খেজুর আমদানিতে শুল্ক ছিল ৫৩ শতাংশ, ৮ ফেব্রুয়ারি ১০ শতাংশ কমিয়ে করা হয়েছে ৪৩ শতাংশ। শুল্ক কমানোর পরও দাম কমেনি খেজুরের। উল্টো দাম বেড়েছে। যদিও বন্দর থেকে খেজুর খালাসের পরিমাণও বেড়েছে। গত কয়েক দিনে ৬০৫ কনটেইনার খেজুর খালাসের কার্যক্রম চলছে এবং প্রতিদিনই খালাস অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, আগামী ১২ মার্চ পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রমজান মাসজুড়ে সিয়াম সাধনা করেন। দিনভর রোজা রাখার পর সন্ধ্যায় ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে খেজুর। খেজুর ছাড়া এখন আর ইফতারের কথা ভাবা যায় না। প্রায় সব রোজাদারই খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করেন। এ কারণে রমজান মাসে চাহিদা বেশি থাকা পণ্যগুলোর একটি খেজুর। পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে চলতি মাসে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়েছে সরকার। এর পাশাপাশি বাজারে তদারকি ও বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। গত বছরের তুলনায় বর্তমানে দেশের বাজারে খেজুরের দাম প্রায় ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বেড়েছে।
৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি আদেশে খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে আনার ঘোষণা দেয়। এর আগে খেজুর আমদানিতে সর্বমোট ৫৩ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে খেজুরের শুল্কায়ন মূল্য প্রতি টন ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৭৫০ ডলার। এর সঙ্গে কাস্টমস ডিউটি ১৫ শতাংশ, রেগুলেটরি ডিউটি ৩ শতাংশ ও ভ্যাট ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর ৫ শতাংশ হারে দিতে হচ্ছে। এতে বর্তমানে সর্বমোট ৪৩ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত রোজার আগে মানভেদে প্রতি কেজি খেজুরে শুল্ক দিতে হতো ৫ দশমিক ৪৫ থেকে ২১ দশমিক ৮৪ টাকা। তবে এবার খেজুরকে ‘বিলাসীপণ্যের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে খেজুরের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৫৩ শতাংশ করা হয়। ফলে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বেড়ে গেছে। এবার শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫৪ থেকে ২০৮ টাকা। মূলত শুল্কের প্রভাব পড়েছে খেজুরের দামে। গত বছরের তুলনায় প্রতি কেজি খেজুরে জাতভেদে দাম বেড়েছে ১০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত। দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া খেজুরের মধ্যে রয়েছে দাবাস, জাহিদি, বরই ও গলা খেজুর।
চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি গলা বা বাংলা খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, জাহিদি খেজুর ২৪০-২৬০ ও মানভেদে দাবাস খেজুর ৪৫০-৫৫০ টাকায়। এ ছাড়া বরই খেজুর মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৪০-৫৪০ টাকায়। গত বছর এসব খেজুরের দাম ছিল বর্তমান দরের অর্ধেকেরও কম।
এদিকে অভিজাত শ্রেণির কাছে পছন্দের খেজুরের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের মেডজুল, মাবরুম, আজওয়া ও মরিয়ম। গত এক মাসের ব্যবধানে এসব খেজুরের দাম কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা বেড়েছে। জাম্বো মেডজুল মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, সাধারণ মেডজুল ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০, মাবরুম খেজুর ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০, আজওয়া খেজুর মানভেদে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো জাতের মরিয়ম বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। এ ছাড়া কালমি মরিয়ম ৮০০-৯০০ টাকা, সুফরি মরিয়ম ৭৫০-৮০০, আম্বার ও সাফাভি ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ ও সুক্কারি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালে রোজার আগে জাহিদি জাতের খেজুরের দাম ছিল কার্টনপ্রতি (১০ কেজি) ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। শুল্ক আরোপের কারণে দাম বাড়ার পর গত বছরের শেষ সপ্তাহেও একই জাতের খেজুরের দাম ছিল কার্টনপ্রতি ১ হাজার ৮০০ টাকা। তবে এখন ১০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েও এই জাতের খেজুরের কার্টন হাঁকা হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা।
পাইকারি ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি ৫ কেজির এক কার্টন মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকায়। গত বছর এ খেজুর বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। অন্যদিকে সাধারণ খোলা খেজুর প্রতি কেজি ফেব্রুয়ারির শুরুতে কেজিপ্রতি পাইকারি দাম ছিল ১২৮-১৩০ টাকা। বর্তমানে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকায়।
পাইকারি বাজার সূত্রে জানা গেছে, বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় জাহিদি জাতের খেজুর। এক বছর আগে প্রতি কেজি খেজুর খুচরা পর্যায়ে ১৫০ টাকায় পাওয়া যেত। শুল্ক কমানোর পর বর্তমানে এ খেজুর খুচরায় বিক্রি করতে হবে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জন্য আমদানি করা খোলা (বস্তায় বিক্রি হওয়া ভেজা খেজুর) রোজা আসার আগেই কেজিপ্রতি পাইকারি দাম ১৫৫ টাকায় উঠে গেছে। ফলে খুচরা পর্যায়ে এ মানের খেজুর বিক্রি করতে হবে কমপক্ষে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। অবশ্য গতকাল বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক টিটু ঘোষণা দিয়েছেন, সাধারণ মানুষের কাছে খেজুর পৌঁছে দিতে বস্তায় আসা জাহিদি খেজুরের দাম কমানো হবে। আজ রোববার (৩ মার্চ) এই খেজুরের দাম কমানোর ঘোষণা আসার কথা জানিয়েছেন তিনি।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ দিনে সবচেয়ে বেশি খেজুর বন্দর থেকে খালাস নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আগে বন্দর থেকে দিনে খেজুরভর্তি ছয় কনটেইনার খালাস হলেও এখন সেটা ৭০ কনটেইনারে গিয়ে টেকেছে। কিন্তু দাম কমছে না।
ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সরকার শুল্ক কমানোর পর ব্যবসায়ীরা খেজুর খালাসে তোড়জোড় শুরু করেছে। শুল্ক কমানোর পরও ভোক্তারা কম দামে খেজুর কিনতে পারছেন না। শুল্ক কমানোর পর পর্যাপ্ত আমদানি হলেও দাম কেন কমছে না বিষয়টি তদারকি করতে হবে। তদারকি না করলে রোজায় খেজুর কিনতে পারবে না ভোক্তারা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২২ হাজার ৬৬৩ টন খেজুর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস করেছেন আমদানিকারকরা। ১৪৫ দিনের মধ্যে গত ১৫ দিনেই বেশি খেজুরের চালান খালাস হয়েছে। ২৮ ধরনের খেজুর দেশের ৮২টি প্রতিষ্ঠান সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্দান, মিসর, আলজেরিয়া, নামিবিয়া, তিউনিশিয়া ও আফগানিস্তান থেকে আমদানি করেছে।
জানা গেছে, চার মাস আগে খেজুর আমদানি করলেও শুল্ক কমবে এ আশায় ব্যবসায়ীরা পণ্যটি চট্টগ্রাম বন্দরে গুদাম করে রেখেছিলেন। ফলে বেসরকারি ১৯টি ডিপোতে ১ হাজার কনটেইনার (প্রতি কনটেইনারে ২২-২৪ হাজার কেজি খেজুর থাকে) খেজুর পড়ে ছিল। এখন খেজুরভর্তি ৬০৫টি কনটেইনার খালাস চলছে। এখনো খেজুরভর্তি ৩৯৫টি কনটেইনার খালাসের উদ্যোগ নেয়নি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার কাজী ইরাজ ইশতিয়াক বলেন, প্রচুর পরিমাণে খেজুর খালাস হচ্ছে। প্রতিদিনই খালাস করছেন আমদানিকারকরা। তিনি বলেন, খেজুরের শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে।
তিনি জানান, খেজুরের চারটি ক্যাটাগরি রয়েছে। একেকটি ক্যাটাগরির একেক রকম শুল্কহার হয়। মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির প্রবণতাও রয়েছে। অনেক সময় উচ্চ শুল্কহারে খেজুর এনে কম শুল্কহারে ঘোষণা দেওয়া হয়। এমন বেশ কিছু ঘটনাও ঘটেছে। এ জন্য আমরাও সতর্ক আছি, যেন সরকার রাজস্ব বঞ্চিত না হয়।
উচ্চ শুল্কহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা এনবিআর নির্ধারিত, এ ব্যাপারে আমাদের বলার বা করার কিছু নেই। আমরা নির্ধারিত শুল্ক নিয়ে খালাসের ব্যবস্থা করি। খেজুর বিলাসী পণ্য কি না, এ বিষয়েও তিনি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
খাতুনগঞ্জের ডেটস অ্যান্ড ড্রাই ফ্রুটস আমদানিকারক মো. ওমর ফারুক বলেন, খেজুর আমদানিতে কাস্টমস ট্যাক্স ১০ শতাংশ কমালেও অন্যান্য শুল্ক ঠিক রেখেছে এনবিআর। ফলে উচ্চমাত্রায় ট্যাক্স দিয়েই আনতে হচ্ছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সামান্য এ শুল্ক কমানোয় খেজুরের দামে প্রভাব পড়বে না।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার সুলতান আরেফিন বলেন, শুল্ক কমানোর পর থেকে আমদানিকারকরা খেজুর খালাস নিতে শুরু করেছেন। বর্তমানে খেজুর খালাসের পরিমাণও বেড়েছে। আগে প্রতিদিন গড়ে খেজুরভর্তি ছয় কনটেইনার খালাস হলে এখন সেটি ৭০ কনটেইনার খালাস হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতি কেজি খেজুর ১১০ টাকায় কিনলে ১৪০-১৫০ টাকা শুল্ক দিতে হয়। ১২০ টাকায় কিনলে ২০৮ টাকা শুল্ক দিতে হয়। গত বছর ৯০ টাকায় ডলার কিনতে পারতাম। এ বছর ১২০-১২২ টাকা দিতে হচ্ছে। কাস্টমস থেকে অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু ইচ্ছেমতো করা হচ্ছে। এলসি যে মূল্যে খুলছি সে অনুযায়ী শুল্ক নির্ধারণ করা হলে খেজুরের দাম অর্ধেকে নেমে আসে। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না।
বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, পণ্য বন্দরে আসার পর শুল্ক পরিশোধ করে খালাস করতে হয়। এসব কাস্টমসের বিষয়।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, ডলারের দাম বাড়াতে পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে যায়। এর পরও ব্যবসায়ীরা সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছেন।
১৫ ডিসেম্বরের নাটকীয় মুহূর্ত: ভুট্টোর জাতিসংঘ ত্যাগ
১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর, নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদরদপ্তর থেকে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো এক আবেগঘন বিদায় নেন। সেদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ছিল। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর চোখে জল ছিল বলে মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উঠে আসে। ভুট্টো সেদিন অধিবেশনে জাতিসংঘের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “রাখুন আপনাদের নিরাপত্তা পরিষদ। লজ্জাজনক আত্মসমর্পণের সঙ্গে আমি যুক্ত হবো না। আমি কোনো ইঁদুর নই। পালাচ্ছি না, পরিষদ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।” ভুট্টোর এই নাটকীয় প্রস্থান পরদিন নিউইয়র্ক টাইমসের পাতায় স্থান পায়। এই সময়ে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের যৌথ প্রস্তাব এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থাপিত প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি ও পূর্ব পাকিস্তানের কথিত ‘বিদ্রোহী’দের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতার আহ্বান জানানো হয়, যা কূটনীতিকদের কাছে ঢাকার আসন্ন পতনের ইঙ্গিত দেয়।
ষোলো ঘণ্টার আলটিমেটাম এবং আত্মসমর্পণের বার্তা চালাচালি
গুরুত্বপূর্ণ শহর ও ঘাঁটি হারানোর পর পাকিস্তানের শাসকরা পরাজয় নিশ্চিত হয়ে পড়েন। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজিকে চিঠি পাঠিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং সৈন্যদের জীবন রক্ষার্থে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ইয়াহিয়া খান উল্লেখ করেন যে তিনি ইতিমধ্যেই জাতিসংঘে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপরতা শুরু করেছেন।
এই বার্তা পাওয়ার পর জেনারেল নিয়াজি ও গভর্নর সামরিক উপদেষ্টা ফরমান আলী যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল হার্বার্ট স্পিভ্যাকের সাথে দেখা করে 'সম্মানজনক শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতি'র একটি বার্তা ভারতের কাছে পাঠানোর অনুরোধ জানান। স্পিভ্যাক বার্তাটি দিল্লির বদলে ওয়াশিংটনে পাঠান, যেখান থেকে তা ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান শ্যাম মানেকশর কাছে পৌঁছায় ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে।
জেনারেল মানেকশ সেই বার্তার জবাবে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেই কেবল তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং ভারতের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তিনি ঢাকায় বিমান হামলা বন্ধের নির্দেশও দেন। আত্মসমর্পণের জন্য তিনি পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন, যদিও পরে জে এফ আর জ্যাকবের লেখা অনুযায়ী এই সময়সীমা আরও কয়েক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছিল।
যুদ্ধের শেষ দিনের চিত্র
যুদ্ধের শেষ এই দিনে একদিকে আত্মসমর্পণের বার্তা চালাচালি চলছিল, অন্যদিকে ভারতীয় যুদ্ধবিমান দিনভর পাকিস্তানি বাঙ্কার, আবাসস্থল ও কমান্ড-কেন্দ্রগুলোর ওপর বোমা বর্ষণ করতে থাকে। পাকিস্তানি সেনারা আত্মরক্ষার জন্য কিছু বাঙ্কারের ছাদে হাত-পা বেঁধে স্থানীয়দের শুইয়ে রেখেছিল, যার ফলে ভারতীয় বিমান হামলা মাঝে মাঝে ব্যর্থ হয়। একই সময়ে স্থলপথে মুক্তি ও ভারতীয় সেনারা ঢাকার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসের বর্ণনা অনুযায়ী, সেদিন মুক্তিবাহিনীর ঢাকামুখী যাত্রা ছিল বিজয়ীর মতো, পথে সাধারণ মানুষ তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল, তবে নদীতে তখন লাশের স্তূপ ভাসছিল।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের মধ্যে একজন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে জাম্প করবেন। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন। এই ৫৪ জনের একজন আশিক চৌধুরী জাম্প করবেন ওসমান হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে। বিজয়ের দিনে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড ওসমান হাদির দ্রুত আরোগ্য কামনায় সবাইকে দোয়া ও প্রার্থনার আহ্বান জানাই।’
উল্লেখ্য, আগামী ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১১টা থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে পুরনো বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে ফ্লাই পাস্ট মহড়া পরিচালনা করবে।
চলবে বিজয় দিবসের বিশেষ ব্যান্ড-শো। পরে সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদযাপনে পতাকা হাতে প্যারাস্যুটিং করবেন। জনসাধারণের জন্য এই বিশেষ আয়োজন উন্মুক্ত থাকবে।
এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি।
তিনি জাতীয় সংসদের ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। সেদিন রাত থেকে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক মো. আব্দুল হান্নানকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিদারুল আলমের আদালতে শুনানি শেষে এই আদেশ দেওয়া হয়। পল্টন থানার উপপুলিশ পরিদর্শক সামিম হাসান হান্নানকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করেন এবং পরবর্তীতে সাত দিনের রিমান্ড চান।
পুলিশের রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, আসামির কাছ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও মোটর সাইকেল উদ্ধার, জড়িত অজ্ঞাত পরিচয়ের পলাতক আসামিদের নাম, ঠিকানা সংগ্রহ, অবস্থান ও গ্রেপ্তারের জন্য, মূল রহস্য উদঘাটন এবং অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহের উৎস জানার জন্য রিমান্ড প্রয়োজন।
জানা যায়, র্যাব-২ হান্নানকে আটক করে পল্টন মডেল থানায় সোপর্দ করে। গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট এলাকায় শরীফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে অজ্ঞাত পরিচয় দুই সন্ত্রাসী একটি মোটরসাইকেলে এসে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি গুরুতর আহত হন এবং বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে র্যাব-২ সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর (ঢাকা মেট্রো ল-৫৪-৬৩৭৫) শনাক্ত করে এবং বিআরটিএ থেকে মালিক হিসেবে মো. আব্দুল হান্নানকে চিহ্নিত করে। এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ ও ২০২৪-এর ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো পরস্পরবিরোধী নয় বরং এগুলো বাংলাদেশের জাতীয় সত্তা ও ইতিহাস নির্মাণ করেছে। এসব ঘটনাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বিভাজন সৃষ্টির যে রাজনৈতিক অপচেষ্টা চলছে, সে ব্যাপারে জাতিকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আজ ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শহিদ গিয়াস উদ্দিন আহমদের ছোট বোন অধ্যাপক সাজেদা বানু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আবু সাদিক কায়েমসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি ও কারিগরি কর্মচারী সমিতির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।
এসময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রক্টর, প্রভোস্ট, শিক্ষক, বিভিন্ন দফতরের প্রধান, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভার শুরুতে শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে দাঁড়িয়ে ১মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ শুধু স্মরণীয় কোনো ইতিহাস নয় বরং আমাদের জাতীয় ঐক্য, পরিচয় ও অস্তিত্বের ভিত্তি। এই আত্মত্যাগ যতদিন আমাদের স্মৃতিতে জীবিত থাকবে, ততদিন জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্য অটুট থাকবে।
উপাচার্য বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস কেবল আনুষ্ঠানিক কোনো দিবস নয়; এটি আত্মত্যাগের দায় স্বীকার করার উপলক্ষ।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ একটি কঠিন ও ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই সময়ে শহিদদের স্মৃতি আমাদের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার মধ্য দিয়েই শহিদদের প্রতি আমাদের ঋণের কিছুটা হলেও শোধ করা সম্ভব।
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষের আরও বেশি অংশগ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এসব আয়োজন শুধু স্মরণ নয় বরং ঋণ স্বীকার ও দায়িত্ব পালনের একটি সম্মিলিত অঙ্গীকার।
দিবসটি উপলক্ষ্যে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণস্থ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণস্থ স্মৃতিসৌধ, বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধ এবং মিরপুর ও রায়ের বাজার শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয় এবং বিভিন্ন উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস–২০২৫ উপলক্ষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে দেশকে মেধাশূন্য করার নৃশংস অপচেষ্টার শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে আজ রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এ সময় বুয়েটের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সঙ্গে উপস্থিত বুয়েট পরিবারের সকল সদস্য নীরবতা ও গভীর ভাবগম্ভীরতার মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগকে হৃদয়ে ধারণ করে তাঁদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের ডিনবৃন্দ, বিভাগীয় প্রধানগণ, ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, প্রভোস্টবৃন্দ, অফিস প্রধানগণ, ইনস্টিটিউট ও সেন্টারের পরিচালকবৃন্দসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। উপস্থিত সবার কণ্ঠে ও চোখে ছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর বেদনা ও তাঁদের আদর্শে দেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়।
উল্লেখ্য, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা জাতির বিবেক ও আলোকবর্তিকা। তাঁদের রক্তের ঋণ শোধ করা সম্ভব না হলেও বুয়েট বিশ্বাস করে—শিক্ষা, গবেষণা ও মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ জাতি গঠনের মধ্য দিয়েই তাঁদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো যায়। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সেই অঙ্গীকারই পুনর্ব্যক্ত করলো বুয়েট।
দেশে চলমান ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবিতে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এই নোটিশটি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং র্যাবের মহাপরিচালকের কাছে জনস্বার্থে প্রেরণ করেন।
নোটিশে উল্লেখ করা হয় যে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ পতন হলেও পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন থানা ও নিরাপত্তা স্থাপনা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়, যার একটি বড় অংশ এখনও উদ্ধার হয়নি। এসব অবৈধ অস্ত্রের কারণে আসন্ন নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান বলেন যে, ইতিমধ্যেই নির্বাচনী সহিংসতা ও প্রাণনাশের আশঙ্কা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে এবং এই চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করলে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। নোটিশে ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে অবৈধ অস্ত্রের উপস্থিতির প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
নোটিশে আরও বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা হলে তা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকদের ‘জীবনের অধিকার’ লঙ্ঘন করবে। যদিও ‘জুলাই সনদ’ গণভোট একটি জাতীয় ঐকমত্যের বিষয় হওয়ায় তাতে সহিংসতার আশঙ্কা কম, তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রক্রিয়া হওয়ায় অবৈধ অস্ত্রের উপস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজনকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এমতাবস্থায়, নোটিশে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখে ‘জুলাই সনদ’ গণভোট যথাসময়ে আয়োজনের দাবি জানানো হলেও, সব লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের পলাতক সদস্যরা বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিকল্পনা, সংগঠন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করছে—এমন অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা নয়াদিল্লির কাছ থেকে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছে, যাতে এ ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধ হয়। একই সাথে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুরক্ষায় দিল্লির পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশিত বলেও ঢাকা জানিয়েছে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এসব উদ্বেগ তুলে ধরা হয়। সরকারের অভিযোগ, ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সমর্থকদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়ানোর জন্য নিয়মিত উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, যা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য গুরুতর হুমকি।
অন্যদিকে, জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক—এটাই ভারতের প্রত্যাশা এবং এই লক্ষ্যে ঢাকাকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে দিল্লি প্রস্তুত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আদালতের দেওয়া দণ্ডের মুখোমুখি করতে দ্রুত প্রত্যর্পণের বিষয়েও দিল্লির প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে। এছাড়াও, ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের পলাতক সদস্যদের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের দিকেও হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় পুলিশ আরও দুই জনকে গ্রেফতার করেছে, যদিও তাদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে, র্যাব হামলাস্থলে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে আটক করেছিল। জানা যায়, আব্দুল হান্নান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং তিনি পেশায় একজন শ্রমিক।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় দুর্বৃত্তরা শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে, তাঁর অবস্থা এখনও আশঙ্কামুক্ত নয়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটকে সামনে রেখে সরকার সকল রাজনৈতিক দল এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দকে নিরাপত্তা প্রটোকল প্রদান করবে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, পুলিশ এই প্রটোকল দেবে।
এই নিরাপত্তা প্রটোকলের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী, তাঁদের বাসস্থান, কার্যালয়, চলাচল, জনসভা এবং সাইবার স্পেসে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে।
এছাড়াও, গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতৃত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বিশেষ বাড়তি নিরাপত্তা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদীর ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারী ও তার সহযোগীদের পুলিশ ইতোমধ্যে শনাক্ত করেছে। তাদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিবিড় অভিযান চলছে। হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের হাতের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) পরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রেস উইং থেকে আরও জানানো হয় যে, প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তি যাতে সীমান্ত পার হতে না পারে, সেজন্য শুক্রবার রাতেই সমস্ত ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে সন্দেহভাজনদের ছবি ও তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে এবং সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে একাধিকবার সন্দেহভাজনদের অবস্থান শনাক্ত করা গেলেও স্থান পরিবর্তনের কারণে এখনো তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ প্রধান সন্দেহভাজনের চলাচলের ইতিহাস (ট্রাভেল হিস্ট্রি) সংগ্রহ করেছে, যা থেকে দেখা যায় যে তিনি আইটি ব্যবসায়ী পরিচয়ে গত কয়েক বছরে একাধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন; সর্বশেষ গত ২১ জুলাই সিঙ্গাপুর ভ্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে এমন আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনকে ইতোমধ্যে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি এখনও ‘ডিপ কোমা’য় রয়েছেন। তবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তার পরিবার ও সংগঠন।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে হাদির চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ এলায়েন্সের সদস্য সচিব ডা. আব্দুল আহাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হাদির শারীরিক অবস্থা আগের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে, তবে তার শরীরে কিছু অভ্যন্তরীণ সাড়া (ইন্টারনাল রেসপন্স) পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসকরা তাকে ৭২ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন, যা আগামীকাল সোমবার রাতে শেষ হবে। ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট সময় পার না হওয়া পর্যন্ত তাকে এখনই আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।
এদিকে, হাদির পরিবার ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা তাকে বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে তার শারীরিক সক্ষমতার ওপর। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিদেশে স্থানান্তরের ধকল সয়ে নেওয়ার মতো শারীরিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলেই কেবল তাকে দেশের বাইরে পাঠানো সম্ভব হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
তিনি রোববার সকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান ।
এ সময় ঘড়ির কাঁটায় সময় সকাল ৭টা ২২ মিনিট।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে প্রধান উপদেষ্টা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
পাশাপাশি তিনি আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন ।
একাত্তরের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। স্বাধীনতার সূর্য ওঠার আগমুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার চেষ্টা চালায়।
এর আগে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সকাল আনুমানিক ৭টা ০৪ মিনিটে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) মাসুদ এবং তার মালিকানাধীন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেড’-এর সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।
এনবিআরের ঊর্ধ্বতন সূত্র জানিয়েছে, হত্যাচেষ্টার ঘটনার চলমান তদন্তের অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মূলত সন্দেহভাজনের আর্থিক লেনদেনের তথ্য যাচাই এবং হামলার পেছনে অর্থের উৎস খুঁজে বের করতেই মাসুদের ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সব হিসাব সাময়িকভাবে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মাসুদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি বেসিসের সদস্য।
এদিকে গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাদির শারীরিক অবস্থা এখনও আশঙ্কামুক্ত নয়। হামলার ঘটনায় জড়িত অন্যদের শনাক্ত করতে এবং আর্থিক যোগসূত্র বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
আজ ১৪ ডিসেম্বর, সাভারবাসীর ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটোর বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে হানাদারমুক্ত হয়েছিল ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া জনপদ। বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে ১৬ বছর বয়সী এই বীর কিশোরের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল সাভারের মাটি, যার ফলে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে উত্তরবঙ্গ ও টাঙ্গাইল থেকে পালিয়ে আসা পাকিস্তানি সেনারা ১৪ ডিসেম্বর সকালে আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকায় অবস্থান নিলে মুক্তিযোদ্ধারা শ্রীগঙ্গা কাঁঠালবাগানে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শুরু হয় তীব্র সম্মুখযুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে হানাদার বাহিনী পিছু হটতে থাকলে বিজয়ের উল্লাসে সহযোদ্ধাদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যান অকুতোভয় কিশোর টিটো। ঠিক সেই মুহূর্তেই শত্রুর বুলেটে তিনি শহীদ হন। তার এই মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমেই নিশ্চিত হয় সাভারের স্বাধীনতা।
মানিকগঞ্জের উত্তর শেওতা গ্রামের সন্তান ও দশম শ্রেণির ছাত্র টিটো ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসংলগ্ন ডেইরি গেট এলাকায় সমাহিত করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আজ তার সমাধিসৌধ ‘টিটোর স্বাধীনতা’য় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
উল্লেখ্য, ১৪ ডিসেম্বরের এই চূড়ান্ত লড়াই ছাড়াও সাভারের মধুরআঁটি ও বিরুলিয়ার রুস্তমপুরেও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুসহ অন্য কমান্ডাররা। ১৫ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর আক্রমণে শত্রুরা পুরোপুরি ঢাকার দিকে পালিয়ে গেলে সাভার সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ছাড়াও ‘সংশপ্তক’, ‘বিজয় যাত্রা’র মতো ভাস্কর্য এবং সড়ক ও স্থাপনার নামকরণ করা হয়েছে শহীদদের স্মরণে।