বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
১৬ পৌষ ১৪৩২

‘কারিগরি-অকারিগরি কারণে ঘটতে পারে ভুতুড়ে বিলের ঘটনা’

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ফাইল ছবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ২০ জুন, ২০২৪ ২২:০৬

কারিগরি ও অকারিগরি কারণে অনেক সময় ভুতুড়ে বিলের ঘটনা ঘটতে পারে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা বা কোম্পানির মোট গ্রাহক ৪ কোটি ৭১ লাখ। বিদ্যুৎ বিল যাতে যথাযথ হয়, সে বিষয়ে বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

কারিগরি ও অকারিগরি কারণে অনেক সময় ভুতুড়ে বিলের ঘটনা ঘটতে পারে। ভুতুড়ে বা অস্বাভাবিক বিল রোধকল্পে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রিপেইড বা স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে নোয়াখালী-৩ আসনের সরকারদলীয় এমপি মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।

চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে সীমিত লোডশেডিং

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হওয়ায় সীমিত আকারে লোডশেডিং হয়েছে।

তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হলে সাধারণত লোডশেডিং হয়। দেশজুড়ে তীব্র দাবদাহের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হওয়ায় সীমিত আকারে লোডশেডিং হয়েছে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ কাজে প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য লোডশেডিং করা হয়। সরকার শহর ও গ্রাম নির্বিশেষে সমতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে সচেষ্ট রয়েছে। সেচ মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে।

তিনি জানান, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ এবং বকেয়া পাওনা থাকলে নিয়মানুযায়ী বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ভুতুড়ে বিলের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে যাচাইপূর্বক প্রতিকার প্রদান করা হয় এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা

বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাড়ে তিন হাজার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪০০ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছয় হাজার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ৩১৫ কোটি ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির দরকার হবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।

প্রতিমন্ত্রী জানান, ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হয়। ওই সময় সরকারকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হয়। তবে জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যাওয়ার ফলে নভেম্বর ২০১৪ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারকে জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দিতে হয়নি। তবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপিসি ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান দেয়।

সরকার বর্তমানে ডাইনামিক প্রাইসিং ফর্মুলায় জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করায় এ খাতে কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, ভর্তুকির অর্থের মধ্যে ৩১ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৭শ কোটি নগদ ও ২০ হাজার ১৩৩ কোটি বন্ডের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়েছে।

নোয়াখালী-২ আসনের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, অনুমোদনপ্রাপ্ত এলপিজি প্ল্যানের সংখ্যা ৭৮টি। এর মধ্যে প্রাথমিক অনুমোদনপ্রাপ্ত ৫২টি, চূড়ান্ত অনুমোদনপ্রাপ্ত ২৪টি ও বিপিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ২টি।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. সোহরাব উদ্দিনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালের জানুয়ারি হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশে চাহিদার চেয়েও স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। তবে কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তীকালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে পরিপূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। এ ছাড়া অত্যধিক গরম ও দেশের কোথাও কোথাও দাবদাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

বর্তমানে নবায়নযোগ্য উৎস হতে ১৩১২ দশমিক ৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে উল্লেখ করে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, নবায়নযোগ্য উৎস হতে চলমান ও প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পগুলোতে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫৪৭ দশমিক ২২ মেগাওয়াট। ২০৩০ সালের মধ্যে এগুলো জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি বিভিন্ন ধরনের কূপ খননের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর সফল বাস্তবায়নে গড়ে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ১১ টির খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। যার মাধ্যমে দৈনিক ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে। দৈনিক ৩৩ মিলিয়ন ঘটফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

এই সংসদ সদস্যের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে আবিষ্কৃত ২৯টি গ্যাস ক্ষেত্রের মধ্যে ২০টি উৎপাদনরত ৫টি পরিত্যক্ত এবং ৪টির উৎপাদন কার্যক্রম চলমান।

আওয়ামী লীগের সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা প্রায় দৈনিক ৩৮০০-৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার বিপরীতে দেশীয় উৎপাদন ও এলএনজি আমদানি করে ৩০০০-৩১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে এবং বিদ্যুৎ ও সার খাতে অগ্রাধিকার বিবেচনায় গ্যাস সংযোগ চালু রয়েছে।

ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ/রুগ্ণ শিল্পের সংখ্যা ৩৯৭টি। এর মধ্যে বিসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন রুগ্ণ/বন্ধ শিল্প ৩৮২টি, বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ কারখানা ৫টি, বিএসএসআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন স্থগিত চিনিকল ৬টি, বিএসইসির নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ কারখানা ৪টি।

এমপি আব্দুল কাদের আজাদের এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জানান, বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করাসহ বিনিয়োগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সময়কাল পর্যন্ত সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সাফল্যও এসেছে।

তিনি জানান, বিসিকের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচটি শিল্পনগরী, তিনটি শিল্পপার্ক ও দুটি অন্যসহ মোট ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ৩ হাজার ৮১১টি শিল্প প্লটে সম্ভাব্য ৩ হাজার ৫৬৫টি শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরএডিপিতে সবুজ পাতাভুক্ত ১১টি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদিত ও বাস্তবায়িত হলে দেশে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে এবং বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

মন্ত্রী জানান, বিনিয়োগে উৎসাহিতকরণের লক্ষ্যে বিসিক কর্তৃক ১২২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৬৭টি শিল্প প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বিসিক উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে হোসিয়ারি শিল্পনগরী, পঞ্চবটী, নারায়ণগঞ্জ; জামদানি শিল্পনগরী, তারাবো, নারায়ণগঞ্জ; চামড়া শিল্পনগরী, সাভার, ঢাকা; এপিআই শিল্পপার্ক, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ এবং বিসিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী, মুন্সিগঞ্জ শীর্ষক বিশেষায়িত শিল্পনগরী বা শিল্পপার্ক বাস্তবায়িত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পটি ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমিতে ঢাকার সাভারে বাস্তবায়িত হয়েছে। কমন ইনফ্লুয়েন্স প্ল্যান্ট (সিইটিপি) সুবিধাসহ পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরীতে হাজারীবাগ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ট্যানারি কারখানাসমূহকে স্থানান্তর করা হয়েছে। শিল্পনগরীর ২০৫টি শিল্পপ্লটে ১৬২টি ট্যানারি কারখানা স্থাপিত হয়েছে।

স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বিসিকের দেশব্যাপী বাস্তবায়িত ৮২টি শিল্পনগরীর মোট ১২ হাজার ৩৬০টি শিল্প প্লটের মধ্যে ১১ হাজার ২৬২টি শিল্প প্লটে বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ কর্তৃক ৬ হাজার ১৯৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। এসব শিল্পনগরীর কারখানাসমূহে গত জুন, ২০২৩ পর্যন্ত বিনিয়োগের হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা প্রায়।


আপসহীন নক্ষত্রের বিদায়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সোনালী সূর্যরাঙা ভোর প্রতিদিনই আসে; কিন্তু বছর শেষের আগের দিনের ভোরটা এসেছে শোককাতর হয়ে;সবকিছুই ছিল, তবু কী যেন নেই-নেই ভাব সবদিকে! পৌষের শীতের সঙ্গে এক গভীর শোকে জবুথবু হয়ে গেছে জাতীয় জীবন। ১৮ কোটি মানুষই অশ্রুসজল। হৃদয়ের গহীনে গভীর বেদনা! প্রতিটি হৃদয়ে বেজে উঠছে বিউগলের করুণ সুর। হৃদয় থেকে হৃদয়ে ব্যথা ছড়িয়ে দিয়েছে কোনো এক দূর আলোক থেকে ভেসে আসা বিরহের বাঁশি। করুণ সে বাঁশির সুরে বেদনাবিধুর হয়ে পড়েছে গোটা জাতি। কারণ, এই ভোরে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বাংলাদেশের অপরাজেয়, আপসহীন নেত্রী সাবেক ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চলে গেছেন অসীম শূন্যে, অন্য আলোকে। তার শোকে কেঁদেছে আকাশটাও। এভারকেয়ার হাসপাতালে দীর্ঘ ৩৮ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টায় ইন্তেকাল করেছেন তিনি। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, এই সংবাদটা নিয়ে সবার সামনে দাঁড়াতে হবে ভাবিনি। আমরা এবারও ভেবেছিলাম তিনি আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি আজ ভোর ৬ টায়, গণতন্ত্রের মা, আমাদের অভিভাবক, জাতির অভিভাবক আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
মৃত্যুর সময় খালেদা জিয়ার শয্যাপাশে ছিলেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান এবং প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি।
স্বজনদের মধ্যে ছোট ভাই শামীম এসকান্দার ও তার স্ত্রী, বড় বোন সেলিনা ইসলামসহ পরিবারের অন্য সদস্যরাও শেষ সময়ে হাসপাতালে ছিলেন। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা ছিলেন।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। পাশাপাশি কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাও ছিল তার।
হার্ট ও ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে গত ২৩ নভেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা তদারকি করেন।
এই মাসের শুরুতে চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরবর্তীতে তা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া ‘আপসহীন নেত্রী’ উপাধি পেয়েছিলেন। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে জীবনের পরম সত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন খালেদা জিয়া।
রাজনীতিকদের জীবনে উত্থান-পতন থাকে। মামলা-মোকদ্দমা, গ্রেপ্তার, কারাবাস, নির্যাতন, প্রতিপক্ষের আক্রমণ- এসবও তাদের জীবনে অভাবনীয় নয়। খালেদা জিয়াও চরম পর্যায়ের এমন নির্যাতন সহ্য করেছেন। সহ্য করেছেন স্বামী-সন্তান হারানোর গভীর শোক আর দীর্ঘ রোগযন্ত্রণা।
রাজনৈতিক জীবনে মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছাড়াও প্রতিপক্ষের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ, লাঞ্ছনা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সাল থেকে তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নির্বাচিত নারী সরকারপ্রধান ছিলেন।
১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলায় ইস্কান্দার মজুমদার ও তৈয়বা মজুমদারের ঘরে তার জন্ম। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন তিনি। তার ডাকনাম ছিল ‘পুতুল’। তার বাবা ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে দেশভাগের পর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে চলে আসেন। তাদের আদি বাড়ি ফেনীতে। খালেদা জিয়া দিনাজপুর মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৬০ সালে দিনাজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।
একই বছর তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন এবং ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহ করে যুদ্ধে অংশ নেন। সেসময় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি বাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের পর তিনি মুক্তি পান।
১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর তীব্র নেতৃত্ব সংকটে পড়ে বিএনপি। ঠিক সেই সময় কখনো রাজনীতিতে না আসা খালেদা জিয়া দলটিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি সহসভাপতি হন। একই বছরের ১০ মে তিনি দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে তিনি পুনরায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে সাতদলীয় জোট গঠন করে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি।
এরশাদ সরকার তার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং বহুবার আটক করে। তবুও খালেদা জিয়া নির্ভীকভাবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যান, হয়ে ওঠেন ‘আপসহীন নেত্রী’।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে বিজয়ী হয়। খালেদা জিয়া টানা তিনটি জাতীয় নির্বাচনে পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতেই জয়ী হন।
১৯৯১ সালের ২০ মার্চ খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি নতুন শাসনব্যবস্থার অধীনে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। তবে বড় সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করেছিল।
বিরোধী দলগুলোর দাবির মুখে তৎকালীন সরকার সংসদ নির্বাচন তদারকির জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সাংবিধানিক সংশোধনী আনে।
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা চালুর পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এরপর ১২ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয় আওয়ামী লীগের কাছে।
১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় খালেদা জিয়া জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয়ী হয়।
২০০১ সালের ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে খালেদা জিয়াসহ বহু রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার হন।
পরে কারামুক্ত হন খালেদা জিয়া। ২০০৯ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও তার দল জয়ী হতে পারেনি।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় ১৯৯১ সালের পর এই প্রথম দলটি সংসদের বাইরে থাকে।
জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় উদ্যেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঢাকার বিশেষ আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওই বছরের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। পরে তিনি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও দণ্ডিত হন।
করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয়। শর্ত ছিল—তিনি গুলশানের বাসায় থাকবেন এবং দেশ ত্যাগ করবেন না।
চলতি বছরের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে দণ্ডমুক্ত ঘোষণা করলে বিএনপি চেয়ারপারসন সম্পূর্ণ মুক্তি পান।


খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দায় আছে শেখ হাসিনার : আসিফ নজরুল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক  

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পেছনে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের অবশ্যই দায় রয়েছে বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘একটা প্রহসনমূলক রায়ে উনাকে জেলখানায় পাঠিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে যে মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, এটা যে প্রহসনের একটা রায় ছিল। এটা একটা সম্পূর্ণ সাজানো রায় ছিল। এটা আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল এবং রিভিউ এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত। সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিলের ডিভিশনের রায়ের মধ্যে বারবার বলা হয়েছে যে বেগম জিয়াকে যেই মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ রংলি (ভুলভাবে), উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, জিঘাংসা-প্রসূতভাবে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। আসিফ নজরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলখানায় বিভিন্ন সময় যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল, না হলে হয়তো এত তাড়াতাড়ি তাকে আমরা হারাতাম না।

এসময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তার প্রয়াত স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হবে বলেও জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

আসিফ নজরুল জানান, আজ যে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি খালেদা জিয়ার পরিবার ও তার দলের পক্ষে উপদেষ্টা পরিষদকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার জোহরের নামাজের পর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মানিক মিয়া এভিনিউতে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

আইন উপদেষ্টা জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে সবসময় খোঁজখবর রেখেছেন, যা দরকার ছিল। তাকে যদি আবার বিদেশে পাঠানোর মত অবস্থা থাকতো, অবশ্যই আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হতো। প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে এ জিনিসগুলা খোঁজখবর নিয়েছেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, বেগম খালেদা জিয়াকে বছরখানেক বা বছর দুয়েক আগে যদি আমরা পেতাম, হয়তো আমাদের পক্ষে কিছু একটা করা সম্ভব ছিল। আল্লাহর ইচ্ছা, উনি চলে গেছেন। তবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে উনিও সারাদেশের মানুষের সম্মান, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নিয়েছেন।’


গৃহবধূ থেকে দৃঢ়চেতা নেত্রী, রাজনীতির শিখরে জাতির ঐক্যের প্রতীক

চরম সংকটেও ছিলেন অটল
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক  

খালেদা জিয়া ছিলেন গৃহবধূ। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর সাত মাস পর এক বিশেষ পরিস্থিতিতে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের কম সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন। প্রায় ৪৩ বছর তার রাজনৈতিক জীবন।

গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে খালেদা জিয়া ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন এক দৃঢ়চেতা, সাহসী নেত্রী। তিনি বিপদে-দুর্যোগে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন। আর শেষ জীবনে তিনি হয়ে ওঠেন জাতির ঐক্যের প্রতীক।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০ মে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে নিহত হন। নেতৃত্বের ষড়যন্ত্রে বিএনপি পড়ে যায় অথই সাগরে। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বিএনপিতে যোগ দেন। খালেদা জিয়া প্রথমে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আর শেষে চেয়ারপারসন হন। তখন তার বয়স ছিল চল্লিশের নিচে। শুরু হয় নতুন নেতৃত্বে বিএনপির পথচলা।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, মূলত স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলন খালেদা জিয়াকে একটি শক্ত ভিত্তি ও ব্যক্তিত্ব গড়ে দেয়। পরবর্তী সময় তিনি ধীরে ধীরে রাজনীতিতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে সমর্থ হন।

আন্দোলন-সংগ্রাম, রাষ্ট্র পরিচালনাসহ খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, শেষ জীবনে এসে তিনি দল-মতনির্বিশেষে সবার কাছে সম্মান ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ৭ আগস্ট রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির এক সমাবেশে খালেদা জিয়া একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও বক্তব্য দেন। গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আসুন, ধ্বংস নয়, প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়; ভালোবাসা, শান্তি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি।’

গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে এভাবে জায়গা করে নেওয়া, মুসলিমপ্রধান একটি দেশে একজন নারীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টিকে একটু ভিন্ন চোখে মূল্যায়ন করেছেন প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। ‘বেগম খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’ বইয়ের ভূমিকায় মাহফুজ উল্লাহ লিখেছেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) এমন একটি সময়ে স্বকীয় রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেছেন, যখন পুরুষশাসিত সমাজের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল।’

ঐক্য ও সমঝোতা: দীর্ঘদিন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখে এসেছেন এমন পর্যবেক্ষকেরা বলছেন,তার চরিত্রের বড় একটি দিক হলো তিনি পরমতসহিষ্ণু ছিলেন। নিজে কম বলতেন, শুনতেন বেশি। তার চরিত্রের আরেকটি দিক ছিল বৃহত্তর স্বার্থে অন্য রাজনৈতিক দল-মতের সঙ্গে সমঝোতার প্রচেষ্টা। দেখা গেছে, রাষ্ট্রক্ষমতার চর্চায় তিনি দলীয় আদর্শের বিপরীতে গিয়ে কারও কারও সঙ্গে ‘সন্ধি’ করেছেন। সমঝোতা করে একসঙ্গে চলেছেন রাষ্ট্রক্ষমতার ভেতরে কিংবা বাইরে থেকে।

আন্দোলন-সংগ্রামে খালেদা জিয়াকে আপসহীন ভূমিকায় দেখা গেলেও রাজনীতিতে ‘সংলাপ-সমঝোতার’ চিন্তাকে তিনি কখনো একেবারে নাকচ করে দেননি। প্রয়োজনে তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারতেন। যেমন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করার ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়। এর সঙ্গে প্রথমে একমত ছিল না বিএনপি। পরবর্তী সময় জনদাবি মেনে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করেন।

খালেদা জিয়ার সামগ্রিক রাজনৈতিক জীবন বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক ও গবেষকেরা বলছেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণ, পরবর্তী সময় জেল-জুলুম-নিগ্রহ, শেষ সময়ে অভূতপূর্ব রাষ্ট্রীয় সম্মান—সব মিলিয়ে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের এক শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন, যা তাকে ‘ঐক্যের প্রতীক’ করে তুলেছিল। আর রাষ্ট্র পরিচালনায় গণতন্ত্র বিনির্মাণ, জনপ্রত্যাশা পূরণ, প্রশাসনে সফল নেতৃত্ব, দুর্যোগ-দুর্বিপাক, বৈদেশিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল অতুলনীয়।

বিশ্লেষকদের মতে, খালেদা জিয়া ছিলেন একজন পরিস্থিতিবোদ্ধা নেতা। তিনি প্রয়োজন হলে নিজের ক্ষমতাকেও সীমাবদ্ধ করতে প্রস্তুত ছিলেন।

‘বেগম খালেদা জিয়া: জীবন ও সংগ্রাম’ গ্রন্থের ভূমিকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লিখেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন ব্যক্তি নন, নিজ কর্মগুণে নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। হয়ে উঠেছেন জীবন–ইতিহাস। তবে বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে গবেষণালব্ধ আলোচনা কমই হয়েছে।’

জোটের রাজনীতি: বাংলাদেশে জোটভিত্তিক গণআন্দোলনের রাজনীতির যে প্রচলন, তার সফল পরিণতি হয় ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে। তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮–দলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বে ৭–দলীয় জোট ও বাম ঘরানার দলগুলোর সমন্বয়ে ৫–দলীয় জোট রাজপথে সমন্বিত ভূমিকা পালন করে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ৭–দলীয় ঐক্যজোটের নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসে।’ ৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি হেরে যায়। ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

১৯৯৯ সালে জাতীয় পার্টির তৎকালীন চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, জামায়াতের তৎকালীন আমির গোলাম আযম ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদিস আজিজুল হককে নিয়ে ৪–দলীয় জোট গঠন করেন খালেদা জিয়া। একপর্যায়ে এই জোট থেকে এরশাদের জাতীয় পার্টি বের হয়ে যায়। তবে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একাংশ জোটে থেকে যায়। এই জোট ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়। কিন্তু এই জোট সরকারের বিদায় সুখকর ছিল না।

নানা ঘটনাপ্রবাহে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এরপর ২০০৮ সালে নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। বিএনপি বিরোধী দলে বসে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি আবার জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করে। একপর্যায়ে ৪–দলীয় জোট ১৮-দলীয় জোট হয়। পরে তা ২০–দলীয় জোটে রূপ নেয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হওয়ার আগপর্যন্ত খালেদা জিয়া এই জোটের নেতৃত্ব দেন।

দেশের স্বার্থে সমমনা বা বিপরীত মতাদর্শের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার ব্যাপারে কার্পণ্য ছিল না খালেদা জিয়ার। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ৭–দলীয়, ৪–দলীয়, পরবর্তী সময় ২০–দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন, যা দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হয়ে আছে।

এ বিষয়ে লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘খালেদা’ গ্রন্থে লিখেছেন, গৃহবধূ থেকে তিনি (খালেদা জিয়া) পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছিলেন। রাষ্ট্রক্ষমতার চর্চায় তিনি আদর্শের বিপরীতে গিয়ে কারও কারও সঙ্গে সন্ধি করেছেন।

১৯৯৪-৯৫ সালে নির্বাচনকালীন সংকটের সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন খালেদা জিয়া। ২০০৬ সালে নির্বাচন কমিশন সংস্কার নিয়ে প্রধান দুই দলের বৈঠক হয়। ২০১৩ সালে জাতীয় সংকটের সময় জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় দুই দলের সংলাপে বিএনপি অংশ নেয়। যদিও এসব প্রচেষ্টা কাঙ্ক্ষিত ফল দেয়নি। তবু এগুলো খালেদা জিয়ার ‘সমঝোতামুখী’ রাজনৈতিক অবস্থানের প্রমাণ বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন।

চরম সংকটেও অটল: খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের ওপর বড় ঝড় আসে ২০০৭ সালের এক-এগারোর পর। সে সময় সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে। খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমান, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় বিএনপিকে ভাঙার, খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার নানা চেষ্টা করা হয়।

এমন একটি পটভূমিতে ২০০৭ সালে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কানাঘুষা শোনা যাচ্ছিল যে খালেদা জিয়া দেশত্যাগ করবেন, সৌদি আরবে যাবেন। এর আগে ৮ মার্চ তারেক রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি মুষড়ে পড়েন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে গা ঢাকা দেন। ২২ এপ্রিল রাতে বিএনপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার আ স ম হান্নান শাহ সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানিয়ে দেন যে খালেদা জিয়া সৌদি আরবে যাবে না। তিনি যেকোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত, তবু দেশ ছাড়বেন না।

পরে খালেদা জিয়া নিজেই বলেন, ‘দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নাই, এটাই (বাংলাদেশ) আমার ঠিকানা। এই দেশ, এই দেশের মাটি-মানুষই আমার সবকিছু। কাজেই আমি দেশের বাইরে যাব না।’

সেনা–সমর্থিত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ একটি দুর্নীতির মামলায় তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন আরাফাত রহমান কোকো। একই দিন গ্রেপ্তার করা হয় খালেদা জিয়াকে। পরে তারেক রহমানকে লন্ডনে আর আরাফাত রহমানকে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকাকালে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করা হলেও তিনি রাজি হননি।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। ওই বাড়িতে তিনি ২৮ বছর ধরে বসবাস করছিলেন। খালেদা জিয়া ওঠেন গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য়। ২০১৩ সালে তুমুল আন্দোলন দানা বাঁধলে এই বাসার সামনে রাস্তার ওপরে ব্যারিকেড দিয়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর ২০১৫ সালে আবার আন্দোলন দানা বাঁধলে খালেদা জিয়াকে গুলশানের কার্যালয়ের সামনের সড়কে ১৪টি ট্রাক ও ভ্যান দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল।

এই ঘটনাগুলো খালেদা জিয়ার জীবনে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। এর মধ্যে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান মারা যান। তখন খালেদা জিয়া তার গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ।

তবু চরম সংকটের সময়েও খালেদা জিয়া আস্থা রেখেছিলেন দেশবাসীর ওপর। ওই সময় ঘটনাগুলোর উল্লেখ করে খালেদা জিয়া এক আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছিলেন আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কম বয়সে স্বামী (জিয়াউর রহমান) হারিয়েছি। কারাগারে থাকতে আমি আমার মাকে [তৈয়বা (মজুমদার) বেগম] হারিয়েছি। অফিসে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় আমি একটি সন্তান (আরাফাত রহমান) হারিয়েছি। আরেকটি সন্তান (তারেক রহমান) নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে দূরদেশে এখনো চিকিৎসাধীন। আমার এই স্বজনহীন জীবনেও দেশবাসীই আমার স্বজন।’

লেখক মহিউদ্দিন আহমদ তার বইয়ে লিখেছেন, ‘হাসিনা সরকারের আমলে খালেদা জিয়া অনেকবার জনবিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য হয়েছেন। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তিনি ধৈর্য হারাননি। নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল তার। এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

রাজনৈতিক কর্মীরা বলছেন, খালেদা জিয়ার চরিত্রের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো তার আপসহীন ভাবমূর্তি। তাকে কখনো আপস করতে দেখা যায়নি। রাজনীতিতে তিনি একটি মানদণ্ড তৈরি করে দিয়েছেন।

লেখক মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘খালেদা’ গ্রন্থে খালেদা জিয়া সম্পর্কে লিখেছেন, ‘একজনের রাজনীতির সাফল্য প্রধানত নির্ভর করে ওই ব্যক্তি তার চূড়ায় উঠতে পেরেছেন কি না। কিন্তু ক্ষমতার কাঠামোর চূড়ায় তিনি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। এটা তার গুণ বলা যেতে পারে। রূপ আর গুণের এই রাজজোটক পৃথিবীতে খুব কম আছে। রূপ কথায় আছে অনেক।...তিনি অবশ্যই একজন সফল রাজনীতিবিদ।’


খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন জয়শঙ্কর ও ইসহাক

আপডেটেড ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৩:১৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় যোগ দিতে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকায় আসছেন ভারত, পাকিস্তান, ভুটান ও নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মালদ্বীপের শিক্ষামন্ত্রী।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়েন পো ডিএন ডুঙ্গেল, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালা নন্দ শর্মা এবং মালদ্বীপের শিক্ষামন্ত্রী ড. ইসমাইল শাফিউ’ ঢাকা আসছেন। তাদের স্বাগত জানাতে সরকারের তরফে পৃথক টিম বিমানবন্দরে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে ও তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের প্রতিনিধি যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।


খালেদা জিয়ার প্রতি সমবেদনা জানাতে শোকবই

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাতে শোকবই খোলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই শোকবই খোলা হয়। এতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা সই করেছেন।

তাদের মধ্যে রয়েছেন- পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, নেদারল্যান্ডসের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বোরিস ভ্যান বোমেল, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ওমানের রাষ্ট্রদূত জামিল হাজি ইসমাইল আল বালুশি এবং ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।

বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় শোকবই খোলা হয়। আজ বুধবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা এবং বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শোকবইয়ে সই করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, বিকেল ৩টা ১৫মিনিটের দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কার্যালয় ত্যাগ করেন। এর কিছুক্ষণ পর সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও ইরানের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা কার্যালয়ে এসে শ্রদ্ধা জানান এবং শোকবইয়ে সই করেন।


খালেদা জিয়াকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। প্রয়াত এই নেত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে আগামীকাল ঢাকায় আসছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

ড. জয়শঙ্করের এই সফর বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের প্রতি ভারতের সম্মান ও স্বীকৃতির একটি বড় বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি সশরীরে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশের এই বর্ষীয়ান নেত্রীর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে অন্তিম শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই এক শোকবার্তায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে খালেদা জিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করেন।

বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে কেবল ভারত নয়, পাকিস্তান থেকেও উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি আসছেন। পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানাজায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়ে চীন, নেপালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, কূটনৈতিক মিশন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শোকবার্তা পাঠিয়ে তাঁদের শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানাচ্ছেন।

আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর এই মহাপ্রয়াণে জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো বাংলাদেশের প্রথম এই নারী প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণকে একটি ঐতিহাসিক যুগের অবসান হিসেবে অভিহিত করেছেন। আগামীকাল বুধবার পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, যেখানে দেশি-বিদেশি অসংখ্য বিশিষ্ট ব্যক্তির সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। মূলত এক আপসহীন নেত্রীর বিদায়ে আজ বিশ্বজুড়েই শ্রদ্ধাবনত পরিবেশ বিরাজ করছে।


বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে ঢাকা আসছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে অংশ নিতে ঢাকা আসছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার। আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিতব্য নামাজে জানাজায় তিনি শরিক হবেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশন সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল সকালে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছাবেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশগ্রহণ করবেন এবং মরহুমার বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সফর শেষে ঐদিনই তাঁর ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

এর আগে আজ সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন ইসহাক দার। তিনি মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।

একই সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফও এক শোকবার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “বেগম জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের অন্যতম কারিগর এবং পাকিস্তানের একজন নিবেদিতপ্রাণ বন্ধু।” শেহবাজ শরীফ তাঁর বার্তায় উল্লেখ করেন যে, এই শোকের মুহূর্তে পাকিস্তানের সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের শোকাতুর মানুষের পাশে রয়েছে।

উল্লেখ্য, লিভার সিরোসিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় দীর্ঘ লড়াই শেষে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ৭৯ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর এই প্রয়াণে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা শোক প্রকাশ করছেন। আগামীকাল বুধবার জোহর নামাজের পর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউতে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই দাফন করা হবে। পাকিস্তানের উচ্চপর্যায়ের এই প্রতিনিধির উপস্থিতি বেগম জিয়ার প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রদ্ধাবোধের এক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।


২০২৫ সালে যে নক্ষত্রদের হারিয়েছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিনোদন ডেস্ক

ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে ২০২৫ সাল বিদায় নিলেও বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য এই বছরটি ছিল গভীর শোক আর হারানোর। বছরজুড়েই দেশ হারিয়েছে বেশ কয়েকজন কিংবদন্তি এবং প্রতিভাবান তারকাকে, যাঁদের দীর্ঘদিনের সাধনা ও সৃষ্টি এ দেশের সাংস্কৃতিক ভিত্তি মজবুত করেছিল। বছরের শুরুতেই চলচ্চিত্র জগত বড় এক ধাক্কা খায় সোনালি যুগের জনপ্রিয় নায়িকা অঞ্জনা রহমানের প্রয়াণে। ৪ জানুয়ারি ভোরে ৩ শতাধিক সিনেমার এই অভিনেত্রী না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তাঁর রেশ কাটতে না কাটতেই ৫ জানুয়ারি বিদায় নেন বরেণ্য অভিনেতা প্রবীর মিত্র, যাঁর চরিত্রাভিনেতা হিসেবে অসামান্য নৈপুণ্য বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থাকবে। এরপর ২৫ মার্চ নিভে যায় সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম বাতিঘর ও ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সন্‌জীদা খাতুনের জীবনপ্রদীপ, যিনি আজীবন রবীন্দ্রসংগীত ও লোকজ সংস্কৃতিকে লালন করেছেন।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে ২ জুলাই চিরবিদায় নেন ‘সাগরের তীর থেকে’ খ্যাত কালজয়ী কণ্ঠশিল্পী জীনাত রেহানা। তাঁর রেশ কাটতে না কাটতেই ২৭ জুলাই আকস্মিক মৃত্যু হয় তরুণ প্রজন্মের প্রিয় সংগীতশিল্পী ও ব্যান্ড ‘ওন্ড’-এর সদস্য এ কে রাতুলের, যিনি ছিলেন কিংবদন্তি চিত্রনায়ক জসীমের সন্তান। সংগীতাঙ্গনে শোকের ছায়া আরও ঘনীভূত হয় ১৩ সেপ্টেম্বর, যখন লোকসংগীতের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী ও একুশে পদকপ্রাপ্ত লালনকন্যা ফরিদা পারভীন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর প্রয়াণ বাংলাদেশের লোকজ সংগীতের ধারায় এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করেছে।

বছরের শেষ ভাগেও হারানোর মিছিল থামেনি। ২৭ নভেম্বর মারা যান জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ফিডব্যাক’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও কিংবদন্তি গিটারিস্ট সেলিম হায়দার। তাঁর সৃষ্টির ঠিক একদিন পরই ২৮ নভেম্বর আধুনিক গানের পরিচিত কণ্ঠস্বর জেনস সুমন আমাদের ছেড়ে চলে যান। ২০২৫ সালের এই বিদায়গুলো কেবল একেকটি জীবনের অবসান নয়, বরং বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের ইতিহাসের একেকটি সোনালি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। এই নক্ষত্ররা শারীরিকভাবে বিদায় নিলেও তাঁদের গান, অভিনয় আর অনন্য সব সৃষ্টি এ দেশের মানুষের হৃদয়ে এবং জাতীয় ইতিহাসে চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে। মূলত তাঁদের দেখানো পথ ধরেই আগামী দিনের সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।


বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে শ্রদ্ধা: বিপিএলের আজকের সব ম্যাচ স্থগিত

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) আজকের নির্ধারিত ম্যাচগুলো স্থগিত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে এক আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়।

বিসিবি জানিয়েছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বর্তমানে সারাদেশে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ সিলেটের মাঠে অনুষ্ঠিতব্য ‘সিলেট টাইটান্স বনাম চট্টগ্রাম রয়্যালস’ এবং ‘ঢাকা ক্যাপিটালস বনাম রংপুর রাইডার্স’–এর মধ্যকার ম্যাচ দুটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থগিত হওয়া এই ম্যাচগুলোর নতুন সূচি পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতা ও লিভার সিরোসিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর থেকে তিনি হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত সংকটময় সময় পার করছিলেন।

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর এই প্রয়াণে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি ক্রীড়া জগতেও এর প্রভাব পড়েছে। বিপিএলের মতো বড় আসরের খেলা স্থগিত রেখে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল ক্রিকেট বোর্ড। বর্তমানে জানাজা ও দাফনের প্রস্তুতির কারণে লিগের পরবর্তী সূচি নিয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।


বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শেখ হাসিনার শোক: ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অপরিসীম’

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন তাঁর দীর্ঘদিনের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা এক বিশেষ শোকবার্তায় বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের প্রশংসা করে বলেছেন, এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার অবদান অপরিসীম। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক পোস্টের মাধ্যমে এই শোকবার্তাটি প্রচার করা হয়।

শোকবার্তায় শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে এবং বিশেষ করে বিএনপির নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর এটিই শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আসা প্রথম কোনো বড় ধরণের আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা। রাজনৈতিক বৈরিতা থাকা সত্ত্বেও দেশের ইতিহাসের এক চরম শোকাবহ ও গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে শেখ হাসিনার এই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক কৌতূহল ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

আবেগঘন এই বার্তায় শেখ হাসিনা আরও বলেন, “আমি তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য শোকাহত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আমি প্রার্থনা করি যেন মহান আল্লাহ তাঁর পরিবার এবং বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীকে এই কঠিন শোক সহ্য করার শক্তি দান করেন।” মূলত দেশের দুই শীর্ষ নেত্রীর দীর্ঘ কয়েক দশকের রেষারেষির অবসান ঘটিয়ে এই মৃত্যু যেন রাজনীতির অঙ্গনে এক ভিন্ন মাত্রার শোকের আবহ তৈরি করেছে।

উল্লেখ্য, লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসসহ নানা বার্ধক্যজনিত সমস্যার সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ৭৯ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর থেকে তিনি হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন। সোমবার দিবাগত রাত ২টার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টার পর সকালে তাঁর চিরবিদায়ের খবরটি নিশ্চিত করেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসেনানী হিসেবে ‘আপসহীন নেত্রী’র খ্যাতি পাওয়া বেগম খালেদা জিয়া টানা ৪১ বছর বিএনপির হাল ধরেছিলেন। তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অন্যতম অনন্য রেকর্ড হলো, তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও কখনো কোনো আসনে পরাজিত হননি। তিনি তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং দুইবার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শত জুলুম ও কারাবরণ সত্ত্বেও দেশ ছেড়ে না যাওয়ার যে অদম্য জেদ তিনি আমৃত্যু বজায় রেখেছিলেন, তা তাঁকে এ দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। তাঁর এই মহাপ্রয়াণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামোর এক শক্তিশালী স্তম্ভের পতন ঘটল।


বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাতিসংঘের গভীর শোক প্রকাশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ঢাকার জাতিসংঘ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক আনুষ্ঠানিক বার্তার মাধ্যমে এই শোক ও সমবেদনা জানানো হয়। বার্তায় জাতিসংঘ উল্লেখ করেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার এই চিরবিদায় একটি অত্যন্ত দুঃখজনক মুহূর্ত। সংস্থাটি তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও নিকটজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ দিন বার্ধক্যজনিত ও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভোগার পর আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এ দেশের মানুষের কাছে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রয়াণে জাতীয় রাজনীতিতে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাঁর অদম্য নেতৃত্ব ও বলিষ্ঠ ভূমিকা বাংলাদেশের ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। জাতিসংঘের এই শোকবার্তা তাঁর বৈশ্বিক গুরুত্ব এবং বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের প্রতি এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিরই বহিঃপ্রকাশ। বর্তমানে দেশজুড়ে এই কিংবদন্তি নেত্রীর বিদায়ে গভীর শোকের ছায়া বিরাজ করছে।


বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গভীর শোক প্রকাশ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বার্তার মাধ্যমে এই শোক জানানো হয়। বার্তায় ইইউ উল্লেখ করেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তারা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।

উল্লেখ্য, আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য এই নেত্রী। গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুসের সংক্রমণ ও তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিডনি ও লিভার জটিলতা ছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের মতো নানা বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।

বেগম খালেদা জিয়ার এই চিরবিদায়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের অবসান ঘটল। তাঁর মৃত্যুতে ইতোমধ্যেই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক দল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শোকবার্তা পাঠাচ্ছে, যার ধারাবাহিকতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও এই বিশেষ বার্তাটি দেওয়া হলো। মূলত বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নারীর ক্ষমতায়নে তাঁর ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি তাদের সমবেদনা প্রকাশ করেছে। বর্তমানে দেশজুড়ে শোকের ছায়া বিরাজ করছে এবং এই কিংবদন্তি নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে প্রস্তুতি চলছে।


জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বেগম জিয়ার জানাজা, দাফন হবে শহীদ জিয়ার পাশেই

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম নামাজে জানাজা আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) জোহর নামাজের পর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা এবং সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউতে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাঁকে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভা শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আইন উপদেষ্টা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার দাফন ও জানাজার যাবতীয় প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের প্রতিটি মিশনে এই বরেণ্য নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শোক বই খোলা হবে। সভার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে বেগম জিয়ার বিভিন্ন স্মৃতিচারণ করেন এবং তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই কিংবদন্তি নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে, লিভার সিরোসিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় দীর্ঘ লড়াই শেষে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রয়াণে জাতীয় রাজনীতিতে একটি দীর্ঘ ও গৌরবময় অধ্যায়ের অবসান ঘটল। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব ও অদম্য মনোবল এ দেশের মানুষের হৃদয়ে তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ পুরো দেশজুড়ে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বর্তমানে তাঁর মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতালে রাখা হয়েছে এবং আগামীকালকের জানাজা সফল করতে বিএনপি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।


banner close