বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলায় বিদায়ের সুর বেজে উঠছে। মেলার বাকি আর মাত্র চার দিন। এ কয়েকদিন রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এ বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এর মধ্য দিয়ে পাঠক, দর্শক ও প্রকাশকের আনাগোনায় মুখরিত থাকা বইমেলার ইতি টানা হবে। তবে বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট নন প্রকাশকরা।
মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমির সামনের বিভিন্ন স্টল ঘুরে পছন্দের বই খুঁজছেন পাঠকরা। বেশির ভাগ দর্শনার্থীই বই কিনতে মেলায় ভিড় করেছেন। মেলায় বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি নানা বয়সি মানুষ বইমেলায় এসেছেন। তাদের কেউবা মনের আনন্দে ঘুরে বেরিয়েছেন। কেউ বই দেখেছেন আবার কেউ কেউ প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহ করেছেন। এভাবেই কেটেছে বইমেলার প্রতিটি দিন।
ব্যস্ততার কারণে সাধারণ দিনগুলোতে যারা মেলায় আসতে পারেননি, বন্ধের দিনে তারা ঠিকই হাজির হয়েছেন প্রাণের মেলায়। ফলে ছুটির দিনগুলোতে সবচেয়ে মুখরিত হয়ে ওঠে বইমেলা। এ দুদিন বইয়ের বিক্রিও অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি হয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এদিকে নতুন লেখকদের বইও বিক্রি হচ্ছে বেশ। তবুও প্রকাশকদের চোখে মুখে হাতাশার ছাপ।
প্রকাশকরা বলছেন, মেলায় আগের তুলনায় বিক্রি অনেক কম হয়েছে। যদিও শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা ও নতুন বই প্রকাশে ব্যস্ত পাঠক, লেখক ও প্রকাশকরা। তবে শেষ কয়েকদিন পাঠকের ঢল নামার প্রত্যাশা করেছেন প্রকাশকরা।
বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রেতারা জানান, মেলার শেষ দিকে প্রতিদিন বিক্রি ভাল হয়। এখনো প্রতিদিন নতুন নতুন বই মেলায় আসছে। এটি শেষ দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। শেষ দিকে ক্রেতার ভীড় বেশি থাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
মেলায় বন্ধু নিয়ে ঘুরতে আসা লিমন ইসলাম বলেন, ‘প্রথম দিকে কিছু বই সংগ্রহ করেছি। আবার এসেছি নতুন বই কিনেছি। বন্ধুকে বই উপহার দিলাম। শেষের দিকে আবার আসবো। আর অবশ্যই আমাদের সকলের বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে বইমেলায় এসেছেন লাইজু লিজা। তিনি বলেন, ‘বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এ মেলা এক মাস কেন সারা বছর থাকা উচিৎ। এর বিদায়ের সুর আমরা শুনতে চাই না।’
প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘প্রথম দিকের চেয়ে এবার শেষের দিকে এসে মেলায় বিক্রি বেড়েছে। মেট্রোরেলের নতুন মাত্রা এবারের বইমেলায় বই বিক্রি বাড়ার প্রধান কারণ। আমরা তরুণ লেখকদের বইগুলো তরুণদের হাতে দিতে পারছি। তবে এ বছর এখনও ব্যাগভর্তি বইক্রেতা দেখছি না।’
এদিকে রোববার অমর একুশে বইমেলার ২৫তম দিনে মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৮টা ৩০ পর্যন্ত। এদিন নতুন বই এসেছে ৯৬টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাজী নূরুল করিম দিলু। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তানভীর নেওয়াজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেবুন নাসরীন আহমেদ।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক জেবুন নাসরীন আহমেদ বলেন, ‘বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যই ছিল দৃঢ়তা, সততা, সাহসিকতা এবং দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা। তাঁর কর্মমুখর জীবন ও আদর্শ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।’
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, কথাসাহিত্যিক জসিম মল্লিক, কবি শিবলী মোকতাদির, নাট্যকার খায়রুল বাসার এবং শিশুসাহিত্যিক উৎপলকান্তি বড়ুয়া।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন: এই মঞ্চে বিকেল ৫টায় কবি ও চলচ্চিত্রকার মাসুদ পথিকের কবিতা ও চলচ্চিত্র বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি এজাজ ইউসুফী, জান্নাতুল ফেরদৌসী, উৎপলকান্তি বড়ুয়া, প্রসপারিনা সরকার, অংকিতা আহমেদ রুবি, রিশাদ হুদা, সৌমিত্র দেব, অরবিন্দ চক্রবর্তী, আহসান মালেক, রওশন ঝুনু, সমর চক্রবর্তী, গিরিশ গৈরিক এবং আহমেদ জসিম। ছড়া পাঠ করেন ছড়াকার আখতার হুসেন, আমীরুল ইসলাম, লুৎফর রহমান রিটন, ফারুক হোসেন, আনজীর লিটন, মাহমুদউল্লাহ, সারওয়ার উল আলম, রিফাত নিগার শাপলা এবং তপংকর চক্রবর্তী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহমুদা আখতার, চিং হ্লা মং চৌধুরী এবং চৌধুরী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
এবারের বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমির মাঠে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বছর মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত বছর ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এ বছর মেলা দুদিন বাড়ানোর জন্য বাংলা একাডেমির কাছে প্রকাশকরা আবেদন করলেও এখনও এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
আজকের বইমেলা
২৬ ফেব্রুয়ারি সোমবার অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিন মেলা শুরু হবে বেলা ১২টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : আবুবকর সিদ্দিক এবং স্মরণ : আজিজুর রহমান আজিজ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে ফরিদ আহমদ দুলাল এবং কামরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মামুন মুস্তাফা, তৌহিদুল ইসলাম, মো. মনজুরুর রহমান এবং আনিস মুহম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি আসাদ মান্নান।