সম্প্রতি দেশজুড়ে বেড়েছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নগর পরিকল্পনাবিদ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন, ঝুঁকি অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, জনসাধারণের অসেচতনতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলো আগুনসহ অন্যান্য ঝুঁকির বিষয়ে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, কিন্তু মানা হচ্ছে না অগ্নিনিরাপত্তা আইন।
এ ছাড়া মৌসুমি আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াও একটি কারণ। পাশাপাশি দেশ দ্রুত শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে কেমিক্যাল জাতীয় নানা দাহ্য পদার্থের ব্যবহার।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে সারা দেশে মোট ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। গড়ে প্রতিদিন ৭৭টি আগুন লেগেছে। এসব ঘটনায় সারা দেশে মোট ২৮১ জন আহত এবং ১০২ জন নিহত হয়েছেন। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪ টাকা মূল্যের সম্পদ।
চলতি বছর জানুয়ারিতে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩৭২টি। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজারটি। গত বছর জানুয়ারিতে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৪৬টি। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ২ হাজার ৭১৩টি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালের চেয়ে চলতি বছর অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা বেড়েছে।
২০২৩ সালে সারা দেশে ৫ হাজার ৩৭৪টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এর মধ্যে ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ (১৬৯৪টি) ঝুঁকিপূর্ণ, ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ (৪২৪টি) অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ মোট ঝুকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ৩৯ দশকি ৪১। আর সন্তোষজনক প্রতিষ্ঠান ৫৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ (৩২৫৬টি)।
চলতি মাসের প্রথম দিন রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়া এলাকার ধার্মিকপাড়ায় একটি গ্যারেজে আগুন লেগে পুড়ে যায় লন্ডন এক্সপ্রেসের ১৪টি বাস। ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এর দুদিন পর খুলনার রূপসা এলাকার সালমা জুট মিলে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শিশু হাসপাতালের ৫ম তলার কার্ডিয়াক বিভাগের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট অনেক চেষ্টার পর আগুন নির্বাপণ করে। এ ছাড়া, গত ১২ এপ্রিল সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ঝাউচর মোড়ে একটি টিনশেড বস্তিতে আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ২০টি ঘর। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট প্রায় ১ ঘণ্টার চেস্টার পর দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে গত ২৪ মার্চ ভোর থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পাঁচটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতার গাউছিয়া কাঁচাবাজার, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার একটি সুপারবোর্ড কারখানা এবং পাবনার সাঁথিয়ার বনগ্রামে দুটি পাটের গুদাম ও একটি তেলের মিলে আগুন লাগে।
এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের বহুতল ভবনে আগুন লাগে। মারা যান ৪৬ জন। ঠিক পরের দিন ১ মার্চ রাতে ওয়ারীর পেশওয়ারাইন রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
অতীতেও দেখা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে তপ্ত আবহাওয়ার প্রভাবে ২০২৩ সালে ভোররাতের দিকে বঙ্গবাজার মার্কেট, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন লেগে পুড়ে যায়।
ঘস ঘন আগুন লাগার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান দৈনিক বাংলাকে বলেন, আবহাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে আগুন লাগে। এর বাইরে নগরগুলো আমরা এনভাবে সাজিয়েছি, যা মৃত্যুকূপের মতো। ভবনগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। অসংখ্য ইলেক্ট্রিক ও গ্যাস লাইন ঠিক নেই। রেগুলার মেইটেন্যান্স নেই। ঘরে ঘরে ঢুকে যাচ্ছে মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার। মেইন্টেন্যান্স নেই, সার্ভিস লাইন ঠিক নেই, মৃতুকূপটা সব জায়গাতেই আছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর বড় বড় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানায় আগুন লেগেছে। এসব আগুন শুধু মৌসুমি কারণে নরমাল আগুন নাকি এর বাইরে কোনো এলিমেন্ট আছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। অবশ্যই অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়গুলো অত্যন্ত বিশদভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ অন্যান্য সার্ভিস প্রোভাইডার যারা আছে, সবাইকে দেখতে হবে। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ক্রস চেক করে দেখতে হবে এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো নাশকতা আছে কি না। থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। কিন্তু এটা দেখা দরকার যে অস্বাভাবিক না স্বাভাবিক। নগর নিরাপত্তা, এটাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাই এদিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিত।
আগুন লাগার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, আগুনের ঘটনা ঘটে মানুষের অসাবধানতার কারণে। দেখা গেছে আগুন লাগার কারণগুলোর মধ্যে কোথাও প্রয়োজনের অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক লোড ব্যবহার করা এবং মানহীন বা নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা অন্যতম। এ ছাড়া আমাদের দেশ শিল্পায়নের দিকে যাচ্ছে। উন্নতমানের নান্দনিক সামগ্রী তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে কেমিক্যাল এজেন্ট ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এর ফলে অগ্নিঝুঁকি বাড়ছে। এ ছাড়া ঈদের আগে ব্যবসার প্রয়োজনে অতিরিক্ত পণ্য মজুত করা হয়। এতেও রিক্সফ্যাক্টর বেড়ে যায়। ফলে অগ্নিদুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, শীতকাল পার হওয়ার পর বসন্তে বৃষ্টির প্রবণতা শুরু হলেও প্রকৃতিতে একটা পরিবর্তন হয়। আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যায়, টেম্পারেচার (তাপমাত্রা) বাড়ে। গাছের পাতা ঝরে যায়, অনেক সময় জীবন্ত গাছও শুকিয়ে যায়। আর যেসব দাহ্য বস্তু রয়েছে সেসব আরও শুকিয়ে যায়। যেমন আমাদের শরীরেও আবহাওয়ার এই প্রভাব পড়ে, ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। আমরা লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করি।
অপরদিকে শীতকালে আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকে। দাহ্য বস্তুর জ্বলে ওঠার প্রবণতা ভেতরে থাকলেও বাইরে তেমন থাকে না। শীতের পর বৃষ্টি শুরু হলেও টেম্পারেচার বেড়ে যাওয়ায় দাহ্যবস্তু ভেতর থেকে শুকিয়ে থাকে এবং বাইরে টেম্পারেচার বেড়ে যাওয়ার ফলে দাহ্য বস্তুর জ্বলে ওঠার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এ জন্য করণীয় কী জানতে চাইলে শাহজাহান শিকদার বলেন, এ জন্য সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। প্রত্যেককে অগ্নিনিরাপত্তা আইন মেনে চলতে হবে। অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম স্থা্পন করতে হবে। যথাযথভাবে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মূলত ৪টি ধাপে ভবনকে নিরাপদ করতে হবে। প্রথমত, ভবন নির্মাণের সময় বিএমডিসি এবং ফায়ার সেপটি প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনীয় সংখ্যক অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম স্থাপন করতে হবে। তৃতীয়ত, এসব ব্যবস্থা গ্রহণের পর সেগুলো ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত জনবল থাকতে হবে। এ জন্য ভবনের ১৮ শতাংশ লোককে প্রশিক্ষিত করতে হবে ফায়ার সার্ভিস থেকে। আর চতুর্থটি হলো, মাঝে মাঝে এসব প্রশিক্ষণের মহড়া করতে হবে। কিন্তু সে অনুযায়ী অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেউ মনোযোগী না, কম্পলায়েন্স ইস্যুতে মনোযোগী না।
অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সরঞ্জাম বিষয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জাম শুধু ফায়ার এক্সটিংগুইশার বুঝায় না। যে ভবনে যে ধরনোর রিক্সফ্যাক্টর থাকবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন একটি ভবনে ২টি সিঁড়ি প্রয়োজন হলে তা রাখতে হবে। কোনো ভবনে স্প্রিঙ্কলার (কক্ষের সিলিংয়ে লাগানো স্বয়ংক্রিয় পানি ছিটানোর যন্ত্র), কোনো ভবনে হোজরিল (প্রতি তলায় সুবিধাজনক স্থানে পানি সরবরাহ কলের সঙ্গে যুক্ত লম্বা নল) স্থাপন করতে হবে। যেখানে হাইড্রেন্ট সিস্টেম প্রয়োজন, সেখানে হাইড্রেন্ট সিসটেম স্থাপন করতে হবে। তা হলেই আমরা নিরাপদ থাকতে পারব বলে আমি মনে করি।’
গত ৮ থেকে ১৮ নভেম্বর মালয়েশিয়ার কুয়ালালমপুরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ দাবা প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের তাশরিক শায়হান শান ওপেন ক্যাটাগরির শেষ রাউন্ডে ভারতের গ্র্যান্ডমাস্টার শ্যাম নিখিল-কে পরাজিত করে ওপেন অনূর্র্ধ্ব-২০ বিভাগে রৌপ্যপদক জিতেছে। সে ৯ খেলায় ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
ওমেন ক্যান্ডিডেট মাস্টার ওমনিয়া বিনতে ইউসুফ লুবাবা মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগে ৯ খেলায় ৬ পয়েন্ট অর্জন করে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে। অন্যদিকে প্রতিযোগিতার ব্লিটজ ক্যাটাগরীতে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের আজান মাহমুদ বাংলাদেশের পক্ষে অনুর্ধ্ব-১০ এ বিভাগীয় পুরষ্কার জিতে নেয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে।
বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের আরও উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের মধ্যে রয়েছে; মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১০ ওমেন ক্যান্ডিডেট মাস্টার ওয়ারিসা হায়দার ৪র্থ। ওপেন অনূর্ধ্ব-১০ ক্যাটাগরিতে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের রায়হান রশীদ মুগ্ধ ৯ খেলায় ৬-পয়েন্ট অর্জন করে ৫ম পুরস্কার পায়। বাংলাদেশের সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের অন্যান্য কৃতি দাবারুদের মধ্যে অনূর্ধ্ব-১২ সাফায়েত কিবরিয়া আজান ৯ খেলায় ৫ পয়েন্ট, মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১২-এ সিদরাতুল মুনতাহানা নাফি ৯ খেলায় ৪ পয়েন্ট অর্জন করে।
উল্লেখ্য কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন দেশের মোট ৩৭৩-জন দাবারু সাম্প্রতিক এ দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে, যাদের মধ্যে ছিল ৮ জন গ্র্যান্ডমাষ্টার, ৮ জন আন্তর্জাতিক মাষ্টারসহ ফিদে টাইটেলধারী সর্বমোট ৬০-জন দাবারু।
উল্লেখ্য উক্ত কমনওয়েলথ দাবার মত আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের তরুণ দাবাড়ুরা দুর্দান্ত কৃতিত্ব দেখিয়ে প্রমাণ করেছে তাদের প্রতিভা বিশ্বমানের।
এসব সাফল্য তথা অর্জনের জন্য সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ ও মালিবাগ ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ কর্ণেল মো: শামসুল আলম, পিএসসি (অব:) সাউথ পয়েন্টের খুদে দাবাড়ু ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকবৃন্দসহ সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গুণগত মানের লেখাপড়ার পাশাপাশি বেশিবেশি খেলাধুলা, বিতর্ক প্রতিযোগীতা ও সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। যাতে শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে অধিকতর আত্মবিশ্বাসি, মানবিক ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
বিশেষ করে আমরা শিক্ষার্থীদেরকে সাফল্য, ব্যর্থতা বা হারজিতকে গুরুত্ব না দিয়ে খেলাধুলাসহ সকল প্রতিযোগীতায়ই অংশগ্রহণের ব্যপারে উৎসাহিত করি। যার অংশ হিসেবে এসব সাফল্য সংবাদগুলো যেমনই হোক সংবাদপত্র ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশের ব্যপারেও গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ১৯ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে ২০২৫-২৬ কর বছরের ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাগণের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বৃদ্ধি করে আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ নির্ধারণ করেছে। একই সাথে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন সংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোন করদাতা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলে অসমর্থ হলে ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের নিকট সুনির্দিষ্ট যৌক্তিকতাসহ আবেদন করা যাবে মর্মে আরো একটি আদেশ জারী করা হয়েছে।
এ বছর ৬৫ (পঁয়ষট্টি) বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী নাগরিকগণ ব্যতীত সকল ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ কর বছরে বেশ কয়েক শ্রেণির করদাতাগণকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাদকতা হতে অব্যাহতি দেয়া হলেও তাঁরা ইচ্ছা পোষণ করলে অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন।
করদাতার পক্ষে তাঁর ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও এবছর অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। এছাড়া, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী করদাতাগণের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাদকতা না থাকলেও তাঁর পাসপোর্ট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ই-মেইল এড্রেস ইত্যাদি তথ্য [email protected] ই-মেইলে প্রেরণ পূর্বক আবেদন করলে আবেদনকারীর ই-মেইলে OTP এবং Registration Link প্রেরণ করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী করদাতাগণও ই-রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন করত: সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন।
কোনরুপ কাগজপত্র বা দলিলাদি (upload) আপলোড না করে সম্মানিত করদাতাগণ তাঁদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে সহজে ঝামেলাহীনভাবে ঘরে বসেই ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং অথবা মোবাইল ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ ইত্যাদি)-এর মাধ্যমে অনলাইনে আয়কর পরিশোধ করে ই-রিটার্ন দাখিল করে তাৎক্ষণিকভাবে নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-রিটার্ন দাখিলের acknowledgement slip এবং প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখপূর্বক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়কর সনদ প্রিন্ট নিতে পারেন বিধায় দেশে-বিদেশে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশী করদাতার কাছে ই-রিটার্ন দাখিল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া সহজবোধ্য করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত বছরের ন্যায় এ বছরেও সম্মানিত করদাতাগণকে অনলাইন রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। করদাতাগণ ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বছর করদাতার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি তথা আয়কর আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং চার্টার্ড সেক্রেটারিজগণকে ও ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ার ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে।
ই-রিটার্ন সংক্রান্ত যেকোন সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা প্রদানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি কল সেন্টার স্থাপন করেছে। উক্ত কল সেন্টারের ০৯৬৪৩ ৭১ ৭১ ৭১ নম্বরে ফোন করে করদাতাগণ e-Return সংক্রান্ত প্রশ্নের তাৎক্ষণিক টেলিফোনিক সমাধান পাচ্ছেন। এছাড়া, www.etaxnbr.gov.bd এর eTax Service অপশন হতে করদাতাগণ e-Return সংক্রান্ত যে কোন সমস্যা লিখিতভাবে জানালে তার সমাধান পাচ্ছেন। অধিকন্তু, সারাদেশের সকল কর অঞ্চলে স্থাপিত ই-রিটার্ন হেল্প-ডেস্ক হতে অফিস চলাকালীন সময়ে ই-রিটার্ন দাখিল বিষয়ক সকল সেবা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। সম্মানিত করদাতাগণ নিজ নিজ কর অঞ্চলে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে অথবা টেলিফোনের মাধ্যমে ই-রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা গ্রহণ করছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সকল সম্মানিত ব্যক্তি করদাতাগণকে ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে ২০২৫-২০২৬ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য বিনীত অনুরোধ করছে। উল্লেখ্য,অদ্যাবধি প্রায় ১৮ লক্ষের অধিক ব্যক্তি করদাতা এ বছর অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম করে নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি আগামী ৩ ও ৭ ডিসেম্বর।
এই দুই মামলায় গ্রেফতারকৃত ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে হাজিরের পর প্রসিকিউসনের আবেদনে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শুনানির দিন ধার্য করেন।
সেই সাথে এই দুই মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনার পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
এছাড়া এই দুই মামলায় পলাতক অপর আসামিদের জন্য রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আজ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শুনানি করেন।
এ সময় অপর প্রসিকিউটর ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ সকালে ঢাকা সেনানিবাসে স্থাপিত সাময়িক কারাগার থেকে বাংলাদেশ জেলের বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে এই দুই মামলার আসামী ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালের আনার প্রেক্ষাপটে ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সেনা, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি’র বিপুল সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ও ডিজিএফআই-এর সাবেক পাঁচ মহাপরিচালসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
এই দুই মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামীদের ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী দুই মামলার আসামি সেনা কর্মকর্তাকে হাজিরের পর গত ২২ অক্টোবর তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
এই ট্র্যাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারক হলেন— মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গুমের এই দুই মামলায় যে ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা হলেন— র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (এখন অবসরকালীন ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম ও ডিজিএফআই-এর সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
অন্যদিকে, জুলাই আগস্টে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় গ্রেফতার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রাফাত বিন আলম মুনকে আগামীকাল ট্রাইব্যুনালে হাজিরের দিন ধার্য রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর, গত ১১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী।
আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, দুটি মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে নয় জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে গেছেন ও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন।
পরবর্তীতে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে গত ১২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মো. হাফিজ আল সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৫৪১(১) এর ক্ষমতাবলে এবং দি প্রিজন অ্যাক্ট এর ধারা ৩ এর বি অনুসারে ঢাকা ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এমইএস’ বিল্ডিং নং-৫৪-কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো।’ সূত্র: বাসস
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে। থাকছে রাতে থাকার সুযোগও। তবে দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন না।
কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট থেকে সকাল সাতটায় জাহাজ ছেড়ে যাবে। পরের দিন বিকাল তিনটায় সেন্ট মার্টিন থেকে সেই জাহাজ কক্সবাজারে ফিরে আসবে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা দুই মাস পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য সাতটি জাহাজ প্রস্তুত করা হয়েছে।
এদিকে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়। তবে রাতে থাকার ব্যবস্থা না থাকায় এখন পর্যন্ত একজন পর্যটকও দ্বীপ ভ্রমণে যাননি। জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় আগামী আট দিনেও কোনো পর্যটকের দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ নেই।
পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের’ সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বলেন, রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় নভেম্বর মাসে কোনো পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যেতে আগ্রহ দেখাননি। এ কারণে জাহাজ চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ১ ডিসেম্বর থেকে টানা দুই মাস রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা আছে। পর্যটকেরাও দ্বীপ ভ্রমণে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
কক্সবাজার শহর থেকে সেন্ট মার্টিনের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। জাহাজগুলো হলো—এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া, এমভি বে ক্রুজ, এমভি কাজল, কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারী ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন ও আটলান্টিক ক্রুজ।
সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিনে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা গণমাধ্যমকে বলেন, পর্যটক পারাপারের সময় জাহাজগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে। দুই হাজারের বেশি পর্যটক যেতে দেওয়া হবে না। এ জন্য নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট ও সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে পৃথক তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কুমিল্লায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ডা. ফাহমিদা আজিম কাকলী (৪৫) নামের এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ডা. ফাহমিদা আজিম কাকলী কুমিল্লা ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং নগর মাতৃসদন কুমিল্লার কনসালট্যান্ট ছিলেন। তিনি এক কন্যা সন্তানের জননী। তার বড় ভাই মনজুরুল আজীম পলাশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ডা. কাকলীর পরিবার জানায়, কয়েক দিন আগে ডেঙ্গু জ্বরে তিনি আক্রান্ত হন। এ সময় তার কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে শনিবার (২২ নভেম্বর) তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে আইসিইউ থেকে ভেন্টিলেশনে স্থানান্তর করা হয়। রাতভর চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও রোববার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ডা. কাকলীর মৃত্যুতে কুমিল্লায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রোগী, সহকর্মী, স্বজন সবার মুখেই বিষাদের ছাপ। মানবিক চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত কাকলী বিনামূল্যে বহু দরিদ্র রোগীর সিজার করিয়েছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি ছিলেন অধুনা থিয়েটারের সদস্য। গান শুনতে ও প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতেন তিনি।
ডা. কাকলীর বড়ভাই পলাশ বলেন, কাকলীর মরদেহ আপাতত হিমঘরে রাখা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত একমাত্র কন্যা তুর্না দেশে ফিরলে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হবে।
নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই, আস্তে আস্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে। নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ভূমিকম্পের আর্লি ওয়ার্নিংয়ের ব্যবস্থা নেই। কোনো কোনো দেশে একটি অ্যাপ আছে, যেটি ভূমিকম্প হওয়ার ১০ সেকেন্ড আগে ইন্ডিকেশন দিতে পারে। সে রকম অ্যাপ খোলা যায় কিনা এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাদের সবাইকে বিল্ডিং কোড মানতে হবে, নাহলে ভবিষ্যতে আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা আছে। জলাশয় ভরাট করে ফেলা হয়েছে, দাঁড়ানোর জন্য সেভাবে মাঠও নেই। রাজউককে এসব বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’
ভূমিকম্পের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা আগামী ১৫ দিন বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ রবিবার বিকেল ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে, সেজন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে বাস সার্ভিস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।
রবিবার (২৩ নভেম্বর) ডাকসুর ছাত্র পরিবহন সম্পাদক আসিফ আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে এ ঘোষণা দেন।
পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বিভাগীয় শহরগুলোতে বাস সার্ভিস দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। প্রসেস চলমান রয়েছে।’ একই সঙ্গে কোন অঞ্চলের বাস সার্ভিসের চাহিদা বেশি, তা জানাতেও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে আসিফ আব্দুল্লাহ বলেন, আগামীকাল (২৪ নভেম্বর) দুপুরের পর থেকে বিভাগীয় শহরগুলোতে বাস সার্ভিস দেওয়া শুরু হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ও চাহিদার ভিত্তিতেই বাস বরাদ্দ করা হবে বলেও জানান তিনি।
দেশি সম্পদের পাশাপাশি বিদেশে থাকা সম্পদের হিসাব বিবরণীও নির্বাচনী হলফনামায় দিতে হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।
রবিবার সকালে দুদক সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দুদক সম্পদের বিবরণী চাচ্ছে, সেখান বিদেশি সম্পদের হিসাব না দিলে তা অন্যায় হবে। পাশাপাশি অনুপার্জিত সম্পদ যাদের থাকবে তাদের বিরুদ্ধেও দুদক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দুদকের নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে ড. আবদুল মোমেন বলেন, ‘২০০৮ সালে শেখ হাসিনার কৃষি সম্পত্তি ছিল ৫ দশমিক ২১ একর, তবে আমরা অনুসন্ধান করে পাই ২৯ একর। সে সময় দুদক সেটি তদন্ত করে বের করলেও ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।’
দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে বর্তমানে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রোববার (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হকের দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। একইসঙ্গে ভোরের দিকে সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামীকাল সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। একইসঙ্গে ভোরের দিকে সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। একইসঙ্গে ভোরের দিকে সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। একইসঙ্গে ভোরের দিকে সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। একইসঙ্গে ভোরের দিকে সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে এবং সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। এছাড়া আগামী পাঁচদিনের মধ্যে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের দুই মামলার মানবতাবিরোধী অপরাধে ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ হাজির করা হয়েছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
গুমের মামলা দুটি হলো- টিএফআই এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে নির্যাতন। এসব মামলার পলাতক আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে ১৫ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী। আর ২২ অক্টোবর বুধবার সকালে বাংলাদেশ জেলের একটি বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে সাধারণ পোশাকে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয় । শুনানির পর তাদের ঢাকা সেনানিবাসের নির্ধারিত সাব জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এসব আসামিকে গ্রেপ্তার ও ট্রাইব্যুনালে হাজির করার বিষয়ে সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া গেছে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, ‘অভিযুক্ত সেনা অফিসারদের গ্রেপ্তার ও বিচারে সোপর্দ করার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন কাজ করেছে, তেমনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের রক্ষক হিসেবে আমরা যাদেরকে মনে করি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, তারা এই আদালতের (ট্রাইব্যুনালের) বিচারিক প্রক্রিয়াকে সাহায্য করেছে।’
তবে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তারা এখনো চাকরিতে বহাল রয়েছেন কি না তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, রোববার যেসব সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে তারা হলেন, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, মো. কামরুল হাসান, মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল, সাইফুল ইসলাম সুমন ও মো. সারওয়ার বিন কাশেম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিনজন পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণভোটের প্রস্তুতি নিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। এক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করতে বলা হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস’ (এএনএফআরইএল) কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান।
একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট করা ইসির জন্য চ্যালেঞ্জিং জানিয়ে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গণভোটের প্রস্তুতি নিতে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট করার জন্য এমন মুখোমুখি পরিস্থিতিতে পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশন কখনও হয়নি।’
সিইসি বলেন, ‘আগের নির্বাচন কমিশনকে এতটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়নি, যা বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কারণ আইন মেনেই সব প্রক্রিয়া হচ্ছে। আমাদের দ্বিতীয় কোনও অপশন নেই।’
গণভোট প্রসঙ্গে সিইসি স্পষ্ট করে বলেন, ‘আইন না হওয়া পর্যন্ত কমিশন এ বিষয়ে কাজ করতে পারবে না। আগামী সপ্তাহেই গণভোট আইনটি পাস করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইন পাস হলে, সেই আইন অনুযায়ী কমিশন প্রস্তুতি ও সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করবে। গণভোট হলে চারটি পয়েন্টেই হ্যাঁ/না ভোট হবে।’
পোস্টাল ভোটিং সুবিধা নিয়ে তিনি জানান, যাচাই-বাছাই ছাড়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে এই সুবিধা দেওয়া যাবে না। কারণ, অন্য দেশের লোকেরাও বিদেশে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করার নজির রয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে কমিশনের প্রস্তুতি সম্পন্ন এবং যেকোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কমিশন প্রস্তুত বলে তিনি দৃঢ়ভাবে জানান।
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো অপপ্রচার রোধ করা কঠিন হবে।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যদি সমঝোতা ও সহযোগিতামূলক হতো, তবে কমিশনের কাজ আরও সহজ হতো বলেও জানান তিনি।
এদিকে একই দিন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘সরকার চিঠি দিয়ে জানিয়েছে গণভোট করা ইসির দায়িত্ব। এক্ষেত্রে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট করার জন্য বলা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধের মধ্যে গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী একই দিনে দুই ভোটের প্রস্তুতি নিতে চিঠি দিলো অন্তর্বর্তী সরকার।
আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তপশিল দিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি আগে থেকেই নিচ্ছিল ইসি। এই অবস্থায় একই দিনে গণভোট আয়োজনের ঘোষণা আসায় সেজন্য বাড়তি প্রস্তুতিও নিতে হবে সাংবিধানিক সংস্থাটিকে। এখন গণভোট অধ্যাদেশের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অধ্যাদেশ এলে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি পর্বকে ঢেলে সাজাবে তারা। এ জন্য আরেক দফা নির্বাচনী রোডম্যাপও ঘোষণা করার প্রস্তুতিও রয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লব সংবিধান বাতিলের কথা বলেনি। বরং জনজীবনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সাড়া দেওয়ার মানসিকতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংবিধানের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করেছে।’
শনিবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ‘সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন, বাংলাদেশ’-শীর্ষক সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশকে তার সাংবিধানিক জীবনের ব্যাকরণ পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে, আইনের শাসন কোনো আমলাতান্ত্রিক রীতিনীতি বা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত অলংকার নয়। বরং আইনের শাসন হলো-সাংবিধানিক ব্যবস্থার একটি নৈতিক পাঠ, যা ন্যায্যতা, যুক্তি এবং জনগণের সম্মতির ওপর ভিত্তি করে। এটি অধিকারের মাধ্যমে, সীমাবদ্ধতার মাধ্যমে, শাসিতদের যে মর্যাদা প্রদান করে তার মাধ্যমে এর দিকে ইঙ্গিত করে।
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব সংবিধান বাতিলের কথা বলে নাই, বরং এটি সংবিধানের প্রতি আমাদের আনুগত্য ও দায়িত্ববোধকে শুদ্ধ করার আহ্বান জানিছে। ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং অতীতের কাটা-ছেঁড়ার পরও বর্তমান সংবিধানই বিচার বিভাগের বৈধতার বাতিঘর।
প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের জন্য তার ঘোষিত রোডম্যাপের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সংস্কার রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়। এটি জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে কাঠামো দেওয়ার প্রচেষ্টা। রোডম্যাপে তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্রীকরণ ও বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক পৃথককরণের বিষয়ে বিশদভাবে তুলে ধরেছিলেন। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক মাস ধরে অভূতপূর্ব বিচারিক রোডশোর একটি ধারাবাহিকতায় রোডম্যাপ অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত করছি। বিচারক নিয়োগে বিধান প্রণয়নসহ ইতোমধ্যে নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিচার বিভাগ পৃথককরণ সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলার গুরুত্ব তুলে ধরেন। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারিসহ অন্যান্য পদক্ষেপের কথা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস)-এর সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মুনিরুজ্জামান বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ভারত প্রায় আইনগতভাবেই ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে বাধ্য।
ঢাকায় বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের এক অধিবেশনে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তির আওতায় ভারত প্রায় আইনগতভাবেই তাকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য।
তিনি বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে ভারতকে বাংলাদেশের আইনগত প্রক্রিয়াকে সম্মান জানিয়ে বিলম্ব ছাড়াই হাসিনাকে ফেরত পাঠানো উচিত।
তিনি আরও বলেন, যদি ভারত আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন, নীতি ও শৃঙ্খলাকে সম্মান করে, তবে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে তাদের বাংলাদেশের আইনগত ব্যবস্থাকেও সম্মান জানানো উচিত।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুনিরুজ্জামান বলেন, হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক আইনগত মানদণ্ড পূরণ করেছে। আর এটাই এমন একটি আইনগত ব্যবস্থা যা প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্মান করা উচিত।
তিনি বলেন, যদি সেই সম্মান থাকে, তবে সব দিক থেকেই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো উচিত।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি বাংলাদেশ দণ্ডিত ভারতীয় নাগরিকদের আশ্রয় দিত এবং আনুষ্ঠানিক অনুরোধ সত্ত্বেও ফেরত না পাঠাত, তবে ভারত কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাত।
তিনি বলেন, যদি এমন পরিস্থিতি হয়, তবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের আইনে দণ্ডিত যে কোনো ব্যক্তিকে ভারত আইনগতভাবে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে বাধ্য। আর সব দিক থেকেই আমরা দাবি করি, নয়াদিল্লি যেন তাকে (হাসিনা) বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।
‘ফ্র্যাকচার্ড অর্ডার্স, ফ্লুইড লয়্যালটিজ: পাওয়ার পলিটিক্স ইন দ্য পোস্ট-অ্যালাইনমেন্ট এজ’ শীর্ষক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার টেইলরস বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলিয়া রোকনিফার্ড, আগোরা স্ট্র্যাটেজি ইনস্টিটিউটের জোভান রাটকোভিচ, ব্রাজিলের গেটুলিও ভারগাস ফাউন্ডেশনের (এফজিভি) লিওনার্দো পাজ নেভেস এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মারিয়ান ভিডাউরি। আলোচনাটি পরিচালনা করেন জার্মানির আরটিএল নর্ড-এর ডেভিড প্যাট্রিশিয়ান।
হাসিনার প্রথম প্রত্যর্পণ অনুরোধ এখনও মীমাংসিত হয়নি, যদিও নয়াদিল্লি এ ব্যাপারে ঢাকা থেকে প্রাপ্ত আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছে।
বাংলাদেশ সাম্প্রতিক রায়ের পর ভারতকে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে দন্ডিত শেখ হাসিনা এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ‘অবিলম্বে হস্তান্তর’ করার আহ্বান জানিয়েছে।
গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত নৃশংসতার দায়ে উভয়কে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।
রায় ঘোষণার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মানবতা বিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের অন্য কোনো দেশে আশ্রয় দেওয়া হবে গুরুতর ‘অমিত্রসুলভ’ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।’ সূত্র: বাসস