শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ ও শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করাসহ শিশুশ্রম নিরসনে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামীকাল ‘বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে একযোগে কাজ করার এখনই সময়। এসডিজি ৮.৭ অর্জনে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, শিশুরাই তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এই ভাবনা থেকেই জাতিসংঘ শিশু সনদের ১৫ বছর আগে ১৯৭৪ সালে তিনি জাতীয় শিশু নীতি প্রণয়ন করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের শিশু, নারী ও অনগ্রসর অংশসহ প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, কর্মের স্থিতিশীলতা, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ও অধিকার সংরক্ষণকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাতে (আইএলও) যোগ দেয়। শিশু শিক্ষার বিকাশ নিশ্চিত করতে তিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুসহ সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে নারী, শিশু ও সমাজের অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান ও জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে শিশু শ্রম প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি বলেন, শ্রমজীবী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে প্রত্যাহারের লক্ষ্যে আমরা ‘জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০’ প্রণয়ন করেছি। এ নীতি বাস্তবায়নে জাতীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদ, উপজেলা শিশুশ্রম পরিবীক্ষণ কমিটি, জেলা শিশুশ্রম পরিবীক্ষণ কমিটি এবং বিভাগীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদ গঠন করা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শিশুদের জন্য ৪৩টি কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে চিহ্নিত করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১ লাখ ৯০ হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘শিশুশ্রম নিরসন ও পুনর্বাসন প্রকল্প’ নামে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে যা এবছর শেষ হবে। গৃহকর্মে শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫’।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অনুযায়ী আমরা দেশকে সকল ধরনের শিশুশ্রম থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২১-২৫ প্রণয়ন করেছি এবং এটি বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সরকার ‘জাতীয় শিশুনীতি-২০১১’, ‘শিশু আইন-২০১৩’, ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭’ প্রণয়ন করেছে। এ ছাড়া সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পুনর্বাসন এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিকাশে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বছরের শুরুতে বিনামূল্যে নতুন বই প্রদান করা হচ্ছে। প্রায় শতভাগ শিশু আজ স্কুলে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শিশু ও তাদের পরিবারের সহায়তায় বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, শিশু সংবেদনশীল সামাজিক সুরক্ষা নীতি প্রণয়ন এবং পারিবারিক আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজ ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করা। এ ছাড়া শিশুশ্রম নিরসনে আমরা বেসরকারি খাতগুলোকে সম্পৃক্ত করেছি। সহিংসতা ও শোষণ থেকে শিশুদের সুরক্ষা সম্পর্কে নিয়োগদাতাদের প্রশিক্ষিত করার বিষয়টিতে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি।
আগামীকাল বুধবার বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হল ‘শিশুশ্রম বন্ধ করি, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি।’
ঢাকার মেট্রো রেলের স্থায়ী কার্ড এখন থেকে যাত্রীরা ঘরে বসেই রিচার্জ করতে পারবেন। ২৫ নভেম্বর থেকে চালু হতে যাওয়া এই সেবা ব্যবহার করে ব্যাংকের ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড, বিকাশ, নগদ, রকেটসহ অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সহজেই টাকা ভরা যাবে।
প্রধান উপদেষ্টা (সড়ক, সেতু ও রেল মন্ত্রণালয়)-এর বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন এই সেবা উদ্বোধন করবেন। শুরুতে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) ওয়েবসাইটের লিঙ্কের মাধ্যমে রিচার্জ করা যাবে, পরবর্তী সময় একটি অ্যাপের মাধ্যমে একই সেবা পাওয়া যাবে।
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে যাত্রীদের স্টেশনে লাইন ধরে কার্ড রিচার্জ করতে হবে না। সময় বাঁচবে এবং ভোগান্তি কমবে।
অনলাইনে রিচার্জের পর কার্ডটি স্টেশনে থাকা ‘অ্যাড ভ্যালু মেশিন’ (এভিএম) এ স্পর্শ করিয়ে হালনাগাদ করতে হবে। একবার স্পর্শ করানোর পর, কার্ডের টাকা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর স্পর্শের প্রয়োজন নেই।
বর্তমানে মেট্রো রেলে দুই ধরনের স্থায়ী কার্ড ব্যবহার হচ্ছে—ডিএমটিসিএলের এমআরটি পাস এবং ডিটিসিএর র্যাপিড পাস। নতুন ব্যবস্থায় উভয় কার্ডের জন্যই অনলাইন রিচার্জ করা সম্ভব।
ডিটিসিএর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি স্টেশনের দুটি স্থানে এভিএম যন্ত্র বসানো হবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে মোট ৩২টি যন্ত্র বসানো হবে।
মেট্রো রেলের যাত্রী সুবিধা সম্প্রসারণে এই উদ্যোগ বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে ৫৫ শতাংশ যাত্রী র্যাপিড বা এমআরটি কার্ড ব্যবহার করেন। অনলাইনে রিচার্জের সুবিধা চালু হলে দৈনিক যাত্রী চলাচলের গতি আরও বাড়বে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে টানা অস্থিরতার পর অবশেষে মূল্যবান ধাতুটির দামে দেখা গেল স্বস্তির ছোঁয়া। দেশের বাজারে আরেক দফা কমেছে স্বর্ণের দাম। দেশের বাজারে সবশেষ ৫ দফা দাম সমন্বয়ে ৩ বারই বেড়েছে স্বর্ণের দাম। তবে সবশেষ টানা ২ দফায় কমানো হয়েছে মোট ৬ হাজার ৮১১ টাকা। এ দফায় ভরিতে ১ হাজার ৩৬৪ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৬ হাজার ৯০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) থেকে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে। তবে আগের দামেই বিক্রি হবে রুপা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম কমায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৬ হাজার ৯০৮ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৯১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
সবশেষ গত ১৫ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সেদিন ভরিতে ৫ হাজার ৪৪৭ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৮ হাজার ২৭২ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।
এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮০১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৪১ হাজার ৭১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা ১৬ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
এ নিয়ে চলতি বছর মোট ৭৮ বার দেশের বাজারে সমন্বয় করা হলো স্বর্ণের দাম। যেখানে দাম বাড়ানো হয়েছে ৫৩ বার, আর কমেছে মাত্র ২৫ বার। আর ২০২৪ সালে দেশের বাজারে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়। যেখানে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল, আর কমানো হয়েছিল ২৭ বার।
বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ভারতের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বিবিসিকে আভাস দিয়েছেন, এই রায়ের ফলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে দিল্লির অবস্থান আদৌ বদলাচ্ছে না এবং তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ারও প্রশ্ন উঠছে না।
বস্তুত শেখ হাসিনা এই পর্বে যখন থেকে ভারতে পা রেখেছেন, মানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত তাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে ভারতের অবস্থান একই রয়েছে। সেটি হলো – একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে তাকে ভারতে ‘সাময়িক’ (ফর দ্য টাইম বিয়িং) আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, এর বেশি কিছু নয়।
গতকাল বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণার পরেও ভারতের সেই অবস্থান অপরিবর্তিতই থাকছে। এর অর্থ, তাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে, এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়: প্রতিক্রিয়ায় যা বলল ভারত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছর ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। এ নিয়ে এবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ঘোষিত রায়টি ভারতের নজরে এসেছে (নোটেড)। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবং দেশটির জনগণের শান্তি, গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি ও স্থিতিশীলতাকে ভারত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখে।
এ অঞ্চলে দীর্ঘদিনের অভিন্ন ইতিহাস ও সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করতে তারা সবসময় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক।
ভারতের বিবৃতিতে আরও জোর দিয়ে বলা হয়, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক, ভারতের লক্ষ্য হবে বাংলাদেশের সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে ইতিবাচক ও কার্যকর যোগাযোগ বজায় রাখা—যাতে দেশটির স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হবে একই দিনে। গত ১৩ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ভাষণের আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন করা হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এ আদেশ জারি করেন।
চারটি বিষয়ের ওপর একটি প্রশ্নে হবে গণভোট। গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে জনগণ মতামত জানাবেন। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে আগামী সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে (পিআর পদ্ধতি) ১০০ সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।
চারটি বিষয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া গণভোটের ব্যালটে কী ধরনের প্রশ্ন থাকছে—এ নিয়ে প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি প্রশ্ন প্রকাশ করা হয়।
‘জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্নে’ উল্লেখ করে বলা হয়, আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?
ক. নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
গ. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।
কোনো দণ্ডিত ব্যক্তির বক্তব্য প্রচার না করতে গণমাধ্যমগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি (এনসিএসএ)।
সোমবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিন।
এতে বলা হয়, এনসিএসএ অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, দেশে কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল দণ্ডপ্রাপ্ত এবং পলাতক আসামি শেখ হাসিনার বক্তব্য ও বিবৃতি প্রচার করছে। প্রচারিত এসব বক্তব্যে সামাজিক স্থিতিশীলতা (সোশ্যাল হারমনি) বিঘ্নিত করার পাশাপাশি সরাসরি সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ সৃষ্টির আহ্বান বা নির্দেশনা রয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত এবং পলাতক আসামিদের বক্তব্য প্রচার সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর নিয়মাবলীর পরিপন্থী। বিশেষত অধ্যাদেশের ধারা ৮(২) অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন তথ্য, যেগুলো দেশের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে, জাতিগত/ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায় কিংবা সহিংসতার আহ্বান জানায়, সেসব তথ্য অপসারণ বা ব্লক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
আরও স্পষ্টভাবে, অধ্যাদেশের ধারা ২৬ (১) অনুযায়ী, ‘ছদ্ম পরিচয়’ বা অবৈধ প্রবেশের মাধ্যমে যদি কেউ ঘৃণা, জাতিগত বিদ্বেষ বা সহিংসতা প্ররোচনাকারী বক্তব্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তা অপরাধ এবং দণ্ডনীয়। ধারা ২৬ (২) অনুযায়ী, অপরাধীদের সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা যেতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এনসিএসএ সাংবাদিকতা ও অভিব্যক্তির স্বাধীনতাকে সম্মান করে। তাই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা, অপরাধমূলক, উসকানিমূলক বা আহ্বানমূলক যেকোনো বিবৃতি প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে এবং আইনি দায়বদ্ধতা বিবেচনায় রাখতে গণমাধ্যমকে অনুরোধ করা হলো।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। খসড়া তালিকা অনুযায়ী ১২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮৪ জন নাগরিক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। আজকের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ভোটার সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকার ভোটাররা আসন্ন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৩ নভেম্বর হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছিল ইসি। সেই খসড়া অনুযায়ী, মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৬ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ৩৮২ জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ জন, এবং ১ হাজার ২৩০ জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন।
নতুন প্রকাশিতব্য চূড়ান্ত তালিকায় যারা ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ১৮ বছর পূর্ণ করেছেন, তারা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এর ফলে, তারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পারবেন।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, যারা ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ১৮ বছর পূর্ণ করেছেন, তারা এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। ফলে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজনের পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু করবে বলেও জানান তিনি।
প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পথ সুগম করতে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ নামের একটি মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপটির উদ্বোধন করা হবে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
উদ্বোধনের পরপরই অ্যাপটি ব্যবহার করে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটাররা তাদের নাম, ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন এবং ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম ওঠাতে পারবেন।
এই অ্যাপটি শুধুমাত্র প্রবাসীরা নন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভোটাররাও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটাররা। নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। নিজ ভোটার এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীরা এবং আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহায়তায় লিবিয়ার বেনগাজীর গানফুদা ডিটেনশন সেন্টার থেকে ১৭০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে তারা বুরাক এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ইউজেড২২২-এর মাধ্যমে দেশে ফিরেছেন।
বিমানবন্দরের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে এরইমধ্যে বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন প্রত্যাবাসিতরা।
আইওএম-এর সহায়তায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেনগাজীর গানফুদা ডিটেনশন সেন্টার থেকে ১৭০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আইওএম-এর সহায়তায় দেশে প্রত্যাবাসন করা হয়।
উল্লেখ্য, লিবিয়ার বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস, লিবিয়া স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও আইওএম নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে ৬৭৮ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়ালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। মঙ্গলবার সকালে এ মামলা দায়ের করা হয়।
স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড এবং এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে অনুসন্ধান শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় নামমাত্র শোরুমের মাধ্যমে প্রকৃত ডায়মন্ডের বদলে উন্নত মানের কাচের টুকরোকে প্রকৃত ডায়মন্ড হিসেবে বিক্রি, দুবাই ও সিংগাপুরে সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, ভারতের কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি দোকান ও ১১টি বাড়ি এবং মালয়েশিয়া, দুবাই ও কানাডায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে তথ্য রয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্নভাবে প্রতারণার মাধ্যমে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে অবৈধভাবে একটি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার অভিযোগ পাওয়ায় সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তার এবং এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে অনুসন্ধান শুরু করে।
নভেম্বরের প্রথম ১৬ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩৫.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৬৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর এই সুখবরটি সোমবার (১৭ নভেম্বর) দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নভেম্বরের প্রথম ১৬ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৬৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। গত বছর একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ১ হাজার ২৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রবাসীরা ১১ হাজার ৮৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০ হাজার ১৯৩ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, গত ৫ নভেম্বর এক দিনে প্রবাসীরা দেশে ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে এসেছে ১ হাজার ৭৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। বছর ব্যবধানে যা বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও সোমবার শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার খবরকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির শিরোনামে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত। বিবিসি শিরোনাম করেছে, বিক্ষোভ দমনে নৃশংসতার দায়ে বাংলাদেশের সাবেক নেত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।
আল জাজিরার শিরোনামে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হাসিনার মৃত্যুদণ্ড। সিএনএন শিরোনাম করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের শিরোনামে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মৃত্যুদণ্ড। ব্রিটিশভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান শিরোনাম করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ জন্য বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড। অপরদিকে পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডন শিরোনাম করেছে, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার এ মামলার রায়ের জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ঠিক করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। তাদের মধ্যে মামুন আসামি থেকে রাজসাক্ষী বনে যান এবং দায় স্বীকার করে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।
এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। সেগুলো হলো—গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’ দেওয়া; হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেওয়া; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দেওয়া।
মামলার তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক। দুজনই এখন ভারতে অবস্থান করছেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’বা রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আরেকটি বিজয়’ বলে উল্লেখ করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের ইতিহাসে এ রায় একটি স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক মাইলফলক।
সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, আজকের রায় কোনো প্রকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং অকাট্য ও প্রত্যক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে প্রদত্ত ন্যায়বিচারের ফলাফল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে তাজা, জোরালো ও বিস্তৃত প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, তাতে পৃথিবীর যে কোনো আদালতেই তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতো।
তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সহিংসতা, গুলিবর্ষণ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও গণহত্যার ধারাবাহিকতার বিষয়গুলো বিচার প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়েছে। এসব ঘটনার নৃশংসতায় যে বিপুল প্রাণহানি ও স্থায়ী শারীরিক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তা দেশের গণতান্ত্রিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ আঘাত হেনেছিল।
ব্রিফিংয়ের সময় আবেগাপ্লুত হয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছেন-আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, ইয়ামিন, আনাস, রিয়াগোপসহ অসংখ্য শহীদের কথা আজ বিশেষভাবে স্মরণ করছি। তিনি বলেন, আজকের রায়ে হয়তো তাদের বিদেহী আত্মা সামান্য হলেও শান্তি পাবে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর জন্য এটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সান্ত্বনা এনে দেবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতকে আবারও আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হবে। ভারত যদি মানবতা বিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিকে আশ্রয়দান অব্যাহত রাখে, তবে তা বাংলাদেশের প্রতি শত্রুতামূলক ও নিন্দনীয় আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর মধ্যেই সরকার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে এবং আইনি আনুষ্ঠানিকতা জোরদার করা হচ্ছে।
বিচারকার্য অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে আইন উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার যতদিন দায়িত্বে আছে, বিচার পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে চলবে। তিনি আরও বলেন, আগামী সরকার যেই হোক, জাতির প্রত্যাশা-এই গুরুদায়িত্ব থেকে তারা যেন কোনো অবস্থাতেই পিছিয়ে না যায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জাতির প্রতিজ্ঞা পূরণ হয়েছে। এতে প্রমাণ হয়েছে অপরাধী যতই ক্ষমতাশালী হোক, সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
সোমবার ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
এই রায়ে জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে যত বড় অপরাধী হোক, অপরাধের জন্য তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে। এটাও প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো জটিল অপরাধের বিচার করতে সক্ষম।’
তিনি বলেন, ‘এ রায়ের ফলে যে ১ হাজার ৪০০ তরতাজা তরুণ জীবন দিয়েছেন, তাদের পরিবারে কিছুটা স্বস্তিই প্রসিকিউশনের প্রাপ্তি। একটি বিচারিক প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করার মাধ্যমে এই জাতিকে বিচারহীনতার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার আমাদের যে ক্ষুদ্র প্রয়াস, সেটা যদি সফল হয় সেটাতেই আমাদের সাফল্য।’
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যে ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ এখানে দেখানো হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো আদালতের মানে এই সাক্ষ্য-প্রমাণ উৎরে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এই সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজ (সোমবার) যেসব আসামিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তারা একই শাস্তি পাবে।’