ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটছে মানুষ। রেল-নৌ ও সড়কপথে ঢাকা ছাড়ছে নগরবাসী। এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক নির্বিঘ্নে ও স্বস্তিতেই যাত্রাপথে মানুষ যাচ্ছেন বলে জানা যায়। গতকাল সোমবার পোশাকশ্রমিকদের ঈদের আগে শেষ কর্মদিন ছিল। ফলে বিকেলে অফিস শেষ করে পোশাকশ্রমিক থেকে শুরু করে এই সেক্টরের মানুষ ছুটে চলেছে বাড়ির পথে। এজন্য গতকাল বিকেলের পর সড়কে বেশ চাপ দেখা যায় গাড়ির। আজ মঙ্গলবার সরকারি অফিস, ব্যাংক সেক্টর থেকে শুরু করে প্রাইভেট সেক্টরের বেশির ভাগ অফিস খোলা থাকায় অনেককেই অফিস করতে হচ্ছে। যদিও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সোম ও মঙ্গলবার ঐচ্ছিক ছুটি নেওয়ার সুবিধা থাকায় অনেকেই গত বৃহিস্পতিবার শেষ অফিস করে আগেভাগেই দেশের বাড়িতে গেছেন বলে জানা যায়। তাই এবারের ঈদে অনেক আগে থেকেই বাড়ির টানে শহর ছেড়েছে নগরবাসী।
তবে গতকাল বিকেলের পর থেকে রাজধানী ঢাকা থেকে মানুষ সড়কপথে বাড়ির টানে ছোটে। এটা মূলত পোশাকশ্রমিকদের কর্মস্থল ছুটি হওয়ার জন্যই হয়েছে। এজন্য ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথ ঢাকার সাভার, গাজীপুরের দুই মহাসড়কে বেশ যানজটের খবর পাওয়া যায়। স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদের ভিত্তিতে সেখানকার মানুষের যানজটে বসে থাকার খবর জানা গেছে। নৌপথ ও রেলপথে যাত্রীরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়িতে ফিরলেও শেষ সময়ে সড়কপথের ঈদযাত্রায় যাত্রীদের কষ্ট করতে হয়েছে বলে জানা গেছে।
গাজীপুরে দুই মহাসড়কে ৭ কিলোমিটার যানজট
শিল্প-কারখানা অধ্যুষিত গাজীপুরের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান গতকাল সোমবার থেকে কর্মীদের ছুটি দিয়েছে। ফলে গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের ঢল নামে। অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীর তুলনায় যানবাহনের সংকট তো ছিলই। যানবাহনে ওঠার পরও যানজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপে উভয় পাশে প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। যানবাহনের গতি বাড়াতে কাজ করছে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ।
গাজীপুরের শিল্প পুলিশের সূত্রমতে, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পোশাক কারখানাসহ ছোট-বড় পাঁচ হাজারের বেশি শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে অধিকাংশ ছুটি হয়েছে গতকাল। বেলা ১১টার পর থেকেই কারখানাগুলোতে ছুটি শুরু হয়। শ্রমিকেরা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন। তারা ছুটি পেয়েই গোছানো ব্যাগ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। একসঙ্গে দুটি মহাসড়কেই বেড়েছে যাত্রীদের চাপ, দেখা দিয়েছে পরিবহন সংকট ও যানজট। ধারণা করা হচ্ছে, যাত্রীর চাপ আজ রাত অবধি বাড়তে থাকবে। হঠাৎ করে যাত্রীদের ঢল নামায় যানবাহনের সংকট তৈরি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও যানবাহন না পেয়ে নারী, শিশুসহ যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
দুই মহাসড়কে যাত্রীর ঢল, মোড়ে মোড়ে যানজট
ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। এত এত যাত্রীর তুলনায় পরিবহনের সংখ্যা খুবই কম। পরিবহন সংকটে পড়ে বাস, ট্রাক, পিকআপ ও ড্রাম্প ট্রাকে করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দেখা যায় অনেকে।
জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রার কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির দীর্ঘ সারি রয়েছে। কবিরপুর থেকে চন্দ্রা পার হয়ে ঈদযাত্রার গাড়িগুলো মহাসড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে। এতে মহাসড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার যানবাহনগুলো গতি হারাচ্ছে। গতি হারিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য যানজট তৈরি হয়েছে।
গাজীপুর ছাড়াও গাবতলী, আশুলিয়া, বাইপাল, সাভার ও নবীনগর এলাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো চন্দ্রা এলাকা পার হয়ে উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এ পরিস্থিতি বাড়তে থাকলে ভুগতে হবে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষদের।
অপরদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে যাত্রীদের অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে স্বল্প দূরত্বের চলাচলকারী বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও পিকআপ। এসব পরিবহনগুলো দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে ইচ্ছে মতো ভাড়া হাঁকিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। মহাসড়কের ওপর বা মহাসড়ক ঘেঁষে দাঁড়ানোর ফলে গতি হারাচ্ছে দূরপাল্লার পরিবহনগুলো। গতি হারিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে দীর্ঘ যানজটের তৈরি হয়েছে। এছাড়াও মহাসড়কের ওপর দীর্ঘ সময় গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করানোর কারণেও যানজটের তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো মোড়ের যানজট প্রায় কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও যাত্রী ওঠানামা শেষে আবার মুহূর্তেই যানজট মিলিয়ে যাচ্ছে।
সাভারে ২০ কিলোমিটার যানজট
ঢাকার অদূরে সাভারের বিভিন্ন পয়েন্টে গতকাল ২০ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ঈদে ঘরমুখো মানুষ। তবে হাইওয়ে পুলিশের দাবি, কোথাও কোথাও গাড়ির ধীরগতি রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ যানজট নেই। গতকাল বিকেলে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়ক ও ইপিজেড-আশুলিয়া-আব্দুল্লাপুর সড়কে যানজটের চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর থেকে বলিয়ারপুর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার, জাহাঙ্গীরনগর থেকে নবীনগর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার, নবীনগর থেকে নয়ারহাট ২ কিলোমিটার ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের শ্রীপুর থেকে চন্দ্রা প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং ইপিজেড-আশুলিয়া-আব্দুল্লাপুর সড়কে বাইপাইল থেকে নবীনগর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার ও বাইপাইল থেকে জামগড়া ২ কিলোমিটার সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে।
ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্বস্তি
এবার ঈদযাত্রায় ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের যাত্রায় নেই কোনো যানজট। তাই যাত্রা পুরোটাই স্বস্তির বলে জানিয়েছেন চলাচলকারী যাত্রীরা। সোমবার সকাল থেকে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা। যানবাহনের চাপ বাড়লেও নেই তেমন যানজট। ঈদ কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছেন হাইওয়ে পুলিশের ১৫০ জন সদস্য।
এদিকে চলাচল আরও ঝামেলাহীন করতে মেঘনা সেতুর দ্বিতীয় টোলপ্লাজা উদ্বোধনের ফলে মোট ১২টি টোল বুথ চালু করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, ঈদে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে মেঘনা সেতুতে আরও ৬টি নতুন ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) বুথ চালু করা হয়েছে। এ সেতুতে সবগুলো টোল কালেকশন (ইটিসি) আওতায় রয়েছে। এর ফলে এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও যানজটমুক্ত হচ্ছে।
যাত্রী চাপে সদরঘাটে উপচে পড়া ভিড়
নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা দক্ষিণের জেলাগুলোতে মানুষের পৌঁছে দিতে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই লঞ্চগুলো ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে। ঈদের সরকারি ছুটির দুই দিন আগে থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে রাজধানী ঢাকার একমাত্র নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। এদিন নিয়মিতভাবে চলাচলকারী লঞ্চগুলো পাশাপাশি স্পেশাল ট্রিপ দেয়া লঞ্চগুলোও পূর্ণ যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যের উদ্দ্যেশ্যে ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে। কিছু দিন আগেও যেখানে যাত্রীর অভাবে নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চ ছাড়ত না, সেখানে এখন লঞ্চগুলো পূর্ণ যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়ছে। খালি নেই লঞ্চগুলোর কেবিন, ডেকেও দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। এ ছাড়া বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী যাত্রীদের অনেকেই ঈদের আগের দিনের কেবিন বুকিং দিতে এসেছেন। আবার লঞ্চের ডেকে জায়গা করে নিতেও অনেকে আগেভাগে ঘাটে চলে আসছেন।
সদরঘাটের একাধিক লঞ্চের সুপারভাইজার আর টিকিট কাউন্টার থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, লঞ্চগুলোতে ডেকের যাত্রী সংখ্যাই বেশি৷ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোই লঞ্চে যাচ্ছে। সড়ক পথের চেয়ে তুলনামূলক ভাড়া কম ও যাত্রাপথ আরামদায়ক হওয়াতেই যাত্রী চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে টিকিট বিক্রির চাপে লঞ্চ-সংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলারই সময় পাচ্ছেন না।
বরিশাল রুটে স্পেশাল সার্ভিস দেয়া লঞ্চ মানামীতেও দেখা যায় যাত্রীদের ভিড়। এ লঞ্চের সুপারভাইজার মোহাম্মদ রাশেদ জানান, ঈদের ছুটিতে আজই আমাদের প্রথম যাত্রা। সরকারি অফিস ছুটি হওয়ার আগেই যাত্রী চাপ বেড়েছে। প্রায় সবকয়টি কেবিনও বুকিং হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। এদিকে ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন।
ট্রেনে স্বস্তির যাত্রা
ঈদ এগিয়ে আসায় কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেড়েছে। এবার স্বস্তিতেই ট্রেনে ঈদযাত্রা করছেন ঘরমুখো মানুষ। গতকাল সোমবার ষষ্ঠদিনের ঈদযাত্রায় ঢাকার কমলাপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে চেড়ে গেছে ট্রেন। সকালে কমলাপুর থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ছাড়া বাকি সব ট্রেনই ছেড়েছে সময়মতো।
এবার ভোগান্তি ছাড়াই ঘরে বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি যাত্রীরা। আগে ঈদযাত্রা নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও, তা এখন অনেকটাই কেটে গেছে বলেও জানান তারা। এদিকে নাশকতার কোনো শঙ্কা না থাকলেও, যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। আগের চেয়ে ট্রেনে এবারের ঈদযাত্রা অনেক আরামের হয়েছে বলেও জানান যাত্রীরা। তবে আজ মঙ্গলবার পাল্টে যেতে পারে এই চিত্র। তখন যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ থাকবে বলে মনে করছেন রেলের কর্মকর্তারা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই স্ট্যান্ডিং টিকেটের চাহিদা বাড়ছে বলে জানা গেছে। তাই যাত্রীদের চাপ সামলাতে চালানো হচ্ছে কয়েক জোড়া বিশেষ ট্রেন। অন্যদিকে যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে তিন স্তরে টিকেট চেক করা হচ্ছে।
ঈদযাত্রার জন্য স্টেশনে আসা যাত্রীদের টিকেট চেক করে ভেতরের যেতে দেয়া হচ্ছে। টিকেট ছাড়া কেউ স্টেশনে প্রবেশ করতে পারছেন না। স্টেশনে ঢুকে প্ল্যাটফর্মের ভেতরে প্রবেশ করতে আবারো দেখাতে হচ্ছে টিকিট। সেসব টিকিট স্ক্যান করে তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরই ভেতরে যেতে পারছেন যাত্রীরা।
কক্সবাজারে সরকারি সফরে এসে অসুস্থ হয়ে জরুরিভাবে ঢাকায় ফেরা সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।
শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
তিশা লিখেছেন, “মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কক্সবাজারে মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়ার্কশপে উপস্থিত থাকাকালীন সময়ে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বর্তমানে হসপিটালে চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অতিরিক্ত কাজের প্রেশারের কারণে তিনি (উপদেষ্টা) অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আপাতত তিনি আশঙ্কামুক্ত। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।”
এর আগে শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে চারদিনের সফরে কক্সবাজারে আসেন সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী। পরদিন শনিবার (১৬ আগস্ট) রাতে অসুস্থতা অনুভব করলে সফর মুলতবি করে জরুরিভাবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, ‘কক্সবাজারে সংস্কৃতি হাব-বিষয়ক এবং জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন সংক্রান্ত কয়েকটি কর্মসূচিতে উপদেষ্টার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। অবশিষ্ট কর্মসূচিগুলো বাতিল করা হয়েছে।’
সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে কক্সবাজারে থাকাকালীন স্থানীয় চিকিৎসকরা উপদেষ্টাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন বলে জানান তিনি।
নোয়াখালীর হাতিয়ার মেঘনা নদীতে জেলের জালে ধরা পড়েছে প্রায় ২৮ কেজি ওজনের একটি কোরাল মাছ। গতকাল শনিবার সকালে উপজেলার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের নামার বাজারে নিলামে ৪১ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয় মাছটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের জেলে মো. রাশেদ গত শুক্রবার রাতে মেঘনায় জাল ফেলেন। ভোরের দিকে তিনি লক্ষ্য করেন, জালে একটি বিশাল আকৃতির মাছ ধরা পড়েছে। জাল তুলে আনতেই দেখা যায়, একটি বিশাল কোরাল মাছ। বিশাল এই মাছ দেখে রাশেদ ও তার সঙ্গী জেলেরা বিস্মিত হয়ে পড়েন। পরে মাছটি সকালেই বাজারে নিয়ে যান।
মাছটি দেখতে বাজারে সাধারণ মানুষের ভিড় জমে যায়। বাজারের আড়তজুড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। অনেকে ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে ভিড় করেন। পরে ইব্রাহিম মৎস্য আড়তে নিলামের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রতি কেজি ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে মোট ৪১ হাজার ৫৫০ টাকায় মাছটি কিনে নেন স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম।
ইব্রাহিম মৎস্য আড়তের ম্যানেজার মো. সোহেল বলেন, রাশেদ জীবনে এই প্রথম এত বড় আকারের কোরাল মাছ ধরতে পেরেছেন। এর ওজন ছিল ২৭ কেজি ৭০০ গ্রাম। আমাদের আড়তে মাঝেমধ্যে ১৫ থেকে ২০ কেজির কোরাল আসে, কিন্তু এ বছর এত বড় কোরাল প্রথম ধরা পড়ল।
ক্রেতা মো. ইব্রাহিম বলেন, আমরা খুব কম সময় এত বড় কোরাল মাছ পাই। সচরাচর ছোট কোরাল বাজারে আসে, তবে বড় মাছের চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে। আশা করছি, কোরালটি ভালো দামে বিক্রি করতে পারব।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মেঘনা নদীতে মাঝে মাঝে বড় কোরাল ধরা পড়ে। তবে ২৫ কেজির ওপরে কোরাল সাধারণত খুব কম ধরা পড়ে। তাই এ ধরনের মাছ জালে উঠলেই বাজারে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।
জেলে রাশেদ বলেন, এত বড় কোরাল মাছ জীবনে কখনো ধরিনি। আল্লাহর রহমতে জালে এমন মাছ পেয়েছি। বিক্রি করে ভালো দামও পেয়েছি। এতে পরিবারে অনেকটা স্বস্তি আসবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের একটি নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে হবে। এতে দিতে হবে ১৪ ধরনের তথ্য।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের জন্য নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এখন থেকেই বিদেশিরা আবেদন করতে পারবেন। ইতোমধ্যে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কর্মকর্তারা বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এতে ১৪ ধরনের তথ্য দিতে হবে।
আবেদনকারীর অবশ্যই নিজের নাম, জন্ম তারিখ, সংস্থা বা দেশের নাম, পেশা, অভিজ্ঞতা থাকলে দেশ ও বিদেশের অভিজ্ঞতা, পাসপোর্ট নম্বর, পাসপোর্টের মেয়াদ, জাতীয়তা, বাংলাদেশে অবস্থানকালীন ঠিকানা, ইমেইল, ফোন নম্বর, আবেদন তারিখ ও স্বাক্ষর দিতে হবে।
এছাড়া আবেদনের সঙ্গে সদ্য তোলা একটি ছবি, মেয়াদ থাকা পাসপোর্টের কপি ও সিভি সংযুক্ত করতে হবে।
এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আনফ্রেল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভোট পর্যবেক্ষণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এবারের নীতিমালায় বিদেশিদের অনুমতিদানে পুরো ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নিজের কাছে রাখা হয়েছে। আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ব্যবস্থা নেওয়া হতো। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ইসির সুপারিশের ভিত্তিতে ভিসা ব্যবস্থা করবে মন্ত্রণালয়।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তফসিল ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অনুমতি পাওয়া ৩৩টি ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এসব ব্যাংক হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধন ফির অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ-২ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত তালিকা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেছেন উপসচিব মো. রফিকুল ইসলাম।
যেসব ব্যাংক আগামী হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অনুমতি পেয়েছে– সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক প্রিমিয়ার ব্যাংক ও শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। প্রাক-নিবন্ধনের অর্থ প্রতি ৩০ দিবসের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের নির্ধারিত হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে। হজযাত্রীর বিপরীতে কোনো হজ এজেন্সিকে ঋণ দেওয়া যাবে না। হজযাত্রীর প্রাথমিক নিবন্ধন বা নিবন্ধনের অর্থ এজেন্সির নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা থাকবে। এ অর্থ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নির্ধারিত খাত ছাড়া অন্য খাতে ব্যবহার বা স্থানান্তর করা যাবে না। ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২২ (সংশোধিত)’ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান বলেছেন, সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে হজ ও ওমরাহ পালনকে সহজ এবং সুন্দর করতে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ে হজ ও ওমরাহ মেলা ২০২৫ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, গত বছরের হজ ব্যবস্থাপনা চমৎকার ছিল। হজের ব্যয় কমিয়ে আনতে ত্রিশ হাজার টাকা বিমান ভাড়া কমানো হয়েছিল। এবছর হজ যাত্রী পরিবহনে যুক্ত থাকা অন্যান্য এয়ার লাইন্সের সাথে আলোচনার মাধ্যমে আরো সাশ্রয়ী ভাড়া নির্ধারণের চেষ্টা করবো।
শুধু বিমান ভাড়া কমানো হলে হজের খরচ খুব কমে যাবে বিষয়টি এমন নয় উল্লেখ করে বিমান সচিব বলেন, হজের যে আরো চার পাঁচটি খরচের খাত রয়েছে সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। এসময় তিনি হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের সর্বোত্তম সেবাদানের জন্য হজ এজেন্সিগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করেন।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) তিন দিন ব্যাপী এই হজ ও ওমরাহ মেলার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মু: আ: আউয়াল হাওলাদার, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (হজ) ড. মো: মঞ্জুরুল হক,বিমান বাংলাদেশ এর পরিচালক (বিপনন) আশরাফুল আলম, হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার এবং শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হজ এজেন্সীজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার।
পরে প্রধান অতিথি হজ ও ওমরাহ মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নে গোয়ালখালি এলাকায় বিসিকের অধিগ্রহণকৃত ৪০ একর জমির উপর নির্মিত হবে 'ভ্যাকসিন প্লান্ট'। যেখানে ঔষধের পাশাপাশি তৈরি হবে অ্যান্টিভেনম।
প্রকল্পটি গোপালগঞ্জে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।
শনিবার সকালে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
এসময় তিনি জমি রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
উপদেষ্টা বলেন, গোপালগঞ্জে ভ্যাকসিন প্লান্ট একদম একপাশে হয়ে গেছে। ভ্যাকসিনটা যখন তৈরি হবে তখন এটা ফ্রিজিং করে সারা বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। সেজন্য আমার এমন একটা জায়গা দরকার যেখান থেকে সহজে যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে আমরা পাঠাতে পারবো। সেক্ষেত্রে গোপালগঞ্জটা সেজন্য আমাদের জন্য উপযুক্ত হয় না।
আর এখানে যে সমস্ত টেকনোলজিস্ট, বিশেষজ্ঞ লাগবে এটা সবসময় সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই এটা আমরা এখানে করার চেষ্টা করছি। এবং এখানে ৪০ একর জমি বিসিকের কাছ থেকে নিয়েছি। সে অনুযায়ী আমাদের একটা প্ল্যান্ট- এটা এখানেই হবে যাতে করে আমাদের সমস্ত ঔষধ তৈরি করতে পারি, ভ্যাকসিন আমরা এখানে তৈরি করতে পারি এবং একইসাথে আমরা চিন্তা করছি- অ্যান্টিভেনম যেটা হয়, যেটা আমাদেরকে পাশের দেশগুলো থেকে আনতে হয়। অনেক সময় সাপের ভ্যারাইটি একরকম না, কোন কোন সময় সাপের কারণে যে ভ্যাকসিনটা দেয়া হয় ওটা কখনো কাজ করে, কখনো করে না। কাজেই আমরা এখন চেষ্টা করছি- আমাদের যেহেতু অনেক সাপ আছে, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাপের বিষ এনে এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এন্টিভেনম তৈরি করা হবে। আমাদের দেশের সাপ দিয়ে দেশেই ভ্যাকসিন-অ্যান্টিভেনম তৈরি হবে।
ভ্যাকসিন প্লান্ট নির্মাণে সময় প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এটা সিস্টেমের ব্যাপার। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে দেশের মধ্যে উৎপাদিত প্রায় ৭০ শতাংশ ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। কোয়ালিটিতে দেশের বাইরের তুলনায় এটি কোন অংশেই কম না। এটাকে ১০০ শতাংশে উন্নিত করতে হলে আমাদের আরও কিছু মেশিনারিজ আনতে হবে। মেশিনারিজগুলো আমরা চেষ্টা করবো যত দ্রুত আনা যায়। সবকিছু মিলিয়ে এগুলো আনতে প্রায় ৬ মাসের মত লেগে যাবে।
তিনি বলেন, জমি আমাদের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেয়া হবে, পাশের নদী শাসন করতে হবে। এরপরে মেশিনারিজ, প্ল্যান এগুলো পাশ করাতে হবে। ধরে নেন আগামী আড়াই থেকে তিন বছর লাগতে পারে। পরে উপদেষ্টা ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইডিসিল এর গোপালগঞ্জ প্লান্টের ভ্যাকসিন ইউনিট এবং মানিকগঞ্জ প্ল্যান্ট স্থানান্তর করে এখানে আনা হবে। এজন্য ৪০ একর জায়গার সংস্থান করা হয়েছে। এসময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চট্টগ্রামে প্রক্রিয়াধীন এন্টি ভেনম প্ল্যান্টও এখানে স্থানান্তরের নির্দেশনা প্রদান করেন। এটি সামগ্রিক বিবেচনায় লাভজনক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
এসময় ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সামাদ মৃধাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা গেছে, ৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাকসিন প্লান্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কারখানায় ১৫ ধরনের টিকা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্লান্টটিতে ২০২৮ সালের মধ্যে ছয় ধরনের ও ২০২৯ সালে আরও ৯ ধরনের টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০৩০ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
বাংলাদেশে ধর্ম, জাতি ও গোত্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বক্তব্যে উৎসবে আমন্ত্রণের জন্য সেনাপ্রধান আয়োজনকারীদের ধন্যবাদ জানান।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। শত বছর ধরে এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড়ি, বাঙালি, উপজাতি সবাই মিলে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। এই দেশ সবার। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। এখানে কোনো ধর্ম, জাতি বা গোত্রের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না। এই দেশের প্রতিটি বিষয়ে আমাদের সমান অধিকার। সেইভাবেই আমরা সামনের সোনালি দিনগুলো দেখতে চাই।’
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানসহ অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হবে— আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখব এবং সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করব। সারা বাংলাদেশে স্বশস্ত্র বাহিনী মোতায়েত রয়েছে। আমরা সব সময় জনগণের পাশে থাকব এবং এক হয়ে আপনাদের সাথে কাজ করে যাব।’
তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন এবং আপনারা আপনারা ধর্মীয় উৎসব আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করবেন। আমরা একসঙ্গে এই আনন্দ ভাগাভাগি করব।’
সেনাপ্রধান আশাপ্রকাশ করেন, ‘জন্মাষ্টমীর এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। এই আদর্শের ভিত্তিতেই আমরা একসঙ্গে সুন্দরভাবে বসবাস করব।’
প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের উদ্দেশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আপনাদের মতে চিকিৎসা খাতে ৪-৫ বিলিয়ন ডলারের একটা বাজার আছে। এই বাজার আপনারা নিতে পারেন না? কেন মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে চায়? ভারত, ব্যাংককে এমন মানুষও চিকিৎসা নিতে যায়, যারা কখনও ঢাকায় আসেনি। তারা বিরক্ত ও নিরুপায় হয়ে যায়। তাদের যাওয়া বন্ধ করেন। এখানে সেবা দিলে মানুষ কখনোই বিদেশ যাবে না। যাওয়ার কোনও কারণই নাই। এই বাজার দখল করলে আপনাদের লাভ, দেশেরও লাভ।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভনেশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, অনেক চিকিৎসক অনর্থক টেস্ট দেন। আমার বাসার হেল্পিং হ্যান্ড, গরিব ছেলে, ঢাকার একটি হাসপাতালে ১৪টি টেস্ট দিয়েছে। সে রাগ করে বাড়ি চলে গেছে। সেখান থেকে টেস্ট ছাড়া ভালো হয়ে ফেরত এসেছে। ওখানে তার পরিচিত ডাক্তার ছিল। এই অত্যাচার বন্ধ হয় নাই। গরিব রোগীদের অনর্থক ১৪-১৫টা টেস্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করা দরকার। আরেকটা বিষয় হলো, নির্দিষ্ট ওষুধ কিনতে হবে, কেন? পৃথিবীতে কোন জায়গায় প্রাইভেট ক্লিনিকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে ডাক্তারের। আপনারা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল, এ দেশের বড় বড় হাসপাতালের ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যসত্ত্বভোগী? কোন জায়গায় নামান আপনারা নিজেদের!
আইন উপদেষ্টা বলেন, আরেকটা অভিযোগ করা হয়, টেস্টের রেজাল্ট ভুল। অনেক জায়গায় অনেক ভালো রেজাল্ট হয়, আমি খারাপ জায়গার কথা বলছি। একটা জেনারেল কমপ্লেইন যেটা আমার কাছে হৃদয়বিদারক লাগে, নার্সদের ব্যবহার খারাপ। নার্সদের মন খারাপ থাকে, হাসপাতালের কর্মচারীদের মন খারাপ থাকে, তারা ক্ষিপ্ত হয়ে থাকেন, ভালো সেবা দিতে চায় না। কেন চায় না– নার্সদের বেতন ১২ হাজার টাকা, আপনারা কি কম টাকা লাভ করেন? আপনারা যারা অনেকে হাসপাতালের মালিক আছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, আপনাদের কোটি টাকার বাগানবাড়ি থাকতে পারে, নার্সদের ভালো বেতন দিতে পারেন না? নার্স যদি ১২ হাজার টাকা বেতন পায়, তাহলে কি ভালো সেবা দেবে? সে তো বিরক্ত হয়ে থাকবে। আপনারা লাভ করেন কিন্তু ন্যায্যভাবে করেন।
তিনি বলেন, আজ মানুষ ভারত-থাইল্যান্ড যেতে চায় না। আপনাদের চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। আপনারা করোনাকালে প্রমাণ করেছেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করে সেবা দিয়েছেন। কর্মীর যদি বেতন বাড়িয়ে দেন সামান্য লাভ থেকে কতো টাকা চলে যাবে? যদি ১০০ কোটি টাকা লাভ করেন, তাহলে ১০ শতাংশ কম লাভ হয়। ১০ শতাংশ কম লাভের বিনিময় সেই কর্মী যে সেবা দেবে সেটা দিয়ে পূরণ হয়ে যায়। আপনারা এদিকে একটু লক্ষ্য রাখবেন।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার রাতে দেওয়া এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি সকলের সুস্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।
শুভেচ্ছা বার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, জন্মাষ্টমী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পুণ্যতিথি ও গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এটি শুধু আনন্দ-উৎসবের দিন নয়, বরং ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার এক মহামিলন ক্ষেত্র।
তিনি বলেন, জন্মাষ্টমী সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য অবারিত উৎসবের প্রাঙ্গণ সৃষ্টি করে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বাংলাদেশের সমাজ সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হলো ধর্মীয় সম্প্রীতি। ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে। আমরা সব ধর্মের মানুষের সমঅধিকারে বিশ্বাসী। হিংসা, বিদ্বেষ, অশান্তি, হানাহানি, বৈষম্য ও অবিচার দূর করে সমাজকে শান্তিময় করে তুলতে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব এ সময় দেশবাসীর প্রতি সম্প্রীতি, শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করার আহ্বান জানান।
রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বাড়িতে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি সরঞ্জাম উদ্ধারের পর একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী। ওই বাড়িতে থাকা ‘ডক্টর ইংলিশ’ নামের একটি কোচিং সেন্টারে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি বাড়িটি ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনীর ৪০ ইস্ট বেঙ্গলির একটি দল।
অভিযানে সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনীর একটি সূত্রে জানা গেছে, ডক্টরস ইংলিশ নামের ওই প্রতিষ্ঠান থেকে দুটি বিদেশী এয়ার গান, একটি রিভালবার, একটি কার্তুজ, তিন বক্স ইয়ারগান শিশা, দেশীয় অস্ত্র, জিপিএস, ওয়াকিটকি, বাইনোকুলার, বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম, মাদকদ্রব্যসহ আরো বহু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত ৪০ ইস্ট বেঙ্গলির কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেনি।
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযান সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি কোন তথ্য জানেন না। তবে তারা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে বিস্তারিত জানানো হবে।
সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের আরাধ্য ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মতিথি ও শুভ জন্মাষ্টমী আজ। দেশের হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করছেন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন।
হিন্দু পুরাণ মতে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। তাদের আরো বিশ্বাস, দুষ্টের দমন করতে এভাবেই যুগে-যুগে ভগবান মানুষের মধ্যে নেমে আসেন এবং সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করেন।
এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ও ইসকনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আজ সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সম্প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠান।
দিনটি উপলক্ষ্যে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ ও বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে শ্রীকৃষ্ণ পূজা।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে আয়োজিত গীতাযজ্ঞ পরিচালনা করবেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শংকর মঠ ও মিশন। বিকেল ৩টায় পলাশীর মোড়ে ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধন হবে। এই ঐতিহাসিক মিছিল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এছাড়াও নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান এবং নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর এই ঐতিহাসিক মিছিল প্রতি বছরের মতোই জগন্নাথ হল, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মোড়, বঙ্গবাজার, গোলাপশাহ মাজার হয়ে পুরোনো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে।
এদিকে পবিত্র জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে ১৯ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় আয়োজিত হবে আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন মজুমদার। সভাপতিত্ব করবেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এ উপলক্ষে (১৪ থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত) চার দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ, ভজন কীর্তন, ভোগ আরতি, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় নাটক কীর্তন মেলা ।
সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কিংবা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কোনো আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শুক্রবার মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা বার্নামার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে বার্নামাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, ‘না, আমি এমন লোক নই। আমার এমন কোনো সুযোগ নেই।’
প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সংস্কারের যে লক্ষ্য নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তার কাজ।
তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা অনেকটা পথ এসেছি। এই আগস্টে আমরা আমাদের প্রথম বছর সম্পন্ন করেছি এবং আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি।’
ড. ইউনূস বলেন, তার অন্যতম বড় অর্জন হলো ঐকমত্য কমিশন গঠন করা। যেটি ১১টি সংস্কার কমিশনের ওপর ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার প্রতিবেদন এ মাসের শেষের দিকে দিতে পারে। যার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা গঠন করা যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এটির শেষ দিকে আসছি। সম্ভবত এ মাসের শেষ দিকে, আমরা ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন পাব।’
এই ঐকমত্য কমিশনকে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর ও অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে সম্মতি আদায়েরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক বিষয়ে, আপনার একটি ঐকমত্য প্রয়োজন। সংসদ এককক্ষ বিশিষ্ট নাকি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হবে— এটি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।’
দেশ এখন সঠিক পথে যাওয়ায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। আর এবারের নির্বাচনটি আগের তিনটি ‘মিথ্যা’ নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘অনেক বছর পর প্রথমবারের মতো, জনগণ একটি নির্বাচন পাবে। কারণ আগের নির্বাচন গুলো ছিল ‘মিথ্যা’ নির্বাচন। কেউ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। মানুষ জানে না ভোটকেন্দ্রে কি হয়েছে।’
যেসব লাখ লাখ ভোটার হাসিনার আমলে ভোট দিতে পারেননি তাদের জন্য এবারের নির্বাচনটি অনেক বড় হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেলনিউজএশিয়া (সিএনএ) টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে বাংলাদেশে আবার পুরোনো সমস্যাগুলো ফিরে আসবে।
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য, পরিষ্কার ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনের কথাও বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, সেগুলো অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচন যদি বৈধ না হয়, তাহলে এর কোনো অর্থ নেই। আমার কাজ হলো এমন একটি গ্রহণযোগ্য, পরিষ্কার ও আনন্দদায়ক নির্বাচন নিশ্চিত করা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রায় আমাদের লক্ষ্যের কাছে পৌঁছে গেছি। বহু বিষয় সংস্কার প্রয়োজন, কারণ যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছিল তা দুর্নীতিগ্রস্ত, অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগে ভরা।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আগস্টে হাসিনা প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান এবং তার অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু হয়েছে। হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে। বাংলাদেশ তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করলেও দিল্লি সাড়া দেয়নি।
ইউনূস জানান, হাসিনা যেন বাংলাদেশ অস্থিতিশীল করার সুযোগ না পান, সে বিষয়ে ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আমরা বলেছি, আপনারা তাকে রাখুন, আমাদের বিচার চলবে। কিন্তু তিনি যেন দেশকে অস্থিতিশীল করার কোনো সুযোগ না পান।
শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আঞ্চলিক কূটনীতিতে ঢাকার অবস্থান কিছুটা বদলেছে বলে পর্যবেক্ষকদের মত। মার্চে ইউনূস বেইজিং সফর করে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।
তিনি বলেন, আমাদের পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে, ভারতের সঙ্গেও আমরা ভালো সম্পর্ক চাই। এটা শুধু চীনের জন্য নয়—ভারত বা অন্য যে কেউ এর সুযোগ নিতে পারে।
বিপ্লবের পর নেতৃত্বে আসা ৮৫ বছর বয়সী ইউনূস জানান, প্রথমে তিনি দায়িত্ব নিতে চাননি। কিন্তু ছাত্রনেতাদের অনুরোধ এবং জনগণের ত্যাগ তাকে রাজি করায়। নির্বাচন শেষে তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াবেন বলেও জানান।
শেষে তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ আর পথভ্রষ্ট হবে না। যুবসমাজ যেন ভোট দিয়ে তাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা ব্যালট বাক্সে তুলে ধরে। আমি চাই, একটি ভালো সরকার আসুক এবং তা গণতান্ত্রিক নীতিমালা মেনে চলুক।
সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর থেকে লুট হওয়া আরও ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার দিনভর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এসব পাথর জব্দ করা হয়।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাতেই জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল এ তথ্য নিশ্চিত করে। এতে জানানো হয়, গত দুই দিনে মোট প্রায় ১ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকৃত পাথরের অর্ধেক ইতিমধ্যে সাদাপাথরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাকিগুলো প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (গোপনীয় শাখা, মিডিয়া সেল) মো. মাসুদ রানা বলেন, শুক্রবার দিনভর কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। গত বুধবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মোট প্রায় ১ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ হয়েছে। উদ্ধারকৃত পাথর পর্যায়ক্রমে সাদাপাথরে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পাথর ব্যবসায়ীরা অভিনব কৌশলে এসব লুট হওয়া পাথর লুকিয়ে রাখছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন কোম্পানীগঞ্জের কলাবাড়ি এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় মাটিচাপা অবস্থায় বিপুল পরিমাণ পাথর উদ্ধার হয়।
এর মধ্যে সাত ট্রাক পাথর ইতোমধ্যে সাদাপাথর এলাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও আনুমানিক পাঁচ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে, যা আজ শনিবার ফেরত পাঠানোর হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (রাজস্ব শাখা, জেলা ব্র্যান্ডিং ও পর্যটন সেল) মাহমুদ আশিক কবির।
এদিকে, গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পর্যটন স্পট জিরো পয়েন্ট থেকে চুরি হওয়া পাথর উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে অভিযান শুরু করেছে।
পিয়াইন নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৮ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা পাথর পূনরায় নদীতে প্রতিস্থাপনের লক্ষে জাফলং জিরো পয়েন্টে নৌকা দিয়ে ফেলা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, ‘জাফলংয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে কিছু দুষ্কৃতকারী রাতের আধারে বৃষ্টির মধ্যে কিছু পাথর সরিয়ে ফেলছিল। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ নিই। এরপর থেকে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ ও বিজিবির টহল অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় সেখান থেকে যে পাথরগুলো সরানো হয়েছে আমরা সেই পাথরগুলো খুঁজে বের করে সাড়ে ৮ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছি।’
তবে পাথর লুটপাটের সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই অভিযান আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।’