বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ‘কেন, কীভাবে পাটের ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে আমরা সেটি হিসাব করতে চাই না। পাটের হারানো গৌরব ফেরাতে সারা দেশে ছুটে বেড়াচ্ছি। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত তৈরি পোশাক। প্রধানমন্ত্রী চান পাটশিল্পকে অন্যতম রপ্তানি খাতে পরিণত করা। এ লক্ষ্যে আমরা পাট পণ্যের মেলা করছি, অপরদিকে ভালো পাট, ভালো বীজ উৎপাদন কীভাবে করা যায় তা নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছি।’ রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে আজ বৃহস্পতিবার তিন দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য মেলার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পাটমন্ত্রী।
নানক বলেন, ‘কোনো বিশ্ব মোড়ল কিংবা বিশেষ দেশের ওপর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বাজার নির্ভরশীল নেই। বিজিএমইএ আজ সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বাজার সৃষ্টি করেছে। যা এরই মধ্যে বিশাল বাজারে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা পাট ও চামড়াজাত শিল্পকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।’
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের নারী-পুরুষ, তরুণরা সবাই আজ পাটপণ্যের দিকে মনোনিবেশ করেছে। একসময় পোশাক শিল্পও ছোট্ট ছিল। আজ সেটি দেশের প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হয়েছে। আজকের উদ্যোক্তারা একদিন পাটপণ্যকে দেশের প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত করবে বলে আশা করছি। এ লক্ষ্যে নানা সহযোগিতা দিয়ে যাবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোকে অনুরোধ করেছি যেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাটপণ্যের ব্যবহার চালু করে। প্রধানমন্ত্রী পাট দিবসে ৬টি বন্ধ থাকা পাটকল চালু করেছেন। অবশিষ্ট বন্ধ থাকা পাটকলগুলো চালু করতে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। আমরা পরিকল্পনা ও রুটিন মাফিক এগিয়ে যাচ্ছি। বহুমুখী পাটপণ্য মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাটজাত পণ্যের ৩৫টি স্টল রয়েছে।’
এর আগে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে পাট খাত-সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন পাটমন্ত্রী।
এতে বক্তব্য দেন রংপুর-১ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান বাবলু, রংপুর-৫ আসনের এমপি জাকির হোসেন সরকার, সংরক্ষিত মহিলা এমপি নাছিমা জামান ববি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জিনাত আরা, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াসহ অন্যরা।
প্রতিবছর অমর একুশে বইমেলায় নতুন নতুন সেগমেন্ট দিয়ে মেলায় নতুনত্ব আনার চেষ্টা করে বাংলা একাডেমি। এ বছর তেমনই একটি উদ্যোগের নাম ‘জুলাইয়ের গল্প’। এই নামে মেলায় নতুন মঞ্চ তৈরি করে সেখানে অতিথি হিসেবে আনা হচ্ছে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের।
এই আয়োজনে অংশ নিয়ে অতিথিরা জুলাই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ও তার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ বিনির্মাণ নিয়ে আশা-প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন।
শুক্রবার এই মঞ্চে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। পরদিন শনিবার এই আয়োজনে অংশ নেন দুজন নারী আন্দোলনকারী। তারা হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মালিহা নামলাহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিসা ইসলাম সাকাফি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক জুবায়ের ইবনে কামাল। জানা যায়, বইমেলার প্রতি শুক্র এবং শনিবার এ আয়োজন চলবে।
রোববার ছিল অমর একুশে বইমেলার ৯ম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ৯৭টি।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘মাকিদ হায়দারের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চঞ্চল আশরাফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আসিফ হায়দার ও শাওন্তী হায়দার। সভাপতিত্ব করেন আতাহার খান।
প্রাবন্ধিক বলেন, কবি হিসেবে মাকিদ হায়দারের আত্মপ্রকাশ গত শতাব্দীর ষাটের দশকে। তিনি এমন এক বর্ণনারীতির চর্চা করেছেন, যা ষাটের দশকের কবিতায় খুব কমই দেখা যায়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিরাভরণ কিন্তু অর্থবোধক সারল্যের অনুশীলন করেছেন তিনি। তার অধিকাংশ কবিতাই আখ্যানের প্রাথমিক উপাদান বা গল্পের প্রধান শর্তবৈশিষ্ট্য নিয়ে রচিত।
আলোচকদ্বয় বলেন, কবি মাকিদ হায়দারের কবিতায় গদ্যের যে ভূমিকা ছিল, তা আধুনিক কাব্যধারার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জটিল শব্দ ও বাক্য ব্যবহার না করে তিনি তার কবিতায় সহজবোধ্য ভাষা ও বাক্যরীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। ফলে তার কবিতা সহজেই পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে আতাহার খান বলেন, পারিবারিকভাবে সাহিত্য-সংস্কৃতির আবহে বেড়ে ওঠা মাকিদ হায়দার তার সমকালীন কবি-সাহিত্যিকদের থেকে ভিন্নমাত্রায় নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন। আরোপিত রূপ বা আড়ালের আশ্রয় না নিয়ে স্পষ্ট এবং প্রচলিত ভাষাতেই তিনি কাব্য রচনা করেছেন।
মেলার লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন আবু সাঈদ খান ও পাভেল পার্থ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সাহেদ মন্তাজ, শাহ কামাল সবুজ ও আফরোজা পারভীন।
রোববার ছিল ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘প্রকাশ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন’ এবং ঢালী মোহাম্মদ দেলোয়ারের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা)’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সুমন মজুমদার, শারমিন সাথী ইসলাম, সুনীল সূত্রধর, ড. পরিতোষ মণ্ডল, ফারহানা আক্তার শার্লি ও শাহনাজ নাসরীন ইলা।
আগামীকাল সোমবার মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: মনিরুজ্জামান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মাশরুর ইমতিয়াজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সালমা নাসরীন ও মামুন-অর রশীদ। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক মনসুর মুসা।
ঢাকাসহ সারা দেশে শুরু হওয়া অপারেশন ডেভিল হান্টে রোববার দুপুর পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২৭৪ জনকে। অন্যদিকে সারা দেশের রেঞ্জ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১ হাজার ৩৪ জনকে। রোববার পুলিশ সদর দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
অপারেশন ডেভিল হান্ট একটি বিশেষ অভিযান, যা শনিবার থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী হামলা ঘটনা ঘটে। এই হামলায় নেতৃত্ব দেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। হামলার ফলে বেশ কয়েকজন হতাহত হন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অপারেশন ডেভিল হান্ট নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়।
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারের পর বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলবে।
রোববার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবন উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করবে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কারা দুষ্কৃতকারী জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার সঙ্গে যারা জড়িত, আইন অমান্যকারী এবং নৈরাজ্যবাদীরা দুষ্কৃতকারী।
গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারীদের অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকিদের শিগগিরই বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’
পাঁচজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অপরাধ দেশবাসীর জানা।
এ ছাড়া গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেছেন, যারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’।
তিনি বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকারীদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ মূলত পুলিশ বাহিনী নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেনাবাহিনী তাদের সাহায্য করছে।
তিনি বলেন, ছয় মাস আগে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। সে সময় আমাদের পুলিশ বাহিনীর বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের নীতিগত ও মানসিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, থানা পুড়ে গেছে, যে কারণে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ সারা দেশে সেনা মোতায়েন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে আমরা অনেকগুলো পরিকল্পনা নিই। এর অনেকগুলো চলমান আছে এবং অনেকগুলো প্রয়োগ করতে যাচ্ছি। তার একটা ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’।
পুলিশ বাহিনীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নাসিমুল গনি বলেন, পৃথিবীর যেসব দেশে বিপ্লব হয়েছে, সেসব দেশ পরাজিত শক্তিকে রাখেনি। কিন্তু আমরা অতটা অমানবিক হতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমরা বাহিনীটিকে সংস্কার করতে চেয়েছি। পুলিশের কেউ ভয়ে এবং চাপে পড়ে অন্যায় করেছে, কিছু যারা ডাই-হার্ড ছিল, তারা পালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে যাত্রা শুরু করছে ‘কমান্ড সেন্টার’।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ কমান্ড সেন্টারটি পরিচালিত হবে। সেন্টারটির সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী-পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, আর্মডফোর্স ব্যাটালিয়নের সদস্যরা যুক্ত থাকবেন।
রোববার রাজধানীর হেয়ার রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রাজধানীসহ দেশের কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলে কমান্ড সেন্টার থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাগেরহাটের ফকিরহাটে ছাত্রজনতাকে গুলি করা, বোমা বিস্ফোরণ ও স্থাপনা ধ্বংসের অভিযোগে বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, বাগেরহাটের সাবেক পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খানসহ আওয়ামী লীগের ৩৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে রফিকুল ইসলাম মিঠু নামের একজন বাদী হয়ে ফকিরহাট থানায় এই মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মীর শওকত আলী বাদশা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ কামরুজ্জামান টুকু, সাধারণ সম্পাদক ভুইয়া হেমায়েত উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান, বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা সরদার নাসির উদ্দিন, শেখ হেলাল উদ্দিনের একান্ত সচিব ফিরোজুল ইসলাম জোমাদ্দারসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী।
মামলায় এজাহারে বলা হয়েছে, ছাত্র জনতার ন্যায্য আন্দোলনকে নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যে আসামিরা ৪ আগস্ট দুপুরে ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালি গোলচত্ত্বর এলাকায় জড়ো হয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে। তারা ছাত্র জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে এবং আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ছাড়াও হত্যার উদ্দেশ্যে একাধিক গুলি ছোড়ে।
এছাড়া বাগেরহাটের সাবেক পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকায় ফ্যাসিস্ট সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন সময় উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। একটি ব্যালট- একটি বুলেটসহ নানা উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে তিনি আসামীদের ছাত্র জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
ফকিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আলমগীর কবির বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে গুলিবর্ষণ, বোমা বিস্ফোরণ, স্থাপনা ধ্বংসসহ কয়েকটি অভিযোগে ৩৫ জনের নামে মামলা হয়েছে। সাবেক পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাসস
আওয়ামী লীগের আমলে ভারতীয় কোম্পানিকে অবৈধভাবে পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার দুপুরে সংস্থাটির একটি দল এ সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে যায়।
এদিকে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘দেশীয় প্রকাশনাকে কাজ না দিয়ে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নষ্ট হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।’
এনসিটিবিতে অভিযানে গত সরকারের আমলে পাঠ্যপুস্তকের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির নথিপত্র সংগ্রহ করেছে বলে জানা যায়। নিম্নমানের পাঠ্যপুস্তক ও অবৈধভাবে ভারতীয় কোম্পানিকে পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কাজ দেওয়ার অভিযোগের সত্যতার খোঁজে এনসিটিবিতে দুদক এ অভিযান চালায় বলে জানানো হয়।
দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানিকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করে প্রাথমিকের দুই কোটি কপি পাঠ্যবই ছাপার কাজ দেওয়া হয় ভারতীয় কোম্পানিকে।
দুদকের জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক তানজির আলম আহমেদ জানান, পাঠ্যবই ছাপানোর কার্যাদেশ প্রদানে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতি সাধনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-তে আজ একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে এনসিটিবি দপ্তর পরিদর্শন করে অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে চেয়ারম্যান ও সচিবের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। ২০১৭ সালে সর্বনিম্ন দরদাতা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানের দর প্রস্তাবকে বিধিবহির্ভূতভাবে বাতিল করে উচ্চমূল্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা, তথা ভারতীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিলো- এরূপ তথ্যের সত্যতা পায় দুদক টিম।
এছাড়াও অভিযানকালে দুদক টিম ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির বিভিন্ন লটে বই মুদ্রণ সংক্রান্ত বিষয়ে টেন্ডার আহ্বান, টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী প্রকাশনাসমূহের তথ্য, টেন্ডার মূল্যায়ন ও কার্যাদেশ প্রদানসহ প্রত্যেক বছরের বই মুদ্রণ সংক্রান্ত পরামর্শক, কাগজ ক্রয় ও মুদ্রণ তদারকি কমিটি সংক্রান্ত সকল তথ্য চাওয়া হয়।
জানা গেছে, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের ওইসব পাঠ্যবই ছাপার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি টিপিএস টেন্ডারে অংশ নিয়ে মোট ১৭টির সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। কিন্তু প্রায় ৫০ কোটি টাকার ছাপার কাজ তাদের না দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার উচ্চ মহলের ইশারায় সে কাজ দেয় ভারতের একটি কোম্পানিকে।
অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনসহ কানাডায় অর্থপাচারের অভিযোগে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে পৃথক ৪টি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় আড়াই শ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন, প্রায় ৫৯ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং প্রায় ৫৮ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে এসব মামলা করা হয়েছে।
রোববার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলাগুলোতে অন্য আসামিরা হলেন বাচ্চুর স্ত্রী শিরিন আকতার, ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও মেয়ে শেখ রাফা হাই। তারা পরস্পর যোগসাজশে মোট ১৪৮ কোটি ২৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৯০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে তারা বিদেশে পাচার করেছেন ৫৭ কোটি ৭৯ লাখ ৩ হাজার ৭৯৯ টাকা এবং দুদকে জমা দেওয়া হিসাব বিবরণীতে ৫৮ কোটি ৬৫ লাখ ২৮ হাজার ৭৯৯ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলে দুদক থেকে জানানো হয়।
মামলার তথ্য থেকে জানা যায়, শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ১২৪ কোটি ৯৩ লাখ ৬ হাজার ২৭৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনি ৫৬ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার ২৬০ টাকার তথ্য গোপন করে বিদেশে পাচার করেছেন।
অন্যদিকে দ্বিতীয় মামলায় শিরিন আকতারের বিরুদ্ধে করা মামলায় ৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপন ও বিদেশে অর্থ পাচারের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
তৃতীয় মামলায় শেখ ছাবিদ হাই অনিকের বিরুদ্ধে করা মামলায় মোট ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনি ১ কোটি ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৮৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
এছাড়া চতুর্থ মামলায় রাফা হাইয়ের বিরুদ্ধে করা মামলায় ৪২ কোটি ২ লাখ ৫১ হাজার ৬২৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনি ১ কোটি ১৬ লাখ ৬ হাজার ৪৬২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৭৪ লাখ ৮১ হাজার ৪৬২ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলায় আব্দুল হাই বাচ্চুকে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে এক সময়ের লাভজনক ব্যাংক বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার।
এরপর থেকে ব্যাংকটির ঢাকার গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখায় বড় অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটতে থাকে।
২০২৩ সালের ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক। সংস্থাটির দায়ের করা মোট ৫৯ মামলার চার্জশিটের মধ্যে ৫৮টি মামলার তদন্তে নতুন আসামি হিসেবে আবদুল হাই বাচ্চু ও কোম্পানি সচিব শাহ আলম ভূঁইয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সালে দায়ের করা কোনো মামলাতেই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। যে কারণে দুদককে বারবার বিভিন্ন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে। মামলার দীর্ঘ ৮ বছর পর চার্জশিটে আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশকিছু কর্মকর্তাদের নামে লকার থাকার বিষয়ে আলোচনায় অনেকের নাম আসে। আদালতের অনুমতির সাপেক্ষে এ অনুসন্ধান চালানে হয় বলে জানা যায়। এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাকের কর্মকর্তাদের লকার খুলতে কেন্দ্রিয় ব্যংকে প্রবেশ করেছে সংস্থাটির এক প্রতিনিধি দল। দুদকের পরিচালক সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে যায়।
তবে সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারসহ ২৫ কর্মকর্তার নামে সেফ ডিপোজিট লকার খুঁজে পায়নি তারা। অভিযান শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন সায়েমুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘যে ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছিলাম, তাঁদের নামে লকার নেই। আরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। আদালতের অনুমোদনের ভিত্তিতে পরবর্তী অভিযান চালাবে দুদক।’
২৫ জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাই। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের অনেকেই এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত, অনেকে এখন চাকরিতে নেই। এখন পর্যন্ত মোট ২৭২টি সেফ ডিপোজিট লকারের সন্ধান পাওয়া যায় বলে জানা গেছে।
এদিকে দুদকের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে রোববার সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অভিযানে কোনো রকম বাঁধা পাওয়া যায়নি। সকল ধরনের নিয়ম মেনেই এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। যদি কোনো বাধা আসে তাহলে যথাযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তিনি উল্লেখ করেন।
গত ২৬ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুরের লকারে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পায় দুদক। সেগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জিম্মায় রাখা হয়েছে। অভিযানের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নামে আরও কিছু লকার খুঁজে পায় দুদক।
এর মধ্যে যাঁদের নামে বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে, তাঁদের নামেও লকার থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়। এ কারণে ওই সব লকারেও তল্লাশি চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ২ ফেব্রুয়ারি দুদক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দেওয়া হয়। কেউ যেন ওই সব লকার খুলতে না পারে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধও জানায় সংস্থাটি। এর পর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখার লকার আর কাউকে খুলতে দেওয়া হচ্ছে না।
চিঠিতে বলা হয়, গত ২৬ জানুয়ারি আদালতের অনুমতি নিয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দুদকের একটি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন ভল্টে রক্ষিত সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর ‘সেফ ডিপোজিট’ তল্লাশি করে। সেখানে তিনটি সিলগালা কৌটা খুলে ৫৫ হাজার ইউরো, এক লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার, এক কেজি ৫ দশমিক ৪ গ্রাম সোনা এবং ৭০ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে অনুসন্ধান চলমান থাকার কথা চিঠিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় কর্মকর্তাদের লকারে থাকা অর্থসম্পদ স্থগিত (ফ্রিজ) করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে দুদক।
এদিকে আজ দুদকের অভিযানের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, দুদক তালিকা নিয়ে এসেছিল। তারা লকারের তালিকা খুঁজে দেখেছে, কিন্তু তালিকাভুক্ত কারও লকার খুঁজে পায়নি।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর মনোবল ভাঙা পুলিশ বাহিনী ফের কোমর সোজা করে দাঁড়াক, এমনটা আমরাও চাই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।
আজ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ সম্পর্কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন৷
সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আমরা চাই পুলিশ কোমর সোজা করে দাঁড়াক। পুলিশের কেউ ভয়ে ও চাপে পড়ে অন্যায় করেছে। কিছু অতিউৎসাহী ছিল তারা পালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন হচ্ছে।’
নাসিমুল গনি বলেন, ‘আমাদের সিস্টেমের মধ্যে যেন একটা ভালো প্র্যাকটিস রেখে যেতে পারি সেই চেষ্টা করছি, যাতে আর কোনো আয়নাঘর তৈরি না হয়। এরকম পরিস্থিতি যাতে আর তৈরি না হয়। এছাড়া আমাদের সিস্টেমে যারা কাজ করবেন, তারা যেন সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ১১ তারিখ মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হবে। যেখানে ঢাকা ও গাজীপুরের ১৫০ জন কর্মকর্তা থাকবে।’
অপারেশন ডেভিল হান্টে কারা নেতৃত্ব দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা পুলিশি অ্যাকশন। পুলিশ কাজ করবে ও সেনাবাহিনী এতে সহায়তা করবে।‘
পুলিশের এই নাজুক অবস্থায় তাদের দিয়ে এই অপারেশন চলবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যে সকল দেশে বিপ্লব হয়েছে সেখানে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখেনি। এই সরকার অতটা অমানবিক হতে পারেনি। আমরা পুলিশকে রিফর্ম করেছি। একটা বাহিনীর মনোবল ভেঙে গেছে। পুলিশের কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। আমরা চাই পুলিশ কোমর সোজা করে দাঁড়াক৷ এজন্য তাদের একটিভলি কাউস্নেলিং করছি।’
ডেভিল হান্টে কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘তারা গতকাল (শনিবার) থেকে কাজ শুরু করেছে৷ চট করে সবকিছু বলা যাবেনা৷ যতদিন প্রয়োজন ততদিন এই অপারেশন রাখা হবে৷
ডেভিল হান্ট অপারেশন যারা পরিচালনা করছে তাদের ক্ষমতা কতটুকু, এমন প্রশ্মের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের যে ক্ষমতা আছে সেই ক্ষমতাই পাবে।’
৫ আগস্টের পর যাদের নামে মামলা হয়েছে, তারা ডেভিল হান্টের আওতায় আসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ যখন ধরবে তখনই দেখতে পারবেন।’
বাংলাদেশ ব্যাকের কর্মকর্তাদের লকার খুলতে কেন্দ্রিয় ব্যংকে প্রবেশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ রোববার দুপুরে কেন্দ্রিয় ব্যাংকে প্রবেশ করে দুদকের এই প্রতিনিধি দল। দুদকের পরিচালক সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি দল সেখানে গেছে বলে জানা গেছে।
এরআগে গেল ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ভল্টে রক্ষিত লকারে কর্মকর্তাদের রাখা অর্থসম্পদ সাময়িক সময়ের জন্য ফ্রিজ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গভর্নরকে অনুরোধ জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কেউ যেন লকার খুলে রক্ষিত মালামাল নিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
এতে বলা হয়, গত ২৬ জানুয়ারি আদালতের অনুমতি নিয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দুদকের একটি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন ভল্টে রক্ষিত সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর ‘সেফ ডিপোজিট’ তল্লাশি করে। সেখানে তিনটি সিলগালা কৌটা খুলে ৫৫ হাজার ইউরো, এক লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার, এক কেজি ৫ দশমিক ৪ গ্রাম সোনা এবং ৭০ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া যায়।
‘তল্লাশিকালে রেজিস্ট্রার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য কয়েকজন কর্মকর্তাও সিলগালা করে অর্থসম্পদ রেখেছেন। এসব সিলগালা কোটায়ও অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকতে পারে বলে মনে করছে দুদক।’
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে অনুসন্ধান চলমান থাকার কথা চিঠিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় কর্মকর্তাদের লকারে থাকা অর্থসম্পদ স্থগিত (ফ্রিজ) করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে দুদক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সম্পদ নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দুদক চেয়ারম্যানের আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, অর্থ উপদেষ্টা ওই ভল্টে রক্ষিত সম্পদ সাময়িক স্থগিত করার (ফ্রিজ) সম্মতি দিয়েছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে দাঁড়াতে চায় না।
তিনি বলেন, ‘আমরা কমিশনে যারা আছি, আমরা কোনো রাজনীতিতে ঢুকতে চাই না। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে দাঁড়াতে চাই না। আমরা নিরপেক্ষ থাকতে চাই। আপনারা আমাদের সাহায্য করবেন।’
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন এন্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)’র বার্ষিক সাধারণ সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সিইসি একথা বলে।
রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কারণে নির্বাচন কমিশনের বদনাম হয়েছে- উল্লেখ করে এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ইলেকশন কমিশনের এত বদনাম, এত গালি দেয়, এটা কেন হলো? ১০০টা কারণ বলতে পারবেন, ২০০টা কারণও বলতে পারবেন। কিন্তু আমার কাছে এক নম্বর কারণ হলো, পলিটিক্যাল কন্ট্রোল অব দ্য ইলেকশন কমিশন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি আমার কাছে মনে হয়েছে সবচাইতে বড় কারণ। রাজনীতির কাছে নির্বাচন কমিশনকে সঁপে দেওয়া, এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় কারণ।’
নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনীতিবিদদের প্রভাব বিস্তার বন্ধ করতে হবে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের ‘ইনফ্লুয়েন্স অন দ্য ইলেকশন কমিশন’ যদি বন্ধ করা না যায়, তবে আবার সেই পুরোনো জিনিস রিপিট হবে বলে আমি মনে করি।’
আরএফইডি সভাপতি ইকরামুল হক সায়েমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে চার নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব উপস্থিত ছিলেন।
এ যেন তারুণ্যের এক মিলনমেলা। তরুণদের পদচারণায় প্রাণের এই মেলা পেয়ে থাকে পূর্ণতা। কেননা বাংলা ভাষা তথা সাহিত্যের সবচেয়ে বড় এ উৎসবে তরুণদের আধিপত্য না থাকলে নিঃসন্দেহে তার জৌলুস হারাত। বাংলা ভাষার দাবিতে যেমন তরুণরাই ছিলেন সর্বাগ্রে তেমনি বাংলা ভাষার সর্ববৃহৎ এই বই উৎসবে অংশগ্রহণের দিক থেকে তারাই এগিয়ে। তারুণ্যের মিলনে বইমেলা যেন পরিপূর্ণতা পেয়েছে। তাই তো মেলায় দলেবলে আসেন তরুণরা। দেখেন বই উল্টিয়ে পাল্টিয়ে। কিনেন নতুন বই। আর এতেই যেন চেতনাময় এ মেলা ক্রমেই স্বার্থক হয়ে উঠছে।
মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, সাহিত্যের এই মিলনমেলায় দর্শনার্থী কিংবা ক্রেতাদের দিক থেকে তরুণরাই এগিয়ে রয়েছে। প্রায় প্রতিটি স্টলেই তরুণ দর্শনার্থীদের ভিড়। এখানে এসে তারা প্রেরণা পায় বিশ্বকে জানার, বিশ্বকে জয় করার।
মেলায় লেখক ও প্রকাশকদের কাছেও গুরুত্ব পান তরুণ পাঠকরাই। এজন্য তাদের মেলার প্রাণই বলা যায়। তরুণদের চাহিদা পছন্দের কথা মাথায় রেখে বই লেখা থেকে প্রকাশ সবই হয় গুরুত্ব সহকারে। আবার মেলার অধিকাংশ লেখকই থাকেন তরুণ। ফলে তারা তরুণদের চাহিদা মতো লিখতেও প্রচেষ্টার ত্রুটি করেন না।
এদিকে সরকারি ছুটি থাকুক আর নাই থাকুক বইমেলায় তরুণ-তরুণীরা চলে আসেন। কেউ কেউ দল বেঁধে আবার কেউবা যুগলবন্দি হয়ে মেলায় ঘুরতে আসেন। কোথাও কোথাও তারুণদের কয়েকটি দল মেলার ভিতর হাটতে হাটতে সমস্বরে গানও ধরতে দেখা যায়। মেলায় তরুণ এসব দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে একুশের বইমেলা।
জানা গেছে, তরুণ পাঠকদের হাতে তাদের পছন্দনীয় বিষয়ের বই তুলে দিতে প্রকাশকরা চেষ্টা করেন। বইমেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে কিশোর উপন্যাস, থ্রিলার ও আত্মউন্নয়নমূলক বই। এগুলোর ক্রেতা মূলত কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা। বইমেলাতে তরুণ লেখক-প্রকাশকের স্বচ্ছন্দ উপস্থিতিও লক্ষণীয়। লেখালিখির পাশাপাশি প্রকাশক হিসেবেও তরুণদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। ক্রেতাদের একটা বড় অংশ কিশোর-কিশোরী হওয়ায় প্রকাশক-স্টল মালিকরা বিক্রয়কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন তরুণ-তরুণীদের।
শনিবার সরকারি ছুটির কারণে বইমেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়। এদিন ভর্তি পরীক্ষা থাকায় বেলা ২টায় মেলার দুয়ার খোলার আগেই টিএসসি ও দোয়েল চত্বর মোড় থেকে জনস্রোত চলছিল গ্রন্থমেলা চত্বরে। প্রবেশদ্বারে এদিনও সারি ধরতে হলো দর্শনার্থীদের। তবে তাতে ভাটা পড়েনি উৎসাহে। শুক্রবারের তুলনায় শনিবারের মেলায় ভিড় অনেকটা কম হলেও সন্ধ্যার পর প্রাণবন্ত ছিল মেলামাঠ। এদিন বইমেলায় আসা তারুণ্যের উচ্ছ্বাসও ছিল বাঁধভাঙা।
প্রকাশকরা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় শনিবার বেচাকেনা কিছুটা কম। তবে মেলার উচ্ছ্বাস আর আনন্দে কোনও ঘাটতি ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদমান, আশিক ও রাফিয়া জানান, এবার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিদিনই তারা মেলায় এসেছেন। প্রতিটি দিনই তারা মেলায় আসবেন বলে জানিয়েছেন।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শ্রাবণী সেনরা মেলায় এসেছিলেন দলবেঁধে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণের রচনা সমগ্র কিনতে কিনতে শ্রাবণী বলেন, ‘ক্লাসের ফাঁকে মেলায় আসার ফুরসত পাই না। তারপর সেমিনার, অ্যাসাইনমেন্ট তো আছেই। আজ যা একটু বের হতে পেরেছি। আজ বন্ধুরা দলবেঁধে মেলায় চলে এলাম।’
শিরিন, বিথী আর শাকিল এসেছেন গাজীপুর থেকে। নতুন আসা বইগুলোর দিকেই তাদের ঝোঁক। তরুণদের দলটি খুঁজছিলেন তরুণদের কথাসাহিত্য, কবিতা ও অনুবাদ।
আসিফুর রহমান ও সাবার পছন্দ প্রেমের বই। আর মুবিনের পছন্দ গোয়েন্দা-থ্রিলার আর অনুবাদের বই। অন্যদিকে সামিয়ার ভালো লাগে হুমায়ূন আহমেদের গল্প-উপন্যাস।
কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণে পাঠকদেরও বই কিনতে ভাবতে হচ্ছে দুবার। আর কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের হাতে টাকাপয়সা কম থাকার কারণে তাদের অবস্থা আরও সঙ্গীন।
তারুণ্যনির্ভর বই বেচাকেনা নিয়ে অন্যধারা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী লুবনা জানান, তরুণদের জন্য যেসব বই বিক্রি হয় তার চেয়ে বেশি বই বিক্রি হয় যেসব বইয়ের নাম ভাইরাসহয় সেগুলো। সেগুলো আবার সেই তরুণরাই বেশি কেনে। যেমন গতবছর ‘পদ্মজা’ বইয়ের শেষ ভাগ ‘আমি পদ্মজা’ এবার বেশি বিক্রি হচ্ছে।
অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ছুটির দিন এলে মেলা যেন পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। আর সেখানে পূর্ণতা দেয় আমাদের নতুন প্রজন্মের তরুণরা। দেখতে দেখতে মেলার শুরুটা শেষের দিকে। এখন প্রকাশনীগুলো তাদের ভালো ভালো বইগুলো মেলায় নিয়ে আসবে। তারুণ্য নির্ভর বই যেমন থ্রিলার, প্রেম সাহিত্য এসব বই মেলায় বেশি আসে৷ কেননা দর্শনার্থীদের পাশাপাশি ক্রেতাদের একটা বিরাট অংশ থাকে তরুণরা।
শনিবার ১০২টি নতুন বই এসেছে। এদিন বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘একজন মোহাম্মদ হারুন—উর—রশিদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিক—উম—মুনীর চৌধুরী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আবদুস সেলিম এবং মোহাম্মদ হারুন রশিদ। সভাপতিত্ব করেন খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।
লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি ও প্রাবন্ধিক মজিদ মাহমুদ এবং কবি জব্বার আল নাইম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন- কবি ফরিদ সাইদ এবং কবি প্রদীপ মিত্র। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী কামাল মিনা এবং ফারহানা পারভীন হক তৃণা। আজ ছিল আরিফুজ্জামান চয়নের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘উদ্ভাস নৃত্যকলা একাডেমী’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফারাহ দিবা খান লাবণ্য, সুষ্মিতা দেবনাথ সূচি, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, গার্গি ঘোষ, শার্লি মার্থা রোজারিও এবং মো. রেজওয়ানুল হক।
আগামীকাল রোববার মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: মাকিদ হায়দার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন চঞ্চল আশরাফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আসিফ হায়দার এবং সৈকত হাবিব। সভাপতিত্ব করবেন আতাহার খান।
সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথন-২০২৫ শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি বিশ্বব্যাপী সংহতি ও সুস্বাস্থ্যের বার্তা বহন করছে। সুস্থ-সবল জাতি গড়ে তোলার জন্য দেশব্যাপী ম্যারাথন ছড়িয়ে দিতে হবে।’
শনিবার ম্যারাথনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এ কথা বলেন। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সুস্থ জাতি দেখতে চাই। একটি সুস্থ জাতি পেলে সেটা দেশের জন্য বড় কাজে দেবে। সুস্থ-সবল জাতি গড়ে তোলার জন্য দেশব্যাপী ম্যারাথন ছড়িয়ে দিতে হবে।’
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে গতকাল ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথন-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়। ওই ম্যারাথনের সমাপনী অনুষ্ঠানে ওয়াকার-উজ-জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা, অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। এ ম্যারাথনে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৯ হাজার ৭৬০ জন পুরুষ ও ৭৬৭ জন নারীসহ সর্বমোট ১০ হাজার ১২৭ জন দৌড়বিদ অংশগ্রহণ করেন। ফুল ম্যারাথনে পুরুষ বিভাগে মো. আল-আমিন এবং নারী বিভাগে পাপিয়া খাতুন প্রথম স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করেন। হাফ ম্যারাথনে পুরুষ বিভাগে মো. আশিক আহমেদ এবং নারী বিভাগে রিঙ্কি বিশ্বাস প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের দেখতে গিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সকাল ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আহতদের দেখতে যান এবং হামলায় আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবেনা। এদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি, যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি ।
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোহাম্মদ ফারুক বাসসকে সকালে জানিয়েছেন, গাজীপুর থেকে আহত অবস্থায় পাঁচজনকে এনে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার শিকার হন শিক্ষার্থীরা।
আহতরা জানিয়েছে, মোজাম্মেল হকের বাড়িতে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গাজীপুরসহ সারা দেশে আজ থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে যৌথ বাহিনী। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’।
আজ শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এই অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সভাসূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করা হবে। আজ শনিবার থেকেই গাজীপুর এলাকাসহ সারাদেশে এই অভিযান শুরু হবে।
এ বিষয়ে আগামীকাল রোববার প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে। এদিকে গাজীপুরে মারধরে আহত সাতজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।