বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের তিনটি সংস্থাকে পৃথকভাবে ৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা দিচ্ছে জাপান। এই অর্থের ২৭ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাকে (আইওএম)। আর ২৭ মিলিয়ন পাবে জাতিসংঘ শিশু-বিষয়ক তহবিল (ইউনিসেফ)। অবশিষ্ট ১৫ মিলিয়ন ডলার পেতে যাচ্ছে ইউনাইটেড নেশন্স এনটিটি ফর জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যান্ড দ্য এমপাওয়ারমেন্ট অব উইমেন বা ইউএন উইমেনের মাধ্যমে।
ঢাকায় জাপানের দূতাবাস পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। জাপান দূতাবাস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা তিনটি সংস্থার কাছে গত সোমবার পৃথকভাবে অর্থ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি। এর মধ্যে আইওএমকে দেওয়া ২৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য পানি, পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা ওয়াশ; দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস; আশ্রয়ণ প্রকল্প ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ পাঁচ ধরনের কার্যক্রমে। এর মাধ্যমে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় অধিবাসী উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউএন উইমেনকে দেওয়া ১৫ মিলিয়ন ডলার কক্সবাজারে দুর্যোগ প্রস্তুতির লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়ন এবং বাকি ২৭ মিলিয়ন ডলার ইউনিসেফের মাধ্যমে কক্সবাজার ও ভাসানচরে ওয়াশ প্রকল্প, স্বাস্থ্য খাত ও পুষ্টি নিশ্চিতে ব্যয় হবে।
রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, এই সমন্বিত উদ্যোগের ফলে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন হবে বলে আমি আশাবাদী। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং আইওএমের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সহায়তায় জাপান কাজ করে যাবে।
কোন কোন রাজনৈতিক দল নানা টালবাহানা করে নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু জনগণ আর সেই পুরনো রাজনীতির ফাঁদে পা দেবে না—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি মিলনায়তনে ‘মহানায়ক শহীদ জিয়া’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আজ আমরা এমন একসময় অতিক্রম করছি, যখন গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে দেশে অর্থনীতি ও রাজনীতি কার্যত ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার এখন আমাদের সহযোগিতায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছে, যার মাধ্যমে সব কিছু পুনরায় গুছিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে।’
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে একটি নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সংস্কারের মধ্য দিয়ে বিএনপির জন্ম হয়েছে। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। দেশের ভালো সব কিছু বিএনপির হাতেই হয়েছে। কিন্তু এমনভাবে কথা বলা হয় যেন বিএনপি ভিলেন।’
জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বগুণের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘মানুষকে আকর্ষণ করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল শহীদ জিয়ার। জাতি গঠনে তিনি কাজ করেছেন। কিন্তু তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষণজন্মা মানুষদের এত সহজে মুছে ফেলা যায় না। জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে। তারেক রহমানও জিয়াউর রহমানের দেখানো পথেই হাঁটছেন।’
‘মহানায়ক শহীদ জিয়া’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, উপদেষ্টা ও কবি আব্দুল হাই শিকদার (গ্রন্থের সম্পাদক), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ আলমগীর পাভেল, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন প্রমুখ।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ৩৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ প্রস্তাবসমূহ উপস্থাপন করেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।
এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী নির্বাচন একটি উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে যে শঙ্কা, তা কেটে যাবে।
তিনি বলেন, ‘বিগত তিন নির্বাচন, নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। গত ১৫ বছরে যাদের চরিত্র হনন করেছি, তারা বিগত ১৫ মাসে ঠিক হয়ে যাবে—এটা আশা করা ঠিক নয়। আমরা কমিশনকে সতর্ক করেছি এদের বিষয়ে সচেতন থাকতে।’
ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল সিইসির সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন। প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া।
৩৬ দফা প্রস্তাব: ১. বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের জন্য এখনই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে এই সরকারের ও নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে হবে।
২. নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে মাঠ প্রশাসনকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে। যেমন— ডিসি, ইউএনও, এসপি, ওসি এবং ক্ষেত্রমতে কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, সবার জন্য প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ্য যে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে এ ধরনের পুনর্বিন্যাস একটি রুটিন প্রক্রিয়া, যা অবশ্য করণীয়।
৩. বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের অবৈধ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সব বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের কোনোরূপ নির্বাচনী দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।
৪. রিটার্নিং অফিসার হিসেবে প্রশাসনের অফিসারদের পাশাপাশি সম্ভাব্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা (ইলেকশন সার্ভিস) কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে দক্ষ, সৎ, অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. নির্বাচনকালীন নির্বাচনের সমগ্র প্রক্রিয়ায় জড়িত বেসামরিক প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব কর্মকর্তার বদলি, পদায়ন, অবস্থান, দায়িত্ব ও তাঁদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের ভার নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে নিতে হবে। সব ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের কমপক্ষে এক সপ্তাহ পূর্ব হতে সামরিক বাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৬. নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচনকালীন সময়ে অনিয়ম রোধে কমিটি গঠন ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বর্তমানে বিধান বলবৎ রয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন, অবলোকন এবং নির্বাচনকে জনগণের নিকট দৃশ্যমান বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য বিচার বিভাগীয় ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও ম্যাজিস্ট্রেরিয়্যাল ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।
৭. ভোটারগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ অবাধ, নির্বিঘ্ন, স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান করার জন্য ভোটকেন্দ্রের গোপনীয় কক্ষের কার্যক্রম ব্যতীত ভোটকেন্দ্রের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ দৃশ্য বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির নিমিত্ত সিসি ক্যামেরা সংস্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. নির্বাচনী সময়সূচি ঘোষণার সাথে সাথে প্রত্যেক জেলার জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে এবং প্রত্যেক উপজেলা/থানায় উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার কার্যালয়ে একটি করে অভিযোগ নিরসন কেন্দ্র (Complain Redress Centre) চালু করতে হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো অভিযোগ প্রাপ্তির ১২ ঘণ্টার মধ্যে বা যত দ্রুত সম্ভব তা নিষ্পত্তি করে অভিযোগকারীকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।
৯. জুলাই ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিংবডি গঠিত হয়েছে। হঠাৎ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার ঠিক পূর্বমুহূর্তে এ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তড়িঘড়ি করে ১ নভেম্বরের মধ্যে নতুন করে নির্বাচন সম্পন্নের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হয়। এই কার্যক্রমের ফলে সারাদেশে শিক্ষক/শিক্ষিকাদের বার্ষিক পরীক্ষার একাডেমিক কার্যক্রম, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, ভোটকেন্দ্রের নির্বাচনের প্রাক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো একটি বৃহৎ কার্যক্রমে শিক্ষক/শিক্ষিকা, অভিভাবক/অভিভাবিকা তথা ভোটারদের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিংবডি নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশনা স্থগিত করতে হবে।
১০. নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বা পোলিং পারসোনাল তথা প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বমহলের নিকট চিহ্নিত এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়োগ প্রদান করা যাবে না। যেমন, ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য যে, ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংক সারাদেশে প্রায় ৫০০০ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে নিয়োগ বাতিল করেছে এবং এসব শূন্য পদে তড়িঘড়ি করে দলীয় লোকজন নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে।
১১. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে জুলাই ’২৪ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাকর্মীদের নামে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে দায়েরকৃত মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলাসমূহ নির্বাচনী সময়সূচি জারির পূর্বেই প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১২. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বেই বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় প্রদত্ত সকল অস্ত্র সরকারের কাছে জমা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা অগণিত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৪. সীমান্ত পথে আসা অবৈধ অস্ত্র, নকল টাকা, কালো টাকার অনুপ্রবেশ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৫. সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানে এবং দূতাবাসগুলোতে চুক্তিভিত্তিক সকল নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
১৬. নির্বাচন অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য, শান্তিপূর্ণ ও পক্ষপাতহীন হতে হবে। ভোটারদের স্বাধীন ভোটাধিকার প্রয়োগে সম্ভাব্য সকল প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
১৭. নির্বাচনে সম্ভাব্য সকল কারচুপির সুযোগ প্রতিরোধ করে নিখুঁত ও ত্রুটিমুক্ত ফলাফল নিশ্চিত করতে হবে।
১৮. ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি, পেশিশক্তি ব্যবহার ও প্রভাব প্রতিরোধ করতে হবে।
১৯. নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগত কোনো লোক নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে না।
২০. নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের গৃহীত সাংবিধানিক শপথের প্রতি অনুগত থেকে নিরপেক্ষ ও সাহসী হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সংবিধান ও আইনের প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগে নির্ভীক হতে হবে।
২১. নির্বাচন যে অবাধ, নিরপেক্ষ ও কারচুপিমুক্ত হচ্ছে তা দেশ ও জাতির কাছে দৃশ্যমান হতে হবে।
২২. সকল ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
২৩. কোনো রাজনৈতিক দল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কর্তৃক বিতর্ক তৈরি করে এমন কোন বক্তব্য যাতে না দেয় তার প্রাক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২৪. নির্বাচনে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িকতার বিষ-বাষ্প ছড়ায়- এমন সকল অপপ্রচার রোধ করতে হবে।
২৫. ভোটারদের প্রভাবিত করে এরূপ ধর্মীয় প্রলোভন বা ধর্মীয় দণ্ড প্রদানের ভীতি প্রদর্শন রোধ করতে হবে।
২৬. অর্থ, দুর্নীতি ও সহিংসতা অর্থাৎ Trippple ‘C’ (Cash, Corruption, Criminality)- এর অসৎ প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে।
২৭. ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে বিধি-বিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভোটকেন্দ্রকে ভোটারদের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। যতদূর সম্ভব কম সংখ্যক ভোটার নিয়ে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করাই উত্তম। এতে কম দূরত্ব অতিক্রম করে ভোটারগণ সহজেই ভোটকেন্দ্রে ভোটদানে উৎসাহিত হবেন।
২৮. নির্বাচনের যাবতীয় নিয়মকানুন-ভোটাধিকার, ভোটদান প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে ভোটারসহ আপামর জনসাধারণকে পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন, লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভোটার সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
২৯. নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইনে বর্ণিত সকল নির্বাচনী কর্মকর্তাদের (রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাবৃন্দ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ) সার্বিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে কোন গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৩০. ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজ ব্যসার্ধের মধ্যেই কেবল নয় বরং এর বাইরেও নির্বাচনী এলাকার যেকোনো স্থানে সন্ত্রাসী তৎপরতা তাৎক্ষণিকভাবে দমন করতে হবে।
৩১. স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের তাদের নিজস্ব জেলায় দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। তাছাড়া রাজনৈতিক মতাদর্শী বা কোনো দলীয় ভাবধারা প্রচার করে এমন পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়া যাবে না।
৩২. আনসার ও ভিডিপি মোতায়েনের ক্ষেত্রে কোনক্রমেই নিজ জেলায় মোতায়েন করা যাবে না।
৩৩. কমিউনিটি পুলিশকে কোনোভাবেই ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন করা যাবে না।
৩৪. ছবিসহ ভোটার তালিকা পোলিং পার্সোন্যালসহ সকল পোলিং এজেন্টদেরকেও যথাসময়ে সরবরাহ করতে হবে।
৩৫. ভোট গণনা শেষ হবার পরপরই নির্বাচনের ফলাফল প্রতিটি কেন্দ্র হতে সরাসরি ঘোষণা করতে হবে।
৩৬. প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ আইনানুগ স্বচ্ছতার সাথে করতে হবে। বিভিন্ন দেশে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দানে ইচ্ছুক রেজিস্টার্ড প্রবাসী ভোটারদের তালিকা রাজনৈতিক দলকে যৌক্তিক সময়ের পূর্বেই সরবরাহ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, অবশ্য পরে ড. আব্দুল মঈন খান সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তারা কোনো লিখিত প্রস্তাব দেননি।
যদিও বিএনপির এই নেতার হাতে ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে করণীয় প্রস্তাবসমূহ নির্বাচন কমিশনের সহিত সভার জন্য প্রস্তাবিত কার্যপত্র’ শীর্ষক একটি দলিল দেখা গেছে।
মামলায় পলাতক আসামিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এমন বিধান যুক্ত করে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঢাকার তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার নানা দিক তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, বিভিন্ন মামলায় পলাতক ব্যক্তিরা নির্বাচন করতে পারবেন না, এটিও যুক্ত করা হয়েছে।
পলাতক আসামি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘পলাতক হচ্ছে—আদালত যখন পলাতক ঘোষণা করেন। যেদিন আদালত আপনাকে আসতে বলছেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, আসছেন না—আদালত পলাতক ঘোষণা করেন। বিচার চলাকালে পলাতক হয়।’
আগে ভোটের সময় জোটভুক্ত হয়ে জনপ্রিয় বা বড় দলের প্রতীকে ভোট করার সুযোগ থাকলেও এবার নির্বাচনী জোট হলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে হবে।
সংশোধিত আরপিওর নানা দিক তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, যদি নির্বাচনী জোট হয়, তাহলে জোটের অংশ হলেও দলের যে প্রতীক তা দিয়ে নির্বাচন করতে হবে, যাতে ভোটাররা ক্লিয়ার আইডিয়া পায় প্রার্থী কোন দলের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সংজ্ঞা, সেখানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার সম্পর্কিত যেসব বিধান ছিল তা বিলুপ্ত করা হয়েছে।
এর ফলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না।
সংশোধিত আরপিওতে ‘না’ ভোটের বিধান রাখার কথা জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, যে সংসদীয় আসনে একজন প্রার্থী থাকবেন সেখানে ভোটারেরা ‘না’ ভোট দিতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের ভুয়া, সাজানো নির্বাচন যেন না হয়—সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন যে প্রার্থী—পছন্দ না, সেখানে না ভোট দিতে পারবে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন— নির্বাচনে যারা প্রার্থী থাকবেন, তাদের দেশি উৎস ও বিদেশি উৎস থেকে আয়, সম্পত্তি, সবকিছুর বিবরণ নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। এটা আমরা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দেব (পাবলিশ)। সবাই জানবে। আপনাদের এলাকার যে প্রার্থী আছে, কার কত আয়, কোথা থেকে আয়, কী সম্পত্তি— এটা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন। এ-সংক্রান্ত একটা বিধান এই আইনে থাকবে। নির্বাচনে জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার করা হয়েছে।’
রাজনৈতিক দলের অনুদানের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘যিনি অনুদান দেবেন, তার ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে।’
অনিয়ম বন্ধে ইসি প্রয়োজনে পুরো আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে—এমন বিধান যুক্ত করার তথ্য দিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।তিনি বলেন, ‘আগের আইনে বিধান ছিল—কোনো ভোটকেন্দ্রে গণ্ডগোল হলে কেন্দ্রের ফলাফল বাতিলের। এখন ইসি যদি মনে করে একটা নির্বাচনী এলাকাতেই এত অনিয়ম হয়েছে, পুরো এলাকার ভোট বাতিল করা উচিত; তাহলে সেটা করতে পারবে। সে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধান আরপিও যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভিাটিং চালু করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে নিবন্ধন সেরে ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। পাশাপাশি কারা হেফাজতে থাকা, সরকারি কর্মকর্তা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা এভাবে ভোট দিতে পারবেন।
ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।
প্রসঙ্গত, আগে চলতি মাসেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। সেই সংশোধনী অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় কারও বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে সেই ব্যক্তি জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) অনেক নেতার বিচার চলছে। এ ছাড়া অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটির বহু নেতা আত্মগোপনে চলে গেছেন, যাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী–এমপিরা রয়েছেন। তাদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ নানা অভিযোগে মামলা হয়েছে। এই নেতারা আদালত থেকে পলাতক ঘোষিত হলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবেন না।
নির্বাচন কমিশন কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত (টিওটি) প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই)-এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য সিইসি এ কথা বলেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের উদ্দেশে করে বলেন, ‘এই ম্যাসেজটা আপনাদের দিতে চাই যে, আপনারা কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। সম্পূর্ণভাবে আইন অনুযায়ী নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও কারও কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। তা ছাড়া আমরাও আপনাদের অন্যায় কোনো আদেশ দেব বা হুকুম দেব না। আপনারা ধরে রাখতে পারেন, রিলেভেন্ট টু ইলেকশন (নির্বাচন সম্পর্কিত) যে আইন প্রচলিত আছে সেই আইন অনুযায়ী আমাদের নির্দেশনা যাবে বা আপনারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। একটা সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারার চেষ্টা করবেন।’
সিইসি বলেন, আমরা কামনা করি, আপনারা আইনসম্মতভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে (প্রফেশনালি) কাজ করবেন। আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। এই দেশের এই দুরবস্থার মূল কারণ হলো, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকা। যে জাতি আইনের প্রতি যতটা শ্রদ্ধাশীল, সেই জাতি তত সভ্য। সভ্য দুনিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। আমাদের এই কালচারটা কাল্টিভেট করতে হবে।’
সিইসি আরও বলেন, ‘আমরা চাই সর্বস্তরের মানুষ আইন মেনে চলবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করবে। যে গন্ডির মধ্যে আমার কাজ থাকবে সেখানেই আমি আইনকে বাস্তবায়ন করব। আমরা চাইব আপনারা আইনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’
সিইসি আরও বলেন, নির্বাচনের মধ্যে সমন্বয়টা একটা বড় জিনিস। আপনারা যেহেতু উপজেলা পর্যায়ে নিয়োজিত আছেন। সমন্বয়ের দায়িত্বটা মূলত আপনাদের উপরে নির্ভর করে। সুতরাং নির্বাচনের সময়ও এই সমন্বয়টা খুবই জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিসাইডিং অফিসার ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলের সাথে সমন্বয় করতে হবে। জেলার যে ইলেকশন মনিটরিং সেল থাকবে ওটার সাথে সমন্বয়। এই সার্বিক সমন্বয়টা আপনাদের খুব সিরিয়াসলি করতে হবে। এই দায়িত্বটা আপনাদের কাঁধে নিতে হবে। যেকোনো ক্রাইসিস হলে আপনারা চেষ্টা করবেন শুরুতেই যাতে এটার সমাধান করা যায়।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আব্দুর রহমানেল মাছউদ, নির্বাচন কমিশনার বেগম তাহমিদা আহমদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
বেগম তাহমিদা আহমদ বলেন, আমরা সাহসী হব, তবে অতি সাহসী না। অতীতে অতি উৎসাহী হয়ে অনেকে অনেক কিছু করেছেন। এবার এসব করা যাবে না।
তিনি বলেন, আগের প্রশিক্ষণ ভুলে গিয়ে এখন যেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেটি নিতে হবে। আগের নির্বাচন আমরা সবাই মিলে নষ্ট করেছি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আপনাদের প্রতি ম্যাসেজ হচ্ছে সামনের নির্বাচন নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সঠিক কাজ করবেন, ইসি আপনাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলক কোনো কাজ করলে সাংঘাতিক পেরেশানিতে পড়বেন। আর সঠিকভাবে কাজ করার জন্য যা যা সহায়তা লাগে তা আমরা দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাহসের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। চাকরির মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে আমাদের না করার কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের একটা আবহ সৃষ্টি করতে হবে।’
মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সুশৃঙ্খল পরিবেশ ভালো নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। মোবাইল কোর্ট আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে। পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। এখন থেকে মোবাইল কোর্ট রেগুলার করতে হবে। এই নির্বাচনে যারা ভালো দায়িত্ব পালন করবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচন মাঠে যারা আছেন তারা যেন তাদের আচরণবিধি মেনে চলেন। প্রশাসন কঠোরভাবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাবে। এবারের নির্বাচনে সমন্বিতভাবে মাঠ প্রশাসন যে, একটা দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি তা আমরা দেখিয়ে দেব।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, তামাকমুক্ত সমাজ গঠনে জনমত ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা, ‘তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, একজন ধূমপায়ী চিকিৎসক রোগীকে ধূমপানে বাঁধা দিলে তিনি গ্রহণ করবেন না। তাই চিকিৎসকদেরকে ধূমপান পরিহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ও এসেম্বলিতে তামাকের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সময়েও এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এ সময় উপদেষ্টা তামাকমুক্ত বিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মসূচি পরিচালক শেখ মোমেনা মনি, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার সরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান, সিটিএফকে, বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. ফারজানা রহমান মুনমুন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে অক্টোবরের ২১ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৮.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৮৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
গত বছর একই সময়ে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ১ হাজার ৭১৪ মিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসীরা ৯ হাজার ৪৩৯ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮ হাজার ২৫৭ মিলিয়ন ডলার।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নতুন করে ভ্রমণ নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। দ্বীপে প্রবেশের জন্য এবার থেকে ট্রাভেল পাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ-২ শাখা থেকে ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন নির্দেশিকা, ২০২৩’ এর আলোকে ১২ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়।
নতুন নির্দেশনার মূল দিকগুলো
১. বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্টমার্টিনে চলাচল করতে পারবে না।
২. পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েব পোর্টাল থেকে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে থাকবে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল হিসেবে বিবেচিত হবে।
৩. দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি ও পর্যটকসংখ্যা এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে।
৪. নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র দিনের বেলায় দ্বীপ ভ্রমণের অনুমতি থাকবে—রাত্রিযাপন করা যাবে না।
৫. ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সীমিত আকারে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে।
৬. ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে।
৭. প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক সেন্টমার্টিনে প্রবেশ করতে পারবেন না।
৮. দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৯. কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
১০. সৈকতে মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচলও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১১. নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী যেমন চিপসের প্যাকেট, স্ট্র, প্লাস্টিক চামচ, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ছোট পানির বোতল বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
১২. পর্যটকদের নিজস্ব ফ্লাস্ক বা বোতল সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ কমে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটনের কারণে সেন্টমার্টিনের ইকোসিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পর্যটন কার্যক্রম ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হচ্ছে।
দ্বীপে প্রবেশ ও অবস্থানের প্রতিটি ধাপ এখন থেকে ডিজিটাল ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে তদারক করা হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে ৩৬ দফা সম্বলিত একটি রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
এসব প্রস্তাবনা নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক করবে দলের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে দলের প্রতিনিধি দলটি সিইসির কাছে এই ৩৬ দফা প্রস্তাবনা তুলে দেবে। গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এই রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয় বলে দলের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে বিতর্কিত ও চার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে চায় না বিএনপি:
বিএনপির চূড়ান্ত করা রূপরেখায় উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো— বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ‘বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচনগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনী দায়িত্বে না রাখা।
এছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত চারটি প্রতিষ্ঠানের (ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও ইবনে সিনা) কর্মকর্তাদের আগামী নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো কাজ বা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ না দেয়ার প্রস্তাব করেছে দলটি। বিএনপির অভিমত, এসব কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত করা হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
৩৬ দফার উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো:
নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বিএনপির ৩৬ দফা প্রস্তাবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পেয়েছে-
অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা: বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রশাসনিক রদবদল: নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠ প্রশাসনকে (ডিসি, ইউএনও, এসপি, ওসি, কমিশনার, পুলিশ কমিশনার) সম্পূর্ণ ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের (ইলেকশন সার্ভিস) মধ্য থেকে দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি স্থগিত: সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তড়িঘড়ি করে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি নির্বাচন সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে, যা নির্বাচনী কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
মামলা প্রত্যাহার: লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচনী সময়সূচি ঘোষণার পূর্বেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাকর্মীদের নামে বিগত স্বৈরাচারি সরকারের আমলে দায়েরকৃত মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল: নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে এবং দূতাবাসগুলোতে চুক্তিভিত্তিক সকল নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
অভিযোগ কেন্দ্র চালু: নির্বাচনী সময়সূচি ঘোষণার সাথে সাথে প্রত্যেক জেলার নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ে এবং উপজেলা/থানায় অভিযোগ নিরসন কেন্দ্র চালু করে দ্রুত অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার ও উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতা দাবি:
বিএনপির পর্যবেক্ষণে সরকারের কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও কার্যক্রমে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল-পদায়ন নিয়ে কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন এবং গত বছরের পটপরিবর্তনের পর প্রশাসনে জামায়াত-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় বিএনপি গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করে তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন থেকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দল-ঘনিষ্ঠদের বিষয়েও পদক্ষেপ নিতে বলেছে।
নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়, স্বচ্ছ নয়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের যেভাবে কাজ করার কথা ছিল সেটি তারা করছে না। আমরা বলেছি যে, কিছু দলের প্রতি নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাত রয়েছে, কিছু দলের প্রতি তারা বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। তারা কীভাবে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে সেসব বিষয়ও আমরা বুঝিয়ে বলেছি।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
শাপলা প্রতীক নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন এনসিপির নেতারা। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ না পাওয়ার দায় নির্বাচন কমিশনকে দিচ্ছে। এনসিপির নেতাদের দাবি, কমিশন প্রভাবিত হয়ে এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিচ্ছে না।
বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ পুরো পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বললে তাদের দুরভিসন্ধি রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, উপদেষ্টা পরিষদের নিরপেক্ষতা এবং দক্ষতা নিশ্চিত করা লাগবে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। সে দাবির সঙ্গে ভিন্নমত নেই। কিন্তু এই উপদেষ্টা পরিষদ পুরো পরিবর্তন করতে হবে, এটার আসলে সুযোগ নেই।’
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই সনদের কাগজে মূল্যে আমরা বিশ্বাসী নই। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সেটার নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই এনসিপি স্বাক্ষর করবে। সে ক্ষেত্রে আমরা সাংবিধানিক একটি আদেশের কথা বলেছি। যে আদেশটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন।’
তিন দাবির বিষয়ে মনে করিয়ে দিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ বলেন, ‘জুলাই সনদের আদেশ শুধু ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন, নোট অব ডিসেন্টের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না ও গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে- এই তিনি দাবি বিবেচনা করলে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব।’
জুলাই সনদ নিয়ে প্রস্তাবিত বিষয়গুলো ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিবেচনা করবেন বলে প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন বলেও জানান এনসিপির আহ্বায়ক।
জুলাই গণহত্যার বিচার নিয়ে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সদস্যদের আদালতে আনা হয়েছে, এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা একটি ধাপ এগিয়েছি। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি সারাদেশে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনের আগে বিচারের রোডম্যাপ দেওয়ার দাবির কথাও জানান নাহিদ ইসলাম।
বিকেল ৫টায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে যমুনায় যান এনসিপির চার নেতা। নাহিদ ইসলাম ছাড়াও প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। গতকাল বুধবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ-২ শাখা থেকে ১২টি নির্দেশনা সংবলিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ১৩ ধারা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রণীত ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন নির্দেশিকা’ আলোকে এ নির্দেশনাগুলো কার্যকর করা হয়েছে।
সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি দিতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে, যেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। নভেম্বর মাসে পর্যটকরা শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপনের অনুমতি থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজারের বেশি পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়া বনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সীবাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সরকার আশা করে, এই নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও অনন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে এবং দ্বীপটি হবে দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
প্রসঙ্গত, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ বাস্তবায়ন বিষয়ে গত মঙ্গলবার পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ই-টিকেটিং ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা যেসব উপদেষ্টাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, নির্বাচনের আগে তাদের সরকার থেকে চলে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচনের আগে আর কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না, সেহেতু এই সরকারকে শিগগিরই কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আমীর খসরু এ কথা বলেন। এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম।
সুন্দর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা ভালো পরিবর্তন প্রত্যাশা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘একটা সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা চাই একটা ভালো পরিবর্তন। যারা সরকারে আছেন, অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি আমাদের সম্মান আছে, ওনাদের তো সম্মানের সঙ্গে যেতে হবে। আমরা সেটা চাই। কিন্তু কিছু লোকের কার্যকলাপের মাধ্যমে সেটা বিঘ্নিত হতে পারে। এ জন্য বলি, পুরোপুরি কেয়ারটেকার সরকারের মুডে চলে যান। যাদের নিয়ে বিতর্ক আছে, এই লোকগুলোকে চলে যেতে হবে। সেখানে থাকলেই সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ, পুরোপুরি নিরপেক্ষ অবস্থানে যাওয়া উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘সরকারের ভেতরে-বাইরে যাদের নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করার সুযোগ আছে, তাদের রেখে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা যাবে না। এই প্রশ্ন আসছে বিভিন্ন কারণে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা এ সরকারের বেশ কিছু পদে পদায়নের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছেন। তাই যাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অথবা যারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন অথবা যারা কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা সরকারে থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ভূমিকা, তা ব্যাহত হতে পারে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চরিত্র কী হবে, তা সংবিধানে বলা আছে উল্লেখ করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এই সরকারই আগামী নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে। তাই সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে ভূমিকা দেওয়া আছে বা বলা আছে, সে বৈশিষ্ট্য এখন থেকে তাদের সব কর্মকাণ্ডে থাকতে হবে। এখন তাদের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত নয় বলেও মনে করেন আমীর খসরু।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নিরপেক্ষতা হচ্ছে নির্বাচনের প্রথম পূর্বশর্ত। এ জন্য আমরা ১৭ বছর লড়াই করেছি, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। নিরপেক্ষতা না থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, এটা সবাই জানে। নিরপেক্ষতা না থাকলে অশুভ শক্তিগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির বিভিন্ন নেতা।
নবনিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লোটজ গত ২১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে তার কর্মকালীন সময়ে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও বিস্তৃত হবে।
আলোচনায় রাষ্ট্রদূত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং আগামি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রস্তুতি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ক্রমবর্ধমান হারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হচ্ছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক।
রাষ্ট্রদূত সরকারের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ, বিশেষ করে সদ্য ঘোষিত জাতীয় সনদ এবং রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সংলাপের প্রশংসা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই ধরনের সংলাপ ও উদ্যোগ নির্বাচনের পরেও অব্যাহত থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করে জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের যে ঐতিহাসিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা দেশে গণতান্ত্রিক ঐক্য ও আস্থার পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
উভয়পক্ষ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং শিক্ষা খাতে সহযোগিতার সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা করেন। রাষ্ট্রদূত জার্মানিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টা জানান, ইউরোপে জার্মানি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার, এবং তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এই অংশীদারত্ব আরও জোরদার করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।
সাক্ষাতে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয়, যেখানে রাষ্ট্রদূত জার্মানির পক্ষ থেকে মানবিক ও রাজনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সাক্ষাৎ শেষে উভয়পক্ষ আগামী দিনে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যকার সম্পর্ক আরও গভীর ও বহুমাত্রিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মাছের প্রজনন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় মা মাছ ধরা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নদী ও সাগরে জেলেরা যেসব মাছ ধরেন, তা প্রাকৃতিক সম্পদ। এই মাছগুলো রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যতে মাছশূন্য হয়ে পড়ব। তাই মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে সবাইকে আইন মেনে চলতে হবে। আইন মানলে প্রকৃতপক্ষে জেলেরা নিজেরাই লাভবান হবেন।’
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির ১২তম জাতীয় সম্মেলন-২০২৫-এর প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘আপনারাই এই দেশের মানুষকে মাছ খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখছেন। আপনারা ক্ষুদ্র নন, বরং দেশের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠী। আমরা শুধু ভাত খাই না- মাছ, শাক-তরকারিও খাই। মৎস্যজীবীরা যদি মাছ না ধরেন, কেউই মাছ খেতে পারব না। আপনারা পরিশ্রম করে সবার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন- এটিকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ভারত যাতে আমাদের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করতে না পারে, সে জন্য কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের সহায়তা হিসেবে ভিজিএফের চালের পরিমাণ বাড়াতে খাদ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সরকারে যতদিন আছি, ততদিন জেলেদের জন্য কাজ করে যাব। আগামীতে অন্তত ৫০ কেজি করে চাল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভিজিএফের সঙ্গে আর্থিক সহায়তা যুক্ত করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।’
দীর্ঘদিনের সমস্যা দাদন প্রথা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘দাদন জেলেদের দারিদ্র্যের চক্রে আবদ্ধ করে রাখে। এ সমস্যা নিরসনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, তারা বিকল্পভাবে স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করবে, যাতে জেলেরা দাদনের ওপর নির্ভরশীল না থাকেন।’
প্রতিটি দুর্যোগে বহু জেলে নিখোঁজ হন বা প্রাণ হারান, এ বিষয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের সদস্যরা জানতেও পারেন না- তারা জীবিত না মৃত। ফলে কোনো সরকারি সহায়তাও পান না। এ সমস্যা সমাধানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যাতে এমন পরিবারগুলোর জন্য কার্যকর সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।’
নদীতে চর জেগে ওঠা ও প্রজনন বাধাগ্রস্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নদীতে চর জেগে ওঠায় মাছের চলাচল ও প্রজননে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব ড্রেজিং সক্ষমতা সীমিত হলেও নৌপরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি। তারা শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পন্ন করবে বলে আশ্বস্ত করেছে।’
সম্মেলনে বক্তারা মৎস্যজীবীদের ন্যায্য অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো-
*২০১৩ সালের পরিপত্র বাতিল করে ২০০৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করা।
*খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে মৎস্যজীবী প্রতিনিধির স্বাক্ষর নিশ্চিত করা।
*মৎস্যজীবীদের নামে একটি বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা।
*ভিজিএফ সহায়তা ৪০ কেজি থেকে বাড়িয়ে ৬০ কেজি চাল ও ২ হাজার টাকা নগদ বরাদ্দ দেওয়া।
*নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে কোনো জেলে মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারকে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান।
*কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ ও মৎস্য বিভাগের অভিযানে মৎস্যজীবী সমিতির মনোনীত মাঝিকে অন্তর্ভুক্ত করা।
বক্তারা বলেন, এসব দাবি বাস্তবায়িত হলে জেলে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নত হবে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসরাইল খলিল পণ্ডিত। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. মোতালেব হোসেন, বিজিবি ট্রাইব্যুনালের সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এম হেলাল উদ্দিন, বরিশাল জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোসাদেক হোসেন স্বপন, সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেম হোসেন, জেলে সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল মীর এবং সদস্য তাছলিমা বেগম।
সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় বক্তারা সরকারের কাছে জেলে সম্প্রদায়ের সামাজিক নিরাপত্তা, জীবিকা রক্ষা এবং প্রজননকালীন সময়ের সহায়তা বৃদ্ধির দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।