সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরসহ ভাষাশহীদদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই বাংলা ভাষা। এই ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন শুরু হয় বইমেলা, চলে পুরো মাস। সেই বইমেলায় প্রতিদিন প্রায় শখানেক বই প্রকাশিত হলেও যাদের আন্দোলন এবং রক্তের বিনিময়ে আমরা এই ভাষা পেয়েছি সেই ভাষা আন্দোলন এবং ভাষাশহীদদের ওপর বই প্রকাশ হচ্ছে না বললেই চলে। যদিও প্রকাশকরা বলছেন, এসব বিষয়ে তারা বই প্রকাশে আগ্রহী। কিন্তু ভালো পাণ্ডুলিপি পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গতকাল মঙ্গলবার মেলার ২০তম দিনে ২ হাজার ৯৫টি বই প্রকাশতি হলেও তার মধ্যে ভাষা আন্দোলনের ওপর নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে মাত্র চারটি। এর মধ্যে দুটি বই প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য প্রকাশনী আর প্রথমা প্রকাশনী এবং ঝিঙেফুল প্রকাশনী প্রকাশ করেছে একটি করে। এ ছাড়া ঐতিহ্য প্রকাশনী এই বইমেলাতে ভাষা আন্দোলনের ওপর আরও তিনটি বই নিয়ে আসার কথা জানিয়েছে।
বাংলা একাডেমি থেকে পাওয়া তথ্যমতে মেলায় ভাষা আন্দোলনের ওপর প্রকাশিত নতুন তিনটি বই হলো ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত লেখক-গবেষক বদরুদ্দোজা হারুনের লেখা ‘ভাষাশহীদ আবুল বরকত: নেপথ্যকথা’, প্রয়াত কবি বেলাল চৌধুরীর অমর একুশ-বিষয়ক স্মৃতি ও ভাবনার সংকলন ‘একুশের স্মৃতি ও ভাবনা’ এবং ঝিঙেফুল থেকে প্রকাশিত গাজী হানিফের ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বইটি। এ ছাড়া মেলায় এসেছে প্রথমা থেকে পুনঃপ্রকাশিত ভাষাসৈনিক মর্তুজা বশিরের লেখা ‘একুশের লেখা, একুশের আঁকা’ বইটি।
বাংলা একাডেমি থেকে পাওয়া তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধিদের কথায়ও।
বাংলা একাডেমি প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী লাভলু আলম বলেন, এই বছর ভাষা আন্দোলন নিয়ে বাংলা একাডেমির নতুন কোনো বই নেই। আগের বইগুলোই রিপ্রিন্ট করা হচ্ছে। এই প্রকাশনীর স্টল ঘুরে অমর একুশ নিয়ে কয়েকটি বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো- ড. সরকার আমিনের সম্পাদনায় ‘একুশের প্রবন্ধ ২০২৩’, সাজ্জাদ আরেফিনের সম্পাদনায় ‘একুশের কবিতা-পরিচয়’, জালাল ফিরোজের ‘অমর একুশে বইমেলার ইতিহাস’, আমিনুর রহমান সুলতানের ‘ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক’।
অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহাদাত হোসেন বলেন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে আমরা অনেক কাজ করতে চাই। কিন্তু এসব বিষয়ে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাণ্ডুলিপি পাই না। ভাষা আন্দোলনের ওপর পাণ্ডুলিপি নেই বললেই চলে। অনেক বছর আগে হয়তো দুই-একটা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে গবেষণার অভাবে আমরা কোনো পাণ্ডুলিপি পাচ্ছি না। হয়তো গবেষকরা এসব বিষয়ে উৎসাহ পাচ্ছেন না অথবা বিভিন্ন কারণে লিখছেন না। এসব কারণে আমরা এসব বিষয়ে কোনো বইও প্রকাশ করতে পারছি না।
তিনি বলেন, প্রতিবছরই আমাদের ইচ্ছা থাকে ভাষা আন্দোলনের ওপর কমপক্ষে একটা বই প্রকাশ করার। কিন্তু পাণ্ডুলিপি না পাওয়ার কারণে সেটি আর সম্ভব হয় না। পুরাতন যে বইগুলো আছে সেগুলো নিয়েই আমাদের চলতে হয়। বর্তমানে আমাদের ডা. শেখ মেহেদী হাসানের ‘ভাষা আন্দোলনের পূর্বাপর’ বইটি আছে।
পাঠক সমাবেশের স্টল ম্যানেজার লিয়ন বলেন, এ বিষয় নিয়ে নতুন কোনো বই আসেনি। আগেরও কোনো বই নেই। তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বই আছে।
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) বিক্রয় প্রতিনিধি মোসাদ্দেক হোসাইন বলেন, নতুন কোনো বই আসেনি। তবে আতিউর রহমান স্যারের সম্পাদনায় ‘ভাষা আন্দোলনের আর্থসামাজিক পটভূমি’ শীর্ষক একটি বই ছিল। তবে সেটা এখন নেই। নতুন করে আবার প্রকাশিত হবে।
প্রথমা প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি আশফাক বলেন, একটা ছাড়া আর কোনো নতুন বই আসেনি। তবে আগের কিছু বই আছে। সেগুলো হলো- আহমদ রফিকের ‘ভাষা আন্দোলন’, ‘একুশের মুহূর্তগুলো’, ছয় ভাষাশহীদদের জীবনগাথা নিয়ে বই ‘একুশের শহীদ’, মতিউর রহমানের সম্পাদনায় ‘একুশের পটভূমি একুশের স্মৃতি’ উল্লেখযোগ্য।
মওলা ব্রাদার্সের স্টল ম্যানেজার তামিম বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর নামে’ একটি বই ছিল। সেটা গত বইমেলায় শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে রিপ্রিন্ট করা হয়নি। তবে এ বছর নতুন কোনো বই আসেনি।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মেহেদী হাসান রিফাত বলেন, ভাষা আন্দোলনের ওপর নতুন আরও তিনটা বই আসবে। সেগুলো হলো- অমর একুশে স্মরণে ‘একুশের ২১ গল্প’। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলার বরেণ্য কথাশিল্পীদের একুশটি গল্পের এ সংকলন সম্পাদনা করেছেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। এ ছাড়া ভাষা আন্দোলনের দুই অগ্রসৈনিক শহীদ মুনীর চৌধুরীর ‘দুষ্প্রাপ্য রচনা’ এবং ‘শহীদ জহির রায়হানের আত্মকথা ও অন্যান্য রচনা’। এই দুটি গ্রন্থের সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন কাজী জাহিদুল হক।
‘এ ছাড়া আগের কিছু বই যেমন সৈয়দ শামসুল হকের ‘বাহান্নের বিজয়গাথা’, মো. নূরুল আনোয়ারের একুশের গুলিবর্ষণ, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর কারিশমা’ রয়েছে যোগ করেন মেহেদী হাসান রিফাত।
তবে আগামী প্রকাশনী থেকে এ বছর ভাষা আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট নতুন কোনো বই পাওয়া না গেলেও আগের কিছু বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো- ড. এম আবদুল আলীমের ‘ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ- কতিপয় দলিল’, ‘ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিব- কতিপয় দলিল’, ‘রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনে রফিকুল ইসলাম’, ‘সিরাজগঞ্জে ভাষা আন্দোলন’, ‘আওয়ামী লীগ ও ভাষা আন্দোলন’, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’, বশির আল হেলালের ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’ উল্লেখযোগ্য।
সময় প্রকাশনের বিক্রয় প্রতিনিধি আবির হাসান বলেন, ‘আমাদের নতুন কোনো বই আসেনি। তবে আগের তিনটি বই আছে। সেগুলো হলো- আহমদ রফিকের ‘ভাষা আন্দোলন- ইতিহাস ও উত্তরপ্রভাব’, হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ এবং মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’।
এ ছাড়া সেলিনা হোসেনের ‘যাপিত জীবন’, জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন’, আনিসুর হকের ‘যারা ভোর এনেছিল’, বদরুদ্দীন উমরের ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি-১’, এম আর আখতার মুকুলের ‘একুশের দলিল’, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা’, হুমায়ুন আজাদের ‘ভাষা আন্দোলন’, রফিকুল ইসলামের ‘ভাষা আন্দোলন ও শহীদ মিনার’, মুহাম্মদ শফীর ‘ভাষা আন্দোলনের আগে ও পরে’ এবং আহমদ রফিকের ‘ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ও কিছু জিজ্ঞাসা’ বইগুলো উল্লেখযোগ্য।
২০তম দিনে নতুন বই ৯৯টি
আজ মঙ্গলবার মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ৯৯টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: জামাল নজরুল ইসলাম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানবক্তা আসিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুব্রত বড়ুয়া এবং আরশাদ মোমেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান।
প্রাবন্ধিক বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গাণিতিক, পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিশ্ববরেণ্য কসমোলজিস্ট। আন্তর্জাতিক মহলে তিনি জে এন ইসলাম হিসেবে পরিচিত।
আলোচকবৃন্দ বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের বিজ্ঞানচিন্তা ও গবেষণার পরিসর ছিল অনেক বিস্তৃত। তিনি আন্তর্জাতিক বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলে বিশিষ্ট অবস্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি কেবল বড় বিজ্ঞানীই ছিলেন না, একজন সংস্কৃতিবান ও দেশপ্রেমিক মানুষও ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম বড় বিজ্ঞানী হয়েও ছিলেন নিরহংকারী, অত্যন্ত আন্তরিক, সদাশয় ও সরল মনের অধিকারী একজন মানুষ। তিনি বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আতাহার খান, কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল, গবেষক চৌধুরী শহীদ কাদের এবং লেখক ও পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল।
অমর একুশের কর্মসূচি
আগামীকাল শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। রাত সাড়ে ১২টায় একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। বইমেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি শামীম আজাদ।
অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৪
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৪। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করবেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১০টা ৪ মিনিটে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন।
এর আগে নিয়ম অনুযায়ী বিকেলে তারেক রহমানের পক্ষে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির নেতারা। তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে সাভার-আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় জড়ো হন। সারাদিন তারা সেখানে উপস্থিত থেকে তারেক রহমানের জন্য অপেক্ষা করেন।
যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এবং তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্মৃতিসৌধ এলাকায় পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-পরিবার কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবুসহ স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্য এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
গত বৃহস্পতিবার দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফেরেন তারেক রহমান। ফেরার দিন রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। পরে অসুস্থ মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান এবং সেখান থেকে গুলশানের বাসভবনে ফেরেন।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে তারেক রহমান তার বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তিনি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে রওনা হন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে স্বদেশে ফেরার পরদিন নিজের পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে তিনি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত সমাধি প্রাঙ্গণে পৌঁছালে সেখানে এক অভূতপূর্ব আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর আগে ২০০৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বরের পর অর্থাৎ দীর্ঘ ১৯ বছরেরও বেশি সময় পর বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানালেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান। আনুষ্ঠানিক দোয়া ও মোনাজাত শেষ হওয়ার পর তিনি পাশে থাকা নেতাকর্মীদের কিছুটা সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং কিছুক্ষণ একান্তে বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন।
মাতৃভূমিতে ফিরে বাবার সমাধির সামনে দাঁড়ানোর এই বিশেষ মুহূর্তে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তারেক রহমান। দীর্ঘক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকার সময় তাকে অঝোরে কাঁদতে এবং বারবার অশ্রুসিক্ত চোখ মুছতে দেখা যায়। তার এই ব্যক্তিগত শোক ও আবেগ দেখে উপস্থিত হাজারো নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বছরের পর বছর দেশের বাইরে থাকার পর প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরে পিতার স্মৃতির প্রতি এমন শ্রদ্ধা নিবেদন উপস্থিত সবার মাঝে এক শোকাতুর পরিবেশের সৃষ্টি করে।
এর আগে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে গুলশানের বাসভবন থেকে একটি বিশেষ বাসে চড়ে তিনি সমাধিস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বিজয় সরণি মোড়ে নেতাকর্মীদের বিশাল ভিড়ে তার গাড়ি বহরটি সাময়িকভাবে আটকে পড়লে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে বহরটি এগিয়ে দেন। জিয়ারত শেষে বিকেল ৫টা ৪ মিনিটে তিনি পুনরায় বাসে চড়ে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে রওনা হন, যেখানে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি জাতীয় শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফেরার পর থেকেই তাকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা এক অভূতপূর্ব জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি গণপূর্ত অধিদফতরের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের আমিনবাজার থেকে নবীনগরের স্মৃতিসৌধ এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা।
তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার পাশাপাশি স্মৃতিসৌধের মূল ফটক বন্ধ করে জনসাধারণের প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলোকুর রহমান বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ছাত্রদল প্রস্তুত। আমরা এখন নেতার আগমনের অপেক্ষায় রয়েছি।
সাভার পৌর বিএনপির সভাপতি খন্দকার শাহ মাইনুল হোসেন বিল্টু জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানাতে নেতা-কর্মীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহস্রাধিক সদস্যের সমন্বয়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুরো এলাকা নিরাপত্তার আওতায় রাখা হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকেই শীত উপেক্ষা করে সাভার, আশুলিয়া ও ঢাকার ধামরাই থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের স্মৃতিসৌধ এলাকায় জড়ো হতে দেখা গেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রবাস জীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে রাজধানীর গুলশান-২ এর গুলশান নর্থ অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাড়িতে যান। ফলে বাড়িটির আশেপাশের সড়কসহ পুরো এলাকা নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা। চারপাশে বাড়তি নিরাপত্তা, সিসিটিভি ক্যামেরা ও অস্থায়ী ছাউনি জানান দিচ্ছে বাড়িটির গুরুত্ব।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) গুলশান নর্থ অ্যাভিনিউ এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বুধবার রাত থেকেই বাড়িটির সামনের সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে এবং একাধিক চেকপোস্ট বসানো হয়। নিরাপত্তায় রয়েছে পুলিশ, বিজিবি, সিএসএফ (চেয়ারপারসন সিকিউরিটিসহ) এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। পুরো এলাকা কর্ডন করে রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিচয় ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সরকারি নিরাপত্তার পাশাপাশি বিএনপির নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেও আলাদা নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু বাসভবন নয়, গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়েও তারেক রহমানের জন্য আলাদা কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি নম্বর বাড়িতে নতুন চারতলা রাজনৈতিক কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি।
এখান থেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
নতুন কার্যালয়ের দোতলায় রয়েছে আধুনিক ব্রিফিং কক্ষ। অন্যান্য তলায় গড়ে তোলা হয়েছে গবেষণা সেল ও বিভাগভিত্তিক দপ্তর, যেখানে নির্বাচন, নীতি ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। একইসঙ্গে আশেপাশের গলিতে টাঙানো হয়েছে তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশের মাটিতে পা রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে এসে বিমানবন্দর থেকে তিনশ ফুট এলাকায় সংবর্ধনা মঞ্চে বক্তব্য দেন তিনি।
এরপর তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে তার মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। সেখান থেকে গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে যান। গুলশানের এই বাড়িটি জিয়া পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তৎকালীন সরকার বাড়িটি খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেয়। বছরের পর বছর ধরে এখানে অনুষ্ঠিত হয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
কয়েক মাস আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িটির মালিকানা দলিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে হস্তান্তর করা হয়। পাশেই রয়েছে ‘ফিরোজা’, খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের বাসভবন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও পাশের বাড়িটি প্রস্তুত হয় আরেক ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের জন্য।
এদিকে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যায়। দলীয় নেতাদের মতে, এটি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং বাংলাদেশে বিএনপির আরেক রাজনৈতিক অধ্যায়ের শুরু।
মা’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ৫৭ মিনিটের দিকে তিনি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পৌঁছান এবং ভেতরে প্রবেশ করেন।
এর আগে, এদিন বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর পূর্বাচলে আয়োজিত এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন তারেক রহমান। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
তারেক রহমান বলেন, "যেকোনো মূল্যে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। আমরা শান্তি চাই। সবাইকে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং কারও উস্কানিতে পা দেওয়া যাবে না।"
দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, "আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই, আমার একটি পরিকল্পনা (আই হ্যাভ এ প্ল্যান)। আমি সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই।"
পূর্বাচলের সমাবেশ শেষ করেই তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন এবং সেখানে চিকিৎসাধীন মা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’ উপলক্ষে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বঙ্গভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বঙ্গভবনের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্বের সকল মানুষকে বড়দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। যিশু খ্রিস্টের মহিমান্বিত জীবনের আদর্শ তুলে ধরে তিনি সমাজের সকল স্তরে শান্তি ও মানবতা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শুভেচ্ছা বিনিময়কালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। তিনি জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের দীর্ঘদিনের চমৎকার সম্প্রীতি চিরকাল অটুট এবং অক্ষুণ্ন রাখার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, সকল ধর্মের মানুষের এই সম্মিলিত উৎসব ও ভ্রাতৃত্ববোধ বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং বঙ্গভবনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরাও বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রশংসা করেন। মূলত বড়দিনের আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে নিতেই প্রতি বছরের মতো এবারও এই বিশেষ রাজকীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীর গুলশানের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং জুলাই আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে ‘মামলা বাণিজ্য’ ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগে আলোচিত তাহরিমা জান্নাত সুরভীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে গাজীপুরের টঙ্গীর টেকপাড়া এলাকার নিজ বাসভবন থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সুরভী গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে ভাইরাল পরিচিতি পেয়েছিলেন।
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন এই সুরভী। সম্প্রতি গুলশানের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন যে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় সংঘটিত বিভিন্ন হত্যা মামলায় তাঁর নাম জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সুরভী ও তাঁর সহযোগীরা ধাপে ধাপে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মামলার আসামি বানানো, পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে এবং পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ‘মীমাংসা’ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করা হয়েছিল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে যে, এই চক্রটি কেবল ওই ব্যবসায়ীই নয়, বরং বিভিন্ন প্রভাবশালী ও বিত্তবান ব্যক্তিদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইলিং ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে মোট প্রায় ৫০ কোটি টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সুরভী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ভাইরাল পরিচিতি ব্যবহার করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে সখ্য গড়ে তুলতেন এবং পরবর্তীতে সেটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। জুলাই আন্দোলনের শহীদদের আবেগ ও স্মৃতিকে পুঁজি করে এমন নজিরবিহীন অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বর্তমানে এই চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মূলত আন্দোলনের চেতনাকে কলঙ্কিত করে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের অপরাধেই তাঁর বিরুদ্ধে এই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) খোদা বকস চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনকে আরও কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সহযোগিতার জন্য প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তিনজনকে বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে খোদা বকস চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। নিয়োগপ্রাপ্ত তিন বিশেষ সহকারীর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম আগেই পদত্যাগ করেছেন। এখন পদত্যাগ করলেন খোদা বকস চৌধুরী।
সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়। বিশেষ করে হাদি হত্যার বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে রাজনৈতিক বিভিন্ন মহল ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং বিশেষ সহকারী খোদা বকস চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। মূলত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চলমান অস্থিরতা ও জনচাপের মুখেই তাঁর এই পদত্যাগ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাঁর পদত্যাগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
বর্তমানে ওই সময় নিয়োগ পাওয়া তিন বিশেষ সহকারীর মধ্যে কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক সায়েদুর রহমান স্বপদে বহাল রয়েছেন। খোদা বকস চৌধুরীর এই প্রস্থানকে বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামোয় এক বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে সংশোধিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে।
বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ব্রিফিংয়ে রাজস্ব আদায়ের চিত্র তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের গতি বেড়েছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ দশমিক ১ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশে।
এই প্রেক্ষাপটে চলতি অর্থবছরের মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আহরিত হবে ৫ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা, কর-বহির্ভূত রাজস্ব থেকে আসবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর-বহির্ভূত অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ২০ হাজার কোটি টাকা।
প্রেস সচিব বলেন, গত বছরের শেষের দিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৪ শতাংশে পৌঁছেছিল। বর্তমানে তা কমে ৭ শতাংশের কাছাকাছি এসেছে। শীতকালে সবজির উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ায় মূল্যস্ফীতি আরও কমবে বলে সরকার আশা করছে। চলতি অর্থবছর শেষে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামবে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সংশোধিত বাজেটে মোট সরকারি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। মূল বাজেটে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার সংশোধিত বাজেটে ধরা হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। মূল বাজেটে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল। ফলে উন্নয়ন ব্যয় মূল বাজেটের তুলনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা এবং দেশীয় অর্থায়ন হবে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। পরিচালনসহ বাজেটের অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এই ঘাটতির মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৬৩ হাজার কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র: বাসস
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আবহমানকাল ধরে এদেশের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠানকে সম্মান করে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখে চলেছে।’
২৫ ডিসেম্বর ‘বড়দিন’ উপলক্ষ্যে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’ উপলক্ষে এ ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
এসময় প্রধান উপদেষ্টা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশপ্রেম ও মানবতার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপন আমাদের এ সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে-এমনটাই প্রত্যাশা করি।’
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের জন্য একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্ট এই দিনে বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পৃথিবীতে শান্তি, ন্যায় এবং মানবমুক্তির বার্তা নিয়ে আগমন করেছিলেন। মানবজাতিকে পাপমুক্ত করে সত্য, কল্যাণ ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করাই ছিল তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। মহামতি যিশু সর্বদা বিপন্ন, অবহেলিত ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের সেবায় নিবেদিত ছিলেন। আমৃত্যু তিনি প্রচার করে গেছেন ক্ষমা, ভালোবাসা ও প্রভুভক্তির মহিমা। তার জীবনাচরণ ও মহৎ চারিত্রিক গুণাবলি আজও তার ভক্ত ও অনুসারীদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
তিনি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ সকলের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।
কবিগুরুর অবিস্মরণীয় ভাষায় জনতার সম্মিলিত মহাকণ্ঠে আজ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়’। হ্যাঁ, কোটি বাংলোদেশির হৃদয়ের ভালোবাসা, আর আবেগে মর্যাদাপূর্ণ অভিভাষণে সিক্ত হয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশের মাটিতে পা রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময়ের নির্বাসিত জীবনের ইতি ঘটবে। এই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিল সমগ্র জাতি; অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। প্রিয় মাতৃভূমিতে পদার্পণের মাধ্যমে সেই অপেক্ষারও অবসান হবে।
আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীর দৃষ্টি থাকবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং পূর্বাচলের বিশাল মঞ্চের দিকে। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতাকে বরণ করতে প্রস্তুত বিএনপি। এখন ঢাকামুখী লাখ লাখ মানুষ। দেশজুড়ে বইছে উৎসবের আবহ। যেন এক ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হচ্ছে দেশ।
বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার উপস্থিতি দলের নেতাকর্মীদের মনোবল বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই প্রত্যাবর্তনকে অনেকেই দেখছেন বিরাজমান অস্থির পরিস্থিতিতে জনগণের ঐক্য সৃষ্টি এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে। সে কারণেই তারেক রহমানের ফেরা কেবল একটি ব্যক্তিগত প্রত্যাবর্তন নয়; বরং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণের গভীর আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ফলে তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গন, নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সর্বসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ, কৌতূহল ও আবেগের সঞ্চার হয়েছে।
জানা গেছে, তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশব্যাপী এক অভূতপূর্ব জাগরণ তৈরি হয়েছে। দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম—সব প্রান্তের লাখো নেতাকর্মী এখন ঢাকামুখী। বাস, ট্রেন, লঞ্চ কিংবা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়—যে যেভাবে পারছেন, প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে রাজধানীতে জড়ো হচ্ছেন। গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) থেকেই দলে দলে ঢাকায় আসা শুরু করেছেন প্রত্যন্ত এলাকার নেতাকর্মীরা। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে প্রত্যন্ত এলাকার নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। বগুড়া থেকে আসা এক তৃণমূল কর্মী বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছি। প্রিয় নেতাকে একনজর দেখতে এবং তাকে বিরোচিত সংবর্ধনা জানাতেই আমরা এসেছি।
এদিকে মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক হাজার প্রবাসী নেতাকর্মী এরই মধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
দেশে ফিরে তিন দিন কোথায় যাবেন, কী করবেন: তারেক রহমান দেশে ফেরার পর প্রথম তিন দিন তিনি যেসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন, সে তথ্য জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজ দুপুরে বিমানবন্দরে নামার পর দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে তথা ৩০০ ফিট রাস্তায় সংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখানে অপেক্ষায় থাকা নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন তিনি। এরপর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখান থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে কাকলীর মোড় হয়ে গুলশান–২ নম্বরে বাসভবনে চলে আসবেন। সেদিন আর অন্য কোনো অনুষ্ঠান হবে না। পরদিন ২৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারেক রহমান বাসভবন থেকে প্রথমে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ করবেন তিনি। এরপর শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবেন।
শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত শেষে সেখান থেকে রাজধানীর শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যাবেন তারেক রহমান।
চিকিৎসাসহ অন্য প্রস্তুতি: ব্যাপক লোক সমাগমের ফলে যে কেউ অসুস্থ হতে পারেন বা সমস্যায় পড়বেন—এমনটি বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যাপ্ত খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ জানান, তারা এরই মধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কমিটি গঠন করে দায়িত্ব বণ্টন করেছেন। এর মধ্যে পুরো ঢাকাতেই থাকবে ২৫-৩০টি মোবাইল অ্যাম্বুলেন্স। সংবর্ধনা স্থানের দুই প্রান্তে এবং কাছাকাছি একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোট তিনটি মেডিকেল বুথ থাকবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোয় থাকবে মেডিকেল টিম।
বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ: রাজধানীতে কয়েক হাজার বোতল বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির সভাপতি বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু। তিনি বলেন, বহু বছর পর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। তার প্রত্যাবর্তন দিবসে ঢাকায় মানুষের ঢল নামবে। প্রচুর লোক সমাগমে যাতে মানুষ কষ্ট না পায়, সেই বিবেচনায় কয়েক হাজার পানির বোতল তিনি বিতরণ করবেন। এরই মধ্যে পানির বোতলে তারেক রহমানের ছবি যুক্ত করে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বরণ করতে প্রস্তুত বিএনপি: তারেক রহমানকে বরণ করে নিতে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় তৈরি করা হয়েছে বিশাল সংবর্ধনা মঞ্চ। মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ। ঢাকা জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে এই গণসমাবেশ ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রায় অর্ধকোটি মানুষের সমাগম ঘটানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩০০ ফিট এলাকাকে কেন্দ্র করে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে মাইক বসানো হয়েছে, যাতে আগত জনতা প্রিয় নেতার বক্তব্য শুনতে পারেন। ড্রোন ও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকা নজরদারিতে রাখা হচ্ছে এবং দলের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, তারেক রহমান শুধু একটি দলের নেতা নন, তিনি বর্তমান বাংলাদেশের তারুণ্যের প্রতীক। দীর্ঘ নির্বাসন জীবন কাটিয়ে তার এই ফিরে আসা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকে পূর্ণতা দেবে। আমরা শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সফল করতে চাই।
এদিকে, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে আসা বিশাল জনসমাগমকে কেন্দ্র করে যেন সাধারণ মানুষের জানমালের কোনো ক্ষতি না হয় এবং যানজট যেন অসহনীয় পর্যায়ে না পৌঁছায়, সেদিকেও নজর দিচ্ছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সুশৃঙ্খলভাবে চলাফিরা করতে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং জেলা প্রশাসনও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চালক আলমগীরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আদাবর থানা যুবলীগ কর্মী হিমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আদাবর এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হিমনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে।
তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. জুয়েল রানা এই গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে আদাবরের রাজ্জাক হোটেলে হিমন অবস্থান করছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটকের পর নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আদাবরের ১৭/বি এলাকায় জনৈক মেহেদীর বাসায় তল্লাশি চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরকের মজুত উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি ফয়সাল এবং মোটরসাইকেল চালক আলমগীরের সঙ্গে হিমনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। হিমন প্রায় দুই মাস আগে দুবাই থেকে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বা পরবর্তী কার্যক্রমে তার কী ধরনের ভূমিকা ছিল, তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। এডিসি জুয়েল রানা আরও জানান, হিমন ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে, যা মামলার রহস্য উদঘাটনে সহায়ক হবে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা অন্যান্য মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে এবং উদ্ধারকৃত অস্ত্রের উৎস নিশ্চিত করতে তাকে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মূলত ঘাতক চক্রের এই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে হাদি হত্যা মামলার তদন্তে নতুন গতির সঞ্চার হলো।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে পুনরায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় নিবন্ধন বাতিল করেছে, যার ফলে আইনিভাবেই দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার এবং অনড় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরার প্রসঙ্গটিও গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়। প্রেস সচিব বলেন, সরকার তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। তাঁর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিএনপির সাথে সরকারের নিয়মিত আলোচনা চলছে। দলটির পক্ষ থেকে যে ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে, প্রশাসন তা প্রদানে সম্পূর্ণ সচেষ্ট রয়েছে এবং পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্ত ও বিচার সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন শফিকুল আলম। ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে এই ঘটনায় জড়িত অন্তত ১২ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, এই মামলার বিচার কাজ দ্রুত বিচার আইনের আওতায় সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যার প্রমাণ পূর্ববর্তী ধর্মীয় উৎসবগুলোতে দেওয়া নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এ ছাড়াও, সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রেস সচিব জানান, ভিডিও এবং ভিজ্যুয়াল তথ্য বিশ্লেষণ করে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িত ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অনেকের কাছ থেকে অপরাধের সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে। মূলত যেকোনো ধরনের সহিংসতা দমনে এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে সরকার সব ধরনের গোয়েন্দা ও আইনি সক্ষমতা ব্যবহার করছে বলে তিনি ব্রিফিংয়ে আশ্বস্ত করেন। দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন বজায় রাখতে প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে বলে তাঁর বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে।