প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন জি রবার্টসকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তাতে সাড়া দেন এবং সুবিধামতো সময়ে এই সফর সম্পন্ন করবেন বলে আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন জি রবার্টস এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান উভয় দেশের বিচার বিভাগের দ্বিপাক্ষিক এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতিও এতে তাঁর অকুণ্ঠ সমর্থন এবং অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে ফলপ্রসু যোগাযোগ ও আয়োজনের মাধ্যমে উভয় দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
দেশের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের মার্কিন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বাংলাদেশের কোন প্রধান বিচারপতির এটিই প্রথম সাক্ষাৎ।
এই সময় প্রধান বিচারপতির সাথে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতির আদালতের কার্যপ্রণালী পর্যবেক্ষণ করেন। বিচার অধিবেশনের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি শেখ হাসান আরিফকে উপস্থিত অন্যান্য বিচারপতি এবং আইনজীবীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২২ মার্চ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। সফর শেষে ৩১ মার্চ তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
হজযাত্রীদের জন্য জরুরি বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স। এতে, হজযাত্রীদের ফিরতি যাত্রাসহ যাবতীয় কার্যক্রমের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে বিমানের বিক্রয়কেন্দ্রে এবং অতি জরুরি প্রয়োজনে জেদ্দা বা মদিনার অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
আজ বুধবার বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিবছর হজযাত্রীরা হজ পালন শেষে ফিরতি যাত্রা সুষ্ঠু, সুন্দর এবং নিরবিচ্ছিন্ন করার জন্য মক্কা ও মদিনায় অস্থায়ী অফিস স্থাপন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মক্কা ও মদিনায় অস্থায়ী অফিস স্থাপনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
এতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি সৌদি আরবের ভিসা নীতিমালায় বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের নাগরিকদের জন্য সাময়িক ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যার ফলে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সৌদি ভিসা আবেদনসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তারা হাজীদের সেবায় দেশটিতে যেতে পারছেন না।’
হজযাত্রীদের ফিরতি যাত্রায় টিকিট পরিবর্তনসহ যাবতীয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হজ এজেন্সি ও প্রতিনিধিদের নিম্নলিখিত ঠিকানায় অফিস চলাকালীন সময়ে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে।
এছাড়া, অতি জরুরি প্রয়োজনে বিমান জেদ্দা সিটি অফিস বা বিমান মদিনা সিটি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া ঠিকানা—
জেলা বিক্রয় অফিস, মতিঝিল, ঢাকা
বিমান ভবন
মতিঝিল, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮০২-২২৩৩৫৭০০২, +৮৮০১৭২৭৯৯০৯২২
ই-মেইল: [email protected]
জেলা বিক্রয় অফিস, চট্টগ্রাম
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, চট্টগ্রাম
বিমান ভবন, ১/২ সিডিএ এভিনিউ, পূর্ব নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম।
ই-মেইল: [email protected]
ফোন: +৮৮০১৭৭৭৭১৫৭০০
+৮৮০১৭৭৭৭১৫৭২৩
+৮৮০১৭৭৭৭১৫৭২৫
জেলা বিক্রয় অফিস, সিলেট
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সিলেট বিমান ভবন, মজুমদারি, এয়ারপোর্ট রোড, সিলেট।
ই-মেইল: [email protected]
ফোন: +৮৮০১৭৭৭৭১৫৭১০
+৮৮০১৭২৫২৩৫৬৬৪
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, দেশে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ জন। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ।
করোনা আক্রান্ত হয়ে আজ কেউ মারা যায়নি। এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ৫০০ জন। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৮০ জন। সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তিনি পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের অংশ হতে আগ্রহী নন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাদের কাজ হলো নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করা।
নির্বাচনের পরে দায়িত্ব গ্রহণকারী পরবর্তী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের অংশ হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার আছে কিনা এবং কোনো পদে থাকবেন কিনা—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘কোনো উপায় নেই, কোনো উপায় নেই। আমার মনে হয়, আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্য এটি করতে চান না।’
অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেন, তাদের কাজ হলো ক্ষমতা হস্তান্তর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার সময় জনগণ যাতে খুশি হয়—তা নিশ্চিত করা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
প্রশ্নোত্তর পর্বের পর তিনি লন্ডনের চ্যাথাম হাউসের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে তিনি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগ যদি তরুণদের হত্যা, গুম করতে এবং অর্থ চুরি করতে পারে। তাই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের পরিচয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আপনি কি এখনও এটিকে রাজনৈতিক দল বলবেন? তাহলে, এটি একটি বিতর্কিত বিচার নয়।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তারা মনে করেন, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেই অধ্যায় বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন (আওয়ামী লীগ) - তাদের কেউই ভুল স্বীকার করেননি বরং তারা জনগণকে উত্তেজিত করছেন।
তিনি বলেন, জাতি আপাতত দেশের নিরাপত্তা ও রাজনীতির সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত থাকবে। আমরা কেবল এটাই করেছি।’
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অতীতে গণমাধ্যম কখনও এত স্বাধীনতা ভোগ করেনি।
আরেকজন সাংবাদিক ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরটি ‘সিটি করপোরেশনের বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা’ এবং ‘প্রশাসনের নীরবতা’ ও কিছু দল বা ব্যক্তির জমায়েত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
উত্তরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অনেক বিষয় ও প্রশ্ন একসঙ্গে এসেছে এবং তারা সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেননি। ‘এটা এমন এক সময় ছিল—যা আমরা অতিবাহিত করেছি। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল এবং এখন বিষয়গুলো শৃঙ্খলায় এসেছে...। দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আমাদের জন্য একটি বড় কাজ ছিল।’
যুক্তরাজ্যে চার দিনের সরকারি সফরের দ্বিতীয় দিনে বুধবার দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জনাথন পাওয়েলের সঙ্গে বৈঠক করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকটি লন্ডন সময় সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শেষ হওয়ার কথা।
এরপর চাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের পরিচালক বেন ব্ল্যান্ড এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. চিয়েতিগজ বাজপেইয়ের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, অধ্যাপক ইউনূস আজ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে (চাথাম হাউস) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন।
বিকেলে চাথাম হাউসের পক্ষ থেকে তার সম্মানে সংবর্ধনা আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় অধ্যাপক ইউনূস ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রণে একটি নৈশভোজে যোগ দেবেন, যা দ্য কিংস ফাউন্ডেশনের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত।
অধ্যাপক ইউনূস মঙ্গলবার লন্ডনে পৌঁছেছেন। এই চার দিনের সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আরও শক্তিশালী করা।
এরআগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর।”
তিনি আরও জানান, অধ্যাপক ইউনূস ব্রিটেনের রাজার সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন। এছাড়া তার আরও কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে।
ঈদ-উল-আজহার টানা ছুটিতে চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন পর্যটন ও দর্শনীয় স্পটগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। সাজেকের কিছু স্পট বন্ধ এবং সেন্ট মার্টিনসহ কয়েকটি এলাকায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় চায়ের রাজ্যে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। শহর ও শহরের বাইরের বিভিন্ন স্থানে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।
এদিকে, আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সার্বক্ষণিক মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তবে বেশ কিছু পর্যটন স্পটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখতে পাননি বলে জানিয়েছেন ঘুরতে আসা পর্যটকরা।
বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্যমতে গত চারদিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩ হাজার ৯শত ৪৬জন পর্যটক প্রবেশ করেন। পর্যটকদের প্রবেশ ফি থেকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ৫শত ৭০ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। ঈদের দিন পর্যটকের সংখ্যা কম থাকলেও ঈদের পর দিন থেকে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়।
ঈদের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিন সরেজমিনে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে গিয়ে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল বধ্যভূমি ৭১, বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র, রাবার বাগান, বিটিআরআই চা বাগান, চা কন্যার ভাস্কর্য, দার্জিলিং টিলা, নীলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, হরিণছড়া গলফ মাঠ, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন ও জীব বৈচিত্র্য ভরপুর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাত, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষ্মীনারায়ণ দিঘী, ২০০ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমসেরনগর বাঘীছড়া লেক, আলিনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামণ্ডিত উঁচু নিচু পাহাড়বেস্টিত সারিবদ্ধ পদ্মছড়া চা বাগান, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মনিপুরী ললিত কলা একাডেমি, প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মনিপুরী, টিপরা ও গারোসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন ধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ পর্যটকদের ঢল নেমেছে।
এছাড়াও মৌলভীবাজার জেলায় হাওড়, পাহাড় ও টিলাবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শতাধিক দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায়। সবুজের সমারোহে ঘেরা চা বাগান, জীববৈচিত্র্য ও নান্দনিক প্রকৃতি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। প্রতি বছর ঈদসহ বিভিন্ন সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়ে যায় কয়েকগুন।
ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা ছবি ও সেলফি তুলে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। পাশাপাশি ছোট্ট শিশুরাও আনন্দে মেতে উঠেছে। বিভিন্ন চায়ের দোকানে বসে পর্যটকেরা প্রাণবন্ত আড্ডায় মেতে উঠেছেন। পাশাপাশি, চাঁদের গাড়িখ্যাত জিপ গাড়িগুলো নিয়ে চা বাগানের আঁকাবাঁকা পথে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে অনেককেই।
রাজধানী ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসেন আসিফ। তিনি বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলা তো অন্যান্য জেলার থেকে সুন্দর। বাংলাদেশের মধ্যে অসম্ভব সুন্দর একটি স্থান এই জেলা। দেশের পর বিদেশেও এ জেলার সুনাম রয়েছে। কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে গিয়েছি, ছবি তুলেছি। যদিও আবহাওয়া অনেক গরম তবুও ভালো লেগেছে। সুন্দর সবুজ পরিবেশ। চা বগান তো বরাবরই সুন্দর হয়ে থাকে, অনেকটা সময় কেটেছে সেখানে।’
সাতখিরা থেকে ঘুরতে কমলগঞ্জ এসেছেন তান্নী হাসান। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, 'আজকের ভ্রমণটি আমার খুব ভালো লাগছে। নুরজাহান চা বাগান ও গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টে গিয়েছি, মানে এতো মনোমুগ্ধকর এবং সবুজের অরণ্য দেখতে খুবই ভালো লাগছে। সবকিছু মিলিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চায়ের দেশে ঘুরতে ভালো লাগছে।'
সিলেট থেকে শিশুদের নিয়ে ঘুরতে আসা শিক্ষিকা মিলি আক্তার। তিনি বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। সুন্দর পরিবেশে নির্ভাবনায় সময় কাটাতে পেরেছি, এটা খুব ভালো লাগছে। বধ্যভূমি ৭১ ও কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর গল্ফ মাঠে শিশুরা খেলাধুলা করছে। শহরের ভেতরে এমন খোলা জায়গায় শিশুদের আনন্দ করতে দেখে ভালো লাগছে। কাজের ব্যস্ততায় সময় বের করা যায় না। তাই ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি।'
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. কাজী নাজমুল হক এ প্রতিবেদকে বলেন, ঈদের টানা ছুটিতে প্রচুর পর্যটক লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পরিবার - পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন, আগত পর্যটকরা যাতে নির্ভিগ্নে ঘুরে বেড়াতে পারে সেজন্য বনকর্মীদের পাশাপাশি, সিএমসি‘র সদস্যদের তদারকি, সিপিজি‘র সদস্য ট্যুরিস্ট গাইডরা রয়েছেন। এছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক টুরিস্ট পুলিশ ও কমলগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টিম দায়ীত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, গত চারদিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৩হাজার ৯শত ৪৬জন পর্যটক প্রবেশ করেন।পর্যটকদের প্রবেশ ফি থেকে ৪ লক্ষ ৫০হাজার পঁচশত সত্তর টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ওসি মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যাতে কেউ কোনো সমস্যায় না পড়েন। লাউয়াছড়া, মাধবপুর লেক, বধ্যভূমি, দার্জিলিং টিলাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে আমাদের টহল ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক ভাবে চলমান রয়েছে।’
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবীর বলেন, ‘ঈদুল আযহা'র ছুটিতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি প্রতিদিন থানা পুলিশের একটি টিম কাজ করছে,এছাড়া আমি নিজেও ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করি।’
তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর হাজারো পর্যটক চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এসব দর্শনীয় স্থান অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চা বাগানগুলো পর্যটকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে সময়-সময় থাকে।’
মৌলভীবাজার সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমান বলেন, ‘পর্যটক ও স্থানীয়দের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ঈদের ছুটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে সমন্বয় করে প্রতিটি পর্যটন স্পর্টগুলোতে আমাদের পুলিশ আছে। পর্যটকরা যেন ঈদের ছুটি কাটিয়ে নির্ভিগ্নে বাড়ি ফিরতে পারে সেই লক্ষেই আমরা কাজ করছি।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। চিহ্নিত হচ্ছে ভাইরাসটির নতুন নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সংক্রমণ ঠেকাতে বন্দরে নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে সাতটি পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। বুধবার (১১ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সতর্কতার কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা ভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট এরইমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে।’
‘আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের বিস্তার প্রতিরোধে দেশের সব স্থল-নৌ-বিমান বন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করার বিষয়ে এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
এসময় স্বাস্থ্য মহাপরিচালক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ৭ নির্দেশনা দেন। সেগুলো হলো-
১. জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। একান্ত প্রয়োজন হলে অবশ্যই মাস্ক পরুন।
২. শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করুন।
৩. হাঁচি বা কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখুন (কনুই বা টিস্যু ব্যবহার করে)।
৪. ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন।
৫. সাবান ও পানি অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবেন না।
৭. আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
সংবাদ সম্মেলনে করোনা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রস্তুতির বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, করোনা শনাক্তে আবারও আরটি-পিসিআর ও র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি করোনার টিকা, প্রয়োজনীয় ওষুধ, অক্সিজেন, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও এইচডিইউ সুবিধাসহ কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও সেবা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম যেমন—কেএন-৯৫ মাস্ক, পিপিই ও ফেস শিল্ড নিশ্চিত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এসব প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধিমালার (আইএইচআর) আওতায় পরিচালিত ডেস্কগুলোকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যশোরের শার্শায় সন্ত্রাসীদের হামলয় বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছে। এলাকায় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার (১০ জুন) রাত ১০টার দিকে উপজেলার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত লিটন (৩০) দুর্গাপুর গ্রামের আজগর আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) রাত ১০ টার দিকে লিটন বাজারে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় ওই এলাকার সেলিম ও রমজান তার ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় এবং কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
এ সময় লিটনের চিৎকারে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্বজনরা এসে তাকে উদ্ধার করে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা আজগর আলী বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মমিন, সেলিম হোসেন ও রমজান আলীর সঙ্গে তার ছেলের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। তারা এর আগেও কয়েকবার আমার ছেলেকে মারধরও করেছে। ঈদের আগের দিন তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কিও হয়। এসব ঘটনার জেরে লিটনকে হত্যা করা হয়েছে।’
শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন বলেন, ‘লিটন বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী। শত্রুতার জেরে সেলিম ও রমজানসহ সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে।’
কমনওয়েলথ মহাসচিব শার্লি আয়র্কর বোচওয়ে বলেছেন, আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহী সংস্থাটি।
গতকাল লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বোচওয়ে বলেন, 'বাংলাদেশ যদি চায়, বিশেষ করে সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য, তাহলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।'
বোচওয়ে বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করা আগামী পাঁচ বছরের জন্য কমনওয়েলথের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।
তিনি আরও জানান, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সংগ্রামে সহায়তা করাও সংগঠনের অগ্রাধিকারভিত্তিক লক্ষ্য।
কমনওয়েলথ ২.৭ বিলিয়ন জনগণের প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে ঘানার এই নাগরিক বলেন, বর্তমানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আগামী কয়েক বছরে তা কমপক্ষে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, কমনওয়েলথের অনেক সদস্য রাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এর মধ্যে অনেক দেশ আকারে অত্যন্ত ছোট।
'আমরা তাদের জলবায়ু অর্থায়নে প্রবেশাধিকার পেতে সহায়তা করার চেষ্টা করব,' তিনি বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কমনওয়েলথ মহাসচিবকে ক্রীড়া খাতে সম্ভাবনা অনুসন্ধান এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
'ক্রীড়া শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও। আমরা ক্রীড়াবিদদের উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি। কমনওয়েলথের স্মরণীয় হয়ে ওঠার জন্য ক্রীড়া হতে পারে একটি ভালো মাধ্যম,' বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
কমনওয়েলথ মহাসচিব জানান, চলতি মাসে তারা ঢাকায় একটি যুব প্রোগ্রাম আয়োজন করতে যাচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, কমনওয়েলথের ১.৫ বিলিয়ন জনগণ তরুণ এবং তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার জন্য তারা কাজ করছেন।
তিনি জানান, তারা কমনওয়েলথ বৃত্তিগুলো পুনর্গঠনের পরিকল্পনাও করছেন, একটি ক্ষেত্র যা প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সাক্ষাৎকালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এবারের ঈদুল আজহায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানির পশুর চামড়ার বর্ধিত নতুন দাম নির্ধারণ করে দিলেও নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি হয়নি বলে অভিযোগ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, মূল সমস্যা সমাধান না করে চামড়ার দাম বাড়ালেই বাজার চাঙ্গা হবে না।
কোরবানির প্রথম ৭২ ঘণ্টায় ঢাকার বাজারে সবচেয়ে বেশি চামড়া এসেছে লালবাগের পোস্তায়। কাঁচা চামড়ার এ আড়তে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা শহরের নানা জায়গা থেকে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছেন চামড়া। তবে তাদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন দর অনুযায়ী, এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
ট্যানারির হিসাব অনুযায়ী, ৩০ বর্গফুট কিংবা এর চেয়ে বেশি আকারের চামড়াকে বড়, ২০ বর্গফুটের ওপরের চামড়াকে মাঝারি এবং ২০ বর্গফুটের নিচের চামড়াকে ছোট চামড়া হিসেবে ধরা হয়।
এ হিসাবে সর্বনিম্ন দাম ধরলেও একটি বড় চামড়ার দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৮০০ টাকা, মাঝারি ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ১৫ ফুটের ছোট চামড়ার দাম হয় ৯০০ টাকা। কিন্তু মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় চামড়া বিক্রি করতে পারছেন। এর চেয়ে বেশি দামে কোনোভাবেই চামড়া বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
চামড়া ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘কোরবানির দিন বিকালে প্রতি পিস চামড়া ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছি। ৯০০ টাকা দাম বলে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও ক্রেতা পাওয়া যায়নি।’
একই অভিযোগ জানিয়ে আরেক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মিলন সরকার বলেন, ‘কেউ ফুট মেপে চামড়া কেনেনি। পিস হিসেবে গড়পড়তা ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায় চামড়া বিক্রি করেছি। সরকার দাম বাড়িয়েছে শুনে মাদরাসা–লিল্লাহ বোর্ডিং থেকে বেশি দামে চামড়া কিনে বড় বিপদে পড়তে হয়েছে।’
কেন সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা হচ্ছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে পোস্তার আড়তদাররা জানান, এবার চামড়ার বাজার আগেরবারের চেয়েও খারাপ। নির্ধারিত দামে চামড়া কিনলে লোকসান দিয়ে ট্যানারির কাছে চামড়া বিক্রি করতে হবে।
এ বিষয়ে কাঁচা চামড়ার সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, ‘যারা চামড়ায় অর্থলগ্নি করত, এবার তাদের অনেকেই এ ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী আগের সরকারের রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তারা পলাতক। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের হাতে নেই নগদ টাকা। আগে যে ব্যবসায়ী ১০ হাজার পিস চামড়া কিনতেন, এবার তারা কিনছেন ৫ হাজার পিস করে।’
এ ছাড়া পোস্তায় প্রচুর নষ্ট চামড়াও এসেছে উল্লেখ করে টিপু বলেন, ‘৩০ শতাংশেরও বেশি চামড়া পচে গেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লবণ না লাগিয়ে কাঁচা চামড়া নিয়ে এসেছেন। বিক্রি করতে করতে অনেক চামড়া হয় পচে গেছে, না হলে মান হারিয়েছে। সরকার লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লবণ না দিয়ে চামড়া এনেছেন। এতেও দাম অনেক কমেছে।’
ঈদের তৃতীয় দিন সাভার চামড়া শিল্পনগরী পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান জানান, সরকারের পক্ষ থেকে চামড়া সংরক্ষণে ৩০ হাজার টন লবণ বিতরণ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের লবণ বিতরণের পরেও কেন তারা লবণযুক্ত চামড়া আড়তে আনেননি—এমন প্রশ্নের জবাবে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার শুধু আড়তে লবণ দিয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানেন না যে কোথা থেকে বিনামূল্যে লবণ সংগ্রহ করতে হয়। তাই অনেকেই লবণ না পেয়ে নিজে টাকা দিয়ে কিনেছেন, অনেকে আবার লবণ না লাগিয়েই চামড়া আড়তে নিয়ে গেছেন।’
সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের লবণ পাননি উল্লেখ করে আরেক ব্যবসায়ী সুমন মৃধা বলেন, ‘নিজেই লবণ কিনে চামড়ায় লাগিয়েছি। একেকটি বড় সাইজের গরুর চামড়ায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকার লবণ দিতে হয়। ছাগলের চামড়ায় কম করে হলেও ৫০ টাকার লবণ লাগে।’
এদিকে, সোমবার যশোরের সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম রাজারহাট পরিদর্শন শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, ১৫ বছর ধরে চামড়া শিল্পে নৈরাজ্য চলছে। একদিনে চামড়া শিল্পের এত বড় সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়। কাঁচা চামড়া রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দেশে দাম না পেলে বিদেশে চামড়া রপ্তানি করতে পারবেন।
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জন্য চামড়া রপ্তানি একেবারেই অসম্ভব; এমনকি দেশে যেসব চামড়ার আড়ত আছে, তাদের সিংহভাগের রপ্তানি সক্ষমতা নেই বললেই চলে—এমন মন্তব্য করে বিএইচএসএমএর মহাসচিব বলেন, ‘রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে সরকার যদি মনে করে যে কাঁচা চামড়া রপ্তানি চাট্টিখানি ব্যাপার, তাহলে তারা ভুল ভাবছেন। চামড়া রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করতে যে পরিমাণ শ্রম এবং সক্ষমতা লাগে, তার কিছুই আড়তদারদের নেই।’
‘দাম না পেলে চামড়া রপ্তানি করুক—এ ধরনের কথা এক ধরনের হঠকারিতা’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দোষ কি সিন্ডিকেটের, নাকি সমন্বয়ে গলদ?
এপেক্স ট্যানারির চামড়া বিভাগে প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করেছেন নজরুল ইসলাম খান। ট্যানারিটির সাবেক এই মহাব্যবস্থাপক বলেন, ‘কোরবানির ঈদ এলেই সিন্ডিকেটের কথা তোলা হয়, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এত বছরেও সরকার দেখাতে পারল না কারা আসলে সিন্ডিকেট করে। বাস্তবিক অর্থে চামড়ার বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। মূল সমস্যা সমন্বয়ে।’
‘সরকারের নীতির সঙ্গে ট্যানারি মালিকদের অনেক ক্ষেত্রে যোগসাজশ থাকে না। আড়তদারদের কথা শোনার কেউ নেই। আর এই বাহাত্তর ঘণ্টায় যারা চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করেন, এত বছরেও তাদের দেওয়া হয়নি কোনো প্রশিক্ষণ, জানেন না চামড়া কীভাবে সংরক্ষণ করতে হয়।’
নজরুল বলেন, ‘সকালে পশু কোরবানি হলে নিয়ম দুপুরের মধ্যে আড়তে চামড়া নিয়ে যাওয়া এবং বিকালে আড়ত থেকে ট্যানারিতে তা স্থানান্তর করা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্যানারিতে চামড়া আনতে আনতে রাত দশটা–এগারোটা বেজে যায়। সঠিকভাবে চামড়া সংরক্ষণ না করে এত দীর্ঘ সময় বাইরে রাখার কারণে চামড়ায় পচন ধরে, ফলে মান কমে যায়। বিশেষ করে রাত ১২টার পর ট্যানারিতে যেসব চামড়া আসে, তার সিংহভাগই থাকে পচা ও নিম্নমানের।’
সরকারের সঙ্গে ট্যানারি মালিকদের সমন্বয়হীনতা প্রসঙ্গে খাতটির মালিক সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ফুটপ্রতি চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, সেটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় না মেনে নিজের মতো দাম নির্ধারণ করেছে। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে দাম দিয়েছে তা লবণযুক্ত চামড়ার। আমরা ট্যানারি মালিকরা সরাসরি কাঁচা চামড়াও কিনি। এবার সারা দেশ থেকে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা, সেখানে কাঁচা চামড়া কিনেছি ৩ লাখ ৭৫ হাজারটি। এই কাঁচা চামড়ার দাম কী হবে, সে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্যারিফ কমিশন থেকে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণের কথা উঠলেও আমলে নেয়নি মন্ত্রণালয়। এতে করে বিপদে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ট্যানারি মালিকদের দেওয়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ছোট সাইজের লবণযুক্ত চামড়ার দাম সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩৫০ টাকা। সে হিসাবে ১৭ ফুটের ছোট চামড়ার দাম বর্গফুটপ্রতি পড়ে প্রায় ৮০ টাকা, যা আবার নির্ধারিত মূল দামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাস্তবতা বিবর্জিত নানামুখী এ ধরনের সিদ্ধান্তে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা শুরুতে খুশি হলেও পরে এসে আবারও হতাশ হতে হয়েছে তাদের।’
চামড়া খাতের গোড়ায় গলদ
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয় ১১৩ কোটি ডলার, যা সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কমে হয়েছে ৯৬ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
দিন দিন কেন এ খাতে রপ্তানির বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে—সে প্রসঙ্গে চামড়া রপ্তানিকারক ইমা লেদার এক্সপোর্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আবুল হোসাইন বলেন, ‘২০১৭ সালে রাজধানী থেকে ট্যানারি হেমায়েতপুরে স্থানান্তরের পর এখন পর্যন্ত এসব ট্যানারি এলডব্লিউজি (লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ) সার্টিফিকেট পায়নি। এ সনদ না থাকার কারণে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের চামড়া রপ্তানি একরকম বন্ধ হয়ে আছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের চামড়া রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার চীন। অল্প কিছু চামড়া ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে যায়। পশ্চিমা বাজার ধরতে না পারায় এ খাত থেকে ব্যবসা গুটিয়ে অনেকেই বাধ্য হয়ে চলে যাচ্ছেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে (এসটিআইই) নির্মিত সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) এখনো কার্যকর হয়নি। এই প্ল্যান্ট পুরোপুরি কার্যকর না হলে এলডব্লিউজি সনদ মিলবে না। মূলত এই সনদের অভাবেই বিদেশে বেশি দামে চামড়া বিক্রির সুযোগবঞ্চিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন ট্যানারি মালিকদের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, ‘চামড়া রপ্তানিতে আমরা চীনের কাছে জিম্মি। চীনের ব্যবসায়ীদের একটি বড় সিন্ডিকেটের কাছে আমরা বাধ্য হয়ে একেবারে কম দামে চামড়া বিক্রি করছি। যেখানে প্রতি বর্গফুট চামড়া ১ ডলার ২০ সেন্টে বিক্রি করার কথা, সেখানে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬০ সেন্টে।’
তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ঠিক করে দিলেও এ দামে চামড়া কিনে রপ্তানি করতে গেলে প্রতি বর্গফুটে বাংলাদেশি মুদ্রায় দাম পাওয়া যাবে ৭০ টাকার মতো; ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়েও কম।’
প্রস্তুতকৃত চামড়ার রপ্তানিমূল্য এত কম হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে কম দামে চামড়া কিনতে হয় ট্যানারি মালিকদের। সিইটিপি ঠিক না করে স্থানীয় বাজারে চামড়ার দাম বাড়ালেও স্বাভাবিকভাবেই তাই সুবিধাবঞ্চিত হবেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি এ খাত মুখ থুবড়ে পড়বে বলে শঙ্কা ট্যানারি সংশ্লিষ্টদের।
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত পাচারকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তাদের পাচার করা অবৈধ অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তিনটি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা— ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-ইউকে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর উপলক্ষে মঙ্গলবার (১০ জুন) এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায় সংস্থাগুলো।
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সন্দেহভাজন অর্থ পাচারকারী বাংলাদেশি অলিগার্ক, যাদের দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে দেশটির আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টা জোরদার করতে দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও জবাবদিহিমূলক সুশাসনের পথে অগ্রযাত্রার অভূতপূর্ব সম্ভাবনার বর্তমান সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রসংস্কারের চলমান উদ্যোগ, বিশেষ করে দুর্নীতির কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে পাচার হওয়া সম্পদ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাজ্যকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে এমন জোরালো বার্তা দিতে হবে যে, চূড়ান্ত বিবেচনায় অর্থপাচারকারীদেরকে শুধু উৎস হিসেবে বাংলাদেশই নয়, গন্তব্য দেশ যুক্তরাজ্যেও কার্যকরভাবে জবাবদিহি করতে হয়।’
স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেন, ‘সময়ের অপচয় না করে তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ জব্দের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও অর্থ পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের পলিসি ডিরেক্টর ডানকান হেমস বলেন, ‘অর্থপাচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য সরকার যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে অর্জিত (বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত) যুক্তরাজ্যে ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড সম্পদের যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যথাযথভাবে অনুসন্ধান করে যুক্তরাজ্য সরকারকে তা জব্দ করতে হবে।’
তার আহ্বান, ‘ইউকে সরকারের প্রতিশ্রুতি যেন শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্যাত্রার প্রচেষ্টায় কার্যকরভাবে সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে হবে।’
উল্লেখ্য, দ্য অবজারভার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের তদন্তে যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের মালিকানাধীন কমপক্ষে ৪০ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) ইতিমধ্যে ৯ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতি নির্মূল ও শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে পাচার হওয়া কোটি কোটি পাউন্ড পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার আনুমানিক পরিমাণ প্রতি বছর ১১০০ কোটি পাউন্ড (১৬০০ কোটি ডলার)। বাংলাদেশ সরকারের গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির অনুমান অনুসারে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন ডলার হারে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক ইউনুস এর আগে দুর্নীতি নির্মূল এবং শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার সরকারের শ্বেতপত্র কমিশনের অনুমান অনুসারে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ১১০০ কোটি পাউন্ড (১৬০০ কোটি ডলার) করে মোট ২৩৪ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার শান্তি পুনরুদ্ধার ও জবাবদিহি নিশ্চিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রসচিব ‘অর্থ পাচারের স্বর্ণযুগ শেষ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন।
ঈদুল আজহা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব। ধর্মীয় উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এবারের ঈদুল আজহায় সারা দেশে বিপুল সংখ্যক পশু কোরবানি করা হয়েছে। এ বছর বাংলাদেশে ঈদুল আজহায় ৯১ লাখের বেশি পশু কোরবানি করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ও ছাগলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
আজ মঙ্গলবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকারি সংস্থা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, ২০২৫ সালে দেশে ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু কোরবানি হয়েছে। যার মধ্যে গরু/মহিষ ৪৭ লাখ ৫ হাজার ১০৬টি, ছাগল/ভেড়া ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৮টি। এছাড়া অন্যান্য পশু কোরবানি হয়েছে ৯৬০টি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মূলত পশু কোরবানির হিসাব করে থাকে। অধিদপ্তর বলছে, স্তরায়িত দৈব নমুনায়নের (স্ট্র্যাটিফায়েড র্যান্ডম স্যাম্পলিং) ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে এবারের হিসাব করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার ৩টি গ্রাম (ছোট, মাঝারি এবং বড়) থেকে অন্তত এক শতাংশ নমুনা সংগ্রহ করে হিসাবটি করা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার কোরবানির পশু অবিক্রীত ছিল ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৬০৩টি। কারণ হিসেবে অধিদপ্তর বলছে, এবার কোরবানির পশুর উৎপাদন বেশি ছিল। তাই পশু অবিক্রীত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তা ছাড়া অবিক্রীত এই পশু সামনে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে দরকার পড়বে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে সিলেট বিভাগে। এই সংখ্যা ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮২৩ টি। এরপর কম পশু কোরবানি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। এই সংখ্যা ৩ লাখ ৮৩ হাজার ১৬২টি। আর সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এই সংখ্যা ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭১। এর পর বেশি কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই সংখ্যা ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৪০টি। চট্টগ্রাম বিভাগে কোরবানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩২টি গবাদিপশু। খুলনা বিভাগে কোরবানি হয়েছে ৮ লাখ ৪ হাজার ২২৪ টি গবাদিপশু।
বরিশাল বিভাগে কোরবানি হয়েছে ৪ লাখ ৭৮৩টি গবাদিপশু। রংপুর বিভাগে কোরবানি হয়েছে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯টি গবাদিপশু।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সোমবার (৯ জুন) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন।
মঙ্গলবার (১০ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৩ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৫ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫ হাজার ১৫ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ নারী।
পবিত্র হজ সম্পন্ন করে প্রথম ফিরতি ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন ৩৬৯ জন হাজি। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ‘এসভি-৩৮০৩’ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এ সময় বিমানবন্দরের বোর্ডিং ব্রিজে হাজিদের স্বাগত জানান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। তিনি ফুল দিয়ে প্রথম ফিরতি ফ্লাইটের হাজিদের বরণ করে নেন।
বিমানবন্দরে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, আজ আরও সাতটি ফিরতি ফ্লাইটে আড়াই হাজারের বেশি হাজি দেশে ফিরবেন। ফিরতি হজ ফ্লাইট চলবে আগামী ১১ জুলাই পর্যন্ত।
এ বছর হজ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৫ হাজার ৩০২ জন ধর্মপ্রাণ মুসল্লি সৌদি আরবে গেছেন। এরমধ্যে প্রথম হজ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ২৯ এপ্রিল। এরপর প্রায় এক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে হজযাত্রীদের বহন করে ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হয়। সর্বশেষ হজ ফ্লাইটটি যায় গত ১ জুন। পুরো এই সময়ে মোট ২২০টি হজ ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৫ হাজার ৩০২ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে গেছেন।
জানা গেছে, এবার হজ ফ্লাইট পরিচালনায় অংশ নেয় তিনটি এয়ারলাইনস। সেগুলো হচ্ছে —বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইনস এবং ফ্লাইনাস। ফিরতি যাত্রার ক্ষেত্রেও এসব এয়ারলাইনস প্রতিদিন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা করবে।