেগুলো বাদ দিয়েছি। সাধারণত সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট কিছুটা সংকুচিত হয়, এবার অনুপাতটা বেশি হবে।’

তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে একনেকে কোনো প্রকল্প অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাদের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যেত।

‘তবে এবার বাস্তবায়ন পর্যায়ে দুর্নীতিমুক্ত ও অনিয়মমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দায়ী থাকবে’ বলে জানান তিনি।

এ কারণে চলমান প্রকল্পগুলোতে সংশোধন আনা হয়েছে। এমনকি বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোতেও তাদের সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়েছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘ঋণদাতাদের ঋণ দেওয়ার সময় কিছু শর্ত থাকে, তাদের বোঝানোর পর সংশোধন করা হয়।’

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিতে অনেক চলমান প্রকল্প পরিচালক পালিয়ে যাওয়ায় ধীরগতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। ফলে প্রকল্পগুলো সচল রাখতে চরম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে সরকার।

একনেক ব্রিফিংয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, মন্ত্রণালয়গুলো স্থিতিশীল অবস্থায় নেই, তাই নতুন প্রকল্প প্রণয়ন করে সেই প্রস্তুতিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরোনো ধাঁচের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প বাদ দিয়ে উদ্ভাবনী ও নতুন ধরনের প্রকল্পের ওপর জোর দিচ্ছে।

সূত্র জানায়, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গভীর চিন্তা-ভাবনা করে প্রকল্প প্রণয়ন করতে বলেছেন। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট প্রকল্পটি ব্যয়ের বিপরীতে একাধিক ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে তাও নিশ্চিত করতে বলেছেন।

তারা বলেছেন, নতুন ধরনের এবং উদ্ভাবনী প্রকল্প প্রস্তুত করা সময়সাপেক্ষ বিষয়।

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে।

এডিপিতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (বরাদ্দের ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ) বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত।

এ ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রায় ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছে এনইসি।

২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং বাকি ১ লাখ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে পাওয়া যাবে।

নতুন এডিপিতে ১ হাজার ১৩৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ২১টি সমীক্ষা প্রকল্প, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৮৭টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের ৮০টি প্রকল্পসহ মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৩২১টি।

স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১১ হাজার ৬৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

সে হিসেবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার এডিপি নিয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মোট এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

বরাদ্দের দিক থেকে শীর্ষ ১০ খাতের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা (১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ) পেয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, শিক্ষা খাতে ৩১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা (১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ), আবাসন খাতে ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা (৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ), স্বাস্থ্যসেবা ২০ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা (৭ দশমিক ৮০ শতাংশ), স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন খাত ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা (৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ), কৃষি খাত ১৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা (৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ), পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ খাতে ১১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৬ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা (২ দশমিক ৪৫ শতাংশ) এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৪ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা (১ দশমিক ২৫ শতাংশ)।

শীর্ষ ১০ খাতের বিপরীতে মোট বরাদ্দ ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা (মোট এডিপির ৯০ দশমিক ২৫ শতাংশ)।

২০২৫-২২ অর্থবছরের নতুন এডিপি অনুযায়ী, বরাদ্দ গ্রহণকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো স্থানীয় সরকার বিভাগ ৩৮ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা (বরাদ্দের ১৫ শতাংশ), সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৩২ হাজার ৪২ কোটি টাকা (বরাদ্দের ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ), বিদ্যুৎ বিভাগ ২৯ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা (১১ দশমিক ২৮ শতাংশ), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৬ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা (৬ দশমিক ২৪ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা(৫ দশমিক ৩১ শতাংশ), রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৩ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা (৫ দশমিক ৩১ শতাংশ), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা (৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা (৪ দশমিক ৪০ শতাংশ), নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা (৪ দশমিক ০১ শতাংশ) এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা (৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ)।

১০টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের বিপরীতে মোট বরাদ্দ প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা, যা সামগ্রিক এডিপি ব্যয়ের প্রায় ৭২ শতাংশ।

সূত্র: ইউএনবি


ব্যাংকে কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট কমেছে

সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি ডিপোজিট থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমেছে ১,৬৫৭টি * এসব অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট কমেছে ২৬,১৮৭ কোটি টাকা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক পালাবদলের পর ব্যাংক খাতে সেপ্টেম্বর কোয়ার্টার শেষে কোটি টাকার বেশি ডিপোজিট থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ও ডিপোজিটের পরিমাণ কমে এসেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি ডিপোজিট থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমেছে এক হাজার ৬৫৭টি। একইসঙ্গে এসব অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট কমেছে ২৬ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বলছে, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার অ্যাকাউন্টে। জুন প্রান্তিক শেষে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৯ হাজার।

অবশ্য জুন প্রান্তিকে ব্যাংকে কোটিপতির অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছিল প্রায় তিন হাজারের মত। মার্চ শেষে এই সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৬ হাজার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুন প্রান্তিক শেষে কোটি টাকার ওপর এসব অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ ছিল সাত লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা যেটি সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকায়।

কোটি টাকার অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কেন কমছে জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদুর রহমান বলেন, আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর অনেকেই তাদের অ্যাকাউন্টের টাকা তুলে নিয়েছে। কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট কমার এটি একটি বড় কারণ। এছাড়া ইনফ্লেশনের চাপ থাকায় পারিবারিক খরচ ও ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এসব কারণে প্রাতিষ্ঠানিক কোটি টাকার একাউন্টেও টাকা কমতে পারে।

ব্যাংকের প্রতি আস্থাহীনতা কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট কমার একটি কারণ মন্তব্য করে এ ব্যাংকার বলেন, গত কয়েকমাস ধরে ব্যাংক খাত নিয়ে গ্রাহকেরা কিছুটা আস্থাহীনতার মধ্যে আছেন। আমরা সেগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে এ ধারাবাহিকতায় ডিপোজিট কিছুটা কমতে পারে বড় একাউন্টগুলোতে। একইসঙ্গে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে। অনেক বড় বড় ব্যাংক ডিপোজিটররা সেদিকে ঝুঁকছেন, ফলে কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট কমছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ বলছে, একক ব্যক্তিদের পাশাপাশি কর্পোরেট কোটি টাকার বেশি ডিপোজিট থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কমে এসেছে।

চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যাংকখাতে একক ব্যক্তি কোটিপতিদের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা কমেছে ৬২০টি। এছাড়া এসব অ্যাকাউন্টে ডিপোজিটের পরিমাণ কমেছে আট হাজার ৯২৩ কোটি টাকা।

একক ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট হিসাবে চলতি বছর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোটিপতিদের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৮৬১টিতে। জুন প্রান্তিক শেষে এসব অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ৪৮১টি।

সেপ্টেম্বর শেষে এসব অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। জুন শেষে ডিপোজিটের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা।

৫ আগস্টে সরকার পতনের পর অন্যান্য খাতের সঙ্গে ব্যাংকিং খাতেও সংস্কার শুরু হয়। কয়েকটি ব্যাংক বন্ধ হওয়ে যাওয়ার গুজবে ব্যাংকখাত থেকে আমানত তুলে নেয় গ্রাহকরা। বিশেষ করে এই গুজবের প্রভাব পড়ে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলোর ওপর। তাছাড়া প্রভাবশালী কিছু ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।


দুদকে যোগ দিলেন নতুন চেয়ারম্যান মোমেন

৭ দিনের মধ্যে দেবেন সম্পদের হিসাব
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন কাজে যোগ দিয়েছেন। বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রথমবার কার্যালয়ে আসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সদ্য সাবেক সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। একই সময়ে দুদক কার্যালয়ে আসেন নতুন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী। তবে নিয়োগ পাওয়া আরেক কমিশনার হাফিজ আহ্সান ফরিদ এখনো যোগ দেননি। এর আগে গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে দুদক চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার নিয়োগের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

এদিকে দুদকে নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনার যোগ দেওয়ার দিনেই তাদের আয়-সম্পদের তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সংস্থাটি এক সংবাদ বিবৃতিতে টিআইবি নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে আয় ও সম্পদ বিবরণী এবং দলীয় আনুগত্যবিষয়ক তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে সুনির্দিষ্ট ৬টি তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে ১. নিজের ও নিকট পরিবারের নামে-বেনামে অর্জিত আয় ও সম্পদের তথ্য ২. আয়ের বৈধ সূত্রের সঙ্গে অর্জিত আয় ও সম্পদের সামঞ্জস্যতার তথ্য ৩. নিরপেক্ষ নিরীক্ষক কর্তৃক আয় ও সম্পদ বিবরণীর যথার্থতা, পর্যাপ্ততা ও সামঞ্জস্যতা যাচাইয়ের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ৪. পেশাগত জীবনের কোনো পর্যায়ে কোনো প্রকার ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত তথ্যের বিষয়ে নিজের অবস্থান ৫. প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দলীয় রাজনৈতিক আনুগত্যের তথ্য ও ৬. উল্লিখিত বিষয়ে কোনো প্রকার অসামঞ্জস্যতার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্তসাপেক্ষে জবাবদিহি করতে প্রস্তুত মর্মে ঘোষণা।

এছাড়াও দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনা ও নতুন বাংলাদেশের অভীষ্টের প্রতি অনঢ় থাকার পাশাপাশি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাবোধের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকারের আহ্বান জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এর জবাবে গতকাল বিকেলে দায়িত্ব গ্রহণের পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দুদকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান হিসেবে তার ও কমিশনারদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা হবে। নিজের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ প্রসঙ্গে আবদুল মোমেন বলেন, যেসব অভিযোগ আছে, সেগুলো দুদকে এসেছিল ২০০৯ সালে। ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এগুলো নিয়ে বহু তদন্ত হয়েছে। ২০২৩ সালে ওই সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে প্রত্যয়ন দিয়েছে দুদক। এটা কিন্তু ৫ আগস্টের পরে নয়, আরও অনেক আগে।

তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাব। দুর্নীতি একেবারে নির্মূল করতে পারব, সেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া ঠিক হবে না। আমরা যেন সাধ্যমতো কাজ করতে পারি, সেটা দেখতে হবে। ন্যায়নিষ্ঠভাবে আমরা আইন মেনে কাজ করব।’ নিজের রাজনৈতিক পরিচয় প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাববে দুদকের নতুন চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি তিনটি রাজনৈতিক সরকার ও দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো এই অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো রাজনৈতিক চরিত্র নেই। রাজনৈতিক চাওয়া নেই। এ সরকারের চাওয়া হচ্ছে জনগণকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। এখানে রাজনৈতিক সরকার প্রভাবিত করবে না। আমরাও প্রভাবমুক্ত থেকে ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাব।’

দুদকের হয়রানি, মামলাজট কমাতে পারবেন কি না জানতে চাইলে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের কাজ শুরু করতে দিন। কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করব হয়রানি কমাতে পেরেছি কি না, তদন্তে গতি আনতে পেরেছি কি না, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহয়তা করতে পেরেছি কি না।’ ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে গত ২৯ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মইনুউদ্দীন আব্দুল্লাহ, কমিশনার আছিয়া খাতুন ও কমিশনার জহুরুল হক ‘ব্যক্তিগত’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এক সময় ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। ২০২১ সালের ৩ মার্চ তিনি দুদক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য তারা দুদকের দায়িত্ব পেলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেড় বছর আগেই তাদের বিদায় নিতে হয়। ১০ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ করতে সার্চ কমিটি গঠন করে সরকার।

এ কমিটির সভাপতি করা হয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হককে। সদ্য সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন ছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. নূরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম ও সবশেষ অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। বাছাই কমিটি, চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে ২ জন ব্যক্তির নামের তালিকা প্রণয়ন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর বিধান রয়েছে। নতুন দুদক কমিশন গঠনে বাছাই কমিটি গঠনের এক মাসের মধ্যে নতুন চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার নিয়োগ হলো।


সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে আবারও কড়াকড়ি

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। নতুন এ নির্দেশনায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

এর আগে ডলার-সংকটের কারণে গত অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সীমিত করে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গত ৯ ডিসেম্বর এ-সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

পরিপত্রে বলা হয়, সাধারণভাবে বিদেশ ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হবে, বছরের সম্ভাব্য বিদেশ ভ্রমণের একটা তালিকা জানিয়ে রাখতে হবে, বিদেশ ভ্রমণের জন্য মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে, প্রধান উপদেষ্টার অফিস কাঠামো তৈরি করে দেবে এবং এর তথ্য সংরক্ষণ করবে।

আরও বলা হয়েছে, সব স্তরের সরকারি কর্মকর্তারা একাধারে বিদেশ ভ্রমণ পরিহার করবেন, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও সচিব একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণ সাধারণভাবে পরিহার করবেন। তবে জাতীয় স্বার্থে অনুরূপ ভ্রমণ একান্ত অপরিহার্য হলে তেমন অপরিহার্যতার বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অধীনস্থ অধিদপ্তর বা সংস্থার প্রধানরা একান্ত অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থ ছাড়া একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণে যাবেন না। বিদেশে সেমিনার বা ওয়ার্কশপ ইত্যাদিতে অংশ নিতে উপদেষ্টা ও সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অংশ নেওয়ার প্রস্তাবের ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং অপরাপর অংশগ্রহণকারী দেশ থেকে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাতে অংশ নিচ্ছেন সেই তথ্য জানাতে হবে।

বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব পেশ করার সময়ে ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা এবং প্রস্তাবিত কর্মকর্তার ওই কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টতা ও উপযোগিতার বিষয়টি উল্লেখ থাকতে হবে। কেনাকাটা, প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন কিংবা ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপ্টেন্স টেস্ট- ইত্যাদির ক্ষেত্রে কেবল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ পাঠানোর বিষয় বিবেচনা করতে হবে।

সরকারি অর্থে কম প্রয়োজনীয় ভ্রমণ অবশ্যই পরিহার করতে হবে, সব স্তরের সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশে বিনোদন ভ্রমণ পরিহার করবেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষণ ছুটিতে যাওয়া পরিহার করবেন। বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত কর্মকর্তার আগের এক বছরের বিদেশ ভ্রমণ বৃত্তান্ত সংযুক্ত করতে হবে।

ডলার-সংকটের কারণে গত অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সীমিত করে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল তৎকালীন সরকার।


banner close