কুয়েতে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল তারেক ১৯৮৯ সালে কমিশন লাভ করেন। সামরিক কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে স্টাফ ও কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের সিনিয়র ডিরেক্টর স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সমগ্র কর্মজীবনে তার প্রধান কার্যাবলীর মধ্যে আছে বাংলাদেশ অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির কমান্ড্যান্ট, ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, ৪৪ এবং ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার।
মেজর জেনারেল তারেক অ্যাঙ্গোলা এবং আইভরি কোস্টে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের জন্য স্বতন্ত্র সম্মানও পেয়েছিলেন। তিনি সারা বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সামরিক প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের অনন্য সুযোগ পেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশের মিরপুরে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ, ভারতের ওয়েলিংটনে ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ এবং পেনসিলভেনিয়ায় ইউএস আর্মি ওয়ার কলেজ।
সাধারণ মানুষের চলাচল ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ঢাকার বেশ কিছু সড়কে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগামীকাল রবিবার (১৮ মে) থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।
শনিবার (১৭ মে) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, কচুক্ষেত সড়ক, বিজয় সরণি থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হয়ে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জাহাংগীর গেট সংলগ্ন এলাকা, বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে মহাখালী ফ্লাইওভার সংলগ্ন এলাকা, সৈনিক ক্লাব মোড়, ভাষানটেক, মাটিকাটা, ইসিবি চত্বর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এরআগে রাজধানীতে প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবন, বিচারপতি ভবন, জাজেস কমপ্লেক্স, সুপ্রিমকোর্টের প্রধান ফটক, মাজার গেট, জামে মসজিদ গেট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২–এর প্রবেশ গেট, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের সামনে সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ডিএমপি অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-III/৭৬) এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায় ও প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে যখন-তখন সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আবারও অনুরোধ জানায় ডিএমপি।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা প্রদান করা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব এবং সরকার এ বিষয়ে বদ্ধপরিকর। বিশেষ করে নারীদের সাইবার নিরাপত্তা প্রদান এবং সাইবার সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।
আজ শনিবার ঢাকার আগারগাঁওস্থ বিটিআরসি ভবনে ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস ২০২৫’ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যকালে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
এসময় উপদেষ্টা বলেন, ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ এ ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং, ইন্টারনেট যেন সর্বস্তরের জনগণ ব্যবহার করতে পারে সেজন্য মূল্য যুক্তিসঙ্গতভাবে কমিয়ে আনতে হবে। আইআইজি পর্যায়ে দাম কমিয়েছে সরকার যার সুফল গ্রাহকরা দুই-এক মাসের মধ্যে পাবেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও শিক্ষা খাতে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু কৃষি-স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহার আরো বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন আসিফ মাহমুদ।
উপদেষ্টা আরো বলেন, বিশ্বে অন্যতম ভাইব্রেন্ট এবং ইনোভেটিভ খাত হচ্ছে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি, এই সেক্টরে আমাদের তরুণ এবং নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। আরএমজি সেক্টরে যেমন নারীরা বিশেষ অবদান রেখে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করেছে, সেভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেক্টরে নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানোর বিষয়ে তাগিদ দেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।
জেলা থেকে থানা, ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত জনগণ তাদের মৌলিক সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে যেন কোনো ধরনের দুর্নীতি বা ঘুষ বাণিজ্যের শিকার না হয় এবং সকল কার্যক্রমকে জনবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য হিউম্যান টাচ উঠিয়ে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সকল কার্যক্রম নিয়ে আসবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানে হ্যাকাথন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। টেলিকম সেবা প্রদানকারী সংস্থাকে ই-লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে ই-সেবার শুভ উদ্বোধন করেন তিনি। এছাড়াও রবি আজিয়াটা কর্তৃক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের ডিজিটাল ছড়ি বিতরণ করা হয়। পরে উপদেষ্টা বিটিআরসি ভবনের নিচতলায় টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাত নির্ভর ইনোভেশন কাজের প্রদর্শনীগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন।
‘ডিজিটাল রূপান্তরে নারী-পুরুষের সমতায়ন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস ২০২৫’ উদ্যাপন অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. জহিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আইটিইউ এর মহাসচিব এর ভিডিও বার্তা প্রদর্শন করা হয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের ন্যাশনাল রেডিওলজিক্যাল সেফটি ডিভিশনের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন পাকিস্তানের আগের দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পাঞ্জাবে অবস্থিত একটি ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ধ্বংস হওয়ার পর এলাকাটিতে রেডিয়েশন সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। খবর সামা টিভির।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার পর ঘাঁটির তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মানুষ যেন দরজা-জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতরে অবস্থান করে, এমন সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছিল। এই রেডিওলজিক্যাল ঝুঁকি জননিরাপত্তা ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছিল।
জানা গেছে, ১০ মে পাকিস্তানের একটি হামলায় এ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা নিয়ে পাকিস্তান শুরু থেকেই দাবি করে আসছিল। এবার ভারতের নিজস্ব রেডিওলজিক্যাল কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন সেই দাবিকে স্বীকৃতি দিল, যা ইসলামাবাদের অবস্থানকে আরও জোরাল করল। তবে এখনো ভারতের সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ এই প্রতিবেদন নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বা রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি।
‘পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র তত্ত্বাবধানে নেওয়া উচিত’
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তত্ত্বাবধানে নেওয়া উচিত। এ মন্তব্য এমন এক সময় করা হলো যখন দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক সংঘর্ষ থেকে মাত্রই শান্তিচুক্তিতে পৌঁছেছে।
গত সপ্তাহে ভারত পাকিস্তানে ‘জঙ্গি ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে হামলা চালায়, যা ছিল ভারতশাসিত কাশ্মীরে একটি হামলার জবাব। উভয় দেশ পরস্পরের আকাশসীমায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন পাঠানোর পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতায় পৌঁছায় তারা।
কাশ্মীরের শ্রীনগরে সেনাদের উদ্দেশে ভাষণে রাজনাথ সিং বলেন, এ রকম দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিদ্রোহী একটি দেশের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র নিরাপদ আছে কি? তিনি বলেন, আমি মনে করি পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তত্ত্বাবধানে নেওয়া উচিত।
এ মন্তব্যের জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা এক সামাজিক মাধ্যমে পোস্টে বলেছে, ভারতের এ বক্তব্য তাদের ‘অনিরাপত্তা’ প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য, আইএইএ (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি) হচ্ছে জাতিসংঘের একটি সংস্থা, যা বিশ্বের পরমাণু কর্মসূচিগুলো তদারকি করে যেন সেগুলো শান্তিপূর্ণ উদ্দেশে ব্যবহৃত হয়।
ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়ে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। দীর্ঘদিনের বৈরিতার কারণে এই অঞ্চল বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ পারমাণবিক সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতে পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় উপাদানের চুরি এবং অবৈধ লেনদেনের ঘটনা বারবার ঘটেছে। যা একটি সক্রিয় কালোবাজারের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আইএইএর কাছে আহ্বান জানিয়েছে, ভারতের পারমাণবিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনা করা হোক। একই সঙ্গে, ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন তারা নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জন্য নবনির্মিত বোট ওয়ার্কশপ ও স্লিপওয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই উদ্যোগটি কোস্টগার্ডের আধুনিকায়নে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১৭ মে) দুপুরে বাগেরহাটের মোংলায় নবনির্মিত বোট ওয়ার্কশপ ও স্লিপওয়ের উদ্বোধন শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। এর আগে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের পশ্চিম জোনের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, কোস্টগার্ডের সদস্যদের প্রত্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় নানা প্রকার ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনসমূহে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে হয়। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আজ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ও প্রযুক্তি নির্ভর বোট ওয়ার্কশপ উদ্বোধন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সংযোজনের মাধ্যমে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। উপদেষ্টা এসময় নবনির্মিত বোট ওয়ার্কশপ কোস্টগার্ডের পাশাপাশি মোংলা বন্দর, নৌবাহিনী, বিজিবি, নৌ পুলিশ এবং বনবিভাগের বোটসমূহের মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলে একটি প্রযুক্তি নির্ভর 'মেরামতের হাব' হিসেবে অবদান রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কোস্ট গার্ডকে একটি যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নৌ বহরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইনশোর পেট্রোল ভেসেল, ফ্লোটিং ক্রেন এবং টাগ বোট সংযুক্ত করা হয়েছে। কোস্ট গার্ডের আধুনিকায়নে বুলেট প্রুফ হাই স্পিড বোট, সারভাইল্যান্স ড্রোন, দ্রুতগামী জাহাজ ও বোটের সংযুক্তির কার্যক্রম চলমান, যা পশ্চিম জোনেও অন্তর্ভুক্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, কোস্ট গার্ডকে প্রযুক্তিনির্ভর বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারও সংযোজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ সকল উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের জলসীমায় সার্বভৌমত্ব এবং উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতে অধিকতর কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, অতি সম্প্রতি কোস্টগার্ড গোপনে দেশের অভ্যন্তরে পুশ-ইন করা ৭৫ জন বাংলাদেশিকে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উদ্ধার করেছেন এবং ভবিষ্যতে পুশ-ইন রোধে সর্বদা তৎপর রয়েছেন। তিনি বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সমুদ্রে অবস্থানরত থেকে জাহাজে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে জেলেদের বিনিময় কাজ সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন, যা তাদের পেশাদারিতেরই প্রমাণ। তিনি এসময় গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ও জননিরাপত্তা রক্ষায় সদা জাগ্রত থেকে কার্যকরী ভূমিকা পালনের জন্য কোস্ট গার্ড সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে উপদেষ্টা বলেন, কোস্ট গার্ডকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা খুব তাড়াতাড়ি আরও ৫টি বড় ধরনের বোট কেনার প্রস্তাব করেছি, যা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। তাছাড়া প্রয়োজন সাপেক্ষে অদূর ভবিষ্যতে কোস্ট গার্ডের জন্য হেলিকপ্টার ক্রয় করা হবে।
সুন্দরবনে জলদস্যুদের নতুন করে উৎপাত প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, জলদস্যুর উৎপাত বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটতে দেওয়া হবে না। জলদস্যু বা বনদস্যু যে ধরনের দস্যুই থাকুক না কেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মিরপুরে হকার মো.সাগর হত্যা মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এবং কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
শনিবার চার দিনের রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম।
এসময় তার আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে ১২ মে রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির স্টার কাবাবের পেছনের একটি বাসা থেকে মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন এই মামলায় তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই মিরপুর গোলচত্ত্বরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন হকার মো. সাগর। ওইদিন বিকেল ৪টায় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এই ঘটনায় গত ২৭ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের মা বিউটি আক্তার। এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৪২ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার ৪৯ নং এজাহারনামীয় আসামি মমতাজ বেগম।
ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার লক্ষ্য নিয়ে আজ শনিবার শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে মাঠে নামবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় শুরু হওয়া প্রথম ম্যাচটি সরাসরি দেখাবে টি-স্পোর্টস চ্যানেল।
এই ম্যাচে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের স্থায়ী অধিনায়ক হিসেবে খেলতে নামবেন লিটন দাস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লিটন। গত বছরের ডিসেম্বরে ক্যারিবিয়ান মাটিতে অনুষ্ঠিত সিরিজটি টাইগারদের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ছিল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি লিটন। তারপরও অধিনায়ক হিসেবে নিজ দলের সামর্থ্য দেখিয়েছেন তিনি। ফলে লিটনের ওপর আস্থা রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। এতে এই ফরম্যাটে স্থায়ীভাবে অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব পান লিটন।
এই সিরিজকে স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা করবেন জানিয়ে লিটন বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের পথে সংযুক্ত আরব আমিরাত সিরিজ একটি ধাপ হবে।
দেশ ছাড়ার আগে লিটন বলেছিলেন, ‘অবশ্যই আমরা এই সিরিজ (সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে) জিততে চাই। আসলে, আমাদের লক্ষ্য সবসময় একই। আমরা যেকোনো খেলায় জিততে চাই। আমরা একটি দল হিসেবে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য চাই। আমরা একটি শক্তিশালী দল গড়ে তুলতে চাই। যারা যেকোনো কন্ডিশনে যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জিততে পারে।’
শক্তি এবং ক্রিকেট সংস্কৃতির দিক থেকে দুই দলের মধ্যে যে পার্থক্য আছে, তা বিবেচনা করে এই সিরিজ সহজেই জেতা উচিত বাংলাদেশের।
এখন পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ খেলে সবগুলোই জিতেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০২২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা।
নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স খুব বেশি ভালো নয়। ১৮২ ম্যাচ খেলে ৭১টিতে জয় এবং ১০৭টিতে হেরেছে টাইগাররা।
আবর আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজের দুই ম্যাচ জিততে পারলে স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাস বাড়বে বাংলাদেশের। কারণ ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নিজেদের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে টাইগাররা।
ধারণা করা হচ্ছে, লিটনের অফ ফর্ম তার অধিনায়কত্বের উপর চাপ ফেলতে পারে। কিন্তু এটিকে খুব বেশি আমলে নিচ্ছেন না লিটন। তিনি জানান, অধিনায়কত্বের দায়িত্ব ফর্মে ফিরতে ভূমিকা রাখবে।
লিটন বলেন, ‘কোনো চাপ নেই। অধিনায়ক না থাকার সময়েও কখনো কখনো আমার পারফরমেন্স খারাপ ছিল, এখন যে খারাপ হবে তা নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা (অধিনায়কত্ব) বড় প্লাস পয়েন্ট হতে পারে। আমি বিশ্বাস করি যারা ইতিবাচকভাবে চিন্তা করে, এমনকি যদি তারা কিছু দিনের জন্য ব্যর্থ হয়, ফলাফল আসবেই। আমি সেই জায়গায় আছি। আমি ইতিবাচকভাবে চিন্তা করছি যাতে ফলাফল আমার পক্ষে আনতে পারি।’
দলের সতীর্থদের পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে খেলার আহ্বান জানান ৩০ বছর বয়সি উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লিটন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দলকে এগিয়ে যেতে হলে ক্রিকেটারদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা ভালো খেললেই দল এগিয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ দল : লিটন দাস (অধিনায়ক), মাহেদি হাসান, তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন, জাকের আলী অনিক, রিশাদ হোসেন, তানভীর ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, তানজিম হাসান সাকিব, নাহিদ রানা ও শরিফুল ইসলাম।
সংযুক্ত আরব আমিরাত দল : মুহাম্মদ ওয়াসিম (অধিনায়ক), আলিশান শরাফু, আরিয়ানশ শর্মা, আসিফ খান, ধ্রুব পরাশার, ইথান ডি’সুজা, হায়দার আলী, মতিউল্লাহ খান, মুহাম্মদ জাওয়াদুল্লাহ, মুহাম্মদ জোহাইব, মুহাম্মদ জুহাইব, রাহুল চোপড়া, সাগির খান, সঞ্চিত শর্মা এবং সিমরঞ্জিত সিং।
এই ঢাকা এই কলকাতা- প্রায় এক দশক ধরে এভাবেই চলছে দুই বাংলার আলোকিত তারকা জয়া আহসানের ব্যস্ততা। তবে শুরু থেকেই ঢাকার চেয়ে টালিগঞ্জের সিনেমাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে আসছেন এই অভিনেত্রী ও প্রযোজক। কলকাতার সিনেমায় অভিনয় করে যেমন দর্শক ও সুধী মহলের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করছেন, তেমনি প্রতি বছরেই একাধিকবার বগলদাবা করে নিচ্ছেন সেখানকার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। গত বছরের শেষের দিকে মুক্তি পায় জয়া আহসান অভিনীত বাংলাদেশি সিনেমা ‘নকশীকাঁথার জমিন’। প্রায় পাঁচ মাসের ব্যবধানে আবারও প্রেক্ষগৃহে হাজির হলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী। গতকাল শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ‘জয়া আর শারমিন’ সিনেমাটি। করোনাকালীন সময়ে নির্মিত সিনেমাটি প্রায় ৫ বছর পর আলোর মুখ দেখল। এর মাধ্যমে চলতি বছরে প্রথম সিনেমা মুক্তি পেল জয়ার। সিনেমাটি প্রদর্শিত হচ্ছে রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখা, মহাখালীর এসকেএস হল, ধানমন্ডির সীমান্ত সম্ভার এবং কেরানীগঞ্জের লায়নস সিনেমা হলে।
মুক্তির প্রথম দিনে গতকাল সিনেমাটি দেখতে দর্শকের সঙ্গে রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় হাজির হয়েছিলেন জয়া আহসান ও তার টিম। সিনেমা দেখা শেষে এক ফেসবুক পোস্টে জয়া আহসান লেখেন, ‘আজ সকাল থেকে জয়া আর শারমিনকে দর্শকরা যে এত মিষ্টি করে গ্রহণ করছেন এই ব্যাপারটা শিল্পী হিসেবে জয়া আর শারমিনের একজন প্রযোজক হিসেবে আমার জন্য খুব খুব খুব আনন্দের। এমন ছোট ছোট গল্পগুলোই যে সবাইকে টানছে, আমরা সবাই যা বলতে চেয়েছি তা শুনতে চাচ্ছে, সেটাই বড় প্রাপ্তি।’
এর আগে জয়া জানিয়েছিলেন, যারা সিনেমাটি দেখবেন করোনার সময়ে ফিরে যাবেন। জয়া আহসান আরও বলেন, তখন অনেকেই মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। অনেকেই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। আমরা বেঁচে গেলেও অস্থির একটা সময় পার করে এসেছি। সে সময় শুটিং করা কতটা কঠিন ছিল?
পিপলু আর খান পরিচালিত সিনেমাটির গল্প গড়ে উঠেছে দুই নারীকে নিয়ে। জয়া একজন অভিনেত্রী; অন্যজন তার সহকারী। করোনা মহামারির কারণে বাইরের জগতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা দুজন গৃহবন্দি জীবন কাটাতে বাধ্য হয় দীর্ঘ সময়। প্রথম দিকে তাদের সম্পর্কটা ছিল পেশাগত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্পর্কের পরিধি বাড়তে থাকে। একসঙ্গে রান্না, গল্প করা, পুরোনো স্মৃতিচারণা-সবকিছুতেই তারা একে অপরের সঙ্গী হয়ে ওঠে। তারপরও এ ঘনিষ্ঠতার মধ্যে ছিল অদৃশ্য এক দেয়াল। জয়ার তারকাখ্যাতি এবং শারমিনের সাধারণ জীবনের ফারাক একটা সময় তাদের সম্পর্ককে জটিল করে তোলে। সম্পর্কের উত্থান-পতনের গল্পই তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়।
জয়া চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান এবং শারমিন চরিত্রে মহসিনা আক্তার। সিনেমার সহপ্রযোজক হিসেবেও আছেন জয়া। দীর্ঘদিন মঞ্চে অভিনয় করা মহসিনা আক্তারকে এবারই প্রথম দেখা যাবে বড় পর্দায়। একটি বিশেষ চরিত্রে আছেন অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনী। সিনেমার গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন নুসরাত ইসলাম মাটি ও পিপলু আর খান। প্রযোজনা করেছেন পিপলু আর খান ও জয়া আহসান।
সিনেমার গল্প প্রসঙ্গে নির্মাতা পিপলু আর খান বলেন, ‘কোভিডের সময়ে এক বাড়িতে আটকে পড়া দুই নারী নিজেদের জন্য তৈরি করে নেয় ছোট্ট এক জগৎ। কিন্তু বাইরের ভীতিকর বাস্তবতায় তা ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে, ফাটল ধরতে শুরু করে তাদের ভেতরকার সম্পর্কেও। বন্ধুত্ব, ভয়, সাহস আর হারানোর অনুভূতির মধ্যে গড়ে ওঠা এক আন্তরিক আখ্যান জয়া আর শারমিন।’
দেশের দক্ষিণের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (ওজোপাডিকো)। বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ছিল বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল প্রকৌশল পরিষদের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার হাতে। পদোন্নতি, বদলি, টেন্ডার—সবকিছুই চলত তাদের অদৃশ্য ইশারায়। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরও বদলায়নি দৃশ্যপট। আদর্শের পতন ঘটলেও, ক্ষমতার চাবিকাঠি রয়ে গেছে সেই পুরোনো হাতেই। তারা এখনো আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন টেন্ডার- তুলে দিচ্ছেন সুযোগ-সুবিধার বাণিজ্যও। ওজোপাডিকোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এমন দুর্নীতিতে বিব্রত বোর্ড চেয়ারম্যানও।
ছড়ি ঘুরাচ্ছে বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রকৌশলীরা
ওজোপাডিকোর প্রধান কার্যালয়ের একই ভবনে বছরের পর বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন সাতজন কর্মকর্তা, যাদের বিরুদ্ধে টেন্ডার সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। দপ্তর পরিবর্তন হলেও তারা সবাই প্রধান ভবনেই বহাল আছেন বলে জানা গেছে।
এই সাত কর্মকর্তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের ওজোপাডিকো শাখার সাধারণ সম্পাদক ও স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রকল্পের পরিচালক রকিব উদ্দিন। দীর্ঘদিন ধরে একই দপ্তরে কর্মরত এই কর্মকর্তা সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের আত্মীয়।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুল হক হানিফের আত্মীয় মো. আলিউল আজম স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনিও টেন্ডার সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা।
বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল আলম বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও প্রায় সাত বছর ধরে একই ভবনে কর্মরত রয়েছেন।
একইভাবে, পরিষদের আরেক নেতা কল্যাণ কুমার দেবনাথ, যিনি নির্বাহী প্রকৌশলী (নকশা ও পরিদর্শন), দীর্ঘদিন ধরে একই ভবনে কর্মরত। এ ছাড়া শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠজন মো. মেহেদী হাসান (উপ-প্রকল্প পরিচালক) ও মো. রাকিবুল ইসলাম (নির্বাহী প্রকৌশলী), এবং সিস্টেম প্রটেকশন ও কন্ট্রোল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেবাশীষ পালও বহু বছর ধরে এক জায়গাতেই কর্মরত রয়েছেন।
একাধিক অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান কার্যালয়ে থাকার সুবাধে এ ৭ জন বিভিন্ন ইভালুয়েশন কমিটিতে সদস্য পদ পেয়ে যান। ফলে তার সিন্ডিকেটের জুনিয়র অফিসারদের ব্যবহার করে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেন।
এই বিষয় নিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। সরাসরি জানিয়েছেন, অফিস প্রধান ছাড়া সাংবাদিকদের সাথে তাদের কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ওজোপাডিকোর চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত। বদলি বা পদায়ন করে থাকেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আমি খোঁজ নেব। কে, কোন পদে, কত বছর রয়েছে, আর এমন কর্মকর্তা-কর্মচারী কতজন রয়েছেন।
তবে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হায়দার আলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, ‘আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এমডির পদে রয়েছি। কারও বদলির বিষয়গুলো পরিচালনা পর্ষদ বিবেচনা করে। আগামী বোর্ড মিটিংয়ে আমি এসব বিষয় উত্থাপন করব।’
টেন্ডার-বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রক সেই পুরোনো মুখ
ওজোপাডিকোর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে চারটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর মালিকানা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনের বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে ‘রকি-পলাশ সিন্ডিকেট’ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার কাজ পেয়েছে। এই সিন্ডিকেটের অংশীদার গোপালগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ আবেদুল ইসলাম পলাশ এবং খুলনার শেখপাড়ার বাসিন্দা মো. রকিবুল ইসলাম। পলাশের প্রতিষ্ঠান ‘পলাশ এন্টারপ্রাইজ’ এবং রকিবুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান ‘তিতাস ব্রাদার্স’ ও ‘রকি এন্টারপ্রাইজ’ যৌথভাবে এই বিপুল অঙ্কের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।
গত ৫ আগস্টের পরেও ‘রকি এন্টারপ্রাইজ’ নতুন করে প্রায় ৬ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান দুটি মূলত ওজোপাডিকোর নতুন সংযোগ স্থাপন ও বিভিন্ন মালামাল সরবরাহের কাজ করে আসছে।
ওজোপাডিকো সূত্র জানায়, সংস্থাটিতে এখন পর্যন্ত ৬৪টি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি স্টেশন নির্মাণ করেছে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও তার সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠান ‘আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজ’।
এ ছাড়া মিটার সরবরাহের বিপুর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য লক্ষ্য করা গেছে। ‘আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজ চীনা কোম্পানি ‘চায়না হেক্সিং-এর সাথে তাল মিলিয়ে পর্যন্ত প্রায় ৬৩০ কোটি টাকার মিটার সরবরাহ করেছে।
ওজোপাডিকোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক প্রভাব ও পারিবারিক সম্পর্কের সূত্র ধরে ওজোপাডিকোর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী, যার কারণে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে সাম্প্রতিক এক নির্দেশনায় টেন্ডার স্পেসিফিকেশনের শর্তাবলি শিথিল করা হয়েছে, যাতে অভিজ্ঞতার নামে একই প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ না পায় এবং নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যুৎ বিভাগের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের টেন্ডার পুনঃপ্রকাশ করছে।
তবে ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ এখনো মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনা মানছে না। ১ লাখ ৫০ হাজার মিটার টেন্ডার রি-টেন্ডার করা হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে ৫০ হাজার মিটার টেন্ডারটি আর পুনঃপ্রকাশ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটির একটি প্রভাবশালী মহল ‘মিটারের মান ক্ষুণ্ন হবে’- এই অজুহাতে মন্ত্রণালয়ের মতামতকে উপেক্ষা করে বাধা সৃষ্টি করছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ওজোপাডিকোর চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন, এটা আমার জানা ছিল না। যদি টেন্ডারের সিন্ডিকেট হয়ে থাকে, তবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ৮ বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে অন্য তিন আসামি খালাস পেয়েছেন।
শনিবার (১৭ মে) সকালে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলায় ২৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং সাতটি আলামত জব্দ করা হয়েছে বলে রায় প্রদানকালে জানানো হয়।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন— শিশুটির বোনের স্বামী, তার ভাই ও তাদের মা।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ১ মার্চ মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় ভুক্তভোগী শিশু আছিয়া। ৬ মার্চ বোনের শ্বশুর হিটু শেখ ওই শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যার চেষ্টা করে। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ৮ মার্চ নিহত শিশুটির মা বাদী হয়ে ৪ জনের নামে মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়।
এরপর গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক বিক্ষোভের সময় তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে অভিযুক্ত যুবক মোহাম্মদ হোসেনকে আন্দোলন শেষ হওয়ার পর তার বাসভবনে দেখা করার জন্য ব্যক্তিগত আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের শেষে মুক্তি পাওয়ার পরে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কার্যালয়ে একটি বৈঠকে এ আমন্ত্রণ জানানো হয়, যেখানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোহাম্মদ হোসেন এবং তার পরিবারের সাথে দেখা করেন। আজ সন্ধ্যায় উপদেষ্টার ফেসবুক পোস্ট থেকে এ তথ্য জানা যায়।
তথ্য উপদেষ্টা ফেইসবুক পোস্টে জানা যায়, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তথ্য উপদেষ্টার উপর হামলাকারী মোহাম্মদ হোসেনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তথ্য উপদেষ্টা ডিবি অফিসে তার এবং তার পরিবারের সাথে কথা বলেছেন।’
উপদেষ্টার উপর পানির বোতল ছুঁড়ে মারার অভিযোগে পুলিশ কর্তৃক আটক হোসেনকে উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ করার পর তার অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টার কথা উল্লেখ করে মাহফুজ আলম ফেসবুক পোস্টে আরও লিখেছেন যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দ্রুত সমাধান করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নতুন ভবন উদ্বোধন করেছেন।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. এম আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দেশের সব মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে দুর্নীতি আর অনিয়মের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ৫ আগস্টের আগে এসব দুর্নীতির খবর অনেকটা চাপা পড়ে ছিল। দু-একটি দুর্নীতির খবর শোনা গেলেও তা তদন্তের নামে আসল খবর জানা যায়নি। এখন পরিবর্তিত সময়ে হরহামেশাই বিগত সরকারের আমলের নানা দুর্নীতি-অনিয়মের খবর জানা যাচ্ছে। নানা তদন্তে বের হয়ে আসছে দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়ালদের খবর। তেমনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তর।
জানা গেছে, সরকারি যতগুলো প্রতিষ্ঠান-মন্ত্রণালয় গত ১৫ বছর ধরে দুর্নীতির মহোৎসবে পরিণত হয়েছে তারমধ্যে গণপূর্তের নাম সবার সামনে থাকবে। এই মন্ত্রণালয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির খবরের পাশাপাশি সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে টাকা পাচারের তথ্যও জানা গেছে।
তাই গণপূর্ত অধিদপ্তরের একটি প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, বিগত সরকারের সময় গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। দুদকের অনুসন্ধানে অধিদপ্তরের সাবেক ও বর্তমান প্রকৌশলীদের বিপুল সম্পদের তথ্য মিলেছে বলেও জানা যায়।
এদিকে দুদকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে এক ডজনেরও বেশি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদকের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, এবার প্রভাব কাজে না লাগলে গণপূর্তের অনেক রাঘববোয়াল আইনের ফাঁদে পড়বেন। ইতোমধ্যে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সংস্থাটি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অবৈধভাবে প্রায় ১২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ ৭ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক এই মন্ত্রী ও তার স্ত্রী ফিরোজা পারভীনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুদক।
অন্যদিকে দুদকের বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে তারা সবাই বিগত সরকারের সময় গড়ে ওঠা আলোচিত টেন্ডার সিন্ডিকেটের সদস্য। তারা হলেন- জিকে শামীম, গোল্ডেন মনির ও সাজিন এন্টারপ্রাইজের শাহাদাত হোসেনসহ আরও অনেকে। এরা সবাই দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। প্রধান অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন: সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও শাহাদাত হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন ও ড. মঈনুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম সোহরাওয়ার্দী ও ফজলুল হক মধু, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসু, নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত উল্লাহ ও ইলিয়াস আহমেদ এবং সহকারী প্রধান মুমিতুর রহমান।
অন্যদিকে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বালিশকাণ্ডের প্রাক্কলন তৈরিতে অস্বাভাবিক দর নির্ধারণ করেন। তার ছেলের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেন। শাহাদাত হোসেনও একইভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়েছেন।
মোসলেহ উদ্দিনকে পরিচিত ‘মিস্টার ১৫ পার্সেন্ট’ নামে। বর্তমানে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে কর্মরত এই কর্মকর্তা অস্ট্রেলিয়া ও দুবাইয়ে অর্থপাচার করেছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে। বিভিন্ন ঠিকাদারের সঙ্গে তার গোপন চুক্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, ড. মঈনুল ইসলাম সরকারি চাকরিতে অনুপস্থিত থেকে বিদেশে থেকে ফিরে পুনরায় চাকরিতে বহাল হন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচার ও নামে-বেনামে শত শত একর জমির মালিক হওয়ার অভিযোগ আছে।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম সোহরাওয়ার্দী ১৬ বছর ঢাকায় থেকে প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। প্রদীপ কুমার বসু দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হয়েছেন। রোকনউদ্দিন অস্ট্রেলিয়ায় পলাতক অবস্থায় স্ত্রীর নামে ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ ছাড়া অন্য অভিযুক্তদের মধ্যে ফজলুল হক মধু, ইলিয়াস আহমেদ ও মুমিতুর রহমান আছেন, যারা সরকারি প্রকল্পে কাজ না করেই বিল পরিশোধ, টেন্ডার সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক সুবিধাভোগের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী গণমাধ্যমকে জানান, সরকারি অফিসগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। প্রাথমিক যাচাই শেষে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানা গেছে, দুদকের এ অনুসন্ধানকারী টিমে রয়েছেন পরিচালক আব্দুল মাজেদ, উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার, সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান ভূঁইয়া ও উপসহকারী পরিচালক এলমান আহাম্মদ অনি। অনুসন্ধান টিমের সদস্যদের রদবদল হলেও সংস্থাটি দ্রুত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছে।
জিকে শামীমের সহযোগীরা এখনো গণপূর্তের সিন্ডিকেট
অভিযোগ রয়েছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরে যেই জিকে শামীম সিন্ডিকেট নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে, সেই সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ৫ আগস্টের পর সেই চক্রকে ঢাকার বাইরে পাঠানো হলেও নানা তদবির-বাণিজ্যে তারা আবার ঢাকায় চলে আসছেন বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ বিশেষ স্থাপনাসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রকল্পের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ই/এম বিভাগ- ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে। নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে আওয়ামী লীগের আমলে বদলি করা হয় রাজশাহী ডিভিশন। সেখানে নিয়মিত অফিস না করেই বেতন নিতেন জাহাঙ্গীর। আবার ঢাকায় ফিরতে নানান স্থান দিয়ে তদবির করার খবর পাওয়া গেছে। মাত্র ৮ মাসের মাথায় ফিরে এসেছেন তার কমিশন খ্যাত ঢাকায়।
সূত্র জানিয়েছে, গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে টেন্ডারবাণিজ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই/এম নির্বাহী প্রকৗশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম। তার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
জানা গেছে, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে। মাত্র ৯ বছর গণপূর্তে চাকরি করে তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ রয়েছে।
আলোচিত আরেক প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক (মধু)। গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বিল প্রদান করা হয়েছে জেলহাজতে থাকা এসএম গোলাম কিবরিয়া ওরফে জিকে শামীমের প্রতিষ্ঠানকে। এ ব্যাপারে চিঠিও দেওয়া হয়েছে তাকে। কিন্তু তারপরও গণপূর্তের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবৈধভাবে অতিরিক্ত বিল প্রদানের জন্য দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেননি। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা বা তদন্ত কমিটিও গঠন করেননি। এমনকি শোকজ পর্যন্ত করেননি। বরং অযৌক্তিক কমিটি গঠন ও চিঠি চালাচালির মাধ্যমে সময় ক্ষেপণ এবং গুরুতর অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই কর্মকর্তা আলোচনায় আসেন। ফেঁসেও যান তিনি, বেরিয়ে আসে জিকে শামীমের সঙ্গে তার সখ্যতার নানা তথ্য। এ কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিষয়ে তদন্তও করে।
ফজলুল হক (মধু) তৎকালীন সময়ে গণপূর্তের শেরে বাংলা নগর-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকলেও বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (উন্নয়ন) তিনি। সম্প্রতি তাকে পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নও করা হয়েছে।
এসব অভিযোগ নিয়ে কথা হলে ফজলুল হক (মধু) বলেন, ‘তখন আমি কি কারণে ১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বিল দিয়েছিলাম সেটা নিয়ে অনেক কথা আছে। তবে তা নিয়ে এক প্রকার মীমাংসা হয়ে গেছে। এটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো।’
এদিকে জানা গেছে, কাজ সম্পন্ন করার আগেই আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীমকে অবৈধভাবে অগ্রিম ১০ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করার ঘটনায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, শেরে বাংলা নগর-১ এর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে রাজশাহীতে চলতি দায়িত্বে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত) মোহাম্মদ ফজলুল হককে বেতন গ্রেড কমানোর শাস্তি দিয়ে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন অভিযুক্ত প্রকৌশলীকে বর্তমান বেতন গ্রেডের প্রারম্ভিক ধাপে নামিয়ে দেওয়ার বিষয়ে গত ২৫ জানুয়ারি এক অফিস আদেশ জারি করেন।
তবে জানা গেছে, ফজলুল হক (মধু) রাজশাহীতে গিয়ে থেমে নেই। সেখানে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। ঢাকায় রেখে যাওয়া ঠিকাদারদেরও শেল্টার দিচ্ছেন তিনি। সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাগিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকার কাজ।
গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (বি ২০০৫) তথাকথিত সভাপতি রেজাউল করিম রেজা একটি আতঙ্কের নাম।
আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকালে সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে কাজ করেছে সে। বর্তমানেও তার দাপট এবং ক্ষমতা আকাশচুম্বী বলে জানা গেছে। একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, অধিদপ্তরের সকল কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তৈরি হয়েছে রেজা সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট নানাবিধ কাজ করে, এর মধ্যে রয়েছে চেক জালিয়াতি, প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি নেওয়া ও দেওয়া, ঘুষের মাধ্যমে পদোন্নতি, গণপূর্তের বাসা বরাদ্দ দেওয়ার নামে ঘুষ গ্রহণ, বরাদ্দকৃত বাসা বহিরাগতদের ভাড়া দিয়ে বানিজ্য, আর বদলি বাণিজ্যতো আছেই। তিনি সরকারি চাকরি করা সত্ত্বেও ঠিকাদারি লাইসেন্স করে ঠিকাদারি বাণিজ্য নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানা যায়।
দুদক রেজার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল হলে কমিশন গত বছরের ১১ জুলাই (১৬৮৪ স্মারক) একটি চিঠি প্রেরণ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর বরাবর। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় মোহাম্মদ রেজাউল করিম বাংলাদেশ গণপূর্ত অধিদপ্তর শ্রমিক কর্চারী ইউনিয়ন, ঢাকা, এর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে পত্র এবং প্রমাণাদি চায় সংস্থাটি।
এদিকে পতিত সরকারের আমালে দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, অনিয়ম-দুর্নীতির সামনের সারিতে ছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব। হাসিনা সরকারের আমলের যে কজন প্রভাবশালী পূর্ত প্রকৌশলী জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে আহসান হাবিব তাদের অন্যতম বলে জানা যায়। বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য পরিচয় দেওয়া আহসান হাবিব হাসিনা সরকারের সময় ঢাকা পোস্টিংয়ের চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হয়ে সাভার ও নারায়ণগঞ্জে ঘুরতে থাকেন। তবে ভাগ্য পাল্টে যায় হাসিনার পতনের পর। নানা তদবির দেন- দরবার করে ঢাকা আসেন। আহসান হাবীব গণপূর্ত বিভাগ নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেন ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর আর ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর তাকে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ -১ বদলি করা হয়। যদিও এর আগেও তিনি ঢাকায় মেডিকেল বিভাগে ছিলেন তখন নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তাকে সাভার বদলি করা হয়।
হত্যা মামালার আসামি, দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তবুও ঢাকায় পোস্টিং এসব নিয় বেশ গুঞ্জন চলছে খোদ দপ্তরেই। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করছে, আহসান হাবীব আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঢাকায় নির্বাহী প্রকৌশলীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠে তার অন্যতম সদস্য। দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। ঢাকার একাধিক এলাকায় রয়েছে প্লট-ফ্ল্যাটও। এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য আহসান হাবিবকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
দুদকের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে জি কে শামীমের ‘সহযোগী’ গণপূর্তের ১১ প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। তাদের বিরুদ্ধে যুবলীগের কথিত নেতা ও ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীমকে (জি কে শামীম) সহযোগিতার অভিযোগও খতিয়ে দেখবে সংস্থাটি। দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সেই তালিকায় ছিলেন- অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিন ও আবদুল মোমেন চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা, মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ, মো. ফজলুল হক, আবদুল কাদের চৌধুরী, আফসার উদ্দিন, মো. ইলিয়াস আহমেদ ও ফজলুল হক মধু এবং গণপূর্ত সার্কেল-৪-এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলী আকবর সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্তের একাধিক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, বিগত সরকারের আমলে তারা অনেক দুর্নীতি-অনিয়ম করেছেন। নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এদের ক্ষমতার উৎস কি? তা ভবনের সবারই অজানা নয়। আমরা চাই দুর্নীতি করে যত সম্পদ অর্জন করেছেন তা বাজেয়াপ্ত করা হোক। তাদের আইনের আওতায় দ্রুত বিচার হোক।
এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এক অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘যারা অতীতে দুর্নীতি করেছেন তাদের তালিকা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে কাজও শুরু হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
গণপূর্তে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত দুদকের টিম খতিয়ে দেখছে। তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দুদক সেই প্রতিষ্ঠান বা অধিদপ্তরগুলোতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাই সুনির্দিষ্ট কোনো দুর্নীতির খবর আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমেও জানতে চাই। এতে আমরা কাজ করতে আরও সুবিধা হবে। সরকারি-বেসরকারি যেকোনো খাত কিংবা ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবরকে দুদক খুব গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে।’
এদিকে একটি মামলায় দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৭ মার্চ জি কে শামীমকে সাড়ে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ওই মামলায় তার মাকে খালাস দেওয়া হয়। অবৈধ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত এ ঠিকাদারকে পাঁচ বছর ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডের পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন মাস বিনাশ্রম কারাভোগ করতে হবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া জি কে শামীমের ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে এক সূত্র জানায়, সাবেক সচিব শহীদ উল্লা খন্দকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বালিশকাণ্ডে জড়িত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত মূল্যে কাজ পাইয়ে দেন। তিনি পরে তদন্ত প্রতিবেদন গায়েব করে রাঘববোয়ালদের বাঁচান। রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়ে বিক্রি করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সমতার দাবিতে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আজ শুক্রবার ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
‘সমতার দাবিতে আমরা’ স্লোগানে এই কর্মসূচিতে প্রগতিশীল নারী, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংস্কৃতিককর্মী, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।
সেখানে উপস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ বলেন, ‘আমরা নারীর ডাকে সাড়া দিয়ে আজ এখানে এসেছি- সবাইকে এটা জানাতে যে, আমরা আমাদের অধিকার বিষয়ে সচেতন এবং সেই অধিকার আদায়ে আমরা একতাবদ্ধ। এখানে আমরা কারও বিষোদগার করছি না, কোনো চিৎকার বা গালাগাল নেই। নারীদের একতা প্রদর্শনের জন্য আজ আমরা এখানে এসেছি।’
এনজিওকর্মী নাজিফা রায়দাহ জানান, সারা দেশে নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদে এখানে এসেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর আমরা ভেবেছিলাম আমাদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নামতে হবে না। কিন্তু আমরা ক্রমাগত দেখছি নারীরা জনসমক্ষে হয়রানি ও মারধরের শিকার হচ্ছেন, তাদের ওপর মব হামলার হুমকি আসছে। মব হামলাকারীরা নারীকে ঘরে বন্দি করে রাখতে চায়। আমরা আমাদের মর্যাদা ও ন্যায্যতার জন্য এবং নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদে এখানে এসেছি।’
হিল উইমেন্স ফেডারেশন, আদিবাসী ইউনিয়ন, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, নারী মুক্তি কেন্দ্র, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ নারী জোট, নারী সংহতি, ছাত্রফ্রন্ট (মার্কসবাদী), তীরন্দাজ ও শ্রমিক অধিকার আন্দোলন প্রভৃতি সংগঠন এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেয়।
এই আয়োজন উপলক্ষে ৩১টি স্লোগানের একটি তালিকা করেছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। স্লোগানগুলোতে নারীর অধিকার, মর্যাদা, নিরাপত্তা, শ্রমিকের অধিকার, ফ্যাসিবাদের বিরোধিতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষেও স্লোগান রাখা হয়।
বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের সমন্বিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে মঞ্চ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাঠ করা হয়, যা আন্দোলনের মূল দাবি এবং দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা তুলে ধরে। ঘোষণাপত্রে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন জুলাই শহীদ পরিবারের তিনজন নারী সদস্য। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, চব্বিশের অভূতপূর্ব জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আজ আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমাদের দাবি একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ। যেখানে সব মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে বৈষম্যবিরোধিতা ও সাম্যের যৌথ মূল্যবোধের ওপর। সমতা ও ন্যায্যতার পথে এ মৈত্রীযাত্রায় আমরা সবাইকে স্বাগত জানাই।
আজ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্বজন, মানবাধিকারকর্মী, পেশাজীবী, শিল্পী, গার্মেন্টস শ্রমিক, চা-বাগানের শ্রমিক, যৌনকর্মী, প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী, তৃতীয় লিঙ্গ, তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী, আদিবাসী, অবাঙালি অন্যান্য প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষ।
এতে বলা হয়, কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েও নারীসহ অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এ অগ্রযাত্রায় নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে প্রতিক্রিয়াশীলগোষ্ঠী ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। নারীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ক্ষেত্রেও তারা বাধা তৈরি করছে। ব্যক্তিগত আক্রমণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা এবং অনলাইনে হয়রানি করে রাজনৈতিক পরিসরে নারীর অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করার তৎপরতা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
বিভিন্ন স্থানে অতর্কিত হামলা, আন্দোলনে বাধা, পরিকল্পিত মব আক্রমণ, মোরাল পুলিশিং, যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, প্রকাশ্যে মারধর এবং নানান ধরনের হুমকি প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
আরও বলা হয়, সম্প্রতি নারী অধিকার সংক্রান্ত সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক গঠিত অন্যান্য কমিশনের মতোই এ কমিশনটি গঠিত হয়েছিল। এ কমিশন শ্রমজীবী নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারী ও অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ নারীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ৪৩৩টি সুপারিশ পেশ করে। অন্য সব কমিশনের মতোই এ কমিশনের সুপারিশেও ছিল নানা আলোচনা-সমালোচনার উপাদান।
কিন্তু আমরা দেখেছি রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত সুপারিশগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গিয়ে এবং গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ না রেখে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দেশবাসীর সামনে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হচ্ছে। জনসম্মুখে কমিশনের সদস্যদের জঘন্যভাবে অপমান করা হয়েছে।
‘এত কিছুর মধ্যে আমরা দেখলাম, জুলাইয়ে অসংখ্য নারীর আত্মত্যাগ ও শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নারীর ওপর অব্যাহত নিপীড়ন, অবমাননা ও অপমানের বিরুদ্ধে আশ্চর্যরকম নিশ্চুপ। সরকারের নিজের তৈরি করা নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের ওপর এ ধরনের ন্যক্কারজনক আক্রমণের পরেও সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
ঘোষণাপত্রে বেশ কয়েকটি দাবি উপস্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো- অন্তর্বর্তী সরকারকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হবে, বিশেষত নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘিরে গুজব ও অপপ্রচার এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আতঙ্ক সৃষ্টির বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
যারা আমাদের সমর্থন চায় নির্বাচনী অঙ্গীকারের মাধ্যমে হোক বা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হোক। তাদের স্পষ্ট করতে হবে নারী, শ্রমিক, জাতি, ধর্ম, ভাষা ও লিঙ্গীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার এবং এসব জনগোষ্ঠীর পূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত মুক্তির বিষয়ে তাদের অবস্থান কী। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচন থেকে তাদের প্রার্থীদের অন্তত শতকরা ৩৩ ভাগ (ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যার অনুপাতে) নারী হতে হবে।
নারী ও প্রান্তিক জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আমাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য চালিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা আমরা মেনে নেবো না। আমাদের মৌলিক অধিকারগুলোকে অস্বীকার করার ষড়যন্ত্র আমরা প্রতিরোধ করব। বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা, সংস্কৃতি ও ধর্মকে দমনমূলক অস্ত্রে পরিণত করার চেষ্টা আমরা প্রতিরোধ করব। ইতিহাস বিচ্ছিন্ন কূপমণ্ডূকতার মাধ্যমে সহিংসতা ও বৈষম্য চালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে আমরা কিছুতেই সফল হতে দেব না। আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম ও ইতিহাস দারুণ বৈচিত্র্যময় এবং সংবেদনশীল। সেই বিশালতাকে উপেক্ষা করে আমরা গুটি কয়েক মানুষের সংকীর্ণ ব্যাখ্যাকে সার্বজনীন হতে দেব না। আমরা অধিকার ও ধর্মের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে দেব না, মর্যাদা নিয়ে কোনো ধরনের দ্ব্যর্থকতা মেনে নেবো না। আমরা সরকার ও প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নারীবিষয়ক অবস্থান নজরদারিতে রাখব। যে ক্ষমতা কাঠামো এসব জুলুমবাজি জিইয়ে রাখে, আমরা সেই কাঠামোকে ভাঙব।
আরও বলা হয়, আমরা চুপ করব না, হুমকির মুখে নত হবো না। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের দাবিতে অটল থাকব। ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্ন ও তা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমরা হাল ছাড়ব না। আজ যারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন তাদের ধন্যবাদ। আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।
পরে অনুষ্ঠানস্থল থেকে একটি র্যালি শুরু হয়ে খামারবাড়ি অভিমুখে যাত্রা করে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়।