কারিগরি ও অকারিগরি কারণে অনেক সময় ভুতুড়ে বিলের ঘটনা ঘটতে পারে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা বা কোম্পানির মোট গ্রাহক ৪ কোটি ৭১ লাখ। বিদ্যুৎ বিল যাতে যথাযথ হয়, সে বিষয়ে বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
কারিগরি ও অকারিগরি কারণে অনেক সময় ভুতুড়ে বিলের ঘটনা ঘটতে পারে। ভুতুড়ে বা অস্বাভাবিক বিল রোধকল্পে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রিপেইড বা স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে নোয়াখালী-৩ আসনের সরকারদলীয় এমপি মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।
চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে সীমিত লোডশেডিং
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হওয়ায় সীমিত আকারে লোডশেডিং হয়েছে।
তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হলে সাধারণত লোডশেডিং হয়। দেশজুড়ে তীব্র দাবদাহের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হওয়ায় সীমিত আকারে লোডশেডিং হয়েছে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ কাজে প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য লোডশেডিং করা হয়। সরকার শহর ও গ্রাম নির্বিশেষে সমতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে সচেষ্ট রয়েছে। সেচ মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে।
তিনি জানান, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ এবং বকেয়া পাওনা থাকলে নিয়মানুযায়ী বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ভুতুড়ে বিলের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে যাচাইপূর্বক প্রতিকার প্রদান করা হয় এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা
বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাড়ে তিন হাজার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪০০ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছয় হাজার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ৩১৫ কোটি ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির দরকার হবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হয়। ওই সময় সরকারকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হয়। তবে জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যাওয়ার ফলে নভেম্বর ২০১৪ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারকে জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দিতে হয়নি। তবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপিসি ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান দেয়।
সরকার বর্তমানে ডাইনামিক প্রাইসিং ফর্মুলায় জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করায় এ খাতে কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, ভর্তুকির অর্থের মধ্যে ৩১ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৭শ কোটি নগদ ও ২০ হাজার ১৩৩ কোটি বন্ডের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়েছে।
নোয়াখালী-২ আসনের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, অনুমোদনপ্রাপ্ত এলপিজি প্ল্যানের সংখ্যা ৭৮টি। এর মধ্যে প্রাথমিক অনুমোদনপ্রাপ্ত ৫২টি, চূড়ান্ত অনুমোদনপ্রাপ্ত ২৪টি ও বিপিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ২টি।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. সোহরাব উদ্দিনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালের জানুয়ারি হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশে চাহিদার চেয়েও স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। তবে কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তীকালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে পরিপূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। এ ছাড়া অত্যধিক গরম ও দেশের কোথাও কোথাও দাবদাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
বর্তমানে নবায়নযোগ্য উৎস হতে ১৩১২ দশমিক ৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে উল্লেখ করে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, নবায়নযোগ্য উৎস হতে চলমান ও প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পগুলোতে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫৪৭ দশমিক ২২ মেগাওয়াট। ২০৩০ সালের মধ্যে এগুলো জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি বিভিন্ন ধরনের কূপ খননের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর সফল বাস্তবায়নে গড়ে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ১১ টির খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। যার মাধ্যমে দৈনিক ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে। দৈনিক ৩৩ মিলিয়ন ঘটফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
এই সংসদ সদস্যের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে আবিষ্কৃত ২৯টি গ্যাস ক্ষেত্রের মধ্যে ২০টি উৎপাদনরত ৫টি পরিত্যক্ত এবং ৪টির উৎপাদন কার্যক্রম চলমান।
আওয়ামী লীগের সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা প্রায় দৈনিক ৩৮০০-৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার বিপরীতে দেশীয় উৎপাদন ও এলএনজি আমদানি করে ৩০০০-৩১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে এবং বিদ্যুৎ ও সার খাতে অগ্রাধিকার বিবেচনায় গ্যাস সংযোগ চালু রয়েছে।
ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ/রুগ্ণ শিল্পের সংখ্যা ৩৯৭টি। এর মধ্যে বিসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন রুগ্ণ/বন্ধ শিল্প ৩৮২টি, বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ কারখানা ৫টি, বিএসএসআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন স্থগিত চিনিকল ৬টি, বিএসইসির নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ কারখানা ৪টি।
এমপি আব্দুল কাদের আজাদের এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জানান, বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করাসহ বিনিয়োগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সময়কাল পর্যন্ত সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সাফল্যও এসেছে।
তিনি জানান, বিসিকের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচটি শিল্পনগরী, তিনটি শিল্পপার্ক ও দুটি অন্যসহ মোট ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ৩ হাজার ৮১১টি শিল্প প্লটে সম্ভাব্য ৩ হাজার ৫৬৫টি শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরএডিপিতে সবুজ পাতাভুক্ত ১১টি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদিত ও বাস্তবায়িত হলে দেশে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে এবং বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
মন্ত্রী জানান, বিনিয়োগে উৎসাহিতকরণের লক্ষ্যে বিসিক কর্তৃক ১২২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৬৭টি শিল্প প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বিসিক উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে হোসিয়ারি শিল্পনগরী, পঞ্চবটী, নারায়ণগঞ্জ; জামদানি শিল্পনগরী, তারাবো, নারায়ণগঞ্জ; চামড়া শিল্পনগরী, সাভার, ঢাকা; এপিআই শিল্পপার্ক, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ এবং বিসিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী, মুন্সিগঞ্জ শীর্ষক বিশেষায়িত শিল্পনগরী বা শিল্পপার্ক বাস্তবায়িত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পটি ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমিতে ঢাকার সাভারে বাস্তবায়িত হয়েছে। কমন ইনফ্লুয়েন্স প্ল্যান্ট (সিইটিপি) সুবিধাসহ পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরীতে হাজারীবাগ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ট্যানারি কারখানাসমূহকে স্থানান্তর করা হয়েছে। শিল্পনগরীর ২০৫টি শিল্পপ্লটে ১৬২টি ট্যানারি কারখানা স্থাপিত হয়েছে।
স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বিসিকের দেশব্যাপী বাস্তবায়িত ৮২টি শিল্পনগরীর মোট ১২ হাজার ৩৬০টি শিল্প প্লটের মধ্যে ১১ হাজার ২৬২টি শিল্প প্লটে বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ কর্তৃক ৬ হাজার ১৯৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। এসব শিল্পনগরীর কারখানাসমূহে গত জুন, ২০২৩ পর্যন্ত বিনিয়োগের হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা প্রায়।
আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
গতকাল শনিবার বিকেলে বরিশাল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এর আগে, তিনি বরিশাল বিভাগ এবং জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সভা করেন।
এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগের সকল কর্মকাণ্ড সরকার নিষিদ্ধ করেছে, তাই বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে, যদি নির্বাচনের আগে বিচার সম্পন্ন হয় তখন সেটা দেখা যাবে।
এনসিপির শাপলা প্রতীকের দাবির প্রশ্নে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের তালিকায় না থাকায় শাপলা প্রতীক দেওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, কোনো গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা প্রভাবিত হবে না নির্বাচন কমিশন। সভায় বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার, ছয় জেলার জেলা প্রশাসকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের হেফাজতে ইসলামের শহীদদের নামে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হবে। যাতে দেশের মানুষ তাদের আজীবন স্মরণ করে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে হেফাজত ইসলামের মহাসমাবেশ ও মোদিবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ২০১৩ সালে হেফাজত ইসলামের আন্দোলনেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সেদিন সরকার নিরপরাধ ও নিরীহ হেফাজত কর্মীদের হত্যা করে ভেবেছিল, দেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে। জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণমানুষের আন্দোলনকে স্তব্ধ করে হত্যা করা যাবে। কিন্তু এই অনুষ্ঠান প্রমাণ করে, জুলুম ও নির্যাতন কখনো স্থায়ী হয় না।
তিনি আরও বলেন, হেফাজত ইসলামের সেই আন্দোলনের সূত্র থেকেই ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের জন্ম। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিবাদের নেত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
উপদেষ্টা বলেন, ২০১৩ সালে নবম শ্রেণিতে পড়তাম। টেলিভিশনে দেখেছি লাখো জনতা কীভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু সেদিনের প্রকৃত তথ্য জাতিকে জানানো হয়নি।
তিনি আরও জানান, হেফাজত ইসলামের শহীদদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ শাপলা চত্বরে তৈরি করা হবে। এতে এই আন্দোলন আগামী প্রজন্মের জন্য প্রেরণা যোগাবে।
অনুষ্ঠানে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহীদ ৫৮ জন এবং ২০২১ সালের মার্চে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শহীদ ১৯ জনের পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা করে অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজত কর্মীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে তৎকালীন সরকার মনে করেছিল জুলুম-নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন দমন করা যাবে।
ওই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের একটি তালিকা প্রস্তুত করার হেফাজত ইসলামের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সেদিন শাপলা চত্বরে সাত হাজারের বেশি পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা হেফাজত কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। প্রায় দেড় লাখ গুলি খরচ করা হয়েছিল। তারপরও ইতিহাস থেকে সেই ঘটনা মুছে ফেলা যায়নি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহিদী। আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমীর মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, মহাসচিব মাওলানা মাজেদুর রহমান, জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, খেলাফতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হক, গণধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর প্রমুখ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, লালনের গান শুধুই সুর নয়-তা অত্যন্ত উচ্চমাত্রার সংগীত, যার মধ্যে রয়েছে গভীর দার্শনিক, রাজনৈতিক এবং সর্বোপরি মানবিক মূল্য। তার গানে যে মানবতার কথা বলা হয়েছে, তা আজকের পৃথিবীতেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
উপদেষ্টা শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ঐতিহাসিক ছেঁউড়িয়ায় অবস্থিত লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতীয় পর্যায়ে লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আর ব্যবস্থাপনায় রয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এবারই প্রথমবারের মতো ফকির লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস দলীয় প্রভাবমুক্ত এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, সরকার মনে করে, লালনের দর্শন এবং অবদান শুধু জাতীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখার নয়। ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক, লালনের সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ থাকবে না — কারণ লালন কোনো দলীয় আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেন না, তিনি মানবতার প্রতীক।
ভিডিও বার্তায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, লালন সাঁই আমাদের দেশের অন্যতম বড় দার্শনিক ও ভাবুক। তার জীবনদর্শন ও আদর্শ আমাদের আত্মস্থ করা প্রয়োজন। এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ে লালন তিরোধান দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান উদযাপিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মফিদুর রহমান। আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান লেখক ও গবেষক লালন বক্তৃতার মুখ্য আলোচক প্রফেসর গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, বিশিষ্ট কবি, লেখক ও চিন্তক এবং লালন বিশেষজ্ঞ ফরহাদ মজহার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আল মামুন। এসময় স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন।
তিনদিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানমালায় দেশব্যাপী লালন অনুসারী, সাধক, গবেষক এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন। লালন সাঁইয়ের জীবন দর্শন, মানবতা ও সাম্যের বাণীকে জাতীয়ভাবে স্মরণ ও উদযাপনের উদ্দেশে প্রতিবছরের মতো এবারও এ আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে।
গত ১৬ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড SRO No-404-Law/2025 এর মাধ্যমে বাংলা ভাষায় প্রণীত আয়কর আইন, ২০২৩ এর Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে।
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ বাতিল করে ২০২৩ সালে বাংলা আয়কর আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করার পর হতেই বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ সরকারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে আয়কর আইনের Authentic English Text প্রকাশের দাবি জানাচ্ছিলেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text না থাকায় বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ আইনের সঠিক ব্যাখ্যা ও অনুশীলনের বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে থাকতেন এবং বিভিন্ন আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতেন।
আয়কর আইনের Authentic English Text সরকারী গেজেটে প্রকাশ হবার ফলে দেশী-বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ আয়কর আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ব্যাখ্যা পাবেন বিধায় করদাতাগণের আস্থা অধিকতর বৃদ্ধি পাবে এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্ব্যর্থবোধকতা দূর করে স্বচ্ছতা ও সঠিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কাস্টমস আইন, ২০২৩ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর Authentic English Text সরকারি গেজেটে প্রকাশের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অচিরেই এই দুটি আইনের Authentic English Text সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীগনের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন পদ্মা সেতুতে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ক্যাশলেস, টোল কালেক্টর ব্যতীত ননস্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ETC) সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের টোল পরিশোধ প্রক্রিয়া আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতায় এসেছে।
বর্তমানে বিকাশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের TAP অ্যাপ এবং মিডল্যান্ড ব্যাংকের অ্যাপ এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর টোল পরিশোধ করা যাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা বিকাশ অ্যাপে গিয়ে “টোল” অপশনের অধীনে “মোটরযান রেজিস্ট্রেশন করুন” এ প্রবেশ করে গাড়ির নম্বর ও চেসিস নম্বরের শেষ ৪ (চার) ডিজিট প্রদান করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। সফল রেজিস্ট্রেশনের পর ফিরতি এসএমএসে একটি Ekpass ID প্রেরণ করা হবে।
এই Ekpass ID ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাপের “Pay Bill” অপশনের “D-Toll Top-Up” সেবার মাধ্যমে রিচার্জ করতে হবে। এরপর পদ্মা সেতুর মাওয়া টোল প্লাজার নিকটস্থ রেজিস্ট্রেশন বুথে বিআরটিএ অনুমোদিত RFID ট্যাগ প্রথমবারের মতো যাচাই করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। একবার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে, যানবাহন কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে ETC লেন ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে পারাপার হতে পারবে।
১৮ অক্টোবর সেতু বিভাগের সচিব এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আবদুর রউফ পদ্মা সেতুর ইটিসি বুথ পরিদর্শন করেন এবং ইটিসি সেবা ব্যবহার করে পদ্মা সেতু পারাপার করেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ট্রাস্ট ব্যাংকের TAP অ্যাপের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর ETC সিস্টেমের লাইভ পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে এই সেবার পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ETC সিস্টেমের মাধ্যমে মোট ১,৮১৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে এবং মোট ৩৪,৯১,৭০০ টাকা টোল আদায় সম্পন্ন হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মহোদয়ের বিশেষ নির্দেশনা ও দিকনির্দেশনায় পদ্মা সেতুতে এই ETC সিস্টেম বাস্তবায়িত হয়েছে। এটি দেশের টোল ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা সময়, জ্বালানি ও মানবসম্পদের অপচয় হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
ভবিষ্যতে আরও বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাপ এই সেবার আওতায় যুক্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর a2i (এটুআই) কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং নতুন ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে সংযুক্তির কাজ অব্যাহত রয়েছে।
এই টোল কালেক্টর ব্যতীত নন স্টপ ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমের মাধ্যমে পদ্মা সেতু ব্যবহারকারীরা দ্রুত, নিরাপদ ও স্বচ্ছভাবে টোল পরিশোধ করতে পারবেন—যা বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে চেক বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ আজ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে এবং ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহিদ ৫৮ টি পরিবার এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহিদ ১৯টি পরিবারের সদস্যদের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ লক্ষ টাকা করে, মোট ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, "শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। ঐতিহাসিক শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের আজকের এই স্বীকৃতি তারই প্রমাণ।" শহীদ পরিবারদেরকে স্বীকৃতি দিতে পেরে সরকার গর্বিত উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন ইতিহাস থেকে যেনো কেউ ঐতিহাসিক শাপলা চত্বরের শহীদদের নাম মুছতে না পারে, এজন্য শাপলা চত্বরেই খোদাই করে লেখা হবে শহীদদের নাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন,"শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহিদদের আর্থিক সহায়তা প্রদান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ।" এই উদ্যোগের মাধ্যমে দুই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালের মোদি বিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকারী শহিদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, "স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এই মহতী উদ্যোগে সারা বাংলার আলেম সমাজ সম্মানিত হয়েছে। "
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জনাব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান জনাব মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি জনাব নুরুল হক নুর, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা সাজিদুর রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক জনাব মোঃ শাহজাহান মিয়া।
‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্য ও সংস্কারের পথে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তিনি আরও বলেন, এটি ২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে মিলার লেখেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এই দলিল মৌলিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গড়ে ওঠা ব্যাপক ঐকমত্যের প্রতিফলন।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ২০২৬ সালের নির্বাচনের পথে দেশটি ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই প্রমাণ।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ২৫টি রাজনৈতিক দল যোগ দেয়।
অনুষ্ঠানে মিলারের উপস্থিতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও শাসনব্যবস্থা সংস্কারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগীতা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত বহন করে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা বাড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের পক্ষে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এ লক্ষ্যে ইইউ কারিগরি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। এসব উদ্যোগ গণতান্ত্রিক চর্চা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি ইইউর প্রতিশ্রুতির অংশ। সূত্র: বাসস
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজের একটি অংশে আগুন লেগেছে। তবে ফ্লাইট ওঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে।
আজ শনিবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ২টা ৩৪ মিনিটের দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের দিকে রওনা হয় পাঁচটি ইউনিট। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।
কোনো সংবাদপত্র (অনলাইন ভার্সনসহ), নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা ওয়েবসাইটে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত কনটেন্ট প্রচারিত হয় তবে বিনা নোটিশে সেই সাইট ব্লক করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় শনিবার (১৮ অক্টোবর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জুয়া, বেটিং ও পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন ও প্রমোশনাল কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে যা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর পরিপন্থী এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সরকার একাধিক প্রজ্ঞাপন ও প্রেস রিলিজ প্রকাশ করেছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে যদি কোনো সংবাদপত্র (অনলাইন ভার্সনসহ), নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা ওয়েবসাইটে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত কনটেন্ট প্রচারিত হয় তবে বিনা নোটিশে সেই সাইট ব্লক করে দেওয়া হবে।
এতে আরও বলা হয়, সরকারের সতর্কতার পর ইতোমধ্যে ক্রিকইনফো, জনকণ্ঠ, ঢাকা পোস্টসহ আরও বেশ কয়েকটি পত্রিকা তাদের অ্যাডসেন্স পরিবর্তন করেছে, এজন্য তাদের ধন্যবাদ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার দেশের সাইবার স্পেসকে নিরাপদ, নৈতিক ও প্রজন্ম বান্ধব রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে এ বিষয়ে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এবং বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে কাজ করছে।
‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্য ও সংস্কারের পথে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
তিনি আরও বলেন, এটি ২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে মিলার লেখেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এই দলিল মৌলিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গড়ে ওঠা ব্যাপক ঐকমত্যের প্রতিফলন।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ২০২৬ সালের নির্বাচনের পথে দেশটি ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তারই প্রমাণ।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ মোট ২৫টি রাজনৈতিক দল যোগ দেয়।
অনুষ্ঠানে মিলারের উপস্থিতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও শাসনব্যবস্থা সংস্কারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগীতা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত বহন করে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা বাড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের পক্ষে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এ লক্ষ্যে ইইউ কারিগরি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছে। এসব উদ্যোগ গণতান্ত্রিক চর্চা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি ইইউর প্রতিশ্রুতির অংশ।
অর্থ সংকটে ১৫ শতাংশ বাজেট হ্রাসের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জাতিসংঘ ৫টি শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ১৩১৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছেন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা।
গত ১৪ অক্টোবর জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স কার্যালয়ের (ওএমএ) ভারপ্রাপ্ত সামরিক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল শেরিল পিয়ার্স বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহার সম্পর্কিত চিঠি প্রেরণ করেন। চিঠিটি বাংলাদেশের সামরিক উপদেষ্টাকে এবং জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনকে পাঠানো হয়। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন ওএমএ’র চিফ অব স্টাফ ক্যাপ্টেন লনি ফিল্ডস জুনিয়র, এবং খসড়া প্রস্তুত করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানবির আলম, যিনি কার্যালয়ের মিলিটারি পিস অপারেশন সাপোর্ট শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মহাসচিবের নির্দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চলমান আর্থিক সংকটের কারণে ১৫ শতাংশ বাজেট হ্রাস কার্যকর করা হচ্ছে। এর ফলে ইউনিফর্মধারী সদস্যদের বরাদ্দ অর্থ কমানো হবে এবং মাঠপর্যায়ে শান্তিরক্ষীর সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পাবে।
প্রত্যাহারের পরিসংখ্যান
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অংশগ্রহণকারী পাঁচটি মিশন থেকে প্রত্যাহার করা হবে। সংখ্যাগত বিবরণ নিম্নরূপ:
ইউএনমিস (দক্ষিণ সুদান): ৬১৭ জন
মিনুসকা (মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র): ৩৪১ জন
ইউনিসফা (সুদানের আবেই অঞ্চল): ২৬৮ জন
মনুসকো (কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র): ৭৯ জন
মিনুরসো (পশ্চিম সাহারা): ৮ জন
চিঠিতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের লজিস্টিক বিভাগ, ইউনিফর্মড ক্যাপাবিলিটিজ সাপোর্ট বিভাগ এবং মিশন সাপোর্ট বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫ জন পর্যবেক্ষককে ইরাক-ইরান মিলিটারি অবজারভার গ্রুপ মিশনে পাঠিয়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ শুরু করে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ যোগ দেয়। ১৯৯৩ সালে নৌ ও বিমানবাহিনীও মিশনে যুক্ত হয়।
এ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রায় ৪৩টি অঞ্চলে ৬৩টি শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্ন করেছে। এতে ১,৭৮,৭৪৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বের ১০টি অঞ্চলে ৫,৬১৯ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশ পুলিশের একমাত্র অবশিষ্ট কন্টিনজেন্ট কঙ্গো থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১৮০ সদস্যের এই কন্টিনজেন্টে ৭০ জন নারী পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা আগামী নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরে আসবেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে, যা আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধির পথে জাতিকে এগিয়ে নেবে এবং গত ১৬ বছরের নৃশংসতার অবসান ঘটাবে।
তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের নতুন জন্মের দিন। এই স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই আমরা নতুন বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করছি।’১৭ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ–সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরাও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা যে ঐক্যের সুর বাজালাম, সেই সুর নিয়েই নির্বাচনে যাব। যারা স্বাক্ষর করলেন, তারা প্রয়োজনে আবার বসেন। ঠিক করেন কীভাবে নির্বাচন সুন্দর করা যায়। যেনতেন নির্বাচন করে কোনও লাভ নেই।
রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মানুষ যেন মনে রাখে এই সনদে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করেছে। পুলিশ এসে কেন ধাক্কাধাক্কি করবে। নিজেদের নির্বাচন নিজেরা করবো। কারও এসে আমাদের সোজা করতে হবে না, দেখিয়ে দিতে হবে না, ধাক্কাধাক্কি করতে হবে না।
সনদে স্বাক্ষর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজকের দিনটি বিশেষ। আজ সমস্ত জাতি, রাজনৈতিক নেতা একত্রিত হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। এরকম ঘটনা আমরা চিন্তাও করতে পারিনি। যখন ঐকমত্য কমিশন গঠন করলাম, তখন মনে হয়েছিল হয়তো দুই-একটি বিষয়ে একমত করতে পারব। তাই ভয়ে ভয়ে এটা শুরু হয়েছিল। আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তিনি যদি বুঝিয়ে কিছু করতে পারেন। অবাক হয়ে দেখলাম, সব রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হলো। সবাই আলোচনা করলেন। এটা না দেখলে বিশ্বাস হতো না।
ঐকমত্য কমিশন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সনদের মধ্য দিয়ে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় এলাম। আমরা এক বর্বর জগতে ছিলাম। যেখানে কোনও আইন-কানুন ছিল না। এখন আমরা সভ্যতায় এলাম। এমন সভ্যতা গড়ে তুলবো যে মানুষ ঈর্ষার চোখে দেখবে। আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত চমৎকার। শুধু মানুষ নিয়ে সমাজ গঠন করতে হবে।
জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্মরণ করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই কমিশন ও সনদ করার সুযোগ যারা দিয়েছে আজ তাদের স্মরণ করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের কথা মনে রাখতে হবে। যারা জীবন দিয়েছেন, আহত হয়ে বেঁচে আছেন তাদের কাছে জাতি চির কৃতজ্ঞ।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আজকে এই দিনটি যে পেলাম, এটা মহান দিন। এটার কথা চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে। এমন একটি দিন, সেটা শুধু জাতির জন্য না, সারা পৃথিবীর জন্য একটা বড় রকমের উদাহরণ হয়ে থাকবে। বহু জায়গায়, যেটা পাঠ্যপুস্তকে থাকবে, সেটার ক্লাসরুমে আলোচনা হবে। রাজনৈতিকদের মধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা হবে বিভিন্ন দেশে। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক, তারা কী বলল, আমরা কী চাই। তারা সেটা পারে কি না, সেটা চেষ্টা করে দেখবে—তাদের দেশে এটা সম্ভব কি না। যেই উদাহরণ আমাদের দেশের রাজনৈতিকবৃন্দ সৃষ্টি করেছেন, সেটা দেশের জন্য তো বটেই, সারা পৃথিবীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যে বৃহৎ জনগোষ্ঠী হিসেবে তরুণদের সম্ভাবনা, সমুদ্র বন্দরের উপযুক্ত ব্যবহারের প্রসঙ্গও উঠে আসে। তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের অংশ। একটি নিয়মের মধ্যে চললে এই সম্পদের ব্যবহার করতে পারব। যদি গভীর সমুদ্র বন্দর করে দেই তাহলে দুনিয়ার অনেক জাহাজ আমাদের বন্দরে ভিড়তে পারবে। আমাদের জাহাজ সিঙ্গাপুরে আটকে থাকবে না। এটি একটি বিরাট সুযোগ।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, অন্য দেশের জেলেরা এসে বঙ্গোপসাগরের মাছ নিয়ে যায়। আমরা হা করে তাকিয়ে থাকি। কক্সবাজার, মাতারবাড়ি ও মহেশখালী মিলিয়ে যদি একযোগে বন্দর উন্নত করি, তাহলে পুরো এলাকা নতুন সিঙ্গাপুরে পরিণত হবে। সকল দেশের মানুষ এখানে আসবে। আমরা নেপাল, ভূটান ও সেভেন-সিস্টার্সের সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারবো এসব বন্দরের কারণে।
এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক স্রোত, কিন্তু মোহনা একটি। সেটি হলো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। সেই স্বপ্ন, প্রত্যাশার স্মারক যতটুকু অর্জিত হয়েছে- জুলাই জাতীয় সনদ সেটির প্রথম পদক্ষেপ।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, এই অগ্রসরমানতায় বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের ভূমিকা আছে। প্রত্যাশা থাকবে রাজনৈতিক দলগুলো মত ও পথের পার্থক্য থাকা স্বত্ত্বেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
রাজনৈতিক দল ও শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়েছেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে বিএনপি, জামায়াত, খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ মোট ২৫টি দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠান মঞ্চে দলীয় প্রতিনিধিদের পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতার পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম মঞ্চে উপস্থিত হয়ে এই সনদের প্রতি সমর্থন জানান।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাসদ (মার্কসবাদী) আগেই এই সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দল ও জোটের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন:
১। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি): মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
২। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী: কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এবং সেক্রেটারী জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
৩। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
৪। গণসংহতি আন্দোলন: প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।
৫। নাগরিক ঐক্য: সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এবং সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার।
৬। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) : সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি মিসেস তানিয়া রব।
৭। গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) : সভাপতি নুরুল হক নুর এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খাঁন।
৮। খেলাফত মজলিস: আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ এবং মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।
৯। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস: সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ এবং মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
১০। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) : মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামূল বশির।
১১। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন: প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম এবং মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন।
১২। আমার বাংলাদেশ পাটি (এবি পার্টি) : চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
১৩। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) : চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এবং মহাসচিব মোমিনুল আমিন।
১৪। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি: সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী।
১৫। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট: জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান।
১৬। ১২ দলীয় জোট: জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপি’র চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম।
১৭। গণফোরাম: জ্যেষ্ঠ এডভোকেট ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান।
১৮। জাকের পাটি: ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শহীদুল ইসলাম ভুইয়া এবং গাজীপুর জেলা ছাত্রফ্রন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান শেখ।
১৯। জাতীয় গণফ্রন্ট: কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস।
২০। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি: সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী এবং মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার।
২১। বাংলাদেশ লেবার পার্টি: চেয়্যারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম।
২২। ভাসানী জনশক্তি পার্টি: চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) এবং মহাসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম)।
২৩। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ: সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী এবং মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
২৪। ইসলামী ঐক্যজোট: চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের এবং মহাসচিব মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী।
২৫। আমজনতার দল: সভাপতি কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান (অব.) এবং সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান।
ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
আজ শুক্রবার বিকেল ৫টায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ স্বাক্ষর করেন তাঁরা।
এর আগে বিকেল চারটা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত হয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।
সূত্র: বাসস