গত কয়েক দিন ধরেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গরমের উপস্থিতি ভালোই টের পাওয়া যাচ্ছে। ভ্যাপসা গরমে মানুষ অতিষ্ঠ। রোদ কম থাকলেও এই ভ্যাপসা গরমে বেশ অস্বস্তিবোধ করছেন।
তবে আজ বিকেলের পর ঢাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় গরমের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে। ফলে ভ্যাপসা গরমের অস্বস্তি অনেকাংশে কমে যায়। আজ ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টি হয়েছে। দুর্বিষহ গরমের পর ঢাকায় বৃষ্টি ঝরায় স্বস্তি এনে দেয় নগরজীবনে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি আগামীকাল শনিবারও হতে পারে। এর ফলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে স্বস্তি মিলবে।
টানা তিন দিন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটি জানিয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
অন্যদিকে আজ আবহাওয়ার ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, আগামীকাল শনিবার (৮ জুন) সকাল ৯টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও বরগুনা জেলাসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
আর আগামী রোববার (৯ জুন) সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
অন্যদিকে দেশের ৯ জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে বলে জানা গেছে। তাপপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহী, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও বরগুনার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের ৯টি জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্য জায়গায় মাঝারি অবস্থায় আছে।
তাপপ্রবাহ নিয়ে অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহী, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও বরগুনা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাসনিক, আইনি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দিয়ে গণমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলেও অন্তর্বর্তী সরকার এসব বিষয়ে ন্যূনতম হস্তক্ষেপ করেনি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে ‘গণমাধ্যম সংস্কার প্রতিবেদন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের সাংবাদিকতা আগে অনেক বেশি সরকার নিয়ন্ত্রিত ছিল। আমরা সেই জায়গা থেকে বের হতে চাচ্ছি। যেন সবাই ইথিক্যাল গ্রাউন্ড থেকে সাংবাদিকতা করতে পারে, সব করতে পারছি তেমন না, তবে অনেক কিছুই করা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টটা আমাদের মাথার ওপর একদম একটা খড়্গ হিসেবে ছিল। যেটা ব্যবহার করে একটা হিসাবে এসেছে—সাত হাজারের বেশি কেস করা হয়েছে। মেইন টার্গেট ছিল বাক্স্বাধীনতাকে ব্যাহত করা। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আমলে মানুষ মেইন স্ট্রিম মিডিয়ায় কথা বলতে পারত না অনেক ক্ষেত্রেই। ফেসবুক বা ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়াকে সবার কণ্ঠস্বরকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা যন্ত্র বা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে। সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে আসে। আমরা প্রথম যে কাজটা করেছি, এই পুরো আইনটাকে বাদ দিয়েছি।’
নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, ‘নতুন আইন করার ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যেকটা গ্রুপের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই মতামত দিয়েছেন। আমরা মনে করি না, কেউ বলতে পারবে—এটার মাধ্যমে কারও বাক্স্বাধীনতায় আমরা আক্রমণ করেছি। শুধু এই আইন না, আরও অনেকভাবেই বাংলাদেশে মানুষের মুখ বন্ধ করা হয়েছে।’
আগে ডিজিএফআইসহ গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছিল মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, ‘আগে যেটা ছিল গোপন কোনো সংস্থাকে দিয়ে একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে আপনার মুখটাকে বন্ধ করা। আমরা এটা বন্ধ করতে পেরেছি। আমাদের তরফ থেকে বারবার বলা হয়েছে, কোনো ধরনের কোনো সিক্রেট এজেন্সি, কোনো ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি যেন কোনো সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিককে একটা যেন ফোন না করে।’
গণমাধ্যমকর্মীদের এ নিয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ ভুল তথ্য দেয়, অপতথ্য দেয়, সরকারের একটা মেকানিজম আছে; সরকার সেটা দেখবে। আমরা বলব, যে এই নিউজটা ভুল আছে। আপনি এই জিনিসটা ঠিকমতো দিচ্ছেন না।’
আওয়ামী লীগ সরকারে আমলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আগে পিএম অফিসের একজন ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মিনিস্টার ছিলেন। তার জন্য এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। আমরা তো সে জায়গায় যেতে চাই না। আমরা চাই বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাক। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ, লিগ্যাল এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে চাপ দেওয়া এই তিনটি জায়গায় এই সরকার ন্যূনতম কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।’
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, কমিশনের কাজে অসম্পূর্ণতা থাকতে পারে—সেগুলো আলোচনা হবে, পর্যালোচনা হবে। তারপর বাস্তবায়নের চেষ্টা হবে। আগে গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই জায়গায় যেতে যতটুকু করা প্রয়োজন তার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) সভাপতি রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, ‘গত সরকারের আমলে সরকারের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা, দলবাজির কারণে সাংবাদিকতার বর্তমান হাল তৈরি হয়েছে। কমিশনের রিপোর্টের সঙ্গে শতভাগ একমত না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে একমত। সাংবাদিকদের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে যথাযথ সাংবাদিকতা আশা করা যায় না।’
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস যোগাবে।
তিনি পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে আজ এ কথা বলেন।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পবিত্র আশুরা’র শোকাবহ এই দিনে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদতবরণকারী সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
তিনি বলেন, ইসলাম সত্য, ন্যায় এবং শান্তির ধর্ম। ইসলামের এই সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তাঁর পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচরবৃন্দ বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অত্যাচারীর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইসলামের বীর সৈনিকদের এই আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনা ছাড়াও পবিত্র আশুরা ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ একটি দিন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমগ্র পৃথিবী সৃষ্টিসহ নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এদিনে সংঘটিত হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দুটি রোজা রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
এই মহিমান্বিত দিনটির তাৎপর্য ধারণ করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে সকলের প্রতি বেশি বেশি নেক আমল করার আহবান জানান। তিনি সমাজে সাম্য, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পবিত্র আশুরার এই দিনে তিনি মুসলিম উম্মার ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।
সাম্প্রতিক নিরাপত্তা অভিযানে ‘চরমপন্থি উগ্রবাদী’ আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার (৫ জুলাই) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমওএফএ) বলেছে, ‘সন্ত্রাস-সংক্রান্ত তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুরে তাৎক্ষণিকভাবে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পরিচয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য চেয়েছে।’
বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গ্রেপ্তার বা আটককৃতদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনার হালনাগাদ তথ্যে বাংলাদেশ জানিয়েছে, বাকি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে বা তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর (ডিপোর্টেশন) প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ সরকার ঘটনাপ্রবাহ ‘ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছে এবং কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন কাজ করে যাবে।
মালয়েশিয়ার সরকার শুক্রবার জানায়, মালয়েশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি যে বাংলাদেশি চরমপন্থি গোষ্ঠী (জিএমআরবি) ভেঙে দিয়েছে, তা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জন্য তহবিল সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগে লিপ্ত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৬ জন সন্দেহভাজনের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ধারা ৬এ অনুযায়ী অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৬ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০১২ (এসওএসএমএ)-এর আওতায় তদন্ত ও বিচারের জন্য আটক রাখা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া ৩৬ বাংলাদেশির বিষয়ে দেশটি ইতোমধ্যে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বলে জানিয়ে বাংলাদেশ বলেছে, তারা এখন মালয়েশিয়ার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার ৩৬ জন বাংলাদেশির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছি এবং এখন তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাই করবে, তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
‘যদি তারা জড়িত থাকে, তাহলে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে,’ বলেন উপদেষ্টা হোসেন। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এখনো কিছুটা ‘ফ্লুইড’ বা অস্থির।
এই ঘটনা ভবিষ্যতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মালয়েশিয়ান ভিসা ইস্যুতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কিনা, প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, যেকোনো নেতিবাচক ঘটনা ভিসা ইস্যুতে প্রভাব ফেলতে পারে, এবং তারা একথা বলতে পারেন না যে এর কোনো প্রভাবই পড়বে না।
তবে তিনি বলেন, যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে প্রভাব কমানো সম্ভব।
মালয়েশিয়ার পুলিশ মহাপরিদর্শক তান শ্রী মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল বলেন, এই গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছ থেকে বার্ষিক সদস্যপদ ফি হিসেবে জনপ্রতি ৫০০ রিংগিত এবং আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী অন্যান্য স্বেচ্ছা অনুদান গ্রহণ করে তহবিল সংগ্রহ করত।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ছিল ১০০ থেকে ১৫০ জন, যারা সবাই মালয়েশিয়ায় কারখানা, নির্মাণকাজ ও পেট্রোল পাম্পে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক।
তিনি বলেন, সংগৃহীত অর্থ ই-ওয়ালেট অ্যাপ এবং আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সেবার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হতো। গোষ্ঠীটি নতুন সদস্য নিয়োগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করত।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, পুলিশ এখনো তদন্ত করছে ঠিক কত টাকা আইএস নেটওয়ার্কে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, গোষ্ঠীটি সোশ্যাল মিডিয়া ও মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে আইএস-এর প্রচারণা ছড়াত, ‘বাইআহ’ (আনুগত্যের শপথ) সম্পন্ন করত এবং গোপন ধর্মীয় ক্লাস ও সদস্য সভার মতো কার্যক্রম আয়োজন করত।
তিনি বলেন, ‘যারা অনলাইনে আনুগত্যের শপথ করত, তাদেরকে সেল নেতা বানানো হতো, যাতে তারা গোষ্ঠীর প্রভাব আরও বাড়াতে পারে। নতুন সদস্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল ধাপে ধাপে—স্ক্রিনিং থেকে শুরু করে অভিজাত দলের গঠন পর্যন্ত।’
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই গোষ্ঠীতে কোনো মালয়েশিয়ান নাগরিকের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে এই গোষ্ঠী মালয়েশিয়ায় প্রায় এক বছর ধরে সক্রিয় ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও গোষ্ঠীটি মালয়েশিয়ায় কোনো হামলার পরিকল্পনা করছিল না, তবে তারা দেশটিকে তহবিল সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল। তদন্তে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ও ইন্টারপোল সহায়তা করছে।
মোহাম্মদ খালিদ বলেন, মালয়েশিয়ান আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে আইএস মতাদর্শ ছড়াতে থাকা বাংলাদেশিদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথমে গোষ্ঠীটির কার্যক্রম শনাক্ত করা হয়।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের শুরুতে কয়েকদিন ধরেই কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়।
৬ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ওই দিন অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সারা বাংলাদেশ অবরোধ করার পরিকল্পনা থেকেই সেদিন এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। একই দাবিতে এইদিন সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
২০২৪ সালের ৬ জুলাই আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় এক ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন। পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সেখান থেকে সরে যান তারা। এরপর শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়।
৬ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি ছিল শুধুমাত্র বিক্ষোভ মিছিল। ৪ জুলাই কোটা সংক্রান্ত হাইকোর্টের শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়। এ রায়ের ক্ষেত্রে আদালতের দীর্ঘসূত্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছিল। আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে তা অবজ্ঞার চোখে দেখা হচ্ছিল। এছাড়াও শাহবাগে অবরোধ চলাকালে গাড়িগুলো পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। তাতে আন্দোলনের প্রভাব প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ হচ্ছিল না। তখন আন্দোলনকারীরা চিন্তা করেন আরেকটু বড় পরিসরে কিছু করতে হবে। এমন চিন্তা থেকে ‘বাংলা ব¬কেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যুক্ত হয়ে যান।
অবরোধ তুলে নিয়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আগামীকাল বিকাল তিনটা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, শাহবাগ ও ঢাকা শহরের সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘সরকার মনে করছে আমরা দুই-তিনদিন রাস্তা অবরোধ করে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে যাব। সরকারের এই ধারণা যে ভুল সেটি আমাদের প্রমাণ করে দিতে হবে।
আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি প্রয়োজনে আমরা হরতাল দিতে বাধ্য হব। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী যেখানে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, কোটা থাকবে না, সেই কোটা এখন কেন ফিরে আসল এর জবাব আমরা চাই। শুধু প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতেই নয় তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও কোটার বৈষম্য দূর করতে হবে।’
ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।’
‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণার আগের রাতে কার্জন হলের হোয়াইট হাউসের সিঁড়িতে বসে আন্দোলনের সংগঠকরা বৈঠক করে ‘বাংলা ব্লকেড’ নাম চূড়ান্ত করেন। এই কর্মসূচি কীভাবে সফল করা যায়, কোন কোন পয়েন্টে কোন কোন প্রতিষ্ঠান থাকবে, কোন পয়েন্টে কোন হল থাকবে, তা নিয়েও সেখানে আলোচনা হয়। বৈঠক থেকে প্রতিটি হলের প্রতিনিধিদের দায়িত্বও ভাগ করা হয়।
ঢাকা ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত-সায়েন্সল্যাবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টে এবং বোরহানুদ্দীন কলেজের শিক্ষর্থীরা চানখাঁরপুলে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবে। এদিকে আন্দোলনকারীরা চিন্তা করেন যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে তাদের সবাইকে শাহবাগে নিয়ে আসার প্রয়োজন নেই।
ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমাগমও যথেষ্ট বড় হচ্ছিল।
ওইদিন বিকাল সোয়া তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের শ্যাডো ও মল চত্বর প্রদক্ষিণ করে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনে দিয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর, টিএসসি ও বকশী বাজার হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে পলাশী ও আজিমপুর এলাকা ঘুরে ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে বিক্ষোভ করেন।
এর আগেই আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে মূল মিছিল আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মূল মিছিলটি চারুকলা অনুষদের সামনে আসতেই জাদুঘরের সামনে অপেক্ষমান শিক্ষার্থীরা ৪টা ৩৭ মিনিটে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এরপর তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ৫০ মিনিট এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এর পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর, কুষ্টিয়া ও চট্টগ্রামে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করেন।
২০২৪ সালের ৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মোশাররফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
ওইদিন রাজধানীর তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুই ঘণ্টা পর বিকেল পাঁচটায় শিক্ষার্থীরা তাঁতিবাজার মোড় ত্যাগ করে মিছিল নিয়ে জবি ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’—এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন।
এইদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন উপেক্ষা করে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। বিক্ষোভ চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
এদিকে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী তারা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
৬ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। অবরোধ চলাকালে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে অবরোধ চালিয়ে যান। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনসংলগ্ন বটতলা থেকে পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো নগরীর সড়ক অবরোধ করেন। এইদিন বিকাল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনে এসে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে অবস্থান নেন। এর সাথে যুক্ত হন চট্টগ্রামের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টায় রংপুরের মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। দেড় ঘণ্টা অবরোধ শেষে দুপুর পৌনে ২টার দিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, আগামী সপ্তাহে ‘গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে’। তিনি ‘গাজা চুক্তি নিয়ে আশাবাদী বলে মন্তব্য করেছেন। যদিও পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
মরিস্টউন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
এয়ার ফোর্স ওয়ানে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ব্যাপারে তিনি কতটা আশাবাদী- সাংবাদিকরা একথা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, আমি খুবই আশাবাদী।
তবে তিনি এও বলেন, ‘এটি প্রতিদিন বা দিনে দিনে পরিবর্তিত হতে পারে।’
প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাস ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে- সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি ভালো। তারা আমাকে এ বিষয়ে ব্রিফ বা অবহিত করেনি। আমাদের এটি শেষ করতে হবে। গাজা সম্পর্কে আমাদের কিছু করতে হবে।’
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা মারা গেছেন। শনিবার (০৫ জুলাই) সকাল ৯টায় রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও একমাত্র কন্যা রেখে গেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তার মরদেহ ওই হাসপাতালে রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মেয়ে দেশে ফিরলে জানাজার সময় নির্ধারণ করা হবে।
এ টি এম শামসুল হুদা সিইসি হিসেবে ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করেন। এর আগে তিনি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। পরে দেশ স্বাধীন হলে তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ২০০০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন।
চাকরি জীবনে তিনি বাগেরহাটে মহকুমা প্রশাসক (সাব ডিভিশনাল অফিসার), পানি সম্পদ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সাথে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং এটি উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
গতকাল (শুক্রবার) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যৌথভাবে রংপুর, ডিমলা ও সিলেটে ৩৪ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে টাঙ্গাইলে ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উল্লেখ্য, আজ ভোর ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সাতক্ষীরায় ১২৯ মিলিমিটার বা মিমি।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।
ঢাকায় বাতাসের গতি দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে।
ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ১৬ মিনিটে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে চালু হয়েছে নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘এ-চালান’। এর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্ট শুল্ক ও কর রিয়েল-টাইমে সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া যাবে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) এনবিআর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগ ও এনবিআরের যৌথ উদ্যোগে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই চালু হওয়া এ ব্যবস্থায় আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও তাদের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) এজেন্টরা এ-চালানের মাধ্যমে অনলাইনে সরাসরি শুল্ক-কর পরিশোধ করতে পারবেন।
এই সিস্টেমের মাধ্যমে এনবিআরের কাস্টমস সিস্টেম অ্যাসিকুডা ওয়ার্ল্ড এবং অর্থ বিভাগের আইবিএএস++ প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সফল প্রযুক্তিগত সংযুক্তি (ইন্টিগ্রেশন) সম্পন্ন হয়েছে। ফলে অফলাইন বা অনলাইন উভয় উপায়ে করদাতারা নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি সরকারি কোষাগারে অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন। এই অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি তহবিলে জমা হবে এবং রাজস্ব খাতে সরকারের তাৎক্ষণিক ব্যয় সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
আগে আটিজিএস পদ্ধতির মাধ্যমে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে শুল্ক-কর জমা দিলেও তা কোষাগারে পৌঁছাতে কয়েকদিন সময় লাগত, যার ফলে সরকারের আর্থিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হতো। নতুন ব্যবস্থায় সেই বিলম্ব দূর হয়ে ২৪ ঘণ্টা, সাত দিন যেকোনো স্থান থেকে অনলাইনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কর পরিশোধ ও পণ্য খালাস সম্ভব হবে।
এ-চালান সিস্টেমে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, নগদ, উপায়, রকেট, এমক্যাশ, ট্রাস্টপে ইত্যাদি মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্ট করা যাবে। পাশাপাশি, দেশের ৬১টি ব্যাংকের ১১ হাজার ৭০০ শাখা থেকে চেক ক্লিয়ারিং বা অ্যাকাউন্ট ডেবিটের মাধ্যমেও শুল্ক-কর জমা দেওয়া যাবে। পরিশোধ শেষে সিস্টেম জেনারেট করা রসিদ নম্বর দিয়েই বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাস করা যাবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ১ ও ২ জুলাই প্রশিক্ষণের পর ৩ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতিতে শুল্ক-কর আদায় শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী দিনে ৭৫টি বিল অফ এন্ট্রির বিপরীতে ১৩ কোটির বেশি টাকার রাজস্ব সরাসরি কোষাগারে জমা হয়।
এর আগে গত ২৩ এপ্রিল কমলাপুর আইসিডিতে এবং পরবর্তীতে পানগাঁও কাস্টম হাউসে এ পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানিয়েছে, আগামী ৭ জুলাই থেকে ঢাকা কাস্টম হাউসসহ দেশের সব কাস্টমস স্টেশনেই এ-চালান সিস্টেম চালু হবে।
এনবিআর মনে করে, এই উদ্যোগ রাজস্ব আহরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, পণ্য খালাসের গতি বাড়াবে এবং সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা নিয়ে আসবে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সড়কপথে মোট ১৭ হাজার ৯৫৭টি দুর্ঘটনায় ১৭ হাজার ৮২৬ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৭৭৮ জন। শুক্রবার রাজধানীর বিজয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা।
তিনি জানান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিসহ থ্রি হুইলার ধরনের বাহনে ৮ হাজার ৮১২টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৮১৫ এবং নিহত হয়েছেন ৭৯৫ জন। একই সঙ্গে ৩ হাজার ৭১৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৬২৩ জন আহত এবং ৬৭৩ জন নিহত হন। ৩ হাজার ৪০৪টি বাস দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৩১৮ জন আহত এবং ৮২৫ জন নিহত হয়েছেন এবং ২ হাজার ২৭টি ট্রাক-পিকআপ-লড়ি দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৭০ জন আহত এবং ৪৮৫ জন নিহত হয়েছেন।
সেভ দ্য রোড-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, মহাসচিব শান্তা ফারজানাসহ সংশ্লিষ্ট গবেষণা সেল সদস্যদের তত্ত্বাবধানে ১৭টি জাতীয় দৈনিক, ২২টি নিউজ পোর্টাল এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া তথ্য অনুসারে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী বলেন, সেভ দ্য রোড-এর দাবি অনুযায়ী প্রতি ৩ কিলোমিটারে পুলিশ বুথ বা ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন না করা ও হাইওয়ে পুলিশসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে সড়কপথে ৬ মাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ১১৮টি।
এতে ডাকাতদের হামলায় আহত হয়েছেন ১০৪ জন। এছাড়াও নারী শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটেছে ৬১৪টি। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২টি। যার অধিকাংশই থানা-পুলিশের শরণাপন্ন হয়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবীদের তথ্যে উঠে এসেছে।
নৌপথে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশের দায়িত্ব অবহেলার সুযোগে অন্যান্য বছরের তুলনায় ডাকাতি বেড়েছে। রেলপথে মহাখালীতে দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া ইট-পাটকেল ও ছিনতাইকারীদের হামলায় ৪১ জনসহ মোট ৫৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত নৌপথে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬১৫টি। এতে আহত হয়েছেন ৪৫১ জন এবং নিহত হয়েছেন ১৪ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত রেলপথে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫২৬টি। এতে আহত হয়েছেন ১৮৪ জন এবং নিহত হয়েছেন ১৪ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুনের মধ্যে আকাশপথে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে অসুস্থ হয়েছেন ৩১৬ জন।
কোরবানির ঈদের পর থেকে বেড়েই চলেছে চালের দাম। পাশাপাশি সবজির দামও গত দুই সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী। তবে মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমতির দিকে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে ইলিশের ভরা মৌসুম এখন। তবুও ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে না সাধারণ ক্রেতারা। ঢাকার বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ কিনতে গুনতে হবে ২৬শ থেকে ২৮শ টাকা, যা প্রায় চার কেজি গরুর মাংসের সমান। তাই মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে ইলিশ। অন্যান্য মাছের দামও কিছুটা বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভরা মৌসুম হলেও এবার ইলিশের সরবরাহ কম। সাগরে বা নদীতে খুব বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে না। তাই ইলিশের দাম বাড়তি।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মোকামগুলোতেই চালের দাম বেড়েছে। চালকল মালিকরা ঈদের পর চালের দাম বাড়িয়েছেন। প্রতি বস্তা চালের দাম ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রতি কেজি চাল মানভেদে ২ থেকে ৮ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৮০ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৬ টাকা কেজিতে।
মোহাম্মদপুর বাজারের একজন চাল ব্যবসায়ী বলেন, নাজিরশাইল ছাড়া পাইজাম, বিআর-২৮, মিনিকেটের দাম কেজিপ্রতি ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে ৬৮ টাকা কেজি দরে পাইকারিতে যে মিনিকেট চাল কিনতাম, গতকাল শুক্রবার কিনেছি ৭৬ টাকা কেজি দরে।
এদিকে ছোট বাজারে ও পাড়ার মুদি দোকানে দাম আরেকটু বেশি। রামপুরা বাজারের চাল বিক্রেতা জুবায়ের বলেন, ঈদের পর থেকে দোকান খুলে যে চালই অর্ডার দিচ্ছি, তারই দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। দিনাজপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া সব মোকামে চালের দাম বাড়ছে।
বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধন্দুল ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাঁজর ১৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা এবং আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে যাওয়া বেসরকারি চাকরিজীবী বায়জিদ বলেন, বাজারে সবজির দাম কয়েকদিন ধরে বেড়েছে। আজও বাড়তি দামে সবজি কিনলাম। কিছুদিন আগেও সবজির দাম কম ছিল, কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে বলতে গেলে সবজি দাম বাড়তি যাচ্ছে।
সবজির দাম বৃদ্ধি বিষয়ে মিরপুর ৬ নাম্বার বাজারের সবজি বিক্রেতা জসিম বলেন, বেশ কিছু সবজির মৌসুম এখন প্রায় শেষ। যেসব সবজির মৌসুম শেষ হয়েছে সেগুলোর দাম বেড়েছে। মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে এসব সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। ফলে সবজি গুলোর দাম বেড়েছে। নতুন মৌসুমের সবজি উঠার আগ পর্যন্ত কিছুটা বাড়তি থাকবে।
রাজধানীর বাজারে ঈদের পর থেকে নিম্নমুখী ছিল মুরগির দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে প্রতি ডজন ডিমের দাম নেমেছে ১২০ টাকায়। বড় বড় বাজারে কিনলে ১১৫ টাকায়ও কেনা যাচ্ছে। তবে এ দাম ডিম উৎপাদনকারীর জন্য লোকসানের বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। বিপুল হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, অন্তত ১৪০ টাকা ডজন ডিমের দাম হলে খামারিদের কিছু লাভ হয়, এবার দাম খুব কমে তাদের লোকসান হচ্ছে।
এদিকে মুদি পণ্যগুলো দাম তেমন হেরফের হয়নি। তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি আগের দামে কেনা যাচ্ছে। কম দামে কেনা যাচ্ছে পেঁয়াজ, আলু, আদা, রসুনসহ অন্য নিত্যপণ্যও।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি। আমরা সংস্কারগুলো আদায় করে ছাড়ব। সুষ্ঠু নির্বাচনও ইনশাআল্লাহ আদায় করে ছাড়ব।’
শুক্রবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জামায়াতের এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সব খুনির বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচনসহ ৪ দফা দাবিতে রংপুর মহানগর ও জেলা শাখার উদ্যোগে এই জনসভার আয়োজন করা হয়।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকেন, আমরা মহান আল্লাহর সাহায্যে সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। কোনো প্রশাসনিক ক্যু করতে দেওয়া হবে না।
ভোটকেন্দ্রে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলতে দেওয়া হবে না, কালো টাকার কোনো খেলা সহ্য করা হবে না।’ মৌলিক সংস্কার ছাড়া ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই দেশে মব কালচার চলছে। কিন্তু এসব সহিংসতায় জামায়াতের কোনো কর্মী জড়িত নয়। ১৯৭২ সাল থেকেই এই পরিস্থিতি চলছে। জামায়াত সবসময় মব রাজনীতির বিরুদ্ধে।’
লালমনিরহাটের পাটগ্রামের সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে ডা. শফিকুর বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য আগে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, আর সেই পরিবেশ তৈরির জন্যই আমরা মৌলিক সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।’
যারা সহিংসতায় জড়িত তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নিজেদের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে আনা, এরপর রাষ্ট্রের দায়িত্ব পরিস্থিতি মোকাবিলা করা।
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা বহু ধরনের ষড়যন্ত্রের কথা শুনতে পাচ্ছি, বহু ধরনের কথা ময়দানে শুনতে পাচ্ছি। বহু ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আলামত বুঝতে পারছি। আমরা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেই- এই শেখ হাসিনা, তার হাতে সকল বাহিনী ছিল। দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল, জায়গায় জায়গায় নিজের লোক বসিয়েছিল। মান্তানদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল। কিন্তু যখন জনগণের জাগরণ, জনগণের বিস্ফোরণ হয়েছে, তখন তাকে কেউ রক্ষা করতে পারেনি।
জামায়াতপ্রধান বলেন, যেই জনগণ এতো মূল্য দিয়ে একটা পরিবর্তন এনেছে, সেই জনগণ আরেকটা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে দেবে না ইনশাআল্লাহ।
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা কথা দিচ্ছি ফ্যাসিবাদবিরোধী এই লড়াই ততদিন চলবে, যতদিন দেশে ফ্যাসিবাদের সামান্য চিহ্নও থাকবে। ফ্যাসিবাদেকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত আমাদের লড়াই কেউ থামাতে পারবে না।
জনসভার প্রধান বক্তা এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি আজ মুক্তভাবে কথা বলতে পারছি। কিছুদিন আগেও আমি কারাগারে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আল্লাহ যে আমাকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে জনতার মঞ্চে নিয়ে আসবে, এটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানত না। আজকে আমি ফাঁসির মঞ্চ থেকে লাখো জনতার মঞ্চে হাজির হয়েছি। সবই আল্লাহর মেহেরবানি, রহমত। যে গলায় আমার রশি পরানোর কথা ছিল, সেই গলায় ফুলের মালা পরানো হলো। আল্লাহ আমাকে মুক্ত করেছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত হয়ে ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম। তবে ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
জনসভায় বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। এছাড়াও বক্তব্য দেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, শহিদ আবু সাঈদের বাবা ও বড়ভাই রমজান আলীসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রংপুর মহানগরের আমির এটিএম আজম খান।
জনসভা থেকে আগামী নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা আব্দুল হালিম।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্মীয় উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, আমরা মসজিদ করে যাবো আপনাদের কাজ হলো মসজিদকে আবাদ করা। দেশে যত মসজিদ হবে, তত বেশি নামাজি বাড়বে। বেশি নামাজি বাড়লে সমাজ থেকে ফাহেসা, শিরক বিদয়াতসহ অপকালচার কমে যাবে। শুক্রবার (০৪ জুলাই ) হাটহাজারী পৌরসভার কড়িয়ার দিঘির পাড় এলাকায় মডেল মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, গণপূর্ত অধিদপ্তর) মো. শহিদুল আলম, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কেন্দ্রের জমি নির্বাচন সংক্রান্ত কমিটির সদস্য অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল হাওলাদার ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আব্দুস ছালাম খান এবং উপ-প্রকল্প পরিচালক (প্রকৌশল) মোহাম্মদ ফেরদৌস-উজ-জামান। আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বিএম মশিউজ্জামান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামীম আল্লামা মুফতি খলিল আহমদ কাসেমী, নায়েবে মুহতামিম (সহকারী পরিচালক) মাওলানা শোয়াইব জমিরী ও মুফতি জসিম উদ্দিনসহ নেতৃবৃন্দ।
সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রত্যেকটি মডেল মসজিদে ব্যয় হবে ১১কোটি ৮৯ লাখ টাকা করে। ৩ তলা বিশিষ্ট এসব মডেল মসজিদে থাকবে উপজেলা ইমাম প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, ১২ শত মুসল্লীর একসঙ্গে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা, পাঠাগার ও ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির নানা খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। তেমনি বহুল আলোচিত দুর্নীতিগ্রস্ত একটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ ছাড়ের অনৈতিক চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
এ চেষ্টার অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) চিঠি দিয়ে তদন্ত না করার অনুরোধের কথা জানা যায়। দুর্নীতিগ্রস্ত ওই প্রকল্পের জন্য আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নির্ধারিত অর্থ ছাড়ে সহায়তার অনুরোধ করা হয়েছে একটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। বিষয়টি নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ খাতের প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী আলোচিত ছিল বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (বিটিসিএল) কর্তৃক গৃহীত ফাইভজি রেডিনেস প্রকল্প। প্রায় ৩২৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সাবেক মন্ত্রী ও সচিবের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। এক পর্যায়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আভ্যন্তরীণ একটি বৈঠকে প্রকল্পের টেন্ডার বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহবানের সিদ্ধান্ত দেন সাবেক মন্ত্রী। সাবেক সচিব সেই সিদ্ধান্ত উপক্ষো করে মাত্র এক দিনের নোটিশে বিটিসিএল এর বোর্ড সভা ডেকে, একই দিনে আর্থিক মূল্যায়ন সম্পন্ন করে চীনা একটি প্রতিষ্ঠানকে সেই দিনই কার্যাদেশ দেন।
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গঠিত ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে ফাইভজি রেডিনেস প্রকল্পে নজিরবিহীন অনিয়মের তদন্তে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। সেই কমিটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে রিপোর্ট জমা দেয়।
তথ্যানুসন্ধানে সেই তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রিপোর্টে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সাবেক একজন সচিব (পদাধিকার বলে বিটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন) তার বিরেুদ্ধে অনিয়মের সরাসারি প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণে অনিয়মের মাত্রা গুরুতর এবং নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন উপেক্ষা করে ২৬ টেরাবাইট সক্ষমতার প্রকল্পে সক্ষমতা ১২৬ টেরাবাইট উল্লেখ করে প্রকল্পে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বিটিসিএলের বোর্ড সভা ডাকাসহ দরপত্র মূল্যায়ন থেকে কার্যাদেশ দেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে অনিময় করা হয়েছে এবং কোম্পানি বিধি লংঘন করা হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্তে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বিটিসিএলের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার কথাও বলা হয়। দুটি বিদেশি কোম্পানির বিরুদ্ধে টেন্ডার প্রক্রিয়াকে অনিয়মের মাধ্যমে প্রভাবিত করার প্রমাণও তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে। কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ার পর থেকেই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা সেটি গোপন করতে উঠে পড়ে লাগেন এবং দূর্নীতি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেননি।
জানা যায়, গত ২১ এপ্রিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে দুদকের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়ে তদন্তকালীন সময়ে ফাইভজি রেডিনেস প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের চূড়ান্ত বিল পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কারখানা পরিদর্শনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানানো হয়। এর জবাবে গত ১৮ জুন দূর্নীতি দমন কমিশন থেকে জানানো হয়, দুদকের অনুসন্ধানী দল এরই মধ্যে এ প্রকল্পে অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। এ ছাড়া খোদ বিটিসিএলের আইনজীবী মতামত দিয়ে জানিয়েছেন, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এমতাবস্থায় তদন্ত চলাকালে এ প্রকল্পের ক্রয় প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হলে এবং অর্থ ব্যয় করা হলে তা আইনসিদ্ধ হবে না বলেই প্রতীয়মান হয়।
দুদকের এই জবাবের পর আলোচিত দূর্নীতিগ্রস্ত এ প্রকল্পের অর্থ ছাড় করার অনুমতির জন্য গত ২২ জুন দুদক বরাবর ডিও লেটার দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব। তিনি ওই ডিও লেটারে লিখেছেন, ‘দেশের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করে ফাইভজির রেডিনেস পিছিয়ে পড়া রোধ, প্রযুক্তিগতভাবে বিটিসিএল এর পিছিয়ে পড়া রোধ, এডিপি বাস্তবায়ের হার নিশ্চিত করা এবং প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিটিসিএল এর অপর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এরই মধ্যে স্থাপিত যন্ত্রপাতি চালু করার লক্ষ্যে বিটিসিএল এর ফাইভজি উপযোগিকরনে বিটিসিএল এর অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখা একান্ত প্রয়োজন। এ বিষয়ে আপনার মনযোগ ও সহায়তা কামনা করছি।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফাইভজি চালু হলে দেশে আগামী এক যুগের মধ্যে ডাটার ব্যবহার সরোর্চ্চ ২৬ টেরাবাইটে দাঁড়াতে পারে বলে বুয়েটের সমীক্ষায় উঠে এসেছে। আর বর্তমানে দ্রুত প্রযুক্তির বিবর্তন হচ্ছে এবং আগের প্রযুক্তি বাতিল হচ্ছে। এ কারনে পাঁচ বছর সময়ের বেশী একটি প্রযুক্তির কার্যকারিতা বিবেচনা করেই বর্তমানে নতুন প্রযুক্তি স্থাপন ও প্রযুক্তি হালনাগাদ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়। কিন্তু বিটিসিএলের ফাইভজি রেডিনেস প্রকল্পের ক্ষেত্রে ১২৬ টেরাবাইট সক্ষমতা এবং ১২ বছরের রক্ষণাবেক্ষণ সময় ধরা হয়েছে যা অযৌক্তিক এবং অবাস্তব। শুধুমাত্র প্রকল্পের ব্যয় দশ গুন বাড়ানোর জন্যই অতিরিক্ত সক্ষমতা এবং ১২ বছর রক্ষণা-বেক্ষণ সময় ধরা হয়েছে। কোন যন্ত্রপাতি ১২ বছর চলবে কি’না তা বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করার দাবিও প্রযুক্তিগত দিক থেকে ঠিক নয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে প্রকল্পের চটকদার নাম দিয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হত শুধুমাত্র লুটপাটের জন্য। ফাইভজি রেডিনেস সে ধরনেরেই একটি প্রকল্প। তাছাড়া বিটিসিএল এরই মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে একাধিক টেলিকম অপারেটরের জন্য ফাইবার নেটওয়ার্ক নির্মাণ করে দিয়েছে।