পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দশক শেষ হয়েছে। ঘনিয়ে আসছে আনন্দ উৎসবের দিনটি। আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ ঈদ সামনে রেখে পোশাক কেনন। তাতে উৎসবে নতুন পোশাক পরার কাজও হয়, আবার সারা বছরের ব্যবহারিক প্রয়োজনও পূরণ হয়।
আজ শুক্রবার রাজধানীর একাধিক বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, চিরায়ত রেওয়াজেই ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। তবে বেচাকেনা পুরোমাত্রায় শুরু হয়নি। ক্রেতারা দোকানে দোকানে ঘুরেফিরে ঈদের বাজারে নতুন কী এল, দরদাম কেমন, এসবই পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে যাই হোক, কেনাকাটায় ছোটদের আবদার পূরণ সবার আগে। ছোটদের জন্য কেনাকাটা দিয়েই ঈদের বাজার শুরু হয়।
মোহাম্মদপুরের টোকিং স্কয়ারে কথা হয় তাজমহল রোডের বাসিন্দা ফেরদৌসী জাহানের সঙ্গে। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে এসেছেন পোশাক কিনতে। মেয়ের জন্য পার্টি ফ্রক ও জুতা কিনেছেন। সন্তানের জন্য পোশাক কিনতে পেরে খুশি হলেও রয়েছে বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগ।
রাপা প্লাজার দ্বিতীয় তলাজুড়ে তৈরি পোশাকের দোকান। এখানে ‘টপ টু বটম’ নামের পোশাকের দোকানের ব্যবস্থাপক সোহেল রানা জানালেন, মেয়েদের পার্টি ফ্রকের দাম ১ হাজার ৪৯৫ টাকা থেকে ২ হাজার ৫৯৫ টাকা, সুতির টপস, স্কার্ট-টপস, এসবের দাম ২৯৫ থেকে ৫৯৫ টাকা পর্যন্ত। লেগিংস পাওয়া যাবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। ছেলেদের থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ও হাফ শার্টের সেট ৯৯৫ থেকে ১ হাজার ৪৯৫ টাকা।
এই বিপণিবিতানের এন এম মার্টের স্বত্বাধিকারী নূর মোহাম্মদ জানালেন, পোশাকের দাম গড়ে প্রায় ২৫ ভাগ বেড়েছে। তারা দেশি আর চীনের তৈরির পোশাকই বেশি বিক্রি করেন। যে থ্রি-পিসের দাম গতবার ৮০০ টাকা ছিল, এবার তার দাম কমপক্ষে এক হাজার টাকা।
দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোও ঈদ সামনে রেখে শিশুদের জন্য হরেক রকম নকশা আর ডিজাইনের পোশাক এনেছে। কে-ক্র্যাফটের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন জানান, এবার মা-বাবা, ছেলে-মেয়ের জন্য বিশেষ ‘কম্ব সেট’ এনেছেন। এতে শাড়ি, পাঞ্জাবি, পায়জামা, থ্রি–পিস ও ফ্রক থাকবে। চারজনের জন্য সেটের দাম পড়বে ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।
তরুণদের পছন্দ সুতি ও সিকোয়েন্স পাঞ্জাবি
সুতি অথবা সিল্কের কাপড়ে পুতির কাজ। কখনো পাঞ্জাবিজুড়ে, কখনো বুকে ও হাতায়- এ ধরনের পাঞ্জাবিকে বলা হচ্ছে সিকোয়েন্স। নতুন ধাঁচের (ব্র্যান্ড নিউ) এ পোশাকে মজেছেন তরুণরা। এ ছাড়া গরমের কথা ভেবে অনেকেই কিনছেন সুতির কাপড়ের ওপর প্রিন্টের কাজ করা পাঞ্জাবিতে। বুকে ও হাতে সামান্য এমব্রয়ডারি করা পাঞ্জাবিও চলছে বেশ। ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব পাঞ্জাবি।
আজ শুক্রবার মিরপুর ১, ২, ১০ ও ১২ নম্বরের বিভিন্ন মার্কেট ও শোরুম ঘুরে ঈদবাজারের এ চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া দাম নিয়ে বরাবরের মতো ক্রেতাদের অভিযোগের শেষ নেই। দাম নিয়ে বিক্রেতাদের পাল্টা যুক্তিও দেখা গেছে। পাঞ্জাবি ছাড়াও এক রঙের বা প্রিন্টের শার্ট বিক্রি হচ্ছে বেশি।
মিরপুর ১০ নম্বরের এফএস টাওয়ার শপিংমলটি চলতি মাসেই উদ্বোধন হয়েছে। সেখানে রয়েছে একাধিক ব্র্যান্ড শপ। শপিংমলটির তৃতীয় তলায় পাঞ্জাবি ডিলাক্স নামের একটি দোকানে দুইজন বিক্রেতাকে পাঞ্জাবি গোছাতে দেখা যায়।
দোকানটির স্বত্বাধিকারী সবুজ হোসেন বলেন, চুমকি, স্টোন, পুতির কাজ বসানো পাঞ্জাবি সিকোয়েন্স। দেখতে আকর্ষণীয় ও পরতে আরাম এ পাঞ্জাবিগুলোই এবার চলছে বেশ। গরমের কথা মাথায় রেখে তরুণরা সেমি লং পাঞ্জাবি কিনছেন। ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৮০০ টাকার সিকোয়েন্স পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে দোকানটিতে। এ ছাড়া ইন্ডি কটন, রাজশাহী সিল্ক পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৩৬০০-৪২০০ টাকায়। আর বাচ্চাদের জন্য সাধারণ কাজের পাঞ্জাবি নিচ্ছেন অভিভাবকরা। এ ক্ষেত্রে সুতি, সফট লিলেন কাপড়ে এমব্রয়ডারি ও ব্লকের কাজের পাঞ্জাবি ৫০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর ১০ ও ২ নম্বরের ফ্যাশন হাউসগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, সিকোয়েন্স ও সুতি কাপড়ের পাঞ্জাবির সংগ্রহ। মিলান ব্র্যান্ডের রিজান আহম্মদে বলেন, ‘আমাদের এখানে রেমি কটনে প্রিন্ট, বুকে ও হাতে কাজের পাঞ্জাবিই বিক্রি হচ্ছে বেশি। ১৭০০-২০০০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এসব পাঞ্জাবি। তবে থাকছে ডিসকাউন্টও।’
ফ্যাশন হাউস জেন্টল পার্কের শোরুমে দেখা যায়, স্লিম ফিট পাঞ্জাবি খুঁজছেন ক্রেতা। বুকে ও হাতে এমব্রয়ডারির কাজের পাঞ্জাবি শোরুমটিতে মিলছে ১৯০০-৩২০০ টাকায়, আর শিশুদের এক কালারের পাঞ্জাবি ১১০০-২৮০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বিক্রেতাদের অভিযোগ ১৮০০-২০০০ টাকার নিচে মিলছে না জুঁতসই পাঞ্জাবি। যেসব পাঞ্জাবি গত বছর ১০০০-১২০০ টাকা ছিল এবার ১৮০০-২০০০ টাকা। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় পাঞ্জাবির দাম ৫০০-১০০০ টাকা বেশি। এ ছাড়া শিশুদের পোশাকের দামও অস্বাভাবিক বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
মোহাম্মদপুর থেকে মিরপুর ১০ নম্বরে পাঞ্জাবি কিনতে আসা মেহেদী হাসান বলেন, দুই হাজার টাকার নিচে ভালো পাঞ্জাবি নেই। ভালো ফ্যাশন হাউসগুলোতে পাঞ্জাবির দাম শুরু হচ্ছে ২২০০ টাকার পরে। দাম গতবারের তুলনায় ৫০০- ৮০০ টাকা বেশি। তবে এটাও ঠিক এবার জিনিসপত্রের দামও বাড়তি।
সুতির কাপড়ের পাঞ্জাবি কিনেছেন মিরপুর ১ নম্বরের বাসিন্দা সোহন রহমান। বুকে ও হাতে সামান্য এমব্রয়ডারির কাজ থাকা পাঞ্জাবিটির দাম পড়েছে ২৩০০ টাকা। তিনি বলেন, দাম তো চড়া সব জিনিসের। তবে এবার পাঞ্জাবির দামটা অনেক বেশি। পাঞ্জাবি ও পায়জামা কিনতে তিন হাজার টাকা লেগেছে।
এসডি ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী শুভ বলেন, ‘সিকোয়েন্স পাঞ্জাবি প্রাইস ট্যাগে ৩২০০ টাকা। কিন্তু আমরা ১৮০০ টাকায় বিক্রি করছি। ক্রেতাকে একদাম বলছি।’ বাড়তি দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুতা থেকে শুরু করে সব কিছুর দামই বাড়তি। এখনো পাঞ্জাবি ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে।
মেয়েদের পছন্দ সুতি, জর্জেট থ্রি-পিস, টু-পিস
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মেয়েদের সুতি ও জর্জেট থ্রি-পিস, টু-পিস, লোন জাতীয় পোশাক বেশি কিনছেন। কাশ্মীরি লোন, গুজরাটি, আলিয়া কাট, নায়রা কাট, আফগান ড্রেস বিক্রি হচ্ছে বেশ। সুতির থ্রি-পিস দেড় হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টু-পিস ও ওয়ান-পিস ১৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকায়, জর্জেট থ্রি-পিস সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেহেঙ্গা ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর ১০ নম্বরের জেন্টল পার্কের বিক্রয়কর্মী শামীম হাসান বলেন, ওয়ান-পিস, টু-পিস ও কাশ্মীরি লোন এবার চলছে বেশি। ১২৯০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব পোশাক।
জমেনি জুতার বাজার
জুতার বাজার ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতা খরা। বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা জুতা কিনেন সবার শেষে। পাঞ্জাবি, শার্ট কেনার পর জুতা বিক্রি বাড়ে। সেই হিসেবে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বাড়তে পারে জুতার ক্রেতা।
বাজারে লোফার মডেলের জুতা ৮০০-১৫০০ টাকা, নাগরা ও অন্যান্য স্যান্ডেল ৬০০-১৮০০, কেডস, স্নিকার ১২০০-২০০০ টাকা আর বাচ্চাদের বিভিন্ন জুতা ৬০০-১২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।