প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন-২০২৪-এ যোগ দিতে তার তিন দিনের সরকারি সফর শেষ করে আজ রাতে দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি নিয়মিত ফ্লাইট রাত ৯টা ৮ মিনিটে (স্থানীয় সময়) জার্মানির মিউনিখ ফ্রাঞ্জ জোসেফ স্ট্রস বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
প্রধানমন্ত্রী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ শেষে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার প্রথম সরকারি সফরে ১৫ ফেব্রুয়ারি মিউনিখে যান।
মিউনিখে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং এর পাশাপাশি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি এবং ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি এবং আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় শেখ হাসিনা যুদ্ধ, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানান।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন এবং জার্মান ফেডারেল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী সভেনজা শুলজেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা করার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতীয় মুদ্রা টাকা ও রুপি ব্যবহারের ওপর জোর দেন।
উইমেন পলিটিক্যাল লিডার (ডব্লিউপিএল) এর প্রেসিডেন্ট সিলভানা কোচ-মেহরিন, সিনিয়র ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ডেভেলপমেন্ট পলিসি অ্যান্ড পার্টনারশিপ অ্যাক্সেল ভ্যান টর্টসেনবার্গ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক পেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসিস, মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রেসিডেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ড. স্যার নিক ক্লেগও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেন।
শেখ হাসিনা মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় বক্তৃতা ও ছয়টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করতে এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে সে অর্থ জলবায়ু তহবিলে জমা দিতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি মিউনিখের বার্গারহাউস গার্চিং হোটেলে জার্মানি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনায়ও যোগ দেন।
মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের প্রয়োজনে দেশে ফেরত আসার সহজ সুযোগ দিতে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা ইস্যু করতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুহাদা ওথমান প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।
প্রধান উপদেষ্টা গত বছরের মে মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে কাজে যোগদানের সময়সীমার মধ্যে প্রবেশ করতে না পারা ১৮ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর ব্যবস্থা করতে হাইকমিশনারকে অনুরোধ করেন।
হাইকমিশনার বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার একই ধরনের বৈঠক হবে।
গত অক্টোবরে ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন যে, মালয়েশিয়া এই প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করবে যাতে পরবর্তী ব্যাচটি কাজের জন্য দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আসিয়ানের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করায় মালয়েশিয়াকে অভিনন্দন জানান এবং আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে এবং পূর্ণ সদস্য হতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রতি মালয়েশিয়ার সমর্থন কামনা করেন।
তিনি হাইকমিশনারকে জানান, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজল্যুশন ৭৯/১৮২ অনুযায়ী ২০২৫ সালে জাতিসংঘে অনুষ্ঠেয় রোহিঙ্গাসংকট-বিষয়ক আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ আসিয়ানের সমর্থন চায়।
প্রধান উপদেষ্টা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নিয়োগ পাওয়া মালয়েশিয়ার নতুন হাইকমিশনারকে বাংলাদেশে আরও মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবং মালয়েশিয়ার কারখানাগুলো বাংলাদেশে স্থানান্তরে কাজ করার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি আশা করি, আপনার বাংলাদেশে অবস্থানকালে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে নতুন ঘনিষ্ঠতায় পৌঁছাবে। বাংলাদেশ কুয়ালালামপুরে চতুর্থ দ্বিপক্ষীয় পরামর্শ ব্যবস্থায় (বিসিএম) অংশগ্রহণের জন্য মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে একটি সুবিধাজনক তারিখের অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশ ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ‘পঞ্চম যৌথ কমিশন’ বৈঠক আয়োজনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
এ সময় এসডিজি-বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
আইন লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগে সৌদি আরবে অবৈধ প্রবাসীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ২ থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবাসন, শ্রম ও সীমান্ত সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের দায়ে ১৯ হাজারের বেশি প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে সৌদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই সময়ে সৌদি থেকে বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার ১০ হাজার ৩১৯ জন প্রবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে গালফ নিউজ।
সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, সাত দিনের অভিযানে ১৯ হাজার ৪১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আবাসিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ১১ হাজার ৭৮৭ জনকে, নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগে ৪ হাজার ৩৮০ জনকে এবং ৩ হাজার ২৫১ জনকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে সৌদিতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ১ হাজার ২২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪২ শতাংশ ইয়েমেনি, ৫৬ শতাংশ ইথিওপিয়ান এবং ২ শতাংশ অন্যান্য দেশের নাগরিক রয়েছেন। একই সময়ে সৌদি আরব থেকে অবৈধভাবে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে ১৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইন লঙ্ঘনকারীদের পরিবহন, আশ্রয় এবং নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবে বর্তমানে ৩০ হাজার ২৬১ জন পুরুষ এবং তিন হাজার ৩১৫ জন নারীসহ মোট ৩৩ হাজার ৫৭৬ জন প্রবাসী বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপের মধ্যে রয়েছেন। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ২৩ হাজার ৯৯১ জনকে ফেরত পাঠানোর আগে ভ্রমণের প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহের জন্য নিজ নিজ কূটনৈতিক মিশনে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ৩ হাজার ৮৬৯ জনকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে চূড়ান্ত নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া১০ হাজার ৩১৯ জনকে নিজ নিজ দেশে পাঠানো হয়েছে। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেউ যদি কাউকে অবৈধভাবে সৌদি আরবে প্রবেশে সহযোগিতা করে এবং কাউকে পরিবহন সুবিধা ও আশ্রয় দেয়, তাহলে তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে। এছাড়া ১০ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হবে। একই সঙ্গে তার সম্পত্তি এবং যানবাহনও বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সময় গণহত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড হাতে পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। একই সঙ্গে গুমের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণও মিলেছে। তবে ট্রাইব্যুনালকে তথ্য প্রদানে বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছে প্রসিকিউটরা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা জানান, কল রেকর্ডের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে ব্যবহৃত পরিকল্পনা ও নির্দেশনা সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি গুমের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। এই তথ্য-প্রমাণ তদন্ত কার্যক্রমে নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপের জন্য ব্যবহার করা হবে।
বাংলাদেশের এই ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক আদালতেও যাতে এসব তথ্য-প্রমাণ গ্রহণযোগ্য হয়, সে জন্য অকাট্য করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানায় প্রসিকিউশন।
একই সঙ্গে এসব তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে তারা যেসব সংস্থায় গেছেন, সেখানে অসহযোগিতাও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল ভিডিও-অডিও কন্টেন্ট আমাদের হাতে এসেছে। যাচাই-বাছাই চলছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে ফরেনসিক পরীক্ষা করে তারপর জানা যাবে।
সোমবার গণমাধ্যমে ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর তানভীর জ্বোহা বলেন, ‘গুমের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। হত্যাকাণ্ডের আলামত গায়েব করতে সব ধরনের আয়োজন করা হয়েছিল।’
এদিকে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা চলাকালীন শেখ হাসিনাসহ অন্যদের পাওয়া কল রেকর্ডের সিআইডিতে ফরেনসিক পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল গতকাল এ আদেশ দেন।
এ বিষয়ে প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সময়ে শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ডের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।’
এদিকে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় গাজীপুরের পুলিশ কনস্টেবল আকরাম এবং যাত্রাবাড়ীর এসি তানজিলকে ২০ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্য মামলায় তারা গ্রপ্তার থাকলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখাতে প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেয়।
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনার জেরে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার নুরুল ইসলামকে তলব করেছে দিল্লি। এর আগে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে সীমান্তে বেড়া নির্মাণ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে কড়া বার্তা দেয় বাংলাদেশ। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করার পরদিনই এ পদক্ষেপ নিল ভারত।
রোববার বিকেলে ঢাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান প্রণয় ভার্মা। সেখানে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। বৈঠকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার পাশাপাশি সীমান্ত হত্যার ঘটনায় পররাষ্ট্র সচিবের উদ্বেগ প্রকাশের কথা তুলে ধরা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সম্প্রতি সুনামগঞ্জে বিএসএফ কর্তৃক এক বাংলাদেশিকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে ‘সীমান্ত হত্যার ঘটনার এমন পুনরাবৃত্তিতে উদ্বেগ ও হতাশা’ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র সচিব।
বৈঠকের পর বেরিয়ে প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘অপরাধহীন সীমান্ত নিশ্চিত করা; চোরাচালান, অপরাধীদের চলাচল ও পাচারের চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে মোকাবিলার জন্য আমাদের নিরাপত্তায় সীমান্তে বেড়া নির্মাণের বিষয়ে বোঝাপড়া আমাদের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এবং বিজিবি যোগাযোগ করছে।’
সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁর পত্নীতলা, লালমনিরহাটের তিন বিঘা করিডোরসহ পাঁচটি সীমান্ত এলাকায় শূন্যরেখার ১৫০ গজের মধ্যে ভারত বেআইনিভাবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টা চালায়। বিজিবি ও স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধে এসব কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয় ভারত।
সীমান্তের শূন্যরেখায় কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা কাঠামো বা উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ১৯৭২ সালের মৈত্রী চুক্তি এবং ১৯৭৫ সালের নীতিমালায় উভয় পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন। এসব নিয়ম লঙ্ঘন করে ভারতের এই উদ্যোগ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সীমান্তে অপরাধ দমনে এ ধরনের নির্মাণ প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্তে বেআইনি হত্যাকাণ্ড এবং নিয়ম ভঙ্গের পুনরাবৃত্তি দুই দেশের স্থিতিশীল সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।
বিতর্ক ওঠায় বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) ৬ সদস্যের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) তাদের নিয়োগ বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ২ জানুয়ারি তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিয়োগ বাতিল হওয়া সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- অধ্যাপক ডা. সৈয়দা শাহিনা সোবহান, সাব্বির আহমেদ চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ড. এ এফ জগলুল আহমেদ, মো. মুনির হোসেন, অধ্যাপক ড. শাহনাজ সরকার ও ড. মো. মিজানুর রহমান।
এর মধ্যে তিনজনের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ওঠে। বলা হয়, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী। তাই তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। আপত্তি জানান পিএসসির কর্মকর্তারাও।
রোববার বিতর্কিত তিন সদস্যের নিয়োগ বাতিলের জন্য কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার সময়ও বেঁধে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
পিএসসির সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ডা. শাহিনা সোবহানের বাবা জামালপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া ডা. শাহিনা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বান্ধবী।
অন্যদিকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এ এফ জগলুল আহমেদ ডিজিএফআইয়ের সাবেক ডিজি ছিলেন। ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ‘আয়নাঘরে’ অনেকেই বন্দি ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া ড. মো. মিজানুর বিসিএস ৮৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগের সময়ে বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
আগামী ফেব্রয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যবই হাতে পাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাতে বিলম্বের জন্য দায়িত্বগ্রহণের প্রথম দিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত থাকাসহ পাঠ্যবই ছাপতে দেরি হওয়াকে দায়ী করেন।
সোমবার পরিকল্পনা কমিশনে শিক্ষা বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ‘এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইরাব)’ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমদিকে আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। পাঠ্যবই নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তারা বলেছিলেন সব বই নির্ধারিত সময়েই পাবে। কিন্তু পরবর্তীতে শেষদিকে দেখলাম পাঠ্যবই হাতে পৌঁছে দিতে এখনো অনেক কাজ বাকি।’
‘প্রথমদিকে আমরা আর্ট পেপার পাচ্ছিলাম না। কাগজের সংকটও ছিল। পরবর্তীতে ছাত্র প্রতিনিধি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যদের সহায়তায় আর্ট পেপারের সমস্যাটা সমাধান হয়েছে’- যোগ করেন বললেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘কিছু আর্ট পেপার ঘাটতি আছে। (আর্ট পেপার নিয়ে) বিদেশ থেকে জাহাজ রওনা হয়ে গেছে। আশা করছি জানুয়ারির শেষ দিকে জাহাজ এসে পৌঁছাবে।’
এসময় শিক্ষা সংস্কারে ইরাবের সহযোগিতা কামনা করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
ইরাব সভাপতি আকতারুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মুছা মল্লিক, দপ্তর সম্পাদক রুম্মান তূর্য, কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল হাই তুহিনসহ অন্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
গত ৭ জানুয়ারি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা (বই ছাপা) কার্যক্রম শুরু করেছি দেরিতে। আমাদের বই পরিমার্জন করতে হয়েছে। বইয়ের সিলেবাস, কারিকুলাম নতুন করে করতে হয়েছে। বইয়ের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বিদেশে কোনো বই ছাপানো হচ্ছে না। দেশের সক্ষমতা কত সেটা এবারই প্রথম দেখা যাচ্ছে। এতে করে তো দেরি হবেই।’
চাকরিতে পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে আমরণ অনশনের শুরু করেছেন পুলিশের ৪০তম ব্যাচের অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষানবিশ উপ-পরিদর্শকরা (এসআই)।
আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা।
সকাল ১০ টা থেকে সচিবালয়ের সামনের আব্দুল গনি সড়কে ৪০তম (ক্যাডেট) ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত এসআইরা চাকুরিতে পুনর্বহাল দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত দাবি আদায় না হওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে এই অনশনের ঘোষণা দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে অব্যাহতি প্রাপ্ত ক্যাডেট আলমগীর হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের ৪০তম ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর ব্যাচের চলমান ট্রেনিং থেকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি প্রদানের প্রতিবাদ ও চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আমরা ৩২১ জন সাব-ইন্সপেক্টর গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করি। আমাদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব দেখা করে আমাদের দাবির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে না পাওয়ায় আমরা সবাই (৩২১ জন) সকাল থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি।
তিনি বলেন, সকাল থেকে অপেক্ষা করেও এখন পর্যন্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনও সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়ায় আমরা পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে চাকরিতে পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা সচিবালয়ের সামনেই অবস্থান করবো।
এ সময় সাজিদুল ইসলাম নামে অপর এক অব্যাহতিপ্রাপ্ত ক্যাডেট বলেন, ছোট ছোট বিভিন্ন কারণে ট্রেনিং সম্পন্ন করে পোস্টিং দেওয়ার পরিবর্তে আমাদের ৩২১ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরমধ্যে নাস্তা না খাওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০৩ জনকে, মাঠে কমান্ড না শুনে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ দেখিয়ে ৪৯ জন, ক্লাসে অমনোযোগী থাকার কারণ দেখিয়ে ৫৮ জনকে বাদ দেওয়া হয়। মার্চিং না করে ক্লাসে যাওয়ার জন্য তিন জন এবং সর্বশেষ মাঠে হইচই করার জন্য আট জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচে প্রশিক্ষণের জন্য মোট ৮২৩ জন ছিলেন। তারা গত ৪ নভেম্বর থেকে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু করেন। পরবর্তীতে মাঠে ও ক্লাসে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে তিন ধাপে ৩২১ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. গোলাম রসুল। তাকে ডিআইজি থেকে পদোন্নতি দিয়ে এসবি প্রধানের (চলতি দায়িত্বে) পদায়ন করা হয়েছে। তিনি ডিআইজি পদে এসবিতে কর্মরত ছিলেন।
আজ সোমবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে পদায়ন করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইজি মো. গোলাম রসুলকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত আইজি (চলতি দায়িত্বে) করে এসবি প্রধান হিসেবে পদায়ন করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা পুলিশ স্টাফ কলেজের ডিআইজি গোলাম রসুলকে এসবিতে পদায়ন করা হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার ৫০ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ২৪ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করা হয়েছে।
আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনে এসব বদলির করা হয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনগুলোতে সই করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান। এর মধ্যে একটি প্রজ্ঞাপনে ১৯ জন, অপর প্রজ্ঞাপনে ৩১ জন পুলিশ সুপার ও আরেকটি প্রজ্ঞাপনে ২৪ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব কর্মকর্তাকে ডিএমপি, পুলিশ সদর দপ্তর, সিআইডি, এসবি, র্যাব, সিএমপি, পিবিআই, এপিবিএন, আরএমপি এবং বিএমপিসহ বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
শেখ হাসিনা ও টিউলিপকে সহযোগী করে শেখ রেহানা, ববি ও আজমিনার নামে দুদক তিনটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাবেক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করে পূর্বাচলের নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ এনে এ তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়।
পৃথক তিন মামলায় আসামী করা হয়েছে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তী।
আজ সোমবার দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তিন মামলার তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা- এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
ব্রিফ করেন দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। ছবি: দৈনিক বাংলা
দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘পূর্বাচল নতুন শহরে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করেছেন। এ বিষয়ে দুদকের কাছে যথেষ্ঠ তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।’
শেখ রেহানার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় শেখ হাসিনা, রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাসহ ১৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। রিজওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায় ১৬ জন ও তার ছোট বোন আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তী নামে দায়ে হওয়া মামলায় ১৬ জনকে আসামী করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজউকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেন। এই বরাদ্দের তালিকায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের নাম রয়েছে।
বরাদ্দকৃত প্লটগুলো পূর্বাচল নতুন শহরের সেক্টর ২৭-এর কূটনৈতিক জোনে সড়ক নং ২০৩-এ অবস্থিত। বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে ১০ কাঠার তিনটি প্লটসহ মোট ৩০ কাঠা জমি।
জানা গেছে, শেখ রেহানার মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক মো. মো.সালাহউদ্দিন, ববির মামলার বাদী দুদকের সহকারি পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান, আজমিনার মামলার বাদী দুদকের সহকারি পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
গতকাল রোববার একই অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক।
দেশে দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের কাছে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে সঞ্চয়পত্র অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেক নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকায় পরিবারের খরচ চালান। গত সপ্তাহে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে বেশি ঋণ নিতে মুনাফার হার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুযায়ী এ হার বেড়ে হতে যাচ্ছে ১২ দশমিক ২৫ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। তাই এখনই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চালু সঞ্চয় কর্মসূচির (স্কিম) সংখ্যা ১১। এগুলোর মধ্যে ৪টি সঞ্চয়পত্র, ২টি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাব, ১টি ডাক জীবন বীমা, ১টি প্রাইজবন্ড এবং ৩টি প্রবাসীদের জন্য বন্ড। সব কর্মসূচিতে বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ বা মুনাফার হার ভিন্ন। সুদ বা মুনাফার ওপর উৎসে কর কর্তনের হারও ভিন্ন।
বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে। এগুলো হলো পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র। বর্তমানে সঞ্চয়পত্র কেনা ও মুনাফা উত্তোলনের ব্যবস্থা ডিজিটাল হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কার্যালয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ডাকঘর ছাড়াও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো যায়।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর (স্কিম) মুনাফার হার বাড়ছে। বর্ধিত হার নির্ধারণের আদেশ জারি করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে (আইআরডি) গত ৮ জানুয়ারি অনুরোধ জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। চিঠির সঙ্গে অর্থ বিভাগ দুটি সংযুক্তিও দিয়েছে, যাতে সঞ্চয়পত্রের ধরন ও মেয়াদ অনুযায়ী মুনাফার হারের কথা উল্লেখ করেছে। বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কোনো সঞ্চয়পত্রের মুনাফাই ১২ শতাংশের কম হবে না। সবচেয়ে কম মুনাফা পাওয়া যাবে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের বিপরীতে। এর হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে পেনশনার সঞ্চয়পত্রে, যে হার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও বেশি হার রাখারও সুপারিশ করেছে অর্থ বিভাগ।
বিনিয়োগকারীদের দুটি ধাপ হচ্ছে
শুধু সুদের হারের পরিবর্তন নয়, বিনিয়োগকারীদের ধাপেও পরিবর্তন আনার কথা বলেছে অর্থ বিভাগ। বর্তমানে ধাপ রয়েছে তিনটি- ১৫ লাখ টাকা; ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা এবং ৩০ লাখ ১ টাকার বেশি। প্রতিটি ধাপে রয়েছে আলাদা মুনাফার হার। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার হার হবে সাড়ে ৯ শতাংশ।
নতুন নিয়মে দুটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। একটি ধাপে থাকবেন ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা। আরেকটি ধাপে থাকবেন এর ওপরের বিনিয়োগকারীরা।
পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের উদাহরণ দিয়েই বলা যায়, নতুন হারে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন সামান্য কম অর্থাৎ ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও এভাবে দুটি করে হার হবে। বরাবরের মতো নতুন হারেও সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন পেনশনার সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে বিনিয়োগকারীরা। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচের বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির আগে ভাঙালে সব সঞ্চয়পত্রের বিপরীতেই মুনাফার হার কমবে।
কোন সঞ্চয়পত্রের কত মেয়াদ
নামের মধ্যেই রয়েছে পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র পাঁচ বছরের মেয়াদের। পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের নামের মধ্যে মেয়াদ উল্লেখ না থাকলেও দুটি সঞ্চয়পত্রই পাঁচ বছর মেয়াদের। এ ছাড়া রয়েছে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ মাসিক ভিত্তিতে এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তোলা যায়।
কারা কোন সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন
সবাই সব ধরনের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। এ ব্যাপারে সরকার কিছু শর্ত ঠিক করে দিয়েছে। যেমন ১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী, যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সি বাংলাদেশি নারী ও পুরুষেরা শুধু একক নামে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রও কিনতে পারেন না সবাই। অবসরভোগী সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত সরকারি চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।
পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র সবার জন্য উন্মুক্ত। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ একক বা যুগ্ম নামে এ দুই ধরনের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। তবে নাবালকের পক্ষে সঞ্চয়পত্র কেনার এখন আর সুযোগ নেই।
সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক কোনো কারণে মারা গেলে টাকা পাবেন তার মনোনীত ব্যক্তি বা নমিনি। সঞ্চয়পত্রে এক বা একাধিক নমিনি করার সুযোগ রয়েছে। যদিও নমিনি মনোনয়ন বাধ্যতামূলক নয়। তবে ভবিষ্যতে নগদায়ন ঝামেলা এড়াতে গ্রাহকরা সাধারণত নমিনি মনোনয়ন করে থাকেন। নাবালককেও নমিনি করা যায়। গ্রাহকের মৃত্যুর তিন মাসের মধ্যে আদালত থেকে উত্তরাধিকার সনদ নিয়ে সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন করতে হয়। গ্রাহক ও নমিনি উভয়ই মারা গেলে সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে পারেন আইনানুগ উত্তরাধিকারীরা।
ব্যক্তি সঞ্চয়পত্র কিনতে যা যা লাগে
কোনো ব্যক্তি সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে তাকে ৮ থেকে ৯ ধরনের কাগজ জোগাড় করতে হয়। প্রথমেই লাগবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ফটোকপি। দুই লাখ বা তারও বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগবে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সনদের ফটোকপি।
বিনিয়োগের পরিমাণ দুই লাখ টাকার মধ্যে হলে নগদে পরিশোধ করা যাবে, তবে দুই লাখ টাকার বেশি হলেই তা পরিশোধ করতে হবে ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে। যে নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে ইচ্ছুক, চেক দিতে হবে সেই নামের ব্যাংক হিসাবেরই। একক নামে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে একক নামে ব্যাংক হিসাবের চেক এবং যুগ্ম নামে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে যুগ্ম নামে ব্যাংক হিসাবের চেক দিতে হবে।
আবেদনের সঙ্গে নমিনির এনআইডির ফটোকপিও দিতে হবে। নমিনি নাবালকও হতে পারবে। সে ক্ষেত্রে নমিনির জন্মনিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টের ফটোকপি দিতে হবে। নাবালক নমিনির পক্ষে দিতে হবে মনোনীত অভিভাবকের এনআইডির ফটোকপিও। ব্যক্তি ছাড়া প্রতিষ্ঠানও নমিনি হতে পারবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের সনদ বা স্থানীয় সরকারের (ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন) প্রত্যয়নপত্র লাগবে। সঞ্চয়পত্রের ক্রেতা বা গ্রাহকের এবং নমিনির দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি লাগবে। গ্রাহকের ছবি সত্যায়ন করবেন ইস্যুকারী কর্মকর্তা এবং নমিনির ছবি সত্যায়ন করবেন সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক।
প্রভিডেন্ট ফান্ড
ভবিষ্য তহবিলের (প্রভিডেন্ট ফান্ড) অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যায়। এ বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। প্রথমেই সংশ্লিষ্ট কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে স্বীকৃতপত্র নিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ভবিষ্য তহবিল সংরক্ষণবিষয়ক সরকারি গেজেট বা প্রজ্ঞাপনের কপি।
ভবিষ্য তহবিলের নামে যে টিআইএন সনদ আছে সেটা এবং ব্যাংক হিসাবের চেক ও হিসাব বিবরণী জমা দিতে হবে। যে প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের কার্যবিবরণী এবং আবেদনকারীদের নাম, পদবি ও স্বাক্ষরসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। সবশেষে লাগবে একটি ফরওয়ার্ড লেটার।
অটিস্টিকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অটিস্টিকদের জন্য গড়ে উঠেছে, এখন সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক তিন বছরমেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারে। তবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের আগে এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান এ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারত না।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শুধু অটিস্টিকদের জন্য গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, যেসব প্রতিষ্ঠান অটিস্টিকদের সহায়তায় কাজ করে, তারাও এ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারবে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে একক নামে ৫০ লাখ বা যৌথ নামে এক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ থাকলেও অটিস্টিকদের জন্য গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিনিয়োগের কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।
তবে যে প্রতিষ্ঠানই এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে যাবে, তার আগে সেই প্রতিষ্ঠানকে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। জমা দিতে হবে টিআইএন সনদ এবং ব্যাংক হিসাবের চেক ও হিসাব বিবরণী। যে প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের কার্যবিবরণী এবং আবেদনকারীদের নাম, পদবি ও স্বাক্ষরসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে। সবশেষে লাগবে একটি ফরওয়ার্ড লেটার।
পেনশনার
এ সঞ্চয়পত্র যেখান থেকে কেনা হয়, সেখানে ভবিষ্য তহবিলের চূড়ান্ত মঞ্জুরিপত্র দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া লাগবে প্রাপ্ত আনুতোষিকের মঞ্জুরিপত্র এবং পেনশন বইয়ের ফটোকপি। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের একটি সনদও দাখিল করতে হয় এ সঞ্চয়পত্র কেনার আবেদনের সঙ্গে।
জানুয়ারি মাসের প্রথম ১১ দিনে ৭৩ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ৮ হাজার ৯৮৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন আসছে ৮১৬ কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট সূত্রে রোববার এ তথ্য জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম ১১ দিনে এসেছে ৭৩ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। এভাবে রেমিট্যান্স আসার গতি অব্যাহত থাকলে চলতি মাসেও দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে রেমিট্যান্স। আলোচিত সময়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৫০ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৫ লাখ ডলারের বেশি।
এর আগে সদ্যবিদায়ী ডিসেম্বর মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার বেশি।
একক মাস হিসাবে আগে কখনই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। এর আগে করোনাকালীন ২০২০ সালের জুলাই ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এবার সেই রেকর্ড ভাঙলো ২০২৪ সালের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে এসেছিল ১৯৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুলাই মাস বাদে বাকি ১১ মাসই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বরে) এক হাজার ৩৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেশি এসেছে। গত অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৮০ কোটি ডলার।
রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট নিজেদের নামে করিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া এ অনিয়মে সহযোগিতার অভিযোগে মামলায় আরও ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিন শুধু শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের নামে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অনুসন্ধানে বাকিদের বিরুদ্ধেও প্লট বরাদ্দের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। শিগগিরই বাকিদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে মামলা দায়ের হতে পারে।
রোববার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এর আগে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে শেখ হাসিনা নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কূটনৈতিক এলাকায় ৬০ কাঠার ৬টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
মূল অভিযোগে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।
অভিযোগে বলা হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।