কুকি চীন বা কেএনএফ যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীই হোক না কেন তাদের জায়গা এই বাংলার মাটিতে হবেনা। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। আজ শুক্রবার কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, এদেশে একসময় বাংলা ভাইসহ বড় বড় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছিলো, তাদেরকে যেভাবে নির্মূল করা হয়েছে এদেরকেও ঠিক সেভাবেই নির্মূল করা হবে। আর এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পেছন থেকে কারা মদত দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা।
তিনি বলেন, যারা আজকে সরকারের বিরোধীতা করছেন তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন রেখে গিয়েছিলো। মাথাপিছু আয় ৫৩৫ মার্কিন ডলার থেকে বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় তা এখন ২৮০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। আজ বাংলাদেশ চরম ব্যার্থ রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে। এটা যাদের ভালো লাগে না তারাই এসব আবোল তাবল কথা বলে।
কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ও পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সভাপতি রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব প্রকোশলী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শেখ মেহেদী হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের প্রায় দুই হাজার দুইশো প্রাক্তন শিক্ষার্থী এই পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ১২৭ জন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামীকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামীকাল (সোমবার) সারা দেশের মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুলিশ সুপার ও তার ওপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বৈঠক হবে। বিভিন্ন মহানগর কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, ক্রাইম টিমের সদস্যসহ ১২৭ জন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বিশেষ বৈঠকে যোগ দেবেন। পুলিশের আইজিপি সেখানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন। ৫ আগস্টের পর পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে জানাবেন। একই সঙ্গে পুলিশের মোরাল অ্যাকটিভিটিজ ফিরিয়ে আনার জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাও অবহিত করবেন।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, এবার পুলিশ সপ্তাহ হবে ২৯ এপ্রিল। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য রাখবেন এবং দিকনির্দেশনা দেবেন। তার আগে আজকের সভায় পুলিশকে বিশেষ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে।
আগামীতে যারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে তাদের হাসিনা সরকারের সব গুম, খুনের বিচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এ বিচার নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, অন্যায় করে কেউ পার পায় না।
রোববার রাজধানীতে এক ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী সরকারের শাসনামলে গুম, খুনের শিকার পরিবার ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর একটি হোটেলে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে আমরা বিএনপি পরিবার।
সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের প্রত্যাশিত দেশ গড়ার শপথ নিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠার জন্যই গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠার জন্য অনেকে গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। আমরা আপনাদেরই মতো। আয়না ঘরে অনেকেই ছিলেন, কেউ ফিরে এসেছিল, কেউ আসেনি। আমরা রাজনীতি করি, তাই সামনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন প্রত্যাশা করছি।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের ভোটে বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, তবে যে কর্মসূচি আছে তার পাশাপাশি বিগত স্বৈরাচারের সরকারের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করছে, শহীদ হয়েছে, সবগুলোর বিচার করব। গণতন্ত্র রক্ষা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও যারা নির্যাতিত তাদের বিচার এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকব।
একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে সামনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা জানান, আগামীতে যে-ই রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবে, তাদের বিগত দিনের সব অন্যায়ের বিচার করতে হবে।
সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে সব অন্যায়ের বিচার সম্ভব মন্তব্য করে তারেক রহমান আশা প্রকাশ করেন, অন্তত এই ইস্যুতে কোনো রাজনৈতিক দলের মধ্যেই বিভেদ থাকবে না।
এর আগে, হাসিনার শাসনামলে গুম, খুনের শিকার পরিবার ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের মধ্যে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার বিতরণ এবং কয়েক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।
শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হেজাজ বিন আলিমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
নিহত হেজাজের ভাই আবিদ বিন আলম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তবে কে বা কারা পিটিয়েছে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।’
এ ছাড়া মৃত্যুর আগে হেফাজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, ‘তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হেফাজতে ব্যাপক মারধর করা হয়।’
রোববার দুপুরে আবিদ বিন আলম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে আমার বড় ভাই হেজাজের মরদেহ গ্রহণ করেছি। ভাইকে ধানমণ্ডিতে জানাজা শেষে দাফন করা হবে।
এর আগে গত শনিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় হেজাজ বিন আলিমের (৩৭)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে হেজাজের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তার পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে।
নিহত হেজাজ বিন আলমের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার সদর থানা এলাকায়। মৃত্যুর আগে ধানমন্ডি শেরেবাংলা রোডের ৪৯/এ বাসায় থাকতেন তিনি। তার বাবার নাম শাহ আলম খান।
এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট) মো. রৌশন আহমেদের উপস্থিতিতে সুরতহাল প্রতিবেদনে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ কাদের আহমেদ উল্লেখ করেন, গত ১১ মার্চ সি ও এল ও সেনাবাহিনীর একটি টিম হেজাজকে গ্রেপ্তারপূর্বক মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করলে সে অসুস্থ থাকায় দুইবার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। অতঃপর হেজাজ পরদিন আদালত থেকে জামিন হন। ১৫ মার্চ জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোররাতে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘নেফ্রলজি’ বিভাগে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের ৯০১ নাম্বার ওয়ার্ডে তার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিবি ওয়ারী বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের সঙ্গে কথা বলতে হবে, এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, তার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যার কোনো মামলা ছিল না। তার বিভিন্ন রকমের নাম ছিল, নামের বিভ্রাটের কারণে পরে তাকে একটি ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পরদিন তিনি জামিনে বের হয়ে যান।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তার স্ত্রী আফরোজা হকের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া ১৩ শ' কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে লুটপাটের অভিযোগে গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।
আজ রোববার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল ইনুর প্রথম মামলায় পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে অপরাধমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার ৫০৭ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। ইনুর ৪টি ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি ৮৮ লাখ ১৬ হাজার ১৯ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। এই অর্থকে মানিলন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ ‘দুর্নীতি ও ঘুষ’ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত বলে দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন,২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় ইনু ও তার স্ত্রী আফরোজা হকের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার ৭৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সাবেক তথ্যমন্ত্রী অসদুপায়ে উপার্জিত অর্থ দ্বারা স্ত্রী সম্পদশালী হয়েছেন বলে এজাহারে বলা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা তৎসহ পেনাল কোডের ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর গত বছরের ২৬ আগস্ট হাসানুল ইনুকে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অন্যদিকে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানের ১ হাজার ৩০০ শত কোটি টাকার টেন্ডার কাজে পছন্দের ঠিকাদারের নিকট হতে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হারে কমিশন গ্রহণপূর্বক কার্যাদেশ প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, ২০০৮ সাল আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের মন্ত্রীত্ব না থাকলেও ক্ষমতার প্রভাব কোনো অংশে কম ছিল না। এক সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সবশেষ কয়েকটি সরকারে মন্ত্রিত্ব না থাকলেও শেখ পরিবারের প্রভাব কাজে লাগিয়ে গত ১৫ বছরে উন্নয়ন কাজে নিয়মিত কমিশন বাণিজ্য করে গেছেন তিনি।
দুদকের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে পরিচয়ে স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, সড়ক পরিবহনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারি কাজের বড়ই অংশ ছিল তার নিয়ন্ত্রণে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর শেখ সেলিম আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। গত বছরের ২০ আগস্ট তিনি ও তার পরিবারের ৯১ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এরপর টানা চারটি সংসদে ছিলেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৬ মার্চ চীন সফরে যাচ্ছেন। এই সফরকালে ২৮ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে আজ রোববার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অধ্যাপক ইউনূস ও চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের মধ্যে বৈঠক হয়।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি হবে তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।’
এই সফর চলাকালে প্রধান উপদেষ্টা চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেবেন।
আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এবং মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ঘিরে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।
আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এবং মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি।
সিনিয়র সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পুলিশ এখন শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
‘পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে ঘরমুখী যাত্রীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় রয়েছে এবং নিয়মিত টহল কার্যক্রম চলছে। শপিংমলগুলোতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
নাসিমুল গনি বলেন, পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষ্যে যাতে কোনো শ্রম অসন্তোষের ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া শ্রমিকদেরকে যাতে ঈদের আগে নির্ধারিত সময়ে বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করা হয়, সেটি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, আইজিপি বাহারুল আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে গতকাল শনিবার দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সাক্ষাৎ করে দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে নিজ নিজ দলীয় অবস্থান জানিয়েছেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের কেউ ন্যূনতম, আবার কেউ মৌলিক সংস্কার চেয়েছেন। তবে, নির্বাচনের সময়সীমা প্রশ্নে তাদের মধ্যে ভিন্নমত দেখা গেছে। জবাবে, জাতিসংঘ মহাসচিব এদেশে আগামীতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের উদ্যোগে শনিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বিএনপির হয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স অংশ নেন।
বৈঠকে শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের সংস্কার প্রস্তাবগুলো ভোটের পর পরবর্তী জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বলেছি, নির্বাচনকেন্দ্রিক যে সংস্কারগুলো আছে, তা দ্রুত শেষ করতে হবে। নির্বাচিত পার্লামেন্টের মাধ্যমে বাকি বিষয়গুলো (সংস্কার) শেষ হবে। আর সংস্কার তো অবশ্যই করতে হবে। সংস্কারের কথা তো আমরাই আগে বলেছি। আমরা জাতিসংঘের মহাসচিবকে সে বিষয়েও বলে এসেছি। আমরা যেটা বলেছি, মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক বিষয়গুলোর সংস্কার করে ফেলা, তারপর দ্রুত নির্বাচন করা, এরপর একটি সংসদের মাধ্যমে বাড়তি সংস্কারগুলো করা। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, এটাই আমরা বলেছি।’
জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে কী নিয়ে আলাপ হয়েছে, বিএনপিই-বা কী বলেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘জাতিসংঘের উদ্যোগে একটা গোলটেবিল আয়োজন করা হয়েছিল। এতে কমিশনপ্রধানরা ছিলেন। মূলত এখানে সংস্কারের যেসব বিষয় সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে, সেসব বিষয় সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে জানানো হয়েছে।’ জাতিসংঘের মহাসচিব সংস্কার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেছেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আসলে এই গোলটেবিলটা, আমি আসলে বুঝিনি আরকি!’
বিএনপি জাতিসংঘের মহাসচিবকে নির্বাচন বিষয়ে কোনো টাইমফ্রেম দিয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে টাইম ফ্রেমের কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই, নির্বাচন তো আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। টাইমফ্রেমের কথা কেন তাদের বলব?
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে জাতিসংঘ মনে করে। এ দেশের জনগণকেই তা নির্ধারণ করতে হবে। তবে জাতিসংঘ মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, বাংলাদেশে আগামীতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে, পৃথিবীর মধ্যে একটা নজির সৃষ্টি করবে আগামীর নির্বাচন।
বৈঠক শেষে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করেছেন। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আশাবাদী। তবে, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে দলটি কোনো কথা বলেনি বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্য একটি দলের নেতা জানান।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে জুলাই গণহত্যার বিচার নিশ্চিতে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য নিয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে, জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া তরুণদের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও জাতিসংঘ মহাসচিবের পৃথক সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
ওই বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বৈঠকে সংস্কার নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষে আমরা মনে করি, বিচার ও সংস্কার জনগণের কাছে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের অন্যতম কমিটমেন্ট। সংবিধান সংস্কার নিয়ে এনসিপির অবস্থান তুলে ধরেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার গণপরিষদের মাধ্যমেই করতে হবে। সংসদে সংবিধান সংস্কার টেকসই হবে না, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকেও এটাই দেখতে পাই।
এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা মনে করি, নির্বাচনকে আমরা একটি সংস্কারের প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, সংস্কারের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখি। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কোনো কাজে দেবে না। অন্য সব রাজনৈতিক দলও এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে। এখানে মতপার্থক্য হচ্ছে কোন সংস্কারটা কখন হবে, নির্বাচনের আগে কতটুকু হবে, নির্বাচনের পরে কতটুকু হবে। আমরা মনে করি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে মতপার্থক্যগুলা কেটে যাবে। আমরা ঐকমত্যে আসতে পারবো। সংস্কার ও গণহত্যার বিচারে জনগণের কাছে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কারের মৌলিক ভিত্তি এই সরকারের আমলেই তৈরি করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কাজে দেবে না। এ ছাড়া, সংবিধান ও গণপরিষদ নিয়েও আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি।
বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা দৈনিক বাংলাকে জানান। এ বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান ও বদিউল আলম মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
এ বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেওয়া যৌথ বক্তব্যে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশের শান্তি ও সংলাপ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ সহায়তা করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বাংলাদেশের ন্যায়সংগত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা, কারণ এটি দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। বাংলাদেশের জনগণের পাশে থেকে একটি টেকসই ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে থাকবে।
এ ছাড়া যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তনের পথে এগোচ্ছে, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় সর্বদা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসেন আন্তোনিও গুতেরেস। আজ রোববার তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
মাগুরায় ধর্ষণ ও নির্যাতনে মারা যাওয়া শিশুটির পরিবারকে আইনি সহায়তা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
শনিবার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, মাগুরায় ধর্ষণ ও নির্যাতনে মারা যাওয়া শিশুটির বিষয়ে সব ধরনের আইনি সহায়তা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া হবে। এ ছাড়া তার পরিবার ও বড় বোনের মানসিক স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য পুনর্বাসনের দায়িত্ব সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল শিশুটি। গত ৬ মার্চ অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। বোনের শ্বশুরের বিরুদ্ধে শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে।
পরে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই ১৩ মার্চ শিশুটি মারা যায়।
শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক তার বোনের নামে ঢাকার গুলশানে একটি ফ্ল্যাট হস্তান্তরের জন্য জাল সই ব্যবহার করেছিলেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তদন্তকারীরা বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিক অবৈধভাবে ওই ফ্ল্যাটটি অধিগ্রহণ করেছিলেন। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সন্তান এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের জন্য রাষ্ট্রীয় জমি বরাদ্দের বিষয়ে চলমান তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তদন্ত অনুযায়ী, টিউলিপ তার বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর কাছে ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর করেন, যাতে তিনি পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পের আওতায় ১০ কাঠা (৭,২৬০ বর্গফুট) জমি পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন। বাংলাদেশ সরকারের জমি বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী, এই প্রকল্পে আবেদনকারীর ঢাকায় কোনো জমি বা বাড়ি থাকা চলবে না। দুদক আরও দাবি করেছে, ২০১৫ সাল থেকে টিউলিপ সিদ্দিক তার আয়কর নথিতে এই সম্পত্তির তথ্য গোপন রেখেছিলেন।
জাল নোটারি স্বাক্ষরের অভিযোগ
এই সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য ইসলামী আইনের অধীনে ‘হেবা’ দলিল ব্যবহার করা হয়, যেখানে টিউলিপ সিদ্দিককে দাতা এবং তার বোন রূপন্তীকে গ্রহীতা হিসেবে দেখানো হয়। দলিলে বলা হয়, ২০১৫ সালের জুন মাসে গুলশান মডেল টাউনের দ্বিতীয় তলার ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা ও পার্কিং স্পেস তিনি স্বেচ্ছায় তার বোনকে দিচ্ছেন।
ওই দলিলে নোটারি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। গাজী সিরাজুল ইসলাম স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমি এই দলিল কখনো নোটারি করিনি। এতে থাকা সই আমার সইয়ের সঙ্গে মেলে না। আমি টিউলিপ কিংবা তার বোনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনিও না।
দুদকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানান, গুলশানের ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা থাকার কারণে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীও পূর্বাচলের প্লটের জন্য যোগ্য ছিলেন না। ‘নিয়ম এড়াতে রূপন্তী আনুষ্ঠানিকভাবে মালিকানা গ্রহণ না করেই ফ্ল্যাটের দখল নেন, যাতে তার প্লট বরাদ্দ প্রশ্নবিদ্ধ না হয়,’ বলেন দুদক চেয়ারম্যান।
দুদক এখন আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতে এই অভিযোগ উত্থাপন করবে, যা বিচারিক অনুমোদনের পর মামলায় রূপ নেবে।
শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত
দুদক দাবি করেছে, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে ৬০ কাঠা (৪৩,৫৬০ বর্গফুট) জমি অবৈধভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একাধিক তদন্ত চলছে, যার মধ্যে বেশ কিছু মামলায় টিউলিপ সিদ্দিকের নামও রয়েছে। সবচেয়ে গুরুতর মামলাগুলোর একটি হলো রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চুক্তি থেকে প্রায় ৪০০ কোটি পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ। এতে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান ড. মোমেন বলেন, এটি বড় দুর্নীতির একটি খণ্ডচিত্র মাত্র। চলমান তদন্তে শেখ হাসিনা ও তার আত্মীয়দের আর্থিক অনিয়মের প্রকৃত মাত্রা উন্মোচিত হবে।
গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন বলে জানা যায়।
সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।
আইএসপিআর জানায়, সৌহার্দ্যপূর্ণ এ বৈঠকে পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি জাতিসংঘের মহাসচিব জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার প্রশংসা করেন এবং শান্তিরক্ষীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে ২৩ জেলার ৭৪টি উপজেলাকে দুর্গম এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব এলাকায় দায়িত্ব পালনকারীদের ভাতা নির্ধারিত হারের চেয়ে দেড়গুণ বেশি দেওয়া হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নিয়োজিত লোকবলের ভাতা নির্ধারণের জন্য দুর্গম এলাকার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর ওই সিদ্ধান্ত এসেছে। এতে ২৩টি জেলার ৭৪টি উপজেলাকে দুর্গম এলাকা হিসেবে বিবেচনা করে উপজেলাগুলোয় তথ্য সংগ্রহকারী ও অন্যদের জন্য ভাতা/সম্মানী এবং অন্যান্য খাতে অর্থ বরাদ্দ নির্ধারিত হারের চেয়ে দেড়গুণ করা হয়েছে।
দুর্গম এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা; বরগুনার বেতাগী, পাথরঘাটা ও বামনা উপজেলা; বাগেরহাটের রামপাল, মোড়লগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা; খুলনার বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, দাকোপ ও কয়রা উপজেলা; নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা; কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা; হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমেরীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলা; সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, ধর্মপাশা, শাল্লা, জামালগঞ্জ, দিরাই, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলা; কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা; বরিশালের হিজলা, মুলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা; সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা; নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও খালিয়াজুরী উপজেলা; পটুয়াখালীর গলাচিপা, কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী ও দশমিনা উপজেলা; সাতক্ষীরার আশাশুনী ও শ্যামনগর উপজেলা; পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা; কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা; কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা; মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা; মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা; খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি, মহালছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, গুইমারা, লক্ষীছড়ি; খাগড়াছড়ি সদর ও দিঘীনালা উপজেলা; বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানছি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান সদর, রুমা ও লামা উপজেলা; রাঙামাটি পার্বত্য জেলার নানিয়ারচর, বরকল, বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি সদর, রাজস্থলী, লংগদু, কাউখালী, কাপ্তাই, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলা।
ইসি কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, পার্বত্য অঞ্চল, হাওর অঞ্চল, দ্বীপ অঞ্চল ও সমতল ভূমিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট ও দুর্গমতার ব্যাপকতা বিবেচনায় ভবিষ্যতে দুর্গম এলাকার তালিকা শ্রেণিভিত্তিক করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে মানবিক বিপর্যয় এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আরও সহায়তা দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই, যাতে আমরা এই মানবিক বিপর্যয় এড়াতে পারি।’
আজ শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে যৌথ এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও দায়িত্ব গ্রহণ এবং শরণার্থীদের পাশাপাশি তাদের আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ও রাজনৈতিক সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময় বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত একটি ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে আপনাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা।’
বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে গুতেরেস আশ্বস্ত করেছেন যে, জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও পুনর্মিলন জোরদারে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা জাতিসংঘকে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে গণ্য করতে পারেন, যারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাজ করবে।’
তিনি রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের অসাধারণ উদারতার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন ।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবনে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এই আশ্বাস দেন।
জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা স্মরণ করে গুতেরেস বলেন, তারা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এ সময়, তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করেন।
গুতেরেস আজ জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখতে এবং জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন করতে গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবন পরিদর্শনে যান ।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের কান্ট্রি টিমের সাথে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের শেষে তিনি ভবন পরিদর্শন করেন।
গুতেরেস এবং শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান যৌথভাবে গুলশানে ‘ইউএন হাউস ইন বাংলাদেশ’ উদ্বোধন করেন।
এ সময় সেখানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।