বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
১৬ পৌষ ১৪৩২

‘কারিগরি-অকারিগরি কারণে ঘটতে পারে ভুতুড়ে বিলের ঘটনা’

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ফাইল ছবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ২০ জুন, ২০২৪ ২২:০৬

কারিগরি ও অকারিগরি কারণে অনেক সময় ভুতুড়ে বিলের ঘটনা ঘটতে পারে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা বা কোম্পানির মোট গ্রাহক ৪ কোটি ৭১ লাখ। বিদ্যুৎ বিল যাতে যথাযথ হয়, সে বিষয়ে বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

কারিগরি ও অকারিগরি কারণে অনেক সময় ভুতুড়ে বিলের ঘটনা ঘটতে পারে। ভুতুড়ে বা অস্বাভাবিক বিল রোধকল্পে অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রিপেইড বা স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে নোয়াখালী-৩ আসনের সরকারদলীয় এমপি মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।

চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে সীমিত লোডশেডিং

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হওয়ায় সীমিত আকারে লোডশেডিং হয়েছে।

তিনি বলেন, চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হলে সাধারণত লোডশেডিং হয়। দেশজুড়ে তীব্র দাবদাহের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হওয়ায় সীমিত আকারে লোডশেডিং হয়েছে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ কাজে প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য লোডশেডিং করা হয়। সরকার শহর ও গ্রাম নির্বিশেষে সমতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে সচেষ্ট রয়েছে। সেচ মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে।

তিনি জানান, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ এবং বকেয়া পাওনা থাকলে নিয়মানুযায়ী বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ভুতুড়ে বিলের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে যাচাইপূর্বক প্রতিকার প্রদান করা হয় এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা

বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাড়ে তিন হাজার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪০০ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছয় হাজার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ৩১৫ কোটি ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির দরকার হবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।

প্রতিমন্ত্রী জানান, ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হয়। ওই সময় সরকারকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হয়। তবে জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যাওয়ার ফলে নভেম্বর ২০১৪ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারকে জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দিতে হয়নি। তবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপিসি ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান দেয়।

সরকার বর্তমানে ডাইনামিক প্রাইসিং ফর্মুলায় জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করায় এ খাতে কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, ভর্তুকির অর্থের মধ্যে ৩১ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৭শ কোটি নগদ ও ২০ হাজার ১৩৩ কোটি বন্ডের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়েছে।

নোয়াখালী-২ আসনের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, অনুমোদনপ্রাপ্ত এলপিজি প্ল্যানের সংখ্যা ৭৮টি। এর মধ্যে প্রাথমিক অনুমোদনপ্রাপ্ত ৫২টি, চূড়ান্ত অনুমোদনপ্রাপ্ত ২৪টি ও বিপিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ২টি।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. সোহরাব উদ্দিনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালের জানুয়ারি হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশে চাহিদার চেয়েও স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। তবে কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তীকালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে পরিপূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। এ ছাড়া অত্যধিক গরম ও দেশের কোথাও কোথাও দাবদাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

বর্তমানে নবায়নযোগ্য উৎস হতে ১৩১২ দশমিক ৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে উল্লেখ করে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, নবায়নযোগ্য উৎস হতে চলমান ও প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পগুলোতে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫৪৭ দশমিক ২২ মেগাওয়াট। ২০৩০ সালের মধ্যে এগুলো জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি বিভিন্ন ধরনের কূপ খননের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর সফল বাস্তবায়নে গড়ে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ১১ টির খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। যার মাধ্যমে দৈনিক ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে। দৈনিক ৩৩ মিলিয়ন ঘটফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

এই সংসদ সদস্যের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে আবিষ্কৃত ২৯টি গ্যাস ক্ষেত্রের মধ্যে ২০টি উৎপাদনরত ৫টি পরিত্যক্ত এবং ৪টির উৎপাদন কার্যক্রম চলমান।

আওয়ামী লীগের সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা প্রায় দৈনিক ৩৮০০-৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার বিপরীতে দেশীয় উৎপাদন ও এলএনজি আমদানি করে ৩০০০-৩১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে এবং বিদ্যুৎ ও সার খাতে অগ্রাধিকার বিবেচনায় গ্যাস সংযোগ চালু রয়েছে।

ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ/রুগ্ণ শিল্পের সংখ্যা ৩৯৭টি। এর মধ্যে বিসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন রুগ্ণ/বন্ধ শিল্প ৩৮২টি, বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ কারখানা ৫টি, বিএসএসআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন স্থগিত চিনিকল ৬টি, বিএসইসির নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ কারখানা ৪টি।

এমপি আব্দুল কাদের আজাদের এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জানান, বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করাসহ বিনিয়োগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সময়কাল পর্যন্ত সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সাফল্যও এসেছে।

তিনি জানান, বিসিকের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচটি শিল্পনগরী, তিনটি শিল্পপার্ক ও দুটি অন্যসহ মোট ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ৩ হাজার ৮১১টি শিল্প প্লটে সম্ভাব্য ৩ হাজার ৫৬৫টি শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরএডিপিতে সবুজ পাতাভুক্ত ১১টি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদিত ও বাস্তবায়িত হলে দেশে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে এবং বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

মন্ত্রী জানান, বিনিয়োগে উৎসাহিতকরণের লক্ষ্যে বিসিক কর্তৃক ১২২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৬৭টি শিল্প প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বিসিক উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে হোসিয়ারি শিল্পনগরী, পঞ্চবটী, নারায়ণগঞ্জ; জামদানি শিল্পনগরী, তারাবো, নারায়ণগঞ্জ; চামড়া শিল্পনগরী, সাভার, ঢাকা; এপিআই শিল্পপার্ক, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ এবং বিসিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী, মুন্সিগঞ্জ শীর্ষক বিশেষায়িত শিল্পনগরী বা শিল্পপার্ক বাস্তবায়িত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পটি ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমিতে ঢাকার সাভারে বাস্তবায়িত হয়েছে। কমন ইনফ্লুয়েন্স প্ল্যান্ট (সিইটিপি) সুবিধাসহ পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরীতে হাজারীবাগ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ট্যানারি কারখানাসমূহকে স্থানান্তর করা হয়েছে। শিল্পনগরীর ২০৫টি শিল্পপ্লটে ১৬২টি ট্যানারি কারখানা স্থাপিত হয়েছে।

স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বিসিকের দেশব্যাপী বাস্তবায়িত ৮২টি শিল্পনগরীর মোট ১২ হাজার ৩৬০টি শিল্প প্লটের মধ্যে ১১ হাজার ২৬২টি শিল্প প্লটে বেসরকারি উদ্যোক্তাগণ কর্তৃক ৬ হাজার ১৯৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। এসব শিল্পনগরীর কারখানাসমূহে গত জুন, ২০২৩ পর্যন্ত বিনিয়োগের হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা প্রায়।


ঢাকায় পাকিস্তানের স্পিকার ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এসে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকায় এক বিরল ও তাৎপর্যপূর্ণ সাক্ষাতে মিলিত হয়েছেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম জিও টিভির বরাতে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় এই দুই শীর্ষ নেতার দেখা হয়। সাক্ষাতকালে তাঁরা একে অপরের সাথে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে করমর্দন করেন এবং সংক্ষিপ্ত কুশল বিনিময় করেন। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের মাঝে দুই প্রতিবেশী দেশের এমন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে আজ রাজধানী জুড়ে এক গভীর শোকাতুর পরিবেশ বিরাজ করছে। ৮০ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো এই বরেণ্য নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা ভারত ও পাকিস্তানের এই দুই প্রতিনিধির অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর নেতৃত্বের গুরুত্বকেই পুনরায় ফুটিয়ে তুলেছে। জানাজা ও দাফন প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে পুরো ঢাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি শোকের প্রতীক হিসেবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। জয়শঙ্কর ও সাদিক ছাড়াও আরও অনেক দেশের প্রতিনিধিরা এই ঐতিহাসিক শোকাবহ অনুষ্ঠানে শরিক হতে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের স্পিকারের এই আকস্মিক কুশল বিনিময় বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে কারণ ২০২৫ সালের মে মাসে দুই দেশের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত তীব্র সামরিক সংঘাত সংঘটিত হয়েছিল। ওই সংঘাতের পর এই প্রথম নেতৃত্ব পর্যায়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে এমন কোনো সরাসরি ও প্রকাশ্যে সৌজন্যমূলক মোলাকাত ঘটল। বেগম খালেদা জিয়ার চিরবিদায়ের লগ্নটি যেন এক মুহূর্তের জন্য হলেও দুই বৈরী দেশের প্রতিনিধিদের একই কাতারে নিয়ে এল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এক শোকাবহ প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তানের এই কূটনৈতিক শিষ্টাচার আগামীর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক ও তাৎপর্যপূর্ণ সংকেত হতে পারে। মূলত এক মহান নেত্রীর বিদায়বেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় আজ দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এক অনন্য মিলনমেলা পরিলক্ষিত হয়েছে।


আইন ও নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এবং তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় আসা বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে এই বিশেষ সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান আগত বিদেশি অতিথিদের স্বাগত জানান এবং তাঁদের সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় মিলিত হন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে, উপদেষ্টাদ্বয় সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালা নন্দ শর্মা এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডি. এন. ধুঙ্গেলের সঙ্গে আলাদাভাবে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। শোকের এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে এবং বরেণ্য এই নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার জন্য উপদেষ্টারা সকল বিদেশি অতিথির প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টারা উল্লেখ করেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে আন্তর্জাতিক মহলের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ তাঁর মহানুভবতা ও নেতৃত্বের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতারই বহিঃপ্রকাশ। বৈঠকে বিদেশি অতিথিরাও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাঁদের সমবেদনা জানান এবং মরহুমার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। রাষ্ট্রীয় এই শোকাবহ আবহে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এই উচ্চপর্যায়ের সৌজন্য সাক্ষাৎটি কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়বেলাকে মর্যাদাপূর্ণ করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর এমন সংহতি প্রদর্শনকে উপদেষ্টারা বিশেষ গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করেছেন। মূলত এক কিংবদন্তি নেত্রীর চিরবিদায়বেলাকে কেন্দ্র করে আজ ঢাকায় দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এক মিলনমেলা পরিলক্ষিত হয়েছে।


খালেদা জিয়ার আদর্শ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেবে: জয়শঙ্কর

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর আজ এক তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যে আশা প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শ এবং মূল্যবোধ আগামী দিনে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে একটি শক্তিশালী দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে। বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎ শেষে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি এই মন্তব্য করেন। জয়শঙ্কর তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন যে, দুই দেশের অংশীদারত্বকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে বেগম জিয়ার জীবনদর্শন ও মূল্যবোধ আগামীর পথ দেখাবে।

এই সাক্ষাতের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে একটি বিশেষ ব্যক্তিগত চিঠি এবং ভারত সরকারের আনুষ্ঠানিক শোকবার্তা তারেক রহমানের হাতে তুলে দেন। তিনি ভারত সরকার ও সেদেশের জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ভারতের এই উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করাকে বিশ্লেষকরা অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

বৈঠক পরবর্তী এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, প্রতিবেশী দেশ ভারত বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে যে শোকবার্তা পাঠিয়েছে, সেখানে তাঁকে ‘গণতন্ত্রের জননী’ এবং ‘সাহস ও সংগ্রামের এক অনন্য প্রতীক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ভারত সরকারের শোকবার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে খালেদা জিয়ার আজীবনের আপসহীন ভূমিকার বিশেষ প্রশংসা করা হয়েছে বলে দলটি নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় সশরীরে অংশ নিতে এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি বিশেষ বিমানে ঢাকা পৌঁছান ড. এস জয়শঙ্কর। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি সরাসরি তারেক রহমানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন এবং পরবর্তীতে ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মরহুমার জানাজায় শরিক হয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়ে ভারতের এই জোরালো সহমর্মিতা ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার রাজনৈতিক মহলে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মূলত একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তিতে দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার বার্তাই দিলেন ভারতের এই শীর্ষ কূটনীতিক।


মা হারালেন দক্ষিণ ভারতের সুপারস্টার মোহনলাল

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিনোদন ডেস্ক

দক্ষিণী চলচ্চিত্রের প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা মোহনলালের মা শান্তাকুমারী আর নেই। গত মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) কোচির এলামাক্কারায় অভিনেতার নিজস্ব বাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত ও মস্তিষ্কজনিত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। পেশাগত জীবনে অত্যন্ত সফল শান্তাকুমারী কেরালা সরকারের আইন সচিব হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

এই মহীয়সী নারীর প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো দক্ষিণী চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রিয় অভিনেতার শোকাতুর সময়ে সমবেদনা জানাতে এবং শান্তাকুমারী দেবীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এলামাক্কারার বাড়িতে ভিড় করেন মোহনলালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, চলচ্চিত্র জগতের সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। মূল নিবাস পাঠানামথিট্টা জেলার এলান্থুর গ্রামে হলেও জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি তিরুবনন্তপুরমের ‘হিল ভিউ’ বাসভবনে কাটিয়েছেন। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) তিরুবনন্তপুরমে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। মূলত এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবন আর সফল মাতৃত্বের ইতি টেনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি।


খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দাফন আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে। শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সহযাত্রী ও স্বামী স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। দাফনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে এখন মরহুমার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং শেষ সময়ের ধর্মীয় মোনাজাত ও শ্রদ্ধা নিবেদন চলছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতির এক বর্ণাঢ্য ও ঐতিহাসিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল।

দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময় কবরের পাশে উপস্থিত ছিলেন মরহুমার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শামীলা রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। এ সময় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অশ্রুসিক্ত নয়নে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁদের প্রিয় নেত্রীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। দাফন পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে মরহুমার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁর দল।

এর আগে বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো বেগম জিয়ার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনা হয়। এরপর বিকেল ৩টা ৩ মিনিটে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এক নজিরবিহীন ও বিশাল নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যা মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হলেও সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষের ঢল নামে। জানাজার সময় পুরো রাজধানী যেন এক শোকের নগরীতে পরিণত হয়েছিল এবং প্রতিটি সংযোগ সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়েছিল। জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশেষ প্রটোকলে মরদেহ জিয়া উদ্যানে নেওয়া হয় এবং সেখানে ধর্মীয় বিধি মোতাবেক সমাহিত করা হয়।

লিভার সিরোসিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় দীর্ঘ লড়াই শেষে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ৭৯ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এ দেশের মানুষের কাছে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর এই প্রয়াণে আজ দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি এবং তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। এক মহাকাব্যিক রাজনৈতিক জীবন এবং দীর্ঘ সংগ্রামের পর প্রিয়তম পতির পাশেই আজ তাঁর চিরস্থায়ী ঠিকানা নিশ্চিত হলো। দাফন সম্পন্ন হওয়ার পরও শেরেবাংলা নগর ও সংসদ ভবন এলাকায় শোকাতুর মানুষের ভিড় এবং এক গম্ভীর নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। মূলত এক মহান অভিভাবকের বিদায়ে আজ পুরো দেশ শোকে মুহ্যমান।


শেষ বিদায়ের ক্ষণ: জিয়া উদ্যানে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁর মরদেহ এখন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে শোকাতুর পরিবেশে তাঁর মরদেহবাহী গাড়িটি জিয়া উদ্যানে পৌঁছায়। সেখানেই পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্বামী ও স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করার কাজ চলছে। ফ্রিজার ভ্যান থেকে মরদেহ নামানোর পর বিশেষ সামরিক ও দলীয় প্রটোকলে তা সমাধি চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় মরহুমার দুই পুত্রবধূ ও নাতনিসহ পরিবারের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এক ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেকের ইমামতিতে সম্পন্ন হওয়া এই জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শরিক হন। এ ছাড়াও জানাজায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত ও কাতারসহ অন্তত ৩২টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা উপস্থিত থেকে এই মহীয়সী নেত্রীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জানাজার প্রাক্কালে বড় ছেলে তারেক রহমান তাঁর মায়ের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দেশবাসীর কাছে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দোয়া প্রার্থনা করেন।

আজকের এই চিরবিদায়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল সকালে গুলশানের বাসভবন থেকে। সকাল ১১টা ৪৮ মিনিটের দিকে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ফ্রিজার ভ্যানে করে বেগম জিয়ার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনা হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৯ বছর বয়সে (মতান্তরে ৮০) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনির জটিলতায় ভুগে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন এ দেশের মানুষের কাছে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তিত্ব। তাঁর প্রয়াণে আজ দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি এবং তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। এক বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে আজ প্রিয়তমা পতির পাশেই তাঁর চিরস্থায়ী ঠিকানা নিশ্চিত করা হচ্ছে। দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগর এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ও শোকাবহ নীরবতা বিরাজ করছে।


খুলনা-৩ আসনে ৩ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল, বৈধ ৯ জন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম দিনেই খুলনা-৩ আসনে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার ফয়সল কাদের এই ঘোষণা দেন। একই সাথে এই আসনের অন্য ৯ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মোট ১২ জন প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। আজ বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় তিনজনের আবেদনে ত্রুটি ধরা পড়ায় তা বাতিল করা হয়। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন—স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম আরিফুর রহমান মিঠু, মো. আবুল হাসনাত সিদ্দিক এবং আব্দুর রউফ মোল্ল্যা।

বাতিল হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে রিটার্নিং অফিসার ফয়সল কাদির জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আসনের মোট ভোটারের ১ শতাংশের স্বাক্ষর সম্বলিত তালিকা জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। খুলনা-৩ আসনের জন্য ২ হাজার ৫৪৪ জন ভোটারের স্বাক্ষরের প্রয়োজন ছিল। তদন্তকালে দেখা গেছে, আব্দুর রউফ মোল্ল্যা ও মো. আবুল হাসনাত সিদ্দিকের দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল রয়েছে। অন্যদিকে, এসএম আরিফুর রহমান মিঠুর মনোনয়নপত্র বাতিলের পেছনে তথ্যের অসংগতির পাশাপাশি ঋণখেলাপির বিষয়টিও অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

অন্যদিকে, যে ৯ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে তাঁরা হলেন—রকিবুল ইসলাম (বিএনপি), মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান (জামায়াতে ইসলামী), মো. আব্দুল আউয়াল (ইসলামী আন্দোলন), জনার্দন দত্ত (বাসদ), শেখ আরমান হোসেন (এনডিএম), মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (জাতীয় পার্টি), এফ এম হারুন অর রশীদ (বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মুরাদ খান লিটন ও মঈন মোহাম্মদ মায়াজ।

রিটার্নিং অফিসার আরও জানান, যেসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তাঁদের জন্য নির্বাচন কমিশনে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। এ ছাড়াও তফশিল অনুযায়ী আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে খুলনার নির্বাচনী এলাকায় যাচাই-বাছাইকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মূলত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেই কঠোরভাবে এই যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে প্রশাসন।


মায়ের জন্য দোয়া চাইলেন তারেক রহমান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম জানাজার ঠিক আগমুহূর্তে পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া ও ক্ষমা চেয়েছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে জানাজার প্রাক্কালে সমবেত লাখো জনতার উদ্দেশ্যে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত ও আবেগঘন বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, তাঁর মা দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এবং দীর্ঘ পথচলায় যদি নিজের অজান্তেও কাউকে কোনোভাবে কষ্ট দিয়ে থাকেন, তবে মহান আল্লাহর ওয়াস্তে যেন তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, “আমার মা বেগম খালেদা জিয়া জীবিত থাকাকালীন যদি কারো কাছ থেকে কোনো ঋণ নিয়ে থাকেন, তবে দয়া করে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেই ঋণ পরিশোধ করার পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছি।” পরিশেষে তিনি তাঁর মায়ের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় উপস্থিত সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দোয়া প্রার্থনা করেন।

উল্লেখ্য, বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতা ও দীর্ঘ অসুস্থতার পর গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৯ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি প্রধানের এই চিরবিদায়ে সারা দেশে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে তাঁর আপসহীন নেতৃত্ব তাঁকে এ দেশের ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। আজ জানাজার ময়দানে তারেক রহমানের এই বিনম্র ও দায়িত্বশীল আহ্বান উপস্থিত শোকাতুর জনতাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে এবং এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জানাজা শেষে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।


অকৃত্রিম ভালোবাসায় আপসহীন নেত্রীকে শেষ বিদায়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় জানাল লাখ লাখ মানুষ। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় এক ঐতিহাসিক ও বিশাল নামাজে জানাজার মধ্য দিয়ে অসীম অনন্ত লোকে পাড়ি দিলেন এই বরেণ্য নেত্রী। যেখান থেকে আর কোনোদিন ফেরা হবে না, সেই চিরস্থায়ী যাত্রায় খালেদা জিয়ার সঙ্গী হলো কোটি মানুষের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর তপ্ত চোখের জল। জানাজায় অংশ নেওয়া হাজারো মানুষকে দেখা গেছে প্রিয় নেত্রীকে হারানোর বেদনায় কান্নায় ভেঙে পড়তে। রাজধানী ঢাকার রাজপথ আজ যেন এক বিশাল শোকের মিছিলে পরিণত হয়েছে, যেখানে দলীয় পরিচয় ছাপিয়ে বেগম জিয়া আবির্ভূত হয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যের এক অনন্য প্রতীক হিসেবে।

প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির কক্ষপথে ধ্রুবতারার মতো জ্বলে থাকা এই নেত্রীর প্রস্থান পুরো জাতিকে শোকে মুহ্যমান করে তুলেছে। টানা ৪১ বছর বিএনপির হাল ধরে রাখা বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে আপসহীন সংগ্রামের নজির স্থাপন করেছেন, তা এ দেশের ইতিহাসে বিরল। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বারবার জেল-জুলুম ও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কিন্তু জীবনের চরম ঝুঁকিতেও কখনো নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে যাননি। তাঁর এই অদম্য দেশপ্রেম এবং দুর্দিনের অকুতোভয় নেতৃত্ব তাঁকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসেও ফ্যাসিবাদের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে ঘরবন্দী ও কারাবরণ করতে হলেও মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অটুট, যার প্রতিদান আজ এই বিপুল জনসমুদ্রের মাধ্যমে দেশবাসী ফিরিয়ে দিল।

আজকের এই জানাজায় ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক। বরেণ্য এই নেত্রীর শেষ বিদায়ে শরিক হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী এবং মরহুমার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উচ্চপর্যায়ের বিদেশি প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবনের বিশাল প্রাঙ্গণ ছাপিয়ে মানুষের এই ভিড় ফার্মগেট, বিজয় সরণি ও আসাদ গেট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। নির্ধারিত স্থানে জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার মানুষকে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়েই জানাজায় অংশ নিতে দেখা গেছে।

এর আগে আজ বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে রাষ্ট্রীয় প্রোটোকলে লাল-সবুজ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ফ্রিজার ভ্যানে করে বেগম জিয়ার মরদেহ জানাজাস্থলে আনা হয়। জানাজার আনুষ্ঠানিকতা পরিচালনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে। সেখানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে। বরেণ্য এই নেত্রীর বিদায়ে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সশরীরে উপস্থিত হয়ে আন্তর্জাতিক শ্রদ্ধাবোধের স্বাক্ষর রেখেছেন। দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগর এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ও সাধারণের চলাচল সীমিত রাখা হয়েছে। এক মহাকাব্যিক রাজনৈতিক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে বেগম খালেদা জিয়া আজ তাঁর প্রিয়তম পতির পাশেই খুঁজে নিচ্ছেন তাঁর চিরস্থায়ী ঠিকানা। তাঁর এই প্রস্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অপূরণীয় শূন্যতা রেখে গেল।


লাখো মানুষের অংশগ্রহণে বেগম খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা শুরু

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম নামাজে জানাজা আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন এলাকায় শুরু হয়েছে। প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এই মহীয়সী নেত্রীর জানাজায় ইমামতি করছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক।

বরেণ্য এই নেত্রীর জানাজায় সশরীরে অংশ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তাঁর সঙ্গে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানগণ এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা জানাজায় শরিক হন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রায় সকল দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এই শোকাবহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বেগম জিয়ার বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।

সকাল থেকেই জানাজাস্থলে মানুষের যে ভিড় শুরু হয়েছিল, বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা অভূতপূর্ব জনজোয়ারে রূপ নেয়। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাড়িয়ে এই জনস্রোত ফার্মগেট, আসাদ গেট ও বিজয় সরণি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এক গভীর আবেগঘন পরিবেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁদের ‘আপসহীন’ নেত্রীর আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাতে অংশ নিচ্ছেন। জানাজা শেষে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই সমাহিত করা হবে। এক বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবনের ইতি টেনে আজ চিরনিদ্রায় শায়িত হতে যাচ্ছেন এ দেশের ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী এই নারী ব্যক্তিত্ব। মূলত এক মহান অভিভাবকের বিদায়ে আজ পুরো রাজধানী শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।


জানাজার আগে বেগম জিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন ও ত্যাগ স্মরণ করলেন নজরুল ইসলাম খান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার ঠিক আগমুহূর্তে তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজার জন্য নির্ধারিত মঞ্চ থেকে তিনি এক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এই আবেগঘন বক্তব্যে তিনি বেগম জিয়ার জন্ম, পারিবারিক পটভূমি এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হওয়া থেকে শুরু করে তাঁর রাজনীতিতে পদার্পণের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। নজরুল ইসলাম খান তাঁর বক্তব্যে দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য বেগম জিয়ার আপসহীন সংগ্রাম এবং ত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

এর আগে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে এক বিশাল শোকমিছিলের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ বহনকারী ফ্রিজার ভ্যানটি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এসে পৌঁছায়। এক নজর দেখার জন্য সেখানে ভোর থেকেই কয়েক লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে মানুষের ঢল সংসদ ভবন এলাকা ছাড়িয়ে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আজকের এই জানাজা শেষে তাঁকে শেরেবাংলা নগরে তাঁর স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মরহুমের শেষ যাত্রার অংশ হিসেবে আজ সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বেগম জিয়ার মরদেহ বের করা হয়। প্রথমে তাঁর দীর্ঘদিনের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় নেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তা গুলশানে তাঁর ছেলে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসভবনে নেওয়া হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ জানাজাস্থলে নিয়ে আসা হয়। উল্লেখ্য, লিভার সিরোসিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় দীর্ঘ ৩৭ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহীয়সী নেত্রী। গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং তাঁর প্রয়াণে আজ দেশজুড়ে এক শোকাতুর পরিবেশ বিরাজ করছে। মূলত জানাজার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে নজরুল ইসলাম খানের এই স্মৃতিচারণ উপস্থিত লাখো জনতার মাঝে এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।


মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে খালেদা জিয়ার জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজায় অংশ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত এই বিশাল জানাজায় তিনি শরিক হন। তাঁর সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। বরেণ্য এই নেত্রীর শেষ বিদায়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের এই উপস্থিতি এক শোকাতুর ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।

জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের শীর্ষ নেতাদের এক বিশাল সমাগম ঘটে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জানাজায় অংশ নেন। এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে মরহুমার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে, আজ বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটের দিকে বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ বহনকারী ফ্রিজার ভ্যানটি কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পৌঁছায়। সকাল থেকেই মরহুমের শেষ যাত্রাকে কেন্দ্র করে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে মরদেহ বের করে প্রথমে গুলশানে তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বাসভবনে নেওয়া হয়। সেখানে স্বজন ও সহকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বেলা ১১টা ৫ মিনিটে মরদেহবাহী গাড়িটি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পুরো ঢাকা আজ এক শোকের চাদরে ঢাকা পড়েছে এবং লাখো মানুষ তাঁদের প্রিয় নেত্রীকে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানাতে রাজপথে সমবেত হয়েছেন। দাফন ও জানাজার যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।


বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে তারেক রহমানের সাথে দেখা করে পাকিস্তানের স্পিকারের সহমর্মিতা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় শরিক হতে এবং তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আজ বুধবার ঢাকা পৌঁছেছেন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর তাঁকে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় যান এবং সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গভীর শোক ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।

এই শোকাবহ সাক্ষাতের সময় তারেক রহমানের সাথে তাঁর কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন আহমেদসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ। বিএনপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে এই সৌজন্য সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের স্পিকার তাঁর বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা পৌঁছে দেন।

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই বরেণ্য নেত্রীর প্রয়াণে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের এই গভীর শোকের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। আজ জোহরের নামাজের পর অনুষ্ঠিতব্য জানাজার আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে সরদার আয়াজ সাদিক পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে বেগম জিয়ার বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এক প্রভাবশালী নেত্রীর বিদায়ে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে এমন সাক্ষাৎ রাজনৈতিক মহলে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। মূলত শোককে শক্তিতে পরিণত করে শেষ বিদায়ের এই মুহূর্তটিকে মর্যাদাপূর্ণ করতেই বিদেশি প্রতিনিধিদের এমন সমাগম ঘটছে।


banner close