তীব্র দাবদাহে পুড়ছে সারা দেশ। গরমের তীব্রতায় বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গলে গেছে রাস্তার পিচ। ক্লান্ত নাজেহাল অবস্থায় ঘরে-বাইরে বিপর্যস্ত মানুষ। প্রতিটি জেলায় গতকাল রেকর্ড হয়েছে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। রোদের তাপ এত বেশি যে, রাস্তা থেকে উঠছে গরম ভাঁপ। কোথাও দাঁড়িয়ে থাকলেও এমনিতেই ঘামছে শরীর। এই আবহাওয়ায় সাধারণ কাজকর্ম করতেও কষ্ট, সেখানে শ্রমজীবী মানুষ পোহাচ্ছেন অবর্ণনীয় কষ্ট। রাজধানীসহ প্রায় সারা দেশের চিত্র একই।
এ অবস্থায় গতকাল রাজধানীতে আগের দিনের চেয়ে দুই ডিগ্রি বেড়ে তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে যশোর-চুয়াডাঙ্গা-বাগেরহাটে এই তাপমাত্রা ছিল আরও বেশি। গতকাল যশোরে রেকর্ড করা হয়েছে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৩ ডিগ্রি ও বাগেরহাটে ছিল ৪১ ডিগ্রির বেশি। পাবনা, কুষ্টিয়াসহ মধ্য ও দক্ষিণবঙ্গে প্রায় একই রকম তাপমাত্রা বিরাজ করে গতকাল। তবে কোনো সুখবর দেয়নি আবহাওয়া অফিস। বরং গত শুক্রবার তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এমন তাপমাত্রা আজ ও আগামীকালও বহাল থাকবে।
অন্যদিকে পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা পাবনা জেলায় চলতি মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এমন তীব্র দাবদাহে পাবনা শহরে হিটস্ট্রোকে একজন মারা গেছেন।
এদিকে, ঈদ ও নববর্ষের ছুটি শেষে আজ ২১ এপ্রিল স্কুল-কলেজ খোলার কথা থাকলেও তীব্র গরমের কারণে আরও পাঁচ দিন স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এ ঘোষণা থাকলেও পরের দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় স্কুল-কলেজ খুলবে আগামী ২৮ এপ্রিল। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতি হলে এ ছুটি আরও বাড়তে পারে। এ ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মাউশির পক্ষ থেকেও একই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রাজধানীতে ৪০ ডিগ্রির বেশি এবং যশোর-চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠে যাওয়ায় সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকেই স্কুল-কলেজে ছুটি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর সকালে প্রথমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সেসময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। তবে পরে নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির ঘোষণা দেওয়া হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলমান দাবদাহে শিশুশিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় আগামী ২১ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয়সমূহ ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।
মাউশির সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেন, আবহাওয়া পরিস্থিতির অবনতি বা উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ পরিবর্তিত হতে পারে।
তীব্র তাপদাহের কারণে একইদিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্লাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তীব্র দাবদাহের কারণে পরবর্তী তারিখ ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্লাস বন্ধ থাকবে।
তবে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়নি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। অবশ্য ঘোষণা না দিলেও একটি গণমাধ্যমকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালক জানিয়েছেন, মাউশির অধীন স্কুল ও কলেজগুলোর মতো তাদের অধীন মাদ্রাসাগুলোও ছুটি থাকবে। অর্থাৎ মাদ্রাসাগুলোও খুলবে ২৮ এপ্রিল।
এদিকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন পরিচালক বলেন, তারাও মাউশির অনুরূপ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। আজ এ ঘোষণা আসতে পারে। এর আগে দাবদাহের কারণে তিন দিন হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অফিস। গত শুক্রবার এটি জারি করা হয়। আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ শনিবার থেকে তাপমাত্রা বেশি থাকবে। এ সময় সবাইকে গরম থেকে বাঁচতে সতর্কতার সঙ্গে চলার নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। এ ছাড়া মৌলভীবাজার জেলাসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা আজ রোববারও অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
তীব্র এ গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ, বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শিশু, বয়স্করা। এই সময়ে পানি বেশি খাওয়াসহ তরল খাবার খাওয়া পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কোনো অবস্থাতেই তেল ও মসলা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া যাবে না বলেও তারা উল্লেখ করেন। এমনকি গরমে বাইরে থেকে বাসায় গিয়েই ঠাণ্ডা পানি না খাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। একইসঙ্গে রাস্তার ধারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খোলা জায়গায় বিক্রি করা ঠাণ্ডা শরবত না খাওয়ার কথাও জানান। কেননা এসব শরবত খেলে ডায়রিয়া-টাইফয়েডসহ নানা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
চলতি এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ৭ ও ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়। এতে তাপমাত্রা কিছুটা কমে যায়। এরপর ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। ১৫ এপ্রিল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করে। এই তীব্র তাপপ্রবাহের এলাকা ধীরে ধীরে বেড়ে যায়।
যশোর প্রতিনিধি জানান, গতকাল মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। প্রচণ্ড গরমে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সেখানকার মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন না। এই অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। তীব্র গরমের কারণে শ্রমজীবী মানুষ বেশিক্ষণ কাজ করতে পারছেন না। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে প্রচণ্ড গরমে শ্রমিকরা মালামাল লোড-আনলোড করতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রচণ্ড গরমে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালগুলোতে শিশু রোগীদের চাপ বেড়েছে। শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুস সালাম জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বেশির ভাগ শিশু ঠাণ্ডা জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, জেলায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে শনিবার বিকাল ৩টায়। জেলায় অব্যাহত থাকা তীব্র দাবদাহে গতকাল সকাল থেকেই রোদের তাপ ও ভ্যাপসা গরম। তীব্র রোদের তাপে মানুষ বাইরে যেতে পারছেন না। সকাল ৯টার পর থেকে রোদের তাপ অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু
পাবনা প্রতিনিধি জানান, জেলার ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই তীব্র দাবদাহে পাবনা শহরে হিট স্ট্রোকে সুকুমার দাস নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে জানা গেছে। শনিবার দুপুরে পাবনা শহরের রূপকথা রোডে একটি চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় হিট স্ট্রোক করেন তিনি। এসময় আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার আবাসিক চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত সুকুমার দাস (৬০) পাবনা শহরের শালগাড়িয়া জাকিরের মোড়ের বাসিন্দা।
রেকর্ড তাপমাত্রায় পুড়ছে বাগেরহাট
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, জেলাজুড়ে বয়ে যাওয়া হিটওয়েভের মধ্যে শনিবার বিকাল ৩টায় মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময়ে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল মাত্র ২৮ শতাংশ। হিটওয়েভের কারণে সড়ক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ গলে একাকার হয়ে ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে। সড়ক মহাসড়কে যানবাহন চলাচলও অনেক কমে গেছে। অতি-প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরবাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, জ্বর-কাশি নিয়ে একমাত্র জেলা ২৫০ বেড হাসপাতালের ৩২ বেডের শিশু ওয়ার্ডেই ভর্তি রয়েছেন ১১২ জন। এর মধ্যে শিশু রয়েছে ৭১জন। তীব্র দাবদাহে বাগেরহাটের জনজীবনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
পিরোজপুর হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও তীব্র গরমে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। শনিবার পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ দেখা গেছে। জায়গা না পেয়ে অনেক রোগী হাসপাতালের বারান্দায় অবস্থান নিয়েছেন।
বর্তমানে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি রয়েছে ১৭৫ জন। তাদের মধ্যে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২৯, মেডিসিন পুরুষ ওয়ার্ডে ৪৬, মহিলা ওয়ার্ডে ৫৩, শিশু ওয়ার্ডে ২৯, গাইনি ওয়ার্ডে ৬ ও স্ক্যানু ওয়ার্ডে ১২ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।
দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে
আজ সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং আগামী আরও কয়েক দিন একই রকম তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। শনিবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের দেওয়া পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ ছাড়া যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসমূহে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহী ও পাবনা জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও রাঙামাটি জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়। কমিশনের প্রস্তুতি জেনে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
সিইসির নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দলে চারজন নির্বাচন কমিশনার ও ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ইসি সচিব ব্রিফিংয়ে জানান, আলোচনায় ভোটার তালিকার ক্রম সংযোজন, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন এবং প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের বিষয়গুলো রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া এবারের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পায়।
বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ শেষে নির্বাচন কমিশন প্রতিনিধি দলটি আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ফিরে গেছে। সেখানে সিইসির সভাপতিত্বে কমিশনারদের নিয়ে বর্তমানে একটি বৈঠক চলছে। এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার লক্ষ্যে সিইসির ভাষণ রেকর্ড করার জন্য আজ বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার কর্তৃপক্ষকে ইসিতে ডাকা হয়েছে। দীর্ঘদিনের রেওয়াজ অনুযায়ী, যেদিন রাষ্ট্রপতি সঙ্গে কমিশন সাক্ষাৎ করে এবং সিইসির ভাষণ রেকর্ড করা হয়, সেদিনই সাধারণত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ফলে আজই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে নির্বাচনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করা হতে পারে বলে জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, নির্বাচন আগামী পাঁচ বছরের জন্য হলেও গণভোট শত বছরের জন্য। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী এই নির্বাচনকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার এক অনন্য সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইতিহাস আমাদের নতুন করে যে সুযোগ দিয়েছে, তা অন্য প্রজন্ম পাবে না। এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব, অন্যথায় জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে। বিগত আমলের নির্বাচনগুলোকে ‘প্রতারণা’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন অন্যান্য সাধারণ দায়িত্বের মতো নয়, বরং এটি একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব। এই নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখার আহ্বান জানান তিনি।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ‘ধাত্রী’র সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধাত্রী ভালো হলে জন্ম নেওয়া শিশুও ভালো হয়। সদ্য যোগদান করা ইউএনওদের প্রধান দায়িত্ব হলো একটি শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর নির্বাচন আয়োজন করা। তিনি কর্মকর্তাদের সৃজনশীল হওয়ার পাশাপাশি অপতথ্য ও গুজব প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। একইসঙ্গে নিজ নিজ এলাকার পোলিং স্টেশন পরিদর্শন এবং সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দেন।
গণভোটের গুরুত্ব তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভিত্তি স্থায়ীভাবে পাল্টে দেওয়া সম্ভব। ভোটাররা যেন কেন্দ্রে এসে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরির তাগিদ দেন তিনি। এছাড়া নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, নারীরা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
শিগগিরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে জানিয়ে তিনি কর্মকর্তাদের এখন থেকেই পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। ভিডিও কনফারেন্সে সব জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম ও জনপ্রশাসন সচিব মো. এহছানুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে তৃতীয় কোনো দেশে যাচ্ছেন কি না, সে বিষয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলে কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
শেখ হাসিনার অবস্থান ও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সংবাদমাধ্যমে তার তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও কূটনৈতিকভাবে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশের সরাসরি কিছু করার নেই। তবে সরকার চায় তিনি দেশে ফিরে আসুন। তাকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এ ক্ষেত্রে ভারতকেও রাজি হতে হবে অথবা তাদেরই চাইতে হবে তাকে ফেরত পাঠাতে। আমরা কেবল তাকে ফেরত আনার জন্য ভারতকে রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি, এর বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই।
দেশের মানবাধিকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন জানান, বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকার শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মানবাধিকার ইস্যুতে বিদেশি কোনো নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, র্যাব গত কয়েক মাসে তাদের কার্যক্রমে যথেষ্ট উন্নতি করেছে এবং মানবাধিকার রক্ষায় সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়া ডিজিএফআই বন্ধ করা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশেই এ ধরনের গোয়েন্দা সংস্থা থাকে, তাই এটি হুট করে বন্ধ করা সহজ বা বাস্তবসম্মত নয়।
ভিসা জটিলতা ও বিদেশে মিশন খোলা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ভুয়া নথিপত্র বা ফেক ডকুমেন্ট তৈরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান হবে না। শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রদানের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর এখতিয়ারভুক্ত। এছাড়া বিদেশে নতুন মিশন খোলার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ এবং এর সঙ্গে আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টিও জড়িত। অন্যদিকে, ভারতকে বাদ দিয়ে পাকিস্তান ও চীনকে নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন কোনো জোট গঠনের সম্ভাবনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এর অগ্রগতি হতে পারে, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো অবস্থা নেই।
বাগেরহাট জেলার সংসদীয় আসন কমিয়ে তিনটি করার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে জেলাটিতে পূর্বের মতোই চারটি সংসদীয় আসন থাকছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে নির্বাচন কমিশনের গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১০ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেছিলেন। সেই রায়ে বাগেরহাটের চারটি আসন পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন এবং গাজীপুর-৬ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. সালাহ উদ্দিন সরকার আপিল বিভাগে আবেদন করেন। আজ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখলেন।
আদালতে আজ আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান। গাজীপুর-৬ আসনের প্রার্থীদের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা বাদল, মুস্তাফিজুর রহমান খান ও বেলায়েত হোসেন। অন্যদিকে বাগেরহাটের রিটকারীদের পক্ষে আইনি লড়াই চালান সিনিয়র অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। সীমানা বিন্যাস অনুযায়ী, চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট-১; সদর ও কচুয়া উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট-২; রামপাল ও মোংলা উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ এবং মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট-৪ আসন গঠিত ছিল।
তবে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত সীমানার গেজেট প্রকাশ করে। ওই গেজেটে বাগেরহাটের একটি আসন কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনা হয় এবং বাগেরহাট-৪ আসনটি কেটে নিয়ে গাজীপুর-৬ আসন সৃষ্টি করা হয়।
কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাগেরহাট প্রেসক্লাব, জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, জেলা আইনজীবী সমিতি, সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন, জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. শেখ মাসুদ রানা হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং ১০ নভেম্বর রুল যথাযথ ঘোষণা করে বাগেরহাটের চারটি আসন ফিরিয়ে দেওয়ার রায় দেন। আপিল বিভাগের আজকের আদেশের ফলে সেই রায়ই চূড়ান্ত হলো।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চাঞ্চল্যকর মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের একটি দল ঝালকাঠি অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আজ বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় নির্মমভাবে খুন হন লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিয়া (১৫)। পুলিশ জানায়, হত্যাকারী হাতে গ্লাভস পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মা ও মেয়েকে আঘাত করে। নাফিসার গলায় একাধিক গভীর ক্ষত এবং লায়লার শরীরেও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার নিহতদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ ঘাতক গৃহকর্মীর পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য শনাক্ত করে। ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন সকাল ৭টার দিকে নাফিসার বাবা আজিজুল ইসলাম স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। এরপর সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরিহিত অবস্থায় লিফটে করে ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন গৃহকর্মী আয়েশা। হত্যাকাণ্ড শেষে সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে তিনি নিহত নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে, মুখে মাস্ক এবং কাঁধে স্কুলব্যাগ ঝুলিয়ে স্বাভাবিকভঙ্গিতে ভবন ত্যাগ করেন।
নিহত নাফিসার বাবা আজিজুল ইসলাম জানান, মাত্র চার দিন আগে ভবনের নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে আয়েশাকে কাজে নেওয়া হয়েছিল। নিয়োগের সময় পরিচয়পত্র বা ফোন নম্বর চাইলে আয়েশা জানিয়েছিল, আগুনে পুড়ে তার বাবা-মা মারা গেছেন এবং সে নিজেও দগ্ধ হয়েছিল—এমন আবেগী গল্প শুনিয়ে সে তথ্য দেওয়া এড়িয়ে যায়। এছাড়া ঘটনার আগের দিন রোববার বাসার মূল দরজার চাবি হারিয়ে যাওয়া নিয়েও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আজিজুল ইসলাম বাসায় ফিরে স্ত্রী ও সন্তানের মরদেহ দেখতে পান। গ্রেফতারকৃত আয়েশার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাজধানীতে গৃহকর্মী বা কাজের লোক সেজে অপরাধ সংঘটনের প্রবণতা রোধে নগরবাসীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গৃহকর্মীর হাতে নৃশংস জোড়াখুনের ঘটনার প্রেক্ষিতে এই বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বলছে, সামান্য অসতর্কতা অনেক সময় বড় ধরনের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতীতেও গৃহকর্মী পরিচয়ে বাসায় ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা প্রতিরোধেই ডিএমপি কমিশনার নগরবাসীকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নাগরিকদের করণীয় সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। কমিশনার জানান, কাউকে কাজে নিয়োগ দেওয়ার আগে অবশ্যই তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং অন্তত দুজন শনাক্তকারীর নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা সংগ্রহে রাখতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সচেতনতা ও সঠিক তথ্য সংরক্ষণই অপরাধ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভাড়াটিয়া নিবন্ধন ফরম যথাযথভাবে পূরণ করাসহ নাগরিকদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজে পুলিশকে সহযোগিতা করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন ডিএমপি কমিশনার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে অপরিবর্তিত রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, প্রায় ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত সেরে না ওঠার ক্ষেত্রে বয়স একটি বড় বাধা। এছাড়া অতীতে কারাগারে থাকাকালীন দীর্ঘসময় সঠিক চিকিৎসা না পাওয়া এবং নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তাঁর স্বাস্থ্যের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না। তবে চিকিৎসকদের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো, তাঁর শারীরিক অবস্থার নতুন করে কোনো অবনতি ঘটছে না।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড এখনই তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার পক্ষে নয়। গত বৃহস্পতিবার বোর্ডের এক বৈঠকে তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও, শুক্রবার শারীরিক অবস্থা দীর্ঘ ভ্রমণের উপযুক্ত না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এভারকেয়ার হাসপাতালেই তাঁকে বিশ্বের সর্বাধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড সার্বক্ষণিক তাঁর স্বাস্থ্যের তদারকি করছে। চিকিৎসকদের মতে, বিদেশে অনেক সময় জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হয়, যা দেশে দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে। তাই ঝুঁকি নিয়ে এখনই তাঁকে স্থানান্তর না করে দেশেই স্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সার্বিক তদারকিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন তাঁর পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান। তিনি নিয়মিত মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠকে সশরীরে উপস্থিত থাকছেন এবং শাশুড়ির চিকিৎসার যাবতীয় বিষয় সমন্বয় করছেন। অন্যদিকে, কাতারের আমিরের সৌজন্যে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মেডিক্যাল বোর্ড যখনই অনুমতি দেবে, তখনই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকায় পৌঁছাবে।
উল্লেখ্য, ৭৯ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। এরই মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তাঁকে রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) মর্যাদা দিয়েছে এবং তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে বর্তমানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সমসাময়িক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মসূচির মাধ্যমে এই জরুরি বৈঠকের তথ্য নিশ্চিত করা হয়। যদিও সংবাদ সম্মেলনের কর্মসূচিতে নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডার কথা উল্লেখ করা হয়নি, তবে জানানো হয়েছে যে উপদেষ্টা সমসাময়িক পরিস্থিতি ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াবলি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন।
সম্প্রতি রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে আসিফ মাহমুদকে নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা চলছে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে তিনি কোন দল থেকে অংশ নেবেন এবং প্রার্থিতা ঘোষণার আগে বর্তমান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন কি না—এসব বিষয় নিয়ে জোর গুঞ্জন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব ধোঁয়াশা কাটাতে পারেন এবং নিজের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দুর্নীতি লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দম বন্ধ করে ফেলেছে। বহু বছর অব্যবস্থাপনার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অবশ্যই কঠিন হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসই প্রমাণ করে, যখন সৎ নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন একসঙ্গে আসে, তখন পরিবর্তন অসম্ভব নয়। জনগণ যদি দায়িত্ব দেয়, বিএনপি আবার সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।’
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন। তিনি তার পোস্টে দুর্নীতির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিএনপি কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, সে বিষয় নিয়েও লেখেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার পোস্টে লিখেছেন, ‘দুর্নীতি কীভাবে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে, তা বুঝতে দূরে যাওয়ার দরকার নেই। মেধার ভিত্তিতে চাকরি খুঁজতে বের হওয়া একজন গ্র্যাজুয়েটের সঙ্গে কথা বললেই বুঝবেন। মাসের পর মাস ধরে একটি সাধারণ সরকারি সেবা পেতে হিমশিম খাওয়া কৃষকের দিকে তাকান। হাসপাতালে গিয়ে এক তরুণের পরিবার কীভাবে ভোগান্তিতে পড়ে, সেটা শুনুন। অথবা ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়া উদ্যোক্তাদের ভোগান্তি দেখুন।’
দুর্নীতি লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দম বন্ধ করে ফেলেছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি আরও বলেন, ‘খাবারের দাম কেন বাড়ে, স্কুলে ভালো পড়াশোনা কেন মেলে না, রাস্তায় কেন নিরাপত্তা নেই-সবকিছুর পেছনে সেই একই কারণ, দুর্নীতি।’
বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নতুন নয় বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা বহু যুগের আলোচনার বিষয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আমাদের সেই লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, আর মনে করিয়ে দেয় সেই সময়টাও, যখন বাংলাদেশ সত্যিকারের অগ্রগতি করেছিল। আর সেই সময়টা এসেছে মূলত বিএনপির আমলে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানো, পরিচ্ছন্ন সরকারি সেবা আর অর্থনীতিকে মুক্ত করার কাজে হাত দিয়েছিলেন, যা অনিয়ম-ক্ষমতার অপব্যবহার কমিয়ে দিয়েছিল। তারপর প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আধুনিকায়ন শুরু হয়। নতুন ক্রয় নীতিমালা, কঠোর আর্থিক আইন, শক্তিশালী অডিট ব্যবস্থা, আর স্বচ্ছ নজরদারি কার্যকর করা হয়।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল ২০০৪ সালে দুদক গঠন। এটি এমন এক স্বাধীন কমিশন, যেখানে সরকার চাইলে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিশ্বব্যাংক, এডিবি- সবাই বলেছিল, এটি বাংলাদেশের জবাবদিহির বড় অগ্রগতি।’
তারেক রহমান বলেন, ‘টিআইবির জরিপেও দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মানুষ নিজেরাই বলেছে, দুর্নীতি কমেছে। এটা কোনো গল্প নয়, এটা তখনকার সংস্কারের প্রমাণ।’
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বাজেট নিয়ন্ত্রণ, অডিট, ব্যাংকিং ও মানিলন্ডারিংবিরোধী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে শক্তিশালী অর্থ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ও নিয়মের মধ্যে সরকারি স্বচ্ছ ক্রয়নীতি চালু করে, যা পরবর্তী সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় স্বচ্ছতার আইনের ভিত্তি তৈরি করে। টেলিকম, মিডিয়া, বিমান পরিবহন খাতে উন্মুক্ত বাজার গড়ে তোলে প্রতিযোগিতা বাড়ানো হয়। ফলে দুর্নীতি কমে, সাধারণ মানুষের সুযোগ বাড়ে। এছাড়া প্রশাসনের জটিলতা কমিয়ে এবং জবাবদিহি বাড়ানোর মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশে এমন কিছু বড় পরিবর্তন ঘটেছে, যার জন্য তার দল গর্ব করতে পারে। দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক রেকর্ড একমাত্র বিএনপিরই আছে।’
আগামী দিনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও শক্তভাবে চালাতে বিএনপির কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরেন তারেক রহমান। সেগুলো হলো—
১. প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা: আদালত, দুদক, নির্বাচন কমিশন, সরকারি সেবা; কেউই যেন রাজনৈতিক চাপের মধ্যে না থাকে।
২. পুরোপুরি স্বচ্ছতা: উন্মুক্ত দরপত্র, সম্পদ বিবরণী, রিয়েল–টাইম অডিট ও শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন।
৩. বিচার ও আইনশৃঙ্খলা সংস্কার: পেশাদার পুলিশিং, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি ও ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণ।
৪. ই-গভর্ন্যান্স: লাইসেন্স, জমি, পেমেন্ট- সব অনলাইনে এনে ঘুষের সুযোগ কমানো (বিশ্বমান অনুযায়ী ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ দুর্নীতি কমতে পারে)।
৫. হুইসেল ব্লোয়ার সুরক্ষা: অনিয়ম ফাঁস করতে যারা সাহস দেখায়, তাদের নিরাপত্তা প্রদান।
৬. নৈতিক শিক্ষা: স্কুল-কলেজ থেকেই সততার চর্চা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা।
৭. শক্তিশালী আর্থিক নজরদারি: ডিজিটাল ব্যয় ট্র্যাকিং ও স্বাধীন অডিট এবং সংসদের কঠোর তদারকি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সব ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ এবং আন্দোলন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্পষ্ট করেছেন যে, দেশ এখন নির্বাচনমুখী হওয়ায় সব দাবি-দাওয়া আপাতত স্থগিত রেখে তা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে উপস্থাপন করা উচিত।
বৈঠক শেষে জানানো হয়, তফসিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনী জোরালোভাবে কাজ শুরু করবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী মিলিয়ে প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন কোনো বেআইনি সমাবেশ বা আন্দোলন কঠোরহস্তে দমন করা হবে এবং যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়াবেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গত দেড় বছরে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে দুই হাজারের বেশি আন্দোলন বা বিক্ষোভ হয়েছে এবং সরকার যৌক্তিক দাবিগুলোর ক্ষেত্রে সবসময় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে। তবে বর্তমান সময়ে কেউ যেন দাবি-দাওয়ার নামে উত্তেজনা সৃষ্টি বা স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত না করেন, সে বিষয়ে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ‘শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদ’। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে সংগঠনের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করলে গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পিন্টু হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করছেন এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।
অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, যা স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনেও প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে চিকিৎসার বদলে পিন্টুকে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়েছিল এবং রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে তার চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এমনকি আদালতের নির্দেশ থাকার পরও তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বা থেরাপি দেওয়া হয়নি বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে, শহীদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের সভাপতি রফিক আহমেদ ডলার দাবি করেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলায় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম আসার প্রেক্ষাপটে বর্তমান আইজিপিকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। পিন্টু হত্যার দ্রুত বিচার এবং আইজিপির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার আইজিপির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত তাদের এই দাবি অব্যাহত থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন থেকে এই মন্ত্রণালয়টি ‘নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়’ নামে পরিচিত হবে। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান নাম ‘মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ পরিবর্তন করে ‘নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়’ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।
বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বেগম রোকেয়ার আদর্শ ও দর্শনকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া কখনো সমাজকে বাদ দিয়ে কিছু করেননি, বরং সমাজকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়েছেন। ১০০ বছর আগেই তিনি নারীদের শিক্ষার মাধ্যমে অন্ন উপার্জনের পথ দেখিয়েছেন। ড. ইউনূস আক্ষেপ করে বলেন, আমরা দিবসটি আয়োজন করছি ঠিকই, কিন্তু তাঁর শিক্ষা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারছি না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রোকেয়ার আদর্শকে সঙ্গী করলেই কেবল সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব।
সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মেয়েরা এই অভ্যুত্থানে তাদের নেতৃত্বের প্রমাণ দিয়েছে। আজকের নারীসমাজ গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী এক নতুন শক্তি। তাদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে, যা শুধু নারীদের নয়, পুরো জাতিকে উজ্জীবিত করবে। নারীদের নেতৃত্ব ও অবদানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এবং তাদের সামনে রেখেই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।
নারীশিক্ষা, মানবাধিকার, নারী অধিকার ও জাগরণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চারজন বিশিষ্ট নারীর হাতে সম্মানজনক ‘বেগম রোকেয়া পদক’ তুলে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি নির্বাচিতদের হাতে এই পদক প্রদান করেন।
এ বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চারজন নারীকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। পদকপ্রাপ্তরা হলেন—নারীশিক্ষা ও গবেষণা ক্যাটাগরিতে রুভানা রাকিব, নারী অধিকার (শ্রম অধিকার) ক্যাটাগরিতে কল্পনা আক্তার, মানবাধিকার শ্রেণিতে নাবিলা ইদ্রিস এবং নারী জাগরণ (ক্রীড়া) ক্যাটাগরিতে ঋতুপর্ণা চাকমা।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বেগম রোকেয়ার কর্ম ও আদর্শকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। উল্লেখ্য, প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার অসামান্য অবদান ও নারী জাগরণে তিনি অন্তহীন প্রেরণার উৎস। দিবসটি উপলক্ষে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।