শেষ হলো বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলা। বিদায়ের সুরে পর্দা নামল এবারের অধিবর্ষের বইমেলার। তবে এ বছর মেলায় বেড়েছে বেচাকেনা, এসেছে নতুন বইও। এবারের মেলায় ৬০ কোটি টাকারও অধিক বই বিক্রি হয়েছে। আর নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৩ হাজার ৭৫১টি।
মেলায় পহেলা মার্চ পর্যন্ত দর্শনার্থীর সংখ্যা ৬০ লাখের কাছাকাছি। এ বছর নতুন ৬০০ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। এবারের মেলায় ৯ শতাধিকের বেশি স্টল ও ৬৭০টি প্রকাশনী ছিল। এদিকে গত বছর মেলায় বিক্রি হয়েছিল ৪৭ কোটি টাকার বেশি। গত বছর নতুন বইয়ের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৩০টি৷
এদিকে শেষ দিন বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা মেলে ভিন্ন চিত্র। অন্তিম দিনে ছিল না অন্যান্য দিনের মতো ভিড়, অন্য দিনের তুলনায় জমেনি মেলাও। এদিন স্টলে স্টলে শুধুই ক্রেতা ও পাঠকদের ভিড় দেখা গেছে। তবে মেলার শেষ দিনে আড্ডাবাজ দর্শনার্থীদের সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। মেলার শেষ সময়ে বইপ্রেমীদের ব্যাগ ভর্তি বই কিনতেই দেখা যায়। অধিকাংশ পাঠককে হাতে বই নিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। বই ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়ছিলেন না কেউই।
এদিন ব্যস্ত সময় পার করছিলেন বিক্রেতা ও প্রকাশকরা, সঙ্গে ছিলেন লেখকরাও। মেলার শেষ দিন হওয়ায় বই গুছিয়ে ফেলছিলেন স্টলের কর্মীরা। কেবল ক্রেতারা বই চাইলেই বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন। ফলে ক্রেতাদেরই তাগিদ ছিল কাঙ্ক্ষিত বইটি চেয়ে নেওয়ার। অবশ্য বাংলা একাডেমির নির্দেশনায় কোনো প্রকাশনীই এদিন অবশিষ্ট বই মেলা থেকে নিয়ে যেতে পারেনি।
বেশ কয়েকজন বিক্রয়কর্মী জানান, মেলায় শেষ দিন দর্শনার্থী কম হলেও বেচাকেনা ভালো হয়েছে। যারা স্টলে আসছেন তাদের প্রায় সবাই বই কিনেছেন। ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
মেলায় আসা দর্শনার্থী লিমন ইসলাম লিটন বলেন, শেষ দিন মেলায় এসেছি। প্রথম দিকে একবার এসেছিলাম। এখন শুধু নাম দেখে বই নিয়েছি। এবারের মেলায় এখনো আগের ফিকশনগুলোই চলছে। তবে বইমেলা বেশ ভালো চলেছে বলে মনে হয়েছে।
শব্দশৈলী প্রকাশনীর প্রকাশক ইফতেখার আমীন বলেন, মেলার সময় বাড়ানোর কারণে বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। বই কেনেননি- এমন ক্রেতা চোখে পড়েনি। প্রবন্ধ, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাস্থ্যবিষয়ক ও শিশুদের উপযোগী নৈতিকতার বই বেশি বেচাকেনা হয়েছে।
অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ জানান, এবারে বইমেলার সময় দুই দিন বাড়ানোতে বড় বড় প্রকাশনীগুলো লাভবান হয়েছে। আমাদের বেচাকেনা বেশ ভালোই হয়েছে। ক্রেতারা এসেছেন, বই কিনেছেন। এবারের বইমেলা বেশ ভালোভাবেই গেল।
এদিকে অমর একুশে বইমেলার ৩১তম দিনে মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। শেষ দিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪৯টি।
অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে বিকেল ৫টায় শুভেচ্ছা ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলামের লিখিত প্রতিবেদন তার পক্ষে পাঠ করেন একাডেমির উপপরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ।
এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম নাহিদ ইজাহার খান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। বক্তব্য প্রদান করেন সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ লিমিটেডের সিএমও মীর নওবত আলী।
সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে সম্প্রতি বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, এবার ছিল অধিবর্ষের বইমেলা। নির্ধারিত ২৯ দিনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অতিরিক্ত দুই দিন যুক্ত হয়ে ৩১ দিনের দীর্ঘ বইমেলা শেষ হয়েছে। ২০২৪-এর বইমেলা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ছিল বিস্তৃত, ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য। শীতে শুরু হয়ে বইমেলা স্পর্শ করেছে বসন্ত-বাতাস। একুশের রক্তপলাশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্চের চেতনার রং।
সদস্য-সচিব তার প্রতিবেদনে বলেন, ‘মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এবারের বইমেলায় শেষ দিন পর্যন্ত প্রায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এই বইমেলায় বাংলা একাডেমি এক কোটি ৩৬ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে।’
ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা আজ বাঙালির ভাষা, শিল্প-সাহিত্য ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বইমেলার মাধ্যমে প্রতিবছর আমরা আমাদের সৃজনশীলতাকে উদযাপন করি। এই মেলা আমাদের আবেগের, জাতিসত্তার, ভাষা-সাহিত্য ও ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসার মেলা।’
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বেগম নাহিদ ইজাহার খান বলেন, ‘বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এই মেলা দেখতে দেখতে চার দশক অতিক্রম করে এখন বিশাল আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব বাঙালির কাছে যেমন, ঠিক তেমনি বিশ্বের জ্ঞানপিপাসু মানুষের কাছেও একুশের বইমেলা এক অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত।’
মেলা আয়োজনে বাংলা একাডেমির সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ লিমিটেডের সিএমও মীর নওবত আলী বলেন, বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলার সঙ্গে সহযোগিতায় থাকতে পেরে বিকাশ লিমিটেড আনন্দিত ও গর্বিত।
সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ বলেন, ‘আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত এবারের বইমেলা কেবল বই বিক্রির জায়গা নয়; দল, মত, ধর্ম, বর্ণ-নির্বিশেষে সবার প্রাণের মেলা সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে।’
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনের এক অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনা। তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল বিকাশের পরও মুদ্রিত বইয়ের আবেদন যে কোনোমতেই ফুরিয়ে যায়নি তার প্রমাণ একুশে বইমেলায় ক্রমবর্ধমান জনসমাগম।’
গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪
অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে মনজুর আহমদ রচিত একুশ শতকে বাংলাদেশ : শিক্ষার রূপান্তর গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত যাত্রাতিহাস : বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত কিলোফ্লাইট প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকস-কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খি-কে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়।
২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অন্যপ্রকাশ (প্যাভিলিয়ন), নিমফিয়া পাবলিকেশন (২-৪ ইউনিট) এবং বেঙ্গল বুকস (১ ইউনিট)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. শাহাদাৎ হোসেন এবং উপ-পরিচালক সায়েরা হাবীব।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন থেকে এই মন্ত্রণালয়টি ‘নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়’ নামে পরিচিত হবে। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান নাম ‘মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ পরিবর্তন করে ‘নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়’ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।
বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বেগম রোকেয়ার আদর্শ ও দর্শনকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া কখনো সমাজকে বাদ দিয়ে কিছু করেননি, বরং সমাজকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়েছেন। ১০০ বছর আগেই তিনি নারীদের শিক্ষার মাধ্যমে অন্ন উপার্জনের পথ দেখিয়েছেন। ড. ইউনূস আক্ষেপ করে বলেন, আমরা দিবসটি আয়োজন করছি ঠিকই, কিন্তু তাঁর শিক্ষা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারছি না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রোকেয়ার আদর্শকে সঙ্গী করলেই কেবল সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব।
সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মেয়েরা এই অভ্যুত্থানে তাদের নেতৃত্বের প্রমাণ দিয়েছে। আজকের নারীসমাজ গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী এক নতুন শক্তি। তাদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে, যা শুধু নারীদের নয়, পুরো জাতিকে উজ্জীবিত করবে। নারীদের নেতৃত্ব ও অবদানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এবং তাদের সামনে রেখেই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।
নারীশিক্ষা, মানবাধিকার, নারী অধিকার ও জাগরণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চারজন বিশিষ্ট নারীর হাতে সম্মানজনক ‘বেগম রোকেয়া পদক’ তুলে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি নির্বাচিতদের হাতে এই পদক প্রদান করেন।
এ বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চারজন নারীকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। পদকপ্রাপ্তরা হলেন—নারীশিক্ষা ও গবেষণা ক্যাটাগরিতে রুভানা রাকিব, নারী অধিকার (শ্রম অধিকার) ক্যাটাগরিতে কল্পনা আক্তার, মানবাধিকার শ্রেণিতে নাবিলা ইদ্রিস এবং নারী জাগরণ (ক্রীড়া) ক্যাটাগরিতে ঋতুপর্ণা চাকমা।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বেগম রোকেয়ার কর্ম ও আদর্শকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। উল্লেখ্য, প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার অসামান্য অবদান ও নারী জাগরণে তিনি অন্তহীন প্রেরণার উৎস। দিবসটি উপলক্ষে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ায় আপাতত তাঁর লন্ডন যাত্রা স্থগিত থাকছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর যকৃৎ বা লিভারের জটিলতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে তাঁরা বেশ উদ্বিগ্ন। ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে বিদেশে নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২৭ নভেম্বর তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাত, বহুমূত্র, যকৃৎ, বৃক্ক, ফুসফুস, হৃদরোগ ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর চিকিৎসায় দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত চিকিৎসক দল নিয়মিত বৈঠক করে চিকিৎসার ধরন পরিবর্তন করছেন।
চিকিৎসক দলের একজন সদস্য জানিয়েছেন, বয়োজ্যেষ্ঠ এই নেত্রীর শারীরিক উন্নতি হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। একটি রোগের জটিলতা কমলে আরেকটি নতুন করে দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে কিডনি জটিলতা ভোগাচ্ছে বেশি। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে অনেক আগেই, যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস বন্ধ করলেই অবস্থার অবনতি ঘটছে। নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে তাঁকে সর্বাধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল বা শারীরিক নির্দেশকগুলো খুব একটা খারাপ না এলেও তিনি পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নন।
চিকিৎসকদের পরামর্শে গুলশানের বাসা থেকে তাঁর জন্য প্রতিদিন খাবার পাঠানো হচ্ছে। হাসপাতেলে শাশুড়ির শয্যাপাশে দিনের অধিকাংশ সময় কাটাচ্ছেন পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান, যিনি চিকিৎসাসংক্রান্ত বিষয়গুলো সমন্বয় করছেন। এছাড়াও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী এবং গৃহকর্মী ও ব্যক্তিগত সহায়করা সার্বক্ষণিক তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। ভাই শামীম এস্কান্দার ও তাঁর স্ত্রীও নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যেতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ মঙ্গলবার আসছে না। বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে বিমান পরিচালনাকারী সংস্থাটি মঙ্গলবারের নির্ধারিত সময়সূচি বাতিলের আবেদন করেছে। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো পেছাল তাঁর বিদেশ যাত্রা। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, যাত্রার বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল।
বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আবার ১৯৩২ সালের এই একই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নারীমুক্তির এই পথিকৃৎকে শ্রদ্ধা জানাতে আজ পায়রাবন্দে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত পৈতৃক ভিটায় বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে এবার এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেগম রোকেয়ার জন্মভিটা ও আঁতুড়ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করতে যাচ্ছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। আজ মঙ্গলবার বাংলা একাডেমি ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে এই দায়িত্ব হস্তান্তরের ফলে রোকেয়ার আঁতুড়ঘরের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং তাঁকে নিয়ে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী। এতে দেশ-বিদেশের পর্যটক ও গবেষকরা নতুন সুযোগ পাবেন।
তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের হাজারো বাধা ডিঙিয়ে বেগম রোকেয়া নারীর জন্য শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছিলেন। ভাই ইব্রাহীমের সহায়তায় গভীর রাতে মোমের আলোয় তিনি অক্ষরজ্ঞান লাভ করেন, যা তাঁর মনোজগতের দুয়ার খুলে দেয়। তাঁর লেখা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ আজও নারী স্বাধীনতার এক অনন্য দলিল। পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আবু আল বাকেরের মতে, রোকেয়া পায়রাবন্দের মানুষের কাছে শুধু গর্ব নন, তিনি এক ধরনের স্বপ্ন। স্থানীয় গবেষক ও শিক্ষাবিদদের দাবি, পায়রাবন্দকে নারী ক্ষমতায়নের ‘আদর্শ গ্রাম’ ঘোষণা করা হোক, কারণ এখান থেকেই নারী জাগরণের সূচনা হয়েছিল।
তবে স্থানীয়দের মনে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে রোকেয়ার জন্মস্থানের অবহেলা নিয়ে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ আক্ষেপ করে জানান, নারী মুক্তির দিশারি হয়ে জন্মালেও রোকেয়ার জন্মভিটা দীর্ঘকাল অবহেলার অন্ধকারে ঢাকা ছিল। এছাড়া রোকেয়ার দেহাবশেষ ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিটিও দীর্ঘদিনের। ১৯৩২ সালে কলকাতায় মৃত্যুর পর সোদপুর পানিহাটিতে তাঁকে দাফন করা হয়। ২০০৯ সালে পায়রাবন্দে এক আলোচনা সভায় তাঁর ভাইয়ের মেয়ে রনজিনা সাবের ফুপুর দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলেও কাগজে-কলমে তার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। রোকেয়া অনুরাগীদের আক্ষেপ, পায়রাবন্দে তাঁর বাবার সম্পদ ও কবর থাকলেও তিনি নিজে শুয়ে আছেন ভিনদেশে।
বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে রংপুর জেলা প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিনব্যাপী পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে রোকেয়ার আঁতুড়ঘরে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া আয়োজন করা হয়েছে চার দিনব্যাপী ‘রোকেয়া মেলা’। শীতের হিমেল ভোরে কুয়াশা ভেদ করে পায়রাবন্দে আজ জ্বলে উঠেছে রোকেয়ার স্মৃতির আলো, যে আলোয় উদ্ভাসিত হতে চায় আগামীর বাংলাদেশ।
নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির মধ্যে চরম অন্তঃকোন্দল দেখা দিয়েছে। সে দিকে ইঙ্গিত করে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সামনে কঠিন যুদ্ধ উল্লেখ করে বিভেদ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ না হলে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
মনোনয়ন নিয়ে বিরোধের দিকে ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেন, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ নয়, মুখ্য ধানের শীষ, দল এবং দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা। ঐক্যবদ্ধ না হলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কম-বেশি যেটা ভালো মনে হয়েছে, সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তোমার এলাকায় প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে; হয়তো তুমি যাকে পছন্দ করতে, সে মনোনয়ন পায়নি—যে পেয়েছে তার সঙ্গে তোমার যোগাযোগ কম। কিন্তু আরে ভাই, তুমি তো প্রার্থীর জন্য নয়, তুমি ধানের শীষের জন্য, দলের জন্য! এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, মুখ্য তোমার দল, দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা, মুখ্য ধানের শীষ।
তারেক রহমান বলেন, সামনের যুদ্ধটা অনেক কঠিন। ঐক্যবদ্ধ না হতে পারলে সামনে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে। আন্দোলনের সময় যেমন জনগণকে বুঝিয়েছিলে, তেমনি দেশ গড়ার পরিকল্পনা সম্পর্কেও তাদের বোঝাতে হবে, সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো কিছুই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
এ সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে দলটির কিছু বক্তব্যের সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, এখন দেশে এক ধরনের প্রচারণা চলছে- একজন বিশেষ কেউ ভালো, আর বাকি সবাই খারাপ এটা গণতন্ত্রের জন্য ডেঞ্জেরাস ব্যাপার।
তারেক রহমান বলেন, গত ১৬ বছর একটা দল প্রচার করত শুধু তারাই ভালো আর বাকি সবাই খারাপ। ৫ তারিখের পর সেটির বোধহয় কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এখনো আবার এক ধরনের প্রচারণা চলছে যে, একজন ভালো আর বাকি সবাই খারাপ। এসব প্রচারণা পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।
বর্তমান দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস। সেই অবস্থা পরিবর্তন করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া আমরা পারব না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন হায়দার, ডা. মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরী, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই ঋণের ফাঁদে পড়েছি; এ সত্য স্বীকার না করলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়।’
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি ছিল, এখন তা ৭ শতাংশের ঘরে ঘোরাফেরা করছে। সমস্যাটি কোথায়, তা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কর-জিডিপি অনুপাত কমার একটি বড় কারণ হলো, জিডিপির সব খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে না।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ ও ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২৫’ প্রকাশ ও উপস্থাপন উপলক্ষে এ সেমিনার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার।
এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য মঞ্জুর হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিইডির অতিরিক্ত সচিব মনিরা বেগম।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এনবিআর দুই ভাগ হয়ে দুজন সচিবের নেতৃত্বে কাজ শুরু করবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।
অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে বাংলাদেশ গুরুতর ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে, এম আশঙ্কা আছে।’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঋণের ফাঁদে পড়া আমাদের দেশের জন্য ভালো হবে না। তখন ঋণ নিয়ে আবার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ইতোমধ্যে রাজস্ব বাজেটে ব্যয়ের প্রধান খাতের মধ্যে ছিল সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও পেনশন। এরপর দ্বিতীয় স্থানে ছিল কৃষি ও শিক্ষা। কিন্তু কৃষি ও শিক্ষার মতো খাত পেছনে ফেলে এখন জায়গা এখন নিয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধ।’
২০২৫ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পুনরুদ্ধারের আশাব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা গেছে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন পূর্বাভাসে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হলেও বর্তমানে প্রধান সূচকগুলো ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের দিকেই ইঙ্গিত করছে।
জিইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় কম থাকবে বলে বড় উন্নয়ন সহযোগীরা ধারণা করছে।
বিশ্বব্যাংক ৩.৩ শতাংশ থেকে ৪.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) পূর্বাভাস দিয়েছে ৩.৯ শতাংশ। তবে ২০২৬ অর্থবছরে অর্থনীতি গতি সঞ্চার করবে এবং প্রবৃদ্ধি ৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৩ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের বহিঃখাতের উল্লেখযোগ্য স্থিতিশীলতার কথা বলা হয়েছে। শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ, আমদানি স্থিতিশীলতা এবং মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির পুনরুদ্ধার অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রপ্তানি আয়ও শক্তিশালী রয়েছে, যা তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতি মেনে চলা এবং বাজার বহুমুখীকরণের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম অবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে, যা বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই বিভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে জুন মাসে রাজস্ব সংগ্রহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। পরে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং রাজস্ব আদায় পুনরায় শুরু হয়।
জিইডি জোর দিয়ে বলেছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং আর্থিক খাত স্থিতিশীল করা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য অপরিহার্য। যদিও অনেক পূর্বাভাস পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তবে প্রবৃদ্ধি কতটা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য হ্রাস এবং জীবনমান উন্নয়নে রূপান্তরিত হবে তা কার্যকর নীতি, শক্তিশালী আর্থিক খাতের শাসন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশলের ওপর নির্ভর করবে।
প্রতিবেদনটিতে দুর্বল বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প কার্যক্রমকে প্রবৃদ্ধির বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিপরীতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ, রপ্তানি কার্যকারিতা এবং উৎপাদন খাতের আউটপুট-বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প-প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে এবং ২০২৬ অর্থবছরেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশকে সীমিত রিজার্ভ, বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট, ক্রেতাদের পরিবর্তিত পছন্দ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। বৃহৎ ও ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজারের চাহিদা মোকাবিলা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো-বিশেষত পোশাক ও এসএমই খাতে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগকে জাতীয় অগ্রাধিকার দিতে হবে।
উদীয়মান দুর্বলতাগুলো- বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতের অস্থিরতা, দুর্বল বিনিয়োগ পরিবেশ, সুশাসন সংকট এবং বৈদেশিক ঝুঁকি সমাধান করতে ব্যর্থ হলে প্রবৃদ্ধি মন্থর হতে পারে, জীবনমান খারাপ হতে পারে, দারিদ্র্য বাড়তে পারে এবং বৈষম্য দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে, সময়োপযোগী ও সমন্বিত নীতি সংস্কার, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং স্পষ্ট নীতিগত বার্তা প্রদান নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ পুনরায় গতি ফিরে পাবে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে।
জিইডি উপসংহারে বলেছে, কাঠামোগত সংস্কার ও উদ্ভাবননির্ভর অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা সমর্থিত একটি সুপরিকল্পিত জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশল ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনাকে পরিচালিত করবে, যা স্থিতিস্থাপকতা ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক শক্তি বাড়াবে।
সূত্র : বাসস
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী ও বিচারপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি ‘উত্থাপিত হয়নি’ বা ‘নট প্রেসড’ মর্মে খারিজের এই আদেশ দেন।
রিটকারী আইনজীবী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব মো. ইয়ারুল ইসলাম জানান, শুনানির সময় আদালত পর্যবেক্ষণ দেন যে দেশ বর্তমানে নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের এই সময়ে এমন রিট আবেদন উপযোগী নয়। আদালতের এমন পর্যবেক্ষণ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে তিনি রিট আবেদনটি আর শুনানির জন্য উপস্থাপন করেননি। ফলে আদালত সেটি মেরিটে বা বিষয়বস্তুর গভীরে না গিয়ে ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ করে দেন।
এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন স্থগিত চেয়ে এই রিটটি দায়ের করা হয়েছিল। রিটে মূল যুক্তি হিসেবে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করার কথা। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থায় কমিশনের নিজস্ব জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা থাকার পরও জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। রিটকারীর মতে, ডিসি ও ইউএনওরা নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা। তাদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করলে কমিশন কার্যত নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, যা সংবিধানের ও কমিশনের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য যেমন জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন ও স্বতন্ত্র সচিবালয় রয়েছে, তেমনি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিতে একটি ‘ইলেকটোরাল সার্ভিস কমিশন’ গঠন করা আবশ্যক। নির্বাহী বিভাগ থেকে প্রেষণে সচিব নিয়োগ না দিয়ে কমিশনের নিজস্ব দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবল তৈরির মাধ্যমে সচিব নিয়োগের দাবি জানানো হয়। এসব আইনি ও কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে রুল জারির আর্জি জানানোর পাশাপাশি রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল ওই রিটে।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আদালতের কার্যক্রম শেষে দুপুরে প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় এক নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ভ্যানে উঠেই জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করেন। এ সময় তার সঙ্গে ভ্যানে থাকা অন্য আসামিদেরও সুর মেলাতে শোনা যায়।
এর আগে সকালে কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে হেভিওয়েট এই ১৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালে মামলার অগ্রগতি তুলে ধরে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম তদন্ত শেষ করতে আরও দুই মাসের সময় প্রার্থনা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আগামী বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
আজ আদালতে হাজির করা আসামিদের মধ্যে ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী এবং সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। অসুস্থতার কারণে সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানকে আদালতে আনা হয়নি।
ইতোমধ্যে সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু ও জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে পৃথক ফরমাল চার্জ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে গণহত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া কারফিউ জারির মাধ্যমে ছাত্র-জনতা হত্যার অভিযোগে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুবলীগ সভাপতিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও চারজনের বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ দাখিল হওয়ায় তাদের অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা ফরমাল চার্জ দাখিল করা হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর করে তুলতে সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি অত্যন্ত সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে। একটি নিরপেক্ষ ও আনন্দঘন পরিবেশে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে যা যা করণীয়, তার সবই করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যা আগামী জানুয়ারির মধ্যেই সম্পন্ন হবে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবার বিশেষ প্রযুক্তির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ভোটের সময় দায়িত্বপালনরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শরীরে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’ থাকবে। পাশাপাশি ভোট চলাকালীন প্রতিটি কেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার কথাও জানান তিনি।
ব্রিফিংয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক একটি ঘটনা নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। রংপুরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় তিনি তীব্র নিন্দা জানান। একই সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ আবারও পিছিয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় আদালত আগামী ১৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নতুন দিন ধার্য করেছেন।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এদিনও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৩ জানুয়ারি পরবর্তী দিন ঠিক করে আদেশ দেন।
আলোচিত এই চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোড জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। পরে চুরিকৃত সেই অর্থ ফিলিপাইনে পাচার করা হয়। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দেশের অভ্যন্তরের একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের এই বিশাল অর্থ চুরির ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
ঘটনার এক মাস পর, ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও তথ্য-প্রযুক্তি আইনে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলাটি করা হয়। বর্তমানে মামলাটির তদন্তভার সিআইডির হাতে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে রেহাই পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় সোমবার (৮ ডিসেম্বর) তাকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশ মেনে এদিন সকালেই সশরীরে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এই বিএনপি দলীয় প্রার্থী। এ সময় তার পক্ষে শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
ঘটনার সূত্রপাত হয় একটি টকশোতে ফজলুর রহমানের দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। সেখানে তিনি ট্রাইব্যুনালের গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘এই কোর্টে বিচার হতে পারে না’ এবং বিচারকদের নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। এই বক্তব্যের জেরে গত ২৬ নভেম্বর প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগটি আমলে নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল কঠোর ভর্ৎসনা করে বলেন, ট্রাইব্যুনাল না মানার মতো বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এমনকি আদালত ফজলুর রহমানের ওকালতির লাইসেন্স আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এবং ৮ ডিসেম্বর তাকে সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন। আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গত ৩ ডিসেম্বরই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছিলেন ফজলুর রহমান। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং আজ সশরীরে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করায় আদালত তাকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুবলীগ সভাপতিসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। একই দিন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় শেখ হাসিনা সরকারের আমলের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাসহ ১৭ জন হেভিওয়েট আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আনা হয়। এরপর একে একে তাদের নামিয়ে হাজতখানায় নেওয়া হয়। আজ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এসব মামলার অগ্রগতি নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে হাজির করা আসামিদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এবং সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান। এছাড়াও শরিক দলের নেতাদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেও হাজির করা হয়েছে।
হাজির করা অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম এবং সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান দমনে নির্বিচার হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এসব প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম চলছে।