কারিগরি ও অকারিগরি কারণে অনেক সময় ভুতুড়ে বিলের ঘটনা ঘটতে পারে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা বা কোম্পানির মোট গ্রাহক ৪ কোটি ৭১ লাখ। বিদ্যুৎ বিল যাতে যথাযথ হয়, সে বিষয়ে বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
কারিগরি ও অকারিগরি কারণে অনেক সময় ভুতুড়ে বিলের ঘটনা ঘটতে পারে। ভুতুড়ে বা অস্বাভাবিক বিল রোধকল্পে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রিপেইড বা স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে নোয়াখালী-৩ আসনের সরকারদলীয় এমপি মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।
চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে সীমিত লোডশেডিং
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হওয়ায় সীমিত আকারে লোডশেডিং হয়েছে।
তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হলে সাধারণত লোডশেডিং হয়। দেশজুড়ে তীব্র দাবদাহের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হওয়ায় সীমিত আকারে লোডশেডিং হয়েছে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ কাজে প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য লোডশেডিং করা হয়। সরকার শহর ও গ্রাম নির্বিশেষে সমতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে সচেষ্ট রয়েছে। সেচ মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে।
তিনি জানান, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ এবং বকেয়া পাওনা থাকলে নিয়মানুযায়ী বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ভুতুড়ে বিলের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে যাচাইপূর্বক প্রতিকার প্রদান করা হয় এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা
বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাড়ে তিন হাজার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪০০ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছয় হাজার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ৩১৫ কোটি ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির দরকার হবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হয়। ওই সময় সরকারকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হয়। তবে জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যাওয়ার ফলে নভেম্বর ২০১৪ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারকে জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দিতে হয়নি। তবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপিসি ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান দেয়।
সরকার বর্তমানে ডাইনামিক প্রাইসিং ফর্মুলায় জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করায় এ খাতে কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, ভর্তুকির অর্থের মধ্যে ৩১ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৭শ কোটি নগদ ও ২০ হাজার ১৩৩ কোটি বন্ডের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়েছে।
নোয়াখালী-২ আসনের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, অনুমোদনপ্রাপ্ত এলপিজি প্ল্যানের সংখ্যা ৭৮টি। এর মধ্যে প্রাথমিক অনুমোদনপ্রাপ্ত ৫২টি, চূড়ান্ত অনুমোদনপ্রাপ্ত ২৪টি ও বিপিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ২টি।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. সোহরাব উদ্দিনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালের জানুয়ারি হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশে চাহিদার চেয়েও স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। তবে কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তীকালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে পরিপূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। এ ছাড়া অত্যধিক গরম ও দেশের কোথাও কোথাও দাবদাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
বর্তমানে নবায়নযোগ্য উৎস হতে ১৩১২ দশমিক ৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে উল্লেখ করে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, নবায়নযোগ্য উৎস হতে চলমান ও প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পগুলোতে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫৪৭ দশমিক ২২ মেগাওয়াট। ২০৩০ সালের মধ্যে এগুলো জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি বিভিন্ন ধরনের কূপ খননের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর সফল বাস্তবায়নে গড়ে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ১১ টির খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। যার মাধ্যমে দৈনিক ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে। দৈনিক ৩৩ মিলিয়ন ঘটফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
এই সংসদ সদস্যের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে আবিষ্কৃত ২৯টি গ্যাস ক্ষেত্রের মধ্যে ২০টি উৎপাদনরত ৫টি পরিত্যক্ত এবং ৪টির উৎপাদন কার্যক্রম চলমান।
আওয়ামী লীগের সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা প্রায় দৈনিক ৩৮০০-৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার বিপরীতে দেশীয় উৎপাদন ও এলএনজি আমদানি করে ৩০০০-৩১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে এবং বিদ্যুৎ ও সার খাতে অগ্রাধিকার বিবেচনায় গ্যাস সংযোগ চালু রয়েছে।
ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ/রুগ্ণ শিল্পের সংখ্যা ৩৯৭টি। এর মধ্যে বিসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন রুগ্ণ/বন্ধ শিল্প ৩৮২টি, বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ কারখানা ৫টি, বিএসএসআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন স্থগিত চিনিকল ৬টি, বিএসইসির নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ কারখানা ৪টি।
এমপি আব্দুল কাদের আজাদের এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জানান, বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করাসহ বিনিয়োগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সময়কাল পর্যন্ত সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সাফল্যও এসেছে।
তিনি জানান, বিসিকের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচটি শিল্পনগরী, তিনটি শিল্পপার্ক ও দুটি অন্যসহ মোট ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ৩ হাজার ৮১১টি শিল্প প্লটে সম্ভাব্য ৩ হাজার ৫৬৫টি শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরএডিপিতে সবুজ পাতাভুক্ত ১১টি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদিত ও বাস্তবায়িত হলে দেশে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে এবং বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
মন্ত্রী জানান, বিনিয়োগে উৎসাহিতকরণের লক্ষ্যে বিসিক কর্তৃক ১২২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৬৭টি শিল্প প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বিসিক উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে হোসিয়ারি শিল্পনগরী, পঞ্চবটী, নারায়ণগঞ্জ; জামদানি শিল্পনগরী, তারাবো, নারায়ণগঞ্জ; চামড়া শিল্পনগরী, সাভার, ঢাকা; এপিআই শিল্পপার্ক, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ এবং বিসিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী, মুন্সিগঞ্জ শীর্ষক বিশেষায়িত শিল্পনগরী বা শিল্পপার্ক বাস্তবায়িত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পটি ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমিতে ঢাকার সাভারে বাস্তবায়িত হয়েছে। কমন ইনফ্লুয়েন্স প্ল্যান্ট (সিইটিপি) সুবিধাসহ পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরীতে হাজারীবাগ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ট্যানারি কারখানাসমূহকে স্থানান্তর করা হয়েছে। শিল্পনগরীর ২০৫টি শিল্পপ্লটে ১৬২টি ট্যানারি কারখানা স্থাপিত হয়েছে।
স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বিসিকের দেশব্যাপী বাস্তবায়িত ৮২টি শিল্পনগরীর মোট ১২ হাজার ৩৬০টি শিল্প প্লটের মধ্যে ১১ হাজার ২৬২টি শিল্প প্লটে বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ কর্তৃক ৬ হাজার ১৯৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। এসব শিল্পনগরীর কারখানাসমূহে গত জুন, ২০২৩ পর্যন্ত বিনিয়োগের হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা প্রায়।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপতৎপরতা ও এআইয়ের অপব্যবহার ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে প্রস্তুত ইসি।
শনিবার সকালে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস এর কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঐতিহাসিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি রেকর্ডসংখ্যক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে থাকা ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে শনিবার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বেদিতে ফুল অর্পণ করেন, দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন এবং পরে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি গাছ রোপণ করেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ড্রুকএয়ারের একটি ফ্লাইটে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে স্বাগত জানান। এরপর ভিআইপি লাউঞ্জে দুই নেতা সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী তোবগে শুক্রবারের ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খোঁজখবর নেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
বৈঠকের পর তাকে তোপধ্বনি এবং গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। বিমানবন্দর আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে রওনা হন।
আজ দুপরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য উপদেষ্টাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বিকেল ৩টার দিকে তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে অংশ নেবেন। সন্ধ্যায় তার সম্মানে একটি নৈশভোজের আয়োজনও করা হবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন হতে চলেছে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন এবারের নির্বাচনে অংশীদার হতে রেকর্ড সংখ্যক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক অংশ নেবেন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পুণ:সূচনা হবে।
শনিবার সকালে রাজধানীর হোটেল লেকশোর হাইটসে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তারিখ ধরে প্রায় ৬০ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এ ব্যাপারে দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট না হলেও ইসির হিসাবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হতে পারে তফসিল ঘোষণা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের (ডাকসু) স্বতন্ত্র সদস্য উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়ার ময়মনসিংহের বাসার গেইটে হাতবোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে নগরের বিভিন্ন স্থানে পৃথক অভিযানে ময়মনসিংহ জেলা ডিবি ও কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন– কেওয়াটখালী এলাকার মো. মাসুদ রানা (৪৫), আকুয়া বোর্ডঘর এলাকার মো. আরিফ (৩০), মো. বিপুল (২১) এবং আকুয়া ওয়্যারলেস গেইট এলাকার মো. রাজন (১৯)।
গত বুধবার রাত ৩টার দিকে ময়মনসিংহ নগরের ঢোলাদিয়া এলাকায় রাফিয়ার পরিবারের বাড়ির গেইটে ককটেল নিক্ষেপ করা হয় এবং অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালানো হয়।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে রাফিয়ার ভাই খন্দকার জুলকারনাইন কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘চারজনকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে।’
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৭ এবং এটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার নিকটবর্তী নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলা।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নরসিংদী ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হওয়ার পিছনে যৌক্তিক কারণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরির অধ্যাপক মাইকেল স্টেকলার ও লিওনার্দো সিবারের গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলের মধ্যে একটি। দেশটি তিনটি টেকটোনিক প্লেটের—ভারতীয়, ইউরেশিয়ান ও বার্মিজ—মিলনস্থলে অবস্থিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, শুক্রবারের ভূমিকম্পটি ভারতের প্লেটের গভীরে রিভার্স ফল্টিংয়ের কারণে হয়েছে। ভূতত্ত্বে রিভার্স ফল্ট হলো এক ধরনের ডিপ-স্লিপ ফল্ট, যেখানে ভূপৃষ্ঠের চাপের কারণে দুটি শিলা ব্লক স্থানচ্যুত হয়ে একটির উপর আরেকটি উঠে আসে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, দেশে অন্তত ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ফল্ট লাইন রয়েছে। এর মধ্যে নোয়াখালী থেকে সিলেট পর্যন্ত ফল্ট লাইনটি শুক্রবারের ভূমিকম্পের কারণ হিসেবে অনুমান করা হচ্ছে। এর আগে, গত মার্চে মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প ভারতের এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের স্ট্রাইক-স্লিপ ফল্টিংয়ের কারণে হয়েছিল।
ভূমিকম্পে ভেঙে ও হেলে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনা ও ভবন। এতে সারাদেশে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫৫০-এর বেশি ব্যক্তি, যারা বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৫৫০-এর বেশি আহত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৬৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে এবং গুরুতর আহত ১৬ জনকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে। ভুটানের নেতাকে বহনকারী ড্রুক এয়ারের একটি বিমান সকাল ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (এইচএসআইএ) অবতরণ করে। পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাকে স্বাগত জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং তা নিশ্চিত করেছেন।
দুই নেতা বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন। যেখানে প্রধানমন্ত্রী টোবগে শুক্রবারের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির বিষয়ে খোঁজখবর নেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
সাক্ষাতের পর, টোবগেকে একটি অস্থায়ী অভিবাদন মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে তাকে ১৯ বার তোপধ্বনির সালাম এবং গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
বিমানবন্দরে অনুষ্ঠানের পর, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে যাবেন। তিনি স্মৃতিস্তম্ভের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন এবং দর্শনার্থীদের বইতে স্বাক্ষর করবেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা বিকেলে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। এরপর বিকেল ৩টার দিকে তেজগাঁও এলাকায় তার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী টোবগে সন্ধ্যায় তার সম্মানে আয়োজিত একটি সরকারি ভোজসভায়ও যোগ দেবেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, দেশের খাদ্য-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও প্রথাগত উৎপাদন ব্যবস্থাকে রক্ষা করা জরুরি। বৈচিত্র্যকে জাতীয় শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘যত বৈচিত্র্য থাকে, দেশ তত সুন্দর হয়।’ এসময় তিনি পলিথিন শপিং ব্যাগ বিষয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর পার্বত্য বৌদ্ধসংঘ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, জনবল সীমিত থাকলেও পরিবেশ মন্ত্রণালয় অবৈধ ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে ধারাবাহিকভাবে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করছে, বিশেষ করে বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলাগুলোতে। এসব অভিযানে বাধা, সড়ক অবরোধ ও হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
‘রাষ্ট্র এখন পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে বাধা দিচ্ছে- এটাই আশার দিক’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পাহাড় কাটা, ঝাউবাগান ধ্বংস ও প্রাকৃতিক বন উজাড়কে ঝুঁকি বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, এগুলো কোনোভাবেই ঐতিহ্য রক্ষার উপায় হতে পারে না।
কৃষকদের স্বার্থে বিভাগীয় পর্যায়ে বিপণন কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।
পরিবেশ, সংস্কৃতিবিষয়ক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন হলে তিনি যথাযথ সুপারিশ করবেন বলেও জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘের আহ্বায়ক মেজর (অব.) তপন বিকাশ চাকমা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন- নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন।
পরে পরিবেশ উপদেষ্টা মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন এবং অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এদিন অনুভূত ভূমিকম্প বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। পাহাড় ও জলাশয় রক্ষা করতে হবে।
‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস–২০২৫’ উপলক্ষে শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন তিন বাহিনীর প্রধানগণ।
প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, শুক্রবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
সাক্ষাতের আগে অধ্যাপক ইউনূস ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিচারপ্রার্থীর অধিকার নিশ্চিতে স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সাথে মামলা নিষ্পত্তিতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রশাসন, নির্বাহী প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ একে অপরের পরিপূরক। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বিচারপ্রার্থী মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে। গত বৃহস্পতিবার বিকালে আদালতের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উদ্যোগে আয়োজিত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, পারস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে ও বিদ্যমান সমস্যাসমূহ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করলে কাজের মূল্যায়ন হয় এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল, মো. আবু বকর সিদ্দিক, মোহাম্মদ মোস্তফা ও নুসরাত জাহান জিনিয়া।
তা ছাড়া বিশেষ পুলিশ সুপার, সিআইডি, চট্টগ্রাম মো. সালাউদ্দিন, পুলিশ সুপার, পিবিআিই (চট্টগ্রম মেট্রো) মো. রহুল কবির খান, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিবি উত্তর) সিএমপি চট্টগ্রাম মো. মোস্তফা কামাল, সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কেশব চক্রবর্তী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিনিধি সাকিব শাহরিয়ার, চমেক পরিচালকের প্রতিনিধি জুনায়েদ আহমেদ, ফরেনসিক মেডিসিনের ডাক্তার খালেদ হাসান, লেফটেন্যান্ট আবরার তাজওয়ার, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পূর্ব জোন, সিনিয়র জেল সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, র্যাবের প্রতিনিধি, শিল্প পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ প্রতিনিধি, নৌপুলিশ প্রতিনিধি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য অংশীজনসহ উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. মফিজুল হক ভূইয়া, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নেজাম উদ্দিন। অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার সভায় জানান যে গত ১০ মাসে ৫৩২ জন আসামিকে প্রবেশন প্রদান করা হয়েছে। মামলার আলামত নিলামের মাধ্যমে ০১ কোটি ১৫ লাখ টাকা রাস্ট্রীয় কোষাগারে জমা প্রদান করা হয়েছে।
দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ভূমিকম্পে আহতদের যথাযথ চিকিৎসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পৌঁছে ভূমিকম্পে আহত চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানান, “সব হাসপাতালে বলেছি, ভূমিকম্পে আহতদের চিকিৎসায় যেন কোনো ত্রুটি না হয়। সব সরকারি হাসপাতালে নির্দেশনা দেওয়া আছে।”
তিনি আরও বলেন, “যে মাত্রায় ভূমিকম্প হয়েছে, হয়তো কাছাকাছি থাকার কারণে এই মাত্রা বেশি মনে হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় মাত্রা ছিল ৫.৭ রিখটার স্কেলে। তবে আহতের সংখ্যা সেই তুলনায় বেশি হয়েছে। ঢাকার যেসব ছাত্র আহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই আতঙ্কে দুই-তিন তলা থেকে লাফ দিয়েছেন। আমরা সবাই মিলে সুষ্ঠু চিকিৎসার চেষ্টা করছি।”
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এছাড়া, আরও একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে; তার বাবাও আহত এবং তাঁর অবস্থা গুরুতর। রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে তিনজন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন ঢাকা মেডিকেলের শিক্ষার্থী।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে আহতদের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গাজীপুরের কয়েকজন আহত এবং অনেকে প্যানিকের কারণে হাসপাতালে এসেছেন। “ডাক্তাররা তাদের চিকিৎসা দিয়েছেন। শারীরিকভাবে আহতদেরও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে,” বলেন তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুপুর পৌনে তিনটা পর্যন্ত ঢামেকে ৪১ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ ছয়জনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার রাজধানীর সেনানিবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পারস্পরিক সৌজন্য বিনিময় করেছেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং তাঁর সুস্থতা কামনা করেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি প্রধান উপদেষ্টার সহধর্মিণী আফরোজী ইউনূসের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন ও তাঁর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
সৌজন্য বিনিময়ের সময় খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্রবধূ সৈয়দা শর্মিলা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শুক্রবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। একটি নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনে আমি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।”
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, যুদ্ধাহত এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করেন। একইসঙ্গে ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের শহীদ, আহত এবং অংশগ্রহণকারী জনগণের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের রণক্ষেত্রে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম। তখন ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করায় এই দিনটি মুক্তিযুদ্ধের একটি গৌরবময় মাইলফলক হিসেবে পালন করা হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা ঘটে ২৫ মার্চের কালরাত থেকেই।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মুক্তিকামী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর বীর সদস্যরা জীবনবাজি রেখে, পরিবারের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের সাহসেই জনসাধারণ প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেশকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। যুদ্ধ সুসংগঠিত করার জন্য গঠিত বাংলাদেশ ফোর্সেস ১১টি সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক ও গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।
তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তিন বাহিনীর সম্মিলিত অভিযানের ধারাবাহিকতাই ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত করে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনী বরাবরই জনগণের পাশে থেকেছে। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান–পরবর্তী পুনর্গঠন কাজেও বাহিনী মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক নেতৃত্বের প্রতি অনুগত থেকে বাহিনীর পেশাগত দক্ষতা ও দেশপ্রেম ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় জাতি হলেও যেকোনো আগ্রাসী বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। সে লক্ষ্যে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, উন্নত প্রশিক্ষণ ও যুগোপযোগী প্রযুক্তি সংযোজনের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, গত ৩৭ বছরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারীরা ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশন সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ১০টি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তাঁদের পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জিং এলাকায় দায়িত্ব পালনের জন্য শান্তিরক্ষীদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ি ধসে এবং অন্যান্য দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
ইতোমধ্যে এক শিশুসহ কমপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গাজীপুরের কারখানা শ্রমিক ও ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকায় একশর কাছাকাছি মানুষ আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হয়েছে।
এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে নির্দেশ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ বিবরণ সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনগণ ধৈর্য ও সাহস নিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন।