শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
১১ পৌষ ১৪৩২

মিউনিখ সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

ছবি: ফোকাস বাংলা
আপডেটেড
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১১:৫৭
বাসস
প্রকাশিত
বাসস
প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১১:৫৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, জার্মানির মিউনিখে তার ফলপ্রসূ সফরের ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার বলিষ্ঠরূপে প্রতিফলিত হয়েছে।

তিনি আজ তাঁর মিউনিখ সফরের বিষয়ে রাজধানীর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন।

তাঁর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ নিচে দেয়া হলো:

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,

আসসালামু আলাইকুম। শুভ সকাল। গত ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ জার্মানির মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠিত ৬০তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করি। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন মূলতঃ রাষ্ট্র/সরকার প্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সরকারি এবং বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিগণের অংশগ্রহণ করেন। এটি সমকালীন ও ভবিষ্যত নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্চ-পর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার একটি শীর্ষস্থানীয় ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। এ বছরের ফোরামে ৩৫-জনেরও বেশী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অংশগ্রহণ করেছেন।

বড় শক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দিতা এবং আঞ্চলিক সংঘাত, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, নিউক্লিয়ার নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু নিরাপত্তা, তথ্য নিরাপত্তা, পানি নিরাপত্তা, অভিবাসন, সাপ্লাই চেইন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মহামারি ইত্যাদি বিষয়ে এবারের ফোরামে আলোচনা করা হয়।

সফরের প্রথম দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি আমি ‘ফ্রম পকেট টু প্লানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স’ সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করি। এই আলোচনায় আমার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত মান্যবর জন কেরি, বারবাডোসের প্রধানমন্ত্রী মান্যবর মিয়া আমোর মটলে, এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মান্যবর মোসা জামির।

প্যানেলটিতে উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে আমি বক্তব্য প্রদান করি। বক্তব্যের শুরুতেই আমি গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহ, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র মানুষের, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের, অমানবিক হত্যার কবল থেকে মুক্ত করে সকল প্রকার যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করার জোর আহ্বান জানাই। আর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকেও বহুদূর পর্যন্ত অনুভূত হয়, এ বিষয়ে আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এ প্রসঙ্গে আমি অর্থহীন অস্ত্র-প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় রসদ ও অর্থায়ন সহজলভ্য ও কার্যকর করার জন্য সকলকে অনুরোধ করি। মানবতার অস্তিত্বের সংটকালে ক্ষুদ্র স্বার্থ যে শুধু অনর্থই বয়ে আনে - এই রূঢ় বাস্তবতা আমি সকলের সামনে তুলে ধরি। আর তাই, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং তা মোকাবিলায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানাই।

আমি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় অর্থায়নের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার জন্য বিশ্বের সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বহুবিধ নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্থ দেশ ও জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থায়নের পরিমাণ বৃদ্ধি, প্রতিশ্রুত অর্থের বাস্তবিক হস্তান্তর, ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিতকরার উপর আমি বিশেষভাবে জোর দেই। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবিলায় আমি ধনী দেশসমূহের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে পারস্পরিক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই।

এদিন আমার হোটেল স্যুইটে উইমেন পলিটিক্যাল লিডার্স (ডব্লিউপিএল)-এর সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা মিসেস সিলভানা খক্ মেহরিন আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান এবং গত দেড় দশকে বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য আমাকে ডব্লিউপিএল-জি ট্রাইলব্লাজের এওয়ার্ড ২০২৩ গ্রহণের জন্য তিনি আমাকে আগামী ২০ মার্চ ২০২৪ তারিখ এথেন্সে অনুষ্ঠিতব্য ডব্লিউপিএল সামিট-এ অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান। আলোচনায় আমি আমাদের সরকারের- বিশেষ করে নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত নীতিসমূহের বিষয়ে আলোকপাত করলে এ বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের বাংলাদেশের নীতি ও কার্যক্রমসমূহ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

একইদিন আমি কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মান্যবর মোহাম্মদ বিন্ আব্দুলরাহ্মান আল-সানি-র সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জ্ঞাপনের পাশাপাশি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনাকালে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এলএনজি সরবারহ প্রভৃতির পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও দ্রুত সমাধানে কাতারের অব্যাহত সমর্থনের ব্যাপারে তিনি আশ্বস্ত করেন। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সহিংসতা বন্ধে একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও আমরা আলোচনা করি।

এরপর আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন নীতি ও অংশীদারিত্ব বিষয়ক জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মান্যবর আক্সেল ভন ট্রটসেনবার্গ। বাংলাদেশে ও বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের অংশীদারিত্বের প্রেক্ষাপটে আমি মধ্যম আয়ের দেশভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অবদানের আলোকে বর্তমান অর্থবছরে বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংক হতে অঙ্গীকারকৃত ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দ্রুত ছাড়ের আহ্বান জানাই। পাশাপাশি আমি জোরপূর্বক স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে এবং এই সমস্যার বিরূপ প্রভাবে আক্রান্ত দেশ হিসেবে বাংলাদশকে প্রদত্ত ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়ন সহায়তার জন্যও তাকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয় ও উচ্চ-আয়ের দেশের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হবার কাঙ্ক্ষিত পথে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেন।

একই দিনে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক মান্যবর ডক্টর টেড্রস আধানম গেব্রিয়েসাস আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে-বিশেষ করে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি আসন্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশে আমাকে আমন্ত্রণ জানান এবং বিশ্বের বাকি দেশসমূহকে বাংলাদেশের কম্যুনিটি ক্লিনিক মডেল অনুসরণ করার বিষয়ে অনুপ্রাণিত করার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন।

আলোচনাকালে আমি বর্তমান সরকারের সেকেন্ডারি ও টার্শিয়ারি স্বাস্থ্যসেবা, টীকা উৎপাদন, এন্টি-মাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ, নার্সিং ও অন্যান্য স্বাস্থ্যখাতে মানব সম্পদ উন্নয়ন ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের কথা উল্লেখ করে এতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তা আশা করি। এ বিষয়ে মহাপরিচালক আমাকে আশ্বস্ত করেন এবং আন্তর্জাতিক অতিমারি চুক্তি-এর দ্রুত সমাপনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সমর্থন কামনা করেন।

এইদিন আমার সঙ্গে আরও সাক্ষাৎ করেন মেটা-জি গ্লোবাল এফেয়ার্স এর প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাজ্যের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী স্যার নিক্ ক্লেগ্। তিনিও আমাকে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশের ডিজিটাল খাতের উন্নয়ন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাণিজ্যের ক্ষেত্র সুবিস্তারে সরকারের ভূমিকার ভূয়সী প্রংসা করেন তিনি। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনে আমাদের সফলতা তুলে ধরি এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও তথ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে মেটা-এর সহযোগিতা আশা করি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে বিভিন্ন মেটা প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেইসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম প্রভৃতির ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ব্যবহারকারির সুউচ্চ সংখ্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি বাংলাদেশে মেটা-এর একটি কার্যালয় স্থাপনের পরামর্শ দিই।

প্রথম দিন আমি ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মান্যবর মেটে ফ্রেডরিক্সেন-এর সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। বৈঠককালে আমাকে ও আমাদের নবগঠিত সরকারকে উষ্ণ অভিনন্দন জানানোর জন্য তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আলোচনাকালে বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং আইসিটি খাতে ড্যানিশ কোম্পানিসমূহের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের পাশাপাশি তিনি বিরাজমান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তাঁর সরকারের মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকার বিষয়েও আমাকে আশ্বস্ত করেন।

সফরের দ্বিতীয় দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে নেদারল্যান্ডস্-এর প্রধানমন্ত্রী মান্যবর মার্ক রুটে আমার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠককালে নেদারল্যান্ডস্-এর প্রধানমন্ত্রী আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান। আলোচনাকালে আমরা দু’জনই বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতসমূহে জ্ঞান-প্রযুক্তি-উদ্ভাবন বিস্তারে বিদ্যমান সহযোগিতা আরও গভীরতর করার বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করি।

একইদিন সকালে আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী মান্যবর ডক্টর এস. জয়শংকর। তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান। সাক্ষাৎকালে আমরা উভয়ই দুই বন্ধু-রাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করি এবং দু’দেশের বাণিজ্য নিজস্ব মুদ্রায় পরিচালনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত পোষণ করি। তিনি আগামী এপ্রিল/মে মাসে ভারতীয় সাধারণ নির্বাচন পরবর্তীকালে দু’দেশের নতুন সরকারের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত পঞ্চ-বার্ষিক সহযোগিতা বিষয়ক রোডম্যাপ প্রণয়নের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনাকালে আমরা মায়ানমার ও মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বিষয়েও পারস্পরিক মতবিনিময় করি।

এরপর আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাইট অনারেবল্ লর্ড ক্যামেরন। সাক্ষাৎকালে তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রেরিত শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। এসময় আমরা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিমান চলাচল অংশীদারিত্ব, অভিবাসন, রোহিঙ্গা সমস্যা এবং ইউক্রেন ও গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ এবং মায়ানমার ও লোহিত সাগরে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করি।

একই দিনে আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন জার্মান আর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী মান্যবর সভেনিয়া শুলৎজা। আলোচনাকালে আমরা ইইউ-এর জিএসপি+ বাণিজ্য সুবিধাসহ পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে জার্মান বিনিয়োগ এবং সার্বিক জলবায়ু সহনশীলতা অর্জন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বর্ধিতকরণের বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করি।

এইদিন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি মান্যবর ভ্লাদিমীর জেলেন্স্কি আমার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠককালে আমরা বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করি এবং গম, ভোজ্যতেল ও অন্যান্য কৃষিপণ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করি। আমি তাঁকে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের দ্রুত সমাধানের কার্যকর উপায় অন্বেষণের অনুরোধ করি। এছাড়াও আমরা গাজা উপত্যকায় সংঘাতের বিষয়ে মতবিনিময় করি।

এরপর আমি আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি মান্যবর ইল্হাম আলিইয়্যেভ-এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। বৈঠককালে আমরা পরস্পর পরস্পরকে পঞ্চমবারের মতো পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানাই। আমরা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করি। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে নেতৃত্বদানের জন্য আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি আমাকে ধন্যবাদ দেন এবং এবছর নভেম্বরে বাকু-তে অনুষ্ঠিতব্য কপ২৯-এ যোগদানের জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানান। আলোচনাকালে আমরা উভয়ই জাতিসংঘ, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা প্রভৃতি বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করি।

এদিন আমি জার্মান চ্যান্সেলর মান্যবর ওলাফ শোলজ্-এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করি। তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান। বৈঠককালে আমরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও হাইড্রোজেন প্রযুক্তি এবং দক্ষ অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করি। এছাড়াও, আমরা ইউক্রেন ও গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের প্রসঙ্গে মতবিনিময় করি এবং এসকল সংঘাত দ্রুত অবসানের বিষয়ে কার্যকর উপায় অন্বেষণের জন্য আমি তাঁকে অনুরোধ করি।

এছাড়া ১৬ ফেব্রুয়ারি আমি জার্মান আওয়ামী লীগ আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনা সভায় যোগদান করি এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি আমি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করি।

মিউনিখে আমার এই ফলপ্রসূ সফরের ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার বলিষ্ঠরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের আকার নয় বরং নীতির শক্তিতেই যে মানবতার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক মুক্তি, এবারের সম্মেলনে আমি এই বার্তাই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছি। পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসমূহের মাধ্যমে বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সাথে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আরও দৃঢ় হয়েছে এবং সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে।

আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”


মাকে দেখতে এভারকেয়ারে তারেক রহমান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

মা’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ৫৭ মিনিটের দিকে তিনি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পৌঁছান এবং ভেতরে প্রবেশ করেন।

এর আগে, এদিন বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর পূর্বাচলে আয়োজিত এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন তারেক রহমান। সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যে তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

তারেক রহমান বলেন, "যেকোনো মূল্যে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। আমরা শান্তি চাই। সবাইকে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং কারও উস্কানিতে পা দেওয়া যাবে না।"

দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, "আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই, আমার একটি পরিকল্পনা (আই হ্যাভ প্ল্যান) আমি সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই।"

পূর্বাচলের সমাবেশ শেষ করেই তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন এবং সেখানে চিকিৎসাধীন মা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।


বড়দিন উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা বিনিময়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’ উপলক্ষে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বঙ্গভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বঙ্গভবনের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্বের সকল মানুষকে বড়দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। যিশু খ্রিস্টের মহিমান্বিত জীবনের আদর্শ তুলে ধরে তিনি সমাজের সকল স্তরে শান্তি ও মানবতা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

শুভেচ্ছা বিনিময়কালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। তিনি জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের দীর্ঘদিনের চমৎকার সম্প্রীতি চিরকাল অটুট এবং অক্ষুণ্ন রাখার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, সকল ধর্মের মানুষের এই সম্মিলিত উৎসব ও ভ্রাতৃত্ববোধ বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং বঙ্গভবনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আসা অতিথিরাও বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রশংসা করেন। মূলত বড়দিনের আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে নিতেই প্রতি বছরের মতো এবারও এই বিশেষ রাজকীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।


জুলাইযোদ্ধা তাহরিমা জান্নাত সুরভী গ্রেফতার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর গুলশানের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং জুলাই আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে ‘মামলা বাণিজ্য’ ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগে আলোচিত তাহরিমা জান্নাত সুরভীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে গাজীপুরের টঙ্গীর টেকপাড়া এলাকার নিজ বাসভবন থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সুরভী গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জুলাইযোদ্ধা’ হিসেবে ভাইরাল পরিচিতি পেয়েছিলেন।

টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন এই সুরভী। সম্প্রতি গুলশানের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন যে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় সংঘটিত বিভিন্ন হত্যা মামলায় তাঁর নাম জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সুরভী ও তাঁর সহযোগীরা ধাপে ধাপে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মামলার আসামি বানানো, পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে এবং পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ‘মীমাংসা’ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করা হয়েছিল।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে যে, এই চক্রটি কেবল ওই ব্যবসায়ীই নয়, বরং বিভিন্ন প্রভাবশালী ও বিত্তবান ব্যক্তিদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইলিং ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে মোট প্রায় ৫০ কোটি টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সুরভী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ভাইরাল পরিচিতি ব্যবহার করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে সখ্য গড়ে তুলতেন এবং পরবর্তীতে সেটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। জুলাই আন্দোলনের শহীদদের আবেগ ও স্মৃতিকে পুঁজি করে এমন নজিরবিহীন অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বর্তমানে এই চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মূলত আন্দোলনের চেতনাকে কলঙ্কিত করে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের অপরাধেই তাঁর বিরুদ্ধে এই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।


প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকস চৌধুরীর পদত্যাগ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) খোদা বকস চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

গত বছরের নভেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনকে আরও কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সহযোগিতার জন্য প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় তিনজনকে বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে খোদা বকস চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। নিয়োগপ্রাপ্ত তিন বিশেষ সহকারীর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম আগেই পদত্যাগ করেছেন। এখন পদত্যাগ করলেন খোদা বকস চৌধুরী।

সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়। বিশেষ করে হাদি হত্যার বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে রাজনৈতিক বিভিন্ন মহল ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং বিশেষ সহকারী খোদা বকস চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। মূলত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চলমান অস্থিরতা ও জনচাপের মুখেই তাঁর এই পদত্যাগ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাঁর পদত্যাগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

বর্তমানে ওই সময় নিয়োগ পাওয়া তিন বিশেষ সহকারীর মধ্যে কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক সায়েদুর রহমান স্বপদে বহাল রয়েছেন। খোদা বকস চৌধুরীর এই প্রস্থানকে বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামোয় এক বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।


রাজস্ব আয়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা বাড়াল সরকার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে সংশোধিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে।

বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

ব্রিফিংয়ে রাজস্ব আদায়ের চিত্র তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের গতি বেড়েছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ দশমিক ১ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশে।

এই প্রেক্ষাপটে চলতি অর্থবছরের মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আহরিত হবে ৫ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা, কর-বহির্ভূত রাজস্ব থেকে আসবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর-বহির্ভূত অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ২০ হাজার কোটি টাকা।

প্রেস সচিব বলেন, গত বছরের শেষের দিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৪ শতাংশে পৌঁছেছিল। বর্তমানে তা কমে ৭ শতাংশের কাছাকাছি এসেছে। শীতকালে সবজির উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ায় মূল্যস্ফীতি আরও কমবে বলে সরকার আশা করছে। চলতি অর্থবছর শেষে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামবে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সংশোধিত বাজেটে মোট সরকারি ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। মূল বাজেটে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার সংশোধিত বাজেটে ধরা হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। মূল বাজেটে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল। ফলে উন্নয়ন ব্যয় মূল বাজেটের তুলনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।

সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা এবং দেশীয় অর্থায়ন হবে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। পরিচালনসহ বাজেটের অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা।

সংশোধিত বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এই ঘাটতির মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৬৩ হাজার কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।

সূত্র: বাসস


বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত : প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আবহমানকাল ধরে এদেশের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠানকে সম্মান করে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখে চলেছে।’

২৫ ডিসেম্বর ‘বড়দিন’ উপলক্ষ্যে পাঠানো এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’ উপলক্ষে এ ধর্মাবলম্বী সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

এসময় প্রধান উপদেষ্টা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশপ্রেম ও মানবতার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপন আমাদের এ সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে-এমনটাই প্রত্যাশা করি।’

তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের জন্য একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্ট এই দিনে বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পৃথিবীতে শান্তি, ন্যায় এবং মানবমুক্তির বার্তা নিয়ে আগমন করেছিলেন। মানবজাতিকে পাপমুক্ত করে সত্য, কল্যাণ ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করাই ছিল তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। মহামতি যিশু সর্বদা বিপন্ন, অবহেলিত ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের সেবায় নিবেদিত ছিলেন। আমৃত্যু তিনি প্রচার করে গেছেন ক্ষমা, ভালোবাসা ও প্রভুভক্তির মহিমা। তার জীবনাচরণ ও মহৎ চারিত্রিক গুণাবলি আজও তার ভক্ত ও অনুসারীদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

তিনি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ সকলের শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।


আসছেন তারেক রহমানের, দেশ আজ ঢাকামুখী

* দেশবাসীর দৃষ্টি বিমানবন্দরে * দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতাকে বরণে প্রস্তুত বিএনপি * ঢাকামুখী লাখ লাখ মানুষ, দেশজুড়ে উৎসবের আবহ * ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হচ্ছে দেশ * দেশে ফিরে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা  
আপডেটেড ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০২:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

কবিগুরুর অবিস্মরণীয় ভাষায় জনতার সম্মিলিত মহাকণ্ঠে আজ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়’। হ্যাঁ, কোটি বাংলোদেশির হৃদয়ের ভালোবাসা, আর আবেগে মর্যাদাপূর্ণ অভিভাষণে সিক্ত হয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশের মাটিতে পা রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময়ের নির্বাসিত জীবনের ইতি ঘটবে। এই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ছিল সমগ্র জাতি; অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। প্রিয় মাতৃভূমিতে পদার্পণের মাধ্যমে সেই অপেক্ষারও অবসান হবে।

আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীর দৃষ্টি থাকবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং পূর্বাচলের বিশাল মঞ্চের দিকে। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতাকে বরণ করতে প্রস্তুত বিএনপি। এখন ঢাকামুখী লাখ লাখ মানুষ। দেশজুড়ে বইছে উৎসবের আবহ। যেন এক ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হচ্ছে দেশ।

বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার উপস্থিতি দলের নেতাকর্মীদের মনোবল বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই প্রত্যাবর্তনকে অনেকেই দেখছেন বিরাজমান অস্থির পরিস্থিতিতে জনগণের ঐক্য সৃষ্টি এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে। সে কারণেই তারেক রহমানের ফেরা কেবল একটি ব্যক্তিগত প্রত্যাবর্তন নয়; বরং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণের গভীর আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ফলে তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গন, নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সর্বসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ, কৌতূহল ও আবেগের সঞ্চার হয়েছে।

জানা গেছে, তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশব্যাপী এক অভূতপূর্ব জাগরণ তৈরি হয়েছে। দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম—সব প্রান্তের লাখো নেতাকর্মী এখন ঢাকামুখী। বাস, ট্রেন, লঞ্চ কিংবা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়—যে যেভাবে পারছেন, প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে রাজধানীতে জড়ো হচ্ছেন। গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) থেকেই দলে দলে ঢাকায় আসা শুরু করেছেন প্রত্যন্ত এলাকার নেতাকর্মীরা। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে প্রত্যন্ত এলাকার নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। বগুড়া থেকে আসা এক তৃণমূল কর্মী বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছি। প্রিয় নেতাকে একনজর দেখতে এবং তাকে বিরোচিত সংবর্ধনা জানাতেই আমরা এসেছি।

এদিকে মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক হাজার প্রবাসী নেতাকর্মী এরই মধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন।

দেশে ফিরে তিন দিন কোথায় যাবেন, কী করবেন: তারেক রহমান দেশে ফেরার পর প্রথম তিন দিন তিনি যেসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন, সে তথ্য জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আজ দুপুরে বিমানবন্দরে নামার পর দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। এরপর তিনি জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে তথা ৩০০ ফিট রাস্তায় সংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখানে অপেক্ষায় থাকা নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন তিনি। এরপর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখান থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে কাকলীর মোড় হয়ে গুলশান–২ নম্বরে বাসভবনে চলে আসবেন। সেদিন আর অন্য কোনো অনুষ্ঠান হবে না। পরদিন ২৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারেক রহমান বাসভবন থেকে প্রথমে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। সেখান থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ করবেন তিনি। এরপর শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাবেন।

শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত শেষে সেখান থেকে রাজধানীর শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যাবেন তারেক রহমান।

চিকিৎসাসহ অন্য প্রস্তুতি: ব্যাপক লোক সমাগমের ফলে যে কেউ অসুস্থ হতে পারেন বা সমস্যায় পড়বেন—এমনটি বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যাপ্ত খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ জানান, তারা এরই মধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কমিটি গঠন করে দায়িত্ব বণ্টন করেছেন। এর মধ্যে পুরো ঢাকাতেই থাকবে ২৫-৩০টি মোবাইল অ্যাম্বুলেন্স। সংবর্ধনা স্থানের দুই প্রান্তে এবং কাছাকাছি একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোট তিনটি মেডিকেল বুথ থাকবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোয় থাকবে মেডিকেল টিম।

বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ: রাজধানীতে কয়েক হাজার বোতল বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির সভাপতি বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু। তিনি বলেন, বহু বছর পর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান। তার প্রত্যাবর্তন দিবসে ঢাকায় মানুষের ঢল নামবে। প্রচুর লোক সমাগমে যাতে মানুষ কষ্ট না পায়, সেই বিবেচনায় কয়েক হাজার পানির বোতল তিনি বিতরণ করবেন। এরই মধ্যে পানির বোতলে তারেক রহমানের ছবি যুক্ত করে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বরণ করতে প্রস্তুত বিএনপি: তারেক রহমানকে বরণ করে নিতে রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় তৈরি করা হয়েছে বিশাল সংবর্ধনা মঞ্চ। মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ। ঢাকা জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে এই গণসমাবেশ ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রায় অর্ধকোটি মানুষের সমাগম ঘটানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩০০ ফিট এলাকাকে কেন্দ্র করে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে মাইক বসানো হয়েছে, যাতে আগত জনতা প্রিয় নেতার বক্তব্য শুনতে পারেন। ড্রোন ও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকা নজরদারিতে রাখা হচ্ছে এবং দলের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, তারেক রহমান শুধু একটি দলের নেতা নন, তিনি বর্তমান বাংলাদেশের তারুণ্যের প্রতীক। দীর্ঘ নির্বাসন জীবন কাটিয়ে তার এই ফিরে আসা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকে পূর্ণতা দেবে। আমরা শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খলভাবে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সফল করতে চাই।

এদিকে, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে আসা বিশাল জনসমাগমকে কেন্দ্র করে যেন সাধারণ মানুষের জানমালের কোনো ক্ষতি না হয় এবং যানজট যেন অসহনীয় পর্যায়ে না পৌঁছায়, সেদিকেও নজর দিচ্ছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সুশৃঙ্খলভাবে চলাফিরা করতে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং জেলা প্রশাসনও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।


ওসমান হাদি হত্যা: অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ ঘাতকের সহযোগী হিমন গ্রেপ্তার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চালক আলমগীরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আদাবর থানা যুবলীগ কর্মী হিমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আদাবর এলাকার একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হিমনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে।

তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. জুয়েল রানা এই গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে আদাবরের রাজ্জাক হোটেলে হিমন অবস্থান করছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটকের পর নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আদাবরের ১৭/বি এলাকায় জনৈক মেহেদীর বাসায় তল্লাশি চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরকের মজুত উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি ফয়সাল এবং মোটরসাইকেল চালক আলমগীরের সঙ্গে হিমনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। হিমন প্রায় দুই মাস আগে দুবাই থেকে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বা পরবর্তী কার্যক্রমে তার কী ধরনের ভূমিকা ছিল, তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। এডিসি জুয়েল রানা আরও জানান, হিমন ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে, যা মামলার রহস্য উদঘাটনে সহায়ক হবে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা অন্যান্য মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে এবং উদ্ধারকৃত অস্ত্রের উৎস নিশ্চিত করতে তাকে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মূলত ঘাতক চক্রের এই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে হাদি হত্যা মামলার তদন্তে নতুন গতির সঞ্চার হলো।


সরকারের অবস্থান স্পষ্ট, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: প্রেস সচিব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে পুনরায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় নিবন্ধন বাতিল করেছে, যার ফলে আইনিভাবেই দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার এবং অনড় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরার প্রসঙ্গটিও গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়। প্রেস সচিব বলেন, সরকার তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। তাঁর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিএনপির সাথে সরকারের নিয়মিত আলোচনা চলছে। দলটির পক্ষ থেকে যে ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে, প্রশাসন তা প্রদানে সম্পূর্ণ সচেষ্ট রয়েছে এবং পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্ত ও বিচার সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন শফিকুল আলম। ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে এই ঘটনায় জড়িত অন্তত ১২ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী, এই মামলার বিচার কাজ দ্রুত বিচার আইনের আওতায় সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যার প্রমাণ পূর্ববর্তী ধর্মীয় উৎসবগুলোতে দেওয়া নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এ ছাড়াও, সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রেস সচিব জানান, ভিডিও এবং ভিজ্যুয়াল তথ্য বিশ্লেষণ করে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িত ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অনেকের কাছ থেকে অপরাধের সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে। মূলত যেকোনো ধরনের সহিংসতা দমনে এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে সরকার সব ধরনের গোয়েন্দা ও আইনি সক্ষমতা ব্যবহার করছে বলে তিনি ব্রিফিংয়ে আশ্বস্ত করেন। দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন বজায় রাখতে প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে বলে তাঁর বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে।


মানসম্মত শিক্ষা ও স্বনির্ভরতাকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

আপডেটেড ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৮:২২
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মানসম্মত শিক্ষা, গ্রামীণ উন্নয়ন, যুব ও নারীর ক্ষমতায়ন এবং স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি স্বনির্ভর বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া সংশোধিত বাজেট পর্যালোচনার সময় তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেন। বৈঠক শেষে বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সরকারের এই নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

প্রেস সচিব জানান, সংশোধিত বাজেটের রূপরেখা নির্ধারণে প্রধান উপদেষ্টা অপ্রয়োজনীয় বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় অর্থায়নে বেশি প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, বিদেশি ঋণের বোঝা কমিয়ে দেশীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করলেই বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে স্বনির্ভর করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে শিক্ষা খাতের উন্নয়নে অধ্যাপক ইউনূস একটি ভিন্নধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সংকট উত্তরণে আগামী বাজেটে শিক্ষার মানোন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নেও প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, চলতি বছর কৃষকরা রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় অবদান রেখেছেন, তাই তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের বিশাল তরুণ সমাজকে ‘যুবসম্পদের খনি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং নির্দেশ দেন যেন বাজেটের প্রতিটি স্তরে তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি ও চাহিদার প্রতিফলন থাকে। জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ন খাতেও বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তিনি জোরালোভাবে ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস স্থানীয় শিল্প ও কৃষিপণ্য উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে জনসেবার মান বাড়াতে বাজেট সম্প্রসারণের কথা বলেন। তাঁর এই নির্দেশনাগুলো মূলত একটি জনবান্ধব ও টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার অঙ্গীকার হিসেবে দেখা হচ্ছে। আসন্ন ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই সংশোধিত বাজেটটি দেশের প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং বিদেশি সাহায্যের বদলে দেশীয় সক্ষমতাকে প্রধান্য দেবে বলে আশা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। মূলত মেধা, তারুণ্য ও কৃষি উৎপাদনকে এক সুতোয় গেঁথে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই হবে এই বাজেটের মূল লক্ষ্য।


নির্বাচন ও গণভোটের প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক হলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং আসন্ন গণভোট সম্পর্কে দেশব্যাপী জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিচালিত প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশনার ফলে এখন থেকে নির্বাচন ও গণভোট সংক্রান্ত সকল প্রকার প্রচার ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মূল তদারকি ও সমন্বয়ের গুরুদায়িত্ব তিনি পালন করবেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বর্তমানে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর দীর্ঘ অ্যাকাডেমিক অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের মাঝে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশেষ সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মূলত একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুশৃঙ্খল নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতেই সরকার তাঁকে এই বিশেষ দায়িত্ব প্রদান করেছে।


ওসমান হাদির বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করছে: প্রেস সচিব

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সক্রিয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। শফিকুল আলম বলেন, দেশের সকল নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা এই মামলার রহস্য উন্মোচনে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তদন্তে ইতিমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র বা ‘ক্লু’ পাওয়া গেছে এবং প্রধান সন্দেহভাজন সরাসরি ধরা না পড়লেও সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার এই বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো শিথিলতা দেখাবে না এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করা হবে।

ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফেরার বিষয়টিকে সরকার স্বাগত জানিয়েছে। প্রেস সচিব বলেন, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএনপি এবং সরকারের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। মূলত তাঁর দলই প্রাথমিক নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করছে, তবে সরকারের কাছে তারা যে ধরনের সহযোগিতা বা সুরক্ষা চেয়েছে, প্রশাসন তা প্রদানে সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নেতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা বজায় থাকবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ এবং মার্কিন ফরেন কমিটির কথিত চিঠি প্রসঙ্গে শফিকুল আলম সরকারের কঠোর ও স্পষ্ট অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, মার্কিন কমিটির চিঠিটি তিনি এখনও দেখেননি, তবে আওয়ামী লীগ বিষয়ে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। উচ্চ আদালতের আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে দলটির রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিল করেছে। এই আইনি ও প্রশাসনিক বাস্তবতায় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। মূলত একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।

প্রেস সচিবের এই বক্তব্যের মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, সরকার একদিকে যেমন সংবেদনশীল হত্যাকাণ্ডগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর, অন্যদিকে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি’র শীর্ষ নেতার প্রত্যাবর্তন এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অংশগ্রহণের বিষয়েও সুনির্দিষ্ট ও আপসহীন পথে হাঁটছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়াই বর্তমান প্রশাসনের মূল লক্ষ্য।


নতুন টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন: ইন্টারনেট শাটডাউনে আসছে আইনি বাধা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ এক নতুন আধুনিক টেলিযোগাযোগ যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ–২০২৫’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে দেশের বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ আইন ও নীতিমালায় আমূল পরিবর্তন আসবে এবং খাতটিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে বলে আশা করছে সরকার।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নতুন অধ্যাদেশের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো টেলিযোগাযোগ খাতকে আন্তর্জাতিক মানের সাথে সংগতি রেখে আধুনিকায়ন করা। এতে লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া অনেক বেশি সহজ করা হয়েছে, যা নতুন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। এ ছাড়াও দেশজুড়ে ৫জি প্রযুক্তি এবং ক্লাউড সেবার প্রসারে এই অধ্যাদেশ বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এতে ইন্টারনেট শাটডাউন বা সেবা বন্ধ করার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে যত্রতত্র ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে নাগরিকদের ভোগান্তিতে ফেলা না হয়। ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি একটি আধুনিক নিয়ন্ত্রক কাঠামো গড়ে তোলাও এই উদ্যোগের একটি বড় অংশ।

উল্লেখ্য যে, এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে তিনবার উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এর আগে আড়িপাতার ধারা ও অনুমোদন প্রক্রিয়া নিয়ে বিটিআরসি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু আপত্তির কারণে এটি সংশোধনের জন্য পাঠানো হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের বৈঠকেও কিছু কারিগরি মতামতের প্রয়োজনে এটি পুনরায় পর্যালোচনার জন্য রাখা হয়েছিল। সকল পক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামতের সমন্বয় ঘটিয়ে অবশেষে আজ সেটিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হলো।

বর্তমানে অধ্যাদেশটির খসড়া জনসাধারণের মতামতের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ নাগরিকরা মনে করছেন, নতুন এই আইনি কাঠামো বাস্তবায়িত হলে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধের পাশাপাশি ডিজিটাল সেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। মূলত প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি যুগোপযোগী ও বৈষম্যহীন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই সরকার এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।


banner close