কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হলে সেই কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। আজ বুধবার ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সবই নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হলে সেই কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনিয়ম একেবারেই অসম্ভব বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ইভিএম বিজ্ঞানের বিষয়। এতে একজনের ভোট আরেকজনের প্রতীকে চলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি তাই হতো তাহলে বিগত নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টিসহ অন্য প্রার্থীরা বিজয়ী হতো না। ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হয়, তা ভোটারদের জানাতে জেলা প্রশাসন ও তথ্য অফিসের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। এমনকি নির্বাচনের দিন ভোটারদের লাইনেও বিষয়টি নিয়ে ধারণা দেওয়া হবে।
ইভিএমে ভোট নেওয়ার ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু ময়মনসিংহে নয়, এর আগে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা এবং ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হয়েছে। এতে কোথাও সমস্যা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে আঙুলের ছাপে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে থাকে, সে জন্য সঠিক ভোটার নিশ্চিত হলে ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। মোট কথা ইভিএম নিয়ে ভয়ের কিছু নেই, বরং ভোটার উপস্থিতিই আসল বিষয়।
আগামীতে নির্বাচনে অ্যানালগ পদ্ধতি বাতিল করে প্রার্থীদের মনোনয়ন দাখিলসহ সব কার্যক্রম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধিমালা পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রার্থীদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। আগামীতে অ্যানালগ পদ্ধতি বাতিল করে প্রার্থীদের নমিনেশন পেপার সাবমিটসহ নির্বাচনের সব কার্যক্রম ডিজিটাল করতে আইন প্রণয়ন করা হবে।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, কোনো প্রার্থীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করার সুযোগ নেই। আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান সম্মানিত। জনগণ যাকে ভোট দেবে, তিনিই নির্বাচিত হবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা নিরপেক্ষ না হলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করুন। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিগত সময়ে আপনারা দেখেছেন জেলা প্রশাসক, নির্বাচন কর্মকর্তা ও ওসিসহ অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে বাদ যায়নি প্রার্থীরাও। বিগত জাতীয় নির্বাচনে একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। মোট কথা এই নির্বাচন হবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এতে জাল ভোট বা অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।
এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি যথেষ্ট ভালো থাকবে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে নির্বাচন কমিশনার বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সব সময়ই ভোটারদের অংশগ্রহণটা বেশি থাকে। যেহেতু এখানে স্থানীয় প্রতিনিধি নির্বাচিত হন তাই আমরা আশা করি এখানে ভোটার উপস্থিতি যথেষ্ট ভালো থাকবে।
পরে টাউনহলের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ইসি আলমগীর। এ সময় ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রায়হানুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। এরমধ্যে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩২ পুরুষ ও ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৫ নারী। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯ জন। আগামী ৯ মার্চ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নগরীর ১২৮টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন। তবে নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় কাউন্সিলর পদে ৩২টি ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কুরবানির পশুর বর্জ্য পরিবেশসম্মতভাবে ব্যবস্থাপনার নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ সময় যত্রতত্র পশু জবাই, উচ্ছিষ্ট ফেলা ও বর্জ্য ফেলে রাখার কারণে পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জনদুর্ভোগ তৈরি হয়, যা প্রতিরোধে সকলের সচেতন অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্ধারিত স্থানে কুরবানির পশু জবাই নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছ পরিবেশ মন্ত্রণালয়। উন্মুক্ত বা অনির্ধারিত স্থানে পশু জবাই থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে । জবাইয়ের সময় ও পরবর্তী কার্যক্রমে যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষা (যেমন: গ্লাভস, মাস্ক, এপ্রোন) নিশ্চিত করতে হবে। পশুর রক্ত, গোবর ও অন্যান্য পরিত্যক্ত অংশ নির্ধারিত গর্তে ফেলে মাটি চাপা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
জবাইকৃত পশুর উচ্ছিষ্ট যেমন রক্ত, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, হাড়, শিং, গোবর ইত্যাদি যেন কোনো অবস্থাতেই খোলা জায়গায় না ফেলা হয়, বরং নির্ধারিত ডাস্টবিন বা স্থানেই ফেলা উচিত। কুরবানির মাংস বিতরণ বা বর্জ্য অপসারণে প্লাস্টিক নয়, বরং পরিবেশবান্ধব (বায়োডিগ্রেডেবল) ব্যাগ বা পাত্র ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
কুরবানির বর্জ্য দ্রুত ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অপসারণে স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করা আমাদের সামাজিক ও নাগরিক দায়িত্ব। পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে আমরা যেমন নিজেরা সুস্থ থাকি, তেমনি আমাদের চারপাশকেও নিরাপদ রাখি।
পরিচ্ছন্নতা শুধু শারীরিক নয়, এটি আমাদের ঈমানেরও অঙ্গ। আসুন, পরিচ্ছন্ন কুরবানির মাধ্যমে আমরা আমাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব পালন করি এবং একটি স্বাস্থ্যসম্মত, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসি।
অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
আজ সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে অস্থায়ীভাবে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
প্রশাসক বলেন, “ঈদের দিন সকাল ৭:৩০টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জামাত আয়োজন অনুপযুক্ত হলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৮:০০টায় প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।”নামাজ আদায়কারী মুসল্লিদের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সেবা ব্যবস্থা, যেমন: প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য বিশাল আয়োজনে ঈদ জামাতের আয়োজন, ভিআইপি ব্লকে একসাথে ২৫০ জনের নামাজের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন, অজু, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির সুব্যবস্থা, মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পৃথক প্রবেশ ও প্রস্থান গেট, নারী মুসল্লির জন্য পৃথক ব্লকে নামাজের ব্যবস্থা ও পৃথক প্রবেশপথ। তিনি আরও জানান, নগরবাসীর কোরবানির পশু কেনাবেচার সুবিধার্থে ০৮টি জায়গায় অস্থায়ী হাট স্থাপন করা হয়েছে। এসব হাটে থাকবে: পরিচ্ছন্নতা কর্মী, পুলিশ ও এটিএম বুথ, পশু স্বাস্থ্য সেবার জন্য চিকিৎসক ও মেডিকেল টিম। হাট শেষ হওয়ার পরপরই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পন্ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
শাহজাহান বলেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের লক্ষ্যে ডিএসসিসির প্রায় ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ২০৭টি ডাম ট্রাক, ২০০টি মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা এবার ৩০,০০০ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি রেখেছি। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে ১ লক্ষ ৪০ হাজার বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ, ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার ও ২২২ গ্যালন স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে। ইদের জামায়াত, কোরবানি হাট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা- কর্মচারীর ইদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কুরবানির হাট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নগর ভবনের জরুরি পরিচালন কেন্দ্রে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে।
নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিতে এবং বর্জ্য যত্রতত্র না ফেলে সহযোগিতা করতে। নগরবাসীকে ইদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রশাসক বলেন, “আপনারা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইদের জামাতে অংশ নিন, আমরা সর্বোচ্চ নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করবো, ইনশাআল্লাহ।”
ব্রিফিংয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমানসহ সকল বিভাগীয় প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পরিবেশ রক্ষার জন্য সবুজ ও পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিএনপি পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫-এর প্রাক্কালে বুধবার (৪ জুন) নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘আজকের বৈশ্বিক জলবায়ু সঙ্কট এবং শিল্প দূষণের মারাত্মক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে একটি বাস্তবসম্মত এবং ভবিষ্যতমুখী জাতীয় কৌশল তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে গেছে। ‘যদি বিএনপিকে আবারও সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়—তাহলে আমরা বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
পাঁচটি প্রধান পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে—
১. একটি ন্যাশনাল গ্রিন রিকভারি পরিকল্পনা, যার মধ্যে থাকবে নবায়ণযোগ্য শক্তি, বনাঞ্চল পুনঃস্থাপন (আগামী পাঁচ বছরে ২৫ থেকে ৩০ কোটি গাছ লাগানো), এবং টেকসই কৃষি।
২. ক্ষতিকারক প্লাস্টিক ও বিষাক্ত রাসায়নিকের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং শিল্প এবং গৃহস্থালিতে বায়োডিগ্রেডেবল বিকল্পগুলোর উন্নয়ন।
৩. জলাবদ্ধতা মোকাবিলায় নদী ও খালের ড্রেজিং এবং পুনঃস্থাপন প্রোগ্রাম শুরু করা, যাতে জলজ বাস্তুতন্ত্র সুরক্ষিত রাখা যায়।
৪. দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জলবায়ু-প্রতিরোধী কৃষি ও অবকাঠামোকে সমর্থন করা—যাতে স্থানীয় সম্প্রদায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
৫. স্কুলের পাঠ্যক্রমে পরিবেশ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা- যাতে পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়।
তারেক রহমান বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পারিপার্শ্বিক বৈচিত্র্যে পূর্ণ। ‘তাই, আমাদের জন্য এটি একটি গুরুতর দায়িত্ব হলো এই সমৃদ্ধ পরিবেশকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা।’
তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পরিবেশবান্ধব দল হিসেবে পরিচিত। ‘বছরের পর বছর আমরা বৃক্ষরোপণ, খাল খনন এবং রক্ষণাবেক্ষণ, এবং ক্ষতিকারক প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রচারণা চালিয়ে এসেছি।’
তারেক রহমান আরও বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প শুরু করেছিলেন, যা পরে পরিবেশ অধিদপ্তরে পরিণত হয়। এই ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন করেন এবং দেশে প্রথম পরিবেশ আদালত প্রতিষ্ঠা করেন- যা পরিবেশ সুরক্ষার জন্য আইনি ব্যবস্থার পথপ্রদর্শক।
পরিবেশ সংরক্ষণ বিলাসিতা না, বরং প্রয়োজনীয়তা হিসেবে উল্লেখ করে তারেক রহমান সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘একটি টেকসই বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে, এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে হবে যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সবুজ, বাসযোগ্য ও স্থিতিস্থাপক দেশ পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসুন, আমরা আশার বীজ বপণ করি। আমাদের বায়ু, পানি ও মাটি সুরক্ষিত রাখি এবং সবার জন্য ভবিষ্যত রক্ষা করি।’
গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ধীরে ধীরে কমছে। তবে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা মাঝারি অবস্থায় থাকায় এখনই বৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না দেশবাসী।
দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য বুধবার (৪ জুন) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ (বুধবার) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে অস্থায়ীভাবে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।
বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস
আজ সকাল ৯টা থেকে ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে।
বৃষ্টিপাতের এই ধারা আগামীকালও (বৃহস্পতিবার) অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তবে বৃষ্টি ঝরার প্রবণতা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে তাদের পূর্বাভাস, খুলনা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
পরের দিন (শুক্রবার) বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমলেও বৃহস্পতিবারের মতোই থাকবে জানিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বলেছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
তবে ঈদের দিন (শনিবার) সকাল থেকে দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি হলেও সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঈদের পরের দিনও সারা দেশের আবহাওয়া একই রকম থাকবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওই দুদিন চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকলেও আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তাপমাত্রা
গতকালের মতো আজও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তবে আজ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে দুটি জেলা—রাজশাহী ও পাবনা। এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
অবশ্য অন্যত্র দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমলেও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এই ধারা পরের দিনও অব্যাহত থাকতে পারে।
তবে ঈদের আগের দিন সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে, যা পরের দিন, অর্থাৎ ঈদের দিনও অব্যাহত থাকতে পারে।
ঢাকার কী অবস্থা
ভোরের দিকে বৃষ্টি হওয়ার পর সকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে ঢাকার আকাশ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিও আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে বলে জানিয়েছে।
আজ (বুধবার) দুপুর ১২টায় ঢাকা ও আশপাশের এলাকার তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৭৫ শতাংশ।
সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত না হলেও দুপুর ১২টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এই সময়ে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা ও প্রচার এবং এবং পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৪’ প্রদানের জন্য তিনজন ব্যক্তি ও তিনটি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করেছে সরকার।
সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিবেশ পদক, ২০২৪ প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় কমিটির সভায় এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগে অবদানের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর গ্রামের বাসিন্দা মো: মাহমুদুল ইসলামকে এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ঢাকার ধামরাইয়ের ‘স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড’ পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা ও প্রচার ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি পর্যায়ে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রামের সিডিএ আবাসিক এলাকার মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। একই ক্যাটাগরিতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে মনোনীত হয়েছে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট’।
এ ছাড়া, পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অবদানের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন প্রফেসর ড. এম. ফিরোজ আহমেদ। এ ক্যাটেগরিতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে মনোনীত হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)।
প্রত্যেক বিজয়ীকে জাতীয় পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। এ সময় তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ২২ ক্যারেট মানের দুই তোলা ওজনের স্বর্ণের বাজারমূল্য, ও আরও ৫০ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র।
কুরবানির পশু কেনার জন্য ভিড় বাড়ছে রাজধানীসহ দেশের সব এলাকার পশুর হাটগুলোতে। পছন্দের পশু কিনছেন সবাই সাধ্যমতো। আবার বিক্রেতা শখের পশুটিকে বিক্রি করছেন অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করে। সেই সঙ্গে আর্থিক কিছু লাভের জন্য। তবে এক্ষেত্রে প্রায় সব বছরই প্রতারণার খবর শোনা যায়। নকল বা জাল টাকা। সর্বশান্ত হোন বিক্রেতা।
বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে জাল টাকা ছাড়েন। বিভিন্ন জাল নোট ঘুরে বেড়ায় এক হাত থেকে অন্য হাতে। কোরবানির পশুর হাট টার্গেট করে জাল টাকা ছড়াতে সক্রিয় বিভিন্ন চক্র। তবে আপনি একটু সচেতন হলে এই বড় প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
১। ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকাসহ প্রত্যেক ধরনের নোটের সামনে ও পেছন দুদিকের ডিজাইন, মধ্যভাগের লেখা, নোটের মূল্যমান ও সাতটি সমান্তরাল সরল রেখা উঁচু নিচুভাবে মুদ্রিত থাকে। ফলে হাত দিলে একটু খসখসে মনে হয়।
২। নোটের ডান দিকে ১০০ টাকার ক্ষেত্রে তিনটি, ৫০০ টাকার ক্ষেত্রে চারটি ও এক হাজার টাকার নোটে পাঁচটি ছোট বৃত্তাকার ছাপ আছে যা হাতের স্পর্শে উঁচু নিচু লাগে। এ বৈশিষ্ট্য জালনোটে সংযোজন করা সম্ভব নয়।
৩। জাল নোটের জলছাপ অস্পষ্ট ও নিম্নমানের হয়। আসল নোটে ‘বাঘের মাথা’ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘মনোগ্রাম’ এর স্পষ্ট জলছাপ আছে। যা ভালো করে খেয়াল করলে আলোর বিপরীতে দেখা যায়।
৪। প্রত্যেক মূল্যমানের নোটেই বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো সম্বলিত নিরাপত্তা সুতা থাকে। নোটের মূল্যমান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো নিরাপত্তা সুতার চারটি স্থানে মুদ্রিত থাকে।
এ নিরাপত্তা সুতা অনেক মজবুত যা নোটের কাগজের সঙ্গে এমনভাবে সেঁটে দেওয়া থাকে যে নখের আঁচড়ে বা মুচড়িয়ে সুতা কোনোভাবেই উঠানো সম্ভব নয়। জাল নোটে এতো নিখুঁত ভাবে সুতাটি দিতে পারে না।
৫। ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের প্রত্যেক প্রকার নোটের ওপরের ডানদিকে কোনায় ইংরেজি সংখ্যায় লেখা নোটের মূল্যমান রঙ পরিবর্তনশীল কালিতে মুদ্রিত থাকে।
ফলে ১০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট ধীরে ধীরে নড়াচড়া করলে মূল্যমান লেখাটি সোনালি থেকে সবুজ রং ধারণ করে। একইভাবে ৫০০ লেখা লালচে থেকে সবুজাভ হয়। অন্যদিকে জাল নোটের ব্যবহৃত রঙ চকচক করলেও তা পরিবর্তিত হয় না।
৬। প্রত্যেক প্রকার টাকার নোটে প্রতিকৃতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম ও নোটের মূল্যমান জলছাপ হিসেবে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম ও নোটের মূল্যমান প্রতিকৃতির তুলনায় উজ্জ্বল দেখায়। জাল নোটে এসব বৈশিষ্ট্য থাকে না।
৭। এছাড়া স্বল্পমূল্যেও বিভিন্ন ব্রান্ডের জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন আছে। এছাড়া ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে জাল নোট সহজেই পরীক্ষা করা যায়। নকল নোট ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখলে শুধু একটা রেখা দেখা যাবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দ্বিতীয় ইন্টেরিম রিপোর্ট জমা দিয়েছে গুম সংক্রান্ত তদন্তকমিশন।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশন প্রধান বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।
সদস্যদের মধ্যে নূর খান, সাজ্জাদ হোসেন এবং নাবিলা ইদ্রিস উপস্থিত ছিলেন।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
প্রতিবেদন জমার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইট ও বই আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি ঘিরে শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিকভাবেও আগ্রহ রয়েছে।’
“কী ভয়াবহ একেকটি ঘটনা! আমাদের সমাজের “ভদ্রলোকেরা”, আমাদেরই আত্মীয়-পরিজনরা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। আপনারা যা যা কিছু পেয়েছেন তার ভিত্তিতে একটি হরর মিউজিয়াম হওয়া উচিত। গা শিউরে ওঠার মতো ঘটনা। এই ধরনের বন্দিশালা কেমন হয়, তিন ফিট বাই তিন ফিট খুপড়ির মধ্যে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আটকে থাকার যে নির্মমতা, নিষ্ঠুরতার চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরা উচিত,’ বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
এসময় তিনি কমিশন সদস্যদের কাছে প্রতিবেদনের আশু করণীয়গুলো চিহ্নিত করে কোনটি কোন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়ছে তা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার নির্দেশনা দেন যাতে করে সরকার স্বল্পসময়ের মধ্যে কাজগুলো শুরু করতে পারে।
একজন কমিশন সদস্য প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ‘ঘটনাগুলো এতটাই ভয়াবহ যে জড়িত অনেক কর্মকর্তা ও অন্যান্যরাও অনুশোচনায় ভোগেন। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আত্মশুদ্ধির একটা প্রচেষ্টা হিসেবে। দুজন অফিসার লিখিতভাবে এর থেকে পরিত্রাণ চেয়ে চিঠিও লিখেছিলেন। চিঠিগুলো গণভবনে পাওয়া গেছে। তৎকালীন সেনাপ্রধান জনসম্মুখে এই চিঠির কথা স্বীকারও করেছেন।’
কমিশন সদস্যরা জানান, কমিশনের কাছে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ এসেছে এবং তারমধ্যে ১ হাজার ৩৫০টি অভিযোগ যাচাই বাছাই শেষ হয়েছে।
কমিশন সদস্যরা আরো জানান, অভিযোগের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো তিনশতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানান তারা।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যাতে অন্তত ব্যাংক হিসেবে লেনদেন করতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানান কমিশন প্রধান।
তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে কেউ সাত বছর নিখোঁজ থাকলে তাকে মৃত বলে ধরে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আইন সংশোধন করে এটিকে পাঁচ বছর করার সুপারিশ করেন তিনি।
অতিদ্রুত যাতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া যায়, সে বিষয়ে করণীয় জানাতে কমিশনকে পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
কমিশন সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা ভয়-ভীতি, নানান রকম হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছেন। এদেশের মানুষের জন্য আপনারা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। ভবিষ্যতে যারা মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করবে আপনারা তাদের অনুপ্রেরণা।’
সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের মাঝে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ৩৬ জেলার আহত ৪ হাজার ৫৫১ জন জুলাই যোদ্ধাকে এ কার্ড দেওয়া হচ্ছে। বাকি জেলার আহতরাও পর্যায়ক্রমে এ কার্ড পাবেন।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জুলাই যোদ্ধাদের জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণের কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলার প্রস্তুতকৃত স্বাস্থ্য কার্ডগুলো সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনদের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।
গত রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলার সিভিল সার্জনকে একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি মনোনয়ন দিয়ে তার নাম, পদবি, মোবাইল নম্বর ও স্বাক্ষরসহ তথ্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে পাঠাতে হবে। এরপর সেই প্রতিনিধির মাধ্যমে স্বাস্থ্য কার্ডগুলো বুঝে নিয়ে নিজ নিজ জেলায় আহত যোদ্ধাদের সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছে দিতে হবে।
দেশের ৩৬ জেলায় স্বাস্থ্য কার্ড যারা পাচ্ছেন তাদের মধ্যে কিশোগঞ্জের ১১২ জন, নরসিংদীর ৪৩০ জন, কুমিল্লার ১০৮ জন, চট্টগ্রামের ১৬৮ জন, ফেনীর ১০৬ জন, বরিশালের ৮২ জন, ঢাকার ৩৭৭ জন, দিনাজপুরের ৬০ জন, সিলেটের ৮৬ জন, টাঙ্গাইলের ২৫৫ জন, সিরাজগঞ্জের ১৪৩ জন, গাইবান্ধার ৩৯ জন, বগুড়ার ২৯৬ জন, লক্ষ্মীপুরের ১৬৬ জন, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার ১৭ জন, নীলফামারীর ৩৪ জন, ঠাকুরগাঁওয়ের ২২১ জন, কুড়িগ্রামের ১৫ জন, গাজীপুরের ৩৭৫ জন, নোয়াখালীর ১০১ জন, ঝিনাইদহের ২৭ জন, নাটোরের ৪ জন, নারায়ণগঞ্জের ১০০ জন, কুষ্টিয়ার ৪৩২ জন, পিরোজপুরের ১৩ জন, জয়পুরহাটের ৬ জন, ময়মনসিংহের ১৭৯ জন, রংপুরের ১১২ জন, ভোলার ৭৬ জন, চাঁদপুরের ১১৮ জন, যশোরের ১৩ জন, নওগাঁয়ের ৫ জন,মাদারীপুরের ৮১ জন এবং বরগুনার ৯৫ জন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ জানায়, ‘স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যে বা বিশেষ ছাড়ে গ্রহণ করতে পারবেন তারা। স্বাস্থ্য কার্ডের সেবা মূলত রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি’।
এর আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধাদের সারাদেশে সকল সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথকার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় গণঅভ্যুত্থানের দুই যোদ্ধা নরসিংদী ইউনাইটেড কলেজের শিক্ষার্থী ইফাত হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান ইমুর হাতে স্বাস্থ্য কার্ড তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বাসসকে বলেন, ‘এই হেলথ কার্ড থাকার অর্থ হলো এক বছর পরে হোক, দু’বছর পরে হোক যে কোনো সময় দেশের যে কোনো সরকারি হাসপাতালে কার্ডধারীরা চিকিৎসা পাবেন। এই কার্ড সবসময়ই থাকবে’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংস্কার কার্যক্রমে বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাবই চূড়ান্ত নয়। রাজনৈতিক দলগুলো যে-সব মতামত দিয়েছে তার ভিত্তিতে পরিবর্তিত প্রস্তাব নিয়েই রচিত হবে জাতীয় সনদ।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ কথা বলেন।
কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সব প্রস্তাবে ঐকমত্য হবে না। যে সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না, সেগুলো জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে না। আমরা কিছু জায়গায় একমত হবো। বাকিটা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করবে। জনগণ কতটা গ্রহণ করবে, সেটা তাদের বিষয়।
আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের সময়ের স্বল্পতা রয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কী কাজ করছে-তা জানতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে জনগণ আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হতে পারে।
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে- এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে যে, সংস্কার সুপারিশে আমরা যেন ন্যূনতম ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আজকের সভায় সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের নিম্নকক্ষে অর্থবিল ব্যতীত সংসদ সদস্যের দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে বিরোধী দলের সদস্য থেকে মনোনয়ন প্রদান, নিম্নকক্ষের নারী আসন ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আলোচনায় অংশ নেন ৩০টি রাজনৈতিক দল। দলগুলো হলো-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণফোরাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাকের পার্টি, জাতীয় গণফ্রন্ট, আমজনতার দল, ভাসানী অনুসারী পরিষদ/ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইসলামী ঐক্যজোট।
এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
কোনো প্রকল্প চলমান থাকা অবস্থায় অনিয়ম হলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) জরিপে ধরা পড়বে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। প্রথমবারের মতো এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ না করে এমন অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে—যার কাজ শেষ করতে দ্বিগুণ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অনেক প্রকল্প আছে যেখানে বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে। আগামীতে এসব দুর্নীতি রুখতে চলমান প্রকল্প জরিপে আইএমইডিকে কাজে লাগানো হবে।’
জয়দেবপুর-আশুলিয়া বাস ট্রানজিট প্রকল্পের উদাহরণ টেনে উপদেষ্টা বলেন, এই প্রকল্পের পেছনে ইতোমধ্যে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের পরিকল্পনায় এত ত্রুটি রয়েছে—যা সমাধান করে কাজ শেষ করতে গেলে বাড়তি আরও তিন হাজার কোটি টাকা লাগবে।
পায়রা বন্দর প্রকল্পের প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় চীনের যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে, সেই কেন্দ্রে কয়লা পরিবহনের জন্য সক্ষম কোনো চ্যানেল রাখা হয়নি। বারবার ড্রেজিং এর মাধ্যমে বাড়তি অর্থ খরচ করে কয়লা আনতে হচ্ছে। এ বিষয়ে সমাধানে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
রাজধানীর মেট্রোরেল প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, প্রায়ই মেট্রোরেলে কারিগরি ত্রুটি দেখা যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে হুট করে আধুনিক এসব প্রকল্প আনা হয় চমক দেখানোর জন্য। মেট্রোরেলে প্রযুক্তিগত সহায়তা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। সরকার এখন এসব নিয়ে কাজ করছে।
যেসব প্রকল্পে ইতোমধ্যে ঋণচুক্তি হয়ে গেছে সেখান থেকে ফিরে আসা মুশকিল উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের নামে জঞ্জাল পরিষ্কার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এমনকি ঋণচুক্তি হয়ে যাওয়া প্রকল্পও সংশোধন করা যায় কিনা তা নিয়ে কাজ চলছে।’
ওয়াহিদউদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে সরকারি ক্রয়নীতি আইন সংশোধন করে পাস করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শতভাগ ই-টেন্ডার কার্যকর হবে। কারা প্রকল্পের কাজ পাচ্ছে এবং সেই কাজ প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে কিনা—সে ব্যাপারে স্বচ্ছতা আসবে।
তিনি বলেন, ‘আগে দেখা যেতো হাতেগোনা তিন চারটি কোম্পানিই বারবার প্রকল্পের কাজ পাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক নির্মাণে ঘুরে ফিরে পরিচিত কয়েকটি ঠিকাদারি কোম্পানির নাম সামনে আসতো। তখন এমনভাবে টেন্ডার সাজানো হয়েছিল—যাতে করে এই কোম্পানিগুলোই বারবার কাজ পায়।’
দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে স্বীকার করে এ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা পরিসংখ্যান ব্যুরোকে দ্রুত একটি জরিপের জন্য বলেছি। জরিপ হাতে আসলে বোঝা যাবে ঠিক কী কারণে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। পরবর্তীতে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
২০২৫-২৬ অর্থবছরের উন্নয়ন ব্যয় (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় পুরোটাই কাজে লাগানো যাবে আশাবাদ ব্যক্ত করে ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘অনেকে বলছেন বাজেটে খাতোয়ারি উন্নয়নের বরাদ্দ কমেছে। আগের বাজেটে যেসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল —তা ছিল বাস্তবতাবিবর্জিত। বছর শেষে দেখা যেতো উন্নয়ন ব্যয়ের বড় অঙ্কের টাকা খরচই হয়নি। এবারের বাজেটে বাস্তবতার নিরিখে এডিপি নির্ধারণ করা হয়েছে।’
চলমান প্রকল্পের বাইরে নতুন প্রকল্পের বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, নতুন যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেগুলো আপাতত শুধু নথিভুক্ত করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের আগে শুরু হবে না। তখন নতুন সরকার এসে সিদ্ধান্ত নেবেন—তারা এসব প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হতে চান কিনা।
আর মাত্র কদিন পরেই মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ উল আযহা। ত্যাগের মহিমায় পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। আর তাই কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে প্রতিবারের ন্যায় এবারও বরিশালে বসছে স্থায়ী এবং অস্থায়ী পশুর হাট। বরিশাল জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, এবার মহানগরীসহ বরিশাল জেলায় কোরবানি উপলক্ষে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৭৯টি পশুর হাট। যার মধ্যে বরিশাল সিটিতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৩টি অস্থায়ী পশুর হাট। তবে স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলিয়ে এবার পশুর হাট বসবে ৯৩টি। পুরো বিভাগের ছয় জেলায় পশুর হাট বসছে ৩২৮টি।
হাটগুলোতে কোরবানি যোগ্য এবং মানসম্মত পশু বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিভাগের ছয় জেলায় মোট ১৩৬টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল জেলায় ৩১টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। দুটি হাটের জন্য একটি করে টিম কাজ শুরু করেছে। এছাড়া সিটি এলাকার স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলিয়ে চারটি হাটে কাজ করছে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ।
তাছাড়া পশু বিক্রেতা, ক্রেতাদের নিরাপত্তা, মহাসড়কে চাঁদাবাজি রোধসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে মেট্রোপলিটন এবং জেলা পুলিশ। পাশাপাশি বরিশাল বিভাগজুড়েই নিরাপত্তা জোরদারের টহল ও চেকপোস্ট বসিয়েছে র্যাব-৮।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের হাট-বাজার শাখার তথ্য অনুযায়ী এবার কোরবানি উপলক্ষে তিনটি অস্থায়ী এবং একটি স্থায়ী হাট বসবে বরিশাল সিটি এলাকায়। এর মধ্যে রূপাতলী এবং কালিজিরা বাজার এলাকায় দুটি, কাগাশুরায় ১টি অস্থায়ী এবং বাঘিয়া এলাকায় একটি স্থায়ী হাট বসছে। ঈদের তিনদিন আগে থেকে ঈদের পূর্বের দিন রাত পর্যন্ত অস্থায়ী হাটগুলোতে পশু বেচা কেনার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের তিনদিন আগে থেকে অস্থায়ী হাট বসার অনুমতি থাকলেও এরই মধ্যে হাটগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। হাটগুলোতে নিয়ে আসা হচ্ছে পশু। তবে এখন পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলের বাইরে থেকে গরু বা খাসি নিয়ে আসা শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন ইজারাদাররা। মঙ্গলবার অথবা বুধবারের মধ্যেই হাটগুলো পশুতে পরিপূর্ণ হবে বলে আশাবাদী তারা।
তবে অন্য জেলা থেকে পশু না আসলেও বরিশালের পশুতেই কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এ বছরে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৪ লাখ ৩২ হাজার ৬১১টি।
বিভাগের ২৬ হাজার ৫৭৮ জন খামারি ও কৃষকদের কাছে মজুত রয়েছে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৪ টি। এর মধ্যে বিভাগের ২ লাখ ১০ হাজার ৬৪টি, ৬৭ হাজার ৬৬৪টি বলদ, ৩৮ হাজার ৩১৭টি গাভি, ১ লাখ ১০ হাজার ৪৯টি ছাগল, ১২ হাজার ৩৫টি ভেড়া এবং অন্যান্য ৫৫টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এতে করে চাহিদা মেটানোর পরেও উদ্বৃত্ত থাকবে ১৬ হাজার ৮৪৩টি পশু।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বরিশাল জেলায় কোরবানির পশুর প্রয়োজন ১ লাখ ১২ হাজার ৯৪৭টি, মজুত রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৭টি, ঝালকাঠি জেলায় ৩১ হাজার ১৯টির বিপরীতে রয়েছে ৩১ হাজার ১১৪টি, পিরোজপুরে ৪১ হাজার ২৫০টির বিপরীতে রয়েছে ৪৬ হাজার ৪৯৭টি, পটুয়াখালীতে ১ লাখ ২৩ হাজার ২১০টির বিপরীতে রয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৪১টি, বরগুনায় ৩২ হাজার ২৩১টির বিপরীতে মজুত রয়েছে ৩৮ হাজার ৯৫টি, ভোলায় ৯১ হাজার ৯৫৪টি বিপরীতে মজুত রয়েছে ৯২ হাজার ৪৫০টি।
বরিশাল বিভাগের বেশিরভাগ খামারি বেশি লাভ করার আশায় গরু এবং খাসি নিয়ে ছুটছেন ঢাকা, খুলনা এবং চট্টগ্রামে। খামারিরা বলছেন, দুই-তিন বছর ধরে একটি পশু লালন পালন করে কোরবানি যোগ্য করা হয়। কিন্তু বরিশালের হাটগুলোতে কোনবারই ভালো দাম পাননা। তাই একটু ভালো লাভের আশায় ঢাকা, চট্টগ্রাম বা খুলনার হাটগুলোতে পশু বিক্রির জন্য নিয়ে যান।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোরবানির কয়েকদিন বাকি থাকলেও হাটগুলো বেচা কেনা শুরু হয়েছে। তবে এখানো তেমন জমে উঠেনি। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় হাটে তেমন পশু এবং ক্রেতা আসতে শুরু করেনি। তার পরও মোটামুটিভাবে বেচা কেনা চলছে।
তিনি বলেন, আমাদের দপ্তরে জনবলের প্রচুর সংকট রয়েছে। তার মধ্যে থেকেই আমরা কোরবানির হাটগুলোতে সুস্থ, রুষ্টপুষ্ট এবং কোরবানি যোগ্য পশু নিশ্চিত করার জন্য জেলায় ৩১টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বিভাগজুড়ে এর সংখ্যা ১৩৬টি। তবে সিটি এলাকার হাটগুলোতে দায়িত্ব পালন করবে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। এরই মধ্যে তারা হাটগুলোতে কাজ শুরু করেছে। সংকট থাকায় টিমগুলো ঘুরে ঘুরে হাটগুলোতে দায়িত্ব পালন করবে।
বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও জেলার স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক লুচিকান্ত হাজং জানিয়েছেন, এবার গোটা বিভাগজুড়েই পশুর হাট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে শুধুমাত্র মহানগরীসহ জেলার ১০টি উপজেলায় তিনদিনের জন্য মোট ৭৯টি অস্থায়ী পশুরহাটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১৪টি স্থায়ী হাট রয়েছে। সব মিলিয়ে অনুমোদিত ৯৩টি হাট বসবে এ জেলায়।
তিনি বলেন, হাটগুলো পশু, ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে জেলা এবং মেট্রোপলিটন পুলিশ। প্রতিটি হাটেই পুলিশের কন্ট্রল রুম খোলা হয়েছে।
ঈদ যাত্রায় রং-টং দিয়ে ফিটনেস বিহীন কোনো গাড়ি কোনো অবস্থাতেই রাস্তায় চলতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার (৩ জুন) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অফিস কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় ফিটনেস বিহীন গাড়িগুলো মালিকেরা রং-টং করে রাস্তায় নামান। রং-টং দিয়ে ফিটনেস বিহীন কোনো গাড়ি কোনো অবস্থাতেই চলতে দেয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় একজন ড্রাইভার রাজশাহীতে একটি গাড়ি নিয়ে গেলে সেখান থেকে সাথে সাথে ফিরে আসতে হয়। আমরা তাদের বলেছি, ড্রাইভারদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, ’মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঢাকা সহ সারা দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন যাতে কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা না হয়। আমরা পুরোপুরি সজাগ রয়েছি।’
তিনি বলেন, ’পুলিশের জন্য শুধু জরুরি ছুটিই রাখা হয়েছে, বাকি সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে।’