প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, জার্মানির মিউনিখে তার ফলপ্রসূ সফরের ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার বলিষ্ঠরূপে প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি আজ তাঁর মিউনিখ সফরের বিষয়ে রাজধানীর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন।
তাঁর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ নিচে দেয়া হলো:
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম। শুভ সকাল। গত ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ জার্মানির মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠিত ৬০তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করি। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন মূলতঃ রাষ্ট্র/সরকার প্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সরকারি এবং বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিগণের অংশগ্রহণ করেন। এটি সমকালীন ও ভবিষ্যত নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্চ-পর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার একটি শীর্ষস্থানীয় ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। এ বছরের ফোরামে ৩৫-জনেরও বেশী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অংশগ্রহণ করেছেন।
বড় শক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দিতা এবং আঞ্চলিক সংঘাত, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, নিউক্লিয়ার নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু নিরাপত্তা, তথ্য নিরাপত্তা, পানি নিরাপত্তা, অভিবাসন, সাপ্লাই চেইন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মহামারি ইত্যাদি বিষয়ে এবারের ফোরামে আলোচনা করা হয়।
সফরের প্রথম দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি আমি ‘ফ্রম পকেট টু প্লানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করি। এই আলোচনায় আমার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত মান্যবর জন কেরি, বারবাডোসের প্রধানমন্ত্রী মান্যবর মিয়া আমোর মটলে, এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মান্যবর মোসা জামির।
প্যানেলটিতে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে আমি বক্তব্য প্রদান করি। বক্তব্যের শুরুতেই আমি গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহ, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র মানুষের, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের, অমানবিক হত্যার কবল থেকে মুক্ত করে সকল প্রকার যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার জোর আহ্বান জানাই। আর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও বহুদূর পর্যন্ত অনুভূত হয়, এ বিষয়ে আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এ প্রসঙ্গে আমি অর্থহীন অস্ত্র-প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় রসদ ও অর্থায়ন সহজলভ্য ও কার্যকর করার জন্য সকলকে অনুরোধ করি। মানবতার অস্তিত্বের সংটকালে ক্ষুদ্র স্বার্থ যে শুধু অনর্থই বয়ে আনে - এই রূঢ় বাস্তবতা আমি সকলের সামনে তুলে ধরি। আর তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং তা মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানাই।
আমি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থায়নের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার জন্য বিশ্বের সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বহুবিধ নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্থ দেশ ও জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থায়নের পরিমাণ বৃদ্ধি, প্রতিশ্রুত অর্থের বাস্তবিক হস্তান্তর, ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিতকরার উপর আমি বিশেষভাবে জোর দেই। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবিলায় আমি ধনী দেশসমূহের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই।
এদিন আমার হোটেল স্যুইটে উইমেন পলিটিক্যাল লিডার্স (ডব্লিউপিএল)-এর সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা মিসেস সিলভানা খক্ মেহরিন আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান এবং গত দেড় দশকে বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য আমাকে ডব্লিউপিএল-জি ট্রাইলব্লাজের এওয়ার্ড ২০২৩ গ্রহণের জন্য তিনি আমাকে আগামী ২০ মার্চ ২০২৪ তারিখ এথেন্সে অনুষ্ঠিতব্য ডব্লিউপিএল সামিট-এ অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান। আলোচনায় আমি আমাদের সরকারের- বিশেষ করে নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত নীতিসমূহের বিষয়ে আলোকপাত করলে এ বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের বাংলাদেশের নীতি ও কার্যক্রমসমূহ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
একইদিন আমি কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মান্যবর মোহাম্মদ বিন্ আব্দুলরাহ্মান আল-সানি-র সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জ্ঞাপনের পাশাপাশি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনাকালে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এলএনজি সরবারহ প্রভৃতির পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও দ্রুত সমাধানে কাতারের অব্যাহত সমর্থনের ব্যাপারে তিনি আশ্বস্ত করেন। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধে একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও আমরা আলোচনা করি।
এরপর আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন নীতি ও অংশীদারিত্ব বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মান্যবর আক্সেল ভন ট্রটসেনবার্গ। বাংলাদেশে ও বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের অংশীদারিত্বের প্রেক্ষাপটে আমি মধ্যম আয়ের দেশভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অবদানের আলোকে বর্তমান অর্থবছরে বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংক হতে অঙ্গীকারকৃত ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দ্রুত ছাড়ের আহ্বান জানাই। পাশাপাশি আমি জোরপূর্বক স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে এবং এই সমস্যার বিরূপ প্রভাবে আক্রান্ত দেশ হিসেবে বাংলাদশকে প্রদত্ত ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়ন সহায়তার জন্যও তাকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয় ও উচ্চ-আয়ের দেশের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হবার কাঙ্ক্ষিত পথে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেন।
একই দিনে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক মান্যবর ডক্টর টেড্রস আধানম গেব্রিয়েসাস আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে-বিশেষ করে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি আসন্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশে আমাকে আমন্ত্রণ জানান এবং বিশ্বের বাকি দেশসমূহকে বাংলাদেশের কম্যুনিটি ক্লিনিক মডেল অনুসরণ করার বিষয়ে অনুপ্রাণিত করার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন।
আলোচনাকালে আমি বর্তমান সরকারের সেকেন্ডারি ও টার্শিয়ারি স্বাস্থ্যসেবা, টীকা উৎপাদন, এন্টি-মাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ, নার্সিং ও অন্যান্য স্বাস্থ্যখাতে মানব সম্পদ উন্নয়ন ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের কথা উল্লেখ করে এতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তা আশা করি। এ বিষয়ে মহাপরিচালক আমাকে আশ্বস্ত করেন এবং আন্তর্জাতিক অতিমারি চুক্তি-এর দ্রুত সমাপনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সমর্থন কামনা করেন।
এইদিন আমার সঙ্গে আরও সাক্ষাৎ করেন মেটা-জি গ্লোবাল এফেয়ার্স এর প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাজ্যের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী স্যার নিক্ ক্লেগ্। তিনিও আমাকে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশের ডিজিটাল খাতের উন্নয়ন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাণিজ্যের ক্ষেত্র সুবিস্তারে সরকারের ভূমিকার ভূয়সী প্রংসা করেন তিনি। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনে আমাদের সফলতা তুলে ধরি এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও তথ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে মেটা-এর সহযোগিতা আশা করি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে বিভিন্ন মেটা প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেইসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম প্রভৃতির ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ব্যবহারকারির সুউচ্চ সংখ্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি বাংলাদেশে মেটা-এর একটি কার্যালয় স্থাপনের পরামর্শ দিই।
প্রথম দিন আমি ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মান্যবর মেটে ফ্রেডরিক্সেন-এর সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। বৈঠককালে আমাকে ও আমাদের নবগঠিত সরকারকে উষ্ণ অভিনন্দন জানানোর জন্য তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আলোচনাকালে বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং আইসিটি খাতে ড্যানিশ কোম্পানিসমূহের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের পাশাপাশি তিনি বিরাজমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তাঁর সরকারের মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকার বিষয়েও আমাকে আশ্বস্ত করেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে নেদারল্যান্ডস্-এর প্রধানমন্ত্রী মান্যবর মার্ক রুটে আমার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠককালে নেদারল্যান্ডস্-এর প্রধানমন্ত্রী আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান। আলোচনাকালে আমরা দু’জনই বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতসমূহে জ্ঞান-প্রযুক্তি-উদ্ভাবন বিস্তারে বিদ্যমান সহযোগিতা আরও গভীরতর করার বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করি।
একইদিন সকালে আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী মান্যবর ডক্টর এস. জয়শংকর। তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান। সাক্ষাৎকালে আমরা উভয়ই দুই বন্ধু-রাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করি এবং দু’দেশের বাণিজ্য নিজস্ব মুদ্রায় পরিচালনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত পোষণ করি। তিনি আগামী এপ্রিল/মে মাসে ভারতীয় সাধারণ নির্বাচন পরবর্তীকালে দু’দেশের নতুন সরকারের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত পঞ্চ-বার্ষিক সহযোগিতা বিষয়ক রোডম্যাপ প্রণয়নের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনাকালে আমরা মায়ানমার ও মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বিষয়েও পারস্পরিক মতবিনিময় করি।
এরপর আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাইট অনারেবল্ লর্ড ক্যামেরন। সাক্ষাৎকালে তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রেরিত শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। এসময় আমরা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিমান চলাচল অংশীদারিত্ব, অভিবাসন, রোহিঙ্গা সমস্যা এবং ইউক্রেন ও গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ এবং মায়ানমার ও লোহিত সাগরে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করি।
একই দিনে আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন জার্মান আর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী মান্যবর সভেনিয়া শুলৎজা। আলোচনাকালে আমরা ইইউ-এর জিএসপি+ বাণিজ্য সুবিধাসহ পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে জার্মান বিনিয়োগ এবং সার্বিক জলবায়ু সহনশীলতা অর্জন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বর্ধিতকরণের বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করি।
এইদিন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি মান্যবর ভ্লাদিমীর জেলেন্স্কি আমার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠককালে আমরা বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করি এবং গম, ভোজ্যতেল ও অন্যান্য কৃষিপণ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করি। আমি তাঁকে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের দ্রুত সমাধানের কার্যকর উপায় অন্বেষণের অনুরোধ করি। এছাড়াও আমরা গাজা উপত্যকায় সংঘাতের বিষয়ে মতবিনিময় করি।
এরপর আমি আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি মান্যবর ইল্হাম আলিইয়্যেভ-এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। বৈঠককালে আমরা পরস্পর পরস্পরকে পঞ্চমবারের মতো পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানাই। আমরা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করি। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে নেতৃত্বদানের জন্য আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি আমাকে ধন্যবাদ দেন এবং এবছর নভেম্বরে বাকু-তে অনুষ্ঠিতব্য কপ২৯-এ যোগদানের জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানান। আলোচনাকালে আমরা উভয়ই জাতিসংঘ, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা প্রভৃতি বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করি।
এদিন আমি জার্মান চ্যান্সেলর মান্যবর ওলাফ শোলজ্-এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান। বৈঠককালে আমরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও হাইড্রোজেন প্রযুক্তি এবং দক্ষ অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করি। এছাড়াও, আমরা ইউক্রেন ও গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের প্রসঙ্গে মতবিনিময় করি এবং এসকল সংঘাত দ্রুত অবসানের বিষয়ে কার্যকর উপায় অন্বেষণের জন্য আমি তাঁকে অনুরোধ করি।
এছাড়া ১৬ ফেব্রুয়ারি আমি জার্মান আওয়ামী লীগ আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনা সভায় যোগদান করি এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি আমি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করি।
মিউনিখে আমার এই ফলপ্রসূ সফরের ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার বলিষ্ঠরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের আকার নয় বরং নীতির শক্তিতেই যে মানবতার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক মুক্তি, এবারের সম্মেলনে আমি এই বার্তাই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছি। পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসমূহের মাধ্যমে বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সাথে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আরও দৃঢ় হয়েছে এবং সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে ৫০ দিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেছেন। সোমবার (১৪ জুলাই) তিনি এ কথা জানান। অন্যথায় মস্কোকে ব্যাপক নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। ন্যাটোর মাধ্যমে কিয়েভে নতুন অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনাও তুলে ধরেন তিনি।
ট্রাম্প জানান, তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর ‘খুব, খুব অসন্তুষ্ট’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রুশ নেতা মারাত্মক এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে অস্বীকৃতি জানানোয়ে অবশেষে তার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে। ৫০ দিনের মধ্যে যদি কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে আমরা খুব কঠোর শুল্ক আরোপ করব, প্রায় ১০০ শতাংশ শুল্ক। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে ওভাল অফিসে বৈঠকের সময় ট্রাম্প এসব কথা বলেন।
এই রিপাবলিকান নেতা আরও বলেন, এগুলো হবে ‘দ্বিতীয় শুল্ক’ যা রাশিয়ার অবশিষ্ট বাণিজ্য অংশীদারদের লক্ষ্য করে করা হবে। এরই মধ্যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় মস্কোর টিকে থাকার ক্ষমতাকে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাশিয়ান ফেডারেল কাস্টমস সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর রাশিয়ার শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল চীন, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৪ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ভারত, তুরস্ক এবং বেলারুশ।
ট্রাম্প এবং রুট নতুন একটি চুক্তিও উন্মোচন করেছেন যার অধীনে ন্যাটো সামরিক জোট যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনবে। এর মধ্যে প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি-ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারিও থাকবে এবং এগুলি ইউক্রেনে পাঠানো হবে।
রুট বলেন, এটা সত্যিই বড়। তিনি ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের অভিযোগ নিরসনের লক্ষ্যে একটি চুক্তির কথা তুলে ধরেন। ট্রাম্প অনেকদিন ধরেই দাবি করে আসছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য ইউরোপীয় এবং ন্যাটো মিত্রদের চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করছে।
এই ন্যাটো প্রধান বলেন, জার্মানি, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন এবং ব্রিটেনও ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি যদি আজ ভ্লাদিমির পুতিনের জায়গায় থাকতাম এবং আপনার কথা শুনতে পেতাম... তাহলে আমি পুনর্বিবেচনা করতাম যে ইউক্রেন সম্পর্কে আলোচনা আরও গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ঘোষণা করেন যে, তিনি ট্রাম্পের সাথে কথা বলেছেন এবং অস্ত্র চুক্তির জন্য ‘কৃতজ্ঞ’।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের কারও সঙ্গে আঁতাতের গন্ধ পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘নিষিদ্ধ সংগঠনের যারা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে, তা নাহলে জুলাই শহীদদের প্রতি অবমাননা করা হবে।’
ফরিদপুর জেলা পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক আজ মঙ্গলবার এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি ফরিদপুরের সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের কোনো ছাড় না দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
ডিআইজি বলেন, কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। এমনকি দুর্নীতি করলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি কোনো অপরাধ পরিলক্ষিত হয় তাহলে পুলিশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো রকম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবেন। কোনো সেবাগ্রহীতা যেন থানায় এসে ভোগান্তির শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। মানুষের জানমাল রক্ষার্থে পুলিশের যা করণীয় তা করতে হবে। আমি শুনতে চাই না, কোনো সেবাগ্রহীতা থানায় এসে হয়রানির শিকার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলার যাতে কোনো অবনতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
সভাশেষে জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্বজনদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক। পরে ফিতা কেটে জেলা পুলিশের মাল্টিপারপাস হলের উদ্বোধন করেন তিনি।
এ সময় পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আজম, আজমির হোসেন এবং সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ও অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে সপ্তাহব্যাপী প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মো. আবদুল জলিল।
এ কর্মসূচির আওতায় ফিল্ম আর্কাইভের প্রজেকশন হলে ১৫ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
সপ্তাহব্যাপী এই প্রদর্শনীর প্রথম দিনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় নির্মিত ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই) প্রযোজিত ‘সময়ের বীর শহিদ তানভীর’ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ নির্মিত ‘দ্য মনসুন রেভুলেশন’ প্রদর্শিত হয়।
প্রদর্শনীতে গ্লোবাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০০ জন উপস্থিত ছিলেন।
প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মো. আবদুল জলিল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্রিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
বন্দুক, শটগান, রাইফেলসহ সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ফি প্রায় দ্বিগুণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১০ জুলাই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার সংক্রান্ত নতুন নীতিমালায় ফি বাড়ানোর কথা বলা হয়। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নতুন নীতিমালা জারি করা হয়।
২০১৬ সালের নীতিমালা অনুযায়ী পিস্তল, রিভলবার, রাইফেলের লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার আয়কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। বর্তমানে সেটি বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে লাইসেন্সের পিস্তল বা রিভলভার ফি ছিল ৩০ হাজার টাকা, এখন তা দ্বিগুণ করে ৬০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
বন্দুক, শটগান, রাইফেলের ফি ছিল ২০ হাজার টাকা, এখন তা দ্বিগুণ করে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার টাকায়। লাইসেন্সের নবায়ন ফির ক্ষেত্রে পিস্তল বা রিভলভারের ছিল ১০ হাজার টাকা এখন দিতে হবে ২০ হাজার টাকা করে। বন্দুক, শটগান, রাইফেলের ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া ৫ হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
এছাড়া সব ধরনের অস্ত্রের লাইসেন্স লাইসেন্স স্থগিত করে তা জমা দেওয়া নির্দেশ দেওয়া হলেও কয়েক হাজার অস্ত্র জমা পড়েনি। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের সময় থানায় অগ্নি সংযোগ লুটপাটের ঘটনায় অনেকের জমা দেওয়া বৈধ অস্ত্রও লুট অথবা ধ্বংস হয়ে যায়।
বাংলাদেশের জাহাজ শিল্পসহ বন্দর অবকাঠামো উন্নয়নে সিঙ্গাপুরকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত সিঙ্গাপুরের ভারপ্রাপ্ত পরিবহন মন্ত্রী জেফ্রি সিওর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ আহ্বান জানান বলে ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সাক্ষাৎকালে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের জাহাজ শিল্প খাতে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে এবং সকল প্রক্রিয়া এখন স্বচ্ছতার সঙ্গে উন্মুক্ত মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের সম্ভাবনাময় জাহাজ শিল্প খাতসহ বন্দর অবকাঠামো উন্নয়নে সিঙ্গাপুর বিনিয়োগ করতে পারে।’
বৈঠকে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে সিঙ্গাপুরের পরিবহন মন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা বিনিময় ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় সিঙ্গাপুরের সহায়তা কামনা করেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় সিঙ্গাপুরের চমৎকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দর, বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে শিপইয়ার্ড নির্মাণ, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়নসহ গুরুত্বপূর্ণ বন্দরসমূহের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে পারে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মেগা সম্প্রসারণ প্রকল্প বে টার্মিনাল নির্মাণে বাংলাদেশকে ৬৫০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৬৫ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই টার্মিনালটি নির্মিত হলে বাংলাদেশের বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। বন্দরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে অনেকাংশে কমে আসবে আমদানি ও রপ্তানি ব্যয়। উপদেষ্টা বে-টার্মিনালের কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে পিএসএ সিঙ্গাপুরের সঙ্গে আসন্ন অক্টোবর মাসের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর বা বাংলাদেশের উপর্যুক্ত যে কোনো স্থানে একটি আন্তর্জাতিক মানের শিপইয়ার্ড/ডকইয়ার্ড নির্মাণে সিঙ্গাপুর সরকারকে অনুরোধ জানান। সিঙ্গাপুরের পরিবহন মন্ত্রী এ বিষয়ে উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেন।
বাংলাদেশের মেরিন একাডেমিগুলো থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ ও মেধাবী মেরিনারদের সিঙ্গাপুরে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়ার জন্য উপদেষ্টা সিঙ্গাপুর সরকারকে অনুরোধ করেন। এছাড়া বাংলাদেশি নাবিকদের জন্য সিঙ্গাপুর সরকার কর্তৃক ট্রানজিট ভিসা প্রদানের আহ্বান জানান। সিঙ্গাপুরের পরিবহন মন্ত্রী বাংলাদেশি নাবিকদের জন্য দ্রুতই ট্রানজিট বা ওয়ার্কিং ভিসা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
বাংলাদেশ ২০২৬-২৭ মেয়াদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) কাউন্সিলের ক্যাটাগরি ‘সি’-এর সদস্য হিসেবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা। বৈঠকে উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে। তিনি বলেন- স্বল্প সময়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে তীর সংরক্ষণের কাজ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন তিস্তা নদীর চলমান তীররক্ষা বাঁধ পরিদর্শনের সময় এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন- তিস্তা নদীর স্থায়ী বাঁধের দাবি যৌক্তিক, তবে তা বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় ও পরিকল্পনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তিস্তার সর্বোচ্চ ভাঙনপ্রবণ ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় ইতোমধ্যে ১৯ কিলোমিটার তীররক্ষা বাঁধের কাজ চলছে এবং বাকি ২৬ কিলোমিটারের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে- এই অংশের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের মানুষের অধিকার। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই চুক্তির লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।
তিনি জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে পাঁচটি গণশুনানি সম্পন্ন হয়েছে, যাতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরাও অংশগ্রহণ করেছেন। এসব মতামত ও সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহে পাঠিয়েছে এবং সবার মতামতের ভিত্তিতেই পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করা হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. এনায়েত উল্লাহ, রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবর রহমান, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান, রংপুর অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. সুবেদার ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নুর আলম, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে উপদেষ্টা রাজারহাট উপজেলার গতিয়াসাম ক্লিনিক সংলগ্ন তিস্তার বাঁধ এবং রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার পাঞ্জরভাঙ্গা রেলসেতুর উজানে ডান তীররক্ষা বাঁধের চলমান কাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।
তিতাস গ্যাস কর্তৃক গ্যাসের অবৈধ ব্যবহার শনাক্তকরণ এবং উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৪ জুলাই (সোমবার) ২০২৫ তারিখে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব হাছিবুর রহমান, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ -এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ -রুপগঞ্জ -এর আওতাধীন আতলাসপুর, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এলাকার ২টি স্পটে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে আনুমানিক ১.৫ কিলোমিটার বিতরণ লাইনের আনুমানিক ৫৫০ টি বাড়ির ১,০০০ টি আবাসিক ডাবল চুলার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময় ২" ব্যাসের আনুমানিক ৮০ ফুট লাইন পাইপ অপসারণ/জব্দ করা হয়েছে।
একই দিনে, বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মুনিজা খাতুন এর নেতৃত্বে তিতাস গ্যাস টি এন্ড ডি পিএলসি -এর আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগ -সাভার, জোবিঅ-সাভার -এর আওতাধীন বলিয়ারপুর, হেমায়েতপুর, ঋষিপাড়া, বাগবাড়ী, তেঁতুলঝোড়া, সাভার এলাকার ৩টি পয়েন্টে অবৈধ গ্যাস লাইনের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে কে এস ফ্যাশন এন্ড ওয়াশিং প্ল্যান্ট, মেসার্স লেটেস্ট ওয়াশিং প্ল্যান্ট ও মিটারবিহীন আবাসিক সংযোগ (গ্রাহকের নাম: রেজাউল ইসলাম, গ্রাহক সংকেত নং: ১৩৮-৪৩০৫৫) হতে মেসার্স এ ওয়ান ডিজাইন নামক ওয়াশিং নামক ০৩ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারের কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন ব্যাসের ৪৮০ ফুট লাইন পাইপ অপসারণ/জব্দ করা হয়েছে। এতে মাসিক ২০,৭০,৭৬৯/- গ্যাস চুরি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এ সময় উক্ত ০৩ টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে মোট ৪,০০,০০০/- (চার লক্ষ ) টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর জোবিঅ -টাঙ্গাইল -এর বিশেষ অভিযানে আকুর টাকুর পাড়া ও বিশ্বাস বেতকা, টাঙ্গাইল এলাকার অতিরিক্ত চুলা ব্যবহারের কারণে ১১ টি রাইজারের ৩১টি ডাবল চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সংস্কারে ভূমিকা রাখায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে 'জাতীয় সংস্কারক' ঘোষণা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গতকাল সোমবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করেছেন।
এর প্রেক্ষিতে সরকার আজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অধ্যাপক ইউনূস নিজে এমনভাবে ঘোষিত হতে ইচ্ছুক নন এবং সরকারও তাঁকে এ ধরনের কোনো উপাধি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে না।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে 'জাতীয় সংস্কারক' ঘোষণা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট থেকে যে রুল জারি করা হয়েছে, সেটি সরকারের নজরে এসেছে এবং আদেশের অনুলিপি পাওয়ার পর সরকার যথাসময়ে এই রুলের জবাব দেবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার স্পষ্ট করতে চায় যে, অধ্যাপক ইউনূস নিজে এমনভাবে ঘোষিত হতে ইচ্ছুক নন এবং সরকারও তাঁকে এ ধরনের কোনো উপাধি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে না। আবেদনকারী নিজ উদ্যোগে এই রিটটি দায়ের করেছেন বলে মনে হয় এবং কীসের ভিত্তিতে এই নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে-তা পরিষ্কার নয়। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা যুবদলের আওতাধীন টবগী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম মজনু কে জড়িয়ে একটি শালিশ কে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে টবগী ইউনিয়ন যুবদল।
সংবাদ সম্মেলনে দাবী করা হয় গত ৮ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যে প্রনোদিতভাবে বিএনপি ও যুবদলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে একটি মহল ওই ভিডিওটি প্রকাশ করে। ওই ভিডিওটি টবগী ইউনিয়ন যুবদলের নজরে আসলে অভিযোগকারী মনিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। মনিরকে না পেয়ে টবগী যুবদলের পক্ষ থেকে ভিডিওর সত্যতা জানতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ওই ভিডিওর অভিযোগের বিষয়ে কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি।
আজ মঙ্গলবার ( ১৫ জুলাই ) দুপুর ১টায় টবগী ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিনিয়র সহ সভাপতি খোকন হাওলাদার।
এসময় তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান , বিএনপি ও টবগী ইউনিয়ন যুবদলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তারা টবগী ইউনিয়ন বিএনপির কর্মকান্ডে ঈর্শান্বিত হয়ে যুবদলের সভাপতিকে টার্গেট করেছে।
তিনি জানান, অভিযোগকারী মনির ও তার পরিবারের সদস্যরা টবগী ইউনিয়নের ভোটার নয়। তারা ৫ই আগষ্টের পূর্বে চট্টগ্রামে ছিলো ওখানে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে গা ঢাকা দিতে এখন এইখানে এসে আত্নগোপন করেছে। মনির নেশাগ্রস্ত ও বখাটে প্রকৃতির। মনির ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক খারাপ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে একটি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করতে মনিরের বাড়িতে পুলিশ এসে তাকে আটক করতে গেলে তার পরিবারের সদস্যরা ওই সময়ের ভিডিও ধারন করে রাখে। ওই ভিডিওটি চালিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যুবদল সভাপতি মঞ্জু বয়াতী তার উপর হামলা করেছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ওই ভিডিওতে পুলিশ সদস্যদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যা ভিডিওটি দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন।
তিনি আরো জানান, রুহুল আমিন নামে জনৈক ব্যক্তি বিদেশে বসে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে মিথ্যা ভিডিও ছড়াচ্ছে। ওই ভিডিওটি সহকারী এ্যার্টনী জেনারেল এবি এম ইব্রাহিম খলিল রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অসিন থেকে তথ্যের যাচাই বাছাই না করে পুলিশের গ্রেফতারের সময়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে যুবদল সভাপতিকে অভিযুক্ত করে। যা অতি দুঃখজনক। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এমন আচরনে আমরা মর্মামহ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
আমাদের দলের কেউ কোনো অপকর্মের সাথে জড়িত থাকলে আমরা দলীয়ভাবে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনছি। ইনশাআল্লাহ্ ভবিষ্যতে আমাদের এই পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।
যেসব বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে, স্বল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তাদের দায়দায়িত্ব অনুভব করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের চতুর্দশ দিনের আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় কিছু বিষয়ে একমত হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায়ও কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এখনো যেসব বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে তা নিয়ে স্বল্পতর সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কমিশন কোনো আলাদা সত্ত্বা নয়, এটি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচেষ্টার অংশীদার। তাই, আমরা যদি ব্যর্থ হই, এই ব্যর্থতা কমিশনের একার নয়, আমাদের সকলের। কাজেই ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় আমাদের সফল হতে হবে। এই সাফল্যের মাপকাঠি হচ্ছে একটা কাঠামোগত সংস্কারে আমরা কতটুকু একমত হতে পারছি তার ওপর।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।
দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১৫ জুলাই) বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান সম্পর্কে এবং কোন স্কুলগুলো ভালো করছে, সে ব্যাপারে মূল্যায়ন জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা।
এ সময় উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষাখাতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে। কিন্তু মূল যে উদ্দেশ্য—শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সেটি সাধন হয়নি। আমরা মূল্যায়ন করে স্কুলগুলোকে র্যাংকিং করছি। যেসব স্কুলের বাচ্চারা পিছিয়ে আছে, তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিচ্ছি।’
শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, মূল্যায়নে দেখা গেছে, যেসব স্কুলের মান ভালো সেখানে প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতা ও তার সঙ্গে অন্য সহকর্মীদের সম্পর্ক, ব্যবহার ইত্যাদি বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। দেশের ৩২ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ বর্তমানে শূন্য রয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান বলেও প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন তিনি।
এ সময় প্রধান শিক্ষক পদে পদায়নের পাশাপাশি নতুন নিয়োগের বিষয়েও নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কীভাবে যোগ্যদের নিয়ে আসা যায়, সে বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। কয়েকটা ক্যাটাগরি করে দিতে হবে। যারা বহু বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন, অভিজ্ঞ, তারা প্রাধান্য পাবেন। এর পাশাপাশি তরুণদেরও প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুযোগ দিতে হবে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে।’
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সঙ্গে সমন্বয় করে অতিদ্রুত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্নের নির্দেশ দেন অধ্যাপক ইউনূস। এর পাশাপাশি শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রেও নীতিমালায় পরিবর্তন আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় এক উপজেলায় নিয়োগ পেয়ে পরে অন্য উপজেলায়, শহরের কাছে কোনো স্কুলে শিক্ষকরা বদলির জন্য চেষ্টা করেন, তারা সুপারিশ-তদবির নিয়ে বিভিন্ন মহলে ঘোরেন। এ ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা ও প্রক্রিয়া থাকতে হবে। কেবল ওই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তিনি বদলি হতে পারবেন।’
স্কুলগুলোতে মেয়েদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, স্কুলের অবকাঠামো নারীবান্ধব কিনা—এসব বিষয়েও জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘স্কুলের ভবন নির্মাণের সময় কমিটিতে অন্তত একজন নারী স্থপতি রাখতে হবে যাতে নারীবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ হয়। পরিকল্পনায়, চিন্তায় ও বাস্তবায়নে মেয়েদের বিষয়ে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে হবে, সব ব্যবস্থা রাখতে হবে।’
এ ছাড়া দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে ইন্টারনেট সংযোগ ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ তৈরির বিষয়েও জোর দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
'নোটস্ অন জুলাই' পোস্টকার্ডের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিকথা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এ কার্যক্রমের আওতায় সোমবার (১৪ জুলাই) কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ৭০০ জনের স্মৃতিকথা সংগ্রহ করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থা এবং জেলা তথ্য অফিসসমূহের মাধ্যমে আগামী ৫ই আগস্ট পর্যন্ত 'নোটস্ অন জুলাই' পোস্টকার্ডের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিকথা সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই পোস্টকার্ডে জুলাই গণঅভ্যুত্থান-সম্পর্কিত স্মৃতি ও মতামত প্রদান করতে পারবেন।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সদ্য নিযুক্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
একইসঙ্গে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত আর্থিক খাতের সংস্কারমূলক কর্মসূচির জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করেন।
গতকাল সোমবার রাতে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন। এসময় জুট এসব কথা বলেন।
সাক্ষাৎকালে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভূটানের জন্য নিযুক্ত ডিরেক্টর জ্যাঁ পেসমে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময়ে জুট বাংলাদেশের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার কথা জানান এবং ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভূটান ও নেপালে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে তাঁর পূর্ববর্তী দায়িত্বকালের কথা স্মরণ করেন।
অধ্যাপক ইউনূসের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনি এবং আপনার দুর্দান্ত টিম চমৎকার কাজ করছে, তার জন্য ধন্যবাদ জানাই।’
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আর্থিক খাতে কিছু চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে জুট বলেন, ‘আমরা আমাদের যাত্রা চালিয়ে যেতে এবং বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।’
তিনি গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ হারানো শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের জন্য এটি এক আবেগময় মুহূর্ত ছিল।’
প্রধান উপদেষ্টা জুটের সমর্থন ও প্রশংসার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন দেশ ধ্বংসস্তূপের মত ছিল, যেন তা ভূমিকম্প পরবর্তী ভয়াবহ পরিস্থিতি। আমাদের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। তবুও সকল উন্নয়ন সহযোগী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এটা আমাদের অনেক সহায়তা করেছে, আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।’
অধ্যাপক ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, ‘তারা জাতিকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত জুলাইয়ে আমাদের তরুণরা যা করেছে, তা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা ও নারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। আমরা আজ জুলাই নারী দিবস পালন করছি। তাদের ত্যাগ যেন বৃথা না যায়। তরুণরাই আমাদের দেশের কেন্দ্রবিন্দু। আমাদেরকে তাদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বব্যাংককে আহ্বান জানান, বাংলাদেশকে যেন তারা শুধুমাত্র ‘একটি ভৌগোলিক সীমানা’ হিসেবে না দেখে বৃহত্তর অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হলে গোটা দক্ষিণ এশিয়া সমৃদ্ধ হবে। আমরা যদি নিজেদের আলাদা করি, তাহলে উন্নয়ন হবে না। আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুবিধা ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। আমাদের একটি সমুদ্র আছে, যা আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দেশেই তরুণদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তাই আমরা তাদের বলেছি—তাদের কারখানাগুলো এখানে নিয়ে আসুক। আমরা শিল্পখাতে প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করবো, যেন বাংলাদেশ একটি উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে ওঠে।’
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নারীর ক্ষমতায়নে অধ্যাপক ইউনূসের কাজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাকে সমর্থন দিয়ে যাব। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশে মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প চালু হয়েছিল, যা পরবর্তীতে অন্যান্য দেশেও অনুসরণ করা হয়েছে।’
জুট জানান, ‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে তরুণদের জন্য সুযোগ তৈরিতে সহায়তা করবে।’
তিনি উল্লেখ করেন, গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে এবং আগামী তিন বছরেও একই ধরনের সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
তিনি চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) সর্বশেষ তথ্য জানান।
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, এনসিটির নতুন পরিচালন ব্যবস্থার ফলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা একে আরও কার্যকর করা। আমরা ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে নিট বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছি, যা ইন্ট্রা-কোম্পানি ঋণ এবং শক্তিশালী ইকুইটি বিনিয়োগের মাধ্যমে হয়েছে।’