পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ নির্ধারিত সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) উপস্থিত না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।
আজ রোববার দুদক কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার বক্তব্য দেওয়ার জন্য আজ ২৩ জুন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু তিনি যথাসময়ে উপস্থিত হবেন কি না, সে বিষয়ে আমাদের কিছু জানাননি বা অবগত করেননি। আজ অফিস সময়ের মধ্যে কমিশনে উপস্থিত হয়ে তার বক্তব্য না দিলে অনুসন্ধান টিম আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। আগামীকাল তার স্ত্রী ও কন্যাদের উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুসন্ধানকারী টিম নোটিশ দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারাও যদি উপস্থিত না হন তাহলে তাদের বিষয়েও অনুসন্ধান টিম আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে অতিরিক্ত ১৬ দিন সময় দেওয়া হলেও তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হননি। এতে করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারালেন সাবেক এই আইজিপি।
রোববার (২৩ জুন) সকাল ১০টার মধ্যে দুদকের তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হওয়ার কথা ছিল বেনজীর আহমেদের। তবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত তিনি দুদক কার্যালয়ে আসেননি। দুদক সূত্র জানায়, মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোনো নতুন কোনো আবেদনও করেননি বেনজীর আহমেদ। এতে করে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারিয়েছেন।
গত ৬ জুন বেনজীর আহমেদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৩ জুন সকালে তাকে দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।
দুদকের এক নোটিশে বলা হয়, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি অনুসন্ধানকারী দল অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনুসন্ধান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বেনজীর আহেমেদের ব্যক্তিগত শুনানির জন্য ৬ জুন নির্ধারিত ছিল। তিনি শুনানিতে উপস্থিত না হওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অনুসন্ধানকারী দল বেনজীর আহেমেদের ব্যক্তিগত শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ ২৩ জুন ধার্য করে নোটিস ইস্যু করে।
এর আগে ৫ জুন দুদক কমিশনার জহুরুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আমি সঠিকভাবে জানি না। তবে, শুনতে পেরেছি, তিনি (বেনজীর) সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। যদিও এটা অনুসন্ধান টিমের বিষয়, এটা তাদের বিষয়, তারা ভালো জানবে। কারণ বিষয়টি কমিশন পর্যন্ত আসে না।
দুদক কমিশনার আরও বলেন, আইনে সুযোগ আছে সময় চাওয়ার। সময় চাইলে দুদক ১৫ দিন সময় দিতে পারবে।
গত ২২ এপ্রিল সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন—সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।
গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে সাবেক আইজিপি বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
তবে মে মাসের শুরুতেই বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।
সরকার যখন আটঘাঁট বেঁধে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে নেমেছে ঠিক সে সময় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থ আত্মসাতের মামলায় ১২ বছর সাজাপ্রাপ্ত রাশেদুল হক চিশতী জামিন পেয়েছেন। সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান ব্যাংকখেকো নামে খ্যাত মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীর ছেলে এই রাশেদ চিশতী।
সাবেক ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে ১৬০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর বাবুল চিশতী, তার স্ত্রী ও ছেলেসহ চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। পাশাপাশি তাদের ৩১৯ কোটি ৯০ লাখ ৯৯ হাজার ২৪০ টাকা জরিমানা করেন আদালত।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় বাবুল চিশতী ও তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতীকে ১২ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর বাবুল চিশতীর স্ত্রী রোজী চিশতীকে দেওয়া হয় ৫ বছরের কারাদণ্ড। পাশাপাশি তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান খানকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত।
এ ছাড়া মাহবুবুল হক, তার স্ত্রী রোজী চিশতী ও ছেলে রাশেদুল হকের নামে থাকা সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
পরবর্তী সময়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সাজার অর্ধেকের বেশি সময় তিনি জেল খেটেছেন উল্লেখ করে রাশেদ চিশতী তার আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারপতি মোহাম্মদ আলী ও বিচারপতি এস কে তাহসিন আলী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এমন এক মুহূর্তে অর্থ আত্মসাতের মামলায় দণ্ডিত রাশেদ চিশতী জামিন পেলেন, যখন বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে জোরেশোরে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর তথা ম. খা. আলমগীরের ঘনিষ্ঠ ছিল ব্যাংকখেকো চিশতী পরিবার। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকারের অনুকম্পা পেতে তারা নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে।
যে মামলায় বাবুল চিশতী ও তার পরিবারের সদস্যদের সাজা হয় সেই মামলার অভিযোগে বলা হয়, ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ব্যাংকের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাহবুবুল হক চিশতী গুলশান শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব খুলে বিপুল পরিমাণ অর্থ নগদে ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা ও উত্তোলন করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে তার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন শাখার মোট ২৫টি হিসাবে নগদ ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে মোট ১৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪২ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করেন। হিসাবগুলোতে গ্রাহকদের হিসাব থেকে পাঠানো অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করে এবং নিজেদের নামে কেনা ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন করে মানি ল্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।
এ ছাড়া রাশেদ চিশতীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারির আরও আটটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
এর আগে ফারমার্স ব্যাংকের বিপুল টাকা আত্মসাতের মামলায় বাবুল চিশতী ও তার পুরো পরিবার ফৌজদারি অপরাধে জড়িত বলে মন্তব্য করেছিলেন আপিল বিভাগ। ২০২১ সালের ২৭ মে বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদ চিশতীর জামিন শুনানির সময় এমন মন্তব্য করেন আপিল বিভাগের বিচারক।
তখন আদালত বলেছেন, মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীই মূল অপরাধী। মামলার নথি থেকে দেখা যায়, অপরাধ কার্যক্রমে তিনি তার পুরো পরিবারের সদস্যদের ব্যবহার করেছেন।
সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক ওরফে বাবুল চিশতীর ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে নতুন প্রজন্মের ওই ব্যাংকটি ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি নামে-বেনামে ঋণ, ব্যবস্থাপনা কমিটিকে তোয়াক্কা না করে ঋণ অনুমোদন, নামমাত্র প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সেসব হিসাবে কোটি কোটি টাকা হস্তান্তর, ঋণ অনুমোদন হওয়ার আগেই টাকা সরবরাহ, ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের কমিশন ও শেয়ারবাণিজ্য করেছেন। এমন শত শত অভিযোগ উঠে এসেছে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে।
শুধু তা-ই নয়, ব্যাংকটিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দলের রিপোর্ট বলছে, ২০১৭ সালে ৮৫ জন কর্মকর্তা নিয়োগে প্রায় প্রতিটির ক্ষেত্রে তখনকার চেয়ারম্যানের সুপারিশ ছিল। অনেক প্রার্থীর বায়োডাটায় ‘চেয়ারম্যান ও ডিরেক্টর চিশতী’ বড় করে লেখা ছিল বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষকদের নজরে আসে। এইচ আর কর্তৃক লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে তবে তা শুধুই নামমাত্র। কয়েকটি পরীক্ষায় কোনো নম্বর দেয়নি এইচ আর। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক দল বলছে, এইচ আর পলিসি ছিল শুধু খাতা-কলমে, যার কোনো প্রয়োগ ছিল না।
প্রধান অফিসের পাশাপাশি শাখা অফিসগুলোতেও নিজেদের লোক বসিয়ে সুপারিশের ঋণ অনুমোদন করাত এই চক্র। গুলশান শাখায় কয়েকটি ঋণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো ‘স্যাংশন লেটার’ ছাড়াই শুধু চেয়ারম্যানের সুপারিশে বড় বড় ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। ২০১৭ সালে গুলশান শাখাসহ বেশ কয়েকটি শাখা থেকে আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্টে ৪০ কোটি, ১২ কোটি ৪৫ লাখ, ৯ কোটি ১৫ লাখ, ১০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রদান করা হলেও কোনোটির ক্ষেত্রেই ব্যবস্থাপনা কমিটি ‘লোন স্যাংশন’ করেনি। একই বছরের অক্টোবর মাসের ১৮ তারিখে ৪০ কোটি টাকার ঋণ বর্ধিতকরণের জন্য চেয়ারম্যান ও এমডি ফরমাল সুপারিশ করলেও তার আগেই ঋণটি প্রদান করা হয়। যেখানে কোনো প্রকার ব্যাংকিং নিয়মের তোয়াক্কা করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্টে আরও উঠে আসে বড় ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে বাবুল চিশতীর ভাই ও তার ছেলের কয়েকটি কোম্পানি ছিল- যেসব কোম্পানির নামে বিপুল অর্থ বের করে নেওয়া হয় ফারমার্স ব্যাংক থেকে। শুধু তা-ই নয়, ভুয়া ও সাইনবোর্ড-সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে মোটা কমিশনের বিনিময়ে বড় অঙ্কের লোন দিতেও কার্পণ্য করত না এই চক্র। ব্যাংকের শেয়ার দেওয়ার কথা বলেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই দুজনের বিরুদ্ধে। আমানতকারীদের অর্থ লুট করার উদাহরণও তৈরি করেছিলেন তারা।
ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে বাবুল চিশতী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ব্যাংক খাতে যেন আর কখনোই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও তুলছেন ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং ছাড়াও প্রায় ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে মামলা দুটি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাগুলো করার বিষয়ে তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘জিয়াউল আহসান নিজ নামে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ২২ কোটি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ১৪২ টাকার সম্পদ অর্জন করেন। তা ছাড়া গাইডলাইন অব ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশন-২০১৮ ও ২০২০ সালের এফইপিডি সার্কুলার-৬-এর নিয়ম লঙ্ঘন করে নিজ হিসাবে ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার জমা করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউল আহসানের নামে ৮টি সক্রিয় ব্যাংক হিসাবে তিনি প্রায় ১২০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন। একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে এই কাজে নিজের পদ ও অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, দণ্ডবিধি, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।’ এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করে স্ত্রী নুসরাত জাহানের সহযোগিতা ও যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর, রূপান্তর ও অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
দুদক মহাপরিচালক জানান, জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং ছাড়াও প্রায় ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান নিজ নামে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২২ কোটি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ১৪২ টাকার সম্পদ অর্জন করেন। এ ছাড়াও গাইডলাইন অব ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রান্সজেকশন-২০১৮ ও ২০২০ সালের এফইপিডি সার্কুলার-৬ অনুযায়ী বর্তমান অনুমোদিত সীমা লঙ্ঘন করে নিজের ব্যাংক হিসাবে ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার জমা করেন। বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করে স্ত্রী নুসরাত জাহানের সহযোগিতা ও যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করেন। তিনি বলেন, নিজ নামে ৮টি সক্রিয় ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১২০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন জিয়াউল আহসান। একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে এই কাজে নিজের পদ ও অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, দণ্ডবিধি, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এই অভিযোগগুলোর কারণে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অন্যদিকে মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসানের স্ত্রী নুসরাত জাহান নিজ নামে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৮ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। তার নামে থাকা ৪টি সক্রিয় ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২২২ কোটি ৫০ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন ও স্বামী জিয়াউল আহসানের সহযোগিতা ও পরস্পরের যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করেছেন। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটি ১/১১ সরকার গঠনের আভাস বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এ ধরনের পরিকল্পনা গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরোধী- এমন কিছু হলে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটা ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। ১/১১ এর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।’
এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের এক আলোচনায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পক্ষপাতমুক্ত থাকতে না পারে, তাহলে নির্বাচনের সময় একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার। আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারছে না।’ সেই প্রসঙ্গ টেনে নাহিদ আরও বলেন, রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অথচ এগুলোর কোনোটিই ছাত্রদের দলীয় কোনো দাবি ছিল না। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য ছাত্ররা বারবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু এর মানে এই না যে গণতন্ত্রবিরোধী ও অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী কোনো পরিকল্পনা হলে সেখানে আমরা বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেব।
তিনি লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ বিষয়ে ভারতের প্রধান দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সম্ভব হয়েছে অথচ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিষয়ে আমরা ঐক্য করতে পারিনি এত হত্যা ও অপরাধের পরেও। হায় এই ‘জাতীয় ঐক্য’ লইয়া আমরা কি রাষ্ট্র বানাব!’ তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশকে দুর্বল করা সহজ, কারণ বাংলাদেশকে সহজেই বিভাজিত করা যায়। এ দেশের বড় বড় লোকেরা অল্পমূল্যে বিক্রি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।’
৫ আগস্ট থেকে ছাত্রদের মাইনাস করার পরিকল্পনা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা যেদিন ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যান, সেই ৫ আগস্ট থেকেই ছাত্র ও অভ্যুত্থানকারীদের মাইনাস করার পরিকল্পনা হয়েছে বলেও ওই পোস্টে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক অন্যতম এ সমন্বয়ক।
ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারে আসা তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা তার পোস্টে আরও লিখেছেন,‘ছাত্র এবং অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে মাইনাস করার পরিকল্পনা ৫ আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে। ৫ আগস্ট যখন ছাত্র-জনতা রাজপথে লড়াই করছে, পুলিশের গুলি অব্যাহত রয়েছে, তখন আমাদের আপসকামী অনেক জাতীয় নেতা ক্যান্টনমেন্টে জনগণকে বাদ দিয়ে নতুন সরকার করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন (অনেকে ছাত্রদের কথাও বলেছেন সেখানে)।’ নাহিদ পোস্টে আরও লিখেছেন‘৩ আগস্ট থেকে বলে আসছি, আমরা কোনো প্রকারের সেনাশাসন বা জরুরি অবস্থা মেনে নেব না। আমাদের বারবার ক্যান্টনমেন্টে যেতে বলা হলেও আমরা যেতে অস্বীকার করি। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে আলোচনা ও বার্গেনিংয়ের মাধ্যমে ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।’ জুলাই আন্দোলনের এই নেতা লিখেছেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার হলে ছাত্রদের হয়তো সরকারে আসার প্রয়োজন হতো না। জাতীয় সরকার অনেকদিন স্থায়ী হবে, এই বিবেচনায় বিএনপি জাতীয় সরকারে রাজি হয়নি। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরেই দেশে জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি ছিল। অথচ বিএনপি জাতীয় সরকারের কথা বলতেছে সামনের নির্বাচনের পরে।’
নাহিদ লিখেছেন, ‘ছাত্ররাই এই সরকারের এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর; যেটা ১/১১ এর সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে। বিএনপি কয়েকদিন আগে মাইনাস টু-এর আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ সরকারের প্রস্তাবনা করছে। এ ধরনের পরিকল্পনা গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই এটা মেনে নেবে না। এবং আমি মনে করি এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র।’ তথ্য উপদেষ্টা লিখেছেন,‘আর এই সরকার জাতীয় সরকার না হলেও সরকারে আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশীদারত্ব রয়েছে এবং সবপক্ষই নানা সুবিধা ভোগ করছে। সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের আইজির নিয়োগ হয়েছিল, যারা মূলত বিএনপির লোক। এরকমভাবে সরকারের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানা স্তরে বিএনপিপন্থি লোকজন রয়েছে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে এই বাস্তবতায়ও মাথায় রাখতে হবে।’
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ পাচ্ছেন ১০ কবি ও লেখক। বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি নির্বাহী পরিষদের অনুমোদনে মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪’ প্রস্তাবক কমিটির প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটি-২০২৪’ এর সিদ্ধান্তক্রমে বাংলা একাডেমি নির্বাহী পরিষদ ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪’ অনুমোদন করে।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ প্রাপ্তরা হলেন- কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান এবং ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ। বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার প্রদান করবেন। তবে এবার পুরস্কারের তালিকায় বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণায় কারও নাম নেই।
মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইলের মোঘলনগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)। গ্রেপ্তাররা হলেন- পাপ্পু কুমার সেন (২৮) এবং মো. কাওসার (২৭)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে অপরাধকর্মে ব্যবহৃত ১ হাজার ১৫০ টি সিম কার্ড, ১ টি হার্ডডিস্ক ও মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়।
সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তাররা পরস্পর যোগসাজশে কোনোরকম ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও এনআইডি কার্ড ছাড়াই বেশি টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধভাবে মোবাইল সিমকার্ড সংগ্রহ করে। পরে সেই সিমগুলো তারা বিভিন্ন টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপসহ অন্যান্য মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাছে শুধুমাত্র মোবাইল নাম্বারগুলো উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে দেয়।
দেশি-বিদেশি আসামিরা এসব অবৈধ মোবাইল নম্বর দিয়ে টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুলে সেখানে বিভিন্ন ব্যক্তিদের যুক্ত করে তাদের অধিক মুনাফা দেয়ার লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগের নানা অফার দিতে থাকে। ভুক্তভোগীরা ফাঁদে পা দিয়ে অধিক মুনাফার আশায় আসামিদের তৈরি অ্যাপে নিজেদের নাম, মোবাইল নম্বর ও এনআইডি কার্ডের তথ্য দিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে।
সম্প্রতি এক এমন প্রতারণার শিকার হয়ে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা খুইয়ে মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী। মামলার এজাহারে তিনি জানান, নিজের ফেসবুক আইডি ব্যবহারের সময় তিনি আন্তর্জাতিক স্টক মার্কেটের একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পেয়ে সেখানে থাকা লিংকে প্রবেশ করেন। পরে অজ্ঞাত একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কিছু মেসেজ পাঠানোর পাশাপাশি কয়েকটি টাস্ক দেয়া হয়। একই সঙ্গে বাদীর হোয়াটসঅ্যাপে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশনা আসে।
পরে ভুক্তভোগী নির্দেশমতো প্রতারক চক্রের অ্যাপসের লিংকে প্রবেশ করে তার নাম, এনআইডি ও মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট তৈরি করলে একটি ডিজিটাল ওয়ালেট তৈরি হয়। এরপর আসামিরা বাদীকে তাদের দুটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করে নেয়, যেখানে বাদীর পরিচিত অনেকেই যুক্ত ছিল এবং ওই গ্রুপটিতে ট্রেডিং বিষয়ে নানা কথাবার্তা হতো। পরবর্তীতে আসামিদের কথায় বিশ্বাস করে বিভিন্ন সময়ে বাদী একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ টাকা বিনিয়োগ করেন।
তবে নির্দিষ্ট সময় পর ডিজিটাল ওয়ালেটে প্রদর্শিত লভ্যাংশ ও বিনিয়োগ করা অর্থ ফেরত চাইলে আসামিরা বাদীকে আরও বিনিয়োগ করতে বলেন। একপর্যায়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে বুধবার (২২ জানুয়ারি) ধানমন্ডি থানায় মামলা মামলা করেন ভুক্তভোগী।
সিআইডি আরও জানায়, আসামিরা ভুক্তভোগীদের কোনো মুনাফা না দিয়ে কৌশলে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করছে বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ওই অ্যাপসটি চীন থেকে পরিচালিত হয়। এ ক্ষেত্রে দেশে অবস্থানরত আসামিরা অবৈধ মোবাইল নম্বর অধিক লাভে বিদেশে অবস্থানরত আসামিদের কাছে বিক্রি করে পুরো অপরাধ কার্যক্রম সংঘটনে সহায়তা করে থাকে।
নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মহাপরিরদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি বলেন, ‘পুলিশ জনগণের আস্থাভাজন হলে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করবে।
আজ বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে ৪৩তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) ওরিয়েন্টেশন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আপনারা পুলিশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। আপনাদের ওপর পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা নির্ভর করে। তাই আপনাদের সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে অন্যদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে হবে।
আইজিপি বলেন, সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন পুলিশের কাছে জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ তৈরি করেছে। আইনশৃঙ্খলার রক্ষক হিসেবে পুলিশকে জনগণের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, পুলিশিং একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। আপনাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনাদেরকে সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকার এবং নতুন নতুন আইন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সর্বশেষ প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজি (এইচআর এম) আবু নাসের মো. খালেদ, ডিআইজি (এইচআর) কাজী জিয়া উদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ৪৩তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে ৮৪ জন কর্মকর্তা যোগদান করেছেন। তাদের মধ্যে ৭৮ জন পুরুষ এবং ছয় জন নারী।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের বই খোলাবাজারে বিক্রি ও মজুতের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
গ্রেপ্তারা হলেন, সিরাজুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল (৫৫) ও মো. দেলোয়ার হোসেন (৫৬)। গতকাল বুধবার বিকেল রাজধানীর সূত্রাপুরের বাংলা বাজার ইস্পাহানি গলির বিভিন্ন গুদামে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে ডিবি-লালবাগ বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দুই ট্রাক ভর্তি প্রায় ১০ হাজার সরকারি বই জব্দ করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করে আসছে। সরকারের এ আন্তরিক প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে কিছু অসাধু চক্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের বই অবৈধ মজুতদারির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করছে। এ রকম তথ্য পাওয়ার পর ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ নজরদারি বৃদ্ধি করে। ডিবি ওই চক্রকে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করে।
যুগ্ম কমিশনার বলেন, গোয়েন্দা তথ্যে ডিবি জানতে পারে, একটি অসাধু চক্র বাংলাবাজারের ইস্পাহানি গলিতে বিভিন্ন গুদামে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি পাঠ্যবই বিক্রির উদ্দেশে মজুদ করেছে। এমন তথ্যে গত বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ডিবি লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিম। অভিযানে বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তুক বোর্ডের ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় ১০ হাজার বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি পাঠ্যবই জব্দ করা হয়। এসময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সিরাজুল ও দেলোয়ার নামের দুইজনকে আটক করা হয়। জব্দ করা বইয়ের মূল্য প্রায় আট লাখ টাকা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা স্বীকার করেছেন, তারাসহ অন্যান্য অবৈধ মজুতকারীরা বছরের শুরুতে নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করতে এবং অবৈধ উপায়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে এসব বই মজুত করে বিক্রি করে আসছিলেন।
সারা দেশে অগ্নিনিরাপত্তা বাড়াতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। বিশেষ করে শীতকালে অগ্নিদুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, অগ্নি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত মহড়া, গণসংযোগ, প্রশিক্ষণ, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অগ্নিনিরাপত্তার আওতায় আনতে নিয়মিত পরিদর্শন ও নোটিশ দিয়ে থাকেন। ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং ঢাকায় রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
জানুয়ারি মাসে সারাদেশে মোট ৩৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ২৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা সঠিক না থাকায় এ পর্যন্ত ৪১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
আরও জানানো হয়, গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) খিলগাঁওয়ের ৩৬৮ স্কাইভিউ নাজমা টাওয়ারে রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেট মো. লিটন সরকারের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। ১০তলা ভবনটি আবাসিক হিসেবে অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার করা ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এর বিভিন্ন তলায় থাকা পাঁচটি রেস্টুরেন্ট ও মিনিসোর একটি শোরুম সিলগালা করা হয়। বাকি দোকানগুলো বন্ধ থাকায় সেগুলোয় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে ঢাকার দুজন জোন কমান্ডার, খিলগাঁও ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন অফিসার, দুজন পরিদর্শকসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) তিন শতাধিক সদস্য ১৬ বছর কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কেরাণীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বন্দিরা বের হতে শুরু করেন।
এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৭৮ জন এবং কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১২৬ জন বিডিআর সদস্যকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে রবিবার ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ইব্রাহিম মিয়া বিস্ফোরক মামলায় বিডিআর সদস্যদের জামিন মঞ্জুর করেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে অস্থায়ীভাবে আদালত স্থাপন করা হয়। গত মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) কারা কর্তৃপক্ষ জামিন পাওয়া আসামিদের তালিকা প্রকাশ করেছে। গতকাল বুধবার বন্দিদের মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দুই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জেলার এ কে এম মাসুদ জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ ১৭৮ জন বন্দিকে মুক্তি দিতে শুরু করেছে। বাকিদের পরে ছেড়ে দেওয়া হবে।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ৩৮ জন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
এসময় স্বজনরা মুক্তিপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যদের কারা ফটকে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে মিষ্টি খাওয়ান।
অনেককে তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে সাক্ষাতে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর হেডকোয়ার্টারে বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর একটি হত্যা মামলায় ১৫০ জন বিডিআর সদস্য ও দুই বেসামরিক নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট ১৫২ আসামির মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সরকার বিদ্রোহ কবলিত আধাসামরিক বাহিনী বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) করে। একই সঙ্গে বাহিনীর পোশাকেও আনা হয় পরিবর্তন।
যারা ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি চাচ্ছেন কিংবা এই দাবি প্রচার করে বেড়াচ্ছেন, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া দাবি করেছেন বিক্ষুব্ধ সার্বভৌম ছাত্র-জনতা নামের একট সংগঠন। তারা বলছেন, ‘আদিবাসী শব্দটি সংবিধান বিরোধী ও দেশবিরোধী। এই দেশে কখনো আদিবাসী ছিলো না।’
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘সার্বভৌম ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে এক প্রতিবাদ সভায় এমন দাবি করা হয়েছে।
সমাবেশে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মুহম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, ‘নিজেদের আদিবাসী দাবি করা লোকেরা বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে। তাদেরকে এদেশে থাকতে দেওয়া হয়েছে। উপজাতি আর আদিবাসী এক না। তারা উপজাতি। এই দেশে কখনো আদিবাসী ছিলো না।
সমাবেশে বলা হয়, সম্প্রতি এনসিটিবির পরিমার্জন কমিটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত লাল সন্ত্রাস রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদরা পাঠ্যবইতে রাষ্ট্রের সংবিধান ও আইনবিরোধী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ যুক্ত গ্রাফিতি যুক্ত করে।
‘এর প্রেক্ষিতে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি, তাদের দোসরদের আদিবাসী দাবির আড়ালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা দেশবাসীর কাছে ফাঁস করে দেয় ছাত্রদের একটি প্লাটফর্ম স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি। তার ফলস্বরূপ বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতিরা একজোট হয়ে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে মাঠে নেমেছে, মিথ্যা মামলা করেছে।’
সমাবেশে সার্বভৌম ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। তাদের দাবিগুলো হলো:
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে উভয় দেশের কৃষক ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। সীমান্তের যেকোনো সমস্যা বিজিবি-বিএসএফ আলোচনার মাধ্যমে সমন্বিতভাবে সমাধান করবে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জের সোনামসজিদ বিওপি সম্মেলন কক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দুই দেশের স্থানীয় নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মাদকসহ যেকোনো চোরচালান থেকে বিরত থাকতে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে। এছাড়া দুই দেশের মিডিয়ার মাধ্যমে গুজব না ছড়ানো, স্থানীয় জনগণকে অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালানে বিরত রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা ব্যাটালিয়ন (৫৯বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া। তিনি জানান, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বেঠকে বিজিবি পক্ষে নেতৃত্ব দেন রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে এ রউফ ও বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন মালদা সেক্টরের ডিআইজি অরুন কুমার গৌতম। বৈঠকে আংশ নেন ৫৯ বিজিবি অধিনায়ক ও স্টাফ অফিসারগণ এবং সংশ্লিষ্ট ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক সুরজ সিং ও স্টাফ অফিসাররা। এর আগে গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কিরনগঞ্জ সীমান্তে উভয় দেশের নাগরিকদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ওই সময় বিএসএফর সাউন্ড গ্রেনেড ও ককটেল নিক্ষেপ কয়েকজন বাংলাদেশি আহত হন। এ ঘটনার পর ওইদিন বিকেলে ওই সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সৌজন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিমানে বোমা আতঙ্কের খবর পুরোপুরি মিথ্যা, যারা খবর ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বুধবার রাজধানীর খামারবাড়ীতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিদর্শন শেষে তিনি একথা বলেন।
এ সময় তিনি বিমানে বোমা আতঙ্কের মিথ্যা সংবাদে জড়িতদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এ ধরনের ভুয়া সংবাদের কারণে শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নয়, সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়। এ জন্য তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নতুন পোশাক নিয়ে মতামত দেন। তিনি বলেন, ‘শুধু পোশাক পরিবর্তন দিয়ে কিছু হবে না, মন ও মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। দুর্নীতি কমানো গেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।’
‘কারা চালের বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে, তাদের ধরতে পারছে না সরকার’- এমন মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন- সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারায় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
কৃষি উপদেষ্টার দাবি, চিকন চালের দাম বাড়লেও কমেছে মোটাচালের দাম। বন্যার ক্ষতির কথা বলে কেউ কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করায় প্রচুর চাল আমদানি করছে সরকার।
মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের দেশটিতে পাঠাতে ইতিবাচক অগ্রগতি আছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব মো. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, যারা যেতে পারেননি, তাদের মালয়েশিয়ায় পাঠানো এবং রিক্রুটিং এজেন্সির কাছ থেকে তাদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। খুব শিগগির কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হতে পারে। ধাপে ধাপে মালয়েশিয়া যাবেন ১৮ হাজার কর্মী।
বুধবার মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ কথা বলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব মো. রুহুল আমিন। গতকাল সকাল ৯টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে সার্ক ফোয়ারা চত্বরের এক পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের কারিগরি কমিটি ও মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারিগরি কমিটি দুই দফা বৈঠক করেছে ইতোমধ্যে। বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে এবং এতে অগ্রগতিও আছে। ফেব্রুয়ারিতে আরেকটা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়া একমত হয়েছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে এটি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, মালয়েশিয়ার কাছে কর্মীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। আলোচনা শুরু হয়েছে, চলছে। পদ্ধতি এখনো ঠিক হয়নি। মালয়েশিয়ার মন্ত্রিপর্যায়ে প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। তারা সিদ্ধান্ত দিলে ১৫ দিনের মধ্যেই কর্মী পাঠানো শুরু হবে। প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে প্রবাসীদের জানানো হবে এবং তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে, কর্মীদের যেতে নতুন করে যাতে খরচের বোঝা তৈরি না হয়।
সবশেষ ২০২২ সালে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর পর থেকে একটি সিন্ডিকেটের (চক্র) বিরুদ্ধে বাজার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চাপে বিদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। এর আগে কর্মীদের প্রবেশে ২০২৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত ছাড়পত্র নিয়েও ওই সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়া যেতে পারেনি ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী। যদিও আন্দোলনরত কর্মীরা সংখ্যাটি ১৮ হাজার বলে দাবি করছেন। এসব কর্মীদের টাকা রিক্রুটিং এজেন্সির কাছ থেকে আদায়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার।
এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণ সচিব বলেন, ২ দিন আগ পর্যন্ত ৮১ শতাংশ কর্মীর টাকা ফেরত দিয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সি। মন্ত্রণালয়ে তারা কর্মীর স্বাক্ষরসহ তালিকা জমা দিয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে টাকা পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। যারা টাকা ফেরত দেবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রবাসীকল্যাণ ভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ সচিব বলেন, ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে অগ্রগতি জানানো হলো কর্মীদের। তারা এলে তাদেরও জানানো হবে। আর কর্মীরা সিন্ডিকেট চান না, আপনিও চান না, আমরাও চাই না।’