আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের এক চিরভাস্বর অবিস্মরণীয় দিন।
১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার তদানীন্তন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে পঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রণীত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এ দিন থেকে স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বদেশ ভূমি থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতা সূর্য অস্ত যায়। এর ২১৪ বছর পর ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগর আম্রকাননে স্বগর্বে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য। এর পর ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ লাভ করে। এরপর সাক্ষী হিসেবে স্বাধীন বাংলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধরে রাখতে গড়ে তোলা হয় মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদ্যাপনের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবে।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’, বাঙালি জাতির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন।
তিনি বলেন, ‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা-শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ, শহীদ মোহাম্মদ মনসুর আলী এবং শহীদ আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে। শ্রদ্ধা জানাই মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ অকুতোভয় বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি এবং ২ লাখ সম্ভ্রমহারা নির্যাতিত মা-বোনদের প্রতি।’
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকচক্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বেআইনিভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ন্যায়-নীতিবহির্ভূত এবং গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়্যারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার মুক্তাঞ্চলে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এক বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হন এবং স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। এই অধিবেশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন ও বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এবং এ এইচ এম কামারুজাজামানকে স্বরাষ্ট্র এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশ সরকার। মেহেরপুর হয়ে ওঠে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাজধানী। মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ ও আক্রমণ চালিয়ে মেহেরপুর দখল করে। ফলে সরকারের প্রতিনিধিরা ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় এবং সেখান থেকে কার্যক্রম চালাতে থাকে। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
নবজাত রাষ্ট্রের এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভের লক্ষ্যে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় নবগঠিত এই সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এই সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্ববাসী স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। অবশেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে,
এই ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত দিনটিকে বরাবরের ন্যায় স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সবার সঙ্গে একত্রিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো যথাযথ মর্যাদা এবং গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ ও পালন করবে।
কর্মসূচির মধ্য রয়েছে ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
এদিকে মুজিবনগরের কর্মসূচির মধ্য রয়েছে ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৯টায় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে গার্ড অব অনার। সকাল ১০টায় শেখ হাসিনা মঞ্চে মুজিবনগর দিবসের জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি। সঞ্চালনা করবেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। এ ছাড়া বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন, পারভীন জামান কল্পনা এমপি, অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি, সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক এবং মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক।
দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ঘোষিত কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য সংগঠনের সকল স্তরের নেতা-কর্মী এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহসহ সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম জানাজার ঠিক আগমুহূর্তে পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া ও ক্ষমা চেয়েছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে জানাজার প্রাক্কালে সমবেত লাখো জনতার উদ্দেশ্যে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ও আবেগঘন বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, তাঁর মা দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এবং দীর্ঘ পথচলায় যদি নিজের অজান্তেও কাউকে কোনোভাবে কষ্ট দিয়ে থাকেন, তবে মহান আল্লাহর ওয়াস্তে যেন তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, “আমার মা বেগম খালেদা জিয়া জীবিত থাকাকালীন যদি কারো কাছ থেকে কোনো ঋণ নিয়ে থাকেন, তবে দয়া করে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেই ঋণ পরিশোধ করার পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছি।” পরিশেষে তিনি তাঁর মায়ের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় উপস্থিত সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দোয়া প্রার্থনা করেন।
উল্লেখ্য, বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতা ও দীর্ঘ অসুস্থতার পর গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৯ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি প্রধানের এই চিরবিদায়ে সারা দেশে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব তাঁকে এ দেশের ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। আজ জানাজার ময়দানে তারেক রহমানের এই বিনম্র ও দায়িত্বশীল আহ্বান উপস্থিত শোকাতুর জনতাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে এবং এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জানাজা শেষে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় জানাল লাখ লাখ মানুষ। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় এক ঐতিহাসিক ও বিশাল নামাজে জানাজার মধ্য দিয়ে অসীম অনন্ত লোকে পাড়ি দিলেন এই বরেণ্য নেত্রী। যেখান থেকে আর কোনোদিন ফেরা হবে না, সেই চিরস্থায়ী যাত্রায় খালেদা জিয়ার সঙ্গী হলো কোটি মানুষের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর তপ্ত চোখের জল। জানাজায় অংশ নেওয়া হাজারো মানুষকে দেখা গেছে প্রিয় নেত্রীকে হারানোর বেদনায় কান্নায় ভেঙে পড়তে। রাজধানী ঢাকার রাজপথ আজ যেন এক বিশাল শোকের মিছিলে পরিণত হয়েছে, যেখানে দলীয় পরিচয় ছাপিয়ে বেগম জিয়া আবির্ভূত হয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যের এক অনন্য প্রতীক হিসেবে।
প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির কক্ষপথে ধ্রুবতারার মতো জ্বলে থাকা এই নেত্রীর প্রস্থান পুরো জাতিকে শোকে মুহ্যমান করে তুলেছে। টানা ৪১ বছর বিএনপির হাল ধরে রাখা বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে আপসহীন সংগ্রামের নজির স্থাপন করেছেন, তা এ দেশের ইতিহাসে বিরল। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বারবার জেল-জুলুম ও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কিন্তু জীবনের চরম ঝুঁকিতেও কখনো নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে যাননি। তাঁর এই অদম্য দেশপ্রেম এবং দুর্দিনের অকুতোভয় নেতৃত্ব তাঁকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও ফ্যাসিবাদের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে ঘরবন্দী ও কারাবরণ করতে হলেও মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অটুট, যার প্রতিদান আজ এই বিপুল জনসমুদ্রের মাধ্যমে দেশবাসী ফিরিয়ে দিল।
আজকের এই জানাজায় ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক। বরেণ্য এই নেত্রীর শেষ বিদায়ে শরিক হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী এবং মরহুমার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উচ্চপর্যায়ের বিদেশি প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবনের বিশাল প্রাঙ্গণ ছাপিয়ে মানুষের এই ভিড় ফার্মগেট, বিজয় সরণি ও আসাদ গেট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। নির্ধারিত স্থানে জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার মানুষকে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়েই জানাজায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
এর আগে আজ বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে রাষ্ট্রীয় প্রোটোকলে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ফ্রিজার ভ্যানে করে বেগম জিয়ার মরদেহ জানাজাস্থলে আনা হয়। জানাজার আনুষ্ঠানিকতা পরিচালনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে। সেখানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়ে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সশরীরে উপস্থিত হয়ে আন্তর্জাতিক শ্রদ্ধাবোধের স্বাক্ষর রেখেছেন। দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগর এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ও সাধারণের চলাচল সীমিত রাখা হয়েছে। এক মহাকাব্যিক রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে বেগম খালেদা জিয়া আজ তাঁর প্রিয়তম পতির পাশেই খুঁজে নিচ্ছেন তাঁর চিরস্থায়ী ঠিকানা। তাঁর এই প্রস্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অপূরণীয় শূন্যতা রেখে গেল।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম নামাজে জানাজা আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় শুরু হয়েছে। প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এই মহীয়সী নেত্রীর জানাজায় ইমামতি করছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক।
বরেণ্য এই নেত্রীর জানাজায় সশরীরে অংশ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তাঁর সঙ্গে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানগণ এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা জানাজায় শরিক হন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রায় সকল দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এই শোকাবহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বেগম জিয়ার বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।
সকাল থেকেই জানাজাস্থলে মানুষের যে ভিড় শুরু হয়েছিল, বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা অভূতপূর্ব জনজোয়ারে রূপ নেয়। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাড়িয়ে এই জনস্রোত ফার্মগেট, আসাদ গেট ও বিজয় সরণি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এক গভীর আবেগঘন পরিবেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁদের ‘আপসহীন’ নেত্রীর আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাতে অংশ নিচ্ছেন। জানাজা শেষে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই সমাহিত করা হবে। এক বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবনের ইতি টেনে আজ চিরনিদ্রায় শায়িত হতে যাচ্ছেন এ দেশের ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী এই নারী ব্যক্তিত্ব। মূলত এক মহান অভিভাবকের বিদায়ে আজ পুরো রাজধানী শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার ঠিক আগমুহূর্তে তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজার জন্য নির্ধারিত মঞ্চ থেকে তিনি এক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এই আবেগঘন বক্তব্যে তিনি বেগম জিয়ার জন্ম, পারিবারিক পটভূমি এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হওয়া থেকে শুরু করে তাঁর রাজনীতিতে পদার্পণের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। নজরুল ইসলাম খান তাঁর বক্তব্যে দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য বেগম জিয়ার আপসহীন সংগ্রাম এবং ত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
এর আগে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে এক বিশাল শোকমিছিলের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ বহনকারী ফ্রিজার ভ্যানটি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এসে পৌঁছায়। এক নজর দেখার জন্য সেখানে ভোর থেকেই কয়েক লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে মানুষের ঢল সংসদ ভবন এলাকা ছাড়িয়ে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আজকের এই জানাজা শেষে তাঁকে শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মরহুমের শেষ যাত্রার অংশ হিসেবে আজ সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বেগম জিয়ার মরদেহ বের করা হয়। প্রথমে তাঁর দীর্ঘদিনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় নেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তা গুলশানে তাঁর ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসভবনে নেওয়া হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ জানাজাস্থলে নিয়ে আসা হয়। উল্লেখ্য, লিভার সিরোসিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় দীর্ঘ ৩৭ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহীয়সী নেত্রী। গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং তাঁর প্রয়াণে আজ দেশজুড়ে এক শোকাতুর পরিবেশ বিরাজ করছে। মূলত জানাজার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে নজরুল ইসলাম খানের এই স্মৃতিচারণ উপস্থিত লাখো জনতার মাঝে এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজায় অংশ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত এই বিশাল জানাজায় তিনি শরিক হন। তাঁর সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। বরেণ্য এই নেত্রীর শেষ বিদায়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের এই উপস্থিতি এক শোকাতুর ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের শীর্ষ নেতাদের এক বিশাল সমাগম ঘটে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জানাজায় অংশ নেন। এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে মরহুমার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, আজ বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটের দিকে বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ বহনকারী ফ্রিজার ভ্যানটি কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পৌঁছায়। সকাল থেকেই মরহুমের শেষ যাত্রাকে কেন্দ্র করে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে মরদেহ বের করে প্রথমে গুলশানে তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বাসভবনে নেওয়া হয়। সেখানে স্বজন ও সহকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বেলা ১১টা ৫ মিনিটে মরদেহবাহী গাড়িটি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পুরো ঢাকা আজ এক শোকের চাদরে ঢাকা পড়েছে এবং লাখো মানুষ তাঁদের প্রিয় নেত্রীকে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানাতে রাজপথে সমবেত হয়েছেন। দাফন ও জানাজার যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় শরিক হতে এবং তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আজ বুধবার ঢাকা পৌঁছেছেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর তাঁকে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় যান এবং সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গভীর শোক ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
এই শোকাবহ সাক্ষাতের সময় তারেক রহমানের সাথে তাঁর কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন আহমেদসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ। বিএনপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে এই সৌজন্য সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের স্পিকার তাঁর বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা পৌঁছে দেন।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই বরেণ্য নেত্রীর প্রয়াণে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের এই গভীর শোকের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। আজ জোহরের নামাজের পর অনুষ্ঠিতব্য জানাজার আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে সরদার আয়াজ সাদিক পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে বেগম জিয়ার বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এক প্রভাবশালী নেত্রীর বিদায়ে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে এমন সাক্ষাৎ রাজনৈতিক মহলে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। মূলত শোককে শক্তিতে পরিণত করে শেষ বিদায়ের এই মুহূর্তটিকে মর্যাদাপূর্ণ করতেই বিদেশি প্রতিনিধিদের এমন সমাগম ঘটছে।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এখন এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। যতদূর চোখ যায়, কেবল মানুষের মাথা। দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে শেষ বিদায় জানাতে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরের আগেই গোটা রাজধানীর রাজপথ যেন শোকার্ত মানুষের দখলে চলে গেছে। যেখান থেকে আর কোনোদিন ফেরা হবে না, সেই অনন্ত যাত্রায় খালেদা জিয়ার সঙ্গী আজ লাখ লাখ মানুষের শ্রদ্ধা, অকৃত্রিম ভালোবাসা আর তপ্ত চোখের জল।
জানাজাস্থলে উপস্থিত সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দলীয় নেতাকর্মী—কারও চোখই আজ শুকনো নেই। প্রিয় নেত্রীকে হারানোর বেদনায় অনেকে হাউমাউ করে কেঁদে উঠছেন, আবার কেউ নিরবে চোখ মুছছেন। একে অপরকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন সবাই। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এই নেত্রী জীবনের শেষ মুহূর্তে যে কেবল একটি দলের নেত্রী নন, বরং জাতীয় ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন, মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত জনস্রোতই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। সারাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ শেষবারের মতো এই ‘আপসহীন’ নেত্রীকে একনজর দেখতে ছুটে এসেছেন। প্রকৃতিও যেন আজ তাঁর বিদায়ে করুণা দেখাচ্ছে; গত কয়েকদিনের হাড়কাঁপানো কনকনে শীত ও কুয়াশা সরিয়ে আকাশে উঠেছে ঝলমলে মিষ্টি রোদ, যা আগত জনতাকে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে।
আজ বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটের দিকে রাষ্ট্রীয় প্রোটোকলে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো একটি ফ্রিজার ভ্যানে করে বেগম জিয়ার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় আনা হয়। এর আগে সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে মরদেহ নেওয়া হয়েছিল গুলশানে তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বাসভবনে। সেখান থেকেই শুরু হয় এই বিশাল শোকযাত্রা। দুপুর দেড়টা নাগাদ দেখা যায়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাপিয়ে মানুষের এই স্রোত ফার্মগেট ও এর আশপাশের সড়কগুলোতেও আছড়ে পড়েছে। পুরো এলাকাকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনিসহ নানা বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগে গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টায় ৭৯ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বেগম খালেদা জিয়া। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি চড়াই-উতরাই ও প্রতিকূলতা পাড়ি দেওয়া এই নেত্রীর প্রয়াণে আজ দেশজুড়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে এবং সারাদেশে সাধারণ ছুটি চলছে। জানাজা শেষে তাঁকে শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশেই সমাহিত করা হবে। এক মহাকাব্যিক রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হওয়ার অপেক্ষায় এখন এ দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া এই মহীয়সী নেত্রী।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে শরিক হতে এবং তাঁর প্রতি অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকা পৌঁছেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। ঢাকা পৌঁছেই তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।
আজ বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিনি রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে জয়শঙ্করকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাও বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ দুপুরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিতব্য বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করবেন। ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি মরহুমার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। জয়শঙ্করের এই ঝটিকা সফর বাংলাদেশের এক বরেণ্য নেত্রীর প্রয়াণে ভারতের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা ও বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আজ সারাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক এবং সাধারণ ছুটির মধ্য দিয়ে প্রিয় নেত্রীকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি চলছে, যার সাক্ষী হতে ভারতের এই উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে শরিক হতে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে শোকার্ত মানুষের ঢল নেমেছে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী দুপুর ২টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে এবং জানাজায় অংশ নিতে আসা মানুষের ভিড় সংসদ ভবন এলাকা ছাড়িয়ে আশপাশের সকল সড়কে বিস্তৃত হয়েছে।
এর আগে আজ সকালে এক আবেগঘন পরিবেশে বেগম জিয়ার মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানে তাঁর ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসভবনে নেওয়া হয়। যদিও শুরুতে মরদেহ তাঁর দীর্ঘদিনের স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন ‘ফিরোজা’য় নেওয়ার কথা ছিল, তবে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তা গুলশান-২ এর নর্থ অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে নেওয়া হয়। সকাল ৮টা ৫৩ মিনিটে হাসপাতাল থেকে বের হওয়া মরদেহবাহী গাড়িটি ৯টা ১৬ মিনিটে বাসভবনে পৌঁছালে সেখানে এক শোকাতুর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বাসভবনে পৌঁছানোর পর তারেক রহমান অশ্রুসিক্ত নয়নে মায়ের কফিনের পাশে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি কফিনের পাশে বসে অত্যন্ত একাগ্রচিত্তে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। এ সময় পরিবারের সদস্য এবং উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মরদেহ জানাজার জন্য মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রিয় নেত্রীর জানাজায় অংশ নিতে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন পরম শ্রদ্ধায় শেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছেন। এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এই মহীয়সী নেত্রীর বিদায়ে রাজধানী আজ শোকে স্তব্ধ ও লোকে লোকারণ্য।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ এখন রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অবস্থান করছে। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার ঠিক পরেই জাতীয় পতাকায় মোড়ানো মরদেহবাহী গাড়িটি জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় তাঁর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। বরেণ্য এই নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সকাল থেকেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবন এলাকায় লাখো মানুষের ঢল নেমেছে।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে গুলশানে তাঁর ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসভবন থেকে মরদেহবাহী ফ্রিজার ভ্যানটি জানাজাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তারেক রহমান, তাঁর সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ একটি বিশেষ বাসে করে এই শোকাবহ যাত্রায় শামিল হন। আজ সকালেই এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বেগম জিয়ার মরদেহ গুলশানের বাসভবনে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে স্বজন ও কর্মীরা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। মরদেহ জানাজাস্থলে আনার সময় পুরো গুলশান ও সংসদ ভবন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় এবং যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এবং তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ইতিমধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা ঢাকায় পৌঁছেছেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮০ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই ‘আপসহীন’ নেত্রী। তাঁর প্রয়াণে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সরকার আজ থেকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে এবং আজ বুধবার সারাদেশে সাধারণ ছুটি পালন করা হচ্ছে। জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই সমাহিত করা হবে। এক বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবনের ইতি টেনে আজ চিরনিদ্রায় শায়িত হতে যাচ্ছেন এ দেশের ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী এই নারী ব্যক্তিত্ব।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা পৌঁছেছেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের (পার্লামেন্ট) স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিক। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের কাউন্সেলর (প্রেস) মো. ফসিহ উল্লাহ খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বরেণ্য এই নেত্রীর প্রয়াণে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁর শেষ বিদায়ে শরিক হতে স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিক এই সংক্ষিপ্ত সফরে বাংলাদেশে এসেছেন।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব। এরপর শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।
উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে আন্তর্জাতিক মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর জানাজায় অংশ নিতে পাকিস্তানের স্পিকার ছাড়াও ইতিমধ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকটি দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা ঢাকায় পৌঁছেছেন। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়ে প্রতিবেশী দেশগুলো বাংলাদেশের মানুষের শোকের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। মূলত এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক নেত্রীর চিরবিদায়বেলাকে মর্যাদাপূর্ণ করতে দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এই সমাগম ঘটছে।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এবং তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকা পৌঁছেছেন। দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে গতকালই জানানো হয়েছিল যে, সেদেশের সরকার ও জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জয়শঙ্কর বাংলাদেশের এই প্রবীণ নেত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন। তাঁর এই সফরটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটিই ভারত সরকারের কোনো মন্ত্রীর প্রথম বাংলাদেশ সফর।
বিমানবন্দরে অবতরণের পর এস জয়শঙ্কর সরাসরি জানাজাস্থল অভিমুখে রওনা হয়েছেন। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ জোহর নামাজের পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিতব্য বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় তিনি শরিক হবেন। তিনি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে মরহুমার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন এবং তাঁর বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। জয়শঙ্করের এই উপস্থিতিকে দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতি ভারতের সম্মান প্রদর্শনের একটি বড় নিদর্শ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়ে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের জনগণের শোকের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এসে পৌঁছেছে। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটের দিকে লাল-সবুজ রঙের জাতীয় পতাকায় মোড়ানো একটি ফ্রিজার ভ্যানে তাঁর মরদেহ সেখানে আনা হয়। এসময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা হিউম্যান চেইন তৈরি করে মরদেহের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন। এর আগে বেলা ১১টা ৫ মিনিটে তাঁর ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গুলশান বাসভবন থেকে মরদেহবাহী গাড়িটি যাত্রা শুরু করেছিল। সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে মরদেহ বের করার পর সেটি প্রথমে গুলশানে নেওয়া হয়, যেখানে পরিবারের স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁদের প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানান।
বর্তমানে সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় এক শোকাতুর ও নিস্তব্ধ পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, আজ জোহরের নামাজের পর রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। জানাজা শেষে তাঁকে শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। বরেণ্য এই নেত্রীর শেষ বিদায়ে শ্রদ্ধা জানাতে ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
জানাজা ও দাফন প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খল রাখতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর ভোরে ৭৯ বছর বয়সে এই মহীয়সী নেত্রীর প্রয়াণে আজ দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি এবং তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। সারা দেশ থেকে আসা লাখ লাখ মানুষ তাঁদের প্রিয় ‘আপসহীন’ নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সংসদ ভবন ও এর আশপাশের রাস্তায় ভিড় করছেন। এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ইতি টেনে আজ প্রিয়তমা পতির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন এ দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া বেগম খালেদা জিয়া।